সে ঘাড় দুদিকে নেড়ে নেড়ে বলে ‘তু ডেঞ্জার হ্যায় রে ম্যাডাম নেই নেই ম্যায় আ যাউঙ্গা’। ঠিক আছে বাবা, তাই হবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪.১৫তে আবার বেরোই পায়ে হেঁটে এদিক ওদিক ঘুরতে। চারিদিক একেবারে শুনশান, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে শুধু একটা সেলুনের একপাল্লা খোলা। মিনিট চল্লিশেক এদিক ওদিক হেঁটে ফিরি নশরিঙে আবার। কাল খুব সকালে বেরোন তাই আজকেই টাকাপয়সা মিটিয়ে রাখতে হবে। রাতের খাবারে অর্ডার করি ডিমাসা টাইপ ফ্রায়েড রাইস আর চিকেনের ঝোল। এই ফ্রায়েড রাইসে দেখি বেশ কয়েকরকম শাক দিয়েছে কুচিয়ে, পালং ছাড়া বাকী শাকেদের চিনতে পারলাম না। ... ...
#একাকী_ভ্রমি_বিস্ময়ে - হাফলং ... ...
#একাকী_ভ্রমি_বিস্ময়ে ... ...
একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে ... ...
এপারে বাপের ঘর ওপারে শ্বশুরঘর তার মধ্যিখানে চর, সেই চরে বাস করে যতেক মাইয়্যামানুষ। শ্বশুরঘরে আসতে বাপের ঘর ত্যাগ করা লাগে তাদের, কিন্তু সে ঘরেও তাদের একেবারে নিজস্ব জায়গা কতটুকু? তাদের মতামতের ধার তো বাড়ির পুরুষরা এমনিতে খুব একটা ধারেই না, বড়সড় রাষ্ট্রবিপ্লবেও তারা পালাবে কিনা, কোথায় পালাবে কীভাবে পালাবে সেও নির্ধারণ করে সেই পুরুষই। তবুও মেয়েমানুষ টুনিমুনি নিয়ে নাড়ে চাড়ে, খেলে, কেউ আবার যেখানে যতটুকু পারে ধরে রাখার, দখলদারির চেষ্টা করে যায়। জীবনে দুর্যোগ নেমে এসে সব ভেঙেচুরে তছনছ করে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে মেয়েমানুষ দেখে হাতের ধুলিমুঠি সবই আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে গেছে, সে দাঁড়িয়ে আছে ধু ধু চরে। তার নিজের দেশও নাই, ঘরও নাই। এই সত্য আরো একবার উপলব্ধি হল তৃষ্ণা বসাকের ‘চরের মানুষ’ পড়তে পড়তে। ... ...
বছরে চারদিন, যাকে ‘অম্বুবাচী' বলে, তাতে অমনি করতে হয়, রান্না করা কিচ্ছু খেতে নেই। কিন্তু একা মা’কেই কেন করতে হবে? দিদা বড়মামীমা কেউ তো এসব করছে না। আবছামত মনে হয় তাইজন্য জিজি গত শনিবারে তিনকিলো আম নিয়ে এসেছিল, আস্তে আস্তে বলছিল ‘তোর মা কিছুতেই শুনছে না, এইসব একেবারে অর্থহীন, তোর বাবা দেখে কষ্টই পাচ্ছে শুধুশুধু'| কিন্তু মা যে মাছ খেতে খুব ভালবাসত, মাংস প্রায় খেতেই চাইত না, কেন ওরা মা'কে মাছ খেতে দিচ্ছে না? আমাদের এখন খুব বুঝেশুনে খরচ করতে হয়, মা বলেছে, তাইজন্য বুঝি? কেউ যদি একটু বুঝিয়ে দিত। আমার মাথার ভেতরে আবার সাত সকালের সব ধোঁয়া ঢুকে যেতে থাকে, আমি দাদুর খাটে শুয়ে ঐ মাঝ বিকেলে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ি। মেরুদন্ড সোজা করে বসে থাকা আমার দাদু, এত গন্ডগোলেও একটা কথাও না বলা দাদু, একইভাবে বসে আস্তে করে ফ্রকটা পায়ের ওপরে টেনে দিয়ে হাতপাখা দিয়ে আমাকে হাওয়া করতে থাকে। ... ...
একদিন দুজন এসে বাবার রেকর্ড প্লেয়ার আর সমস্ত রেকর্ড নিয়ে গেল, দেড়শো টাকায় বিক্রি হয়ে গেছিল বাবার সংগ্রহের সমস্ত রেকর্ড। ১৬ আরপিএমের একবাক্স রেকর্ড ছিল মোজার্ট ও বেঠোভেনের বিভিন্ন সিম্ফনি। ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল বাবার বিশেষ পছন্দ ছিল। মা’র অল্প অপরাধবোধ ছিল এই সংগ্রহ বিক্রি করায়, বারেবারেই বলত ‘কে আর শুনবে ওসব।‘ তখনও বাবার অফিস থেকে টাকাপয়সা কিছু পাওয়া যায় নি, এমনকি সমস্ত আনুষ্ঠানিক পদ্ধতি মেনে ও মিটিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতেও সাড়ে তিনমাস সময় লেগেছে। গাড়িটা বিক্রি হওয়ায় খানিক স্বস্তি মেলে। বাবার সেতারও গেল। ভাই তখনো হয় নি,বাবা সেতার বাজাচ্ছে, ইন্দ্র রায় রোডের বাড়ির পেল্লায় উঁচু উঁচু সিলিং ... বাইরের ঘরটা অন্ধকার, জানলার ফাঁক দিয়ে আকাশ থেকে উপছে পড়া জোছনা চেষ্টা করছে ঢুকে আসবার। রাগ রাগিণী কিছুই বুঝতাম না কিন্তু কিছুতেই নড়তে পারছি না সিঁড়ির কোণা থেকে ... চারিদিক থেকে ঝমঝম করে ঘিরে ধরছে সুর আর ধ্বনি, ধ্বনি আর সুর ... খুব আবছা মনে পড়ে। ... ...
মঞ্জুদিদি তারপরেও অনেকদিন, যতদিন না ওর বিয়ে ঠিক হয়, আমাদের বাড়িতেই ছিল। বেশ কিছুদিন আমার সাথে সরাসরি কথা বলত না, আমিও না। পরে আর মঞ্জুদিদির সাথে কখনো যোগাযোগ হয় নি। এখন বুঝি সেই সময় জিজির যা অবস্থা তাতে চার পাঁচশো টাকা হারানো কতটা তার জন্যও ভয়ানক ছিল। আমার অন্যায়টা- It was wrong on so many levels...। এই অন্যায়টার কথা কেউ জানে না, ভাইও না। আজ এখানে লিখে রাখলাম। শুধু মঞ্জুদিদির কাছে ক্ষমা চাইবার একটা সুযোগ যদি পেতাম। ... ...
#JusticeForAsifa ... ...