এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  পথ ও রেখা

  • শীতল মরুভূমিতে সাড়ে তিনদিন - যাত্রা শেষ 

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | পথ ও রেখা | ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৬৫১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  •  
    উপরের তাঁবুগুলো 
     
    নীচের তাঁবুগুলোতে আমাদের গাড়ির ছয়জন আর মানসী আর ওর ছেলে দেবায়ন। এখানে আর কোন লটারি ফটারি হয় নি, জাস্ট ধরে বলে দেওয়া হয়েছে সংগঠকদের তরফে। আজ আর্টিগার মাথার উপরের বোঝা হালকা রাখা দরকার ছিল, তাই আমাদের কিছু মাল গেছে ট্র্যাভেলারের মাথায়। সেসব তো উপরের তাঁবুতে, যতক্ষণে সেসব আসছে আমরা গিয়ে ঢুকলাম খাবার তাঁবুতে। চা হবে তবে পকোড়া হবে না। বেসন টেসন সবই নাকি ফুরিয়ে গেছে। রান্নাঘরের দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা বললেন এই তো আর দুই কি তিনদিনের মধ্যে সব গুটিয়ে আমরা নীচে নেমে যাবো, সিজন তো শেষ। আমি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম আমাদের বুকিং তো ছিল অনেক আগে থেকেই, তো ফুরিয়ে গেলে এনে রাখা দরকার ছিল তো। 


    নীচের তাঁবু 

    এই তাঁবুগুলোর কেয়ারটেকার বা ম্যানেজার যিনি, তিনি বললেন সেই কাজা থেকে এই কয়েকদিনের জন্য আনা হয় নি! অগত্যা শুধু চা নিয়েই বসে বসে গল্প করি আমরা। পরে অবশ্য জেনেছিলাম উপরের তাঁবুতে পকোড়া ইত্যাদির ব্যবস্থা ছিল। আলাদা ম্যানেজমেন্ট তাঁবুর, কাজেই। মালপত্র তাঁবুর সামনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে এসে সহকারি সংগঠক জানান কেউ যেন রাত্রে তাঁবুর বাইরে না আসেন, রাত্রে এখানে তুষারচিতারা ঘুরতে আসে। প্রায় মুখে এসে গেছিল হ্যাঁহ তুষারচিতার ভাই হয়েছে। কোনোরকমে সামলে নিলেও ফ্যাক করে হেসে ফেলাটা আর সামলানো গেল না। এই ১৪১০০ ফিটে সেপ্টেম্বরে তুষারচিতা! সহকারি একটু উত্তেজিত হয়ে তাঁবুওলাদের একজনকেই জিজ্ঞাসা করেন রাত্রে এখানে কী কী জন্তু আসে? তিনি বেমালুম উড়িয়ে দিয়ে বলেন ‘হ্যাট জন্তু আবার কোত্থেকে আসবে? কিচ্ছু আসে না।‘


    আমাদের তাঁবু 

    সে ছিল পূর্নিমার তিন দিন আগের রাত, নটায় আলো নেভা আর চাঁদ ওঠার মধ্যে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। ভেবেছিলাম চন্দ্রতালে এসে আকাশগঙ্গা তোলার একটা চেষ্টা করব, অ্যাপে দেখে এসেছি কিছুক্ষণ দেখতে পাবার কথা। কিন্তু এখনো শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয় নি। রাতের খাবার আটটা নাগাদই পরিবেশন করে দিল। ভাত ডাল আর একটা তরকারি, রুটি আর  কিসের একটা পায়েসগোছের জিনিষও ছিল। খিদে খুব একটা টের পাচ্ছি না, তাই অল্প করেই খাই। অর্ণাদি তাঁবুওলাদের থেকে একটা করে অতিরিক্ত বালিশ আর অতিরিক্ত কম্বল চেয়ে আনে। শুধু জুতোটা খুলে, বিছানায় একটা কম্বল পেতে আরেকটা করে কম্বল গায়ে দিয়ে বাকী সব জামা জ্যাকেট ইত্যাদি পরেই শুয়ে ঘুমোবার চেষ্টা করি।

    আমি যে আমি মোটামুটি ‘যেখানেই কাইত সেখানেই রাইত’ সেই আমিও তার পরে একঘন্টা টানা শুধু ঠকঠক করে কেঁপে গেলাম। কাঁপুনি থামলে একসময় চোখে ঘুম নেমে আসে। বেরিয়ে আকাশ দেখার শক্তি আর নেই। রাত ন’টায় আলো নিভে গেছে, বাথরুমে যেতে গেলে মোবাইলের টর্চ ভরসা। সকালে ঘুম ভাঙল পৌনে ছ’টা নাগাদ বাঙলায় প্রচুর হইচই শুনে।  বাকী খালি তাঁবুগুলোতে আর একটা দল এসেছে, তাদেরই একজন নেতাগোছের মানুষ   তাঁবুওলাদের বলছেন গরম জল এনে প্রত্যেক তাঁবুর সামনে দিয়ে যেতে। খানিকক্ষণ শুনে উঠে পড়ি, বাথরুমে ফ্ল্যাশ কাজ করে। তাহলে কি জল জমে নি? বাইরে বেরিয়ে দেখি রাত্রে হালকা ফ্রস্টিং হয়েছে, ধাতব জিনিষপত্রের উপরে পাতলা বরফ।


    সূর্য ওঠার আগে 

    ক্যাম্পসাইট থেকে সকালের নরম আলোয় অ্যালুমিনিয়াম পাতের মত বরফচুড়ার দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকি তাঁবুর বাইরের বসার ঘরে। পাতলা নেট ভেদ করে ঠান্ডা লাগে, কিন্তু কাল রাত্রের মত নয়। রাতে -২ অবধি নেমেছিল তাপমাত্রা। শ্বাস প্রশ্বাসও অনেক স্বাভাবিক আজ। একটু পরেই সুজ্জিমামা হালকা  সোনালী রঙ দেয় চুড়ায়, মোটা ব্রাশে স্ট্রোকের পর স্ট্রোক – অ্যালুমিনিয়ামের পাতখানা কাঁসার রঙ ধরে। ক্যাম্পসাইটে ঘুরে বেড়াই এদিক ওদিক। মানসীরা উঠে পড়েছে অনেকক্ষণ, অভিও উঠে ছবি তুলছে এদিক ওদিক। রান্নার তাঁবুতে গিয়ে গরমজলের কথা জিজ্ঞাসা করতে ওঁরা সোলার গিজার দেখিয়ে দেন। একটা মাঝারি জলাধারের সাথে অনেককটা সোলার প্যানেল লাগানো আর একটা কল।


    সূর্যের ছোঁয়ায় কাঁসার রঙ ধরেছে 

    তাঁবুর বাথরুমে ব্রাশ করতে গিয়ে দেখলাম বেসিনের কলেও জল পড়ছে। মুখ কুলকুচি করতেই উরে বাবারে হুহুহু ঠোঁটদুটো সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গেল। চিমটি কেটে দেখি কোন সাড় পাচ্ছি না, মগ নিয়ে সোজা ঐ গরমজলের জলাধারের পাশে। সবে তো সূর্য উঠেছে, কাল রাত্রের ঠান্ডা সহ্য করে জলাধারের জল বেশ কুসুম গরম। তাই দিয়ে আবার কুলকুচি করে ঠোঁটে সাড় ফেরানো গেল যাহোক। ইতোমধ্যে অর্ণাদি উঠে বাথরুমে গিয়ে আর কোন কলেই একফোঁট্টাও জল পেল না। হয়েছে কি, বাইরের পাইপের জল জমে বরফ হয়ে গেছে, বাথরুমের ভেতরে পাইপগুলোর জল পুরো জমে নি। ফলে আমি কিছুটা পেয়ে গেছি। প্রাতরাশের ব্যবস্থা দিব্বি। পাঁউরুটি টোস্ট, জেলি, ওমলেট, চা। খেয়েদেয়ে ফিরতি রওনা।


    মহাদ্যুতিং 

    তালেগোলে অন্য দলের কারুর সাথেই আলাপ করা হল না, ওঁরা ওই খতরনাক রাস্তা দিয়ে মাঝরাত্রে বা শেষরাত্রে এসে পৌঁছালেন কী করে কে জানে! ফিরতি যাত্রা আবারও সেই চারপাশে সারবাঁধা ওয়ালপেপার আর স্ক্রিনসেভারের মধ্যে দিয়ে। দুচোখ ভরে শুষে নিই প্রায় মানুষের হাত না লাগা আদিম প্রকৃতি। এখানে কোন কিছুই মানুষের তৈরী নয়, এমনকি রাস্তাও না। কোথাও বড় ছোট বোল্ডার গাড়ির চাপে একটু চেপ্টে রাস্তা হয়েছে, কোথাও নিছকই মাটি আর পাথর। ভাবতে কেমন অবাক লাগে জুয়াংজ্যান বা হিউয়েন সাঙ  আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এই রাস্তা দিয়েই এসেছিলেন, তখন তো হিমালয় পর্বতমালা আরেকটু কচি ছিল, কে জানে মাঝেমধ্যে নড়েচড়ে উঠত কিনা! আর রাস্তার আভাষমাত্রও ছিল না নিশ্চিত।

    ওয়ালপেপারের মধ্যে দিয়ে চলেছি যেন 

    এখন বছরে মাস ছয়েক অফরোডিঙের ফলে একটা পথের আভাস তৈরী হয়ে গেছে। ১৪০০ বছর আগে পশুপালকদের চলার পথ ছাড়া আর কিছুই ছিল না বোধহয়। স্পিতি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হওয়ায় ভূপ্রকৃতি এমনই যে শীতের শেষে বরফ গলে যাওয়ার পরে পাহাড় জুড়ে খুবই ছোট কিছু ঘাস জন্মায়। কিন্তু সেই ঘাসের উপর দিয়ে যদি গাড়ি যায়, অফরোডিঙের জন্য হামেশাই বাইক বা কিছু গাড়িও  বাঁধাপথের বাইরে এদিক ওদিক চলে যায়, সেই গাড়ি চলা পথের ঘাস যে উঠে যায় ওইজায়গায় সে আর বছরের পর বছর চলে গেলেও গজায় না। চলতে চলতে অনেকসময় উল্টোদিকের পাহাড়ে প্রায় রাস্তার মত জ্যামিতিক আকারে ঘাসের মাঝে ফাঁকা দাগ দেখেছি। সেগুলো এইভাবেই তৈরী এবং বহু বছরেও সেখানে আর কিছুই গজায় না।


    প্রকৃতির নিজের হাতে তৈরী স্ক্রিনসেভার   

    অর্থাত ওই জায়গাটুকু বরাবর বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, যা ফেরত আসতে সময় লাগে বহু বহুউ বছর। এইজন্য দায়িত্বশীল পর্যটকদের উচিৎ যত্র তত্র অফরোডিং এড়িয়ে চলা। সত্যি বলতে কি পুরোপুরি পিচের রাস্তা তৈরী হয়ে গেলে এই পথের আকর্ষণ আর কতটুকু এরকম থাকবে কে জানে! এইসব নানাকিছু ভাবতে ভাবতেই আমরা সাংলা উপত্যকার কাছাকাছি পৌঁছে যাই। আজকের মধ্যাহ্নভোজ এক ধাবায়  মাটন ভাত। মহিলা পরিচালিত এই ধাবার নামটা ভুলে গেছি। অসাধারণ স্বাদের মাংসভাত। খেয়েদেয়ে মানালির পথে। মোটামুটি বিকেল হবার আগেই মানালি পৌঁছে সেই হোটেল হিমাংশু। গতকাল সকালের পরে আজ  আবার পর্যাপ্ত গরমজল পেয়ে আরাম করে স্নান করে খানিক বিশ্রাম।


    বাইক নিয়ে নদীর পাশে নামার চিহ্ন - এখানে ঘাস গজাবে না বহু বছর। হয়ত আর কখনোই নয় কারণ মানুষ তো আসতেই থাকবে। 

    ওজন কম নেওয়া এবং দরকারমত যাতে নিজেই পুরোটা নিয়ে ঘুরতে পারি এইজন্য একটা কুড়ি ইঞ্চির স্যুটকেস আর ৫০ লিটারের ব্যাকপ্যাক এনেছিলাম। হাইকিং স্টিক তো কেবিন লাগেজে দেওয়া যায় না, এদিকে স্যুটকেসে ভাঁজ করেও স্টিকটা ধরানো যায় নি। অগত্যা বুনুর পরামর্শমত ওই স্যুটকেসের বাইরে স্টিকটাকে ব্রাউন টেপ দিয়ে বেশ করে আটকে কভার পরিয়ে দিয়েছিলাম। এদিকে ব্রাউন টেপের বড় একটা রিঙ কেবিন লাগেজে ছিল, সে পুণে এয়ারপোর্টেই সিকিউরিটি চেকের সময় ফেলে দিতে হল। সেলোটেপের ছোট্ট রিঙ নেওয়া যায়, কিন্তু বড় রিঙ নাকি ‘সিকিউরিটি রিস্ক’! কে জানে কেউ কখনো ওই দিয়ে প্লেনের ক্রুদের সিটের সাথে বেঁধে রেখে হাইজ্যাক করার চেষ্টা করেছিল কিনা! তো আরেকটা ব্রাউন টেপ কিনতে হবে আর কি।

    সন্ধ্যের মুখে অর্ণাদি আর আমি বেরোলাম, অর্ণাদির কিছু উপহার কেনার আছে আর আমার ওই ব্রাউনটেপ আর একটা বোরোলিন। বোরোলিনের কুট্টি কৌটোও কোথাও পড়ে গেছে। তো ঘুরতে ঘুরতে এ দোকান সে দোকান দেখতে দেখতে এক দোকানে গিয়ে শুনি আগস্টের শুরুতে সেই বিপর্যয়ের পর আজকেই তিনি প্রথম দোকান খুললেন বিক্রিবাটার জন্য। টানা কয়েক সপ্তাহ এই সামনের রাস্তা, এমনকি কিছু দোকানেও জল জমে ছিল। বিপাশা সেই যে রেগেমেগে নিজের এলাকা পুনর্দখল করতে উঠে এসেছিল সহজে নামতে চায় নি। মলের চত্বরে নাকি দুইফুট জল জমে ছিল। তাঁর দোকানের ইউপিয়াই পেমেন্ট সিস্টেমও ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে গেছে, আবার অ্যাপ্লাই করছেন। তিনিই সেলোটেপ কোথায় পাওয়া যাবে তা আমাকে বাতলে দেন।   
     
    মানালির মল    
                 
    মানালিতে সে রাতে বোধহয় বালিশে মাথা ঠ্যাকাবার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সংগঠক আগেই জানিয়েছিলেন এই পরিবর্তিত রুটের কারণে পরিবহন সংস্থা ওঁর কাছে ট্র্যাভেলার দুটোর জন্য  পনেরো হাজার করে তিরিশহাজার আর আর্টিগার জন্য দশহাজার, মোট চল্লিশহাজার টাকা অতিরিক্ত চেয়েছে। আমরা কে কে অতিরিক্ত তেরোশো টাকা করে দিতে চাই জানতে চেয়েছিলেন। প্রায় কেউই রাজী হয় নি প্রথমে, পরে উনি অনুনয় করে বলেন দিলে ভাল হয় তবে কোন জোর নেই ইত্যাদি। তাতে  সকলেই যে যার সাধ্যমত দিয়ে দেয়। আমি প্রথমেই জানিয়েছিলাম দেব, কারণ পুণেতে এজেন্সি থেকে  সারথি নেবার সময়ে দেখেছি প্রথমে সম্মত হওয়া রুটের বাইরে গেলে এজেন্সিরা অতিরিক্ত টাকা চায়।

    তবে এখানে এটাও বলার কথা যে মোট দূরত্ব খুব কিছু হেরফের হয় নি, বরং সম্ভবত একটু কমই হয়েছে। তবে এই রুটে খারাপ রাস্তা বা বলা ভাল নেই-রাস্তা অনেক বেশী পরিমাণে হওয়ায় গাড়ির কলকব্জার ধকল অনেক বেশী হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা যেটা, নিগেলসুরিতে ধ্বসের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকার কথা জেনেও সংগঠক বিকল্প পরিকল্পনা তৈরী করে পরিবহন সংস্থার সাথে কথা বলে রাখেন নি। এই রিস্ক মিটিগেশান প্ল্যানের অভাবটা পীড়াদায়ক। এখানে বলে রাখি অরুণাচল ট্রিপে আমরা বাঁধা রুটের বাইরে মায়োদিয়া পাস গিয়েছিলাম, এটা মূল পরিকল্পনায় ছিল না। মূলত পর্যটকদের অনুরোধে হুট করে যাওয়া। এর জন্য আমাদের কাছে কোন অতিরিক্ত টাকা সেই ট্রিপের সংগঠরা চান নি।
     
     রাস্তা বাজার বাড়িঘর ভেঙে বিপাশা নিজের খাত বানিয়ে  বয়ে চলেছে   

    ২৬শে সেপ্টেম্বর মানালি থেকে চন্ডীগড় আসার জন্য রওনা হতে যথারীতি বেলা দশটা পার। আজ  ঝলমলে সূর্যের আলোয় বিপাশার ধ্বংসলীলা আরো স্পষ্ট দেখি। পথে হাইওয়ের ধারে এক জায়গায় কটি আপেল দোকানের সামনে থামা হয়, সহযাত্রীরা বাক্স ভরে আপেল কেনেন। এরপরে একটা শাল ও উলেন জিনিষপত্রে বড় দোকানে থামা হয়। এই দোকানে প্রায় ঘন্টা দেড়েক ধরে প্রচুর কেনাকাটি হয়। আমার তো ওজন কমানোর চক্করে স্যুটকেসে বা ব্যাগে একটা মাফলার ঢোকানোরও জায়গা নেই। দোকানটা সারা ভারতে পোস্টাপিসের রেজিস্টার্ড পার্সেলে বা ক্যুরিয়ার করে জিনিষপত্র পাঠায়। একটা কুলুশাল দেখে মনে মনে ভাবি এটা কেটে কোট বানালে ভারী সুন্দর লাগবে। নাহ ওঁদের কাছে অমন কোট নেই।


    আপেলের দোকান

    শালটা কিনে ক্যুরিয়ার করতে দিই। যিনি প্যাকিঙের দায়িত্বে ছিলেন তিনি অবশ্য বারেবারেই বলছিলেন ‘আরে এইটুকু তো হাতে ঝুলিয়েই নিয়ে যেতে পারবে’। তা সে ছিল এক বুধবার, পরের মঙ্গলবারেই ক্যুরিয়ার ঠিকঠাক এসে যায়। ভাল সার্ভিস, উলেন জিনিষপত্র বেশ ভাল, মোটামুটি ন্যায্য দাম। মান্ডির একটু আগে এক জায়গায় দুপুরের খাওয়ার জন্য দাঁড়ানো হল। আজ  সোজা চন্ডিগড় গিয়ে রাত দেড়টায় নেতাজী এক্সপ্রেস ধরে কাল ভোর রাত্রে দিল্লি নেমে আবার দুপুরের ফ্লাইটে পুণে। টানা রাস্তায়ই থাকা, তাই সাবধানে একটা পেপার দোসা আর একপ্লেট স্যালাড নিয়ে বসি। লম্বা জার্নিতে হাল্কা খাবার খুবই উপযোগী। এই রেস্টুরেন্টের পেছনেই বিপাশা বয়ে চলেছে শান্তমনে, দেখে কে বলবে কিছুটা আগেই কি পরিমাণে ধ্বংস করে এসেছে।


    রেস্টুরেন্টের পেছনদিকে 


    খেতে খেতে এমন দৃশ্য দেখা - আহা 

    আমাদের গাড়ির বেরোতে একটু দেরী হয় আর অল্প কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পরেই পুলিশ আটকে দেয়। সামনেই ধ্বস নেমেছে, রাস্তা পরিস্কার হবে তারপর যাওয়া। প্রথমে সময় দেয় একঘন্টা বাদে, অনুনয় বিনয় কিছুতেই কাজ হয় না। এখানে পুলিশেরা রাস্তার আপডেট সেই এলাকার ফেসবুকে পেজে নিয়মিত দিয়ে থাকেন, আমাদের সোজা বলেন পেজ দেখতে, সেখানেই সব থাকবে। আমাদের একটা ট্র্যাভেলার আগে বেরিয়ে গেছে, অন্যটি আমাদের সঙ্গ দেবার জন্য থেকে গেছিল। শেষপর্যন্ত দেড় ঘন্টা বাদে ছাড়ল গাড়ি। ধ্বসনামা এলাকা দেখে শিউরে উঠি। এই মস্ত মস্ত পাথরগুলো যে কোনসময় নেমে আসতে পারে। আসছেও তাই। এগুলোর যে কোন একটার আধখানা পড়লেও আমাদের গাড়ি নিমেষে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।

    খানিকদূর এসে পথে পান্ডো জলাধার ও বাঁধ পড়ে। তবে দাঁড়াবার সময় নেই, এখনো চন্ডীগড় পৌঁছাতে অনেক দেরী। পথে পড়ে অট (Aut)টানেল, মোটামুটি ৩ কিলোমিটারের মত লম্বা, তবে অটল টানেলের মত সুসজ্জিত, আলোজ্বলা নয়। এবড়ো খেবড়ো রুক্ষ পাহাড়ের পেট কেটে ঢুকে যাওয়া অন্ধকার সুড়ঙ্গ, মাঝে দুই জায়গায়  টিমটিমে হলুদ আলো, জোরে জল ঝরার আওয়াজ সঙ্গ নেয়। উপর থেকে মোটা ধারায় ঝরছে জল, সামনে লোহার খাঁচা বসিয়ে পাহাড়ের অন্ত্বঃসলিলা ওই ঝর্ণার দুপাশের পাথর ধ্বসে পড়া থেকে কোনোমতে ঠেকিয়ে রেখেছে...ফিরে এসে খুঁজে দেখেছি এই সুড়ঙ্গ বর্ষা ও শীতে ড্রাইভারদের দূঃস্বপ্ন। প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। তখন অবশ্য আমরা হাসাহাসি করছিলাম যে অটল টানেল বানাবার আগে এইটে বানিয়ে হাত পাকিয়েছে।


    পানডো বাঁধ ( এটা ভারত্তের প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র)

    ক্রমশ গাঢ় সবুজের ঘেরাটোপ সরে গিয়ে ফাঁকা মাঠ আর চকচকে কংক্রিটের রাস্তা সাথী হয়। পাহাড় ক্রমশ দূরে যায়। সন্ধ্যে নামে, রাত গভীর হয়। প্রায় রাত বারোটা নাগাদ চন্ডীগড় স্টেশানে এসে পোঁছাই। রাত দেড়টায় নেতাজী এক্সপ্রেস আসে কালকা থেকে, আমাদের কামরাগুলো নেই তাতে। আরেকটা ইঞ্জিন পেছন থেকে এসে টেনে নিয়ে গিয়ে আমাদের কামরা জুড়ে এনে লাগায় রাত দুটো। ট্রেনে উঠেই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। ভোর ৫.৫০ এ পুরানো দিল্লি স্টেশান। নামতেই এক কুলি পাকড়াও করে, চলিয়ে ম্যাডাম ট্যাক্সি ট্যাক্সি। বলি না বাপু আমি আপাতত ওয়েটিং রুম / রিটায়ারিঙ রুম বা এগজিকিউটিভ লাউঞ্জে যাবো। রিটায়ারিঙ রুমে বুকিং নেই শুনে আমাকে এসি ওয়েটিং রুমে নিয়ে হাজির করে।

    ঘন্টা হিসেবে ১০টাকা করে তিনঘন্টার বুকিং করি। অল্পবয়সী ছেলেটি কাউন্টারের বাবুকে বলে এই দ্যাখো ম্যাডামকে নিয়ে এলাম, বাবু আমাকে বলে হ্যাঁ এই এরা আছে বলে তোমাদের কোন কষ্ট হয় না। আমি হেঁ হেঁ করে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে ভাবি কেসটা কী রে ভাই! পরে ন’টা নাগাদ ওয়েটিং থেকে বেরিয়ে এসে বুঝি কেসটা আসলে ওয়েটিঙ রুমে কাস্টমার যোগাড় করে দেওয়া। কারণ পাশে একটু এগিয়েই এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ আর সেখানে বেশ ভীড়। মনে পড়ল লাউঞ্জের কথা জিজ্ঞাসা করায় কুলি একটা অস্পষ্ট কিছু বলেছিল। আমিও বিশেষ মাথা ঘামাই নি কারণ ওই ঘন্টা তিনেক কাটানো আর মুখ হাত ধোয়া এইটুকুই আমার প্রয়োজন। তা এমনিতে সিটগুলো পরিস্কার, বাথরুমও পরিস্কারই তবে জল থৈ থৈ।  

    এসি ওয়েটিংরুমের এসি চালু হয় নটার পর, ততক্ষণ বিনবিন করে খান চারেক পাখা ঘুরেছে। আর ...আর...আর  ইয়া মুশকো মুশকো ইঁদুর টহল দিচ্ছে মেঝেতে। বাপরে তাদের  সাইজ দেখেই স্যুটকেসের উপরে পা তুলে ছড়িয়ে বসি। ভাগ্যিস নিজের স্যুটকেসে পা তুললে এখনো অন্য ভারতীয়রা অপমানিত বোধ করে না। নটার পরে বেরিয়ে এককাপ কফি খেয়ে প্রিপেইড ট্যাক্সি বুথ খোঁজার চেষ্টার ফাঁকে কালো ট্যাক্সিওলারা এগিয়ে আসেন। দিল্লির ট্যাক্সি তো, যথারীতি তেরোশো, বারোশো জাতীয় ভাড়া হাঁকতে থাকে। সবাইকে কাটিয়ে এগোতেই থাকলে আরেকজন সবার পেছন থেকে এগিয়ে এসে ছয়শো টাকা ভাড়া বলেন। ব্যাসস আর কি ঝপাঝপ উঠে পড়লাম। বাকীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এঁকে বকাবকি করতে থাকেন।

    ২০০৭ এ দিল্লি ছাড়ার পরে আরেকবার এসেছিলাম ২০১২তে। এই এত বছরেও দেখি ধওলাকুঁয়ার জ্যাম সেই একই রকম আছে। পাক্কা চল্লিশ মিনিট আটকে সেখানে। দেড়ঘন্টা লাগল টারমিনাল-২ এ পৌঁছাতে। ট্যাক্সিচালকের নাম গুলাব কুমার। ইনি বেশ গপ্পে মানুষ, আমিই সাধারণত সারথিদের সাথে গল্প শুরু করি, কিন্তু স্টেশান এলাকা ছাড়িয়ে ইনি নিজেই টুকটাক গল্প শুরু করলেন। আমার বাড়ি কোন্নগরে শুনেই উচ্ছসিত হয়ে ওঠেন, তাঁর বাবা কোন্নগর শ্রীদুর্গা মিলে কাজ করতেন, ‘ম্যানেজার’। গুলাবের জন্ম, লেখাপড়া সবই কোন্নগর রিষড়া অঞ্চলে। গল্পে গল্পে সময় কাটে হু হা। দুই দুইবার শ্রীদুর্গা মিলে আগুন লাগা, তারপর চুরি, আশির দশকের শুরুর দিকের সেই সব দিনগুলো  উঠে আসে হইহই করে।

    সেই সময় শুনেছিলাম ইনশ্যুওরেন্সের টাকার লোভে মিলমালিক এইগুলো করাত। জিজ্ঞাসা করার আগেই গুলাবজিও একই কথা বলেন। বলেন তখনকার ইউনিয়ানের ‘বিকা হুয়া’ গল্পও। বেঙ্গল ফাইন, হিউম পাইপ, অ্যালকালি, রিল্য্যাক্সন কারখানাগুলোর কথা, কোন্নগরের তখনকার মস্ত কালীপুজো সব রেডসান বা যুবগোষ্ঠী আমরা একে অপরকে স্মৃতির সুতোগুলো ধরিয়ে দিতে থাকি। কবে দিল্লি এসেছেন জিজ্ঞাসা করলে দুয়েক সেকেন্ড  চুপ করে থেকে জানান ১৯৮৪র নভেম্বরে, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পরে এক রিস্তেদার ডাকে এখানে কাজকামের সুবিধে হয়েছে। সেই এসে ট্যাক্সি চালাতে শুরু করেন। ভালই ছিলেন ওলা উবের আসার আগে পর্যন্ত। ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পরে কাজের সুবিধে হয়েছে দিল্লিতে, তার মানে ... তার মানে আমার ঝাঁ করে রোহিনটন মিস্ত্রির ‘আ ফাইন ব্যালেন্স’এর শেষটা মনে পড়ে।    

    আর কথা বলতে পারি না, কেমন অস্বস্তি হয়। ততক্ষণে টি২’র ডিপার্চার গেটে এসে দাঁড়িয়েছে গাড়ি। চুপচাপ ভাড়া মিটিয়ে নেমে আসি। আপাতত যাত্রা শেষ। বিপাশাকে কথা দিয়ে যাবার চৌত্রিশ বছর পরে আবার আসতে পেরেছি, অতদিন সময় তো আর আমার হাতে নেই। খুব তাড়াতাড়িই আবার যেতে হবে স্পিতি, কিন্নর। গভীর শীতে খুঁজতে যেতে হবে তুষারচিতাকেও।
     
    রূপসী বিপাশা  
                      
    (শেষ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | ৬৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীমু | 182.69.183.67 | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০১:১৮526512
  • সূর্যোদয়ের ছবি খুব ভালো লাগল। 
    হিউয়েন সাং সম্ভবত সিল্ক রাস্তা ব্যবহার করে তক্ষশীলা দিয়ে ভারতে এসেছিলেন ,  লাদাখ দিয়ে নয়।  
    স্পিতি , কিন্নর, তুষারচিতার অপেক্ষায় yes
  • dc | 2401:4900:1cd0:fad0:281c:77b3:efab:35d6 | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৪526515
  • দারুন ভালো লাগলো, আর ছবিগুলোও অসাধারন। 
  • kk | 31.0.156.5 | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৭526516
  • সিরিজটা শেষ হয়ে গেলো বলে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। যদিও জানি সব জার্নির শেষ তো আছেই। মহাদ্যুতিং আর বিপাশার ছবিগুলো অসম্ভব ভালো লাগলো।
  • | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:০৫526539
  • দীমু, 
    হ্যাঁ তক্ষশীল থেকে লহর হোয়ে শ্রীনগর অন, তারপরে  কুলু।  এবারে শ্রীনগর থেকে যদি মনলি হয়ে কুলু যান তাহলে অল্প ডিট্যুরেই চন্দ্রতাল ছোঁয়া সম্ভব।   আমি কোনও একটা বইতে পড়েছিলাম হিমমরুর সৌন্দর্য্য বর্ননা করেছেন,  চন্দ্রতালকে লোহিত্য সাগর বলে উল্লেখ করেছেন। এই লোহিত্য সাগরের কথা  নেটেও পাচ্ছি, কিন্তু সোর্স পাচ্ছি না।  
    কাজেই নিশ্চিতভাবে গিয়েছেন বা যান নি কোনোটাই বলতে পারছি না। 
     
  • দীমু | 182.69.177.150 | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:২০526540
  • কাল রাতে আমিও নেটে খোঁজাখুঁজি করছিলাম। ম্যাপ দেখে মনে হল যান নি। কিন্তু লেখাতে থাকলে ঠিকই আছে। ছোট ভ্রমণগুলোকে ম্যাপে দেখানোর চান্স কম। আমি এই বিষয়ের ওপর লেখা অন্য কোনো বই পড়িনি। ধন্যবাদ। 
  • | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩২526541
  • না না ছাপার অক্ষরে থাকলেই যে ঠিক হবে তার মানে নেই। একমাত্র উপায় হচ্ছে হিউএন সাঙের ডায়েরিগুলো পড়ে ফেলা।  আমি বভহর বার‍্যো আগে শুরু করেছিলাম কিন্তু সে এমন ভয়ানক  বোরিং কি বলব! এমনকি 'অমৃতপান্থ'  পারুল প্রকাশনীর বই, সেটাও বেদম ব্বোরিং। উফফ। laugh
  • | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৩৩526542
  • *বছর বারো 
     
  • দীমু | 182.69.177.150 | ২৭ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০১526544
  • In this country there is a stupa built by King Aśoka in memory of the event of the Tathāgata coming to this place in olden times to preach the Dharma for the conversion of the people. From here the road, leading to the north for one thousand and eight or nine hundred li by perilous paths and over mountains and valleys, takes one to the country of Lāhul. Going further to the north over two thousand li along a route full of difficulties and obstacles, in cold winds and wafting snowflakes, one could reach the country of Marsa (also known as the country of Sanbohe). From the country of Kulūta going south for more than seven hundred li over a great mountain across a big river, I reached the country of Śatadru (in the domain of North India). 
     
     
    ১০৪ পাতায় পেলাম , লাহুল যাবার রাস্তার উল্লেখ আছে। নিজে যাননি। কুলুর পর নিচের দিকে নেমে গেছেন। ডায়েরিটা কাঠ কাঠ ভাবে লেখা হলেও আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লাগল। সময় নিয়ে পুরোটা পড়ে ফেলতে হবে। এটার বঙ্গানুবাদ কেউ করেননি বিশ্বাস হয় না।
  • | ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৮526582
  • আরে ধন্যবাদ। 
    এইটা নয়, আরেকটা ভার্সান পেয়েছিলাম আর্কাইভে কিম্ব গুটেনবার্গে।  সে বই দেখচি আমার  প্রাচীন ট্যাবের সাথেই গেছে। মানে টর ব্যাকাপ নিই নি আর কি। 
     
    ডিসি আর কেকেকে (কিরম অদ্ভুত দেখাচ্ছে )  ধন্যবাদ সংগে থাকার জন্য। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন