ইরমের আড়ালে কা তব কান্তা কস্তে পুত্র - কাফি কান্ড আছে মেড়া জানে সূত্র। পাঠান বা জওয়ান - কেবল ফাইটিং, ওড়াউড়িং, ল্যান্ডিং, কামানিং, ট্রাকিং, হেলিকপ্টিং - নতুন আমদানি মেট্রো হাইজ্যাকিং।
এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের (ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে।
আফ্রিকার সঙ্গে আমার কাব্যিক পরিচয়, আমার চেতনার ঊষাকালে। কোন কোন রোববার, রবি ঠাকুরের সঞ্চয়িতা খুলে আমার পিতৃদেব আমাদের কিছু কিছু কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল “আফ্রিকা”। মা বলতেন, “ওইটুকু ছেলে এই কবিতার মর্ম কী বুঝবে?” বাবা বলতেন, “মর্ম এখন নাই বা বুঝল। এই অমোঘ শব্দ-চয়ন, অন্ত্যমিলহীন ছন্দের এমন ঝংকার, বিষয়ের ব্যাপ্তি, নিষ্ঠুর সভ্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এমন মানবিক আবেগ। এগুলোই আপাততঃ ওর মনে বসত করুক না - মর্ম উদ্ধারের সময় তো পড়েই রইল আজীবন”। আমার প্রতি তাঁদের উভয়ের বিবেচনায় এতটুকু ফাঁকি ছিল না। আর বড়ো বিলম্ব হলেও, ওই কবিতার মর্মোদ্ধার হল, হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের “আমার আফ্রিকা” গ্রন্থটি পড়ে।
বাইরে থেকে রোপণ করা বা এনগ্র্যাফটেড আধুনিকতার যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সমস্ত ভারতবাসী হয়ে উঠলো নাগরিক, খানিকটা হঠাৎ করেই। লক্ষণীয় যে যেখানে ইউরোপের একটি বড়ো অংশ প্রায় ৩০০ বছর ধরে ধীরে ধীরে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, ভারতে তা অর্জিত হয়েছে মাত্র কয়েকটি দশকে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে ব্যক্তির অভ্যুদয়, রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তি-নাগরিকের সহাবস্থান, সমাজ বা কৌমের অবস্থান বিলুপ্ত হওয়া এবং সমাজ জীবনে ধর্ম-নির্লিপ্ততার (সেক্যুলারিজম) পরিসর তৈরি হয়েছে ভারতে তা হয়নি।
"আ-আই হ্যাভ আ কোয়েরি।" মা তাকাল আমার দিকে। "তোমাদের… ডিভোর্স হল ফর দিস রিজন?” "মেনলি। একবার ওকে না বলে একটা এনজিওতে ডোনেট করেছিলাম বলেও প্রচুর ঝামেলা করেছিল।... আরও কিছু খুচরো প্রবলেম ছিল। তবে সে সব কম বেশি সব ফ্যামিলিতেই থাকে। তবে ওই… সব যোগ হয়ে ব্যাপারটা ক্রমশ পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের দিকে চলে গেল। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম কোনও টান আর নেই আমাদের মধ্যে। মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেল। তুই তখন ছোট, ক্লাস ফাইভ, তাই আমিই তোকে পেলাম। তোকে আঁকড়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্ত…."
প্লেটের দিকে তাকিয়ে সেদিন সর্বপ্রথম যার মুখটা ভেসে উঠল তিনি আর কেউ নন আমাদের ক্লাশ ইলেভেনের বায়োলজি স্যারের। স্যারের বয়স হচ্ছিল, শরীর তেমন সাথ দিচ্ছিল না – তবুও তিনি আমাদের ফিল্ড ট্রিপে নিয়ে গিয়ে গাছ-পালা চেনাবার চেষ্টা করতেন। আমরা কিছুই শিখি নি – সেটা অন্য ব্যাপার, তাতে স্যারের দিক থেকে খামতি কিছু ছিল না। তো সেদিন প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছি, আর মনে মনে ভাবছি এই প্লেট স্যার সামনে পেলে আর আমাদের কষ্ট করে বর্ধমানে রমনার পার্কে নিয়ে গিয়ে গাছপালা চেনাতে হত না! ক্লাসে বসেই যত অচেনা আর অখাদ্য শাক পাতার বিবরণ সহ পরিচিতি হয়ে যেত!
আমাদের ভারতবর্ষ যখন ‘আজাদির অমৃত মহোৎসব’-এ বুঁদ হয়ে আছে সেসময়ও কি ভারতের টুকরো হয়ে যাওয়াকে বাদ দিয়ে কোনভাবে লেখা যায় এ দেশের টুকরো হয়ে যাবার কোন কাহিনী? জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে তাঁর Remembering Partition: Violence, Nationalism and History in India (২০০৩) গ্রন্থের গোড়াতেই দু’টি প্রশ্ন তুলেছেন – (১) সরকারি সহস্র-অযুত বয়ানের মধ্য থেকে ‘ইতিহাস’ কিভাবে ‘সত্য’-কে (১৯৪৭-এর হিংসার সত্যকে) জন্ম দেবে, (২) সেদিনের সেই চরম মুহূর্তগুলোকে আজকের ইতিহাসে কিভাবে “struggle back into history” ঘটাবে? (পৃঃ ৪) এ গ্রন্থেরই অন্তিমে লেখক এক জরুরী প্রশ্ন রেখেছেন – “What would it mean to imagine India as a society in which the Muslim does not figure as a ‘minority’, but as Bengali or Malayali, labourer or professional, literate or non-literate, young or old, man or woman?” (পৃঃ ২০৫)
১৯৭৭-এ বামফ্রন্ট এল রাজ্যে। দেশে তখন জনতা সরকার। দিল্লিতে বামফ্রন্ট জনতা সরকারকে সমর্থন করছে। রাজ্যে জনতা দল ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোর লড়াই। বলাই হয়, ১৯৭৭-এ জনতা দলের প্রফুল্লচন্দ্র সেন এবং সেই দলে থাকা সঙ্ঘ পরিবারের হরিপদ ভারতীরা গোঁয়ার্তুমি না করে কয়েকটি আসন বেশি ছাড়লেই রাজ্যে জনতা দল ও বামফ্রন্টের কোয়ালিশন সরকার হতো। এবং সেই সরকারে জ্যোতি বসু এবং হরিপদ ভারতী দুজনেই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হতেন। বর্ধমানে কিন্তু জনতা দল, কংগ্রেস, এবং আর এস এস একযোগে সিপিএম বিরোধী। এর প্রতিফলন দেখা গেল, ১৯৮২-র কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে।
ফিটজেরাল্ড এর অনুবাদের সূত্র ধরে হরিবংশরায় বচ্চনের হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করেন ‘খৈয়াম কি মধুশালা' ১৯৩৫ সালে। ওমর খৈয়ামের রুবাইটি হরিবংশরায় এর কলমে হল- “ঘণী সির পর তরুবর কি ভালো, হরি পাঁওকে নিচে ঘাস, বছর মে মধু মদিরা কা পাত্র, সামনে রোটি কা দো গ্রাস, সরস কবিতা কি পুস্তক হাত, আউর সবকে উপর তুম, প্রাণ, গা রহী ছেড় সুরিলি তান, মুঝে অব মরু নন্দন উদ্যান ।’’
প্রতারকদের আঘাতে নিজেকে আরো উজ্জ্বল করতে শিখিয়েছে চন্দ্রাবতী সেই ষোড়শ শতকে এই বাংলায় বসে।
রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকের একটি জায়গায় আছে, 'নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না, নরকবাসীর সবচেয়ে বড় সাজা তাই।’ ‘জ্যোস্নায় সূর্যজ্বালা’ উপন্যাসে যে অসাধারণ মানবিক চরিত্র এঁকেছেন লেখিকা রসিদা আর দবিরের মধ্য দিয়ে, মাঝে মাঝে সংশয় জাগে, এমন কি বাস্তবে পাওয়া যায়? কিন্তু লেখিকা তো শুধু এমন এক ছবি নির্মাণ করবেন না, যা শুধুই যা ঘটে চলেছে তার প্রতিচ্ছবি, লেখিকা তো তার স্বপ্নের সৌন্দর্যের জগতকেও আহবান করবেন। রসিদা ও দবিরকে বিবেক চরিত্রে রূপদান করাতে যাওয়া নিশ্চিত চ্যালেঞ্জের, বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্টের শংকা প্রতি পদে পদে। কিন্তু লেখিকা এক নিপুন দক্ষতায় চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন, যে একটুও অস্বাভাবিক ঠেকেনি কোথাও। খুব সচেতন ছিলেন তা বোঝা যায় চরিত্রদুটোর হঠাৎ হঠাৎ বাঁক বদলে, তাদের অনুভূতির সূক্ষ্ম আলোড়নে, যা উচ্চকিত নয়, কিন্তু যার সুতীব্র ঢেউয়ে ভিজেছে পাঠক প্রথম থেকে শেষ অবধি।
জীবন যেরকমই হোক
কী লিখছিল পোস্টে? আমি দেখলাম এক জায়গায় লিখেছে নারী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়, নারী চাকরি করলে পরিবার নষ্ট হয়, সন্তানের হক আদায় হয় না! আরেকটা দেখলাম লিখেছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা মেয়েরা নির্লজ্জ হয়, তাদের বিয়ে করে লজ্জাশীল স্ত্রী পাওয়া যাবে না এমন একটা কথা! কোন জানি বক্তা মূর্তি ভাঙার ব্যাপারে কী লেখছে সে ওইটাই শেয়ার করছে! দারুণ না? এই ছেলের বয়স কত? হয়ত বিশ একুশ, এই বয়সে এর মনের মধ্যে এই যে এই ধরনের কথাবার্তা বাসা বাঁধছে তার প্রতিকার না করলে কোন লাভ হবে না। কোন ওষুধেই কাজ হবে না যদি না এদেরকে এখনই না ফেরানো যায়। অন্ধ জনগোষ্ঠী যারা অন্ধ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের বক্তব্য হচ্ছে হাসিম আমলা, মইন আলীরা ক্রিকেট খেলছে তাদেরকে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাহলে তানজিব হাসনের বেলায় কেন মানুষ এমন করছে! আসলে সমস্যা যে ধর্ম পালনে না তা তারা বুঝতে রাজি না। কেউ সারাদিন ধর্ম পালন করুক না, কে ফেরাচ্ছে? কিন্তু এখানে হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ, যার সাথে ধর্ম পালনের কোন সম্পর্ক নাই। হাসিম আমলা নারীর চাকরি নিয়ে চিন্তিত এমন কোন নজির পাওয়া যায় নাই।
মোটের ওপর চন্দ্রদেব এখন মহাজাগতিক বিশ্বের কসমিক সেলিব্রিটি। পেজ থ্রি পুরো কাঁপিয়ে দিয়েছেন। চন্দ্রযানে চেপে মিডিয়ার মেগা প্রজেক্ট এখন চাঁদের বাড়ি অভিযান। paparazziরা এবার সোজা ধাওয়া করেছে টিম নিয়ে। আর কোনো ছাড়ানছেড়েন নেই। চন্দ্রদেব সেখানে বসে বসে ঠিক কী যে করে তা দেখবে, শুনবে আর জানবে বলে। সে পূর্ণিমার আলোয় বসে পা ছড়িয়ে রোমান্টিক কবিতা লেখে না জাল নোট ছাপে? না কী অমাবস্যার অন্ধকারে মেয়েদের ফুঁসলিয়ে প্রেম করে না ড্রাগ পেডলিং করে? চাঁদ বা সোম হয়ত সেখানে বসে illicit সোমরস বানাতে বানাতে মশগুল হয়ে থাকে দ্রাক্ষারসের মদিরায়। সব খোঁজ নেবে ওরা। এমনিতেই অনেক allegations চন্দ্রদেবের বিরুদ্ধে।
জীবনের অন্ধকারমালাই সুবিমলের পাঠক্রম। খুন, জখম, সন্ত্রাস, ধর্মীয় বিভেদ, বিস্ফোরণ, পুলিশি অত্যাচার অন্যদিকে যৌনতার নন্দনকানন। যৌন মিলনের যে পরম তৃপ্তি তা নারী-পুরুষ উভয়ই ভোগ করে কিন্তু পরক্ষণেই জাগে সামাজিক গ্লানি। এই দ্বন্দ্বই সুবিমলের টার্নিং পয়েন্ট। কেন জাগে পাপবোধ? কেন দঃশিত হয় নরনারীর সামাজিক বোধ, কেন স্বীকার করে না পরকীয়া? কেন মেনে নেয় না জীবনের স্বাভাবিক দাবিকে। এই যে সেক্স করা ও তাকে সামাজিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি না দেওয়া এই আলো অন্ধকার নিয়ে তিনি আখ্যানের ভেলা ভাসান। এমনকি তিনি মারাত্মক ভাবে চেতনার গান বাজান। তা বিপ্লব হোক বা মধ্যবিত্ত বিবেক হোক। চেতনা না থাকলে নতুন জোয়ার সম্ভব নয় তা কেবল আয়োজন সর্বস্ব। অথচ আজ আয়োজন সর্বস্ব পরিমণ্ডলের রমরমা। উৎসবের ফানুস উড়িয়ে চেতনাহীনতার মধ্য দিয়ে নতুন সৃষ্টির যে ডাক তা যে যথার্থই ভিত্তিহীন তা তিনি প্রয়োগ করে দেখান। সমাজের বিবিধ স্তরের বয়সের নারীর দৈহিক চাহিদাকে সামনে রেখে নারী মনস্তত্ত্বের নিপুণ বিশ্লেষণে অবতীর্ণ হন। এত বড় সমাজ, এত বড় পরিমণ্ডল, এত শ্রেণি, বয়স বিভাজনে সকলেরই কম বেশি যৌনতা আছে। তার নানা রকমফের প্রক্রিয়া, চাহিদা, সম্পর্ক। বেশিরভাগই আড়ালে আবডালে। বিভাজনোত্তর সমাজে নারী পুরুষ পারিবারিক সম্পর্ককে অস্বীকার করে আড়ালে মিলিত হয়েছে। কোথাও ক্লেদ নেই, গ্লানি নেই। আছে এক তৃপ্তির আনন্দ। তার বহুবিধ বয়ান নিয়ে এই আখ্যান। ভাষা আগ্রাসন থেকে জাতি খণ্ডীকরণ, বাঙালির হুজুকে প্রবণতা থেকে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের শূন্য অবয়ব কোন কিছুই নজর এড়িয়ে যায় না। জগাখিচুরি হিন্দি, ইংরেজি মিডিয়াম, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির আদ্যশ্রাদ্ধ, পক্ষ-বিপক্ষে কোন্দল, সংস্কৃতির নষ্টচরিত্র, আধিপত্যবাদের সংস্কৃতি মিলিয়ে দিনের আলোর পরিমণ্ডলের উপর সুবিমল বুলডোজার চালান নিজস্ব ভঙ্গিতে।
নেহরুর নীতির রূপরেখা ঠিক কেমন ছিল, আজ এতদিন পরে আন্দাজ করা অসম্ভব। তবে অনেক পরে আশির দশকে রাষ্ট্রীয় দূরদর্শনের সম্প্রচারের ঘরানা দেখে, ব্যাপারটার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া যায়। সরকারি দূরদর্শনে, সেই সময়েও জনপ্রিয় সিনেমার জন্য বরাদ্দ ছিল সপ্তাহের সামান্য কিছু অংশ। বাকি সঙ্গীত এবং সিরিয়াল, সবাইকেই একটা নির্দিষ্ট মাপকাঠি টপকে আসতে হত। ভাষার প্রশ্নে হিন্দির ভাগ অবশ্য অনেক বেশি ছিল, বস্তুত সার্বজনীন বাধ্যতামূলক হিন্দিশিক্ষার চলই দূরদর্শন থেকে, নেহরু জমানায় হিন্দির এত প্রাধান্যের কথা আদৌ ভাবা হয়নি, সেটা বেতারের কার্যক্রম দেখলেই বোঝা যায়। এবং কেশকরের সময় সিনেমা আর ক্রিকেট মূলত বন্ধ করে দেবার অভিমুখেই এগোনো হচ্ছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ব্যাপারটা ছিল এই, যে, যদিও হিন্দিকে সরকারি ভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিল, পুঁজিপতিদের দেওয়া হয়েছিল খোলা মাঠ, ভাষাভিত্তিক রাজ্য তৈরিরও কোনো নীতি ছিলনা, আধিপত্যের সূচনাও তখনই হয়েছিল, কিন্তু তার পরেও সেই আধিপত্যের রূপরেখা আজকের মতো করে নেহরু কল্পনা করেননি। বরং তথাকথিত 'আঞ্চলিক' ভাষার সম্প্রচারে জোর দেওয়া হত। 'ভারতীয়' এক বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল সংস্কৃতি এবং সঙ্গীতে। সিনেমাকে করে তোলার ইচ্ছে ছিল জনমুখী। সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি সহই, হিন্দির আধিপত্য সত্ত্বেও, হিন্দি-বলিউড-ক্রিকেট কেন্দ্রিক আজকের যে দানবীয় ব্যবস্থা, তা ভারতের সূচনাবিন্দুতে অকল্পনীয় ছিল।
সেদিন ফেরার পথে মাঝ আকাশে এয়ারহোষ্টেসকে জিজ্ঞেস করলাম – তোমার বাড়ি কোথায়? মৃদু হেসে মেয়েটি বলে তুমি আগে শোনাও বাড়ি কাকে বলে! প্লেনের জানালার ওপাশে আকাশ দেখি - ওখানে কার বাড়ি?
ছেলেটার মোবাইল বেজে উঠেছে। "হ্যাঁ স্যার বসিয়েছি… ঠিক আছে।" ফোন রেখে ছেলেটা বলল, "ওনারা ভিআইপি রোডে জ্যামে আটকে গেছেন। আপনাদের কোল্ড ড্রিংকস দিতে বললেন।" তৃষা বলল, "একটু খাবার জলও দেবেন।” ছেলেটা পাশের ঘরটায় ফিরে যেতেই স্বর্ণালীর প্রশ্ন, "ওনারা মানে কারা?" খোঁচা বলল, "আর একটু অপেক্ষা কর।" "না। ওনারা কারা? ডু উই নো দেম?" "জানি তোর অনেক প্রশ্ন আছে, বাট প্লিজ আর একটু ওয়েট কর,” বলল তৃষা।
কাঞ্চনমূল্যে প্রতিভা তৈরি অজস্র ছোটবড় কারখানা এখন আর কোনো বিসদৃশ, লজ্জার ব্যাপার নয়, বরং, সমাজ এই ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মস্তিষ্কে জায়গা করে দিয়েছে। যারা এই বাজারে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, তাদের অনুপাতটি কম হতে পারে, কিন্তু, অর্থ ও রাজনৈতিক প্রতিপত্তির জোরে তারা সংখ্যাগত লঘুত্বকে সহজেই অতিক্রম করে গোটা সমাজকে নিজেদের প্রতাপে প্রভাবিত করে। সেই প্রভাব নামতে থাকে দেশের হাজার হাজার সরকারি, এমনকি অনেক বেসরকারি স্কুলেও। যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল। ছাত্রছাত্রীরা খেতমজুর, গরিব চাষি, ভ্যান চালক, বা ছোট ব্যবসায়ী বাড়ির সন্তান। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস হয়, শিক্ষকের সংখ্যা তুলনায় কম হলেও কাজ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। অথচ, এখান থেকে পাস করার পর, কতজন যে শিক্ষাব্যবস্থায় টিকে থাকবে তার “গ্যারান্টি নেই।” “কেন নেই?” “এরা ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার, তার ওপর সবার মা-বাবা ট্যুশন দিতে পারে না, পারলেও কমজোরি মাস্টার দেয়, ভাল মাস্টার দেওয়ার ক্ষমতা নেই।” “স্কুলে কি লেখাপড়া হয় না?” “হয়, কিন্তু আমরা কী করতে পারি? এরা প্রাইমারিতে কিছু শিখে আসে না, এখানে আর কতটা শেখাব?” এ সবে সমস্যার তালিকা দেওয়া শুরু। পর্যবেক্ষক যত এগোবেন, ততই তিনি দেখতে পাবেন, এক বিশ্বাসের প্রতিমূর্তি, “টাকা ছাড়া বাচ্চার লেখাপড়া হবে না”।
প্রকাশন জগতের মানুষ, নজরুল বিস্ময় দেখায়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী জাহানারাকে চোখে দেখেননি! বলেন কী! গল্প লেখেন, সেই গল্প ছাপানোর জন্যে কোন পত্রিকার সম্পাদককে ধরাধরি করেন না, নিজেরই পত্রিকা আছে। অসাধারণ সুন্দরী সে তো বললুমই, ধনীর দুলালী; মালদা থেকে বাংলার সমস্ত উত্তর দিক হয়ে পশ্চিমে বিহারের মিথিলা পর্যন্ত যে ভূমি, তার প্রধানতম জমিদার বংশ – জমিদার না বলে রাজবংশই বলা উচিত – তার সন্তান। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে হাল আমলের কল্লোলের লেখকগোষ্ঠীর অনেক লেখকের সঙ্গেই এঁর যোগাযোগ। সাধারণত থাকেন কলকাতায়। আপনার মতো আমিও চিনতুম না গত বছর পর্যন্ত।
বিসমার্ক দূরের কথা, এঁরা কেউ সাম্প্রতিক ইতিহাসটুকু পড়ে আসেননি। আপাত স্বাধীনতার লম্বা দড়ি ছেড়ে দিয়ে টিটো তো ঠিক সেটাই চেয়েছিলেন – রাজনীতি নয়, অর্থনীতি। লগে রহো ক্রোয়াট আউর সার্ব ভাই। চল্লিশ বছর যাবত হয়তো সেই কারণে শান্তি বজায় ছিল। এবারের বিবাদ অর্থনীতির নয়, জাতীয়তাবাদের। স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা বাকি ইয়ুগোস্লাভিয়া না হয় মেনে নিল; কিন্তু আসল সমস্যা সার্ব বনাম ক্রোয়াটদের পারস্পরিক শোধ তোলার বাসনা।
বামপন্থী মহলে তাঁর খুব বদনাম। গ্রামে থাকতেই শুনেছি। কিন্তু পরে আলাপ হতে দেখলাম, দারুণ প্রশাসক। বিজ্ঞান ক্লাব করতে গিয়ে দেখলাম, তিনি আমাকে খুবই পছন্দ করছেন এবং ভরসা করছেন। সুধীর দাঁ সিএমএস স্কুলে একদম পড়াশোনা হয় না, এই বদনাম ঘুচিয়ে স্কুলকে খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ করে তুললেন। শিক্ষক হিসেবে খুব সুনাম ছিল না, কিন্তু প্রশাসক হিসেবে অসাধারণ হিসেবে ১৯৮২-তে দেখা দিলেন সুধীর দাঁ। স্কুলের বামপন্থী শিক্ষকদের ডেকে বললেন, আমাদের রাজনৈতিক মত আলাদা কিন্তু স্কুলে কোনও রাজনীতি নয়। স্কুলের উন্নয়নই আসল। সিএমএস স্কুল তখন লোকে কানাকানি করতো আলু পটল বেচনেওয়ালেদের ছেলেরা পড়ে। ওমা, সুধীরবাবুর দক্ষ পরিচালনায় শহরের দুই সেরা স্কুল মিউনিসিপ্যাল স্কুল এবং টাউন স্কুলকে ছাপিয়ে উঠল। ১৯৮৪-তে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আজিজুল হক চতুর্থ স্থান পেলেন। হইহই পড়ে গেল শহরে।
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের পরিসীমার মধ্যে কালক্রমে এমন অনেক নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হতে থেকেছে যা সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে বদলে ফেলতে বাধ্য করেছে বা সেই ধারণাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। সনাতনী আইনস্টাইনীয় ধারণাকে এমনই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন বাঙালি পদার্থবিদ অমল কুমার রায়চৌধুরী। আপেক্ষিকতাবাদ সংক্রান্ত আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন থেকে শুরু করে নিজস্ব পদ্ধতিতে গাণিতিক ভাবে এগিয়ে নতুন একটা সমীকরণ তৈরি করেন তিনি, যা রায়চৌধুরী ইকুয়েশন নামে খ্যাত। কি লিখেছিলেন তিনি সেই সমীকরণে?
একজন পশ্চিমা নাগরিক যখন অফিসের পথে হাঁটতে থাকেন, কখনো কি তার মাথায় প্রশ্ন উদ্রেক করে, কী অঢেল পানিসম্পদ ব্যয়িত হয় তার ট্রাউজারটি ধৌত ও রঙ করার কাজে? ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশান এর একটি সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর গার্মেন্টস শিল্পের সুতো ও কাপড় রঙ এবং ধৌত করার কাজে ১৫০০ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহৃত হয় বাংলাদেশে – এটি সেই পরিমাণ তরল যা দিয়ে ৬,০০,০০০ অলিম্পিক সুইমিংপুলকে ভরে দেয়া যায়, বা, ৮,০০,০০০ মানুষের সারা বছরের পানির কাজ নির্বিঘ্নে চলে যায়! আমরা যে জিন্স প্রতিদিন পাদুটোর উপর চেপে রাখি, তার ওজন প্রায় ১ কেজি, আর এইটুকু পোশাককে ধৌতকরনে খোয়াতে হয় প্রায় ২৫০ লিটার পানি। আর এ হচ্ছে মিষ্টি পানি, ভূগর্ভস্থ চ্যানেল থেকে যা পাম্প করে বের করা হয়। পানির টেবিল কিন্তু অসীম নয়; প্রতিবছর ২.৫% নেমে যাচ্ছে। আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির চ্যানেলগুলো এভাবে ক্রমেই রিক্ত হচ্ছে পোশাক দৈত্যের খাবার যোগন দিতে গিয়ে, আর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দেবে যাওয়ার ঝুঁকিসম্পন্ন একটি ভূত্বক অবশিষ্ট রেখে যাচ্ছে!
বারান্দায় আজ পাত পড়েছে আমার একার। আর উঠোনে বসেছে মুসা। আমার পাতে আউশের লাল ভাত, উচ্ছেপাতার বড়া আর কাজলি মাছের আদাঝোল। আমার অনিহায় আড়ি দিতে মা নিজেই ক’দিন হলো খাইয়ে দেয় আমাকে। আজও তার ব্যত্যয় হল না। লালভাতে উচ্ছেপাতার বড়া মেখে আমার মুখের সামনে ধরতেই নাকে ধাক্কা দিল উচ্ছেপাতার তিতকুটে ঘ্রাণ। ভাতের গ্রাসটুকু মুখে পুরতেই সোঁদা একটা স্বাদ ছড়িয়ে গেল মুখে, ও মা, আরেকটু বড়া ভেঙে দাও…
এই উপত্যকাগুলোর মধ্যে একটাতে এইদিন আমরা লালচে দাড়িওয়ালা বানরদের একটা দলের মুখোমুখি হয়েছিলাম। কাফেলা দেখে তাদের চিৎকার, চেঁচামেচি গোটা এলাকা জুড়ে শোনা যাচ্ছিল। তারা গাছ বেয়ে তরতরিয়ে অনেক উপরে উঠে যাচ্ছিল আর চেঁচিয়ে-মেচিয়ে যেন যুদ্ধের ডাক দিচ্ছিল - ফলে তাদের কাছে ঘেঁষতে পারিনি। তবে তারপরেও আমাদের এগিয়ে যেতে দেখে তখন আবার মাটিতে নেমে এলো; ওদের পিছনেই পড়ে থাকতাম যদি না হঠাৎ মনে পড়ত যে আমার অনুপস্থিতি আমাদের অভিযানকেও থামিয়ে রেখেছে।
ডেল্টা অফ ভেনাসের গল্পগুলো অনুবাদ করছি
প্রকাশকের সন্ধানে শুরু করছি আমার উপন্যাস
প্রতিবছর গরম পড়লেই মানুষের খেয়াল হয় এবারের গরমটা যেন আগের বছরের থেকে অনেকটাই বেশি। তারপরেই চারিদিকে 'গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান"এর ধুম পড়ে যায়। খুব বেশি বৃষ্টি হলে বা বিশেষ শীত না পড়লে, নভেম্বর ডিসেম্বরে পাখা চালাতে হলেও পরিবেশের কথা খেয়াল হয় মানুষের। ভারতের প্রায় সবকটা মেট্রোসিটিতে ভারী বৃষ্টি ত বটেই এমনকি স্বাভাবিক বৃষ্টি হলেও রাস্তায় জল জমে শহর অচল হয়ে যায় অন্তত তিন চারদিনের জন্য। জল জমে থাকার একটা কারণ যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ছোটবড় জলাজমির বিলুপ্তি, তেমনি আর একটা অন্যতম প্রধান কারণ হল নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালীগুলো জঞ্জালের ভারে বুজে আটকে যাওয়া। এই জঞ্জালের অধিকাংশই বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাস্টিক বর্জ্য। আজ বরং প্ল্যাস্টিক নিয়ে বলি। রাস্তায় ঘাটে, যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে বড় ছোট যে কোনও গাছের গোড়ার দিকে লক্ষ করে দেখেছেন? দেখবেন নানারকম প্ল্যাস্টিকের মোড়ক, বোতল ইত্যাদি ছড়িয়ে রয়েছে। দীঘার সমুদ্রতীর থেকে সিটঙের কমলালেবুর বন পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে আছে প্ল্যাস্টিক জঞ্জাল।
৫১ সালের নির্বাচনের অন্যতম বিষয় ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন। নেহরু এবং প্যাটেল সেই সময় সেটা প্রয়োজন মনে করেননি। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই, যেটা প্রথম দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে। তেলুগুদের জন্য পৃথক অন্ধ্র রাজ্যের দাবী ছিল আগেই। কিন্তু কেন্দ্র তাতে রাজি হয়নি। গান্ধিবাদী শ্রীরামালু এই দাবীতে অনশন করেছিলেন, কিন্তু নেহরু-প্যাটেল-সীতারামাইয়ার তৈরি কমিটি, নতুন রাজ্য নির্মাণে অস্বীকৃত হয়। ফলে শ্রীরামালু আবার অনশন শুরু করেন ৫২ সালের অক্টোবর মাসে। এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন ডিসেম্বর মাসে। এর আগে এইভাবে মারা গিয়েছিলেন যতীন দাশ।
এগারোই সেপ্টেম্বর, দুহাজার এক সাল। যাঁরা এখনো মনে রেখেছেন, তাঁদের জন্যে। আমরা কখনো ভুলতে পারিনি, কারণ বড্ড বেশি রিয়েল, র আর রাফ ছিল সেই দিনটা। এখানে এই নিউ ইয়র্কে।
তার পরেরদিন সকালে আবার মা উঠিয়ে দেয় ঘুম থেকে, তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে বলে, ভর্তি হতে যেতে হবে। আমি অবাক হয়ে ভাবি হিন্দু গার্লস কি এত সকালে ভর্তি নেবে? ওদের তো দুপুরে স্কুল, কিছু জিগ্যেস করার আগেই দাদু আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, সেই ভাগাড়পাড়ার স্কুলের দিকেই যাই আমরা। দাদু আমাকে নিয়ে ‘বালিকা শিক্ষা সদন জুনিয়র হাই' স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়, বিলবইতে লেখা ছিল নামটা, ইরাদিদিমণি হেডমিস্ট্রেস। কিন্তু এখানে কেন সেটা যদি কেউ একটু বুঝিয়ে দিত! জানুয়ারী মাসে তো তেমন ক্লাস হয় না, রোজই প্রায় দশটায় ছুটি। আমি বাড়ী ফিরে দেখি শুভ্রা, রিঙ্কু, শর্বরী, মিঠু, সাতুরা এ ওর বাড়ী গিয়ে ডাকাডাকি করে একজায়গায় হয়, তারপর একসাথে খুব মজা করতে করতে যায়, ইলু, শীলুও হীরালাল পালে ভর্তি হয়েছে এই বছর, ওরাও যায়। ওদের স্কুলে রোজ ড্রেস পরতে হয় না, বেশীরভাগ দিন ওরা পরিস্কার এমনি জামা পরে স্কুলে যায়, মাঝে মধ্যে সবুজ-সাদা স্কুলড্রেস পরে। আমার তো আর ওদের সাথে হইহই করে যাওয়া হয় না, আমি থেকে যাই ভাগাড়পাড়া স্কুলে ফেলের মধ্যে ফার্স্ট হয়ে।
"হোয়াট কাইন্ড অফ ড্রামা ইস দিস?" "আরে বাবা বেশিক্ষণ না,” খোঁচা বলল, “এ ড্রামা চলবে খুব বেশি হলে এক থেকে দেড় ঘন্টা।" "কী করতে চাইছিস?” “মেয়ে পাচারের বিজনেস শুরু করেছি। তোকেই ফার্স্ট পাচার করব।” হাত বাড়িয়ে খোঁচার মাথায় চটাস করে মারল স্বর্ণালী। “মারছিস কেন? ভাল লোকের কাছেই বেচব তোকে। ভেরি রিচ, তোকে সোনায় মুড়ে রাখবে।” এবার স্বর্ণালী খোঁচার চুল ধরে জোর টান দিল একটা। “এমন করলে কিন্তু কোনও গরীব লোকের কাছে বেচে দেব, তাতে যা লস হয় হবে,” বলল খোঁচা। অভিষেক হেসে উঠল। "খোঁচা থাম... ভয় পাস না সোনা," বলল তৃষা।
"অপর" হয়ে ওঠার শাস্তি
তার চোখে-মুখে এক অদেখা, অজানা, অভূতপূর্ব উল্লাস...কোন সেরা চিত্রকরও কি পারে সে উল্লাসকে আঁকতে পুরো সার্থকতার সাথে? অথবা, কোন ফটোগ্রাফার ফুটিয়ে তুলতে পারে সেই বিজয়ের সত্যিকার অভিব্যক্তি?
বাঙালি লেখিকার অপেক্ষায়
ফেসবুকে গুরুচণ্ডা৯ গ্রুপে রিজেক্ট হয়ে গেলে এখানে পোস্ট করি
৯২ বছরের কর্মময় জীবন শেষ হল। আমাদের মনের মধ্যে হাহাকার নেই, শূন্যতা কিছুটা আছে, এমন মানুষ কোথায় পাব আর? আমাদের কাছে তিনি ছিলেন বিস্ময়। এই বয়সে এত উৎসাহ, অসুস্থ শরীরেও এমন শারীরিক সক্ষমতা থাকে কি করে? শেষ বয়সেও তাঁর তারুণ্যময় জীবনযাত্রা, কাজকর্ম এবং চিন্তাভাবনা দীর্ঘদিন মুগ্ধচিত্তে স্মরণ করব আমরা।
আমাদের দেশে -- ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি জায়গায় -- শিক্ষা হলো প্রধানতঃ চাকরিবাকরি, কাজকর্ম পাওয়ার একটা রাস্তা। এবং মালিকদের ও শাসকদের নির্ধারিত পথ অন্ধভাবে অনুসরণ করার যোগ্যতা অর্জন করা। কিন্তু এ শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়।
গুরুচণ্ড৯-র বই । দ্বিতীয় সংস্করণ ।
বিট আন্দোলন
১। ভারতে কোনো সাধারণ ভাষা বা সাধারণ জাতীয়তা নেই। ব্রিটিশ শাসনের চাপে একটা বহির্মুখী ঐক্য গড়ে উঠেছে, কিন্তু তার ভিতরে যা সাংস্কৃতিক মিল, তা ইউরোপের বা মধ্যপ্রাচ্যের নানা জাতির মধ্যের মিলের চেয়ে বেশি কিছু না। ফলে ভারতবর্ষকে একটা জাতি হিসেবে ভাবা যাবেনা। ২। ভারতবর্ষের সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটা তালিকা করেন তিনি। পূর্বে বাঙালি, ওড়িয়া, অসমীয়া। পশ্চিমে গুজরাতি, মারাঠি। দক্ষিণে চারটি - তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালি। এবং খুবই কৌতুহলোদ্দীপক, পাঞ্জাবি এবং হিন্দুস্তানিদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, যে, এদের জাতিনির্মাণ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। একই তালিকায় পাহাড়ের জনজাতিরাও আসে। ৩। দেশভাগের পর, বাংলা নিয়ে আলাদা করেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু বাঙালি একটা আস্ত জাতি, তাই কৃত্রিম ভাগাভাগির পরও দুই টুকরোর মিলনের পক্ষে ছিলেন দিয়াকভ। তিনি প্রায় ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যে, কোনো সন্দেহ নেই, ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দিকেই বাঙালি সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে রাষ্ট্রশক্তিকে। এই ভবিষ্যদ্বাণী, বলাবাহুল্য সত্য হয়েছে। নকশালবাড়ি, মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, এনআরসি, সব মিলিয়ে বাঙালি সমস্যা এবং বাঙালি ট্র্যাজেডি চলেছে, চলেছে রক্তগঙ্গাও।
মানুষ আসলে বড্ডই বিভ্রান্ত। সে চায় তার জীবন হবে চেনা ছকের, পরিচিত গন্তব্যের। দিনযাপন চলবে প্রত্যাশিত ঘটনাবলিকে কেন্দ্র করেই; নিশ্চিন্ততার অভিমুখ বরাবর। অথচ অপ্রত্যাশিতের উপর তার ভীষণ লোভ। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও বাধ্য গণ্ডির মধ্যে সে যেমন দাপিয়ে বেড়াতে চায় নিজ ঐশ্বর্যে, আবার তেমনি নতুন এবং অপরিচিতের প্রতিও তার জন্মান্তরের ছোঁকছোঁকানি। মানুষ চায় তার প্রেডিক্টেবল জীবনে মাঝেমধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার মত এক ঝলক আনপ্রেডিক্টেবিলিটি ঢুকে তাকে কাঁচা সুখ দিয়ে যাক। বিপদ বাঁচিয়ে সে চেখে নেবে স্বাদ, দুলিয়ে নেবে ভিতর বাহির। আপাদমস্তক রোমাঞ্চ জাগিয়ে তারপর না হয় দিব্যি ঢুকে পড়া যাবে নিশ্চিন্ততার চিরকেলে আস্তানায়।
বেঙ্গালুরু আর মুম্বাইতে ইণ্ডিয়া জোট গঠনের মধ্য দিয়ে তাহলে নতুন কী হোলো যাতে বেশ কিছু বামপন্থী সমর্থক দলগুলির ওপর রেগে গেলেন ? কারণ একটাই, সেখানে মমতা বন্দোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের অংশগ্রহণ।তাঁদের আবেগকে সম্মান জানিয়েও বলতে হয় এ তাঁদের রাজনৈতিক ভুল।
স্তালিনের মৃত্যুর পরেরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরু ভারতীয় সংসদে স্মৃতিচারণ করে লম্বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেন, যে, স্তালিনের গুরুতর অসুস্থতার কথা যখন কানে আসে, তখন তিনি মস্কোর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের পাঠানো একটা প্রতিবেদন পড়ছিলেন। সেই শেষ সাক্ষাৎকারে স্তালিন কথা বলেছিলেন ভারতের নানা ভাষা নিয়ে। তাদের শতকরা বিন্যাস, প্রভাব, সম্পর্ক, এইসব নিয়ে। এতটাই বিশদে, যে, নেহরু স্তালিনের জ্ঞানে কিঞ্চিৎ বিস্মিতও হন।
অনুবাদকও ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে