এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে - ৯১ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ৩৯০ বার পঠিত
  • | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০
    বেশ কিছুদিন পর কাবেরী কফি হাউসে পা রেখেছে। ওরা ভীষণ ব্যস্ত এখন নৈঋত-এর পরের সংখ্যা নিয়ে।
    অমিতাভ বলল, ' কি রে ... একেবারে বেপাত্তা হয়ে গেলি যে ... কোন কান্ডজ্ঞান নেই ... কত কাজ এদিকে ... '
    শুনে কাবেরীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ভাবল, ' সে যেন ঠেকা নিয়ে বসে আছে। আর কোন কথা নেই ... শুধু এই ম্যাগাজিন নিয়ে পড়ে আছে ... কি যে এদের ভবিষ্যত কে জানে ... এখানে না এলেই ভাল হত ... '
    মুখে অবশ্য সমঝোতার সুরে বলল, ' বিশ্বাস কর ... পড়ার ভীষণ চাপ ... একটা কোচিং ক্লাসে ভর্তি হয়েছি। একদম সময় পাচ্ছি না ... '
    ----- ' আচ্ছা, ঠিক আছে ... শোন এবারের ইস্যুর ট্যাগলাইন হল বাঁধন ছেঁড়ার গান ... '
    কাবেরী ভাবল, ' এই মরেছে ... সেটা আবার কি বস্তু ! '
    কাবেরী ভাবল পার্থপ্রতিমের কথা একবার জিজ্ঞাসা করলে হয়। হেদুয়ায় হঠাৎ তার সঙ্গে ওরকম ব্যবহার করার কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে।
    অমিতাভ স্নেহাংশু আর সুনির্মলের সঙ্গে সিরিয়াস আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল ম্যাগাজিনের
    ব্যাপারে। প্রচ্ছদের লে আউট নিয়ে মতৈক্য হচ্ছিল না। সুনির্মল একটা একটা স্যাম্পেল জোগাড় করে এনেছে। সেটা নিয়েই তুমুল বাতবিতন্ডা। স্কেচটা হল, এক উন্মুক্তবক্ষা মুদিতনয়না নারী বুকের কাছে একটা সাদা পায়রা ধরে রেখেছে পরম যত্নে। তাছাড়া পোস্ট মডার্ন এজ -এর কিছু বিদেশী কবিতা ঢোকানো হবে কি হবে না সেটা নিয়েও তর্ক হচ্ছিল তিনজনের।
    এর মধ্যে কাবেরী একটু দোনামোনা করে জিজ্ঞেস করে বসল, ' পার্থপ্রতিমকে দেখছি না ... ও আর আসে না ? '
    অমিতাভ বিরক্তির সুরে বলল, ' কে জানে ! কোন যোগাযোগ নেই ... খবর রাখি না ... ', বলে আবার তর্কে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
    কাবেরী কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল। তারপর বলল, ' আমি তাহলে এখন উঠি। বাড়ি ফিরতে হবে ... '
    অমিতাভ বলল, ' দাঁড়া, আমিও তো বেরোব ....ওই দিকেই যাব ... আর একটু বোস ... একসঙ্গে যাব ... '
    কাবেরী বলল, ' না গো অমিতাভদা, আমার একটু তাড়া আছে ... তোমরা কথা বল, আমি এগোই ... অন্য আর একদিন আসব ... '
    অমিতাভ নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে বলল, ' এগোবি বলছিস ... ঠিক আছে, আয় তা'লে .... মঙ্গলবারে আসিস কিন্তু ... অনেক কাজ আছে ... '

    কাবেরী রাস্তায় বেরিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
    সে বুঝতেই পারছে যে, পার্থপ্রতিমের মতো একজন ডেডিকেটেড লাভারকে ছেড়ে দিয়ে সে ঠিক করেনি। অমিতাভর সঙ্গে সম্পর্কটা সে পরিষ্কার কথাবার্তা বলে শেষ করে দেওয়ার ঠিক করল। এ ধরণের একটা লোকের সঙ্গে একান্তভাবে মেলামেশা করা অসম্ভব মনে হচ্ছে, জীবন কাটানো তো দূরের ব্যাপার। হঠাৎ প্রতিবিম্বের রসিকতা ভরা মুখটা ঝিলিক দিয়ে উঠল তার মনে। কাবেরীর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কোন অজানা কারণে। শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোয় রাস্তার মুখে ট্রাম দাঁড়িয়ে আছে রওয়ানা দেবার জন্য তৈরি হয়ে। কাবেরি ট্রামে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে জানলার ধারে কাটা সিটে বসল। সুমনাকে তার খুব ভাগ্যবান মনে লাগল। তার পাশের সিটটা এখনও খালি রয়েছে। কাবেরী ট্রামে বসে রাস্তায় নানা ধরণের লোকজন চলাচল, দোকানগুলোয় সন্ধেবেলার বেচাকেনা দেখতে লাগল। জমজমাট শ্যামবাজারের মোড়। এই সময়ে তার পাশের খালি জায়গাটায় একজন এসে বসল। কাবেরী অভ্যাসমতো সামান্য সরে বসল। সে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ট্রামের চালক এবং কন্ডাক্টররা উঠে পড়ল। গাড়ি ছাড়ল বলে। এমন সময়ে তার পাশ থেকে কে যেন বলল, ' কেমন আছেন ম্যাডাম ? '
    কাবেরী চমকে উঠে দেখল, তার দিকে হাসিমাখা মুখে তাকিয়ে আছে পার্থপ্রতিম রায়। বেশ রোগা হয়ে গেছে। গালে দুদিনের দাড়ি। চুলও উস্কো খুস্কো। কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ।
    কাবেরী তাকিয়ে রইল পার্থপ্রতিমের মুখের দিকে কোন কথা না বলে। তার মন বলতে লাগল এটা বোধহয় আর এক শুরুর শুরু।
    ঘসস্... ছ্যাক করে পাইলট সাহেব ট্রামগাড়িতে স্টার্ট দিয়ে দিলেন। এটা একটা শুরুর শুরু।

    শিবপ্রসাদবাবু বললেন, ' যাওয়া আসা করছিস কর ... কিন্তু সবদিক সামলে চলিস ... '
    রাত্রি কথাটা শুনে যেন একটু টলে গেল। বলল, ' হ্যাঁ ... কি বললে ? '
    ----- ' তুই বুদ্ধিমতী মেয়ে ... তোকে আর বেশি কি বলব ... বুঝতেই তো পারছিস ... একজন অচেনা অজানা লোকের বাড়িতে যাচ্ছিস .... তাই একটু ... '
    রাত্রি শান্ত স্বরে বলল, ' বাবা, আমরা যখন ওর সাহায্য নিতে গিয়েছিলাম তখনও তো অচেনা অজানাই ছিল, তখন তো আটকায়নি কিছু ... '
    ----- ' হ্যাঁ, ঠিকই... অস্বীকার করছি না ... সে জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। কিন্তু ওটা একটা আলাদা ব্যাপার। তোর এইভাবে সাগরের বাড়ি আসা যাওয়াটা নিয়ে কেউ কেউ অনেক কথা বলতে পারে ... জানিসই তো চারপাশে দুর্জনের অভাব নেই... '
    শুনে রাত্রি একটু চুপ করে রইল।
    তারপর আবার শান্তস্বরে বলল, ' তা জানি ... তুমি নিশ্চিন্ত থাক ... আমি জানি কিভাবে সিচুয়েশান সামলাতে হয় ... চিন্তা ক'র না ... '
    ----- ' ঠিক আছে মা ... আমি জানি তোর সে ক্ষমতা আছে ... তোর মা বেঁচে থাকলে তো এসব নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হত না ... '
    ----- ' তুমি এখন আমার মা বাবা দুটোই ... তুমি আছ তাই আমি আছি ... '
    ----- ' তোর একটা ব্যবস্থা না করে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাব না ... অঞ্জলি সেদিন কি মনে করল কে জানে ... এই নিয়ে আবার ঘোঁট না পাকায় ... '
    ----- ' কিছু খারাপ কথা তো বলা হয়নি। এসব কথা মিছিমিছি ঝুলিয়ে না রেখে গোড়াতেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়াই তো ভাল। তাছাড়া অঞ্জলিমাসি, আমি যতটুকু জানি, মোটেই ও ধরণের লোক না ... ' রাত্রি বলল।
    ----- ' না রে ... ওভাবে কিছু বলা যায় না ... পৃথিবীটা বড় জটিল জায়গা ... বিপত্তি যে কোন গর্ত দিয়ে এসে ঘরের মধ্যে সেঁধিয়ে যাবে আগে আন্দাজ করা যায় না ... '
    রাত্রির বুকের গভীর ধেকে স্বগতোক্তি উৎসারিত হল, ' হমম্ ... তা আর বলতে ... '

    পরের দিনও সকাল আটটা নাগাদ রাত্রি সাগরের বাড়ি এসে গেল। ড্রেসিং করে দরকারি ওষুধগুলো খাইয়ে রাত্রি একটু বসে ছিল। ছোট একটা অতি সাধারণ ঘর। আসবাবপত্র অতি সামান্য। যা আছে তাও পুরনো এবং জৌলুসহীন।
    পাশেও একটা ছোট খুপরি ঘর আছে। সেখানে বোধহয় সাগরের মা থাকেন তার নিজস্ব পোঁটলা পুঁটলি নিয়ে। রান্নাবান্নাও মনে হয় ওই ঘরেই হয়। বাইরে একটা ছোট্ট উঠোন আছে। শান বাঁধানো নয়, মাটির। এখানে ওখানে শ্যাওলা ধরা। উঠোনের একপাশে রঙচটা টিনের একটুখানি ছাউনি মতো আছে। ওখানেও রান্না হয় হয়ত।
    সাগরের ঘরে একটা ইংরীজি সালের ক্যালেন্ডার আর দুটো বাঁধানো ছবি আছে। একটা, খুব সম্ভবত তার স্বর্গত বাবার ছবি। আর একটা প্রবল পরাক্রমী সৌম্যদর্শন দেবাদিদেব মহাদেবের মুদিতনয়ন ধ্যানমগ্ন ছবি, চারপাশে তরঙ্গায়িত সমুদ্র। কোন ক্যালেন্ডার কেটে বাঁধানো হয়েছে। ছবিটা দেখলে একটা বিপুল শক্তির আবেশ আচ্ছন্ন অনুভূতি আসে।

    চোখে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সাগর কালকের চেয়ে আজকে অনেক ভাল আছে। তার সজীব প্রাণশক্তির কল্যাণে সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কানু কিংবা অন্য কেউ এখনও এসে পৌঁছয়নি। সাগর খাটে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কি কথা বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। আজকে তার মা সরযূদেবী সারাক্ষণ বসে আছেন খাটের একপাশে।
    তিনি বললেন, ' কাল বাড়ি ফিরতে কোন অসুবিধে হয়নি তো মা ? '
    ----- ' না মাসীমা ... কোন অসুবিধে হয়নি ... কি আর হবে ? ওই দুজনকে সাগরবাবু মিছিমিছি পাঠালেন ... ওনাদের অবশ্য আমি দেখতে পাইনি ... '
    সাগর এতক্ষণে কথা বলল। বলল, ' সবকিছু দেখতে না পাওয়াই ভাল। কিছু কিছু জিনিস না দেখাই ভাল ... গার্ড দেওয়াটা তো আমার কাজ ...'
    রাত্রি কথাটার মানে কিছু বুঝতে পারল না। কিন্তু মনের ভিতর একটা অদ্ভুত অনুরণন হল। সে চুপ করে রইল। ভাবতে লাগল, কাকে গার্ড দেবার কথা বলছে সাগরবাবু।
    শিবপ্রসাদবাবুর কথা মনে পড়ল .... বিপত্তি যে কোন গর্ত দিয়ে এসে ঘরের মধ্যে সেঁধিয়ে যাবে আগে আন্দাজ করা যায় না ...
    রাত্রি নানা চিন্তার ঘূর্ণিতে পড়ে গেল হঠাৎ। তবে পাক খাওয়ার আগেই ধরে নিলেন সরযূদেবী।
    ----- ' মা, তুমি লেখাপড়া কর বুঝি ? '
    ----- ' হ্যাঁ, আর তো কিছু করতে পারিনা ... তাই ওটাই করি আর কি ... '
    সরযূদেবী আবার বললেন, ' কলেজে পড় বুঝি ? '
    ----- ' ওই... তার চেয়ে আর এক ধাপ ওপরে ... ইউনিভার্সিটিতে ... '
    সরযূদেবী মোটামুটি আন্দাজে ধরে নিলেন ব্যাপারটা।
    বললেন, ' ও বাবা ... তুমি তো অনেক লেখাপড়া জানা লোক গো ... কি সৌভাগ্য আমাদের ঘরে এলে ... '
    রাত্রি সরযূর দিকে তাকিয়ে বলল, ' মাসীমা আপনি বোধহয় জানেন না কত লোকে আপনার ছেলেকে ভগবান মানে ... আপনি রত্নগর্ভা ... '
    সরযূদেবী লাজুক হেসে মাথা নীচু করে বসে রইলেন।
    সাগর বলল, ' ধুসস্ ... কি যে সব বলেন ... আমি হলাম সাগর গুন্ডা ... '
    রাত্রি বলল, ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... সে তো জানি ... এ আর নতুন কথা কি ? '
    সাগর চুপ করে কিছু নতুন কথা খুঁজতে লাগল।

    শশধর আওনের অঢেল বয়স হল। একশ ছুঁই ছুঁই। সুরেশ্বর মল্লিকের বাড়ির দুটো বাড়ি পরে তার বাড়ি। চোখ দুটো বয়সের পলেস্তারায় ঘোলাটে হয়ে গেলেও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এখনও সচল। মুখের তামাটে চামড়ায় প্রচুর আঁকিবুকি। শ্রবণযন্ত্রে সময়ের শ্যাওলা পড়েছে ঠিকই, তবে এখনও দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ অবশ্য দন্তহীন, ফোকলা। ধুতি আর সাদা রঙের ফতুয়া পরে তার বাবার আমলের আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকেন লম্বা গরাদওয়ালা জানলা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে। তিনতলা বাড়ির একতলায় থাকেন তিনি। ওপরতলায় তার পক্ষে ওঠানামা করার অসুবিধা।
    তার জীবিত দুই ছেলে এবং নাতিপুতিরা ওপরতলায় থাকে। তার বাকি দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে পরিণত বয়সেই ধরাধাম ত্যাগ করেছে। এক নাতিও চলে গেছে মধ্য বয়সে।

    শশধরের দেখভাল এবং পরিচর্যার কোন অভাব নেই। তিনি নাকি একসময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। জেলও খেটেছেন। শোনা যায় বিশের দশকে তিনি গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে সামিল ছিলেন।
    তার পরিবারের অন্য কেউ কিংবা উত্তরসূরীরা কেউ ওসব দেশাত্মবোধক ব্যাপার নিয়ে কোনদিন মাথা ঘামায়নি। তারা তাদের পারিবারিক ব্যবসা চালায়। জিরে, ধনে,হলুদ, শুকনো লঙ্কা এই সবের চালু ব্যবসা। শ্যামবাজার বাজারের পাশে দোকান। তাছাড়া আহিরিটোলা এবং নতুনবাজারেও দোকান আছে। তার পরিবারের কেউ তার কাছ থেকে তার স্বদেশী লড়াইয়ের 'বস্তাপচা' কড়চা শুনতে আদৌ আগ্রহী নয়।
    বিভূতিবাবু শশধর আওনকে ছোটবেলা থেকে চেনেন। তাকে মনের একটা বিশিষ্ট জায়গায় রেখেছেন বিভূতিবাবু। মাসে অন্তত দুবার সকালের দিকে তার সঙ্গে দেখা করেন। রাত্রে শশধর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন। দেখা করা মুশ্কিল। তাই বিভূতিবাবু সকালের দিকে আওন বাড়িতে গিয়ে পড়েন।
    আজকেও তেমনই এসে পড়লেন।
    শশধরবাবু চামচ করে পাতলা সুজি গোছের কিছু একটা খাচ্ছিলেন। সামনে একজন পরিচারিকা দাঁড়িয়ে তদারকি করছিল এবং মাঝে মাঝে একটা সাদা কাপড় দিয়ে তার ঠোঁট মুছিয়ে দিচ্ছে।
    বিভূতিবাবুকে দেখে শশধরবাবু তার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ঠাহর করে নিলেন। তারপর উৎফুল্ল ভঙ্গীতে ফোকলা দাঁতে হেসে বললেন, ' অ ... বিভূতি ... এস বাবা ... কতদিন পরে এলে ... '
    ----- ' কেন জ্যাঠামশাই ... আমি তো গত মঙ্গলবারেই এসেছিলাম ... ' বিভূতিবাবু মনে করিয়ে দিলেন।
    ----- ' অ ... এসেছিলে ? তা হবে হয়ত... বলছ যখন ... কিছু মনে থাকে না আজকাল ... বয়সটা তো কিছু কম হয়নি বাবা ... '
    বিভূতিবাবু একপাশে একটা চেয়ারে বসলেন। শশধর আর এক চামচ পাতলা সুজি মুখে দিলেন।
    সেটা গলাধঃকরণ করে নিয়ে বললেন, ' আমার সঙ্গীসাথীরা সবাই ওপরে চলে গেছে। তারা ভাল কপাল নিয়ে এসেছিল ... চলে গেছে। আমিই কেবল সেই কবে থেকে বাক্সপ্যাঁটরা বেঁধে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। সে গাড়ি আর আসে না ...'
    বিভূতিবাবু বিনম্রভাবে শুধোলেন, ' তাড়াতাড়ি চলে যাওয়াটা সৌভাগ্যের লক্ষণ বলছেন ? '
    ----- ' তাড়াতাড়ি না ... ঠিক সময়ে চলে যাওয়াটা ভাল ব্যাপার ... যদি কোন কাজ থাকে থাক ... নইলে কেন মিছিমিছি পড়ে থাকা ... এ চটিতে যত বেশিদিন থাকবে তত বেশি মাশুল চোকাতো হবে ... মনে রেখ ... দুঃখ কষ্ট, শোকতাপের মাশুল ... বুঝলে কিনা ... '
    বিভূতিবাবু ভাবলেন, ' তাই তো ... খাঁটি কথা বলেছেন জ্যাঠামশাই। মাশুল গোনার সম্বল তার নিজেরই আর আছে তো ... '
    শেষ চামচ সুজি মুখে দিলেন শশধরবাবু। পরিচারিকা আলতো করে তার মুখ মুছিয়ে দিয়ে
    বাটিটা নিয়ে ওপরে চলে গেল।

    ( চলবে )

    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | ৬  | ৭  | ৮  | ৯  | ১০  | ১১  | ১২  | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬  | ১৭  | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২  | ২৩  | ২৪  | ২৫  | ২৬ | ২৭ | ২৮  | ২৯  | ৩০ | ৩১  | ৩২  | ৩৩  | ৩৪ | ৩৫ | ৩৬  | ৩৭  | ৩৮  | ৩৯  | ৪০  | ৪২  | ৪৩  | ৪৪  | ৪৫  | ৪৬ | ৪৭  | ৪৮  | ৪৯  | ৫০  | ৫১  | ৫২ | ৫৩ | ৫৪ | ৫৫ | ৫৬ | ৫৭ | ৫৮ | ৫৯ | ৬০ | ৬১ | ৬২ | ৬৩ | ৬৪ | ৬৫ | ৬৬ | ৬৭ | ৬৮ | ৬৯ | ৭০ | ৭১ | ৭২ | ৭৩ | ৭৪ | ৭৫ | ৭৬ | ৭৭ | ৭৮ | ৭৯ | ৮০ | ৮১ | ৮২ | ৮৩ | ৮৪ | ৮৫ | ৮৬ | ৮৭ | ৮৮ | ৮৯ | ৯০ | ৯১ | ৯২ | ৯৩ | ৯৪ | ৯৫ | ৯৬ | ৯৭ | ৯৮ | ৯৯ | ১০০ | ১০১ | ১০২ | ১০৩ | ১০৫ | ১০৬ | ১০৭ | ১০৮ | ১০৯ | ১১০ | ১১২ | ১১৩ | ১১৪ | ১১৫ | ১১৬ | ১১৭ | ১১৮ | ১১৯ | ১২০ | ১২১ | ১২২ | ১২৩ | ১২৪ | ১২৫ | ১২৬ | ১২৭ | ১২৮ | ১২৯ | ১৩০ | ১৩১ | ১৩২ | ১৩৩ | ১৩৪ | ১৩৫ | ১৩৬ | ১৩৭ | ১৩৮ | ১৩৯ | ১৪০ | ১৪১ | ১৪২ | ১৪৩ | ১৪৪ | ১৪৫ | ১৪৬ | ১৪৭ | ১৪৮ | ১৫০ | ১৫১ | ১৫২ | ১৫৩ | ১৫৪ | ১৫৫ | ১৫৬ | ১৫৭ | ১৫৮ | ১৫৯ | ১৬০
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.251.161.113 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:২৭528228
  • "প্রচ্ছদের লে আউট নিয়ে মতানৈক্য হচ্ছিল না । সুনির্মল একটা একটা স্যাম্পেল জোগাড় করে এনেছে । সেটা নিয়েই তুমুল  বাতবিতন্ডা ।"
    মতের অনৈক্য না থাকলে "বাত(ক?)বিতন্ডা" কেন হবে? 
  • Anjan Banerjee | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪২528285
  • একদম ঠিক । টাইপো হয়েছে । ঠিক করে দিচ্ছি । ধন্যবাদ।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন