এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • কাদামাটির হাফলাইফ - ইট পাথরের জীবন

    ইমানুল হক
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৮ মে ২০২৪ | ৩৩৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • নামাঙ্কনঃ ইমানুল হক। ছবিঃ র২হ

    কথা - ২৭


    আজ আর শৈশব বা কৈশোর নয় যৌবনের কাহিনি বলতে হচ্ছে, এই দুই মানুষের জন্য। আমার শরীরটাও আজকাল সাথ দেয় না। বলেই নিই।

    কামাল আহমেদ এবং রণো ভাই।
    কামাল আহমেদ বেড়ে উঠেছেন কলকাতায় পার্ক সার্কাস অঞ্চলে। পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা। দেশভাগের পর চলে গেছেন ঢাকায়। শিল্পী মানুষ। চাকরি বাকরি করেন নি। পোস্টার ডিজাইন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। সচেতন বামপন্থী।
    পাঠান চেহারা। মন তেমনি উদার।
    তিনটি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন তিনজন মানুষ। আমার প্রথমবার ঢাকা যাওয়ার সময়।
    পত্রলেখক সাংবাদিক সুধীর চৌধুরী ও কবি সাংবাদিক জিয়াদ আলী। প্রাপক একজনই। কামাল আহমেদ।
    ১৯৯১। ফোনের যুগ নয়। চিঠিটি ভরসা। সস্তায় কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। আরেকটি লিখেছিলেন গড়পাড় রোডের অনিলবাবু। তাঁর এক বন্ধু নজরুল ইসলামকে।

    ২০ ফেব্রুয়ারি যাই। ঢাকায় পৌঁছাই মাঝরাতে। চুরি ছিনতাই নাকি খুব হয়। তাই ভোর পর্যন্ত গুলিস্তানে এলাকায় বাসডিপোয় বসে থাকা।
    রাস্তায় আসার সময় দেখেছি শীতের রাতে খালি পায়ে হাতে ফুল নিয়ে চলেছেন কোথাও। জিজ্ঞেস করে জানা গেল, সবাই যাচ্ছেন শহিদ মিনার।‌ ২০ কিমি দূরে।
    অবাক।

    অবাক হওয়ার আরো অনেক বাকি ছিল।
    বয়স কম। চিরকাল ভয়ডর বেশি নয়।
    সম্বল কিছু ডলার। ২০ ডলার ভাঙিয়ে পেয়েছি ৮০০ টাকা।‌ ২০ ডলার কিনতে ভারতে লেগেছে ৩২০ টাকা। বাংলাদেশে পেলাম ৮০০ টাকা। ৪৮০ টাকা বেশি।
    রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বা এম এন দস্তুর থেকে ডলার নিতে হতো।
    রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্যান্টিনে ১৫ পয়সায় প্রচুর খাইয়েছেন সুদীপ্তদা । মাছ মাংস দই মিষ্টি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্যান্টিন তখন এমন সস্তা। এর আগে একবার সরস্বতী প্রেসের ক্যান্টিনে 'নতুন চিঠি' র জন্য সিসার তৈরি লাইনো (!) টাইপ কিনতে এসে খেয়েছি সাত পয়সায়। রাজকীয় খাবার।
    সারাদিন অবশ্য কাটাতে হয়েছিল ডলারের জন্য।

    তো ভোর ভোর পৌঁছে গেলাম তোপখানা রোডে ওয়ার্কার্স পার্টি দপ্তরে। সেখানে পরিচয় দিয়ে ব্যাগ রেখে গেলাম শহিদ মিনার। দুপুরে খেলাম তোপখানা রোডের এক হোটেলে। এখন দেখি সেটি নেই। কলকাতায় তখন মুসলিম হোটেলে মাংস ভাত তিন থেকে চার টাকা। ঢাকায় লাগলো ১৮ টাকা। এর আগে বেবি ট্যাক্সি/ মিশুক ভাড়া দিয়েছি দরাদরি করে ৬০ টাকা।
    বুঝলাম, খরচের শহর। কলকাতা নয়।
    দুপুর পর্যন্ত বিস্ময়ে কাটলো শহিদ মিনারে। আওয়ামি লিগ, বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় দল, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি-- সব দলের ছাত্র যুব মহিলা শাখা আসছে গান গাইতে গাইতে বিশাল ফুলের তোড়া নিয়ে। সঙ্গে আবেগি শ্লোগান।
    হাঁটে না মিছিল। ছোটে।
    হাসিনা, খালেদা জিয়া তাঁদের দেখলাম।
    এ তো কলকাতায় কখনও দেখিনি।
    সব প্রতিপক্ষ একজায়গায়! এক অনুষ্ঠানে!
    রাস্তায় দেওয়ালে ছবি আলপনা।
    রাস্তায় আলপনা আগে এ-ভাবে দেখিনি।
    আমরা সরস্বতী পূজায় রাজ কলেজে দু' রাত জেগে ১০০ ফুটের আলপনা বানাতাম। ১৯৮৫-৮৮।
    ভাবতাম, কী না কী করেছি।
    এখানে ঘোর লেগে গেল। কিলোমিটারব্যাপী আলপনা দেখে।

    দুপুরে ওয়ার্কাস পার্টি দপ্তরে জিজ্ঞেস করলাম, কামাল ভাইকে পাবো কোথায়? একজন, শুনেই, বললেন, কামাল ভাই এখানেই আসবেন।
    অপেক্ষা করুন।
    কামাল ভাই এলেন। চিঠিটি একটু পড়লেন।
    তারপর জানতে চাইলেন কলকাতার খবর।
    জ্যোতি বাবু কেমন চালাচ্ছেন।
    আগেই বলেছি , যিনি বলেছিলেন, অপেক্ষা করুন, তিনি রণোভাই।
    খুব আড্ডা হলো।
    বিকেলে বের হলেন। বললেন, ব্যাগপত্তর এখানেই থাক। পাসপোর্ট সঙ্গে রাখুন।
    মনে মনে ভাবছি, কোথায় থাকবো, তাই তো ঠিক করা হলো না।
    কামাল ভাই কিছু একটা বুঝলেন, বললেন, চলেন, বাংলা একাডেমি ঘুরে আসি। বইমেলা চলছে।
    রাস্তায় দেখি কামাল ভাই এগোতে পারেন না।
    অজস্র চেনা মুখ।
    ঠেকা খেয়ে খেয়ে যাই।
    বই দেখি। গান শুনি অজিত রায়ের।
    হাজার হাজার মানুষ গণসঙ্গীত শুনছেন।
    ফিরে আসি ওয়ার্কার্স পার্টি অফিসে। আপনি বলছেন দেখে আমার খারাপ লাগছিলো। আপত্তি করলাম।
    ইতিমধ্যেই তুমি বলেছেন।

    চলো।
    কোথায়?
    আরে চলো না।

    রিক্সায় এলাম দুজনে মহম্মদপুর তাজমহল রোডে।
    বললেন, এটা আমার বাসা। এখানেই থাকবে।‌ সকালে খেয়ে বেরোবে। দুপুরে এখানে খেতে আসবে। কিন্তু এলে ছগুণ বেশি টাকা যাবে রিক্সায়। তার চেয়ে বাইরে খেয়ে নেবে। রাতে দুজনে একসঙ্গে ফিরবো।
    কোনোদিন কামাল লোহানীর শিল্পকলা একাডেমি, কোনদিন ওয়ার্কার্স পার্টি দপ্তর, কোনোদিন বইমেলা। এভাবেই ঠিক থাকে।
    রাস্তায় দেখি হরেক পোস্টার। কামাল ভাই দেখান কোনগুলো তাঁর ডিজাইন করা।
    আমি বেশ কিছু পোস্টার এনেছিলাম। এ-বাড়ি সে-বাড়ি করতে করতে হারিয়েছে সে-সব।
    কামাল ভাই দেখলাম অজাতশত্রু মানুষ। সব পক্ষের সঙ্গে মিত্রতা।
    ছোটো বড়ো সবার সঙ্গে মিত্রতা।
    প্রায় দিন রাতে কামাল লোহানী বা রণো ভাই গাড়ি করে এসে নামিয়ে দিয়ে যান।
    কামাল ভাই ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন ব্যবস্থা করে দিলেন একটা স্কুটারের। ঘুরতে সুবিধা হবে। চালক পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া এক যুবক।
    ভাগ্যান্বেষণে ঢাকা গেছেন।
    লোকে যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ঢাকা যায়--সেই জানলাম।
    এ-রকম চার পাঁচজনের সঙ্গে আলাপ হলো।
    কামাল ভাই তাঁদের জন্য কাজ খুঁজে দেন একে ওকে বলে।

    রিক্সাচালকরা ঢাকায় প্রচুর পয়সা চাইতো।
    কামাল ভাই রসিকতা করতেন।
    এই টাকা রিক্সাসমেত তো?
    রিক্সাচালকরাও রসিক।
    বাবু আমারেও লন।
    খাইখরচা দেবেন বিবি বাচ্চার।
    কামাল ভাইয়ের কাছে আশ্চর্য সব মানুষের আশ্রয় ছিল।



    সপরিবারে কামাল ভাই

    এমন একজন আনিস।
    যে খালি পায়ে ঘুরতো। রিক্সা বা মিশুক চাপতে চাইলে বলতো, তুমি কি মেয়ে মানুষ? রিক্সা চাপতে চাও।
    আনিস ছিল নামী আবৃত্তিকার।
    খেয়ালি।
    স্বপ্নপ্রবণ।
    বাংলাদেশের রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে পরিচয় কামাল ভাই মারফৎ আর তরুণ শিল্পী সাহিত্যিকদের দলে মেশা হলো আনিসের মাধ্যমে।

    আগের দিন রাতে কামাল ভাই পরিকল্পনা করে দিতেন কোথায় কীভাবে যাবো।
    রাতে একসঙ্গে না খেলে রাগ করতেন।

    একবার কবি মজিদ মাহমুদের পাল্লায় এক কবিতার আড্ডায় সারারাত কেটে গেল।
    পরদিন বুঝলাম, কামাল ভাই অভিমান করেছেন।
    এত আপন করে নিতে পারতেন।
    ভাবিও ছিলেন রসিক মানুষ। কাজ করতেন ভোয়ায়।
    রিঙ্কি কামাল ভাইয়ের ছোটো মেয়ে।
    বাবার মতোই দিলদার।
    দুই ছেলে। তিন মেয়ে।
    কামাল ভাই মাঝে ফোন করেছিলেন, তাজউদ্দীন আহমদের ডায়েরি যদি প্রকাশ করা যায় কলকাতা থেকে। তাঁর স্বপ্ন ছিল, একটা তথ্য চিত্র বানাবেন সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর।
    আমার কুড়েমিতে হলো না।
    মাফ করবেন কামাল ভাই‌।

    হায়দার আকবর খান রনো ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী এবং লেখক।
    হায়দার আকবর খান রণোর জন্মও কলকাতায়। ১৯৪২ এর ৩১ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। রনোর পৈতৃক নিবাস অবশ্য পূর্ববঙ্গ। নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। তাঁর মা কানিজ ফাতেমা মোহসীনা বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী তাঁর নানা। বাবা ছিলেন দেশের প্রধান প্রকৌশলী।
    রণোভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশ জমে গেল। আমার বাবার মতো দিলদরিয়া গোছের মানুষ। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বললেন, কাল বাসায় আসুন ১২ টা নাগাদ। ধানমন্ডিতে বাড়ি। দেখলাম সবাই চেনেন বাড়িটি। কথা শেষ ঊঠছি। বললেন, আরে যাবেন কোথায়? খেয়ে যাবেন। একসঙ্গে বের হবো।
    তাঁর মা, স্ত্রী, ভাই, ভাইয়ের বৌ, মেয়ে রাণা, ভাইঝি পুতুল--সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। মেয়ে রাণা তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। আস্তে আস্তে অনুচ্চস্বরে টেলিফোনে কথা বলতেন। খাওয়ার টেবিল দেখি নানান খাবারে ভর্তি। এটা কিন্তু ঘোষিত দাওয়াত না। এত খাবার বাড়ির টেবিলে আগে দেখিনি। আমাদের এখানে তখন তো জামাইকেও আট দশ পদের বেশি খাওয়াতে দেখিনি। আইবুড়ো ভাত হলে আলাদা। ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি, ইলিশ, কাঁচকি--সব আছে। এই প্রথম আমার কাঁচকি খাওয়া। খেতে ভালোবাসি। তাও সংকোচ হচ্ছিল। বললেন, আরে এই বয়সে এত ভেবেচিন্তে খেলে হবে, খান। আমার লেখা একটা উপন্যাস তাঁকে দিই। কলেজে ম্যাগাজিনে লেখা। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র রাজনীতির হাল হকিকত খানিকটা টের পাওয়া যেত সেই লেখায়। নাম 'উত্তরণ'। তখন তো আমি কবিতা গল্প আর উপন্যাসিকা লিখতাম।



    হায়দার আকবর খান রনো

    এরপর যেটা হল। রণোভাইয়ের বাসায় প্রায় দিন আমার উপস্থিতি। রণোভাই আমাকে প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র সম্যকভাবে বুঝিয়ে ছিলেন। একই সঙ্গে এরশাদ সম্পর্কে একটা বিচিত্র তথ্য দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে একটা অন্যরকম তথ্য তিনি দেন।
    তাঁর কথায় - বঙ্গবন্ধু বাকশাল গড়ছেন। এতে রেগে গিয়ে আমি আর রাশেদ খান মেনন একদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই তাঁর ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িতে হাজির হই। নিরাপত্তারক্ষী ছাড়বেন না। আমরাও নাছোড়বান্দা। দেখা করবোই। চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বঙ্গবন্ধু নিজেই নেমে এসে আমাদের নিয়ে গেলেন। নিরাপত্তারক্ষীকে বললেন, রণো আমার পাড়ার ছেলে। ওঁর আবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট কী?

    বললেন, বল কী বলবি?
    আমি আর মেনন বললাম, আপনি যে বাকশাল গ্রছেন, এতে কি গণতন্ত্র থাকবে?
    বঙ্গবন্ধু বললেন, শোন, আমি একটা বিপ্লবী স্মাজতান্ত্রিক দল গড়তে চাই। আমার দলে বহু খারাপ লোক ঢুকে গেছে। তোরা আয়। আমার সঙ্গে যোগ দে। আমাদের কাজের সুবিধা হবে। আমরা আমাদের অক্ষমতা জানিয়ে চলে এলাম। তার কিছুদিন পর তো তাঁকে হত্যা করা হল।

    এরশাদ সম্পর্কে একটা অদ্ভুত তথ্য দেন তিনি। বলেন, এরশাদের আমলে আমরা সবচেয়ে বেশি 'গণতন্ত্র' ভোগ করেছি। সেটা অদ্ভুত ধরনের। দুপুরে ডাকলেন আমাদের। কিছু কাজ নিয়ে আলোচনার জন্য। বিরিয়ানি খাওয়ালেন। গল্পগুজব করলেন। সন্ধ্যায় ফোন করে বললেন, আপনাদের জেলে যেতে হবে। যান ঘুরে আসুন।

    এরশাদের বেশিরভাগ কাজের সমালোচক ছিলেন। বিশেষ করে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণার। দুটি কাজের প্রশংসা করেন।
    এক, ওষুধনীতি। বাংলাদেশে আগে ব্রান্ড নেমে ওষূধ পাওয়া যেত। উনি চালু করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের সহায়তায় জাতীয় ওষুধ নীতি। তাতে জেনেরিক নামে ওষুধ পাওয়া যেতে লাগল। ওষুধের দাম কমল। পরে আমি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি তখন আত্মগোপন করে থাকছিলেন।
    এরশাদের আরেকটা ভালো কাজ। তাঁর মতে ৬৪ জেলা গঠন। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন রণো-মেনন জুটি।

    কিন্তু একজন মার্কসবাদী হিসেবে তাঁর এই দ্বান্দ্বিক মূল্যায়ন আমার ভালো লাগে।
    আমরা দল করতে গিয়ে একপেশে মুলযায়ন শিখতাম। এটা আমাকে তার থেকে বের হতে সাহায্য করে। রণোভাইয়ের ছিল বিপুল পড়াশোনা। কিছু পেলেই পড়ে ফেলতেন। আমার উপন্যাসটিও পড়েন। না পড়লেই ভাল হতো।
    রণোভাইয়ের সঙ্গে মাঝে যোগাযোগ ছিল না। ১৯৯০এর মাঝামাঝি শেষবার যাই। তারপর ২০১৪। সেবার দেখা করতে যেতে পারিনি। ২০১৫তে দেখা হল। ২০১৮তে নিজেই চলে এলেন ফোন করে, বললেন, আজ বিকেলে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। আমি তখন একটা রেস্তোরাঁয় দাওয়াত খাচ্ছি। একগাদা বই দিলেন। তার মধ্যে স্মরণীয়, শতাব্দী পেরিয়ে। রাস্তাতেই দেখা হল।

    শেষ দেখা ২০২২। বাড়িতে গেলাম। পুরানো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন ফ্ল্যাট। বললেন, এবার আমার এখানেই উঠবেন। জমিয়ে আড্ডা হবে। আজকাল তো শরীরের জন্য তেমন বের হতে পারি না।

    ঘটনাচক্রে আমার খুব প্রিয় একটা খাবার জুটে গেল। চারাপোণা মাছের ঝোল। বললেন, রোগীর পথ্য। আপনার কেমন লাগবে জানি না।

    আমি বললাম, ঢাকায় এইটা কখনও খাইনি। শুনে খুশি হলেন। কলকাতার মানুষদের খবর নিলেন। বিমান বসু, শান্তনু দে, বিক্রমজিৎদের খবর নিলেন। বললেন, আমাকে তো আর ভিসা দেয় না। মাওবাদীদের সমর্থক ভেবে। কলকাতায় জন্ম, সেখানেই যেতে পারি না।


    উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন হায়দার আকবর খান রণো গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সংশ্লিষ্ট হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনীতি শুরু। তিনি ১৯৬৯এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা। ১৯৭২ সালে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামকরণ করা হয়। ১৯৭৯-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তাকে চারবার কারারুদ্ধ হতে হয়েছিল এবং সাতবার আত্মগোপনে যেতে হয়েছিল।

    তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। ২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হন'।


    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৮ মে ২০২৪ | ৩৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৮ মে ২০২৪ ১০:০৩531902
  • প্রচুর অজস্র টাইপো। এগুলো একটু ঠিক করলে ভাল হোত।
  • Eman Bhasha | ১৮ মে ২০২৪ ১৩:৩৪531909
  • ধন্যবাদ @দ
  • Touhid Hossain | ২৭ মে ২০২৪ ১৪:০৭532382
  • হীরে মানিক❤
    কী করে যে মনে রাখেন এত! কেউ তথ্যচিত্র বানালে বেশি খাটতেই হবে না। 
    'উত্তরণ' পড়তে হবে। 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন