একা থাকতে কিছুটা ভয়ই পাই আমি। আকাশপাতাল চিন্তা করতে একেবারে ভালবাসি না, তবু ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা থাকলে সেসব কীভাবে যেন এসেই যায়। তাদের থেকে পালাতে চাইলেই আমি বাইকে উঠে বসে এক্সিলারেশন ঘোরাই। গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গলিতে আসতে না আসতেই বুঝতে পারি আমি পালাতে সক্ষম। কারণ বাইক চালাতে চালাতে অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসে না। আসা সম্ভব নয়। এলে, দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।
লাঞ্চ নাগাদ ২৯৫/৫, সেমুর নার্স আউট । সাত নম্বরে ব্যাট করতে এলেন গারফিল্ড সেন্ট অবারন সোবারস। জীবনে সেই একদিনই তাঁর ব্যাটিং চাক্ষুষ করেছি । একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন ,একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন , ব্যাটিং নয় এ যেন একটা উচ্চকিত হাসি, দূরে গঙ্গায় জাহাজের ভেঁপু বাজলো তিনি খেলে গেলেন এই ছায়া আলোকের আকুল কল্পনে , এই শীত মধ্যাহ্নের মর্মরিত ইডেনে ! এগারোটি বাউনডারি সহ সোয়া ঘণ্টায় ৭০ রান ! পরের দিন নতুন কায়ায় আবির্ভূত - কখনো স্পিন কখনো মিডিয়াম পেস । একটা শিখতে জীবন কেটে যায় আর ইনি পারেন না এমন কিছু নেই! একই অঙ্গে এতো রূপ ?‘
এই যে আপনারা, মানে যারা জুনিয়র বা সাব জুনিয়ার সিটিজেন, তাদের যে জিনিস দেখে আমি মুগ্ধ হই তা হচ্ছে আপনাদের গভীর আত্মবিশ্বাস আর দুঃসাহস। আমরা সিনিয়র সিটিজেনরা, কীরম একটা ন্যাকাটে ও ক্যাবলা কার্তিক ছিলাম। এখনো। তো, সেই সময়টাই সেরকম ছিল। মা বাবা গুছিয়ে ক্যালাতো, অংকের মাস্টারের তো কথাই নেই। এমন কি ভূগোলের মাস্টার মশাইও সাতটা রাজধানীর নাম না বলতে পারলে উত্তাল পেটাতেন। "শালা" বলেছি, শুনতে পেয়ে পাড়াতুতো এক কাকা উদ্যোগ নিয়ে কান মলে দিতেন। সে এক মুক্তাঞ্চল।
আমাদের ধারণা ছিল কলেজের ছেলেমেয়েরা তো বড় হয়েছে, এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে ওদের সচেতনতার শিক্ষা খুব বেশি প্রয়োজন নেই, কারণ টেলিভিশন বা সমাজ মাধ্যমের কারণে এরা সব কিছুই দেখেছে, শুনেছে, জেনেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখলাম একেবারেই ভুল ভেবেছি। যেহেতু প্রথম ঢেউয়ে গ্রাম তেমনভাবে আক্রান্ত হয়নি, তাই এই ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই অসুখটার ণত্ব ষত্ব কিছু জানেনা। টেলিমেডিসিন কি, অসুখের প্রোটোকল কি? কতদিনের মধ্যে কী ধরণের পরীক্ষা করাতে হবে, পরীক্ষা কোথায় হয়? অক্সিজেন কেন, কখন লাগতে পারে এগুলো তারা বিশেষ কিছুই জানেনা। তাছাড়া বেশিরভাগের বাড়িতে অক্সিমিটার তো দূর থার্মোমিটার পর্যন্ত নেই।
ন্যামওয়েজিদের কিছু অদ্ভুত রীতি আছে। একটা বাচ্চার জন্মের পরে তার বাবা পিতা নাড়িটা কেটে ফেলে আর সেটা নিয়ে রাজ্যের সীমানায় গিয়ে সেখানে মাটিতে পুঁতে দেয়। যদি সে জায়গাটা একটি নদী হয়, তাহলে নদীর পাড়ে পুঁতে দেয়; তারপর একটা গাছের শিকড় নিয়ে সে ফিরে আসে, আর বাড়ি ফিরে নিজের দরজার চৌকাঠে সেটা পুঁতে দেয়। তারপর সে তার বন্ধুদের জন্য একটা ভোজের বন্দোবস্ত করে। একটা বলদ বা গোটা ছয়েক ছাগল মারে, পোম্বে বিলোয় সবাইকে। যমজ সন্তানের জন্ম হলে, তারা কখনই একজনকে মেরে ফেলে না, বরং সেটা আরও বড় আশীর্বাদ মনে করে।
কেল্লায় যে এত ভূতের বসবাস আমি নিজেও তা জানতাম না আগে, আমি তো সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একদিন হলেও কেল্লায় যাই, কিন্তু কেল্লার ভেতরে জ্বিন দেখার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। একবার তো কেল্লার জঙ্গলে ঢাকা বেগম মহলে ভরা শীতের সময় প্রায় সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত ছিলাম, কিন্তু সেদিনও সেখানে কিছুই দেখতে পাইনি—তবে নিশ্চয় কোনো না কোনো দিন ঠিকই কেল্লার ভেতরে জ্বিনের দেখা পাবো—এই আশা রাখি।
রেভনিউ মিনিস্টার। মিনিস্টার বটে বাবা! উনিশশো তিরিশের কলোনিয়াল পাঞ্জাবের পি এম সিকান্দর হায়াতের ক্যাবিনেটের মন্ত্রী। নাইটহুড পেয়েছিলেন ছোটুরাম। হো! জাঠের রক্ত! ছোটুরামের জমিন্দার লিগে হিন্দু, মুসলমান, খেরেস্তান সব ছিল। ফাজিল হোসেনের সঙ্গে যোগ ছিল। হো! কৃষক ঋণে সুদের ওপর সুদ চাপানো বন্ধ করেছিলেন ছোটুরাম। পাঞ্জাব ডেবটরস প্রোটেকশন অ্যাক্ট। আর পাঞ্জাব রিলিফ ইনভেবটেডনেস অ্যাক্ট। সুদখোরদের হাত থেকে বাঁচল কৃষক। আর বাঁচল জমির দখল পেয়ে। কিন্ত জল? পানি? হো!
দেহটা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল পিঠের সিংহাসনটাতে, কিন্তু তেলের কাঁটার সাথে সঙ্গত করতেই কিনা, গাড়িটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। সিগনাল বাতি নেই, তাও এই জ্যাম! ‘’রাস্তায় নামলেই পাব্লিকের নাটকের আল্লাদ উডে… পাংখা গজান আরম্ভ করে…’’, বিড়বিড় করতে থাকে মারুফ গায়ের ক্যাটক্যাটে হলদে গেঞ্জিটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে। গেঞ্জিটা বুক পর্যন্ত উঠাতেই বেরিয়ে পড়ে রোমশ শরীরটা, এক রত্তি মাংস বাড়তি নেই কোথাও, হাড্ডিগুলো গড়েপিটে উঠেছে সেখানে বাইশটি বছর ধরে, তেল-মসলার কারুকাজ ছাড়াই। কিন্তু এই শরীরটারই চাকায় চাকায় বেজে চলে রাজপ্রাসাদী তান, যখন এক মনে আল্লা-খোদা করে যেতে থাকে তার পিছনে দন্ডায়মান এক দল নিরীহ ও নিপীড়িত যান! সংগীতটা আরো সুমধুর হয়ে উঠে, যখন সে বড় রাস্তা ছেড়ে গলিতে ঢুকে পড়ে। তখন জায়গার অভাবে তার জ্যাকটাকে সাইড দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে মরাকান্না জুড়ে দেয় আগের থেকেও নিরীহ ও নিপীড়িত কিছু যান। মারুফ আপন মনে হেসে উঠে! এমন কোন প্রাণী আছে যে রাস্তার বুকে চড়ে বেড়াবে আর তাকে সমীহ করবে না? তাকে নিয়ে রাস্তার সবার দুশ্চিন্তা, অথচ কারো মুখে রা পর্যন্ত নেই! পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, এমনকি মন্ত্রী- মিনিস্টারের গাড়িকে গুণতে চায় না পাব্লিক আজকাল! কিন্তু তাকে কেউ কিছু বলে না, গালাগালির তুবড়িও ছুটে আসে না। কি করবে, মানুষ যে ময়লা সহ্য করতে পারে না; টিয়ার গ্যাস, গুলি হজম হলেও ময়লা হজম হতে চায় না তাদের! বাসার পায়খানাটার মতই ঘেন্না একে তাদের!
এখানেই শেষ নয়। প্রচুর প্রাইভেট কোম্পানি আছে যেখানে কর্মীদের বসেরা 'বাপের চাকরে'র মতো করে ট্রিট করে। প্রচুর কোম্পানিতে লোকজনকে তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা চলে। এটা বিশেষ করে ঘটে একজন জুনিয়র এমপ্লয়ির সাথে। একটি কল সেন্টারের কথা শুনেছিলাম যেখানে জুনিয়র বা সদ্য জয়েন করা কর্মীরা সময়মতো পৌঁছেও কোন এক রহস্যময় কারণে কিছুতেই যথাসময়ে লগইন করতে পারতেন না। ফলে, সিস্টেমে সর্বদাই তাদেরকে দেখানো হতো লেট হিসেবে। এইভাবে সারাদিন কাজ করেও তারা দিনের শেষে বাড়ি ফিরতেন অর্ধেক কাজের স্যালারি নিয়ে।
আগের বার পোস্ট গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। আবার ট্রাই করলুম।
একেই মন স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে আছে, তারপরে যাচ্ছেতাই রকমের ঠান্ডা পড়েছে! রাত পৌনে এগারটা বাজে, বিছানায় বসে একটা চিঠি লিখছি, সেটাও লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে। বাইরে কনকনে হাওয়া ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে। “ইস্পাত শীতল” বলে একটা কথা বইতে পড়েছি, সেটা বোধ হয় এই রকমই কিছু। চেকভ লিখেছিলেন, “মন যখন খুশি থাকে তখন লোকে খেয়ালও করে না শীতকাল চলছে, না গ্রীষ্ম।” তা লিখুন, মহামানবরা অমন অনেক কিছু লিখে টিখে থাকেন, যেগুলোর কোটেশন ছাড়া অন্য কোনও ব্যবহার নেই সাধারণজনের কাছে (এই যেমন আমি দিলাম)।
নয়না নাকছাবি ঝলসিয়ে সায় দিল। কমন পিপলস হিস্ট্রি। দ্যাট ইজ ইম্পরট্যান্ট। সাধারণ মানুষের জীবন। কোনকালে কোন রাজাবাদশা তার তেমন খবর রেখেছে! দুল্লা ভাট্টি আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। মুসলমান রাজপুত। আবদুল্লাহ ভাট্টি। সন অব পাঞ্জাব। পাঞ্জাবের রবিন হুড।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—অনেকে জানলেও, এখনও বেশিরভাগ মানুষই জানে না, যে—এই ভারত জোড়ো অভিযান ছিল যোগেন্দ্র যাদবের ‘ব্রেন চাইল্ড’। তিনি জানতেন এই অভিযান রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে করা সম্ভব হলে সমাজে ও রাজনীতিতে তার প্রভাব হবে অপরিসীম এবং নির্ণায়ক। সেই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করতে দীর্ঘদিন যোগেন্দ্র যাদবের টিম অসীম ধৈর্য সহকারে রাহুল, প্রিয়াঙ্কা ও তাঁদের মা সোনিয়া গান্ধীকে বুঝিয়েছেন, আশ্বস্ত করেছেন এর সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক সুফল সম্পর্কে। কারণ, কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশ বিষয়টিকে খুব একটা সুনজরে দেখেননি এবং এক অজানা আশঙ্কায় এটিকে অনাধিকার চর্চা বলেই মনে করেছেন। এমনটা যে বাস্তবে সম্ভব—অনেকেই তা ভাবতে পারেননি। এই যাত্রার সাফল্য নিয়ে সংশয় ছিল খোদ রাহুলের ও তাঁর পরিবারেরও।
মালবিকা একটা শ্বাস আটকালেন। কলকাতা শহর এখন একটি বৃহৎ গ্রাম যেখানে সবরকমের কূটকাচালি অ্যাভেইলেবল। গ্র্যান্ড ফর্ম টু দ্য মিনেস্ট ফর্ম। রীণা যোশি বিয়ে করছে খুব শিগগিরই, এই খবরটা মালবিকার কানে এসেছে। যে বলেছে সে বেশ সাজিয়ে গুছিয়েই বলেছে, গয়নাগাটি পরিয়ে। মালবিকা অলংকার খুলে সার সত্যটি বুঝে নিয়েছেন। ত্রিদিবের সঙ্গে উদ্দাম ফূর্তির দিন শেষ। রীণা এবার সোশ্যাল সিকিউরিটি খুঁজছে। কাজেই ত্রিদিবের ঘর শূন্য। হাতের ও ঝোপের উভয় পাখিই অদৃশ্য।
কে এই ভক্ত? কিসে তাঁর ভক্তি? চিত্তটিই বা কার কাছে প্রণত?
তাদের মাঝখান থেকে তাপ্তী, তরুণকে এক হ্যাঁচকা টানে তুলে ফেলে টানতে টানতে আমাদের দিকে নিয়ে আসতে লাগল। এমন সময় দুই ডাইনোসরের যুদ্ধে একটা গোটা গাছ আমাদের চারজনের মাঝখানে এসে পড়ল। তরুণকে যখন এদিকে আনার চেষ্টা হচ্ছে তখন আমি হঠাৎ আমার পকেটে একটা দড়ি আবিষ্কার করলাম। একটা পাথর ঐ দড়ির মাথায় বেঁধে আমি তরুণদের দিকে ছুড়ে দিলাম। সেটা পড়ে যাওয়া গাছের ওদিকের একটা ডালে আটকাল। তরুণ দড়ি বেয়ে সহজেই এদিকে চলে এল। কিন্তু তাপ্তী যখন দড়ির কাছে যেতে যাবে, তখন ভয়ংকর এক চিৎকারে আমরা সবাই চমকে গেলাম। দেখা গেল যে, টি-রেক্স অ্যালোসরাসকে ঘোরতর যুদ্ধে পরাজিত করেছে। তাপ্তী ততক্ষণে দড়ি বেয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে। ডাইনোসরটা এবার তাপ্তীর দিকে এগোতে শুরু করল। তাপ্তী গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে এক হ্যাঁচকা টানে দড়িটা ছাড়িয়ে ছুট দিল।
কিন্তু গোলুর মনকেমন যায় না। ক্রমশ বাড়ে। চোখের সামনে মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালো লাগছে না গোলুর। হঠাৎ আকাশ থেকে একটা শিউলিফুল এসে পড়ে। একটু বড়! গোলু যেই না হাতে নেয়, ফুলটা কথা বলতে শুরু করে। বলে, "গোলু, তোমার মনে আছে মেঘ দিদির কথা?" গোলু বলে, "হ্যাঁ। কেন বলো তো?" "ওই আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমার দুঃখ মেটাতে। কি হয়েছে তোমার?" শিউলি ফুল বলে ওঠে। কিন্তু গোলু কিছু বলেনা। ওর মনে হয় স্বপ্ন দেখছে। গোলু বলে, "জানো তো, ওই যে মুখুজ্যেদের বাড়ির কাছে, একটা মেয়ে বসে আছে, পুরনো গোলাপি জামা পরে, ওর খুব কষ্ট। পুজোয় একটাও জামা হয়নি। খুব দুঃখ। এদিকে দেখো।
দুল্লা ভাট্টি।সম্রাট আকবরের আমল।মধ্যপ্রাচ্যে হিন্দুদের মেয়েরা পাচার হয়ে যেত।আকবর বন্ধ করেছিলেন এই পাচারের সুন্দ্রি আর মুন্দ্রি দুটি বোন।পাচার হয়ে যাচ্ছিল তারা। আকবর উদ্ধার করেছিলেন তাদের। সেই বোনদের নিয়ে গান।সুর টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে শীতশস্যে। আমেলিয়া একটি শিশুর জননী হয়েছেন বটে, কিন্ত তাঁর মধ্যে থেকে এখনো মুছে যায়নি প্রায় কিশোরী চাঞ্চল্য, বিস্ময়বোধ।তদুপরি আদিগন্ত প্রেম। আর্মেনিয়ান সংস্কৃতিধারা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়েও তিনি ধর্মবোধে প্রোথিত, আবার বিবাহসম্পর্কে একটি অন্য ধর্ম, অন্য সংস্কৃতি! এত ব্যাপ্তি তাঁর মধ্যে দোলা দিয়ে যাচ্ছে
এক নতুন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মুখোমুখি কিছু কথা এখানে নিউ ইয়র্কে।
এই সেকেন্ড ওয়েভ নাকী বড় মারাত্মক। প্রথম ওয়েভের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কে জানে! তাই কী শুকদেবের অমন শক্ত প্রাণ চলে গেল! কী হা হা করে উদার হাসি! স্বতঃস্ফূর্ত। প্রাণবন্ত। কৃষ্ণের মত কূট নয়। অথচ সখা।
উনাদের কাণ্ড দেখলাম। উনারা একটা বারের উল্টো দিকে বন্ধ দোকান আছে এমন একটা জায়গায় বসে পড়লেন। তারপরে অবাক হয়ে, হা করে অনেকটা বলা চলে সামনের চলমান সিনেমা দেখতে থাকলেন! আমি নতুন মানুষ, যা দেখি তাই আশ্চর্য লাগে, অবাক হয়ে দেখি শুধু। একটু পরে বোধ বুদ্ধি ফিরলে মনে হল আরে করতেছি কী আমি এখানে! অর্ধনগ্ন নারী নাচছে এই দৃশ্য কতক্ষণ দেখা যায়? উনারা আমাকে রেহাই দিলেন। বললেন, চল একটু ঘুরে আসি। চললাম। প্রচুর মানুষ, সব বারে একই দৃশ্য। কাস্টমার ধরার জন্য নানা ফন্দি। আমি দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকলাম। উনারা এবার যা করলেন তা হচ্ছে গলির ভিতরে তস্য গলি খুঁজে বের করলেন। চিপা একটা গলি, ওই গলির দুই পাশে পানশালা, ভিড় প্রচুর। যেহেতু জায়গা কম ঠ্যালা ধাক্কা খাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। তার মধ্যে দোকানদারদেরই বুদ্ধি না মানুষ নিজেই এই কাজ করছে জানি না, ওই অল্প জায়গায় বিকট শব্দে গান বাজিয়ে নাচছে! কোন রকমে ঠেলে ঠুলে পার হলাম গলিটা। ওই পাশে উনারা অপেক্ষা করছেন। যা বললেন তা শুনে আমি মনে মনে কইলামও হরি, রক্ষা কর আমারে!
হয়তো ২০৫০ এর আগেই বিশ্বজুড়ে ক্লাইমেট ক্রাইসিস এমন একটা চেহারা নেবে যে গোটা পৃথিবী আর সবকিছু লাটে তুলে এই বিপদ কি করে সামলানো যায় সেই দিকে ফোকাস করতে বাধ্য হবে! অর্থাৎ, Covid প্যান্ডেমিকের সময় যেমন সারা পৃথিবীর ডাক্তার, বিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ এবং আরো অনেকে এক হয়ে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি সামাল দিতে, তেমনই আর একটা অবস্থা হয়তো আমরা আমাদের জীবদ্দশায় দেখতে চলেছি এই বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে। তবে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই সস্তা হবেনা।
হলফ করে বলতে পারি নিজের চোখে দেখা—কনটিনেন্টাল ব্যাঙ্ক ফ্রাঙ্কফুর্টের অফিসার জামিনদাতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরে তাঁর বিবরণীতে (কল নোট) লিখছেন: “আমাদের দীর্ঘ মধ্যাহ্ন ভোজনের শেষে, কফি পান করার সময়, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সি-ই-ও জামিনদাতা—হের ফিশার—বললেন, তাঁরা এই কোম্পানির সমর্থনে আছেন ও থাকবেন”। তখন ঠিক কটা বাজে, কোন দিন, কফির আগে না পরে এই রূপ আশ্বাসবাণী দেয়া হয়েছিল, তার ফিরিস্তি দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল কে জানে। জার্মানি ছেড়ে আসার আগেই এই আশ্বাসবাণী যে ঋণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি, তার বহুত নমুনা দেখে এসেছি।
কারা টাকার অ্যানাউন্স করেছিল ওই ছিন্নভিন্ন শরীরগুলোর পিছু। কাদের ভোট পাওয়ার আশা ছিল ওই লাশগুলো দেখিয়ে। এই আশপাশের ভিড়ের ভেতর কোন মুখগুলোর যেন চাকরি পাওয়ার আশা জেগেছিল ওই লাশ সাজানোর মঞ্চের মাইকের ঘোষণা থেকে। চাকরি হবে কি হবে না! আর হল না বোধহয়। ভেবেছে তারা অনেকদিন। যাদের লাশের কথা বলা হয়েছে তারা অনেকেই ছিল পরিবারের রোজগেরে। রোজগেরে মানুষের না থাকায় বে-রোজগেরে বাচ্চারাও কীভাবে রোজগার করে বেঁচে গেছে। লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ভোট পার হয়ে গেছে। আসল ভোট, ছাপ্পা ভোট মিলে ভোট কাউন্টিং হয়ে জিতে গেছে। তারিখ-সন পার হয়ে গেছে। চাকরি হয়নি।
কলকাতায় রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে কোন ধর্মীয় মিছিলকে উপলক্ষ করে শুরু হয়ে গেল হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলকাতার সঙ্গে কাজির নিত্য-যোগাযোগ, দাঙ্গার খবরে বিপর্যস্ত সে। এবারের সম্মেলন উপলক্ষে সে যে উদ্বোধন সঙ্গীত রচনা করল – পরে সেই সঙ্গীত বিশ্বখ্যাত হয়েছে, সুভাষচন্দ্র সদর্পে বলেছেন, আমরা জেলেই থাকি বা জেলের বাইরে, এই গান আমাদের সব সময় উদ্দীপিত করবে, সব সময় এই গান আমরা গাইব। লিখেই তার বন্ধু দিলীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে, একটা গান লিখেছি, স্বরলিপি পাঠাচ্ছি তোমায়। এখনকার এই দাঙ্গার সময়ে, এই গান আমরা দুজনে একসঙ্গে গাইব এবারের প্রদেশ কংগ্রেসের উদ্বোধনে: দুর্গম গিরি কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার।
শুধু ভয় দেখানো খবর আছে। সেন্টিমেন্ট আছে। কিন্তু প্রশ্ন নেই, চ্যালেঞ্জ নেই। কোনো দায় স্বীকার নেই।
...সমস্ত বার-ব্রত-তিথি-নক্ষত্র পালনে তিনি স্বয়ং মনুর থেকেও নিষ্ঠুর এবং অমোঘ।
তখন আমি বিশ্ববাঙালি হই নি, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল পড়াই। ভূগোলের পাঠ্যবস্তুর একটা অন্যতম অংশ ছিল ক্ষেত্রসমীক্ষা। তখনকার দিনের ভূগোলের নিয়মকানুন ও ঐতিহ্য অনুসরণ করে, এধরণের যাত্রায় আমরা দূরদূরান্তরের নানা অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করতাম। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে বেশির ভাগ শিক্ষক ও শিক্ষিকারাই পাঠ্যের এই অংশটি অপছন্দ করতেন। হয়তো তাঁদের পরিবার-সংসার ও দৈনন্দিন জীবনে সকলকে সামলে ছুটির ফাঁক বের করার সুযোগ ছিল কম। তাছাড়া অনেকগুলি সদ্য টিন-উত্তীর্ণ, বক-বকন্দাজ যুবক-যুবতীর সঙ্গ সকলের ভালো লাগারও কথা নয়।
কৃষি কর্পোরেট হয়ে যাওয়া কি সাপোর্ট করা যায়? এরমধ্যেই পাঁচ লাখ মেট্রিক টন শস্য ভর্তি গুদাম আদানির খপ্পরে চলে গেছে, জানেন? তিনলাখ মেট্রিক টন ফুড কর্পোরেশনে। এরপরে কী হবে বুঝতে পারছেন?
আমাদের আসার দিনক্ষণ জেনে বড়দাদী মুসার মাকে দিয়ে বাসা পরিষ্কার করিয়ে রাখে। উঠোন জুড়ে পড়ে থাকা পাতা এক জায়গায় জড়ো করা, কলঘরের মেঝে বালু দিয়ে ঘষে ধুয়ে রাখা, টাইমকলের জল চৌবাচ্চায় ভরে রাখা—এসব কিছু বড়দাদী দাঁড়িয়ে থেকে করায়। আর আমরা বাসায় পৌঁছাতে না পৌঁছাতে হরিপদ ঘোষ ঘটি ভরে রোজকার দুধ দিয়ে যাওয়া আর রহিম চাচাকে বাজারে পাঠিয়ে আনাজপাতি কিনে আনা – এ সবকিছুও হয় বড়দাদীর আদেশে।
আমরা মনখারাপের সঙ্গে লড়াই করার জন্য কলেজে মাঝেমাঝেই মনোবিজ্ঞানীদের নিয়ে ওয়েবিনার করছিলাম, যাতে তাঁরা আমাদের বাঁচার কোন পথ বাতলে দিতে পারেন। তাঁরা বলেছিলেন বই পড়তে, বিশেষ করে জীবনীমূলক বই। পরীক্ষা শেষ হবার পর, আমি পূর্ব দিনের মহামারীগুলি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম স্বামী বিবেকানন্দের লেখা প্লেগ ম্যানিফেস্টোর প্রথম কয়েক লাইন বাদ দিলে প্রায় পুরোটাই যেন করোনার সাবধানতার সঙ্গে মিলে যায়। সেই একই পরিচ্ছন্নতার বার্তা, টাটকা আর পুষ্টিকর খাবারের পরামর্শ। ডাক্তার আর জি করের প্লেগের ওপরে লেখা একটি বই হাতে এলো। নতুন করে ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয় কুমুদিনীর বাবা কৃষ্ণকুমার মিত্রের আত্মচরিত পড়লাম। হজরত মহম্মদের ওপরে লেখা তাঁর বইটি আন্তর্জালে খুঁজে পেলাম। অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে জগৎ ভুলে পাগলের মত কেবল পড়েই যেতে লাগলাম। বই থেকে মুখ তুললে যত রাজ্যের আতঙ্ক এসে ধরে, তাই কেবল বইয়ের আড়ালে আড়ালে আমার দিন কাটতে লাগল।
মধ্য আফ্রিকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপজাতি হল ন্যামওয়েজিরা। আমার কাছে একজন ন্যামওয়েজির সৌন্দর্যের আদর্শ হল একজন লম্বা দীর্ঘপদ কালো মানুষ, ভালো মানুষের মতন সদা হাসিভরা মুখ, হাসির ফাঁকে দাঁতের উপরের সারির মাঝখানে একটা ছোট গর্ত দৃশ্যমান। সে যখন বালকমাত্র, তখন তার গোত্র বোঝাতে এই গর্তটা তৈরি করা হয়েছিল। তার গলার থেকে শত শত লম্বা তারের ঝুমকো ঝুলছে; মানুষটা প্রায় নগ্ন হওয়ায় তার গোটা সুন্দর শরীরটা দেখতে কোন অসুবিধা নেই।
লকডাউন পিরিয়ডটা অনেককিছু শিখিয়ে দিল ত্রিদিবদা। আই হ্যাভ লার্ন্ট আ লট। আগেও অনেককিছু শিখেছি। কিন্ত এই কোভিডটাইমটা আমার দশবছর বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে। ত্রিদিব নিজেকে সামলাতে পারলেন না।
পুলিশ কাস্টডিতে অসংখ্য অত্যাচারের চিহ্ন শরীরে। নারী শরীর। তাকে অত্যাচার করে মজা আছে। সুবিধেমত। তারপর দলিত। দলিত মেয়েদের রেপ করলে, অত্যাচার করলে অত কেউ মাথা ঘামাবে না। প্রতিদিন কিছু মেয়ে ধর্ষিত হয়। নোবডি কেয়ার্স। তবু নামটা মিডিয়া তুলে আনল কেন?
পুনরাধুনিক। পড়ে বলবেন কিন্তু।
আরেকবার রিলকে। আপনারা পড়ছেন তো?
ঝুরো ঝুরো জীবন
আজ এক্কা দোক্কা খেলছিল ওরা, পাশ থেকে হঠাৎ শুনতে পেল, “এটাকে পাগলা গারদে দেয় নাকেন রে? মাথায় তো আমার ঠাকুমার থেকেও বেশি ছিট, হি হি হি”, কাকে নিয়ে ঠিক কথাটা বলল বুঝতে পারল না ঠিক তিথি, ওরা আর তিথিরা ছাড়াতো কেউ নেই। “কীরে তোর পালা তো এবার” শতাব্দীর ডাকে আবার খেলায় মন দিল সে, যদিও মনটা খচখচ করতে থাকল, কারণ মাঝে মাঝেই দেখেছে লোকে অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চেয়ে থাকে, হাসাহাসিও করতে ছাড়ে না আড়ালে, যেমন নীলাকাকিমা চেয়েছিল আজ। বৃষ্টি বা ঠাণ্ডার দিন ঘরে ওরা লুডো বা দাবা-টাবা খেললেও মাঝেই মাঝেই মাকে একদুৃষ্টে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, অথচ ও বুঝতে পারে না ওর দোষটা কোথায়! বাইরে ফিটফাট পরিপাটি হয়েই বেরোয় ও, শতাব্দীও তাই, তবুও। আচ্ছা, আজ কী ওর সম্পর্কেই কথা বলছিল ওই দাদাগুলো?
বলছিল হয়ত, সে যাক।
ছোট করে চুল কাটলে আমাকে একদমই বাঙালী বলে চেনা যায় না সেটা আবার আজ টের পেলাম। আর এমনিতে আমাকে দেখে ঠিক কি মনে হয় সেটারও রিমাইন্ডার এসে গেল আজ আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্সে ওনম উপলক্ষ্যে মেলা টাইপের বসেছে - নানা ধরণের নারকেল তেল বিক্রী হচ্ছে খুব। কি খাওয়া সেফ হবে সেই ভাবতে ভাবতে দেখতে পেলাম এক দোকানে লস্যি পাওয়া যাচ্ছে। একবোতল ম্যাঙ্গো আর একবোতল স্ট্রবেরী কিনে বগলদাবা করে ফিরছিলাম, সেই দোকানী ভালোবেসে কাগজের ঠোঙায় প্যাক করে দিল সেই প্যাকিং নিয়ে আমি লিফটে ঢুকে দেখি এক দম্পতি। লোকটি আমাকে আপাদমস্তক দেখে হিন্দীতে বলল - - অ্যাই সুইগি ভাই, তুমি এই লিফটে কেন? ভেন্ডরদের জন্য যে লিফট আছে সেটায় যাও নি কেন? - আমি তো সুইগি নয়! - তাহলে জ্যমেটো হবে! তোমাদের তো কোম্পানী লেখা টিশার্ট থাকে। সেটা পর নি কেন?
‘ चलो अब घर चलें ‘ – और चल दिये सब, मरेंगे तो वहीं जा कर जहां पर जिदगी है ! – गुलजार
নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের কথা বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা তো মাথায় আসেই, তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের কথাও। ক্লাস সেভেন বা এইটে কোনোভাবে হাতে এসেছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনবদ্য অনুবাদে ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী’। আমারই বয়সী একটি মেয়ে, যে বয়সে আমরা স্কুলে যাচ্ছি, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছি, কেউ আঁকছি, কেউ গান গাইছি, কেউ বা তবলায় হাত পাকাচ্ছি, সেই বয়সেই, অ্যানা নামের একটি মেয়ে লুকিয়ে পড়েছে অন্ধকার ঘরে, বাইরে বেরনো বন্ধ, স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে দেখা করা, খেলাধূলা, এমনকি গান-বাজনা পর্যন্ত বন্ধ, পাছে কেউ দেখে না ফেলে, পাছে কেউ শুনে না ফেলে। বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে ভেতরে কয়েকটা গুপ্ত ঘরে লুকিয়ে রয়েছে আটটা তাজা প্রাণ (ডুসেল, আরেক প্রতিবেশী অবশ্য পরে যোগ দেন)। পড়তে পড়তে আনা-র সঙ্গে যেন আমিও ঢুকে পড়েছিলাম সেই গুপ্ত কক্ষে, ভাগ করে নিচ্ছিলাম অজানা আশঙ্কার মুহূর্তগুলো!
ঝুরোগল্প
সেঙ্গোল যতখানি রাজতন্ত্রের প্রতীক, ততখানিই ব্রাহ্মণ্যবাদের। যে ব্রাহ্মণ্যবাদকে নেহরু বাতিল করেছিলেন, মোদি এখন তাকেই সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করছেন।
প্রতিবছর দেশপ্রেমের নূতন নূতন পরীক্ষা এসে হাজির হচ্ছে। নামমাহাত্ম্য, দেশভক্তি, আবেগ, ইতিহাস আর প্রযুক্তির এক জোরদার ককটেল এখন তৈরি হচ্ছে।