এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    অন্ধ ও বধিরের দেশে? - প্রতিভা সরকার | বাস্তব আর কল্পনা কোথায় যে হাত ধরাধরি করে চলতে শুরু করবে কেউ জানে না। আসলে তাই-ই তো স্বাভাবিক। কল্পনার পা থাকে বাস্তবের বুনিয়াদে, বাস্তব নিয়ন্ত্রিত অথবা অনিয়ন্ত্রিত হয় কল্পনার লাগামে অথবা লাগামহীনতায়। গুরুচন্ডা৯তে অমিতাভ চক্রবর্তীর খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র ফয়জান আহমেদের মৃত্যুর ওপর সুলিখিত প্রতিবেদনটি পড়ে এইরকম মনে হল। এই নির্মম ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে মানুষকে অনেক অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুরতা, গোপন রক্তপিপাসার মুখোমুখি হয়ে বিহবল হয়ে যেতে হয়। অবাক লাগে ভাবতে যে এই ধরনের কাজের অনেকগুলোই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় করে ফেলে যারা, তারা সবাই কিন্তু ভাড়াটে খুনি বা সাইকোপ্যাথ নয়। তারা অনেক সময়ই মধ্যবিত্ত ঘরের দুধ ঘি খাওয়া মেধাবী ছেলে। আমাদের সন্তান। সমাজের সবচেয়ে সুবিধাভোগী অংশ। দারিদ্র নয়, সেকারণে নীতিহীনতাও নয়, নিষ্ঠুরতার জন্যই নিষ্ঠুরতা কী করে তাদের বীজমন্ত্র হয়ে ওঠে, কে জানে! কেন এত কথা? শোনা যায় ফয়জানের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল কর্তৃপক্ষ এবং মেডিকেল কলেজও। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত দ্বিতীয়বারের ময়না তদন্তের রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, এটি আত্মহত্যা নয়, মাথার পেছন দিকে এবং বুকে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু ঘটেছে আসাম থেকে আগত এই মেধাবী তরুণের। আরও জানা গেছে, তার ঘাড়ে গুলির দাগ আছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রবল প্রহার করে তারপর গুলি করা হয়েছিল ফয়জানকে? স্মর্তব্য, এই দ্বিতীয় বারের ময়না তদন্ত হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। নাহলে সব ধামাচাপা পড়েই থাকত। গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাসে রোহিত ভেমুলার ছায়ায় গড়া কেন্দ্রীয় চরিত্র রোশনের পাশে আছে ফয়জান, স্বনামে নয়, তার নাম ওখানে ফয়জল। তার মৃত্যুর পর মা ছুটে এসেছেন অতদূর থেকে। তাঁর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ, তার বর্ণনা আছে। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন কাগজের রিপোর্ট ঘেঁটে লেখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর তিলে তিলে গড়া হয়েছে এই দুর্ভাগা তরুণের চরিত্র। তাকে দাঁড় করানো হয়েছে রোহিত ভেমুলার পাশে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় এই ২০১৬ এবং ২০২২ কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলাকে অন্যায়ের প্রবহমানতা দেখাবার পক্ষে খুবই কার্যকরী হয়েছে বলে ভেবেছেন। আমরা পড়ে দেখতে পারি উপন্যাসের কিছুটা অংশ, যেখানে মায়ের চোখের জল আর প্রবল আকুতি বৃথা হয়ে যাচ্ছে। এমপ্লুরা নামের রাসায়নিক দিয়ে যে নরপশুরা ফয়জানের মৃতদেহ অবিকৃত রাখবার চেষ্টা করেছিল, তাদের নির্লিপ্ততা। রসিকার ছেলে প্রকাশ করে গুরুচন্ডা৯ যে সামাজিক যুদ্ধের সূচনা করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তীদের প্রতিবেদন। রসিকার ছেলে থেকে উদ্ধৃতি“আইআইটিতে নেমে প্রথমে ফতিমা আন্টিকে গেস্ট হাউজে তুলল রোশন। দুজনেই হতবুদ্ধি, শোকে উন্মাদ, তার মধ্যে রোশনই সম্পূর্ণ কান্ডজ্ঞান হারায়নি। কাউকে না কাউকে তো খোঁজ খবর নিতে হবে। থানায় যেতে হবে, ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, ডেথ সার্টিফিকেট এরা আগেই অন লাইন পাঠিয়ে দিয়েছে। রোশন না ভেবে পারে না যে ফিজুর শরীর এখন মাটির নীচে মাটি হয়ে যাচ্ছে। তাদের গ্রামে নতুন কবর হলে সবসময় তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। পেছনে ফেলে যাওয়া মানুষের স্নেহ আর যত্নের মতো মৃতকে আগলে রাখে ঐ বেড়া। স্বজনরা এসে বেড়ার এপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে কান্নাকাটি করে, কখনও মৃতের সঙ্গে কথা বলে নিজের মনে। তারপর কালের নিয়মে শোক প্রশমিত হয়, বেড়া জীর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যায়। তবু যেন কিছু থেকে যায়! বড় কোমলতা আর ভালবাসা মাখা এই বিদায় জানানোর পদ্ধতি! কিন্তু বিদেশে বিভুঁইয়ে কোথায় যে ফিজুকে এরা কবর দিয়েছে, কোন কবরিস্তানে, তা পর্যন্ত এখনও দেখা হয়নি তাদের। ছবিতে তো সব বোঝা যায় না।যে ছেলে আগের সন্ধেয় কথা বলেছে রোশনের সঙ্গে, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী হিসেব কষে দেখা গেল, পরের পনের/ষোল ঘন্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে। মাত্র পনের/ষোল ঘন্টা ! একটা গোটা দিনও তো নয়!রাতে ছ’ সাত ঘন্টা তো সে নিশ্চয়ই ঘুমিয়েছে। সকাল হবার পর বাকি ন’ দশ ঘন্টায় কী এমন ঘটল যে ফিজু একটা অচেনা ফাঁকা ঘরে গিয়ে কালঘুমে ঘুমিয়ে পড়ল! ভাবলেই রোশনের বুকের ভেতরটা বেবাক ফাঁকা হয়ে যায়, যেন তার হার্ট, লাংস,পাঁজর, কিছুই নেই। নিজের বুক চেপে ধরে রোশন, সেখানে সর্বগ্রাসী শূন্যতার মধ্য দিয়ে কোন দৈবী মায়ায় লাবডুব লাবডুব আওয়াজ ভেসে আসছে তবুও! সন্ধেবেলায় ক্যাম্পাসে তারা পৌঁছনোর পর ভীম আর্মির কমরেডদের সূত্রে রাজশেখরন নামে একটি ছেলে দেখা করতে এল। না, সে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। কারণ ওই সময়ে সে অন্ধ্রে নিজের বাড়ি গিয়েছিল। সে শুধু রোশন যেখানে বলবে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে। এত বড় ক্যাম্পাসে নাহলে কোথায় কী আছে, কোনও নবাগতের পক্ষে তা জানা সম্ভব না। এটুকু সাহসও তার হত না, কিন্তু সে খুবই সিনিয়র ফেলো, আর কয়েক মাসের মধ্যেই পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। রোশন তাকে বলল,আগে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে আন্না? যেখান থেকে প্রথম ডাক্তার গিয়ে মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন? তারা বাইকে স্টার্ট দিচ্ছে, এমন সময় পাগলের মত ফতিমা ছুটে এল,- আমাকে না নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস বিড্ডা? আমি যাব, আমি যাব। তার মুখের দিকে তাকিয়ে রোশন বুঝল কিছুতেই তাকে ফেলে যাওয়া চলবে না। তাই ফতিমাকে মাঝখানে বসিয়ে ছেলেদুটো দুজন দুদিকে বসল।ক্যাম্পাসের এই পুরনো হাসপাতালটা গেস্ট হাউজের কাছেই। অনেক দূরে কোথায় নাকি আই আই টির জন্য সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হচ্ছে। এখনও বেশিটা এই হাসপাতালই সামলায়। রাজের বাইকের পেছনে বসে পাঁচ মিনিটে রোশন আর ফতিমা সেখানে পৌঁছে গেল। মূল প্রবেশ পথে ঢুকে বাঁ দিকে যেতে হল, তারপর ডাইনে একটা লম্বা করিডরের শেষে পাশাপাশি আবার অনেকগুলো ঘর। করিডরে লম্বা বেঞ্চে বসা রোগীদের ভিড় ছিল, পোশাক-পরা নার্সরা যাতায়াত করছিল, কথাবার্তা, জুতোর শব্দ, দরজা খোলা বন্ধের ক্যাঁচক্যাঁচ, ওষুধের গন্ধ, বেশ গ্যাঞ্জাম হয়ে ছিল জায়গাটা। রাজশেখরন রোশনের দিকে ফিরে বলল, - সেদিন ছেলেরা প্রথমে ছুটে আউটডোরেই এসেছিল। কিছু ঘটলে ওরা সবসময়ই তাই করে। ওরা তো বুঝতেই পারেনি, শেখ ফয়জুল মরে গেছে, না অজ্ঞান হয়ে রয়েছে। পরে পোস্ট মর্টেম করে জানা গেছে চারদিনের বাসি মরা ছিল। কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি এই শুনে যে মৃতদেহ থেকে কোনো গন্ধটন্ধ বেরোচ্ছিল না। এমার্জেন্সি থেকে ডাক্তারকে ওরা হস্টেলের সেই ঘরটায় নিয়ে যায়। - সেই ডাক্তারের আজ ডিউটি আছে তো? আমি তার সঙ্গে কথা বলব। - হ্যাঁ, সেসব খবর আগেই নিয়েছি। আজ ওঁর এখানে নাইট ডিউটি আছে। একটা ভারী কালো কাঠের দরজায় রাজশেখর ঠকঠক করে। তার ওপরে নেমপ্লেটে লেখা ড: ধরিত্রী সান্যাল, এম ডি। ভেতর থেকে নারীকন্ঠে প্রত্যুত্তর আসে, - প্লিজ কাম ইন।একসঙ্গে এত লোককে ঢুকে পড়তে দেখে ডাক্তার-ম্যামের ভ্রূ কুঁচকে যায়,- রোগী ছাড়া আর দুজন বাইরে দাঁড়ান। আমি দরকার বুঝলে ডেকে নেব।রাজশেখর বা রোশন কিছু বলার আগেই ফতিমা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে, সামনের টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে জড়ানো গলায় ডাক্তারকে নিজের ভাষায় জিজ্ঞাসা করে, - নোডিডিয়া নান্না মাগু? আপনি কি আমার বাছাকে দেখেছিলেন? ডাক্তার হতবাক হয়ে যায়, তারপর ভাষা না বুঝেও কী একটা সন্দেহ তার কপালে ভাঁজ ফেলে। রাজশেখরনের দিকে তাকিয়ে সে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করে, - এরা কি শেখ ফয়জুলের কেউ হন? রোশন হাত জোড় করে বলে, - হ্যাঁ, ইনি ফয়জুলের মা, আমি বন্ধু। ম্যাম, সেদিন আপনি কী দেখেছিলেন, বলবেন আমাদের? ফতিমার অনবরত ফোঁপানির মধ্যেই ডাক্তার রোশনদের মাথার পেছনের সাদা দেওয়ালে নিজের চোখ গেঁথে রাখে। মুখে বলে,- বসুন আপনারা। ওঁকেও বসান প্লিজ। আমি পুলিশের কাছে যে বয়ান দিয়েছি, আপনাদেরও তাই-ই বলছি। সেদিন জনাদশেক ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আউটডোরে ডিউটিরত ড: ধরিত্রীকে এসে একটা খুব খারাপ খবর দেয়। একটি সদ্য জয়েন করা স্কলার হস্টেলের একটি অব্যবহৃত ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে, সে মারা গেছে না বেঁচে আছে বোঝা যাচ্ছে না। নাকের নীচে হাত রাখলে শ্বাসপ্রশ্বাস বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু দেখতে ফ্রেশ লাগছে, যেন জোরে ধাক্কা দিলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসবে। এমার্জেন্সিতে ডিউটি তার, প্রচুর রোগী অপেক্ষা করছে, তার মধ্যে এ কী ঝামেলা !শরদিন্দু চ্যাটার্জি তার জুনিয়র। বললেই চলে যেত। কিন্তু ধরিত্রী নিজেই যাবে ঠিক করল। গত বছরও এইসময় ক্যাম্পাসে একটা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের কাছে তখনকার ডাক্তার যে বয়ান দিয়েছিল, তাতে অনেক অসঙ্গতি ছিল। তাই নিয়ে সে কী ঝামেলা! ধরিত্রী ঠিক করল সে নিজেই যাবে। ছেলেদের কাছ থেকে ঠিকানাটা ভালো করে জেনে নিয়ে বলল, - তোমরা এগোও। আমি আসছি। জিমের সামনে দিয়ে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করে এগোচ্ছিল ধরিত্রী, এই রাস্তাটায় বড় বড় সব স্পিড ব্রেকার বিছিয়ে রাখা আছে। উপায় নেই, জিম করে সব আলালের ঘরের দুলালরা সাঁ করে বাইক ছোটান সুইমিং পুলের দিকে। সে সময় তাদের গায়ে এত পুলক লেগে থাকে যে চক্ষে ঘোর ঘনিয়ে কে যে কোথায় বাইক নিয়ে পপাত চ মমার চ হবেন, কেউ বলতে পারে না। এই জেনারেশনটাকে সে ঠিক বুঝতে পারে না। কখনও মনে হয় ওরাই ভালো, কেমন স্পষ্ট ভাবে নিজেদের চাহিদার জানান দিতে পারে। পোষালে থাক, নইলে কেটে পড়। আবার কখনও মনে হয়, না: বড্ড আত্মকেন্দ্রিক! নিজেদের নিয়েই মত্ত। এই যে ষোল হাজার ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা এতবড় ক্যাম্পাস, এদের মধ্যে ক'জন সমাজের কথা ভাবে, দেশের জন্য মাথা ঘামায়। তবে কিনা, একটু দু:খের হাসি হাসে ধরিত্রী, আমরাই কি দায়ী নই এ জন্য? স্বার্থমগ্নতা কি আমরাই যত্ন করে শেখানোর সিলেবাসে এক নম্বরে রাখিনি? সেখানে একটু আঘাত লাগলেই আত্মহত্যা, নয়ত অন্যকে আঘাত করা। প্রত্যেক বছর ক্যাম্পাসে একাধিক আত্মহত্যা! আর মারামারি তো লেগেই আছে। হাতাহাতি থেকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে চোরাগোপ্তা আঘাত করা, সবই ঘটে। তবে প্রশাসনের ভূমিকাও খুব হতাশাজনক। যাই-ই ঘটুক না কেন, সবার আগে প্রতিষ্ঠানের সুনাম, এই নীতিতে চললে, কারও প্রতি সুবিচার করাই সম্ভব নয় ! ছেলেটি যে ভাবে মেঝেয় এলিয়ে পড়েছিল, দূর থেকে দেখেই ধরিত্রীর অভিজ্ঞ চোখ বুঝল, এ মৃত। তাকে লিফটের বাইরে আসতে দেখেই জমায়েতটা সরে সরে পথ করে দিল। ছেলেটার নাড়ি দেখবে বলে হাতটা তুলতেই, কী একটা অনুভূতি তাকে বেদম অস্বস্তিতে ফেলে দিল। অনেক ভেবে ধরিত্রী বুঝতে পারে তার অস্বস্তি হচ্ছে মৃত ছেলেটির ত্বকের বিবর্ণতা দেখে ! অনেক আগে কেউ মারা গেলে তার ত্বক যেমন বেরঙ, শুকনো খড়খড়ে হয়ে যায়, এরও তেমনি। কিন্তু আর সবই অল্পবিস্তর ঠিকঠাক! ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে ধরিত্রী। আধবোজা চোখদুটো নিয়ে মুখ মাথা একদিকে হেলে পড়ছে। হাত পাগুলো এমন ছেতরানো, দেখলে মনে হচ্ছে গামছা নিংড়োবার মত ওগুলো থেকে কেউ নিংড়ে নিয়েছে মনুষ্যদেহের স্বাভাবিক শক্তির শেষ বিন্দুটুকু। কবে এর মৃত্যু হয়েছে? কতদিন হল ও এই ধুলোভরা মেঝের ওপর পড়ে আছে? নাড়ি দেখা শেষ করে মুখ তুলল ধরিত্রী, স্টেথো বার করতে করতে ছেলেগুলোকে জিজ্ঞাসা করল, - পুলিশে খবর দিয়েছ?- হ্যা ম্যাম, পুলিশ আসছে। আরও দু একটি কথা চালাচালিতে সে বুঝল, কেউই চিনত না ছেলেটিকে, ও যে এইখানে পড়ে আছে সে খবরও কারও কাছে ছিল না। ঘরের দরজাটা ভেজানো ছিল, আজ ছুটির দিনে এই ফ্লোরের কয়েকজন মিলে একসঙ্গে বেরচ্ছিল। হয়ত ফিল্ম দেখবে কিম্বা রেস্টুরেন্টে খেয়ে মুখ বদলাবে। ছোট লিফট, তাই লিফটে কে বা কারা আগে যাবে সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মজার হুটোপুটি বেঁধে যায়। ধাক্কাধাক্কি করবার সময় একজনের কনুই লেগে হঠাৎ লিফটের লাগোয়া এই ঘরের দরজাটা খুলে যায়। কেউ থাকতো না বলে ওটার কোনো খবর রাখত না কেউ। জানালাবন্ধ ঘরের আধো অন্ধকারে কেউ মাল খেয়ে বেহোঁশ হয়ে শুয়ে আছে, এইরকম ভেবেছিল ওরা। তারপর অনেক ডাকাডাকি করে সন্দেহ হওয়ায় কয়েকজন সময় নষ্ট না করে ডাক্তার ডাকতে হাসপাতালে চলে যায়। এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। ধরিত্রীকে ওসি চেনে। বছর বছর আত্মহত্যার কেস ডিল করতে হলে পুলিশ, উকিল আর ডাক্তারে মুখ শোঁকাশুকি না হয়ে উপায় থাকে না। - আরেকটা সুইসাইড? ওসির সর্দিবসা গলা কানে আসে ধরিত্রীর, - গায়ে জ্বর নিয়ে আসতে হল ম্যাডাম। এ তো দেখি আত্মহত্যা করেই যদুবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে ! তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে পুলিশবাহিনী। পটাপট সব আলোগুলো জ্বেলে দেয়। কে একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে ওঠে,- শেখ ফয়জুল, রিসার্চ স্কলার, লালা লাজপত রায় হস্টেল। রুম নাম্বার টুয়েন্টি টু। আ নিউ কামার টু হিজলি ক্যাম্পাস।- কে রে, কে? কে বলল কথাটা? ওসি আবার ঘরের ভেতর থেকে বার হয়ে আসে। রুল উঁচিয়ে ধরে ক্রমশ ফুলে ওঠা জমায়েতের একের পর এক ছেলের দিকে,- আপনি, আপনি বললেন? নাকি আপনি? কে কী জানেন বলুন, তাতে আমাদের ইনভেস্টিগেশনের সুবিধে হবে ! কিন্তু নিরেট ভিড়টা থেকে একটা টুঁ শব্দও উঠে আসে না। একটা জমাট ধরা শ্বাসপ্রশ্বাসের ডেলা যেন ওটা। প্রাণ আছে, কিন্তু সুপ্ত, শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ছাড়া প্রাণের আর কোনও লক্ষণই দেখায় না ভিড়টা। শুধু আলো পিছলে যায় সুন্দর প্রসাধিত বুদ্ধিদীপ্ত মুখগুলোর ওপরে। বড্ড চকচকে, বড় বেশি উজ্জ্বল যেন ! কৃত্রিম উজ্জ্বলতা। ধরিত্রীর মনে পড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে দেওয়াল ঘেঁষে সারি সারি গজিয়ে উঠেছে ইউনিসেক্স পার্লার ! ছাত্রদের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে এবার পুলিশ স্ট্রেচারে লাশটা তোলার তোড়জোড় করল। দূর থেকে ছেলেটিকে যেমন নেতিয়ে পড়ে আছে বলে মন হচ্ছিল, স্ট্রেচারে তোলার সময় ধরনধারণ দেখে সেই ভাবটা বেশ কম বলে মনে হল ধরিত্রীর। বেশ শক্ত যেন দেহখানা। কিন্তু তাই-ই বা কী করে হবে, রাইগর মর্টিসের লক্ষণ কোথায় ! দেহে পচন ধরেনি, দুর্গন্ধ নেই! ধরিত্রী খুব অবাক হচ্ছিল, কিন্তু ব্যাপারটা এখন তার হাতের বাইরে। লাশ চলে যাবে সোজা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সেখানেই পোস্ট মর্টেম হবে। দেখা যাক, কী রিপোর্ট আসে! ধরিত্রী চলে যাবে বলে পেছন ফিরেছে, হঠাৎ ঠনঠন করে কিছু গড়িয়ে যাবার শব্দ। এক পুলিশের পায়ে লেগে কৌটো মতো কিছু একটা গড়িয়ে গেল ঘরের ভেতরে টয়লেটের দরজার দিকে। আর একজন সেটা কুড়িয়ে নিল। মনে হচ্ছে কোন ওষুধের কৌটো, বেশ বড়সড় সাইজের। ওসি নাকের ডগায় চশমা টেনে গায়ের লেখা পড়ার চেষ্টা করে কিছু বুঝতে না পেরে ধরিত্রীকে বলল,- ম্যাডাম, দেখুন না একটু, এটা কিসের ওষুধ! কৌটোটা হাতে নিয়ে চমকে উঠল ধরিত্রী। এমপ্লুরা। মাংস সংরক্ষণে এর জুড়ি নেই। যে কোনো রকম মাংসে এই ওষুধ মাখালে সেটা অনেক সময় ধরে তাজা থাকে, গন্ধ ছাড়ে না, খুব শক্ত হয়ে যায় না, ছোট্ট পাখি তিতির থেকে মানুষের…হ্যাঁ মানুষেরও তো…! আরে এ ওষুধ এখানে কেন! ধরিত্রীর পা থেকে মাথা অবধি বিদ্যুৎচমকের মতো কী যেন খেলে গেল! লিফটে নামতে নামতে তার কেবলই মনে হচ্ছিল লাশটি এতো গন্ধ ও পচনহীন কেন সে রহস্য যেন সে উদঘাটন করে ফেলেছে ! সারা রাত ধরে নির্ঘুম বসে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে পড়ল রোশন। ডিরেক্টর এখানে নেই, আগামীকাল তাদের ডিনের সঙ্গে দেখা করবার কথা। পাশের ঘরে ফতিমা আন্টিকে কড়া ঘুমের ডোজ দিতে হয়েছে। এখানকার ডাক্তার-ম্যাডামই দিল নিজে থেকে, ফতিমার মুখচোখ দেখে। রোশনকে গলা নামিয়ে বলল, - আমিও তো মা। নিজের জোয়ান ছেলে মরে গেলে মনের ভেতরে কী হয় তা ভালই বুঝি। এই ওষুধটা রাখ। রাতের খাবারের আধ ঘন্টা আগে এটা ওঁকে খাইয়ে দিও। গোটা হিজলি ক্যাম্পাসে এই ডাক্তার দিদিমণিই একমাত্র মানুষ যে ফতিমার প্রতি তবু কিছু সহানুভূতি দেখিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাজশেখরণ ওদের নিয়ে গেল থানায়। আগেই জানান হয়েছিল, মৃত ছাত্রের মা দেখা করবে। ওসি তাদের বেশ খাতির করে বসাল, কিছুক্ষণ ফতিমাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে খুব মিষ্টি ব্যবহার করল, তারপর নিরীহ হরিণের চামড়ায় ঢাকা সিংহের আসল চেহারা দ্রুত বেরিয়ে পড়ল। দোষের মধ্যে ফতিমা তার ছেলের মৃতদেহের ছবি দেখতে চেয়েছিল, - আমার ফিজুকে দেখতে চাই। কেমন ভাবে পড়েছিল আমার মাগু, আমার কুসু, দেখাও অফিসার, আমাকে দেখাও! দোভাষীর কাজ করতে করতে রোশন দেখছিল, ফতিমা আন্টির অস্থিরতা যতই বাড়ছে, ওসির মুখ ততই কঠোর হয়ে উঠছে। একসময় লোকটা ফতিমার মুখের ওপর বলে বসল,- লাশের কোনো ছবি আমাদের কাছে নেই।তার মানে? এই রকম কেসে ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখা তো ম্যান্ডেটরি। রোশন দোভাষির ভূমিকা ছেড়ে এখন সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ। - হ্যাঁ, তোলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ডিলিট করে দিয়েছি। আমাদের তদন্তের কাজ মিটে গেছে। ওসব ছবির আর কোনো মূল্য নেই।রোশন খুব অবাক হয়ে ওসির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফতিমা কিছুই বুঝতে না পেরে অঝোরে কেঁদে চলে। ওসির রাগ ক্রমশ চড়ছিল, সে গজগজ করতে করতে বলে,- এইরকম কেস মানে কী রকম কেস, হ্যাঁ? এটা একটা প্লেন এন্ড সিম্পল সুইসাইড কেস। - তাহলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ইনকনক্লুসিভ রইল কেন? সেখানেই তো বলা থাকত ফয়জুল আত্মহত্যা করেছে।উত্তেজনায় ওসি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,- আপনাকে তো পড়াশোনা জানা বলেই মনে হচ্ছে। সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স বলে কিছু আছে সেটা জানেন তো। শেখ ফয়জুলের কবজিতে ব্লেড দিয়ে চেরার দাগ ছিল, জানতেন এ কথাটা? এখানে আসার পর থেকেই ওর ধরনধারন দেখে রুমমেটদের সন্দেহ হয়েছিল, ও হয় ড্রাগ এডিক্ট, নয় ডিপ্রেশনের রোগী। ও আত্মহত্যাই করেছে। ফতিমা এই দুজনের মধ্যে কথাবার্তার কিছুই বুঝতে পারছিল না, কান্না থামিয়ে একবার ওসি, একবার রোশনের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল। রোশনও এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে, ওসির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। এ সেই দৃষ্টি যা তাকে কেউ হেই চামারের ব্যাটা, হেই মাদিগার ব্যাটা বলে অপমান করলে, তার দুচোখ ভেদ করে বেরিয়ে আসত। গলা ওঠায় না সে, কিন্তু খুব প্রত্যয়ী শোনায় তার কন্ঠ, - স্যার, আমরা পঁচিশ বছর ধরে পরস্পরের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। আমি জানি, ফয়জুল কোনওদিন ড্রাগ ছুঁয়ে দেখেনি আর ডিপ্রেশনেও সে ভোগেনি। প্লেন এন্ড সিম্পল তাকে কেউ মার্ডার করেছে। আমরা হাইকোর্টে কেস করব। ফিজুর দেহ কবর থেকে তুলে আবার পোস্ট মর্টেম করাব। দেখব কী করে তদন্ত শেষ বলে আপনারা এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলেন। ওসি থতমত খেয়ে যায়। তারপর নিজেকে ফিরে পেয়ে বলে, - প্রমাণ করুন। মুখে বললে তো হবে না। আমরা ইনভেস্টিগেশন করে যা পেয়েছি, তার ভিত্তিতে বলছি এটা আত্মহত্যার কেস। আমার কথা মানবেন না যখন, তখন আপনারা আসুন। আমার যা বলার ছিল বলা হয়ে গেছে। তবে যাবার আগে এই কাগজটায় সই করে যাবেন দুজনেই। আমাদের কথাবার্তার সারাংশ এখানে লেখা আছে।রোশন কাগজটা টেনে নিয়ে পড়তে গিয়ে দারুণ চমকে উঠল। যতদূর সম্ভব এটা বাংলায় লেখা। ওসির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল, লোকটা হাসি হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবটা এমন, যে সে যেন বলছে, কী কেমন দিলাম? হাতের উদ্যত পেন নামিয়ে রেখে সই না করেই ফতিমাকে নিয়ে রোশন বাইরে চলে আসে। গোটা কথাবার্তাই সে তার মোবাইলে গোপনে রেকর্ড করে নিয়েছে।” সূত্রঃ "ফৈজান আহমেদ আত্মহত্যা করেন নি", অমিতাভ চক্রবর্ত্তী, গুরুচণ্ডা৯। ১৫ জুন ২০২৪IIT-Kharagpur student’s murder: ‘How could institute and police cover up so much,’ asks Faizan’s mother, Sukrita Baruah, Jun 15, 2024, The Indian Expressসদ্য প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাস নিয়ে ​​​​​​​দেবকুমার ​​​​​​​চক্রবর্তীর আলোচনা। রসিকার ছেলেপ্রতিভা সরকার। প্রকাশক: গুরুচণ্ডা৯মূল্য—১৫০ টাকা। বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
    মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও বিদেশি চকলেটের বাক্স - রমিত চট্টোপাধ্যায় | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ওরফে ছেনু তখন থেকে অপেক্ষা করে রয়েছে কখন চিঠিটা সবার পড়া শেষ হবে। বাড়িতে কারুর চিঠি আসা মানেই ওর খুব মজা, আরেকটা ডাকটিকিট এসে খাতায় জমা হবে। খাতায় ডাকটিকিটটা সাঁটার কায়দাটা একটু খটোমটো। ওকে তেতলার দাদাই পুরোটা শিখিয়েছিল। প্রথমে খামের পিছনদিকটা অল্প জল দিয়ে ভিজিয়ে তারপর আলতো করে ব্লেড ঘষে ঘষে খুউব সাবধানে স্ট্যাম্পটা তুলে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর পাতলা একফালি সেলোফেন পেপার আধভাঁজ করে স্ট্যাম্পের পিছনে অল্প একটুকুনি আঠা লাগিয়ে সেলোফেন পেপারের আরেকটা দিক আলতো করে ধরে খাতায় চিপকে দিতে হবে। এই করে করে ছেনুর খাতায় এত্তোগুলো ডাকটিকিট জমে গেছে।আজকে সকালে তেতলার পিসিমার কাছে যে চিঠিটা এল, দাদা মানে পিসিমার ছেলে অনেকক্ষণ ধরে পিসিমাকে পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। ছেনু গিয়ে দু'বার দরজার সামনে থেকে ঘুরেও এল, কত লম্বা চিঠি রে বাবা! শেষে আর থাকতে না পেরে ছেনু গিয়ে পিসিমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, কার চিঠি গো? দেখা গেল অদ্ভুত ব্যাপার, পিসিমা হাসছে, অথচ চোখের কোণে জল, পিসিমা হেসে বলল, কে আসছে জানিস? কান্টু আসছে রে কান্টু, তোর কান্টু দাদা। এদ্দিন পর ও আসছে, শুনে বিশ্বাসই করতে পারছি না, তাই তো বারবার করে শুনছি।ছেনু ছোট্ট থেকে পিসিমার কাছে কান্টুদার অনেক গল্প শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন কান্টুদাকে চোখে দেখেনি আজ পর্যন্ত। অবশ্য দেখবেই বা কি করে, ছেনুর জন্মের আগেই তো পিসিমার বড় ছেলে কান্টুদা সেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে কি একটা দেশ আছে, কানাডা না কি নাম, সেইখানে চলে গিয়েছিল। সেই থেকে সেখানেই থাকে আর মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে খবরাখবর জানায়। শুরুর দিকে বাংলায় লিখত বটে কিন্তু পরে কি জানি কেন শুধু ইংরেজিতেই চিঠি পাঠায়, তাই অন্যরা পিসিমাকে তর্জমা করে পড়ে পড়ে শোনায় কি লিখেছে।পিসিমার মুখেই ছেনু শুনেছে, কান্টুদার নাকি ছোটো থেকেই খুব বিদেশ যাওয়ার শখ, বড় হয়ে কলকাতার চাকরিতে মন টিঁকছিল না, কান্টুদা শেষমেশ ঠিক করল, না, আর কোলকাতায় না, খাস বিলেতেই যেতে হবে। যেমন কথা তেমনি কাজ, পরিবারের কিছু টাকার সাথে, নানা আত্মীয়স্বজনদের থেকে আরো কিছু টাকা ধার নিয়ে একসাথে জমিয়ে জাহাজে চেপে সোজা রওনা দিল বিলেতে। লন্ডনে নেমে নানা জায়গায় ঘুরে তেমন কিছু সুবিধা করতে না পেরে মুখ ভার করে বসেছিল, এমন সময় কার কাছে শুনেছে, নানা জায়গার লোক এসে নাকি লন্ডনে প্রচুর ভিড় হয়ে গেছে আর ওদিকে আরও দূরে কানাডায় নাকি প্রচুর কাজের লোকের দরকার। কান্টুদা শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, তাহলে এখানে বসে থেকে লাভ নেই, চলো কানাডা! আবার লন্ডন থেকে জাহাজে চেপে পাড়ি দিল আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে কানাডায়।সেখানে তো ভীষন ঠাণ্ডা, কান্টুদার সাথে গরম জামা বলতে একটাই কোট ছিল। যাই হোক রাস্তা থেকে আরেকটা ওভারকোট কেনার পর খোঁজখবর করে কম পয়সায় একটা বাড়িও ভাড়া করা হল। সেই কোট পরে কান্টুদা এদিক ওদিক কাজের খোঁজে যায়, কিন্তু যে সব কাজ জোটে সেসব মনে ধরে না পুরসভার চাকরির পাশাপাশি যাদবপুরের নাইট থেকে ইন্জিনিয়ারিং পাশ করা কান্টুদার। সারাদিনে খুব সামান্য কিছুই পেটে পড়ে, সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে রাত্রে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। নতুন দেশে গিয়ে তো কিছুই ঠাহর করতে পারছে না, খাবার দাবার খেতে, টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতেই জমা টাকা হুহু করে খরচ হয়ে যাচ্ছে! দেখতে দেখতে দুটো মাস কেটে গেল, প্রথম মাসের বাড়িভাড়া তো শুরুতেই দিয়ে দিয়েছিল, বাড়িওলা এবার এসে পরের মাসের ভাড়া চাইছে। কান্টুদা অনেক করে বোঝায়, ক'টা দিন দাঁড়াও, আমি চাকরি পেয়েই ভাড়া মিটিয়ে দেব। বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিন দশেক কোনোক্রমে আটকে রাখা গেছিল, কিন্তু কপালের লেখা কে আটকাবে! একদিন খুব বৃষ্টি পড়ছে তার মধ্যে বাড়িওলা খুব চিৎকার চেঁচামেচি করে কান্টুদাকে বাক্সপ্যাঁটরা সমেত বাড়ি থেকে বের করে দিল। কান্টু দা কি আর করে, কোটখানা গায়ে চাপিয়ে বাক্স হাতে করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় অন্য একটা বাড়ির নীচে একটু আড়াল মতো পেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আড়াল পেলেও, এমন জোর বৃষ্টি শুরু হল যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকভেজা ভিজে গেল।এমনি সময় হঠাৎ একটা মেয়ে পাশের বাড়ির জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে, কান্টুদাকে দেখতে পেয়ে বলল, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিজে যাবে তো! কে তুমি? কান্টুদা কি আর করে, মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ইন্ডিয়া থেকে এসেছি চাকরি করতে, একটু বিপদে পড়েছি, বৃষ্টিটা ধরলেই চলে যাব।তাতে মেয়েটা বলে, ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো না, বৃষ্টির মধ্যে ঠাণ্ডায় জমে যাবে, দরজা খুলে দিচ্ছি, ওপরে এসে বসো। তারপর গরম চা খেতে খেতে মেয়েটা কান্টুদার মুখ থেকে গোটা ঘটনা শুনল। নরম মনের মেয়ে, শুনে টুনে বলল, এটা আমার দিদার বাড়ি, আমি দিদার সঙ্গেই থাকি। তোমার তো থাকার কোনও জায়গা নেই, এক কাজ করো, যদ্দিন না চাকরি পাচ্ছো এখানে আমাদের সাথেই থাকো, আমি দিদার সাথে কথা বলছি। আপাতত জামাকাপড় বদলিয়ে শুকনো কিছু পরে নাও।পিসিমা যখন গল্পটা ছেনুকে বলেছিল, ছেনু তো শুনে অবাক, এতো দারুণ ব্যাপার! কান্টুদাকে আর ভিজতে হল না, আচ্ছা ওদিন যে অত করে সাহায্য করল, সেই মেয়েটা কে গো? পিসিমা বলেছিল, দাঁড়া দেখাচ্ছি, বলে কোন একটা ডায়েরির মধ্যে থেকে একটা টুকটকে ফর্সা গোলগাল মেয়ের ছবি বের করে ছেনুর হাতে দিয়ে বলল, এই দ্যাখ। ছেনু হাতে নিয়ে সেই মেমসাহেবের ছবি দেখে অবাক হয়ে বলল, সেই ছবি তুমি কী করে পেলে? পিসিমা বলে, ওমা পাবো না কেন? কান্টুই তো পাঠিয়েছে। ভালো করে দেখে রাখ, এই হল তোর বৌদি, জুলি বৌদি। ওখানে চাকরি বাকরি জুটিয়ে সেই জুলির সাথেই তো পরে ওর বিয়ে হয়েছে।তারপর অনেক দিন কেটে গেছে, কান্টুদা পাকাপাকিভাবে কানাডাতেই থাকে আর মাঝে মাঝে চিঠিতে খবরাখবর পাঠায়, তেমনই এক চিঠি আজ সকালে এসেছিল। তাতে কান্টুদা জানিয়েছে, সে জুলি বৌদি আর বাচ্ছাদের নিয়ে এবার কোলকাতায় আসছে সবার সাথে দেখা করতে। সেই কথা শুনে তো সারা বাড়িতে হইহই পড়ে গেল। বিদেশের অতিথি তার ওপরে আবার বাড়ির বউ! তার সামনে তো বাড়ির একটা প্রেস্টিজ আছে নাকি? সাথে সাথে রংমিস্তিরির কাছে খবর গেল, সারা বাড়ি চুনকাম করা হবে। তিন বোতল অ্যাসিড কিনে আনা হল, পুরো বাথরুম সেই দিয়ে পরিষ্কার করা হবে ঝকঝকে তকতকে করে। খাবার পরিবেশনের জন্য এল চকচকে নতুন কাঁসার থালা-বাটি-গ্লাস। আরও হ্যানো ত্যানো নানান নতুন নতুন জিনিস কেনার লিস্টি তৈরি হল। মোটকথা যেভাবেই হোক শেয়ালদার সম্মান যাতে বজায় থাকে সেই চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা যাবে না।এই সব দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই টুকটুক করে কান্টুদাদের আগমনের দিন এসে পড়ল। পিসেমশাই আর দাদা মিলে সেই দমদম এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবে, সকাল থেকে তার প্রস্তুতি চলছে। ছেলের জন্য নানান রকম রান্না করা চলছে পিসেমশাযের চিন্তা কানাডার বৌমা প্রথম দেখায় প্রণাম করবে, হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেবে, নাকি আবার ওদেশের রীতি মেনে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরবে! তেতলার দাদা জামা প্যান্ট পরে রেডি, বাবাকে বোঝাচ্ছে, আরে দাদা তো আছে, তুমি ঘাবড়াচ্ছ কেন। ওদিকে আবার রান্নাঘর জুড়েও প্রস্তুতি তুঙ্গে। ছেলের জন্য নানান রকম রান্না করা চলছে, পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে আপ্যায়ন না করলে চলবে! ওদিকে আবার চিন্তা পাঁঠার মাংস তো ঠিক আছে কিন্তু কানাডার লোকে পাকা রুইয়ের কালিয়া, আলু পটলের ডালনা, উচ্ছে ভাজা, বেগুন ভাজা এসব ঠিকমতো খাবে তো? আসলে এগুলো কান্টুদার খুব প্রিয় পদ ছিল তো।বাড়ির নিচে দুটো ট্যাক্সির হর্ন শোনা যেতেই বাড়িজুড়ে যেন হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠল। কেউ রান্নাঘরে ছুটছে, কেউ গ্লাসে করে জল নিয়ে আসছে আর বাকিরা সবাই মিলে সিঁড়ির দুধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে। ছেনুও মনে মনে উত্তেজনায় ফুটছে, এতদিনের গপ্পের চরিত্রদের সাথে আজ দেখা হবে! ওরা সমস্ত বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে উঠতেই সটান বরণডালা হাতে পিসিমার মুখোমুখি। বিয়ে অনেকদিন হতে পারে, কিন্তু এবাড়িতে তো প্রথমবার, বরণ না করলে চলবে! সাথে চলল বাড়ির বাকি মহিলাদের সমবেত উলুধ্বনি।কিন্তু এদিকে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের মন ভেঙে গেছে, ছবির সাথে বাস্তবের বিন্দুমাত্র যে মিল নেই! ছবিতে যে গুবলু গাবলু মিষ্টি দেখতে বিদেশি মেয়েটাকে দেখেছিল, সে কই? এ তো বেশ রোগা, চোখ বসে গেছে, আর গরমের দেশে এসে ঘেমেনেয়ে একসা। সাথে আবার দুটো বাচ্চা ছেলেও আছে, ছেনুর থেকে বয়সে বোধহয় একটু ছোটই হবে কিন্তু দেখতে পুরোদস্তুর সাহেব। তারা কী যে বলছে ছেনু কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে দেখল কান্টুদা কিছু একটা বলতেই টুক করে নিচু হয়ে পিসিমাকে প্রণাম করে ফেলল আর মুখে তাদের সারাক্ষণ হাসি লেগেই রয়েছে।বৌদিও ঢুকেই হাতজোড় করে সবাইকে নমস্কার করল, যা দেখে সবাই ইমপ্রেসড। প্রণাম টনামের পালা চুকিয়ে মালপত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে পিছনে দেখা গেল বিশাল বিশাল দুটো সুটকেস নিয়ে দাদা আর পিসেমশাই আসছে, পিসেমশাইয়ের মুখটা বেশ হাসি হাসি। আবার তার পিছনে দেখা গেল ছেনুর বড়দাও চলে এসেছে কান্টুদাদের জন্য প্রচুর সন্দেশ, রসগোল্লা, জিলিপি, সিঙাড়া, চমচম বাক্সভর্তি করে নিয়ে। কখন যে টুক করে এসব আনতে চলে গিয়েছিল, ছেনু টেরই পায়নি।তা সেসব সাজিয়ে দেওয়া হল প্লেটে করে। পিসেমশাই আবার বকাবকি করছে বড়দাকে, এত বেশি মিষ্টি টিষ্টি আনার জন্য, পিসেমশাইয়ের ধারণা সিঙাড়া, জিলিপি, এসব আনা উচিৎই হয়নি, এসব আনহেলদি খাবার ওরা ছুঁয়েও দেখবে না। কিন্তু কি আশ্চর্য! ওই বাচ্চা দুটো প্লেটের সবকিছু নেড়েচেড়ে দেখে প্রথমে সিঙাড়াটা ভেঙেই মুখে দিল। নতুন রকমের খাবার খেয়ে মুখ খুশিতে আরো উজ্জ্বল হয়ে বলে উঠল, বলে, ভেরি ভেরি টেস্টি, আই লাইক ইট! তা শুনে বড়দার আনন্দ আর দেখে কে! কান্টুদা ও একটু নিশ্চিন্ত হলো ওদের ভালো লেগেছে দেখে। শেষমেশ দেখা গেল, এখানকার খাবার দাবার সবারই পছন্দ হয়েছে, সাথে চামচ দিয়ে জিলিপি আর সিঙাড়া খাওয়ার কায়দা দেখে বাড়ির লোকেরা একটু মুখ টিপে হেসেও নিল।জলখাবার পর্ব মিটতে ওদের খাটে নিয়ে গিয়ে বসানো হল একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, এতটা পথ জার্নি করে এসেছে। দুটো বাচ্চার নামও জানা গেল, পিটার আর ম্যাক্স। পদবি অবশ্য ব্যানার্জি। তো খাওয়া দাওয়ার পর পিটারের বড় বাইরে পেয়েছে, দাদা দেখিয়ে দিল বাথরুম- ওই যে বারান্দার শেষ প্রান্তে। যাক, এই মুহূর্তের জন্যই বাথরুম ভালো করে চুনকাম করিয়ে অ্যাসিড ঢেলে খুবসে পরিষ্কার করা হয়েছে, অবশ্য তাতেও একটা খিঁচ রয়েই গেছে। এই বাড়ির বাথরুমে তো আর ইউরোপিয়ান কমোড নেই, পা ভাঁজ করা দেশি প্যান, সেটায় বসতে পারবে কিনা চিন্তার বিষয়। তবে দেখা গেল বিশেষ বেগ মানুষকে প্যান আর কমোডের পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামাতে দেয় না, ও দিব্যি ভালো ছেলের মতো কাজকর্ম সেরে ভেতরে না পেয়ে, বাইরে মাথা বাড়িয়ে টয়লেট পেপার চাইছে। তারপর দাদা গিয়ে বোঝাল, টয়লেট পেপারের কোনো ব্যবস্থা নেই, জলেই ধুতে হবে। ছেনু দেখল সে পড়েছে ভারি মুশকিলে, অবশেষে কান্টুদা ভিতরে গিয়ে ব্যাপারটা সামাল দেয়। এখানকার কায়দা দেখে বাচ্ছাটা তো অবাক! তবে ভালো ভাবেই মানিয়ে নিয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে।এরমধ্যে পিসেমশাই গেলেন রান্নাঘরে ব্যস্ত পিসিমাকে ডাকতে, চলো চলো, রান্না তো হয়েই এসেছে প্রায়, এবার একটু ধাতস্থ হয়ে ছেলের সাথে বসে দুটো কথা বলো। একবার দেখো ছেলে কিরকম ফুল সায়েব হয়ে গেছে, চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলছে, উফ্, শুনেও গর্ব হয়! পিসিমা হাতের কাজ সামলে ভীষণ উজ্জ্বল মুখ নিয়ে ঘরে গিয়ে বসলেন, কতো বড়ো হয়ে গেছিস রে, আসতে কষ্ট হয়নি তো?কান্টুদা বলে, নো নো নট অ্যাট অল। হাউ আর ইয়ু?শুনেই পিসিমা ভেবলে গেলেন, বলে কি? তারপর উনি যাই বলছেন কান্টুদা উত্তর দিচ্ছে ইংরেজিতে। আর পিসিমা আরো ঘাবড়ে যাচ্ছেন। শেষে পিসেমশাইকে হাঁক পাড়লেন, ওগো শুনছ, এসব কী বিড়বিড় করছে গো, ছেলে কি পাগল হয়ে গেল!অবস্থা বেগতিক দেখে কান্টুদা বলে উঠল, নো নো, আয়াম ফাইন। জাস্ট ফরগট হাউ টু টক ইন বেঙ্গলি, বাট আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইয়োর ওয়ার্ডস পারফেক্টলি। পিসেমশাই তখন এসে পড়েছিলেন, পুরো ঘটনাটা পিসিমাকে বোঝাতে, পিসিমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়তে লাগল। ছেনু পাশ থেকে ব্যাপারটা পুরো দেখছিল, এতক্ষণ কান্টুদা কী যে বলছিল সেও একবর্ণ বুঝতে পারেনি, কিন্তু পিসিমাকে কাঁদতে দেখে আর থাকতে পারলনা। দাদাকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে গো, পিসিমা কাঁদছে কেন! কান্টু দাদা কি পিসিমাকে বকেছে? দাদা আর পিসেমশাই ইংরেজি ভালোই বুঝত। দাদাই গোটা ঘটনাটা ছেনুকে বুঝিয়ে বলল, কান্টুদা আর বাংলায় কথা বলতে পারছেনা বলে পিসিমা খুব দুঃখ পেয়েছে।ব্যাপারটা শুনেও ছেনুও মনে খুব কষ্ট পেল, ভাবল দূর দূর, বিদেশ থেকে এসছো তো কি হয়েছে, যাও কথাই বলবোনা তোমার সাথে।ঘরে এসে দেখে ছোড়দা কী একটা কাগজ খুলে পড়ছে, ছেনু বলে এই শোন না, কানাডা কত দূরে রে?- অনেক দূর এখান থেকে, আমাদের হলো এশিয়া, তার পাশে ইউরোপ, তারপর আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে উত্তর আমেরিকার মধ্যে হলো গিয়ে কানাডা।- আমেরিকা মানে ওই দেশটা, যেটার ওপর তোর রাগ?- না উত্তর আমেরিকা একটা মহাদেশ, তার মধ্যে একটা দেশ আমেরিকা, তার পাশেই কানাডা।- যেখানেই হোক গে, একদম যাবি না কানাডায়, একদম যাবি না।ছোড়দা যারপরনাই অবাক হয়ে বলে, কেন কী হয়েছে কানাডায় গেলে? আর আমি খামোখা কানাডা যেতেই বা যাবো কেন?ছেনু ঠোঁট উল্টে বলে, ওখানে গেলেই তো সবাই বাংলা ভুলে যায়, বিচ্ছিরি দেশ!তবে ছেনু বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারলো না, একটু পরেই বদ্দি আর ছোদ্দির ডাক পড়ল পিসিমার ঘরে। ছেনুও পিছু পিছু গিয়ে দেখে, সেই সুবিশাল সুটকেসের একটা খোলা হয়েছে আর তার পেটের ভেতর কত্তো জিনিস। বদ্দি আর ছোদ্দির জন্য নকশাকাটা রঙিন কাঁচের শিশিতে করে কি একটা এনেছে। শিশির ওপরে একটু চাপ দিতে কি সুন্দর একটা গন্ধ বেরোলো। জিনিসটার নাম নাকি অডিকোলন, দুজনেই তো পেয়ে খুব খুশি (পরে একবার ওই শিশি কি ভেবে মা মাথাব্যথার ওষুধ হিসেবে মাথায় লাগাতে গিয়েছিল, মাঝে মধ্যে টুকটাক রাগ করলেও, বদ্দিকে ওইদিনের মতো অমন রেগে যেতে ছেনু কক্ষনো দেখেনি)। ছেনু সব বাইরে থেকেই দেখছিল। যদিও অন্য সময় পিসিমাদের ঘরে ছেনুর অবাধ যাতায়াত থাকে, তবে এখন তো ওকে ডাকেনি, কাছে যাবে কেন! মানসম্মান বলেও তো একটা জিনিস আছে না কি, মহারাজ বলে কথা। তবে ও বুঝতে পারল ওর কপালেও একটা দারুণ বিদেশি উপহার নাচছে। কারণ এ বাড়িতে তাকেই সবাই সবচে ভালোবাসে, দিদিদেরকে যদি এত সুন্দর জিনিস দেয়, তবে ওকে না জানি কি দেবে, ভেবেই ওর পেটের মধ্যে বুড়বুড়ি কেটে উঠল।ওই তো সুটকেস থেকে কি সুন্দর একটা জামা বের করছে, তবে বেশ বড়ই হবে ওর গায়ে। ওঃ, ওটা এনেছে কান্টুদার ভাইয়ের জন্য। এরপর বেরোল আর একটা কাঁচের বোতল , ওটা পিসিমার জন্য, পিসিমা সুগন্ধি খুব ভালোবাসে কিনা। এরপর একে একে বার হতে থাকল ছাতা, কলম, ব্যাগ, আরও কত কি। এক একটা জিনিস এক এক জনের জন্য। তারপর বেরিয়ে এল একটা বড়ো রঙচঙে টিনের গোলমতো বাক্স। ওমা! বাক্সটা কি সুন্দর দেখতে। একটা বরফের পাহাড়ের সামনে চকোলেটের ছবি। তাহলে এটা নিশ্চই বিদেশি চকলেটের বাক্স। যাক, এটাই তাহলে ছেনুর জন্য এনেছে। সত্যি কান্টুদার পছন্দের তারিফ না করে ছেনু পারে না। ওকি! বাক্সটা পিসেমশাইকে দিয়ে দিল কেন? আচ্ছা রাখতে দিল বোধহয়, পরে ওকে ডেকে দিয়ে দেবে, থাক যখন ডাকবে তখন আসবো, এখন আর দাঁড়িয়ে কাজ নেই।দুপুরে যখন কান্টুদারা খেতে বসল, সেও যেন এক দর্শনীয় বিষয়। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে গোল হয়ে দেখছে। বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, আলু ভাজা এসব খুবই পছন্দ হয়েছে বাচ্চাদের। সবকিছুই 'ডেলিশিয়াস' বলে হাসি মুখে খাচ্ছে চামচ দিয়ে। কান্টুদা হাত দিয়েই খাচ্ছে আর এটা ওটা করে ওদের খেতে সাহায্য করছে। জুলিবৌদি কান্টুদাকে ফিসফিস করে কি একটা জিজ্ঞেস করল, সম্মতি পেয়ে মাথা নেড়ে নিজেও হাত দিয়েই খাওয়া শুরু করল। পটলের ডালনা শুধু শুধু খেতে যাচ্ছিল, ডালটাও, কান্টুদা ভাতে মেখে খাওয়া দেখিয়ে দিল। মুশকিল হলো মাছের কালিয়া নিয়ে। বড় বড় পেটির মাছই দেওয়া হয়েছে কিন্তু না বুঝে বোনলেস ভেবে কামড় বসাতেই বিপত্তি। ঘটনা বুঝতে পেরে পিসিমা জলদি এসে কাঁটা গুলো টেনে বের করে দিলে, সবাই তৃপ্তি করে খেতে পারল। নতুন স্বাদের খাবার পেয়ে সবাই খুব খুশি, জুলিবৌদিও হেসে বলল, রিয়েলি আমেজিং ফুড। তা আবার পিসিমাকে রিলে করা হতে পিসিমার মুখে অবশেষে একটু হাসির রেখা দেখা গেল।এরপর আবার পাঁঠার মাংস খেয়ে সবারই পেট দমসম। কান্টুদা ছাড়া কেউ আর চাটনি খেতেই পারলো না। খাবার নিয়ে পিটার আর ম্যাক্সের আনন্দ দেখে পিসিমা পিসেমশাইকে শুনিয়েই দিলেন, কি গো তবে যে বলছিলে বাঙালি খাবার ওরা নাকি খেতে পারবে না!খাওয়া দাওয়ার পর পিসেমশাই বললেন, দাঁড়া বালিশ টালিশ সব পেতে বিছানা করে দিই, তোরা একটু গড়িয়ে নে। কান্টুদা শুনেই বলে, আরে না না, আমি হোটেল বুক করেছি তো! আসলে ওরা এখানে এডজাস্ট করতে পারবে কিনা ভেবে আগে থেকেই হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে রুম বুক করে রেখেছি। আর এইটুকু জায়গায় এতজন আঁটবেও না।অবশ্য পিসেমশাই এর মনের মেঘ আবার কেটে গেল পরদিন যেই ওরা আবার হই হই করে হাজির। আজ পিটার আর ম্যাক্স এর দাবি বাড়িটা তাদের ভালো করে ঘুরে দেখাতে হবে, এই বাড়িটা নাকি তাদের ভারি পছন্দ হয়েছে। তাদের কথায়, ভেরি নাইস হাউস, লাইক অ্যান ওল্ড ম্যানসন, ফিলস ভেরি চার্মিং। কান্টুদার ভাইই আজ গাইড, ওর পিছন পিছন পিটার আর ম্যাক্স লাফাতে লাফাতে চলেছে। কান্টুদার সুটকেস থেকে আজকে আবার একটা দারুণ জিনিস বেরিয়েছে - একটা ঝকঝকে ইয়াশিকা ক্যামেরা। ব্যাগের মধ্যে থেকে লেন্স বের করে তাতে এঁটে, ফিল্মের কৌটো থেকে ফিল্ম বের করে পরালো। সেই ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে এদিক ওদিক খচ খচ করে ছবি তুলছে আর মাঝে মাঝে জুলিবৌদিকে সব স্থান মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করছে। সাথে ছোড়দাকে নিয়ে ছেনুও তাদের পিছু ধরেছে, আরে হাজার হোক নিজের রাজত্বে বেড়াতে আসা বিদেশি অতিথিদের প্রতি মহারাজেরও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! ছাদে গিয়ে তো ওরা ভীষণ আনন্দিত। দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ওপর থেকে নিচের সবকিছু খুদে খুদে দেখাচ্ছে, দারুণ হাওয়াও দিচ্ছে। এমনকি তখন সেই ছাদের থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত দিব্যি দেখা যেত। ছাদেও কান্টুদা অনেক ছবি টবি তুলল। ছেনুর মনে হলো আহা, পিটার, ম্যাক্স আর জুলি বৌদির সাথে দাঁড় করিয়ে ওর ছবিও যদি একটা তুলত!তবে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেলেন যখন দেখলেন, তাঁর জন্যই উপহার হিসেবে নিয়ে আসা বিদেশি চকলেট বাক্স থেকে বের করে পিটার, ম্যাক্স আর পিসেমশাই দিব্যি আনন্দ করে খাচ্ছে। সোনালি রাংতা দেওয়া কি সুন্দর দেখতে গোল গোল চকলেটগুলো! সে দৃশ্য দেখে তিনি নিজেকে সান্তনা দিলেন, আসলে চকলেটগুলো শুধু তাঁর জন্য নয়, সবার খাওয়ার জন্যই আনা হয়েছে, ঠিকই তো, ভালো জিনিস সবাইকে দিয়ে থুয়েই খেতে হয়। পরে যখন পিসিমা ডেকে হাতে দেবে, তখনই খাওয়া যাবে না হয়।কান্টুদারা মোট দিনদশেকের মতো ছিল কোলকাতায়। তারই মধ্যে ঠিক হল, ওরা নাকি দার্জিলিং ঘুরতে যাবে। একবার এতদিন পর ভারতে আসা হয়েছে, কলকাতার বাইরেও দু একটা জায়গা একটু ঘুরে দেখে নেওয়াই ভালো। শুনে ছেনুর ভারি মনখারাপ হয়ে গেল, সবে দুজনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে হবে করছিল, তার মধ্যেই আবার ঘুরতে চলে যাবে। পাঁচ দিনের মধ্যেই অবশ্য ওরা আবার ঘুরেটুরে ফেরত আসতে বাড়িটা আবার হইচইয়ে ভরে উঠল। আর দুদিন পরেই কানাডায় ফিরে যাবে।কান্টুদাদের চলে যাওয়ার দিন তেতলার দাদা ছেনুকে ডাকতে এলো, যাবি নাকি প্লেন দেখতে? ছেনু তো শুনেই একলাফে রাজি। ছোড়দাকেও ডাকতে, ছোড়দা বললো আজ কলেজ আছে হবে না। যাই হোক, ছেনু মাকে বলে, একটা ভালো দেখে জামা পরে, পিসেমশাই আর দাদার সাথে রওনা দিল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে, দার্জিলিং থেকে ফিরে কান্টুদারা আবার ওখানেই উঠেছে, রাত্রে হোটেলে থাকত, আবার সকাল সকাল চান টান করে শেয়ালদায় চলে আসতো। হোটেলের লবি দিয়ে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে ছেনু লিফটে চড়ে ওদের ঘরের দিকে গেল। ঘরে ঢুকে দেখে ওরাও বেরোনোর জন্য তৈরি। সুটকেস টুটকেস হাতে নেওয়ার পর জুলিবৌদি পিটার আর ম্যাক্সের দিকে একবার তাকাতেই তারা তড়াক করে উঠে খাটের তলা, বাথরুম, আলমারি, টেবিলের ড্রয়ার কোথাও কিছু জিনিসপত্র পড়ে আছে কিনা সব খুঁজে দেখে ফেলল। ছেনু তো কাণ্ড দেখে তাজ্জব।যাই হোক হোটেল থেকে দুটো ট্যাক্সিতে চেপে ওরা সবাই দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল ঠিক সময়ে। ব্যাগপত্র চেকিং টেকিংয়ের পর এবার বিদায়ের পালা। ক'দিনেরই বা দেখা, তবুও ছেনুর গলায় যেন একটা মনখারাপ দানা বাঁধছিল। ওরা একসময় শেষবারের মতো হাতটাত নেড়ে ঘেরাটোপের মধ্যে হারিয়ে গেল। পিটার আর ম্যাক্সও অনেকক্ষণ ধরে হাত নাড়ছিল ওদের দিকে ফিরে ফিরে, মানে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল আর কি। ওরা চলে যেতে দুঃখ কাটাতে পিসেমশাই দুজনকে নিয়ে গেলেন প্লেনের নামা ওঠা দেখাতে। তখন টিকিট কেটে একটা ঘেরা বারান্দা মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে প্লেন দেখা যেত। ছেনু তো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনগুলো দেখে পুরো হাঁ। অবাক হয়ে দেখছে কত বড় বড় সব ডানাওলা বাস। জানলাগুলো সব এই পুঁচকে পুঁচকে লাগছে। ছেনু ভাবে এগুলো সব আকাশে ওড়ে কী করে? এতে চেপেই তো কান্টুদারা এসেছে! ওমনি দাদা আঙুল দিয়ে দেখাল দূউউরে একটা প্লেন মাঠের মধ্যে দৌড় লাগিয়েছে। যত এগোচ্ছে দৌড়ের বেগ বাড়ছে। এক সময় সামনের চাকাটা টুপ করে মাটি ছেড়ে আকাশে উঠে পড়ল।বাড়ি ফিরেও ছেনু ওদের কথাই ভাবছিল। এক সময় আর থাকতে না পেরে তেতলায় পিসিমার ঘরের দিকেই পা বাড়াল। গিয়ে দেখে পিসিমা কি সব সেলাই টেলাই করছে, সব ছুঁচ সুতো বের করেছে। পিসিমা ওকে দেখেই হেসে বললো কেমন প্লেন দেখলে বলো? ছেনু মাথা নাড়তেই পিসিমা বললো ওখানে একটা বাক্স রাখা আছে, আনো তো দেখি একবার। ছেনু তাকিয়ে দেখে সেই বিদেশি চকলেটের বাক্স। দৌড়ে গিয়ে তাক থেকে সেটা পিসিমার কাছে নিয়ে আসতে আসতেই ওর মনে একটা খটকা লাগল, এত হালকা কেন? তবে কি মাত্র অল্প ক'টা পড়ে আছে আর!পিসিমা বললো এনেছ, দাও তো। পিসিমা বাক্সটা খুলতেই ছেনু দেখে চকলেটের কোথায় কি, বাক্স বেবাক ফাঁকা! পিসিমা ছেনুকে বললো খেয়েছিলে তো চকলেট? কেমন লাগল? ছেনু বলে, কই না তো!- সে কি পিসেমশাই দেয়নি? আসলে চকলেট ভালোবাসে বলে বাবার জন্য এই চকলেটের বাক্সটা এনেছিল কান্টু। পিসেমশাই শুরুর থেকেই এমন টপাটপ খাচ্ছে, আমি বললাম দিও কিন্তু সবাইকে। তারপর খোকনও ওর বন্ধুদের কয়েকটা দিয়েছে। তারপর যে ক'টা পড়েছিল ওরা দার্জিলিং যাওয়ার সময় আমি সঙ্গে করে পাঠিয়ে দিলাম। ইসসস্ মাঝখানে যে তুমি বাকি পড়ে গেছ, এই দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আমি খেয়ালও করিনি। তারপর বাক্সটা ধুয়েমুছে সরিয়ে রেখেছিলাম ছুঁচসুতো রাখব বলে।ততক্ষণে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ আর ওখানে থাকলে তবে তো! তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে দোতলায় দৌড় মেরেছেন।পুনশ্চ: দুদিন পর আবিষ্কার হলো, কান্টুদা সেই দারুণ ইয়াশিকা ক্যামেরাখানা ভুলে এই বাড়িতেই ফেলে চলে গেছে। দার্জিলিং থেকে ফিরে রিল বদলাবে বলে বোধহয় সরিয়ে রেখেছিল, আর বের করা হয়নি। বাড়িতে ফটোগ্রাফি একমাত্র ছেনুর বড়দাই ভালো জানতো। তাই পিসেমশাই আর কি করবেন ভেবে না পেয়ে, সেই ক্যামেরা বড়দাকেই দিয়ে দিলেন। বড়দার হাত বেয়ে কালক্রমে সেই ক্যামেরাখানা বহুদিন পর মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের হস্তগত হয় ও তা দিয়েই পরবর্তীকালে তিনি দেদার ছবিছাবা তোলেন। মহারাজের সিন্দুকেরই কোনো এক কোণে সেই প্রাচীন ক্যামেরা, লেন্স টেন্স সমেত আজও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। তা বিদেশি চকলেটের বদলে বিদেশি ক্যামেরা - এই বা মন্দ কি!
    বিপ্লবের আগুন - পর্ব নয় - কিশোর ঘোষাল | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়৯ওরা চলে যেতে ভল্লা গ্রামের দক্ষিণ দিকে হাঁটতে শুরু করল। গ্রামের এদিকটা এখনও তার দেখা হয়নি। এদিকে বসত কম। বিচ্ছিন্ন কিছু আবাদি জমি, আর অধিকাংশই অনাবাদি পোড়ো জমি। ভল্লা হাঁটতে লাগল। অনেকক্ষণ চলার পর তার মনে হল, সে গ্রামের সীমা ছাড়িয়ে এসেছে। জনহীন প্রান্তর - কিছু বড় গাছপালা, ছোটছোট ঝোপঝাড় সর্বত্র। আরও কিছুটা গিয়ে তার কানে এল বহতা জলের শব্দ। অবাক হল – এমন রুক্ষ প্রান্তরে কোথা থেকে আসছে এই ক্ষীণ জলধ্বনি। এগোতে এগোতে ভল্লা ছোট্ট একটা নালার পাশে দাঁড়াল। পূব থেকে পশ্চিমে বয়ে চলেছে জলধারা। খুবই সামান্য – কিন্তু ভল্লার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথা থেকে আসছে, এই জলধারা? এ অঞ্চলে বর্ষা হয় সামান্যই – তাহলে কোন উৎসমুখ এই জলধারাকে সজীব রেখেছে এই মধ্য শীতেও। এই গ্রামের অবস্থান চিত্রটি সে মনে মনে চিন্তা করল কিছুক্ষণ। এই গ্রামে আসার সময় পাহাড়ের কোলে রাজপথের ধারে সেই সরোবর দেখেছিল। সেই রাজপথ থেকে অনেকটাই নিচে এই গ্রামের অবস্থান। আজ সকালে যে দীঘির ঘাটে সে বসেছিল, সেটি এই গ্রামের পূর্ব সীমানায় এবং তার পরেই রয়েছে খাড়া অনুচ্চ যে পাহাড়টি – তারই শীর্ষে রয়েছে রাজপথের সরোবরটি। আজ সকালে গ্রাম পরিক্রমণের সময় আরও কয়েকটি পুকুর সে লক্ষ্য করেছে। তাহলে ওই দুই সরোবর, ওই পুকুরগুলি এবং এই নালার উৎস কি একই? প্রকৃতির কি আশ্চর্য লীলা – সরোবর কিংবা পুকুরগুলি কখনো প্লাবিত হয় না, কিংবা জলহীনও হয় না। ওগুলিকে সম্বৎসর পরিপূর্ণ রেখে উদ্বৃত্ত জলরাশি প্রবাহিত হয় এই নালাপথে! বর্ষায় হয়তো এই নালার প্রবাহ গতি পায়। ভল্লা আশ্চর্য হল। সে নালাপথের উজান বরাবর এগিয়ে চলল পূর্বদিকে। লক্ষ্য করতে করতে চলল নালার এপাশের জমির প্রকৃতি, গাছপালা ঝোপঝাড়। ভল্লার কৃষিকাজে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। তবু রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে যেটুকু সে দেখেছে, তার মনে হল, আপাত অনুর্বর এই জমিকেও কৃষিযোগ্য করে তোলা সম্ভব। একটু পরিশ্রম করলে, এই নালার জল কৃষিকাজে সম্বৎসর ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রায় ক্রোশার্ধ হেঁটে সে পৌঁছল গ্রামের পূর্বসীমানার সেই পাহাড়তলিতে। এই জায়গাতেই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা একটি শীর্ণ জলধারা সমতলে নেমেছে। এই জায়গায় জলধারা কিছুটা বিস্তৃত, বড়ো বড়ো কিছু পাথর আর নুড়ির মধ্যে দিয়ে পথ করে কিছুদূর বয়ে গেছে। তারপরেই শুরু হয়েছে শীর্ণ নালা প্রবাহ। ভল্লা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করল, আশপাশের জমি-জায়গা। তার মনে হল, এই সব পাথর-নুড়ি আর মাটি দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব দুর্বল বাঁধ। তার উজানে বানিয়ে তোলা যেতে পারে ক্ষুদ্র জলাধার। এই স্থানটির অবস্থান যেহেতু একটু উঁচুতে, অতএব ওই জলাধার থেকে কৃত্রিম নালি কেটে জলকে চারিয়ে দেওয়া যেতে পারে সংলগ্ন নাবাল জমিগুলিতে। নিষিক্ত জমিতে চাষ করা যেতে পারে কিছু কিছু উপযোগী ফসল। ভল্লা দক্ষ সৈনিক, তীক্ষ্ণবুদ্ধি গুপ্তচর। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সে জানে, একটি গ্রামের সকল অধিবাসীকে কখনও উত্তেজিত করা যায় না। কতিপয় মানুষ বিদ্রোহী হয়। ভল্লা জানে এই গ্রামেরও নির্বিবাদী অধিকাংশ মানুষ হয় উদাসীন থাকবে, নয়তো ক্ষুব্ধ হতে থাকবে ভল্লার ওপর। বিদ্রোহী ছেলেদের বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমা পরিজন সকলেই ভল্লার ওপর ক্রুদ্ধ হতে থাকবে, তাদের ছেলেদের “মাথাগুলি চিবিয়ে খাওয়ার” জন্যে। সেই ক্রোধ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে, গ্রামের অর্থনৈতিক কিছু উন্নতির দিশা দেখাতে পারলে। সামান্য হলেও, ওই জলাধার এবং উদ্বৃত্ত কিছু ফসলযোগ্য জমির সৃজন, বাড়িয়ে তুলবে ভল্লার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা। সন্ধ্যার কিছু আগে ভল্লা আগের জায়গাতেই ফিরে এল। সূর্য অস্ত গেলেও পশ্চিমদিগন্তে তার আলোর রেশ এখনও রয়েছে। বড়ো গাছের নিচে বসতে গিয়ে দেখল, তিনজন ছোকরা মাটিতে শুয়ে আছে। হাপরের মতো ওঠানামা করছে তাদের বুকগুলো। ভল্লা খুশি হল, কিন্তু চেঁচিয়ে ধমক দিল তিনজনকেই। বলল, “দৌড়ে এসে হাঁফাচ্ছিস, কিন্তু শুয়ে শুয়ে হাঁফাচ্ছিস কেন? একজায়গায় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাঁফানো যায় না? ওঠ, উঠে বস। এতক্ষণের পরিশ্রমে পুরো জল ঢেলে দিলি, হতভাগারা”। ভল্লার কথায় তিনজনেই উঠে বসল এবং হাঁফাতে লাগল। ভল্লা বলল, “ধর শত্রুপক্ষের তাড়া খেয়ে, এ অব্দি নিরাপদেই এসেছিস। কিন্তু এরপর কী করবি?”“ওফ্‌। আগে একটু শ্বাস নিতে দাও ভল্লাদাদা”।ভল্লা আবারও ধমকে উঠল, “না, শ্বাস নিতে হবে, তার সঙ্গে ভাবনা চিন্তাও করতে হবে”। এই সময় আরও পাঁচজন ছেলে পৌঁছল। ভল্লা বলল, “বাঃ, প্রথম দিনেরপক্ষে ভালই – চল আমরা এসসঙ্গে নামতা বলি...এক এক্কে এক, এক দুগুণে দুই...জোরে জোরে চেঁচিয়ে...সবাই একসঙ্গে”। সন্ধের আগেই বাইশ জন এসে পৌঁছল, আরেকটু পরে পৌঁছল আরও বারো জন। সকলে একটু ধাতস্থ হতে ভল্লা বলল, “বিয়াল্লিশ জন ফিরেছিস দেখছি, বাকিরা?”“ওরা সরোবর অব্দি গিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নামেনি, ফিরে আসছে গ্রামের পথেই”। ভল্লা হাসল, “এরকম রোজ দুবেলা দৌড়তে পারবি? খুব ভোরে আর আজকের মতো বিকেলে?” “পারবো”। “ঘোড়ার ডিম পারবি। কাল সকালে গায়ের ব্যথায় উঠতেই পারবি না। বোনকে দিয়ে গা-হাত-পা টেপাবি”।“পারবো”। কেউ কেউ বলল, কিন্তু তাদের গলায় আগেকার সে জোর নেই। ভল্লা হাসল, “কাল সকালে পায়ে, গায়ে, কাঁধে ব্যথা হবে। হবেই। কিন্তু কালকেও দৌড়তেই হবে, আজকের মতো এত তাড়াতাড়ি না হলেও – হাল্কা ছন্দে। একটু দৌড়লেই দেখবি – গায়ের ব্যথা কমে যাবে – কষ্ট কমে যাবে। আর দৌড়তে দৌড়তেও ভাববি, চিন্তা করবি – যা খুশি, যা তোর মন চায়। মনে রাখিস দৌড়লে আমাদের সর্বাঙ্গের পেশীর শক্তি বাড়ে। শক্তি বাড়ে আমাদের ফুসফুসের, আমাদের হৃদয়ের। কিন্তু মস্তিষ্ক? তার কী হবে? ভয়ংকর পরিশ্রমের মধ্যে, প্রচণ্ড আতঙ্কে, ভীষণ ক্লান্তিতেও আমাদের মাথা যেন কখনো অলস না থাকে। কোন কিছু না পেলে আমাকেই খুব গালাগাল দিবি। ভাববি কি কুক্ষণেই না ভল্লাদাদার কাছে গিয়েছিলাম। শয়তান লোকটা আমাদের সবাইকে খাটিয়ে মারছে, আর নিজে বসে বসে শুধু উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। ও হ্যাঁ, কাল সকালে আমিও তোদের সঙ্গে দৌড়বো। কমলিমায়ের যত্নে শরীরটা বড়ো অলস হয়ে উঠেছে – সেটাকে আবার চাঙ্গা করতে হবে”। অন্যদিনের তুলনায় আজ বাড়ি ফিরতে একটু দেরিই হল জুজাকের। কমলি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন – বারবার বেরিয়ে বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে গলা বাড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন, মানুষটা আসছে কিনা। আজ অমাবস্যা। দুপাশের গাছপালা, ঝোপঝাড়ে গভীর অন্ধকার। তারার আলোয় পথটাকেই অস্পষ্ট ঠাহর করা যায়। পথের প্রেক্ষাপটে মানুষের অবয়ব বুঝতে পারা যায়। কমলির উদ্বেগ বাড়ছিল, জুজাক গ্রামপ্রধান ঠিকই, তবে তিনি শুনেছেন রাজধানী থেকে আসা রাজকর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামপ্রধানকে সমীহ করে না। তারওপর জুজাক কিছুটা মুখফোঁড় বদরাগীও বটে। আধিকারিকদের কোনো তির্যক প্রশ্নের ব্যাঁকা উত্তর দিয়ে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে তার জুড়ি নেই। তার এই স্পষ্টবাদী সরল চরিত্রের জন্যেই গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে গ্রামপ্রধান বানিয়েছে। জুজাকের জন্য একদিকে কমলি যেমন গর্ব অনুভব করেন, অন্যদিকে ততটাই শঙ্কিতও থাকেন সর্বদা। তিনি জানেন দিনকাল বদলে চলেছে নিরন্তর। অপ্রিয় সত্যকথা কেউই সহ্য করতে পারে না। প্রশাসনিক আধিকারিকরা তো নয়ই। আজ অন্য আরেকটি বিষয়ও কমলির দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ভল্লা। আজ গ্রামে সকলের সামনে সে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে তার অপরাধের কথা। তার নির্বাসন দণ্ডের কথা। রাজকর্মচারীদের কাছে কী সে সংবাদ পৌঁছে গিয়েছে? যদি তারা জেনে গিয়ে থাকে ভল্লা জুজাকের ঘরেই আশ্রয় পেয়েছে। এই ঘরেই সে চিকিৎসা এবং সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। সেটা কি তারা রাজদ্রোহীতা বলে মনে করবে? জুজাককে শাস্তি দেবে? কশাঘাত করবে? কিংবা বন্দী করে রক্ষীদের দিয়ে শারীরিক অত্যাচার করবে?হতভাগা ছেলেটা গেলই বা কোথায় কে জানে? নিজের ঘরে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে “আমি একটু ঘুরে আসছি, মা” বলে বেরিয়েছিল শেষ দুপুরে। এখনও পর্যন্ত তারও দেখা নেই। ঘরে থাকলে, একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে আসতে পারত ছেলেটা। জুজাকের সঙ্গে যারা গিয়েছিল তাদের বাড়ি গিয়েও খবর আনতে পারত। বলা যায় না, জুজাক হয়তো, তাদের কারো বাড়িতে বসে জমিয়ে গল্প করছে। লোকটার কাণ্ডজ্ঞান ওরকমই। তার জন্যে ঘরে যে কেউ উৎকণ্ঠায় বসে আছে, সে কথা তার মনেই পড়ে না। ঘরবার করতে করতে কমলি লক্ষ্য করলেন, তুলসীমঞ্চের প্রদীপে তেল ফুরিয়ে এসেছে, সলতেটা ম্লান হয়ে জ্বলছে। দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে রেডির তেল এনে প্রদীপে ঢাললেন, সলতেটা একটু উস্কে দিলেন। আর তখনই বেড়ার দরজা খোলার শব্দ হল, চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, জুজাক ঢুকছেন। “এত রাত হল? কিছু গোলমাল হয়নি তো?”জুজাক কোন উত্তর দিলেন না, ঘোঁত করে নাকে শব্দ করে, দাওয়ায় বসলেন। কমলি দৌড়ে গিয়ে ঘটি করে পা ধোয়ার জল আনলেন। ঘর থেকে নিয়ে এলেন জুজাকের গামছাখানা। জুজাক ঘটির জলে পা ধোয়া শুরু করতে, কমলি বললেন, “কিছু বললে না, তো? এত দেরি হল কেন?”দুই পা ধুয়ে, গামছা দিয়ে ধীরেসুস্থে পা মুছতে মুছতে জুজাক বললেন, “গাঁয়ে ফিরেছি অনেকক্ষণ। ও পাড়ায় ঢুকতেই লোকজনের মুখে তোমার ছেলের গুণকীর্তন শুনছিলাম। তুমি শুনেছ?”“শুনেছি”।“তা আর শুনবে না? তোমার আদরের ছেলের জন্যে কাছারিবাড়িতেও আমাকে কত কথা শুনতে হল। খাবার জল দাও তো”। কমলি ঘর থেকে খাবার জল এনে দিলেন। “কী বলেছে তারা?”জুজাক মাটির ঘটি হাতে তুলে নিয়ে নিঃশেষ করলেন ঘটিটা। তারপর তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, “হবে আর কী? গিয়েছিলাম কান্নাকাটি করে এ গ্রামের মানুষদের কিছুটা কর যদি কমানো যায়। অন্ততঃ সম্বৎসর সকলের পেটটা যাতে চলে যায়। সে কথায় কানই দিল না? বললে, ভল্লা তোমার বাড়িতে আছে? বললাম, আছে। বললে, একজন অপরাধী – যার রাজধানীর প্রশাসন থেকে নির্বাসন দণ্ড ঘোষণা হয়েছে। তাকে তুমি বহাল তবিয়তে খাওয়াচ্ছো, দাওয়াচ্ছো, চিকিৎসা করাচ্ছো। আর রাজার কর দিতেই তোমার নাকে কান্না শুরু হয়ে গেল?”কমলি উদ্বেগের স্বরে বললেন, “কী অবস্থায় ছেলেটা এসেছিল তুমি বললে না?”জুজাক একটু ঝেঁজে উঠে বললেন, “বলব না কেন? সবই বলেছি”। তারপর একটু থেমে নরম স্বরে বললেন, “ওরা রাজ কর্মচারী। তাদের কাছে ভল্লার পরিচয় অপরাধী। সে আর মানুষ নয়, জন্তু। ওদের কথা, ঘেয়ো কুকুরের মত যেভাবে এসেছিল, সেভাবেই ওকে তাড়িয়ে দিইনি কেন? জগৎটা তোমার মতো মায়ের মন নিয়ে যে চলে না, কমলি”।কমলি জুজাকের সহানুভূতির সুরে আশ্বস্ত হলেন। মানুষটাকে ওপরে ওপরে কঠোর মনে হলেও, মনটা নরম। তা যদি না হত, জুজাক জোর করেই ভল্লাকে তাড়িয়ে দিতে পারতেন। তৎক্ষণাৎ না হলেও, যেদিন ভল্লার প্রথম জ্ঞান হল, সেদিনই। আজকে রাজ-প্রতিনিধির যে তিরষ্কার তিনি শুনে এলেন – এমন যে হবে সেকথা জুজাক বহুবার বলেছেন। বারবার বলেওছেন, হতভাগাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেব – কিন্তু দিতে পারেননি। মানবিক বোধের কাছে তার বাস্তব যুক্তি হার মেনেছে। কমলি জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু ওদের কাছে এ খবর পৌঁছে দিল কে? নিশ্চই এই গাঁয়েরই কেউ?”“সে তো বটেই। সব গ্রামেই ওদের গুপ্তচর থাকে। তাদের কাজই তো ওদের খবর দেওয়া। সে যাক, ছোঁড়াটাকে ডাক দেখি একবার”।“সে তো সেই দুপুরের দিকে বেরিয়ে গেছে, এখনও ফেরেনি”।“কোথায় গিয়েছে তোমাকে বলেও যায়নি? আশ্চর্য। কবিরাজদাদার বাড়িতে আমরা বেশ কয়েকজন কথাবার্তা বলছিলাম। সেখানে শুনলাম, সকালে ভল্লার বক্তৃতা শুনে কয়েকজন ছোকরা নাকি বেশ বিগড়ে গেছে। দুপুরের পর থেকেই তারাও বাড়িতে নেই। তবে কি...”।কমলি আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “তবে কি গো? ওই ছোঁড়াগুলো কি ভল্লাকে মারধোর করবে?”জুজাক হেসে ফেললেন কমলির সরলতায়, বললেন, “মেয়েদের লাঞ্ছনা রোধ করতে গিয়ে সে অপরাধী হয়েছে। রাজ-প্রশাসন লম্পট মানুষটাকে শাস্তি না দিয়ে, সাজা দিয়েছে ভল্লাকে। এ গাঁয়ের ছোকরাদের চোখে ভল্লা এখন বীর-নায়ক। কবিরাজদাদা বলছিলেন, ভল্লা বোধ হয় ছোকরাদের নিয়ে একটা দল গড়তে চাইছে”।কমলি অবাক হয়ে বললেন, “কিসের দল?”জুজাক আবার একটু ঝেঁজে উঠলেন, বললেন, “তার আমি কী জানি? তোমার মনে আছে, কবিরাজদাদা ওর শরীরের লক্ষণ দেখে বলেছিলেন, ভল্লা সাধারণ এলেবেলে ছেলে নয়। যথেষ্ট শক্তিশালী যোদ্ধা। আরও বলেছিলেন, ওই চরম অসুস্থ অবস্থায় ওর এখানে আসাটা হয়তো আকস্মিক নয়। হয়তো গোপন কোন উদ্দেশ্য আছে। আজকে সকলের সামনে কবিরাজদাদা সে প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু আমারও এখন মনে হচ্ছে কবিরাজদাদার কথাই ঠিক”।কমলি কিছু বললেন না। হাঁটুতে থুতনি রেখে গভীর চিন্তা করতে লাগলেন, ভল্লাকে দেখে কই আমার তো তেমন কিছু মনে হয়নি। এ গ্রামে আসা থেকে আমি তাকে যত কাছে থেকে দেখেছি, আর কে দেখেছে? তার কথাবার্তায়, তার মা ডাকে কোথাও কোন উদ্দেশ্যর সন্ধান তো তিনি পাননি। আজকে গ্রামের সবার সামনে মন খুলে নিজের অপরাধের কথা যে ভাবে সে স্বীকার করেছে, তার মনে যদি সত্যিই কোন পাপ বা অপরাধ বোধ থাকত, পারত ওভাবে বলতে?জুজাক বললেন, “খাবার বাড়ো, খেয়ে শুয়ে পড়ি”।কমলি তাড়াতাড়ি উঠে খাবার আনতে ঘরে ঢুকলেন। সেদিকে তাকিয়ে জুজাক বললেন, “তোমার ছেলে যত রাতই হোক বাড়িতে তো ঢুকবেই। তুমি ছাড়া তার জন্যে কে আর রাত জেগে খাবার কোলে বসে থাকবে? এলে বলে দিও, সামনের অষ্টমীতে ওকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে কাছারি শিবিরে যেতে হবে। বলে দিও, না গেলে ওর তো বিপদ হবেই, আমাদেরও রক্ষা থাকবে না”।ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    বকরি ঈদের শুভেচ্ছা!  - sadequzzaman sharif | ছোটবেলায় কোন ক্লাসের বইয়ে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর লেখা একটা ছোট গল্প ছিল, নাম হচ্ছে পুটু। পুটু হচ্ছে একটা ছাগলের নাম, যাকে খুব যত্ন করে ছোটবেলা থেকে লালন পালন করে বড় করা হয়। কুরবানি ঈদে এবার তাকে কুরবানি দেওয়া হবে। খুব মায়া পরে যাওয়ায় ছোট থেকে বড় সবার জন্যই কঠিন হয় পুটুকে কুরবানির সিদ্ধান্ত নেওয়া। শেষ পর্যন্ত আর পুটুকে কুরবানি দেওয়া হয় না। স্বস্তি নিয়েই গল্পটা শেষ হয়। এই গল্পের গল্প বললাম ভিন্ন একটা কারণে, ইব্রাহিম খাঁ এই গল্প কবে লিখেছিলেন জানি না। এই গল্পে সম্ভবত তিনি কুরবানির ঈদকে বকরি ঈদ বলে উল্লেখ করেছেন। এতো দিন পরে আসলে ঠিক মনে নাই। তবে এই গল্প ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় কুরবানি ঈদকে বকরি ঈদ লিখতে দেখেছি। বকরি ঈদ বলাটা এক সময় তাহলে খুব স্বাভাবিক ছিল। কবে কীভাবে যেন বকরি ঈদ আর থাকে নাই। খাসি দিয়ে কুরবানি হয় কি না এইটাও এক সময় ভাবছি! অথচ ধর্মে কোন বাধা নাই। ধর্মে কুরবানির কথা বলা হয়েছে কয়েকবার। প্রথম কুরবানির কথা বলা হয়েছে প্রথম মানুষ আদমের দুই ছেলের গল্পে। দুই জন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানির সিদ্ধান্ত নেয়। একজন দেয় বকরি কুরবানি, দ্বিতীয়জন দেয় শস্য ফলমূল। আল্লাহ প্রথম জনের কুরবানি কবুল করেন। কিন্তু কেন দ্বিতীয়জনের কুরবানি কবুল হল না এই প্রশ্ন যখন আসে তখন আল্লা বলেন তার অন্তর ঠিক ছিল না। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কে কেন কুরবানি দিচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে কবুল হওয়া না হওয়ার বিষয়। এই কুরবানি গল্প মতে আপনি শস্য ফলমূল দিয়েও কুরবানি দিতে পারবেন। কারণ আল্লাহ দ্বিতীয়জনের কুরবানি এই জন্য কবুল করেন নাই যে সে ফলমূল দিয়েছিল, কবুল হয় নাই কারণ তার অন্তর ঠিক ছিল না। আমাদের দেশে সবাই আরবকে প্রায় হুবহু অনুসরণ করতে চায়। ধর্ম আর সংস্কৃতি আলাদা করতে চায় না। যে ঘটনার কারণে মুসলিমরা কুরবানি দিয়ে থাকে, সেই নবী ইব্রাহিমের ঘটনা থেকে, সেখানে তো তিনি দুম্বা কুরবানি দিয়েছিলেন, তাহলে এই ক্ষত্রে হুবহু কেন অনুসরণ করা হয় না? আমি জানি না। উল্টা শুনলাম এই অঞ্চলে না কি গরু কুরবানি দেওয়ার জন্য হিন্দু জমিদাররা নানান অত্যাচার করেছে! কিন্তু গরুই কেন দিতে হব এইটার উত্তর কেউ জানে না। যে উত্তরটা সহজে মাথায় আসে তা হচ্ছে মাংস খাওয়া! একটা গরু কুরবানি দিলে প্রচুর মাংস খাওয়া যাবে, সবাই মিলে খাওয়া যাবে! কুরবানির মূল অর্থ গোল্লায় গেলেও সমস্যা নাই। পশু না দিয়ে ফলমূল কুরবানি! এখন এই কথা বললে পাগল বলতে পারে মানুষ। এখন মানুষ মনে করে কুরবানি কবুল হওয়ার শর্ত হচ্ছে হাতির মতো একটা গরু কুরবানি দেওয়া! এবার ঢাকার বাজারে শুনলাম পাঁচ কোটি টাকা হাঁকছে একটা গরুর দাম! এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে মুক্তি মিলবে? কবে থেকে কে জানে একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। গরুই দিতে হবে এবং এমন গরু দিতে হবে যেন দুই একজন দাঁত লেগে পড়ে যায় খাড়া থেকে! এই প্রতিযোগিতার শেষ কী? কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে রক্ত মাখা চাকু নিয়ে আস্ফালন, ফেসবুকে লাইভ কুরবানির প্রদর্শনী, এবং কুৎসিত ভাবে মাংস কাটাকাটি করার কাজ প্রদর্শন। কেন? অথচ আমাদের ভিতরে যদি একটু শ্রদ্ধাবোধ থাকত ভিন্ন ধর্মের প্রতি তাহলে ঈদের এই উৎসবে সহজেই সবাই অংশ নিতে পারত। কিন্তু দিনদিন যেন কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। কুরবানির ঈদ যেন নগ্ন হয়ে আক্রমণ করা হয় ভিন্ন ধর্মালম্বিদের। রাস্তাঘাট রক্তে সয়লাব! একটু বিচক্ষণ হলে এগুলা থেকে সবাইকেই রক্ষা করে চলা সম্ভব। কিন্তু ওই যে বললাম, সংখ্যাগুরুর দম্ভ! নগ্ন প্রদর্শনী চলে! বকরি ঈদে ফিরে যেতে পারলে অনেক কিছুই অনেক সহজ হয়ে জেত, কিন্তু আমরা তো জেদ করে বসে আছি যে কোনমতেই এক বিন্দু ছাড় দিব না। কুরবানির প্রকৃত উদ্দেশের সাথে বর্তমান কুরবানির কোন মিল নাই। মাংস খাওয়ার উৎসব। এবং বাংলাদেশে তা হচ্ছে গরু খাওয়ার উৎসব। সহিষ্ণু আচরণ এখন আর দেখা যায় না, আশাও করা সম্ভবত বোকামি। কিন্তু আমার তো রক্ষা নাই, আমাকে আশার কথা বলেই যেতে হবে, আমাকে বিশ্বাস করতে হবে মানুষ একদিন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে। মানুষ নিজের চিন্তা করার আগে ভাববে যে কাজটা করতে যাচ্ছি তা অন্য আরেকজন কীভাবে দেখছে, তার কেমন লাগছে? সংখ্যাগুরুর দায়িত্বও যে বেশি এইটা বুঝবে একদিন। এই বিশ্বাস, এই আশাবাদ যদি মরে যায় আমার তাহলে হয়ত দম বন্ধ করেই মরে যেতে হবে আমাকে। শুভ হোক, সুন্দর হোক সকলের ঈদ। ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।   
    কি কিনি, কেন কিনি  - সুকান্ত ঘোষ | ছোটবেলায় একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনতাম, নানা প্রসঙ্গে – “সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র”।  এখন আর ততটা শুনি না। কেন শুনি না তার নানা কারণ হতে পারে – আমাদের সত্যিই অগ্রগতি হচ্ছে সমাজ হিসেবে যেখানে শুধু সৌন্দর্য্য দিয়ে আমরা কারো যোগ্যতা বিচার করছি না; বা আমি সমাজের একাংশ যেখানে ‘মনে যাহা আসে বলে ফেল’ থেকে সরে এসে সমাজের একাংশের সাথে সময় কাটাচ্ছি যেখানে ‘পটিলিক্যালি কারেক্ট’ কথাবার্তা বলা একটা আবশ্যিক অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়; বা ‘ডাইভারসিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’ ব্যাপারটিতে আমরা অনেকেই সচেতন হয়ে পড়ছি, সে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাপারটাকে তত গুরুত্বপূর্ণ মনে করুক বা না করুক। তাহলে তো মনে হতেই পারে এবার যে – যাক আমরা তাহলে যুগের সাথে বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের উপর আমাদের যে পক্ষপাত তার থেকে বেরোতে পেরেছি।  মানুষকে তার যোগ্যতা দিয়েই কেবল বিচার করছি।  হ্যাঁ, এটা হয়ত ঠিক যে যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে, সেখানে আমরা অনেক সচেতন হয়ে পড়েছি – কিন্তু একই কথা কি বলতে পারি যখন সেই আমরাই কেবলমাত্র ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিই ব্যক্তিগত কাজের জন্য?মোটামুটি ভাবে এর উত্তর হল – না।  সুন্দর জিনিসের প্রতি পক্ষপাতের উর্দ্ধে আমরা পুরোপুরি উঠতে পারি নি। সচেতন হয়েছি ঠিক, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক, আমাদের অভিযোজন – আমাদের অবচেতনে সুন্দরের প্রতি পক্ষপাতের বীজ খুব গভীর ভাবে পোঁতা হয়ে আছে।  অনেকেই বুক বাজিয়ে বলবেন, আমি এই সবের উর্দ্ধে।  কিন্তু প্রচুর সংখ্যক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আছে যে প্রমাণ করেছে, আমরা প্রায় কেউই সেই পক্ষপাতের উর্দ্ধে নই।  আসলে আমরা অনেক সময় টেরই পাই না যে কি ভাবে আমাদের মস্তিষ্ক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের চালিত করেছে।মানুষের সুন্দরের প্রতি এই পক্ষপাতের দিকটা বলাই বাহুল্য অনেকে নানা ভাবে ব্যবহার করেছে – সবচেয়ে বেশী মনে হয় হয় ব্যবহার করেছে বিজ্ঞাপনদাতারা এবং কনজিউমার মার্কেট।  এদের থেকে বেশী কেউ আমাদের ম্যানুপুলেট করে নি – কারণ বাকি সবার থেকে এরা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জানে যে মানুষের সৌন্দর্য্য কিভাবে আমাদের সাথে কৌশলের খেলা খেলে – যুগ যুগ ধরে, বারেবারে।  এরা জানে আমরা কিভাবে সুন্দর শিশুর মুখের দিকে একটু বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকি, পুরানো দিনে স্লাইডের ব্যবহারের থেকে কেউ পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করলে তাকে একটু বেশী এগিয়ে রেখেছি ইত্যাদি।আমরা ধরে নিই বা মনে করি আকর্ষণীয় মানুষেরা বেশী বুদ্ধিমান, বেশী সৎ, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ – মানে সাধারণ জনতার সাথে এরা সব ব্যাপারেই এগিয়ে।  যদি বাকি সব কিছু কাছাকাছি স্তরের হয়, তাহলে আমরা এখনও যে সুন্দর দেখতে তাকে বেছে নিই কিছু প্রেজেন্ট করার জন্য; এক ওভার বাকি আছে টেষ্ট ম্যাচ শেষ হতে, একটাই উইকেট - কে ব্যাট করবে আমার হয়ে; কে প্লেনে খাবার সার্ভ করবে আমাদের, এমনই পাইলটকেও। এবার ব্যাপার হল আমি উপরে যা লিখলাম তা আপনি বিশ্বাস নাও করতে পারেন।  যদি বলি এগুলো শুধু আমার মত নয়, এই নিয়ে অনেক স্টাডি হয়েছে – এবং যা লিখলাম তা স্ট্যাটিসটিকস এর উপর ভিত্তি করে, তাহলেও আমাদের অনেকের কাছে উত্তর রেডি আছে, “দেয়ার আর লাইজ, ড্যাম লাইজ, অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস”।  মানে স্ট্যাটিসটিকস ব্যবহার করে যা কিছু চাও তাই প্রমাণ করা যায়।কিন্তু এটা সত্যি নয়।  স্ট্যাটিসটিকস কোন ক্ষেত্রেই মিথ্যে বলে না যদি তা ঠিক মত ব্যবহার করা হয়।  আর এই ক্ষেত্রে মিথ্যে তো নয়ই। কেন নয় সেই সব বিস্তারে এখানে লেখার সুযোগ নেই।  শুধু বলি, যাঁরা ওই গবেষণাগুলির স্ট্যাটিসটিকস এ বিশ্বাস করেন নি, বা সৌন্দর্য্যের উপর আমাদের পক্ষপাতের ব্যাখায় – তাঁদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – ঠিক আছে, এই ব্যখ্যা মানতে হবে না।  তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে আপনি ওই বিশেষ ব্যক্রি বা বস্তু পছন্দ করেছিলেন?তার উত্তর এসেছিল – “ইট জাষ্ট ফেল্ট রাইট”এর পরে আসবে কোটি টাকার প্রশ্ন, সুন্দর সুন্দর বলে তো হইচই করছ।  আমাদের কাছে আসলে সুন্দর তাহলে কি? তোমার কাছে যা সুন্দর, আমার কাছে তো তা সুন্দর নাও হতে পারে!এই নিয়েও গুচ্ছ গুচ্ছ গবেষণা বা লেখাপত্র আছে।  অবশ্যই আমার কাছে যে সুন্দর তা আপনার কাছে নাও হতে পারে।  কিন্তু একটা জেনেরিক ব্যাপার আছে, যা আমাদের মস্তিষ্কে প্রোথিত আছে আমাদের বেড়ে ওঠা, আমাদের অভিযোজন এদের সাথে।  কেন সুন্দর না ব্যাখ্যা করতে না পারলেও, সুন্দর তা আমাদের মস্তিষ্ক মনে নেয়।  যেমন, ঐশ্বর্য্য রাই সুন্দর এটার সাথে দ্বিমত হবে এমন খুব বেশী মানুষ পাবেন না – যদিও প্রায় আমরা অনেকেই ব্যাখ্যা করতে পারব না যে ওকে সুন্দর বলছি কেন!এগুলো আরো জটিল হয়ে ওঠে গভীরে গেলে – ছোটবেলা থেকে আমরা শিখে আসি যে সুন্দর জিনিস আমাদের জন্য ভালো।  এই জন্যই দীর্ঘ সময় হিন্দী সিনেমার (বা অন্য সিনেমাতেও) ভিলেনরা বিশেষ একধরণের দেখতে বা বিশেষ এক ধরণের ব্যবহারের স্টিরিওটাইপ হত বা এখনও হয়।  আমাদের মস্তিষ্কে প্রোথিত আছে যে ধারালো, ছুঁচালো, অমসৃণ, বিবর্ণ – এমন সব জিনিস সব বিপদজনক হতে পারে – আর অন্যদিকে মসৃণ জিনিস হল নিরাপদ।  তাই মসৃণ ত্বকের মানুষের মুখের উপর আমাদের নজর এবং পক্ষপাত বেশী যায়, ব্রণ ভর্তি বা পক্সের কারণে দাগ থেকে যাওয়া মুখের থেকে।  এই এখনও দেখা গ্যাছে যে কোন টিম কালো জার্সি/ড্রেস পরে খেললে, রেফারীরা বেশী সহানুভূতি তাদের উপর দেখায় না।  কালো, ধূসর রঙের সাথে জুড়ে আছে এমন ট্যাবু। শুধু রঙ বা মসৃণতাই নয়, কোন জিনিসের আকারের উপরেরও আমাদের এমন অবচেতন পক্ষপাত আছে।  কি মনে হয়, কোন আকারের (সেপ) উপরের আমাদের পক্ষপাত বেশী? এর উত্তর সোজা – আপনারাও জানেন, তবে সেটা দেবার আগে একটা ছোট্ট গল্প শোনানো যাক।১৯৬৩ সালের কথা – “স্টেট মিউচ্যুয়াল লাইফ ইনসিওরেন্স অব আমেরিকা” কোম্পানী তখন সবে অন্য একটা ইনসিওরেন্স কোম্পানীকে অধিগ্রহণ করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই অধিগ্রীহিত কোম্পানীর কর্মচারীদের মানসিক অবস্থা বা ‘মরাল’ তেমন যুতের নয়।   তখন সেই বড় কোম্পানীর কর্তারা ভাবতে বসলেন যে কিছু করে কি এই নতুন কর্মচারীদের মরাল এর উন্নতি করা যায়? ডাকা হল তখনকার দিনের বিখ্যাত অ্যাডভার্টাইজ এবং পাবলিক রিলেশন বিশেষজ্ঞ হার্ভে বল-কে।  হার্ভের তখন নিজের ফার্ম ছিল ম্যাসাচুয়েটস-এ।  তিনি প্রথমে ওই ইন্সিওরেন্স কোম্পানীর প্রস্তাব শুনে ভাবলেন, এ আবার কেমন কাজের অনুরোধ! কিন্তু তবুও বললেন, তিনি ভেবে দেখবেন।  হার্ভে-কে খুব বেশী দিন এই নিয়ে ভাবতে হয় নি।  ইনফ্যাক্ট যেদিন তিনি এই অ্যাসাইনমেন্টের প্রস্তাব পান, সেই দিনই বিকেলে তিনি ড্রয়িং বোর্ডের সামনে ভাবতে শুরু করে একসময় এঁকে ফেললেন একটা হলুদ বৃত্ত, এবং তার ভিতরে দুটো ছোট বৃত্ত এবং একটি অর্ধবৃত্ত!চিনতে পারছেন এটা? হ্যাঁ, এই সেই আজকের দিনের বিখ্যাত ‘স্মাইলি’ ফেস।   এই কাজের জন্য হার্ভে একমাস পরে চেক পেয়েছিলেন তখনকার দিনে ৪৫ ডলার, যা আজকের দিনে হিসেব করলে প্রায় ৫০০ ডলারের মত।  এর পরের কয়েক বছরে কি হতে চলেছে তা মনে হয় হার্ভে নিজেও আন্দাজ করতে পারেন নি – তাঁর দ্বারা সৃষ্ট সেই স্মাইলি ফেস আমেরিকার পোষ্টাল স্ট্যাম্পে স্থান পাবে, ওয়ালমার্টের সিম্বল হিসেবে দেখা যাবে, যা থেকে বানানো হবে ‘বাটন’ বা স্মাইলি চাকতি/বোতাম, কেবলমাত্র ১৯৭১ সালে পাঁচ কোটি বিক্রী হয়েছিল! এ এক প্রত্যক্ষ প্রমাণ কোন এক আকারের স্বাভাবিক সরলতা – যা থেকে আমরা একদম ছোটবেলা থেকেই আকৃষ্ট – বৃত্ত।তাহলে উত্তর পেয়ে গেলেন তো যে, কোন আকারের (সেপ) উপরের আমাদের পক্ষপাত বেশী? সেই আকার হল গোল বা বৃত্ত।বিখ্যাত ডিজাইনার-রা আমাদের বৃত্তের প্রতি এই পক্ষপাত-কে বিস্তারে ব্যবহার করবে না, তা তো হয় না! যে কোন জিনিসের মতন, নানা কোম্পানীর লোগো-কেও র‍্যাঙ্ক করা হয়েছে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী – মানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ২৫টি লোগো কি, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গ্যাছে প্রত্যাশা অনু্যায়ী সেই লোগো গুলিতে ‘বৃত্ত’-র ব্যবহারের প্রাচুর্য্য।   বি এম ডব্লু, মার্সিডিজ, নাসা, অ্যাপেল, স্টারবাক্স, পেপসি, লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড, গুগুল, মাষ্টারকার্ড – ইত্যাদি সবজায়গাতেই বৃত্তের ব্যবহার।  যাই হোক, এখানে শুধু কি আকার, রঙ ইত্যাদির উপর আমাদের আকর্ষণ বেশী সেই নিয়ে হালকা আলোচনা করলাম, কিন্তু কেন সেই আকর্ষণ সেই নিয়ে পরিপূর্ণ আরো বই এবং পেপার আছে।  হ্যারি বেকউইথ লিখিত ‘আনথিঙ্কিং’ বইটির বিস্তার আরো বেশী। এই বইতে আলোচনা করা হয়েছে আমরা যখন কিছু কিনি, সেই কেনার পিছনে আমাদের অজান্তেই কি ফোর্স কাজ করে, আমাদের অবচেতন পক্ষপাত কিভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত-কে প্রভাবিত করে – এবং সবথেকে বড় কথা আমাদের সেই দূর্বলতা ব্যবহার করে কিভাবে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরী করা হয়।  আমরা ভেবে নিচ্ছি এটা তো আমার একারই সিদ্ধান্ত, এর মধ্যে কারো প্রভাব নেই – আমরা জানিও না খুব সূক্ষ্ম ভাবে কিভাবে আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেবার কিনারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল কেউ/কারা যাদের অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে আমরা সর্বদা অবগতও থাকি না। অ্যাডভার্টাইজমেন্ট জগতে পাঁচটা প্রধান ব্যাপার – কনসিভ, ডিজাইনিং, পজিশনিং, নেমিং এবং প্যাকেজিং – এগুলো নিয়ে নিয়ত গবেষণা চলেছে।  আপনি এবং আমি সেই গবেষণায় নিয়মিত তথ্যের যোগান দিচ্ছে।  কিভাবে? ফেসবুক সহ যা কিছু ফ্রী ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ ব্যবহার করে!হ্যারি বেকউইথ এর ‘আনথিঙ্কিং’ বইটি প্রায় তিনশো পাতার।  একবার শুরু করলে শেষ করতেই হবে এমন ইন্টারেষ্টিং।   বইয়ের নামঃ Unthinking – The Surprising Forces Behind What We Buyলেখকঃ Harry Beckwithপ্রকশকঃ Business Plus, New York, 2011   
    বাবা এবং ঈদ  - মোহাম্মদ কাজী মামুন | আজ সন্ধ্যায় আমার পচাত্তর ছুঁইছুঁই বাবা বললেন, ''আমি তোমাদের তিন ভাইবোনকে ঈদের জামা কিনে দিতে চাই। আগামী বছর আর ঈদ পাবো কিনা জানি না।'' আব্বা অবসরের পনের বছর পূর্ণ করার পর সরকার থেকে একটি মাসিক সন্মানি পেতে শুরু করেছেন। সেই টাকা থেকেই তিনি তার সন্তানদের ঈদ উপহার দেয়ার কথা ভাবছেন জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে।  আব্বার কথাটা শুনে হৃদয়ের গভীরে ভীষন মোচড় অনুভব করলাম .......... স্মৃতির সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে চলে গেলাম সেই শৈশবের কোন এক ঈদে, আব্বা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, মামারা ইতোমধ্যে ঈদের শার্ট, প্যান্ট কিনে দিয়েছেন, খালা কিনে দিয়েছেন জুতো, কিন্তু এরপরও আমি কাঁদো কাঁদো, আমার যে অন্য সবার মত দুই সেট জামা চাই, সকাল ও বিকালে বদলে পরার জন্য, আমার বাবার হাতে টাকা নেই, বোনাসের টাকা দোকানের ধার শোধেই ব্যয় হয়েছে, আমাদের ভাইবোনদের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বসে থাকতে পারলেন না, আমার সেজ ফুপা থাকেন চট্রগ্রামে, তার কাছে থেকে কিছু টাকা নিয়ে এলেন ঈদের দুদিন আগে, মনে পড়ে, আমায় নিয়ে গিয়েছিলেন গুলিস্তানের একটি সদ্য নির্মিত মার্কেটে, দোকানে ঢুকেই ছোটদের জন্য টানানো একটি কমপ্লিট স্যুটের দিকে আঙ্গুল তাক করে ফেললাম, সেই হাত আর নামাতে পারলেন না তিনি, অবশেষে বাজেটকে তছনস করে সেই স্যুট বগলদাবা করে মহানন্দে বাসায় ফিরলাম।  সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে সার্ভিস বেনিফিট আব্বাকে আগেই তুলে ফেলতে হয়েছিল, তাই যখন অবসরে যান, তখন নিজের অবসর-উপার্জন বলতে তেমন কিছু ছিল না। আমরা ভাইবোনেরা সবাই মিলে বাবাকে ঈদের পাজামা-পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছি সবসময়। ...আজ এত বছর পর নিজের উপার্জন হাতে পেয়ে আব্বা তার সন্তানদের আবার ঈদের জামা কিনে দিতে চাইছেন, আব্বা কি সেই সময়ে ফিরে যেতে চাইছেন? মিস করেন সেই সময়টুকু? নিজে উদোম থেকেও সন্তানকে ঈদের দিনে সুন্দর পোশাক পরানোর আনন্দটুকু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা?  আমি বললাম, ' কোন দরকার নেই, আব্বা। উমরাহ হজ্বে যাওয়ার জন্য টাকাগুলো জমানো হচ্ছে, সেইভাবেই থাকুক।' বাবার উত্তর, '' চারদিকের যে অবস্থা, আগামী বছর পর্যন্ত নাও বেঁচে থাকতে পারি, বাবা ! উমরাহ হয়তো করা হবে না, আমার ইচ্ছা, তোমাদের ভাইবোনদের এই শেষ সময়ে কিছু একটা উপহার দেই।'' ...শৈশবে বাবার কাছ থেকে ঈদের পোশাক পেলে খুশীতে মন নেচে উঠতো, কিন্তু আজ বাবার কথাটা শোনার পর থেকেই ভিতর হতে গুমড়ে গুমড়ে উঠছে কান্না ...... চোখ ভিজে উঠছে বারবার কোন এক অজানা বেদনায়...... মানুষের জীবন এত বৈপরিত্যে ভরা কেন? কেন এত অদ্ভুত বিষাদমাখা?
  • জনতার খেরোর খাতা...
    I Want a Wife - প্রিয়তমাসু | আমি একটা টিভি সিরিজ দেখছিলাম : ফার্গো  সিজন ৫ | তা দেখার পর গুগলে রিসার্চ করে দেখলাম স্টোরি রাইটার Noah Hawley গল্পের একটা উপাদান হিসেবে এই লেখাটা উল্লেখ করেছেন । পড়ে বেশ ইন্টারেষ্টিং মনে হল । নারীর সমানাধিকার নিয়ে আমি তেমন  মাথা ঘামাই  তা না, আমি পুরুষ মানুষ, নিজেকে ছাড়া আর  কাউকে নিয়ে মাথা ঘামানোর  অপবাদ আমার নেই । কিন্তু লেখাটার মধ্যে বেশ  ইন্টারেষ্টিং একটা  পয়েন্ট আছে , যেটা  মোটামুটি লিঙ্গ নির্বিশেষে সত্যি ।   ‘I Want a Wife,’ By Judy (Syfers) Brady I belong to that classification of people known as wives. I am A Wife. And, not altogether incidentally, I am a mother.Not too long ago a male friend of mine appeared on the scene fresh from a recent divorce. He had one child, who is, of course, with his ex-wife. He is obviously looking for another wife. As I thought about him while I was ironing one evening, it suddenly occurred to me that I, too, would like to have a wife. Why do I want a wife?I would like to go back to school so that I can become economically independent, support myself, and, if need be, support those dependent upon me. I want a wife who will work and send me to school. And while I am going to school I want a wife to take care of my children. I want a wife to keep track of the children’s doctor and dentist appointments. And to keep track of mine, too. I want a wife to make sure my children eat properly and are kept clean. I want a wife who will wash the children’s clothes and keep them mended. I want a wife who is a good nurturant attendant to my children, who arranges for their schooling, makes sure that they have an adequate social life with their peers, takes them to the park, the zoo, etc. I want a wife who takes care of the children when they are sick, a wife who arranges to be around when the children need special care, because, of course, I cannot miss classes at school. My wife must arrange to lose time at work and not lose the job. It may mean a small cut in my wife’s income from time to time, but I guess I can tolerate that. Needless to say, my wife will arrange and pay for the care of the children while my wife is working.I want a wife who will take care of my physical needs. I want a wife who will keep my house clean. A wife who will pick up after me. I want a wife who will keep my clothes clean, ironed, mended, replaced when need be, and who will see to it that my personal things are kept in their proper place so that I can find what I need the minute I need it. I want a wife who cooks the meals, a wife who is a good cook. I want a wife who will plan the menus, do the necessary grocery shopping, prepare the meals, serve them pleasantly, and then do the cleaning up while I do my studying. I want a wife who will care for me when I am sick and sympathize with my pain and loss of time from school. I want a wife to go along when our family takes a vacation so that someone can continue to care for me and my children when I need a rest and change of scene.I want a wife who will not bother me with rambling complaints about a wife’s duties. But I want a wife who will listen to me when I feel the need to explain a rather difficult point I have come across in my course of studies. And I want a wife who will type my papers for me when I have written them.I want a wife who will take care of the details of my social life.When my wife and I are invited out by my friends, I want a wife who will take care of the babysitting arrangements. When I meet people at school that I like and want to entertain, I want a wife who will have the house clean, will prepare a special meal, serve it to me and my friends, and not interrupt when I talk about things that interest me and my friends. I want a wife who will have arranged that the children are fed and ready for bed before my guests arrive so that the children do not bother us.And I want a wife who knows that sometimes I need a night out by myself.I want a wife who is sensitive to my sexual needs, a wife who makes love passionately and eagerly when I feel like it, a wife who makes sure that I am satisfied. And, of course, I want a wife who will not demand sexual attention when I am not in the mood for it. I want a wife who assumes the complete responsibility for birth control, because I do not want more children. I want a wife who will remain sexually faithful to me so that I do not have to clutter up my intellectual life with jealousies. And I want a wife who understands that my sexual needs may entail more than strict adherence to monogamy. I must, after all, be able to relate to people as fully as possible.If, by chance, I find another person more suitable as a wife than the wife I already have, I want the liberty to replace my present wife with another one. Naturally, I will expect a fresh, new life; my wife will take the children and be solely responsible for them so that I am left free.When I am through with school and have a job, I want my wife to quit working and remain at home so that my wife can more fully and completely take care of a wife’s duties.My God, who wouldn’t want a wife?(https://www.thecut.com/2017/11/i-want-a-wife-by-judy-brady-syfers-new-york-mag-1971.html)
    চীনের কাহিনী ১ : নিউলান ও চ্রিনুর কাহিনী - Debanjan Banerjee | লকডাউনের সময় থেকেই খুব সামান্য চীনা ভাষার চর্চা শুরু করেছিলাম। যদিও ধৈর্য্যের ও সময়ের অভাববশতঃ খুব বেশিদূর এখনো এগুতে পারিনি। তবুও চীনের কিছু প্রাচীন উপকথা ভাবানুবাদের মাধ্যমে এখানে আমার গুরুর পাঠকদের কাছে তুলে ধরছি। অনুবাদে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য পাঠকদের কাছে অনুরোধ রইলো। নিউলান ও চ্রিনুর কাহিনী সম্বন্ধে বলা যায় এই কাহিনীটি চীনের অত্যন্ত পরিচিত এক প্রাচীন উপকথা। এটিকে "রাখালছেলে ও পরীর কাহিনী " বলেও উল্লেখ করা হয়। আমি ইন্টারনেট থেকেই এই কাহিনীটি পেয়েছি। অনুবাদে ও অন্যান্য ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। অনেক বছর আগে চীনের এক খুব সম্পন্ন কৃষক পরিবারে একটি ছেলে জন্মায়। তার নাম ছিল নিউলান। খুব ছোটবেলাতেই তার বাবা মায়ের মৃত্যু হয়। বাড়িতে সে তখন তার বড়দা ও বৌদির সংসারে মানুষ হতে থাকে। খুব ছোটবেলা থেকেই তাকে তার বাড়ির গরুটিকে মাঠে ঘাস খাওয়ার কাজে লাগানো হয়।তার বৌদি তাকে খুব অযত্ন করতো। নিজেদের অঢেল পয়সা থাকলেও ফেলে দেওয়া তিনদিনের বাসি পচা খাবার খেতে দিতো নিউলানকে, ছেঁড়া ন্যাকড়া কাপড় পড়তে দিতো, শুতে দিতো গোয়ালঘরে।এইভাবেই কয়েক বছর কেটে গেলো।ছোট্ট নিউলান আস্তে আস্তে যুবক হয়ে উঠলো। এই পৃথিবীতে তখন তার নিজের আপন কেউ বলতে শুধু তার গরুটি। সে তার গরুটিকে ভীষণ যত্ন করতো সবসময়ে চেষ্টা করতো নরম কচি কচি ঘাস খাওয়াতে, পাহাড়ে কোনো ছায়া ছায়া ঠান্ডা জায়গাতে গরমের দিনে গরুটিকে রাখতে যাতে গরমে তার একদম কষ্ট না হয়। আসলে সে হয়তো এইভাবেই ভালোবাসার অভাবের জায়গাটি পূরণ করতে চাইতো। বেচারা ভালোবাসার এতো বড় কাঙাল ছিল যে মাঝেই মাঝেই পাহাড় জঙ্গলে সে তার গরুটিকে গান গেয়ে শোনাতো। গরু কি গান আবার বুঝতে পারে নাকি? তাহলে আর তাকে বোকা গরু বলে কেন? কিন্তু নিউলান ভাবতো যে গরুটি বোধায় তার বেসুরো গান ভালোবাসছে কেননা গরুটি গানের সময়ে মাথা দোলাতো আর চোখ পিটপিট করতো। আরো কিছুদিন পরে একদিন দাদা বৌদি নিউলানকে বললো যে তার বাবার উইল আছে যে বাবার সম্পত্তির মধ্যে শুধু গরুটি আর একটি গরুর গাড়ি নিউলান পাবে আর বাদবাকি সবই তার দাদা বৌদি পাবে। বেচারা নিউলান না জানতো পড়াশোনা না বুঝতো আইন সে বেচারা কোর্টে নালিশ করতে যাবার কিছুই জানতোনা। আসলে এতদিন ধরে দাদা বৌদির ভালোবাসা না পেয়ে সে আর ভালো কিছু আশাও করতোনা।হয়তো তাই সে কিছুটা স্বস্তিই পেলো দাদা বৌদির সংসার থেকে আলাদা হয়ে। গরুরগাড়িতে নিজের প্রিয় গরুটিকে জুতে সে এগোলো রাস্তাতে। এক পাহাড়ের নিচে এসে সে ডেরা বাঁধলো। একটি ছোট কুটির সে গড়ে তুললো সেখানে প্রচন্ড পরিশ্রম করে।আসলে এতো বছর ধরে গরু চড়িয়ে পরিশ্রম করতে সে ভয় পেতোনা আর বরঞ্চ ভালোই বাস্ত। সে পাহাড়ের জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে তার গরুর গাড়িতে বোঝাই করে সে নিচের গ্রামে বিক্রি করতো। এইভাবেই আরো কয়েকটা বছর কাটলো। একদিন নিউলান জঙ্গলে একমনে কাঠ কাটছে হটাৎ সে একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলো "নিউলান এই নিউলান" চমকে উঠে তাকালো নিউলান। কই কেউ তো কোথাও নেই শুধু তার প্রিয় বুড়ো গরুটি ছাড়া (গরুর তো বয়েস থেমে থাকেনা এতদিন ধরে ) তা সে তার গরুকে খুব ভালো বাসলেও গরু কি কথা বলতে পারে ? পাগল নাকি ? তাও কি হয় নাকি ? নিউলান আবার কাঠ কাটতে মন দিলো। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আবার শুনতে পেলো "নিউলান এই নিউলান আরে শোনো না"। এইবার চোখ তুলে তাকালো নিউলান। তার প্রিয় গরুটি একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
    দৈবাৎ - Astrowander Solaris | সময়কাল : খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ শতক স্থান: বিন্ধ্য পর্বতের উত্তর প্রান্তভারতভূমে তখনও আর্যদের আগমন ঘটেনি। উত্তরপূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল ঘনজঙ্গলে আবৃত। কোথাও কোথাও জঙ্গল কেটে গড়ে উঠেছে জনবসতি। এই জনগোষ্ঠী ছিল ভারতের নিজস্ব ভূমিপুত্র। কয়েকটি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠতো এই জনগোষ্ঠী। অনেক ক্ষেত্রে এই পরিবারগুলোর মধ্যে রক্তের সম্পর্ক থাকতো। মানুষ তখন আদিম, অনুন্নত। শিকার করাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তবে তাদের মধ্যে আমোদ প্রমোদ, খেলাধুলো ইত্যাদির প্রচলন চালু হয়েছে। এছাড়া পুজোঅর্চনাতো ছিলই। প্রধান উপাস্য দেবতা ছিলেন পশুপতি বা শিব। এছাড়াও কোনো কোনো জনগোষ্ঠী শিব ছাড়াও অন্যান্য দেবদেবীর পুজোও করতো। নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বন্য পশুকেও বশ মানাতে শিখেছে তখন। এতে তাদের যেমন নিজেদের নিরাপত্তা ব্যাপারটা শক্তিশালী হতো তেমনি শিকারের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুবিধা হতো। উত্তর আর দক্ষিণ ভারতের মাঝে প্রাচীরের মতো যে বিন্ধ্য পর্বত মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারই পাদদেশে এমন ছোট ছোট জনগোষ্ঠী জঙ্গলের আড়ালে তাদের জীবন অতিবাহিত করতো। এইসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে কখনো কখনো লড়াইও বাঁধতো। সেই লড়াইয়ের কারণ কখনো হতো এলাকা দখলের জন্য, কখনো বা শিকার হস্তগত করতে আবার কখনো নারীর অধিকার পেতে। কোনো জনগোষ্ঠীতে সুন্দরী স্বল্পবয়স্কা মেয়ে থাকলে তাকে অত্যন্ত সাবধানে প্রায় নজরবন্দি করে রাখতো গোষ্ঠীর লোকজন। ভিন গোষ্ঠীর লোকজনের কুনজরে যদি সে পরে যায় তাহলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে এই ভয় অনেক গোষ্ঠীর মধ্যে কাজ করতো। আসলে অনেক গোষ্ঠী যেমন ছিল হিংস্র, লোভী, যুদ্ধপিপাসু যারা সবসময় লড়াই যুদ্ধ করতেই পছন্দ করতো তেমনি এমন অনেক গোষ্ঠী ছিল যারা শান্তি প্রিয়। লড়াই যুদ্ধ যাদের পছন্দ ছিল না। সুখে শান্তিতে জীবন কাটাতেই তারা পছন্দ করতো। এই ব্যাপারে আদিম অনুন্নত মানুষ আর বর্তমানের উন্নত মানুষের মধ্যে তেমন প্রভেদ নেই। প্রত্যেক গোষ্ঠীতে একজন করে গোষ্ঠীপতি থাকতো। যাঁকে অনেকে রাজা বলেও সম্বোধন করতো। ইনার কাজ ছিল গোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্যকে সুরক্ষিত রাখা, তাদের দেখভাল করা সন্তানের মতো। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীতে সদস্যের সংখ্যাছিল বিভিন্ন। স্বল্প সংখ্যক সদস্যবিশিষ্ট গোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে দেখা যেত সকল সদস্যর মধ্যেই রক্তের সম্পর্ক আছে। এইসব গোষ্ঠীর বিভিন্ন নাম ছিল। এই নামকরণের পিছনে অনেক কারণ থাকতো তার মধ্যে একটা অবশ্যই ছিল গোষ্ঠীপতির নাম আরেকটা ছিল জায়গার নাম। এছাড়াও আরো অনেক কারণ থাকতো বিভিন্ন গোষ্ঠীর নামের পিছনে।এমনি এক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল বিন্দ্যপর্বতের উত্তরে বিস্তীর্ণ একজঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া তামসা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। তামসা নদী হলো গঙ্গারই একটি শাখা নদী। এই গোষ্ঠীর নাম ছিল মুরাসা। না এই গোষ্ঠীর নাম গোষ্ঠীপতির নাম অনুযায়ী হয়নি আবার জায়গার নামেও হয়নি। এই নামের অর্থ ময়ূর। আসলে এই গোষ্ঠীর যিনি অধিপতি ছিলেন আয়ূধ, তাঁর একটা অত্যন্ত প্রিয় ময়ূর ছিল। সেই থেকেই এই গোষ্ঠীর নাম হয় মুরাসা। ক্ষুদ্র এই গোষ্ঠীতে সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র পঞ্চাশ এবং এদের সকলেই একে অপরের সাথে রক্তের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। গোষ্ঠীপতি আয়ুধের দুই ভাই ছিল। আয়ুধের নিজের ছিল দুই ছেলে এক মেয়ে। বড়ছেলের নাম ছিল আরিকি আর ছোট ছেলের নাম ছিল আনুনি। মেয়ে ছিল সবার ছোট। তাঁর নাম ছিল আরনা। আয়নার বয়স ছিল বারো। সে ছিল তাঁর বাবার নয়ণের মনি । শুধু বাবা নয় দাদাদেরও প্রাণভোমরা ছিল সে। আরিকির বয়স ছিল কুড়ি আর আনুনির বয়স ছিল সতেরো। আনুনির বয়স সতেরো হলেও তার চেহারা ছিল বিশাল। তাকে দেখলে কখনোই মনে হতোনা যে সতেরো বছরের এক কিশোর। সে যেমন ছিল উঁচু লম্বা তেমনই দশাসই ছিল তার শরীরটি। গোষ্ঠীর সবাই একে অপরের সাথে রক্তের সম্পর্কে জড়িত ছিল বলে তাদের মধ্যে দারুন বন্ডিং ছিল। আয়ূধ খুবই শান্তি প্রিয় প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। যুদ্ধ লড়াই তাঁর পছন্দ ছিল না। আসলে হিংসা তাঁর কখনোই পছন্দ ছিল না। খাদ্য সংগ্রহের জন্য যেটুকু শিকার করা দরকার সেটুকু করেই ক্ষান্ত থাকতেন উনি। তবে এখন উনি ছেলেদেরকেই পাঠান শিকার করতে। তাঁর বড়ো ছেলে শিকারে দারুন পারদর্শী। দাদার সাথে থেকে ছোট ছেলে আনুনিও ধীরে ধীরে শিকারে হাত পাকাচ্ছে। আর এই সব কিছুই হচ্ছে আয়ুধের ছোট ভাই তিরিন্দ্বিরার তত্ত্বাবধানে। সে দারুন শিকারি। এখন আয়ুধের অধিকাংশ সময় কাটে তাঁর দুটি প্রিয় জিনিসের সাথে। এক তাঁর প্রিয় ময়ূর আর দুই তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় কন্যার সাথে। খুব শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছিল এই মুরাসা জনগোষ্ঠীর লোকজন। কিন্তু শান্তিতো আর চিরস্থায়ী হয় না। আর এই জগৎসংসারটা এমন যে কেউ নিজের মতো সুখেশান্তিতে থাকলেও তাকে সেইভাবে থাকতে দেওয়া হবে না। এটা তখনও ছিল এখনো আছে।সেই সময় উত্তরপূর্ব ভারতে কারামভা নাম একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী ছিল। তারা যেমন ছিল যুদ্ধ প্রিয় তেমন ছিল হিংস্র ও বর্বর। বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আক্রমণ করে তাদের পরাস্ত করে দাসে পদানত করা এবং তাদের এলাকা দখল করে নেওয়াই ছিল তাদের একমাত্র উদ্যেশ্য। তারা এতটাই হিংস্র আর যুদ্ধ পারদর্শী ছিল যে অনেকে তাদের সাথে বিনা যুদ্ধেই তাদের দাসত্ব স্বীকার করে নিতো।এই জনগোষ্ঠীর নেতা ছিল কুরুঙ্গা। তার মতো জটিল, ক্ষমতালোভী, ক্রূর, দুশ্চরিত্র মানুষ সেই সময় কমই ছিল। এক অর্থে সে ছিল এক নরপিশাচ। কুরুঙ্গার নেতৃত্বে তার গোষ্ঠী এক হিংস্র বর্বর গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। তার একটাই লক্ষ্য ছিল হয় যুদ্ধ করো না হয় বশ্যতা স্বীকার করো। বশ্যতা স্বীকার করলে জীবিত অবস্থায় তার গোষ্ঠিতে স্থান হতো আর যুদ্ধ করে হারলে নৃশংসভাবে সকল সদস্যকে হত্যা করা হতো নারী পরুষ বাচ্চা বৃদ্ধ নির্বিশেষে। তবে যদি কোনো নারীকে কুরুঙ্গার পছন্দ হতো তাকে সে নিয়ে যেত নিজের আস্তানায়। কুরুঙ্গার নেতৃত্বে আজ পর্যন্ত তার গোষ্ঠী যুদ্ধে কখনো হারেনি। সে রীতিমতো একটা সেনাবাহিনী তৈরী করে ফেলেছিলো। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও ছিল খুব আধুনিক। সেই সময়কার গোষ্ঠীগুলো যেখানে অস্ত্র হিসাবে শানিত পাথর বা পশুর হাড় দিয়ে বানানো অস্ত্র ব্যবহার করতো সেখানে কুরুঙ্গা আর সেনা বাহিনী ব্রোঞ্জ ধাতুর তৈরী অস্ত্র ব্যবহার করতো। আর সেইসব অস্ত্রের কাছে পাথর আর পশুর হাড়ের অস্ত্র ধোপে টিকতো না। করুঙ্গা যে কোথা থেকে এমন ধাতুর তৈরী অস্ত্রের খোঁজ পেয়েছিলো তা কেউ জানতে পারেনি। তবে সেই অস্ত্র আর সেনাবাহিনী নিয়ে সে যে রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল সমস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ছিল সে। কোনো অঞ্চলে কুরুঙ্গার লোকজনকে দেখা গেলে সেখানকার জনজাতির লোকজন প্রমাদগুনতে শুরু করে দিতো। আর এই কুরুঙ্গার কুদৃষ্টি পড়লো আয়ুধের বারো বছরের সুন্দরী কন্যা অরণার ওপর। যার ফলে মুরাসা জনগোষ্ঠীর ওপর দুর্দিনের কালো মেঘ ঘনিয়ে এলো।
  • ভাট...
    comment | একটা অপদার্থ রেলমন্ত্রী একটা মিথ্যেবাদী সরকার পরের পর মিথ্যে বলে যায়। কোন ট্রেন ঠিক সময়ে চলে না, ৩-৫ ঘন্টা লেট স্বাভাবিক ঘটনা। ১৬-১৮ ঘন্টা লেট হামেশা হচ্ছে।  IRCTC একটা চোরের আড়ত। সমানে বেশী দাম প্রায় ডাবল দাম নেবার চেষ্টা করে খাবারের। ট্যুইট করলে এসে পায়ে পড়ে আর ঠিক দাম নেয়। এত যে ট্যুইট হচ্ছে প্রতিদিন পিএনআর নাম্বার দিয়ে, কই ওভারচার্জিং তো কমছে না। কমছে না তার কারণ এই ওভারচার্জিঙের টাকার ভাগ একদম ওপরের লেভেল অবধি যায়।  এই এতকিছুর পরে এইভাবে প্রতি বছর একটা করে দুর্ঘটনা ঘটবে যেখানে অসহায় কিছু মানুষ কিছু বোঝার আগেই লাশ হয়ে যাবে আর নির্লজ্জ মন্ত্রী এসে সেজেগুজে টিভিতে বাইট দেবে। জনগণকে বোঝাবে চালক বা গার্ড সিগনাল উপেক্ষা করেছে। বেমালুম চেপে যাবে যে একাধিক  সিগনাল খারাপ ছিল।  ফান্দে ভারত আর বুলেট ট্রেনের ধাপ্পাবাজিতে রেলের ইনফ্রা চুলোয় গেছে।  অবশ্য বেনারসের রুদালি এসে ক্যামেরার সামনে একটু কেঁদেও নিতে পারে।
    commentb | *এক্সপ্রেস 
    commentb | ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্স্প্রেসে  অ্যাক্সিডেন্ট  হয়েছে, মূলতঃ পিছনের দুটো কামরা (জেনেরাল বগি ) তেই হতাহত সর্বাধিক মনে হচ্ছে । 
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত