এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    খাদ্য এবং খাদ্য ফসলের দূষণ, একটি নীরব দর্শক - সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ও সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ন সমাধান - শ্যামল অধিকারী | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়বায়ু দূষনের মতোই খাদ্য এবং খাদ্য ফসলের দূষণ, একটি নীরব দর্শক - সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ ও সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ন সমাধান FSSAI (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) এর চরম ব্যর্থতা। খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং রাসায়নিক পেস্টিসাইড নিয়ন্ত্রণ করতে FSSAI সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দায়ের করা একটি পিটিশনে বলা হয়েছে যে কীটনাশক যুক্ত খাবারের ব্যবহার সারাদেশে ক্যান্সার রোগের প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কীটনাশক এবং ক্যান্সারের মধ্যে একটি সরাসরি বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে কীটনাশক যুক্ত খাবার, তার ব্যবহার, অতিব্যবহার এক বিরাট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবেদনকারী সারা দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন যা দেখায় যে কীটনাশকের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। সিনিয়র আইনজীবী অনিথা শেনয়, আবেদনকারী অ্যাডভোকেট আকাশ বশিষ্ঠের পক্ষে উপস্থিত হয়ে সুপ্রিম কোর্টকে জানালেন।পাশাপাশি পিটিশনে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এর মতো রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ফল কৃত্রিমভাবে পাকানো, আপেলের মত ফলগুলির রং বা আবরণ প্যারাফিন, শেলাক এবং পলিথিনের মত উপাদান দিয়ে তৈরি মোম দিয়ে পলিশিংয়ের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ডাল এবং খাদ্যশস্যে কৃত্রিম রং ব্যবহারের কথাও উল্লেখ করা হয়।ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চ 17 মে, 2024 পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ও মান অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে (FSSAI) নোটিশ জারি করেছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া চেয়েছে।FSSAI - এর ভূমিকা এবং ফাংশন জানা যাক:FSSAI হল ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের প্রশাসনের অধীনে একটি স্টাটিউটরি সংস্থা। এটি খাদ্য সামগ্রীর উৎপাদন, সঞ্চয়, বিতরণ, বিক্রয়, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মান প্রতিষ্টা করে।FSSAI কে তৈরি করা হয়েছে খাদ্য সামগ্রীর বিজ্ঞান ভিত্তিক মান নির্ধারণের জন্য, এবং মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য।FSSAI - কে FSS আইন, 2006 দ্বারা নিম্নলিখিত কার্য সম্পাদনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।১. খাদ্যের মান (standards) ও নির্দেশিকা (guidelines) কাঠামো তৈরি করা এবং বিভিন্ন মান কার্যকর করার উপযুক্ত ব্যবস্থা উল্লেখ করা।২. খাদ্য ব্যবসায়ে খাদ্য নিরাপত্তা সার্টিফিকেশনে নিযুক্ত সংস্থাগুলির স্বীকৃতির জন্য প্রক্রিয়া এবং নির্দেশিকা নির্ধারণ করা।৩. পরীক্ষাগারগুলির স্বীকৃতির জন্য পদ্ধতি এবং নির্দেশিকা নির্ধারণ করা।৪. খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে, এমন ক্ষেত্রে নীতি ও নিয়ম প্রণয়নের ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।৫. খাদ্যে দূষিত পদার্থ, বিভিন্ন পদার্থের অবশিষ্টাংশ, জৈবিক ঝুঁকির (biological risk) ঘটনা চিহ্নিতকরণ এবং দ্রুত সতর্ক ব্যবস্থা অবলম্বন করা।৬. সারা দেশে একটি তথ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যাতে জনসাধারণ, ভোক্তা, পঞ্চায়েত ইত্যাদি খাদ্য নিরাপত্তা এবং উদ্বেগের বিষয়গুলির দ্রুত তথ্য পায়।৭. খাদ্য ব্যবসায়ে যারা জড়িত বা ইচ্ছুক তাদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম প্রদান করা।৮. খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যমান সম্পর্কে সাধারণ সচেতনতা প্রচার করা।৯. ফুড সেফটি রিসার্চ : FSSAI - এর Research and Development Division খাদ্য নিরাপত্তার মানের ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য দায়ী। তারা ক্রমাগত আন্তর্জাতিক খাদ্যমান গ্রহণ করার চেষ্টা করবে।কীটনাশক, বিষক্রিয়া এবং আইন:কীটনাশক হল এমন একটি রাসায়নিক বা জৈবিক পদার্থ যা কীটপতঙ্গ থেকে ক্ষতি প্রতিরোধ, ধ্বংশ বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে কৃষি এবং অ - কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।এগুলি মানবস্বাস্থ এবং পরিবেশের জন্যও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে যখন তাদের অপব্যবহার করা হয়, অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় বা অবৈধভাবে বিক্রি করা হয়।ভারতে কীটনাশকগুলি, কীটনাশক আইন, 1968 এবং কীটনাশক বিধি, 1971 এর অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনটি কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত হয়।পেস্টিসাইডের অতিরিক্ত ও অপব্যবহার কী?অতিরিক্ত পেস্টিসাইড ব্যবহার তাকেই বলা হয় যখন লেবেলগুলিতে উল্লেখ করা স্ট্যান্ডার্ড ডোজ অতিক্রম করে। অপব্যবহার বলা হয় যখন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ অর্জন করতে ভুল করে ব্যাবহার করা হয়।পেস্টিসাইড এবং অজৈব রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার এবং অত্যধিক ব্যবহার ( যায় মধ্যে আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক, ইঁদুরনাশক, ভেষজনাশক) খাদ্যশস্য এবং খাদ্য সামগ্রীতে ক্যান্সার এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগ সৃষ্টির প্রাথমিক এবং প্রধান কারন হিসাবে জানা যায়।কীটনাশক এক্সপোজার মানেই কি ক্যান্সারের ঝুঁকি?একটি পেস্টিসাইড থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি নির্ভর করে বেশ কয়েকটি কারণে যেমন - পেস্টিসাইডটি কার্সিনোজেনিক কিনা, কিভাবে পেস্টিসাইডটির এক্সপোজার, কতটা এক্সপোজার হল, তার ওপর। একটি কারসিনোজেনিক পেষ্টিসাইডের সামনে এক্সপোজার হওয়া মানে এই নয় যে আপনার অতি অবশ্যই ক্যানসার হবে। এটা শুধু মাত্র ব্যক্ত করে যে, আপনার ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বা ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে গেল যদি আপনার এক্সপোজার না হতো, তার থেকে।গবেষণায় দেখা যায় যে শিশুরা বিশেষ করে, কীটনাশক এক্সপোজার থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে এবং শৈশবকালে ক্যান্সারের হার বাড়তে থাকে। এটাও দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থায় এবং শৈশবকালে কীটনাশকের এক্সপোজার শিশুদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাক্টিস ( GAPs) - এর প্রয়োজনীয়তা:GAP হল কৃষি উৎপাদন (production), প্রক্রিয়াকরণ (processing), এবং খাদ্য পরিবহনের (transport) জন্য প্রযোজ্য নীতি, প্রবিধান (regulations) এবং প্রযুক্তিগত সুপারিশগুলির একত্রিত একটি সেট। এটি মানব স্বাস্থের যত্ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং কর্মীদের ও তাদের পরিবারের অবস্থার উন্নতির জন্য তৈরি। GAP বাস্তবায়ন, টেকসই (sustainable) কৃষিকে উন্নত করতে, এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশগত এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করতে সাহায্য করে।নথিভুক্ত করে বলা হয়েছে যে , GAP বাস্তবায়ন - কীটনাশক, সার এবং জলের মতো সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং পরিবেশ বান্ধব কৃষিকে উৎসাহিত করবে। এর সামাজিক উদ্দেশ্য হল, রাসায়নিক ও কীটনাশকের অনুপযুক্ত ব্যবহার থেকে কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য রক্ষা করা।একই মাসে সংবাদে দুটো বিস্ফোরণ - এক বিতর্কের ঝড় তুলেছে:5 ই মে 2024, FSSAI - এর আদেশে মশলা ও ভেষজগুলিতে ১০ গুন বেশি কীটনাশকের মাত্রা বাড়ানোর অনুমতি, আর 17 ই মে 2024 অতিরিক্ত কীটনাশক যুক্ত খাবার ব্যবহারে ক্যান্সারে মৃত্যু ও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ - এই দুটি সংবাদই সাধারণ ও বিজ্ঞানী মহলে বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।FSSAI মশলা ও ভেষজগুলিতে উচ্চ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের (MRLs) বিষয়টির জন্য ৩ টে আদেশ জারি করে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে।১. 21April 2022 - এর আদেশে,(ক) কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ ভারতীয় কীটনাশকের ক্ষেত্রে, ফিল্ড ট্রায়াল ডেটার অভাব স্বীকার করে এবং কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্চ অবশিষ্টাংশের সীমা (MRLs) ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়।(খ) বলা হয়েছে যে, মশলা এবং রন্ধনসম্পর্কীয় ভেষজ সহ খাদ্য এবং পণ্যগুলির জন্য কীটনাশকের সর্বাধিক অবশিষ্টাংশের সীমা (MRL), FSSAI কেন্দ্রীয় কীটনাশক বোর্ড (CIB) এবং রেজিস্ট্রেশন কমিটির (RC) মাধ্যমে প্রাপ্ত ফিল্ড ট্রায়াল ডেটার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট করে। এই গবেষণাগুলি কীটনাশক প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি থেকে আসে।২. 30 August 2022 - এর আদেশে বলা হয়(ক) যদি পেষ্টিসাইডগুলি CIB & RC সাথে রেজিষ্টার হয় তাহলে মশলা এবংরন্ধনশীল সম্পর্কীয় ভেষজ - এর ক্ষেত্রে Codex / EU / USA / Japan / FSANZ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত MRLs ব্যবহার হবে।(খ) আর যদি পেস্টিসাইডগুলি CIB & RC সাথে রেজিষ্টার না হয় তবে ডিফল্ট কোডেক্স MRL 0.01 mg/kg (অথবা Below Detection Limit) ব্যবহার হবে।৩. 8 April 2024 - এর আদেশে বলা হয় যে(ক) মশলা ও রন্ধন সম্পর্কীয় ভেষজ সহ খাদ্য পণ্যগুলির MRL, CIB & RC মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেটার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট করা হয়। এটাও বলা হয়েছে যে যতক্ষণ না ফিল্ড ট্রায়াল ডেটা পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত মশলার MRLs, মনিটরিং অফ পেস্টিসাইড রেসিডিউস এট নেশনাল লেভেল (MPRNL) স্কিম প্রদত্ত ডেটার উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট করা হবে।(খ) কৃষি মন্ত্রকের সাথে রেজিষ্টার করা আছে কিন্তু মশলার জন্য ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের অধীনে MRL নেই , সেক্ষেত্রে কোডেক্স ( কোডেক্স গ্লোবাল অ্যালিমেন্টারিউস কমিশন) এর মান ব্যবহার করা হবে। যদি এটি কোডেক্স - এ উল্লেখ না থাকে, তাহলে 0.1 mg/ kg এর MRL অনুসরণ করা হবে।যে কীটনাশকগুলি কৃষি মন্ত্রকের (CIB & RC) সাথে মোটেও রেজিষ্টার নয়, তাদের জন্য 0.1 mg/kg MRL প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দশগুণ বেশি প্রযোজ্য হবে।FSSAI মশলা , ভেষজগুলিতে ১০ গুন বেশি কীটনাশকের অনুমতি দেয়:ভারতীয় ভেষজ , মশলাগুলিতে উচ্চ কীটনাশকের (MRLs) দাবি করা প্রতিবেদনগুলো " মিথ্যা এবং দূষিত" - বলেছে FSSAI ।FSSAI দ্ব্যর্থহীন ভাবে ভারতীয় ভেষজ এবং মশলাগুলিতে উচ্চতর কীট নাশকের অভিযোক সাম্প্রতিক মিডিয়া রিপোর্টগুলিকে " মিথ্যা এবং দূষিত" হিসাবে চিহ্নিত করেছে।একটি প্রেস রিলিজে , খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রক স্পষ্ট করেছে যে ভারত কীটনাশকের জন্য সর্বাধিক অবশিষ্টাংশের সীমা (MRLs) বিশ্বব্যাপী কিছু কঠোর মানের সঙ্গে সমানভাবে বজায় রাখে , তার সঙ্গে বজায় রাখে খাদ্য পণ্যের ঝুঁকি মূল্যায়নের ( risk assessment) জন্য রেগুলেশনসগুলি । FSSAI - এর MRLs বৈজ্ঞানিক প্যানেল CIB & RC দ্বারা প্রদত্ত ডেটা মূল্যায়ন করে। পাশাপাশি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা করে যেটা ভারতীয় জনসংখ্যার খাদ্যাভ্যাস এবং সমস্ত বয়সের গোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ বিবেচনা করে, তারপরে সেই অনুযায়ী MRL সুপারিশ করে।ভারতে বর্তমানে 293 টিরও বেশি কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, 139 টি বিশেষভাবে মশলা ব্যবহারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কোডেক্স একটি আন্তর্জাতিক মান সংস্থা 243 টি কীটনাশক গ্রহণ করেছে যার মধ্যে 75 টি মশলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।প্রতিটি কীটনাশক, ঝুঁকি মূল্যায়ন ডেটার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন MRL সহ একাধিক খাদ্য পণ্যে রেজিস্টার্ড হয়। উদাহরনস্বরূপ, Monocrotophos, একটি সাধারণ কীটনাশক, অন্যদের মধ্যে চাল, সাইট্রাস ফল , কফিবিন এবং এলাচের জন্য বিভিন্ন MRL - এ অনুমোদিত।MRL প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে 0.01 mg/ kg সীমা প্রয়োগ করা হয়েছিল। এটা পরবর্তীতে 0.1 mg/ kg তে বাড়ানো হয়েছিল শুধুমাত্র মশলার কীটনাশকগুলির জন্য যা CIB & RC দ্বারা রেজিস্ট্রেশন হয়নি। CIB & RC দ্বারা রেজিস্ট্রেশন না হওয়া কীটনাশক সম্পর্কিত উদ্বেগগুলির মোকাবিলা করার জন্য , FSSAI কোডেক্স এর মত সংস্থাগুলির দ্বারা নির্ধারিত ও আন্তর্জাতিক মানগুলির সাথে সমানভাবে MRL গুলি গ্রহণ করেছে।FSSAI আদেশ সংক্রান্ত সমস্যা: ১. FSSAI - এর আদেশ পূর্ববর্তী অবস্থানের অসঙ্গতি এবং পূর্বের অবস্থনের সাথে সাংঘর্ষিক।২. ফিল্ড ট্রায়াল ডেটার গবেষণাগুলির প্রায়শই কীটনাশক প্রস্তুতকারকদের থেকে আসে। অতএব স্বার্থ থাকার সম্ভাবনা বেশি।৩. সাধারনত FSSAI , CIB & RC - র মাধ্যমে ফিল্ড ট্রায়াল ডেটা সংগ্রহ করে কিন্তু MRL ১০ গুন বৃদ্ধি করার সময় MPRNL - এর প্রদত্ত ডেটা নেওয়া হল কেন ? MPRNL আমাদের খাবারে কীটনাশকের পরিমাণ পরীক্ষা করে, কিন্তু এটি মশলা পরীক্ষা করে না। তাই ব্যাপক তথ্যের অভাব থাকতে পারে।৪. যে সমস্ত পেস্টিসাইড CIB & RC - র সাথে রেজিষ্টার থাকে না ফলে FSSAI দ্বারা MRL নির্ধারিত হয় না।, তাহলে মশলার ক্ষেত্রে 0.1 mg/kg অর্থাৎ ১০ গুন বাড়লো কেন ? পূর্বে এই সমস্ত পেষ্টিসাইড এর ক্ষেত্রে ডিফল্ট MRL 0.01 mg/kg ছিল। এমন কি মশলার MRLs যেখানে গ্লোবাল কোডেক্স এবং FSSAI উভয়ই নির্দিষ্ট করে নি সেক্ষেত্রে ১০ গুন অর্থাৎ MRL 0.1 mg/ kg করা হল কেন এবং অত্যাবশ্যক হল কেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, ফুড সেফটি রেগুলেটরের উচিত ছিল শূন্য MRLs হতে দেওয়া যেখানে কোডেক্স এবং FSSAI MRLs নির্দিষ্ট করেই নি।৫. MRL দশগুণ বেড়ে যাওয়া অর্থাৎ 0.1 mg/kg হওয়াটাকে অনেকেই লিমিট রিল্যাক্সড হল বলে মনে করছেন। ফলে গুরুতর স্বাস্থের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ৬. পেস্টিসাইড যদি কর্সিনোজেনিক হয় তাহলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে । এক্ষেত্রে ট্রায়াল ডেটা সংগ্রহ করার সাথে সাথে যে সমস্ত টক্সিকলজিকাল এবং রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট স্টাডি করা হয় তার সাথে ক্যানসার রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট ও গবেষণা কিভাবে এবং কতটা গুরুত্বের সঙ্গে হয় তা জনসমক্ষে আনা দরকার। এই সমস্ত স্টাডি FSSAI , পেষ্টিসাইড প্রস্তুতকারকদের উপর নির্ভর না করে, দেশের প্রতিষ্ঠিত গবেষণাগুলিতে, কম করে ৩ টে গবেষণাগারে, নিজ দায়িত্বে করা উচিত। কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার সমাধানে গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ:ফসল এবং খাদ্য আইটেমগুলিতে কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিকের ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নোটিশ নিঃশন্দেহে উল্লেখযোগ্য।পিটিশনটি কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহারের গুরুতর প্রভাব এবং FSSAI এর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির নিরাপত্তা মান কার্যকর করতে ব্যর্থতার কথা সামনে এনেছে।কীটনাশকগুলি কীটপতঙ্গ এবং রোগ থেকে ফসল রক্ষা করতে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তাদের অত্যধিক ব্যবহার এবং অপব্যবহার গুরুতর স্বাস্থের ক্ষতির কারণ হয়।পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে যে কীটনাশক যুক্ত খাবার গ্রহণ ক্যানসার এবং অন্যান্য মারাত্মক রোগের একটি প্রধান কারণ।১. কীটনাশক সমস্যা সমাধানের জন্য বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন। বর্তমান নিয়মাবলীর কঠোর প্রয়োগ থাকতে হবে।২. এর মধ্যে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের জন্য খাদ্যের নমুনাগুলির নিয়মিত এবং রান্ডম (random) পরীক্ষা, এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ফলাফলগুলিকে সার্বজনীনভাবে অ্যাকসেসযোগ্য করতে হবে। অধিকন্তু, সাসটেইনেবল কৃষি অনুশীলনের প্রচারের জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকা উচিত।৩. ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (IPM) কৌশলগুলি প্রয়োগ করতে হবে যাতে জৈব চাষের উপর জোর দেয় এবং রাসায়নিক কীটনাশকের উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। এই রূপান্তরকে সহজতর করার জন্য উদ্দীপনা অপরিহার্য।৪. কৃষি প্রযুক্তির অগ্রগতি , কীটনাশক ব্যবহার কমাতে প্রতিশ্রুতিশীল সমাধান প্রদান করে। নির্ভুল চাষের কৌশল এবং কীটনাশক আরও দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করার জন্য গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাক্টিস (GAP) এবং তার অডিট অত্যন্ত প্রয়োজন।৫. গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অবশ্যই এই জাতীয় প্রযুক্তির বিকাশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং তাদের ব্যাপক গ্রহণ নিশ্চিত করতে নীতিনির্ধারক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের সাথে সহযোগিতা করতে হবে। গবেষণায় সরকারী এবং বেসরকারী বিনিয়োগ, এই উদ্ভাবনগুলিকে ত্বরান্বিত করতে এবং কৃষকদের কাছে তাদের এক্সেসযোগ্য করে তোলার জন্য গুরত্বপূর্ন।৬. সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ, ভারতে কীটনাশকের অত্যধিক ব্যবহারের সমস্যা এবং সমাধানের জন্য, একটি সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।৭. এই আবেদনের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া দ্রুত এবং সিদ্ধান্তমূলক হওয়া উচিত। ব্যাপক সংস্কারের গতি আনতে হবে যাতে জাতির স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং কৃষিখাতের টেকসইতা (sustainability) নিশ্চিত করে।References:1. Food Safety Standards Authority of India, Ministry of Health and Family Welfare, Govt. of India.2. ScienceDirect , Current opinion in Environmental Science & Health, vol.4, August 2018.3. Daily Excelsior.com, 24 May, 2024.4. Can pesticides cause cancer ?, National Pesticide Information Center, [email protected]. Pesticide and Cancer, Pesticide Action Network, North America, https://www.panna.org6. Good Agricultural Practices, Indian Council of Agricultural Research, Govt. of India,https://IIsrindor.icar.govt.in7. What is Good Agricultural Practices (GAP) ?, Safety Culture, https://safety culture.com8. GMP/GAP Audit, equinox labs,https://eqinoxlab.com9. FSSAI, Maxmum Residue Limits (MRLs) of Pesticides for Spices and Culinary Herbs.https://fssai.gov.in10. News : Drishti IAS, The Financial Express, DD News and National Herald.
    হাসপাতালের ডায়েরি - পারমিতা চৌধুরি | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়পয়লা বৈশাখের সকাল। sskm এর হেড অ্যান্ড নেক সার্জারির ফিমেল ওয়ার্ডের সবাই সকালের খাবার নিতে জমায়েত করে দাঁড়িয়ে। ঠাট্টা তামাশা, গল্প গুজব চলছে। বিষয় - gst। উঁচু গলায় হাসতে হাসতে একজন বললো, - নে নে এবার থেকে জলেও gst দিবি। ফেসবুকে শহুরে শিক্ষিত বাঙালি সেদিন বিচার বিশ্লেষন করছিল, পয়লা বৈশাখ কি আসলে পহেলা বৈশাখ? ওই প্রশ্নের ওপর বাঙালি জাতি সত্ত্বা নির্ভর করেছিল কিনা, তাই জন্য!শহরের কেন্দ্রে থাকা সবথেকে সেরা সরকারি হাসপাতালগুলোর একটা sskm। এখানে ভর্তি হতে আসে বহু দূর গ্রাম, গঞ্জ থেকে। শহর শুধু বিশাল এই হাসপাতালের অস্তিত্ব জানে। তার ভেতরের মানুষদের চেনে না। এখানে যারা ভর্তি তাদের যদি বাড়ি কাছে হয়, তাহলে তা আন্দুল। আর দূরে হলে - সাগর। শহরবাসী কি সাগরে কি যায়? দীঘা, মন্দারমনি নয়, সেই যেখানে হিন্দুদের প্রিয় সাগরমেলা বসে, সেই সাগরে?এ বছর চৈত্রের শুরু থেকেই ঝলসে দেওয়া শুকনো গরম। সেই গরমে sskm এর এক একটা লাইনে তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে নারী পুরুষ। মেয়েরা এখানে সংখ্যাগুরু। সংসারের যাবতীয় কাজ ভোর রাতে উঠে সামলে তারা চলে আসে। কখনো নিজের জন্য, কখনো সন্তানের জন্য। এমনকি এমন মেয়ের দেখা পেয়েছি যে sskm চেনে হাতের তালুর মত আর তার হাত ধরে প্রথমবারের জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছে তার স্বামী। মেয়েরা না কি রাস্তা পেরোতে পারে না?ওয়ার্ডে সময় চলে মন্থর আলস্যে। সন্ধ্যেয় ওয়ার্ডের একটা অংশে আসর বসেছে। মধ্যমণি যে তার গলার সার্জারি দুদিন পড়ে। হঠাৎ আবিষ্কার হয়েছে তার বাম হাতটি ভাঙ্গা। সে নিজে অবিশ্যি টের পায়নি যে হাত ভেঙে গেছে। এক্স রে ভিউয়ার আমার বেডের সামনে। দু টুকরো হয়ে যাওয়া হাড়ের প্লেট আর ভাঙ্গা-হাতের হাসি-মুখের মালকিনকে পর্যায়ক্রমে বার কয়েক দেখে, ভাবার চেষ্টা বন্ধ করতে হয়েছিল। ডাক্তাররা চলে গেলে, সমবেত হইহই প্রশ্নে লাজুক মুখের বউটি বললে, আল্লার দোয়া, সব কটা রোজা রেখেছিলাম তো! স্রোতের মত কথা গড়াতে গড়াতে একজন বলে ওঠে, - "খিদিরপুরে কত যে জবাই হয়, সে কি রক্ত"!সোৎসাহে আরেকজন বলে, - "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের গ্রামেও তো। কালী পুজোয়।" ফোন হাতড়ে যত্নে তোলা অস্পষ্ট ভিডিও খুঁজে দেখায় সে।আমার পাশের বেডের মেয়েটির বাড়ি মসলন্দপুর। বৈশাখের দাবদাহের মধ্যে সারা দিন টসটসে ঘেমে, বিছানায় গড়িয়ে কাটে গলায় ব্যান্ডেজ মোড়ানো আমাদের দুজনের। রাত নামলে তাপমাত্রা সহনীয় হয়। আলো নিভে গেলে আমরা দুজন টুকরো গল্প করি। উদ্বাস্তু পরিবারের মেয়ে সে। বড় শক্ত লড়াই তাদের। বাবা মরে গেছে অল্প বয়সে খাটতে খাটতে। বাবাকে প্রায় না চেনা মেয়ে, দুই দাদার আদরের বোন, এক ছেলের মা কলকলিয়ে গল্প বলে চলে। বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়দের বাড়ির গল্প। নিজেদের পুরনো বাড়িতে তার দাদাদের যাওয়ার গল্প। সেখানে আতিথেয়তা, মুসলমান বাড়িতে হিন্দু বাড়ির ছেলে খাবে না, সেই অদ্ভুত পরিস্থিতির গল্প। এক সপ্তাহ ছেলেকে না দেখা মা এর গলা বুজে আসে। ফোন খুলে ছবি দেখায় গোপাল সাজে ছেলের। উদ্বাস্তু মেয়ে, পায়ের তলায় জমি খুঁজতে চেষ্টা করা মা হঠাৎ বলে ওঠে, "জানো তো, একটা যুদ্ধ একটা মুহূর্তে সব শেষ করে দেয়। শুনেছি এখনো হচ্ছে দুটো জায়গায়। কত বাড়ি, কত সংসার এমন এক মুহুর্তে রাস্তায় এসে দাঁড়াচ্ছে"। কিলবিলে প্রশ্ন চাপতে পারি না। জিজ্ঞেস করি, "তোমার রাগ হয় না? এত কষ্ট, মুসলমানদের জন্য.."। অবাক হয়ে তাকিয়ে হেসে ওঠে উদ্বাস্তু মেয়ে। "তাই আবার হয়? মুসলমানের ওপর রাগ কেন হবে গো! তাহলে বলি শোনো.."।সেই আখ্যান থাক। আমি সেদিন মন প্রাণ ভরে জেনেছিলাম প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন, প্রতিবেশী-বিচ্ছিন্ন, ঘৃণাকাতর যাপনের ঠিক উল্টো পথের এক পথিকের কথা।দুই মা। একজনের বাড়ি হুগলির গ্রামে, দ্বিতীয়জন বসিরহাটের। দুজনেরই মেয়ের সার্জারি। সেদিনও সান্ধ্য আলাপ চলছে। মেয়েদের এটা সেটা গল্প। সার্জারির আগে সব গয়না খুলে দিতে হয়েছে। বিবাহিত মেয়েদের বহুদিন পর হাত দুটো বড়ই হালকা, মন ভারী - পাছে স্বামীর কিছু হয়। বসিরহাটের বউটি নির্বিকারে বলে উঠলো, ধুর ওতে কিছু হয় না, না পরলে বাড়িতে ঝামেলা শুধু। হুগলির বউটিও ঘাড় নেড়ে সায় দেয় সঙ্গে সঙ্গে। আমার দিকে তাকিয়ে একজন জিজ্ঞেস করে, - সঙ্গে ওটা বুঝি তোমার বর ছিল? প্রেম করে বিয়ে? আরেকজন বলে, - আজকাল প্রেমের বিয়ে, দেখা শোনার বিয়ে কোথাওই শান্তি নেই গো।হুগলির বউটি মেয়ের ওষুধের ড্রিপ সোজা করতে করতে শান্ত এবং দৃঢ় কণ্ঠস্বরে বলে, - ভুগতে হলে নিজে দেখে শুনে ভোগাই ভালো।আমি একটু চমকে উঠি। ব্যবহার্য বস্তু থেকে উত্তরণ ঘটুক, মানুষ হয়ে উঠে ভুল করার স্বাধীনতা পাই - এ আকাঙ্খা তাহলে সব মেয়েরই মনের মধ্যে ধিকি ধিকি জ্বলছে।হৃদয়পুরের মাসিমা ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি বেজায় ভালো। সেখানে সবাই শিক্ষিত, রুচিশীল। তাঁকে গড়ে পিটে নিয়েছিলেন শাশুড়ি। কোনোদিন রান্না করতে যেতে হয়নি, বরং পড়তে বসতে বলতেন। তিনি নিজে বড্ড বেশি কথা বলতে ভালোবাসেন, অথচ শ্বশুর বাড়িতে সবাই গুরুগম্ভীর। ওটুকুই একটু অসুবিধে হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির সবার। মসলন্দপুরের বউটি ঘাড় নেড়ে বলে, "কিছু মনে করো না কাকিমা। গড়ে পিটে নিলে আর তোমায় নিল কোথায়? পড়তে তোমার ভালো লাগতো না রাঁধতে? তুমি যে বললে গল্প করতে ভালোবাসতে, তারা তোমার সঙ্গে গল্প করতো না? তুমিও তো মানিয়েই নিয়েছো তাহলে। আমাদেরই মত।"মনে পড়ে এক দুপুরের কথা। সার্জারির পর বেশ কিছুদিন কেটেছে। হেঁটে চলে বেড়ানো, ঘাড় ঘোরানোর নিদান আছে তখন। ওয়ার্ডের মধ্যে দুপুরে ড্রাই রোস্ট হওয়ার থেকে মন ঘোরাতে এদিক ওদিকে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম। চোখে পড়ল, এক নম্বর বেডের শিশুটির মা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। একটু দূরে, জানলা দিয়ে চোখের সমান্তরালে ঝাঁ ঝাঁ দুপুরের রোদে ভিক্টোরিয়ার পরী লীলায়ীত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। রুক্ষ চুল হাওয়ায় উড়িয়ে কোলে এক নম্বর বেডের বাচ্চা নিয়ে তার মা সেই মার্বেলের পরী দেখছে। হঠাৎ পিছু ফিরে দু চোখে দু টুকরো রোদ মাখা হাসি হেসে বললো, "ছুটি হবে যেদিন, আমরা সবাই যাব, বুঝলে? আবার তো নিশ্চই আসবো না"। বড্ড মায়া হলো। আর তার পরমুহূর্তেই খুব লজ্জিত হলাম। "মায়া" হলো! কি স্পর্ধা আমার! ভিক্টোরিয়া আমার কাছে সস্তা, সেই সস্তা জিনিসের প্রতি আকুলতা দেখেছি বলেই তো "মায়া" হলো। তার বদলে যদি উজ্জ্বল হেসে কেউ বলতো, "হাওয়াই দ্বীপ যাবে, বাকেট লিস্ট আইটেম", তখন হতো অক্ষমের জ্বালা। তাড়াতাড়ি সরে চলে এলাম জানলা থেকে।সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা আমার প্রথমবার। জানা ছিল না, খাবারের থালা-বাটি-গ্লাস নিজেকে নিয়ে যেতে হয়। প্রথমদিন সবাই খাবার নিতে যাচ্ছে যখন, সেই সারির মধ্যে আমি খালি হাতে বেকুবের মত দাঁড়িয়ে। বেশ কটা মাথা এগিয়ে এলো। "থালা আনোনি বুঝি?" প্রশ্নের উত্তরে ভ্যাবলা মুখে ঘাড় নেড়ে চুপ থাকি। মনে মনে হিসেব করছি তখন। রাতটা উপোষ, কাল দুপুরের খাবারটা ম্যানেজ দিতে হবে ইত্যাদি। হিসেব বেশিক্ষণ করতে হলো না। অনেকগুলো হাত থালা, বাটি, সাবান নিয়ে চলে এলো। সঙ্গে উৎসাহব্যঞ্জক দু চারটে কথা। "কিছু ভেবো না, এখানে সব পেয়ে যাবে", "খাবার এখানে ভালই দেয়। ডিম, দুধ। তরকারিটায় অবশ্য টেস্ট নেই। ওটুকু মানিয়ে নিলেই হলো"। মানিয়ে নেওয়ার ওস্তাদিতে মেয়েদের মার খাওয়ার সম্ভাবনা বরাবরই কম। খাবারটা নিয়ে তারা যত্নে কিছুক্ষন রেখে দেয়। তিনবেলা ডিম, সকালে দুধ - যে যত বড় গ্লাস নিয়ে যাবে সেই মাপে। সুগার থাকলে আলাদা সবজি। ভোর থেকে খেটে, তারপর বেলা তিনটের সময় জল ঢালা খাবার নয়, বিশ্রামে থেকে খাওয়া। এই ভোর থেকে খেটে বেলা গড়িয়ে খাওয়ার কথা আমি বারবার শুনেছি বাজারের মাসী, পার্লারের মেয়ে, মফস্বল থেকে ট্রেনে করে শহরে ঠিকে কাজ করতে আসা মেয়েদের থেকে।আমার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেই শুনে হাসপাতালের এতদিনের পরিচিত মেয়েগুলো হায় হায় করে ওঠে। মেয়েদের ফেরার রাহা খরচ এবং কত দিনের যেন ওষুধের খরচ দেওয়া হয় কার্ড থাকলে। আমি পাব না বলে ওরা দুঃখী। ওদের ম্লান মুখ দেখে আমার মুখও দুঃখী দুঃখী হয়ে যায়। ওই টাকা ক'টা চেয়ে, বারবার তাগাদা দিয়ে, হাত পেতে নিতে হয় না। ওই টাকা না থাকলে সমস্ত ঘাড়টা মুড়িয়ে ব্যান্ডেজ থাকলেও গেদে লোকাল ধরতে হয়।ওলা উবের চড়া, সরকারি হাসপাতালকে বাস স্টপেজের নাম বানিয়ে ফেলা শহরবাসী ঠিক করে কোন ভাতা শিক্ষিত, "মহার্ঘ", অধিকার আর কোন ভাতা অশিক্ষিত, কদর্য, ভিক্ষা, লোভ। অর্থনীতির তথ্য মুখস্থ রাখা শহরবাসী প্রশ্ন করে না নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ওষুধে কেন gst বেশি, কেন এত দাম।Sskm এ একদিন এক বয়স্ক মহিলা আমার সামনে এক শহুরে পোশাকের ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এক্স রে কোন দিকে হবে। ছেলেটি বেখেয়ালে উত্তর দেয়নি। প্রৌঢ় মহিলা সরে যেতে যেতে নিজের মনেই বলেছিলেন, পড়াশুনোওয়ালা লোকদের সঙ্গে কেন যে কথা বলতে যাই।যারা আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আলাদা হয়ে যেতে চায়, যারা আমাদের প্রিয় দেশ বা রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় গায়ের জোরে তারা "বিচ্ছিন্নতাবাদী"। মনের জেদে যারা মানুষকে দূরে ঠেলে দেয়, অদৃশ্য সীমারেখা টেনে দেয়, প্রাচুর্যের মধ্যে বসে নিজেকে শ্রমিক বলে আর পছন্দের সরকার ভোট না পেলে সৎ, পরিশ্রমী সহনাগরিকদের ভিখারী দাগিয়ে তৃপ্তি পায় - এই দোআঁশলা যাপনকে কি বলে?
    দুয়ারসিনি - নরেশ জানা | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়দুয়ারসিনি১৮ নম্বর জাতীয় সড়কের যে আন্ডারপাশের গা ঘেঁষে আমরা গলুডির গায়ত্রী গেস্ট হাউসে পৌঁছেছিলাম সেই জায়গা সমেত পুরো জায়গাটার নামই আসলে মহুলিয়া। গলুডিকেও অনেক স্থানীয় মানুষ মহুলিয়া বলেই ডাকে। ফের সেই আন্ডার পাশ গলে একটা ন্যাড়া পাহাড়কে বাঁহাতে রেখে জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোড ধরে আমাদের কয়েক ফারলং যেতে হল ওই ন্যাড়া পাহাড়টাকে ঘেঁষে। এই ন্যাড়া পাহাড়ের গায়েই গালুডি থানা। তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বুঝলাম জাতীয় সড়কের সদ্য সম্প্রসারনের জন্য পাহাড়টা কিছুটা কাটা হয়েছে। আমরা পাট মহুলিয়া থেকে বাঁদিক ধরব। এই রাস্তাটি নরসিংহপুর রোড নামে পরিচিত। মাত্র ২৫ কিলোমিটারের ঝকঝকে তকতকে পিচের রাস্তা। কোথাও কোথাও সামান্য বাঁক। মাঝেমধ্যে জনবসতি। তাই ঝকঝকে তকতকে রাস্তা হওয়া সত্ত্বেও ওই বাঁক আর জনবসতির কারণে নিয়ন্ত্রিত গাড়ি ছোটানোই উচিৎ। রাস্তার দুধারেই বনদপ্তরের লাগানো আম জাম শিশু বহড়া সেগুনের হালকা ঘন জঙ্গল। তার ভেতরে চরে বেড়াচ্ছ গৃহপালিত পশু সকল। যে কোনও সময় তারা রাস্তায় ছুটে উঠে আসতে পারে। প্রচুর মানুষ এই পথে ঝাড়খন্ড বাংলার মধ্যে যাতায়াত করছে, বাইক ছোটাচ্ছে। এখানে হেলমেট পরার তেমন চল নেই দেখলাম। সুতরাং চালককে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলুন। বাইরে বেড়াতে এসে খামোকা উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে সব আনন্দই মাটি। আমি তাই প্রথমেই গাড়ির চালকের টিউনটা বেঁধে দিলাম। পরিষ্কার বললাম, গাড়ি চালাতে এসে তুমিও আমাদের ভ্রমনসঙ্গী। দুচোখ ভরে প্রকৃতির এই রূপ দেখো এবং সেই ভাবেই গাড়ি চালাও যাতে তুমি সবকিছু ভালো ভাবে দেখতে পারো। আরও বললাম, জনপদগুলির ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তুমি সেই এলাকার মাইলস্টোন, সাইনবোর্ড ইত্যাদি থেকে এলাকার নামটি জেনে আমাকে বলবে আমি নোট নেব। যদি কোনও জনপদে সাইনবোর্ড দেখে নাম না জানা যায় তবে গাড়ি থামিয়ে গ্রামের কারও কাছ থেকে নাম জেনে নিতে হবে। এভাবেই গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়া গেল। গাড়ি ছুটল পাটমহুলিয়া থেকে ভালুপুলিয়া, বড়বিল, জোড়িশা, চোরিন্দা, খড়িয়াডিহি, বাগালগোড়া। বাগালগোড়া পেরুলেই দেখা যাবে ডানহাতি একটি পাহাড় যেন ছুটে আসছে গাড়িটিকে ধরার জন্য কিন্তু মাঝে মধ্যে ঘন জঙ্গল তাকে বিভ্রান্ত করছে। উল্লেখ্য ততক্ষনে বনদপ্তরের লাগানো কৃত্তিম অরন্যের বদলে আদি অনন্তকালের অরণ্য আমাদের ঘিরে ফেলছে। শাল-পিয়াল-সেগুন মহুল-কেন্দু-গাব- পলাশ-বট- বহডা- পাকুড়-‌ অশ্বত্থ দাঁড়িয়ে আছে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। বাগালগোড়ার পর কাশপানি। এখানে ঝাড়খন্ড পুলিশের একটি আউট পোস্ট বা ফাঁড়ি রয়েছে। জায়গাটা ঝাড়খন্ড আর পশ্চিমবাংলার সীমান্ত ঘেঁসে তাই এখানে ঝাড়খন্ড পুলিশের ওই শেষতম চৌকিদারী ব্যবস্থা। এই কাশাপানি থেকে রাস্তার চরিত্র বদলে যাচ্ছে রাস্তা উঠছে আর নামছে। যদি গাড়ির সামনে মানে চালকের পাশে বসে থাকেন তবে কখনও কখনও আপনার এও মনে হতে পারে এরপর আর রাস্তা নেই, গাড়িটা বোধহয় এবার সামনের অনন্ত খাদে ঝুপ করে পড়ে যাবে। পরের দুটি গ্রামের নাম মনে রাখুন তিতুলডাঙা এবং আসনাপানি। যে পাহাড়টা আপনাকে ছোঁয়ার জন্য এতক্ষণ ছুটে আসছিল আর ঘন জঙ্গলের জন্য এদিক ওদিক বিভ্রান্ত হচ্ছিল সে এবার আপনাকে ধরে ফেলল প্রায় কিন্তু একটা ছোট্ট তিরতিরে নদী তাকে আটকে রেখেছে। ঠিক যেই আপনি ঝাড়খন্ডের শেষগ্রাম আসনাপানি পেরিয়েছেন অমনি পাহাড়টা আপনাকে ধরে ফেলে গাড়ি সমেত কাঁধে তুলে নিয়েছে। নদীটা বেমালুম হারিয়ে গেল! এই নদী আর পাহাড়ের লুকোচুরি দেখে আর গাড়িতে থাকতে মন করলনা। ঝাড়খন্ডের ভাষায় আমি আমাদের গাড়ির চালক মৃত্যুঞ্জয়কে বললাম, "আ্যই গাড়ি রোকো!" সে হকচকিয়ে ব্রেক কষল। সবাইকে বললাম, 'উতরো , আব হামলোগ পয়দল চলেগা!' সবাই নেমে এলো। মৃত্যুঞ্জয়কে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যেতে বললাম। পেছনে ফিরে তাকালাম আদিবাসীদের ছবির মত সাজানো গ্রাম আসনাপানির দিকে। টালি কিংবা এ্যাসবেস্টস দিয়ে ছাওয়া বাড়ি গুলোর দেওয়াল ছবি এঁকে সাজানো। কী সুন্দর কী অপূর্ব আদিবাসী রমনীদের সেই আঁকা! কেউ এঁকেছেন লতাপাতা কেউ আবার সোজা সমান্তরাল নানা রঙের রেখাচিত্রের মধ্যে ফুটিয়েছেন আল্পনা। কারও দেওয়ালে চরে বেড়াচ্ছে ময়ুর। কারও দেওয়ালে ঘাসের দানা খুঁটে খাচ্ছে কোয়েল তিতির, সরু ঠ্যাংয়ে ভর দিয়ে লম্বা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে ডাহুক। রাস্তায় নেমেই ঘড়ির কাঁটায় নজর দিয়ে দেখে নিয়েছি বেলা তখন দশটা বেজে পনেরো। ঝাড়খন্ড আর বাংলার আকাশ থেকে তখনও ঘূর্ণাবর্তের ছায়া কাটেনি বটে কিন্তু এখন এই মুহূর্তে সোনার মত রোদ গলে পড়ছে। গুগল ট্র্যাকার দেখে ঝিলমিল আর রাগিণী আমাকে জানালো আমাদের হাঁটতে হবে এক কিলোমিটার পথ। মৃত্যুঞ্জয় গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে গেছে, গীয়ার নিউট্রাল করে শব্দহীন গাড়ি নেমে গেছে সুন্দরী দুয়ারসিনির পথে। আমাদের সাথেও রয়েছে চার সুন্দরী। রুশতি আজ জিন্স্ পরেছেন। নীল ফেডেড জিন্সের ওপর লাল আর কালো স্ট্রাইপ দেওয়া সাদা শার্ট। মেয়ে রাগিণী আজ পুরোপুরি কালো পোশাকের আশ্রয় নিয়েছে। স্লিভলেস ঝালর দেওয়া কালো টপ আর পালাজো। রিয়ানের আজ কমলা আশ্রয়। কলার দেওয়া হাঁটু ছাড়ানো কুর্তি আড়াল করেছে কালো চোস্তা পাজামাকে। ঝিলমিল একটা মেরুন পাজামার ওপর কালো টি শার্ট চড়িয়েছে। আসনাপানি থেকে কিছুটা এগিয়ে এসেই একটা বাঁক নিয়ে ঢাল শুরু হল আর সেই ঢালের মুখেই পাহাড়টা কেটে রাস্তা নামছে দুয়ারসিনির দিকে। কাটার ফলে দু'পাশে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পাহাড়টার মধ্যে দিয়ে গলে যাচ্ছিলাম আমরা। তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এতক্ষনে ছুঁতে পারলাম তাকে। অজস্র বুনো ফুল গাছ এমনকি লজ্জাবতী লতাও পাহাড়ের গা থেকে রাস্তার ওপর হামলে পড়েছে। শতদল আর রুশতি ছবি তুলছে, ক্লিক, ক্লিক। পাহাড় কাটা দুয়ারের মধ্যে দিয়ে আমরা দুয়ারসিনির পথে নেমে যাচ্ছি। রাস্তার ওপর আয়রনের বড় হোর্ডিং প্লেট আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছি আমরা । রাস্তার পাশে একটা কংক্রিটের বোর্ড আমাদের স্বাগত জানালো আর অমনি ডান হাতে নদীটা ঝাঁপিয়ে পড়ল। নদীটা এখানে একটু প্রশস্ত। তার ওপর ছোট একটা কংক্রিটের রেলিংয়ের দেওয়া সেতু, সেতুটা তৈরি করা হয়েছে নদীটাকে দেখার জন্য। শুধু দুয়ারসিনি নয় তার সাথে এই নদীটাকেও দেখার জন্য পর্যটকরা আসেন।নদীটার নাম সাতগুরুং। কেন এমন নাম? জানা গেল এই পাহাড়টাকে সাত জায়গায় কেটে নদীটা এঁকে বেঁকে এগিয়েছে বলে নদীটার এই নাম। আগেই বলেছি যে রাস্তাটা দিয়ে আমরা যাচ্ছি তার নাম নরসিংহপুর রোড। নরসিংহপুর ঝাড়খন্ডে অবস্থিত বাংলা সীমান্তের একটি বধির্ষ্ণু গ্রাম। গঞ্জের মত। এখন যেমন পাহাড়টা কেটে এই সোজা সাপ্টা রাস্তাটা তৈরি হয়েছে। আগে পাহাড়ের কোলে কোলে অনেকটা ঘুরে ঘুরে আসনাপানি থেকে নরসিংহপুর পৌঁছাতে হত। সেই পথে সাতবার পেরুতে হত নদীটাকে। এখন অবশ্য মাত্র দু'বার নদীটাকে পেরুতে হয়। বলতে বলতে রাস্তার ওপর প্রথম সেতুটা চলে এল। একটু আগে যে সেতুটার কথা বলেছি সেটা কিন্তু রাস্তার ওপরে ছিলনা, ছিল রাস্তার পাশে নদীটার ওপর, নদীটাকে দেখার জন্য। যদি কোনও দিন এই রাস্তায় আসেন তবে ওই সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে নদীটার দিকে তাকাবেন। দেখবেন তিরতির করে বয়ে চলা নদীটির বুকে খেলা করছে অজস্র ছোট ছোট মাছ। অথবা যদি অন্য পথে দুয়ারসিনি আসেন তবে একটু এগিয়ে এসে এই নদীটাকে দেখে যাবেন। আর অবশ্যই ঘুরে যাবেন আসনাপানি গ্রাম। বাংলার দিক থেকে আসলে আসনাপানি হবে ঝাড়খন্ডের প্রথম গ্রাম। যাই হোক এবার এবার আমরা দুয়ারসিনিতে প্রবেশ করব তার আগে রাস্তার ওপর সেতুটার ওপর উঠে আসতেই গড়গড় শব্দ শুনে বাঁদিকে তাকাতেই দেখলাম প্রবল বিক্রমে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে নামছে সাতগুরুং। বাঁদিকে যেদিক থেকে নদীটা নামছে সেই দিকের খাতটা একেবারে ঘন জঙ্গলে ভর্তি। ত্রিস্তরীয় জঙ্গল, নিচে গুল্ম ও বিরুৎ জাতীয় গাছ গাছালি। এরপর মাঝারি গাছ যেমন কুল, গাব, কেঁদ, বুনো আমলকি ইত্যাদি। একদম ওপরে মাথা তুলে রয়েছে মহুল বহড়া হরিতকির, বট, অশ্বস্থ, পাকুড়, শাল, পিয়াশালের দল। বর্ষার জল পেয়ে শেকড়ে ও পাতায় তরতরিয়ে বেড়ে উঠেছে গাছগুলো। ঝাঁপিয়ে পড়া ডালপালা আর গাঢ় সবুজ কালচে পাতা গ্রাস করে রেখেছে পুরো নদী খাতটাই। ওদিকের নদীটা তেমন করে দেখা যায়না শুধু তার গর্জন আর কলধ্বনি জানিয়ে দেয় সে আসছে, এসেই চলেছে। সেতু পেরিয়েই আমরা ঢুকে পড়লাম দুয়ারসিনিতে। ডান হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেবী দুয়ারসিনির মন্দির। একসময় দেবী প্রস্তরিভূত হয়ে খোলা আকাশের নিচেই বিরাজ করতেন। হালে মন্দির হয়েছে। মন্দির ছাড়িয়ে বাঁহাতে ১৮৫ মিটার উঁচু হিলটপ। আঁকাবাঁকা পথে দিব্যি উঠে যাওয়া যায় ওপরে। উঠলে দেখতে পাওয়া যাবে ঝাড়খন্ড ও বাংলার অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য! আশেপাশের দু - চার কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাম, দুরে দুরে মাথা তুলে থাকা ছোট ছোট ডুংরি বা টিলা গুলি। দেখতে পাওয়া যায় এসবের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা সাতগুরুং নদীর আঁকাবাঁকা দীর্ঘবাহিনী স্রোত টিকে। ঠিক যেন একটা রুপোলি সুতো অগোছালো এলোমেলো পড়ে রয়েছে।যদিও আমাদের এ যাত্রায় আমরা হিলটপে ওঠার ঝুঁকি নেইনি। কারন পুরো রাস্তাটাই ঝোপ ঝাড়ে ভর্তি। ওপরে ওঠার রাস্তা একেবারেই পরিষ্কার করা হয়নি। সাপ খোপের ভয় রয়েছে। এলাকাটি কংসাবতী দক্ষিণ বন বিভাগের অন্তর্গত বান্দোয়ান ২ বনাঞ্চল বা রেঞ্জের কুঁচিয়া বিটের অধীনে। বনদপ্তরই এই হিলটপ রক্ষনাবেক্ষণ করে থেকে। অদ্ভুত তাদের উদাসীনতা। এখানে বনদপ্তরের গোটা তিনেক কটেজ আর একটি ডরমিটরি রয়েছে। পুরুলিয়া জেলার বন্দোয়ান থানার মধ্যে পড়ে এলাকাটা। কেউ চাইলে বন্দোয়ান থেকে অটো কিংবা ট্রেকার ধরে আসতে পারেন। বন্দোয়ান থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। আমি নিজে এই হিলটপে উঠেছিলাম ১৬ বছর আগে। তখন জায়গাটা অবশ্য বন দপ্তরের হাতের বাইরে চলে গেছে। ২০০৩ অক্টোবরে মাওবাদীরা খুন করেছে বন্দোয়ানের অফিসার ইনচার্জ নীলমাধব দাসকে। ২০০৫ সালের শেষ দিনটিতে এই থানারাই ভোমরাগোড়া গ্রামে মাওবাদীরা পুড়িয়ে মারে সিপিএম নেতা রবীন্দ্রনাথ কর ও তাঁর স্ত্রী আনন্দময়ীকে। এই সময়েই কাঁকড়াঝোরের মত ল্যান্ডমাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় দুয়ারসিনি বন বাংলোটিও। ফলে বনদপ্তর তখন নাজেহাল। ঠিক এই সময় নিজের পেশার তাগিদে আমি দুয়ারসিনি এসেছিলাম। না, একটু ভুল বললাম দুয়ারসিনি আসাটা আমার পেশাগত তাগিদ ছিলনা আমি আসলে এসেছিলাম বকডুবা গ্রামে, এক মাওবাদী আর্ম স্কোয়াড বাহিনীর নেত্রীর বাড়িতে। বকডুবা এখন ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে পড়লেও তখন জেলা ভাগ হহয়নি। তখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যেই তার অবস্থান আর অদ্ভুতভাবে ওই গ্রামটায় যেতে গেলে পুরুলিয়ার কয়েকটি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হত। তো বকডুবায় গিয়ে আমি যখন দেখলাম দুয়ারসিনি এখান থেকে এত কাছে আমি লোভ সামলাতে পারলাম না। এই ঘটনাটা বলার কারন এটাই যে আপনি যদি বাংলা থেকে বিকল্প একটা পথে দুয়ারসিনি যেতে চান তবে এই সুন্দর রুটটা আপনার কাজে লাগবে। সেদিন আমার বাহন বাজাজ প্লাটিনা, একশ সিসির বাইক। সকাল ৬টায় আমি খড়গপুর থেকে বাইক স্টার্ট করে হাওড়া মুম্বাই জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলি ঝাড়গ্রাম হয়ে বেলপাহাড়ি অবধি নব্বই কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলাম পাক্কা আড়াই ঘন্টায়। এবার যেতে হবে বেলপাহাড়ি থেকে ভুলাভেদা , চাকাডোবা হয়ে বাঁশপাহাড়ি ছাব্বিশ কিলোমিটার। এই পথে পর্যটকদের জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নাম হল তামাজুড়ি আর লালজল। নামগুলো কী সুন্দর তাইনা? তামাজুড়ির সঙ্গে তাম্রলিপ্ত নামটির কোনোও সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন? ভ্রমন কাহিনীতে ইতিহাস পুরাতত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে বেশি আলোচনা করলে হয়ত অনেকে বিরক্ত হতে পারেন তাই অতি সংক্ষেপে বলে রাখি তামাজুড়ি একটি প্রাচীন জনপদ। কত প্রাচীন তা কল্পনা করা মুশকিল। ইতিহাস বলছে তাম্রলিপ্ত বন্দরের অস্থিত্ব ছিল যীশু খ্রীষ্টের জন্মের অন্তত তিনশ বছর আগে। এই বন্দর থেকে তামা রপ্তানি করা হত বলেই নাম তাম্রলিপ্ত। আমরা আগেই জেনে গেছি দলমা পাহাড় রাশি জুড়ে খনিজ সম্পদের ঐর্শ্বয্য। দলমা পর্বত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য স্থানের মত এই তামাজুড়ির কাছাকাছি তামার আকরিক পাওয়া যেত। সেই জায়গার হদিস না মিললেও তামাজুড়ি গ্রামের পেছনে আজ থেকে চল্লিশ বছর আগেও দেখা গেছে সেই সব তামার আকরিক থেকে তামা নিষ্কাশনের নির্দশন। ঠিক যেমন করে গরুর গাড়ির চাকায় লোহার বেড় পরানোর আগে লোহার বৃত্তাকার পাতটিকে গরম করার জন্য বেড় বরাবর আগুন জ্বালানো হয়। চাকায় বেড় পরানোর পর বৃত্তাকার আগুনের ছাই পড়ে থাকে ঠিক তেমনি অনেকগুলি বৃত্তাকার তাম্র আকরিকের গলিত অবশিষ্ট এক সময়ে দেখা যেত। কালের নিয়ম আর আমাদের অবহেলায় তাম্রাশ্ম যুগের সেই অমুল্য নির্দশন ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি সংরক্ষণ করা থাকত তবে সারা পৃথিবী থেকে গবেষক পর্যটক আসতেন ওই অবশেষ দেখার জন্য। আমি তামাজুড়ি গ্রামে প্রথম গেছিলাম ২০০০ সালে। তখন এক ৫০ বছর বয়সী মানুষ আমাকে বলেছিলেন তিনি তাঁর দশ বারো বছর বয়সে ওই জায়গায় গবাদি পশু চরাতে গিয়েও সেই বৃত্তাকার গলিত অবশেষের নির্দশনগুলি দেখেছিলেন। আমি তাঁকে নিয়ে সেগুলি খোঁজার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু ঝোপ জঙ্গলে ভরে গেছে সেই সব জায়গা। হয়ত ভূমিক্ষয়ে বিলীন হয়ে গেছে। ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম নিয়ে যাঁরা এখন কাজ করছেন তাঁদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি তাঁরা উদ্যোগী হয়ে এর ক্ষীনতম রেখাচিত্র তো উদ্ধার করতে পারেন তবে তা পর্যটনের জন্য সম্পদ হয়ে যাবে।তামাজুড়ি ছাড়িয়ে বাঁশপাহাড়ির রাস্তায় মাজুগড়া, জামতলগড়া পেরিয়ে পড়বে শিয়ারবিন্দা বলে একটি পরিচিত জায়গা। এই রাস্তার বাঁদিকের ঘন বনানীর মধ্যে দিয়ে যে পাহাড়টি আপনার সাথে সাথে চলবে তার নাম লাখাইসিনি। এক অসম্ভব চড়াই ভেঙে। আপনি পৌঁছে যাবেন শিয়ারবিন্দাতে। এখানে দাঁড়িয়ে পড়ুন এখান থেকে ডান দিকে যে পাহাড়টি দেখতে পাবেন তার নাম লালজল। পাহাড়ের নিচে ছোট্ট আদিবাসী গ্রামটিও লালজল নামেই খ্যাত। ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন কারণে আমি তিনবার এই গ্রামে এসেছি। শেষবার ২০০৯ সালে। এই গ্রামেও একজনকে খুন করেছিল মাওবাদীরা। সেই কারণে একবার এসেছিলাম। ২ বার পাহাড়টায় চড়েছি। একটা অপরিসর ছোট্ট গুহা আছে। কিছুকাল এক সাধু থাকতেন ওই গুহাতে। আমি গুহামুখ অবধি গেছি কিন্তু ভেতরে ঢুকতে সাহস পাইনি। আমার এক সমাজকর্মী বান্ধবী ঝর্ণা আচার্য্য বলেছিলেন গুহার ভেতরে নাকি কিছু চিত্র রয়েছে। আমি সত্য মিথ্যা জানিনা। তবে বর্ষাকালে ওই পাহাড় থেকে একটি ছোট ধারা নেমে আসে তার জল সত্যি লাল। সেখান থেকেই জায়গাটার নাম লালজল। রাতে সেই জলধারায় দেখা যায় ছোট ছোট পুঁটি কচ্ছপ খেলে বেড়াচ্ছে। সারা বছর তারা কোথায় থাকে কেউ জানেনা।এরপর ফের মুল রাস্তায় ফিরে চাকাডোবা থেকে বাঁশপাহাড়ি মোড় থেকে ওড়লি হয়ে বগডুবা গ্রামে গেলাম। বগডুবায় কেন আসা আগেই বলেছি। মাওবাদী নেত্রী জাগরি বাস্কের বাড়ি এখানে। সেখানে কাজকর্ম সেরে সোজা চলে গেলাম লাখাইসিনি পাহাড়ের কোল ঘেঁসে বুড়িঝোর গ্রামের মধ্যে দিয়ে নরসিংহপুর হয়ে লুকাপানি। পাঠক, ফের ফিরে যাচ্ছি আজকের দুয়ারসিনিতে। আমরা গালুডি থেকে যে রাস্তাটি ধরে এসেছি তার নাম নরসিংহপুর রোড। আমি ১৬বছর আগে বুড়িঝোর হয়ে সেই নরসিংহপুরেই পৌঁছে গেছিলাম। তারপরের গ্রামের নামই লুকাপানি। আসলে দুয়ারসিনি বলে কোনও গ্রাম নেই। দুয়ারসিনি হলেন গ্রামের দুয়ারে বা প্রবেশ পথে অবস্থিত দেবী। তিনি গ্রাম রক্ষিকা। গ্রামের ভেতরে কলেরা, ওলাওঠা, বসন্ত ইত্যাদি মহামারী প্রবেশ করতে দেননা। যদি সেই ধরনের মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটে দেবী তাদের তাড়িয়ে দেন। আমাদের যেমন শীতলা, চন্ডী ইত্যাদি দেবী বা মা রয়েছেন আদিবাসী জনজাতি গোষ্ঠীর তেমনি লৌকিক দেবী রয়েছেন। দুয়ারসিনি তেমনই এক দেবী। এখানে সিনি অর্থে দেবী। যেমন লাখাই পাহাড়ে অবস্থান করেন লাখাইসিনি। সেইভাবে বেলপাহাড়ির একটি পাহাড় গাডরাসিনি, একটি জলপ্রপাত ঘাঘরাসিনি নামে পরিচিত। সমতলেও বউলা গ্রামে অবস্থান করে দেবী বউলাসিনি হয়েছেন ট্রেনে পুরী যাওযার পথে বেলদার পরের স্টেশনের নাম নেকুড়সেনি আসলে নেকড়াসিনি থেকে আসা। দেবী নেকড়ের হাত থেকে অধিবাসীদের রক্ষা করতেন কিনা জানা নেই। তবে মানত হিসাবে দুরারোগ্য ব্যাধি আক্রান্তরা কিংবা মনস্কামনা পূরনের জন্য দেবীর থানে নিজের পরিধেয়র অংশ বিশেষ বা নেকড়া বেঁধে আসেন। যাইহোক দুয়ারসিনিতে এসে গালুডি গেস্ট হাউসের ম্যানেজার দেব কুমার সোনির দাওয়াইটা টের পাওয়া গেল। আমাদের পুরো দলটাই ঝাঁপিয়ে পড়ল রবীন্দর মাহাত- র মাহাত হোটেলে। গরম গরম সিঙ্গাড়া, গজা, জিলিপি, বালুসাই সাঁটাতে লাগল হাউমাউ করে। বুঝলাম শুধু সোনির দেওয়া সেই জল মাহাত্ম্য নয় সঙ্গে শেষের এক কিলোমিটার হাঁটার ঝক্কিটাও কম ছিলনা। খাবার শুধু খাওয়াই নয়, পোঁটলা করে বাঁধাও হল। দারুন নাকি টেস্ট। নাকি বললাম এই কারনেই যে আমি চা ছাড়া আর কিছু খাইনি। দুয়ারসিনি থেকে মাত্র চার কিলোমিটার গেলেই কবি প্রাবন্ধিক কমল চক্রবর্তীর ভালো পাহাড়। একটা আস্ত পাহাড় কিনে কমলদা সেখানে বসবাস করেন। কলকাতা কিংবা জামসেদপুরের বন্ধুরা গিয়ে সেখানে আড্ডা দেন। আগে থেকে বলে কয়ে আপনারাও যেতে পারেন। নামমাত্র খরচে দারুন আতিথেয়তা মিলবে সঙ্গে নিরাপদ পাহাড়বাস। কোনোও পূর্ণিমার রাতে জোৎস্নায় স্নান করতে দুয়ারসিনি অথবা ভালো পাহাড়কে বেছে নিতে পারেন। এযাত্রায় আমাদের ভালো পাহাড় দর্শন হবেনা কারন আমাদের ঘাটশিলায় যেতেই হবে। ঘাটশিলার একপ্রান্তে ডাহিগোড়াতে আরণ্যক স্রষ্টার পুণ্যভূমি গৌরিকুঞ্জ না দেখে গেলে দলমা তীর্থ যাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাছাড়া ঝিলমিল আর রাগিণীকে পাহাড়ে চড়ানো হয়নি এখনও! ওদের জন্য প্ল্যান করা আছে ঘাটশিলা রাজাদের প্রমোদ বিহারের যায়গা চিত্রকুট পাহাড়।ওরা যখন মাহাত হোটেলে খাচ্ছিল আমি তখন মালিক রবীন্দরের সঙ্গে গল্পে জমে গিয়েছি। আগেই বলেছি গ্রামটার নাম লুকাপানি। যে সাতগুরুং নদীটাকে আমরা হাফ কিলোমিটার আগে আসনাপানি পেরিয়ে পেয়েছিলাম তাকেই দেখি দুয়ারসিনির গায়ে ঘাপটি মেরে শুয়ে রয়েছে। এখানে তার স্রোত ক্ষীণ। একটা ছোট সেতু পেরুলেই লুকাপানি গ্রাম। রবীন্দরের বাস সেই গ্রামে। থানা যে বান্দোয়ান তা আগেই বলেছি। পোষ্ট অফিস কুঁচিয়া। রবীন্দর জানালো মুন্ডা মাহাত সাঁওতাল মিলিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে খান পঁচিশেক ঘর রয়েছে তাঁদের গ্রামে। দুটি গ্রামের নামের মধ্যে একটা অদ্ভুত সদৃশ্য এবং বৈপরীত্য আমাকে আকৃষ্ট করে! দুটো গ্রামেই পানি আছে বটে কিন্তু একজায়গায় তা অত্যন্ত সহজ বা আসান অন্যত্র তার কঠিন বা গুহ্য, লুকানো। হতে পারে রবিন্দরদের গ্রামে ক্ষীণস্রোতা সাতগুরুং থেকে সেই পরিমাণ জল পাওয়া যেতনা যা আসানে পাওয়া যেত আসনাপানি গ্রামে। গ্রীষ্মে প্রবল জলকষ্টে রবিন্দরদের পূর্ব পুরুষদের জলের জন্য ছুটতে হত আসনাপানিতে। আসনাপানির আগের গ্রামটার নাম মনে আছে? সেই যে যেখানে ঝাড়খন্ড রাজ্যের শেষ ফাঁড়িটা ছিল। কাশপানি! পাহাড়ী দেশে কত মূল্যবান এই জল বা পানি! পানির উৎস থেকেই গ্রামের নাম। যাইহোক আগেই বলেছি সাতগুরুংয়ের পাহাড় কেটে বয়ে যাওয়া সাতটি স্থানের মধ্যে দুটি স্থান আমরা দেখতে পাবো। লুকাপানি ঢোকার মুখে সেই দ্বিতীয় স্থানটাও দেখে নেওয়া গেল। এই যাত্রায় আমাদের ধারাগিরি ফলস্ দেখা হয়নি শুনে রবীন্দর আমাদের একটা পথ বাতলালো। লুকাপানির পর নরসিংহপুর, কাশিডাঙা, তেরাপানি হয়ে ধারাগিরিতে নেমে যেতে পারি। তারপর বসদেরা হয়ে ফের বুরুডি এবং সেখান থেকে ঘাটশিলা। তেরাপানি নামটা শুনে চমকে উঠতে রবীন্দর বলল, আসলে ওখানে গিয়ে আবার সাতগুরুংয়ের সঙ্গে দেখা হবে আপনাদের। সেটা অবশ্য সরাসরি সাতগুরুং নয় তার একটা শাখানদী। ধারাগিরিতে সেই ঝর্ণা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে কীনা! রাস্তাটা মন্দ ছিলনা, ঝাড়খন্ড আর বাংলার সীমান্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাহাড়ের কোলে কোলে যাওয়া। এই গ্রামটা ঝাড়খন্ডের তো পরের গ্রামটা বাংলার ফের পরের দুটো গ্রাম ছাড়িয়ে ঝাড়খন্ডের গ্রাম। শীতকাল ঝুঁকিটা নেওয়াই যেত কিন্তু গত দু'দিনের ব্যাপক ঝড় বৃষ্টিতে পথের কোথায় কী হাল হয়ে আছে বোঝা মুশকিল। যদি ধারাগিরি পর্যন্ত চলেও যাই তারপরের যে দু কিলোমিটার রাস্তা বেহাল শুনেছি গতকাল। ওই দু কিলোমিটার গাড়ি না গড়ালে ফের এই দুয়ারসিনি উঠে এসে ফিরতে হবে। তাছাড়া ট্যুরিস্ট পার্টি ভেবে আমাদের যে গাড়িটা গছানো হয়েছে তা চড়ার পক্ষে আরামদায়ক হলেও পাহাড়ি রাস্তায় চলার জন্য আরামদায়ক নয়। সুতরাং ওই পথ বাতিল করলাম। চেনা পথেই ফেরা ঠিক হল। শতদল দুয়ারসিনির সেই মাইন দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা বন বাংলোটির বেশ কয়েকটা ছবি তুলে রাখল। রবীন্দরের মাহাত হোটেলের ছেলেটা তখন হোটেলের পেছনে বাঁশের ঝুড়ি গরম ভাতের ফ্যান ঝরাচ্ছে। সুসেদ্ধ ভাতের সুন্দর গন্ধে ম ম করে উঠছে জায়গাটা। রুশতি আবার হায় হায় করে উঠলেন, 'ইস্, ভাত পাওয়া যায়! আগে জানলে....!' রবীন্দর বিনীত ভাবে হাত কচলে বললেন, 'একটু থেমে যান আইজ্ঞা, সমস্ত বন্দোবস্ত আছে, কুঁকড়া মাইরে ঝোল করে দুব।' কুঁকড়া বা মোরগ মেরে ছাড়িয়ে কেটেকুটে ঝোল করতে যে পাক্কা দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে তা আমার জানা অতএব রবীন্দরের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে এবং দুয়ারসিনিকে বিদায় জানিয়ে গাড়ি ফিরল আসনাপানি হয়ে পাটমহুলিয়ার পথে।ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    মোদি কি আদৌ বারানসীতে জিতেছেন? - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | মোদি কি আদৌ বারানসীতে জিতেছেন? ফলাফল বেরিয়ে যাবার পর এই প্রশ্ন কেন? কারণ, অন্য কেউ না, বিজেপির নেতারাই প্রশ্নটা  তুলছেন। গোপন কিছু না। আস্ত সাক্ষাৎকার বেরিয়েছে। কিন্তু খুব সম্ভবত আপনি দেখেননি, কারণ মিডিয়া দেখায়নি। বা যৎসামান্য দেখিয়েছে। ওদিকে ব্যাপারটা কিন্তু বিস্ফোরক। তাই আমরাই ভিডিও সমেত জিনিসটা সামনে নিয়ে এলাম। আমাদের চ্যানেল এখনও পুরোদস্তুর তৈরি না। কিন্তু এইসব জিনিস এলে এখনও সঞ্চালকরা তৈরি না বলে তো থেমে থাকা যায়না। তাই করে ফেলা হল। কেন করে ফেলতে হল, সে দেখলেই বুঝতে পারবেন। এখানেই শেষ অবশ্যই না। পরের পর আমরা নিয়ে আসব ভিডিও। যে খবর আছে, কিন্তু দেখানো হয়না, তার। আলোচনার। এবং অবশ্যই, গুরু থাকবে আর একটুও ফুর্তি থাকবেনা, এ কী হয়। সব হবে, কিন্তু একটু সময় লাগবে। চ্যানেল সাজানো-গোছানো পরে হবে, এটা দেখে ফেলুন, পাড়াপ্রতিবেশিকে দেখান, আর অবিলম্বে চ্যানেলের গ্রাহক হয়ে যান। প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে প্রায় কোনোকিছুই এখন নিজে-নিজে ভাইরাল হয়না। তাই আমাদের ছড়ানোর লোক দরকার। মহাবিদ্রোহের সময় যেমন হাতে-হাতে ছড়িয়েছিল রুটি, সেই রকম। ওই কাজটাকে সামান্য ভাববেন না। এই করেই আইটিসেল টিকে আছে। তাই স্রেফ এইটুকু করতে পারলেও হাত তুলে ফেলুন। ভিডিও ছাড়াও সাইটেরও কাজে লাগলে তো কথাই নেই। কারণ যত মানুষ, তত শক্তি, আর ততই প্রথাগত মিডিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যাবে। জয় জগন্নাথ। সাবস্ক্রাইব করুনঃ https://yt.openinapp.co/996gnভিডিওঃ 
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১৮ - সমরেশ মুখার্জী | আত্মগ্লানিশ তিনেক মিটার‌ও নামেনি সুমন, দ‍্যাখে চিতা আর চুনি উঠে আসছে নীচে থেকে। তখন খেয়াল হয় সুমনের, তাইতো, ওদের তো ওপরে দেখেনি! চিতা‌র হাতে একটা পাঁচ লিটারের জ‍্যারিক‍্যান। চুনি‌র দু কাঁধ থেকে ঝুলছে দুটো ওয়াটার বটল। জল শেষ হয়ে আসছে দেখে ওরা কাউকে কিছু না বলে প্র‍্যাক্টিস ছেড়ে নীচে চলে যায় বলাইদাকে বলতে বাবলুকে একটু তাড়াতাড়ি পাঠাতে। যখন শোনে বাবলু আসবে না, চুনি বাংলো থেকে ব‍রুণ আর গৌরবের বটল দুটো নেয়। চিতা নেয় বলাইদার থেকে জ‍্যারিক‍্যান। ঝর্ণা‌ থেকে জল নিয়ে ওপরে এসে ওরা ভেবেছি‌ল সবাই‌কে একটা সুইট সারপ্রাইজ দেবে। সুমন স্থাণু হয়ে যায়। চুনি‌র মাথায় টুপি নেই। মুখটা রোদে পুড়ে তামাটে লাগছে। কানের পাশে, গালে ঘামে লেপটে আছে কিছু চুল। দেখলেই বোঝা যায় পরিশ্রম হয়েছে বেশ। অতোটা নামা আবার জল নিয়ে উঠে আসা। তবু চুনি‌র বাঙময় চোখ উৎসাহে চকচক করছে অন‍্যের খুশি দেখার আনন্দে। পরিশ্রমে দৃশ‍্যত একটু ক্লান্ত চিতার মুখেও সেই অমলিন হাসি। ওদের সামনে নিজের ক্ষুদ্রতায় নিজের মনেই কেন্নোর মতো গুটিয়ে যায় সুমন।চিতা বলে, "কী রে, তুই একা একা কোথায় যাচ্ছি‌স?" সুমনের মুখ দিয়ে ঠিকমতো কথা বেরোয় না। "আসলে …মানে … জল শেষ হয়ে গেছে, খুব তেষ্টা পাচ্ছিল … ভালো লাগছিল না …  তাই নীচে নেমে যাচ্ছি।" বিড়বিড় করে কোনোমতে বলে ও। চুনি একটা বোতল বাড়ি‌য়ে বলে, "এই নে, জল খা। আমরা ঝর্ণা‌য় আশ মিটিয়ে খেয়ে এসেছি। আমাদের এখন তেষ্টা নেই।" অমিয়দা‌র বাড়ানো বোতল একটু আগে ফিরিয়ে দিয়ে এসেছে সুমন। কিন্তু চুনি‌র হাতে বাড়ানো জল দেখে তেষ্টা রুখতে পারে না। গলা শুকিয়ে কাঠ। কয়েক ঢোঁক খেয়ে ফেরৎ দিয়ে দেয়। ওপরে নজন তৃষ্ণার্ত রয়েছে। তবু তাতেই যেন ধড়ে প্রাণ আসে। জল পেলে ওরা পাঁচটার পরেও ওখানে আরো কিছুক্ষণ থাকতে পারে।  চুনি বোতল‌টা ফেরৎ নিয়ে বলে, "তেষ্টা মিটেছে তো? চল তাহলে ওপরে।"  সুমন তবু গোঁজ হয়ে বলে, "না রে, আমি নেমেই যাই। তোরা যা।" ওদের বিহ্বল দৃষ্টি‌র সামনে দিয়ে ও হনহন করে নামতে থাকে।আত্মসঙ্গে কিছুক্ষণনীচে এসে ঝর্ণা‌য় আশ মিটিয়ে জল খেয়ে, চান করে তৃপ্তি হয় সুমনের। বেলা হয়ে গেছে। ক্ষিধেয় পেট জ্বলছে। বলাইদার দোকানে গিয়ে দেখে কেবল ভাত আর একটু ডাল পড়ে আছে। তরকারি নেই। বলাই‌দা ডালটা গরম করে দেন। ঠান্ডা ভাত, গরম ডাল আর কাঁচা পেঁয়াজ। তাই অমৃতের মতো লাগে। Hunger is the best sauce প্রবাদটা হাড়ে হাড়ে টের পায় সুমন। খাওয়া‌র পর বাংলোর বারান্দায় গিয়ে বসে সুমন। সবার মালপত্র বারান্দা‌র দেওয়া‌ল সেঁটে রাখা আছে। ঈশুর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা স্বভাব। তাই ভোরের আগে ঝর্না‌য় গিয়ে স্নান করে গত কালের পরা সালোয়ার কামিজ কেচে বারান্দা‌র কোনে দড়ি‌তে মেলে দিয়ে গেছে। শুকিয়ে হাওয়ায় দুলছে ওগুলো। চুনি, তুলি এক্সট্রা সেট এনেছে হয়তো। তাই কাচাকাচির ঝামেলায় যায় নি।কুকুর মানুষ ঘেঁষা প্রাণী। ওদের মালপত্র দেখে‌ বুঝেছে কেউ এসেছে। তাই কোত্থেকে একটা মাদী কুকুর এসে এক কোনে বসে আছে। বিনে পয়সার প্রহরী। মুখটা খুব মিষ্টি আর করুণ। ওকে কয়েকটা বিস্কুট দেয় সুমন। কৃতজ্ঞতা মাখা চোখে তাকায়। বিস্কুট  খেয়ে একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ে। সুমন‌ও প্লাস্টিকের ওপর ম‍্যাট বিছিয়ে একটু গড়ায়। ভাবে ওপরে তখন দলের বাকি‌রা নিশ্চয়ই পাথরে খুব ধস্তাধস্তি করছে। ঈশু‌র অবুঝ ক্লাইম্বিং পার্টনার তো নেমে এলো। ঈশু কী করছে এখন ওখানে? হয়তো গৌরবের সাথে মিলে প্র‍্যাক্টিস করছে। সুমনের মনে হয় ও যেন শৈলারোহণ প্র‍্যাক্টিসে নয়, এমনিই বেড়াতে এসেছে শুশুনিয়ায়। কিন্তু সেজন‍্য কোনো খারাপ লাগার অনুভূতি‌ও হয় না ওর। আসলে জীবনে কোনো ব‍্যাপারেই ওর বেশী উচ্চাশা নেই। কিছু হাসিল করার উদ‍্যম‌ও নেই। ও অল্পে‌ই সন্তুষ্ট। তবে নতুন জায়গা দেখার, নতুন বিষয়ে জানার আগ্ৰহ আছে। ডিসেম্বরে যে মাঠায় বেসিক রক ক্লাইম্বিং কোর্সে গেছিল তাও সেই কৌতূহলে‌ই, ব‍্যাপারটা কী জানতে। গিয়ে ভালো‌ই লেগেছে। মৈনাকদার মাউন্টেন ম‍্যানার্সের ওপর প‍্যাশনেট বক্তব্য খুব নাড়া দিয়েছে ওকে। তাছাড়া চিতা, বরুণ, ঈশু, তুলি, চুনির মতো কয়েকজন সুন্দর মনের ছেলেমেয়েদের সাথে যে আলাপ হ‌লো, এসব কী কিছু কম পাওয়া? চারটে দিন বেশ হৈহৈ করে কেটেছে সেবার। তবে কোর্স করে এও বুঝেছে সুমন, ভালো ক্লাইম্বার হতে গেলে শারীরিক সক্ষমতার সাথে যেরকম মানসিক সাহসের প্রয়োজন তা ওর নেই। তাই ও ভবিষ্যতে পর্বতারোহী হ‌ওয়ার স্বপ্ন দ‍্যাখে না। তবে পাহাড় ভালো লাগে। কলকাতার ভীড়ভাট্টা ছেড়ে কদিন বাইরে এলে মন ভালো হয়ে যায়। এই যে এখন ও নির্জন বাংলোর বারান্দায় একাকী চুপ করে শুয়ে আছে, এতেও খুব ভালো লাগছে। প্রতিটা  মানুষের কিছু সময় একা থাকা খুব প্রয়োজন বলে মনে হয় ওর। আবার গতকাল রাতে যখন ওদের সাথে নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হচ্ছিল, ঈশু‌র পেছনে লাগছিল, ওদেরকে আরো কাছ থেকে জানলো, সেটা‌ও ভালো লাগছিলো। সুমন এমন সব সামান্য প্রাপ্তি‌তেও খুব আনন্দ পায়। ওর চাহিদা খুব সীমিত।ওরা আসার আগে পৌনে পাঁচটা নাগাদ সুমন উঠে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় গ্ৰামে‌র দিকে। অনেকক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় উদ্দেশ্যে‌হীনভাবে। আসলে বাংলোয় ফিরে সবার মুখোমুখি হতে অস্বস্তি হচ্ছে ওর। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসতে বাংলোয় ফিরে একটু দুরে একটা বড় পাথরে একা বসে থাকে ও। বন্ধুত্বের মায়াচুনি দেখতে পেয়ে পাশে এসে বসে। নরম গলায় বলে, "জেঠু, আমি ওপরে গিয়ে সব শুনেছি। তুই চলে আসাতে আমাদের‌ প্র‍্যাক্টিস‌ও আর ঠিক জমেনি না। কেমন যেন ছানা কেটে গেছি‌ল। ঈশু‌তো বলেই দিল, ক্লাইম্বিং পার্টনার ছাড়া দড়ি দড়া নিয়ে ও আর কিছু করবে না। কয়েক‌টা ফ্রী বোল্ডারিং করলো। তুই ওভাবে চলে আসতে সবার খুব খারাপ লেগেছে। অমিয়দা বলেলেন, জেঠু হয়তো একটু হাইপার সেনসিটিভ। তাই এই প্রসঙ্গে তোমরা ওকে ঠেস দিয়ে কোনো কথা না বললেই ভালো হয়। নীচে গিয়ে স্বাভাবিক ব‍্যবহার করবে। ইয়ার‌কী ঠাট্টা করে ব‍্যাপার‌টা হালকা‌ও করে দিতে পারো। ওর ভালো লাগেনি, নেমে গেছে, মামলা খতম। যেন এটা কোনো ব‍্যাপার‌ই নয়। দেখবে একটু বাদেই ও ঠিক হয়ে যাবে।”সুমন নীরবে ওর দিকে তাকায়।“তাহলে‌ বল, সবাই তোকে কতো ভালো‌বাসে। তু‌ই হৈ হৈ করিস, ইয়ারকী মারিস, সবার পেছনে লাগিস সেগুলো‌‌‌ই আমরা এনজয় করি।  মাত্র তিনদিনের জন‍্য এসেছি। ফিরে গিয়ে আবার যে যার জগতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়বো। কদিনের এই হৈচৈটাই মনে থেকে যাবে বহুদিন। আমরা সবাই মিলে এসেছি আনন্দ করতে আর তুই সবার থেকে আলাদা হয়ে  এখানে গুম হয়ে বসে আছিস, দেখলে ভালো লাগে?" চুনি সুমনের থেকে বছর তিনেকের ছোট। কাল নানা আলোচনা‌র মাঝে ও কথা বিশেষ বলেই নি। ও মনযোগী শ্রোতা। তবে এখন ওর কথা বলার ধরণ শুনে সুমনের মনে হয়, যেন সমবয়সী বন্ধু নয়, দিদির মতো কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছে। ভেতরটা হু হু করে ওঠে। বাস্প জমে চোখে। একটা কথাও বলতে পারে না। তুলি‌ও ওদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে, "জেঠু, তোর কী হয়েছে বলতো? কাল দেখলাম ঈশুর সাথে হুইশপারিং গেম খেলছিলি। এখন চুনি‌র সাথে ফুসুর ফুসুর করছিস। তোর কী আমার সাথে কখনো একা কথা বলতে ইচ্ছে হয় না? যতই মুড অফ থাকুক, কেউ লুজ বল দিলে ছক্কা মারার জন‍্য সুমনের মন নিশপিশ করে। ভাবলেশহীন মুখে বলে, "তোর সাথে একা গল্প করতে আমার ভয় করে।"  কোমরে দু হাত দিয়ে তুলি লড়াকু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বলে, "ভয় করে! কেন? আমি কী কামড়ে দেবো তোকে?"  সুমন বলে, "তুই গালে টোল ফেলে হাসলে আমার কথা হারিয়ে যায়। অন‍্য কিছু মাথায় আসে।"  তুলি সুমনের ঝাঁকড়া চুল দুহাতে মুঠো করে ধরে জোরে ঝাঁকিয়ে বলে "পাজি! শয়তান! তোর পেটে পেটে এই?" চুনি হাততালি দিয়ে বলে, "এ্যাই তো! জেঠু এসে গেছে ফর্মে। তুলি তুই ক্লীন বোল্ড।  ঈশু‌ও সেখানে হাজির হয়ে বলে, "কী রে জেঠু, তু‌ই কোথায় হাওয়া হয়ে গেছিলি? আমি নীচে এসে কত খুঁজলাম তোকে।"  সুমন সিগারেটের প‍্যাকেট‌টা বাড়িয়ে বলে, "নে, ধর, খুব হয়েছে, আর ভণিতা করতে হবে না। আমায় খুঁজছিলি না হাতি। চায়ের পর নিকোটিন নক করেছে তাই আমার কথা মনে পড়েছে। তখনই বলেছিলাম একটা প‍্যাকেট রাখ।" ঈশু একটা সিগারেট নিয়ে লাজুক হেসে বলে, "তা অবশ‍্য ঠিক,  চায়ের পর মনটা উশখুশ করছিল। তবে তুই অতো আগে নেমে এসে এতক্ষণ ধরে গায়েব। ভাবছি‌লাম মনের দুঃখে বিবাগী টিবাগী হয়ে কোথাও চলে গেলি কি না। তাছাড়া তুই ছেলে হয়েও কালকে আলোচনা‌য় পুরুষ‌ জাতটাকে যেভাবে ধুলি, এও ভাবছি‌লাম পরে আবার তোর কোনো আত্মগ্লানি‌ হয়নি তো?"  
    চললুম ঈর্ষাহীন দেবীর গৃহে (সমাপ্ত) - সমরেশ মুখার্জী | সবার আগে রাত্রি‌বাসে‌র একটা ব‍্যবস্থা করতে হবে। মন্দির চত্বরে‌র আগে বাঁদিকে একটা শেড দেখলাম। গোবর নিকানো পরিস্কার মাটির মেঝে। বাঁদিকে দেওয়ালের পাশে মেঝের ওপর কয়ারের চাটাই বিছানো। আলো, প্লাগ পয়েন্ট রয়েছে। ডানদিকে পাথরের উনুনে আধজ্বলা কাঠ, ছাই। কেউ ছিল। রান্না‌বান্না করেছি‌ল। আশপাশে কাউকে দেখছিনা যে জিজ্ঞাসা করবো। তবে মনে হোলো গোপেশ্বরে গোপীনাথ মন্দিরের পিছনে সন্তকুটীরের মতো এটাও যাত্রীদের জন‍্য‌ই হবে। ২০১২-১৫ সালে মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা‌য় স্থানীয়‌ দলের সাথে গোটা তেরো হিল ফোর্ট ট্রেকে গেছি। কয়েক জায়গায় রাতে পাহাড়ের গুহায়, মন্দির চত্বরে থেকেছি। তখন এমন জায়গা পেলে বর্তে যেতাম। তখন ঐ শেড বেবাক খালি। ঘুপচি তি‌ওয়ারী লজের থেকে ঢের ভালো। সাথে ম‍্যাট, স্লিপিং ব‍্যাগ থাকলে দিব‍্যি থাকা যায়। কিন্তু ম‍্যাট রেখে এসেছি গোপেশ্বরের মন্দিরে। গরমকালে গেছি বলে স্লিপিং ব‍্যাগ নিয়ে যাইনি। পাতলা ফ্লিসের কম্বল আছে। ভেবেছি দুটো পাজামা, দুটো জামা, ফ্লিসের জ‍্যাকেটের ওপর উইন্ডচিটার ও তার ওপরে ফ্লিসের কম্বল দিয়ে ম‍্যানেজ হয়ে যাবে। ভাবি আর একটু দেখি। মন্দিরের ডানদিকে সার দিয়ে কয়েকটি পাকা ঘর। টিনের ঢালু ছাদ। পিছন থেকে তিনটি ঘরের দরজাতেই তালা। সেবায়েতরা থাকেন হয়তো। হলুদ তীর চিহ্নিত সেই পূতঃ মহাবৃক্ষ। সবুজ তীর চিহ্নিত প্রথম ঘরটি‌র নীল দরজায় তালা নেই। দরজা ঠেলে ঢুকি। একটি কাঠের চৌকির ওপর মোটা শতরঞ্জি পাতা। দে‌ওয়ালে‌র কোনে ছোট একটি টেবিল। পিছনের ছোট্ট জানলা খুলি। দুরে পঞ্চম কেদারের দূর্গমতম রূদ্রনাথের তুষারাবৃত পাহাড় একদম ক‍্যালেন্ডার। নীচে সবুজ জমি নেমে গেছে নীচে। হু হু ঠান্ডা হাওয়া। সকাল থেকে ওপরে আসার সময় পথের হাবভাব দেখেই মনে হয়েছে সেদিন যাত্রী বিশেষ আসেনি। যারা এসেছি‌ল তারা‌ও নেবে গেছে। রাতে এখানে থাকার কেউ নেই। যখন মন্দিরের কাউকে দেখছি‌না, অনুমতি নেওয়ার‌‌ও বালাই নেই। দরজায় তালা নেই যখন এ ঘর বেওয়ারিশ। অত‌এব ঠিক করি এখানেই থাকবো। শতরঞ্জি‌র ওপর সঙ্গে আনা প্লাস্টিক চাদর পাতি। হয়ে গেল এক রাতের বিছানা। ন‍্যাপস‍্যাক থেকে শুকনো খাবার, পাজামা, জামা, জ‍্যাকেট, কম্বল, হাওয়া বালিশ বার বিছানায় রাখি। কেবল জলের বোতল ও ছাতা নিয়ে বেরোই। দরজায় নিজের তালা লাগিয়ে সূচীত করে যাই - আপাতত এখানে কেউ আছে। চত্বরের কোনায় সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে দেখি বাথরুম, ইন্ডিয়ান টাইপ টয়লেট। কলে জল‌ও আছে। আর কি চাই। ভক্ত, পূজারী‌হীন ফাঁকা মন্দিরে ঢুকে সতী অনসূয়া দেবী মাতাজীর ছবি নিই। মান‍্যতাপ্রাপ্ত মন্দির অথচ তখন জনহীন! এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল ঐ ভ্রমণে‌ই আর একবার - রূদ্রপ্রয়াগ থেকে কার্তিক‌স্বামীর পথে এক অখ‍্যাত স্থানে। আসতেও পারে সে কথা কখনো এই সিরিজে।অনসূয়া দেবী সম্পর্কিত কিংবদন্তি সুবিদিত। তবু আমার মতো করে বলি। অত্রিমুনি তখন এই মন্দির থেকে দু‌ই কিমি আগে একটি গুহায় তপস্যা করেছিলেন। ঋষি‌পত্নী অনসূয়া এখানে একটি কুঁড়েঘরে থাকেন। পতিব্রতা অনসূয়া‌র খ‍্যাতি ত্রিলোকে সুবিদিত। এর ফলে পার্বতী, লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর মধ্যে অসূয়াবোধ তৈরী হয়। অনসূয়া‌র সতীপনার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তাঁরা তাদের স্বামীকে অনসূয়ার কাছে পাঠান। বিপজ্জনক প্রোপোজিশন। কারণ পতিরাও হড়কাতে পারেন। ত্রিদেব তাঁদের পত্নীদের বোঝানোর চেষ্টা করন,  একজন পতিব্রতা ঋষি‌পত্নী‌র সতীত্বের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু রমণীর মন না জানতি দেবাঃ, ঈর্ষা‌ তো আরো বিষম বস্তু। অগত‍্যা  ত্রিদেব চললেন সতী অনসূয়া‌র সতীত্বের পরীক্ষা নিতে।অনসূয়া‌র কুটীরে দুপুরে ত্রিদেব তিন ঋষি‌র ছদ্মবেশে হাজির হয়ে বলেন, কিছু খেতে দাও, কিন্তু একটি শর্ত আছে - অন্ন পরিবেশন করতে হবে বস্ত্রহীন হয়ে। এমন উদ্ভট শর্তে বিচলিত হয়ে অনসূয়া চোখবুঁজে পতিকে স্মরণ করলেন। অত্রিমূনির যোগবলে সতী মনশ্চক্ষে দেখতে পেলেন তাঁর পরীক্ষা নিতে ছদ্মবেশে এসেছে‌ন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। পতি‌ই যোগবলে একটি ঘটির জল মন্ত্রপূতঃ করে সতীকে টেলিপ‍্যাথিতে পরামর্শ দিলেন কী করতে হবে।সতী বলেন, আপনাদের শর্ত শিরোধার্য তবে সেক্ষেত্রে আপনাদের আমার সন্তান‌সম হয়ে অন্ন‌গ্ৰহণ করতে হবে। এই বলে সতী তিনজনের ওপর দিলেন ছিটিয়ে সেই মন্ত্রপূতঃ বারি। ব‍্যস, পত্রপাঠ তিন ছদ্মবেশী ঋষি হয়ে গেলেন সতীর পূত্রসম কচি বালক। মায়ের কাছে শিশুর বা শিশুর কাছে মায়ের লজ্জা কীসের? অনসূয়া ঋষিশর্ত অনুযায়ী বস্ত্রত‍্যাগ করে‌ই অন্ন পরিবেশন করলেন। বজায় থাকলো তাঁর সতীত্ব। ওদিকে তিন পত্নী উদগ্ৰীব। ফিরছেন না কেন তাঁদের পতিরা? এতোক্ষণ লাগে পরীক্ষা নিতে? ডিভাইন ভিডিও‌কলে তাঁরা দেখলেন তিনটি পুঁচকে বালক নিকার পরে সতীকুটীরে‌র আঙিনায় খেলছে‌। তাঁরা আঁতকে উঠে বলেন - এ কী অবস্থা তোমাদের? ত্রিদেব বলেন, কী বলবো বলো। তোমাদের জোরাজুরি‌তে সতীর পরীক্ষা নিতে এসে আমাদের কী হাল হয়েছে দ‍্যাখো। বারণ করেছিলাম, শুনলে না। সাধে কী বলে, স্ত্রী বুদ্ধির স্থান হাঁটুতে। তিন দেবী নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ঋষিপত্নীকে টেলিকলে অনুরোধ করেন - ঘাট হয়েছে, মাফ করে দাও। আমাদের পতিদের অরিজিনাল কন্ডিশনে ফেরত পাঠিয়ে দাও পিলিজ। স্বভাবে দ্বেষ, অসূয়া নেই বলেই তো সতীর নাম অনসূয়া। তিনি আবার জল ছিটিয়ে ত্রিদেবকে পূর্বাবস্থায় রূপান্তরিত করে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন কৈলাস, বৈকুণ্ঠ, ব্রহ্মলোকে। ঐ পৌরাণিক বিশ্বাসের নিদর্শন মন্দির দ্বারের বাইরে একটি পাথরে প্রতিফলিত। রাত্রি‌বাসের ব‍্যবস্থা করে চললুম অত্রিমুনির তপোগুহা‌র দিকে। ওখান থেকে প্রায় দুই কিমি। মন্দির থেকে আন্দাজ দেড় কিমি দুরে বাঁদিকে উপরের পথটা চলে গেছে পঞ্চকেদারের দূর্গমতম রূদ্রনাথ। নীচের পথটা গেছে অত্রিমুনির গুহার দিকে। শিশুপাল বলেছিল ওখানে পাহাড়ের নীচে এক গুহা‌য় মধ‍্যপ্রদেশের এক ডাক্তার বিগত আট নয় বছর ধরে একাকী সাধনে রত। বর্তমানে দিগম্বর অবস্থায় আছেন কিন্তু মৌনী নন। চাইলে দেখা করতে পারেন। কিন্তু ইচ্ছা হয়নি। একটি মানুষ পেশা, পরিবার ত‍্যাগ করে এতোদুরে, এতোদিন ধরে, নির্জনে একাকী সাধনে রত। তাঁর সাধনা যাই হোক, আমি আধ‍্যাত্ম‍্যিকতার বোধহীন এক শহুরে মানুষ, তাঁর সাথে দেখা করে কী করবো? তাঁকে তাঁর মতো থাকতে দেওয়া‌ই উচিত। কাছে গিয়ে দেখলাম পাথরের ফাঁকে হলুদ প্লাস্টিক, দরজা লাগানো গুফার গায়ে রামশিলা লেখা। কয়েকটি সোলার প‍্যানেল রয়েছে বাইরে। তার মানে ব‍্যাটারি‌ও আছে। অর্থাৎ উনি এক মডার্ন বাবা। তবু দেখা করতে ইচ্ছা করলো না।  লিখতে গিয়ে নেটে ১০/১৩এর একটি ব্লগে এই ছবিটি পেলাম। তাহলে তাঁর নাম অখিলেশ্বরানন্দ স্বামী। ব্লগে দেখলাম, উনি কারুর সাথে আলাপচারিতায় আগ্ৰহী নন, ছিলেন নিউরোলজিতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। কিন্তু ইলেকট্রনিক্স ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আগ্ৰহ আছে। ঐসব বিষয়ে গুহাতে ব‌ইপত্র আছে। সেসব নিয়ে পড়াশোনা করেন। ছবিতে ডেট দেখছি ১.১.২০০৮ - হয়তো ওটা ভুল। তবে মনে হয় ওখানে উনি ২০১৩ সালের আগে থেকেই আছেন। তখন কী AI নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছিল? এক ডাক্তার কোন সুদুর হিমালয়ের গুহায় নির্জনে একান্তে সাধনার সাথে ইলেকট্রনিক্স, AI নিয়ে পড়াশোনা করেন বোঝা দায়!মনে পড়লো আমার প্রিয় লেখক নারায়ণ সান‍্যালের কুম্ভমেলায় নাগাসন্ন‍্যাসীদের মাতামাতি প্রসঙ্গে একটি লেখায় ওনার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা :“আমার সারা জীবনে প্রকৃত জ্ঞানতপস্বীর দেখা মাত্র একবার‌ই পেয়েছি - বদরীকাশ্রমেরও উত্তরে। একটি গুহার ভিতর বসে ছিলেন সন্ন্যাসী। তিনি যে দিগম্বর সেটা বোঝা যাচ্ছিল না, তাঁর ‘সমং কায়শিরোগ্রীব' পদ্মাসনে চরণযুগলের স্থাপনের ভঙ্গিমায়। ভাস্করানন্দস্বামীর সেই পরিচিত ভঙ্গিমা! কুণ্ডু ট্র‍্যাভেলসের ম্যানেজার বিনয়বাবু সেবার আমাকে বলেছিলেন — সেই দিগম্বর সাধু নাকি সারা শীতকাল ঐ গুহাতেই সাধনা করেন ; যখন বরফে চারিদিক ঢেকে যায়, নির্জন বদ্রীনারায়ণতীর্থে জনমানব থাকে না, তখনো। সে জাতীয় সর্বত্যাগী নাগা সন্ন্যাসীকে গাঙ্গেয় উপত্যকায় নেমে আসতে হয় না কুম্ভস্নান করতে। অন্তরের মানসগঙ্গায় তাঁদের নিত্য অমৃত - অবগাহন।”  রামশিলা‌ গুহার কাছাকাছি থেকে অত্রিমুনি প্রপাতটি দেখলাম। এর সাথে ছোটোখাটো আরো কয়েকটি জলধারা মিশে পরে অমৃতগঙ্গা হয়ে নীচে বয়ে চলেছে। ইচ্ছে ছিল অত্রিমুনির গুহায় যাবো। হোম‌ওয়ার্ক করে জানি সে পথ সংকীর্ণ। এক জায়গায় প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়। তেড়ে বৃষ্টি এলো। পিছল পাথুরে পথ। আমার ভক্তি‌ভাব প্রবল নয়। অত্রিমুনির সাধনগুহা না দেখলেও চলে।  সহ‍্যাদ্রীতে হিল ফোর্ট ট্রেকে এমন বেশ কিছু সংকীর্ণ পথে গেছি। গুহায় রাতে গেছি। এসব নতুন কিছু নয় আমার কাছে। তখন গেছি দলে। বিপজ্জনক অংশে দড়ি লাগানো হয়েছিল। এখন কোনো লোকজন নেই এখানে। একা, প্রবীণ বয়সে, এমন নির্জন জায়গায় অযথা ঝুঁকি না নিয়ে ফিরে চললুম। বেঁচে থাকলে বরং যেতে পারবো আরো কিছু একাকী ভ্রমণে। (উপরের ছবি দুটি নেট থেকে নেওয়া)।বাঁদিকে‌র পথে দেখলাম ফলক - রূদ্রনাথ ১২ কিমি। পরদিন ফেরার সময় শিশু‌পালের ধাবায় বসে একথা বলতে শিশু বলেছিল ওটা ভুল। ঐ পথে ও গেছে আগে। কম করে ১৪/১৫ কিমি হবে। কানাইয়াধার, হানসা বুগিয়াল, ধনপাল ময়দান, নাওলা পাস পেরিয়ে যেতে হয় রূদ্রনাথ। মন্ডল থেকে ২১/২২ কিমি হাঁটা পথ। ওটা রূদ্রনাথ যাওয়ার প্রচলিত পথ নয়। দূর্গম এবং নির্জন। মাঝে মেষপালকদের ছাউনি ছাড়া থাকার কোনো জায়গা নেই। ও পথে গাইড ও দলে ছাড়া যাওয়া উচিত নয়। তবে গেলে এ পথে না ফিরলে‌ও চলে। রূদ্রনাথ থেকে ১৮ কিমি হেঁটে সগ্গর গাঁ‌ওতে নেমে এলে বাসপথে ৫ কিমি দুরে গোপেশ্বর চলে যাওয়া যায়। চোপতা - মন্ডল - গোপেশ্বরের পথেই সগ্গর। না হলে রূদ্রনাথ থেকে পনার বুগিয়াল, দুমক, বংশীনারায়ন হয়ে এক যাত্রা‌য় পঞ্চকেদারের আর এক কেদার কল্পেশ্বরে নেমে যাওয়া যায়। দর্শন করে দেবগ্ৰাম হয়ে ঋষিকেশ যোশিমঠ সড়কে হেলাং চলে যাওয়া যায়। দেবগ্ৰাম হেলাং শেয়ার জীপ চলে। কল্পেশ্বর বা সগ্গর থেকে‌ই বেশিরভাগ লোক রূদ্রনাথ যায়। ২০১৯এর উত্তরাখণ্ড ভ্রমণে পঞ্চকেদারের দুটি কেদারে গেছি‌লাম। ২০.৫ একাকী যোশিমঠ থেকে হেলাং এসে দিনে দিনে কল্পেশ্বর দেখে ফিরে গেছিলাম। ২৮.৫ পঞ্চকেদারের উচ্চতম তুঙ্গনাথ ও তার‌ উপরে চন্দ্রশিলা‌ গেছি‌লাম গুপ্ত‌কাশীতে আলাপ উপরের ছবিতে পাঁচটি উত্তরপ্রদেশের তরুণের সাথে। মাঝে লাল টুপি‌তে আমি। খুব ভদ্র তারা। জলন্ধরে IT পড়ছে। হরিদ্বার থেকে ওদের ফেরার ট্রেন টিকিট তিনদিন পরে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। বলেছিলাম, চাইলে চলো আমার সাথে তুঙ্গনাথ, দেওরিয়া তাল ঘুরে আসি। ঘর থেকে একাকী বেরিয়ে পথে আলাপ পাঁচটি তরুণের সাথে সেই দু রাতের ছোট্ট দলীয়।ভ্রমণ‌ও বেশ লেগেছিল। উখিমঠে গ্ৰুপ ফটো তুলে ওরা চলে গেল হরিদ্বার। আবার আমি একা।অনসূয়া মন্দিরের কাছে ফিরে এলাম। ময়দানের এক পাশে রয়েছে অত্রিমুনি ও অনসূয়া দেবীর পূত্র দত্তাত্রেয়‌র জন্মস্থানে ছোট একটা মন্দির। এখানে‌ই  হয় ডিসেম্বরে দত্তাত্রেয় জয়ন্তী‌ মেলা। দত্তা মন্দিরের পিছনে গীতা কুটীর। ঘরটি বন্ধ। বারান্দায় টিনের ছাত। তিনদিক খোলা। ৭১৩৪ ফুট উচ্চ‌তায় স্লিপিং ব‍্যাগ না থাকলে মাঝরাতে ঠাণ্ডা‌য় কাঁপতে হবে। গুলবাঘের ব‍্যাপারটা‌ও আছে। তা না হলে দু চার জনের দলে এলে, স্লিপিং ব‍্যাগ থাকলে এখানে‌ও এক পাশে আগুন জ্বেলে রাত কাটানো যায়।তিওয়ারি লজের ম‍্যানেজার নারায়ণ সিং বিস্ত গেছেন মন্ডলে। লজে রয়েছে কুক কাম হেল্পার। নিকোনো রান্নার জায়গায় বসে তাকে বলি বানা‌ও ম‍্যাগী মশালা, চা। ওটাই রেডিমেড পাওয়া যায় ওখানে। দাল-চা‌ওল, রুটি সবজি খেতে চাইলে আগে বলতে হয়। লোকজন কম আসে বলে তৈরী থাকেনা। অর্ডার পেলে বানায়। পৌনে ঘন্টা লাগে। তখন সাড়ে চারটে বাজে। দেখলাম দোকানে বসে আছেন এক কমবয়সী দম্পতি। একটু আগে এসে পৌঁছে‌ছেন এখানে মাতাজীর মান্নত মাঙ্গতে। তার মানে হয়তো বিয়ের কিছুদিন হয়ে গেছে, তাও সন্তান হয়নি। তারা চা খেয়ে গেল মন্দিরে। সন্তানের আকাঙ্খা‌ তো মেয়েদের‌ই বেশী হয়। মহিলা‌ স্নান করে পুজো দেবেন বললেন। স্বামী সাথে চলেছেন স্টেপনির মতো। পুজো দিয়ে নেবে যাবেন মন্ডলে। ওরা স্থানীয়। অল্প বয়স। সাথে মালপত্র‌ও নেই। হয়তো ফেরার পথে এক ঘন্টা‌য় নেমে যাবেন মন্ডলে।আমি আয়েশ করে ডাবল ম‍্যাগী ও চা খাই। হয়ে গেল ফার্স্ট রাউন্ড ডিনার। রাতে ঘরে মুড়ি, ছোলাভাজা, বাদাম পাটালি দিয়ে করে নেবো সেকেন্ড রাউন্ড ডিনার। সন্ধ্যায় মন্দিরে গিয়ে একটু বসি। ভক্ত‌জন কেউ নেই। একজন পূজারী এসে ক‍্যাসেটে হালকা ভলিউমে মাতৃ আরাধনা‌র ভজন চালিয়ে, ধূপ,  প্রদীপ জ্বালিয়ে একটু আরতি করে চলে যান। একটু পরে ঘরে যাই। আমি যে একটা খালি ঘরে তালা দিয়ে চলে গেছি‌লাম, আসার পরে ঘরে আলো জ্বালালাম, কেউ কিছু জানতেও এলো না। ভেতরে কেউ আছে তার প্রমাণ হিসেবে আমি দরজার বাইরে কুন্ডির হুকে আমার তালা লাগিয়ে রাখি। ন‌ইলে আমাকেও কেউ তালা লাগিয়ে চলে যেতে পারে। আজ সারাদিনের কিছু অভিজ্ঞতা, শিশুর থেকে জানা কিছু তথ‍্য চিটপ‍্যাডে লিখে রাখি। নটা নাগাদ সেকেন্ড রাউন্ড ড্রাই ডিনার করে  শুয়ে পড়ি। সামনে পেছনে দরজা জানলা বন্ধ করে দিয়েছি। তাও পিছনের কাঠের জানলার ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে। আলো জ্বললে ঘুমের অসুবিধা হয়। তবু দুশো ওয়াটের বাল্বটা জ্বালিয়ে রাখলাম। যেটুকু উত্তাপ দেয়। রাত বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ঠান্ডা। মে মাসে‌ই এই অবস্থা। ডিসেম্বরে নিশ্চিত কাঁপিয়ে দেয় এখানে। বাড়িতে দুটো স্লিপিং ব‍্যাগ থাকতেও স‍্যাকে জায়গা বাঁচাতে পাতলা ফ্লিসের কম্বল আনা‌র ভুলের খেসারত দিলাম। মে মাসে‌ও বন্ধ ঘরে ডাবল পাজামা, ডাবল জামা, পাতলা ফ্লিসের জ‍্যাকেট, উ‌ইন্ড চিটারের ওপর পাতলা ফ্লিসের কম্বল গায়ে সারারাত ঠান্ডা‌য় এপাশ ওপাশ করে গেলাম। এই সেট-আপে ২৮.৫এ ১২ হাজার ফুটে তুঙ্গনাথে‌ও কেঁপে মরতাম। ওখানে কালী কমলি ধরমশালা‌য় একটা মাঝারি ঘরে ছজনে থাকায় শরীরের গরম একটা ফ‍্যাক্টর ছিল। কেয়ারটেকার কম্বল‌ দিয়েছিল বলে বেঁচে গেছি। এই ভুল আবার‌ও করেছি ২০২০ সালের শীতে মধ‍্যপ্রদেশে দু মাসের একাকী ভ্রমণে। সেবারেও ঐ পাতলা ফ্লিসের কম্বল নিয়ে গেছি‌লাম। জানুয়ারি ১০ তারিখ ঝাঁসি‌র কাছে করেরা হনুমান মন্দিরের ঘরে ঠান্ডায় কেঁপেছি সারারাত। (এই সিরিজের ৯ পর্ব)। ২০২২ এর ডিসেম্বরে দুমাসের একাকী ভ্রমণে আর এই ভুল করিনি। স্লিপিং ব‍্যাগ নিয়ে গেছি‌লাম। তাই তো কথায় বলে - ছাগল দিয়ে লাঙ্গল দে‌ওয়া গেলে চাষা বলদ কিনতো না।পুনশ্চঃ - পরদিন সকালে চলে আসার আগে মন্দিরে দানপাত্রে কিছু দক্ষিণা দিতে গেছি‌লাম। বেরোবার সময় দেখি মন্দিরে‌র সামনে গ্ৰিল ঘেরা অংশের ডানদিকে একটা টেবিলের ওপর থাক দিয়ে রাখা অনেকগুলি পরিস্কার, মোটা সিন্থেটিক কম্বল। যাত্রীদের জন‍্য‌ই রাখা। কাল সন্ধ্যায় এখানে বসে আরতি দেখেছি‌লাম। তখন চোখে পড়েনি। পড়লে একটা নিয়ে যেতাম। তাহলে সারারাত অযথা ঠাণ্ডায় কাঁপতে হোতো না। এসবকেই বলা যায়, দেখেছি, কিন্তু খেয়াল করিনি।
  • জনতার খেরোর খাতা...
    জামাইষষ্ঠীর টুকিটাকি  - Somnath mukhopadhyay | এ্যান ইভিনিং ওয়াক  আজ বিকেলে একটু বেড়িয়েছিলাম, জামাইষষ্ঠীর বাজার দেখতে। গরমে একেই শরীর নাজেহাল, তার ওপর পাব্বনের আগুনে গরম বাজারের তাপ শরীরে এসে লাগলে পরিস্থিতি আরও ঘেঁটে যেতে পারে ভেবে আমি গোড়ায় একটু আপত্তি তুলে গাইগুই করতেই ওপার থেকে জবাব আসে – এই অজুহাত দেখিয়ে এতোকাল তো কাটিয়ে দিলে। এখন সেই পুরনো চালে কাজ হবেনা। চলো! আমি রেডি হচ্ছি।এ একেবারে সরাসরি রণে আহ্বান। এরপরেও লেজ গুটিয়ে বসে থাকলে নির্ঘাত কাপুরুষ অকর্মণ্য বলে অপবাদ স‌ইতে হবে ভেবে একটু সচল হয়ে উঠি। আসলে কিছুদিন আগে তেনার একজন জামাই বাবাজীবন প্রাপ্তি হয়েছে । তবে তিনি সুদূর প্রবাসী হ‌ওয়ায় পয়লা বছরেই তাঁকে আপ্যায়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। এটা মেনে নিতে পারাটা খুব সহজ নয়। যাইহোক জামাইষষ্ঠীর জমায়েত দেখতে কত্তা গিন্নি বেরিয়ে পড়লাম।   চেনা পায়ে অচেনা ভিড়ে  আমাদের শহরতলির চেনা চেহারা গুলো দ্রুত হারে বদলে গেছে এই কয়েক বছরের মধ্যে। যাঁরা কদাচিৎ এদিকপানে এলে এলাকার তথাকথিত গ্রাম্যতা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো, তাঁরাই এখন এখানে এসে বেশ গদগদ স্বরে বলে ওঠেন - “কি ভালো জায়গা তোমাদের! কত দোকান বাজার মল! কত কত হাইরাইজ এ্যাপার্টমেন্ট! রাস্তাঘাট একেবারে গমগম করছে লোকজনের ভিড়ে। ফাস্টফুডের দোকানে দোকানে ছয়লাপ গোটা চত্বর! খুব ডেভেলপমেন্ট হয়েছে তোমাদের এখানে।” এই বিষয়টি নিয়ে আমি কখনও জবাবদিহি করতে বসিনি, কেবল চ্যাপলিন সাহেবের মতো হালকা চালে ঘাড় নেড়ে গিয়েছি। যা বোঝার তা তোমরাই বুঝে নাও বাপু!সদর রাস্তা আজ ভিড়ে ভিড়াক্কার। এদেশে রাস্তায় বাজার নামিয়ে আনাটাই নিয়ম। যাইহোক আমার তিনি এমন অবস্থাতেও দিব্যি স্বচ্ছন্দ গতি। আমাদের আমলের চূনী গোঁসাইয়ের মতো ডাইনে বাঁয়ে করে এগিয়ে চলেছেন। আমি এমনিতেই সাবধানী। তার ওপর এখন আর ঝুঁকি নিতে চাইনা।খান দুই ঝোলা ব্যাগ হাতে নিয়ে জামাইষষ্ঠীর ইতিবৃত্ত ভাবতে ভাবতে চলেছি ‌। আগে আগে তিনি, আর পিছু পিছু আমি। এই জমানায় এমনটাই দস্তুর। অন্যথায় বিবাদ বিসম্বাদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সাধ করে কে আর অশান্তি ডেকে আনে ? দেবী ষষ্ঠীর কথা  দেবী ষষ্ঠী হলেন এক লোকায়ত দেবী। জনমানসেই তাঁর আস্থান। তবে তিনি নিছকই বঙ্গীয় গ্রামদেবী এমনটা নয় , প্রবল জন ভিত্তির জোরে তিনি নানা নামে, নানান রূপে দেশের অন্যান্য প্রদেশেও পূজিতা হন মহাসমারোহে।বহু বহু বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। আসলে মা ষষ্ঠী হলেন প্রজননের দেবী । মা ষষ্ঠীর কৃপায় সন্তানহীনতার জ্বালা ঘোচে , ষষ্ঠী মায়ের কৃপাতেই সুস্থ সবল থাকে তাঁরা। তাই ষষ্ঠীর দিন মায়েরা উপোসী থেকে সন্তানের মঙ্গল কামনায় ব্রত উদযাপন করেন। আমাদের ছেলে বেলায় দেখেছি জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনটিতে, যা একালে জামাইষষ্ঠী নামেই সমধিক পরিচিত, মা ঠাকুমারা সকাল সকাল স্নান সেরে দুব্বো ঘাসের চামর দিয়ে পূত পবিত্র জল ছিটিয়ে দিতেন আমাদের গায়ে, মাথায় । নতুন তালপাখা জলে ধুয়ে সেই পাখায় বাতাস করতেন। আর তারপর আম,জাম, লিচু, জামরুল ইত্যাদি নানান মরশুমী ফল তুলে দিতেন আমাদের হাতে। হাতে বেঁধে দিতেন লাল সুতোর ধাগা। মায়েদের বিশ্বাস ছিল এই রক্ষাকবচের জোরে নিরাপদ থাকবে তাঁর আদরের সন্তানেরা। ঘাসের চামচের সাথে বাঁধা থাকতো খান দুই লালচে রঙের করমচা এবং গোটা দুই দেশি খেজুর। কিন্তু মায়ে পোয়ের এমন ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাঝে জামাই বাবাজীবনদের অনুপ্রবেশ ঘটলো কী করে? যেখানে পুরনো প্রবচনে বেশ হেঁকে ডেকে বলা হয়েছে - যম, জামাই,ভাগনা // এই তিন নয় আপনা। কালান্তক যমের সঙ্গে যার একাসনে ঠাঁই, সেই জামাইকে নিয়ে এতো তোয়াজ, তোল্লাবাজি কেন?  অরণ্য ষষ্ঠীই একালের জামাইষষ্ঠী  আসলে এর পেছনেও এক সামাজিক প্রেক্ষিত রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা চিরকালই উপেক্ষিতা। বাড়িতে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সেকালে অনেক পরিবারেই ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যেত। ( হায়! এখনও বাঁধে) জন্মদাত্রী মায়ের কপালে জুটত অশেষ গঞ্জনা। আবার শাস্ত্রে বলেছে “পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা” অর্থাৎ বংশকে পুত্র সন্তান উপহার দিতেই নাকি পুরুষের দার পরিগ্রহণ। অথচ নিজের আদরিণী কন্যাকে কি আর কোনো মা দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন? পুত্রের মতো কন্যাটিও যে তাঁর‌ই অংশ, আত্মার পরমাত্মীয় আত্মজা। শ্বশুরবাড়িতে নিজের কন্যার দেখভাল করার দায়িত্ব বর্তায় প্রাথমিকভাবে জামাতা নন্দনের ওপর। সে যেন কন্যার প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাঁর প্রতি সদয় ও বিশ্বাসভাজন হয় সেই উদ্দেশ্যেই জামাইদের এই বিশেষ দিনটিতে একটু আদর আপ্যায়ন খাতির করে তোয়াজ করা হয়। আর এ কথাতো অস্বীকার করার উপায় নেই যে কন্যার জামাতাটিও শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে সন্তান তুল্য। তাই বছরভর নানান ষষ্ঠীর ব্রত পালনের মধ্যে নিজের সন্তানের মঙ্গল কামনার ভাবটি নিহিত থাকলেও এই জৈষ্ঠ্য শুক্লা তিথির ছয় নম্বর দিনটিতে বাড়ির জামাইদের ডাক পড়ে শ্বশুরালয়ে। উপহার দেবার পাশাপাশি থাকে ঢালাও ভূরিভোজের আয়োজন। জামাইষষ্ঠীর দিন তাই হালফিলের সমাজে হয়ে উঠেছে একটি আড়ম্বরপূর্ণ পারিবারিক মিলনোৎসবের দিন, ফ্যামিলি গেট টুগেদার। তা এই হাঁসফাঁস করা গরমে জামাই আদরের ঘটা কেন? আর কি সময় জুটল না? আসলে জামাইয়ের পাতে হরেকরকম রসালো ফলের সম্ভার তুলে দিতেই নাকি এমন আয়োজন, যদিও একালের শহুরে জামাইরা কতদূর ফলাহারী সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে। আগে এই দিনটিকে অরণ্য ষষ্ঠী হিসেবে পালন করার রেওয়াজ ছিল। বাড়ির মেয়েরা জৈষ্ঠ্য মাসের প্রবল দাবদাহে দগ্ধ মাঠঘাট যাতে পর্যাপ্ত বর্ষণে সিক্ত হয়ে উঠে কৃষির সহায়ক হয়ে ওঠে সেই কামনায় অরণ্যভূমে পালন করা হতো ষষ্ঠী মায়ের ব্রত । তবে পরবর্তীতে নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনার আবহে অরণ্য ষষ্ঠীই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জামাই বাবাজীবনদের আপ্যায়নের জন্য নির্ধারিত ষষ্ঠী ব্রত হিসেবে। দম ফাঁস বাজারের ভিড়ে  এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভিড় ঠেলে প্রায় থপথপিয়ে পথ চলছি। তিনি তো আমার থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছেন। আমাকে পিছিয়ে পড়তে দেখে প্রায় রাগত কন্ঠে বলে উঠলেন - তোমার হাল দেখে আমার করুণা হয়।”আমি একটুও রাগিনা। খালি মনে মনে বলি - দেবী! তোমার এই করুণা আমার বাকি দিনগুলোতেও যেন বজায় থাকে। রাস্তায় আজ মেলা পায়ের কুচকাওয়াজ। এর‌ই মাঝে লক্ষ্মীকান্ত বাবুর সঙ্গে দেখা।  – কি, জামাইষষ্ঠীর বাজার হচ্ছে বুঝি ? তা বেশ।    আমিতো ক্যাটারার কে বলে দিয়েছি। ওরাই     সব ব্যবস্থা করবে।এসব হ্যাপা এখন আর গিন্নি     সামলাতে পারেনা।আর্থারাইটিসের রোগী। হাত     পা নাড়তেই বেলা কাবার, তা জামাইদের     আপ্যায়ন করবে কীভাবে? তবে হ্যাঁ….     এই বলে একটু রহস্যের ভঙ্গিতে আমার কানের     কাছে মুখ এনে, গলার স্বরটিকে যথাসম্ভব     নামিয়ে এনে বলেন, গিন্নির গলার তেজ এখনো     সেই আগের মতই আছে, শুনলে মনে হবে এই      বুঝি তেজগাঁও থেকে এলেন। আমি কোনো জবাব দিইনা। অবশ্য লক্ষ্মীকান্ত বাবু তার জন্য অপেক্ষা না করেই বলেন, “যাই মিষ্টির দোকানের লাইনের টোকেন নিয়ে এসেছি। একবার ফসকে গেলে আবার গোড়া থেকে লাইন দিতে হবে।” কথাকটি উগড়ে দিয়ে তিনি হনহনিয়ে মিষ্টির দোকানের দিকে পা বাড়ান। আমরা দোঁহে আবার কাছাকাছি এসে দাঁড়াই।– শোনো, দুজনের একসাথে ঘোরাঘুরিতে অনেক    সময় লেগে যাচ্ছে। আমি বরং ওদিকে চললাম,   তুমি ততক্ষণে মুদি দোকানের কেনাকাটা সেরে    ফেলো। এই বলেই তিনি চলমান ভিড়ে উধাও হয়ে গেলেন। আর আমি চললাম মুদি দোকানের দিকে। সে ঠাঁইয়ে গিয়েও দেখি আসর সরগরম ষষ্ঠীর বাজার নিয়ে। দোকানের মালিক সুদীপ দত্ত। বছর কয়েক আগেও ভাইয়েরা সবাই মিলে মিশে দোকান চালাতো। ভাইরা ছাড়াও ছিল বাঁধা মাইনের কর্মচারী। লকডাউনের সময় ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে অনলাইন কেনাকাটার চল শুরু হতেই কপাল পুড়লো এদের। ভাইয়ে ভাইয়ে মন টানাটানিতে ব্যবসার ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্কটাই টুটে ফুটে চৌচির হয়ে গেল। এখন দুই ভাই দুই ভিন্ন দোকান চালাচ্ছে। দোকানের সামনে দাঁড়াতেই খাতির করে দেওয়ালে টাঙানো ফ্যানের মুখ আমার দিকে ঘুরিয়ে দিতে দিতে বলে – ষষ্ঠীর বাজারে খদ্দেরের টানাটানি। কাল ষষ্ঠীর দিনে মেয়ে জামাই আসবে। আমার ভাগ্নি আর ভাগ্নি জামাইয়ের‌ও আসার কথা ‌। জোগাড়তো করতেই হয়েছে – ইলিশ, চিংড়ি,পমফ্রেট, খাসির মাংস। এছাড়া পাঁচ রকমের ফল, আর দৈ মিষ্টি।আমি বললাম – এতো বিশাল আয়োজন। একেবারে রাজসূয় যজ্ঞ! একটু ম্লান হেসে সুদীপ বাবু বলেন – এসব তো লোকাচারের ব্যাপার। ব্যবস্থা না করলে সমাজে মান মান্যতা থাকবেনা। নিজের মেয়ে জামাইয়ের জন্য খরচ করতে কার না ভালো লাগে। অথচ ব্যবসার যা হাল ….। সব ভালো যার শেষ ভালো   ও দিকের কাজ ঠিকঠাক সম্পন্ন করে তিনি এসে হাজির হয়েছেন অকুস্থলে। সব জিনিসের কথা তালিকা অনুযায়ী বলা হয়েছে কিনা ঝটিতি তা যাচাই করে আরও কিছু জিনিসপত্র সংযোজিত তালিকায় ঢুকিয়ে দেন। এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির অবকাশে এসবের কথা মনে পড়েছে। পুরো এলাকা টহলদারি করে তাঁর যা অভিজ্ঞতা তা ঝটিতে নিবেদন করেন।সব দোকানেই আজ বেজায় ভিড়। কাপড়ের দোকানে দেখা তনয়ার মায়ের সঙ্গে। কোন্ কাপড়টা কিনলে ভাল হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তনয়ার মা সেটাই অনুমোদন করেছে। কালী বাড়িতে বেজায় লাইন । ভিড় ঠেলে এগনো দায়। মিষ্টির দোকানে আগামীকাল সকালের জন্য টোকেন দেওয়া চলছে।ফলের বাজার আগুন। লিচু,আম কিছুতেই হাত ঠেকানো যাচ্ছে না।পনিরের দাম পঞ্চাশ টাকা বেড়ে গেছে। ষষ্ঠীর কারণেই নাকি এমন মূল্যবৃদ্ধি।কোল ড্রিঙ্কসের বড়ো বোতল শেষ। কথা আরও বাড়তো। সুদীপ বাবু আমাদের বিল তৈরি করে ফেলেছেন। আমি বিলটি নিয়ে পয়সা মিটিয়ে দিই। জামাইষষ্ঠীর কেনাকাটা সেরে এবার ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যেতে হবে।
    নির্জন পথের পথিক, তপনকর ভট্টাচার্য - Debasis Sarkar | একলা পথের পথিক, তপনকর ভট্টাচার্যদেবাশিস সরকার  সম্প্রতি হাতে এলো তপনকর ভট্টাচার্যের লেখা ‘চিলেকোঠা’, ‘নাচ ও পিস্তল’ এবং ‘জন্মদিন’ শিরোনামাঙ্কিত তিনখানা গল্পগ্রন্থ এবং ঐতিহ্যবাহী ‘নান্দীমুখ’ পত্রিকার ‘তপনকর ভট্টাচার্য সংখ্যা’। গত চার চারটি দশক ধরে অক্লান্তভাবে লিখে চলেছেন নির্জন পথের দিশারী যে মানুষটি, তাঁকে নিয়ে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ খুবই জরুরী ছিল। বস্তুত উল্লিখিত ক্রোড়পত্রটি তপন করের সাহিত্যকীর্তির ওপরে এক বহুকৌণিক বিচ্ছুরণ যা পড়া থাকলে আমার এ আলোচনা চর্বিতচর্বণ মনে হবে। তবে, এ তো হতেই পারে যে উক্ত ‘নান্দীমুখ’ পত্রিকাটি আমার উদ্দিষ্ট পাঠকদের অনেকেই পড়েন নি, সেক্ষেত্রে তাঁদের কাছে এই আলোচনাটি পাঠযোগ্য হলেও হতে পারে, সেই প্রত্যাশায় এই লেখা। তাছাড়া, হাইজেনবার্গের নীতি অনুযায়ী বস্তুর অবস্থানকে মাপতে গেলেই তার ভরবেগের একটা তারতম্য আসে। ফলে বস্তুর (বিষয়ভাবনার) ভরবেগ বিভিন্ন মাপকের কাছে বিভিন্ন রকম। হাইজেনবার্গের নীতিতে একে অবজারভার এফেক্ট বা নিরীক্ষক প্রভাব বলা হয়েছে। কোন পাঠক তো একসঙ্গে একটা লেখা পড়েন না। তাই নিরীক্ষক প্রভাব একেকজন পাঠকের কাছে একেক রকমের। সুতরাং মাভৈ! সে ভরসায় এ আলোচনা শুরু করা যাক!“ওই তো বড় খোকা আসছে। খাটাল বাপী পাড়া দখল করলে ছোটখোকার অ্যান্টি এখানে ঢুকে যাবে। তার ওপরে দল যদি মস্তান পোষার জন্য নোটিশ ধরায়, কাউন্সিলার থাকার দরকার কি? বাড়ি বেচে সবাই মিলে একসঙ্গে অন্য কোথাও থাকব। সবই তো শান্তির জন্য।আচ্ছা বউমা ছেলেটার সঙ্গে কি এত কথা তোমার? ওই তো বড় খোকা, ওকে টাকা দিস না। ওর খেল খতম। মাজার জোর নেই। গর্ত খুঁজছে। ভাগিয়ে দে। ওরা সব অকৃতজ্ঞ। উপকার করেছিলি মনে রাখেনি। তোর বন্ধুকে একটা ফোন কর। খোকা সাবধান, কে কোথায় দেখে ফেলবে। একশ দিচ্ছিস কেন ? দশ কুড়ি দিয়ে বিদেয় কর। ও কিছু করতে পারবে না। ওদিকে শাহাজাদা এদিকে রাম অবতার। পেছনে খাটাল বাপি। লাথি মার। দরজা বন্ধ করে দে। বউমা উঠে এস। বড় খোকা উঠে আয়। আবার তর্ক করছে। মেশিন দেখাচ্ছে। অ্যাই অ্যাই ছেলে, যা ভাগ। পালা বলছি, জানিস না, পুলিশ বড় খোকার বন্ধু। পুলিশ ডাকব কিন্তু।” ( ইঁদুর )আবার,“এই নীলু প্রধান বক্তা। সভাপতির বাড়িতে নতুন কুটুম আসবে। ঝামেলা এড়াতে সহ-সভাপতি সাতসকালেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সে কারণে নীলুকে অতিরিক্ত অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আমার মনে হয় পাড়ার ক্লাব হিসেবে আমাদের একটা কর্তব্য আছে। এটা খুন বা আত্মহত্যা যাই হোক না কেন সেটা পুলিশ দেখবে। কিন্তু ভবিষ্যতে আমাদের এই অঞ্চলে এমন কাজ যেন না হয়। আমাদের সেটুকু দেখলেই হবে।আর সুবোধ নামে একটা লোক বাইরে থেকে এসে এরকম অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করে দিব্যি চালিয়ে গেল, আমরা জানতেও পারলাম না। এটা আমাদের গাফিলতি।নীলুর কথা শেষ হল। সবাই চুপচাপ। ক্লাবের সম্পাদক রাজা। প্রাক্তন শিক্ষিত বেকার। এখন প্রোমোটার। তিনটে বাড়ি শেষ করেছে। হাতে আরও দুটো। ”( ভূতের গল্প )কাটা কাটা, ছোট ছোট সরল বাক্যে আমরা এই সময়ে এক নগর পরিক্রমায় বেরিয়েছি। খুব প্রয়োজন না হলে তপনকর বোধহয় যৌগিক বা জটিল বাক্য লেখেন না। তপনকরের ভাষা গঠনের পদ্ধতি এরকমই। খুব অল্প শব্দে তিনি চাক্ষুষ বাস্তবকে ফুটিয়ে তোলেন।আসলে, সাহিত্য রচনার মসৃণ বীথির ধারে দণ্ডায়মান সুখপাঠ্য, গতানুগতিক বিষয় ও সেই অনুযায়ী চরিত্র ও ভাষ্য নির্মাণ বাতিল করে তপনকর এবড়ো খেবড়ো চড়াই রাস্তা ধরে হেঁটে গেছেন। এই পথের পথিক হবার পূর্বাহ্নেই তিনি জানতেন হাতে গোণা দু একজন নাছোড়বান্দা ছাড়া অনুসারী সহযাত্রী বিশেষ তেমন তিনি পাবেন না।তাঁর গল্পের চরিত্রগুলি উঠে এসেছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, অতিদরিদ্র শ্রেণী থেকে। এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চরিত্রগুলির অন্তর্ললোকের উদ্ভাসন তপনকরের লেখালেখির বৈশিষ্ট্য। উদ্ধৃত অল্পাংশগুলিতে যা পরিস্ফুট, বয়ানের ভেতরে প্রবেশ করলেই লেখকের এই আপাতনির্বিকার নির্লিপ্ত ভাষাভঙ্গি একই সঙ্গে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। রক্তাক্ত সংশ্লিষ্টতা নয়, ধ্রুপদী নির্লিপ্তিই তপনকর ভট্টাচার্যের লেখালেখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমাপিকা ক্রিয়াহীন ছোট ছোট বাক্যে আজকের খণ্ড সময়ের টুকরো টাকরা গুলি তপনকরের গল্পের মাল মশলা। তিনি প্রতিটি গল্পেই সমাজের অবক্ষয়, ব্যক্তির স্খলন, মানুষের দ্বিচারিতা, মিথ্যাচার করার প্রবণতা আঁকেন এক অমোঘ নির্লিপ্তর সঙ্গে।তপনকর চারটি দশক ধরে লিখছেন। একটি লেখায় তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে তিন খানি উপন্যাস, অজস্র কবিতা লিখলেও গল্প লিখতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন।পণ্যমোহে আক্রান্ত নাগরিক জীবনের বহুস্তরীয় জটিলতার ফাঁকফোকর গুলির প্রতি তিনি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। সে হিসেবে তাঁকে নরেন্দ্রনাথ মিত্রের যথার্থ উত্তরসূরী বলা যায়।নিজের লেখালেখি সম্পর্কে একটি নিবন্ধে তপনকর জানিয়েছেন, জীবন সম্পর্কে প্রশ্নমূলক সমাজ সচেতনতা তাঁর ছোটগল্প রচনার অন্যতম প্রেরণা। তাই তার প্রকাশভঙ্গি সরল হতে পারে না। আম পাঠকের দরবারে তাই তাঁর গল্প দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। আবার, অন্য কয়েকটি গল্পে দেখি – “ আমি কি করেছি? আমাকে তোমরা মারছো কেন?লক্ষ্য ছিল কপালের মাঝখানে। নিশানা ভুল হওয়ায় গুলি ছিটকে কানের চামড়া ছিঁড়ে দিল।একের বেশি দুই খরচের ইচ্ছে বা সময় কোনটাই হয়ত ছিল না। নীলোৎপল বেঁচে গেল।সবটুকু ভুল লক্ষ্যবস্তু এবং লক্ষ্যভেদে। ” ( আততায়ী )কিংবা “ অবশেষে সে প্রলয়কে ন্যাংটো হতে বাধ্য করল।ছুরির ডগায় মাখন। প্রলয়কে বলল, চেটে নাও।একটা শিশুও জানে এক্ষুনি ওর জিভ কেটে যাবে। রক্তারক্তি কান্ড বিল্বদলের রক্ত সহ্য হয় না। ”( হননকথা )অথবা,“ নিলাদিত্য পকেট থেকে নাইলনের দড়ি বের করে চেয়ারের পেছনে মজুমদারের হাত দুটো বাঁধে।এক ফালি কাপড় বেরোয় বাঁ পকেট থেকে। চোখ বাঁধে। চার ইঞ্চি খোলার শব্দে মজুমদার মরিয়া চেষ্টা করে – চার লাখ।একটুও লাগবেনা। নিলাদিত্য ছুরি ঠেকায়।পাঁচ লাখ, দশ লাখ, শালাকে সরিয়ে তোমাকে ফরটি পার্সেন্ট থলে থেকে আপেল বের করে চার ইঞ্চিতে কাটে। শসা, কলা, আঙ্গুর টুকরো টুকরো করে কাটে। চারটে ডিম ফাটিয়ে হলুদ কুসুম মাখায়। প্যাকেট ফুটো করে দুধ ঢালে, টেবিলে দুধ গড়ায়, দুধ লাল হয়, হলুদ কুসুমে লাল রং। আপেল কলা শসার টুকরো সব রক্তবর্ণ।বেসিনের কলে ছুরি ধুয়ে পকেটে ঢোকায়। মজুমদারের বিস্ফারিত মুখে ছোটবেলার হাসি।নিলাদিত্য দরজা খুলে শিস দিতে দিতে নামতে থাকে। পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুল আঁচড়ায়। রাস্তায় নেমে ডাকে – ট্যাক্সি।( হন্যমান )‘আততায়ী’ গল্পে নীলোৎপলকে খুন করতে এসেছে গালে লাল জড়ুলওয়ালা অজ্ঞাতনামা আততায়ী। ‘হননকথা’ গল্পে বিল্বদল খুন করতে এসেছে প্রলয়কে, আবার ‘হন্যমান’ গল্পে পেশাদার খুনি নিলাদিত্য খুন করতে এসেছে মজুমদারকে। তিনটি গল্পের বহিরঙ্গের সাদৃশ্য এটাই, তবে তিনটি গল্পেই হননকারী ও হন্যমানের যে ডিসকোর্স তা ফ্রয়েডিয় মনস্তত্ত্বের আলোকে বিচার্য। হত্যা করা অথবা নিহত হওয়াই কি মানুষের নিয়তি! বিশেষ করে ‘হননকথা’ গল্পটির পোস্টমডার্নিটি পাঠককে বিস্মিত করে।যৌনতার অতৃপ্তিই কি মানুষের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তোলে! নাকি এই সমাজের কালেক্টিভ অবক্ষয়ই মানুষের মধ্যে দ্বিচারিতা মিথ্যাচার করার প্রবণতাকে জাগিয়ে তোলে! গল্পগুলির আনুষঙ্গে খোদ তপনকর নিজেই এক জায়গায় বলেছেন, “খুন, খুনি, হত্যা, হত্যাকারী, সম্ভাব্য হত্যাকারী ও তার শিকারের মধ্যে সম্পর্ক আমার লেখার বিষয়ের মধ্যে ঢুকে পড়তে লাগল।”তপনকর মনে করেন, “প্রথা বা ছক একটি খাঁচা, তার বাইরে শিল্পীকে বেরোতেই হবে। নতুন গতিপথের সন্ধান করা সাহিত্যের চিরকালীন চরিত্র।” অন্য একটি গল্পে দেখি,“ আমার বউ, বুঝলি, খুব খারাপ…একটু আগেই, কিরে চিনতে পারছিস না আমি মহাদেব… সেই যেকি হলো ভাই? গাড়ি আসবে তো?কথাগুলো একজনই বলছে। নাম মহাদেব। মোহনলাল রীতিমত লেজে গোবরে। চিনতে পারছে না – মহাদেব নামে সে যাকে চেনে – এ অবশ্যই সে নয়। ” ( মহাদেব )একটি গল্পের শুরু থেকেই পাঠক্রিয়ায় এরকম আগ্রহ তৈরি করা একজন শিল্পীর কাজ। ভূমিকাটুকুতে বোঝা যাচ্ছে দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর দেখা হয়েছে যার ফলে একজন নিঃসংকোচে উচ্চারণ করছে তার স্ত্রী খুব খারাপ ! কিভাবে খারাপ, কতটা খারাপ এসব ঘিরে পাঠকের মধ্যে টান টান আগ্রহ তৈরি হয়। গল্প নির্মাণের এই কৌশলটিকে বলে, Attraction created by the upper surface of the text বা আখ্যানের ওপরতলার টান। আমি এটিকে বলি, ‘বয়ানের বৈঠকখানার আকর্ষণ’। কোন বাড়ির বৈঠকখানার মনোরম ছিমছাম পরিবেশটি দেখে খানিকক্ষণ বসার আগ্রহ হয় এমনকি তক্ষুনিই উঠে পড়তে ইচ্ছেও হতে পারে। সাহিত্যবস্তুর ক্ষেত্রেও তাই। মুখপাতেই এরকম টানটান আগ্রহ তৈরি করে ফেললে সাহিত্যবস্তুটিকে পাঠক আঁকড়ে ধরবে। সুচারুভাবে নির্মিত এই গল্পটি নিয়ে আরো অনেক কথা বলার লোভ হচ্ছে। কিন্তু পাছে ভাবী পাঠকের প্রতি অবিচার করে ফেলি, তাই আপাতত এটুকু বলা যাক, এই অসাধারণ মর্মস্পর্শী গল্পটি পাঠককে বেদনার্ত করবে। সিদ্ধি শুঁকলে নেশা হয় না, সিদ্ধি খেতে হয়। পাঠকরা গল্পটি পড়ে নিন।আবার, ধ্বসে পড়া মধ্যবিত্ত জীবন, মধ্যবিত্ত মানসের ছবি দেখি আর একটি চমৎকার ‘ডেডবডি’ গল্পে, “তিরিশ বছর আগে যেদিন বাচ্চু পিনুর কাছ থেকে এ গল্পটা শুনেছিল তার একটু আগেই বিটলের ডেডবডি নিয়ে একটা দল চলে গেছিল। সেদিন পিনুর চোখ থেকে জল গড়াতে দেখে বাচ্চু জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তুমি ওকে চিনতে?’সে কথার উত্তর না দিয়ে পিনু বলেছিল, শ্মশানে যাওয়া উচিত ছিল। দূর সম্পর্কের দাদা, ওর পয়সায় অনেক চা বিস্কুট খেয়েছি।এক চুমুকে কাঁচের গ্লাসে চা শেষ করে আঙুল ঢুকিয়ে তলানিতে পড়ে থাকা চিনির সবটুকু তুলে এনে চোখ বন্ধ করে গোপাল চাটতে থাকে আর ভুটানকে বলে, ‘ যা যা বললাম, সব কিন্তু বাচ্চু আমাকে বলেছিল। জল মেশানো মনে হলে – সে ধর যদি তোর মনে হয়ও দোষের কিছু নেই। সেদিন সকালে বুঝলি, পিনুর ডেড বডি দেখে বাচ্চু কেঁদে কেটে একশা। আমাকে নিয়ে ওই সাত সকালেই বেসমনির ঠেকে। এর মধ্যে ব্লাডার থেকে চোলাইয়ের ফার্স্ট কাট পেটে ঢুকেছে, তো সেই গল্পে যদি একটু জল থাকে, দোষের কিছু নেই।’ ” ( ডেডবডি )তুলির নিপুণ আঁচড়ে ফুটে উঠেছে মধ্যবিত্ত নাগরিক যাপনের স্থূলতা ও কুশ্রীতাগুলি।অন্য একটি গল্পে দেখি, “আমি টিভির ভিতরে ঢুকে পড়ি। মিছিলে পা মিলিয়ে আমিও এগিয়ে চলি। হঠাৎ একটানা গুলির শব্দ। মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাই, ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই আমার কপালে পুলিশের লাঠি, -- হাত ধরুন কমরেড – একটা বাড়ানো হাত, -- আমি আঁকড়ে ধরতেই দেখি ক্যাবলা স্মৃতি পাঠাগারের ক্যাবলাদার হাত আমাকে টেনে তুলছে। — দৌড় লাগা, আমার বাড়িতে চল, তোকে ফার্স্ট এইড দিতে হবে। ক্যাবলাদার ঘরে অনেক মানুষ। আমার বাবা-মা, কাকা, জ্যাঠা, ভাই, বোন। মা বলছে টিভি বন্ধ কর। ক্যাবলা ঘুমোবে। টিভির আলো বৃত্তাকারে ছোট হতে হতে একটা মাকড়সা হয়ে যেতেই আতঙ্কে কেঁপে উঠলাম। মা, মাগো। আমি তক্তপোশে শুয়ে পড়ি। ” ( জন্মদিন )এবার, অন্য আরেকটি গল্পে (মকরধ্বজ) পড়ি, “ল্যাংড়ার হাতে একটা সবজি কাটার ছুরি। কথা পছন্দ না হলে গলা কেটে দেওয়াই তার কাজ। এই কাজের জন্য দীর্ঘদিন তাকে জল্লাদ বলা হতো। এখন সে সমাজসেবী একটু আগেই একজন ধর্ম আচরণ নিয়ে কথা বলার সময় কথা প্রসঙ্গে জল্লাদ শব্দটা উচ্চারণ করায় ল্যাংড়া তার গলা কেটে ফেলেছিল। ল্যাংড়ার অসহিষ্ণুতা আর সহ্য করতে না পারার অক্ষমতার জন্য সে খাতির পায়, তাকে ভয়ে এবং ঘৃণায় সকলেই মান্যিগন্যি করে। তার গলা কাটার পদ্ধতি এতটাই অভিনব, ধড় থেকে মাথা আলাদা হলেও মৃত্যু হয় না। শুধুমাত্র হাতে অথবা কাঁধে ইচ্ছেমতো মাথা বহন করতে হয়। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনেও অসুবিধা হয় না।কিন্তু গুলি পিস্তলের যুগে মাথা কাটার বিষয়টা নিয়ে আপত্তির কথা একজন বলছিল। কাটা মাথার ভার বহন করে বেঁচে থাকা কষ্টকর। বিকল্প ব্যবস্থা চালু হলে ল্যাংড়ার গুরুত্ব বাড়বে না কমবে ঠিক করতে না পেরে লোকটার গলা না কেটে দৌড়াদৌড়ি করছিল।……….মাথা উঁচু করে বাঁচার সক্ষেপ যদি না থাকে এটা একটা চমৎকার ব্যবস্থা। এর জন্য যা ক্ষতিপূরণ এবং ভাতা পাওয়া যাবে একজন মানুষ সচ্ছন্দে তার পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে পারবে। আর মাথা বহন করা সে তো অভ্যাস !”না! সাম্প্রতিক ভাতা বিতর্ক নিয়ে লেখকের এই বিদ্রুপ কিনা সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমরা বরং গল্পটির অন্য অংশে যাই — লেখা মানে তো শুধু ঘটিত বাস্তব বা ঘটমান বাস্তবের কথকতা নয়, আজকের গল্পে চাক্ষুষ বাস্তবতাকে উবিয়ে দিয়ে অসদ বাস্তবের একটা কাঁথা কম্বল গল্পের গায়ে চাপাতে হয়। নতুন শতকের লেখার আবেদন শুধু হৃদয়ের কাছে নয়, মগজের কাছেও!“গভীর রাতে মকরধ্বজ তার প্রিয় নদীর পাশে এসে দাঁড়াল। তার হাত বহন করছিল তারই মাথা। কেউ যা কখনো করেনি হাত থেকে মাথাটা ছুড়ে দিয়েছিল নদীর জলে। নদীতীরে মকরধ্বজের মৃত ধড় পড়েছিল।”হাংরি, শ্রুতি, শাস্ত্রবিরোধী, ছোটগল্প নতুন রীতি, লাতিন আমেরিকান জাদুবাস্তবতা প্রভৃতি নানা স্তর অতিক্রম করে বাংলা গল্প আজ যথেষ্ট পরিণত। তপনকর ভট্টাচার্য কোন ঘরানায় প্রভাবিত? লেখকের কপালে একটা ট্যাগ না এঁটে দিলে আমাদের শান্তি হয় না! ‘ছোটগল্প নতুনরীতি’ আন্দোলনকারীদের তত নয়, বরং তাঁদের অনুকারীদের মধ্যে প্রবেশ করেছিল এক ধরনের আঙ্গিক সর্বস্বতা। এই অনুকারীদের মনে হয়েছিল, গল্পহীন গল্প লেখাই সারকথা।তাঁরা বুঝতে পারেন নি, আঙ্গিক যখন সমাজের নির্যাসকে ধরার প্রণালী হয়ে ওঠে না, তখন তার আধুনিকতার দাবি ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যায়!সামান্য পরবর্তী সময়ের ছোট গল্পের আন্দোলন সাহিত্যের সামাজিক দায় শুধু অস্বীকারই করে নি, সেই আন্দোলনের শরিক গল্পকাররা জানিয়েছিলেন বাস্তবতায় তাঁরা ক্লান্ত। সচেতনভাবে তাঁরা সচেষ্ট হয়েছিলেন গল্পকে যথাসম্ভব আত্মকেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে। অন্তরাত্মার জটিল অনুভবকেই তাঁরা করে তুলতে চেয়েছিলেন গল্পের বিষয়, আদৌ যদি কোন বিষয় থেকেই থাকে! কিন্তু এই বাস্তববিমুখতা শেষ অব্দি পাঠকের চোখের মণি হয়ে দাঁড়ায় নি।তপনকরের গল্প ছোট্ট খাটো, বাগবিস্তারহীন। আমার মনে হয়, নিটোল গল্প বলাকে পাখির চোখ করাও যেমন ভালো নয়, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত বর্ণনা, লোকসংস্কৃতির বিবিধ প্রসঙ্গ, আর্থসামাজিক প্রেক্ষিত, ইতিহাস, ভূগোল, মনোজগতে ডুবে যাওয়া একটা পর্যায়ের পর নিছক তথ্যের সমাবেশ মনে হতে থাকে যা গল্পটির ভাঁজে ভাঁজে পলি জমিয়ে নিম্নপ্রবাহের নদীর মতোই গল্পটিকে মন্থরা ও পৃথুলা করে।শিল্পের পর্যাপ্ত শর্ত পূরণ করার দায় হয়তো লেখকের নেই তবে একটি অন্যতম শর্ত হলো পাঠকের আগ্রহ টানটান রাখতে হয় শেষাবধি। চারটি দশক ধরে লেখালেখিতে তপনকর সে দক্ষতায় কুশলী তা বলার অপেক্ষা রাখে না! সঙ্গী বিশেষ কেউ নাইবা হলো!বব ডিলানের প্রফেটিক উক্তি ধার করে বলাই যায়, “You don't need a weatherman to know which way the wind blows.” ২১ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য তেমনই কোন ড’য়ে বিসর্গ ওয়ালা পন্ডিতের দরকার নেই। তপনকর ভট্টাচার্যের মতন একজন লেখক আর দেবাশিস সরকারের মতন একজন সাধারণ আলোচক থাকলেই যথেষ্ট ! ###############
    সাত খুন মাফ - Sobuj Chatterjee | ITS A POLlCE STATE. লন্ডন না হোক আমাদের রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন অনেকটাই আমেরিকার মতো হয়ে গেছে। যেখানে সাধারণ মানুষকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে মারা যায়। এবং এর কোন রকম সুরাহা নেই। এরা শুধুই শাসকের কথা শোনে এবং ভিডিও ক্লিপিং নিয়ে এদের দ্বারস্থ হলেও এরা নির্বিকার। জনগন এবং সংবাদ মাধ্যম এদের বিন্দুমাত্র বিচলিত করতে পারে না। কারণ জবাবদিহিটা একমাত্র সরকার নিতে পারে।আমাদের বর্তমান সরকারও শাসন ব্যবস্থায় তথা পুলিশ প্রশাসনে এই চমকপ্রদ সংস্কার কায়েম করেছে এবং পুলিশের দায়িত্ব অনেক কমিয়ে দিয়েছে। আজকে পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষ যে কিনা অন্যায়ভাবে অত্যাচার এবং অবিচারের শিকার তার FIR পর্য্যন্ত রেজিস্টার তো করেই না,উল্টে হুমকি দেয় এবং জেলে ভরে  দেবার ভয় দেখানো হয়।সাম্প্রতিক সোহম কান্ড ঔদ্ধত্যের সীমা ছাড়িয়েছে। যে রেস্টুরেন্ট এর মালিক সর্বতোভাবে সোহমের স্যুটিং এর সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল  তার ই মুখে বিরাশি সিক্বার ঘুঁসি, লাথি ও চড় । মালিককে কলার ধরে হিড়হিড় করে টেনে রেস্তোরাঁর বাইরে বের করে দেয়।তার একমাত্র দোষ হলো অনেক গাড়ির মধ্যে একটা অন্তত গাড়ি পার্কিং থেকে খালি করে দিতে। ব্যাস সোহমের লোকজন তা করতে অস্বীকার করে এবং তার ওপর চড়াও হয়।তার পরের ঘটনা তো সবাই জানে। সোহমের লাইভ  বক্সিং এবং কিকিং শো এর ভিডিও। তার বক্তব্য হলো - অভিষেক ব্যানার্জি কে গালাগালি করেছে তাই আমি মেরেছি। ভিডিও ফুটেজ থেকে রেস্টূরেন্টের মালিকের কথায় অভিষেক ব্যানার্জিকে গালিগালাজ করার ব্যাপার সর্বৈব মিথ্যা।যাই হোক, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সর্বোপরি একজন শিল্পীর পক্ষে এই ভাষন এবং নির্মম বাহুবলের প্রদর্শন অত্যন্ত উদ্বেগের এবং ভয়ঙ্কর। পুলিশ প্রশাসন এবং সরকার পুষ্ট সংবাদ মাধ্যম যথারীতি নির্বিকার।সংবাদ মাধ্যম তাদের দায়সারা জিজ্ঞাসাবাদ করেই খালাস।ওদিকে সোহম রীতিমতো বুক ফুলিয়ে পুলিশি প্রহরাতেই সবার সামনে দিয়ে, হয়তো নতুন কোনো রেস্টুরেন্টের দিকে ধাবিত হয়!!তার মালিক কি করবেপ্রতিবাদ? না এই জুলুম মেনেই নেবে??"নাই নাই এ আঁধার থেকে ফেরার পথ নাই...
  • ভাট...
    comment | ওপারের বই
    হারীত বুকস 
    এই দুটো সংস্থাও দেয়। তবে আমি আনাই নি। 
    commentসিএস  | এটাও, কথা প্রকাশ, কলেজ স্ট্রীটে আছে। আমি যদিও কিছু বইয়ের নাম দিয়ে এসেছিলাম, জানায়নি কিছু। https://kathaprokashdhakabooks.com/Contact_us/contactdetail রকমারি দেয় না ? আমি তো ভাবতাম দেয়, ব্যবহার করিনি যদিও।
     
     
    commentb | রকমারী ইন্ডিয়াতে বই  দেবে ? 
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত