এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  ঘুমক্কড়

  • চললুম ঈর্ষাহীন দেবীর গৃহে - ১

    সমরেশ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ঘুমক্কড় | ০৬ জুন ২০২৪ | ২৩৮ বার পঠিত
  • ২০১৯ এর মে মাসে চারধাম যাত্রার পীক সিজনে ৩৫ দিনের একাকী ভ্রমণে গেছি‌লাম উত্তরাখণ্ডে। ১৬.৫.১৯ কর্ণপ্রয়াগ থেকে গোপেশ্বর এসে কেদার-বদ্রী মন্দির কমিটির যাত্রী‌নিবাস খুঁজতে অনেকটা নেমে যেতে হয়েছিল। যাত্রীনিবাসে কাউকে না পেয়ে কিছুটা উঠে এসে একটা ছোট মুদীর দোকানের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রেকিং পোলে ভর দিয়ে একটু দম নিচ্ছি।
     
     দোকানে বসে বছর পঁচিশের এক স্থানীয় তরুণী। আমার দিকে কৌতূহলী চোখে তাকায়। দোকানে‌ খদ্দের নেই। দোকানের সামনে রাখা একটা প্লাস্টিক টুল দেখিয়ে বলি, একটু বসবো? সে বলে, হ‍্যাঁ, হ‍্যাঁ, বসুন না। আলাপ হয়। নাম তার অরুণা। ঐ দোকানের পিছনে ওরা চার সহপাঠী‌ মিলে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। আইন পড়ছে গোপেশ্বরে‌র কলেজে। দোকানটি বাড়ি‌ওলা মালকিনের। তিনি আশপাশে গেলে ওদের চারজনের কেউ একটু ঠেকনা দেয়। 

    অরুণা সপ্রতিভ। জানতে চায়, কাউকে খুঁজছেন? বলি, রাত্রিবাসের জন‍্য মন্দির‌ কমিটি‌র যাত্রীনিবাসে এসেছি‌লাম কিন্তু কেউ নেই। অরুণা বলে, আমার কাছে লজ মালিকের নম্বর আছে। দাঁড়ান লাগাই। জানা গেল, এক স্থানীয় হোটেল ব‍্যবসায়ী মন্দির কমিটির থেকে যাত্রীনিবাসটি দীর্ঘমেয়াদী লিজে নিয়ে, আমূল সংস্কার করে ম‍্যারেজ হল বানিয়েছেন। কয়েকটি দ্বিশয‍্যা ঘর আছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতি‌থিরা থাকে। অনুষ্ঠান না থাকলে যাত্রীরা‌ও থাকতে পারে। তখন বিলকুল খালি তবু ভাড়া চাইলেন আটশো। মান অনুযায়ী বেশি নয়। তবে আমার বাজেটের বাইরে। তার অফার ব‍্যাক‌আপে রাখি।
     
    দোকানে‌র পাশেই একটা খোলা ছাদ দেখে মনে হয় প্ল‍্যান-বি এক্সপ্লোর করে দেখি। অরুণাকে জিজ্ঞাসা করি, ঐ ছাদটা কাদের? ও বলে, দোকান মালকিনের‌ই। এখন কিছু করার প্ল‍্যান নেই, পরে হয়তো ঘর উঠবে। বলি, আমার কাছে ছোট টেন্ট আছে। ওখানে কী টেন্ট পেতে রাতে থাকতে পারি? তার জন‍্য কিছু লাগলে দেবো। অরুণা বলে, আইডিয়া‌টা আপনার ভালো‌ই। একা বেড়াতে এসেছেন, দিনভর ঘুরবেন, শুধু রাতে শোয়ার জন‍্য আটশো টাকা কেন খরচ করবেন? পাততেই পারেন ওখানে টেন্ট। প‍রিস্কার কমন টয়লেট আছে। মালকিন খুব ভালো, মনে হয় আপত্তি করবেন না। পয়সা‌ও নিতে চাইবেন না মনে হয়। উনি এখন বাইরে গেছেন। এলে আমি বলবো। আপনি বসুন না। 

    বলি, তুমি‌ও খুব ভালো, না হলে অপরিচিত কারুর জন‍্য আজকাল কেউ এতো ভাবে না। আমি আশপাশে আর একটু দেখি, কিছু না পেলে তোমায় যোগাযোগ করবো। তোমার ফোন নম্বর দাও। আমারটাও রাখো। যদি মালকিন রাজী হন, জানি‌য়ো। ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ করে  চলে আসার আগে বলি, জানো তো, আমার দিদির নাম‌ও অরুণা। তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো‌। সরল হাসে অচেনা অরুণা। 

    একটু বাদে গোপীনাথ মন্দিরের সন্তকুটীরে ওখান‌কার ASI ইনচার্জ কেদারনাথজীর সৌজন্যে নিখরচায় রাত্রি‌বাসে‌র ব‍্যবস্থা হয়ে যায় (এই সিরিজের ৪নং পর্বে সে বৃত্তান্ত আছে)।  অরুণাকে ফোন করে বলি, গোপীনাথ মন্দিরে থাকার ব‍্যবস্থা হয়েছে। তুমি যে ভরসা দিয়েছিলে তার জন‍্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থেকো।

    বাড়ি থেকে বেরোবার আগে হোম ওয়ার্ক করে জানতাম  অনসূয়া দেবী মন্দির যেতে হলে গোপেশ্বর থেকে চোপতা‌র পথে ১৬কিমি দুরে বাসে বা শেয়ার জীপে মন্ডল গ্ৰামে যেতে হবে। ওখান থেকে অনসূয়া দেবী মন্দির ৫ কিমি হাঁটা‌পথ। মন্দির থেকে অত্রি মুনীর গুহা আরো ২ কিমি। সেখান থেকে জঙ্গলে‌র পথে পঞ্চকেদারের দুর্গম‌তম রুদ্রনাথ যাওয়ার একটা রাস্তা আছে বটে তবে ও পথে একা যাওয়া উচিত নয়। আমার এবারের ভ্রমণগন্তব্যে‌ও নেই তা। 
     
    তখন চারধাম যাত্রার পীক সিজনে রুটের অনেক প্রাইভেট বাস, শেয়ার জীপ উঠে গিয়ে রিজার্ভে চলছে। তার এফেক্ট হরিদ্বার থেকে ভুগছি। ভুল হয়ে গেছে যাত্রা সিজনে এসে। আমি যখন তীর্থযাত্রী ন‌ই, তখন দশেরার পর এলে এতো ভীড় থাকতো না, নির্ঝঞ্ঝাটে ঘোরা যেতো। বহু গাড়ি চলাচলে আকাশ‌ তখন ধূলিধুসরিত ঘোলাটে‌ও হোতো না, পরিস্কার নীল আকাশ পাওয়া যেতো। ছবি উঠতো সুন্দর। একটু ঠান্ডা বেশী হোতো এই যা। 

    পরদিন গোপীনাথ মন্দিরের পালোয়ান চৌকিদার রামপ্রসাদের সাথে কথা বলে জানা গেল ১১টার আগে ওপথে শেয়ার জীপ যায় না। ও বলে, এক কাজ করতে পারেন, নটা নাগাদ লোয়ার বাজার চকে GMVN GH এর সামনে থেকে জড়িবুটি সংস্থা‌র স্টাফদের জন‍্য একটা মিনিবাস যায়। ড্রাইভার পিছনের সীটে পাঁচজনকে ওঠায়, কুড়ি‌টাকা করে নেয়। যদি ওতে জায়গা পান সবথেকে ভালো, নাহলে ১১টার শেয়ার জীপে যেতে হবে। জীপগুলো যায় তো লোয়ার বাজার হয়েই কিন্তু ওখানে সীট পাবেন না। তার জন‍্য আপার বাজারে যেতে হবে। ওখান থেকেই ভর্তি হয়ে ছাড়ে।

    রামপ্রসাদ যেটা‌কে জড়িবুটি সংস্থা বললো সেটা আসলে ১৯৮৯ সালে স্থাপিত Herbal Research and Development Institute (HRDI), an autonomous and Nodal Agency under Uttarakhand State Medicinal Plant Board. মণ্ডলে তার প্রধান কর্মকেন্দ্র ও হেডঅফিস।

    বিকেলে মার্কেট চকে যাই রামপ্রসাদের খবরটা যাচাই করতে। কন্ডাক্টেড ট‍্যূরে গেলে এসব নিয়ে ভাবার দায় নেই ভ্রামণিকের। সে দায় সঙ্গে যাওয়া পরিচালকের। তবে জনবাহনে, লো-বাজেট একাকী ভ্রমণে কয়েক‌বার ধাক্কা খেয়ে এসব প্রয়োজনীয় তথ‍্য একবার অন্ততঃ আর একটি সোর্স থেকে যাচাই করা অভ‍্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। কেউ জেনেবুঝে মিসগাইড করে না। তবে তার কিছু ভুল হলে অযথা সময় নষ্ট, হয়রানি হয়। কয়েক‌বার নিজবাহনে বৌ, ছেলে বা বন্ধুদের সাথে দীর্ঘ ভ্রমণে গেছি ২/৩/৪/৬ জন মিলে। একমাস ধরে আমার পুঁচকে মারুতি‌তে চার বন্ধু ঘুরেছি কর্ণাটক, অন্ধ্র, কেরালায় ৩৭০০ কিমি। তখন‌‌ও গুগলম‍্যাপ নির্দেশিত পথ মাঝেমাঝে স্থানীয়‌দের থেকে যাচাই করে নিয়েছি। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় ফিডব্যাক হেল্প করে। তখন কয়েক‌বার ম‍্যাপের ডিরেকশন উপেক্ষা করে অন‍্য পথে গেছি। 

    ২০২২এর আগস্টের শেষে ব‍্যাঙ্গালোর থেকে হাওড়া এসেছিলাম সিকি শতাব্দী কনিষ্ঠ বন্ধু‌পূত্র বন্ধু তপুর সাথে ওর ফোর্ড ইকোস্পোর্ট গাড়িতে। সরাসরি ইস্ট কোস্ট হয়ে এলে ১৮৫০ কিমি। ঘুরেফিরে আসবো বলে আমি প্ল‍্যানটা করেছি‌লাম ৩১০০ কিমি‌র। ৩০শে আগস্ট আসছিলাম তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল থেকে ছত্তিশগড়ের জগদলপুর - ৪১০কিমি। পথে এক জায়গায় বৃষ্টির মধ‍্যে ছাতা মাথায় দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। আগে কোথাও হাঙ্গামা হচ্ছে। রাস্তা আটকেছে লোকজন। পুলিশ জানতে চায় কোথায় যাবো। জগদলপুর শুনে বাঁদিকে‌র রাস্তায় যেতে বললো। তাহলে ঝামেলা বাইপাস করে যেতে পারবো।

    সে এক জনমানবহীন পাহাড়ি পথ। শেষ বিকেলের মরা আলো। অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। যেন অপার্থিব ল‍্যান্ডস্কেপ। আমি গাড়ি চালাচ্ছি। তপু আশপাশে দেখে বলে, কাকু, এসব জায়গায় গাড়ি খারাপ হলে তো ফুল কেলো, বলো? বলি, ২০১৭তে কেনার পর গাড়ি তোর বত্রিশ হাজার কিমি‌ও চলেনি। ফোর্ড সার্ভিস সেন্টার থেকে ফুল সার্ভিস করিয়ে টিপটপ অবস্থায় বেরোলাম ব‍্যাঙ্গালোর থেকে, হঠাৎ তোর গাড়ি খারাপ‌ই বা হতে যাবে কেন? এতো আনরিলায়েবল তো নয় ফোর্ডের গাড়ি। কোথায় এনজয় করবি পথটা, তা না এসব অলুক্ষুণে ভাবনা আসছে কেন তোর মাথায়? খারাপ হলে, যা হবার হবে, যা করার করতে হবে। শুধুশুধু ভেবে কী লাভ। পুলিশ না পাঠালে এ পথে আসতাম আমরা? তপু, বলে, তা অবশ‍্য ঠিক, দারুণ জায়গাটা।

    দুদিন পর জগদলপুর থেকে বেরিয়ে গুগল ম‍্যাপ অনুযায়ী ভেবেছিলাম কোরাপুট থেকে সটান NH-326 ধরে লামতাপুট, কাকিরিগুমা, রায়গড়া হয়ে চলে যাবো টিবেটান সেটলমেন্ট - ওড়িশার মিনি ধরমশালা - চন্দ্রগিরি - ৩৬০ কিমি। কিন্তু পুরোনো অভ‍্যাসে কোরাপুটে নেমে চা খেতে গিয়ে দোকানে গুগলম‍্যাপ দর্শিত পথ কনফার্ম করতে গেলাম। জানতে পারলাম কাকিরিগুমা‌র আগে কোথাও বন‍্যায় রাস্তা খারাপ হয়ে গেছে। গাড়ি যেতে‌ও পারে, নাও পারে। চান্স না নিয়ে NH-26 ধরে ২০ কিমি ঘুরে গিয়ে NH-326এ উঠলাম কাকিরিগুমায়। কিন্তু তার ফলে পূরণ হোলো অনেকদিনের একটা ইচ্ছে।

    ৯১তে L&T তে জয়েন করে কিছু সহকর্মীদের কাছে শুনেছিলাম দমনজোড়ি প্রকল্প নির্মাণ‌কালের কিছু অভিজ্ঞতা। কোরাপুট জেলায় পূর্বঘাট পর্বতমালার ছবির মতো সবুজ সুন্দর উপত্যকায় শুরু হয়েছিল NALCO’র প্রথম এ্যালুমিনা প্ল‍্যান্ট। ঐ প্রকল্পে বড় কাজের অর্ডার পেয়েছি‌ল L&T. তখনকার সেই বিরান জায়গায়, অনেক নাগরিক সুবিধা‌হীন জীবনের অসুবিধা সহ‍্য করে‌ বহু নির্মাণ‌কর্মী‌রা একদম শুরু থেকে গড়ে তুলেছিলেন প্ল‍্যান্ট, টাউনশিপ। ইচ্ছে ছিল বহু মানুষের পরিশ্রমের ফল কী হয়েছে দেখা‌র। পঁয়ত্রিশ বছর পর শান্ত, সুন্দর NALCO’র দমনজোড়ি টাউনশিপ দেখে বেশ লাগলো। 


     
    চলার পথে ওড়িশার পূর্বঘাট পর্বতমালার পাহাড়ি অঞ্চলের পাদদেশে বর্ষার জলে পুষ্ট অনামা জলাশয় দেখে ভাইপো চলন্ত গাড়িতে আহা উহু করে ওঠে  - কী দারুণ জায়গা গো! চল তাহলে যাই জলের কাছে - বলে কাকু পথ ছেড়ে গাড়ি নিয়ে নেমে পড়ে জলের কিনারায়। তপুর লাল কছুয়া একটু বিশ্রাম নেয়। কাকু দুর থেকে সেই সুন্দর নিসর্গের স্নিগ্ধতা উপভোগ করে। ভাইপো একদম জলের কাছে গিয়ে খানিক ভাবুক হয়ে যায়। কে জানে, হয়তো বর্ষার জমা জলে কাগজের নৌকা ভাসানোর কথা মনে আসে। খানিক পরে দুর থেকে কাকু হাঁক পাড়ে, কী রে, জলের কাছে গিয়ে একেবারে জমে গেলি যে - আয়, যেতে হবে তো আজ বহুদূরে। 
     
    ভাইপো জলের ধার ছেড়ে পা টেনে টেনে আসে - (সবুজ তীর) হয়তো জায়গাটা ভালো লেগে গেছে ওর। তাই যেতে মন চাইছে না। গাড়িতে ঘুরলে, ট‍্যাংকে তেল থাকলে, এই ধরণের কিছু অপরিকল্পিত ডিট‍্যূর‌ও পার্ট অফ দ‍্য ট‍্যূর। বেশ লাগে। অবশ্যই কোথাও পৌঁছনোর তাড়া না থাকলে। কিন্তু এখন অনসূয়া দেবী যাত্রপথ থেকে সরে গেছি বহু দূরে। ফিরে আসি সেখানে।
    মার্কেট চকে এক বড় সবজির দোকানী বলেন ছুটির দিন ছাড়া এখানেই বাসটা এসে দাঁড়ায় মিনিট দশেক। সোয়া নটায় ছেড়ে যায়। তার মানে রামপ্রসাদের খবর পাক্কা। একা অনসূয়া দেবী যাবো শুনে কেদারনাথজী একটু চিন্তিত মুখে বলেছিলেন, সিরোলি গাঁ‌ওয়ের পর শেষ  দু কিমি একদম বিরান,  জঙ্গলের মধ‍্যে দিয়ে পথ। মাঝে মধ‍্যে ওখানে বিকেলে‌র দিকে লেপার্ড দেখা গেছে শুনেছি। দলে বা মেলার সময় গেলে ঠিক আছে, কিন্তু একদম একা যাবেন? 

    শুনে একটু দমে গেছিলাম। ভেবে এসেছি‌লাম, অনসূয়া দেবী মন্দির ও অত্রি মুনীর গুহা অবধি যাবো। আমার নিভে যাওয়া মুখভাব দেখে কেদারনাথজী  বলেছিলেন, শেষ বিকেলে ও পথে গেলে একটু চিন্তা‌র বিষয়। তবে আপনি সকালে এখান থেকে র‌ওনা হলে জীপে মণ্ডল গিয়ে ওখান থেকে যতো আস্তে‌ই দেখতে দেখতে যান, একটা‌র আগেই মন্দিরে পৌঁছে যাবেন। সিরোলি‌তে না হয় একটু অপেক্ষা করবেন, আর কেউ গেলে একসাথে যাবেন। নয়তো গাঁয়ের কাউকে শখানেক টাকা বখশিশ দিলে আপনাকে মন্দিরে ছেড়ে দিয়ে আসবে। দিনের বেলায় অতো ভয়ে‌র কিছু নেই। ভেবেছেন যখন, মাতাজী‌র নাম নিয়ে ঘুরে আসুন। রাতে তো ওখানেই থাকবেন বলছেন। তাহলে পরদিন একটু রোদ উঠলে, আটটা‌র পর নামবেন।

    সবজির দোকানে দেখা হয় অরুণা‌র সাথে। বলি, তোমার বাড়ি‌ তো বলেছিলে মন্ডল গাঁ‌ওতে‌, পড়াশোনা‌র জন‍্য এখানে এসে আছো, একটা কথা জানতে চাই। কাল অনসূয়া দেবী যাবো ভাবছিলাম। কিন্তু গোপীনাথ মন্দিরের ইনচার্জ বললেন ও পথে নাকি মাঝেমধ্যে লেপার্ড দেখা গেছে, একা যাওয়া কী উচিত হবে, তুমি কী বলো? অরুণা বলে, উনি ঠিক‌ই বলেছেন, আমি‌ও শুনেছি কয়েকবার গুলবাঘ দেখা গেছে ওদিকে, একলা যাওয়া ঠিক নয়, তাছাড়া বেশ চড়াই, থক জায়েঙ্গে আপ।
     
     অরুণা‌র কথা শুনে আরো দমে যাই। রাতে গোপীনাথ মন্দির চত্বরে নন্দ‌ন মহারাজের ঠেকে তরুণ নাগা সন্ন্যাসী‌র রাঁধা রুটি, এঁচোড়ের তরকারি খাচ্ছি‌লাম। তীক্ষ্মদৃষ্টির বাবা বলেন - কী হোলো, আপনাকে একটু ম্রিয়মাণ লাগছে কেন? বললুম ভেবেছি‌লাম অনসূয়া দেবী মন্দির যাবো। কিন্তু গুলবাঘের ভয়ে চুপসে গেছে মনোবল। বাবা বলেন, যাবেন ভেবে এসেছেন যখন, মাতাজীর নাম নিয়ে ঘুরে আসুন। গুলবাঘ থাকলেও দিনদুপুরে ওরা লোকসমক্ষে আসে না। দুনিয়ায় মানুষ‌ই সবথেকে হিংস্র প্রাণী। জঙ্গলে‌র পশুরা‌ও তা বোঝে। তাই মানুষ‌কে ওরা সচরাচর এড়িয়ে‌ই চলে। কিচ্ছু হবে না, বে ফিকর মাতাজীকী দর্শন করকে আ‌ইয়ে। বাবার আশ্বাসে ভরসা পাই।


     
    পরদিন HRI বা জরিবুটি সংস্থার বাসটি ঠিক সময়ে এলো। ঠিক সময়ে ছেড়েও দিল। বেশ কিছু সীট খালি ছিল। পিছনে জানলার ধারে বসলুম। গোপেশ্বর থেকে চোপতার পথে কিছুটা যেতে সকালের উজ্জ্বল আলোয় ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া জমি‌তে চাষবাস, গোপেশ্বরের হালকা হয়ে আসা জনপদ, দুরে নীচে বালখিল্য নদীর খাত … চারপাশে এহেন সব মন ভালো করা দৃশ‍্যে মন থেকে মিলিয়ে যায় গতরাতে‌র গুলবাঘের আশাংকা। বাসটি আমায় মন্ডলে নামিয়ে চলে গেল ২ কিমি আগে HRI. 
     
    (চলবে)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ০৬ জুন ২০২৪ | ২৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন