এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • বাবুলাল গলির ফুগগা বাঈ (গল্প)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ২৫ মে ২০২৪ | ৫২৬ বার পঠিত
  • বাবুলাল গলির ফুগ্‌গা বাঈ

    [ গল্পটা ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর শহরের বাবুলাল গলির। তখন, মানে চার দশক আগে রায়পুর ছিল দক্ষিণ পূর্ব মধ্যপ্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর, জনসংখ্যা মেরেকেটে চার লাখ। এখন রায়পুরের জনসংখ্যা চার কোটি ছাড়িয়েছে। গড়ে উঠেছে আধুনিক বিমানবন্দর, অনেক বহুতল, এইমস্‌ হাসপাতাল, আই আইটি এবং আরও অনেক কিছু। বন্ধ হয়ে গেছে বাবুলাল এবং আরও অনেক সিনেমা হল। বন্ধ হয়েছে বাবুলাল গলি এবং তার আদিম ব্যবসায়। হারিয়ে গেছে বড়ী মালকিন, ছোটি মালকিন, ফুগগা বাঈ, রোশনী, চাঁদনির দল। কিছু রয়ে গেছে এক কাক-ভুশণ্ডির স্মৃতিতে।]


    বৃষ্টিটা থামবে থামবে করেও থামছে না। ঝিরঝির থেকে টিপটিপ-ফের ঝিরঝির। সমু’র বিরক্তি ধরে গেল। ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে আধঘন্টা হল। এই সময় ওরা তিন বন্ধু লাঞ্চ সেরে দোতলার থেকে নীচে নেমে একটু ধোঁয়া গিলে আসে, তার আগে ফুটপাথ পেরিয়ে ব্যাংকের উল্টোদিকের বাবুলাল গলির দোকানটার কাঁচের ছোট গেলাসে ধোঁয়াওঠা কড়িমিঠি চা এক রাউন্ড।

    বাবুলাল গলি

    ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের মালবীয় রোডে বাবুলাল সিনেমা হল, শহরের প্রায় কেন্দ্রস্থলে। তার গা ঘেঁষে একটা অন্ধকার সরু গলি। পাশের পান দোকানের এগিয়ে থাকা কাউন্টারের জন্য গলির মুখটা চোখে পড়ে না। মালবীয় রোডের বাজার এবং ফ্যান্সি দোকানপাটের গ্রাহকেরা বেশিরভাগই গলিটাকে খেয়াল করে না। যারা করে তারা তাড়াতাড়ি পা’ চালিয়ে এগিয়ে যায়। বিশেষ করে সঙ্গে যদি বৌ-বাচ্চা থাকে।

    কারণ, গলিটা চিনুক বা না চিনুক এর নাম শহরের সবাই জানে — বাবুলাল গলি, ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে নামজাদা রেড লাইট এরিয়া। অজিতের মত কেউ কেউ বেশ সমঝদারের গলায় বলেঃ মুম্বাইয়ের আছে কামাঠিপুরা, দিল্লির জি বি রোড, পুণে শহরের বুধবার পেঠ আর কোলকাতার সোনাগাছি। তবে আমাদের আছে বাবুলাল গলি।

    কথাটা বাড়াবাড়ি। বাবুলাল গলি অনেক ছোট, ভেতরে ঢুকে ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মত দুদিকে ছড়িয়ে গেছে, কিন্তু খুব বেশি দূর যায় নি। দু’দিকেই খুপরি খুপরি কিছু ঘর, দোতলা। একদিকের মালিক ছো্টি মালকিন। অন্যদিকের ঘরগুলোর — বড়ী মালকিন। মাঝখানের মূল গলিটা সরু থেকে সরু হতে হতে পেছনের রহমানিয়া চৌকে গিয়ে শেষ হয়েছে।

    হ্যাঁ, একসময় রহমানিয়া চৌকের জৌলুষ ছিল, এখন ভাঙাহাট। এখানে একসময় বাঈজি বা তওয়াইফ সংস্কৃতির বোলবোলা ছিল। সন্ধ্যে হলে সারেঙ্গীর ছড় টানার সঙ্গে তবলা বোল তুলত আর পথচারির কানেও আসত নর্তকীর নূপুর নিক্কণ। নীচের গলিতে বিক্রি হত বেলফুল আর তবক দেওয়া মিঠিপাত্তির পান। নর্তকীরা ছিলেন গর্বিত তওয়াইফ, নিজেদের বলতেন কলাকার — আর্টিস্ট।

    আর একশ’ গজ দূরের বাবুলাল গলির মেয়েদের কথা উঠলে এঁদের নাসিকা ঘেন্নায় কুঞ্চিত হত। যেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছেলেমেয়েদের সামনে সরকারী হিন্দি মিডিয়াম স্কুলের বাচ্চাদের কথা উঠেছে। আর্টিস্টদের সঙ্গে বাজারু মেয়েদের তুলনা!

    বাবুলাল গলিও জানত – আমি ব্রাত্য, আমি মন্ত্রহীন। মেয়েরা বুঝত — ফুলের মালাগাছি, বিকাতে আসিয়াছি, পরখ করে সবে করে না স্নেহ।

    তাই বাবুলাল গলির তুলনা নামজাদা কারও সঙ্গে হতে পারে না। সমু বা সমরেন্দ্রের আরেক বাঙালি সহকর্মী কুণাল চালের সঙ্গে ডাল অন্ত্যমিল দিয়ে পদ্য লেখে। তার দু’একটা রায়পুরের বাঙালী কালীবাড়ি সমিতির বার্ষিক ম্যাগাজিনে বেরোয়। ব্যাটা মিটমিটে শয়তান।

    সে একদিন সিগ্রেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে উদাস মুখ করে বললঃ

    ‘মাঝে মাঝে মনে মনে চুলকাই আলফাল,
    থেকে থেকে –“আয় আয়”, ডেকে ওঠে বাবুলাল।
    মনে মনে তড়পাই, যাই যাই চলে যাই,
    হঠাৎ খেয়াল হয় -বৌ খিঁচে দেবে খাল’।

    সবাই হেসে ওঠে। মারাঠি সহকর্মী প্রভাকর বিরক্ত মুখে বলে — জরা হিন্দি মেঁ সমঝাও। হম ভী হঁস লেঁ। তুম বাঙালিলোগ আপস মেঁ কিঁউ খুসুরপুসুর কর রহে হো?

    প্রভাকরের বাঙালিদের উপর একটু রাগ আছে। বিয়ে করেছিল প্রতিভা কারান্ডিকরকে — সে কাজ করত একটি বড় মার্কেটিং সংস্থায়। বিয়ের মাত্র তিন’বছরের মাথায় প্রতিভা ওর থেকে আলাদা হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ফ্যামিলি কোর্টে প্রভাকরের বিরুদ্ধে ক্রুয়েলটি’র চার্জ এনে ডিভোর্স চায়। পরে জানা গেল, নিজের অফিসে বাঙালি সেলস্‌ ম্যানেজারের সঙ্গে ওর অ্যাফেয়ার চলছিল। ডিভোর্স পাওয়ার পর প্রতিভা ট্রান্সফার নিয়ে অন্য শহরে চলে যায়।

    ব্যাপারটা নাকি অনেকেই জানত, শুধু প্রভাকরই কিছু ইঙ্গিত পায়নি।এরপর প্রভাকরের রাগ বেড়ে যায় দুই বাঙালী সহকর্মী সমু ও কুণালের ওপর। সব জানত, কিন্তু সময় থাকতে ওকে সতর্ক করল না? কেমন বন্ধু ওরা?

    পদ্যটার অর্থ বোধগম্য হওয়ার পর প্রভাকর বলে — বৌ কেন? পুলিশ হী চমড়ী উতার দেগী। বেশি দূর যেতে হবে না, কোতওয়ালী থানাতেই পেছনে হাম্পু ভরে দেবে।

    সত্যি কথা। এখান থেকে পাঁচশ’ মিটার দূরত্বে কোতওয়ালী থানা। ওদের চোখের সামনেই চলে আসছে আদিম ব্যবসা, কয়েক দশক ধরে।

    আজ তিনবন্ধু নীচে নেমে গিয়ে বাবুলাল গলির মুখের দোকানে ঝোলানো পাটের দড়ি থেকে সিগ্রেটে আগুন ধরাতে গিয়ে দেখল – এই অশ্লীল বৃষ্টি দিনটাকেই মাটি করে দিয়েছে। অন্যদিন দুপুরে অন্ততঃ তিন-চারজন মহিলা গলির মুখে সেজেগুজে দাঁড়ায়। সন্ধ্যের মুখে বারো-তেরোজন। আজ সব ভোঁ ভাঁ। মাত্র একজন। কিন্তু যার জন্য ওদের আসা সে আসেনি। ফুগগা বাঈ।

    ফুগগা বাঈ

    ফুগগা বাঈ এই গলির দাপুটে বাসিন্দে। বড়ী আর ছোটি মালকিনের পর হায়ারার্কিতে এরই স্থান। তবে ও মালকিন নয়, কিন্তু অনেক পুরনো বলে ওর একটা পাকাপাকি ঘর ভাড়া নেওয়া আছে।

    আট-নয় বছর বয়সেই ও এসেছিল রহমানিয়া চৌকে, বিলাসপুর জেলার মুঙ্গেলি শহরের বাঞ্জারি পাড়া থেকে। ওরা বাঞ্জারন বা জিপসি। ওদের শেকড় নাকি ইরানে। ধর্মে শিয়া। ভাল গানের গলা দেখে ওকে দুর্ভিক্ষের বছরে এক দালাল কিনে এনেছিল। ওর এলেম দেখে প্রৌড়া জেবুন্নিসা গাণ্ডা বাঁধিয়ে ঠুংরি শিখিয়েছিল। ওর নাম দিয়েছিল লুতফুন্নিসা বা লুৎফা। কিন্তু সবাই ওকে ডাকত বাঞ্জারন বলে। সে অনেক আগের কথা।

    এখন রহমানিয়া চৌকে মুজরো উঠে গেছে। পেটের দায়ে ওকে হতে হল বাবুলাল গলির বাসিন্দে। শুরুর দিকে ওর ঠাট-ঠমক-নখরার সামনে অন্য কোন মেয়ে চোখে লাগত না। এখন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই লুৎফা হয়ে গেছে ফুগগা বাঈ। এই নাম হল কী করে?

    শুনুন, ফুগগা মানে বেলুন, ব্যস্‌ বাকিটা বুঝে নিন। আগে আপ সমঝদার হ্যায়।

    ফুগগা বাঈয়ের আর একটা গোপন পরিচয় আছে, সেটা বাবুলাল গলির বাসিন্দেদের কাছে তেমন গোপন নয়। ও হল পুলিশের খবরি বা গুপ্তচর। এই এলাকায় দু’পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যত কাজকম্ম হয়, তার বেশিরভাগ খবর ফুগগা বাঈয়ের কাছে পৌঁছে যায়। সে মদ বা ড্রাগের চোরাচালানের নতুন সাপ্লাই হোক, বা অন্য শহরে খুন-জখম-ডাকাতি করে কেউ এই এলাকায় গা ঢাকা দিতে আসুক — ফুগগা বাঈয়ের চোখ-কান এড়ানো কঠিন।

    একটা নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে এসব খবর ও পুলিশের কাছে পৌঁছে দেয়। এ’জন্যেই এই গলিতে ওকে কেউ বেশি ঘাঁটায় না। তবে পেট বড় বালাই। আগে ও যখন লুৎফা ছিল তখন ওকে সেজেগুজে অন্য মেয়েদের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেষি করে গলির মুখে দাঁড়াতে হত না। খদ্দের আগে থেকেই খোঁজ করে ওর ঘরে পৌঁছে যেত। এখন সে দিন গেছে। তবে এখনও আগের গুমর খুব কমেনি। মেজাজ খারাপ হলে খিস্তি দিয়ে খদ্দের থেকে শুরু করে সবার চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করে।

    এখন এই ডাকসাইটে ফুগগা বাঈয়ের সঙ্গে তিন ব্যাংকওয়ালে বাবুর দোস্তি হয়ে গেছে বছর খানেক আগে। সে এক কাণ্ড।

    ওরা ব্যাংকের দোতলার ব্যালকনি থেকে খালি সময়ে উলটো দিকের গলির মেয়েদের দেখে রসালো আলোচনা করত। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিত, যেমন — ওই লম্বা কালো টানা টানা চোখ, ও কিন্তু আমার। তোরা ওকে নাম ধরে বলবি না, ভাবী বলবি। বুলবুল ভাবী।

    রাতে আলো জ্বললে ব্যাংক বন্ধ হলে ওরা বাড়ি ফেরার সময় স্লো-মোশনে উল্টোদিকের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যেত, চোরা চোখে খোঁপায় বেলফুলের মালা, রঙিন ঠোঁটের মেয়েগুলোকে দেখে ফের নিজেদের মধ্যে একপ্রস্ত কল্পনার মায়াজাল বুনত।

    কিন্তু একদিন ওই দল থেকে একজন ওদের রাস্তা আটকে দাঁড়াল। সোজা জিগ্যেস করল — ভেতরে আসবে? নাকি রোজ রোজ তাকঝাঁক করেই চলে যাবে?

    ওরা থতমত খেয়ে যায়, মুখে কথা জোগায় না।কিন্তু মেয়েটি রাস্তা ছাড়ে না। সমু’র কাঁধে হাত দিয়ে বলে-সুন বাবু, জেব মেঁ কুছ হ্যায়? হিম্মত হ্যায়? নহীঁ তো ফুট ইঁহা সে! অভী কাম-ধান্ধে কা সময়, খোটে সিক্কে!

    পকেটে কিছু আছে? ভেতরে যাবার সাহস আছে? নইলে কেটে পড়। এখন কাজের সময়, যত অচল সিকি!

    কুণাল তো তো করে বলে — না, না; আমাদের কোন বাজে মতলব নেই। আমরা উল্টোদিকের ব্যাংকে কাজ করি। ফেরার সময় এদিকের ফুটপাথ ধরে যাই, আর কিছু নয়।

    মেয়েটির চোখ গোল গোল হয়ে যায়।
    -- আচ্ছা! তোমরা ব্যাংকওয়ালে বাবু? কোই বাত নহীঁ। ওই ব্যাংকের একজন আমার বন্ধু, তাকে চেন নিশ্চয়ই? অজিত, অজিতবাবু। মস্ত আদমি, বহোত মজেদার। আচ্ছা, চিনতে পেরেছ? তোমাদের দোস্ত? তাহলে তোমরাও আমার দোস্ত। অন্য সময় এস, দুপুরের বা বিকেলের দিকে। খানিক গল্প করা যাবে, পয়সা-টয়সা লাগবে না।

    ওরা তখন হাজার ভোল্টের শক খেয়েছে, কেটে পড়তে পারলে বাঁচে।

    পেছন থেকে আওয়াজ আসেঃ অজিতবাবুকে মনে করে বোল — ফুগগা বাঈ ইয়াদ কিয়া। অনেকদিন দেখি নি।

    ওরা হতভম্ব, শেষে অজিতও এই পাড়ার খদ্দের! বিশ্বাস হয় না। ও যে ব্যাংকের অফিসার!



    অজিত

    অজিত এই ব্যাংকের শাখার ফিল্ড অফিসার, রায়পুর শহরেরই ছেলে। স্টাফদের মধ্যে ওর নাম ‘চলতা পূর্জা’, যাকে বাংলায় বলে চালু মাল। কাজকর্মে যত না চৌখস, তার চেয়ে বেশি দক্ষ জুগাড়মেন্টে। অর্থাৎ, ও বড় সায়েবদের মন জুগিয়ে চলে বা চামচাগিরি করে বললে কম বলা হবে। ও বড় ঘাটে নৌকো ভিড়িয়েছে।এই শহরেই ব্যাংকের রিজিওনাল অফিস। দিনে একবার সেখানে হাজিরা দেওয়া ওর নিত্যকর্মের মধ্যে পড়ে।

    মালবীয় রোডের এই সাধারণ ব্র্যাঞ্চে সকালে হাজিরি লাগিয়ে ও সোজা ওখানে চলে যায়।সেখানকার নতুন বদলি হয়ে আসা বড়, মেজো, সেজো সব সায়েবদের এবং মেমসায়েবদের সমস্যার সমাধান করা ওর যাকে বলে বাঁয়া হাত কী খেল। বড় মেমসায়েবের ফোরেন থেকে আনানো কোন ফেস ক্রীম ফুরিয়ে গেছে। মেজ সায়েবের ছেলেটার পাবলিক স্কুলে অ্যাডমিশন করাতে হবে। সেজ সায়েবের সপরিবারে ছুটিতে অজন্তা ইলোরা যাওয়ার হোটেল এবং ট্রেনের এসি কোচে রিজার্ভেশন, অতিরিক্ত টেলিফোন লাইন লাগিয়ে দেওয়া — সব সমস্যা শুনে ওর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। তারপর দেয় অভয়বাণী — হো জায়েগা ম্যাম্‌।

    এই ব্যাংকে আরও অনেকে চামচাগিরি করতে কোমরবেঁধে তৈরি। কিন্তু অজিত ওদের থেকে শত যোজন এগিয়ে। অন্যেরা সায়েবদের চামচাগিরি করে, কিন্তু ও’ করে মেমসায়েবদের। ভাল করেই জানে ব্যাংকের দোর্দণ্ডপ্রতাপ সায়েবদের কমজোর নস বা দুর্বল নাড়ি হল তাদের গিন্নিরা।

    এর কারণ বেশ ইন্টারেস্টিং। বেশির ভাগ ব্যাংক অফিসার এসেছে সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘর থেকে — বাবা হয় স্কুল বা কলেজের শিক্ষক অথবা সরকারি অফিসের অ্যাকাউন্ট্যান্ট। হাতে গোনা দু’একজন ব্যবসায়ী বা প্রশাসনিক পরিবার থেকে।

    ছেলেগুলো বিয়ে করেছে শাঁসালো পরিবারে মোটা পণ নিয়ে। মেয়ের বাবা পণ দেয়ার সময় মনে মনে হেসেছেন। জানেন বিয়ের পর এই জামাই বৌয়ের সামনে মাথা তুলতে পারবে না। অফিসে যতই হম্বিতম্বি করুক, ঘরে বৌ হবে আসল সায়েব।

    এই ব্যাপারটা অজিত ভাল করে জানে। ওর বাবা সাব ইন্সপেক্টর থেকে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এখন রায়পুরের অ্যাডিশনাল এস পি। কারণ ওর নানাজি ছত্তিশগড়ের অবসরপ্রাপ্ত আই জি। ও দেখেছে বাড়িতে সব ব্যাপারে মা যা বলে সেটাই শেষ, কোন অ্যাপিল নেই।

    ফলে গত বারো বছর ধরে অজিত রায়পুর শহরেই রয়েছে। বদলির লিস্ট বেরোনোর সময় ও গিয়ে রিজিওনাল অফিসের এইচ আর থেকে শুরু করে সবার বাড়ি যায়। আর তাঁদের স্ত্রীদের কাছে কাঁদুনি গায়। আমার বদলি হচ্ছে অনেক দূরে। আর আমি আপনাদের সেবা করার সুযোগ পাবো না। আমাকে মনে রাখবেন।

    সাতদিনের মধ্যে ট্রান্সফার লিস্টে কিছু পরিবর্তন হয়। অজিতেরও হয়, তবে রায়পুর শহরেই -- অন্য শাখায়। সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।

    তবু স্টাফদের মধ্যে ও বেশ জনপ্রিয় -- দুটো কারণে।

    এক, বাবা পুলিশের বড়কর্তা হওয়ায় ওর ছোটবেলা থেকে পুলিশ বিভাগে ছোটবড় সবার সঙ্গে চেনাজানা। তাই কোথাও ট্রাফিক পুলিশ ধরলে – লালবাতি ক্রস অথবা মোটরবাইকে তিন সওয়ারি বা গাড়ির ডিকিতে কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স না রাখা — অজিতকে ফোন করলেই মুশকিল আসান!

    দুই, ও হচ্ছে যত ননভেজ চুটকি এবং ছড়ার রাজা। আর উদ্ভট সব খিস্তি! শিখল কোথায়? কেন? ছোটবেলা থেকে পুলিশ লাইনের কোয়ার্টারে বড় হয়েছে যে! ওখানে সেপাই থেকে মুন্সীজি, সাব-ইন্সপেক্টর থেকে বড়কর্তা – সবাই খিস্তি দিয়ে কথা বলে। কাউকে মা তুলে গাল দেয়া তো খুব সাধারণ ব্যাপার। যাকে দেয়া হয় সে’ও গা’ করে না। ধরে নেয় ওটা পুলিশপাড়ার বাক্যালংকার।

    আরও একটা ব্যাপার আছে। ও এখন প্রমোশন পেয়ে ব্যাংকের অফিসার গ্রেডে, কিন্তু জুনিয়র স্টাফদের সঙ্গে বন্ধুর মত মেশে, অফসরি ফলায় না। আর টাকাপয়সা খরচের ব্যাপারে মুক্তহস্ত, কঞ্জুষ মক্ষিচুষ নয়।

    আজব বন্ধুত্ব

    কিন্তু একদিন ওরা সাহস করে অজিতকে বলে ফেলল — বাবুলাল গলির কোন এক ফুগগা বাঈ ওকে বন্ধু বলে দাবি করেছে! এটা ফালতু কথা, তাই না?

    ওদের অবাক করে অজিত জোর গলায় হেসে ওঠে।
    -- এত কিন্তু কিন্তু কেন? কথাটা মিথ্যে নয়। হ্যাঁ, পুলিশের ছেলে আমি, নানান রকম বন্ধুত্ব করি। ফুগগা বাঈ জবরদস্ত মেয়ে। তোদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়ে যাবে।

    এইভাবেই শুরু হয় ওদের অদ্ভুত এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। প্রায় দিন লাঞ্চের পর দুপুর পেরিয়ে গেলে ওরা যায় গলির মুখে, ফুগগাকেও চা আর পান খাওয়ায়। ও সিগ্রেট খায় না, মশলাদার পান খায়। সে পানের দাম ব্রিস্টল জাতীয় ফিলটার সিগ্রেটের চেয়ে একটু বেশি।

    বদলে ফুগগা ওদের শোনায় নানান গল্প, গজব সব গল্প, আজব মানুষজনের কিসসা। বাবুলাল টকিজে নতুন কোন হিন্দি সিনেমা এলে ও ম্যানেজারকে বলে ব্যাংকওয়ালে বন্ধুদের জন্যে ব্যালকনিতে সীট রিজার্ভ করিয়ে রাখে। শনিবারের ইভনিং শো অথবা রোববারের ম্যাটিনি।

    একদিন সমু ওকে বলে – রাজেশ খান্নার নতুন সিনেমাটা খাসা, আমাদের সঙ্গে তুইও চল। একসঙ্গে দেখা যাবে।

    একটুক্ষণ সবাই চুপ, সমুও কথাটা বলে ফেলে বিব্রত। প্রভাকর কাশতে শুরু করে। ফুগগা হেসে ওঠে, হাসতেই থাকে। ওর চোখে জল এসে যায়। তারপর কাশি। একটুখানি সামলে উঠে বলে — ভাল বলেছ সমুসাহাব। ফুগগা বাঈয়ের পাশে বসে ব্যালকনির সীটে সিনেমা দেখবে? তোমার দিমাগ ঠিক আছে? হিট সিনেমা, হাউসফুল চলছে। চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। তারপর ঘরে বাইরে মুখ দেখাতে পারবে না।

    সমু অপ্রস্তুত অবস্থা ঢাকার চেষ্টায় জোরগলায় বলে — অন্যায় কি বলেছি? আমরা কি দোস্ত নই?

    -- জরুর, জরুর। কিন্তু দোস্ত হয় নানারকম। কেউ পানঠেলার দোস্ত, কেউ চায় দোকানের, কেউ দারু পীনে কী। সব দোস্তকে কী কেউ বাড়ি নিয়ে যায়?

    কুণাল বলে – হয়েছে হয়েছে। অনেক লেকচার দিলি। অনেকদিন গান শোনাস নি, আজ একটা শোনা; ব্যস, দু’লাইন।

    ওরা জানে যে ফুগগা গান গাইতে বললে হারিয়ে যাওয়া লুৎফা হয়ে যায়। কোন পুরনো জমানার ‘ভুলে-বিসরে গীত’ শুরু করে দেয়। তা হোক, ওর সাধা গলা।

    -- “আঁখিয়াঁ মিলাকে জিয়া ভরমাকে, চলেঁ নহীঁ জানা। ও-ও চলেঁ নহীঁ জানা”।।

    কিন্তু কোথায় যেন আজ বেসুর লাগছে।

    এইভাবেই কখন যেন বাবুলাল গলির দাপুটে মহিলা ফুগগা বাঈ উল্টোদিকের একটি সরকারী ব্যাংকের কর্মচারির দৈনন্দিন জীবনের অভিন্ন অংগ হয়ে ওঠে।

    একদিন ও বলে দেয় – কালকে কেউ এদিকে এস না। দুপুরে কোতওয়ালি থানা থেকে রেইড হবে, তিনটে নাগাদ। উস্‌খুস্‌ করে। পুলিশ রেইড? সে কীরকম। অজিতকে ধরে। তুমি পুলিশের ব্যাটা! আমাদের একটু সেফ সাইডে রেখে রেইড দেখাতে পার না?

    অজিত হাসে।
    -- শোন, এটা বাবার মুখে শোনা। সেবার ইন্দিরা গান্ধী মারা গেলে শিখবিরোধী দাঙ্গা শুরু হল। রায়পুরে শুরু হল নামকরা ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির গুদামে আগুন লাগিয়ে। কলেক্টর এক মালয়ালী ভদ্রলোক মিঃ রাজন তৎক্ষণাৎ কারফিউ লাগিয়ে দিলেন — সকাল থেকে।
    কিন্তু গজব রে গজব! স্কুল-কলেজ-অফিস-কাচারি বন্ধ। তবু রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে লোকের ভীড়, গিজগিজ করছে। কেন? না কারফিউ দেখবে। রায়পুর শহরের ইতিহাসে সেই প্রথম কারফিউ। সবাই চায় দেখতে — কারফিউ কী বস্তু? তা তোরা কি আগে পুলিশের রেইড দেখিসনি? অ, বেশ্যাপাড়ায় দেখিসনি?

    সমু বলে – কারফিউ, ১৪৪ ধারা সব দেখা আছে। কিন্তু রেডলাইট এরিয়ায় পুলিশের হামলা? মাত্র দু’শো গজ দূরেই তো সিটি কোতওয়ালি থানা। ওদের নাকের ডগায় ধান্ধা চলছে। তাহলে কিসের রেইড?
    -- ফুগগা বাঈকে জিগ্যেস করিস, ও বুঝিয়ে দেবে।

    পরের দিন। তিনবন্ধুর কাজে মন নেই। দুপুর বারোটার পর থেকে পালা করে ওদের একজন গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াচ্ছে — যদি রেইড দেখা যায়। কোথায় কি? শান্ত দুপুর, চারদিকের দোকানপাট খোলা। রাস্তাঘাটে লোকচলাচল অন্যদিনের দুপুরের মতই।
    লাঞ্চের সময় ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে।
    কুণাল বলে — ফুগগা বাঈ কি আমাদের মিথ্যে কথা বলল? বোকা বানালো?
    -- ওর লাভ? তবে তোর উপর বিরক্ত হতে পারে।
    -- কেন?
    -- আমরা ওর সঙ্গে কথা বলার সময় মুখের দিকে তাকাই, তুই তাকিয়ে থাকিস বুকের দিকে।
    -- এর জন্যে বিরক্ত হবে? নাচতে নেমে ঘোমটা! দেখিস নি সন্ধ্যেবেলায়! ওরা কেমন লোকজন দেখলে কায়দা করে বুকের আঁচল বা ওড়না সরিয়ে দেয়?
    -- দিন দিন গোল্লায় যাচ্ছিস। আমরা ওর বন্ধু, আর রাস্তার লোকগুলো খদ্দের।
    মেজাজ চড়ার আগেই অজিত এসে বলে – চুপচাপ বারান্দায় চলে যা, রেইড শুরু হয়ে গেছে।
    ক্যাশ কাউন্টার আগেই বন্ধ হয়ে গেছল। ওরা পড়িমড়ি করে ছোট্ট বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।

    হরি হরি! এর গালভরা নাম রেইড?

    একটা কালো ডগগা আর একটা জীপ গলির মুখে রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে। জনা পাঁচ পুলিশ গাড়ির পাশে আর গলির মুখে। তিনটে পুলিশ গলির ভেতর থেকে সারি সারি পুরুষ ও মেয়েদের যেন মিছিল করে নিয়ে আসছে। মেয়েদের চেহারায় একটা নির্বিকার ভাব, কিন্তু পুরুষেরা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে বা মাথা নীচু করে আসছে। সব মিলিয়ে দশ বারোজন।
    ওরা কোন অদৃশ্য ইশারায় এক এক করে কালো গাড়িতে উঠছে। প্রায় তিরিশ মিনিট। তারপর ধোঁয়া ছেড়ে কালো গাড়ি রওনা হয়ে গেল। রাস্তা খালি।

    সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে। স্ট্রিট লাইট জ্বলে উঠেছে। বড় বড় সোডিয়াম বাল্বের হলদে আলো। ঝলমল করছে মালবীয় রোড। তিনবন্ধু বাড়ি ফেরার জন্যে নীচে নেমে হতভম্ব। জেগে উঠেছে বাবুলাল গলি। অন্ততঃ একডজন মেয়ে নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করে চলেছে। কেউ কেউ কোন পথচারীর পেছন পেছন গিয়ে আবার ফিরে আসছে—দরদামে পোষায় নি। গলির ভেতর লোকে আসাযাওয়া চলছে। — কে বলবে, আজ বিকেলে পুলিশ রেইড হয়েছে, কিছু মানুষ গ্রেফতার হয়েছে!

    ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে নীচে নেমে এসেছে ফিল্ড অফিসার অজিত। ওদের বলে - ‘চল, আজকে ফুগগা’র মুখে রেইডের কিসসা শুনবি’। এরপর অজিত গলির মুখে দাঁড়ানো মেয়েদের ব্যুহ ভেদ করে গলির ভেতরে চলে যায়। ওরা তিনজন এদিকের ফুটপাথেই অপেক্ষা করতে থাকে।

    খানিকক্ষণ পরে অজিত ফিরে আসে। পেছন পেছন ফুগগা। ইশারায় ডেকে নেয় থ্রি মাস্কেটিয়ার্সকে, ওরা রাস্তা পেরোয়।

    অজিত ইয়ার্কি করে হাত রাখে ফুগগার কাঁধে, ফুগগা কৃত্রিম কোপে হাত সরিয়ে দেয়।
    অজিত ভাঙা গলায় গেয়ে ওঠে ছত্তিশগড়ি লোকসংগীতের কলি – বন কে মনমোহিনী তঁয় !
    আজ সেজেছিস মনমোহিনী হয়ে --।
    বিরক্তিতে ফুগগা ওর মুখে হাতচাপা দেয়। বলে — দুটো কিসসা শুনিয়ে দিচ্ছি, তারপর তোমরা রাস্তা নাপো!

    সমু’র মাথায় একটা পোকা ঘুরছিল। থাকতে না পেরে বলে ওঠে — আচ্ছা, একটা বল। যাদের কালোগাড়ি করে তুলে নিয়ে গেল তাদের মধ্যে একজনকে চেনা চেনা লাগল। ওর মুখে রুমাল ছিল, কিন্তু গাড়িতে ওঠার আগে মুখ তুলে একবার আমাদের ব্যাংকের দোতলার সাইনবোর্ডের দিকে তাকাল। তখন চিনতে পারলাম। অমুক ব্যাংকের সদর বাজার শাখার ম্যানেজার মিঃ কপুর মনে হল। ঠিক বলছি?
    -- আরে ব্বাস! ঠিক চিনেছিস মিতান, কাউকে বলিস না। ম্যানেজার সাহাব কা ইজ্জত কা সওয়াল।
    -- আচ্ছা, ইজ্জত নিয়ে তোর এত চিন্তা, তাহলে কালকেই এদিকে আসতে মানা করে দিসনি কেন?
    -- কিসমত অপনী অপনী! মানা তো করেছিলাম, কিন্তু দু’দিনের ছুটি নিয়ে এসে কাল রাত্তির থেকে এখানেই মাল টেনে পড়ে আছে, খুসবু’র ঘরে। বলে কুছ নহীঁ হোগা!

    কুণালের চোখ বড়বড়। ওর বাবা জেলাকোর্টের উকিল।
    -- এখন তো ওকে কোর্টে তুলবে, তাহলে খবরের কাগজে বেরোবে। তারপর চাকরি যাবে। সমাজে বদনাম হবে, বৌ-বাচ্চা পথে বসবে।
    -- ব্যস, ব্যস। ওসব কিছুই হবে না মিতান। ম্যানেজারের গাঁটগচ্চা যাবে। পুলিশ মোটা টাকা নিয়ে ছেড়ে দেবে। কেস দেবে না।

    কুণাল থামবার পাত্র নয়। বলে যে ও এসব জানে। সেশন কোর্টে ইমমর‍্যাল ট্রাফিক অ্যাক্টে কেস দেওয়া হয়। ফাইন হয়, জেলও হয়। আমাদের দেশে এই পেশাটা বে-আইনি।
    -- শোন বাবু, ওসব আইন সবার জন্য নয়। দেখছ না, যতগুলো মেয়েকে নিয়ে গেছল সবকটা ফির এসেছে, রোশনী আর ফুলকি ছাড়া। ওরা ফিরে আসবে তিনদিন বাদে। আসলে কোতওয়ালির থানেদার বদলে গেছে। নতুন সাহেবের সঙ্গে বড়ী ও ছোটি মালকিনের দরাদরি চলছিল। তাই রেইড করে কাপ্তান সাহাব রেট বাড়িয়ে নিল। আইন দেখাতে কয়েকজনকে কেস দেওয়া হয়। যেসব হাভাতে গেঁয়ো খদ্দের পয়সা দিতে পারে না, তারা কেস খায়।
    -- রোশনী আর ফুলকি কেন কেস খেল?
    -- ও আমাদের ঠিক করা থাকে। এমাসে রোশনী আর ফুলকি, পরের বার বাসন্তী আর চামেলি। ও নিয়ে ভেব না। অব তুমলোগ ফুটো।
    অজিত হাসে। -- যাব যাব, ইতনী জলদবাজী কিঁউ? আচ্ছা, একটা নন-ভেজ কিছু শোনা, নতুন কোন -- তারপর ফুটে যাব।

    ফুগগা হাসে। তারপর শুরু করেঃ
    “ দো ইঞ্চ জগহ হ্যায়,
    দো মিনট কা মজা হ্যায়,
    দো বুঁদ গির জায়ে তো
    দশ মহিনা কা সজা হ্যায়”।

    -- “দুই ইঞ্চি স্থান, তাতে দুই মিনিটের মজা,
    দুটো ’ফোঁটা যদি পড়ে –দশটি মাসের সাজা।”

    সবাই হেসে ওঠে-- বহোত খুব! বহোত খুব!

    ওরা চলে যাবার উপক্রম করে। কিন্তু কুণালের আজ কিছু একটা হয়েছে। ও বলে আমি একটা শোনাই, বাংলায়? সমু না হয় হিন্দি করে দেবে?

    ফুগগা গম্ভীর হয়ে যায়। -- ঠিক আছে, যা করার চটপট কর।
    কুণালের মুখে একটা অশ্লীল হাসি খেলে যায়।

    -- “আমার যখন লিচু লিচু,
    বাবলু আমার পিছু পিছু।
    আমার যখন ডাব ডাব,
    বাবলু বলে ভাব ভাব।
    আমার যখন গেল ঝুলে,
    খানকির ছেলে গেল ভুলে”।

    কেউ হাসে না। সবাই কুণালকে ফেলে ব্যাংকের ফুটপাথে ফিরে যায়। নিজেদের স্কুটার স্টার্ট করে। সমুর কানে বাজে পেছন থেকে উড়ে আসা খিস্তি — সালে হারামি! সুওর কা অওলাদ! শুয়োরের বাচ্চা!


    যখন ভাঙল মিলন-মেলা

    বছর ঘুরতে চলল
    সেবারের খিস্তি-খেউড় এখন বাসি হয়ে গেছে। ওই যে বলে না –রাত গয়ী, বাত গয়ী! কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা কিছু তিনবন্ধু টের পাচ্ছিল। পরিবর্তন হচ্ছে, শুধু ফুগগা বাঈয়ের ব্যবহারে নয়, ওর চেহারাতেও।

    আগের সেই খোলামেলা বন্ধুত্বে কোথায় যেন চিড় খেয়েছে। আর আগের মত গান, চুটকি এবং খিস্তি শোনা যায় না। চা, সিগ্রেট এবং পান চিবোনো চলছে। ফুগগা কি আগের তুলনায় একটু গম্ভীর? গত মাসে পরপর দু’দিন ফুগগা’র দেখা নেই। রোশনীকে জিজ্ঞেস করায় জানা গেল ডাক্তারবাবু ওকে শুয়ে থাকতে বলেছে।
    -- কী হয়েছে ওর?
    রোশনী হেসে গড়িয়ে পড়ে। -- সেকী, তোমরা জানতে না? কেমন দোস্ত তোমরা? ও যে মা হতে চলেছে।
    ওদের বিশ হাজার ভোল্টের শক্‌ লাগে। ফুগগার মত মেয়েরাও যে মা হতে পারে সেটা ওদের কল্পনার বাইরে ছিল।
    রোশনী ওদের অবাক চোখে দেখে। তারপর চোখ ছোট করে দুষ্টু হেসে শুধোয় — তোমাদের মধ্যে কেউ তো নয়?
    -- মতলব?
    -- মতলব অউর ক্যা? কোই না কোই তো হোগা যো বাবুলাল গলি মেঁ আউর এক হারামি কে পিল্লে কা চোরি ছুপে বাপ বনেগা।
    ওরা পালিয়ে আসে। কয়েকদিন ওদিকে মাড়ায় না। তারপর গিয়ে অজিতকে ধরে।
    -- শুনেছেন তো? আমাদের মিতান ফুগগা বাঈ মা হতে চলেছে।

    অজিত কোন কথা না বলে চুপচাপ ওদের দেখতে থাকে।
    কুণালের প্রশ্নঃ আচ্ছা, এখানে বাচ্চা হলে তার পালনপোষণ কে করে?
    এবার খেঁকিয়ে ওঠে অজিত।
    -- আমাকে বলছিস কেন? যা, ওদের জিজ্ঞেস কর।

    ওরা একটু অপ্রস্তুত হয়। বুঝতে পারে না অজিত কেন রেগে গেল। সমু বলল যে আজ সন্ধ্যেবেলা ওরা গলির মুখে গিয়ে রোশনী, চাঁদনীদের সঙ্গে দেখা করে ব্যাপারটার তত্ত্বতালাশ করতে চায়, অজিত স্যার তখন সঙ্গে যাবেন কিনা।

    অজিতের মুখচোখ অন্যরকম। হাতের সিগ্রেট বারান্দার রেলিংয়ে ঘষে নিভিয়ে ফেলে। তারপর টুকরোটা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে ভেতরে যাবার আগে কেটে কেটে বলে — তোরা লাই পেয়ে মাথায় উঠেছিস। কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেছিস। উঙলি পকড়নে দিয়ে তো হাত পকড়নে লগে! আঙুল ছুঁতে দিয়েছি তো হাত ধরে টানাটানি!

    তারপর দুটো সপ্তাহ, ফুগগা তেমনই শুয়ে বসে। শরীর ভাল নয়। আর অজিতের সঙ্গে ওরা ভয়ে কথা বলছে না। তারপর অজিতও লম্বা ছুটি নিল, কোথায় নাকি ট্রেকিং করতে যাবে।
    সেই যে গেল, আর এল না।

    দশদিনের মাথায় সবাই জানল যে অজিতের ট্রান্সফার হয়েছে ইন্দোরের কাছে উজ্জয়িনী শহরে, একটা ছোট ব্রাঞ্চ অফিসের ম্যানেজার। কিন্তু আজব কাণ্ড, অমন জনপ্রিয় ছেলেটি কোন ফেয়ারওয়েল নিল না, পুরনো সহকর্মী বা বন্ধু — কারও সঙ্গেই দেখা করল না!

    ক’দিন পরে ফুগগা বাঈয়ের দর্শন মিলল, শরীর অনেক ঝরে গেছে। ধরম হাসপাতালে সিজারিয়ান হয়েছে, বাচ্চাটা বেশ ফুটফুটে। ও পানটান খেয়ে সিগ্রেট ফুঁকে হাসিমুখে জানতে চাইল – তোমাদের বন্ধু মস্তমৌলা অজিতবাবুকে দেখছি না যে! ওকে খবর দিও।

    ওরা কিন্তু কিন্তু করে জানিয়ে দিল যে অজিতের ট্রান্সফার হয়েছে, কবে এখান থেকে চলে গেছে কেউ জানে না।

    তিনবন্ধুর সঙ্গে ফুগগা বাঈয়ের সেই শেষ দেখা। আজও ওরা বাবুলাল গলির পাশ দিয়ে ঘুরে এল, চা খেল, সিগ্রেট খেল। কিন্তু কিছুই ভাল লাগছে না। বৃষ্টি এবার ঝেঁপে এল।


    মানুষের মর্মে মর্মে করিছে বিরাজ

    মিলনমেলা ভেঙে গেছে। অজিত নেই, সমুর প্রমোশন হয়ে অন্য ব্রাঞ্চে পোস্টিং। রয়ে গেছে কুণাল আর প্রভাকর, কিন্তু ওরা আর বাবুলাল গলির মুখে চা খেতে, পায়চারি করতে যায় না। বরং দু’পা হেঁটে কোতোয়ালি থানার পাশের চায়ের দোকানে যায়। সেখানে কাছাকাছি আরও কয়েকটি ব্যাংকের শাখা। চায়ের দোকানে ব্যাংক কর্মচারিদের আড্ডা ভালই জমে, ইউনিয়নের খবরও চালাচালি হয়।

    ওরা চাঁদনী রোশনীদের মুখে খবর পেয়েছে যে ফুগগা বাঈয়ের শিশুটি মারা গেছে, ধনুষ্টংকার হয়েছিল। ও এখন বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকে। নিজেকে বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা করে নিয়েছে।

    কিন্তু একদিন বাইরের দুনিয়া হঠাৎ ওর ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    গোটা শহরে জারি হল কারফিউ; বাবুলাল গলির মেয়েদের ব্যবসায় তালা।

    কেন? কী ব্যাপার? সেও এক আজব কিসসা।

    রায়পুর শহরের নতুন গড়ে ওঠা কলোনি তুলসীনগরের একটি শিবমন্দির; তার কাছাকাছি দুটো পানদোকান, একটা মন্দিরের কাছে, অন্যটা উলটো ফুটপাথে। মন্দিরের কাছে শিবকৃপা পানভাণ্ডার আর মুখোমুখি বেনারসী পানঠেলা।

    শিবকৃপা পানঠেলা চালায় বসন্ত শিরোলে আর বেনারসী পান বেচে আনোয়ার। এদের মধ্যে খদ্দের নিয়ে একটা রেষারেষি শুরু হয়েছিল, এখন সেটা বেড়ে গেছে।একদিন তো বাঁধা খদ্দেরকে ফুসলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে হাতাহাতির জোগাড়। পরেরদিন বেনারসী পানের দোকানে পুলিস রেইড্‌ --- এখানে নাকি গোপনে গাঁজার পুরিয়া আর “মধুর মুনাক্কা” নামে ভাঙের গুলি বিক্রি হয়। আনোয়ারকে একরাত্তির হাজতবাস করতে হল।

    দু’দিন পরের ঘটনা।

    বসন্ত হল শিবভক্ত। রোজ সকালে এসে আগে শিবমন্দিরের প্রাঙ্গণ ধুয়ে দেয়, তারপর নিজের দোকান খোলে। সেদিন যখন মন্দিরের কাজ সেরে নিজের দোকানের তালা খুলছে তখন আনোয়ার ফুটপাথ পেরিয়ে এদিকে এসে আগুন চোখে বসন্তকে দেখতে থাকে। তারপর ওকে দেখিয়ে পিচ করে থুতু ফেলে বলে — গদ্দার! পোলিস কী খবরী! বেইমান ! খোচর!
    দুপুর থেকে থানায় নানা লোকের টেলিফোন; খবর গেল এসপি এবং কলেক্টররের কাছে — একজন মুসলমান সবার সামনে শিবমন্দিরের প্রাঙ্গণে থুতু ফেলেছে! ব্যাপারটা ক্রমশঃ মারামারি, পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি ছাড়িয়ে বড় আকার নিয়েছে। দু’দিকেই বিশাল ভীড়, বেরিয়ে এসেছে লাঠি, তলোয়ার এবং ভল্ল। কিছু লোক আহত, স্থানীয় ছোটখাটো পুলিস চৌকি এটা সামলাতে পারছে না।

    শেষে দু’দিন কারফিউ জারী করে এবং দু’পক্ষেই কিছুলোককে হাজতে পুরে অবস্থা খানিক নিয়ন্ত্রণে এল, তবু এখানে সেখানে চোরাগোপ্তা বিচ্ছিন্ন হামলা ও সংঘর্ষের খবর আসতে থাকায় কারফিউ পুরোপুরি উঠল না, এখন তিনদিনের জন্য - রাত্রি দশটা থেকে সকাল সাতটা।

    আগামী কাল রবিবার, একটি সর্বভারতীয় ব্যাংকে ক্লার্ক-কাম-ক্যাশিয়ারের চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষার দিন। এই অঞ্চলের পরীক্ষার কেন্দ্র হল রায়পুর। আজ শনিবার। সমস্ত ধর্মশালা এবং সাধারণ লজ হঠাৎ ভরে গেল অল্পবয়েসি ছেলেদের ভীড়ে। সবাই এসেছে রাজ্যের নানা অঞ্চল থেকে, কাল পরীক্ষায় বসতে হবে।

    এরা পাইস হোটেলে ডাল-ভাত- আচার খেয়ে সারাক্ষণ নিজেদের তক্তপোষে পাতা বিছানায় বসে শেষবারের মত পেনসিল হাতে কোশ্চেন ব্যাংক সলভ করছে। বেশির ভাগ এসেছে নিজেদের পাড়ার বা স্কুল-কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে। তবে মাটির ভাঁড়ে কড়িমিঠি চা এবং সিগ্রেট ও বিড়ি ফোঁকা নিরন্তর। ওরা জানে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিতে হয়।

    জগতরাম রাঠিয়া এসেছে একা, ঝারখণ্ডের লাগোয়া রায়গড় জেলার ফাগুরাম গ্রাম থেকে। প্রথমবার রায়পুর শহরে পা রেখে দিশেহারা। কয়েক জায়গায় ধাক্কা খেয়ে শেষে ঠাঁই পেয়েছে কুর্মী ছাত্রাবাসের বারান্দায় একটা দড়ির খাটিয়ায়।

    এখন রাত এগারোটা; জগতরামের ঘুম আসছে না উত্তেজনায়। আদিবাসী কোটায় ফর্ম ভরেছে। এই চাকরিটা পেলে ও ব্যাংকের বাবু বা ক্লার্ক হবে। কাঁচ এবং তারের জাল দিয়ে ঘেরা একটি রহস্যময় কেবিনে বসবে। ওর মনে হয় পরীক্ষায় ভালই করবে।

    পাটিগণিতে ওর মাথা ভাল খেলে। তবু মিশ্র সুদকষা এবং দশমিকের অংকগুলো আর একবার ঝালিয়ে নিলে হয়। কিন্তু একটু মুশকিল হচ্ছে ‘রিজনিং’ বলে একটা পেপার। তিন চারটে প্রায় একই রকম দেখতে ছবি, দুটো গোলের পর একটা তেরচা মত লম্বা দাগ, তারপর তিনটে গোলের পর আর একটা লম্বা রেখা, তেরচা কিন্তু উলটো মুখে।

    পরেরটায় চারটে গোল্লা, কিন্তু সরল রেখাটা কিরকম হবে? আড়াআড়ি? লম্বমত? নাকি গায়েব হয়ে যাবে? একটা উত্তর বেছে নিতে হবে। এইজাতের প্রশ্নগুলো ওর আত্মবিশ্বাসে একটু ইয়ে করে।

    নাঃ মাথাটা দপদপ করছে। কিন্তু এখন ঘুমিয়ে পড়া উচিত। কাল সকাল সাড়ে ন’টায় পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হতে হবে। সকাল সকাল উঠে স্নান করে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরোনোর আগে আর একবার কোশ্চেন ব্যাংক বইটায় চোখ বুলোতে হবে।

    এখন এক গেলাস চা পেলে ভাল হত। স্টেশনের কাছে সারারাত দোকান খোলা থাকে বটে, তবে এই ধর্মশালা থেকে অনেক দূরে। কাছে একটা সিনেমা হল আছে, বাবুলাল না কি যেন নাম। এখন নাইট শো ভাঙার একটু দেরি। তাহলে চা পাওয়া যেতেই পারে। ও চুপচাপ ঘুমন্ত দারোয়ানের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে পরে আর আন্দাজে কোন একটা দিকে হাঁটতে থাকে।
    হ্যাঁ, পাওয়া গেছে, বাবুলাল সিনেমা হল। এই তো বড় বড় করে সিনেমার হোর্ডিং—“ছৈলা বাবু”। রাজেশ খান্না।

    কিন্তু কোথায় চায়ের দোকান? কোথায় সিনেমা হলের শো? সব ভোঁ ভাঁ! সিনেমা হলের গেটের শাটার বন্ধ, কোন দোকান খোলা নেই। আর রাস্তায় একটাও লোক নেই কেন? হঠাৎ ওর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নামতে থাকে। মনে পড়েছে। কারফিউ! সর্বনাশ! এখন চটপট পা চালিয়ে ধর্মশালায় ফিরে যেতে হবে। কোন একটা গলিতে ঢুকতে পারলে ভাল হয়।
    একটা পেছনে জাল লাগানো কালো গাড়ি শুনশান মালবীয় রোড ধরে সাঁ সাঁ করে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ ব্রেক কষে থামল, তারপর ব্যাক করে ওর দিকেই আসতে লাগল। লুকোনোর জায়গা নেই, সব বাড়িঘরের দোকানের দরজা বন্ধ।

    ও মরিয়া হয়ে দৌড়তে চায়, যেন ওদের গাঁয়ের পাশের জঙ্গলে হাতির পাল তাড়া করেছে।

    পেছন থেকে আওয়াজ আসে — রুক, রুক যা মাদর--! অব গোলি চলেগী।

    সামনে একটা সরু অন্ধকার কানাগলি। ও চার-হাত-পায়ে দৌড়ে গলির ভেতরে যায়, খানিকদূর গিয়ে থতমত খায়, গলি দু’দিকে দুটো ভাগ হয়ে গেছে। পেছনে দু’জোড়া বুটের শব্দ এগিয়ে আসছে।

    ও কিছু না ভেবে ওর সামনের একটা ঘরের বন্ধ কাঠের দরজায় দুমদুম করে ঘা দেয়। আচমকা দরজাটা খুলে যায় — অন্ধকারে একটা আবছা ছায়ামূর্তি, শাড়ীর আভাস।

    ও কেঁদে ফেলে — মোলা বাঁচালে দাঈ, পুলিসওয়ালে আওথে।

    আমাকে বাঁচাও মা! পুলিস তাড়া করেছে।

    ঝট করে একটা হাত ওকে ভেতরে টেনে নেয় আর তখনই দরজা বন্ধ করে শেকল তুলে দেয়। ছেলেটা থরথর করে কাঁপে। দুটো হাত ওকে ঠেলতে ঠেলতে এক চিলতে বাথরুমের ভেতরে পুরে বাইরে থেকে শেকল লাগিয়ে দেয়। তার আগে ওর ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে চুপ করে থাকার ইশারা করে।

    একটু পরে দু’জোড়া বুটের শব্দ ওর দরজার বাইরে থামে। তারপর দমাদ্দম লাথি - দরজা খোল, পুলিস!

    মহিলাটি দ্রুত হাতে কুলুঙ্গিতে রাখা কেরোসিনের কুপি জ্বালায়, তারপর দরজা খোলে।

    দু’জন পুলিশ; একজন কোতোয়ালি থানার চেনা সেপাই।

    -- কা বাত হ্যায় হাবলদার সাহাব, ইস রাত কো অচানক দর্শন?
    -- আবে এক সালে বদমাস ইধর হী ভাগ কর আয়া। তেরে পাস তো নহীঁ আয়া?
    -- দেখ লো! ছোটি সি কামরা, কহাঁ ছুপেগা?

    সেপাই দু’জন উঁকি মারে। মহিলা কুপি তুলে ধরে সারা কামরাটা দেখিয়ে দেয়। একটাই তক্তপোষ, তাতে আধময়লা বিছানা, এলোমেলো কাঁথা। দেখলেই বোঝা যায় মহিলাটি এক্ষুণি বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছে।
    একজন আরেকজনকে ইশারা করে। চেনা সেপাই বলে – চললাম রে ফুগগা। চোখ কান খোলা রাখিস। কিছু বদমাশ ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে; কোথাও কোন হলচল টের পেলে খবর দিবি।
    বেরিয়ে যাবার আগে হাবিলদার কৃত্রিম গম্ভীর গলায় বলে — সুন, এক জায়গা আউর হ্যায় ছুপনে কে লিয়ে। উসী কা তালাসি লেনা বচা হ্যায়।
    লুকানোর আরও একটা জায়গা আছে, সেটা দেখাই বাকি।
    সঙ্গের অচেনা সেপাই থমকে যায় — কহাঁ?
    --ইসকী পেটিকোট কে নীচে।
    হেসে ওঠে ফুগগা বাঈ, নকল হাসি। তারপর চোখ মেরে বলে — ওখানে তো আদ্দেক থানাকে লুকিয়ে রেখেছি, খালি তুমিই বাকি।

    সারা শহর নিস্তব্ধ, ঘুমে বা ভয়ে। পুলিশেরা চলে গেছে অনেকক্ষণ। ফুগগা বাঈ বাথরুমের দরজা খুলে বলে — বেরিয়ে আয়।
    -- কে রে তুই? মরতে কারফিউয়ের রাতে কেন বেরিয়েছিলি? কী মতলবে? সচ সচ বাতা। নহীঁ তো --।
    ছেলেটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর পা আঁকড়ে ধরে। সত্যি বলছি, তোমার পা ছুঁয়ে বলছি – কোন বদ মতলব নয়। আমার নাম জগতরাম রাঠিয়া। কালকে চাকরির পরীক্ষা। অনেক দূরের রায়গড় জেলার আদিবাসী গাঁ থেকে এসেছি। মাথা ধরেছে তাই একটু চা খাব ভেবেছিলাম। এমন সময় পুলিশ তাড়া করল।
    -- তা কারফিউয়ের সময়, এত রাতে — গুলিও করতে পারত।
    ছেলেটা আতংকে কেঁপে ওঠে। বলে - আজকের রাতটা থাকতে দাও। সকাল বেলাই চলে যাব।
    -- হুঁ, কিসের পরীক্ষা? কী চাকরি করবি?
    -- ব্যাংকের। ক্যাশিয়ার মানে খাজাঞ্চীবাবু হওয়ার চাকরি।
    -- ব্যাংকওয়ালে হবি? হারামী?
    ওর চোখে আগুন। অন্ধকারে কুপির ময়লা আলোয় সেই ধকধক চোখ দেখে ছেলেটা ভয় পায়।
    -- দাঈ, মোলা খদের দেবে কা? মা, আমায় তাড়িয়ে দিবি? এত রাতে কোথায় যাব, এই পরদেশে কাউকে চিনিনা।

    খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ। তারপর ফুগগা ওর দিকে একটা চাদর আর কাঁথা ছুঁড়ে দিয়ে বলে ওই কোনায় মেজেতে বিছিয়ে শুয়ে পড়। সকাল সাতটায় কারফিউ উঠবে, তখুনি দূর হয়ে যাবি এখান থেকে।

    রাত অনেক হয়েছে।

    ঘরের এককোণায় গুটিসুটি মেরে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটার নাক ডাকছে ফুরুৎ ফুরুৎ। ফুগগার চোখে ঘুম নেই। একে তো আজকের এই ঘটনা। বাচ্চা ছেলে, হতে চায় ব্যাংকওয়ালে! আগে জানলে! সবক’টা হারামীর ঝাড়। নেহাৎ মা বলে ডেকেছে, নইলে কখন দূর করে দিত।

    কিন্তু ওর ভারী বুক ব্যাথায় টনটন করছে। শিশু সন্তানটি ফোকলা মুখে কেমন হাসত, হাত বাড়ালেই ওর কোলে, আর নামতে চাইত না। চুক চুক করে দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। চলে গেল ধনুষ্টংকারে, হঠাৎ জ্বর হল, বেঁকে বেঁকে উঠছিল। ডাক্তার দেরি করে ফেলল।

    তবে ওর বুকে এখনও খুব দুধ, রোজ কয়েকবার টিপে গেলে ফেলে দিতে হয়, তখন একটু আরাম। ডাক্তার বলেছে, নইলে ভেতরে জমে গিয়ে ফোঁড়া হতে পারে। এখন এই রাতে আবার ব্যথা করছে। আজ যদি বাচ্চাটা থাকত, তাহলে ওকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ত।

    এখন কী করে? ফের কুপি জ্বালাবে? বাথরুমের দিকে যাবে? অন্ধকারে দু’পা বাড়িয়েছে কি চমকে উঠল। ঘরের মধ্যে কে কথা বলছে? এক মিনিটে ভয় কেটে গেল। ওই বাচ্চা ছেলেটা ঘুমের মধ্যে কথা বলছে, পাশ ফিরে শুচ্ছে।

    ফুগগা কিছু একটা ভাবে। তারপর একটা সিদ্ধান্তে এসে ছেলেটার কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ওর মাথার থেকে চাদর সরিয়ে ওকে একটা ঠেলা মারে। ছেলেটা ঘুমের মধ্যে কিছু একটা বিড়বিড় করে পেছন ফিরে শোয়।

    ফুগগা একটু দ্বিধাগ্রস্ত; তবু পাশে শুয়ে পড়ে ব্লাউজের বোতাম খোলে। ছুঁয়ে দেখে নিজের বেলুনের মত স্তন, দুধে টনটন করছে। এবার ছেলেটাকে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনে। তারপর ছেলেটার ঘাড়ের নীচে হাত দিয়ে ওর ঘুমন্ত মুখে দুধের বোঁটা পুরে দেয় — যেমন দু’মাস আগে শিশুর মুখে দিত।

    ঘুমন্ত ছেলেটা অস্বস্তিতে ওকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়, পারে না। ফুগগার গায়ে জোর কম নয়। ওর মুখ থেকে দু’ফোঁটা দুধ গড়িয়ে পড়ে। এবার ওর ঘুম ভেঙে যায়। কী হচ্ছে বুঝতে সময় লাগে, তারপর মুখ সরিয়ে নেয়।

    -- নেহী নেহী—ইয়ে গলত হ্যায়, পাপ হ্যায়।

    ফুগগা ওর কানে ফিসফিসিয়ে বলে — কোই গুনাহ্‌ নহীঁ। মা বলে ডেকেছিস, এবার বুকের দুধ খা। তারপর ঘুমিয়ে পড়িস। সকালে তুলে দেব।

    ছেলেটা ধীরে ধীরে বোঁটাতে মুখ দেয়, জিভ দিয়ে চেটে নেয়। তারপর দুহাতে আঁকড়ে ধরে বেলুন, বাচ্চার খেলনার মতন। খানিক পরে ফুগগা উঠে বসে। ছেলেটার মাথা ওর কোলে টেনে নিয়ে অন্য স্তনটি ওর মুখে দেয়।

    ব্যথা চলে গেছে। রাত অনেক। ফুগগা পরম মমতায় ছেলেটার মাথার চুলে হাত বোলাতে থাকে। এবার ঘুম পাচ্ছে। ওকে সরিয়ে দিয়ে ব্লাউজের বোতাম আঁটার চেষ্টা করতে গিয়ে চমকে ওঠে।
    একী! ছেলেটা যে ওকে ছাড়তে চাইছে না। আঁকড়ে ধরছে আরও বেশি করে। আর — আর একটা পরিচিত অনুভূতি, পরিচিত স্পর্শ। ও বাচ্চা নয়, জোয়ান ছেলে। ওর শরীর জেগে উঠছে।
    ঠাস্‌ করে একটা চড়।

    -- হারামী ব্যাংকওয়ালে! দেয়ালের দিকে ফিরে শো। সমস্ত পুরুষগুলো হারামী, মাদর--! খালি একটাই জিনিস চায়।

    =================================
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাঠক | 2401:4900:7526:88c2:cc48:49ff:fec0:3f7f | ২৫ মে ২০২৪ ১৭:৪৫743058
  • প্রথম লাইনেই হোঁচট খেলাম!  রায়পুরের জনসং্খ্যা ৪ কোটি!!  মানে পব র অর্ধেক!!  কোলকাতাই তো মেরেকেটে ৫০ লাখ হবে। রায়পুর ১০-১২ র মধ্যে।
     
    যদিও গল্প পড়তে গিয়ে নিটপিকিং হয়ে গেল কিনা জানিনা, এতে গল্পপাঠের মজাও নষ্ট হবেনা বলেই মনে হয়, তবে চোখে লাগল বলে বলে ফেললাম, রঞ্জনবাবু। কিছু মনে করবেন না।
  • রঞ্জন | 2402:e280:3d02:20a:5978:9bba:2cc6:428e | ২৫ মে ২০২৪ ২১:২৪743059
  • পাঠক 
      অনেক ধন্যবাদ ভুলটি ধরিয়ে দেবার জন্য। জনসংখ্যা 40 লক্ষ 64 হাজার।  একটা শূন্য বেশি হয়ে গেছে। যা তা!
     তবে গল্পের যদি কড়া সমালোচনা করেন তো আরও  খুশি হব।
     
    যেমন,
         1 এটা আদৌ গল্প হয়েছে কিনা।
        2 কিছু বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা মাত্রাছাড়া হয়ে রসভঙ্গ  হল কিনা।
        3 রুচিবহির্ভুত কিনা।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৬ মে ২০২৪ ০৭:৩৪743061
  • প্রিয় রঞ্জনদা, আপনার লেখনী অসাধারণ ইত্যাদি কথাগুলি এতই বাহুল্য যে ঐসব কথায় আপনার কোন রকম আগ্রহ নেই বলেই মনে হয় আমার। বরং অন্য কিছু বলি, আপনার কাঙ্ক্ষিত কড়া সমালোচনা। নিজেকে তার অধিকারী ভাবা উচিত কিনা, সেই দ্বিধা সরিয়ে রেখেই বলি।
     
    (১) "আজ তিনবন্ধু নীচে নেমে গিয়ে বাবুলাল গলির মুখের দোকানে ঝোলানো পাটের দড়ি থেকে সিগ্রেটে আগুন ধরাতে গিয়ে দেখল –এই অশ্লীল বৃষ্টি দিনটাকেই মাটি করে দিয়েছে।" - এইখানে বৃষ্টিকে কেন 'অশ্লীল' বলা হচ্ছে/হবে? 
     
    (২) অজিত আর তার ইয়ার দোস্তরা ফুগগার সাথে যত অন্তরঙ্গতাই দেখাক, ফুগগা ভালো মতন জানে তার অবস্থান কোথায়। অজিতের তাকে ব‍্যবহার করায় এবং তার পর কেটে পড়ায় তার যে আশাভঙ্গ এবং তজ্জনিত রাগ-ক্ষোভের কথা ভাবা হয়েছে সেটা আমার স্বাভাবিক লাগেনি। তবে জীবন বিচিত্র তাই আপাত অসম্ভব বলেই তা যে একেবারে ঘটবেই না এতটা  বলা যায় না, সেটাও মানি।
     
    (৩) ফুগগার এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তার চিন্তা-ভাবনার এক প্রায় ঘোরের মত দশায় তার যে আচরণ, সেই তুঙ্গ মুহুর্তে পৌঁছনোর জন্য গল্পের ভিত্তি প্রস্তুতির পর্ব কিছুটা বেলাইনে বোনা হয়েছে এবং অনাবশ‍্যক ভাবে বড় হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে আমার। 
     
    গল্পটি পড়ে দীর্ঘক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর, আবার কয়েক বার সেটি পড়ার শেষে এই রইল আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া।
  • রঞ্জন | 2402:e280:3d02:20a:8302:c870:78aa:994 | ২৬ মে ২০২৪ ১১:২৯743063
  • অমিতাভ,
    অনেক ধন্যবাদ ভাই। আমার নিজের বেশ একটু দ্বিধা রয়েছে এই গল্পটা নিয়ে। কোথাও যেন হতে হতে হয় নি।
    কিন্ত দুর্বল জায়গাগুলো পিন পয়েন্ট করতে পারছি না। আপনি আমার কাজ অনেকটা এগিয়ে দিলেন।
    ভাববো, রি-রাইট করব। কাটছাঁট করে শার্প করব।
    এই জন্যেই গুরুর পাতায় লেখা। আগেও এভাবে লাভবান হয়েছি।
  • | ২৬ মে ২০২৪ ২৩:৫৪743070
  • গল্পটার অনেকগুলো স্তর। রাবড়ির মত। কিন্তু মাঝে মাঝে এক এক জায়গায় একটু ছানাকাটা মত হয়ে গেছে। যেমন ফুগগা বাইয়ের সাথে এদের যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল সেই গড়ে ওঠাটা  কেমন আরোপিত লাগছে আমার। অথচ তার পরেই একসাথে সিনেমা দেখার কথা বলা এবং প্রতিক্রিয়া অংশটা খুব স্বাভাবিক ভাবে এসেছে। ফুগগার বদল, পরিণতি অজিতের পালানো বেশ আঁটসাট।  কিন্তু তার পরে পরেই আবার অনেক ডিটেলিং বিশেষত ছেলেটির পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি ইত্যাদি মনে হয় একটু কম করলেও ক্ষতি হত না। বরং শেষ অংশের যে তীব্র মানসিক টানাপোড়েন দুজনের দুই রকম সেই  টেনশানটা আমি পাচ্ছি না।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৭ মে ২০২৪ ১৫:৫১743080
  • অকপট ফিডব্যাক:

    ১. ভাট, খেখা, হপা, বুবুভা - কোনো বিভাগেই মন্তব্য করে সংশোধনের উপায় নেই। গুরুকর্তাদের কাছে নিবেদন - এটার অপশন থাকা উচিত। তাহলে কিছু সংশোধনী লেজুড় পোষ্ট করতে হয় না। খেখা, হপাতে মূল লেখা এডিট করা যায়। “ট‌ইপত্তর” এ তা সম্ভব নয়। কেন নয়? জানা নেই। তাই এ‌ই ট‌ইতে রায়পুরে‌র জনসংখ্যা চার কোটি‌ই থেকে যাবে। খেখা, হপা, বুবুভায় লেখার ওপর বহু মন্তব্য, প্রতিমন্তব‍্য দেখা যায়। “ট‌ইপত্তর” এ‌ও তাই। তাহলে ট‌ইপত্তর নামক আর একটি বিভাগ খোলার কী কারণ? খেখা, হপাতে লগইন করে‌ই লিখতে হয়। যদি ট‌ইতে লগইন না করে‌ও লেখা যায় তাহলে সেটা কারুর ট‌ইতে লেখার কারণ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান লেখক এটা লগ‌ইন করে‌ই লিখেছেন। উনি খেখা এবং হপাতেও লেখেন। তাহলে এটা কেন ট‌ইপত্তরে লিখলে‌ন? বুঝলাম না। 

    ২. লেখাটি‌তে কিছু শব্দবন্ধ (জুগাড়মেন্ট, পুলিশপাড়ার বাক্যালংকার ইপ্র) বেশ লেগেছে। কিছু বাক‍্যচয়ন Rustic ফ্লেবারবাহী। যেমন ফুগগা বাঈ চোখ মেরে বলে—ওখানে তো আদ্দেক থানাকে লুকিয়ে রেখেছি, খালি তুমিই বাকি।

    ৩. ফুগগা বাঈ যে নতুন ননভেজ জোক শোনায় সেটা বটতলা‌ মার্কা হলে‌ও আমার খাসা লেগেছে। অকাট‍্য সত‍্য। গরদের ধুতি পাঞ্জাবী পরে ম‍্যানহোল ইনস্পেকশনে নামা যায়না। তাই উপলব্ধি করেছি আদিশঙ্করার অদ্বৈত‌বাদ ব‍্যাখ‍্যা‌কারী ঋদ্ধ লেখক বাবুলাল গলির আখ‍্যান আঁকতে তদানুযায়ী লেখ‍্যভঙ্গি ধারণ করেছেন। 

    ৪. তবে ভালো লাগেনি ঐ ছড়ার এবং আরো কিছু কথার বঙ্গানুবাদ। বলিউডের দৌলতে এবং অশার দাপটে আশা করা যায় গুরুর অধিকাংশ ঋদ্ধ পাঠক ফুগগা‌র হিন্দি অনুবাদ ছাড়াই বুঝবেন। গালিবের চোস্ত উর্দু শ‍্যায়রী হলে অন‍্যকথা - তখন আমার মতো গোলা পাঠকের জন‍্য তার সোজানুবাদ স্বস্তি‌দায়ক।

    ৫. লেখাটি‌র অকপট আঙ্গিক কিছুটা মলয় রায়চৌধুরী সদৃশ। তবে তা প্রয়াত লেখকের গুরুতে পোষ্টিত (০৯.১০.২৩) “পিসতুতো বোনকে চুমু খাবার চুক্তি”র মতো আড়ালহীন নয়। গুরুচণ্ডালি প্রকাশিত “অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা” ব‌ইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণের ওপর জনৈকা অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুস্তক‌ আলোচনার মত সাহসী‌ও নয়। অনামিকার ঐ আলোচনা গুরুচণ্ডা৯ ফেসবুক গ্রুপে রিজেক্ট হ‌য়েছি‌ল। তাই মরাচৌ সেটির লিংক ওনার হপার পাতায় পোষ্টেছিলেন (৫.৯.২৩). কুণালের বাংলায় অশ্লীল জোকটি এই লেখায় মরাচৌ গোত্রের আড়ালহীন সাহসিকতার প্রকাশের ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

    ৬. অজিতের রেগে যাওয়া, অতদিন রায়পুরে গেঁড়ে বসে থেকে হঠাৎ বদলি নিয়ে উজ্জয়িনী চলে যাওয়া এসব থেকেই খুগগার শিশুর পিতৃত্ব নিয়ে পাঠকের সন্দেহ থাকেনা। তাই লেখাটা -  “ওরা চাঁদনী রোশনীদের মুখে খবর পেয়েছে যে ফুগগা বাঈয়ের  শিশুটি মারা গেছে, ধনুষ্টংকার হয়েছিল। ও এখন বেশির ভাগ সময় ঘরেই থাকে। নিজেকে বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা করে নিয়েছে।” - এখানেই শেষ হয়ে গেলেও মন্দ হোতো না।

    ৭. তা না করে, এযাবৎ পুরুষের লালসা নির্ভর জীবনযাপন করে ফুগগা‌র মধ‍্যে প্রথমে মাতৃত্ব আরোপ করে পরে ধোঁকেবাজ অজিতের জন‍্য গোটা পুরুষ‌জাতটার ওপর বীতশ্রদ্ধভাব আরোপ করলেন লেখক। তাতে কী ফুগগা‌র কোনো উত্তরণ সাধিত হোলো? কে জানে! কিন্তু এসব  প্রক্রিয়ায় অন্তিমে এলো আর একটি মরাচৌ গোছের সংলাপ যা লেখাটি‌তে লেপন করলো ছত্তিশগড়িয়া গাঢ় মাটির প্রলেপ।

    ৮. অন্তিমে বর্ণিত ঘটনার একটু ছায়া দেখেছি মঁপাশার একটি গল্পে। নাম মনে নেই। বহুদিন আগে পড়েছি। সেখানে ট্রেনযাত্রায় সদ‍্য মা হ‌ওয়া কোনো মহিলা‌র দুগ্ধভারে ব‍্যথাতুর হয়ে ওঠে স্তন। অথচ সঙ্গে তখন তার শিশুটি নেই। সে একাই কোথাও গেছিল। তখন ফিরছিল ঘরে। তার‌ই অনুরোধে তার স্তন পান করে এক পুরুষ সহযাত্রী। সেই গল্পের তাৎপর্য মনে নেই। কিন্তু ঘটনাটি এমন বিচিত্র লেগেছিল, যে এটুকু‌ই মনে আছে।

    ৯. অন্তিমে বর্ণিত ঘটনার সরাসরি ছায়া দেখেছি সুনীলের “কিশোর ও সন্ন‍্যাসিনী” উপন্যাসে। সেখানে এক যুবতি, ব্রহ্মচারী তন্ত্রসাধিকা কোনো বিশেষ সাধনার জন‍্য বয়ঃসন্ধি‌তে না আসা এক কিশোরকে দিয়ে নিয়মিত তার স্তন পান করায়। সে দেখতে চায় ঐ সাধনা‌য় গর্ভবতী না হয়ে‌ও স্তনে দুগ্ধ সঞ্চার হয় কিনা। এ কী ধরণের সাধনা জানা নেই। তবে তন্ত্রসাধিকার স্তনে দুগ্ধ আসার আগেই একদিন স্তনপান‌কালে কিশোরের লিংগোত্থান হয়। সাধিকা‌ও ফুগগা‌র মতো সেই কিশোরটিকে সরিয়ে দিয়ে বলে - তোকে দিয়ে আমার আর সাধনা হবে না। 

    ১০. এসব হচ্ছে প্রবৃত্তির ব‍্যাপার, যা ফুগগা বুঝতে পারে নি, তন্ত্রসাধিকা‌ও নয়। সাধিকা সাধনা করলেও সেই কিশোরটি‌তো করছিলো না। তার পুরুষাঙ্গ জেগে উঠতেই পারে। কারণ প্রবৃত্তির প্ররোচনা অবদমন, উপেক্ষা - খুব কঠিন ব‍্যাপার। সাধারণ মানুষের কম্মো নয়। গল্পের ছলে বা আকারে ইংগিতে‌ নয় - প্রবৃত্তি, প্রবণতা বিষয়ক এমন কিছু প্রসঙ্গ সরাসরি আলোচনা করেছি আমার “দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়ায়” লেখায় ৪ থেকে ১৩ পর্বে। ভেবেছিলাম কেউ হয়তো কোনো পার্সপেক্টিভ জানাবে। আজ অবধি গুরুর কোনো ঋদ্ধ পাঠক কোনো মতামত করেনি। হয়তো ঐ বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা কারুর পছন্দ হয়নি।
  • kk | 172.56.32.178 | ২৭ মে ২০২৪ ১৯:৫৮743085
  • "গল্পের ছলে বা আকারে ইংগিতে‌ নয় - প্রবৃত্তি, প্রবণতা বিষয়ক এমন কিছু প্রসঙ্গ সরাসরি আলোচনা করেছি আমার “দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়ায়” লেখায় ৪ থেকে ১৩ পর্বে। ভেবেছিলাম কেউ হয়তো কোনো পার্সপেক্টিভ জানাবে। আজ অবধি গুরুর কোনো ঋদ্ধ পাঠক কোনো মতামত করেনি। হয়তো ঐ বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা কারুর পছন্দ হয়নি।"
     
    নট নেসেসারিলি। আপনার ঐ সিরিজের পর্বগুলো আমি ওপর ওপর দেখেছি। পড়তে গিয়ে কোনো কারণে ফোকাস নড়ে গেছে, বা ঠিক মতো মন দিয়ে পড়া হয়নি। মনের মধ্যে এই ইচ্ছেটা আছে যে ভালো করে বসে, পড়ে, বুঝে দেখার। সেটা করলে হয়তো মন্তব্যও আসবে কোনো আমার মন থেকে। তো যেটা বলার আর কী, কোনো লেখায় মন্তব্য না করা মানেই সেটা পছন্দ না হওয়া নয়।তবে নিজেকে "ঋদ্ধ পাঠক "বলে ক্লেম করছি তা নয়।
     
    এই মন্তব্যটা রঞ্জনদা'র লেখা সংক্রান্ত নয়। এটা এখানে লেখা হয়তো উচিৎ হলোনা। কিন্তু ভাটে লিখলে রেলিভ্যান্স খুঁজতে অসুবিধা হতে পারে, তাই এখানেই লিখলাম। রঞ্জনদা'র মূল লেখা সম্পর্কে -- আবারও, এই লেখাটা পড়তে গিয়ে ফোকাস নড়ে যাচ্ছে। তবে পরে বসে ভালো করে পড়ার ইচ্ছে আছে।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৮ মে ২০২৪ ২২:১৭743088
  • @kk 
    এখানে আর রেশ না টেনে আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলেছি আমার লেখাটির ১৩ নং পর্বে। ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন।
  • Ranjan Roy | ২৯ মে ২০২৪ ০৮:৩৬743090
  • পাঠক, অমিতাভ, দ, সমরেশ এবং কেকে।
    আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আপনারা লেখাটির প্রকরণগত ত্রুটি এবং যে টুকরোগুলো ভাল লেগেছে আর যা ভাল লাগেনি--সব অকপটে জানিয়েছেন। 
    আমি অবশ্যই রি-রাইট করে হরিদাস পালে দেব। লেখাটি কলেবরেও একটু স্লিম হবে। অনাবশ্যক মেদ ঝরে যাবে। 
     
    আমাদের সবার জীবনেই এমন অনেক ঘটনা আছে যা প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতার ফ্রেমের বাইরে। এক কথায় অস্বাভাবিক। সমরেশের ভ্রমণকাহিনীগুলো তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বাস্তব যে অনেক সময় কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়  এ আমরা জানি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে  লেখায় সেটাকে শৈল্পিক সত্যে প্রতিষ্ঠিত করা। শিল্পের লজিকে- যা ঘটেছে বা ঘটেনি - তাকে পাঠকের বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। 
    এইখানেই লেখকের সাফল্য বা ব্যর্থতা।
     আপনারা সবাই সেদিকে  পিনপয়েন্ট করে আমাকে সাহায্য করেছেন।
     
    হ্যাঁ, সমরেশ যেখানে শেষ হতে পারত বলছেন --সেটাও ঠিক। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল তাতে  গল্পের ভরকেন্দ্র ফুগগা বাঈ  নাহয়ে অজিত হত, যা আমি চাইনি। 
    দ'  আগেও বহুবার এমন করে আমাকে ঋদ্ধ করেছেন।
    আশা করব, ভবিষ্যতেও আপনারা আমার প্রতি্‌---- ছত্তিশগড়িতে বললে-- 'দয়াদৃষ্টি রাখিহ' আপমন ।
  • | ২৯ মে ২০২৪ ০৯:৫১743091
  • রঞ্জনদা, 
    গল্পটা অজিতের পালানোতে শেষ হলে সেটা পৃথিবীর আরো  হাজারো গল্পের একটা হয়ে যেত আর সত্যি বলতে কি টিপিকাল ফেসবুকীয় গল্প হত। আপনার ফুগগা বাঈকে কেন্দ্রে আনার সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ মে ২০২৪ ১৩:০৯743092
  • রঞ্জনদা,

    লেখক নিজে কোন ভাবনার দ্বারা তাড়িত বা জারিত হয়ে কিছু লিখেছেন - আমার কাছে সেটা‌ই একমাত্র বিবেচ‍্য বিষয়। সব লেখা‌ই শিল্পবোদ্ধাদের নির্দেশিত টেমপ্লেটে উত্তীর্ন হতে হবে, আমার তা মনে হয়না। তাই এ জীবনে অর্থবহ বা আর্থিক‌ভাবে সাফল‍্যমণ্ডিত লেখক হ‌ওয়া আমার কপালে নে‌ই।

    যে মুহূর্তে লেখকের মনে পাঠকের কাছে বা শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি‌তে যাবিশ্বাস‌যোগ‍্য তাই পরিবেশনের দায়বদ্ধতা জন্মাবে - আমার ধারণা‌য় তখনই গল্পের সাথে হবে লেখকের অপমৃত্যু।
    বেঁচে থাক Truth is stranger than fiction এবং Strangeness এর ডানা ছেঁটে তাকে পাঠকের ভাবনার সীমাবদ্ধতা‌র দাঁড়ে বসানোর পক্ষপাতী আমি ন‌ই। কেবল গল্পে পরিবেশিত তথ‍্যের মধ‍্যে ভূল বা অসামঞ্জস্যতা থাকা উচিত নয়।তা অমনোযোগী লেখনীর পরিচায়ক।

    আপনি কী জাতীয় পাঠকের কথা ভেবে গল্পটা লিখেছেন জানি না তবে শিরোনাম থেকে সর্বত্র এ লেখার প্রোটাগনিস্ট ফুগগা বাঈ। শিরোনামে বন্ধনীর মধ‍্যে গল্প শব্দটি লেখা‌ও চোখে লেগেছে। যেন লেখক ওভাবে প্রথমে‌ই চোখে আঙুল দিয়ে বলে না দিলে পাঠকের মনে হবে লেখাটি বীরু চট্টোপাধ্যায়ের রোমান্সকর সত‍্য কাহিনী।

    আমি হলে গল্পটা ওখানেই শেষ করতাম - তাতে গল্পের ভরকেন্দ্র‌ অজিতে বদলে যেতো - এমন অদ্ভুত ভাবনা‌ও মাথায় আসতো না। বরং পরে আরো ডালপালা ছড়িয়ে শেষে ফুগগা অজিতকে সমগ্ৰ ব‍্যাংককর্মী ও পুরুষজাতির প্রতিভূ ভেবে যেভাবে প্রতিক্রিয়া করেছে - ওতেই গল্পটা ছাঁচে পড়ে পাতি হয়ে গেল। আমার মনে হয়েছে তা।

    আমি হলে গল্পটা এভাবে ডিল করতাম। অজিত কাপুরুষের মতো পালালো - ফুগগা‌র শিশু‌টি মারা গেল - তবু এই দ্বৈত নেগেটিভ ইমোশন (তিক্ততা ও রিক্ততা সত্ত্বেও) - ফুগগার মতো মহিলা‌ও অজিতকে ক্ষমা করে দিয়ে মহান হয়ে উঠলো।
    কেন? কেননা অজিতের মাধ‍্যমে‌ই ও সাময়িক মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছে। বাকি সবাই ওকে ব‍্যবহার করেছে। এভাবে শেষ করার জন‍্য কিছু কল্পিত সিচুয়েশন তৈরী করতে হোতো।

    তবে গল্পটা আপনার পাঁঠা - তাকে যেভাবে কাটতে চান - লেখক হিসেবে সে স্বাধীনতা আপনার‌।
  • ছোট মুখে  | 165.225.8.117 | ২৯ মে ২০২৪ ১৭:৫৮743093
  • রঞ্জনদা মনে হয় গল্পে নীতিকথা এড়িয়ে অনুভূতির ঘোরাফেরাকে প্রাধান্য দেন।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৯ মে ২০২৪ ২০:১২743095
  • ছোট মুখের কথাটা নিয়ে‌ও ভাবলাম। মনে হোলো আমি যে ভাবে ভেবেছি - অর্থাৎ অজিতের বিট্রেয়াল ফুগগা আশ্চর্য নির্লিপ্ততা‌র সাথে নিলো - without any hard n bitter feelings - কারণ বহুদিনের ব‍্যবহৃত হ‌ওয়া‌র অভিজ্ঞতা‌য় ফুগগা জানে - শালে চুতিয়া, মাদর–, মরদলোগ এ্যায়সাহী হোতা হ‍্যায় - তাই তাদের কাছে কোনো প্রত‍্যাশা রাখতে নেই। এটা ওর অভিজ্ঞতা লব্ধ জীবনবোধ। 
     
    তাহলে সেটাও অনুভূতি‌র স্তরে ঘোরাঘুরি। ফুগগা যে ফ্লেক্স টাঙিয়ে মাইক নিয়ে নীতিমালা ঘোষণা করবে না - সেটা বোধ‍্য। তবে ওর নীরবে মেনে নেওয়ার মধ‍্যে যে বার্তা - সেটা শৈল্পিক বোধসম্পন্ন লেখক subtle way তে পেশ করলেও uber intellectual পাঠকের কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে। 

    এসব একটা লেখা‌র সম্ভাব‍্য বিকল্প পরিণতি নিয়ে আমার ভাবনা যেহেতু যেভাবে গল্পটা শেষ হয়েছে তা আমার আরোপিত এবং উচ্চকিত মনে হয়েছে। আমার ভাবনা লেখক এবং অন‍্য পাঠকদের ভাবনার সাথে না মিললেও কিছু যায় আসে না। 
  • Kishore Ghosal | ১৩ জুন ২০২৪ ১২:০১743191
  • আমার কিন্তু ভালই লাগল। 
  • syandi | 45.250.246.238 | ১৪ জুন ২০২৪ ২০:০০743201
  • "শুনুন, ফুগগা মানে বেলুন, ব্যস্‌ বাকিটা বুঝে নিন। আগে আপ সমঝদার হ্যায়।" - সত্যিই বুঝতে পারলাম না মেয়েটির নাম ফুগগা দেওয়া হল কেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন