এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ৬৩ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৫১ বার পঠিত
  • দুজনে বৈকুন্ঠ বুক হাউসের দিকে কোণের গেট দিয়ে ঢুকে ধীর পায়ে উত্তর দিকে আসতে লাগল চুপচাপ। দূর থেকেই দেখা গেল প্রতিবিম্ব শিরিষ গাছের নীচে বেঞ্চে বসে একটা লম্বা খাতায় চোখ বোলাচ্ছে।
    কাবেরী নতুন কোন রোমাঞ্চের আভাস পেয়ে নীচু গলায় বলল, ' ওই দেখ ... এসেছে ... চিনতে পেরেছিস তো ... '
    সুমনা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল ----- ' তাই তো দেখছি। হ্যাঁ হ্যাঁ ... মনে আছে। হাঁদাটাকে একবার দেখলেই ঠিক মনে থাকে .... '
    ----- ' কি করা যায় বল তো ? ওর সামনে দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যাবি ... নাকি ... ' কাবেরী বেশ রাগসিক্ত।
    ----- ' না না ... হেঁটে বেরিয়ে যাব কেন ? ওখানে থামব ... মুখোমুখি হব। পাশে বসতেও পারি ... কথাও বলতে পারি ... '
    ----- ' বলিস কিরে ! তুই এত স্মার্ট হয়ে গেলি কি করে ... পাশে বসবি ... কথা বলবি ....অবাক কান্ড ! পারবি তুই ? '
    ----- ' না পেরে উপায় কি ? প্রাণের দায় বলে কথা। '
    ----- ' তার মানে ... তোর আবার কিসের দায় ? মরছি তো আমি ... ' কাবেরী বলল।
    ----- ' সেটাই তো ... তোকে বাঁচাতেই তো আমি এত মরীয়া ... '
    কাবেরী কোন উত্তর দিল না। মানে, কথাটার উত্তর ঠিক কি হতে পারে ভাবতে লাগল বোধহয়।

    হাঁটতে হাঁটতে দুজনে প্রতিবিম্বর সামনে এসে পড়ল। প্রতিবিম্ব খাতা থেকে মুখ তুলে দেখে দুই বন্ধু তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ফুটে উঠল। একবার কাবেরীর দিকে তাকায়, একবার সুমনার দিকে।
    সুমনা ফিক করে হেসে ধপ করে বসে পড়ল প্রতিবিম্বর ডানপাশে।। কাবেরীর মনে বিস্ময়ের বিদ্যুচ্চমক লাগল। সে হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ঘটনার তাৎক্ষণিকতায় তার স্বাভাবিক চিন্তা ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে।
    সুমনা হঠাৎ বলল, ' আয় ... বস না ... দাঁড়িয়ে আছিস কেন ... '
    হতবাক কাবেরীও বসে পড়ল। তবে, প্রতিবিম্বর পাশে না, সুমনার ডানপাশে।
    সুমনা প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে বলল, ' এই যে ... এ হল কাবেরী .... আমার ক্লাসমেট। আমার বুজম ফ্রেন্ডও বলতে পার। তোমার সঙ্গে আলাপ করার জন্য ও খুব আগ্রহী ছিল। অনেকদিন ধরে তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেব বলে ভাবছিলাম। হয়ে ওঠেনি ... আজ হয়ে গেল কেমন ... '
    প্রতিবিম্ব কি বলবে ভেবে না পেয়ে আনাড়ির মতো দাঁত বার করে হেসে বলল, ' ও আচ্ছা ... খুব ভাল লাগল। আবার আসবেন ... '
    খুব সম্ভবত হেদুয়ায় আসবার কথা বলল।
    সুমনা বলল, ' আমি অবশ্য আমাদের ব্যাপারটা ওকে তেমনভাবে বলিনি। এটা আমারই দোষ। আগে বললে ... নিশ্চয়ই আরো আগে পরিচয় হত তোমার সঙ্গে ... তাই না ? '
    প্রতিবিম্ব এবং কাবেরী দুজনই কোন কথা বলল না। সুমনাই বলতে লাগল, ' আসলে আমার তো তেমন তাল জ্ঞান নেই .... তাই কখন কি করার দরকার বুঝতে পারি না।'
    কাবেরী অকস্মাৎ সম্পূর্ণ অন্য অবতারে অবতীর্ণ হল।
    সুমনার বাহুতে একটা চিমটি কেটে কৌতুকভরা স্বরে সপ্রতিভ ভঙ্গীমায় বলে উঠল, ' পাজি, শয়তান , বেল্লিক... তোর তাল জ্ঞান আমি ঘোচাচ্ছি ... চল একবার কলেজে .... '
    সুমনা বলতে থাকে , ' উঃ ... ছাড় ছাড় লাগছে ... হি হি হি হি .... '
    ----- ' লা..গছে ! লাগার জন্যেই তো চিমটিটা কাটা। আর কখনও আমার কাছে লুকোবি কিছু ... বল ... বল ... আমি কি এতই খারাপ রে ... এখনও চিনলি না ! '
    কাবেরীর কথার শেষের দিকে হেমন্তের সাঁঝবেলার সুর লাগল।
    সুমনা নীরবে গভীর মরমী স্পর্শ ভরা একটা হাত রাখল কাবেরীর হাতে।
    প্রতিবিম্ব ওদের দিকে তাকিয়ে গোলোকধাঁধাটার রহস্য বোঝার চেষ্টা করতে লাগল।

    ওই শিয়ালদার মেসের পরিবেশ দীনবন্ধুর তেমন পছন্দ হল না। ওখানকার লোকগুলোও যেন কেমন ধারা। কারণে অকারণে ঝগড়া করা, নিজেদের মধ্যে খিটিমিটি বাঁধানো, ভাত ডাল তরকারি মাছের ঝোল তাদের কথায় 'মুখে দেওয়া যায় না' রান্না নিয়ে গন্ডগোল পাকানো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এই এক মাসের মধ্যেই জনা তিনেক বোর্ডার তার কাছে 'সামনের বুধবার দিয়ে দেব ... দশটা টাকা হবে ...খুব আরজেন্ট দরকার ' গোছের কিছু বলে টাকা ধার চেয়েছে তার কাছে। দীনবন্ধু প্রথমে একজনকে দিয়েছিল। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছে টাকাটা ফেরত পাওয়ার আশা ক্ষীণ। মানে, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। দুটো বুধবার বেরিয়ে গেল , সে ভদ্রলোক উচ্চবাচ্যই করেন না। দীনুর এসব তাগাদা টাকাটা দেওয়ার অভ্যাস নেই। সে বেচারা তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু হা হতোষ্মি ...। একদিন সে আমতা আমতা করে বলেছিল, ' বলছিলাম যে অনেকদিন হয়ে গেল ... দরকার ছিল ... '। সে ভদ্রলোক, নিত্যানন্দ না কি যেন নাম, চান করতে যাবার আগে গামছা পরে নাভিতে সর্ষের তেল লাগাচ্ছিলেন, অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ' কি বলুন তো ... '
    দীনবন্ধুই যেন চোরের দায়ে ধরা পড়েছে। সে ফের অনভ্যস্ত এবং সলজ্জ গলায় বলল, ' না মানে ... ওই যে দশ টাকা দিয়েছিলাম ... '
    ভদ্রলোক আঙুলে তেল নিয়ে নাকে দিয়ে দুবার টানলেন। টানতে টানতে বললেন, ' ও..ও..ও .. তাই বলুন ... আমি ভাবলাম কি না কি ...। আরে বাবা আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি নাকি ... দিয়ে দেব দিয়ে দেব ... ভদ্রলোকের এক কথা ...অত অস্থির হচ্ছেন কেন ? আপনি মশাই ব্যাচেলর লোক। অত টাকার দরকার কি শুনি। ফূর্তি মারানোর ওব্যেস নেই নিশ্চই ... হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃ ... আচ্ছা ঠিক আছে ... চান করে আসি। কলতলা খালি হয়েছে ... ওই কথা রইল তা'লে... '
    কি কথা রইল দীনবন্ধুর মাথায় ঢুকল না কিছুই।
    সে অবশ্য বুদ্ধি করে পরের দুজন ঋণ প্রার্থীকে এড়িয়ে গেছে। তারা আবার দীনবন্ধুর নামে তার আড়ালে নানারকম উল্টোপাল্টা 'পাঁচা' করতে লেগেছে। সেটা আবার মেসের জনৈক সদস্য
    (বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর হবে হয়ত) দীনবন্ধুর কানে তুলে দিয়ে গেল। এগুলোই বোধহয় এদের দৈনন্দিন মনোরঞ্জনের উপাদান।
    সে যাই হোক এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে দীনুর। ভাবল, মেসটা বদলানোর দরকার। পিসেমশাই বলেছিলেন যে তাদের বাড়িওয়ালা বিভূতি জেঠুর জানাশোনা মেস আছে শ্যামবাজারে। ওখানে ব্যবস্থা হতে পারে।
    দীনবন্ধু শুক্রবার অফিস ছুটির পর অঞ্জলি পিসীর বাড়িতে গেল। গিয়ে এক ফাঁকে মেস সমস্যার কথাটা তুলল।
    নিতাইবাবু সব শুনে টুনে বললেন, ' দাঁড়া দত্তবাবুকে বলছি। ওর ভাল খাতির আছে শ্যামবাজারের মেসে। যদি সিট খালি থাকে ... দেখছি দেখছি ...। তুই মালপত্র নিয়ে এখানে চলে আয়। এ ক'দিন এখান থেকেই অফিসে যাতায়াত কর। '

    ( চলবে )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন