এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ১১৬

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ এপ্রিল ২০২৪ | ৯৮ বার পঠিত
  • কালীকিঙ্করবাবু বেশ খোশমেজাজে আছেন আছেন আজ সকাল থেকেই। তার ছেলের চিঠি এসেছে বহরমপুর থেকে। তার কর্মক্ষেত্রে একটা পদোন্নতি হয়েছে। কালেক্টরেট অফিসে অফিসার সে। বহরমপুরেই স্ত্রী পুত্র নিয়ে থাকে। আজ অবশ্য ওদের ছুটির দিন। নববর্ষ। কালীবাবুর কোন ছুটি নেই। আর প্রমোশন টমোশনের তো কোন প্রশ্নই নেই। কালীবাবু ওসব নিয়ে আর চিন্তা করেন না। ভাবেন, আর ... হয়েই তো এল। আর দু তিন বছর ভালয় ভালয় কাটিয়ে দিতে পারলেই ব্যাস। একেবারে সব ঝঞ্ঝাট থেকে ছুটি। তারপর তিনি দুপুরবেলায় গড়ের মাঠে বসে
    বাদামভাজা খাবেন, ইভনিং শোয়ে সিনেমা দেখতে যাবেন, না রাত্তিরে বৌয়ের হাতে ভাজা গরম গরম লুচি খাবেন ডজন খানেক সেগুলো পুরোপুরি তার হাতে। তাছাড়া সাগরের সঙ্গে আড্ডাও মারা যেতে পারে। কালীবাবুর অবশ্য বন্ধুবান্ধব তেমন নেই। তা নিয়ে তার আফশোসও নেই কিছু। অপছন্দের লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে তার ভালও লাগে না। সুতরাং ওটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

    কিন্তু তিনি ইদানীং বেশ চিন্তিত সাগরকে নিয়ে। আসল সাগর হারিয়ে যাওয়াটা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারবেন না, যদিও ঘটকালিটা বলতে গেলে তিনিই করলেন। সেটা নিয়ে তার কোন আফশোস নেই। এটা একটা মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে করেছেন তিনি। তবে রাত্রি আর সাগরের রসায়নটা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়াল সে ব্যাপারে তিনি এখনও অন্ধকারে। পুজোর পরে একবার দেখা হয়েছিল সাগরের সঙ্গে। কথাবার্তা বিশেষ কিছু হয়নি। সেদিন খুব ব্যস্ততা ছিল। লালবাজার থেকে ডি আই জি এসেছিলেন ইন্সপেকশনে।উত্তর কলকাতার সব থানায় রাউন্ড মারবেন সারাদিন ধরে। সাগরকে দেখে তো মনে হল ভালই আছে। কিন্তু বেশি ভাল আবার ভাল নয়।
    তারপর থেকে আর দেখা নেই। কোন দরিয়ায় ভাসছে কে জানে। দেখতে দেখতে পৌষের শীত হাজির হয়ে গেল। এল কমলালেবু রঙের রোদ্দুর পোয়ানোর দিন।

    দীর্ঘ অদর্শনে আবেগে ধুলো পড়ে যায়। উন্মুখতার তীব্রতা কমে যায়। কিন্তু অমলের তা হচ্ছে কই। তীব্রতা বেড়েই চলেছে। মাঝে মাঝেই কেমন আনমনা শ্বাস পড়ছে। গীটারে নানা রবীন্দ্রগানের সুর তুলছে ... মনে রবে কি না রবে আমারে ... সে আমার মনে নাই মনে নাই ... ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে... অকারণে গান গাই ...। আজ অফিস ছুটি। ভাবল রূপবাণীতে গিয়ে একটা সিনেমা দেখে আসি। আসলে সিনেমা দেখাটা বড় কথা না, রূপবাণীর কাছাকাছি গোয়াবাগান পার্ক ... সেটাই বড় কথা। নীল আকাশের নীচে চলছে। রূপবাণীর সামনে জমজমাট। দু মাসের ওপর হয়ে গেছে। এখনও ছুটির দিনে ম্যাটিনি ইভনিং হাউসফুল। টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছে। শীতের দুপুর। বেশ তরতাজা আকাশী আকাশ। ব্ল্যাকেই টিকিট কেটে হলে ঢুকল অমল। নীল আকাশের নীচে মনে বেশ দাগ কাটার মতো ছবি। শো ভাঙল সাড়ে পাঁচটায়। হল থেকে বেরিয়ে অমল একটু মোড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দাঁড়িয়ে রইল অকারণেই। সামনে দিয়ে লোকজন, ট্রাম বাস,রিক্শা যাচ্ছে। কেউ অকারণে কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। সকলেই কাজের লোক। রেলের বুকিং কাউন্টারের সামনের রকে অবশ্য বেশ কিছু লোক বসে আছে অলস ভঙ্গীতে। দুটো লোক মন দিয়ে দাবা খেলছে প্রতিদিন যেমন খেলে। তবে সে-ই শুধু এখানে অকারণে দাঁড়িয়ে আছে। সে ভাবল, ওই তো বটতলা থানা দেখা যাচ্ছে। আর একটু গেলেই তো ...। কিন্তু যাওয়াটা ঠিক হবে কি। এভাবে অল্পবয়স্ক কিশোরদের মতো ঘোরাঘুরি করে নিজেকে খেলো করাটা কি তার উচিৎ হচ্ছে ... তাছাড়া ওদিকে গিয়ে সে কাকে পাবে ? এরকম নানা দোলাচলে দুলতে লাগল তার মন। সঞ্চারীকে সে অনেকবার বলব বলব করেও বলতে পারেনি। বলবে ভাবছিল, কিরে ... কাকীমার লঙ্কার আচার কিন্তু দারুণ হয়েছে ... খেয়ে দেখলাম। তারপর বলে দেবে, আর কাউকে টেস্ট করাবি না ?
    কিংবা, চারটে নতুন সুর তুলেছি। তার মধ্যে মনে রবে কি না রবে আমারে, আছে। কিন্তু কেই বা শুনবে ...
    অনেকবার ভেবেছিল এসব বলবে। খুব সাধারণ কথা সব। কিন্তু কিছুতেই মুখ দিয়ে বার করতে পারল না। বারবার কে যেন বলতে যাওয়ার সময় মুখ চেপে ধরল।
    ওই মোড়টায় দাঁড়িয়ে ওপারের দোকানগুলোর দিকে তাকিয়ে এই রকম হাবিজাবি কি সব ভাবছিল সে। এও ভাবছিল, এটা তো রাত্রির পাড়াই বলা যায়, এখানে তার সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে যাওয়া কিছু আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। কিন্তু তা কি আর হবে ?
    তা আশ্চর্যের হোক বা নাই হোক, অমল হঠাৎ পাশ থেকে কাকে বলতে শুনল, ' আরে ... আপনি এখানে ? '
    অমল দেখল তার পাশে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে। রাত্রি ঠিক রাত্রির মতোই দাঁড়িয়ে আছে।
    আবার বলল, ' সিনেমা দেখতে বুঝি ? '
    ---- ' হ্যাঁ ... আজ ছুটি তাই ... '
    ----- ' ভাল করেছেন। হ্যাপি নিউ ইয়ার। আপনারা ছেলেরা কেমন একা একা গিয়ে সিনেমা দেখে আসতে পারেন, আমরা মেয়েরা পারিনা। একজন অন্তত সঙ্গী চাই।
    হাঃ হাঃ ... '
    ----- ' হ্যাপি নিউ ইয়ার। হ্যাঁ ... তা ঠিক। সঙ্গী বা সঙ্গিনী ... '
    ----- ' ওই যা বলেন ...। তা, আপনার গীটার কেমন চলছে ? '
    ----- ' চলছে ভালই। কিন্তু শোনার লোক কোথায় ?
    আপনি তো আর এলেন না ... '
    ----- ' বিশ্বাস করুন একদম সময় পাই না, এত কাজ থাকে। সঞ্চারী প্রায়ই বলে আপনাদের বাড়ি যেতে, কিন্তু সময় করে উঠতে পারিনা। তবে, আপনার গীটার শুনতে খুব শীঘ্রই যাব। আপনি সত্যিই ভাল বাজান। '
    ----- ' অনেক ধন্যবাদ। কবে আসছেন ? '
    ---- ' দেখি, যত তাড়াতাড়ি পারি ... আসলে এখন আবার আর একজনের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে যে ... '
    ----- ' মানে ? '
    ----- ' মানে তেমন কিছু না ... পরে জানলেও চলবে। বছরের প্রথম দিনেই দেখা হয়ে গেল যখন, আপনার সঙ্গে ঘন ঘনই দেখা হবে হয়ত সারা বছর ধরে। সুতরাং সবই জানতে পারবেন ... হাঃ হাঃ ... '
    অমল পরিষ্কার কিছু বুঝতে পারল না কিন্তু কোন প্রশ্ন করতে পারল না এক অজানা উদ্বেগের কারণে। তার অবচেতন হয়ত তাকে জানাল, অত না জানাই ভাল। যতক্ষণ থাকি ভরে দিবে নাকি এ খেলারই ভেলাটাই ...
    খেলার ভেলা ভরার আগেই রাত্রি বলল, ' আচ্ছা এখন তা'লে আসি। বাড়িতেও অনেক কাজ। সঞ্চারীকে বলবেন, আমি যাব একদিন ... '
    ----- ' কোথায় ? '
    ----- ' কোথায় আবার ! আপনাদের বাড়িতে। গীটার শুনতে। সত্যি দারুণ বাজান আপনি ... '

    রাত্রি বটতলা থানা, পূর্ণশ্রী সিনেমা পেরিয়ে চলে যাচ্ছে ছন্দময় পায়ে হাঁটতে হাঁটতে গোয়াবাগান পার্কের দিকে একবারও পিছনদিকে না তাকিয়ে।

    অমল তখনও রূপবাণীর মোড় ছাড়েনি। তৃষিত চোখে তাকিয়ে আছে ক্রমশ দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া চলমান রাত্রির দিকে। চক্ষে আমার তৃষ্ণা, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে ....

    ( এখন এক সপ্তাহের বিরতি )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন