এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    ফসলের রাজনীতিঃ একটি পাঠ পরিক্রমা - রঞ্জন রায় | আমরা, শহুরে মধ্যবিত্তরা,  অনেকেই বাজারে আলু পেঁয়াজের দাম বাড়লে হতাশ হই আর টোম্যাটোর দাম বাড়লে চিড়বিড়িয়ে উঠি। কিন্তু এই বাড়তি দামের কতটুকু লাভ চাষিরা পায় সে ব্যাপারে কথা বলতে গেলে মাথা চুলকোতে থাকি।  শুধু যখন টেলিভিশনে দিল্লি বা মুম্বাইয়ের পথে ঝাণ্ডা হাতে মানুষের ঢল নামতে দেখি তখন হঠাৎ টের পাই, চাষিরা ভালো নেই। একসময় চাষিদের আত্মহত্যার খবর কাগজে বেরোত। পি সাঁইনাথ এবং আরও কেউ কেউ এসব নিয়ে লিখতেন, সেমিনার করতেন। কখন যেন সুপ্রীম কোর্ট মনমোহন সরকারকে কড়া ভাষায় বলল—ফুড কর্পোরেশন অফ ইণ্ডিয়ার গুদামে চাল পচে যাচ্ছে আর কিছু লোক না খেয়ে রয়েছে? বিলি করে দাও!তো সরকার খাদ্য সুরক্ষা আইন পাশ করল। মানে ভরপেট খেতে পাওয়া এখন সবার অধিকার এবং সেটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোভিডের দ্বিতীয় বছর থেকে ভারত সরকার দেশের আশি কোটি মানুষকে বিনা মূল্যে রেশন দিচ্ছে। এছাড়া আগের সরকারের সময় থেকেই গরীবি রেখার নীচে থাকা পরিবারের জন্যে নামমাত্র মূল্যে চাল গম দেওয়া হচ্ছে। তাহলে তো দেশের পঞ্চাশ প্রতিশত জনসংখ্যা, যারা কোন না কোন ভাবে চাষের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ভাল থাকার কথা।কিন্তু দু’বছর আগে দেশের রাজধানীর রাজপথে একবছর ধরে পথে বসে থাকা কৃষকেরা আমাদের সুখনিদ্রা ভঙ্গ করল। হিন্দি বলয়ে যাদের বলা হয় গোটা দেশের ‘অন্নদাতা’ তারাই ভাল নেই! তাহলে আমরা কি বেশিদিন ভাল থাকব?সমস্যাটা কী?ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (এম এস পি) আইন হলেই কি চাষিরা ভাল দাম পাবে?  ঘরের দোরগোড়ায় আসা ফড়েদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা বন্ধ হবে?কয়েক দশক আগে অমর্ত্য সেন এবং অশোক রুদ্র, শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি কিছু গাঁ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে “ইকনমিক অ্যাণ্ড পলিটিক্যাল উইকলি” পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে (Non-maximising behaviour of Indian Farmer) দেখিয়েছিলেন কেন ছোট এবং প্রান্তিক চাষিরা অর্থনীতির টেক্সটবইয়ের এন্টারপ্রেনারের মত সর্বোচ্চ লাভে উৎপাদন বিক্রি না করে ঘরের প্রয়োজন এবং ধার মেটাতে খুব কম দামে নতুন ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়।তাহলে নূন্যতম সমর্থন মূল্য (এম এস পি) নিয়ে এত বড় আন্দোলনে বাংলার চাষিরা কেন শরিক হন নি? বাংলার চাষিদের সমস্যা কি পাঞ্জাব এবং জাঠ এলাকার থেকে আলাদা? ফসল আর  কৃষি উৎপাদনের খরচ আর এম এস পি নির্ধারণে ফসল উৎপাদনের ব্যয়ের হিসেব কীভাবে হবে? স্বামীনাথন কমিটির সি-১ ও সি-২ ফর্মূলাগুলো কী? কেন সরকার শুধু সি-১ ধরে হিসেব করছে আর কৃষকেরা চাইছেন সি-২ ফর্মূলা মেনে নেওয়া হোক?ধানের চাষ কমিয়ে কি ক্যাশ ক্রপ, ধরুন ফুল ফল তরিতরকারি ফলানো উচিত?  কৃষি মণ্ডীর সংখ্যা বাড়াতে হবে নাকি কমাতে? আদানীদের বিশাল বিশাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামঘর বা সাইলো চাষিদের জন্যে আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ? আধুনিক চুক্তি চাষ কি নীলকরদের দাদন দেয়ার সমতূল্য?এতসব প্রশ্নের জট ছাড়ানো বড় মুশকিল।তারপর আমরা যারা বঙ্গে ষাট সত্তরে বাম-রাজনীতির আবহাওয়ায় বড় হচ্ছিলাম তাদের চেতনায় ঢুকে গেছল  একটা কথা—কৃষি বিপ্লব। আমাদের বাবা-কাকারা জানতেন ‘লাঙল যার, জমি তার’। তাঁরা বড় হয়েছেন গণনাট্য সংঘের গান শুনেঃ“চাষির দুঃখের কথা, বলে শোনাব কী তা,অরণ্যে রোদন বৃথা, সে তো আমি জানি”।তারপর যখন বাম আমলে বঙ্গের ভাগচাষিরা পাট্টা পেল, আমরা ভাবলাম চাষির সমস্যার সমাধান প্রায় হয়ে গেল বলে।কিন্তু ছত্তিশগড়ের গ্রামেগঞ্জে চাকরি করতে গিয়ে দেখলাম যে ‘মার্কেটিং’ বা উৎপন্ন ফসলকে  বাজারজাত করা একটি এমন সমস্যা যা ছোট বড় সব চাষিকেই প্রভাবিত করে।এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে পুরনো ঢঙে চাষবাস আর লাভজনক নয়। সমস্যাটি বহুমাত্রিক। কৃষি আইনের সংস্কার দরকার। না, ঠিক বর্তমান ভারত সরকারের আগে চাপিয়ে দিয়ে পরে মাফ চেয়ে ফেরত নেওয়া তিন আইন নয়। তাহলে সমাধান কোন পথে?কৃষি বিপ্লব নাকি সংগঠিত বাজার? অর্থাৎ কৃষির সমস্যা কি মূলতঃ জমির মালিকানার সমস্যা? নাকি বিপণনের?ব্যাপারটা বোঝার জন্যে আসুন, একটা কুইজ খেলা যাক। এটার নাম বাংলার চাষের ব্যাপারে আমরা কতটুকু জানি?প্রশ্নমালাঃ১ - ভারতে আলু চাষে বঙ্গের স্থান?  ক) প্রথম, খ) দশম, গ)  দ্বিতীয়২ - ধান চাষে ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহারে বঙ্গের স্থান?  ক) সবচেয়ে কম, খ) গড় পড়তা, গ) সবচেয়ে বেশি৩ - বাংলায় গরীব এবং প্রান্তিক চাষির অনুপাত? ক) ৮০% , খ) ৫০%  গ) ৯০%৪ - আমাদের গোটা দেশের চাষির গড়পড়তা মাসিক আয় প্রায় ১০২০০ টাকা (২০২২ এর হিসেব)। এর মধ্যে পাঞ্জাবের ২৬০০০, হরিয়ানার ২২০০০। তাহলে বাংলার চাষিদের গড় মাসিক আয় কত হতে পারে?ক) ১২০০০, খ ৬৭০০ গ) ১০০০০ ঘ) ৫২০০।৫ - বাংলার চাষি আজকাল সবচেয়ে বেশি কিসের চাষ করে?  ক) শাকসবজি, খ) ধান, গ) ফুল৬ - ধানক্ষেতে চা-পাতার চাষ বিধিসম্মত, না বে-আইনি?৭ - নিজের বাগানে চা-পাতার চাষে লাভ না লোকসান?৮ - বাংলার অধিকাংশ চাষি কোথায় ফসল বিক্রি করেন?  ক) সরকারি মণ্ডি, খ) খোলা বাজারে, গ) ঘরের দোরগোড়ায় ফড়ের কাছে৯ - মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস আইন হলে বঙ্গের চাষির লাভ না ক্ষতি? ক)  লাভ, খ) ক্ষতি, গ) কারও লাভ, কারও ক্ষতি, ঘ) বিশেষ কিছুই না।১০ - প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা চাষিদের জন্যে বাধ্যতামূলক?১১ - ফসলবীমা করলে চাষির লাভ না ক্ষতি?   ক) লাভ, খ) ক্ষতি, গ) কখনও লাভ, কখনও ক্ষতি।১২ - সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়েছে কি?১৩ - সবুজ বিপ্লবের সময় থেকে কেমিক্যাল সার, হাইব্রীড বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করায়ক) জমি ঊর্বর হয়েছে, খ) বন্ধ্যা হয়েছে, গ) জলস্তর নেমে গেছে ঘ) উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।১৪ - ফসল নষ্ট হলে চাষের ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে মাপা হয়?ক) ক্ষেতে গিয়ে ফসল মেপে, খ) উপগ্রহ দিয়ে ছবি তুলে, গ) পঞ্চায়েতকে প্রশ্ন করে, ঘ) ব্লক স্তরে স্যাম্পল সার্ভে করে গড় উৎপাদন কত, এবং ৩৬% থেকে কম হয়েছে কিনা সেটা দেখে।১৫ - ধরা যাক, একজনের ক্ষেতে শিলাবৃষ্টির পর ৮০% ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রামের গড় উৎপাদন ৪৫%। অর্থাৎ ক্ষতির পরিমাণ ৫৫%। সেক্ষেত্রে ওই চাষি ফসল বীমার থেকে কত ক্ষতিপূরণ পাবে?ক) ৫৫% , খ) ৮০%, গ) ৪৫%, ঘ) এক পয়সাও নয়।১৬ - ফসল ক্ষতি মাপার সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি হলঃ ক) ক্ষেতে গিয়ে সার্ভে, খ) বীমা কোম্পানির জলবায়ু টাওয়ার থেকে স্যাম্পল সার্ভে, গ)  উপগ্রহ থেকে প্রত্যেক ক্ষেতের ফটো তুলে সার্ভে?১৭ - কোন রাজ্য ফসল ক্ষতির হিসেব করতে  উপগ্রহ পদ্ধতির প্রয়োগ সর্বপ্রথম শুরু করেছে?   ক) মহারাষ্ট্র, খ) উত্তর প্রদেশ, গ) বঙ্গ, ঘ) হরিয়ানা।১৮ - চুক্তি চাষে আলু চাষিদের লাভ হয়েছে, নাকি ক্ষতি?    ক) লাভ, খ) ক্ষতি, গ) তেমন কিছু না।১৯ - প্রান্তিক চাষি পরিবারের খাওয়ার জন্যে সবজি ও ডাল কোত্থেকে পান?  ক) নিজের ক্ষেত থেকে, খ) বাজার থেকে কিনে, গ)  বেশির ভাগটা কিনে, কিছুটা ক্ষেত থেকে।২০ - ব্যাংক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধে কে পায়?   ক) সমস্ত চাষি, খ)  যে জমিতে লাঙল ধরে চাষ করে গ) যে ঠিকেতে অন্যের জমি নিয়ে চাষ করে, ঘ) কাগজপত্তরে যে জমির মালিক।২১ সারা ভারতে মাত্র ১৭% কৃষি জমির মালিক মেয়েরা। এর মধ্যে গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানাতে সেই অনুপাত ক্রমশঃ ১০ থেকে ৪৩% এর মধ্যে। তাহলে বঙ্গে কতজন জমির মালিক মেয়ে?ক) ৩০%, খ) ২৯% , গ) ৩%, ঘ) ৪০%?উত্তরমালা পাবেন লেখার শেষের দিকে। আগে উঁকি না মারলেই ভাল। বরং প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু ভাবুন। তাহলেই সমস্যার বহুমাত্রিকতা ধরা পড়বে।কিন্তু এসব নিয়ে আগে কোন গবেষণা, লেখাপত্র বা বই কি প্রকাশিত হয় নি?হবে না কেন? কিন্তু বেশির ভাগই সমস্যার অল্প কয়েকটি দিক নিয়ে কথাবার্তা। কেউ জোর দিচ্ছেন শুধু গ্রামে জমির মালিকানার নামে বেনামে কেন্দ্রীকরণ অথবা বাংলায় অপারেশন বর্গার ফলে চাষের ক্ষেতের গড় আয়তন এত ছোট হওয়া যা বাস্তবে আর লাভজনক নয়। অন্যদিকে যারা বাজারকেই সব সমস্যার সমাধান ভাবেন তাঁরা হাহুতাশ করেন কেন বাজারকে সরকারি আইনের বন্ধন থেকে আরও উন্মুক্ত করা হচ্ছে না!এমন সময় হাতে এল একটি বই—“ফসলের রাজনীতিঃ বাংলার চাষির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ”। লিখেছেন স্বাতী ভট্টাচার্য ও অশোক সরকার।সাবলীল টান টান লেখা। শেষ করে মনে হল চাষ এবং চাষিদের নিয়ে আমার কাছে যে আবছা প্রশ্নগুলো অনেকদিন ধরে নাড়া দিচ্ছিল তার অনেকটাই যেন এবার স্পষ্ট হল।স্বাতী আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথিতযশা সাংবাদিক। এর আগেও দার্শনিক প্রভা খৈতানের থিওরিকে অবলম্বন করে উনি বিভিন্ন দলের “পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি”র নৈতিকতা নিয়ে চমৎকার বিশ্লেষণী একটি চটি বই লিখেছিলেন। অশোকের পা রয়েছে শান্তিনিকেতনের জমিতে, পেশায় উনি বেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।দুজনে মিলে একটা দারুণ কাজ করেছেন। ঘেঁটে ফেলেছেন কৃষি ও কৃষক নিয়ে উপলব্ধ সব তথ্য, রিপোর্ট, নথিপত্র। ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার গাঁয়েগঞ্জে, সরেজমিনে দেখেছেন চাষের অবস্থা, কথা বলেছেন বিভিন্ন জেলার চাষিদের সঙ্গে।এসবের ফল এই ২৪০ পাতার হার্ডকভার বইটি, প্রকাশক অনুষ্টুপ প্রকাশনী, দাম ৩৫০ টাকা।এতে রয়েছে ২৪ পাতার একটি মূল্যবান ভূমিকা, ২৫টি পরিচ্ছেদ, চারটি পরিশিষ্ট এবং একটি তথ্যসূত্রের তালিকা।কয়েকটি পরিচ্ছেদের নাম দেখুনঃ১ - আলু, একটি রাজনৈতিক সবজি।২ - পেঁয়াজে লাভের গন্ধ৪ - এম এস পি’র মরীচিকা৫ - চাষির বাজার ধরা৭ - জৈব চাষ, এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি৯ - কত বীজে কত ধান১৪ - চাষের টিউশন১৫ - ভূমি সংস্কারের ওপারে১৬ - আইনের গেরোয় চা১৯ - চুক্তি চাষ২০ - ফসল বীমাঃ আঁধারে আলো?২২ - ট্রাক্টর নয়া মজুর, কি চাই?২৩ - কৃষক বধূ কেন নয় কৃষক?২৫ - আত্মঘাতী চাষির খোঁজেবইটি নিয়ে দু’চার কথাদেখতেই পাচ্ছেন এঁরা কোন সবজান্তা একপক্ষীয় আলোচনা না করে সমস্যার উপর বহুকৌণিক আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন সমস্ত হাতে গরম সমাধানের সীমাবদ্ধতা। অথচ সবগুলোই প্রাসঙ্গিক। জমির মালিকানার একচেটিয়া অধিকারের ভিত্তিতে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ যেমন কৃষির উন্নতির বাধা, কিন্তু আজকে তার চেয়ে বড় বাধা ভারতের কৃষকসমাজের ছোট এবং প্রান্তিক চাষিদের (ভারতে গড় ৮০% এবং বাংলায় ৯০%) জন্য সরকারি ব্যাংকের সেকেলে আইন এবং গরীবকে তাচ্ছিল্য করার সংস্কৃতি; যার ফলে ওদের জন্যে সুলভ সার, বীজ, এবং ট্রাক্টর বা হাল বলদের জন্য ঋণ পাওয়ার দরজা বন্ধ হয়ে থাকে।কারণ যার নামে জমি আছে কেবল সেই পাবে ইনপুটের জন্য সুলভ ঋণ, এবং সেই ঋণে সরকারি ভর্তুকি।  ফসল মার খেলে বীমার পয়সাও সেই পাবে। যে গরীব চাষি সম্পন্ন কৃষকের জমি ভাগে বা আধাআধি চুক্তিতে নিয়ে গাঁটের পয়সায় অথবা ধার করে বীজ-সার/কীটনাশক কিনছে, জলকাদায় নেমে বাস্তবে চাষ করছে—সে নয়।অশোক এবং স্বাতী দেখিয়েছেন বাজারের সমস্যাটি আসলে কী। কেন ক্রিকেটের আম্পায়ার বা ফুটবলের রেফারির মত খোলা বাজারেও একজন নিয়ন্ত্রক/সরকার থাকা  দরকার। হাত গুটিয়ে নিলে চলবে না।এঁদের পদ্ধতি খানিকটা অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক ব্যানার্জি এবং এস্থার ডাফলোর কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়। একেবারে টেকনিক্যালি  আর সি টি (Randomised Control Trial) না হলেও লেখার মেজাজে মিল পাচ্ছি।কোন পূর্বানুমানভিত্তিক ছবি এঁকে তার প্রমাণ খোঁজার বদলে এঁরা চাষিদের অভিজ্ঞতার থেকে তথ্য নিয়ে জট খোলার চেষ্টা করেছেন।দেখা যাচ্ছে চুক্তি চাষ মানেই খারাপ নয়, ঠিক যেমন বিদেশি আর্থিক সাহায্য মানেই আতংকিত না হয়ে দেখা দরকার তার শর্তগুলো কী এবং সেই সাহায্য কীভাবে খরচ হচ্ছে। তাই কোন ফসলে চুক্তি চাষ কৃষকের অবস্থা ফিরিয়ে দিয়েছে, কোথাও সর্বস্বান্ত করেছে। একই ভাবে এম এস পি আইন হলেও তার সফল প্রয়োগের জন্য সরকারের এবং চাষিদের কী করা দরকার, নইলে এটাও অনেক আইনের মত কেবল কাগজ-কলমে থেকে যাবে।হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি এবং সার্জারি—সবগুলো পদ্ধতিই ক্ষেত্রবিশেষে সফল, সর্বত্র  নয়।এঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন—জমির মালিকানায় মহিলাদের নাম না থাকা, এমনকি তাঁরা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে চাষ করলেও নয়।এ’ব্যাপারে দক্ষিণের রাজ্যগুলোর তুলনায় বঙ্গের রেকর্ড বেশ খারাপ, যদিও এই রাজ্যে একজন মহিলা সর্বোচ্চ ক্ষমতায় রয়েছেন।এবার উত্তরমালা দেখে নিন।উত্তরমালাঃ১ - ভারতে আলু চাষে বঙ্গের স্থান? -  গ)  দ্বিতীয়২ - ধান চাষে ভূ-গর্ভস্থ জলের ব্যবহারে বঙ্গের স্থান? -  খ) গড় পড়তা৩ - বাংলায় গরীব এবং প্রান্তিক চাষির অনুপাত? - গ) ৯০%৪ - আমাদের গোটা দেশের চাষির গড়পড়তা মাসিক আয় প্রায় ১০২০০ টাকা (২০২২ এর হিসেব)। এর মধ্যে পাঞ্জাবের ২৬০০০, হরিয়ানার ২২০০০। তাহলে বাংলার চাষিদের গড় মাসিক আয় কত হতে পারে? - খ) ৬৭০০ ৫ - বাংলার চাষি আজকাল সবচেয়ে বেশি কিসের চাষ করে? -  ক) শাকসবজি৬ - ধানক্ষেতে চা-পাতার চাষ বিধিসম্মত, না বে-আইনি? - বে-আইনি৭ - নিজের বাগানে চা-পাতার চাষে লাভ না লোকসান? - লাভ ৮ - বাংলার অধিকাংশ চাষি কোথায় ফসল বিক্রি করেন? -  গ) ঘরের দোরগোড়ায় ফড়ের কাছে৯ - মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস আইন হলে বঙ্গের চাষির লাভ না ক্ষতি? -  গ) কারও লাভ, কারও ক্ষতি১০ - প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা চাষিদের জন্যে বাধ্যতামূলক? - না১১ - ফসলবীমা করলে চাষির লাভ না ক্ষতি? -   গ) কখনও লাভ, কখনও ক্ষতি।১২ - সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্য উৎপাদনে আত্মনির্ভর হয়েছে কি? - হ্যাঁ।১৩ - সবুজ বিপ্লবের সময় থেকে কেমিক্যাল সার, হাইব্রীড বীজ, কীটনাশক ব্যবহার করায় - খ) বন্ধ্যা হয়েছে, গ) জলস্তর নেমে গেছে ঘ) উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।১৪ - ফসল নষ্ট হলে চাষের ক্ষতির পরিমাণ কীভাবে মাপা হয়? - ঘ) ব্লক স্তরে স্যাম্পল সার্ভে করে গড় উৎপাদন কত, এবং ৩৬% থেকে কম হয়েছে কিনা সেটা দেখে।১৫ - ধরা যাক, একজনের ক্ষেতে শিলাবৃষ্টির পর ৮০% ফসল নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ওই গ্রামের গড় উৎপাদন ৪৫%। অর্থাৎ ক্ষতির পরিমাণ ৫৫%। সেক্ষেত্রে ওই চাষি ফসল বীমার থেকে কত ক্ষতিপূরণ পাবে? - ঘ) এক পয়সাও নয়।১৬ - ফসল ক্ষতি মাপার সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি হলঃ -  গ)  উপগ্রহ থেকে প্রত্যেক ক্ষেতের ফটো তুলে সার্ভে১৭ - কোন রাজ্য ফসল ক্ষতির হিসেব করতে  উপগ্রহ পদ্ধতির প্রয়োগ সর্বপ্রথম শুরু করেছে? -    গ) বঙ্গ১৮ - চুক্তি চাষে আলু চাষিদের লাভ হয়েছে, নাকি ক্ষতি? -    ক) লাভ১৯ - প্রান্তিক চাষি পরিবারের খাওয়ার জন্যে সবজি ও ডাল কোত্থেকে পান? -  খ) বাজার থেকে কিনে ২০ - ব্যাংক থেকে কিসান ক্রেডিট কার্ডের সুবিধে কে পায়? -   গ) যে ঠিকেতে অন্যের জমি নিয়ে চাষ করে ২১ - সারা ভারতে মাত্র ১৭% কৃষি জমির মালিক মেয়েরা। এর মধ্যে গুজরাত, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্র ও তেলেঙ্গানাতে সেই অনুপাত ক্রমশঃ ১০ থেকে ৪৩% এর মধ্যে। তাহলে বঙ্গে কতজন জমির মালিক মেয়ে? - গ) ৩% সবশেষে লেখকদের বক্তব্য একটু তুলে দিচ্ছিঃ“ব্রকোলি থেকে ড্রাগন ফ্রুট –কী না হয় বাংলায়? হাল-বলদ ছেড়ে চাষি আজ চালান ট্রাক্টর, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর। বর্ষাতেও পেঁয়াজ ফলছে, গরমেও মিলছে ফুলকপি। তবু বাংলার চাষি কি বাজার ধরতে পা রছেন? বাড়ছে তাঁর রোজগার?কৃষিজীবীর জমির অধিকার, সরকারি সহায়তার কার্যকারিতা, কর্পোরেটের সঙ্গে চাষির বোঝাপড়া, খেতমজুরের ভিন রাজ্যে যাত্রা, মেয়েদের ‘কৃষক’ স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই—গত দুই দশকে পশ্চিমবঙ্গের চাষ ও চাষির হাল-হকিকত খতিয়ে দেখল এই বই”।একেবারেই অতিশয়োক্তি নয়। আগামী দিনে কৃষি অর্থনীতি এবং রাজনীতির ‘ইনফর্মড’ বিতর্কে এই বইটি আকর গ্রন্থের স্বীকৃতি পাবে বলেই আমার বিশ্বাস।ফসলের রাজনীতি বাংলার চাষীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ স্বাতী ভট্টাচার্য, অশোক সরকারপ্রকাশকঃ অনুষ্টুপ প্রকাশনীমুদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা
    গ্রন্থ পরিচয় - আমার আফ্রিকা - কিশোর ঘোষাল | আফ্রিকার সঙ্গে আমার কাব্যিক পরিচয়, আমার চেতনার ঊষাকালে। কোন কোন রোববার, রবি ঠাকুরের সঞ্চয়িতা খুলে আমার পিতৃদেব আমাদের কিছু কিছু কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল “আফ্রিকা”। মা বলতেন, “ওইটুকু ছেলে এই কবিতার মর্ম কী বুঝবে?” বাবা বলতেন, “মর্ম এখন নাই বা বুঝল। এই অমোঘ শব্দ-চয়ন, অন্ত্যমিলহীন ছন্দের এমন ঝংকার, বিষয়ের ব্যাপ্তি, নিষ্ঠুর সভ্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এমন মানবিক আবেগ। এগুলোই আপাততঃ ওর মনে বসত করুক না - মর্ম উদ্ধারের সময় তো পড়েই রইল আজীবন”। আমার প্রতি তাঁদের উভয়ের বিবেচনায় এতটুকু ফাঁকি ছিল না। আর বড়ো বিলম্ব হলেও, ওই কবিতার মর্মোদ্ধার হল, হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের “আমার আফ্রিকা” গ্রন্থটি পড়ে।আরবি বণিকদের একচেটিয়া বাণিজ্য প্রভাব এড়াতে, সাগর পথে ভারতবর্ষে আসার নতুন পথ খুঁজতে গিয়ে, পশ্চিমি সভ্যতার পরিচয় হচ্ছিল আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে। চোদ্দ ও পনের শতাব্দীতে ডাচ ও পর্তুগীজ অভিযাত্রীদের নৌবহর আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে দক্ষিণদিকে এগিয়ে চলতে থাকে। কারণ ততদিনে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান স্থির সিদ্ধান্ত করে ফেলেছে পৃথিবী গোল। অতএব কোন না কোন দিন আফ্রিকা মহাদেশ পার হলেই, মিলবে পূর্বদিকের অবাধ সমুদ্র। এবং সেই সমুদ্র পার হতে পারলেই মিলবে ভারতবর্ষ নামক দেশের সন্ধান। এবং এভাবেই ১৪৯৮ সালের ২০শে মে পর্তুগীজ অভিযাত্রী ভাস্কো - দা - গামা কালিকটে পৌঁছলেন। ভাস্কোর এই সাফল্য ফরাসী, ইংরেজ, জার্মান এবং আরো কিছু ইওরোপীয় জাতির সামনে খুলে দিল ভাগ্যান্বেষণের নতুন দিগন্ত।অভিযানের সংখ্যা যত বাড়তে লাগল, আফ্রিকার উপকূলে উপনিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠল। কারণ সুদীর্ঘ এই সমুদ্র-যাত্রায় পানীয় জল, টাটকা সবজি, জাহাজের মেরামতির জন্যে দু-পাঁচটা স্থায়ী বন্দর-আবাস হলে সুবিধা হয় বৈকি। এমনকি জাহাজ থেকে নেমে কয়েক সপ্তাহ হাঁটাহাঁটি, ঘোরাঘুরি করলেও জাহাজি-যাত্রার একঘেয়েমি কাটে, শরীরের আড় ভাঙে। তবে আফ্রিকার তিনদিকে সুদীর্ঘ সমুদ্রতট থাকলেও, জাহাজ ভেড়ানোর মতো বন্দর বানানোর স্থান বড়ই অপ্রতুল। অতএব প্রথম বন্দর ও উপনিবেশ গড়ে তোলার উপযোগী জায়গা মিলল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে। এই উপনিবেশ গড়ে তোলার কাজে যে মানুষগুলি রয়ে গেল, তারা অচিরেই টের পেতে শুরু করল, তারা আশ্চর্য এক দেশে পৌঁছেছে – যেখানে অঢেল জঙ্গল, দিগন্ত জোড়া অনাবাদী উর্বর জমি। আর এই দেশের মানুষজন? মানুষ হিসেবে তারা ধর্তব্যই নয়। তাদের গায়ের রঙ কালো, তারা বর্বর, সভ্যতার চালিয়াতি না জানা, সরল, আন্তরিক এবং একরোখা। এই (তথাকথিত) অসভ্য জনজাতির গোষ্ঠীগুলি ছোট ছোট এলাকায় নিজেদের জীবন ধারণের জন্যে চাষবাস এবং শিকার করত। জমির অধিকার নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই যে করত না তা নয়, কিন্তু তাতেও তারা সুখেই ছিল, কারণ তারা স্বাধীন ছিল। কিন্তু অচিরেই ইওরোপের অতি সভ্য জনগোষ্ঠীদের সংস্পর্শে এসে তারা টের পেল, সভ্যতা কাকে বলে!নতুন একটা দেশে উপনিবেশ গড়তে গেলে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন – এমন শ্রমিক যাদের সামান্য খাবার দিয়ে, চাবুক মেরে কিংবা বেয়নেটের খোঁচা মেরে ইচ্ছেমতো খাটানো যায়। অর্থাৎ ক্রীতদাস। স্বল্পাহার আর কঠোর পরিশ্রমে ক্রীতদাস যদি মারাও যায় – কী যায় আসে? ততদিনে ইওরোপের সভ্য অভিবাসী সমাজ জেনে গেছে, সারা বিশ্বে ইওরোপ ছাড়া অসভ্য মানুষের অভাব নেই। সে ভারতের পূর্ব উপকূল হোক কিংবা নব্য আবিষ্কৃত আফ্রিকাই হোক। অতএব প্রথম দিকে দাস-ব্যবসাই হয়ে উঠল ডাচ ও পর্তুগীজ জাহাজিদের প্রধান ব্যবসা।আমাদের আধুনিক বঙ্গে “হার্মাদ” শব্দটি রাজনৈতিক ভাবে বহুল পরিচিত – কিন্তু ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে অবিভক্ত বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির বাসিন্দারা পর্তুগীজ দাস-বণিকদের “হার্মাদ” বলতেন। হার্মাদরা গ্রাম কে গ্রাম লুঠপাট করে, ধ্বংস করে, অজস্র নর-নারীকে পশুর মতো বন্দী করে চালান করে দিত আফ্রিকার নানান উপকূলে। সে যুগের মানুষদের কাছে “হার্মাদ” শব্দের সঙ্গে যে বীভৎস সন্ত্রাসের অনুভব ছিল – আজকের “হার্মাদ” শব্দে সেই অনুভব নিঃসন্দেহে বহুলাংশে লঘু হয়ে গেছে। ১৬৫২ সালের ৬ই এপ্রিল ইয়ান ভান রিবেক আজকের কেপ টাউনে প্রথম ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করলেন – তিনটি জাহাজে আশি জন পুরুষ ও ৮ জন মহিলা নিয়ে। ক্রমে ক্রমে উপনিবেশে জনসংখ্যা বাড়তে লাগল – শুধু ডাচ নয়, জুড়ে বসল ফরাসী ও জার্মান ভাগ্যান্বেষীরাও। কিন্তু তাতে মহিলাদের থেকে পুরুষের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। অতএব জৈবিক কারণেই কিছু কিছু ক্রীতদাসীর ভাগ্য ফিরে গেল। চার্চের নিয়ম মেনে তাঁদের বিয়ে করল শ্বেতচর্মধারী ইওরোপীয়রা। অর্থাৎ শুরুর থেকেই আধুনিক কেপটাউন বা দক্ষিণ আফ্রিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে উঠল মিশ্রজাতি। এই প্রসঙ্গে তিনজন বঙ্গ নারীর হদিস পাওয়া যায় – ক্যাথারিনা অফ বেঙ্গল, এঞ্জেলা অফ বেঙ্গল, মারিয়া অফ বেঙ্গল। স্পষ্টতঃ হার্মাদ বাহিনীর হাত দিয়ে চালান হয়ে যাওয়া বাঙালী এই ক্রীতদাসী কন্যাদের নাম যদি চম্পা, জবা কিংবা হামিদা হয়ে থাকে, সে নাম কেউ জানতে চায়নি। বিয়ের পর খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে খ্রিস্টীয় নাম নিয়ে তাঁরা দাসিত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশ্চর্য বিষয় হল পরবর্তী কালে দক্ষিণ আফ্রিকার এই মিশ্র জাতিই (প্রধানতঃ ডাচ) নিজেদের আফ্রিকানার (Afrikaner) বলেছেন এবং প্রবল বর্ণ বিদ্বেষী (apartheid) এক সমাজ গড়ে নিজেদের শ্বেতবর্ণের শুদ্ধতা রক্ষায় কালো মানুষদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছেন দীর্ঘদিন। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নেলসন ম্যাণ্ডেলাকে দীর্ঘ ২৬ বছর কারাবাস করতে হয় এবং ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাঁর মুক্তির দিন থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার শাপমুক্তি ঘটতে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার উপনিবেশে ডাচ ও অন্যান্য সাদা চামড়ার লোকেরা ছিল সংখ্যালঘু, কিন্তু তারাই ছিল দেশের প্রায় সমস্ত জমিজমার মালিক। আর স্থানীয় এবং ক্রীতদাস-দাসী হয়ে আসা কালোমানুষরা ছিলেন সংখ্যাগুরু। তাঁরা পিঠে চাবুকের ক্ষত নিয়ে চাষ করতেন সাদা প্রভুদের জমি। সাদা চর্মাবৃত এই প্রভুদের বলা হত বুওর (Boer) বা চাষা। এরকমই দারুণ সভ্য উপনিবেশ গড়ে তোলার শদেড়েক বছর পর সেখানে বাণিজ্য করার নামে উদয় হল আরেক সভ্য জাতির - ইংরেজ। সাদা ইংরেজদের মাতব্বরি সহ্য হল না বহু সাদা আফ্রিকানদের। তাদের কিছু গোষ্টী উত্তর এবং পূর্বদিকে রওনা হল নতুন দেশ, নতুন জমিজমার সন্ধানে। ১৫ই ডিসেম্বর ১৮৩৮, অরেঞ্জ নদীর পারে, নারী-পুরুষ ও দাস-দাসী সহ ৯৪৬৪ জনের একটি আফ্রিকানার দল, স্থানীয় জুলু জাতির রাজা এবং তাঁর প্রায় ২০০০০ হাজার সৈন্যের মুখোমুখি হল। পরেরদিন ১৬ই ডিসেম্বর আফ্রিকানদের সঙ্গে জুলুদের যুদ্ধ বাধল। জুলুরা অসভ্য জাতি, তাদের অস্ত্র “বর্বর, হিংস্র, উদ্ধত” তির-ধনুক আর বল্লম। অন্যদিকে শ্বেত জাতির অস্ত্র “সভ্য, ভদ্র, বিনয়ী” কামান ও বন্দুক। অতএব অচিরেই অসংখ্য জুলুকে হত্যা করে বুওররা বিজয়োৎসব পালন করল। অরেঞ্জ নদীর জল লাল হল জুলুদের রক্তে। আফ্রিকানরা প্রতিষ্ঠা করল নতুন দুটি রাজ্য অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট এবং ট্রান্সভাল। ওই দিনটি আফ্রিকানদের কাছে হয়ে রইল একটি চিরস্মরণীয় সাফল্যের দিন! কিছুদিন বাদেই ফেরেরাস ক্যাম্পে (আজকের জোহানেসবুর্গ) মিলল সোনা এবং কিম্বারলিতে পাওয়া গেল হীরের সন্ধান। এবার ইংরেজরা এই সবকিছুর অধিকার হস্তগত করতে যুদ্ধে নামল বুওরদের সঙ্গে। প্রথম বুওর যুদ্ধ ১৮৮০-৮১তে ইংরেজদের হার হল। কিন্তু ১৮৮৯-১৯০২ সালের দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হল। তারা পরাজিত বুওরদের হত্যা করল এবং নারী ও শিশুদের আমৃত্যু খাঁচায় বন্দী করে রাখল। ইংরেজরা কেপ টাউন, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট, ট্রান্সভাল হাতিয়ে নিয়ে সে দেশের নাম রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে সভ্য সাদা চামড়াদের দল, অন্য সাদা চামড়াদেরও রেয়াত করে না! রুডিয়ার্ড কিপলিং ১৮৯৮ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত (মাঝে ১৮৯৯ সালটা বাদ দিয়ে) প্রতি বছর শীতের অবসর কাটাতে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতেন। Poet of the Empire হিসেবে বিখ্যাত কিপলিং সেখানে সিসিল রোডসের (যিনি আফ্রিকায় রোডেসিয়া নামক রাজের প্রতিষ্ঠাতা) অতিথিশালায় সম্মানীয় অতিথি হতেন। দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধের জন্যে ইংল্যাণ্ডের জনগণের থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে তিনি একটি গান রচনা করেছিলেন, - The Absent-Minded Beggar, সেটির প্রচারপত্রটি এরকম। তাঁর এই উদ্যোগের অর্থ যে শিশু-নারী সহ বুওর যোদ্ধাদের নৃশংস নিধনে খরচ হবে সে কথা তিনি নিশ্চয়ই জানতেন। নাকি জানতেন না? তিনি কি জানতেন না, সিসিল রোডস রোডেসিয়া দেশটি হাসিল করছেন, অসংখ্য কালো মানুষকে হত্যা করে, তাদের উৎখাত করে, দাস বানিয়ে? ঠিক যেমন জানতেন না, দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ প্রধানমন্ত্রী ক্লার্ক। ১৯৯৪ সালের ১০ই মে নেলসন ম্যাণ্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন, সে সময় বিদায়ী আফ্রিকানার প্রধানমন্ত্রী ক্লার্ক বলেছিলেন, তিনি জানতেন না যে সরকারি পুলিশ এত কালো মানুষদের মেরেছে। সে রকম? আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮), এই কিপলিং বেলজিয়ামে জার্মান সৈন্যদের অত্যাচার এবং জার্মান নৌসেনাদের আক্রমণে ব্রিটিশ জাহাজডুবির ঘটনায় ভয়ংকর মানবিক হয়ে ওঠেন এবং গর্জে উঠে বলেছিলেন, “There was no crime, no cruelty, no abomination that the mind of men can conceive of which the German has not perpetrated, is not perpetrating, and will not perpetrate if he is allowed to go on... Today, there are only two divisions in the world... human beings and Germans.” বুঝুন, জনৈক নোবেল লরিয়েট কিপলিং কতখানি মানবিক!! তাঁর কাছে ভারত ও আফ্রিকার কালো মানুষগুলো আর যাই হোক human beings নয়! ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে লেখা রবিঠাকুরের “আফ্রিকা” কবিতাটি শুনে যে বালক সেদিন সম্যক মর্মোদ্ধার করতে পারেনি। আজ এই পরিণত বয়সে সে পারল, তার চোখের সামনে ভেসে উঠল – সভ্যতার মুখোশে ঢাকা ওই অমানবিক মুখগুলি। “এলো ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে, এলো মানুষ-ধরার দলগর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে। সভ্যের বর্বর লোভ নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে; দস্যু-পায়ের কাঁটা মারা জুতোর তলায় বীভৎস কাদার পিণ্ডচিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে”। * * * * * বসেছিলাম “আমার আফ্রিকা” বইটি নিয়ে আলোচনা করব বলে। কিন্তু গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায় “দক্ষিণ আফ্রিকা” নিয়ে দু-চার কথা বলতে গিয়ে ডুব দিলাম ইতিহাসের পাঁকে! আর এখানেই হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের অনন্য কৃতিত্ব। তিনি তেইশটি অধ্যায়ে, আফ্রিকার তেইশটি দেশ নিয়ে এই গ্রন্থ রচনা করেছেন – যার প্রত্যেকটি আপনাকে উস্কে দিতে পারে নানান বিষয়ের দিকে। তিনি পাঠকের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে সিদ্ধ হস্ত। এই সব দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা, তাদের অর্থনীতি, বাণিজ্য নিয়ে যেমন সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর আলোচনা করেছেন, পাশাপাশি সেই সব দেশগুলির ইতিহাসের ধরতাইগুলিও তুলে ধরেছেন নিপুণ দক্ষতায়। হীরেনবাবুর রচনাশৈলীর সঙ্গে মুগ্ধ ও অন্তরঙ্গ পরিচিতি “গুরুচণ্ডা৯”-র সকল নীপা কিংবা সপার। তাঁর কিবোর্ড থেকে ঝরে পড়ে মরমী এবং সূক্ষ্ম রসবোধ সম্পন্ন এক মানবিক মন। সে নিয়ে গুরুচণ্ডা৯-তে বেশি কিছু বলা, অনেকটা “মায়ের কাছে মাসিমার গল্প” শোনানোর মত। পরিশেষে একটা কথা বলি, আধুনিক বঙ্গের বিদ্বজ্জন-সমাজে ইংরিজিতে বই না লিখলে তেমন কল্কে মেলে না। যদিও আমি ইংরিজি সাহিত্যের দিকপাল নই – বরং জনৈক “হরিদাস পাল” পাঠক, তবুও বলব ব্যাপ্ত বিষয়ের ওপর এমন সাবলীল বই ইংরিজিতে কোনদিন পড়িনি। হয়তো এই বইয়ের ইংরিজি অনুবাদ হবে, অন্ততঃ হওয়া উচিৎ। তখন গর্ব করে বলার মতো বিষয় হবে হীরেনবাবুর “My Africa” গ্রন্থটির মূল বাংলা – সে বইটি আমি পড়েছি! গ্রন্থঃ আমার আফ্রিকালেখকঃ হীরেন সিংহরায়প্রকাশকঃ দে পাবলিকেশন্‌সমূল্যঃ ৭৬৫ টাকাপরিবেশকঃ আদি দে বুক স্টোর, দে বুক স্টোর, দে’জ পাবলিশিং, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০৭৩ • রেফারেন্স মানচিত্র ও ডকুমেন্টটি উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত। • নীপা > নীরব পাঠক; সপা – সরব পাঠক – এই শব্দদুটি গুরুচণ্ডা৯-র একটি আড্ডা থেকে জেনেছিলাম।
    দেশ ভাগ এবং ভারতবর্ষ – এক উলঙ্গ ইতিহাস-২ - জয়ন্ত ভট্টাচার্য | দ্বিতীয় কিস্তিভারতভূমির রাষ্ট্র হয়ে ওঠাবাইরে থেকে রোপণ করা বা এনগ্র্যাফটেড আধুনিকতার যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সমস্ত ভারতবাসী হয়ে উঠলো নাগরিক, খানিকটা হঠাৎ করেই। লক্ষণীয় যে যেখানে ইউরোপের একটি বড়ো অংশ প্রায় ৩০০ বছর ধরে ধীরে ধীরে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠেছে, ভারতে তা অর্জিত হয়েছে মাত্র কয়েকটি দশকে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে ব্যক্তির অভ্যুদয়, রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তি-নাগরিকের সহাবস্থান, সমাজ বা কৌমের অবস্থান বিলুপ্ত হওয়া এবং সমাজ জীবনে ধর্ম-নির্লিপ্ততার (সেক্যুলারিজম) পরিসর তৈরি হয়েছে ভারতে তা হয়নি। ভারতে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং একক ব্যক্তির একক ভোটাধিকার চালু হল সেগুলো মূলত সমাজের উপরের স্তরের রাজনৈতিক ক্ষমতা-চিহ্ন, নীচের স্তরের সামাজিক ক্ষমতা নয়। আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রে মধ্যস্থতাকারী কোন সামাজিক পরিসর নেই, রয়েছে নাগরিক পরিসর বা সিভিল স্পেস। সামাজিক পরিসরের জোরালো উপস্থিতির সময় আধুনিকতা নির্মিত নাগরিকতার রাষ্ট্রিক ভাষ্য ছাড়াও আরও অনেক স্বর এবং কণ্ঠ, আত্মপ্রকাশ করে। বিখ্যাত উদাহরণ হিসেবে ১৯৬০-এর দশকের প্যারিসের ছাত্র বিদ্রোহ বা আমেরিকায় ভিয়েতনাম বিরোধী আন্দোলন কিংবা সাম্প্রতিক Occupy Wall Street” বা “Another World is Possible” কিংবা, বিশেষ করে, একেবারে হালের “#Black Lives Matter” আন্দোলনের কথা মনে পড়বে। এরকম একটি পরিসরে নাগরিক হবার ধারণার সাথে নাগরিক না-হবার, অ-নাগরিকের ধারণাও সামাজিক পরিসর অর্জন করে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে যদি জাতি-রাষ্ট্র তৈরিই হয় ভিন্ন প্রেক্ষিতে এবং ভিন্ন উপাদান নিয়ে? রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রবণতাটি হয়ে ওঠে কেন্দ্রাভিমুখী। ভারত রাষ্ট্রের জন্মলগ্নেই রয়ে গেলো অন্তর্লীন গঠনগত বিরোধ। অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব নিয়ে আধুনিক ভারত গড়ে ওঠার এক অসামান্য আখ্যান সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়াই’। “অদ্ভুত জিনিস এই ‘বোট’। হঠাৎ টাকা পেলে লোকের ইজ্জৎ বাড়ে, বোটও সেই রকম রাতারাতি লোকের ইজ্জৎ বাড়িয়ে দেয়, কেবল যে বোট দেবে তার নয়, সারা গাঁয়ের।” “বোটের” সুতোয় রাষ্ট্রের সাথে বাঁধা পড়ে একক ঢোঁড়াই, তখনো নাগরিক হয়ে উঠেছে কিনা স্পষ্ট নয়। কিন্তু তার অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে থাকে তার গ্রাম অর্থাৎ ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার এক আখ্যান। “বলান্টিয়ারদের” দয়ায় নগণ্য ঢোঁড়াই “রামরাজ্য কায়েম করবার কাজে, কাঠবেড়ালীর কর্তব্যটুকু করবার সুযোগ পেয়ে গেল।” ঢোঁড়াইয়ের মননে বা সাইকি-তে যোগসূত্র তৈরি হল “মহাৎমাজীর” সাথে – ইমাজিনড কমিউনিটিজ। এর অবস্থান আধুনিকতার চেনা ডিসকোর্সের বাইরে। ঢোঁড়াইয়ের ভিন্ন যাত্রা শুরু হয়। আধুনিক ভারতের “পাক্কী” রাস্তার বাঁকে ঢোঁড়াই। কিন্তু তার নাগরিকতার মধ্যে রয়ে যায় ভগ্নাংশের উপাদান। ১৯৪৭-পরবর্তী ভারতে অনুসৃত ইউরোপীয় আধুনিকতার ভাষ্যের উপাদানের মাঝে নিহিত যুক্তি অনুসরণ করে আমরা বুঝতে পারি রাষ্ট্রে নাগরিকদের ধরা হবে একেকটি integer (পূর্ণসংখ্যা) হিসেবে। এখানে ভগ্নাংশ অনুমোদিত নয়। মণিপুরী বা কাশ্মিরী বলে আলাদা কিছু হয়না। ওগুলো ভগ্নাংশ, পূর্ণসংখ্যা ভারতীয় নয়। এরকম এক সামাজিক মানসিকতা তৈরির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল ভাষা। আবার পূর্ণসংখ্যা পজিটিভ হতে পারে। পূর্ণ সংখ্যা নেতিবাচকও হতে পারে। গোরখপুরের শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ কাফিল খান – সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকার ফলে কতগুলো বাচ্চা স্রেফ মরে গেলো, বাইরে থেকে অক্সিজেন জোগাড় করে ডাক্তারবাবু বাঁচালেন অনেকগুলো প্রাণ, তারপরে ৮ মাস জেল খাটলেন। এখানেও তো আবার অন্য বিপদ আছে – আমাদের বিবশ হয়ে যাওয়া সম্মিলিত সংবেদনশীলতা আর ঐতিহাসিক আর সামাজিক বিস্মরণ। কিন্তু নেগেটিভ পূর্ণসংখ্যারা কখনো গৌরি লঙ্কেশ, কখনো কালবুর্গী, কখনো আখলাক, কখনো আসিফা, কখনো পানেসার নামে নিঃশেষ হয়ে যায়। এসবের মাঝে অলক্ষ্যে নাগরিক পরিসরের যতটুকু স্থান রয়েছে তার সঙ্কোচন ঘটেছে, রাজনৈতিক চরিত্রের পৌরুষীকরণ হচ্ছে, নৈতিকতার প্রশ্নগুলো বিশেষ সামাজিক প্রেক্ষিতে আপনমনে ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুম পাড়িয়েও দেওয়া হয়, যাকে বলে এথিকাল ট্র্যানকুইলাইজেশন (ethical tranquilization)। কতসব অ-পূর্ণ রাশি! নাগরিক-অনাগরিক, ভারতপ্রেমী-রাষ্ট্রদ্রোহী, হিন্দি-অহিন্দি, কেন্দ্রের ভারত-প্রান্তের ভারত, ক্ষমতার ভারত-ক্ষমতাহীনের ভারত, ক্রিকেটের ভারত-ডাংগুলির ভারত, টেনিসের ভারত-গোল্লা ছুটের ভারত, কমপ্লানের ভারত-ডিম খেতে চাওয়া মিড-ডে মিলের ভারত! সবাইকে প্রকাশ করতে হবে পজিটিভ পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে? কিংবা চিহ্ন-জ্ঞাপক কোন শ্লোগান দিয়ে? শ্লোগান এবং নির্মিত কিছু শব্দসমষ্টি শুষে নেয় চিন্তাকে – যে চিন্তাহীনতা রাষ্ট্র এবং ক্ষমতার অধীশ্বরেরা দাবী করে। যেমনটা ‘হীরক রাজার দেশে”-তে দেখিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। রাষ্ট্র তো বারেবারে একটি কথাই বলছে। হয় তুমি ভারতীয়, নয় তুমি ভারতীয় নও। এর মাঝে রাষ্ট্রের অতিরাষ্ট্র হয়ে ওঠার নানা রকমের কৃৎ-কৌশল রয়েছে, আছে ক্রমশ ঘৃণাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া। হিংসাকে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী (spectcularization) করে তুলতে হবে। ধীরে ধীরে এগুলো নিজের নিয়মেই সহনীয় হয়ে উঠবে। আরেকভাবে দেখলে নিজভূমে পরবাসী হবার সমস্ত সম্ভাবনা খোলা থাকলো একটি আধুনিক তথা parochial রাষ্ট্রের কাছে। এ অবস্থাকে জয়া চ্যাটার্জি উদ্বাস্তু সমস্যার প্রেক্ষিতে বুঝেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণে – “Building new nations, as one commentator has observed, is a ‘refugeegenerating process’. Efforts to create homogeneous nation states change some subjects into minorities who find themselves on the ‘wrong’ side of new borders or in the ‘wrong’ state, with the ‘wrong’ ethnicity, language or religion. Minorities are made to feel they should belong somewhere else, that they should be ‘nationals’ of some other new state made up of ‘people like them’.” তিনি দেখেছেন – “In the aftermath of empire, such migrations have profoundly transformed the demographic landscapes of the modern world.” হ্যাঁ, এভাবেই গড়ে উঠেছে আধুনিক রাষ্ট্র – exclusionary politics-কে আশ্রয় করে।রাষ্ট্রের এরকম এক ভবিতব্যে শিক্ষকেরা হয়ে যাবে educational managers, শিক্ষাদান সংক্রান্ত নানারকমের টেকনিক্যাল কাজকর্ম সামলাবেন। ছাত্রের মাঝে “কেন?”-র প্রবাহ তৈরি করার কোন জ্ঞানভিক্ষু হিসেবে অবস্থান তৈরি হবেনা। সিলেবাসও সেভাবে তৈরি হবে, যেমন সাম্প্রতিক দিল্লি বা জওহারলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। অঁরি জির (Giroux) শিক্ষার প্রেক্ষিতে “ক্ষমতা”-র ভূমিকা নিয়ে এক জায়গায় বলছেন – “Power, in this case, becomes a form of cultural production, linking agency and structure through ways in which public and private representations are concretely organized and structured within schools.”এক নতুন সংস্কৃতির উন্মেষ হচ্ছে যার ভিত্তিতে রয়েছে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিকতা-নির্ভরতা, শুধুমাত্র বর্তমানকে যাপন করা। অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের লুম্পেনরা আলোয় আসার, রাজপথের দখল নেবার, ক্ষমতার বৃত্তের সাথে সংস্থাপিত থাকার গৌরব অর্জন করবে। স্পষ্ট ভাষায় ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করবে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেবে “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যায়। আমাদের এতদিনের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা। এখানে রাষ্ট্র শুধু অতিরাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে এমন নয়। সমস্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে লুম্পেনদের হাতে সেই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে যেখানে রুনু গুহনিয়োগীদের প্রয়োজন পড়েনা। কারণ তাদেরকেও তো একটা নামকাওয়াস্তে বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রবীন্দ্রনাথকেও কোথাও কোথাও সিলেবাস থেকে বাদ দেবার প্রস্তাব এসেছে। কর্পোরেট পুঁজির জগতে হয়তো তিনি বেমানান। ইতিহাসের পুনর্লিখন চলছে। ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথ আমাদের সতর্ক করেছিলেন – “কুৎসিত বেশে সজ্জিত বর্বরতাপূর্ণ এই বৈষয়িকতা মানবিকতার বিরুদ্ধে এক প্রবল অভিশাপ, কারণ পূর্ণতার শক্তির উপরে ক্ষমতার প্রমত্ত আদর্শ চেপে বসেছে। … শক্তিমানের কাছে এই প্রলোভন যতটা সর্বনেশে, দুর্বলের কাছে তা আরও বেশি ভয়ঙ্কর। … আমাদের জীবন হয়ে উঠুক বহিরঙ্গে সহজ আর অন্তরঙ্গে মহীয়ান। আর্থিক শোষণ ও বিরোধের উপরে নয়, সামাজিক সহযোগের ভূমিতে আমাদের সভ্যতা দৃঢ়ভিত্তি লাভ করুক।” (ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদ)স্বাধীনতাপ্রাপ্তির অন্যতম প্রস্তুতি ছিল গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ভোট। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে ঢোঁড়াই বুঝতে পারে – “অদ্ভুত জিনিষ এই ‘বোট’। হঠাৎ টাকা পেলে লোকের ইজ্জত বাড়ে, এর অভিজ্ঞতা ঢোঁড়াইয়ের জীবনে আগে হয়েছে। বোটও সেই রকম রাতারাতি লোকের ইজ্জত বাড়িয়ে দেয়, কেবল যে বোট দেবে তার নয়, সারা গাঁয়ের।” (সতীনাথ ভাদুড়ি, ঢোঁড়াই চরিত-মানস) এখানে অব্যর্থভাবে মনে পড়বে বেনেডিক্ট অ্যন্ডারসনের Imagined Communities-এর কথা – “anonymous performance of citizenship”. কোন ভগ্নাংশে একে দেখা যাবেনা – হয় শূন্য কিংবা ১, এরকম পূর্ণ রাশিতে তোমার পরিচয়। তুমি একইসাথে ভারতীয় এবং পাকিস্তানী হতে পার না। “গণতান্ত্রিক” ব্যবস্থা তো একটি শক্তপোক্ত secularizing process – এমনটাই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু জাতের সমস্যা, বিভাজন, পারস্পরিক হিংস্রতা রয়েই গেলো। আবার ঢোঁড়াইয়ে ফিরি – “আমাদের সাহায্যেই ভোটে কংগ্রেসি জিতেছিল আগেরবার। এবার তাই আমরা ঠিক করেছি কুর্মছত্রি, কুশবাহাছত্রি, আর যদুবংশছত্রি এই তিন জাত মিলে রাজপুত ভূমিহারদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব।” এর উত্তর ৬২ বছরেও মিললো না। The answer my friend is blowing in the wind!ঢোঁড়াই দেখেছিল – “আর পূবের দিকের টুরমেনের ফারমের সিধা রেল লাইনের কাছে কাঠের ইস্টিশন করেছে ফৌজের সাহেবরা। বড় বড় চালা তুলেছে সেখানে। গোরু, ঘোড়া, ছাগল, খচ্চর, ভেড়ায় ভরা। সব বেলুচি ফৌজ মুসলমান নইলে এত কসাই আর কে হবে। অথচ মুসলমানরা চটবে বলে উট আর শুয়োর রাখেনি সরকার।” সেনাবাহিনীতে সাম্প্রদায়িকীকরণ অনেক পরে আবুল কালাম আজাদও অনুভব করেছিলেন – “This injected communal poison in the army which till then had been free from it.” আজাদ একথা বলছেন ১৯৪৭-এর ১৫ই আগস্টের অব্যবহিত আগে। ঢোঁড়াই আরো আগে একই বিষয় নিজের বাস্তবতা দিয়ে অনুভব করছে!কিভাবে অখণ্ড ভারতবর্ষ উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতাদের ক্ষমতার লোভে টুকরো টুকরো হল সে নিদারুণ ঘটনা বিস্তৃত জানার জন্য অন্তত তিনটি বইয়ের কথা উল্লেখ করবো – (১) জয়া চ্যাটার্জীর Bengal Divided এবং The Spoils of Partition, (২) রজতকান্ত রায়ের “পলাশী থেকে পার্টিশন” এবং (৩) সুমিত সরকারের Modern India: 1885-1947।কি হল তারপরে? উর্বশী বুটালিয়ার The Other Side of Silence-এর oral history, personal narrative, government documents ইত্যাদি সব নথিভুক্ত করেছে। তাঁর হিসেবে – “Twelve million people were displaced. Nearly one million died. Some 75,000 women were raped, kidnapped, abducted, forcibly impregnated by men of the ‘other’ religion, thousands of families were split apart, homes burnt down and destroyed, villages abandoned.” (p. 35) আরো মর্মান্তিক হল “while abducted women then entered the realm of silence, women who were killed by families, or who took their own lives, entered the realm of martyrdom.” (p. 158) একদল নারীর যাত্রা পরম নৈঃশব্দে এবং বিস্মৃতিতে যাদের কোথাও কোন চিহ্ন নেই (স্রেফ মুছে গেলো), আরেকদল অর্জন করলো শহীদের মর্যাদা। স্বাধীনতার কি অট্টহাস্যময় পরিহাস!বীণা দাস তাঁর Transactions in the Construction of Pain প্রবন্ধে জানাচ্ছেন – “The bodies of the women were surfaces on which texts were to be written and read – icons of the new nations.” কিন্তু বিপরীত ঘটনাও ঘটলো – “But women converted this passivity into agency by using metaphors of pregnancy…” অর্থাৎ, সন্তান ধারণ করার বিশেষ বায়লোজিক্যাল ক্ষমতাকে নারী তার agency হিসেবে ব্যবহার করছে – গর্ভধারণ করতে পারা যেন তার একমাত্র আইডেন্টিটি। পরিবার, নারীত্ব, চিরকালীন বিচ্ছেদের যন্ত্রণা, দেশহারা-ভূমিহারা-আশ্রয়হারা-নির্বান্ধব হবার তীক্ষ্ণ বর্ণনা ধরা আছে An Epic Unwritten: The Penguin Book of Partition Stories-এ। সাদাত হাসান মান্টোর “সাহে” গল্পে হিন্দুদের সাথে একসাথে সারাজীবন, বংশ পরম্পরায় বেড়ে ওঠা বন্ধু মুমতাজ শেষ অব্দি লাহোর যাবার জাহাজে উঠে পড়লো। সেসময় “After his bags had all been taken to the cabin, he took us out onto the deck. For a long time he gazed out of the place where sky and sea came together. He then took Juggal’s hand in his and said, ‘How perfectly deceptive … this meeting of the sky and the sea, and yet so incredibly delightful too!’” মান্টোর আরেকটি বিখ্যাত গল্প “টোবা টেক সিং”-এ পাগলা গারদের এক পাগল জিজ্ঞেস করে – If they were in India, where on earth was Pakistan? And if they were in Pakistan, then how come that until only the other day it was India?” অন্য একজন পাগল গাছের ওপরে উঠে পড়ে জানায় সে ভারত বা ভিন্ন কোন ভূমিখণ্ডে নেই – এক নিরালম্ব অবস্থা। গল্পের প্রধান চরিত্র বিষান সিং ১৫ বছর ধরে শুধু দাঁড়িয়েই ছিল। তারপরে তাকে যখন জোর করে ভারতে পাঠানো হবে তখন এই চূড়ান্ত মানসিক আর শারীরিক ধকল সে নিতে পারেনা, পড়ে থাকে তার প্রাণহীন দেহ – There behind the barbed wire, on one side, lay India and behind more barbed wire, on the other side, lay Pakistan. In between, on a bit of earth which had no name, lay Toba Tek Singh.” “নো ম্যান’স ল্যান্ডে” পড়ে রইলো মানুষটি যার কোন দেশ নেই। মান্টো তাঁর “সহায়” গল্পের (মূল উর্দু থেকে অনুবাদ সঞ্চারী সেন) শুরু করছেন এভাবে – “এমন কথা বলোনা যে এক লাখ হিন্দু আর এক লাখ মুসলমান মারা গেছে। দু লাখ মানুষ যে মারা গেছে সেটাও আসল ট্র্যাজেডি নয়। আসল ট্র্যাজেডি হল মৃত্যুগুলো খুব বেহিসেবি হয়েছে। এক লাখ হিন্দু মেরে মুসলমানরা ভেবেছিল হিন্দুধর্ম শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তা হয়নি, হিন্দুধর্ম রয়ে গেছে, রয়ে যাবে। তেমনি এক লাখ মুসলমান মেরে হিন্দুরাও আনন্দে বগল বাজিয়েছিল যে ইসলাম খতম হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তব আপনাদের সামনে হাজির, ইসলামের গায়ে আঁচড়টুকুও লাগেনি। তারা নির্বোধ, যারা মনে করে বন্দুক দিয়ে ধর্ম শিকার করা যায়। ধর্ম, ন্যায়, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এ সবকিছুই আমাদের শরীরে নয়, আত্মায় অবস্থান করে। ছুরি, কৃপাণ, গুলিতে এদের ধ্বংস করা যাবে কী করে?”“রাইত কতো হইলো? উত্তর মেলে না!”কৃষণ চন্দরের “পেশোয়ার এক্সপ্রেস” গল্পটি একবার স্মরণ করি। পেশোয়ার এক্সপ্রেস এখানে নিজের মনে কাহিনী শোনায়। এক ট্রেন ভর্তি জবাই হওয়া হিন্দু ভারতে আসছে, ফিরতি ট্রেনে ট্রেনভর্তি হিন্দুদের হাতে কাটা মুসলিম দেহ নজরানা হিসেবে ফেরত যাচ্ছে। ট্রেনটি গোঙায়। অবশেষে সেই মেয়েটিকে পেয়ে গেলো দাঙ্গাবাজেরা – “মেয়েটি ওদের হাতে নিহত হল। জঙ্গলের শুকনো ঘাসের ওপর মেয়েটি ছটফট করতে করতে মারা গেল। আর তার হাতের বইখানা রঞ্জত হল তারই দেহের রক্তে। বইটা ছিল সমাজতন্ত্র নিয়ে লেখা।” জন স্ট্র্যাচির Why One Should Be A Socialist। “সে তো নারী ছিল। হতো কারও প্রিয়তমা অথবা জননী। আর এখন সে এই জঙ্গলে পড়ে আছে লাশ হয়ে। শকুন আর শেয়ালেরা তার লাশ ছিঁড়েখুঁড়ে খাবে। সমাজতন্ত্র নিয়ে লেখা বইটা জানোয়ারেরা ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলেছে। বিপ্লবের দরজা আর কেউ খুলছে না। কেউ কিছু বলছে না।”আমাদের স্বাধীনতা পরিক্রমা আপাতত “শান্তি কল্যাণ” নিয়ে শেষ হল বেশ জবরভাবে বুঝতেই পারছেন। শুধু ৬২ বছর পরেও বিস্মৃতির অতলান্ত গহ্বর থেকে উঠে আসা স্কন্ধ কাটা মানুষগুলো বারেবারে বেসামাল করে দেয়। শিকাগোর হে মার্কেটের শহীদ অগাস্ট স্পাইসের গলায় ফাঁসীর দড়িতে টান পড়ার আগে তার শেষ কথা ছিল – “The day will come when our silence will be more powerful than the voices you are throttling today.” (History As It Happened, p. 199)আর আমাদের বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের কানে যেন মন্ত্রোচ্চারণ করেন –কোথাও মানুষ ভালো রয়ে গেছে বলেআজও তার নিঃশ্বাসের বাতাস নির্মল ;যদিও উজীর, কাজী, শহর-কোটাল ছড়ায় বিষাক্ত ধুলো, ঘোলা করে জলতথাপি মানুষ আজো শিশুকে দেখলেনম্র হয়, জননীর কোলে মাথা রাখে,উপোসেও রমণীকে বুকে টানে; কারও সাধ্য নেই একেবারে নষ্ট করে তাকে।ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    ইস্কুলবেলার ফৌজি - Sara Man | সেই কতযুগ আগের কথা, আমাদের ছোটবেলার। তখন কলকেতা শহরেও হরবখত লোডশেডিং আর হারিকেনের টিমটিমে আলো। প্রতিবেশীর বাড়িতে মাদুর পেতে সন্ধে হলেই সাদা কালোয় উত্তম সুচিত্রা, বিকাশ রায়, ছবি বিশ্বাস। একটু বড় হলে বিকেল বেলা ইস্কুল থেকে উর্ধ্বশ্বাসে বাড়ি ফেরা। স্টার ট্রেকের এক মিনিটও না মিস হয় তাই মামার বাড়িতে দৌড়। নিজেদের বাড়িতে টিভি আসেনি তখনও। ক‍্যাপ্টেন কার্ক আর মিস্টার স্পোক মহাকাশে কতনা অভিযান চালালেন আমাদের বিস্মিত চোখের সামনে। মামাতো ভায়ের সঙ্গে ফাঁকা দেশলাই বাক্স আর গার্ডার দিয়ে বানানো সেই ফোল্ডিং স‍্যাটেলাইট ফোন, সামান্য হাতের কারসাজিতে যার ভাঁজ খুলে যায় - কোথায় গেল জিনিসটা, কীভাবে করেছিলাম যেন - আজ হাওয়ায় হাতড়াই। আমার কর্তার ছোটবেলা অবশ‍্য একটু আলাদা। তেনার সাকিন যেথায় ছিল, সেতো  মেট্রো শহর নয়, দক্ষিণ সাগরের ধারে শেয়াল ডাকা রাত্তিরে তারার ধুকপুক, দেবদারু পাতায় নোনা হাওয়ার শনশন, আঁধার পথে ভাম বিড়ালের গায়ে পায়েস পায়েস গন্ধ। তো কর্তা গল্প করেন গাঁয়ের পথে ভেসে আসে সাইকেল ভ‍্যানে মাইক বেঁধে মন্টু দাদার গলায় মারকাটারি ভাষণ। দূরদূরান্তের মানুষের কানে বেজে চলে  - "কাঁ-থির মল্লিকা সিনেমা হ-লে চলছে অমিতাভো বচন, ধর্মেন্দর, হে-মা মালিনী অভিনীত ধুমধাড়াক্কা ফা-ইটিং পূর্ণ হিন্দি ছ-বি, ইস্টম‍্যান কালার, শোলে শোলে শোলে। কিংবা শ্রীরূপা সিনেমা হলে বাংলাদেশের রোজিনাকে সঙ্গে নিয়ে অন‍্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছেন মি-ঠু-ন চক্রবর্তী।" শুনে আমি হাসি, পথে না শুনলেও রেডিওয় শুনেছি ভাই - "আ-আমার শুকনো ডালে ফুল ফুটেছে, কে দেখবি, কে দেখবি  আয় - কে ঐ বৃদ্ধা, ঐ বৃদ্ধার আড়ালে কি লুকিয়ে আছে কোন চাতুরী, যে চাতুরী সুযোগ পেলেই ঝলসে ওঠে নাঙ্গা তলোয়ার হয়! - না - ঙ্গা তলোয়ার, ১৩৮৮ র বলিষ্ঠ প্রযোজনা।"   দিন যায় না জল যায়। জল চোঁয়ায়, বুক ভাঙে। আজ ফিজিওথেরাপি, কাল এম আর আই, পরশু অপারেশন, আর সারাদিন ঘড়ি ধরে টপ টপ ট‍্যাবলেট। আমরা সব পঞ্চাশ পেরিয়ে ষাটের পথে। কেউ বা ষাটের লাইন পার। বয়স হচ্ছে বোঝা যায়, এক কথা বলতে গিয়ে সাত কথার প‍্যাঁচাল পাড়তে বসে যাই। কিন্তু আমাদের চেনা পথে না হেঁটে ঐ সাতান্ন বছরের লোকটা কী করছে বলুন দেখি। একটা বেপথু ভারত (জন আব্রাহাম) কে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে আদর্শ ভারত হয়ে এই তো সেদিন পাকিস্তানের (দীপিকা পাড়ুকোন) সঙ্গে সংযমী বন্ধুত্ব করে ফেললেন। এবার আবার ডবল অবতারে? একে দীপিকা তায় নয়নতারা - বলি শ‍্যাম রাখি না কূল, দক্ষিণী হুরী না বলিপুরীর ফুল - কোনদিকে ঝুঁকি! পাঠান, জওয়ান - দুবারই আপনি পরিচয় হারান, পরিচয় হারিয়ে কেবল মানুষ হয়ে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য - এই বার্তা দিয়ে যান। সেবারে কফি আর পেন কিলারের পাতা নিয়ে একটুসখানি সাপোর্ট দিয়েছিলেন কিং সলোমন। এবারে ঐটুকখানি হাত বাড়িয়েছেন সত‍্যি সত‍্যি টাডা, রিহ‍্যাব পেরোনো সঞ্জয়। না ভারত পাক দ্বৈরথের চেনা পাঁক নেই। এবার লড়াই সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী ভারতের সঙ্গে বঞ্চিত ভারতের। চল্লিশ হাজার কোটি টাকা মাপ হয়ে যাওয়া এক অস্ত্র ব‍্যবসায়ী খারাপ মানের বন্দুক সরবরাহ করে, আর তাই নিয়ে জঙ্গিদের হয়ে লড়তে গিয়ে শহীদ হয়ে যান জওয়ান ভায়েরা। সেনাপ্রেমের ফানুস ফুটো হয়ে শোঁ শোঁ করে সুবিধাবাদীর মাথায় নাচে। আর চল্লিশ হাজার টাকার সুদ দিতে না পারায় কৃষকের ট্র‍্যাক্টর কেড়ে নিয়ে তাকে জুতো পেটা করে ব‍্যাঙ্কের বাউন্সার, একটানে ধুতি খুলে কন‍্যার সামনে উলঙ্গ করে দেয়। একলাফে দর্শকদের শিরদাঁড়াগুলো টানটান হয়ে RRRএর ডায়লগ বলে - "লোড, এইম, শুট"। লেডি ডাক্তার ইরম এনকেফেলাইটিসে আক্রান্ত বাচ্চাদের বাঁচাতে পাগলের মত অক্সিজেন খোঁজে। ইরমের আড়ালে কা তব কান্তা কস্তে পুত্র - কাফি কান্ড আছে মেড়া জানে সূত্র। পাঠান বা জওয়ান - কেবল ফাইটিং, ওড়াউড়িং, ল‍্যান্ডিং, কামানিং, ট্রাকিং, হেলিকপ্টিং - নতুন আমদানি মেট্রো হাইজ‍্যাকিং। গতবার দীপিকা মারকাটারি অ্যাকশন করেছেন, প্রেম করতে পারেননি, এবার একটু একটু পেরেছেন, আর "ফাইটিং পূর্ণ" সিনে পুষিয়ে দিয়েছেন নয়নতারা। বাস্তবে কোন অন‍্যায়েরই তো প্রতিকার করতে পারলাম না। তাই বেঁচে থাক আড়াই ঘন্টার বদলা। বদলা, বদল দুটোই চাই। বদলের বদলি কদলী পাই। 
    রামকে খোলা চিঠি  - তামিমৌ ত্রমি | রামকে খোলা চিঠিতামিমৌ ত্রমি রাম, তোমার ঠোঁটে ঠোঁট বিছিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। বটবক্ষে মাথা। নাভিতে তব নাসিকারথচূড়া ঠেকিয়ে আস্বাদন করতে চেয়েছিলাম উদ্ভিন্ন অন্ধকার। প্রিয়তম রাম! তুমি উজিয়ে উঠলে অঙ্গে ময়ূর বন্য বেজে ওঠে মোর। আরো নীচে, আরো গভীরে অলঙ্কৃত রিক্ততা ছিঁড়ে নিজেদের ছালচামড়ায় গোক্ষুরা চিহ্ন এঁকে রাখার কথা লিখে ফেললে শালগ্রাম না আবার  জীবাশ্ম হয়ে যায়!  ছলছলছলছলছলছল।  সমুদয় বালতি উজাড় হয়ে গেলেও ঠোঁটদুটো ফাঁক করে তোমার সম্পর্কে দুটো কথা বলার উপায় নেই। তোমাকে ভালোবাসি বলতেও ভয়, না বলতেও ভয়।অথচ.. এই নিভৃত নুন জলে একটি দাঁড়ি বসার কথা ছিল তীব্র,তাই না? তুমি আমার মহাকাব্যের নায়ক। সম্পর্ক তো একান্ত তোমার আর আমার। কেন কোন তালেবর তোমার আর আমার মাঝখানে ভাদ্র ভ্রুকুটি পাকিয়ে তুলবে?তুমি ছোটবেলা থেকে আমার নি:শ্বাসে প্রশ্বাসে। তখন তোমাকে ভালোও লাগত না, মন্দও লাগত না। যেমন ভাত।রোজ খেতে হয়; তার আবার ভালোমন্দ।  ঠাকুমা বুড়িকে তিন বছরের বেশি পাইনি কিন্তু তার প্রবাদ আজও টেপফ্রক ঘুলঘুলিতে গুঞ্জরিত হয়- 'রামায়ণ ধামায়ণ বুঝিতে না পারি/ সকলের দু:খ দেখে কেঁদে কেঁদে মরি'। ইউনিফর্ম বিনুনির সময়ে যখন জোড়া বিস্কুট খেলে জোড়া বাচ্চা হোত আর ঠাকুর কথায় কথায় পাপ দিত, 'অরুণ' এলেন কিরণ ছড়িয়ে স্বর্ণরথে। তুমি একখানা অবয়ব পেলে। রক্ত মাংসের টেলি অবতার। কিন্তু জানো তো, যেমন ফুল ফোটে,সেফটিপিন ফোটে তেমনি মেয়েদের বুক ফোটে, দেহের সেই কুঁড়িকাতর আর্তনাদ যে কতটা মধুর; কতটা বিষাক্ত, তা তুমিও নিশ্চিত জানো রাম, যৌবন তো তোমার দরজায়ও কড়া নেড়েছিল।বাল্মীকিকে মহাকাব্য লিখতে হবে,তাঁর তাড়া রয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেননি তোমার স্বপ্নদোষ কিন্তু অযোধ্যার রাজমহলের কোন উদ্ভিন্নযৌবনা অসতর্ক  দাসীকে কখনো তুমি রক্তিম -পলাশ নয়নে একবারের জন্যও বিদ্ধ করনি, তোমার শ্বাস এক মুহুর্তের জন্যও স্তব্ধ হয়নি, তোমার চোয়াল ও নিগূঢ় এক পলের জন্যও দৃঢ় হয়নি, এ যদি সত্যি হয়, তাহলে তোমার রক্তমাংস, লসিকাতন্তু বৃথা..কিন্তু যত হলুদ বনে সবুজ বাঘ গর্জাতে শুরু করল, তত তোমার প্রতি এই ভ্রুযুগল সন্দিগ্ধ হতে শুরু করল। পুঁজ ও ঘৃণা উদবেল হয়ে  উঠতে লাগল বিস্ফার ঠেলে। কী বিরক্তিকর তুমি! অসহ্য! একটি স্লোগান, একটি জিগিরের বাহক। যে স্লোগানে মানুষকে তার চৈতন্য থেকে পিস পিস করে কেটে আস্তিত্বিক  কিমায় কুঁচিয়ে ফেলা যায়, সেই স্লোগানের বিধাতাপুরুষ তোমাকে, অন্য দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাসের ফোঁসফোঁসটুকু দেওয়া ছাড়া আর কিছু দেওয়ার ছিল না। ক্রমে বুক- বুদ্ধি ডাগর হল। দু একটা বইয়ের পাতা ওল্টাতে শুরু করলাম। মহাভারত হয়ে উঠল আমার অন্তরাত্মা। যত দিন যেতে লাগল কৃষ্ণ, কর্ণ, অর্জুন, একলব্য এঁদের সঙ্গে ইলাস্টিক যাপনে বুঁদ হয়ে রইলাম। তুমি শুধু রইলে গা রি রি করে ওঠা জ্বালায়..এমন সময়ে অমিত্রাক্ষরেশ্বরের প্রেমে পড়লাম। মাইকেল ভিতর থেকে চাড় দিয়ে জাগিয়ে দিলেন আমাকে। যেন এক ডায়নোসর ঘুমিয়ে ছিল, এবার তার বুক কাঁপল, অতিকায় সমুদ্রকায়ে দোল জাগল, তারপর দুটি দীঘির মতো চোখ মেলা হল, একটা বড় করে সাইক্লোনিক শ্বাস উদগত হয়ে সে ধরণী ঝাঁকাল, তারপর উঠে দাঁড়াল। এভাবেই সামান্যা থেকে বোধিকা উন্মোচনে মেঘনাদবধকাব্যের জড়োয়া বিভঙ্গে জড়িয়ে গেলাম। আবিষ্কার করলাম প্রমীলাকে, সীতাকে.. নতুন রূপে। মাইকেলী সীতা, প্রমীলারা তো দেবী নয়, চরিত্রও নয়, তারা আমার মতো কথা বলে,হাঁটে,দু:খ পায়,দু:খ মোচনের পথ খুঁজে নেয়। তাদের সম্পর্কে জানতে কৌতুহল হল। শুরু করলাম রামায়ণ পাঠ।  সীতার ঘোমটা প্রতিদিন একটু একটু করে উন্মোচিত হতে লাগল। তার দৃষ্টির সুদূর আমার নয়নে স্থাপিত হল কখন, তার শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে আমার বুকের ওঠানামা শুরু কোন আশ্চর্য নির্বন্ধে, সেসব খেয়াল করার আগেই দেখি, হরধনু ভঙ্গ করে তুমি ঈষৎ লজ্জিত অথচ দৃপ্ত মৃদুহাস্যমথিত মুখখানা উদ্ভাসিত করে এদিক ওদিক আড়ে আড়ে চাইতে চাইতে হঠাৎ তোমার দৃষ্টি আটকে গেল একটি মুখের উপর।সেই মুহুর্তে  সমস্ত চরাচর স্তব্ধগাছ একটি পাতা মোচন করেনিপৃথিবীতে কোথাও কেউ চোখের পাতাটুকু ফেলেনিহৃদস্পন্দনক্রিয়া বলে যে এই মায়াপ্রপঞ্চে কিছু আছে তার কোন প্রমাণ ছিল না...যার চোখ থেকে অনঙ্গমোহিনী মাকড়সা তোমার চোখ অব্দি জাল রচনা করেছিল, সে সীতা, আর তার পাশে.. বরণমালার থালা হাতে দাঁড়িয়েছিল যে দাসী, সে কে? আমি, রাম। সেইদিন সেই মুহুর্তেই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।বনবাসে তো দিব্যি ছিলে প্রথমে দুটিতে। সীতার শাড়ি গয়নার প্যাঁটরা বইতে বইতে দেখছিলাম তোমাদের চোখের আঠালো বিনিময়। তুমি তাকে গাছ, ফুল, লতা পাতা চেনাতে চেনাতে যাচ্ছিলে, আমি চিনে নিচ্ছিলাম নতুন করে এই মায়াময় কাজলপরা জগৎকে কম্প্র আবডালেকী সুন্দর তুমি রাম! সুঠাম, পেশী অলঙ্কৃত, কমল - লোচন। তোমাকে দেখে সোহাগ করতে ইচ্ছে করে না, বল... শূর্পনখা যখন নালিশ ঠুকতে গেল রাবণের কাছে যে খর দূষণ সক্কলকে রাম কচুকাটা করছেন, রাক্ষস - নন্দিনীর সে বর্ণনার মধ্যে একটা ধড়াস ছিল জানো।  সে যে নিজেই জ্বলে মরছিল তখন তোমার প্রভাচ্ছন্নতায়। সে বলছিল তোমার ক্ষিপ্রতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ব্যাখ্যার অতীত, চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই তোমার বাণের ঝাঁকস্রোতে চোদ্দ হাজার দুর্দমনীয় রাক্ষস যেভাবে এলিয়ে পড়ল, সে বিশ্বাসের উর্ধ্বে। কিন্তু বিশ্বাস না করে তো উপায় নেই। আরণ্যক সে যুদ্ধে নটরাজনের মতো তোমার চণ্ডসৌন্দর্য্য, হিমাচল পেশীভঙ্গিল, প্রতিটি বাণ নিক্ষেপের আগে তোমার বক্ষ আস্ফালন, জটা থেকে গঙ্গাস্রোতে ধেয়ে আসা ঘর্মধারায় সিক্ত তোমার শালতনু টকটকে ক্রোধান্বিত মুখ...রাজকন্যা শূর্পনখার পাশে তার নাসিকাস্নাত রক্তমাখা বর্জ্য  কাপড় মুঠোয় চেপে যে মূর্তিমতী তোমার প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ সবিস্ময়ে  হরিলুটে গিলে মরছিল, সে কে?আমি, রাম। তোমাকে এভাবেই ভালোবেসে ফেললাম। কোনদিনই সচেতনভাবে তোমাকে ভালোবাসতে চাইনি, কিন্তু নির্বন্ধ হাতুড়ি ঠুকে ঠুকে আমার মধ্যে তোমার পেরেক-প্রবেশ ঘটালেন।বিভীষণের রাজ্যাভিষেকের পর যখন তুমি ভরা ময়দানে সীতাকে ডেকে কুকুরে চাটা ঘি বললে, আমি, যুদ্ধে সদ্য স্বামী পুত্র হারানো সামান্যা রাক্ষসী অবধি কেঁপে উঠেছিলাম। দিনের পর দিন সীতাকে আমি ভয় দেখাতাম, বেত্রাঘাত করতে বাকি রেখেছি কোন কোনদিন, তবু কোন কুকুরের প্রতি তার মন নিক্ষিপ্ত হয়নি অথচ তুমি...অগ্নিপরীক্ষা থেকে যে বেরিয়ে এল,  যাকে নিয়ে তুমি পুষ্পক চড়ে রওনা দিলে তোমার রামরাজ্যে, সে তো জনকনন্দিনী  সীতা কিন্তু যে মায়াসীতা ঐখানে ঐ মুহুর্তে পুড়ে মরল, যার হৃদয় আগেই ছাই হয়ে গেছে, সে কে?আমি, রাম। এই প্রথম তোমার উপর বিশ্বাস হারালাম। এরপর অনেকবার ভেঙেছে সে বিশ্বাস যখন আমি আলতা পরাচ্ছিলাম সন্তানসম্ভবা  সীতার পায়ে আর তুমি তাকে বেড়াতে যাবার প্রস্তাব করেছিলে। আশ্রমে লব কুশ হওয়ার সময়ে ধাত্রীকে গরম জল এগিয়ে দিতে দিতে যে নারী শুনেছিল সীতার 'রাম', 'রাম' হৃদয়প্লাবী আর্ত তিল তিল, সে নারীর নাম বলব না আর। যে রোজ লব কুশকে রাজা রাণী আর রাজকন্যার গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়াত, তাদের গা জ্বরে পুড়ে গেলে জলপটি দিতে দিতে ঘুমে ঢলে পড়া সীতার মাথায় বিলি কেটে দিত তার কথা মহাকাব্যে ঠাঁই পাবার নয়। শুধু যেদিন আমার ছেলে শম্বুকের মাথা কেটে দিলে সেইদিন আমার কোন অনুযোগ ছিল না। ছেলের মাথাটা কোলে নিয়ে যত্ন করে বসেছিলাম অনেকক্ষণ, ওরা কখন এসে নিয়ে গেল টের পাইনি কিন্তু তখনও আমার মেধাবী ছেলের মস্তকের রক্তিম অনর্গলে মাখামাখি হয়েছিল আমার কোল। সে শাড়ি আমি ছাড়িনি রাম। আমার সারা গায়ে ভনভন করে উড়ে বেড়ায় মাছি, আজওসেই মাছি পোকাদের কিছু ভনভন আর কিলবিল উড়ে এসে বসেছিল রাজান্ত:পুরের বারান্দায় যেদিন আমার স্বামী লক্ষ্মণকে ত্যাগ করেছিলে।  সে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিল সরযুতীরে।  ধাপে ধাপে নেমে ডুব দিয়েছিল জলের কারুকার্য্যে। আর তার নাগাল চরাচর পায়নি কোনদিন। যে লক্ষ্মণ  চোদ্দটা বছর তোমার ছায়াসঙ্গী হয়ে কাটিয়ে দিল...বনবাসে যাবার সময়ে জানালা দিয়ে কেউ যে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করছিল ঝাপসাপ্লুত নয়নে, সে কথা ভাবার সময় তার কোনদিনই ছিল না..  হায়! সেই  লক্ষ্মণ.. সৎ গোঁয়ার চণ্ড অথচ কী ছেলেমানুষ তাকে অবধি ব্রাহ্মণদের শাপের ভয়ে,  অখ্যাতির ভয়ে..ঠিক যখন তুমি জগত সভায় সীতাকে সহধর্মিণী হিসেবে পুন:প্রতিষ্ঠিত করার বদান্যতা দেখানোর সাহস পেয়েছিলে সীতা পাতালে ঝাঁপ দিল। আমি, তার আশ্রম-সই তার  হাতদুটো খামচে ধরেছিলাম। সীতা বাধা দেয়নি,কিছু বলেওনি, পদ্মকুঁড়ি যেমন ধীরে ধীরে বিকশিত হয়, তার  আঁখিস্থাপত্যদুটি সে শুধু ধীরে ধীরে মেলে ধরেছিল আমার দিকে..আমি দেখেছিলাম একটা কাগজের মুখ। তাতে কোন ভাবলেশ নেই। চাওয়ার দীপাবলি, পাওয়ার অকাল বোধন নেই। হাতটা নিজের অজান্তেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম, দুজ্ঞা দুজ্ঞা। সীতা নামিয়া প্রমাণ করিল যে সে নামে নাই।তুমিও চলে গেলে রাম। সীতার সঙ্গে সঙ্গে তুমিও চলে গেলে। তারপর থেকে তোমার মুখে হাসি দেখিনি। রোজ তোমাকে খেতে দিতাম, তুমি খাবারের থালার সামনে হাত গুটিয়ে বসে থেকে জানালা দিয়ে চোখ ভাসিয়ে দিতে, তারপর থালায় জল ঢেলে উঠে যেতে। কতদিন মনে হয়েছে, বিষ মিশিয়ে দিই তোমার খাবারে, তুমি যা করেছো সীতার সঙ্গে, এটাই তোমার উপযুক্ত শাস্তি।কিন্তু মরা মানুষকে মারা যায় না। তোমার দেহ জৈবধর্মে চলে আর গেহ জ্বলে অনন্ত চিতায় । রাবণের চিতা নিভে গিয়েছে এক সময় কিন্তু তোমার চিতায় তুমি আপনি ঘৃতাহুতি দিয়েছো বিন্দু বিস্বাদেরাগ হতে হতেও আশ্চর্য লাগে, যার পিতার তিনশো পঞ্চাশ রমণী, যার পরবর্তী যুগেও একলা দ্রৌপদীকে নিয়ে কারোর সুখ হয়নি,  ষোলো হাজার রমণীর কমলাক্ষ মোহনকে নিয়ে যেখানে আড়ালে রসিকতা কম ছিল না সেখানে রাম, তুমি শুধু একজন নারীকেই ভালোবাসলে, সন্দেহ করলে, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করলে, নিজেও ছাই হলে.. কী ভীষণ আধুনিক তুমি। অন্যরকম! না সীতাকে কোনদিনই সেভাবে পেলে না বলেই তাকে পাবার আশ মিটল না?এ প্রশ্নের উত্তর সরযূ নদীর স্রোত জানে। একটু একটু করে প্রতিদিন সাঁতার ভুলতে শেখার রেওয়াজ করেছিলে একদিন জলের হৃদয়ে ডুব দেবে বলে। যদি তখন মাছ জন্ম নিতাম তাহলে তোমার অন্ত:করণ ছেঁকে ধরতাম ঝাঁকে ঝাঁকে...কিন্তু থাক। কতদিন ভালো করে ঘুমোওনি। স্বর্ণময়ী সীতার ঝলকানিতে সারা রাত ঘুম হোত না তোমার...এই দেখো, যে কথা বলতে গিয়ে এত কথার অবতারণা- রাম, তোমাকে ভালোবেসেছি আমি। যেভাবে একজন মানুষী ভালোবাসে তার মনের মানুষকে, তাকে  ঘাম চন্দনের মতো মেখে নেয় নিজের সলজ্জ অথচ সপ্রতিভ শরীরে, মনে, সত্ত্বায়, ঠিক সেইভাবে অথচ এই কথা বলতে গিয়ে এতগুলো চর্ব্য আর চোষ্য লেগে গেল - ভয়ে।কিন্তু ভয় কেন করব বল। যারা তোমাকে ভগবান ভাবে, তাদের হৃদয় থেকে তোমার ভগবত্তা তো আমি কেড়ে নিতে চাইছি না। তাহলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে আমার নয়ন স্নাত হতে বাধ্য হবে কেন? তুমি যতটা তাদের ততটাই আমার। আমাদের বিনিময়ের পৃথিবীটা আমাদেরই। এর মধ্যে গোটা পৃথিবীর অনুপ্রবেশ ঘটবে কেন? তুমি যদি সত্যিই সসাগরা ধরণীর অধীশ্বর হও, তাহলে  তোমার কাছে আজ এই প্রার্থনা করি, তুমি সিংহাসন থেকে হৃদয়ে নেমে এসো। তোমাকে যেন নির্ভয়ে ভালোবাসতে পারি ; ঘৃণা করতে পারি পরম কুণ্ঠাহীনতায়। নিজের উঠোনের বেড়ায় তোমাকে, হে অন্তরতম, ঘনিয়ে তুলতে পারি নিজস্ব লতাঙ্গিকে...চিত্রঋণ: রাজা রবি বর্মা 
    আগস্টের সন্ধ্যা - ৫ - Nirmalya Nag | মূল ছবিঃ ডেভিড ম্যাকাচেন, পেক্সেলস   [ পাঁচ ] স্বর্ণালীর কথা ওফ, মা আবার সেই অফুল গ্রিন সালোয়ার কামিজটা পড়েছে।“বোস না… দাঁড়িয়ে কেন?”অ্যাজ ইফ বসলেই অল দ্য প্রবলেমস উইল বি সলভড। এনি ওয়ে, বসা যাক। মা-ও তো বসলো চেয়ারে। আমি ডিভানে বসি।“বল…”হোয়াট ডু ইউ মিন বাই বল! কবে থেকে জিজ্ঞেস করছি তুমি বাঙুরে কি করছ অ্যান্ড ইউ ডিডন্ট টেল মি এনিথিং।… ওক্কে, লেটস স্টার্ট সামথিং।"আজ এই বিশ্রী সালোয়ার কামিজটা না পড়লে চলছিলো না?"“সকালে বৃষ্টি পড়ছিল না? তাই পরলাম। এটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।  দেখিসনি তখন?”আই ডিডন্ট নোটিশ মা কী পরে অফিস গেছিল। আমার তেমন কোনও ইন্টার‍্যাকশনই নেই মার সাথে। আই অ্যাম মাচ মোর কমফোর্টেবল ইন দ্য কোম্পানি অফ বাবা, অ্যান্ড শি ডাজন্ট লাইক ইট।“সন্ধ্যেবেলার ওষুধটা খেয়েছিলি বেরনোর আগে?”দু দিন আগে বাজে একটা ঠান্ডা লেগেছিল বলে ওষুধ চলছে আমার। আই জাস্ট ফরগট। “না, ভুলে গেছি।”“ভুলে গেলি! ফোন করে মনে করিয়ে দিলাম, তার পরেও ভুলে গেলি?”“আমি কি ইচ্ছে করে ভুলে গেছি নাকি?” আমার গলা চড়ে গেল।“চেঁচিও না, এটা অন্য লোকের বাড়ি। কেমন ঠাণ্ডা লেগেছিল তুমি নিজেই জানো। আজ জন্মদিন না হলে তোমায় বেরোতে দিতাম না।”“ও, এটা অন্য লোকের বাড়ি! তা নিয়ে আমার কিছু জানা চলবে না। কিন্তু তুমি আসতে পারবে… অ্যান্ড রেগুলারলি। আর সেই বাড়িতেই তুমি কেক নিয়ে এসেছো টু সেলিব্রেট মাই বার্থডে। আর আমার বন্ধুরা… দে অলসো…"আমার চোখে জল এসে গেল। আমি অন্যদিকে তাকালাম। ঠোঁট কামড়ে চেষ্টা করলাম কান্না আটকাতে, পারলাম না। মা এসে আমার কাঁধে হাত রাখল, আমি এক ঝটকায় সরে গেলাম।“তোর বন্ধুরা নিজে থেকে কিছু করেনি। আমরাই বলেছিলাম এবার জন্মদিনটা এখানে হোক, একটু --”“আমরা কারা? আমার জন্মদিন কোথায় হবে সেটা অন্য কেউ ডিসাইড করবে না কি?”“তোর অনেক প্রশ্ন রে... আনন্যাচরাল নয়। আমি কেন বাঙুরে আসি, কী করি…। অনেক বার তোকে বলব বলব করেও বলতে পারিনি। আসলে তোর বাবা--”“বাবাকে এর মধ্যে টানছো কেন? হি ইজ নট অ্যাসোসিয়েটেড উইথ এনিথিং ইউ আর ডুইং। নর ডাজ হি ওয়ান্ট টু।”মা একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল। ফিরে গেল চেয়ারে। “মামা তোকে ছোটবেলায় পুজোয় জামা দিত মনে আছে?”আমার একজনই মামা, বেলঘরিয়ায় থাকে। ছোটবেলায় জামা দিত পুজোতে, হঠাৎই দেওয়া বন্ধ করে দিল। “হ্যাঁ, মনে আছে। কেন?”“মামা তোকে জামা দেওয়া বন্ধ করল কেন?”“হাউ ডু আই নো? মে বি ফিনান্সিয়াল প্রবলেম ছিল। কিন্তু এখন এসব কথার কী মানে?”“কোনও ফিনান্সিয়াল প্রবলেম ছিল না। আমি বারণ করেছিলাম।”“হোয়াট?”“হ্যাঁ, কারণ আমি দীপুকে কিছু দিতে পারছিলাম না।”দীপু আমার মামাতো দাদা। বললাম, “আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”“মামা তোকে জামা দেয়। আমি দীপুকে দিতাম। সেটা তোর বাবা পছন্দ করত না। সাংঘাতিক অশান্তি করত। তাই আমি দেওয়া বন্ধ করলাম, দাদাকেও না করলাম তোকে দিতে। দাদা শোনেনি, পরের বারেও যখন দিল, আমি ফেরত দিয়ে এসেছিলাম। তার পর আর দেয়নি।”আমি একটা ধাক্কা খেলাম। বিশ্বাস হচ্ছিল না। দীপুদাকে জামা দিলে বাবা আপত্তি করবে কেন! একটু ভেবে বললাম, “তুমি কি বাবার টাকা থেকে দিতে?”“আমি চাকরি করি সোনা। তোর বাবার মত ইনকাম অবশ্যই করি না। কিন্তু দীপুকে কিছু দেওয়ার জন্য ওর টাকায় হাত দেব কেন? আর শুধু দীপু না, আমার বাপের বাড়ির কাউকে কিছু দিতে গেলেই তোর বাবা প্রবলেম ক্রিয়েট করত। আমার রোজগারের টাকা আমি কোথায় কিভাবে খরচ করব সেটাও ও কনট্রোল করতে চাইত।”এজরা স্ট্রিটে বাবার ইলেকট্রিক্যাল গুডসের বড় দোকান, হোলসেলের বিজনেস। হি ডাজ নট নিড মায়ের টাকা। “বাট হোয়াই? বাবার কি তখন বিজনেস খারাপ চলছিল?”“বিজনেসে ভাল সময় খারাপ সময় দুই-ই থাকে। তার জন্য নয়। এটা ওর স্বভাব। অনেকেই এমন থাকে। তারা ভাবে, আমি যথেষ্ট ইনকাম করি, আমার স্ত্রীর চাকরি করার দরকার নেই। কিম্বা ডিসাইড করতে চায় বৌ-এর রোজগারের টাকা কিভাবে কোথায় খরচ করা হবে।”আমি মেলাতে পারছিলাম না। আমি যা চাই বাবা দেয়, না বলে না।  আইফোনটা অবশ্য আমি একরকম জোর করেই আদায় করেছিলাম। মা পছন্দ করেনি একদম, বাট হি ডিডন্ট লিশন টু হার। আমিও মার কোনও কথাতেই পাত্তা দিই না। অবশ্য আমার ল্যাপটপটা মা কিনে দিয়েছিল।"আ-আই হ্যাভ আ কোয়েরি।" মা তাকাল আমার দিকে। "তোমাদের… ডিভোর্স হল ফর দিস রিজন?”"মেনলি। একবার ওকে না বলে একটা এনজিওতে ডোনেট করেছিলাম বলেও প্রচুর ঝামেলা করেছিল।... আরও কিছু খুচরো প্রবলেম ছিল। তবে সে সব কম বেশি সব ফ্যামিলিতেই থাকে। তবে ওই… সব যোগ হয়ে ব্যাপারটা ক্রমশ পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের দিকে চলে গেল। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম কোনও টান আর নেই আমাদের মধ্যে। মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেল। তুই তখন ছোট, ক্লাস ফাইভ, তাই আমিই তোকে পেলাম। তোকে আঁকড়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্ত…."মা চুপ করে গেল। আমিও চুপ থাকলাম। আই নো হোয়াট শি ইজ ট্রাইং টু সে। আমি গ্র‍্যাজুয়ালি সরে গেছি মা-র থেকে। মনে আছে মা সে সময় আমায় জড়িয়ে ধরে বসে থাকত, কাঁদত। আমার ভাল লাগতো না, উঠে চলে যেতাম। মা দেখলাম আঙুল দিয়ে চোখের কোণাটা মুছে নিল। ফর দ্য ফার্স্ট টাইম আমার মায়ের জন্য খারাপ লাগছিল। তবে আরও একটা কথা জানার আছে। "আমার খরচ বাবা দেয়। কেন?""আমার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তখন আমাদের কোম্পানির অবস্থা খারাপ। উঠে যাওয়ার মত অবস্থা। চাকরি থাকে কি না সন্দেহ, অন্য চাকরির চেষ্টা করছিলাম। পছন্দসই পাচ্ছিলাম না। তুই খুব ভুগতিস ছোটবেলায়। সব সামলে তোকে যদি ঠিকমতো বড় করতে না পারি টাকার অভাবে, সেই ভয়টা গেড়ে বসেছিল। ও তোর পড়াশোনার খরচ দিতে চাইল। সেই থেকে…."সত্যিই আমি খুব ভুগতাম। রিউম্যাটিক ফিভার। জয়েন্টগুলোতে খুব পেন হত আর জ্বর আসত। আই হ্যাড টেকন লটস অফ মেডিসিনস অ্যান্ড ইঞ্জেকশনস। গ্র‍্যাজুয়ালি ইট ওয়াজ কিওরড। এক জন আয়া ছিল, তবু মাকে প্রচুর ছুটি নিতে হত আমার জন্য।"তোকে এ সব কথা এই ভাবে বলতে হবে কখনও ভাবিনি। তবে বড় হয়েছিস, অনেক কিছু দেখবি, শুনবি।”"তোমরা তো সেম কলেজে পড়তে।""হ্যাঁ, চাকরিটা বিয়ের আগেই পেয়ে গেছিলাম... তাই। বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো আর চাকরি করাই হত না।… অনেক কিছুই আগে থেকে বোঝা যায় না রে, এক ছাদের নিচে ২৪ ঘন্টা থাকলে তবেই একে অন্যকে চেনা যায়।"      কিন্তু বাবা তো আমায় খুব ভালবাসে। ডাজন্ট হি হ্যাভ এনি গুড কোয়ালিটি? প্রশ্নটা করেই ফেললাম।"কেন থাকবে না? নইলে এত বড় একা ব্যাবসা চালাচ্ছে কি করে? তোর কাকা জ্যাঠারা তো এই বিজনেসে আসেনি। তোর দাদু তো অনেক দিন থেকেই আর মাথা ঘামান না। মেমারি খুব ভাল, পি-আর খুব ভাল, হইহুল্লোড় করতে পারে, রিস্ক নিতে পারে। কেবল আমার সাথে মিলল না।""সেটা আগে বুঝতে পারোনি?""না রে। সুন্দর কথা বলত। দেখতেও ভাল ছিল। বিয়ের পর যে ইস্যুগুলো বড় হয়ে উঠল সেগুলো তো আগে ছিল না।"সো ইটস অলমোস্ট দ্য সেম কেস। তৃষা যে প্রদীপের দিদির কথা বলল তার মত। দ্য ওনলি ডিফরেন্স ইজ দ্যাট যে আমি পিকচারে এসে পড়েছি। নাও আসতে পারতাম ওই মেয়েটার মত হলে। বাট আই অ্যারাইভড অ্যান্ড ইজ সিটিং ইন দিস সিলি রুম নাও। শিট, আসল কথাটাই তো জানা হয়নি। "এই অশোক অরোরা ভদ্রলোক কে?""এক জন মিড-লেভেল বিজনেসম্যান। আমার বসের বন্ধু। এক সাথে ক্লাবে যাবেন বলে প্রায়ই আমাদের অফিসে আসেন।"মা জিএম ফিনান্সের পিএ। বাবার কাছে শুনেছি মায়ের কোম্পানির অবস্থা মোটেই ভাল না। উঠে যেতে পারে।“তোমার অফিস তো বোধ হয় বন্ধ হয়ে যাবে। তুমি মিস্টার অরোরার এখানে কি কর?”“আমাদের কোম্পানি অনেক দিন ধরেই সিক। এবার গভর্নমেন্ট এটা তুলে নেবে বলে ডিসিশন নিয়েছে। কদিন আগে পেপারেও বেরিয়েছিল। কিছুদিন পরে আর চাকরি থাকবে না আমার।"  "আই আস্কড তুমি এখানে কী কর?""জিগ্যেস করলি না তো চাকরি গেলে কী ভাবে চলবে আমাদের?" সামহাও দ্যাট ডিডন্ট কাম টু মাই মাইন্ড। "কত দিন আর চাকরি আছে তোমার?" “আমাদের ভিআরএস দেওয়া হবে। মাস কয়েকের মধ্যেই সব মিটে যাবে।”“ভিআরএস মানে তো একটা লাম্পসাম অ্যামাউন্ট পাবে।”“হ্যাঁ। পি-এফ, গ্র্যাচুইটি, আর ভিআরএস মিলিয়ে একটা ভালো অ্যামাউন্ট পাওয়া যাবে। একটা পেনশন স্কিমে ইনভেস্ট করা আছে, অল্প কিছু পাওয়া যাবে।”“সো, তুমি এখানে চাকরি করছ। তো সেটা আমায় বললেই হত। ইউ ওয়্যার সো সিক্রেটিভ।”“আমি এখানে ঠিক চাকরি করছি না। যাতায়াত ভাড়া হিসেবে সামান্য কিছু পাচ্ছি। এখন আর সে ভাবে চাকরি পাবোও না, ইচ্ছেও নেই।”“তাহলে এখানে আসছো কেন?”“অশোকজী এখানে একটা হোম ডেলিভারি চালাচ্ছেন। সেটা আমি দেখাশোনা করছি।”“মানে ডেলিভারিং কুকড ফুড টু পিপল?... তোমার বসের বন্ধু, আ মিড লেভেল বিজনেসম্যান… তিনি এই রকম একটা বিজনেস করছেন?”“এটা বিজনেস নয়, ফিলানথ্রফি।”আমার ভ্রূ কুঁচকে গেল। “মানে?” (পরের সংখ্যায় শেষ) (সানন্দা, ২ আগস্ট ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত) 
  • জনতার খেরোর খাতা...
    বিশ্ব নারী  দিবস - Tapti Bose | আজকে বিশ্ব নারী দিবস। সকাল থেকে রুমার মোবাইলে, হোয়াটস্যাপ ও ফেসবুকে বিভিন্ন মেসেজ আসছে। ‘হ্যাপি ওমেন্স ডে’, ঠিক যেন দুর্গা পুজো বা জন্মদিন। কেউ বা কোনো ছবি দিচ্ছে কেউ আবার কোনো কবিতার পংক্তি। রুমার হোয়াটস্যাপ গ্রুপ বলতে তো সেই স্কুলের বন্ধুদের একটা গ্রুপ, কলেজের বন্ধুদের গ্রুপ, আর ওর বর রাজীব আর রুমা যেই ফ্ল্যাটে থাকে সেখানের আবাসিকদের একটি গ্রুপ। আবার ফেসবুক খুলেও দেখা যাচ্ছে এই বিশ্ব নারী দিবস সম্বন্ধে বিভিন্ন বক্তব্য।রুমার মেয়ে থাকে বেঙ্গালুরুতে। আগের বছর ও এই সময় কলকাতাই ছিল, তাই রুমার বর রাজীব, ওদের মেয়ে ও রুমা কে নিয়ে একটি নামি রেস্তোরাঁতে গিয়েছিলো। বাবা মেয়ের সম্পর্ক বরাবরের একটু ঘনিষ্ঠ তারপর আবার মেয়ে হলো সব থেকে ছোটো। খাওয়া দাওয়া, গল্প গুজবে দিনটা কখন যে কেটে গেছে ওরা বুঝতে পারে নি। রুমার ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে ও থাকে মুম্বাইতে। আর গত বছর রুমার ছেলের ঘরে নতুন সদস্য এসেছে, তাই নাতির জন্মের পর রুমা এখন ঠাকুমাও বটে।বিয়ের আগে রুমা চাকরি করতো, এমনকি বিয়ের পরও; কিন্তু সন্তান সম্ভবা হওয়ার সময় সেই চাকরি রুমা ছেড়ে দেয়। হ্যাঁ, একটি বেসরকারি সংস্থায় রুমা কাজ করতো আর চাকরি ছাড়ার একটা আক্ষেপ কোথায় যেন রুমার মনে রয়ে গেছে। বিয়ের সময় তখন ওর শ্বশুর এবং শাশুড়ি এক ঘরোয়া মেয়েই চেয়েছিলেন, তবে ওর বর রাজীব পাকা দেখার সময় রুমাকে বলেছিল, ‘তুমি যদি সবটা নিজে সামলাতে পারো তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই, তবে চাকরি ও ঘর দুটো একসঙ্গে সামলানো এটা কিন্তু পুরোপুরি তোমার ব্যাপার।’তখন বিয়ের বাজারের চাহিদার মাপকাঠি দেখলে, রুমার বয়স অনেকটা মানে প্রায় ত্রিশের কাছে। কোথাও যেন একটা ভয় ছিল যদি আর বিয়েটা না হয়। যত কিছুই মেয়েরা করুক না কেন, বিয়ে না হলে যেন জীবন অর্থহীন হয়ে যায়। একদিন টেলিভিশনে এক প্রখ্যাত মহিলা যিনি কিনা তার বর ও পরিবারের সমর্থন ও উৎসাহের জন্য লেখিকা হতে পেরেছেন, বলছিলেন, ‘এখন আমার ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, আমার বায়োলজিক্যাল ক্লক বলে আর কিছু নেই তাই এখন মনে হয় আমি স্বাধীন।’ এই জীবন দর্শন হয়ত রুমাও বিশ্বাস করতো।বিয়ের প্রথম দিকে যতদিন শাশুড়ি ছিলেন, বাপের বাড়ি যাওয়ার সময় রুমার মা ওর শাশুড়িকে ফোন করে অনুমতি নিতেন। সেটি আদায় করা সবসময় খুব সহজ ছিল না। ভালো ছেলের বৌমা হয়ত সে যে বাপের বাড়ি যাওয়ার কোনো ইচ্ছাই প্রকাশ করে না। নিজের রোজগার করা পয়সায়ও কিছু কেনাকাটা করলে সবসময় রুমাকে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে নিতে হতো। আবার যদি কোনোদিন জিজ্ঞেস না করেই কিছু রুমা কিনে ফেলেছে, তবে কেনা জিনিসগুলো সবটাই শাশুড়িকে দেখিয়ে নিতে হতো। চাকরি ছাড়ার পর রুমার সবথেকে অস্বস্তির কারণ হয়েছিল নিজের মাকে কিছু নিজের থেকে কিনে দিতে চাইলে শাশুড়িকে সেটা রুমা বলে উঠতে পারতো না, আর পরেও রাজীবের টাকা থেকে কিনতে ইচ্ছে করতো না।আর বিয়ের পর রুমার রান্নাঘরের দায়িত্ব যেন দিন কে দিন বেড়েই গেছে। আর তা হবে নাই বা কেন? তখন ননদের বিয়ে হয় নি, দেওরও সবে চাকরি পেয়েছে। সংসার তখন লোকজনে গম গম করছে। একবার মেয়েকে মজা করে রুমা বলে ফেলছিলো, ‘তোর বাবা তো বিয়ের পরেই আমাকে রান্নাঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বেপাত্তা।’ মেয়ের কথা গুলো ভালো লাগে নি, সে বরাবরই বাবার সামান্য নিন্দে শুনতে নারাজ।এখন শ্বশুর শাশুড়ি নেই, ননদের বিয়ে হয়েছে, দেওরও আলাদা থাকে, আর সব থেকে বড় কথা শ্বশুরবাড়ি এখন চারতলা একটি ফ্ল্যাট-এ পরিণত। দুই ভাই দুটি ফ্ল্যাট নিয়েছে। এখন ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, রাজীবও যেই সরকারি সংস্থায় কাজ করতো তার থেকে অবসর নিয়েছে; তাহলে এখন এতো বছর কাটিয়ে রুমা হয়ত কিছুটা স্বাধীন। এখন রুমার জীবনে এসেছে সকালের মর্নিং ওয়াক, সেখানে নতুন বন্ধু হয়েছে। তার পর রাজীব আর ওর বয়সী বিভিন্ন দম্পতি ওদের বন্ধু। তাদের নেমন্তন্ন করা, কি তাদের বাড়ি যাওয়া, একসাথে বা গ্রুপে বেড়াতে যাওয়া লেগেই থাকে। তারপর রাজীব আগে যা পারতো না এখন আবার রুমার জন্মদিনও করে বড় করে পালন করে।এই কয়েকদিন আগে সুজাতা ও সুমন্তদা ওদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছিল। সুমন্তদা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, ওদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকে। সেই দিন ওরা আবার রুমা ও রাজীবের ফ্ল্যাটে এসেছিল। আগেকার দিনে রুমা দেখতো বাড়িতে লোকজন এলে পুরুষরা আলাদা রাজনীতি অর্থনীতি এই সব গুরু গম্ভীর বিষয়ে আলোচনা করে, আর মেয়েরা আলাদা ঘর সংসার নিত্য নতুন অসুবিধে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, মেয়ের বিয়ে এই নিয়ে কথা বলে।এখন সবাই আবার জোড়ায় জোড়ায় বসে তা হয়ত টেলিভিশনে বাংলা সিরিয়াল গুলোর প্রভাব হবে, তবে এখানেও পুরুষরা যা বলে তাতে মেয়েরা মাথা নাড়ে, বা অনেক সময় হয়ত বা তারা নিজের বরের জ্ঞানের পরিসরে মুগ্ধ হয়। অনেকদিন আগের কথা তখন রুমা চাকরি করতো, একবার গাড়ি করে ও আর রাজীব যাচ্ছিলো সঙ্গে সুমন্তদা ও সুজাতা। কোনো একটা কথাতে রুমা একটা কি বলতে যাচ্ছিলো তখন রাজীব ওদের সামনেই রুমা কে থামিয়ে দেয়, ‘যা নিয়ে বোঝো না তা নিয়ে এতো কথা বলো না তো,’ এই কথা রাজীব প্রায়ই বলতো; তাই এতো বছর পর রুমা এই গেট টুগেদার গুলোতে মোটামুটি শ্রোতা হিসাবেই নিজেকে আড়াল করে থাকে।শুধু একবার সুজাতা কি একটা জিজ্ঞেস করতে রুমা বলে ফেলেছিলো, ‘চাকরিটা ছাড়ার একটা আক্ষেপ তো রয়েই গেছে, যারা একবার কাজে যায় তাদের অনেক সময় মনে হয় যে হয়ত চাকরিটা থাকলে ভালো হতো।’তখন রাজীব কিছু বলে নি কিন্তু ওর মুখে যেন একটা অন্ধকার নেমে এসেছিল। রাতের খাবারের সময় রাজীব থালাটা প্রায় একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, ‘তোমার কীসের অভাব হতে দিয়েছি বলতে পারো যে তোমাকে সবার সামনে ওই কথাটা বলতে হলো? গ্যাস, ফ্রিজ টিভি, ওয়াশিং মেশিন ফ্ল্যাট, শাড়ি, গয়না, বেড়াতে যাওয়া, এমনকি গাড়ি ও কিনেছি। কীসের অভাব?’ আর কিছু বলে নি। রাজীবের রাগটা অনেকটা রুমার বাবার মতো দপ করে ওঠে আবার নিভে যায়। রুমার মা বলতো পুরুষ মানুষের রাগ থাকবে।মেয়ের বিয়েটা হয়ে গেলে রুমা একটু নিশ্চিন্ত হতো, তবে মেয়ে আজকাল একটু অন্য রকম কথা বলে যেমন, ‘আমি পুরুষ বিদ্বেষী নই, তবে পুরুষ ছাড়া বাঁচা যায়।’‘এগুলো সব আজগুবি কথা’, রুমার ছেলে ওকে বলেছিল, ‘কোনো ছেলের কাছে প্রেমে দাগা খেলে মেয়েরা এই ধরনের কথা বলে।’মেয়ের কথাগুলো রুমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, তবে মায়ের মন, মেয়েটা কিভাবে থাকবে যখন ও আর রাজীব থাকবে না? ‘জীবনে অনেক কিছু করার আছে মা’, এইরকম কথা মেয়ে বলে, তবে সত্যি কি বুঝে বলে?আর রাজীব আজকে বলেছে, ‘আজকে ওমেন'স ডে তোমাকে আজ রান্না করতে হবে না’। আজকে রুমা আর রাজীব আগের বছরের মতো কোনো রেস্তোরাঁ যাবে ওমেন্স ডে উদ্‌যাপন করতে। আর রাতে সেই দুজনের ছবি ফেসবুকে আপলোড করতে করতে রুমা ভাবছিলো কত দিনই বা সে নারী হিসাবে নিজের জীবনে সার্থকতা পেয়েছে?
    আপনি কি দেশপ্রেমী? - Arijit Bhattacharya | একে তো বাবরি বলতে দেশের গৌরব নয়, মাথার চুলের কথা ভাবেন তার উপর দেশের গৌরবকে হতশ্রদ্ধা করেনএমনকি মাতা ভগবতীকে দেখলে জিভে জল আসে Arijit Bhattacharya আপনি দেশপ্রমী না মীরজাফর?নির্ঘাত গুরুর বইও পড়েন। আপনিও দেখে নিন আপনার কপালে কী নাচছে
    কবিতা- জন্ম রহস্য - Supriya Choudhury | জন্ম রহস্য————সুপ্রিয়া চৌধুরী————অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মঙ্গলগীতে শঙ্খধ্বনিতে স্বাগত করা হবে জন্মের শুভক্ষণ। অবিলম্বেই জন্মহবে সেই নবজাতকের যে  বিশ্ববাসীকে শোনাবে প্রেমের বাণীকিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হয়ে উঠবে প্রতিবাদমুখর। গাইবে শুধু সে মানবতারই জয়গান।কিন্তু কে এই নবজাতক ?কে এই মহান সৃষ্টির জন্মদাতা ?কে পিতা ? কে ই বা মাতা ? সেটাই রহস্য !তার এমন রহস্যময় আবির্ভাবে বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত ।সুস্বাগতম্ হে নবজাতক !!  উলুধ্বনিতেই তোমার জন্মের বার্তা পৌছে গেলো দিকেদিকে। আশীর্বাদ করতে এগিয়ে এলেন যিনি,-তিনি পিতা নন, মাতা ও নন,তিনি শুধুই স্রষ্টা এই নবজাতকের, -দ্রষ্টা এই নবজন্মের,- নবঅঙ্কুরের। তাঁর  হাতেই অঙ্কুর থেকে পূর্ণতা পেয়ে সে আকার নেবে মহীরুহের। সেই মহীরুহ শাখাপ্রশাখা ছড়াবে বিশ্বব্যাপী। শব্দের ঝংকারে  সুরের মূর্ছনায়  ভাবনার আবেগে সে করবে বিশ্বজয় !তবে কি তার পরিচয় ?তার পরিচয়, অস্তিত্ব নিহিত আছে তারই স্রষ্টা  সেই মহাকবির অতল মনের গভীরে। কবিমনের ভাবমুগ্ধতার স্ফুরণ সর্বজনীনহয়ে প্রকাশ পেলো নতুন মহাকাব্যে !জয় হোক্ তাঁর নবজাত সৃষ্টি অমর মহাকাব্যের !জয় হোক্ সেই মহাকবির যাঁর সৃষ্টির প্রতিটি শব্দের অনুরণনে বাঁধা আছে বিশ্ববাসীর  হৃদয়ের স্পন্দন। অবিস্মরণীয় হোক্ মহাকাব্যের এই জন্মমুহুর্ত ! নিঃসন্দেহে,- এ এক মহারহস্য !—————————————
  • ভাট...
    commentAmit | ইন্ডিয়া র ব্যাটিং লাইন আপ এখন যা দাঁড়িয়ে গেছে - ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপে এই ফর্মে থাকলে এবার কাপের আশা করা যায় ভালো মতো। 
    comment&/ | ভালো ভালো সব প্রেম-বিরহ-যুদ্ধ-শান্তি-ভ্রমণ ইত্যাদি কাহিনি গেল কই?
    commentএকক | ছিটকুল কে গেছেন?  হুরিব্বাপ হোথা এট্টা মেজাজি ইয়াক আছে!!  ওই ব্রিজটার আশেপাশে চড়ে বেড়ায় আর ক্লোজ আপ পোরট্রেট নিতে গেলেই কুটিল চোখে তাকায় :// 
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত