এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  রাজনীতি

  • কিষেণজি মৃত্যু রহস্য - পর্ব ৬ 

    বিতনু চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | রাজনীতি | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৮৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • লালবাজারে প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরে বসে কথা হচ্ছিল। বলছিলেন নয়ের দশকের মাঝামাঝি মেদিনীপুর জেলার কেশপুরের পরিস্থিতি নিয়ে। ‘একদিন কেশপুর থানায় গিয়ে এলাকার ম্যাপ নিয়ে বসলাম। মোট ১৩-১৪টা পুলিশ ক্যাম্প করা হল। ঝাড়খন্ডি এবং সিপিআইএম প্রভাবিত গ্রামগুলোর মাঝে মাঝে এই ক্যাম্পগুলো করা হয়েছিল। এক একটা ক্যাম্পে হাবিলদার, কনস্টেবল এবং জওয়ান মিলে ৮-১০ জন করে পোস্টিং করা হল। কিন্তু কয়েক মাস পর দেখলাম, এই ক্যাম্প করেও গণ্ডগোল থামানো যাচ্ছে না। নিয়ম করে রোজ সংঘর্ষ হচ্ছে। ঠিক করলাম, ক্যাম্পগুলো ভিজিট করব। নিজে দেখব কী সমস্যা হচ্ছে। কাউকে কিছু না বলে একদিন বিকেলে মেদিনীপুরের অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা কেশপুরে চলে গেলাম। তারপর থানা থেকে ওসিকে সঙ্গে নিয়ে কেশপুরে আনন্দপুরের কাছে একটা ক্যাম্পের দিকে রওনা দিলাম। চারদিকের পরিবেশ ওপর থেকে শান্ত। কিন্তু থমথমে একটা ভাব। সেদিনও সকাল থেকে সাত-আটটা গ্রামে গণ্ডগোল হয়েছে। আনন্দপুরের কাছে গণ্ডগোলটা সেদিন বেশি হয়েছিল। সন্ধে নাগাদ আনন্দপুরের ক্যাম্পে পৌঁছলাম। আগে থেকে ক্যাম্পের কাউকে কিছু জানাইনি।
     
    ক্যাম্প বসার পর থেকে সেদিনই প্রথম কোনও সুপিরিয়র অফিসারের ভিজিট হল সেখানে। হেড কনস্টেবল, হাবিলদার দৌড়ে এলেন আমাদের গাড়ি দেখে। ক্যাম্পে ঢুকে বসলাম। কথা বলতে শুরু করলাম তাঁদের সঙ্গে। কী অবস্থা, ক্যাম্প কেমন চলছে, এই সব। হেড কনস্টেবল বললেন, ‘‘স্যার, শ’য়ে শ’য়ে লোক রোজ তীর-ধনুক, টাঙি, বন্দুক নিয়ে মারপিট করছে। আমাদের এত কম ফোর্স, কীভাবে থামানো যাবে?’’ কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর হেড কনস্টেবলকে বললাম ক্যাম্পের সব আর্মস এবং গুলি নিয়ে আসার জন্য। আমরা থানা, আউট পোস্ট কিংবা ক্যাম্প ভিজিট করলে অনেক সময় আচমকাই আর্মারি চেক করতাম। লিস্ট মিলিয়ে দেখে নিতাম আর্মস, গুলি যা যা থাকার কথা সব ঠিকঠাক আছে কিনা। সেই সময় কেশপুরের এক একটা ক্যাম্পে ৭-৮টা করে রাইফেল দেওয়া হয়েছিল। হেড কনস্টেবলকে সব বন্দুক এবং গুলি আনতে বলার পর দেখছি, তিনি এই কথা-সেই কথা বলে বিষয়টা ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। একটু পরে আবার বললাম, আর্মস নিয়ে আসতে। দেখি তিনি উঠে গেলেন কাউকে চায়ের কথা বলতে। আর্মস আর আনেন না। একটা সন্দেহ হল। এরপর একটু কড়াভাবেই বললাম। তারপর চারটে রাইফেল আর গুলি নিয়ে এলেন হেড কনস্টেবল। আর্মসের লিস্ট মিলিয়ে দেখি, চারটে রাইফেল নেই। ৪০ রাউন্ড গুলিও কম আছে। ওই ক্যাম্পে আটটা রাইফেল দেওয়া ছিল।
    যতবারই জিজ্ঞেস করি, চারটে রাইফেল আর ৪০টা গুলি কোথায় গেল, কিছুতেই জবাব দেন না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। বাধ্য হয়ে বললাম, ঠিকঠাক উত্তর না দিলে ক্যাম্পের সবাইকে আলাদা আলাদা ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। আর হেড কনস্টেবল তো সাসপেন্ড হবেনই, তদন্ত শুরু হবে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পর তিনি প্রায় কেঁদেই ফেললেন। বললেন, ‘‘স্যার, সিপিআইএম আর ঝাড়খন্ড পার্টির লোকরা নিয়ে গেছে চারটে বন্দুক। একটু পরেই দিয়ে যাবে।’’
    একটু পরে দিয়ে যাবে মানে? ওরা কি আমাদের বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করে নাকি? 
    হেড কনস্টেবল তখনও আমতা আমতা করছেন। তার যা বললেন তা শিউরে ওঠার মতো।
    ঝাড়খন্ড পার্টি এবং সিপিআইএমের লোকেরা মূলত তীর, ধনুক, টাঙি নিয়েই লড়াই করত। দু’দলের কাছে কিছু দেশি বন্দুকও ছিল। তবে সেগুলোর রেঞ্জ তেমন ভাল ছিল না। একদিন সিপিআইএমের বেশ কিছু লোক ওই ক্যাম্পে চড়াও হয়। পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। তারপর নরমে-গরমে হেড কনস্টেবলকে প্রভাবিত করে ফেলে। তারা পুলিশকে বলে, আপনাদের কিছু করতে হবে না। দু’তিনটে বন্দুক আমাদের দিন। আমরাই ঝাড়খন্ডিদের শায়েস্তা করে দেব। তারপর বন্দুক ফেরত দিয়ে দেব। হেড কনস্টেবল ভয়ে ভয়ে ছিলেন। কেশপুর থানার ওসি কিংবা কোনও সুপিরিয়র অফিসার আনন্দপুর ক্যাম্পে যেতেনও না। তারপর এটা রফা হয়। সিপিআইএম সকালে পুলিশ ক্যাম্প থেকে রাইফেল নিয়ে যাবে। তারপর আবার সন্ধেবেলা লড়াই শেষে ফেরত দিয়ে যাবে। এরপর ওরা গুলিও নিতে শুরু করে। এরকম কিছুদিন চলার পর ঝাড়খন্ড পার্টির লোকজনের সন্দেহ হয়। এতদিন দু’পক্ষই প্রায় সমান সমান ছিল। পুলিশের রাইফেল হাতে পেয়ে হঠাৎ সিপিআইএমের শক্তিবৃদ্ধি হওয়ায় সন্দেহ দেখা দেয় ঝাড়খন্ডিদের মনে। কারণ, রাতারাতি সিপিআইএমের ফায়ারিং পাওয়ার বেড়ে গিয়েছে। ঝাড়খন্ডিরা দেখে সিপিআইএম বাহিনী অনেক দূর থেকে গুলি চালাচ্ছে যা আগে পারত না। সিপিআইএম যে পুলিশ ক্যাম্প থেকে রাইফেল পেয়েছে এই খবর পেয়ে যায় ঝাড়খন্ডিরা। তারপর তারাও দল বেঁধে চড়াও হয় আনন্দপুর ক্যাম্পে। সিপিআইএমকে দিলে তাদেরও দিতে হবে রাইফেল। ব্যাস পুলিশ আর যায় কোথায়। ঝাড়খন্ডিরাও সেদিন থেকে রাইফেল নিতে শুরু করল পুলিশের। এমনই চলছিল। কোনওদিন সিপিআইএম বন্দুক নিয়ে যায়, তো কোনওদিন ঝাড়খন্ড পার্টির লোক। কোনও কোনও দিন দু’দলই নিয়ে যায়। কিন্তু দু’দলেরই কথার দাম আছে! দিনের শেষে আবার রাইফেল ফেরতও দিয়ে যেত ক্যাম্পে। যেদিন আমি গিয়েছিলাম, সেদিন দুই দলই সকালে এসে দুটো করে রাইফেল নিয়ে গেছে। তারপর আবার আমি থাকতে থাকতেই দু’দলের লোক এসে রাইফেল ফেরতও দিয়ে গেল।’
    ‘কী বলছেন? পুলিশের বন্দুক দিয়ে দু’দলে যুদ্ধ চলছে, আর পুলিশ ক্যাম্পে বসে আছে? এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা শুনে জিজ্ঞেস করলাম প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়কে। ‘এরপর কী করলেন?’
    ‘কী আর করার আছে? প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিলাম, ছোট ক্যাম্পগুলো তুলে নেব। এমনিতেও আট-দশ জনের ক্যাম্প রেখে কোনও লাভ হচ্ছিল না।  সিপিআইএম-ঝাড়খন্ডিরা তো বটেই গ্রামের সাধারণ মানুষও এই ছোট ক্যাম্পগুলোকে কয়েকদিন পরে আর ভয়-ডর পায় না। আনন্দপুর ক্যাম্প থেকে কেশপুর থানায় ফিরলাম। সেখান থেকেই জেলার পুলিশ সুপারকে ফোন করে জানালাম সমস্ত ক্যাম্প তুলে দেওয়ার কথা। তার বদলে পুরো কেশপুরে চারটে বড় ক্যাম্প করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ক্যাম্প থেকে সিপিআইএম এবং ঝাড়খন্ড পার্টির রাইফেল নিয়ে যাওয়ার কথা বিস্তারিতভাবে আর পুলিশ সুপারকে বললাম না। শুধু বলেছিলাম, ছোট ক্যাম্পে লাভ হচ্ছে না। তার বদলে বড় ক্যাম্প করলে ভালো হবে। কেশপুরে চারটে পয়েন্ট বেছে নিয়ে বড় ক্যাম্পের প্ল্যান করলাম। এক একটা ক্যাম্পে অন্তত ৪০-৪৫ জন করে পুলিশ পোস্টিং করলাম। পরদিনই কেশপুরে সব ছোট ক্যাম্প উঠে চারটে বড় ক্যাম্প বসে গেল। আর পরের দিন রাত থেকেই কেশপুরের সব উত্তপ্ত গ্রামে শুরু করা হল তল্লাশি অভিযান। ওখানে সিপিআইএম এবং ঝাড়খন্ড পার্টির যারা গণ্ডগোল করত এমন প্রায় দেড় হাজার লোকের তালিকা ছিল আমাদের কাছে। বেছে বেছে তাদের বাড়িতে রাতে রেইড শুরু করা হল। কেউ যাতে সারাদিন মারপিট করে রাতে বাড়িতে থাকতে না পারে। টানা এক মাস এই রেইড চালানোতে দারুণ কাজ হল,’ টানা বলে থামলেন প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়। 
     
    পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করে, অনেক শুনেছি। পুলিশ নিজেই শাসক দলের ভূমিকা পালন করেছে এমনও নিজের চোখে দেখেছি নন্দীগ্রামে। আবার, পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম সরকার আর থাকবে না, ২০০৯ লোকসভা ভোট পরবর্তী সময়ে এমন পরিবেশ তৈরি হওয়ার পর, অনেক পুলিশ অফিসারকেই দেখেছি, মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কিংবা সিপিআইএমের কথা না শুনে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু শাসক-বিরোধী দু’দলই পুলিশ ক্যাম্প থেকে রাইফেল, গুলি নিয়ে দিনের পর দিন যুদ্ধ করছে, এমন হওয়াও যে সম্ভব, তা আমার ধারণাতেই ছিল না।। ঘটনাটা শুনে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। কী বিচিত্র এই সিপিআইএম জমানায় অবিভক্ত মেদিনীপুরের রাজনৈতিক লড়াই-সংঘর্ষের সব কাহিনী। এতবার অ্যাসাইনমেন্টে ঝাড়গ্রাম গিয়েছি, এত লোকের সঙ্গে কথা বলেছি, সংবাদপত্রে এত খবর দেখেছি। কিন্তু কিষেণজি মৃত্যু রহস্যের সন্ধানে না নামলে জানতেই পারতাম না আরও কত কিছু! ভাবতেও পারতাম না, যুযুধান দুই রাজনৈতিক পক্ষ পুলিশ ক্যাম্প থেকে সরকারি রাইফেল, গুলি নিয়ে গিয়ে লড়াই করে একে অপরের সঙ্গে। আবার লড়াই শেষে সেই রাইফেল ফেরতও দিয়ে আসে পুলিশের কাছে! তবে যত শুনছি, জানছি, ততই মনে প্রশ্ন আসছে, যা জানতে পারছি তাই বা আসল ঘটনার কতটা? এ কি হিমশৈলের চূড়া মাত্র?       

    দ্বিতীয় সাক্ষী: সিপিআইএম নেতা ডহরেশ্বর সেন

    ডহরেশ্বর সেন। আগেও শুনেছি, কিন্তু ২০০৮ সালে লালগড় আন্দোলন শুরু হওয়ার পর একটা বিশেষ কারণে তাঁর নাম শুনলাম কয়েকবার। এই আন্দোলনের সময় লালগড়, বেলপাহাড়ি, বিনপুর, জামবনিসহ বিরাট এলাকার বহু সিপিআইএম নেতা, কর্মী মাওবাদীদের ভয়ে ঘড়ছাড়া হয়ে যান। বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরে। সেই সময় ঝাড়গ্রাম মহকুমায় গেলে শুনতাম, ডহরেশ্বর সেন অন্য ধরনের সিপিএম নেতা। সিপিআইএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, ঝাড়গ্রামের নেতা, অথচ মাওবাদীদের তীব্র প্রভাবের সময়েও ডহরেশ্বর সেন বিনা নিরাপত্তায় হাঁটাচলা করতে ভয় পেতেন না!       
    নিজে আদিবাসী নন। কিন্তু তফশিলি জাতিভুক্ত কিংবা আদিবাসীদের প্রতি বঞ্চনা এবং তাদের অধিকার নিয়ে খাঁটি সংবেদনশীল ডহরেশ্বর সেনকে জঙ্গলমহল থেকে মুজফফর আহমেদ ভবন চেনে ডহর সেন নামে। ১৯৬০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ডহর সেন। চার বছর বাদে পার্টি ভেঙে গেলে সিপিআইএমে যোগ দেন। আদিবাসীদের গ্রামে রাত কাটানো সিপিআইএম নেতা ডহর সেন বিশ্বাস করতেন, মানুষের সঙ্গে তাঁর দলের সম্পর্ক হওয়া উচিত মাছের সঙ্গে জলের সম্পর্কের মতো। মেলামেশাও করতেন বেলপাহাড়ি, জামবনির গরিব মানুষের সঙ্গে সেইভাবেই। মনে করতেন, ব্যক্তিজীবনের কিছু বিলাসিতা অন্তত ত্যাগ করে আদিবাসীদের আনন্দ, উৎসব, দুঃখ, যন্ত্রণায় শরিক হয়েই গরিব মানুষগুলোর হৃদয় জয় করা সম্ভব। কিন্তু গরিব প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ গড়ে তোলা ডহর সেন কালক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন নিজের দল থেকেই। কারণ, ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মধ্যেই অবিভক্ত মেদিনীপুরের প্রভাবশালী সিপিআইএম নেতারা বুঝে নিয়েছিলেন, সংসদীয় রাজনীতিতে সাফল্যের ফর্মুলা শুধুমাত্র গরিব মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে লুকিয়ে নেই। বরং পেশি শক্তির সফল প্রয়োগ করতে পারলে চূড়ান্ত আধিপত্য বিস্তারে সময় ব্যয় করতে হয় কম এবং সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি। কম বিনিয়োগে বেশি রিটার্ন। ডহরেশ্বর সেনকে অবিভক্ত মেদিনীপুরের নেতা এবং সিপিআইএমের প্রভাবশালী জেলা সম্পাদক দীপক সরকার খুব একটা পছন্দ করতেন না। কারণ, ডহর সেন নিজের দলের কাজকর্মের সমালোচনা করতেন মাঝে-মধ্যে। ঝাড়খন্ডিদের হয়ে কথা বলতেন অনেক সময়। আর এর পুরস্কার হিসেবে পার্টি নেতৃত্বের কাছ থেকে ‘দল বিরোধী’ এবং ‘নকশাল’ তকমাও জুটেছিল তাঁর।      
     
    ২০১৫ সালের একদম শেষে ডহর সেনের সঙ্গে দেখা করলাম। কলকাতায় কিড স্ট্রিটে এমএলএ হস্টেলে। ডাক্তার দেখাতে কলকাতায় এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম থেকে। এমএলএ হস্টেলে এক সিপিআইএম বিধায়কের ঘরে ছিলেন। কিষেণজি মৃত্যু রহস্যের আমার দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সিপিআইএম নেতা ডহরেশ্বর সেন।    
    ‘আপনি জানেন, সুভাষচন্দ্র বসুকে ঝাড়গ্রাম শহরে মিটিং করতে দেয়নি সেখানকার মল্লদেব রাজারা। আসলে ঝাড়গ্রামের রাজ পরিবার বরাবরই ছিল ব্রিটিশদের সঙ্গে। ঝাড়গ্রাম শহরে একবার মিটিং করবেন ঠিক করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। কিন্তু মল্লদেব রাজ পরিবারের আপত্তিতে বাধ্য হয়ে শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দহিজুড়িতে সুভাষ বসুকে মিটিং করতে হয়েছিল। ঝাড়গ্রামে আদিবাসীদের অধিকাংশই ছিল রাজপরিবারের পাশে। নির্বিবাদী, শান্ত প্রকৃতির আদিবাসীদের কাছে তখন শাসক বলতে রাজ পরিবার। তারা ভাবতেই পারত না রাজার বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। তাছাড়া আদিবাসীদের চাহিদাও এত কম, তারা লড়াই করবেই বা কেন?’ কথা শুরু করলেন সিপিআইএম নেতা ডহরেশ্বর সেন।   
    সত্যিই তো, যে নির্লোভ মানুষগুলোর কোনও দাবিদাওয়া ছিল না বাকি দুনিয়ার কাছে, নিজের সমাজের গণ্ডিতে আবদ্ধ যে পরিবারগুলো সামান্যেই খুশি হয়ে কাটিয়ে দিত তাদের সহজ এবং স্বল্প জীবন, তারাই কেন অস্ত্র ধরল হঠাৎ করে? কোন মন্ত্রে সিপিআইএম পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে আটের দশকে শুরু করল এমন জান কবুল লড়াই? এই শান্তিপ্রিয় আদিবাসী এলাকা কেনই বা একুশ শতকের গোড়ায় হয়ে উঠল সশস্ত্র মাওবাদী রাজনীতি অনুশীলনের এক পরীক্ষাগার? এ তো কার্যত, কিন্তু কার্যত কেন, এ তো যথার্থই নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। অথচ, ‘এই মানুষগুলোই রাজার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেনি তেমন,’ কানে বাজছে ডহরেশ্বর সেনের কথা। তিনি তো কারও থেকেই কম চেনেন না অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই রুক্ষ এলাকার গরিব তফশিলি জাতি এবং আদিবাসী পরিবারগুলোর দৈনন্দিন জীবনের কাহিনী। এবং ২০০৩ এর পঞ্চায়েত ভোটের সন্ধ্যায় জামবনির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিআইএম নেতা এবং লোকাল কমিটির সম্পাদক বাসুদেব ভকতের খুন থেকে ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে কিষেণজির মৃত্যু, এই যে হত্যা এবং পাল্টা হত্যার অন্ধকার চোরাগলিতে প্রবেশ সিপিআইএম, ঝাড়খন্ড পার্টি এবং পুলিশের, তার তো যথার্থ কারণ থাকবে একটা। ঝাড়খন্ডিদের সঙ্গে সিপিআইএমের সংঘর্ষটাই আলটিমেটলি কনভার্ট করে গেল মাওবাদীদের সঙ্গে সিপিআইএমের রক্তক্ষয়ী খুনোখুনিতে। কিন্তু ঝাড়খন্ডিদের সঙ্গে সিপিআইএমের সংঘর্ষের শুরু হল কীভাবে এবং কেন? কবে থেকেই বা শুরু হল ঝাড়গ্রাম মহকুমায় এই সিপিআইএম-ঝাড়খন্ডি লড়াই, এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে ২০১৫ সালের শেষে আমি ডহর সেনের মুখোমুখি।  
     
    এবার আমাদের যেতে হবে অনেকটা পিছিয়ে। যাকে বলে কিনা ফ্ল্যাশব্যাকে। ১৯৬৫ সাল, দেশে এবং রাজ্যে কংগ্রেস সরকার। যদিও দু’জায়গাতেই কংগ্রেসের প্রভাব এবং দাপট কমতে শুরু করার সন্ধিক্ষণ তখন। সেই সময় কৈশোর কাটিয়ে সদ্য যুবক ডহরেশ্বর সেন।                     
    ‘আমি প্রথম ঝাড়গ্রামে গেলাম ১৯৬৫ সালে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর। সেই সময় থাকতাম খড়গপুরে। ‘৬৫ সালের যুদ্ধ শুরু হতেই সিপিআইএম নেতাদের গ্রেফতার করা শুরু হল। অনেকেই আত্মগোপন করলেন। আমি তখন পুরোদমে পার্টি করছি। আমি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হই ১৯৬০ সালে। চার বছর বাদে পার্টি ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিপিআইএমে যোগ দিলাম। ’৬৫ তে যুদ্ধ শুরু হতেই আমাদের নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হল। পার্টি বলল, আত্মগোপন করতে। কোনওভাবে গ্রেফতার হওয়া যাবে না। অনেক ভেবে কিছুদিন বাদে চলে গেলাম ঝাড়গ্রাম। ঝাড়গ্রামের বিটি কলেজে ফ্রেশার হিসেবে ভর্তির জন্য আবেদন করে দিলাম। ভর্তি হয়েও গেলাম। থাকতে শুরু করলাম কলেজ হস্টেলে। মনে হয়েছিল, ওটাই সেই সময় আত্মগোপনের সবচেয়ে ভাল ঠিকানা। ছাত্র সেজে থাকলে কেউ সন্দেহও করবে না। এভাবেই চলছিল কয়েক মাস। কোনও ঝামেলা ছিল না। কলেজে কেউ জানতও না আমার রাজনৈতিক পরিচয়। 
    কয়েক মাস কেটে গিয়েছে নিশ্চিন্তে। ঝাড়গ্রাম কলেজ হস্টেলে থাকছি আর ক্লাস করছি। ১৯৬৬ সালে শুরুর দিকে, একদিন সন্ধেবেলা হস্টেলে বসে আছি। সাতটা-সাড়ে সাতটা হবে, হঠাৎ একজন এসে খবর দিল, হস্টেলের বাইরে প্রচুর পুলিশ। অধ্যক্ষ আমাকে অফিসে ডাকছেন। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেলাম, ধরা পড়ে গিয়েছি। আর লুকিয়ে থাকা যাবে না। পালানোরও কোনও পথ নেই। পুলিশ হস্টেল ঘিরে ফেলেছে। গেলাম অধ্যক্ষের অফিসে। স্যার বসে আছেন। সঙ্গে একজন কম বয়সী পুলিশ অফিসার। আমার থেকে বয়সে একটু বড় হবেন, কিংবা একও হতে পারেন। ঘরে আর কেউ নেই।
    অধ্যক্ষ বললেন, ‘‘তোমার বিরুদ্ধে দেশ বিরোধিতার অভিযোগ রয়েছে। তুমি খড়গপুর কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলে? তুমি কি পার্টি মেম্বার?’’
    চুপচাপ দাঁড়িয়ে সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম।
    এরপর অধ্যক্ষ আমাকে দেখিয়ে ওই পুলিশ অফিসারকে বললেন, ‘‘ও তো ভালো ছেলে। আগে কী করত জানি না। কিন্তু এখানে মন দিয়ে পড়াশোনা করছে।’’ তারপর আমাকে বললেন, ‘‘পুলিশ তোমাকে গ্রেফতার করতে এসেছে। উনি ঝাড়গ্রামের নতুন এসডিপিও। ফোর্স বাইরে রেখে একাই কলেজের ভেতরে ঢুকেছেন। তোমার বিরুদ্ধে তো এই সব দেশ বিরোধী কাজকর্মের অভিযোগ! আমি আর কী করব?’’
    আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। একবার স্যারের দিকে, তো একবার ওই আমারই বয়সী পুলিশ অফিসারের দিকে তাকাচ্ছি। অ্যারেস্ট হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আমার বলারও নেই কিছু। আমি তখন সিপিআইএম সদস্য। সেই পরিচয় গোপন করে কলেজে পড়ছি। 
    ঘরে কয়েক সেকেন্ড সবাই চুপ। স্যার থামার পর ওই অফিসারও কিছু বলছেন না। কিছু ভাবছেন, আর আমার দিকে তাকাচ্ছেন। ‘‘ঠিক আছে। তোমাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ আছে, কিন্তু আমি তা করছি না। রিপোর্টে লিখে দেব, ডহরেশ্বর সেনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু দিনেরবেলা এই এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ ঘোরাফেরা করে। সেই সময় কলেজের বাইরে একদম বেরোবে না। যতটা সম্ভব হস্টেলেই থাকবে। সাদা পোশাকের পুলিশ একবার ধরলে আমার আর কিছু করার থাকবে না। ’’
    আমাকে, অধ্যক্ষ স্যরকে অবাক করে বললেন পুলিশ অফিসার। এমন অফিসারও হয়? স্যরের কাছে অনুমতি নিয়ে হস্টেলে ফিরলাম। তারপর থেকে আর হস্টেলের বাইরে বেরোতাম না বিশেষ। আরও এক বছর কেটে গেল। ১৯৬৭ সালে তৈরি হল প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকার। গ্রেফতারের আশঙ্কা কেটে গেল। ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকে ঝাড়গ্রামে তীব্র আন্দোলন শুরু করল সিপিআইএম। গোটা রাজ্যে সিপিআইএম তখন জোতদারদের বিরুদ্ধে হিসেব বহির্ভুত জমি, বেনামি জমি উদ্ধারের ডাক দিয়েছে। এই জমির আন্দোলনে উত্তাল হতে শুরু করেছে ঝাড়গ্রামও। হরেকৃষ্ণ কোঙার ঝাড়গ্রামে এলেন। ডাক দিলেন জোতদারদের জমি দখলের।’
    ‘ছয়ের দশকে ঝাড়গ্রামে আদিবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিশ্চই খুব খারাপ ছিল। এখানে তেমন জমি ছিল মানুষের হাতে?’ আমার মাথায় ঘুরছে রামজীবনের কথা, তার বাবা-মা মহাদেব আর শান্তি মুর্মুর কথা। ডহর সেন যে সময়ের কথা বলছেন, তখন মা মরা রামজীবনের বয়স বছর সাতেক।
     
    ‘ঝাড়গ্রাম, বিনপুরে জনসংখ্যার মধ্যে তফশিলি, জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি ৮০ শতাংশের বেশি। তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ মানুষ ছিল অত্যন্ত গরিব। তিন বেলা তো দূরের কথা, অধিকাংশ বাড়িতেই দুবেলা খাবার থাকত না। বেশিরভাগ পরিবার বছরে ছ’মাস একবেলা ভাত খেতে পেত। আদিবাসীদের মধ্যে কয়েক জনই মাত্র ছিল ল্যান্ড লর্ড। তারা হাতে গোনা দু’তিন জন। বড় ল্যান্ড লর্ড ছিল শ্যাম হেমব্রম এবং তাঁর ছেলে নিত্যানন্দ হেমব্রম। তাদের বাড়ি বেলপাহাড়ি ব্লকের শ্যামপুরে। আর এক জন বড় ল্যান্ড লর্ড ছিল শ্যাম মুর্মু। এই দুই পরিবারের হাতেই ছিল অনেক জমি। আর ছিলেন রাজা ধীরেন্দ্র বিজয় মল্লদেব। ঝাড়গ্রামে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক। ৯৯ শতাংশের বেশি আদিবাসীর হাতে এক আনা জমিও ছিল না। 
    সিপিআইএমের জমি আন্দোলন এবং হরেকৃষ্ণ কোঙারের ঝাড়গ্রাম সফরে ভয় পেয়ে গেল এখানকার জোতদাররা। জমি হাতছাড়া হওয়ার ভয়। তারা বুঝে গেল, কোনও একটা উপায় বের করতে না পারলে গরিব আদিবাসীদের সামনে রেখে জমি দখল করে নেবে সিপিআইএম। ঝাড়গ্রামে তখন অদ্ভুত পরিস্থিতি। একদিকে, কংগ্রেস মদতপুষ্ট কয়েকজন জোতদার, যার নেতৃত্বে এখানকার রাজ পরিবার। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা বড় অংশ। অন্যদিকে, সিপিআইএম এবং হাজার হাজার গরিব মানুষ। এই অবস্থায় ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে মিটিংয়ে বসল কয়েকজন ল্যান্ড লর্ড। কীভাবে সিপিআইএমের হাত থেকে অতিরিক্ত এবং বেনামি জমি রক্ষা করা যায়। সেই মিটিংয়েই সিপিআইএমের জমি আন্দোলনকে ঠেকানোর এক কৌশল বের করল মল্লদেব পরিবার এবং কয়েকজন জোতদার। আর সেটা হচ্ছে, ঝাড়গ্রামের মানুষকে নিয়ে সিপিআইএম বিরোধী একটা রাজনৈতিক দল গঠন এবং পৃথক রাজ্যের দাবি।  
    আপনি জানেন তো, ব্রিটিশ আমলে একটা কমিশন তৈরি হয়েছিল। সাইমন কমিশন।  সেটা দুইয়ের দশক। ১৯২৮-২৯ সালে এই সাইমন কমিশনের কাছে ছোটনাগপুর, বাংলা এবং বিহারের একটা অংশ নিয়ে আলাদা রাজ্যের দাবি করেছিল ঝাড়খন্ড পার্টি। সেই সময় ছোটনাগপুর এলাকার ঝাড়খন্ড পার্টির নেতা জয়পাল সিংহ। যদিও সাইমন কমিশন কিংবা ব্রিটিশ সরকার এই দাবিকে স্বীকৃতি দেয়নি। স্বাধীনতার পরে ছোটনাগপুর এলাকায় ঝাড়খন্ডিদের আলাদা রাজ্যের দাবি কয়েকবার উঠলেও, এরাজ্যে তার কোনও চর্চা ছিল না। সিপিআইএমের জমি আন্দোলনকে ঠেকাতে ঝাড়খন্ডিদের জাতি সত্ত্বার রাজনীতিকে সামনে আনার কৌশল নিল ঝাড়গ্রামের প্রভাবশালী রাজা এবং কংগ্রেসি পরিবার মল্লদেবরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিল আরও কয়েকজন কংগ্রেসি জোতদার, জমিদার। সেই সময়, মানে ১৯৬৭-৬৮ নাগাদ ছোটনাগপুরের ঝাড়খন্ড পার্টির নেতা ছিলেন বাবুন সামরাই। ঝাড়গ্রামের মল্লদেবদের প্রত্যক্ষ মদত এবং পরামর্শে শ্যাম হেমব্রম, শ্যাম মুর্মু এবং আরও দু’চারজন ল্যান্ড লর্ড বাবুন সামরাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার কিছুদিনের মধ্যেই এখানে ঝাড়খন্ড পার্টি গঠিত হল। পৃথক ঝাড়খন্ড রাজ্যের যে দাবি, তার সলতে পাকানো শুরু হল এ’রাজ্যে।’ 
    মানে, আপনি বলতে চাইছেন এখানে সিপিআইএমের সঙ্গে ঝাড়খন্ডিদের লড়াই-সংঘর্ষের সূত্রপাত প্রথম যুক্তফ্রন্ট আমলে জোতদারের জমি দখলকে কেন্দ্র করে?
    ‘একেবারেই। তখন যুক্তফ্রন্ট সরকার। হরেকৃষ্ণ কোঙারের ডাকে বাংলার বিভিন্ন গ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ জোতদারদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছে। গরিব, জমিহীন মানুষের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা তীব্র ক্ষোভকে পুঁজি করে কৃষক সভা তখন বেপরোয়া আন্দোলন শুরু করেছে। কোথাও কোথাও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে জোতদাররাও। গুলি চলছে, আগুন জ্বলছে নানা জায়গায়। সেই সময় ঝাড়গ্রামে সিপিআইএমকে ঠেকাতে কংগ্রেসের মদতে গড়ে ওঠা ঝাড়খন্ড পার্টি স্লোগান তুলল, ‘‘আলাদা রাজ্য চাই।’’             
    ’ঝাড়খন্ড পার্টি তৈরি হওয়ার পর কংগ্রেস জোট করল ওদের সঙ্গে। আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে ঝাড়খন্ড পার্টির আন্দোলনে সরাসরি যোগ না দিলেও কংগ্রেস পেছন থেকে ওদের সমর্থন করত। আদিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় দিশম গুরুদের খুব প্রভাব ছিল। দিশম গুরুরাও ফতোয়া দিল আলাদা রাজ্যের জন্য। দিশম গুরুদের এই ফতোয়া ঝাড়গ্রামের বিনপুর এলাকায় আদিবাসী সমাজের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলল। দিশম গুরুদের সামনে এবং কংগ্রেসকে পেছনে রেখে ১৯৭১ সালে নির্বাচনে লড়ল ঝাড়খন্ড পার্টি। এবং জিতেও গেল। ’৭১ সালে বিনপুর আসন থেকে বিধায়ক হলেন জোতদার শ্যাম মুর্মু। সিপিআইএম বিরোধিতাই তখন থেকে হয়ে উঠল ঝাড়গ্রাম মহকুমায় ঝাড়খন্ড পার্টির মূল রাজনৈতিক স্লোগান। তখনও সেইভাবে সংঘর্ষ শুরু হয়নি, কিন্তু ঝাড়খন্ড পার্টির জোতদার, জমিদার নেতারা বুঝে গিয়েছিলেন, এই সব এলাকায় নিজস্ব জমি রক্ষা করতে গেলে সিপিআইএমের বিরোধিতা করতে হবে। এবং তার জন্য ঝাড়খন্ডিদের মধ্যে আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে আন্দোলন জিইয়ে রাখতে হবে। এটাও মনে রাখা দরকার, সেই সময় নকশালবাড়ি আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। তার প্রভাবে মেদিনীপুর জেলার ডেবরা এবং গোপীবল্লভপুরেও জোতদার, জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছে নকশালরা। কিন্তু সেই সময় ঝাড়গ্রাম, বিনপুরে নকশালদের কোনও প্রভাব ছিল না। ঝাড়গ্রাম, বিনপুরে শক্তিশালী ছিল সিপিআইএম। সব মিলে এই যে জোতদার, জমিদারদের হাজার-হাজার বিঘা জমি দখলের লড়াই শুরু হচ্ছে তখন সেটারই বিরুদ্ধে একজোট হল কংগ্রেস এবং ঝাড়খন্ড পার্টি। এই জোতদার-জমিদার পরিবারগুলো ঐতিহাসিকভাবেই কংগ্রেস করত। কিন্তু ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, জামবনিতে এই জোতদার, জমিদারদের সঙ্গে তফশিলি জাতি এবং আদিবাসীদের মিলমিশটা ভাল হয়েছিল। কারণ, এই সব জায়গায় বড় জমির মালিকরাও ছিল আদিবাসী। ফলে আলাদা রাজ্যের দাবির আন্দোলনে ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, জামবনির জমিদার শ্রেণি এবং দরিদ্র আদিবাসী জাতিগত, ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত কারণেই এক হয়ে যায়।  
    ‘তার মানে, ঝাড়খন্ডিদের সঙ্গে সিপিআইএমের যে সংঘর্ষ, খুনোখুনি, তার প্রেক্ষাপট শুধুমাত্র কোনও রাজনৈতিক লড়াই ছিল না? কিংবা ছিল না কোনও শ্রেণি সংগ্রাম? প্রাথমিকভাবে এটা ছিল, জমিদার, জোতদারদের বেনামি জমি অবলুপ্তি এবং অপারেশন বর্গা কর্মসূচি বাস্তবায়িত করতে আপনাদের যে উদ্যোগ তার বিরোধিতা করা?’ প্রশ্ন করলাম ডহর সেনকে।
    ‘দেখুন এর সূত্রপাত একেবারেই তাই। পরে যে আমাদের দল কোনও পর্যায়ে বাড়বাড়ি করেনি তা নয়। কিন্তু তা অনেক পরের কথা। একদম শুরুতে ঝাড়খন্ড পার্টির সঙ্গে আমাদের লড়াইটা ছিল জমি নিয়ে। রাজনৈতিক জমি নয়, জোতদার এবং রাজার জমি।’  
     
    এর মধ্যেই ১৯৭২ সালে রাজ্যে তৈরি হল কংগ্রেস সরকার। পুরো রাজ্যেই জমি আন্দোলন থমকে গেল। এই সুযোগে ঝাড়গ্রামের বিনপুর, বেলপাহাড়ি এলাকায় নিজেদের প্রভাব অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলল ঝাড়খন্ড পার্টি। জমিদার, জোতদার কংগ্রেসি পরিবারগুলো আবার শক্তিবৃদ্ধি করল। পুলিশ এবং প্রশাসন যুক্তফ্রন্ট আমলেও কংগ্রেসি এবং জোতদারদের যথেষ্ট মদত করত। আর ’৭২ সালে কংগ্রেস সরকার গঠনের পর তো আর কোনও কথাই নেই। কংগ্রেসি, জোতদার, ঝাড়খন্ডি সব এক ছিলই। পুরো প্রশাসনই ওদের পাশে দাঁড়াল। আর পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে জাতি সত্ত্বার ব্যাপারটা ছিলই গরিব আদিবাসীদের মধ্যে। যেহেতু আমরা পৃথক রাজ্যের বিরোধিতা করেছিলাম কংগ্রেসি এবং ঝাড়খন্ডিদের প্রতি আদিবাসীদের সমর্থন দ্রুত বাড়তে শুরু করে এই সময়। সিপিআইএমের প্রকাশ্য কর্মসূচি তখন অনেকটাই কমে যায়।   
    ১৯৭৭ সালে ফের রাজ্যে নির্বাচন। প্রথমে লোকসভা, তারপর বিধানসভা। কংগ্রেসের অবস্থা তখন পুরো দেশেই খুব খারাপ। আর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস হেরে যাওয়ার পর এরাজ্যে ওদের অবস্থা আরও খারাপ হল। ঝাড়গ্রামও তার বাইরে ছিল না। প্রকাশ্যে না হলেও তলায় তলায় আমাদেরও রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছিল। ঝাড়গ্রাম মহকুমায় চারটে বিধানসভা আসনের মধ্যে তিনটেই জিতলাম আমরা। বিনপুর, ঝাড়গ্রাম এবং নয়াগ্রাম। গোপীবল্লভপুর আসনে জিতলেন নকশাল নেতা সন্তোষ রাণা। দশ বছর আগে শুরু হওয়া জমি আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়ল সেই নির্বাচনে। ঝাড়গ্রাম মহকুমার চারটে আসনেই সাফ হয়ে গেল কংগ্রেস। 
     
    ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠনের পর ব্যাপকভাবে অপারেশন বর্গার কাজ শুরু হল ঝাড়গ্রামে। ফের সিপিআইএমের নেতৃত্বে শুরু হল বেআইনি জমি উদ্ধারের আন্দোলন, জোতদার প্রথার অবসান। এতেই ভয় পেয়ে গেল গোটা এলাকার জোতদার, জমিদাররা। এবং মূলত তাদেরই মদতে ঝাড়খন্ডিদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি ফের সামনে নিয়ে এল কংগ্রেস। অবশ্য, একটা বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, এই পৃথক রাজ্যের দাবির মধ্যে আদিবাসীদের জাতিসত্ত্বা এবং আবেগ ছিল পুরো মাত্রায়।  ঝাড়খন্ডিদের জন্য আলাদা রাজ্য গঠন হলেই আদিবাসীদের নিজের ভাষা, নিজস্ব সংস্কৃতি সুরক্ষিত থাকবে, এই দাবি উঠে গেল ঝাড়গ্রাম মহকুমাজুড়ে। এই এলাকার পুরনো নকশালরাও পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন জানালেন। আর সঙ্গে কংগ্রেসের জমিদারদের সমর্থন তো ছিলই। এই রকম এক পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় মোট আটটার মধ্যে ছ’টা ব্লকে অপারেশন বর্গার কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছিল, কিন্তু ধাক্কা খেল দুটো ব্লকে। বেলপাহাড়ি এবং বিনপুর, এই দুই ব্লকে অপারেশন বর্গার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলল ঝাড়খন্ড পার্টি। বাধা এল। এই দুই ব্লকে অপারেশন বর্গা কর্মসূচি একেবারেই সফল করা যায়নি। অন্যদিকে, গোপীবল্লভপুর ১ এবং ২, ঝাড়গ্রাম, জামবনি, সাঁকরাইল এবং নয়াগ্রাম ব্লকে জমি আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। অপারেশন বর্গা অনেকটাই সফল হয়। কিন্তু বেলপাহাড়ি এবং বিনপুরে গ্রামে গ্রামে সিপিআইএমকে ঢুকতে বাধা দিতে শুরু করে ঝাড়খন্ডিরা। আটের দশকের শুরু থেকেই এই অপারেশন বর্গাকে কেন্দ্র করে ঝাড়খন্ড পার্টি এবং কংগ্রেসের যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সিপিআইএমের লড়াই, সংঘর্ষ শুরু হল। তীব্র সংঘর্ষ। খুনোখুনি। জমি নিয়ে লড়াই। শেষমেশ এই লড়াইটাই রাজনৈতিক এলাকা দখলের লড়াইতে টার্ন করল। যা আর কোনও দিনই থামানো যায়নি। ১৯৯১ সালে ঝাড়খন্ড পার্টির নরেন হাঁসদা এমএলএ হলেন। এরপরেই সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। নরেন হাঁসদা এমএলএ হওয়ার পর সিপিআইএমের কাছে শুরু হয়ে গেল রাজনৈতিক জমি পুনরুদ্ধারের লড়াই।’ টানা বলে থামলেন ডহর সেন।
     
    ডহর সেন যেভাবে কথা বলেন, সামনে বসে কেউ শুনলে তাঁর মনে হবে, সিনেমা দেখছেন। কঠিন, জটিল রাজনৈতিক ওঠা-পড়া সহজ সরলভাবে হাজির করার মুন্সিয়ানা আছে তাঁর। হয়তো আদিবাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করে এই বিশেষ দক্ষতা আয়ত্ত্ব করেছিলেন তিনি। আর এই সহজ-সরল থাকা, আদিবাসীদের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে তোলাই শেষমেশ রাজনৈতিক জীবনে কাল হল ডহর সেনের। ’৭৭ সালে সিপিআইএম সরকার গঠনের পর ঝাড়গ্রাম মহকুমায় পার্টির একাধিক কাজকর্ম এবং তা করার পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে দলের নেতৃত্বের একটা অংশের সঙ্গে বিতর্ক বাধল ডহর সেনের। অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত ডহর সেন বারবারই দলের মধ্যে বলতেন, ‘ঝাড়খন্ড পার্টির সমর্থক আদিবাসীরাও সিপিআইএম সমর্থক আদিবাসীদের মতোই গরিব। গরিব মানুষের একতাকে জাতি সত্ত্বার রাজনীতি দিয়ে ভাঙা যেতে পারে, কিন্তু মারপিট করে, সংঘর্ষ করে তাকে জোড়া লাগানো যাবে না।’ 
    তাছাড়া তখন সরকার হয়ে গেছে কয়েক বছর। সিপিআইএম আর রাজ্যে বিরোধী দল নেই। সে তখন শাসক। বিরোধীরা অনেক কিছুই করতে পারে, ভুল-ত্রুটিও করতে পারে দু’পাঁচটা। কারণ, বিরোধী দলের শাসকের মতো দায়িত্বশীল হওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না। কিন্তু সরকার যদি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে তবে তো অরাজকতা সৃষ্টি হয়। আর তাই হল ঝাড়গ্রামের বিনপুর, বেলপাহাড়ি, জামবনি ব্লকে। ১৯৭৭ সালের পর সরকার বিরোধী ঝাড়খন্ড পার্টি যখন আরও ঐক্যবদ্ধ বেপরোয়া লড়াইয়ে শপথ নিচ্ছে, তখন তার মোকাবিলায় সিপিআইএমের প্রয়োজন ছিল যথার্থ শাসকের ভূমিকা পালন করার। গরিব আদিবাসীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করার বদলে হাতে অস্ত্র নিয়ে পালটা নেমে পড়ল শাসক দল সিপিআইএমও। শাসক দলই যখন অস্ত্র হাতে বিরোধীর মোকাবিলায় নেমে পড়ে, আর যদি তার পাশে এসে দাঁড়ায় প্রশাসন, মানে পুলিশ, তবে যা হয়, তাকেই এক কথায় বলে আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে ঝাড়গ্রাম মহকুমা।
     
    একদিকে ঝাড়খন্ড পার্টি। তার পেছনে কংগ্রেস। সঙ্গে পুরনো নকশালপন্থীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন। অন্যদিকে, সিপিআইএম। তার সামনে পুলিশ। ছ’য়ের দশকের শেষে যে লড়াই শুরু হয়েছিল জমি রক্ষার এবং দখলের, তাই ১৯৭৭ সালে রাজ্যে সিপিআইএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সরকার গঠনের কয়েক বছরের মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক লড়াইয়ে কনভার্ট করে গেল। প্রথমে জমির লড়াই, তারপর রাজনৈতিক লড়াই, আর এই দুইয়ের যোগফলে শুরু হল হিংসার রাজনীতি। হত্যা-পাল্টা হত্যা। আর শাসক দল সিপিআইএমের বিরুদ্ধে এমন এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটেরই হয়তো অপেক্ষায় ছিল মাওবাদীরা। সঠিকভাবে বললে, এমসিসি। মাওয়িস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার। তখনও মাওবাদী পার্টি তৈরি হয়নি। ঝাড়খন্ডিদের হাত ধরে এবং তাদের মধ্যে সিপিআইএম বিরোধী সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে গরিব আদিবাসীর অধিকার লড়াইয়ে নামল এমসিসি। পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে লড়াই শুরু হল বাম এবং অতি বাম শক্তির মধ্যে। যে লড়াইয়ের এপিসেন্টার বেলপাহাড়ি, বিনপুর, জামবনির কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকার শাল, অর্জুনের জঙ্গলমহল। তখন নয়ের দশক শুরু হয়ে গেছে। উদার অর্থনীতির ঢাকে কাঠি পড়েছে নয়া দিল্লিতে। অযোধ্যায় ধুলিষ্যাৎ হয়েছে বাবরি মসজিদ। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় নানান সমীকরণ গড়ে ওঠার সময় সেটা। যে সমীকরণগুলোও কয়েক বছরের মধ্যেই প্রভাব ফেলতে শুরু করল ঝাড়গ্রামের রাজনীতিতেও।      

    ক্রমশ...।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন