এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ৫৫ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ নভেম্বর ২০২৩ | ৩০৮ বার পঠিত
  • আকাশ ক্রমে আড়ামোড়া ভেঙে খোলস খসিয়ে ফেলল। আলোয় ধোয়া অবারিত নীল সামিয়ানা থেকে নির্মল আলো ঝরে পড়ছে। বেলা বারোটা বাজল। বিস্তর ঘাসফড়িং স্ফূর্তিময় ওড়াওড়ি করছে। ঘাস, পাতায় একটু বসে আবার ঠিকরে যাচ্ছে।

    বৃন্দাবন কড়ায় মাংস কষছে। গন্ধে ম ম করছে জায়গাটা। একটু পরে কড়াটা নামিয়ে আর এক দফা চা করে দিল সবার জন্য। অখিলবাবু, জন্মেজয়বাবুদের চায়ের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। তবু তারা আর একবার করে মৌজ করে চা খেলেন। এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় কেন ....

    ক'টা শালিক পাখি মাঝে মাঝে মাটিতে বসে জরুরী মিটিং সেরে নিচ্ছে। তারপর ফুরুৎ করে সবাই মিলে উড়ে যাচ্ছে ওপাশের সজনে গাছের ডালে। গাছটা বেশ বেড়ে উঠেছে দিনে দিনে। এর মধ্যেই সজনে ফুল ধরেছে গাছ ঝেঁপে। আকাশের আলো পড়ে ঝলমল করছে সজনে ফুলের ঝাঁপি।

    নিতাইবাবুর ফাঁকা বাড়ির ভিতরে খাওয়া দাওয়া হল মেঝেতে বসে কলাপাতা পেতে। একেবারে কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া যাকে বলে। এইভাবে সকলে মিলে গাছপালার কাছাকাছি বসে মাংসভাত খাওয়ার মধ্যে যে এত অনাবিল আনন্দ আছে তা এদের অনেকেই আজ প্রথম জানল। খাওয়াদাওয়া মিটতে মিটতে সাড়ে তিনটে বাজল।

    এখন তাড়াতাড়ি সন্ধে নেমে আসছে। তাই সাড়ে চারটে নাগাদ ওরা সব গুটিয়ে ফেলল।

    টেম্পো দুটোয় ভাগাভাগি করে উঠে গেল। একটা টেম্পোয় অসিত উঠে পড়েছিল। ফিরে দেখল শ্রীলেখা ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু ঠিকমতো উঠতে পারছে না। পা ঠিকমতো যাচ্ছে না। অসিত তাকিয়েছিল ওর দিকে। শেষ পর্যন্ত আর থাকতে না পেরে হাতটা বাড়িয়ে দিল। শ্রীলেখা বিনা দ্বিধায় ধরে নিল অসিতের হাতখানা। অসিত একটানে তুলে নিল তিনচাকার পাটাতনে। অসিতের গায়ের কাছে এসে শ্রীলেখার মনে হল, অনেক কষ্টের পর যেন অনেক কিছু পাওয়া গেল। আবার যে কবে হবে এমন অনেক কিছু ....
    জন্মেজয়বাবু সরল গ্রাম্যতায় বললেন, ' এইটা খুব ভাল করলা ... পোলাপান তো ... '
    উনি বোধহয় দুজনকেই পোলাপান বললেন।

    সন্ধেবেলায় দিবাকর চেম্বার খুলে একটু ঝাড়পোঁছ করে দিয়েছে। মিনিট পনের পরে, সাতটা নাগাদ অলোকেন্দু মিত্র এসে বসলেন। কোন মক্কেল এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে অলোকেন্দুবাবু চেয়ারে থিতু হওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চিন্তিত মুখে এক মক্কেলের আবির্ভাব ঘটল। সে উকিলবাবুর উল্টোদিকের চেয়ারে বসল।
    অলোকেন্দুবাবু ফাইল থেকে চোখ তুলে বললেন,
    ' হ্যাঁ, গুড ইভনিং ম্যাডাম .... বলুন কি সমস্যা ... '
    সুমনা মাথা নীচু করে আঙুল নিয়ে খেলা করতে করতে বলল, ' একটা সমস্যা হয়েছে ... '
    ----- ' আচ্ছা! কিরকম? '
    ----- ' ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর অন্যের দখলদারির আশঙ্কা করছি ... '
    ----- ' খুব সিম্পল। একটা আগাম এফ আই আর করে রাখলেই হবে। ওনারশিপের প্রপার ডকুমেন্টস রেডি রাখতে হবে ... '
    ----- ' কোন ডকুমেন্ট নেই। এ প্রপার্টির কোন ডকুমেন্ট হয় না। মনের কাগজে এই দলিল লেখা থাকে ... '
    ----- ' মনের কাগজে দলিল ! সেটা তো খুব সেফ। কোন ট্রেসপাসার ইনফিলট্রেট করতে পারবে না।'
    ----- ' পারে পারে ... আমারটায় না পারলে পার্টনারেরটায় পারে ... '
    ----- ' ও বাবা, তাই নাকি ! তাহলে তো পার্টনারের নথি তোমার কাছে গচ্ছিত রাখতে হবে, যাতে কেউ হাতাতে না পারে ... ' অলোকেন্দুবাবু মুচকি হেসে পরামর্শ দেন।
    ----- ' সেটা কিভাবে সম্ভব? বললাম না ... নথি বুকের ভিতরে আছে। ফিজিকালি বার করে আনা যায় না ... '
    ----- ' ও তাও তো বটে। জটিল কেস। তা, সাসপেক্টেড অফেন্ডার কে জানা আছে? '
    ----- ' হ্যাঁ ... তা আছে। '
    ----- ' তাহলে তোমার পার্টনারকে লিগ্যাল প্রোটেকশান দিতে হবে। তুমি তো আর তাকে সবসময়ে আঁচলে বেঁধে ঘুরতে পারবে না। যদিও সেটাও একটা ফুলপ্রুফ ইন্সট্রুমেন্ট নয়। কিন্তু এই ট্রেসপাসিংয়ের ব্যাপারে তুমি কি শিওর? '
    ------ ' না শিওর কিছু না। একটা অ্যাপ্রিহেনশান বলা যায় ... কিন্তু একটা কথা বলা যায় যে, আমার এ আমানত হাতছাড়া হয়ে গেলে আমি আর বাঁচব না ... '
    শেষের দিকের কথাগুলো বলার সময়ে গলা বুজে আসে সুমনার।
    অলোকেন্দু মিত্র চেয়ারে হেলান দিয়ে হাতলে দুহাত রেখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন স্থির দৃষ্টিতে। ভাবলেন, মানুষের জীবনে কতরকম সমস্যা। তার মেয়ে একটা সম্ভাব্য কাল্পনিক সমস্যার সঙ্গে অকারণে মানসিক যুদ্ধ করে চলেছে। আর কত মানুষ হাজারো বাস্তব সমস্যার মোকাবিলা করতে করতে জেরবার হচ্ছে দিনরাত।
    এই সময়ে দিবাকর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
    ' ক্লায়েন্ট এসছে... পাঠাব স্যার ... '
    ----- ' একটু পরে ... আমি বলব। একটা জটিল কেস নিয়ে ব্যস্ত আছি ... '
    অলোকেন্দুবাবু আর সময় নষ্ট করলেন না। রূপকের আড়াল ভেঙে বেরিয়ে এলেন।
    ----- ' ইমাজিনারি অবজেক্ট নিয়ে অকারণে ব্রুড করিস না ফুচা। তোর তো একটাই আমানত, সেটা স্কটিশ চার্চে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে জমা আছে। তুই এক কাজ কর ... প্রতিবিম্বকে একদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে বল। বলবি যে, আমি দেখা করতে বলেছি ... '
    ----- ' থ্যাঙ্ক ইউ বাপি। তুমি কিন্তু, আমি যে কথাগুলো তোমাকে বললাম, ওকে কিছু বোল না ... '
    ----- ' পাগল ... তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি পেশায় একজন লইয়ার। বায় দা বায় ... সাসপেক্ট কি তোর খুব ক্লোজ ... মানে, ক্লাসমেট? '
    সুমনা একটু দোনামোনা করে মৃদুস্বরে বলল, ' হ্যাঁ ... '
    অলোকেন্দু মিত্র স্বগতোক্তি করলেন, ' কাবেরী ... '
    তারপর গলা তুলে বললেন, ' দিবাকর পাঠিয়ে দে ... '

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২১:২৪526309
  • অলোকেন্দুবাবুতো পুরো পাহাড়ি সান্যাল।
  • Anjan Banerjee | ২০ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৫526313
  • অনেকটা 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন