এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    অন্ধ ও বধিরের দেশে? - প্রতিভা সরকার | বাস্তব আর কল্পনা কোথায় যে হাত ধরাধরি করে চলতে শুরু করবে কেউ জানে না। আসলে তাই-ই তো স্বাভাবিক। কল্পনার পা থাকে বাস্তবের বুনিয়াদে, বাস্তব নিয়ন্ত্রিত অথবা অনিয়ন্ত্রিত হয় কল্পনার লাগামে অথবা লাগামহীনতায়। গুরুচন্ডা৯তে অমিতাভ চক্রবর্তীর খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র ফয়জান আহমেদের মৃত্যুর ওপর সুলিখিত প্রতিবেদনটি পড়ে এইরকম মনে হল। এই নির্মম ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে মানুষকে অনেক অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুরতা, গোপন রক্তপিপাসার মুখোমুখি হয়ে বিহবল হয়ে যেতে হয়। অবাক লাগে ভাবতে যে এই ধরনের কাজের অনেকগুলোই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় করে ফেলে যারা, তারা সবাই কিন্তু ভাড়াটে খুনি বা সাইকোপ্যাথ নয়। তারা অনেক সময়ই মধ্যবিত্ত ঘরের দুধ ঘি খাওয়া মেধাবী ছেলে। আমাদের সন্তান। সমাজের সবচেয়ে সুবিধাভোগী অংশ। দারিদ্র নয়, সেকারণে নীতিহীনতাও নয়, নিষ্ঠুরতার জন্যই নিষ্ঠুরতা কী করে তাদের বীজমন্ত্র হয়ে ওঠে, কে জানে! কেন এত কথা? শোনা যায় ফয়জানের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল কর্তৃপক্ষ এবং মেডিকেল কলেজও। কিন্তু সদ্য প্রকাশিত দ্বিতীয়বারের ময়না তদন্তের রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছে, এটি আত্মহত্যা নয়, মাথার পেছন দিকে এবং বুকে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যু ঘটেছে আসাম থেকে আগত এই মেধাবী তরুণের। আরও জানা গেছে, তার ঘাড়ে গুলির দাগ আছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রবল প্রহার করে তারপর গুলি করা হয়েছিল ফয়জানকে? স্মর্তব্য, এই দ্বিতীয় বারের ময়না তদন্ত হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে। নাহলে সব ধামাচাপা পড়েই থাকত। গুরুচন্ডা৯ প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাসে রোহিত ভেমুলার ছায়ায় গড়া কেন্দ্রীয় চরিত্র রোশনের পাশে আছে ফয়জান, স্বনামে নয়, তার নাম ওখানে ফয়জল। তার মৃত্যুর পর মা ছুটে এসেছেন অতদূর থেকে। তাঁর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছে কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশ, তার বর্ণনা আছে। সেই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন কাগজের রিপোর্ট ঘেঁটে লেখা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেকের ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর তিলে তিলে গড়া হয়েছে এই দুর্ভাগা তরুণের চরিত্র। তাকে দাঁড় করানো হয়েছে রোহিত ভেমুলার পাশে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায় এই ২০১৬ এবং ২০২২ কে এক সুতোয় গেঁথে ফেলাকে অন্যায়ের প্রবহমানতা দেখাবার পক্ষে খুবই কার্যকরী হয়েছে বলে ভেবেছেন। আমরা পড়ে দেখতে পারি উপন্যাসের কিছুটা অংশ, যেখানে মায়ের চোখের জল আর প্রবল আকুতি বৃথা হয়ে যাচ্ছে। এমপ্লুরা নামের রাসায়নিক দিয়ে যে নরপশুরা ফয়জানের মৃতদেহ অবিকৃত রাখবার চেষ্টা করেছিল, তাদের নির্লিপ্ততা। রসিকার ছেলে প্রকাশ করে গুরুচন্ডা৯ যে সামাজিক যুদ্ধের সূচনা করেছে, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অমিতাভ চক্রবর্তীদের প্রতিবেদন। রসিকার ছেলে থেকে উদ্ধৃতি“আইআইটিতে নেমে প্রথমে ফতিমা আন্টিকে গেস্ট হাউজে তুলল রোশন। দুজনেই হতবুদ্ধি, শোকে উন্মাদ, তার মধ্যে রোশনই সম্পূর্ণ কান্ডজ্ঞান হারায়নি। কাউকে না কাউকে তো খোঁজ খবর নিতে হবে। থানায় যেতে হবে, ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট, ডেথ সার্টিফিকেট এরা আগেই অন লাইন পাঠিয়ে দিয়েছে। রোশন না ভেবে পারে না যে ফিজুর শরীর এখন মাটির নীচে মাটি হয়ে যাচ্ছে। তাদের গ্রামে নতুন কবর হলে সবসময় তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। পেছনে ফেলে যাওয়া মানুষের স্নেহ আর যত্নের মতো মৃতকে আগলে রাখে ঐ বেড়া। স্বজনরা এসে বেড়ার এপাশে দাঁড়িয়ে বা বসে কান্নাকাটি করে, কখনও মৃতের সঙ্গে কথা বলে নিজের মনে। তারপর কালের নিয়মে শোক প্রশমিত হয়, বেড়া জীর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যায়। তবু যেন কিছু থেকে যায়! বড় কোমলতা আর ভালবাসা মাখা এই বিদায় জানানোর পদ্ধতি! কিন্তু বিদেশে বিভুঁইয়ে কোথায় যে ফিজুকে এরা কবর দিয়েছে, কোন কবরিস্তানে, তা পর্যন্ত এখনও দেখা হয়নি তাদের। ছবিতে তো সব বোঝা যায় না।যে ছেলে আগের সন্ধেয় কথা বলেছে রোশনের সঙ্গে, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী হিসেব কষে দেখা গেল, পরের পনের/ষোল ঘন্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে। মাত্র পনের/ষোল ঘন্টা ! একটা গোটা দিনও তো নয়!রাতে ছ’ সাত ঘন্টা তো সে নিশ্চয়ই ঘুমিয়েছে। সকাল হবার পর বাকি ন’ দশ ঘন্টায় কী এমন ঘটল যে ফিজু একটা অচেনা ফাঁকা ঘরে গিয়ে কালঘুমে ঘুমিয়ে পড়ল! ভাবলেই রোশনের বুকের ভেতরটা বেবাক ফাঁকা হয়ে যায়, যেন তার হার্ট, লাংস,পাঁজর, কিছুই নেই। নিজের বুক চেপে ধরে রোশন, সেখানে সর্বগ্রাসী শূন্যতার মধ্য দিয়ে কোন দৈবী মায়ায় লাবডুব লাবডুব আওয়াজ ভেসে আসছে তবুও! সন্ধেবেলায় ক্যাম্পাসে তারা পৌঁছনোর পর ভীম আর্মির কমরেডদের সূত্রে রাজশেখরন নামে একটি ছেলে দেখা করতে এল। না, সে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। কারণ ওই সময়ে সে অন্ধ্রে নিজের বাড়ি গিয়েছিল। সে শুধু রোশন যেখানে বলবে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে। এত বড় ক্যাম্পাসে নাহলে কোথায় কী আছে, কোনও নবাগতের পক্ষে তা জানা সম্ভব না। এটুকু সাহসও তার হত না, কিন্তু সে খুবই সিনিয়র ফেলো, আর কয়েক মাসের মধ্যেই পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। রোশন তাকে বলল,আগে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে আন্না? যেখান থেকে প্রথম ডাক্তার গিয়ে মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন? তারা বাইকে স্টার্ট দিচ্ছে, এমন সময় পাগলের মত ফতিমা ছুটে এল,- আমাকে না নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস বিড্ডা? আমি যাব, আমি যাব। তার মুখের দিকে তাকিয়ে রোশন বুঝল কিছুতেই তাকে ফেলে যাওয়া চলবে না। তাই ফতিমাকে মাঝখানে বসিয়ে ছেলেদুটো দুজন দুদিকে বসল।ক্যাম্পাসের এই পুরনো হাসপাতালটা গেস্ট হাউজের কাছেই। অনেক দূরে কোথায় নাকি আই আই টির জন্য সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হচ্ছে। এখনও বেশিটা এই হাসপাতালই সামলায়। রাজের বাইকের পেছনে বসে পাঁচ মিনিটে রোশন আর ফতিমা সেখানে পৌঁছে গেল। মূল প্রবেশ পথে ঢুকে বাঁ দিকে যেতে হল, তারপর ডাইনে একটা লম্বা করিডরের শেষে পাশাপাশি আবার অনেকগুলো ঘর। করিডরে লম্বা বেঞ্চে বসা রোগীদের ভিড় ছিল, পোশাক-পরা নার্সরা যাতায়াত করছিল, কথাবার্তা, জুতোর শব্দ, দরজা খোলা বন্ধের ক্যাঁচক্যাঁচ, ওষুধের গন্ধ, বেশ গ্যাঞ্জাম হয়ে ছিল জায়গাটা। রাজশেখরন রোশনের দিকে ফিরে বলল, - সেদিন ছেলেরা প্রথমে ছুটে আউটডোরেই এসেছিল। কিছু ঘটলে ওরা সবসময়ই তাই করে। ওরা তো বুঝতেই পারেনি, শেখ ফয়জুল মরে গেছে, না অজ্ঞান হয়ে রয়েছে। পরে পোস্ট মর্টেম করে জানা গেছে চারদিনের বাসি মরা ছিল। কিন্তু আশ্চর্য হয়েছি এই শুনে যে মৃতদেহ থেকে কোনো গন্ধটন্ধ বেরোচ্ছিল না। এমার্জেন্সি থেকে ডাক্তারকে ওরা হস্টেলের সেই ঘরটায় নিয়ে যায়। - সেই ডাক্তারের আজ ডিউটি আছে তো? আমি তার সঙ্গে কথা বলব। - হ্যাঁ, সেসব খবর আগেই নিয়েছি। আজ ওঁর এখানে নাইট ডিউটি আছে। একটা ভারী কালো কাঠের দরজায় রাজশেখর ঠকঠক করে। তার ওপরে নেমপ্লেটে লেখা ড: ধরিত্রী সান্যাল, এম ডি। ভেতর থেকে নারীকন্ঠে প্রত্যুত্তর আসে, - প্লিজ কাম ইন।একসঙ্গে এত লোককে ঢুকে পড়তে দেখে ডাক্তার-ম্যামের ভ্রূ কুঁচকে যায়,- রোগী ছাড়া আর দুজন বাইরে দাঁড়ান। আমি দরকার বুঝলে ডেকে নেব।রাজশেখর বা রোশন কিছু বলার আগেই ফতিমা হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে, সামনের টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে জড়ানো গলায় ডাক্তারকে নিজের ভাষায় জিজ্ঞাসা করে, - নোডিডিয়া নান্না মাগু? আপনি কি আমার বাছাকে দেখেছিলেন? ডাক্তার হতবাক হয়ে যায়, তারপর ভাষা না বুঝেও কী একটা সন্দেহ তার কপালে ভাঁজ ফেলে। রাজশেখরনের দিকে তাকিয়ে সে ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করে, - এরা কি শেখ ফয়জুলের কেউ হন? রোশন হাত জোড় করে বলে, - হ্যাঁ, ইনি ফয়জুলের মা, আমি বন্ধু। ম্যাম, সেদিন আপনি কী দেখেছিলেন, বলবেন আমাদের? ফতিমার অনবরত ফোঁপানির মধ্যেই ডাক্তার রোশনদের মাথার পেছনের সাদা দেওয়ালে নিজের চোখ গেঁথে রাখে। মুখে বলে,- বসুন আপনারা। ওঁকেও বসান প্লিজ। আমি পুলিশের কাছে যে বয়ান দিয়েছি, আপনাদেরও তাই-ই বলছি। সেদিন জনাদশেক ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে আউটডোরে ডিউটিরত ড: ধরিত্রীকে এসে একটা খুব খারাপ খবর দেয়। একটি সদ্য জয়েন করা স্কলার হস্টেলের একটি অব্যবহৃত ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে, সে মারা গেছে না বেঁচে আছে বোঝা যাচ্ছে না। নাকের নীচে হাত রাখলে শ্বাসপ্রশ্বাস বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু দেখতে ফ্রেশ লাগছে, যেন জোরে ধাক্কা দিলেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসবে। এমার্জেন্সিতে ডিউটি তার, প্রচুর রোগী অপেক্ষা করছে, তার মধ্যে এ কী ঝামেলা !শরদিন্দু চ্যাটার্জি তার জুনিয়র। বললেই চলে যেত। কিন্তু ধরিত্রী নিজেই যাবে ঠিক করল। গত বছরও এইসময় ক্যাম্পাসে একটা আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের কাছে তখনকার ডাক্তার যে বয়ান দিয়েছিল, তাতে অনেক অসঙ্গতি ছিল। তাই নিয়ে সে কী ঝামেলা! ধরিত্রী ঠিক করল সে নিজেই যাবে। ছেলেদের কাছ থেকে ঠিকানাটা ভালো করে জেনে নিয়ে বলল, - তোমরা এগোও। আমি আসছি। জিমের সামনে দিয়ে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করে এগোচ্ছিল ধরিত্রী, এই রাস্তাটায় বড় বড় সব স্পিড ব্রেকার বিছিয়ে রাখা আছে। উপায় নেই, জিম করে সব আলালের ঘরের দুলালরা সাঁ করে বাইক ছোটান সুইমিং পুলের দিকে। সে সময় তাদের গায়ে এত পুলক লেগে থাকে যে চক্ষে ঘোর ঘনিয়ে কে যে কোথায় বাইক নিয়ে পপাত চ মমার চ হবেন, কেউ বলতে পারে না। এই জেনারেশনটাকে সে ঠিক বুঝতে পারে না। কখনও মনে হয় ওরাই ভালো, কেমন স্পষ্ট ভাবে নিজেদের চাহিদার জানান দিতে পারে। পোষালে থাক, নইলে কেটে পড়। আবার কখনও মনে হয়, না: বড্ড আত্মকেন্দ্রিক! নিজেদের নিয়েই মত্ত। এই যে ষোল হাজার ছেলেমেয়ে নিয়ে একটা এতবড় ক্যাম্পাস, এদের মধ্যে ক'জন সমাজের কথা ভাবে, দেশের জন্য মাথা ঘামায়। তবে কিনা, একটু দু:খের হাসি হাসে ধরিত্রী, আমরাই কি দায়ী নই এ জন্য? স্বার্থমগ্নতা কি আমরাই যত্ন করে শেখানোর সিলেবাসে এক নম্বরে রাখিনি? সেখানে একটু আঘাত লাগলেই আত্মহত্যা, নয়ত অন্যকে আঘাত করা। প্রত্যেক বছর ক্যাম্পাসে একাধিক আত্মহত্যা! আর মারামারি তো লেগেই আছে। হাতাহাতি থেকে ধারাল অস্ত্র নিয়ে চোরাগোপ্তা আঘাত করা, সবই ঘটে। তবে প্রশাসনের ভূমিকাও খুব হতাশাজনক। যাই-ই ঘটুক না কেন, সবার আগে প্রতিষ্ঠানের সুনাম, এই নীতিতে চললে, কারও প্রতি সুবিচার করাই সম্ভব নয় ! ছেলেটি যে ভাবে মেঝেয় এলিয়ে পড়েছিল, দূর থেকে দেখেই ধরিত্রীর অভিজ্ঞ চোখ বুঝল, এ মৃত। তাকে লিফটের বাইরে আসতে দেখেই জমায়েতটা সরে সরে পথ করে দিল। ছেলেটার নাড়ি দেখবে বলে হাতটা তুলতেই, কী একটা অনুভূতি তাকে বেদম অস্বস্তিতে ফেলে দিল। অনেক ভেবে ধরিত্রী বুঝতে পারে তার অস্বস্তি হচ্ছে মৃত ছেলেটির ত্বকের বিবর্ণতা দেখে ! অনেক আগে কেউ মারা গেলে তার ত্বক যেমন বেরঙ, শুকনো খড়খড়ে হয়ে যায়, এরও তেমনি। কিন্তু আর সবই অল্পবিস্তর ঠিকঠাক! ভালো করে খুঁটিয়ে দেখে ধরিত্রী। আধবোজা চোখদুটো নিয়ে মুখ মাথা একদিকে হেলে পড়ছে। হাত পাগুলো এমন ছেতরানো, দেখলে মনে হচ্ছে গামছা নিংড়োবার মত ওগুলো থেকে কেউ নিংড়ে নিয়েছে মনুষ্যদেহের স্বাভাবিক শক্তির শেষ বিন্দুটুকু। কবে এর মৃত্যু হয়েছে? কতদিন হল ও এই ধুলোভরা মেঝের ওপর পড়ে আছে? নাড়ি দেখা শেষ করে মুখ তুলল ধরিত্রী, স্টেথো বার করতে করতে ছেলেগুলোকে জিজ্ঞাসা করল, - পুলিশে খবর দিয়েছ?- হ্যা ম্যাম, পুলিশ আসছে। আরও দু একটি কথা চালাচালিতে সে বুঝল, কেউই চিনত না ছেলেটিকে, ও যে এইখানে পড়ে আছে সে খবরও কারও কাছে ছিল না। ঘরের দরজাটা ভেজানো ছিল, আজ ছুটির দিনে এই ফ্লোরের কয়েকজন মিলে একসঙ্গে বেরচ্ছিল। হয়ত ফিল্ম দেখবে কিম্বা রেস্টুরেন্টে খেয়ে মুখ বদলাবে। ছোট লিফট, তাই লিফটে কে বা কারা আগে যাবে সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মজার হুটোপুটি বেঁধে যায়। ধাক্কাধাক্কি করবার সময় একজনের কনুই লেগে হঠাৎ লিফটের লাগোয়া এই ঘরের দরজাটা খুলে যায়। কেউ থাকতো না বলে ওটার কোনো খবর রাখত না কেউ। জানালাবন্ধ ঘরের আধো অন্ধকারে কেউ মাল খেয়ে বেহোঁশ হয়ে শুয়ে আছে, এইরকম ভেবেছিল ওরা। তারপর অনেক ডাকাডাকি করে সন্দেহ হওয়ায় কয়েকজন সময় নষ্ট না করে ডাক্তার ডাকতে হাসপাতালে চলে যায়। এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। ধরিত্রীকে ওসি চেনে। বছর বছর আত্মহত্যার কেস ডিল করতে হলে পুলিশ, উকিল আর ডাক্তারে মুখ শোঁকাশুকি না হয়ে উপায় থাকে না। - আরেকটা সুইসাইড? ওসির সর্দিবসা গলা কানে আসে ধরিত্রীর, - গায়ে জ্বর নিয়ে আসতে হল ম্যাডাম। এ তো দেখি আত্মহত্যা করেই যদুবংশ ধ্বংস হয়ে যাবে ! তার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে পুলিশবাহিনী। পটাপট সব আলোগুলো জ্বেলে দেয়। কে একজন ভিড়ের মধ্য থেকে বলে ওঠে,- শেখ ফয়জুল, রিসার্চ স্কলার, লালা লাজপত রায় হস্টেল। রুম নাম্বার টুয়েন্টি টু। আ নিউ কামার টু হিজলি ক্যাম্পাস।- কে রে, কে? কে বলল কথাটা? ওসি আবার ঘরের ভেতর থেকে বার হয়ে আসে। রুল উঁচিয়ে ধরে ক্রমশ ফুলে ওঠা জমায়েতের একের পর এক ছেলের দিকে,- আপনি, আপনি বললেন? নাকি আপনি? কে কী জানেন বলুন, তাতে আমাদের ইনভেস্টিগেশনের সুবিধে হবে ! কিন্তু নিরেট ভিড়টা থেকে একটা টুঁ শব্দও উঠে আসে না। একটা জমাট ধরা শ্বাসপ্রশ্বাসের ডেলা যেন ওটা। প্রাণ আছে, কিন্তু সুপ্ত, শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ছাড়া প্রাণের আর কোনও লক্ষণই দেখায় না ভিড়টা। শুধু আলো পিছলে যায় সুন্দর প্রসাধিত বুদ্ধিদীপ্ত মুখগুলোর ওপরে। বড্ড চকচকে, বড় বেশি উজ্জ্বল যেন ! কৃত্রিম উজ্জ্বলতা। ধরিত্রীর মনে পড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে দেওয়াল ঘেঁষে সারি সারি গজিয়ে উঠেছে ইউনিসেক্স পার্লার ! ছাত্রদের কাছ থেকে কোন সাড়া না পেয়ে এবার পুলিশ স্ট্রেচারে লাশটা তোলার তোড়জোড় করল। দূর থেকে ছেলেটিকে যেমন নেতিয়ে পড়ে আছে বলে মন হচ্ছিল, স্ট্রেচারে তোলার সময় ধরনধারণ দেখে সেই ভাবটা বেশ কম বলে মনে হল ধরিত্রীর। বেশ শক্ত যেন দেহখানা। কিন্তু তাই-ই বা কী করে হবে, রাইগর মর্টিসের লক্ষণ কোথায় ! দেহে পচন ধরেনি, দুর্গন্ধ নেই! ধরিত্রী খুব অবাক হচ্ছিল, কিন্তু ব্যাপারটা এখন তার হাতের বাইরে। লাশ চলে যাবে সোজা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে। সেখানেই পোস্ট মর্টেম হবে। দেখা যাক, কী রিপোর্ট আসে! ধরিত্রী চলে যাবে বলে পেছন ফিরেছে, হঠাৎ ঠনঠন করে কিছু গড়িয়ে যাবার শব্দ। এক পুলিশের পায়ে লেগে কৌটো মতো কিছু একটা গড়িয়ে গেল ঘরের ভেতরে টয়লেটের দরজার দিকে। আর একজন সেটা কুড়িয়ে নিল। মনে হচ্ছে কোন ওষুধের কৌটো, বেশ বড়সড় সাইজের। ওসি নাকের ডগায় চশমা টেনে গায়ের লেখা পড়ার চেষ্টা করে কিছু বুঝতে না পেরে ধরিত্রীকে বলল,- ম্যাডাম, দেখুন না একটু, এটা কিসের ওষুধ! কৌটোটা হাতে নিয়ে চমকে উঠল ধরিত্রী। এমপ্লুরা। মাংস সংরক্ষণে এর জুড়ি নেই। যে কোনো রকম মাংসে এই ওষুধ মাখালে সেটা অনেক সময় ধরে তাজা থাকে, গন্ধ ছাড়ে না, খুব শক্ত হয়ে যায় না, ছোট্ট পাখি তিতির থেকে মানুষের…হ্যাঁ মানুষেরও তো…! আরে এ ওষুধ এখানে কেন! ধরিত্রীর পা থেকে মাথা অবধি বিদ্যুৎচমকের মতো কী যেন খেলে গেল! লিফটে নামতে নামতে তার কেবলই মনে হচ্ছিল লাশটি এতো গন্ধ ও পচনহীন কেন সে রহস্য যেন সে উদঘাটন করে ফেলেছে ! সারা রাত ধরে নির্ঘুম বসে থাকতে থাকতে অস্থির হয়ে পড়ল রোশন। ডিরেক্টর এখানে নেই, আগামীকাল তাদের ডিনের সঙ্গে দেখা করবার কথা। পাশের ঘরে ফতিমা আন্টিকে কড়া ঘুমের ডোজ দিতে হয়েছে। এখানকার ডাক্তার-ম্যাডামই দিল নিজে থেকে, ফতিমার মুখচোখ দেখে। রোশনকে গলা নামিয়ে বলল, - আমিও তো মা। নিজের জোয়ান ছেলে মরে গেলে মনের ভেতরে কী হয় তা ভালই বুঝি। এই ওষুধটা রাখ। রাতের খাবারের আধ ঘন্টা আগে এটা ওঁকে খাইয়ে দিও। গোটা হিজলি ক্যাম্পাসে এই ডাক্তার দিদিমণিই একমাত্র মানুষ যে ফতিমার প্রতি তবু কিছু সহানুভূতি দেখিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাজশেখরণ ওদের নিয়ে গেল থানায়। আগেই জানান হয়েছিল, মৃত ছাত্রের মা দেখা করবে। ওসি তাদের বেশ খাতির করে বসাল, কিছুক্ষণ ফতিমাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে খুব মিষ্টি ব্যবহার করল, তারপর নিরীহ হরিণের চামড়ায় ঢাকা সিংহের আসল চেহারা দ্রুত বেরিয়ে পড়ল। দোষের মধ্যে ফতিমা তার ছেলের মৃতদেহের ছবি দেখতে চেয়েছিল, - আমার ফিজুকে দেখতে চাই। কেমন ভাবে পড়েছিল আমার মাগু, আমার কুসু, দেখাও অফিসার, আমাকে দেখাও! দোভাষীর কাজ করতে করতে রোশন দেখছিল, ফতিমা আন্টির অস্থিরতা যতই বাড়ছে, ওসির মুখ ততই কঠোর হয়ে উঠছে। একসময় লোকটা ফতিমার মুখের ওপর বলে বসল,- লাশের কোনো ছবি আমাদের কাছে নেই।তার মানে? এই রকম কেসে ছবি তুলে সংরক্ষণ করে রাখা তো ম্যান্ডেটরি। রোশন দোভাষির ভূমিকা ছেড়ে এখন সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ। - হ্যাঁ, তোলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা ডিলিট করে দিয়েছি। আমাদের তদন্তের কাজ মিটে গেছে। ওসব ছবির আর কোনো মূল্য নেই।রোশন খুব অবাক হয়ে ওসির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফতিমা কিছুই বুঝতে না পেরে অঝোরে কেঁদে চলে। ওসির রাগ ক্রমশ চড়ছিল, সে গজগজ করতে করতে বলে,- এইরকম কেস মানে কী রকম কেস, হ্যাঁ? এটা একটা প্লেন এন্ড সিম্পল সুইসাইড কেস। - তাহলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ইনকনক্লুসিভ রইল কেন? সেখানেই তো বলা থাকত ফয়জুল আত্মহত্যা করেছে।উত্তেজনায় ওসি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে,- আপনাকে তো পড়াশোনা জানা বলেই মনে হচ্ছে। সারকামস্ট্যানশিয়াল এভিডেন্স বলে কিছু আছে সেটা জানেন তো। শেখ ফয়জুলের কবজিতে ব্লেড দিয়ে চেরার দাগ ছিল, জানতেন এ কথাটা? এখানে আসার পর থেকেই ওর ধরনধারন দেখে রুমমেটদের সন্দেহ হয়েছিল, ও হয় ড্রাগ এডিক্ট, নয় ডিপ্রেশনের রোগী। ও আত্মহত্যাই করেছে। ফতিমা এই দুজনের মধ্যে কথাবার্তার কিছুই বুঝতে পারছিল না, কান্না থামিয়ে একবার ওসি, একবার রোশনের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল। রোশনও এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে, ওসির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে। এ সেই দৃষ্টি যা তাকে কেউ হেই চামারের ব্যাটা, হেই মাদিগার ব্যাটা বলে অপমান করলে, তার দুচোখ ভেদ করে বেরিয়ে আসত। গলা ওঠায় না সে, কিন্তু খুব প্রত্যয়ী শোনায় তার কন্ঠ, - স্যার, আমরা পঁচিশ বছর ধরে পরস্পরের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। আমি জানি, ফয়জুল কোনওদিন ড্রাগ ছুঁয়ে দেখেনি আর ডিপ্রেশনেও সে ভোগেনি। প্লেন এন্ড সিম্পল তাকে কেউ মার্ডার করেছে। আমরা হাইকোর্টে কেস করব। ফিজুর দেহ কবর থেকে তুলে আবার পোস্ট মর্টেম করাব। দেখব কী করে তদন্ত শেষ বলে আপনারা এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলেন। ওসি থতমত খেয়ে যায়। তারপর নিজেকে ফিরে পেয়ে বলে, - প্রমাণ করুন। মুখে বললে তো হবে না। আমরা ইনভেস্টিগেশন করে যা পেয়েছি, তার ভিত্তিতে বলছি এটা আত্মহত্যার কেস। আমার কথা মানবেন না যখন, তখন আপনারা আসুন। আমার যা বলার ছিল বলা হয়ে গেছে। তবে যাবার আগে এই কাগজটায় সই করে যাবেন দুজনেই। আমাদের কথাবার্তার সারাংশ এখানে লেখা আছে।রোশন কাগজটা টেনে নিয়ে পড়তে গিয়ে দারুণ চমকে উঠল। যতদূর সম্ভব এটা বাংলায় লেখা। ওসির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল, লোকটা হাসি হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবটা এমন, যে সে যেন বলছে, কী কেমন দিলাম? হাতের উদ্যত পেন নামিয়ে রেখে সই না করেই ফতিমাকে নিয়ে রোশন বাইরে চলে আসে। গোটা কথাবার্তাই সে তার মোবাইলে গোপনে রেকর্ড করে নিয়েছে।” সূত্রঃ "ফৈজান আহমেদ আত্মহত্যা করেন নি", অমিতাভ চক্রবর্ত্তী, গুরুচণ্ডা৯। ১৫ জুন ২০২৪IIT-Kharagpur student’s murder: ‘How could institute and police cover up so much,’ asks Faizan’s mother, Sukrita Baruah, Jun 15, 2024, The Indian Expressসদ্য প্রকাশিত রসিকার ছেলে উপন্যাস নিয়ে ​​​​​​​দেবকুমার ​​​​​​​চক্রবর্তীর আলোচনা। রসিকার ছেলেপ্রতিভা সরকার। প্রকাশক: গুরুচণ্ডা৯মূল্য—১৫০ টাকা। বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
    মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ও বিদেশি চকলেটের বাক্স - রমিত চট্টোপাধ্যায় | অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ ওরফে ছেনু তখন থেকে অপেক্ষা করে রয়েছে কখন চিঠিটা সবার পড়া শেষ হবে। বাড়িতে কারুর চিঠি আসা মানেই ওর খুব মজা, আরেকটা ডাকটিকিট এসে খাতায় জমা হবে। খাতায় ডাকটিকিটটা সাঁটার কায়দাটা একটু খটোমটো। ওকে তেতলার দাদাই পুরোটা শিখিয়েছিল। প্রথমে খামের পিছনদিকটা অল্প জল দিয়ে ভিজিয়ে তারপর আলতো করে ব্লেড ঘষে ঘষে খুউব সাবধানে স্ট্যাম্পটা তুলে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর পাতলা একফালি সেলোফেন পেপার আধভাঁজ করে স্ট্যাম্পের পিছনে অল্প একটুকুনি আঠা লাগিয়ে সেলোফেন পেপারের আরেকটা দিক আলতো করে ধরে খাতায় চিপকে দিতে হবে। এই করে করে ছেনুর খাতায় এত্তোগুলো ডাকটিকিট জমে গেছে।আজকে সকালে তেতলার পিসিমার কাছে যে চিঠিটা এল, দাদা মানে পিসিমার ছেলে অনেকক্ষণ ধরে পিসিমাকে পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। ছেনু গিয়ে দু'বার দরজার সামনে থেকে ঘুরেও এল, কত লম্বা চিঠি রে বাবা! শেষে আর থাকতে না পেরে ছেনু গিয়ে পিসিমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, কার চিঠি গো? দেখা গেল অদ্ভুত ব্যাপার, পিসিমা হাসছে, অথচ চোখের কোণে জল, পিসিমা হেসে বলল, কে আসছে জানিস? কান্টু আসছে রে কান্টু, তোর কান্টু দাদা। এদ্দিন পর ও আসছে, শুনে বিশ্বাসই করতে পারছি না, তাই তো বারবার করে শুনছি।ছেনু ছোট্ট থেকে পিসিমার কাছে কান্টুদার অনেক গল্প শুনেছে, কিন্তু কোনোদিন কান্টুদাকে চোখে দেখেনি আজ পর্যন্ত। অবশ্য দেখবেই বা কি করে, ছেনুর জন্মের আগেই তো পিসিমার বড় ছেলে কান্টুদা সেই সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে কি একটা দেশ আছে, কানাডা না কি নাম, সেইখানে চলে গিয়েছিল। সেই থেকে সেখানেই থাকে আর মাঝে মধ্যে চিঠি লিখে খবরাখবর জানায়। শুরুর দিকে বাংলায় লিখত বটে কিন্তু পরে কি জানি কেন শুধু ইংরেজিতেই চিঠি পাঠায়, তাই অন্যরা পিসিমাকে তর্জমা করে পড়ে পড়ে শোনায় কি লিখেছে।পিসিমার মুখেই ছেনু শুনেছে, কান্টুদার নাকি ছোটো থেকেই খুব বিদেশ যাওয়ার শখ, বড় হয়ে কলকাতার চাকরিতে মন টিঁকছিল না, কান্টুদা শেষমেশ ঠিক করল, না, আর কোলকাতায় না, খাস বিলেতেই যেতে হবে। যেমন কথা তেমনি কাজ, পরিবারের কিছু টাকার সাথে, নানা আত্মীয়স্বজনদের থেকে আরো কিছু টাকা ধার নিয়ে একসাথে জমিয়ে জাহাজে চেপে সোজা রওনা দিল বিলেতে। লন্ডনে নেমে নানা জায়গায় ঘুরে তেমন কিছু সুবিধা করতে না পেরে মুখ ভার করে বসেছিল, এমন সময় কার কাছে শুনেছে, নানা জায়গার লোক এসে নাকি লন্ডনে প্রচুর ভিড় হয়ে গেছে আর ওদিকে আরও দূরে কানাডায় নাকি প্রচুর কাজের লোকের দরকার। কান্টুদা শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, তাহলে এখানে বসে থেকে লাভ নেই, চলো কানাডা! আবার লন্ডন থেকে জাহাজে চেপে পাড়ি দিল আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে কানাডায়।সেখানে তো ভীষন ঠাণ্ডা, কান্টুদার সাথে গরম জামা বলতে একটাই কোট ছিল। যাই হোক রাস্তা থেকে আরেকটা ওভারকোট কেনার পর খোঁজখবর করে কম পয়সায় একটা বাড়িও ভাড়া করা হল। সেই কোট পরে কান্টুদা এদিক ওদিক কাজের খোঁজে যায়, কিন্তু যে সব কাজ জোটে সেসব মনে ধরে না পুরসভার চাকরির পাশাপাশি যাদবপুরের নাইট থেকে ইন্জিনিয়ারিং পাশ করা কান্টুদার। সারাদিনে খুব সামান্য কিছুই পেটে পড়ে, সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে রাত্রে ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। নতুন দেশে গিয়ে তো কিছুই ঠাহর করতে পারছে না, খাবার দাবার খেতে, টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতেই জমা টাকা হুহু করে খরচ হয়ে যাচ্ছে! দেখতে দেখতে দুটো মাস কেটে গেল, প্রথম মাসের বাড়িভাড়া তো শুরুতেই দিয়ে দিয়েছিল, বাড়িওলা এবার এসে পরের মাসের ভাড়া চাইছে। কান্টুদা অনেক করে বোঝায়, ক'টা দিন দাঁড়াও, আমি চাকরি পেয়েই ভাড়া মিটিয়ে দেব। বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিন দশেক কোনোক্রমে আটকে রাখা গেছিল, কিন্তু কপালের লেখা কে আটকাবে! একদিন খুব বৃষ্টি পড়ছে তার মধ্যে বাড়িওলা খুব চিৎকার চেঁচামেচি করে কান্টুদাকে বাক্সপ্যাঁটরা সমেত বাড়ি থেকে বের করে দিল। কান্টু দা কি আর করে, কোটখানা গায়ে চাপিয়ে বাক্স হাতে করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় অন্য একটা বাড়ির নীচে একটু আড়াল মতো পেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আড়াল পেলেও, এমন জোর বৃষ্টি শুরু হল যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাকভেজা ভিজে গেল।এমনি সময় হঠাৎ একটা মেয়ে পাশের বাড়ির জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে, কান্টুদাকে দেখতে পেয়ে বলল, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিজে যাবে তো! কে তুমি? কান্টুদা কি আর করে, মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ইন্ডিয়া থেকে এসেছি চাকরি করতে, একটু বিপদে পড়েছি, বৃষ্টিটা ধরলেই চলে যাব।তাতে মেয়েটা বলে, ওখানে দাঁড়িয়ে থেকো না, বৃষ্টির মধ্যে ঠাণ্ডায় জমে যাবে, দরজা খুলে দিচ্ছি, ওপরে এসে বসো। তারপর গরম চা খেতে খেতে মেয়েটা কান্টুদার মুখ থেকে গোটা ঘটনা শুনল। নরম মনের মেয়ে, শুনে টুনে বলল, এটা আমার দিদার বাড়ি, আমি দিদার সঙ্গেই থাকি। তোমার তো থাকার কোনও জায়গা নেই, এক কাজ করো, যদ্দিন না চাকরি পাচ্ছো এখানে আমাদের সাথেই থাকো, আমি দিদার সাথে কথা বলছি। আপাতত জামাকাপড় বদলিয়ে শুকনো কিছু পরে নাও।পিসিমা যখন গল্পটা ছেনুকে বলেছিল, ছেনু তো শুনে অবাক, এতো দারুণ ব্যাপার! কান্টুদাকে আর ভিজতে হল না, আচ্ছা ওদিন যে অত করে সাহায্য করল, সেই মেয়েটা কে গো? পিসিমা বলেছিল, দাঁড়া দেখাচ্ছি, বলে কোন একটা ডায়েরির মধ্যে থেকে একটা টুকটকে ফর্সা গোলগাল মেয়ের ছবি বের করে ছেনুর হাতে দিয়ে বলল, এই দ্যাখ। ছেনু হাতে নিয়ে সেই মেমসাহেবের ছবি দেখে অবাক হয়ে বলল, সেই ছবি তুমি কী করে পেলে? পিসিমা বলে, ওমা পাবো না কেন? কান্টুই তো পাঠিয়েছে। ভালো করে দেখে রাখ, এই হল তোর বৌদি, জুলি বৌদি। ওখানে চাকরি বাকরি জুটিয়ে সেই জুলির সাথেই তো পরে ওর বিয়ে হয়েছে।তারপর অনেক দিন কেটে গেছে, কান্টুদা পাকাপাকিভাবে কানাডাতেই থাকে আর মাঝে মাঝে চিঠিতে খবরাখবর পাঠায়, তেমনই এক চিঠি আজ সকালে এসেছিল। তাতে কান্টুদা জানিয়েছে, সে জুলি বৌদি আর বাচ্ছাদের নিয়ে এবার কোলকাতায় আসছে সবার সাথে দেখা করতে। সেই কথা শুনে তো সারা বাড়িতে হইহই পড়ে গেল। বিদেশের অতিথি তার ওপরে আবার বাড়ির বউ! তার সামনে তো বাড়ির একটা প্রেস্টিজ আছে নাকি? সাথে সাথে রংমিস্তিরির কাছে খবর গেল, সারা বাড়ি চুনকাম করা হবে। তিন বোতল অ্যাসিড কিনে আনা হল, পুরো বাথরুম সেই দিয়ে পরিষ্কার করা হবে ঝকঝকে তকতকে করে। খাবার পরিবেশনের জন্য এল চকচকে নতুন কাঁসার থালা-বাটি-গ্লাস। আরও হ্যানো ত্যানো নানান নতুন নতুন জিনিস কেনার লিস্টি তৈরি হল। মোটকথা যেভাবেই হোক শেয়ালদার সম্মান যাতে বজায় থাকে সেই চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা যাবে না।এই সব দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই টুকটুক করে কান্টুদাদের আগমনের দিন এসে পড়ল। পিসেমশাই আর দাদা মিলে সেই দমদম এয়ারপোর্ট থেকে আনতে যাবে, সকাল থেকে তার প্রস্তুতি চলছে। ছেলের জন্য নানান রকম রান্না করা চলছে পিসেমশাযের চিন্তা কানাডার বৌমা প্রথম দেখায় প্রণাম করবে, হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেবে, নাকি আবার ওদেশের রীতি মেনে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরবে! তেতলার দাদা জামা প্যান্ট পরে রেডি, বাবাকে বোঝাচ্ছে, আরে দাদা তো আছে, তুমি ঘাবড়াচ্ছ কেন। ওদিকে আবার রান্নাঘর জুড়েও প্রস্তুতি তুঙ্গে। ছেলের জন্য নানান রকম রান্না করা চলছে, পঞ্চব্যঞ্জন দিয়ে আপ্যায়ন না করলে চলবে! ওদিকে আবার চিন্তা পাঁঠার মাংস তো ঠিক আছে কিন্তু কানাডার লোকে পাকা রুইয়ের কালিয়া, আলু পটলের ডালনা, উচ্ছে ভাজা, বেগুন ভাজা এসব ঠিকমতো খাবে তো? আসলে এগুলো কান্টুদার খুব প্রিয় পদ ছিল তো।বাড়ির নিচে দুটো ট্যাক্সির হর্ন শোনা যেতেই বাড়িজুড়ে যেন হাজার ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠল। কেউ রান্নাঘরে ছুটছে, কেউ গ্লাসে করে জল নিয়ে আসছে আর বাকিরা সবাই মিলে সিঁড়ির দুধারে ভিড় করে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে। ছেনুও মনে মনে উত্তেজনায় ফুটছে, এতদিনের গপ্পের চরিত্রদের সাথে আজ দেখা হবে! ওরা সমস্ত বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে উঠতেই সটান বরণডালা হাতে পিসিমার মুখোমুখি। বিয়ে অনেকদিন হতে পারে, কিন্তু এবাড়িতে তো প্রথমবার, বরণ না করলে চলবে! সাথে চলল বাড়ির বাকি মহিলাদের সমবেত উলুধ্বনি।কিন্তু এদিকে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের মন ভেঙে গেছে, ছবির সাথে বাস্তবের বিন্দুমাত্র যে মিল নেই! ছবিতে যে গুবলু গাবলু মিষ্টি দেখতে বিদেশি মেয়েটাকে দেখেছিল, সে কই? এ তো বেশ রোগা, চোখ বসে গেছে, আর গরমের দেশে এসে ঘেমেনেয়ে একসা। সাথে আবার দুটো বাচ্চা ছেলেও আছে, ছেনুর থেকে বয়সে বোধহয় একটু ছোটই হবে কিন্তু দেখতে পুরোদস্তুর সাহেব। তারা কী যে বলছে ছেনু কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে দেখল কান্টুদা কিছু একটা বলতেই টুক করে নিচু হয়ে পিসিমাকে প্রণাম করে ফেলল আর মুখে তাদের সারাক্ষণ হাসি লেগেই রয়েছে।বৌদিও ঢুকেই হাতজোড় করে সবাইকে নমস্কার করল, যা দেখে সবাই ইমপ্রেসড। প্রণাম টনামের পালা চুকিয়ে মালপত্র নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে পিছনে দেখা গেল বিশাল বিশাল দুটো সুটকেস নিয়ে দাদা আর পিসেমশাই আসছে, পিসেমশাইয়ের মুখটা বেশ হাসি হাসি। আবার তার পিছনে দেখা গেল ছেনুর বড়দাও চলে এসেছে কান্টুদাদের জন্য প্রচুর সন্দেশ, রসগোল্লা, জিলিপি, সিঙাড়া, চমচম বাক্সভর্তি করে নিয়ে। কখন যে টুক করে এসব আনতে চলে গিয়েছিল, ছেনু টেরই পায়নি।তা সেসব সাজিয়ে দেওয়া হল প্লেটে করে। পিসেমশাই আবার বকাবকি করছে বড়দাকে, এত বেশি মিষ্টি টিষ্টি আনার জন্য, পিসেমশাইয়ের ধারণা সিঙাড়া, জিলিপি, এসব আনা উচিৎই হয়নি, এসব আনহেলদি খাবার ওরা ছুঁয়েও দেখবে না। কিন্তু কি আশ্চর্য! ওই বাচ্চা দুটো প্লেটের সবকিছু নেড়েচেড়ে দেখে প্রথমে সিঙাড়াটা ভেঙেই মুখে দিল। নতুন রকমের খাবার খেয়ে মুখ খুশিতে আরো উজ্জ্বল হয়ে বলে উঠল, বলে, ভেরি ভেরি টেস্টি, আই লাইক ইট! তা শুনে বড়দার আনন্দ আর দেখে কে! কান্টুদা ও একটু নিশ্চিন্ত হলো ওদের ভালো লেগেছে দেখে। শেষমেশ দেখা গেল, এখানকার খাবার দাবার সবারই পছন্দ হয়েছে, সাথে চামচ দিয়ে জিলিপি আর সিঙাড়া খাওয়ার কায়দা দেখে বাড়ির লোকেরা একটু মুখ টিপে হেসেও নিল।জলখাবার পর্ব মিটতে ওদের খাটে নিয়ে গিয়ে বসানো হল একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য, এতটা পথ জার্নি করে এসেছে। দুটো বাচ্চার নামও জানা গেল, পিটার আর ম্যাক্স। পদবি অবশ্য ব্যানার্জি। তো খাওয়া দাওয়ার পর পিটারের বড় বাইরে পেয়েছে, দাদা দেখিয়ে দিল বাথরুম- ওই যে বারান্দার শেষ প্রান্তে। যাক, এই মুহূর্তের জন্যই বাথরুম ভালো করে চুনকাম করিয়ে অ্যাসিড ঢেলে খুবসে পরিষ্কার করা হয়েছে, অবশ্য তাতেও একটা খিঁচ রয়েই গেছে। এই বাড়ির বাথরুমে তো আর ইউরোপিয়ান কমোড নেই, পা ভাঁজ করা দেশি প্যান, সেটায় বসতে পারবে কিনা চিন্তার বিষয়। তবে দেখা গেল বিশেষ বেগ মানুষকে প্যান আর কমোডের পার্থক্য নিয়ে মাথা ঘামাতে দেয় না, ও দিব্যি ভালো ছেলের মতো কাজকর্ম সেরে ভেতরে না পেয়ে, বাইরে মাথা বাড়িয়ে টয়লেট পেপার চাইছে। তারপর দাদা গিয়ে বোঝাল, টয়লেট পেপারের কোনো ব্যবস্থা নেই, জলেই ধুতে হবে। ছেনু দেখল সে পড়েছে ভারি মুশকিলে, অবশেষে কান্টুদা ভিতরে গিয়ে ব্যাপারটা সামাল দেয়। এখানকার কায়দা দেখে বাচ্ছাটা তো অবাক! তবে ভালো ভাবেই মানিয়ে নিয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে।এরমধ্যে পিসেমশাই গেলেন রান্নাঘরে ব্যস্ত পিসিমাকে ডাকতে, চলো চলো, রান্না তো হয়েই এসেছে প্রায়, এবার একটু ধাতস্থ হয়ে ছেলের সাথে বসে দুটো কথা বলো। একবার দেখো ছেলে কিরকম ফুল সায়েব হয়ে গেছে, চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলছে, উফ্, শুনেও গর্ব হয়! পিসিমা হাতের কাজ সামলে ভীষণ উজ্জ্বল মুখ নিয়ে ঘরে গিয়ে বসলেন, কতো বড়ো হয়ে গেছিস রে, আসতে কষ্ট হয়নি তো?কান্টুদা বলে, নো নো নট অ্যাট অল। হাউ আর ইয়ু?শুনেই পিসিমা ভেবলে গেলেন, বলে কি? তারপর উনি যাই বলছেন কান্টুদা উত্তর দিচ্ছে ইংরেজিতে। আর পিসিমা আরো ঘাবড়ে যাচ্ছেন। শেষে পিসেমশাইকে হাঁক পাড়লেন, ওগো শুনছ, এসব কী বিড়বিড় করছে গো, ছেলে কি পাগল হয়ে গেল!অবস্থা বেগতিক দেখে কান্টুদা বলে উঠল, নো নো, আয়াম ফাইন। জাস্ট ফরগট হাউ টু টক ইন বেঙ্গলি, বাট আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইয়োর ওয়ার্ডস পারফেক্টলি। পিসেমশাই তখন এসে পড়েছিলেন, পুরো ঘটনাটা পিসিমাকে বোঝাতে, পিসিমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়তে লাগল। ছেনু পাশ থেকে ব্যাপারটা পুরো দেখছিল, এতক্ষণ কান্টুদা কী যে বলছিল সেও একবর্ণ বুঝতে পারেনি, কিন্তু পিসিমাকে কাঁদতে দেখে আর থাকতে পারলনা। দাদাকে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে গো, পিসিমা কাঁদছে কেন! কান্টু দাদা কি পিসিমাকে বকেছে? দাদা আর পিসেমশাই ইংরেজি ভালোই বুঝত। দাদাই গোটা ঘটনাটা ছেনুকে বুঝিয়ে বলল, কান্টুদা আর বাংলায় কথা বলতে পারছেনা বলে পিসিমা খুব দুঃখ পেয়েছে।ব্যাপারটা শুনেও ছেনুও মনে খুব কষ্ট পেল, ভাবল দূর দূর, বিদেশ থেকে এসছো তো কি হয়েছে, যাও কথাই বলবোনা তোমার সাথে।ঘরে এসে দেখে ছোড়দা কী একটা কাগজ খুলে পড়ছে, ছেনু বলে এই শোন না, কানাডা কত দূরে রে?- অনেক দূর এখান থেকে, আমাদের হলো এশিয়া, তার পাশে ইউরোপ, তারপর আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে উত্তর আমেরিকার মধ্যে হলো গিয়ে কানাডা।- আমেরিকা মানে ওই দেশটা, যেটার ওপর তোর রাগ?- না উত্তর আমেরিকা একটা মহাদেশ, তার মধ্যে একটা দেশ আমেরিকা, তার পাশেই কানাডা।- যেখানেই হোক গে, একদম যাবি না কানাডায়, একদম যাবি না।ছোড়দা যারপরনাই অবাক হয়ে বলে, কেন কী হয়েছে কানাডায় গেলে? আর আমি খামোখা কানাডা যেতেই বা যাবো কেন?ছেনু ঠোঁট উল্টে বলে, ওখানে গেলেই তো সবাই বাংলা ভুলে যায়, বিচ্ছিরি দেশ!তবে ছেনু বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারলো না, একটু পরেই বদ্দি আর ছোদ্দির ডাক পড়ল পিসিমার ঘরে। ছেনুও পিছু পিছু গিয়ে দেখে, সেই সুবিশাল সুটকেসের একটা খোলা হয়েছে আর তার পেটের ভেতর কত্তো জিনিস। বদ্দি আর ছোদ্দির জন্য নকশাকাটা রঙিন কাঁচের শিশিতে করে কি একটা এনেছে। শিশির ওপরে একটু চাপ দিতে কি সুন্দর একটা গন্ধ বেরোলো। জিনিসটার নাম নাকি অডিকোলন, দুজনেই তো পেয়ে খুব খুশি (পরে একবার ওই শিশি কি ভেবে মা মাথাব্যথার ওষুধ হিসেবে মাথায় লাগাতে গিয়েছিল, মাঝে মধ্যে টুকটাক রাগ করলেও, বদ্দিকে ওইদিনের মতো অমন রেগে যেতে ছেনু কক্ষনো দেখেনি)। ছেনু সব বাইরে থেকেই দেখছিল। যদিও অন্য সময় পিসিমাদের ঘরে ছেনুর অবাধ যাতায়াত থাকে, তবে এখন তো ওকে ডাকেনি, কাছে যাবে কেন! মানসম্মান বলেও তো একটা জিনিস আছে না কি, মহারাজ বলে কথা। তবে ও বুঝতে পারল ওর কপালেও একটা দারুণ বিদেশি উপহার নাচছে। কারণ এ বাড়িতে তাকেই সবাই সবচে ভালোবাসে, দিদিদেরকে যদি এত সুন্দর জিনিস দেয়, তবে ওকে না জানি কি দেবে, ভেবেই ওর পেটের মধ্যে বুড়বুড়ি কেটে উঠল।ওই তো সুটকেস থেকে কি সুন্দর একটা জামা বের করছে, তবে বেশ বড়ই হবে ওর গায়ে। ওঃ, ওটা এনেছে কান্টুদার ভাইয়ের জন্য। এরপর বেরোল আর একটা কাঁচের বোতল , ওটা পিসিমার জন্য, পিসিমা সুগন্ধি খুব ভালোবাসে কিনা। এরপর একে একে বার হতে থাকল ছাতা, কলম, ব্যাগ, আরও কত কি। এক একটা জিনিস এক এক জনের জন্য। তারপর বেরিয়ে এল একটা বড়ো রঙচঙে টিনের গোলমতো বাক্স। ওমা! বাক্সটা কি সুন্দর দেখতে। একটা বরফের পাহাড়ের সামনে চকোলেটের ছবি। তাহলে এটা নিশ্চই বিদেশি চকলেটের বাক্স। যাক, এটাই তাহলে ছেনুর জন্য এনেছে। সত্যি কান্টুদার পছন্দের তারিফ না করে ছেনু পারে না। ওকি! বাক্সটা পিসেমশাইকে দিয়ে দিল কেন? আচ্ছা রাখতে দিল বোধহয়, পরে ওকে ডেকে দিয়ে দেবে, থাক যখন ডাকবে তখন আসবো, এখন আর দাঁড়িয়ে কাজ নেই।দুপুরে যখন কান্টুদারা খেতে বসল, সেও যেন এক দর্শনীয় বিষয়। সবাই দূরে দাঁড়িয়ে গোল হয়ে দেখছে। বেগুন ভাজা, পটল ভাজা, আলু ভাজা এসব খুবই পছন্দ হয়েছে বাচ্চাদের। সবকিছুই 'ডেলিশিয়াস' বলে হাসি মুখে খাচ্ছে চামচ দিয়ে। কান্টুদা হাত দিয়েই খাচ্ছে আর এটা ওটা করে ওদের খেতে সাহায্য করছে। জুলিবৌদি কান্টুদাকে ফিসফিস করে কি একটা জিজ্ঞেস করল, সম্মতি পেয়ে মাথা নেড়ে নিজেও হাত দিয়েই খাওয়া শুরু করল। পটলের ডালনা শুধু শুধু খেতে যাচ্ছিল, ডালটাও, কান্টুদা ভাতে মেখে খাওয়া দেখিয়ে দিল। মুশকিল হলো মাছের কালিয়া নিয়ে। বড় বড় পেটির মাছই দেওয়া হয়েছে কিন্তু না বুঝে বোনলেস ভেবে কামড় বসাতেই বিপত্তি। ঘটনা বুঝতে পেরে পিসিমা জলদি এসে কাঁটা গুলো টেনে বের করে দিলে, সবাই তৃপ্তি করে খেতে পারল। নতুন স্বাদের খাবার পেয়ে সবাই খুব খুশি, জুলিবৌদিও হেসে বলল, রিয়েলি আমেজিং ফুড। তা আবার পিসিমাকে রিলে করা হতে পিসিমার মুখে অবশেষে একটু হাসির রেখা দেখা গেল।এরপর আবার পাঁঠার মাংস খেয়ে সবারই পেট দমসম। কান্টুদা ছাড়া কেউ আর চাটনি খেতেই পারলো না। খাবার নিয়ে পিটার আর ম্যাক্সের আনন্দ দেখে পিসিমা পিসেমশাইকে শুনিয়েই দিলেন, কি গো তবে যে বলছিলে বাঙালি খাবার ওরা নাকি খেতে পারবে না!খাওয়া দাওয়ার পর পিসেমশাই বললেন, দাঁড়া বালিশ টালিশ সব পেতে বিছানা করে দিই, তোরা একটু গড়িয়ে নে। কান্টুদা শুনেই বলে, আরে না না, আমি হোটেল বুক করেছি তো! আসলে ওরা এখানে এডজাস্ট করতে পারবে কিনা ভেবে আগে থেকেই হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালে রুম বুক করে রেখেছি। আর এইটুকু জায়গায় এতজন আঁটবেও না।অবশ্য পিসেমশাই এর মনের মেঘ আবার কেটে গেল পরদিন যেই ওরা আবার হই হই করে হাজির। আজ পিটার আর ম্যাক্স এর দাবি বাড়িটা তাদের ভালো করে ঘুরে দেখাতে হবে, এই বাড়িটা নাকি তাদের ভারি পছন্দ হয়েছে। তাদের কথায়, ভেরি নাইস হাউস, লাইক অ্যান ওল্ড ম্যানসন, ফিলস ভেরি চার্মিং। কান্টুদার ভাইই আজ গাইড, ওর পিছন পিছন পিটার আর ম্যাক্স লাফাতে লাফাতে চলেছে। কান্টুদার সুটকেস থেকে আজকে আবার একটা দারুণ জিনিস বেরিয়েছে - একটা ঝকঝকে ইয়াশিকা ক্যামেরা। ব্যাগের মধ্যে থেকে লেন্স বের করে তাতে এঁটে, ফিল্মের কৌটো থেকে ফিল্ম বের করে পরালো। সেই ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে এদিক ওদিক খচ খচ করে ছবি তুলছে আর মাঝে মাঝে জুলিবৌদিকে সব স্থান মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করছে। সাথে ছোড়দাকে নিয়ে ছেনুও তাদের পিছু ধরেছে, আরে হাজার হোক নিজের রাজত্বে বেড়াতে আসা বিদেশি অতিথিদের প্রতি মহারাজেরও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! ছাদে গিয়ে তো ওরা ভীষণ আনন্দিত। দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ওপর থেকে নিচের সবকিছু খুদে খুদে দেখাচ্ছে, দারুণ হাওয়াও দিচ্ছে। এমনকি তখন সেই ছাদের থেকে হাওড়া ব্রিজ পর্যন্ত দিব্যি দেখা যেত। ছাদেও কান্টুদা অনেক ছবি টবি তুলল। ছেনুর মনে হলো আহা, পিটার, ম্যাক্স আর জুলি বৌদির সাথে দাঁড় করিয়ে ওর ছবিও যদি একটা তুলত!তবে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেলেন যখন দেখলেন, তাঁর জন্যই উপহার হিসেবে নিয়ে আসা বিদেশি চকলেট বাক্স থেকে বের করে পিটার, ম্যাক্স আর পিসেমশাই দিব্যি আনন্দ করে খাচ্ছে। সোনালি রাংতা দেওয়া কি সুন্দর দেখতে গোল গোল চকলেটগুলো! সে দৃশ্য দেখে তিনি নিজেকে সান্তনা দিলেন, আসলে চকলেটগুলো শুধু তাঁর জন্য নয়, সবার খাওয়ার জন্যই আনা হয়েছে, ঠিকই তো, ভালো জিনিস সবাইকে দিয়ে থুয়েই খেতে হয়। পরে যখন পিসিমা ডেকে হাতে দেবে, তখনই খাওয়া যাবে না হয়।কান্টুদারা মোট দিনদশেকের মতো ছিল কোলকাতায়। তারই মধ্যে ঠিক হল, ওরা নাকি দার্জিলিং ঘুরতে যাবে। একবার এতদিন পর ভারতে আসা হয়েছে, কলকাতার বাইরেও দু একটা জায়গা একটু ঘুরে দেখে নেওয়াই ভালো। শুনে ছেনুর ভারি মনখারাপ হয়ে গেল, সবে দুজনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে হবে করছিল, তার মধ্যেই আবার ঘুরতে চলে যাবে। পাঁচ দিনের মধ্যেই অবশ্য ওরা আবার ঘুরেটুরে ফেরত আসতে বাড়িটা আবার হইচইয়ে ভরে উঠল। আর দুদিন পরেই কানাডায় ফিরে যাবে।কান্টুদাদের চলে যাওয়ার দিন তেতলার দাদা ছেনুকে ডাকতে এলো, যাবি নাকি প্লেন দেখতে? ছেনু তো শুনেই একলাফে রাজি। ছোড়দাকেও ডাকতে, ছোড়দা বললো আজ কলেজ আছে হবে না। যাই হোক, ছেনু মাকে বলে, একটা ভালো দেখে জামা পরে, পিসেমশাই আর দাদার সাথে রওনা দিল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে, দার্জিলিং থেকে ফিরে কান্টুদারা আবার ওখানেই উঠেছে, রাত্রে হোটেলে থাকত, আবার সকাল সকাল চান টান করে শেয়ালদায় চলে আসতো। হোটেলের লবি দিয়ে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে ছেনু লিফটে চড়ে ওদের ঘরের দিকে গেল। ঘরে ঢুকে দেখে ওরাও বেরোনোর জন্য তৈরি। সুটকেস টুটকেস হাতে নেওয়ার পর জুলিবৌদি পিটার আর ম্যাক্সের দিকে একবার তাকাতেই তারা তড়াক করে উঠে খাটের তলা, বাথরুম, আলমারি, টেবিলের ড্রয়ার কোথাও কিছু জিনিসপত্র পড়ে আছে কিনা সব খুঁজে দেখে ফেলল। ছেনু তো কাণ্ড দেখে তাজ্জব।যাই হোক হোটেল থেকে দুটো ট্যাক্সিতে চেপে ওরা সবাই দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেল ঠিক সময়ে। ব্যাগপত্র চেকিং টেকিংয়ের পর এবার বিদায়ের পালা। ক'দিনেরই বা দেখা, তবুও ছেনুর গলায় যেন একটা মনখারাপ দানা বাঁধছিল। ওরা একসময় শেষবারের মতো হাতটাত নেড়ে ঘেরাটোপের মধ্যে হারিয়ে গেল। পিটার আর ম্যাক্সও অনেকক্ষণ ধরে হাত নাড়ছিল ওদের দিকে ফিরে ফিরে, মানে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল আর কি। ওরা চলে যেতে দুঃখ কাটাতে পিসেমশাই দুজনকে নিয়ে গেলেন প্লেনের নামা ওঠা দেখাতে। তখন টিকিট কেটে একটা ঘেরা বারান্দা মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে প্লেন দেখা যেত। ছেনু তো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনগুলো দেখে পুরো হাঁ। অবাক হয়ে দেখছে কত বড় বড় সব ডানাওলা বাস। জানলাগুলো সব এই পুঁচকে পুঁচকে লাগছে। ছেনু ভাবে এগুলো সব আকাশে ওড়ে কী করে? এতে চেপেই তো কান্টুদারা এসেছে! ওমনি দাদা আঙুল দিয়ে দেখাল দূউউরে একটা প্লেন মাঠের মধ্যে দৌড় লাগিয়েছে। যত এগোচ্ছে দৌড়ের বেগ বাড়ছে। এক সময় সামনের চাকাটা টুপ করে মাটি ছেড়ে আকাশে উঠে পড়ল।বাড়ি ফিরেও ছেনু ওদের কথাই ভাবছিল। এক সময় আর থাকতে না পেরে তেতলায় পিসিমার ঘরের দিকেই পা বাড়াল। গিয়ে দেখে পিসিমা কি সব সেলাই টেলাই করছে, সব ছুঁচ সুতো বের করেছে। পিসিমা ওকে দেখেই হেসে বললো কেমন প্লেন দেখলে বলো? ছেনু মাথা নাড়তেই পিসিমা বললো ওখানে একটা বাক্স রাখা আছে, আনো তো দেখি একবার। ছেনু তাকিয়ে দেখে সেই বিদেশি চকলেটের বাক্স। দৌড়ে গিয়ে তাক থেকে সেটা পিসিমার কাছে নিয়ে আসতে আসতেই ওর মনে একটা খটকা লাগল, এত হালকা কেন? তবে কি মাত্র অল্প ক'টা পড়ে আছে আর!পিসিমা বললো এনেছ, দাও তো। পিসিমা বাক্সটা খুলতেই ছেনু দেখে চকলেটের কোথায় কি, বাক্স বেবাক ফাঁকা! পিসিমা ছেনুকে বললো খেয়েছিলে তো চকলেট? কেমন লাগল? ছেনু বলে, কই না তো!- সে কি পিসেমশাই দেয়নি? আসলে চকলেট ভালোবাসে বলে বাবার জন্য এই চকলেটের বাক্সটা এনেছিল কান্টু। পিসেমশাই শুরুর থেকেই এমন টপাটপ খাচ্ছে, আমি বললাম দিও কিন্তু সবাইকে। তারপর খোকনও ওর বন্ধুদের কয়েকটা দিয়েছে। তারপর যে ক'টা পড়েছিল ওরা দার্জিলিং যাওয়ার সময় আমি সঙ্গে করে পাঠিয়ে দিলাম। ইসসস্ মাঝখানে যে তুমি বাকি পড়ে গেছ, এই দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আমি খেয়ালও করিনি। তারপর বাক্সটা ধুয়েমুছে সরিয়ে রেখেছিলাম ছুঁচসুতো রাখব বলে।ততক্ষণে মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ আর ওখানে থাকলে তবে তো! তিনি চোখের জল মুছতে মুছতে দোতলায় দৌড় মেরেছেন।পুনশ্চ: দুদিন পর আবিষ্কার হলো, কান্টুদা সেই দারুণ ইয়াশিকা ক্যামেরাখানা ভুলে এই বাড়িতেই ফেলে চলে গেছে। দার্জিলিং থেকে ফিরে রিল বদলাবে বলে বোধহয় সরিয়ে রেখেছিল, আর বের করা হয়নি। বাড়িতে ফটোগ্রাফি একমাত্র ছেনুর বড়দাই ভালো জানতো। তাই পিসেমশাই আর কি করবেন ভেবে না পেয়ে, সেই ক্যামেরা বড়দাকেই দিয়ে দিলেন। বড়দার হাত বেয়ে কালক্রমে সেই ক্যামেরাখানা বহুদিন পর মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের হস্তগত হয় ও তা দিয়েই পরবর্তীকালে তিনি দেদার ছবিছাবা তোলেন। মহারাজের সিন্দুকেরই কোনো এক কোণে সেই প্রাচীন ক্যামেরা, লেন্স টেন্স সমেত আজও বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। তা বিদেশি চকলেটের বদলে বিদেশি ক্যামেরা - এই বা মন্দ কি!
    বিপ্লবের আগুন - পর্ব নয় - কিশোর ঘোষাল | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়৯ওরা চলে যেতে ভল্লা গ্রামের দক্ষিণ দিকে হাঁটতে শুরু করল। গ্রামের এদিকটা এখনও তার দেখা হয়নি। এদিকে বসত কম। বিচ্ছিন্ন কিছু আবাদি জমি, আর অধিকাংশই অনাবাদি পোড়ো জমি। ভল্লা হাঁটতে লাগল। অনেকক্ষণ চলার পর তার মনে হল, সে গ্রামের সীমা ছাড়িয়ে এসেছে। জনহীন প্রান্তর - কিছু বড় গাছপালা, ছোটছোট ঝোপঝাড় সর্বত্র। আরও কিছুটা গিয়ে তার কানে এল বহতা জলের শব্দ। অবাক হল – এমন রুক্ষ প্রান্তরে কোথা থেকে আসছে এই ক্ষীণ জলধ্বনি। এগোতে এগোতে ভল্লা ছোট্ট একটা নালার পাশে দাঁড়াল। পূব থেকে পশ্চিমে বয়ে চলেছে জলধারা। খুবই সামান্য – কিন্তু ভল্লার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথা থেকে আসছে, এই জলধারা? এ অঞ্চলে বর্ষা হয় সামান্যই – তাহলে কোন উৎসমুখ এই জলধারাকে সজীব রেখেছে এই মধ্য শীতেও। এই গ্রামের অবস্থান চিত্রটি সে মনে মনে চিন্তা করল কিছুক্ষণ। এই গ্রামে আসার সময় পাহাড়ের কোলে রাজপথের ধারে সেই সরোবর দেখেছিল। সেই রাজপথ থেকে অনেকটাই নিচে এই গ্রামের অবস্থান। আজ সকালে যে দীঘির ঘাটে সে বসেছিল, সেটি এই গ্রামের পূর্ব সীমানায় এবং তার পরেই রয়েছে খাড়া অনুচ্চ যে পাহাড়টি – তারই শীর্ষে রয়েছে রাজপথের সরোবরটি। আজ সকালে গ্রাম পরিক্রমণের সময় আরও কয়েকটি পুকুর সে লক্ষ্য করেছে। তাহলে ওই দুই সরোবর, ওই পুকুরগুলি এবং এই নালার উৎস কি একই? প্রকৃতির কি আশ্চর্য লীলা – সরোবর কিংবা পুকুরগুলি কখনো প্লাবিত হয় না, কিংবা জলহীনও হয় না। ওগুলিকে সম্বৎসর পরিপূর্ণ রেখে উদ্বৃত্ত জলরাশি প্রবাহিত হয় এই নালাপথে! বর্ষায় হয়তো এই নালার প্রবাহ গতি পায়। ভল্লা আশ্চর্য হল। সে নালাপথের উজান বরাবর এগিয়ে চলল পূর্বদিকে। লক্ষ্য করতে করতে চলল নালার এপাশের জমির প্রকৃতি, গাছপালা ঝোপঝাড়। ভল্লার কৃষিকাজে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। তবু রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে যেটুকু সে দেখেছে, তার মনে হল, আপাত অনুর্বর এই জমিকেও কৃষিযোগ্য করে তোলা সম্ভব। একটু পরিশ্রম করলে, এই নালার জল কৃষিকাজে সম্বৎসর ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রায় ক্রোশার্ধ হেঁটে সে পৌঁছল গ্রামের পূর্বসীমানার সেই পাহাড়তলিতে। এই জায়গাতেই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা একটি শীর্ণ জলধারা সমতলে নেমেছে। এই জায়গায় জলধারা কিছুটা বিস্তৃত, বড়ো বড়ো কিছু পাথর আর নুড়ির মধ্যে দিয়ে পথ করে কিছুদূর বয়ে গেছে। তারপরেই শুরু হয়েছে শীর্ণ নালা প্রবাহ। ভল্লা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করল, আশপাশের জমি-জায়গা। তার মনে হল, এই সব পাথর-নুড়ি আর মাটি দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব দুর্বল বাঁধ। তার উজানে বানিয়ে তোলা যেতে পারে ক্ষুদ্র জলাধার। এই স্থানটির অবস্থান যেহেতু একটু উঁচুতে, অতএব ওই জলাধার থেকে কৃত্রিম নালি কেটে জলকে চারিয়ে দেওয়া যেতে পারে সংলগ্ন নাবাল জমিগুলিতে। নিষিক্ত জমিতে চাষ করা যেতে পারে কিছু কিছু উপযোগী ফসল। ভল্লা দক্ষ সৈনিক, তীক্ষ্ণবুদ্ধি গুপ্তচর। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় সে জানে, একটি গ্রামের সকল অধিবাসীকে কখনও উত্তেজিত করা যায় না। কতিপয় মানুষ বিদ্রোহী হয়। ভল্লা জানে এই গ্রামেরও নির্বিবাদী অধিকাংশ মানুষ হয় উদাসীন থাকবে, নয়তো ক্ষুব্ধ হতে থাকবে ভল্লার ওপর। বিদ্রোহী ছেলেদের বাবা-মা, দাদু-ঠাকুমা পরিজন সকলেই ভল্লার ওপর ক্রুদ্ধ হতে থাকবে, তাদের ছেলেদের “মাথাগুলি চিবিয়ে খাওয়ার” জন্যে। সেই ক্রোধ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে, গ্রামের অর্থনৈতিক কিছু উন্নতির দিশা দেখাতে পারলে। সামান্য হলেও, ওই জলাধার এবং উদ্বৃত্ত কিছু ফসলযোগ্য জমির সৃজন, বাড়িয়ে তুলবে ভল্লার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা। সন্ধ্যার কিছু আগে ভল্লা আগের জায়গাতেই ফিরে এল। সূর্য অস্ত গেলেও পশ্চিমদিগন্তে তার আলোর রেশ এখনও রয়েছে। বড়ো গাছের নিচে বসতে গিয়ে দেখল, তিনজন ছোকরা মাটিতে শুয়ে আছে। হাপরের মতো ওঠানামা করছে তাদের বুকগুলো। ভল্লা খুশি হল, কিন্তু চেঁচিয়ে ধমক দিল তিনজনকেই। বলল, “দৌড়ে এসে হাঁফাচ্ছিস, কিন্তু শুয়ে শুয়ে হাঁফাচ্ছিস কেন? একজায়গায় দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাঁফানো যায় না? ওঠ, উঠে বস। এতক্ষণের পরিশ্রমে পুরো জল ঢেলে দিলি, হতভাগারা”। ভল্লার কথায় তিনজনেই উঠে বসল এবং হাঁফাতে লাগল। ভল্লা বলল, “ধর শত্রুপক্ষের তাড়া খেয়ে, এ অব্দি নিরাপদেই এসেছিস। কিন্তু এরপর কী করবি?”“ওফ্‌। আগে একটু দম নিতে দাও ভল্লাদাদা”।ভল্লা আবারও ধমকে উঠল, “না, দম নিতে হবে, তার সঙ্গে ভাবনা চিন্তাও করতে হবে”। এই সময় আরও পাঁচজন ছেলে পৌঁছল। ভল্লা বলল, “বাঃ, প্রথম দিনেরপক্ষে ভালই – চল আমরা এসসঙ্গে নামতা বলি...এক এক্কে এক, এক দুগুণে দুই...জোরে জোরে চেঁচিয়ে...সবাই একসঙ্গে”। সন্ধের আগেই বাইশ জন এসে পৌঁছল, আরেকটু পরে পৌঁছল আরও বারো জন। সকলে একটু ধাতস্থ হতে ভল্লা বলল, “বিয়াল্লিশ জন ফিরেছিস দেখছি, বাকিরা?”“ওরা সরোবর অব্দি গিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে নামেনি, ফিরে আসছে গ্রামের পথেই”। ভল্লা হাসল, “এরকম রোজ দুবেলা দৌড়তে পারবি? খুব ভোরে আর আজকের মতো বিকেলে?” “পারবো”। “ঘোড়ার ডিম পারবি। কাল সকালে গায়ের ব্যথায় উঠতেই পারবি না। বোনকে দিয়ে গা-হাত-পা টেপাবি”।“পারবো”। কেউ কেউ বলল, কিন্তু তাদের গলায় আগেকার সে জোর নেই। ভল্লা হাসল, “কাল সকালে পায়ে, গায়ে, কাঁধে ব্যথা হবে। হবেই। কিন্তু কালকেও দৌড়তেই হবে, আজকের মতো এত তাড়াতাড়ি না হলেও – হাল্কা ছন্দে। একটু দৌড়লেই দেখবি – গায়ের ব্যথা কমে যাবে – কষ্ট কমে যাবে। আর দৌড়তে দৌড়তেও ভাববি, চিন্তা করবি – যা খুশি, যা তোর মন চায়। মনে রাখিস দৌড়লে আমাদের সর্বাঙ্গের পেশীর শক্তি বাড়ে। শক্তি বাড়ে আমাদের ফুসফুসের, আমাদের হৃদয়ের। কিন্তু মস্তিষ্ক? তার কী হবে? ভয়ংকর পরিশ্রমের মধ্যে, প্রচণ্ড আতঙ্কে, ভীষণ ক্লান্তিতেও আমাদের মাথা যেন কখনো অলস না থাকে। কোন কিছু না পেলে আমাকেই খুব গালাগাল দিবি। ভাববি কি কুক্ষণেই না ভল্লাদাদার কাছে গিয়েছিলাম। শয়তান লোকটা আমাদের সবাইকে খাটিয়ে মারছে, আর নিজে বসে বসে শুধু উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। ও হ্যাঁ, কাল সকালে আমিও তোদের সঙ্গে দৌড়বো। কমলিমায়ের যত্নে শরীরটা বড়ো অলস হয়ে উঠেছে – সেটাকে আবার চাঙ্গা করতে হবে”। অন্যদিনের তুলনায় আজ বাড়ি ফিরতে একটু দেরিই হল জুজাকের। কমলি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন – বারবার বেরিয়ে বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে গলা বাড়িয়ে পথের দিকে তাকিয়ে দেখছিলেন, মানুষটা আসছে কিনা। আজ অমাবস্যা। দুপাশের গাছপালা, ঝোপঝাড়ে গভীর অন্ধকার। তারার আলোয় পথটাকেই অস্পষ্ট ঠাহর করা যায়। পথের প্রেক্ষাপটে মানুষের অবয়ব বুঝতে পারা যায়। কমলির উদ্বেগ বাড়ছিল, জুজাক গ্রামপ্রধান ঠিকই, তবে তিনি শুনেছেন রাজধানী থেকে আসা রাজকর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামপ্রধানকে সমীহ করে না। তারওপর জুজাক কিছুটা মুখফোঁড় বদরাগীও বটে। আধিকারিকদের কোনো তির্যক প্রশ্নের ব্যাঁকা উত্তর দিয়ে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে তার জুড়ি নেই। তার এই স্পষ্টবাদী সরল চরিত্রের জন্যেই গ্রামের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে গ্রামপ্রধান বানিয়েছে। জুজাকের জন্য একদিকে কমলি যেমন গর্ব অনুভব করেন, অন্যদিকে ততটাই শঙ্কিতও থাকেন সর্বদা। তিনি জানেন দিনকাল বদলে চলেছে নিরন্তর। অপ্রিয় সত্যকথা কেউই সহ্য করতে পারে না। প্রশাসনিক আধিকারিকরা তো নয়ই। আজ অন্য আরেকটি বিষয়ও কমলির দুশ্চিন্তাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ভল্লা। আজ গ্রামে সকলের সামনে সে নিজের মুখেই স্বীকার করেছে তার অপরাধের কথা। তার নির্বাসন দণ্ডের কথা। রাজকর্মচারীদের কাছে কী সে সংবাদ পৌঁছে গিয়েছে? যদি তারা জেনে গিয়ে থাকে ভল্লা জুজাকের ঘরেই আশ্রয় পেয়েছে। এই ঘরেই সে চিকিৎসা এবং সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে। সেটা কি তারা রাজদ্রোহীতা বলে মনে করবে? জুজাককে শাস্তি দেবে? কশাঘাত করবে? কিংবা বন্দী করে রক্ষীদের দিয়ে শারীরিক অত্যাচার করবে?হতভাগা ছেলেটা গেলই বা কোথায় কে জানে? নিজের ঘরে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে “আমি একটু ঘুরে আসছি, মা” বলে বেরিয়েছিল শেষ দুপুরে। এখনও পর্যন্ত তারও দেখা নেই। ঘরে থাকলে, একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে আসতে পারত ছেলেটা। জুজাকের সঙ্গে যারা গিয়েছিল তাদের বাড়ি গিয়েও খবর আনতে পারত। বলা যায় না, জুজাক হয়তো, তাদের কারো বাড়িতে বসে জমিয়ে গল্প করছে। লোকটার কাণ্ডজ্ঞান ওরকমই। তার জন্যে ঘরে যে কেউ উৎকণ্ঠায় বসে আছে, সে কথা তার মনেই পড়ে না। ঘরবার করতে করতে কমলি লক্ষ্য করলেন, তুলসীমঞ্চের প্রদীপে তেল ফুরিয়ে এসেছে, সলতেটা ম্লান হয়ে জ্বলছে। দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে রেডির তেল এনে প্রদীপে ঢাললেন, সলতেটা একটু উস্কে দিলেন। আর তখনই বেড়ার দরজা খোলার শব্দ হল, চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, জুজাক ঢুকছেন। “এত রাত হল? কিছু গোলমাল হয়নি তো?”জুজাক কোন উত্তর দিলেন না, ঘোঁত করে নাকে শব্দ করে, দাওয়ায় বসলেন। কমলি দৌড়ে গিয়ে ঘটি করে পা ধোয়ার জল আনলেন। ঘর থেকে নিয়ে এলেন জুজাকের গামছাখানা। জুজাক ঘটির জলে পা ধোয়া শুরু করতে, কমলি বললেন, “কিছু বললে না, তো? এত দেরি হল কেন?”দুই পা ধুয়ে, গামছা দিয়ে ধীরেসুস্থে পা মুছতে মুছতে জুজাক বললেন, “গাঁয়ে ফিরেছি অনেকক্ষণ। ও পাড়ায় ঢুকতেই লোকজনের মুখে তোমার ছেলের গুণকীর্তন শুনছিলাম। তুমি শুনেছ?”“শুনেছি”।“তা আর শুনবে না? তোমার আদরের ছেলের জন্যে কাছারিবাড়িতেও আমাকে কত কথা শুনতে হল। খাবার জল দাও তো”। কমলি ঘর থেকে খাবার জল এনে দিলেন। “কী বলেছে তারা?”জুজাক মাটির ঘটি হাতে তুলে নিয়ে নিঃশেষ করলেন ঘটিটা। তারপর তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে বললেন, “হবে আর কী? গিয়েছিলাম কান্নাকাটি করে এ গ্রামের মানুষদের কিছুটা কর যদি কমানো যায়। অন্ততঃ সম্বৎসর সকলের পেটটা যাতে চলে যায়। সে কথায় কানই দিল না? বললে, ভল্লা তোমার বাড়িতে আছে? বললাম, আছে। বললে, একজন অপরাধী – যার রাজধানীর প্রশাসন থেকে নির্বাসন দণ্ড ঘোষণা হয়েছে। তাকে তুমি বহাল তবিয়তে খাওয়াচ্ছো, দাওয়াচ্ছো, চিকিৎসা করাচ্ছো। আর রাজার কর দিতেই তোমার নাকে কান্না শুরু হয়ে গেল?”কমলি উদ্বেগের স্বরে বললেন, “কী অবস্থায় ছেলেটা এসেছিল তুমি বললে না?”জুজাক একটু ঝেঁজে উঠে বললেন, “বলব না কেন? সবই বলেছি”। তারপর একটু থেমে নরম স্বরে বললেন, “ওরা রাজ কর্মচারী। তাদের কাছে ভল্লার পরিচয় অপরাধী। সে আর মানুষ নয়, জন্তু। ওদের কথা, ঘেয়ো কুকুরের মত যেভাবে এসেছিল, সেভাবেই ওকে তাড়িয়ে দিইনি কেন? জগৎটা তোমার মতো মায়ের মন নিয়ে যে চলে না, কমলি”।কমলি জুজাকের সহানুভূতির সুরে আশ্বস্ত হলেন। মানুষটাকে ওপরে ওপরে কঠোর মনে হলেও, মনটা নরম। তা যদি না হত, জুজাক জোর করেই ভল্লাকে তাড়িয়ে দিতে পারতেন। তৎক্ষণাৎ না হলেও, যেদিন ভল্লার প্রথম জ্ঞান হল, সেদিনই। আজকে রাজ-প্রতিনিধির যে তিরষ্কার তিনি শুনে এলেন – এমন যে হবে সেকথা জুজাক বহুবার বলেছেন। বারবার বলেওছেন, হতভাগাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেব – কিন্তু দিতে পারেননি। মানবিক বোধের কাছে তার বাস্তব যুক্তি হার মেনেছে। কমলি জিজ্ঞাসা করলেন, “কিন্তু ওদের কাছে এ খবর পৌঁছে দিল কে? নিশ্চই এই গাঁয়েরই কেউ?”“সে তো বটেই। সব গ্রামেই ওদের গুপ্তচর থাকে। তাদের কাজই তো ওদের খবর দেওয়া। সে যাক, ছোঁড়াটাকে ডাক দেখি একবার”।“সে তো সেই দুপুরের দিকে বেরিয়ে গেছে, এখনও ফেরেনি”।“কোথায় গিয়েছে তোমাকে বলেও যায়নি? আশ্চর্য। কবিরাজদাদার বাড়িতে আমরা বেশ কয়েকজন কথাবার্তা বলছিলাম। সেখানে শুনলাম, সকালে ভল্লার বক্তৃতা শুনে কয়েকজন ছোকরা নাকি বেশ বিগড়ে গেছে। দুপুরের পর থেকেই তারাও বাড়িতে নেই। তবে কি...”।কমলি আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “তবে কি গো? ওই ছোঁড়াগুলো কি ভল্লাকে মারধোর করবে?”জুজাক হেসে ফেললেন কমলির সরলতায়, বললেন, “মেয়েদের লাঞ্ছনা রোধ করতে গিয়ে সে অপরাধী হয়েছে। রাজ-প্রশাসন লম্পট মানুষটাকে শাস্তি না দিয়ে, সাজা দিয়েছে ভল্লাকে। এ গাঁয়ের ছোকরাদের চোখে ভল্লা এখন বীর-নায়ক। কবিরাজদাদা বলছিলেন, ভল্লা বোধ হয় ছোকরাদের নিয়ে একটা দল গড়তে চাইছে”।কমলি অবাক হয়ে বললেন, “কিসের দল?”জুজাক আবার একটু ঝেঁজে উঠলেন, বললেন, “তার আমি কী জানি? তোমার মনে আছে, কবিরাজদাদা ওর শরীরের লক্ষণ দেখে বলেছিলেন, ভল্লা সাধারণ এলেবেলে ছেলে নয়। যথেষ্ট শক্তিশালী যোদ্ধা। আরও বলেছিলেন, ওই চরম অসুস্থ অবস্থায় ওর এখানে আসাটা হয়তো আকস্মিক নয়। হয়তো গোপন কোন উদ্দেশ্য আছে। আজকে সকলের সামনে কবিরাজদাদা সে প্রসঙ্গ তোলেননি। কিন্তু আমারও এখন মনে হচ্ছে কবিরাজদাদার কথাই ঠিক”।কমলি কিছু বললেন না। হাঁটুতে থুতনি রেখে গভীর চিন্তা করতে লাগলেন, ভল্লাকে দেখে কই আমার তো তেমন কিছু মনে হয়নি। এ গ্রামে আসা থেকে আমি তাকে যত কাছে থেকে দেখেছি, আর কে দেখেছে? তার কথাবার্তায়, তার মা ডাকে কোথাও কোন উদ্দেশ্যর সন্ধান তো তিনি পাননি। আজকে গ্রামের সবার সামনে মন খুলে নিজের অপরাধের কথা যে ভাবে সে স্বীকার করেছে, তার মনে যদি সত্যিই কোন পাপ বা অপরাধ বোধ থাকত, পারত ওভাবে বলতে?জুজাক বললেন, “খাবার বাড়ো, খেয়ে শুয়ে পড়ি”।কমলি তাড়াতাড়ি উঠে খাবার আনতে ঘরে ঢুকলেন। সেদিকে তাকিয়ে জুজাক বললেন, “তোমার ছেলে যত রাতই হোক বাড়িতে তো ঢুকবেই। তুমি ছাড়া তার জন্যে কে আর রাত জেগে খাবার কোলে বসে থাকবে? এলে বলে দিও, সামনের অষ্টমীতে ওকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে কাছারি শিবিরে যেতে হবে। বলে দিও, না গেলে ওর তো বিপদ হবেই, আমাদেরও রক্ষা থাকবে না”।ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    ধ্যান ও স্নায়ুবিজ্ঞান - দ্বিতীয় পর্ব  - অরিন | (Source: Forest bathing, Greater Good, Berkeley) প্রথম পর্ব এখানে  ধ্যানের সূত্রপাত  ধ্যান এবং মানব মনপ্রবাহ - ব্রুস লি ও মিহালি  জিকসেনমিহালি (সূত্র : Bruce Lee. Artist of Life) Meditation article in Bengaliধ্যান বিষয়ক আগের লেখা https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=30276ধ্যান  যেন প্রবহমান নদীর মতন মন  https://miro.medium.com/v2/resize:fit:1400/format:webp/0*czyV80pxGYjalLAj.png(মিহালি সিকসেনমিহালি মশাইয়ের প্রবহমান মনের চিত্রণ, সূত্র:  https://medium.com/human-restoration-project/march-flow-the-psychology-of-optimal-experience-cb6b7029742c )ধ্যান ও চিকিৎসার জগৎ  জন কাবাত  জিন, MBSR আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানের প্রেক্ষিতে ধ্যানের, বিশেষ করে মনোনিবেশের ধ্যানের গল্পটি শুরু হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ৪২ বছর আগে, জন কাবাত জিন নামক এক চিকিৎসকের সূত্রে । (ক্রমশ)  ধ্যান ও মানুষের মনের ওপর তার প্রতিক্রিয়া: গবেষণা কি বলে?(আসছে এর পর)  স্নায়ুবিজ্ঞানের সহজ পাঠ  https://www.frontiersin.org/files/Articles/856697/fpsyg-13-856697-HTML-r1/image_m/fpsyg-13-856697-g001.jpg(স্বপ্ন, অ্যানাসথেসিয়া, ধ্যান ইত্যাদি বিভিন্ন অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্কে কি ধরণের পরিবর্তন হয় তার একটি রূপরেখা, সূত্র: "EEG Microstates in Altered States of Consciousness", https://doi.org/10.3389/fpsyg.2022.856697 বিশদ ব্যাপারটি লেখায় বর্ণিত ) https://media.springernature.com/full/springer-static/image/art%3A10.1038%2Fs41598-021-90729-y/MediaObjects/41598_2021_90729_Fig1_HTML.png( ধ্যান ও এমআরআই , মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত চলাচল ধ্যানে কতটা বাহিত হয় ও তাকে বোঝা যায় কিভাবে (লেখাটিতে বিস্তারিত) https://ars.els-cdn.com/content/image/1-s2.0-S0149763414000724-gr2.jpg(মস্তিষ্ক এবং ধ্যান, সূত্র: "Is meditation associated with altered brain structure? A systematic review and meta-analysis of morphometric neuroimaging in meditation  practitioners", https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2014.03.016 )  https://media.springernature.com/full/springer-static/image/art%3A10.1038%2Fnrn3916/MediaObjects/41583_2015_Article_BFnrn3916_Fig1_HTML.jpg?as=webp( মস্তিষ্কের যে অংশগুলোতে ধ্যানের প্রভাব বিস্তৃত হয় বলে মনে করা হয়, সূত্র: Tang, YY., Hölzel, B. & Posner, M. The neuroscience of mindfulness meditation. Nat Rev Neurosci 16, 213–225 (2015). https://doi.org/10.1038/nrn3916 ) MBSR এবং কাবাত জিন  ক্লিনিক্যাল গবেষণা কি বলে?  আন্তর্জাতিক সমতা প্রকল্প  স্নায়ুবিজ্ঞানের সহজ পাঠ -- কত রকম ভাবে মস্তিষ্কের অন্দরের হদিশ পাওয়া যায়  EEG fMRI ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক অন্যান্য বিষয়সমূহ  কি কি পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে? সে কি শুধুই ধ্যানের কারণে? জানছি কি করে?  সীমাবদ্ধ  উপসংহার 
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১৯ - সমরেশ মুখার্জী | জেঠু‌র দলে চুনিচুনি বলে, "জেঠুর পরে কী মনে হয়েছে জানি না। আজ কিন্তু কয়েকবার আমার জেঠুর কাল রাতের কথাগুলো মনে পড়ছিল। দ‍্যাখ, ও কিন্তু নিজের জায়গায় সৎ। পুরুষের দুর্বলতা, প্রবণতা যাই হোক, ছেলে হিসেবে ও যেভাবে ভেবেছে তা ও পরিস্কারভাবে বলেছে। সেটাই সামগ্ৰিকভাবে পুরুষ জতের বৈশিষ্ট্য কিনা তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু মেয়ে হিসেবে আমাদের তো ওর কথাগুলো ফ‍্যালনা মনে হয়নি। কিন্তু মেয়েদের ওপর অত‍্যাচারের জন‍্য পুরুষের দিকে আঙুল তোলা ছাড়া ঈশু কি মেয়েদের আচরণের ব‍্যাপারে কিছু বলেছে? তাহলে পুরুষের দিকে তোলা অভিযোগে‌র তীর‌গুলো কিছুটা ভোঁতা হয়ে যায়। তাই না?"ঈশু বলে, "তুই কী বলতে চাইছিস খুলে বলতো। আমার‌ও কাল মনে হচ্ছিল আলোচনা‌টা যেন কেমন একপেশে হয়ে যাচ্ছে। জেঠু যেন পুরুষ জাতটার হয়ে স্বীকারোক্তি করে যাচ্ছি‌ল।"চুনি বলে, "কালকের আলোচনা‌য় সামাজিক অবদমন, পারিবারিক নির্যাতন এসব ছাড়াও নারী‌র ওপর পুরুষের অত‍্যাচারের মূল প্রতিপাদ‍্য বিষয় ছিল যৌন অনাচার। মানছি অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের তরফে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই পুরুষ তার ওপর একতরফা আকর্ষিত হয় বা জোরপূর্বক ভোগ করে। কখোনো চূড়ান্ত অমানবিক‌তায় তার ওপর অকথ‍্য নির্যাতন‌ও করে। এ ধরনের আচরণ নিশ্চ‌য়ই ঘৃণিত ও শাস্তি‌যোগ্য। কিন্তু মেয়েরাও কি গঙ্গা‌জলে ধোয়া তুলসী‌পাতা? অনেক মেয়ের‌ই সাজগোজ, রকমসকম পুরুষকে বিচলিত করতে পারে। মনে হয় এর পিছনে‌ও মেয়েদের অবচেতনে কাজ করে এক প্রবৃত্তিগত তাড়না। পুরুষদের নজরে নিজেদের মোহিনী, আকর্ষণীয় দেখতে চাওয়ার বাসনা। ফুল যেমন রঙ, সুবাস, মধু দিয়ে ভ্রমরকে আকর্ষণ করে, ঠিক তেমন।" ঈশু বলে, "নাঃ, তোর কথাটা‌ও ফ‍্যালনা নয়।"চুনি বলে, "আবার দ‍্যাখ, প্রকৃতিতে কিন্তু কোনো দ্বিচারিতা নেই। সেখানে নারী পুরুষ‌কে আকর্ষণ করে মিলিত হ‌ওয়ায় জন্য এবং পুরুষ মিলিত হতে চাইলে ধরা দেয়। কিন্তু মনূষ‍্যসমাজে কোনো সুন্দরী তার রূপের মোহে সজ্ঞানে পুরুষ‌কে আকর্ষিত করবে। তারা আকর্ষিত হচ্ছে জেনেও রহস‍্য করে উপেক্ষা করবে। ধরা দেবে কেবল তার পছন্দের পুরুষের কাছে। তার পরিচিত পরিমণ্ডলে বাকি উপেক্ষিত পুরুষদের মনে জ্বলবে ইর্ষার আগুন। এদের মধ‍্যে যদি কারুর তাড়না, সাহস, অপরিণামদর্শী‌তা বেশি হয় এবং আত্মসম্মান, নীতিবোধ, সংযম কম হয় তখন‌ই ঘটতে পারে দূর্ঘটনা।" তুলি বলে, "তুই কী বলতে চাইছিস? পুরুষ‌রা সুন্দরী মেয়েদের দেখে দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মেয়েরা সাজগোজ করবে না?" চুনি বলে, "প্রশ্নটা তুই যতো সহজ ভাবে করলি, ব‍্যাপার‌টা কিন্তু আসলে অতো সরল নয়। আয়নায় নিজেকে রুগ্ন, বিষন্ন, অপরিচ্ছন্ন দেখতে কারুর‌‌ই ভালো লাগে না। বরং নিয়মিত শরীরচর্চা করে আয়নায় স্বাস্থ‍্যোজ্বল শরীর, ঝকঝকে মুখ দেখলে বেঁচে থাকার উৎসাহ পাওয়া যায়। আয়না‌য় নিজেকে সুন্দর দেখতে চাওয়ার তাড়না Narcissism এর পর্যায়ে না চলে গেলে তা দোষের নয়। কিন্তু যখন আয়নার গণ্ডী ছাড়িয়ে নিজেকে অন‍্যের চোখে সুন্দর দেখতে চাওয়ার বাসনা তীব্র হয়ে ওঠে তখনই হয় সমস‍্যা। এটা তো মানবি অনেক মেয়ে নিজেদের পুরুষের চোখে আকর্ষণীয় করে তুলতে অনেক কিছু, এমনকি নানা কৃত্তিম পন্থা‌ও অবলম্বন করে। কিছু মেয়ে শরীরী সৌন্দর্য হাইলাইট করতে এমন সব পোষাক পরে যে মেয়ে হয়ে‌ আমার‌ই তাকাতে অস্বস্তি হয়। তো ছেলেদের কী অবস্থা হবে ভাব।"ছবিতে ধূসরের মাধুর্যসুমন বলে, "নারী পু্রুষের সম্পর্ক‌ জটিল বিষয়। অনেক সময় তা বেশ আলোছায়া‌ময়। পুরুষের কাছে নারী‌র আকর্ষণের মূলে সৌন্দর্য ও যৌনতা‌ই  একমাত্র বিবেচ‍্য নয়। শারীরিক আকর্ষণ ক্ষণস্থায়ী‌। তা ছাড়িয়ে নারী‌র কোমলতা, মমত্ব, সংবেদনশীল‌তা, বুদ্ধি‌ অর্থাৎ কেবল feminine sensuality নয় feminine sensibilities পুরুষকে অনুপ্রাণিত করে। সেই আকর্ষণ মানসিক এবং দীর্ঘস্থায়ী। তাই Behind every successful man there is a woman প্রবাদবাক‍্যটি ষাটের দশকে ফেমিনিস্ট মুভমেন্টের একটি শ্লোগানে পরিণত হয়েছিল প্রায়। তবে পুরুষ‌ যেভাবে তাদের জীবনে নারীর ভূমিকা অকুণ্ঠ‌চিত্তে স্বীকার করেছে, এমন কোনো শ্লোগান নারীদের তরফে আছে বলে আমার অন্ততঃ জানা নেই।""যেমন ধর রবীন্দ্রনাথের কথা। ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে দীর্ঘ আটবছর ধরে কবি শ দুয়েক চিঠি লেখেন যা পরে 'ছিন্ন পত্রাবলী' নামে প্রকাশিত হয়। কবি যখন ছাব্বিশ বছর বয়সে ইন্দিরাকে প্রথম চিঠি লেখেন তখন তার বয়স চোদ্দ। কবির বয়স যখন তেত্রিশ  আর ইন্দিরার একুশ, তখন একটি চিঠিতে কবি‌র এক অনন্য স্বীকারোক্তি আছে। তাতে তিনি লিখেছেন, ইন্দিরা‌কে লেখা কিছু চিঠিতে যেভাবে তাঁর মনের নানান বিচিত্র ভাব, গভীরতম সত‍্য প্রকাশ পেয়েছে তা তাঁর লেখাতেও প্রকাশ পায়নি।" "বা ধর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ‍্যাপক ফণিভূষণ অধিকারী‌র কণ‍্যা রাণু অধিকারী‌র কথা। কবির থেকে বয়সে পঁয়তাল্লিশ বছরের ছোট হয়েও সে কবিকে বড়দের মতো 'রবি বাবু' বলে চিঠি লিখতো। সে তার পরিচয় দিয়েছিল বেনারসের এক অনুরাগিণী পাঠিকা। কিন্তু তার চিঠিতে নিশ্চ‌ই এমন কিছু থাকতো যা কবি‌র মনকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই কবি‌ও সেই অপরিচিতা পাঠিকা‌কে অনেক চিঠি লিখেছেন।" "রবীন্দ্রনাথ‌ অনেক চিন্তা‌শীল মানুষের মতো‌ই চিঠি লিখতে ভালো‌ বাসতেন। অনেক আগে বেনারসে কবি রাণুকে খুব ছোটবেলা‌য় একবার দেখেছিলেন। পরে যখন তাকে বেনারসের বাসায় দেখলেন ও জানলেন এই সেই অপরিচিতা পাঠিকা, তখন রাণু পনেরো বছরের এক উজ্জ্বল কিশোরী। কবি‌র বয়স তখন ষাট। নানা শোক ও সমস‍্যায় জর্জরিত। লেখায় মন বসছে না। ফণিভূষণের সাথে পুরোনো যোগাযোগ ছিল। তাই রাণু কলকাতা‌য় এলে ঠাকুর‌বাড়িতে নাটকে অংশ নিতো। পয়তাল্লিশ বছরের ব‍্যবধান সত্ত্বেও সে কবিকে ডাকতো 'ভানু দাদা' বলে! রাণু শান্তিনিকেতনে‌ গিয়ে‌ও থাকতো। কবি তার সাথে অনেক গল্প করতেন। রাণু কবি‌র গাল ধরে লম্বা চুলে চিরুনী চালিয়ে দিতো। কবির তখন ছোট বৌঠান কাদম্বরী দেবীর কথা মনে পড়তো। কবি আবার ফিরে পেলেন লেখার অনুপ্রেরণা। ফিরে এলো সুর, ছন্দ, ভাষা। জীবনে ও কাব‍্য চর্চায়। পারিবারিক ভ্রমণে গেলেন শিলং। সেখানে‌ও সঙ্গী রাণু। কবি লিখলেন, 'শেষের কবিতা'। তারপর মাত্র উনিশ বছর বয়সে রাণুর বিয়ে হয়ে গেলো শিল্পপতি স‍্যার বীরেন মুখার্জির সাথে। কবি‌র স্নেহের রাণু হয়ে গেলেন লেডি রানু মুখার্জি। কবি বললেন, আর আমায় ভানুদাদা বলে ডেকো না। রাণুর সাথে কবির সেই চার বছরের মনোরম সাহচর্য, যা সেদিন‌ও অনেকে ভুল বুঝেছে এবং পরেও বুঝবে - শেষ হয়ে গেল।" "কোন সংজ্ঞায় ব‍্যাখ‍্যা করা যায় এহেন মাধুর্যময় অথচ দুর্বোধ্য সম্পর্ক? নাকি এসব ব‍্যাখ‍্যা‌র অতীত, কেবল অনুভবগ্ৰাহ‍্য ব‍্যাপার? নাকি এসব সম্পর্ক সমাজপতি‌দের নিদানে এককথায় বিচ‍্যুতি বলে দেগে দেওয়া হবে? যেমন ছিল কবি ওয়ার্ডস‌ওয়ার্থ ও তাঁর বোন ডরোথি‌র মধ‍্যে? মনে আছে কাল বলেছিলাম, নারী পুরুষের সম্পর্ক একটা রঙিন ছবির মতো যাতে আছে ধূসরের‌ও নানা প্রকাশ। এগুলো সেই ধূসর ক্ষেত্র। এখানে যৌনতার প্রকট উচ্ছাস নেই। আছে পুরুষের জীবনে মননে নারী‌সত্তা‌র সেই অমোঘ প্রভাব যা অস্বীকার করা যায় না। সেই প্রভাব বান্ধবী, বন্ধু‌পত্নী, বৌদি, শ‍্যালিকা, ভ্রাতুষ্পুত্রী, সহোদরা, আত্মজা, জায়া, জননী কার মাধ‍্যমে যে বাহিত হয়ে প্রভাবিত করবে পুরুষ‌কে বলা যায় না। না হলে কোনো ভাইপোকে লেখা চিঠি নিয়ে কেন হয় না, 'ছিন্ন পত্রাবলী'? কোনো পাঠকের সাহচর্যে কেন লেখা হয় না 'শেষের কবিতা'? এসব কী নিছক আপতন? মনে হয় না। বরং এগুলো এমন গভীর সত‍্য যা উপলব্ধি করেও মানুষ স্বীকার করতে লজ্জা পায়‌।"তুলি বলে, "মনে হয় আমি চুনি  ও জেঠু, দুজনের বক্তব্যের‌ই সারমর্ম বুঝতে পারছি।" ঈশু বলে, "আমি‌ও। আসলে জেঠু এমন সব কঠিন সত‍্য তুলে ধরছে যা স্বীকার করতে গেলে যে ধরণের সাহস, মানসিক উদারতা থাকা প্রয়োজন আমরা তেমন পরিমণ্ডলে মানুষ হ‌ই‌নি। সবসময়, সবাই‌কে দেখেছি বাস্তব সত‍্য, স্বাভাবিক প্রবণতা‌কে হয় এড়িয়ে চলতে নয়তো ধামাচাপা দিতে।"
    এমনি একটা সিরিজ থেকে, কবিতার টইটা কৈ?  এখানেই থাক যত্তসব  - একক | পিতা ধর্ম ~~~~~~~~~১#বাবামশাই পা রাখলেন উঠোনে , ছাতিটিমেলে ধরলেন বাতাসে। সে আকাশ হলো। মাটির কোন দিক ছিলো না তখন। কাজল, তার আঁশবটির বিভঙ্গে মুখডুবিয়েচে গহীন,আর টেবিলে জলের গেলাশ কাঁপচে থিরে , উপরে উৎসর্গ করা লাশ। ঠিক এইসময় : বাবা বললেন : আলো,  এসে দাঁড়াও তো মা। আলো দাঁড়াল। কাজলের সাথে এতো মেলামেশা প্রয়োজন নয়। ও আঁধা ও অন্ধকার।  আজ হতে অন্যঘরে শুও, বড় হচ্ছ, কথা শুনে চলোআজ হতে আমার দিনার তোমাদের মাঝখানে দুইভাগ হবে, একটি তোমার ধীন অপরটি রাত্রি খ্যাত হোক  কতদূর যাবে রাত্রি কতোটা কাজল; কভী জানবেনা তুমি, শুধু ফিরে এলে জেনো :  বাঁধা পড়লো আরও একটি দিন ।।  ২#প্রথম দিবস শেষ, খুলি গম্বুজে এসে বসেছে পাখিটি,  সনাতন কাকপাখি, সতত গম্ভীর তবু, নেহাৎ-ই বায়স, উপরে বহিছে জল,  নীচে তার ধীরে বহে ডন, মাঝারে মাজার জাগে, নীরে  জাগে ঈসার আরশ্ যমুনার চোখ মেলে কাক পাখি আন্ধারে বসি,  চবুতরা পানে চায় - এই বুঝি জাগিলো পৃথিবী। খুলিগম্বুজ জাগে, আসমানি মেঘে জাগে জলঈসার  পায়ের কাছে প্রাণ  জাগে কবুল কবুল।। আদম, আদমি এক~~~~~~~~~~~১#এমন হবে না সবকিছু ঠিকঠাক থেকে যাবে আর তোমার কবিতা থেকে ঝরে পড়বে ব্লাডি চুনিপুঁতি,  এমন হবেনা যা কিছু পরের ধন, অভ্যেসে গচ্ছিত রেখে, মায়া বলে যাবত বেচেছোপচে যাবে হেজে যাবে, ছাতকুরো পড়ে যাবে , গুঁড় সাবানের মতো  ধুয়ে যাবে পথের সীমেন,   দক্ষিণাবর্ত নারী,  শিশুবোধ, শব্দগরল - পাশের টেবিলে হবে,  তোমারো কবিতা হবে, সব কিছু একত্র হবেনা।। ২#আজ ফিরতে দেরি হলে, যথাযথ সন্দেহ কোরো। উল্টোডাঙার দিকে  নেশা করতে যাইনিকো, ভারসিটির পথে যেতে 'হঠাত' বনির সঙ্গে দেখা, তাও নয় আজ চুপ, স্থানু বসে গজুর কেবিনে,  তিনি আসবেন খুব ;আলো নিয়ে, অসদগময়ঃবিশ্বাস ভক্তও করে, সন্দেহটি  দয়িতের থাক ।। হবা, চৈত্র বাতাস~~~~~~~~~~১#যে ফুল সর্বদা ফোটে, তাতে আমি বিমুখ হয়েছি। অথচ,  পরাগ মাখব বলে ঘুরে ঘুরে গর্ভকেশরে,  নাকে নেব, গায়ে নেবফুলরেণু, অই ভেবে ছুটে ছুটে আশা.. হে ফুল,  সর্বদা ফুটে  এ কোন রাষ্ট্রশোক দিলে ।।  ৭#ঠিক একমুহূর্তে আমি চাইছি বৃষ্টি নাহোক চাইছি না আমি বৃষ্টি, তুমি পুড়ে যাচ্ছ তাপে, এতো এতো রোদ্দুরের ছাপ , আর মাথার দুপাশ জুড়ে টিপ ঢিপ তুমি কী রাগত মুখ, আসলে কষ্ট পাচ্ছো, জানি, তবু কী করবো বলো আমাদে'বাড়ির ছাদে আজ দুপুরেই স্ক্রীড কংক্রিট ঢেলেছে..১১#কোপলা প্লাস্টারের কালে, কোন্ ধারএই নিয়ে সংশয় শোভনীয় নয়। কোন দিকবেছে নেবে ; ভেবে ভেবে যৌবনের সমস্ত কবিতা সারল্যরেখায় আঁকা ঝিকিমিকি পাঠসন্ধ্যা হলো। তোমারই অনতিদূরে শব্দপাঁচিল ধরে হেঁটে গেলো ধারালো বিড়াল, তুমি রইলে বসে, আর,তাঁহার অশ্বেত হাত অদূরেই, দূরে ছিলো  পাতা ।। দাই ডার্ক হ্যান্ড ~~~~~~~~~~~~ ১#ধরেছি তোমার হাততোমার অশ্বেত হাতখানি,  ইচ্ছে নয় স্বেচ্ছা নয়, যথেচ্ছ পথের বাঁকে আর কোন উপায় ছিলো না যে চাতুরী সা চাতুরী, অন্ধজনে সুআঁধার দিলো, আমাকেও তাই দাও ; তিমির বিশেষ্য নয়,  আমাদের বিশেষণ হোক।।  ৫#মাথা নীচু করে হাঁটি বাজারে উধার নেই, আকাশে দেখার মতো কীই বা রেখেছ?  তোমার পতনবীথি,  ছেয়ে গ্যাছে ঈশ্বরসদনে, আমার শৈশব বলতে ফোটোগ্রাফ নেই কোনো, একটি কাজললতা আছে - সেই ভুষাকালি আমি চোখে মাখি মুখে মাখি উত্থানে টি' দিয়ে রাখি।ওমুখ দেখবো কেন, আকাশে দেখার মতো কী আর রেখেছ।।  ৯#ফুল নয়, প্লাস্টিকের ফুল।তিনিই পরাগ দেন চুরি করে দেবালয় থেকে অতঃপর ফুল হয়, বীজ হয় বিছনের মালিকানা আরও কিছু কাল পরে হবে, আপাতত ফুল থেকে ফুল হচ্চে -কালা এলে কর্ম হবে, কর্মফল হবে।।১৩# হিরণ শিশুটি বোঝে,  কেবলেছে বোঝেনা কিছুটি?  শুধু জাগরের কালে রণে বনে আমাজন কোনে, শ্যামাঙ্গে গুটিসুটি শ্যামলীমা থাবার রেশমেজাগুয়ার মাতা তার জন্মদাত্রী এই বোধ হয়।  runover যজ্ঞ শেষেআদমের ছ্যারাছেমরিরা তখন ক্যাম্পে ফেরে - লিলিপুল জেগে ওঠে কোর এরিয়ার ঈসা কোণে,  আঁধা জাগে - জোনাক লুমেনে ভরে দেলের বাহির, (হায়) সুসমাচারের দল দিয়া জ্বালে অজ্ঞানতাবশে.. কথামুখ : ... in lumbis est যা হজম হয়েনা উহা, কবিতা, ন্যুনপক্ষে কবিতার প্রলাপপ্রয়াসী।  নীলচে ফ্রিজের বই, স্টেডি নারী , স্বতঃসিদ্ধ কাচার মেশিন-সকলি সাক্সেস ভেল ; শুধু এই বিষ্ঠা এই অগম্য পুরীষ, চেম্বার উপচে পড়চে নৃতছন্দে নষ্টা উপমায়,একে নাও,  সুমুখে সাষ্টাঙ্ হও, বোসো হাঁটু মুড়ে  , বোসো বাছা সনাতন, বোস্ শালো গুখেকো নাটুয়া, ভালা কথা হৈয়ে গ্যাছে, আইজ়  কিছু কালা কথা হব্বে।। . . .[ এটা একটাই দীর্ঘ সিরিজ যার বিভিন্ন বিভাগ - উপবিভাগ থেকে এট রান্ডম চাট্টি লেখা তুলে দিলুম। নাম : তোমার অশ্বেত হাতখানি। একটু জেনেসিস ঘেঁষা অনেকটা আরও অনেক কিছু। বা কিছুই না।খামচে তোলায়, কাহিনির চলন  বোঝা মুশকিল।  তবে কবিতা অনাথ বিশু। কাজেই। ]  
  • জনতার খেরোর খাতা...
    চন্দ্রাহত - abhisek bose | মহানন্দা বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে পাগলটা একমনে বলে যাচ্ছিল — 'গরম ভাত আর গাদাল পাতার ঝোল। উফফ্! কী খেতে মাইরি ! প্রথমে গরম ভাতটা চার-আঙুল দিয়ে আলতো করে ছড়িয়ে নিতে হবে। তারপর কানা উঁচু বাটি থেকে গাদাল পাতার ঝোলটা যেই ঢালব.......' বলেই সুরুৎ করে জিভের জল টেনে নিল। উন্মাদটাকে দেখে সবাই বেশ মজা পাচ্ছিল। পাকা চুলের মানুষগুলোও ওর কথা বলার ভঙ্গিতে বেশ আমোদ টের পাচ্ছিল। এরমধ্যেই কে একটা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল —শুধু গাদাল পাতার ঝোল!? —'শুধু'!!? ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর নুন মরিচ দেওয়া গাদাল পাতার গরম ঝোলের সাথে আর কি চাও হে?' — আচ্ছা বুঝলাম। তার পরের দিন কি খাবে? —' কেন দিশি চালের ভাত আর গাদাল পাতার ঝোল। এক্কেরে গরম...। 'আচ্ছা যদি তোমাকে অনেক টাকা দেওয়া হয় তাহলে কি খাবে? — 'অনেএএএক টাকা? কে দিবে শুনি? 'ধরো যদি কেউ দেয়। —'অনে-এ-এ-ক টাকা যদি কেউ দেয়।' বলে কিছুটা নরম সুরে লজ্জা মিশিয়ে বলল —' তাহলে কিছুটা গাওয়া ঘি কিনব। তারপর গরম ভাতে গাদাল পাতার ঝোলটা ঢেলে নিয়ে, পুরোওও এক বড় চামচ ঘি নেবো...' শালা, বদ্ধ উন্মাদ। 'উন্মাদ কি হে ছোকরা? লুনাটিক বলো। চন্দ্রাহত । আকাশের অ্যাত্তো বড়, ভরা পূর্ণিমার চাঁদটাকে, ঢুঁসো মেরে ফেলে দিলাম। ঐ দ্যাখো নদীর জলে পড়ে আছে। মাথাটা এখনও ঝনঝন করছে। চন্দ্রাহত বলো হে ছোকরা ।— অভিষেক বোস ( ৩১শে অগাস্ট, ২০২৩ এর ফেসবুক পোস্ট) 
    বালিশ-নালিশ - Suvasri Roy | দুই দুষ্টু খরগোশ মিলে আমার পুরনো মাথার বালিশটা ছিঁড়ে কুটিকুটি করে দিয়েছে। মাথায় দেওয়া যাচ্ছে না। চেনা ধুনুরির সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য গত এক মাসে তেজী বৌদিকে অনেকবার বলছিলাম। তা তিনি কিছুতেই দিলেন না। তাই গত সপ্তাহের সোমবার সন্ধ্যায় বাইরে বেরিয়ে রাজা মণীন্দ্র রোডে বহু দিনের ধুনুরি ব্যবসায়ীর কাছে নতুন মাথার বালিশ করাতে দিলাম আর পরের দিন সন্ধ্যাবেলায় নিয়েও এলাম। ৩৪০ টাকা নিল। কার্পাস তুলো। শিমুল তুলোরটা ৫৫০, দামী। এমনিতেই দামী জিনিসটাই নিতে হবে তেমন চিন্তা কোনোকালেই আমার নেই। তাছাড়া শিমুলেরটা নিয়ে আমি বেশি গভীর ঘুমে ডুবে যাব নাকি! তার ওপর আমার মাথার বালিশ দুই দুষ্টুর দাঁতে এক দিন না এক দিন পড়বেই তাই সস্তারটা করানোই ভালো।বাড়তি একটা নতুন পাশবালিশ অবশ্য আছে। সেই কবে থেকে একদম চেপেচুপে শোকেসে তুলে রেখেছি। তাই ঠিক আছে। বাড়তি মাথার বালিশ না থাকার ফল এখন ভোগ করছি।অ্যান্ডিস্যান্ডি দুজনেই অসীম উৎসাহ নিয়ে যে কোনো অরক্ষিত জিনিস কাটাকুটি করে। ওদের ভয়ে জরুরি কাগজপত্র নিয়ে আমি সাবধান হয়ে গেছি। দরকারে কোনো নথি নিয়ে বেরোতে হ'লেই বাড়ি ফিরে সঙ্গে সঙ্গে হয় আলমারির ড্রয়ারে নয়তো তোষকের নিচে রেখে দিই। মোট কথা, কোনো জরুরি নথি ওদের নাগালের মধ্যে রাখা চলবে না। ওরা অাসারঅাগে বাড়ির ভেতরে জরুরি নথিপত্র রাখা নিয়ে অামি ঢিলেঢালা ছিলাম। কিন্তু ওরা আসার পর বুঝে গেলাম যে এমবকি বাড়িতেও কাগজপত্র সাবধানে রাখতে হবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাপারটা অামার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য আমার দুই সোনাকে অফুরন্ত ধন্যবাদ।জামাকাপড়ও যতটা পারি ওদের আওতার বাইরে রাখি। অন্যমনস্কতা এবং ক্কচিৎ কদাচিৎ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অনেক খেসারত দিয়েছি। সুযোগ পেলেই আমার জামাকাপড়, ওড়না, বিছানার চাদর-বালিশ সব ওরা কেটে দেয়। একেকটা প্রিয় ওড়নায় যখন অনেকগুলো ছোট ছোট গর্ত দেখি, ভারি দুঃখ লাগে। বরং বলা ভালো, এখন আর দুঃখ লাগে না। অসাবধানতার জন্য নিজের ওপর রাগ হয়।সেই সঙ্গে, মনে হয় - এইভাবে দুই দুষ্টু আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে কোনো ব্যবস্থাই নিশ্ছিদ্র নয়। আমাদের দেশের আইনেও তো কত না ফাঁকফোকর। মহা মহা অপরাধী সেই সব ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। উকিলদের পোয়াবারো! মোট কথা, যে সমাজব্যবস্থায় আমরা থাকি তাতে হাজার ফুটো এবং সেগুলো বেড়েই চলেছে। দুটো ক্ষুদে প্রাণীর ওপর কেনই বা রাগ করব?.অনেক দিন আগে স্যান্ডি আমার একটা পুরনো পাশবালিশ কাটতে কাটতে রীতিমতো একটা সুড়ঙ্গ তৈরি করে বালিশটার একদম ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। তারপর সে কী আনন্দে কাটছিল কারণ সুবিধাজনক অবস্থান পেয়ে গেছে! বালিশ এ দিক ও দিক প্রায় সবটা খোলা, ভেতরে সুন্দরী কৃষ্ণবর্ণা স্যান্ডিসোনা এবং তার চার দিকে রাশিরাশি সাদা তুলো। সে একটা দৃশ্য বটে!কাটাকুটি ব্যাপারটা খরগোশের জিনেই রয়েছে। হাজারহাজার বছর ধরে ওরা মূলত জঙ্গলের প্রাণী। বনেজঙ্গলে বা মাঠে যেখানেই ওরা গর্তটর্ত করে মাটির তলায় বাসা করুক না কেন, বাসায় গাছের গুঁড়ি ঢুকে গেলে বিপদ। তাই গাছের গুঁড়ি, লকলকে লতাপাতা কেটে শেষ করে ওদের বাসা অটুট রাখতে হয়। জিনের এই বৈশিষ্ট্য এই দু'জনের মধ্যেও বর্তমান।আর ওরা ভালোবাসে লুকিয়ে পড়তে। সেটাও আত্মরক্ষার প্রবণতা যা খরগোশের জিনেই রয়েছে। ওরা নরমসরম প্রাণী। বাজ, চিল, শকুন, শেয়াল, নেকড়ে এবং অবশ্যই মানুষ- বরাবর সবাই ওদের ধরে খেয়ে ফেলে। সে জন্য ওরা লুকিয়ে থাকে যাতে শত্রুর নজরে না পড়ে। তাও কী সব সময় আত্মরক্ষা করতে পারে? না।আমাদের অ্যান্ডিস্যান্ডিও নিজেদের জিন দ্বারা পরিচালিত। এমনিতে তো ওদের কারুর বাড়িতে পোষ্য হয়ে থাকার কথা নয়। দেখতে ভালো বলে আমরা নিয়ে আসি। নিজেদের শখ পূরণ করি। আর হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভালোওবাসি! বাড়িতে আনলে ওদের জেনেটিক দৌরাত্ম্য আমাদের সহ্য করতে হবে বৈকী!
    জীবন তরঙ্গ পর্ব ৫০  - Sukdeb Chatterjee | জীবন তরঙ্গ পর্ব ৫০দিন দশেক বাদে একটা শনিবার শিলিগুড়ি যাওয়া ঠিক হল। শনিবার রাতে গেলে রবিবার সকালে পৌঁছে যাবে। কথাবার্তা পাকা করে রবিবার রাতে ট্রেন ধরবে। রমেনকে অফিস কামাই করতে হবে না। সেইমত নন্দিতাদের বাড়িতে জানিয়ে দেওয়া হল।অসিত শুনে বলল — এ কোন মতেই হতে পারে না। আপনি প্রথমবার আমাদের বাড়িতে আসছেন, সকালে এসে রাতে চলে যাবেন, তা কখনো হয়! মঙ্গলবার রাতের আগে আপনাদের ফিরতেই দেব না।নানা রকম অজুহাত দেখিয়েও লাভ হল না, ওনাদের কথাই রাখতে হল। উজ্জ্বল রেলের অফিসে  থাকার জন্য নয়নকে রিজার্ভেশনের জন্য চিন্তা করতে হত না। দুটো যাওয়া আর দুটো আসার এসি টু এর টিকিট পাঠিয়ে দিল। উইক এন্ড হওয়ার জন্য যাওয়ার টিকিট কনফার্ম হচ্ছিল না। ওটা ভি আই পি কোটায় ম্যানেজ করে দিয়েছে। যাওয়ার দিন নয়ন গিয়ে মা বাবাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এল।বাড়ি ফেরার পর খবর এল ধ্রুবর ঠাকুমা মারা গেছে। খুব সমস্যা না থাকলে নয়ন এইসব কেসে না করে না। বাড়ি এসে খেয়ে নিয়ে নয়ন ধ্রুবর বাড়িতে পৌঁছে গেল। হাঁড়ি পুকুরের আড্ডার মেম্বার না হলেও ধ্রুব নয়নের ভাল বন্ধু। ওদের দেশের বাড়ি মালদাতে। ঠাকুমা সেখানেই থাকতেন। দিন পনের আগে ধ্রুবর বাড়িতে এসেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, তা আর হল না। একেবারে না ফেরার দেশে ফিরে গেলেন। সব কিছু ব্যবস্থা করে বেরোতে বেরোতে রাত এগারোটা বেজে গেল। একটাই বাঁচোয়া, পরেরদিন রবিবার। তখন শববাহি গাড়ির চল খুব একটা ছিল না, মফস্বলে তো ছিলই না। শেষযাত্রা কাঁধেই হত। রহড়া  থেকে গঙ্গার শ্মশান ঘাট অনেকটা পথ হলেও খুব একটা সমস্যা হত না। ওটা অভ্যাসের ব্যাপার। খড়দায় গঙ্গার দিকে এক একটা রাস্তা খুব সরু। ওইরকম একটা গলি দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা গেল একটা বড় ষাঁড় পুরো রাস্তা জুড়ে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বডি নিয়ে পার হওয়ার মত জায়গা নেই। নয়ন তখন সামনের দিকটা ধরে আছে। ষাঁড় গুঁতলে প্রথম গুঁতোটা ওকেই খেতে হবে। ষাঁড় ঘোরাঘুরি করলে ঠিক আছে কিন্তু স্থির হয়ে যদি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে একটু ভয়ের ব্যাপার থাকে। ও ব্যাটা সেইভাবেই দাঁড়িয়েছিল।  ওরা একটু থেমে গেল। ও পাড়ার ডিফেন্স পার্টির ছেলেরা তখন ওখানে পাহারা দিচ্ছিল। তাদের কয়েকজন এগিয়ে এসে আশ্বস্ত করে জানাল যে, ওরা ষাঁড়টাকে সরিয়ে দিচ্ছে।  একজন লাঠি তুলে একটু হ্যাট হ্যাট করতেই ষাঁড়টা শিং বাগিয়ে তাড়া করল। ভাগ্য ভাল মুখটা ওদের দিকে ছিল, না হলে আর দেখতে হত না।  ডিফেন্স পার্টির ছেলেরা  যে যেদিকে পারল পালাল।  জায়গা পেতেই নয়নরাও ঠাকুমাকে নিয়ে লাগাল দৌড়, একছুটে নাতুপাল শ্মশান ঘাট।ধ্রুব খুব মজার ছেলে। গল্পে ঠাসা জীবন। কিছু না কিছু বিচিত্র ঘটনা ওর দৈনন্দিন জীবনে থাকবেই। সেবার নয়ন সাথে ছিল। খেলার মাঠে যাচ্ছিল, একটু দেরি হয়ে গেছে। তখন কোলকাতার ঘেরা মাঠে ফুটবল খেলা দেখার জন্য, ষাট পয়সা আর এক টাকা দশ পয়সা, এই  দু রকম  দামের টিকিট ছিল। প্রদর্শনী ম্যাচ হলে টিকিটের দাম আরো কিছুটা বেশী হত।   ওরা এক টাকা দশ পয়সায় লাইন দিত। এসপ্ল্যানেডে এত ট্র্যাফিক যে কিছুতেই রাস্তা পার হওয়া যাচ্ছিল না। ধ্রুব নয়নকে ওর হাত ধরে ট্র্যাফিক পুলিশের একেবারে পাশে নিয়ে যেতে বলল।  নয়ন দেখে মুহূর্তে ধ্রুব ওর দুটো পা আর হাত অদ্ভুতভাবে বেঁকিয়ে একটা কিম্ভূতকিমাকার চেহারা করে ফেলেছে। দেখলে মায়া হবে। চোখে পড়া মাত্রই পুলিশ ভদ্রলোক ওকে ধরে ধরে রাস্তা পার করে দিয়ে এল। পুলিশের চোখ থেকে একটু সরেই প্রতিবন্ধী ধ্রুব নয়নকে নিয়ে তির বেগে মাঠের দিকে দৌড় লাগাল।ঠান্ডা তখনো বেশ ভালই ছিল। আগুনের কাছাকাছি থাকায় অতটা বোঝা যাচ্ছিল না। চিতার আগুনে ঠাকুমার দেহ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল, আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম গল্পের খাজাঞ্চিখানায়। ধ্রুবর ঝাঁপি থেকে একটার পর একটা গল্প বেরোতে লাগল। ও একটা ব্যাঙ্কে কাজ করত। দশটার মধ্যে ধ্রুব  খুব কম দিনই অফিসে গেছে। ম্যানেজারের ওপর নির্ভর করে,  দেরির জন্য কতক্ষণ পর্যন্ত ছাড় থাকবে। তখন  ওদের ব্র্যাঞ্চে দক্ষিণ থেকে একজন  ম্যানেজার এসেছে। আর এন মুরলিধরন, খুব কড়া লোক। ধ্রুব যে প্রায়ই দেরি করে আসে, এটা ওনার নজরে পড়েছে। সেদিন ধ্রুবর অফিসে ঢুকতে দশটা পঁয়ত্রিশ হয়ে গেছে।  ম্যানেজার ঘরে ডেকে পাঠিয়ে, ধ্রুবকে বাড়ি চলে যেতে বলল। খুব সম্মানে লাগল, চাকরি জীবনে এই রকম পরিস্থিতি  আগে কখনো আসেনি। মেজাজটা গরম হয়ে গেল। চরম বদমাইস ছেলে।  বেরিয়ে আসার আগে ম্যানেজারকে বলল—আপনার পাওয়ার দেখিয়েছেন, জয়েন করতে দেননি। কিন্তু আপনি আমায় বাড়ি চলে যান বললেন কেন? আমি কোথায় যাব সেটাও কি আপনি বলে দেবেন?পরের দিন ব্র্যাঞ্চে এক অভিনব দৃশ্য দেখা গেল। ম্যানেজার ভয়ে কুঁকড়ে নিজের চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর   তাকে ঘিরে সাত  আটটা হিজড়ে “আমাদের বন্ধুকে তুই অফিস থেকে   বাহর কোরে দিয়েছিস কেনো রে মনিজর?” বলে তালি বাজাতে বাজাতে নাচছে। অফিসে হিজড়ের নাচ কস্মিনকালে কেঊ দেখেনি। ম্যানেজারের চেম্বারের বাইরে ভিড় জমে গেছে।  কাস্টমার, স্টাফ, সবাই ভিড় করে মজা দেখছে। একটু বাদে ধ্রুব অফিসে ঢুকল। সোজা ম্যানেজারের ঘরে চলে গেল। যেন কিছু জানে না এইভাবে জিজ্ঞেস করল—এই তোমরা আমাদের স্যারকে কি করছ? ওরকম করে না, এটা অফিস না।ধ্রুবকে পেয়ে ম্যানেজারের ধড়ে প্রাণ এল।এগিয়ে এসে বলল — অফিসে আসার পর থেকে ওরা আমাকে এইভাবে ঘিরে ধরে আছে। একটা কিছু ব্যবস্থা করুণ প্লিজ।ধ্রুব ম্যানেজারের কানে কানে বলল — শ পাঁচেক টাকা দিন, আমি দেখছি কি করা যায়।-- পাঁচশ টাকা, ধ্রুব বাবু একটু কম করুন। -- আরে এতো আর আমি নেব না। ঠিক আছে আপনি তিনশ দিন, আমি কথা বলে দেখছি।তিনশ টাকা গচ্ছা দিয়ে ম্যানেজার সেদিনের মত নিষ্কৃতি পেল। তিনশ টাকা দিয়ে হিজড়েদের বিদায় করার পর কড়া ম্যানেজার অত্যন্ত নরম গলায় ধ্রুবকে বলল—ধ্রুব বাবু, এটা আপনি কেন করলেন? এত বড় বেইজ্জতি আমার জীবনে কখনো হয়নি। ধ্রুব খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল — আমি ওদের পাঠাতে যাব কেন! ওরা সব আমার বন্ধু। আপনি কাল আমায় অফিস থেকে বার করে দেওয়ার পর আমি ওদের কাছে গিয়ে আমার দুঃখের কথা বলেছিলাম। তাই শুনে হয়ত ওরা আজ আপনার কাছে চলে এসেছে। আসলে আমার কোন সমস্যা হলেই ওরা প্রতিকারের জন্য সাথে সাথেই ফিল্ডে নেমে পড়ে। বারণ করলেও শোনে না।পরের দিন থেকে ঐ ব্র্যাঞ্চে অ্যাটেন্ডেন্সের কড়াকড়ি আর তেমন একটা ছিল না, ধ্রুবর ক্ষেত্রে তো একেবারেই ছিল না।কি জানি ওর সমস্যা হলে আবার যদি হিজড়ে চলে আসে।গল্পের মধ্যে দিয়ে কিভাবে যে রাতটা কেটে গেল কেউ টেরই পেল না। ধ্রুবর ঠাকুমার দেহ  ততক্ষণে পঞ্চভূতে লীন হয়ে গেছে। ভোরের ক্ষীণ আলোয় কুয়াশামাখা নদীতে খেয়া পারাপার  শুরু হয়ে গেছে। নয়নরা কেউ নদীতে স্নান করে, কেউবা মাথায় গঙ্গা জল ছিটিয়ে ফেরার পথ  ধরল।নয়ন বাড়ি ফেরার পর হিসেব করে দেখল ট্রেন লেট না করলে ওর মা বাবার শিলিগুড়ি পৌঁছতে আরও ঘন্টা দুয়েক লাগবে। চা বানিয়ে কাপে চুমুক দিতে গিয়েই নন্দিতার কথা মনে পড়ে গেল। চায়ের কাপ ঢাকা দিয়ে রেখে ব্রাশ করে এল। চেয়ারে হেলান দিয়ে চা খেতে খেতে কখন যেন দুচোখ লেগে গিয়েছিল। টেলিফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।“হাবু আমরা এইমাত্র গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনের বাইরে এলাম। আসিত বাবু আমাদের নিতে এসেছেন। তোর বাবার সাথে আমাদের মালপত্র নিয়ে ওনার গাড়িতে তুলছেন। বুথ থেকে বেশী  কথা বলা যাবে না। ওনাদের বাড়ি গিয়ে সুযোগ বুঝে কি হল না হল জানাব। সাবধানে থাকবি। ছাড়লাম।”  চলবে
  • ভাট...
    commentguru | আমার পেট্রোডলার নিয়ে নিজস্ব মতামত হচ্চে যে ইউক্রেইন্ যুদ্ধের পরে আম্রিকা, ইউরোপে রাশিয়ান এসেটস ফ্রীজ করে দিয়েছে। সৌদীরা এই ব্যাপারটাতেই বেশ চাপে আছে যেহেতু সৌদিদের অনেক সারপ্লাস ফিনান্সিয়াল এসেটস আম্রিকাতেই আছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে আজ যেটা হচ্ছে কালকে সৌদীদের সঙ্গেও এরকম আম্রিকা করবেনা তা কে গ্যারান্টী দেবে? একারণেই পেট্রোডলার নিয়ে এতো কথা শোনা যাচ্ছে।
    commentdc | আরেকটু অ্যাড করতে পারি, সাউদি অ্যারাবিয়ার সাথে চীনের চুক্তি হয়েছে সরাসরি য়ুআন এ তেল কেনাবেচা হবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ডেভেলপমেন্ট, তবে গ্লোবাল ট্রেডে য়ুআন এর অংশ এখনও খুব কম, ৩% মতো। যদিও সেটা বাড়ছে। 
    commentপেট্রোডলার | আচ্ছা, ন্যাসড্যাকের লিংকটা ভাল, পার্সপেক্টিভ পাওয়া যাচ্ছে কেন আমেরিকা আর্মস ডিল ল্যাপস হলেও গা করছে না। ডাও জোনসের কাগজ মর্ণিংস্টারের বক্তব্য, পেট্রোডলারের গুরুত্ব শুধু ১৯৭৪য়ের চুক্তি দিয়ে ভাবলে ভুল হবে, এটা অর্গ্যানিকালি হয়েছে। তারা আরো বলছেঃ 
    None of this seems likely to change, with the U.S. and Saudi Arabia reportedly on the cusp of signing a landmark defense treaty, according to the Journal. "Ultimately, the more important question is does Saudi Arabia change the currency in which it holds its reserves, which at the moment is majority dollar," Donovan said.
    (indiapunchline য়ের বক্তব্য একটু একপেশে বা অগভীর লেগেছে)
    মনে পড়ছে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে এই বিষয়ে প্রচুর আলোচনা শুরু হয়, এবং তা বিগত কয়েক বছর ধরেই চলছে।  সব মিলিয়ে, চুক্তি একটা নবীকরণ হয়নি সেটা সত্যি, তাকে ফেক বলা বাড়াবাড়ি। তবে তার প্রভাব নিয়ে যে গুজব চলছে, তাও বাড়াবাড়ি - এরকমই বুঝলাম! 
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত