এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  রাজনীতি

  • কিষেণজি মৃত্যু রহস্য - পর্ব ১২ 

    বিতনু চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | রাজনীতি | ০৭ জুন ২০২৪ | ৩৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • রামজীবন মুর্মুর ডায়েরি, ২০১১

    ২০০৯ সালের পর রামজীবনের সঙ্গে ফের দেখা হল দু’বছর বাদে। মাঝে দেখা করার সুযোগ হয়নি। ২০১১ বিধানসভা ভোটের অ্যাসাইনমেন্টে ফের গেলাম ঝাড়গ্রাম। এবং আবার একবার গেলাম রামজীবন মুর্মুর বাড়ি। এই দু’বছরে জঙ্গলমহলের পরিবর্তন বলতে মূলত দুটো। প্রথমত, ২০০৯ সালে লালগড়কে কেন্দ্র করে ঝাড়গ্রাম মহকুমার একটা বিস্তীর্ণ অংশে চূড়ান্ত আধিপত্য ছিল মাওবাদীদের। কিষেণজির নেতৃত্বে লালগড় আন্দোলন সেই সময় একেবারে তুঙ্গে। সিপিআইএম কর্মী, সমর্থকদের খুন এবং বাড়িছাড়া করার ঘটনা তখন মাওবাদীদের রুটিন কর্মসূচি। পুলিশ, সিআরপিএফ তখনও জঙ্গলমহলের বহু এলাকায়, গ্রামে ঢুকতে পারছে না। আর দ্বিতীয়ত, সিপিআইএম বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি তখন বিনা শর্তে মাওবাদীদের নেতৃত্বে একত্রিত। লক্ষ্য, সিপিআইএমকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। সেই ছ’য়ের দশকের শেষ থেকেই সিপিআইএমের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিল কংগ্রেস এবং ঝাড়খন্ড পার্টি। ১৯৯৮ সাল থেকে লড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি। আর মাওবাদীরা তো আছেই। কিন্তু লালগড় আন্দোলনের পর ভিন্ন এক পরিস্থিতি তৈরি হল জঙ্গলমহলে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম উত্তর যুগে পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম বিরোধী আন্দোলনের ব্যাটন লালগড়কে কেন্দ্র করে ঝাড়গ্রাম মহকুমার হাতে চলে এল। সেই সময় সব বিরোধী দলের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল একটাই বার্তা, সিপিআইএমকে উৎখাতের এমন অনুকুল পরিবেশ আগে কখনও আসেনি। দরকার একটা শেষ জোরদার ধাক্কার। এতদিনের সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য। তাই সিপিআইএমকে হারানোর জন্য তখন অভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে সমস্ত বিরোধী দল। 
     
    আর দু’বছর পর ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা। সেই সময় পায়ের তলায় অনেকটা জমি ফিরে পেয়েছে পুলিশ এবং সিআরপিএফের যৌথ বাহিনী। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে দু’চারটে ভাল অপারেশনও ততদিনে হয়ে গেছে। তাছাড়া, বাছবিচারহীন খুনোখুনি করে মাওবাদীরা তখন গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষের কাছেই অপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারত না, কিন্তু মনে মনে মাওবাদী বিরোধী হয়ে উঠেছিল সেই সময়। ২০০৮-০৯ সালে বিভিন্ন গ্রামের সক্রিয় সিপিআইএম নেতা-কর্মীরা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ছিল ঠিকই। তবে সাধারণ মানুষের মাওবাদীদের প্রতি যথেষ্টই সমর্থন ছিল। কিন্তু মাওবাদীরা যথেচ্ছ খুনোখুনি শুরু করার পর বহু সাধারণ মানুষেরও তাদের সম্পর্কে মোহভঙ্গ হয়। যে পরিস্থিতি ২০০৯ সালে ছিল না। তাছাড়া আরও একটা বড় পরিবর্তন হয়েছিল জঙ্গলমহলে। আর তা হচ্ছে মাওবাদীদের মোকাবিলায় সিপিআইএমের সশস্ত্র প্রতিরোধ। একদম সশস্ত্র ক্যাম্প তৈরি করে মাওবাদীদের সর্বাত্মক মোকাবিলায় নেমে পড়ে রাজ্যের শাসক দল। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় এই সশস্ত্র ক্যাম্প ছিল দু-চারটে। কিন্তু ২০১০ থেকেই তার সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টে দোতলা-তিনতলা পার্টি অফিসকে সশস্ত্র ক্যাম্পে কনভার্ট করে সিপিআইএম। কোথাও তেমন লোকেশনে পার্টি অফিস না থাকলে সেখানে কোনও পার্টি সদস্য কিংবা নেতার বাড়িতে ক্যাম্প করা হয়। প্রতিটা ক্যাম্পে অন্তত আট-দশজন লোক সবসময় থাকত। বন্দুক থাকত অন্তত ছ’আটটা। গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে লোক এবং বন্দুক রাখা হোত আরও বেশি। মাওবাদীরা হঠাৎ আক্রমণ করলে যাতে তাদের ঠেকানো যায়। এই ক্যাম্পগুলোকেই ‘হার্মাদ শিবির’ বলে অভিযোগ করতে শুরু করে বিরোধীরা। পুলিশের মদতে পুরো জঙ্গলমহলে সিপিআইএমের হার্মাদ শিবির চলছে বলে ২০১০ সাল থেকেই রাস্তায় নামেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিআইএমের এই সশস্ত্র ক্যাম্প এবং এই ক্যাম্পের সঙ্গে মাওবাদীদের লড়াইয়ের বহু ঘটনা আছে। যার এক মর্মান্তিক পরিণতি ২০১১ সালের শুরুতে নেতাইয়ের ঘটনা৷ আপাতত শুধু এটুকুই বলার, ২০১১ সালে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের পক্ষে পরিস্থিতি ততটা অনুকুল ছিল না, যতটা ছিল ২০০৯ সালে। যদিও সিপিআইএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মেরুকরণটা তীব্র ছিলই।
     
    রাজ্যে যখন ৩৪ বছরের সরকার বদল কয়েকটা দিনের মাত্র অপেক্ষা, এমনই এক সময় ২০১১র প্রখর গ্রীষ্মে আমার গাড়ি গিয়ে থামল রামজীবন মুর্মুর বাড়ির সামনে। এবার আর বারবার গাড়ি থামিয়ে লোককে জিজ্ঞেস করতে হয়নি বাড়ির ডিরেকশন। আর জঙ্গমহলে মাটি কিংবা মোরামের রাস্তায় এপ্রিল-মে মাসের দাবদাহে বারবার গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় নামার অভিজ্ঞতা যাঁর আছে তিনি জানেন, এ অভিজ্ঞতা কেমন। গাড়ি থামিয়ে আপনি রাস্তায় নামলেন মানেই, গাড়ির সঙ্গে ছুটতে ছুটতে আসা ধুলো, বালি, মাটি এবং তীব্র গরম আপনার পার্মানেন্ট সঙ্গী হল। 
    আগেরবার পৌঁছে দেখেছিলাম, বাড়ির উঠোনেই বসেছিলেন রামজীবন। এবার উঠোনটা ফাঁকা। কেউ নেই। ঘরের দরজা খোলা। ঘরের দিকে এগিয়ে দেখলাম ভেতরেও কেউ নেই। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছি, ভাবছি কাকে জিজ্ঞেস করব রামজীবনের কথা। তস্য গ্রামের একটা সুবিধে হচ্ছে, গাড়ি ঢুকলে আস্তে আস্তে দু’একজন ঠিক জড়ো হয়ে যায়। হলও তাই। এক মহিলা বললেন, ‘এই তো একটু আগেই ছিল। কাছাকাছিই কোথাও গেছে। এসে যাবে।’
    অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই। যদিও সময় নেই হাতে খুব একটা। পরদিন ভোট ঝাড়গ্রাম মহকুমায়। ভেবেছিলাম, মিনিট পনেরো দেখা করে ফিরে যাব। দেখব, জঙ্গলমহলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া সিপিআইএম জমানায় কেমন আছেন রামজীবন মুর্মু। মাওবাদীদের একাধিপত্য নিয়েই বা তাঁর কী প্রতিক্রিয়া। দু’পাঁচ মিনিট কেটেছে। সামনে এগিয়ে এল একটা ছেলে। যুবক বলাই ভাল। বছর কুড়ি বয়েস। ‘কাকা বোধয় থানায় গেছে। কাল বলছিল, আজ একবার থানায় যাবে।’
    ‘কেন, থানা কেন? কী হয়েছে?’ 
    ‘আপনি কে?’
    ‘আমি কলকাতা থেকে আসছি। দু’বছর আগে একবার এসেছিলাম এই বাড়িতে। রামজীবন মুর্মু আর তাঁর ভাই নকুলবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছিল। ঝাড়গ্রামে কাজে এসেছি, ভাবলাম দেখা করে যাই। আপনি?’ নিজের পরিচয় না জানিয়ে বললাম আগন্তুক যুবককে।
    আমার নাম উজ্জ্বল মাহাতো। পাশেই থাকি। রামজীবন কাকার ছেলে শিবরাম আমার বন্ধু। গত পুজোয় পুলিশ শিবরামকে অ্যারেস্ট করেছিল। মিথ্যে সব কেস দিয়েছে। রাস্তা কাটা, খুনের চেষ্টা। দু’মাস পর বেল পেল। তারপর শিবরাম বাড়িতেই থাকত, বেশি বেরোত না। এ’বছর ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ আবার অ্যারেস্ট করল। এক মাস পর বেল হল। তারপর থেকেই শিবরাম বাড়িছাড়া। কোথায় গেছে কেউ জানে না। পুলিশ আসে ওর খোঁজে। রামজীবন কাকাকে মাঝে-মাঝে থানায় ডেকে পাঠায়।’
    এই ব্যাপারগুলোতো তো জানা ছিল না। তাঁর এক ছেলে আছে, বলেছিলেন রামজীবন। নামও বলেছিলেন। কিন্তু সে কী করতো জানতে চাইনি তখন।
    ‘পর পর দু’বার পুলিশ অ্যারেস্ট করল কেন?’ জানতে চাইলাম উজ্জ্বলের কাছে। ধূসর রঙের টি-শার্ট আর ভদ্রস্থ একটা প্যান্ট পরনে। পায়ে চামড়ার চটি। হাতে ঘড়ি নেই, মোবাইল ফোন আছে। হাজার চারেক টাকার মোবাইল সেট। অভাব হয়তো আছে কম-বেশি, কিন্তু দারিদ্রের যে প্রকট ছাপ দেখতে পাই এই এলাকার বহু মানুষের চোখে-মুখে, তা উজ্জ্বলের চেহারায় নেই। অবশ্য কম বয়সীদের চেহারায় দারিদ্রের ছাপটা কম। সবাই মোটামুটি কিছু না কিছু করে এখন। সন্তোষ রাণা বলেছিলেন, এই এলাকার আদিবাসী মানুষেরা পুরো পরিবার নিয়ে বংশ পরম্পরায় প্রায় ক্রীতদাসের মতো কাজ করতো এক সময়। ঝাড়গ্রামের প্রথম এসডিপিও তুষার তালুকদার তো এই রামজীবনের বাবাকেই থানা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন তীব্র খিদের কারণে স্ত্রী হত্যার দায় থেকে। সেই রামজীবনের ছেলের বন্ধু এখন ডান হাত প্যান্টের পকেটে, বাঁ হাতে মোবাইল ফোন, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখেছে, এটাও তো একটা গুরুত্বপূর্ণ উত্তরণ। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দুভাবেই। উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই আরও চার-পাঁচজন জড়ো হয়েছে।
    ‘পুলিশ তো এই করছে দু’বছর ধরে। যাকে-তাকে অ্যারেস্ট করছে মাওবাদী বলে। আপনি কোন মিডিয়া?’ পালটা প্রশ্ন করল সে। গাড়িতে লাগানো প্রেস স্টিকার এবং আমার সঙ্গী ক্যামেরাম্যানকে দেখে ঠিকই বুঝেছে। এও জঙ্গলমহলে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ২০০৮ সালের শেষে লালগড় আন্দোলন শুরু হওয়ার পর। মাওবাদী এবং পুলিশের পরই যাদের সবচেয়ে বেশি দেখেছে জঙ্গলমহলের মানুষ, ঘটনাচক্রে তারা সাংবাদিক। আর ২০১১ সালে তো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার সামনে নির্ভুল ইন্টারভিউ দিতেও স্বচ্ছন্দ হয়ে গেছে এখানকার মানুষ। অনেককে দেখেছি, টেলিভিশন সাংবাদিককে ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নিচ্ছেন।   
    ‘শিবরামের মতো কি এই গ্রামের অনেককেই পুলিশ ধরেছে?’ তাঁর বন্ধুর প্রতি কিছুটা সহানুভুতি দেখিয়েই জিজ্ঞেস করলাম উজ্জ্বলকে।
    ‘হ্যাঁ, ধরেছে। অনেককে ধরেছে। শিবরাম তৃণমূল করতো। আমিও করি। পিসিপিএর মিটিং-মিছিলে যেত। আমিও যেতাম। ওকে ধরল মাওবাদী বলে। বেল পাওয়ার পর আবার ধরল। ভোটের আগে আবার ধরতো, তাই পালিয়েছে।’
     
    উজ্জ্বল মাহাতোর কথা শুনছি আর ভাবছি, কী বিচিত্র কারবার। এত কিছু বদল হল, কিন্তু সিপিআইএম বিরোধিতা মানেই পুলিশি হেনস্থা, জঙ্গলমহলে এই ব্যাপারটা পাল্টাল না আজও! নকুলও একই কথা বলেছিলেন। আর ভাবছিলাম রামজীবন মুর্মুর কথা। রামজীবন মাহাতোর জীবন যে নিজের গতিপথে তাঁকে আর কত চমক দেখাবে, কত শার্প টার্ন নেবে, কে জানে?
    ছ’বছর বয়সে বাবার ধাক্কায় পড়ে গিয়ে যক্ষা রোগে ক্ষয়ে যাওয়া মায়ের মৃত্যু। তারপর মামা বাড়িতে থাকা। পুলিশে ধরা দিল বাবা। সহানুভুতিশীল এক পুলিশ অফিসারের উদ্যোগে বাবার ছাড়া পাওয়া। এত বছর বাদে দু’দুবার পুলিশ ধরল ছেলেকে। এখন মাঝবয়সে পৌঁছে ছেলের জন্য থানায় দৌড়ঝাঁপ। 
    ‘আপনি কী করেন?’ জিজ্ঞেস করলাম উজ্জ্বলকে। ‘আচ্ছা ওকেই ধরল কেন?’
    ‘তৃণমূল করি। ২০০৭ থেকে। তখন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম চলছে। শিবরামের কাকা ঝাড়খন্ড পার্টি করত। আমরা তৃণমূল করতে শুরু করলাম। আগে গ্রামে সিপিআইএম একটু বেশি ছিল। কিন্তু ওই সময় থেকে আমরা আর সিপিআইএম সমান-সমান হয়ে গেলাম। ২০০৮ পঞ্চায়েত ভোটের আগে একদিন গ্রামে আমাদের মিটিং চলছিল। গ্রামেরই কয়েকজন ছিলাম। সবাই সিপিআইএম বিরোধী। কীভাবে ভোটে লড়া হবে, কে কোথায় ক্যান্ডিডেট হবে এই সব নিয়ে মিটিং। নদীর ওপার থেকে মোটরসাইকেলে চেপে সিপিআইএমের লোকজন এল। প্রায় সবার হাতে বন্দুক। আমাদের মারধর করল। মিটিং ভেঙে দিল। যে সব গ্রামে সিপিআইএমের বেশি লিড ছিল সেখানে বেশি কিছু করত না ওরা। কিন্তু যেখানেই বিরোধীরা সমান-সমান হয়ে গেছে সেখানেই ওরা অত্যাচার করেছে।’
    উজ্জ্বল মাহাতোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আপনি কী করেন?’ এর জবাব এল, ‘তৃণমূল করি।’    
    এও ২০০৭ পরবর্তী পশ্চিম বাংলার গ্রামাঞ্চলে এক মৌলিক পরিবর্তন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় থেকে এই বদলটা শুরু হয়েছে। যেখানেই রাজনৈতিক লড়াই তীব্র হয়েছে, সেখানেই মানুষের আর সব পরিচয়, জীবন-জীবিকা গৌণ হয়ে গিয়েছে। মানুষের তখন একমাত্র পরিচয় হয়েছে, তার রাজনৈতিক আইডেনটিটি। সে কোন পার্টি করে, এটাই তখন মুখ্য। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম কিংবা লালগড়, বিনপুর তো বটেই, সেই সময় রাজ্যের বহু এলাকাতেই মানুষের একমাত্র পরিচয় হয়, ‘সিপিআইএম’ নয়তো ‘তৃণমূল কংগ্রেস’। এমনই তীব্র তখন এপার বাংলার রাজনৈতিক মেরুকরণ।
    ‘কিন্তু শুধু তৃণমূল করার জন্যই পুলিশ শিবরামকে ধরল? তৃণমূল তো বললেন, গ্রামের অনেকেই করে!’
    ‘ওর কাকা ঝাড়খন্ড পার্টি করে তো। তাই শিবরামকে টার্গেট করেছে। নকুল কাকাকেও তো ধরেছে। পুলিশ যাকে খুশি অ্যারেস্ট করছে হার্মাদদের কথায়।’
    ‘আচ্ছা শিবরাম কী করত? মানে, কাজ-কর্ম?’
    ‘তেমন কিছু না। আমি আর শিবরাম একই কাজ করতাম। শাল পাতার থালার ব্যবসা।’
    ‘শাল পাতার থালা? কী রকম?’
    ‘গ্রামের মহিলারা জঙ্গলে শাল পাতা কুড়োতে যায়। তাদের কাছ থেকে শাল পাতা কিনতাম। এক হাজার শাল পাতা কিনতাম ২০ টাকায়। তারপর সেই পাতা দিয়ে থালা তৈরি করতাম। শাল পাতার থালা। সেই থালা বিক্রি করতাম উড়িষ্যায়। অমরদা বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে থালা সাপ্লাই করতাম। এক হাজার পাতার থালা বানিয়ে বিক্রি করলে লাভ থাকত ৭-৮ টাকা।’
    ‘শিবরামও তাই করতো?’
    ‘হ্যাঁ, কিন্তু পুলিশ ধরার পর ওর ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।’
    ‘আর আপনার ব্যবসা?’
    ‘এখন বন্ধ আছে। ইলেকশন চলছে তো।’
     
    আর সময় নেই। ফিরব ফিরব করছি। ‘রামজীবনবাবুর মনে হয় দেরি হবে। অন্য কোনওদিন আসব। দেখি পারলে কাল আসব একবার।’ উজ্জ্বলকে বলে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম ঝাড়গ্রাম শহরের দিকে। গ্রাম ছাড়িয়ে খানিকটা এগিয়ে পড়লাম পিচ রাস্তায়। কাল বিধানসভা ভোট। জঙ্গলমহলের মানুষগুলোর দৈনন্দিন জীবনের এক এসপার-ওসপার পরীক্ষা। যদিও গোটা রাজ্যেই তাই। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। গত দু’বছরে এত নৃশংস হত্যা-পাল্টা হত্যার সাক্ষী এই লালগড়, জামবনি, বিনপুর, বেলপাহাড়ি, একটা নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বহু মানুষের, বহু পরিবারের ভবিষ্যৎ, জীবন-জীবিকা। এখানে মানুষের মনে এত ঘৃণা, আক্রোশ, প্রতিশোধ স্পৃহা জমা হয়ে রয়েছে! কে আবার ঘরছাড়া হবে, কত খুন হবে, সবই তো নির্ভর করছে ভোটের রেজাল্টের ওপর। ভোটের রেজাল্ট সিপিআইএমের পক্ষেই হোক আর বিরুদ্ধেই হোক, সবই যে গরিব মানুষ। গরিবের সঙ্গে গরিবের এই মুরগির লড়াই কি পাকাপাকি থামবে ২০১১ সালের এই বিধানসভা ভোটের রেজাল্টের পরে, না তা বাড়বে? নানান সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। মোটামুটি ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মাঝে পুলিশ-আধা সামরিক বাহিনীর গাড়ি যাচ্ছে। দেখছি, দূর থেকে একটা লোক হেঁটে আসছে। মাথায় একটা গামছা জড়ানো। ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ নিয়ে সূর্য তখন মাঝ আকাশে। ক্লান্ত পায়ে আস্তে-আস্তে হাঁটছে লোকটা। আমাদের গাড়ি হুশ করে পেরিয়ে গেল লোকটাকে। রামজীবন মুর্মু না? এক ঝলক মুখটা দেখে তো তাই মনে হল!
    ‘দাঁড়াও, দাঁড়াও, দাঁড়াও।’ তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থামাতে বললাম ড্রাইভারকে। কিন্তু থামাতে-থামাতেই গাড়ি এগিয়ে গেল প্রায় ৫০ মিটার। গাড়িতে বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম পেছন দিকে। লোকটা হেঁটেই চলেছে ধীর পায়ে। দরজা খুলে নামতে গেলাম। ইচ্ছে করল না, বাইরে এত গরম। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে একবার সময় দেখলাম। দেড়টা বাজে। যদি লোকটা সত্যিই রামজীবন হয়, কথা বলতে বলতে কিছুটা সময় চলে যাবে। তাছাড়া বলবই বা কী? বলার তো তেমন নেইও কিছু। এই গরমের মধ্যে আবার নামব? খিধেও পেয়েছে জোর।
    ‘দাদা, গাড়ি ঘোরাব?’
    ‘ঘোরাবে? না থাক, ছেড়ে দাও। চল।’
     
    লোকটা তো রামজীবন মুর্মু নাও হতে পারে। আবার হতেও পারে। কীই বা এসে যায়! একজন রামজীবন মুর্মুর সঙ্গে একই বয়সী আরও একটা গরিব আদিবাসী মানুষের তফাতই বা কী? শহর থেকে এসে এসি গাড়িতে চেপে ঘুরছি। এর সঙ্গে, তার সঙ্গে কথা বলছি। সবই তো নিজেরই কাজে। মাঝে-মধ্যে অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে। হয়তো কাউকে বলছি, কী সুন্দর জায়গা এই ঝাড়গ্রাম। ট্যুরিজমের কত কী করা যেত! কিন্তু রামজীবন মুর্মুর মতো যে মানুষগুলো ৩৬৫ দিনই বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছে প্রকৃতি, রাষ্ট্র এবং আর্থিক অবস্থার সঙ্গে? তাঁদের প্রতি আমি কতটা সংবেদনশীল, এই প্রশ্নও গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে। লোকটা হয়তো রামজীবনই ছিল। কিন্তু বাইরে এত গরম, আর খিধেও পেয়েছে, এই দুই কারণে তো গাড়ি থেকেও নামলাম না। ঝাড়গ্রাম শহরে ফিরতে ফিরতে মাথায় শুধু ঘুরছে শিবরাম মুর্মুর কথা। উজ্জ্বল বলেছে, শিবরাম তৃণমূল কংগ্রেস করে। এখন কোথায় আছে, কে জানে! পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ছেলেটা। পরিবারটার আর থিতু হয়ে বসা হল এক জায়গায়।  

    লালগড়ঃ ১০ নভেম্বর, ২০০৮ 
     
    ১০ নভেম্বর বলতে আমি বুঝি নন্দীগ্রাম, ২০০৭। পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, চন্দ্রকোণার সিপিআইএম বাহিনীর নন্দীগ্রাম দখল এবং সেখানে কয়েকদিন ধরে চলা ভয়ানক পরিস্থিতি। সিপিআইএমের ভাষায় নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়, যা শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ৫-৬ নভেম্বরে। শেষ পর্যন্ত সিপিআইএম নন্দীগ্রাম দখল করল ১০ নভেম্বর। পরের বছর ২০০৮ সালে একই দিনে, মানে ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে বড় মিটিং ডাকল সিপিআইএম। নন্দীগ্রাম দখলের বর্ষপূর্তির সমাবেশ। এমন অগণতান্ত্রিক ঔদ্ধত্য বিস্ময়কর!
    কয়েক মাস আগের পঞ্চায়েত ভোটে ভরাডুবি হয়েছে, স্থানীয় মানুষের সমর্থন নেই, কিন্তু কিছুতেই কিছু এসে যায় না। কারণ, পরের বছর লোকসভা ভোট। ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজ মাঠে সিপিআইএমের ওই মিটিংয়ে দুই প্রধান বক্তা তমলুকের তৎকালীন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ এবং রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী।               
    সিপিআইএমের এই সমাবেশ ফের একবার নন্দীগ্রাম যাওয়ার সুযোগ করে দিল। আবার অ্যাসাইনমেন্টে নন্দীগ্রাম, সঙ্গে ক্যামেরাম্যান এবিপি আনন্দের উজ্জ্বল ঘোষ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ সমাবেশ শেষ হল। সেদিন নন্দীগ্রাম যাওয়ার পথে ফোনে কথা হয়েছিল খেজুরির সিপিআইএম নেতা হিমাংশু দাসের সঙ্গে। হিমাংশুদা বলেছিলেন, নন্দীগ্রামের মিটিং হয়ে গেলে ফেরার পথে হেঁড়িয়া পার্টি অফিস ঘুরে যেতে। নন্দীগ্রামের সমাবেশ শেষ করে রওনা দিলাম হেঁড়িয়ার দিকে, তেখালি ব্রিজ পেরিয়ে খেজুরি হয়ে। কয়েক মাস বাদেই লোকসভা ভোট। জানতাম, লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে আবার যে কোনও মুহূর্তে উত্তেজনা, সংঘর্ষ শুরু হবে নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে। সিপিআইএমের নন্দীগ্রাম অপারেশনের সমস্ত প্ল্যানিং তখন এক্সিকিউট হয় খেজুরি থেকে। ভাবলাম, খেজুরিটা একবার ঘুরেই যাই। পঞ্চায়েত নির্বাচন পরবর্তী নন্দীগ্রাম নিয়ে কী প্ল্যান শাসক দলের, কিছুও যদি আঁচ পাওয়া যায়!  
     
    খেজুরিতে সবে ঢুকেছি, সন্ধে নেমেছে। অফিস থেকে ফোন। ‘এখনই লালগড় যেতে হবে। গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন রাস্তা কাটতে শুরু করেছে।’ 
    ২০০৭ সালের গোড়া থেকেই রাজ্যের যা পরিস্থিতি, আমার মতো সাধারণ বাস্তববোধ সম্পন্ন সাংবাদিকও জানত, অ্যাসাইনমেন্টে তিন ঘণ্টার জন্যও কলকাতার বাইরে গেলে এক্সট্রা জামা-কাপড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস নিয়ে বেরনো মাস্ট। কখন কোথায় কী ঘটে যাবে আঁচ করা অসম্ভব। হয়তো কোনও জেলায় এক জামা-কাপড়ে আটকে গেলাম দু’রাত, তিন দিন। যে কোনও সময় রাজ্যের যে কোনও জায়গায় যা খুশি ঘটতে পারে, এমন এক বিচিত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন সকাল-বিকেল মহাকরণে বসেন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে। নিজের প্রশাসন, নিজের পুলিশ বাহিনীর থেকেও অসহায় অবস্থা তাঁর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন নামেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।
    এমনই এক জামা-কাপড়ে আটকে পড়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল সেদিনের সপ্তাহ খানেক আগেই, পশ্চিম মেদিনীপুরে। সেদিন মানে, যেদিন সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম থেকে খেজুরি যাওয়ার সময় হঠাৎই অফিস থেকে ফোন পেলাম, লালগড় যেতে হবে, তার ঠিক সাত দিন আগে। 
    সেটা ২রা নভেম্বর, ২০০৮। শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত কারখানার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সঙ্গী ক্যামেরাম্যান প্রবীর সামন্ত। অনুষ্ঠান শেষ করে কলকাতায় ফিরছি। দুপুর আড়াইটে-তিনটে বাজে। শালবনির অনুষ্ঠানস্থল থেকে মেদিনীপুর যাওয়ার রাস্তায় লম্বা যানজট। যে কোনও বড়ো অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচি শেষ হওয়া মাত্র রাস্তায় একটু যানজট হয়ই। ভিআইপি মুভমেন্টের জন্য। সেদিন প্রথমে ভেবেছিলামও তাই। কিছুক্ষণ আগেই এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, শিল্পপতি সজ্জন জিন্দলসহ একগাদা ভিআইপি। যানজট খুব স্বাভাবিক। তখন জানতাম না, যানজটটা যেখানে হয়েছে সেই জায়গাটার নাম ভাদুতলা। তখনও জানতাম না, এই যানজটের কারণের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে রক্তাক্ত লালগড় আন্দোলন।   
    প্রায় দশ মিনিট গাড়িতে বসে থাকার পর প্রবীর গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে এগোল যানজটের কারণটা দেখতে। একটু বাদে আমিও গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবীর ফিরে এল, আস্তে-আস্তে এগোচ্ছে গাড়ি। কিছু একটা হয়েছে, ঠিক কী বোঝা যাচ্ছে না।   
    সেদিন সাংবাদিক হিসেবে একটা বড়ো ভুল করেছিলাম। প্রায় মিনিট পনেরো-কুড়ি বাদে যানজটটা যখন আস্তে আস্তে পেরোচ্ছি, দেখলাম রাস্তার পাশে বাঁদিকে একটা পুলিশের জিপ উল্টে পড়ে রয়েছে। গাড়িটার পাশে চার-পাঁচজন সাধারণ পুলিশ কর্মী দাঁড়িয়ে। ভাবলাম ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। না থেমে রওনা দিলাম কলকাতার দিকে। রওনা তো দিলাম, কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে মনটা খচখচ করতে শুরু করল। এত ভিআইপি মুভমেন্ট হয়েছে যে রাস্তায়, সেখানে একটা পুলিশের গাড়ি উল্টে পড়ে রয়েছে কেন? 
    সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বম্বে রোডে পৌঁছে গিয়েছি। অফিস থেকে ফোন। 
     
    ‘বুদ্ধদেববাবুর কনভয়ে ব্লাস্ট হয়েছে? একটা চ্যানেল দেখাচ্ছে।’ অফিস থেকে আসা এই এক লাইনের বার্তাই তখন যথেষ্ট ছিল। 
    ড্রাইভারকে গাড়ি ঘোরাতে বলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম মুখ্যমন্ত্রীর আপ্ত সহায়ক জয়দীপ মুখার্জিকে।
    ‘বুদ্ধদেববাবুর কনভয়ে ব্লাস্ট হয়েছে?’ 
    ‘কিছু একটা হয়েছে। তবে ব্লাস্ট না। এসপি বলছে, ইলেকট্রিক ওভারহেড তার ছিঁড়ে একটা পুলিশের গাড়ির ওপর পড়েছে। তাতে একটু আগুন ধরে যায়। টাল সামলাতে না পেরে গাড়িটা উল্টে গিয়েছে। তাতে তিন-চারজন পুলিশ ইনজিওরড। তবে সিএমের কনভয়ে না, এটা ঘটেছে রামবিলাস পাসোয়ানের কনভয়ে।’
    অফিস জানত না, চোখের সামনে পুলিশের গাড়ি উল্টে পড়ে থাকতে দেখেও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে বেরিয়ে চলে এসেছি। মনে মনে ভাবছি, ভিআইপি কনভয়ে মাওবাদীদের ব্লাস্টের খবরটা যেন ঠিক না হয়। কিছুটা আশ্বস্ত হলাম বুদ্ধদেববাবুর আপ্ত সহায়কের কথায়। জেলার পুলিশ সুপার যখন বলেছেন, ব্লাস্ট নয়, ঠিকই হবে। তবু মনটা খচখচ করছে। রওনা দিলাম শালবনির দিকে। অন্তত ২০-২৫ মিনিট লাগবে। ফোন করলাম জেলার এক পরিচিত পুলিশ অফিসারকে। ফোন এনগেজড।
    দু’মিনিটের মধ্যে ফোন করল জয়দীপদা। ‘মনে হচ্ছে ব্লাস্ট একটা হয়েছে। ডিটেল কিছু পাওয়া যায়নি।‘ 
    গাড়ি জোরে ছুটছে শালবনির দিকে। ফোনে পেয়ে গেলাম সেই পুলিশ অফিসারকে। ‘না না, ইলেকট্রিক তারের কোনও ব্যাপারই নেই। মাওবাদীরা ব্লাস্ট করেছে। ব্লাস্টে ইলেকট্রিক তার ছিঁড়ে পড়ে গেছে।’ ঘটনাস্থলে থাকা অফিসারের কথায় টেনশনে পড়ে গেলাম। চোখের সামনে দেখেও মিস করলাম খবরটা! যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক সাংবাদিকের কাছে ক্ষমাহীণ অপরাধ। পাশের সিটে বসা প্রবীরকে বললাম, ‘এত বড় ভুল জীবনে হয়নি।’ প্রতিটা ভুলই পরবর্তী সময়ে তার পুনরাবৃত্তি না করার শিক্ষা দেয়। কিন্তু সেই শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ পরবর্তী সময়ে আর পাইনি কখনও। কারণ, এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি পরে আর। তাছাড়া লালগড় আন্দোলনেরও তো পুনরাবৃত্তি হয়নি এরাজ্যে। সেদিন ২রা নভেম্বর ২০০৮, শালবনিতে মাওবাদী বিস্ফোরণই তৈরি করল লালগড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট।
     
    ক্রমশ।.. 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৭ জুন ২০২৪ | ৩৪৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    গূঢ়  - Nahid Ul Islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2409:4060:2dc6:38f8::d309:9810 | ০৭ জুন ২০২৪ ১২:৫৯532836
  • দারুণ।
    লেখা নয়, ছবি।
  • Eman Bhasha | ০৭ জুন ২০২৪ ১৩:০৫532837
  • পড়ছি
  • Q | 49.207.201.116 | ০৭ জুন ২০২৪ ২১:০২532859
  • অসাধারণ লেখা । রুদ্ধশ্বাসে পড়ছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন