এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ১০১

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০১ মার্চ ২০২৪ | ২৩৬ বার পঠিত
  • | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০
    দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। মনোরমা আকাশ আজ খেলছে বেশ উদাসি তুলো মেঘ আর রোদ্দুরের সঙ্গে। বসন্ত কেবিনের একপাশে ফুটপাথের ওপর ডুগডুগি বাজিয়ে একটা লোক বাঁদর খেলা দেখাচ্ছে। কেউ ডেকেছে হয়ত। গোল হয়ে কিছু লোক দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু লোক উঁকি মেরে চলে যাচ্ছে। সাগরও দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিল একবার। আঠারো দিন পর সে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। অনেকদিন পর পটলের দোকানে গিয়ে একটু বসবে। কিছু খবরাখবর নেওয়ার আছে। বেঁচে থাকতে গেলে লড়াই জারি রাখতে হবে। না হলে সরে যেতে হবে এ দুনিয়া থেকে। সাগরের যে খুব জীবন স্পৃহা আছে তা না। শুধু তার মায়ের কথা মনে হলে তার মনে হয় মরে গিয়েও সে শান্তি পাবে না। সে ভাবে মা যেন তার আগেই চলে যায়। বুঝতে পারে তার মায়েরও তাকে নিয়ে খুব চিন্তা। আবার চাপা গর্বও আছে খুব, অন্য লোকে তার কাজকর্ম নিয়ে যাই বলুক না কেন। অবশ্য আর এক জনের জন্যও বাঁচার ইচ্ছে মাথা চাড়া দিচ্ছে ফিলহাল।
    রাত্রির চিন্তা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘন কুয়াশার মতো জড়িয়ে ধরছে যখন তখন। পরিষ্কার আকাশে অকারণেই মেঘ এসে জোটে বারবার। বড় জ্বালা শুরু হয়েছে।

    সাগর বাঁদর খেলা ছেড়ে রাস্তার ওপারে গেল। পটল মাথা নীচু করে সাইকেল সারাতে ব্যস্ত। মাথা তুলে সাগরকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠল পটল।
    ----- ' আরে দাদা ... শরীর কেমন আছে ? অনেকদিন পর ... '
    সাগর বলল, ' হ্যাঁ বল, কেমন আছিস ... কিছু খবর আছে নাকি ? '
    ----- ' না ... খবর তেমন কিছু নেই ... মানস এসেছিল একদিন ... ওই মুচিপাড়ার মানস সরকার ... স্কুলে ক্লাস ফোর পর্যন্ত একসঙ্গে পড়েছিলাম, তারপর তো আমারও আর পড়া হল না, ওরও হল না। আর হবেই বা কি করে ... ছোটবেলায় বাবা মারা গেলে কি হয়, যার হয় সেই বোঝে। মানসেরও তো তাই ... বাবা মারা গেল ... দুবছর বাদে মাও মারা গেল। মানস পনের বছর বয়েস থেকে পুলিশের ইনফর্মার বনে গেল, মুচিপাড়া থানায়। কিছু টাকা রোজগার তো করার দরকার ... '
    সাগর থামাল পটলকে।
    ------ ' আরে এত ভাঁট বকছিস কেন ? এসব আমার জানা আছে ...মানসকে আমি চিনি ... কি বলতে চাইছিস বল ... '
    পটল একটু থতমত খেয়ে গেল। বলল, ' ও হ্যাঁ ... মানস তোমার ওপর হামলার ব্যাপারটা জানে। ওই বলল, কে এর পেছনে আছে সেটা বের করার চেষ্টা করতে পারে ও ... তুমি যদি বল ... ওর হাতে ঘাঘু লোক আছে ... '
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... এখন কিছু করার দরকার নেই ... দরকার হলে বলব ... কানুরা দেখছে এখন ... '
    বলে চুপ করে বসে রইল সাগর। পটল আবার মাথা নীচু করে ফরসেপ ঘোরানোয় মন দিল। রাস্তার ওদিকে বাঁদর খেলা বোধহয় শেষ হল। বাঁদরের মালিক পয়সা কুড়োচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা চাক ভাঙা মৌমাছির মতো ছড়িয়ে পড়ছে।
    আকাশে মেঘ আর রোদ্দুরের খেলা চলছে।
    সাগর রাস্তার ওপারে বসন্ত কেবিনের দিকে তাকিয়ে রইল আনমনে। পটল কাজ করে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
    সাগর কি যেন বলব বলব করেও বলতে পারছে
    না। কয়েকবার কসরত করার পর বলে ফেলল ঝট করে, ' এ ক'দিনের মধ্যে আর কেউ এসেছিল নাকি আমার খোঁজ করতে ? '
    ----- ' ন... ন্না ... তেমন তো কেউ আসেনি ... '
    ----- ' আসেনি ... না ? রাজকৃষ্ণ স্ট্রিটের ওদিক থেকে কেউ... '
    পটল জিজ্ঞেস করল, ' কেন দাদা, কেউ আসার কথা ছিল নাকি ? '
    ----- ' না, কথা কিছু ছিল না ... এমনিও তো কেউ কেউ আসে ... '
    ----- ' হ্যাঁ ... নিজের দরকারে আসে কেউ কেউ ... ঝামেলায় পড়লেই আসে ... এমনি তো আর আসে না ... '
    ------ ' হুঁ ... সে তো বটেই। তবে হাসপাতালে কিন্তু
    কয়েকজন গিয়েছিল জানিস তো ... '
    ----- ' হ্যাঁ ... সেটা শুনেছি। রামদুলালের দু একজন গিয়েছিল ... তাই না ? '
    সাগর তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ' না না ... গোয়াবাগান থেকেও মানে ... দু দিন গিয়েছিল জানিস তো ... '
    সাগরের বাড়িতে গিয়ে কারো সেবা প্রদানের ব্যাপারটা পটল জানে না।
    সে সাগরের কথাবার্তার ধরণে বেশ অবাক হয়ে গেল। সে সাগর মন্ডলকে যতদিন চেনে এরকম ভাঙাচোরা ভঙ্গীতে কোনদিন কথা বলতে দেখেনি। সেই সপাট ঝাঁঝাল টানটা কেমন যেন মিয়োন মিয়োন। দাদা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পটলের সন্দেহ হতে লাগল।
    সে বলল, ' দাদা ... তুমি আর কিছুদিন বাড়িতে আরাম করতে পারতে ... কানুদা, মাণিকদারা তো আছে ... সামলে নিত ... '
    ----- ' হ্যাঁ তা ঠিক ... কিন্তু ওরা কি আর সব কিছু সামলাতে পারে ... সেটা কখনও সম্ভব নয় ... একজনের জ্বর কি আর একজন নিতে পারে ? '
    কথাটা পটল কিছুটা বুঝল, কিছুটা বুঝল না। সে কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল।

    পটল একটু পরে বলল, ' তা'লে মানসকে কি বলব ? ও ঠিক বার করে ফেলবে। আমার মটকা গরম হয়ে আছে। ছাড়া যাবে না কিন্তু বলে দিলাম ... বহুত পস্তাতে হবে শালাদের ... '
    পটল,মানে প্রদীপ কর হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
    সাগর একটা হাত তুলে আশ্বস্ত করার ভঙ্গীতে বলল, ' আরে অত গরম খাস না ... চিন্তা করছিস কেন, ক'দিন ওয়েট কর ... আমি ঠিক হিসেব নিয়ে নেব ... '
    ----- ' দাদা ... পুজোর আগেই হয়ে যাক না অপারেশানটা .... '
    ----- ' হমম্ ...কানু আর এসেছিল নাকি এর মধ্যে ?'
    ----- ' হ্যাঁ ... কাল সন্ধের দিকে এসেছিল একবার ... '
    ----- ' কিছু বলল নাকি ? '
    ---- ' না ... তেমন কিছু বলল না, শ্রীতে গিয়েছিল
    চাওয়া পাওয়া দেখতে ... '
    ----- ' তাই নাকি ? উত্তম সুচিত্রার বই, না ? '
    পটল রীতিমতো সিনেমা বিশারদ। সে জানাল, ' ছবি বিশ্বাসও আছে ... দেখে এস না একদিন ... '
    ----- ' তোর দেখা হয়ে গেছে ? '
    ----- ' হ্যাঁ...অ্যা... অ্যা ... ওপনিং শোয়ে ... '
    ----- ' তাই নাকি ? দারুন দারুন ... '
    ----- ' এর পর কি প্রোগ্রাম ? '
    ----- ' রাধায় বিচারক .... উত্তম আছে ... চল যাবে নাকি ? '
    ----- ' হ্যাঁ, তা গেলে হয় ... কবে যাবি ? '
    ---- ' পরশুদিন চল .... ম্যাটিনি শোয়ে ... ভাইকে দোকানে বসতে বলব ... '
    ----- ' হমম্ ... ঠিক আছে ... '
    সাগর আবার কি চিন্তায় ডুবে গেল। তার মনে আবার বোধহয় মেঘ আর রোদ্দুরের খেলা শুরু হয়েছে।
    মিনিট তিনেক পরে বলল, ' ঠিক আছে আমি উঠি এখন। একবার বটতলা থানায় যেতে হবে ... '
    ----- ' আচ্ছা, পরশু তা'লে ম্যাটিনি শোয়ে ... '
    ----- ' হুঁ হুঁ ... '

    নিখিল ব্যানার্জী কাবেরীকে সওয়া এক ঘন্টার মতো অঙ্ক করালেন।
    তারপর বললেন, ' ঠিক আছে ... আজ এই পর্যন্তই থাক। আবার সোমবার এস। সেদিন সবাই থাকবে ... ', বলে নিখিল স্যার উঠে দাঁড়ালেন।
    ----- ' ঠিক আছে স্যার ... ', কাবেরীও উঠে পড়ল বই খাতা ব্যাগে ভরে।
    এর পর একটা বাড়তি প্রশ্ন বেরিয়ে গেল কাবেরীর মুখ দিয়ে ...
    ----- ' আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো ? '
    নিখিলবাবু প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কাবেরীর মুখের দিকে।
    কাবেরী বলল, ' না .... মানে, আপনার শরীর ঠিক আছে তো এখন ? '
    ----- ' হ্যাঁ ... এখন শরীর মোটামুটি ঠিক আছে। কাল মনে হয় কলেজে যেতে পারব ... '
    ----- ' খুব ভাল স্যার ... আজ আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম ... সব কিছু বুঝতে না পারলেও খুব ভাল লাগছিল আপনার কথাগুলো শুনতে ... '
    নিখিলবাবু দাঁড়িয়ে রইলেন। তার মুখোমুখি কাবেরী।
    নিখিল স্যারের মুখে উৎসাহের আলো দেখা গেল। বললেন, ' শুধু ভাল লাগলেই তো হবে না। এসব নিয়ে চিন্তাভাবনাও করতে হবে। ভাবনা চিন্তা স্বতঃস্ফূর্ত হওয়া চাই। কারও কথা শুনে আমার মন জাগবে তা না। চিন্তা ভাবনা নিজের নিজের। সবাই যদি ভাবনা চিন্তা শুরু করে তাহলে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এর জন্য প্রথাগতভাবে শিক্ষিত না হলেও চলবে। যা প্রকৃত সত্য, তা আমার পছন্দ না হলেও তাকে মান্যতা দিতে হবে ... কিন্তু চিন্তা করতে হবে সকলকেই। একজন দুজন সব দায় বহন করবে এটা সঠিক পথ নয়। ব্যক্তিগত জীবনের সব কিছু সমাধানের জন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করব, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়।
    স্যারের বেশিরভাগ কথার মতো এ কথাগুলোও কাবেরী কিছুটা বুঝল, কিছুটা বুঝল না।
    সে বলল, ' স্যার, আমি তো এত কিছু বুঝি না ... আমায় তো এসব কেউ কোনদিন বলেনি। তবে আপনার সঙ্গে থাকতে থাকতে নিশ্চয়ই অনেকটা বুঝে ফেলব ... '
    স্যার কি ভেবে বললেন, ' সে তো নিশ্চয়ই। আচ্ছা ঠিক আছে ... এখন এস তা'লে। আবার সোমবার দেখা হবে ... '
    ----- ' হ্যাঁ স্যার ... নিশ্চয়ই দেখা হবে ... '

    বটতলা থানায় ঢুকে সাগর দেখল কালীবাবুর চেয়ারের উল্টোদিকে এক ভদ্রলোক আর এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন।
    কালীবাবু ইঙ্গিতে তাকে বসতে বললেন। সাগর ওই ঘরেই একটু দূরে দেয়ালের দিকে একটা চেয়ারে গিয়ে বসল।
    কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে কোন দুঃশীল কোন প্রতিবেশীর সৃষ্ট কোন বিড়ম্বনা বা উৎপাতজনিত কোন সমস্যার ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে এসেছেন। কালীকিঙ্করবাবু খুব মন দিয়ে ওদের কথা শুনছেন এবং মাঝে মাঝে মাথা নাড়ছেন। অভিযোগকারিরা মনে হচ্ছে স্বামী স্ত্রী। কথা শুনে মনে হচ্ছে এ পাড়ারই লোক।
    সব শুনে কালীবাবু বললেন, ' ঠিক আসে, আপনারা পাশের ঘরের অফিসারের কাসে গিয়া একটা জি ডি করায়ে নেন ... আমি বলে দিচ্ছি ... '
    তারপর বললেন, ' আচ্ছা, আপনাদের বাড়ির এগজ্যাক্ট লোকেশানটা একটু বলেন তো ... '
    ----- ' ওই তো গোয়াবাগান পার্কের পাশে ... '
    ব্যাপারটায় সাগরের মাথা গলাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু দম্পতির বাড়ির অবস্থানটা শুনে সে আচমকা একটা নাড়া খেল।
    ভদ্রমহিলা বললেন, ' বাড়ির বাইরের জলের কলটা, আর লেটার বক্সটা ভেঙে দিয়ে গেছে। জানলা খোলার উপায় নেই। জঞ্জাল এসে পড়ছে ঘরের মধ্যে। প্রায়ই সকালে দরজা খুলে দেখি দোরগোড়ায় মানুষের মল পড়ে রয়েছে। কি দুর্গন্ধ ওঃ ! প্রচন্ড ভয়ে এতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু আর পারছি না ... আমরা ছা পোষা লোক। আমরা কি ওদের সঙ্গে পারি ... '
    ----- ' আচ্ছা ঠিক আসে ... আপনারা ডায়েরিটা করায়ে লন। আমি এক ঘন্টার মধ্যে লোক পাঠাচ্ছি ... ডোন্ট ওরি... '
    ----- ' আমরা তা'লে ডায়েরিটা... ', বলে ওরা দুজন উঠতে যাচ্ছিলেন, শুনতে পেলেন পাশ থেকে কে বলল, ' ইয়ে মানে ... ওখানে শিবপ্রসাদবাবুর বাড়িটা চেনেন ? শিবপ্রসাদ রায় ... '
    ----- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... কেন চিনব না ? ওদের ছাব্বিশের বি, আর আমাদেরটা তিরিশ সি ... ওর মেয়ে পূর্বা মানে, রাত্রি ইউনিভার্সিটিতে পড়ে ... আমাদের সঙ্গে ভাল পরিচয় আছে ... '
    সাগরের মনে আবার রৌদ্র ছায়ার খেলা শুরু হয়ে গেল। সে বলল, ' বলছি যে ... আপনারা ভদ্র মানুষ ... এসব থানা পুলিশের ঝামেলায় মনে হয় না যাওয়াই ভাল ... '
    দম্পতি জিজ্ঞাসু এবং হতচকিত দৃষ্টিতে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
    সাগর বলতে থাকল, ' না ... মানে বলছি যে ... ওদের বুঝিয়ে বললে হয় না যে কাজটা ওরা ঠিক করছে না ... আর যেন না করে ... '
    এই বিচিত্র প্রস্তাবটা এতই অবাস্তব যে দম্পতির মুখ দিয়ে কোন কথা সরল না। তারা সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কি বলবেন ভেবে পেলেন না।
    একটু সামলে নিয়ে ভদ্রলোক শুধু বললেন, ' আপনি ওদের ঠিক চেনেন না ... '
    ----- ' না, একেবারেই চিনি না। ওদের নাম ঠিকানাটা যদি বলেন মনে হয় চিনে নিতে পারব ... বলুন না একটু ... খুব সুবিধে হয় তা'লে, মানে ওদের কাছে গিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারি আর কি ... '
    দম্পতি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল।
    কি জানি কি ভেবে একটু সময় নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, ' মোহিনী কুণ্ডু আর সুবীর হাজরা ... এছাড়া আরও আছে ... '
    ----- ' ঠিক আছে, এতেই হবে। কোথায় পাওয়া যাবে ওদের ? '
    ----- ' হাতিবাগান বাজারের ভেতর মনোরমা ভান্ডার... বেশির ভাগ সময়ে ওখানেই থাকে ওরা ... '
    ----- ' ক'টায় দোকান খোলে ? '
    ----- ' দশটা নাগাদ। তবে ওরা ওখানে যায় বেলা বারোটা নাগাদ ... '
    সাগর নরমভাবে হেসে বলল, ' ঠিক আছে দাদা ... আপনারা বাড়ি চলে যান। আজকের দিনটা সহ্য করে নিন। কাল আমি গিয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করব। বুঝিয়ে বলব ভালভাবে ... '
    কালীবাবু এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তিনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।
    যথারীতি বললেন, ' হ ... আপনারা নিশ্চিন্তা থাকেন। উনি খুব ভাল বোঝাইতে পারে ... '
    ' আচ্ছা ... আমরা আসি তবে ... ', বলে স্বামী স্ত্রী বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে দুলতে শঙ্কিত মনে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলেন।

    কালীবাবু বললেন, ' আপনার সমস্যাটার এখনও সমাধান কইরা উঠতে পারি নাই। তবে আমি হাল ছাড়ি নাই। আরও একজন বিশেষজ্ঞ খুঁজত্যাসি পরামর্শ নিবার জন্য ... '
    সাগর বলল, ' হ্যাঁ তা নিন, তা নিন ... আমি এখন আসি। কানুর সঙ্গে যোগাযোগ করার দরকার ... নতুন অপারেশান তো ... '
    আকাশে খেলা চলছে উদাসি মেঘ আর রূপোলি রোদের।

    ( চলবে )

    *******************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন