এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    এক্সিট পোল - রমিত চট্টোপাধ্যায় | অলংকরণ : রমিত চট্টোপাধ্যায় এক্সিট পোলরমিত চট্টোপাধ্যায়ভাবলাম দিই চারশো লিখেইউনিজির কথা মেলাতে,প্রচার প্রণামী জুটবে ভালোইকাটবে দুদিন রেলাতে।তারপর ভাবি এত বেশি দিলেসকলে গালিবে চাড্ডি,তাই শেষমেশ ফেলে নিশ্বেসকুড়িখানা সিট বাদ দি।মালিক কহিলো রিপাব্লিকেওএত বেশি নাকি কয় নি,বাদ দিতে পারো আরো খানকুড়িচাকরি যাবেনা ভয় নি।তাই নিয়ে গিয়ে হাসিটা চাপিয়েকালো কোট পরে জ্ঞান দি,টিভি পর্দায় সেই ফল দেখেভক্ত বিলায় ক্যান্ডি।ইনিয়ে বিনিয়ে বিশেষজ্ঞরাবলে ঠিকই, এতো ফলবে,কাঁড়ি কাঁড়ি ডেটা, ততোধিক গ্রাফমিছে কথা কেন বলবে?দুটিদিন ধরে এ নিয়ে নাচবেহোয়া ইউনির ছাত্র,ফল বেরোলেই বলে দেব হেসেছড়ায় মানুষ মাত্র!
    লেজ, বেড়াল, তপস্বী এবং ভণ্ড - বেবী সাউ | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়একটা বিড়াল। আর তপস্বী।  বিড়ালের রং সাদা, তাই পয়া। দুধটি, কলাটি বেশ জোটে। চুকচুক করে খেয়ে আসছে এতকাল। কিছু প্রাপ্তি ঘটলেই দুনিয়া সুন্দর মনে হয়। সেও ভাবল, মানুষ ভালো এবং সুন্দর। তপস্বী সাদা না। কিন্তু তার গোঁফ এবং দাড়ি সাদা। যদিও তার চুলের অর্ধাংশ ছিল কালো। একটা কারসাজি করে সাদা করা হল। পারফেক্ট লুক চাই। চুল হল পরগাছা। এত কারসাজি সহ্য করতে না পেরে গেল উঠে। এই উপমহাদেশ ততদিনে জেনে গেছে, তপস্বী মানে সর্বশক্তিমান! অযোনিসম্ভূত! দমবার পাত্র তো নয়ই। খালি মাথা তো আর রাখা যায় না।সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে লেজ কেটে চিপকানো হল মাথায়। বেড়ালের লেজ মাথায় দেখে, উপমহাদেশ ভাবল মিরাক্কেল! অলৌকিক ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত বিশ্বাস পাওয়া যায় না জনগণের। পেছনের লেজ মাথায় দেখে জনগণ আচম্বিত। কিন্তু ভালো যত মন্দ তত! ভক্তের সঙ্গে ছুটল বিরোধীও। তদন্ত হলো, লেজ কার! কিন্তু তপস্বী ততদিনে ঢুকে পড়েছেন মায়ামোহময়ে। যাইহোক, তপস্বী চললেন বিড়াল থেকে বেরোতে। খোঁজ খোঁজ... কোথায় পাওয়া যাবে সেই পুণ্যভূমি! বিরোধী-পাপ থেকে মুক্তি পেতে হবে। এবং যেখানে জড়িয়ে থাকবেন দেশের মহাত্মারা... শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেল। নির্জন তটভূমি! অকুতোভয় তপস্বী ততদিনে সাক্ষাৎ অবতার। অখণ্ড পুরাণ বলছে— তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ! সঙ্গে সঙ্গে গুণমুগ্ধ ভক্তের হাততালি। আর দোষযুক্ত শত্রুর দলকে কব্জা করছে আইটি সেল। তটভূমি। পাশেই আবার নিরক্ষরেখা। 'এই গরমে তপস্যা!' তপস্বী ধ্যানে নিবিষ্ট হতে পারছেন না। ফলে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। সিকিউরিটি? কেননা, দোষযুক্ত বিরোধীপক্ষ। আর চোখ পিটপিট তাকানো? আরে বাবা! বেড়ালের ম্যাও...ম্যাও... সর্বগুণযুক্ত, সর্বদোষমুক্ত বলে কি আর বেড়ালের গল্প শুনবে না!কিন্তু প্রশ্ন, তপস্যারত তাও সামনে ক্যামেরা! লেজ যার যায়, সেই বোঝে...
    বিপ্লবের আগুন - পর্ব সাত - কিশোর ঘোষাল | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়৭পরের দিন খুব ভোরবেলাতেই ভল্লার ঘুম ভেঙে গেল। আজ বেশ সুস্থ বোধ করছে সে। শরীরের ব্যথা, বেদনা – গ্লানি নেই বললেই চলে। বিছানায় উঠে বসল, তারপর ধীরে ধীরে ঘরের বাইরে এল। ভোরের আলো সবে ফুটেছে, বাইরের গাছপালার ডালে ডালে পাখিদের ব্যস্ততা টের পাওয়া যাচ্ছে তাদের কলকাকলিতে। হাওয়ায় সামান্য শিরশিরে ভাব। বিছানায় ফিরে গিয়ে সে গায়ের চাদরটা তুলে নিয়ে গায়ে জড়াল। দড়ি থেকে টেনে নিল গামছাটা – কষে বেঁধে নিল মাথায়। তারপর প্রশস্ত অঙ্গন পেরিয়ে সন্তর্পণে এগিয়ে চলল পথের দিকে। কঞ্চি দিয়ে বানানো, বেড়ার পাল্লা খুলে সবে পথে নামতে যাবে, কমলি ডাক দিল, “অ্যাই, এই কাক ভোরে কোথায় চললি রে? পালাবার ফিকির বুঝি? এখনো তোর শরীর পুরোপুরি সারেনি…”। কমলির হাতে জলভরা ঘটি। ভল্লা ঠোঁটে আঙুল রেখে কমলিকে ফিসফিস করে বলল, “প্রধানমশাই শুনতে পেলে এখনই হৈচৈ বাধাবে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে শরীরে এবার ঘুণ ধরে যাবে। একটু ঘুরেঘেরে আসি…গাঁয়ের লোকদের সঙ্গে চেনা পরিচয় করে আসি…। আমি পালাইনি রে, মা। প্রধানমশাইকে আমি ভয় পাই নাকি? ভয় করি তোকে। তুই না তাড়ালে, আমি এ বাড়ি ছেড়ে, এই গ্রাম ছেড়ে সহজে নড়ছি না…এই বলে দিলাম, মা”।ভল্লার চোখের দিকে তাকিয়ে কমলির চোখ ছলছল করে উঠল। বছর দশেক আগে তাঁর হারিয়ে যাওয়া দুই ছেলের বড়টি যেন ফিরে এসেছে তাঁর কাছে। কমলির প্রৌঢ় দুই পয়োধর আচমকাই যেন ভারি হয়ে ব্যথিয়ে উঠল। অস্ফুট স্বরে বললেন, “তার নাম ছিল বুকা – সে আজ থাকলে ঠিক তোর মতই হত…”ভল্লা বলল, “আমিই তো সেই…নিজের ছেলেকে চিনতে পারিস না, কেমন মা তুই?” চোখ আর নাক কুঁচকে ভল্লা হাসল। কমলি চোখের জল এড়াতে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, “একটু দাঁড়া, নাচ দুয়োরে জলছড়া দিই, তারপর বেরোস…নইলে অমঙ্গল হয়…বেশি দেরি করিস না ফিরতে…”। পথে নেমে ভল্লার মনে পড়ল, সে এই গাঁয়ে ঢুকেছিল বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে। অতএব গাঁয়ে যেতে গেলে নিশ্চয়ই ডাইনে যেতে হবে। সে ডানদিকেই হাঁটা দিল ধীরে সুস্থে। পথের পাশে একটা বাবলা গাছ পেল। খুব সাবধানে কাঁটা সামলে ছোট্ট একটা ডাল ভেঙে, মুখে নিয়ে চিবোতে লাগল। নিমের ডালের থেকে তার বাবলার ডালই পছন্দ। মন্থর পায়ে চলতে চলতে সে দেখল পথের দুপাশেই বাড়ি – তবে একটানা লাগাতার নয়। দুই বাড়ির মাঝখানে কোথাও খালি জমি – কোথাও পুকুর। বাড়িগুলি খুবই সাধারণ। বাঁশের বাতায় পুরু করে মাটি লেপে দেওয়াল। কাঠের কাঠামোর ওপর শালপাতার ছাউনি। ঝড়ঝাপটা, বৃষ্টি-বাদলায় এসব বাড়ি মোটেই নিরাপদ নিশ্চিন্ত আশ্রয় হতে পারে না। বেশ কিছু বাড়িতে ছাগলের খামার রয়েছে। সকাল বেলা সব বাড়ি থেকেই বেরিয়ে আসছে ছাগলের দল। কারো কম – চারপাঁচটা, কারো কারো বেশি পনের-বিশটা। দুটো ছোঁড়া হাতে পাঁচন বাড়ি নিয়ে তাদের জড়ো করছে। তারপর খেদিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চারণ জমির দিকে। ভল্লা ছোঁড়াদুটোকে জিজ্ঞাসা করল, “শুধুই ছাগল, গরুবাছুর নেই?”ছোঁড়াদুটো কথা বলল না, শুধু ঘাড় নেড়ে বলল, না। “গ্রাম থেকে কতদূরে, রে? যেখানে এদের চড়াতে নিয়ে যাস?” ছোঁড়াদুটোর একজন হাত তুলে দেখাল, বলল, “হোই তো হোথা”। অন্যজন জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কমলিমায়ের বাড়ি এসেছ না? কোথা থেকে এসছ? যাবে কোথায়?”ভল্লা ওদের মাথায় হাত রেখে বলল, “অনেকদূরের শহর থেকে এসেছি...তোদের সঙ্গে দেখা করতে, এখানে থাকতে...এখন আর কোত্থাও যাবো না আমি”।ওদের তাড়া আছে, ভল্লার নেই। ছেলেদুটো ছাগলের পাল নিয়ে এগিয়ে গেল। ভল্লা দাঁতন চিবোতে চিবোতে বুঝতে লাগল, গ্রামের পরিস্থিতি। গ্রামের আঁকাবাঁকা পথ ধরে সে ধীরে ধীরে চলতে লাগল। এখনও পর্যন্ত কোন বাড়িতেই সে শস্যের গোলা দেখতে পেল না। এমনকি গ্রামপ্রধান জুজাকের বাড়িতেও সে শস্যগোলা দেখেনি। জুজাকের বাড়ির যে ঘরে রয়েছে, সে ঘরেরই এক কোণায় রাখা তিনটে বড় মাটির জালায় ভুট্টা আর জোয়ারের দানা দেখেছে। সে দিয়ে সারাবছরের খোরাক হয়ে যায়? জুজাক আর কমলিমায়ের মাত্র দুজনের সংসার…তাতেও সারাবছর চলতে পারে না। তাছাড়া শুধু পেটে খেলেও তো হয় না। তেল, নুন, কিছু কিছু মশলা, ধুতিশাড়ি, শীতের চাদর, কাঁথা-কম্বল সে সব কিনতেও তো ভরসা ওই শস্যদানাই! তার ওপর আছে শখ আহ্লাদ, পালা-পার্বণ, দায়-দৈব…। রাজধানী শহরের বিত্তবান মানুষের কাছে শস্যদানা থাকে না। তাদের থাকে কড়ি, রূপোর মুদ্রা, সোনার মুদ্রা। সেই মুদ্রা দিয়ে জগতের সব কিছু কিনে ফেলা যায় – ঘরবাড়ি, মূল্যবান কাপড়চোপড়, গয়না-অলংকার, বিলাসব্যসন, সুরা… কি নয়? ভল্লার মনে পড়ল রাজশ্যালক রতিকান্তর কথা। রাজার অনুগ্রহে প্রতিপালিত নিষ্কর্মা, লম্পট লোকটা কত অর্থের অনর্থক অপচয় করে চলেছে প্রত্যেকদিন। অথচ এইখানে এই গ্রামে কী নিদারুণ কঠিন পরিস্থিতি।হাঁটতে হাঁটতে ভল্লা গিয়ে পৌঁছল অনেকটা উন্মুক্ত এক জমিতে। বাঁদিকে বিশাল এক জলাশয়। জলাশয়ের তিনদিকে ঘন গাছপালার সারি আর ঝোপঝাড়। আর সামনেই পাথরে বাঁধানো ঘাট। সেই ঘাট থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন এক অশ্বত্থ গাছ। শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে নিবিড় ছায়াময় করে তুলেছে বৃক্ষতল। সেখানে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে পাথর বিছানো বসার জায়গা। ভল্লার মনে হল, পাথরের ওই আসনগুলি গ্রামের মাতব্বর পুরুষদের বিশ্রম্ভালাপের জায়গা। অপরাহ্ণে হয়তো অনেকেই আসে - কথাবার্তা, শলা-পরামর্শ, পরনিন্দা-পরচর্চা সবই চলে। গ্রামের পালা-পার্বণে উন্মুক্ত এই জমিতেই হয়তো গ্রামবাসীরা সমবেত হয়। হইহুল্লোড়, নাচ-গান করে। ভল্লা সেই জলাশয়ের ঘাটে গিয়ে দাঁড়াল। স্বচ্ছ নির্মল জলের ওপর ছায়া পড়েছে তিনপাশের গাছপালা আর মাথার ওপরের সুনীল আকাশের। জলাশয়ের বিস্তার এতই বড়ো, জলের উপরে তিরতিরে তরঙ্গ উঠছে, প্রভাতী বাতাসের স্পর্শে। ভল্লা ঘাটে নেমে জলস্পর্শ করল, মুখ ধুয়ে, মুখে চোখে জল দিল। কিছুটা জল পানও করল। চাদরে মুখ মুছে ঘাটেই বসল।কিছুক্ষণ আগেই সূর্যোদয় হয়েছে তার সামনে, কিছুটা ডানদিকে। ওদিকে ছোট্ট টিলা আছে একটা। ভল্লার মনে পড়ল, এই গ্রামে ঢোকার মুখে সে একটা সরোবরের সামনে দাঁড়িয়েছিল। তার যতদূর ধারণা সেই সরোবরটা রয়েছে ওই টিলার কোলেই। ওখান থেকে আধক্রোশ মত পথ নেমে সে গ্রামে ঢুকেছিল। তার মানে সে এখন যে দীঘির সামনে বসে আছে, তার ওপারের ঝোপঝাড় বেয়ে ওই টিলার পায়ের কাছেই পাওয়া যাবে রাজপথ। কিন্তু ভল্লার মনে হল, সরোবরের পাড় ধরে যে পথে সে নেমে এসেছিল, সে পথ নেহাতই পায়ে চলা পথ। ও পথে গোরু কিংবা ঘোড়ার গাড়ির পক্ষে ওঠা-নামা সম্ভব নয়। অবশ্য দক্ষ অশ্বারোহী ওপথে যাওয়া আসা করতে পারবে। তাহলে এই গ্রামে ঢোকার জন্যে সদর রাস্তাটি কোনদিকে? ভল্লাকে সেটা জানতে হবে। নোনাপুর গ্রাম এই রাজ্যের সীমান্তবর্তী গ্রাম। অর্থাৎ এই গ্রামের পশ্চিম দিকে রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যের সীমানা। সেই সীমানা এই গ্রাম থেকে কতদূরে? সাধারণতঃ কোন রাজ্যেরই সীমান্ত বরাবর কোন বসতি থাকে না। প্রতিবেশী দুই রাজ্যই জনহীন দূরত্ব বজায় রাখে। অতএব সেই অঞ্চলটি বনাকীর্ণ এবং হয়তো দুর্গম। যদিও ভল্লা জানে, প্রশাসনিক অনুমোদন না থাকলেও সাধারণ জনগণের কিছু অংশ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতায়াত করে থাকে। দৈনিক শ্রমের বিনিময়ে কিছু উপার্জনের আশায়। এবং নিয়ম বহির্ভূত কিছু বাণিজ্যিক প্রয়োজনে। নোনাপুরের কথা সে যেমন শুনেছে এবং আজ সকালে গ্রামের পরিস্থিতি যতটুকু সে উপলব্ধি করেছে – তাতে পড়শি রাজ্যের সঙ্গে এই গ্রামের যোগাযোগ থাকা খুবই স্বাভাবিক।“এই যে ছোকরা…”। পিছন থেকে পুরুষ কণ্ঠের আচমকা ডাকে ভল্লার ভাবনা সূত্র ছিন্ন হল। পিছন ফিরে দেখল, ঘাটের প্রথম ধাপে জনৈক মধ্যবয়সী পুরুষ তাকে ডাকছে, “সেই থেকে ঘাটে বসে কী করছ হে? জান না, সকালে গ্রামের মেয়েরা ঘাটে আসে নানান কাজে…”। মধ্যবয়সী পুরুষের পিছনে চার-পাঁচজন নারী, মাটির কলসি কাঁখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকলেরই মুখভাবে বিরক্তি। ভল্লা দ্রুত উঠে এল ঘাট থেকে, করজোড়ে বিনীত স্বরে বলল, “আমাকে মার্জনা করবেন, আমার অন্যায় হয়েছে। আসলে বিগত কয়েকদিন আমার জীবনের ওপর দিয়ে যে প্রবল ঝড় বয়ে গেল, সেই সব কথাই ভাবছিলাম…এই জায়গাটা এতই নিরিবিলি আর সুন্দর…”। মধ্যবয়সী পুরুষ বলল, “তোমাকে তো বিদেশী মনে হচ্ছে…তুমিই কী সেই যুবক যে ভয়ংকর অসুস্থ অবস্থায় গ্রামপ্রধান জুজাকের বাড়িতে এসেছ?”ভল্লা আগের মতোই সবিনয়ে বলল, “আজ্ঞে হ্যাঁ আমিই সেই হতভাগ্য যুবক”। মধ্যবয়সী সেই পুরুষ ভল্লার কাঁধে হাত রেখে বলল, “তোমার কথা অনেক শুনেছি। এস, আজ তোমার সঙ্গে আমাদের পরিচয়টা সেরে নেওয়া যাক”। মধ্যবয়সী সেই পুরুষের পিছনে পিছনে ভল্লা উপস্থিত হল প্রাচীন সেই অশ্বত্থ গাছের কাছে। ভল্লা দেখল সেখানে আরও তিনজন মধ্যবয়সী এবং দুজন প্রায় বৃদ্ধ পুরুষ বসে আছে। সকলেরই কৌতূহলী দৃষ্টি ভল্লার দিকে। ভল্লার সঙ্গী পুরুষ পাথরের আসনে বসতে বসতে সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই সেই যুবক, মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় জুজাকের ঘরে যে আশ্রয় নিয়েছিল। কবিরাজমশাইয়ের চিকিৎসায় এখন মনে হয় সুস্থ হয়ে উঠেছে”।বৃদ্ধদের মধ্যে একজন বলল, “তা তোমার নামটি কি হে?”ভল্লা মাটিতে উবু হয়ে বসে বলল, “আজ্ঞে আমার নাম ভল্লা”। মধ্যবয়সীদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করল, “বলি ভল্ল-টল্ল ছুঁড়তে পারো? নাকি শুধু নামই সার”?খুব বিনীত স্বরে ভল্লা বলল, “আজ্ঞে, একটু আধটু পারি, তবে সে বলার মতো কিছু নয়...”।আরেকজন মধ্যবয়সী বলল, “তা তুমি পাথরের আসন ছেড়ে মাটিতে বসলে কেন?”“ছি ছি, আপনারা এই গ্রামের গুরুজন, আপনাদের সঙ্গে একাসনে বসাটা আমার মতো সামান্য জনের পক্ষে ন্যায্য হতে পারে না”।“তা কোথা থেকে আসা হচ্ছে”? “আজ্ঞে সেই সুদূর কদম্বপুর থেকে। তবে আমার বাড়ি কদম্বপুর থেকে দূরের এক গ্রামে। রাজধানীতে বাস করি কর্মসূত্রে”। “তা রাজধানীতে কী রাজকার্য করা হয়?” একজন কিছুটা বিদ্রূপের সুরেই জিজ্ঞাসা করল।লাজুক হেসে ভল্লা বলল, “আজ্ঞে রাজকার্য করার মতো বিচার-বুদ্ধি কিংবা বিদ্যা কি আর আমার আছে? গায়েগতরে কিছু বল আছে...সেই সুবাদে রাজধানীর অজস্র নগররক্ষীর মধ্যে আমিও একজন”। ভল্লাকে যে ডেকে এনেছিল, সে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার কথা বিশ্বাস করা গেল না, হে। নগররক্ষীই যদি হবে – তবে চোরের মার খেয়ে রাজধানী থেকে পালিয়ে এখানে এসে উপস্থিত হলে কেন?”কয়েকজন মাথা নেড়ে সায় দিল, দুজন বলল, “ঠিক কথা। সত্যি কথা বল, না হলে এই গ্রাম থেকে তোমাকে আজই বিদেয় করা হবে...”। ভল্লা বিনীত সুরে কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলল, “আজ্ঞে, শুধু এই গ্রাম নয়, এই রাজ্য থেকেই আমার বিদেয় হওয়ার কথা”। উপস্থিত সকলেই উত্তেজিত হয়ে বললেন, “তার মানে? নির্বাসন দণ্ড? তুমি অপরাধী?”“আজ্ঞে হ্যাঁ। নির্বাসন দণ্ড। কিন্তু আমি অপরাধী এ কথা আমি স্বীকার করব না। আমার মনে হয়, আমার কথা শুনলে আপনাদের বিচারে আপনারাও আমাকে অপরাধী বলতে পারবেন না”।কৌতূহলী ছয় পুরুষ নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল, তারপর এক বৃদ্ধ বলল, “আমাদের বিচারে কী আসে যায়? আমরা তো প্রশাসনিক রায়ের ঊর্ধে নই। অতএব তোমার নির্বাসন দণ্ডের নিরসন আমরা করতে পারব না। কিন্তু তোমার কথা শোনার কৌতূহলও হচ্ছে। আমরা রাজধানী থেকে বহুদূরের বাসিন্দা – রাজধানীর পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানি না। প্রত্যেক বছর কর আদায়ের জন্য যে করাধ্যক্ষ আমাদের অঞ্চলে দু-তিনমাসের অস্থায়ী শিবির স্থাপনা করে - তার থেকে এবং তার অধস্তন কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু সংবাদ পাই। তুমি বল হে ছোকরা। সত্যি মিথ্যে কিছু তো সংবাদ আমরা শুনতে পাবো”।মাথা নীচু করে ভল্লা কিছুক্ষণ বসে রইল। সে ঘাড় ঘুরিয়ে না তাকালেও অনুভব করল, তার পিছনেও অনেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এবং তার অনুমান তাদের অধিকাংশই তার সমবয়স্ক যুবক এবং তরুণ। নচেৎ তারাও সামনে আসত এবং হয়ত বয়স্কদের পাশে বসত কিংবা দাঁড়াত। এই অনুভবে ভল্লা নিশ্চিন্ত হল। এরকম আসরে তার বিবরণ শোনাতে পারলে, তাকে একই কাহিনী বারবার বলে কালক্ষয় করতে হবে না। সে নিশ্চিত তার ঘটনার কথা অচিরেই এই গ্রামে তো বটেই – আশেপাশের গ্রামগুলিতেও প্রচার হয়ে যাবে। সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে, ভল্লা তার বিবরণ বলতে শুরু করল। সেদিনের মধ্যাহ্নের রাজপথে সেই বানজারা রমণীদের কথা। তাদের সঙ্গে রাজশ্যালক লম্পট রতিকান্তর দুরাচারের কথা। নগররক্ষী হয়ে তার দায়িত্বের কথা। এবং ক্রুদ্ধ হয়ে রাজশ্যালকের দিকে ভল্ল ছোঁড়ার কথা, সবই বলল। বর্ণনার শেষে বলল, “বিশ্বাস করুন, রাজশ্যালককে বিদ্ধ করে ওই স্থানেই আমি নিধন করতে পারতাম। করিনি, ভীরু কাপুরুষ লম্পট রাজশ্যালককে আমি শুধু ভয় পাইয়ে নিরস্ত করতে চেয়েছিলাম। রাজশ্যালকের দেহরক্ষীরা আমাকে বন্দী করল। নির্মম অত্যাচার করে উপনগরকোটালের কাছে আমায় সঁপে দিল। আমার প্রতি উপনগরকোটাল কিছুটা স্নেহাসক্ত ছিলেন, রাত্রের অন্ধকারে তিনিই আমাকে রাজ্যত্যাগ করতে আদেশ করলেন। নচেৎ পরেরদিন আমার হয়তো প্রাণদণ্ডও হতে পারত। প্রশাসনিক বিচারে আমার নির্বাসন দণ্ড হয়েছে। সে দুর্ভাগ্য আমাকে মাথা পেতে স্বীকার করে নিতে হয়েছে। কিন্তু এ কথা চিন্তা করে আনন্দও পাচ্ছি যে, লম্পট রাজশ্যালক যে শিক্ষা পেয়েছে, অন্ততঃ কিছুদিনের জন্যে সে নিজেকে সংযত রাখবে। আর ওই বানজারা রমণীদের মতোই আরও অনেক কুলনারী, কুমারী কন্যারাও ওই লম্পটের গ্রাসমুক্ত থাকবে”।অন্য এক বৃদ্ধ মন্তব্য করল, “ওই রাজশ্যালকের চরিত্রহীনতার কথা আমাদের কানেও এসে পৌঁচেছে। কিন্তু আমাদের রাজা তো মহান। বিচক্ষণ, প্রজারঞ্জক, দূরদর্শী। তিনি তাঁর এই শ্যালকটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না?”ভল্লা বিনয়ে হাতজোড় করে বলল, “অনেক কথাই কানে আসে। কিন্তু আপনারা প্রাজ্ঞ-গুরুজন, আমি অতি নগণ্য এক রাজকর্মী। আপনাদের সামনে আমার মতো ছোট মানুষের মুখে বড়ো কথা মানায় না। আমাকে ক্ষমা করবেন”।পিছন থেকে কেউ একজন বলল, “আপনার আর ভয় কি? আমাদের এই গ্রাম শেষেই এক প্রহরের হাঁটাপথে এ রাজ্যের সীমানা। তার ওপারে গেলেই তো অন্য রাজ্য। আপনি নির্বাসনের দোরগোড়ায় পৌঁছেই গিয়েছেন। আপনি বলুন। আমরা শুনব”।ভল্লা ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকাল, দেখল তার পিছনে অন্ততঃ পনের জন যুবক দাঁড়িয়ে আছে, তাদের সঙ্গে আছে বেশ কিছু কিশোর ও বালক! ভল্লা ঘুরে বসল, যাতে দুপক্ষকেই দেখা যায়। তার বাঁদিকে পাথরের আসনে বসা প্রাজ্ঞজনেরা, আর ডানদিকে অর্বাচীন যুবক-কিশোরের দল। তার কাছে অর্বাচীন যুবক-কিশোররাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ – তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলাই এখন তার একমাত্র লক্ষ্য।ভল্লা প্রাজ্ঞজনদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাদের অনুমোদন ছাড়া সব কথা প্রকাশ্যে আনা উচিৎ হবে কি?”যে বৃদ্ধ রাজশ্যালক সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনিই বললেন, “আমরা সত্য সংবাদ শুনতে চাই...তুমি বলো”।ভল্লা এবার যুবকদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমরা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে, ভাই? বসো না। নয়তো আমাকেই উঠে দাঁড়াতে হবে”। ভল্লার অনুরোধে সকলেই বসল। কৌতূহলী মুখে তারা তাকিয়ে রইল ভল্লার মুখের দিকে। ভল্লা বলল, “দেখুন, আমি নগররক্ষী বটি, কিন্তু বিশেষ নগররক্ষীদের মধ্যে একজন। এই বিশেষ ব্যাপারটি বুঝতে গেলে, রাজশ্যালকের চরিতামৃতকথাও জানতে হবে। আগে সেই কথাটিই সেরে নিই। দুর্গ প্রাকারের মধ্যেই রাজশ্যালকের নিজস্ব একটি মহল আছে। কিন্তু সে মহলে তিনি রাত্রিযাপন করেন না। কারণ তাঁর রাত্রিযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যে বিপুল আয়োজন, তাতে দুর্গের প্রশাসনিক বিধিবিধান ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। অতএব দুর্গের বাইরে ক্রোশ দুয়েক দূরে, রাজপথের ধারেই তাঁর নিজস্ব একটি প্রমোদভবন নির্মিত হয়েছে। তা প্রায় বছর ছয়েক তো হতে চলল। এবং বলা বাহুল্য, সে প্রমোদভবন নির্মাণ হয়েছে মহামান্য রাজার অনুমোদনেই!সেই প্রমোদভবনের সম্মুখে আছে বিবিধ ফুল ও ফলের বিস্তৃত উদ্যান। বিচিত্র ফুলের প্রচুর লতাবিতান ও লীলাকুঞ্জ। বেশ কয়েকটি কৃত্রিম প্রস্রবণ। প্রমোদভবনে ঢোকার সিঁড়ির দুপাশে, অলিন্দে সাজানো আছে অজস্র নগ্নিকা মূর্তি। গৃহের অন্দরে কী আছে, জানি না, কারণ সেখানে আমাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। ওই সমস্ত নগ্নিকা মূর্তির দুহাতে রাখা থাকে পেতলের দীপ। সন্ধ্যার পর সেই নগ্নিকা-মূর্তিদের করকমলের প্রতিটি দীপ যখন জ্বলে ওঠে সে প্রমোদভবনকে ঊর্বশী-রম্ভার নাচঘর মনে হয়। সুসজ্জিত সেই প্রমোদভবনে রাজশ্যালক প্রতিদিন সন্ধ্যায় যান। সারারাত্তির সুরা ও নারীতে ডুবে থাকেন। খুব সম্ভবতঃ সূর্যোদয়ের পর দেড় প্রহরে তাঁর ঘুম ভাঙে এবং মোটামুটি দ্বিপ্রহরে তাঁর নিজস্ব ঘোড়ার গাড়িতে দুর্গ প্রাকারের ভিতর নিজের মহলে ফিরে যান। এই হচ্ছে তাঁর প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কোন ঋতুতেই তাঁর এই অভিসার যাত্রার কোন ব্যত্যয় হয় না – কারণ তাঁর কাছে সম্বৎসরে একটিই ঋতু – মধুর মধুঋতু! নিত্যনৈমিত্তিক একই ভোগে সুরসিক রাজশ্যালকের সন্তুষ্টি হয় না। তিনি সর্বদা নিত্য-নতুন রমণী সম্ভোগের কামনা করেন। এবং কুলবধূদের কুলনাশ করে তিনি যে আনন্দ পান, বারবধূ সম্ভোগ তার তুলনায় কিছুই নয়। অতএব যাওয়া-আসার পথে তাঁর তীক্ষ্ণ নজর থাকে, যে কোন যুবতী রমণী – সে সধবা কিংবা বিধবা। অধবা তরুণী কিংবা বালিকা। তাদের কেউ যদি সুন্দরী হয়, তবে রাজশ্যালকের গ্রাস থেকে সেই অভাগীদের পরিত্রাণের উপায় থাকে যৎসামান্য। মহানুভব রাজার এই বিষয়টি অগোচরে ছিল না। রাজশ্যালকের এই দুরাচারের প্রতিকার চিন্তা করে তিনি আমাদের মতো বিশেষ কিছু রক্ষীকে নিযুক্ত করলেন। আমাদের কাজ রাজশ্যালকের যাত্রাকালে, তাঁর যাত্রাপথে কোনভাবেই যেন কোন রমণী তাঁর দৃষ্টিপথে না আসে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। এক কথায় ওই সময়ে সকল রমণী যেন গৃহের ভিতরে থাকে। কেউ যেন কোনভাবেই রাজপথে, নিজ গৃহের সামনে প্রকাশ্যে না আসে”।সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে ভল্লা একটু বিরাম নিল, কিছুক্ষণ পর বলল, “মহানুভাব রাজা জেনেশুনেই এই ক্ষুধার্ত হায়নাকে রাজপথে অবারিত চলাচলের অনুমতি দিলেন। কিন্তু নিরীহ সাধারণ নগরবাসীকে পরামর্শ দিলেন ঘরের দরজায় খিল এঁটে থাক। আর আমাদের নির্দেশ দিলেন, সকলে দরজায় ঠিকঠাক খিল এঁটেছে কিনা সেদিকে নজর দিতে। স্বাধীন হায়নাটাকে জব্দ করার নির্দেশ তিনি দিতে পারলেন না!”কথা থামিয়ে হঠাৎই ভল্লা যেন শিউরে উঠল, বলল, “ছি ছি। রাজার অন্নে প্রতিপালিত হয়ে আমি রাজ-সমালোচনা করে ফেললাম? আমার কর্তব্য বিনা বিবেচনায় রাজার নির্দেশ পালন করা। সেখানে বিবেকের তো কোন স্থান নেই! এ আমি, এ আমি কী বলে ফেললাম? ছিঃ”। মাথা নীচু করে ভল্লা মাটির দিকে তাকিয়ে বসে রইল চুপ করে।উপস্থিত কেউই কোন কথা বলল না। সকলেই তাকিয়ে রইল ভল্লার দিকে। সকলেই যেন মনে মনে ভল্লার বক্তব্যের ভাল-মন্দ বিচার করে দেখছে। নির্বিচারে রাজাদেশ মান্য করাই উচিৎ নাকি কখনো কখনো বিবেকের নির্দেশকেও সমীহ করা বিধেয়?সেই বৃদ্ধ আবার বললেন, “তুমি বলো ভল্লা। আমরা জানি তোমার বিচার এবং দণ্ডবিধান হয়ে গেছে। তার পরিবর্তন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবু তুমি বলো, আমরা শুনব”। বৃদ্ধকে সমর্থন করে বেশ কিছু যুবক বলে উঠল, “হ্যাঁ, ভল্লাদা বলো”। ভল্লা মাথা তুলে সকলের মুখের দিকে তাকাল। তার মনে হল, যুবকদের মধ্যে কয়েকজনের চোখে যেন ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ। ভল্লা বিলম্ব না করে বলল, “সেদিনের ঘটনার কথা আপনাদের আগেই বলেছি। বিবেকের তাড়নায় আমি ওই কাজ করেছিলাম। কিন্তু হত্যা তো করিনি, চরিত্রহীন লোকটার মনে ভয় ধরাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সর্বশক্তিমান মহানুভব রাজা কি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তাঁর ওই লম্পট শ্যালককে? লোকটা দিনের পর দিন অপরাধ করেও যে দিব্য স্ফূর্তিতে রয়েছে, সে কি রাজার প্রশ্রয়ে নয়? ওই গর্ভস্রাব লোকটি প্রত্যেক রাত্রে অজস্র অর্থের যে অপচয় করে চলেছে, সে অর্থ কি তার নিজের উপার্জিত নাকি রাজকোষের? অর্থ উপার্জনের মতো কোন যোগ্যতাই যে তার নেই – সে কথা আমরা সকলেই জানি। আপনাদের মতো লক্ষ লক্ষ প্রজার ঘাম-ঝরানো পরিশ্রমের শুল্ক থেকে ভরে ওঠা রাজকোষের অর্থ, কোন অধিকারে ওই লোকটি এভাবে অপচয় করে চলেছে সে প্রশ্ন আপনারা করবেন না?”বয়স্ক মানুষরা ভল্লার এই কথায় চমকে উঠলেন। জনৈক বৃদ্ধ বললেন, “উত্তেজনার বশে এ সব বলা তোমার সমীচীন নয় ভল্লা। তুমি রাজার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছ? সরাসরি আমাদের রাজাকেই তুমি অভিযুক্ত করছ? এ তো বিদ্রোহের কথা?”“কিন্তু প্রশ্নগুলো তো অবান্তর নয়, জ্যাঠামশাই” যুবকদের মধ্যে জনৈক উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, “ভল্লাদা, তুমি জান না, আমাদের এই রুক্ষ বৃষ্টি-বঞ্চিত অঞ্চলে আমরা কী কঠোর পরিশ্রম করি এবং কত সামান্য ফসল ঘরে তুলতে পারি। সেই ফসলেরও রাজকর দিতে হয় এক-তৃতীয়াংশ! সারা বছর আমরা কী খাব, কী পরব। সে কথা রাজা তো চিন্তা করেন না। আর তাঁর শালা রাজধানীতে বসে নিত্য মোচ্ছব চালিয়ে যাচ্ছে?”বয়স্ক মানুষরা শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। কথায় কথায় ছেলে ছোকরার দল উত্তেজিত হয়ে উঠছে। এরপর আর সামলানো যাবে না। এসব আলোচনার কথা রাজকর্মচারীদের কানে গেলে অশান্তি শুরু হবে। এই প্রসঙ্গ এখনই বন্ধ হওয়া দরকার। সেই বৃদ্ধ মানুষটি আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “কথায় কথায় অনেক বেলা হয়ে গেল হে, চলো বাড়ি যাওয়া যাক – স্নান খাওয়া সারতে অবেলা হয়ে যাবে”।ভল্লাও উঠে দাঁড়াল। সকলকে নত হয়ে প্রণাম করে বলল, “হ্যাঁ তাইতো, বেলা অনেক হল। আর দেরি হলে ওদিকে কমলি-মা আমার পিঠ ফাটাবে। ছোটমুখে অন্যায্য কিছু কথা যদি বলে ফেলে থাকি, ক্ষমাঘেন্না করে নেবেন”।ভল্লা গ্রামের ছোকরাদের আচরণে আশ্বস্ত হল। নিশ্চিন্ত হল। ছেলেগুলো একেবারে মিয়োনো নয়, ভেতরে আগুন আছে। ভল্লা তাড়াহুড়ো করবে না, ধৈর্য ধরে সে আগুনকে উস্কে নিতে পারবে। উত্তেজিত যুবকটির চোখে চোখ রেখে সে কিছুক্ষণ দাঁড়াল, তারপর একটু চাপা স্বরে বলল, “বাড়ি যাও ভাইয়েরা, পরে আরও কথা হবে”।ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    যে যেখানে দাঁড়িয়ে - প্রবুদ্ধ বাগচী | যে যেখানে দাঁড়িয়েপ্রবুদ্ধ বাগচী সাতপাকে বাঁধা লোকসভার নির্বাচন শেষ । এবার ম্যারাপ খোলার পালা ।সেই সঙ্গে  মাঠে মাঠে গত দেড় মাসের জমা শুকনো পাতা আর চাপা পড়া ঘাসের আসন্ন বর্ষার অপেক্ষা। অনেক ধুলো উড়ল, অনেক কথা বলা হল, অনেক আশার মেঘ ভেসে বেড়াল নীল আকাশে। আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দেশের সব থেকে বড় মেগা-ইভেন্টে ছুটির ঘন্টা বাজবে। পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচনকর্মী, চ্যানেলে চ্যানেলের সাংবাদিক আর অ্যাংকররা একটু নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাবেন। তারপরেই আসবে আবার সরকার তৈরির হিসেবনিকেশ। পৃথিবীর সবথেকে বড় গণতন্ত্রের জন্য এটাও এক বড় মিডিয়া হাইপ। বিশেষত এবারের নির্বাচন অনেকদিন পরে নানা কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল দেশের ভোটদাতাদের কাছে। একই কথা বলা চলে এই রাজ্যের ক্ষেত্রেও। কিন্তু সব মিলিয়ে কী হবে ? এ নিয়ে প্রচারমাধ্যমে বিবাদ-বিতর্কের কমতি নেই। অমর্ত্য সেন মশাই ভারতীয়দের যুক্তিশীল বা আর্গুমেন্টেটিভ হওয়ার কথা বলেছিলেন। তাঁর সেই প্রত্যাশা কতদূর মিটেছে জানা নেই তবে টিভি চ্যানেলে হরেক রাজনৈতিক যুক্তিতর্কের ‘মিডিয়া শো’ আজকাল সকলে ভাল খায় যার দরুন ওই প্রাইম-টাইমে বিজ্ঞাপনী আয় প্রচুর।     আমরা আমাদের আলোচনা সীমিত রাখছি শুধু এই রাজ্যের কয়েকটি সম্ভাব্যতার ওপর।  নানান মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে ও নানা ধরনের প্রচার বিশ্লেষণ দেখে সাদা চোখে কয়েকটা কথা আমার মনে হয়েছে। এই রাজ্যে এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের ধরন ছিল খুব ঘোলাটে। বিগত বিধানসভায় রাজ্যে বাম ও কংগ্রেস দলের শোচনীয় পরাজয় ও আসন সংখ্যার নিরিখে শূন্যে নেমে যাওয়ায় সাধারণভাবে মনে হয়েছিল টি এম সি ও বিজেপি যেন কিছুটা অ্যাডভান্টেজ নিয়েই খেলা শুরু করবে। কিন্তু ২০২১ সালের পরাজয়ের পর থেকে সি পি এম এর নেতৃত্বে বাম ব্রিগেড কিন্তু আস্তে আস্তে সাংগঠনিক শক্তিকে মেরামত করতে করতে এগিয়েছে। রাজ্য সম্পাদক হিসেবে মহম্মদ সেলিমের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রবণতা বসে যাওয়া কর্মীদের জন্যও ছিল  স্টিমুল্যান্ট। আর বিগত বিধানসভার পরে পরেই রাজ্যের একের পর এক বিপুল দুর্নীতির ‘ভান্ডাফোড়’ টিএমসিকে খুব মসৃণভাবে পা ফেলতে দেয়নি। শিক্ষা নিয়ে চাকরি নিয়ে খাদ্যশস্য নিয়ে ঘোর দুর্নীতিতে বাংলার মন্ত্রী উপাচার্য শিক্ষা দফতরের মাথারা একসাথে জেলে ঢুকেছেন —- স্বাধীনতার পরে বাংলায় এই উদাহরণ নেই। এবং নানা মিডিয়ার চর্চায় এটাও ইঙ্গিত মিলেছে আরো উঁচুতলার প্রশাসন এর সঙ্গে যুক্ত, নানা প্রতিবন্ধকতায় তাঁদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যপ্রমাণ কি কতটা আছে কেউ জানেন না কিন্তু পাবলিক পারসেপশন বলে একটা বিষয় আছে,  তাতে টিএমসি সুপ্রিমো থেকে তাঁর সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড সবাই একটা অদৃশ্য জিজ্ঞাসাচিহ্নের সামনে আছেন। আর কেন্দ্রীয় শাসক দলের সঙ্গে বাড়তি সখ্যের সূত্রে যে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত রাজ্যে ক্রমশ ধার হারিয়ে ফেলছে এটাও আর অস্বীকার করার জায়গায় নেই, হাইকোর্টের বিচারপতি অবধি প্রকাশ্যে একথা বলে ফেলেছেন। সারদা কান্ডের তদন্তের জন্য লোকসভার এথিক্স কমিটির অনুমোদন আজ প্রায় দশ বছরেও এসে পৌঁছায়নি, ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানি। প্রশ্ন উঠবে না ? শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি ও কয়লা বালি পাচারে অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র চোখ এড়িয়ে বিদেশে গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন, এটা কি কেন্দ্রের অভিবাসন দফতরের সঙ্গে যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব ? যেখানে কিছু কিছু অভিযুক্ত ‘প্রভাবশালী’ এই পরিচয়ে জেলে বন্দি সেখানে কয়লা পাচার কান্ডের আরেক অভিযুক্ত অনুপ মাজি (লালা) কীভাবে একদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গেলে এর কৈফিয়ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি দেবেন না ?     এইসব পূর্বাপর বিবেচনা করে টিএমসির এই ভোটের প্রচার ছিল একেবারেই অন্যরকম ও মূলত অপ্রাসঙ্গিক। নিজেদের সরকারের অনুদান-নীতিকে তারা সামনে এনেছেন প্রচারে —-- লোকসভা ভোটের সঙ্গে যার কোনো যোগই নেই। দেওয়ালে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ এর ছবি এঁকে বা কন্যাশ্রীর কথা আউড়ে দিল্লির ভোটে কী হবে কেউই বুঝতে পারেননি। লোকসভায় যিনিই জিতুন রাজ্য সরকারের ঘোষিত প্রকল্প বন্ধ বা চালু করার তাঁর কোনও ভূমিকা থাকে না। ভোটের বাজারে এই সত্যি না বলে তারা কি একরকম ভয় দেখিয়ে রাখলেন মানুষকে? সভায় সভায় তাঁরা প্রকাশ্যেই বলেছেন, অন্য কেউ জিতলে সমস্ত অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে।  এখানে অবশ্য বিজেপির প্রধান সেনাপতি শুভেন্দুর একটা কথা খেয়াল করতে হবে। তিনি বারবার বলেছেন বিজেপি রাজ্যে কুড়িটার বেশি আসন পেলে এখনকার সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে। এর আগেও তিনি এরকম দিন তারিখ বার ঘোষণা করে জন মানসে ‘খেলো’ প্রতিপন্ন হয়েছেন আর এই ধরনের মন্তব্য সুস্থ গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ নয়। বরং এই জুজু দেখিয়ে টিএমসি তাঁদের হরেকরকম ‘শ্রী’  আটকে দেওয়া হবে এমন এক বিকল্প প্রচারের অক্সিজেন পেয়ে যায়। গেছেও। একেকটা সভায় টিএমসি বক্তাদের কথা শুনে মনে হয়েছে তারা যেন পাড়ার পুরসভার ভোটের প্রচার করতে এসেছেন।  একইভাবে বিজেপি তাঁদের সেরা সেরা প্রচারক নিয়ে এসেও খুব আস্থা জাগানোর মতো কিছু বলেননি। তাঁদের খুব পছন্দের ‘ইয়র্কার’ ছিল  ধর্মীয় মেরুকরণ —- তবু রাম মন্দিরের মেগা ইভেন্ট যেভাবে প্রচারের পাল টেনে নিয়ে যাবে বলে তারা মনে করেছিলেন তা হয়নি। এই রাজ্য শুধু নয় কর্ণাটক, অন্ধ্র, বিহার, মহারাষ্ট্রের সাধারণ তরুণ-যুবাদের বলতে শুনেছি কাজ না পাওয়ার কথা, তারা তাঁদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন টিভির ক্যামেরায়। অথচ দেশজোড়া বেরোজগারির প্রশ্নটা বিজেপির ভাষ্যে প্রায় উপেক্ষিত। বরং ২০১৪-তে বছরে দুকোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যে আদপে ছিল বেকারদের জন্য ধাপ্পাবাজি এটা সবাই ধরে ফেলেছেন। দশ বছর সরকার চালানোর পর কার্যত বিজেপির সামনে কোনো ইস্যুই ছিল না। তাই শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী ধ্যানে বসার আগে অবধি মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া, মোগলাই খানা, দেশের সম্পদ কেড়ে মুসলিমদের দেওয়া হবে এইসব নির্লজ্জ মিথ্যে প্রচার করে নিজেকে টেনে নিচে নামিয়েছেন। দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে এত অসত্য এত অবান্তর এত কুৎসিত কথা আমরা ইতিপূর্বে শুনিনি। বিপরীতপক্ষে নিজেকে অবতার বলে প্রচার করে মানুষের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়া বা ২০৪৭ সালের উন্নত ভারতের ‘আজগুবি স্বপ্ন’  ফেরি করা —এর সবগুলোই ছিল ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’ ধরনের। মাঝে মধ্যে এসে অবশ্য বিজেপি এই রাজ্যের নানা দুর্নীতির কথা তুলেছেন এবং তাঁর প্রতিবিধানের কথা বলেছেন। কিন্তু এর সারসত্য নিয়েও তো ঘোর সংশয়। রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে খোদ শুভেন্দুর নাম জড়িয়ে আছে, সারদা নারদায় তিনি আপাত অভিযুক্ত —- আছে আরো কিছু চুনোপুটির নাম যারা এখন বিজেপির ঘরে। যে ভাইপো-র দুর্নীতি নিয়ে তারা এত সরব তাঁর ‘কুকীর্তির’ জরুরি সাক্ষী কালিঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বর আজও তদন্তের সহায় হতে পারল না, শোনা যাচ্ছে পিসির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সাক্ষাতের পরেই নাকি কয়লাপাচারের চার্জশিট থেকে ভাইপোর নাম বাদ পড়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দেখা গেল, ভাইপোর ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রটিতে জোরালো লড়াই দেওয়ার বদলে কার্যত দুর্বল প্রার্থী দিয়ে এবং তারকা প্রচারকদের তাঁর ধারেকাছে না নিয়ে গিয়ে বিজেপি তাঁকে একরকম ওয়াকওভার-ই দিয়ে দিল। আর দুর্নীতির বৃহত্তর ক্ষেত্রে তো বিজেপি চ্যাম্পিয়ন। ইলেক্টরাল বন্ড কান্ডে, পি এম কেয়ার্স ফান্ডে তাঁদের তোলাবাজির ছাপ স্পষ্ট। সেইসঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে কোনো-না-কোনো আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নেতাদের সাদরে নিজেদের দলে ঠাই দিয়ে তারা তো ওয়াশিং মেশিন অভিধাই পেয়ে গেছেন!   বিজেপি আর টিএমসির এই বাইনারির ভিতরে দাঁড়িয়ে এবারেই রাজ্যের বাম-কংগ্রেস জোট একটা নতুন ভাষ্য লোকসভার ভোটে নিয়ে এসেছেন। বিজেপি আর টিএমসি যে আসলে নিজেদের মধ্যে গোপন সখ্য রেখে চলে এই কথাটা এর আগেও তারা বলার চেষ্টা করেছেন — কিন্তু প্রচারটা তেমন দানা বাঁধেনি। কিন্তু গত তিন বছরের রাজ্য-রাজনীতি সেই ‘গোপন সেটিং’-কে কার্যত প্রামাণ্য করে তুলেছে। আসানসোলের দাঙ্গায় অভিযুক্ত, যাদবপুরের ছাত্রনিগ্রহে যুক্ত বাবুল সুপ্রিয়-র টিএমসিতে ফেরা ও এক ধাক্কায় মন্ত্রিত্ব পাওয়া আমাদের কাছে ভাল বার্তা দেয়নি। এর পরে শুরু হয় বিধানসভায় বিজেপির হয়ে জেতা বিধায়কদের পদত্যাগ না-করে টিএমসিতে ফিরে আসা। এঁদের সর্দার মুকুল রায় ইদানিং বলছেন যা বিজেপি তাই তৃণমূল ! সত্যিই তো এই লোকসভার প্রার্থী নির্বাচনে আমরা দেখলাম টিএমসির অনেকগুলি প্রার্থী  ‘দলবদলু’ বিজেপি হিসেবে টিকিট পেয়ে গেলেন আর একইভাবে টিএমসি-র শিবির বদল করে তারা বিজেপির ঘরেও সানন্দে ও সসম্মানে ভিড়ে গেলেন। ১০মার্চ ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সভায় অর্জুন সিং তাঁর বাহিনী নিয়ে টিএমসির সভায় এসেছিলেন, সভা থেকে যখন তাঁর নাম ব্যারাকপুরের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হল না — ফেরার পথে তিনি ভাটপাড়ায় তাঁর দলীয় অফিসে দিদির ছবি নামিয়ে মোদির ছবি টাঙিয়ে দিলেন এবং মোদির দল তাঁকে প্রার্থীপদও দিয়ে দিল —-কী অবাধ আর অনায়াস চলাচল ! যে একশো দিনের কাজ বা আবাস দুর্নীতি নিয়ে ভাজপা সরব, যেখানে তাঁদের হাতে পঞ্চায়েত ছিল তারাও একইভাবে অর্থ তছরুপ করেছেন। উদাহরণ বাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।  এই জায়গায় এবারের বাম কংগ্রেস জোট অনেকটা জোরের সঙ্গে ইস্যুগুলো সামনে এনেছেন, পর্দা ফাঁস করেছেন এই গোপন দাম্পত্যের —-- মানুষও নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন এই সখ্য। পরিবর্তে অনেকদিন বাদে বাম প্রার্থীরা কিছু মৌলিক দাবির কথা তুলেছেন যা নির্বাচনের ফাঁকা দামামায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে কাজের অধিকারের দাবি, চুক্তি চাকরির বদলে স্থায়ী চাকরির দাবি, শিক্ষাকে কলেজস্তর অবধি অবৈতনিক করার দাবি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো বেশি উন্নত করার দাবি ইত্যাদি ইত্যাদি। পাশে পাশে শিল্প স্থাপনে রাষ্ট্রীয় পুঁজির বেশি অংশগ্রহণ, পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার এগুলির কথাও বলা হয়েছে। এর প্রতিটিই সংগত এবং দেশজোড়া কর্মসংস্থানের অভাবের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বামেদের তরুণ ও প্রবীণ প্রার্থীরা উদয়াস্ত খেটে এগুলোকে মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন যা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। যে ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কার কথা আজ বলা হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে তার জন্য দরকার হয় এক পোক্ত বেকার বাহিনী, সেই বাহিনীর ভিত্তি ক্রমশ পাকা হচ্ছে। অনেকেই হয়তো জানেন, ২০১৯ সালে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে আসার পরে ‘নমো ব্রিগেড’ নামক একটি সংস্থা স্বল্প বেতনে অনেক কর্মী নিয়োগ করেছেন শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর প্রচারের জন্য। কাজেই বামপন্থীরা যে ‘রুটি রুজি হকে’র কথা বলে এবার প্রচারের অভিমুখকে কিছু অপ্রাসঙ্গিক খেউড় থেকে বার করে আনার চেষ্টা করলেন তা একটি বলার মতো কথা।  খুব সংগত কারণেই বামপন্থীরা এবারে মানুষের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। কিন্তু সম্ভাব্যতা কয়েকটি। বিজেপি যদি পুনরায় ক্ষমতায় ফেরে এবং বামপন্থীরা যদি নিজেদের ক্ষমতা কিছুটা বাড়িয়ে নিতে পারে তাতে সংসদের ভিতর তাঁদের সোচ্চার কন্ঠ আমরা নিশ্চয়ই শুনব। কিন্তু তাতে চিড়ে ভিজবে না। কারণ, তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরলে বিজেপি আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে আরও জোরাল রোড রোলার চালাবে এটা সুনিশ্চিত। শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ অত্যাবশকীয় ক্ষেত্রগুলিতে আরও আরও বেসরকারি বিনিয়োগকে প্রোমোট করে তাঁরা মানুষের ওপর বোঝা চাপাতে কসুর করবে না। আর সংসদে বিরোধী কন্ঠকে এখনই তাঁরা গুরুত্বহীন বলে মনে করে, এই মনোভাব রাতারাতি পাল্টে যাবে এমন নয়। ফলে নির্বাচকমণ্ডলীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আদপে রূপায়ন করা অসাধ্য। আর যদি ইন্ডিয়া জোট সরকার গড়ার মতো অবস্থায় আসেন এবং বামপন্থীদের সমর্থন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তাহলে বাম সাংসদরা কিছুটা সুবিধেজনক অবস্থায় থেকে নিজেদের দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ২০০৪ সালে যেভাবে ষাটের ওপর সাংসদ নিয়ে তাঁরা ইউ পি এ সরকারের কিছুটা নিয়ামক হতে পেরেছিলেন এবার বামশক্তি যতই সংহত হোক সারা দেশে ওই পরিমাণ আসন তাঁরা প্রত্যাশা করছেন বলে মনে হয় না। একই সঙ্গে টিএমসির ভূমিকা কী হবে তাও বিচার্য। টিএমসি দলের সঙ্গে কোনো নীতির যোগ আছে এত বড় ‘অভিযোগ’ আজ অবধি কেউ তুলতে পারেননি। তারা যেখানে সুবিধে সেখানেই যাবেন। ফলে ইন্ডিয়া জোটে যদি সিপিএম নিয়ামক হতে থাকে তাঁরা সেই ধার আর মাড়াবেন না —-- ইতিমধ্যেই সেই প্রসঙ্গ তাঁদের সুপ্রিমো তুলে দিয়েছেন। বিপরীতে  টিএমসির কাছে যদি ভাল সাংসদ সংখ্যা থাকে ইন্ডিয়া জোটের কাছে তার ‘দরদাম’ ভাল হবে ও তাঁরা সেটাকে কাজে লাগাবেন সিপিএমকে দূরে রাখার জন্য। আর এটাও ঠিক রাজ্যের প্রদেশকংগ্রেস যাই বলুন দিল্লির হাইকম্যান্ড কখনো মমতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছেদ করেনি। মল্লিকার্জুন খড়্গে বারবার বিবৃতি দিয়ে ওঁকে কনফিডেন্সে রেখেছেন এমনকি অধীর চৌধুরীর প্রচারেও দিল্লির কেউ সেভাবে আসেননি। এই হিসেব ঠিক থাকলে ইন্ডিয়ায় মমতার ভূমিকা জোরদার হবে আর বাম সাংসদরা নিজেদের কর্মসূচি কী কতটা রূপায়ণ করতে পারবেন সেটা জিজ্ঞাসা চিহ্নের মুখে।    এর পাশাপাশি মনে রাখা দরকার, আগামী দু-বছরের মধ্যে রাজ্যে বিধানসভার ভোট। অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি ও ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত রায় এখনো সুপ্রিম কোর্টে আংশিক চাপা পড়ে আছে। সেগুলি সামনে এলে রাজ্যের সরকারি দল হিসেবে টিএমসিকে তার মোকাবিলা করতে হবে। কেন্দ্রে বিজেপি থাকলে তাঁরা এখনকার মতোই স্বস্তিতে থাকবেন। কিন্তু ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে বামপন্থীরা চাইবেন এগুলোকে সামনে এনে নতুন করে জনমত গড়তে। এই জায়গাটায় টিএমসির একটা রক্ষাকবচ দরকার। তারা এতদিন বিজেপির থেকে মোটামুটি একটা আশ্বাস পেয়েছিলেন —- নতুন সরকারে যোগ দিলে সেই  ‘কবচ’ তাঁরা আগেই জোগাড় করে নেবেন। সেক্ষেত্রে বামপন্থীরা কি কেন্দ্রের সরকারের থেকে খুব বেশি কিছু আদায় করতে পারবেন ? আরও একটা সম্ভাবনা হল, বিজেপি যদি অল্প কিছু আসনের জন্য ম্যাজিক ফিগার থেকে আটকে যায় তাঁরা কিন্তু টিএমসির সাহায্য চাইতে পারেন। এতদিন বিজেপি-বিরোধিতা করে তাঁদের পক্ষে কি বিজেপির হাত ধরা সম্ভব ? তাঁদের এযাবৎ ট্র্যাক রেকর্ড এর কোনো সদুত্তর দিতে পারে না। তবে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার যে প্রাপ্য টাকার কথা টিএমসি দল বারবার বলেন তাঁর কিন্তু এখনো কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। কে বলতে পারে, ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে বিজেপি সব পুরোনো প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার শর্তে টিএমসির সমর্থন আদায় করে নেবে না? তাঁর সুবিধে হল এখানে তিনি ‘রাজ্যের স্বার্থে’ কেন্দ্রের সরকারকে সমর্থন করছেন এরকম একটা একজিট রুট পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। তাছাড়া, রাজ্যে বামপন্থীরা বেশি আসন পেলে তাঁর পক্ষে বিজেপির পাশে থাকাই সমীচিন। ভুলে যাওয়া উচিত হবে না, টি এম সি প্রতিষ্ঠালগ্নেই তিনি বলেছিলেন, বিজেপি তাঁর স্বাভাবিক বন্ধু ( ন্যাচারাল অ্যালি) ।  এই  সমস্ত  প্রশ্নেরই  জবাব  মেলার জন্য আর মাত্র  কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। 
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১৬ - সমরেশ মুখার্জী | ক্লাইম্বিং কলসুশীল‌দা একটা ফুট তিরিশে‌ক উঁচু বোল্ডারে পাশে‌র ঢাল দিয়ে উঠে ক্লাইম্বিং রোপের একটা প্রান্ত অমিয়দা‌র দিকে মাটিতে নামিয়ে দিলেন। তারপর একটা গাছের সাথে নিজেকে রোপ দিয়ে Anchor করে পাথরে থিতু হয়ে বসলেন। দৃঢ় ভাবে পাথরে ভর দিয়ে রাখা দু পায়ের মাঝখান দিয়ে দড়ি‌টা নীচে নেমে গেছে। সুশীল‌দা যতক্ষণ নিজেকে এ্যাঙ্কর করছিলেন নীচে অমিয়দা তখন দড়ির প্রান্তটা নিজের কোমরে বেঁধে নিলেন। এখন ওনারা  কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু সুমনরা যেখানে আছে সেখান থেকে দুজনকেই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। অমিয়দা ঐ বোল্ডারটা সেভাবেই বেছেছেন। অমিয়দা বোল্ডার‌টি  ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। অর্থাৎ ক্লাইম্বিং রুটটি ও কীভাবে ক্লাইম্বিং করবেন সেটা ছকে নিলেন। তারপর শুরু হোলো প্রোটোকল।অমিয়দা- I AM READY. অর্থাৎ বিলেয়ার বা ক্লাইম্বিং পার্টনার কে জানালেন যে তিনি এবার চড়তে প্রস্তুত। সুশীল‌দা - OK. অমিয়দা- TAKE IN, অর্থাৎ কোমরে বাঁধা‌র পরে অতিরিক্ত দড়ি টেনে নিতে বললেন। সুশীল‌দা - OK বলে, দড়ি টেনে নিতে লাগলেন। একসময় দড়ি‌টা টানটান হয়ে গেল।অমিয়দা- THAT'S ME. অর্থাৎ দড়িটা মাঝে অন‍্য কোথাও পাথরের খাঁজে বা গাছের শিকড়ে আটকে টাইট হয়ে যায়নি। ওটা এখন ক্লাইম্বার ও বিলেয়ারের মধ‍্যে‌ই টানটান হয়ে আছে। এখন থেকে বিলেয়ারের দায়িত্ব হবে ক্লাইম্ব শেষ না হ‌ওয়া অবধি দড়ি‌র ঐ হালকা টানটান ভাবটা বজায় রাখা যাতে ক্লাইম্বার উঠতে শুরু করলে দড়িটা ঢিলে না হয়ে যায়। তাহলে পতন হলে ঝটকা কম লাগবে। অমিয়দা- CLIMBING. অর্থাৎ তিনি এবার চড়তে যাচ্ছেন। সুশীল‌দা- CLIMB ON. তিনি‌ও জানালেন যে উনি‌ বিলে করার জন‍্য তৈরী। দড়িটা উনি কোমরের পিছন দিয়ে একটা পাক মেরে রেখেছেন। এটা Body Belay পদ্ধতিতে Sitting Hip Belay মেথড (আগের পর্বে ছবি 6-22)। পতন হলে ঝটকা সহ ক্লাইম্বারের ওজন বিলেয়ারের কোমর, পাথরে রাখা নিতম্ব ও দু পায়ের মধ‍্যে ভাগ হয়ে যাবে। হাতের ওপর জোর‌ই পড়বে না। এই পদ্ধতিতে একটি রোগা পাতলা মেয়ে‌ও ভারি একটা ছেলের পতন রুখে দিতে পারে। পতন হাত দিয়ে দড়ি ধরে রোখা যায় না, সে চেষ্টা তাই কখনো করা উচিত নয়। অমিয়দা উঠছেন, সুশীল‌দা দড়ি টেনে টেনে টানটান ভাব বজায় রাখছেন। কিছুটা ওঠার পর অমিয়দা একটু বাঁদিকে নেমে পাশ দিয়ে উঠতে চাইলেন অর্থাৎ অবস্থা অনুযায়ী একটু গতি‌পথ পরিবর্তন। কিন্তু দড়ি টানটান তাই নামতে পারছেন না। অমিয়দা - SLACK. অর্থাৎ দড়ি‌টা একটু ঢিলে করতে বললেন। সুশীল‌দা- OK বলে দড়িটা খানিকটা ঢিলা করে দিলেন। অমিয়দা একটু নেমে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রুটটা আবার ভালো করে দেখে আমাদের বললেন, বিলেয়ার‌কে SLACK বলার আগে কিন্তু ক্লাইম্বারের উচিত নিজের ভারসাম্য সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হ‌ওয়া কারণ তখন পা ফসকে পড়লে ঢিলে দড়ি‌র জন‍্য ঝটকা বেশি লাগবে। SLACK বললে বিলেয়ার‌ও একটু রিল‍্যাক্স হয়ে যাবে, কারণ সে ধরে নেবে তখন ক্লাইম্বার এমন জায়গায় আছে যেখান থেকে পতনের সম্ভাবনা নেই। অমিয়দা- TAKE IN. অর্থাৎ উনি আবার চড়তে যাচ্ছেন ফলে বিলে রোপ টানটান থাকা দরকার। সুশীল‌দা- OK বলে দড়ি টানটান করে নিলেন। অমিয়দা- CLIMBING.সুশীল‌দা‌- CLIMB ON.ওরা খেয়াল করলো কখোনো একতরফা কমিউনিকেশন হচ্ছে না। প্রতিবার অমিয়দা‌ কল দিয়ে সুশীল‌দার উত্তরের অপেক্ষা করছেন ও সুশীল‌দাও মূলতঃ OK বলে তা কনফার্ম করছেন। এটা বুক কিপিং‌য়ে ডাবল এনট্রি পদ্ধতির মতো লাগলো। মূল্যবান শিক্ষা। এতে ভুল বোঝার অবকাশ নেই।অমিয়দা উঠতে উঠতে এক জায়গায় ওদের পতনের ডেমো দেখানোর জন‍্য একটু নড়বড় ক‍রতে শুরু করলেন, যেন পড়ে যেতে পারেন। অমিয়দা- WATCH ME! অর্থাৎ আমি একটু বেকায়দায় আছি, পড়েও যেতে পারি।সুশীল‌দা- OK. তিনি খুব সতর্ক হয়ে দড়িটা টানটান করে রাখলেন। অমিয়দা- I AM OK. অর্থাৎ সামলে নিয়েছেন।সুশীল‌দা- OK বলে দড়ির টান আবার স্বাভাবিক করে দিলেন।শৈলারোহণে দড়ির ব‍্যবহার হয় কেবল পতনজনিত সুরক্ষা‌র জন্য। ক্লাইম্বারকে উঠতে হয় পাথরে প্রাকৃতিক খাঁজ, ফাটল ধরে যাকে শৈলারোহণে‌র পরিভাষায় বলে Hold. কেবল প্রাকৃতিক হোল্ড ধরে ওঠা না গেলে Aid Climbing করা হয়। তাতে পিটন, নাট, এক্সপানশন বোল্ট ও আরো নানা সরঞ্জাম ও পদ্ধতির ব‍্যবহার হয়। তবে সেসব ওদের জন‍্য নয়। এ্যাডভান্স কোর্স করে‌ সে ধরণের ক্লাইম্ব করার চেষ্টা করা উচিত। এখানে ওরা পাথরে চড়ার অভ‍্যাস করবে সেকেন্ড পার্সন ক্লাইম্বিং পার্টনার হিসেবে। অর্থাৎ কেউ একজন আগেই আশপাশের সহজ ঢাল ধরে ওপরে উঠে গিয়ে বিলে করবে ও অন‍্যজন চড়বে। এতে বিলে যদি ফেল না করে তাহলে আরোহী‌র চড়তে গিয়ে পা ফসকালেও পতনের কোনো সম্ভাবনা‌ই নেই। এই ধরণের বিলেকে বলা হয় Static Belay অর্থাৎ দড়ি সবসময় টানটান থাকবে, পা ফসকালে শুধু বিলেয়ার‌কে ক্লাইম্বারের ওজন‌টা রুখতে হবে। এক্ষেত্রে বিলেয়ারের অবস্থান পাথরে সর্বদা ক্লাইম্বারের উপরে কোথাও।কিন্তু প্রকৃত ক্লাইম্বিং এর ক্ষেত্রে একজনকে ক্লাইম্বিং রুট ধরে‌‌ই ওপরে উঠতে হয়। তাকে বলে লিড ক্লাইম্বার। সে রুটটা লিড বা ওপেন করে। দলের অভিজ্ঞ, যোগ‍্য ও সাহসী ক্লাইম্বার সচরাচর লিড করে। কিন্তু লিড ক্লাইম্বারের যদি পতন হয়? তাকে কে রুখবে? তার‌ও পদ্ধতি আছে। সেও কোমরে দড়ি বেঁধে উঠবে ও যেখানে মনে হবে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তার আগে‌ই পাথরে Anchor করে তার মধ‍্যে দিয়ে দড়িটা গলিয়ে তারপর আরো ওপরে উঠবে।  একে বলে Running Anchor যা করার নানা পদ্ধতি আছে। এক্ষেত্রে বিলেয়ার সর্বদা নীচে থেকে বিলে করবে। লিড ক্লাইম্বারের পতন হলে সে Last Anchor Point থেকে যতটা উঠবে তার দ্বিগুণ দূরত্ব ফ্রি ফল হয়ে Last Anchor পয়েন্টে আটকে ঝুলতে থাকবে। ফলে একজন লিড ক্লাইম্বার যদি কয়েকটা Running Anchor করে একশো ফুট উচ্চতা চড়তে গিয়ে একদম শেষের দিকে পড়ে যায় তা হলে‌ সে একশো ফুট নীচে এসে পড়বে না। ওপরের দিকে শেষ এ্যাঙ্কর পয়েন্টে আটকে তার পতন রোধ হবে।  এ ধরণের বিলেকে Dynamic Belay বলে। এক্ষেত্রে Fall হলে পাথরে Anchor Point, ক্লাইম্বারের শরীর, বিলেয়ারের Fixed Anchor Point সব জায়গায় ভালো রকম ঝটকা লাগবে। Dynamic Belay সচরাচর Body Belay পদ্ধতিতে করা হয় না। তখন ব‍্যবহার করা হয় Belay Device. মাটিতে এসে না পড়লেও ঐ সীমিত পতনেও পাথরে মাথা, কনুই, হাঁটু ঠুকে গিয়ে লিড ক্লাইম্বারের আঘাত লাগতে পারে। তবে পাথরে প্রথম Running Anchorটি লাগানো‌র আগে‌ই পতন হলে সেখান থেকে লিড ক্লাইম্বার সটান মাটিতে এসে পড়বে।আরো কিছুটা উঠে অমিয়দা আর একবার অভিনীত নড়বড়ে ভঙ্গি করতে শুরু করলেন।অমিয়দা- WATCH ME. সুশীল‌দা- OK. গভীর একাগ্ৰতায় তিনি দড়ি ধরে আছেন। অমিয়দা- TENSION ! তাঁর নড়বড়ে ভাব বাড়ছে। অর্থাৎ উনি পাথরে খাঁজ বা ঘর্ষণে‌র ওপর ভরসা করে ভারসাম্য রাখতে পারছেন না। বিলেয়ারকে দড়ি আরো টেনে ধরে সাহায্য করতে বলছেন। সুশীল‌দা- OK বলে দড়িটা বেশ জোরে টেনে ধরলেন।অমিয়দা- H-O-L-D বলে জোরে আ‌ওয়াজ দিয়েই পাথর থেকে পা ফসকে পড়ে গেলেন। আমাদের দেখানোর জন‍্য। কিন্তু মাটিতে এসে পড়েন নি। তাঁর যোগ‍্য সহযোগী নিমেষে নিখুঁত বিলে পদ্ধতিতে রোপের সাহায‍্যে অমিয়দার পতন ওখানেই রুখে দিয়েছেন। তিনি পেন্ডুলামের মতো দড়ি থেকে শূন‍্যে ঝুলছেন।  এক্ষেত্রে কিন্তু সুশীল‌দা কোনো আওয়াজ দেননি। HOLD একটা SOS কল। তার প্রত‍্যূত্তর দেবার প্রয়োজন নেই। তখন বিলেয়ারের একমাত্র কাজ কু‌ইক রিফ্লেক্সে আরোহী‌র পতন রোখা।অমিয়দা সামলে নিয়ে আবার পাথরে ঠিক‌ঠাক দাঁড়িয়ে বললেন, I AM OK. সুশীল‌দা‌ও OK বলে দড়ির টান স্বাভাবিক করে দিলেন। CLIMBING বলে অমিয়দা আবার উঠতে শুরু করলেন। CLIMB ON বলে সুশীল‌দাও বিলে করতে লাগলেন। আর কোনো অঘটন ছাড়াই অমিয়দা ওপরে উঠে সুশীল‌দার কাছে গিয়ে কোমরের দড়ি খুলে ফেললেন।  সুশীল‌‌দাও বিলে রোপ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ক্লাইম্বের এই পিচ বা পর্ব‌টির শেষ হোলো।ওরা সবাই ও মলয়দা হাততালি দিয়ে ওনাদের দুজনকে এমন একটা ছবির মতো ক্লাইম্বিং ডেমো দেওয়ার জন‍্য অভিনন্দন জানালো। অমিয়দা নেমে এসে বললেন, "HOLD কলটা কিন্তু মিনমিন করে দিলে চলবে না। এত জোরে চেঁচাবে যাতে বিলেয়ার যদি সেই মূহুর্তে একটু অন‍্যমনস্ক‌ও থাকে তাহলে কলটা যেন রিফ্লেক্স ট্রিগারে‌র কাজ করে। মনে রেখো, একবার যদি পতনজনিত ঝটকায় দড়ি বিলেয়ারের কোমর থেকে স্লিপ করতে শুরু করে তাহলে আর তা হাত দিয়ে রোখা প্রায় অসম্ভব। এক মূহুর্ত্তের অন‍্যমনস্ক‌তা হয়তো সঙ্গী‌র পতন, গুরুতর আঘাত বা মৃত্যুর‌ও কারণ হতে পারে। বিলে ডিভাইস দিয়ে বিলে করলে এহেন বিপদে‌র সম্ভাবনা অনেক কম। কিছু বিলে ডিভাইস হঠাৎ ঝটকা লাগলে গাড়ি‌র সীট বেল্টের মতো অটো লক হয়ে যায়। তাই বডি বিলে বা শরীরে দড়ি‌র ঘর্ষণ‌জনিত বাধা‌র ওপর নির্ভর করা বিলে অনেকে আনসেফ মনে করেন। তবু এটা শিখে রাখা জরুরি। কখনো কাজে আসতে পারে।”পুনশ্চঃ - রানিং এ্যাঙ্কর ব‍্যাপারটি শুধুমাত্র লিখে বোঝানো মুশকিল তাই একটি ৫ মিনিটের ডেমো ভিডিও র‌ইলো। এখানে ছেলেটি ১০০ / ২০০% Redundancy বা দ্বিগুণ, তিনগুণ সেফটি নিয়ে রানিং এ্যাঙ্কর করছে। অর্থাৎ একটির বদলে কমপক্ষে দুটি বা তিনটি এ্যাঙ্করের ওপর ভরসা করতে বলছে যাতে কোনো একটি ফেল করলেও পতনের সম্ভাবনা না থাকে। এই পদ্ধতিতে অনেক এ্যাঙ্কর নিয়ে লিড ক্লাইম্বারকে চড়তে হয়।ভারতে শৈলারোহণ ব‍্যাপার‌টা অতো চালু নয় কিন্তু ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এসব জায়গায় এ্যাডভেঞ্চার‌প্রেমীরা নিয়মিত সপ্তাহান্তে রকে চড়তে যায়। সেখানে অনেক প্রচলিত রুটের গাইডবুক পাওয়া যায় যাতে রুটগুলি ব‌ইয়ের পাতায় সুন্দর‌ভাবে দেখানো আছে। সাথে দেওয়া আছে সেগুলো‌র Climbing Grading.   আশির দশকে সুমনরা শুনেছি‌ল রক ক্লাইম্বিং‌য়ের ছয়টি গ্ৰেডের কথা - 1.Easy  2.Moderate  3.Difficult  4. Very Difficult  5. Severe  6. Exceptionally Severe. গাইডব‌ইতে সেগুলি‌র তাৎপর্য ব‍্যাখা করা থাকতো। পরে Alphanumeric, Decimal, Prefix, Suffix, + ইত‍্যাদি সহযোগে গ্ৰেডিং সিস্টেম চালু হয় মূলতঃ রুটটি‌র বৈশিষ্ট্য ও ডিফিকাল্টি লেভেল, আমেরিকা‌ন বা ফ্রেঞ্চ স্পোর্টস ক্লাইম্বিং মেথড ইত‍্যাদি বোঝাতে -  যেমন f7c+, IX+, 5.13a ইত্যাদি।  আমেরিকা‌য় যোশিমিতিতে (Yosemite National park) রক ক্লাইম্বিং দুনিয়ায় অত‍্যন্ত কঠিন কিছু রুট আছে যেমন Nose of El Capitan, Half Dome, কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় The University Wall ইত‍্যাদি। এসব Big Wall Climbing, Free Solo ইত‍্যাদি‌র জগৎ - যেখানে অত‍্যন্ত দক্ষ, সক্ষম, মৃত্যু‌ভয়হীন, দুঃসাহসিক ক্লাইম্বাররা খেলাধুলা করেন। বর্তমান প্রসঙ্গ সেসবের ধারেকাছে‌ও নয়।ভিডিওতে দেখানো পার্মানেন্ট বোল্ট এ্যাঙ্কর‌গুলি আগে থেকে প্রচলিত রুটে কেউ গিয়ে কমপ্রেসড এয়ার বা ব‍্যাটারি চালিত ড্রিল দিয়ে পাথরে গর্ত করে এক্সপ‍্যানশন বোল্ট ঠুকে করে আসে।  মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাটের সহ‍্যাদ্রী অঞ্চল পুণে, মুম্বাইয়ের কিছু উৎসাহী রক ক্লাইম্বাররা নিয়মিত যায়। ওখানে কিছু ক্লাব আরোহী‌দের সুবিধার জন‍্য অমন বোল্ট ঠুকে পার্মানেন্ট এ্যাঙ্কর করে রেখেছে। উপরের ছবিটি সহ‍্যাদ্রীর একটি বিখ্যাত হিল ফোর্ট ট্রেকের।  সেখানে ডিসেম্বর ২০১২তে গেছি‌লাম একটি স্থানীয় গ্ৰুপের সাথে। ছবিতে তিনটে অমন পার্মানেন্ট বোল্ট এ্যাঙ্কর দেখা যাচ্ছে। যার একটি‌তে পরাগ নিজেকে এ্যাঙ্কর করেছে। একটি‌তে লাগিয়েছে নীল রঙের কন্ট্রোল‌ড্ র‍্যাপেলিং ডিভাইস। D এর মতো বস্তু‌গুলি ক‍্যারাবিনার। ঐ ফোর্টে বিভিন্ন জায়গায় অতীতে পাথরে খোদাই করা সিঁড়ি‌গুলি ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন‍্য ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। যাতে মারাঠা বিদ্রোহী‌রা সহজে ওগুলো ব‍্যবহার করতে না পারে। এখন অমন কিছু হিল ফোর্টে ট্রেক করতে গেলে একটু রক ক্লাইম্বিং, র‍্যাপেলিং (দড়ির সাহায্যে স্লাইড করে দ্রুত, সহজে নেমে আসার কৌশল) করতে হয়। ছবিতে পরাগ র‍্যাপেলিং এ্যাঙ্কর পয়েন্টে বসে দলের সদস‍্যদের র‍্যাপেলিং করে নামতে সাহায্য করছে। 
    বুথফেরত ভূত - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | এই লেখাটা আমার নয়। লিখেছেন রাকেশ শর্মা, ইংরিজিতে। ছবিগুলোও তিনিই জোগাড় করেছেন। অনুবাদও প্রাথমিকভাবে আমার নয়। করেছেন যদুবাবু। আমি তাতে একটু মশলা দিয়ে পরিবেশন করছি মাত্র। একটা কারণেই করছি, যে, জিনিসটা মজার লেগেছে। কাল বুথফেরত সমীক্ষায় হরেকরকম 'ফলাফল' এসেছে, খুব বড় বড় সমীক্ষক সংস্থারা লক্ষ-কোটি-অর্বুদ, কে জানে কত টাকা নিয়ে সমীক্ষা করেছেন, কোটপ্যান্ট পরে সেসব পরিবেশন করছেন সঞ্চালকরা, কিন্তু তার সবকটা দেখেই মনে হচ্ছিল, যেন পরীক্ষার ঘন্টা পড়তে চলেছে বলে বলে ব্যাক-ক্যালকুলেশন করে কোনোক্রমে খাতা জমা দেওয়া হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করলেও যে অঙ্ক ভুল হবে, তার কোনো মানে নেই অবশ্য, আইনস্টাইনরা নিশ্চয়ই আজও আছেন। তাছাড়া ঝড়ে এবং ফকিরের সার্জিকাল স্ট্রাইকেও তো কাক মরে।বুথফেরত সমীক্ষা দেখে আপনি কি ভেঙে পড়েছেন?  তাহলে শুনুন, চ্যানেলে চ্যানেল গতকাল যে সব পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে তার বেশিরভাগ-ই ঢপের চপ। তেলে জল নয়, জলেই দুফোঁটা তেল। একেই পরিশীলিত ইংরিজিতে বলে স্ট্যাটিস্টিকাল মার্ভেল। উদাহরণ? কত চান?  ১। রাজস্থান। News24 পূর্বাভাস দিয়েছিল যে রাজস্থানে বিজেপি ৩৩টি আসন জিতবে। জিততেই পারে, অঙ্কের হিসেব যখন। কিন্তু সমস্যা একটাই। রাজস্থানে আছেই মোট ২৫টি আসন।২। হিমাচল। হিমাচলে Zee News এনডিএকে ৬-৮টি আসন দিয়েছিল। সেটাও অসম্ভব কিছু না, চারদিকে মোদি তরঙ্গ। কিন্তু সেখানেও সমস্যা একটাই। সেখানে মাত্র ৪টি লোকসভা আসন আছে।  ৩। হরিয়ানা। যদিও বিজেপি ওই রাজ্যে প্রচারেই ঢুকতে পারছিলনা, কিন্তু তাদের জন্য সেখানে আছে ১৬-১৯টি আসনের পূর্বানুমান। যদিও হরিয়ানায় আছেই মোট ১০টি আসন। ৪। বিহার। Axis My India বলছে LJP বিহারে ৪-৬টি আসনে জিতছে। খুবই ভালো কথা, কিন্তু তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেছে  ৫টি আসনে।৫। ঝাড়খণ্ড।  CPIML ১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, এগজিট পোলের ম্যাজিকে কিন্তু ৩টি আসন জিতছে। এই এক্সট্রা 2ab কোদ্দিয়ে এলো কেউ জানে না।  এইসব হল বড়-বড় ঘাপলা। ছোটোখাটোও কিছু কম নেই। যেমন উড়িষ্যায় BJD ০টি আসনে জিতছে। ইন্ডিয়া টুডে/আজ তক-এর পোলস্টার Axis My India তামিলনাড়ুতে (৩৯টি আসন) পূর্বাভাস দিয়েছে, সংখ্যা যোগ করলে দেখা যাচ্ছে মোট ২৯-৩৩টি আসন। ১০/৬টি আসন হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেছে। Republic TV বিজেপি+কে তামিলনাড়ুতে-এ ৩২% ভোটশেয়ার দিয়েছে, আর AIADMK-কে ১৬%। এইসব দেখে মনে হয় যে  গোদি_মিডিয়া এক্সিট পোলগুলিতে বিজেপি/এনডিএ-কে ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৬০০টি আসন দেয় নি সেটাই এক আশ্চর্য ব্যাপার। এবং সবশেষে - মনে রাখবেন যে ৭ম পর্যায়ের ৫৭টি আসনে ভোটদান ১ জুন সন্ধ্যায় শেষ হয়নি, যখন সমস্ত পোলস্টাররা তাদের জাতীয় এবং রাজ্যভিত্তিক পূর্বাভাস প্রচার শুরু করেছিলেন। এই ৫৭টি আসনের জন্য তারা নির্ঘাত কোনো এক্সিট পোল পরিচালনা করতে পারেনি, ভোটশেয়ার ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারেনি (কারণ ওসবে সময় লাগে), কাজেই যাই স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেল থাক, আসন পূর্বাভাসের জন্য তাতে সম্পূর্ণ ডেটা ফিড করতে পারেনি।  অতএব, এই আসনগুলির জন্য কোনো পূর্বাভাসই নিছক অনুমান। আন্দাজে ঢিল। তাই আসল ফলাফলের অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ,  দেখতেই পাচ্ছেন এগজিট পোলের ছড়ানোর বিস্তর, প্রাঞ্জল উদাহরণ চারপাশেই আছে। সেরকম মণিমুক্তো পেলেই এই টইতে আপডেট করুন। এই লেখার সঙ্গে সমস্ত স্ক্রিনশট যা কুড়িয়ে-বাড়িয়ে পাওয়া গেল নিচে রইল। কোনোটা ফেক বলে জানা গেলে সরিয়ে দেওয়া হবে।পুনশ্চ: যদিও ওঁর নিজের-ই অন-এয়ার স্বীকার করা উচিত ছিলো ইন্ডিয়া টুডে/আজ তক-এর শোয়ের সময়, কিন্তু @AxisMyIndia-এর প্রদীপ গুপ্তও বিজেপির জন্য নির্বাচনী সমীক্ষা/জরিপ পরিচালনা করেন এবং স্পষ্টতই অমিত শাহ এবং পীযূষ গয়ালের কাছে রিপোর্ট করেন। ছবি-টবিঃ  রাজস্থান  হিমাচল  হরিয়ানা  বিহার  ঝাড়খণ্ড ঝাড়খন্ড (আরেকটি)  তামিলনাড়ু  প্রদীপ গুপ্তার এনডিএ কানেকশন  
  • জনতার খেরোর খাতা...
    টকমিষ্টি  - Suvasri Roy |    ভালোবাসা বলি বা প্রেম, একটা মিষ্টি অনুভূতি। নিঃসন্দেহে মিষ্টি তবে পুরোটাই কী মিঠে! একটুও টক নয় কি? তাছাড়া টক সব সময় অসহ্য নয়, অনেকের কাছেই সব সময় স্বাদু। ব্যক্তিগতভাবে অামি টক পছন্দ করি তবে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে কষ্ট হয় বৈকী।    ভালোলাগা, ভালোবাসা নিয়ে এখানে এমন কয়েকটা ঘটনার উল্লেখ করব, যেগুলো প্রচলিত চিনি মাথা মধুর ঘটনা নয়। তবে ঘটনাগুলো যথেষ্ট বর্ণময়। প্রচলিত ছকে না অাঁটলেই সেটা খারাপ,  আমরা যা দেখিনি শুনিনি সেটাই অপবিত্র এমন ভাবাও তো ভুল। তাছাড়া একটা কথা সব সময় সত্যি। মানুষ কোন পরিস্থিতিতে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটা না জেনে তার সমালোচনা করা উচিত নয়। অনেকে পারিবারিক চাপ থেকেও বিয়ে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বা বদলায়। পারিবারিক চাপ তো আর বাইরে থেকে দেখা যায় না। এ সব কিছুটা বুঝতে পারি বলেই আমার চোখ সহজে কাউকে খলনায়ক বা খলনায়িকা হিসেবে দেখে না। তবে কাউকে কাউকে স্বার্থপর ও সুযোগসন্ধানী বলে মনে হয়, তা ঠিক।   একটি ছেলে একটি মেয়েকে উত্যক্ত করত বলে শোনা যাচ্ছিল। ছেলে চাকরিবাকরি করত।  সরকারি কর্মচারী  সোনার চাঁদ ছেলেরা মেয়েদের উত্যক্ত করে না, এমনো নয় কিন্তু। মেয়েটি রাস্তার মধ্যে ছেলেটিকে জুতো দিয়ে মেরেছিল। তারপর শুনলাম, সেই ছেলের সঙ্গেই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেছে। পাড়ার লোক অনেক মিষ্টি খেয়েছিল। বিয়ের কথাটা শুনে অামার অদ্ভুত লেগেছিল। ছেলের বাড়ির হয়ে প্রস্তাবটা যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর নিশ্চয় অসীম সাহস। তাঁর অনেক কিছুই খাওয়ার আশঙ্কা ছিল কিন্তু তবু কী করে যেন সে সব না হয়ে এমন ঝাল একটা ঘটনার মিষ্টি পরিণতি হয়ে গিয়েছিল।   এই পাড়াতেই আরেকটা কান্ড। এ পাড়ায় প্রেম-ভালোবাসা থেকে প্রায়ই অদ্ভুত অদ্ভুত ব্যাপার ঘটত। যাক গে, ঘটনায় ঢোকা যাক মানে আমার মতো বাইরের লোকের পক্ষে ঢোকা সম্ভব আর কী! এক বাড়িতে দুই ভাই। পাশের দু'চারটে বাড়ি পরে একটি পরিবারের এক কন্যার সঙ্গে বড় ভাইয়ের প্রেম। দুই ভাইয়ের মধ্যে হয়তো বা বছর দশেকের তফাত। কন্যার সঙ্গে বড় ভাইয়ের প্রেম, বিয়ে হবে হবে এমন পরিস্থিতি। এমন সময় শোনা গেল, বড় ভাই নয়, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কন্যাটির বিয়ে হবে।   আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, মিথ্যে কথা। এমন কত গুজবই না রটে। ওমা! দেখা গেল ছোট ভাইয়ের সঙ্গেই কন্যার বিয়ে হল। সে কন্যা নাকি তার বাড়ির লোককে বলেছিল- "ওর চুলে পাক ধরেছে। পাকা চুলকে বিয়ে করতে পারব না। ওর ভাইয়ের সঙ্গে দেখো তোমরা। ওরা রাজি থাকলে আমি রাজি। বেশ বাপের বাড়ির কাছাকাছি থেকে যাব সারা জীবন।" কে জানে কোন প্রাণে ছেলে পক্ষ রাজি হয়েছিল! সে কন্যাই বা কেমন, তার কোনো মূল্যবোধ ছিল কিনা এই প্রশ্নও জাগে।     আরেকটা ঘটনা। এক পাত্র কোথাও মেয়ে দেখতে যাবে। বেশি কাউকে না পেয়ে সঙ্গে করে এক বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিল। মেয়ে দেখে পাত্রের পছন্দ হয়নি কিন্তু বন্ধুর ভারি ভালো লেগে যায়। অতএব কিছু দিন পরে হইহই করে সেই মেয়ে "পাত্রের" বন্ধুর বৌ হয়ে গেল। আদি পাত্র নিজেও সেই বিয়েতে অনেক খেটেছিল। অত্যন্ত নির্মল এই ঘটনা স্নিগ্ধ কৌতুকের।   পরের ঘটনা৷ বন্ধুর বাড়িতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে একটি সুশিক্ষিত ধনী মেয়ের একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। সে ছেলেও ভারি ভদ্র এবং শিক্ষিত অবশ্য তখনো অবধি চাকরি পায়নি।  কিন্তু পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলই। যাই হোক, অনুষ্ঠান শেষে মেয়েটি বাড়ি ফিরে যায়। পরে বন্ধুকে নিজের মনের কথা জানায়। বন্ধু বলেছিল, "সব শুনে সিদ্ধান্ত নিবি কিন্তু৷ অমুকদা ভালো ছেলে, লেখাপড়াও জানে সব ঠিক। তবে ও কিন্তু আমাদের এক সময়কার রাঁধুনির ছেলে।"  মেয়েটির মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল৷ জটিলতা সৃষ্টির ভয়ে এই ভালোলাগা নিয়ে সে আর এগোয়নি। শ্রেণী এমন একটা বিভাজন যেটাকে দেখা যায় না কিন্তু বাস্তবে এটা ভীষণভাবে রয়েছে। সময় সময় মাথা তুলে শ্রেণীচেতনা হৃদয়ঘটিত আদান-প্রদানের মধ্যে অনেক অবাঞ্ছিত মোড় এনে দেয়। শ্রেণীগত ধ্যানধারণার বাইরে বেরিয়ে ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য অনেক সাহস লাগে। সেই সাহস, সেই মনের জোর সবার থাকে না। এই মেয়েটিরও ছিল না।     এক অদ্ভুত কারণে একটি জুটির সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। নিঃসন্দেহে কারুর কারুর জীবনের বাদ্যযন্ত্র অনেক উঁচু তারে বাঁধা থাকে যা সবার ধ্যানধারণার বাইরে। ব্যাপার বলি। মেয়েটি এক দিন ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করেছিল- "আচ্ছা পন্ডিত রবিশঙ্করের সেতার শুনতে তোমার কেমন লাগে?" প্রেমিকের জবাব ছিল, কেমন আবার! প্রথম দু'চার মিনিট ভালো লাগে, তারপর একঘেয়ে মনে হয়।" শুনে মেয়েটি বলে- "আমার তো ভেতরে অাবেগ-অনুভূতির ঢেউ ওঠে, কান্না পায়।" অনুভূতি সংক্রান্ত বৈপরীত্য থেকেই তাদের সম্পর্ক পরিণয়ে পরিণতি পায়নি বলে রটনা। বিয়েটা হলে যৌথ জীবনের সুরযন্ত্র কোন তারে বাজত, কে জানে ! অসীম শক্তিশালী জগৎ হয়তো আগেই কিছু একটা বুঝতে পেরে বিয়েটা হতে দেয়নি।     হ্যাঁ, জগৎ আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো সে আমাদের ইচ্ছাকে পূরণ করে, কখনো বেদনাময় ছোট-বড় শূন্যস্থান রেখে দেয় ৷ কখনো আবার তার রূঢ় রূপও দেখি। সেই সঙ্গে সে নির্মল কৌতুকেও সিদ্ধহস্ত। সম্যক পরিমাণে টক, মিষ্টি, ঝাল নুন, তেতো দিয়ে এমন অক্লান্ত রাঁধুনি জগৎ ছাড়া আর কেউ নেই। 
    ভোটরঙ্গ দুটো আলাদা সময় : দুটো ছবি - Debanjan Banerjee |                         এখন দেশে ভোটরঙ্গ নিয়ে মানুষের আশা আকাঙ্খা উচ্ছাস উল্লাস আশংকা সবই চরমে | আমার নিজের এই ভোটযুদ্ধের ব্যাপারে নিজের জীবনের দুটো অভিজ্ঞতার কথা আজকে বলবো | প্রথমেই বলে রাখি এদুটো কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভা নয় পাতি এলাকার মিউনিসিপ্যালিটির ভোটের কিন্তু আজকে এখানে এই ঘটনা উল্লেখ করলাম ভোটরঙ্গের একটা ছবি তুলে ধরতে |প্রথম ঘটনা ২০০৫ সালের |  আমাদের নতুন ফ্লাট কিনে নতুন পাড়াতে ওঠবার পরে ওটাই ছিল আমার প্রথম ভোট | তা সকাল সকাল ৮ টার মধ্যেই বুথে গিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম | আমার ঠিক আগে এক ভদ্রলোক ছিলেন , তাকে চিনতাম এই জন্য যে পাড়াতে তিনি খুব সম্ভবত: ছোট একটা মুদিখানার দোকান তখন চালাতেন ; সেই সময়ে মনে হয়েছিল তার বয়েস এই চল্লিশের কোঠা সবে ছাড়িয়েছে | গালে কাঁচাপাকা দাড়ি, গায়ে আটপৌরে একটা প্যান্টশার্ট , মুখ থেকে বিড়ির গন্ধ আসছে , হাতে একটা পুরোনো বাজারের ব্যাগ ; খুব সম্ভব: ভোটটা দিয়ে তিনি বেরিয়ে যাবেন রোজকার বাজার করতে | ভোট এর লাইন দিয়ে দাঁড়ানো আর পাঁচটা মানুষের সঙ্গে তাকে আলাদা করে চেনার কোনো উপায় নেই | তবুও এতগুলো লোকের মধ্যে তাকে আলাদা করে মনে রাখবার একটাই কারণ তার বাক্যবাণ | লাইন দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থাতেই তিনি উগরে দিচ্ছেন তার যত রাগ ক্ষোভ দুঃখ , এবং পুরো ঝালটাই তিনি ঝাড়ছেন সেসময়কার শাসক দলের বিরুদ্ধে | ভোটের লাইন এ তার আগে পিছে কেউ শুনছে কিনা বিশেষত শাসক দলের কেউ যদি শুনে ফেলে সেই নিয়ে তার কোনো চিন্তা নেই তিনি শুধু উগরে দিচ্ছেন তার যেন দুনিয়ার যত রাগ সব শাসক দলের উপরে পারলে শাসক দলের ক্যান্ডিডেটের জামানত তিনি একই জব্দ করে দেবেন | সেই সময়টা এখনকার মতোই মে বা জুন মাস ছিল যতদূর মনে পড়ছে | তা ভ্যাপসা গরমের মধ্যে ভদ্রলোকের এসব শাসক দলের এগেনস্টে করা এসব টুকরো টুকরো চোখা চোখা কমেন্টস খারাপ লাগছিলো না শুনতে ; সেসময়ে স্মার্ট ফোনের বাজারে আগমন হয়নি কাজেই গরমে লাইন দিয়ে দাঁড়াবার সময়ে কিছুক্ষনের জন্য হলেও এইরকম একটা ডিস্ট্রাক্শন ভালোই লাগছিলো | তখন আমি কলেজে পড়ি , খবরের কাগজে পড়ে ছিলাম যে দেশের মেট্রো শহর গুলো যেমন মুম্বাই বা দিল্লিতে ব্যস্ত মানুষ ভোট দিতে খুবই কম যায় এখন মনে হচ্ছিলো এই ভদ্রলোকের রানিং কমেন্ট্রি ওসব জায়গার বুথগুলোতে শোনাতে পারলে হয়তো ভোটিংপার্সেন্টেজের রেট একটু বাড়লেও বাড়তে পারে !  তা এইরকম করতে করতেই ভোট দেবার ঘরে আমাদের পালা এসে পড়লো , একসঙ্গে ৪-৫ জনের ডাক পড়ছিলো ভোট দেবার সময় | আমার সামনের ভদ্রলোকের যখন পালা এলো তখন তিনি তার ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড দেখাবার পরেই প্রিসাইডিং অফিসার মুখ তুলে বললেন , " আপনার তো ভোট পড়ে গেছে |" অদ্ভুত ব্যাপার , যে ভদ্রলোক এতক্ষন এতকিছু বলছিলেন তার মুখটা হয়ে দাঁড়ালো বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৭০ হাজার দর্শকের "সচিন সচিন" চিৎকারের মধ্যে একটাও বল না খেলে তেন্ডুলকর রান আউট হয়ে গেলে যেরকম হতো ঠিক সেরকম ! "আমার ভোট !" বলে অস্ফুটে একটা কথা বলেই উনি বেরিয়ে গেলেন আস্তে আস্তে ভোটের ঘর থেকে | এতক্ষন শাসক দলের নাম করে এতগুলো চোখা চোখা বাক্যবাণ চালানো মানুষটা মনে হলো শাসকদলের আসল জায়গাতে আসল শক্তি প্রদর্শনে একেবারেই মুহ্যমান !পরের ঘটনা ২০১৫ সালের | মাঝখানে ১০ ১০ টি বছর কেটে গেছে , জীবনকে দেখার চোখটাও বদলে গেছে অনেকটাই | সেবারে মনে পড়ছে মে মাসের মাঝামাঝি সময় ছিল সেটা | ভোট পড়েছিল একটা রবিবারের দিনে | সেই সপ্তাহে নেপালে একটা ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেটা মনে আছে | কলকাতাতেও আফটারশক হচ্ছিলো তার পর কয়েকদিন ধরেই | সেদিন সকাল থেকেই আমার ইচ্ছে করছিলোনা ভোট দিতে যেতে | ওই যে বললামনা আমার জীবনবোধ আস্তে আস্তে জীবনের মার্ খেতে খেতে অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছিলো সেই সময়টাতে | কি হবে ভোট দিয়ে , আমার জীবনের কি কোনো উন্নতি আদৌ হতে পারে ভোট দিয়ে ! আন্তোনিও গ্রামসি ভোটাধিকার আর সাধারণ মানুষের ক্ষমতা নিয়ে যাই বলুন সারা সপ্তাহ ধরেই মনে হচ্ছিলো যাকেই ভোট দিয়ে দি আমার জীবন কি বদলাবে একটুকুও ! রবিবারের অনেক আগেই ঠিক করে ফেললাম যাই হোক এবারে আর ভোট দেবোনা | রবিবার ছুটির দিন ভোট দিয়ে আর সময় নষ্ট করবোনা একেবারেই | কিন্তু বিধি বাম ! আমার মনে যাই থাকুক না কেন সর্বশক্তিমানের বোধয় ইচ্ছে ছিল অন্যরকম ! রবিবার সকাল নটার সময়েই আমাদের পাড়াতে আরেকটা আফটারশক হলো | "ভূমিকম্প  ভূমিকম্প !" বলে চিৎকার করতে করতে আমাদের পুরো ফ্ল্যাট কমপ্লেক্সের সবকটা ফ্ল্যাট থেকে আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এলাম | এভাবে ৫ ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকবার পরে হঠাৎ করে ফ্ল্যাটের আমাদের সমবয়সী কোনো একজন বললো , " নাহ বসে বসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি হবে যাই গিয়ে ভোট দিয়েই আসি " ব্যাস এসব ক্ষেত্রে যা হয় একজন বললে ভেড়ার পালের মতো আরো অনেকে পিছনে এগিয়ে যায়, এখানেও ঠিক তাই হলো | কিচ্ছুক্ষন পরেই দেখলাম ফ্ল্যাটের আরো অনেকের সঙ্গে আমিও ভোটিং বুথের জন্য পাড়ার যে স্কুল সেদিকে যেতে শুরু করে দিয়েছি | পাঠক যদি ভেবে নেন সর্বশক্তিমানের ইচ্ছে এইখানেই পূর্ণ হয়ে গেলো তাহলে খুব ভুল করবেন | আমাকে সেদিন উনি জীবনের যে গল্পটা দেখাতে চাইতেন সেটা তখনই শুরু হচ্ছিলো ! ভোটের লাইন এ দাঁড়াবার পর দেখি ভিড় প্রায় একেবারেই নেই বললেই চলে | ভূমিকম্পের আফটারশকের ভয়েই হোক বা জীবনের ধারাপাতের উপরে ঘেন্না ধরে যাওয়াই হোক সকাল দশটা প্রায় বেজে গেলেও ভোটের লাইন তখন প্রায় ফাঁকা ! ফ্ল্যাট থেকে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম ভোটের লাইন এ | কাকতালীয় কি না জানিনা কিন্তু দেখি সেই ১০ বছর আগের ভদ্রলোক এবারেও ঠিক আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে | গত বারের থেকে তার চেহারাতে ফারাক বিশেষ নেই তবে এবারে যেন মনে হলো তার জীবনের উপরে ক্ষোভ আগের থেকে অনেকটাই কম কেননা এবারে শাসকদলকে নিয়ে চোখা টুকরো তির্যক মন্তব্যের পরিমান দেখলাম অনেকটাই কম | যেহেতু লাইন বেশ ছোট ছিল তাই ১৫ মিনিটের মধ্যেই ভোটের ঘরে আমাদের পালা চলে এলো | ভোটার কার্ড দেখিয়ে , আঙুলে কালী লাগাতে যাবো ঠিক সেই সময়ে আমার পিছনের সেই ভদ্রলোকের ভোটার কার্ড দেখাবার পালা এলো ঠিক সেসময়ই শুনলাম প্রিসাইডিং অফিসারের মুখে ঠিক ১০ বছর আগের সেই দৈববাণী আরেকবার " আপনার ভোট তো হয়ে গেছে" ! আঙুলে কালী লাগিয়ে ভোটিং মেশিনের ঘরে ঢোকবার মুহূর্তে লক্ষ্য করলাম সেই আগের মতো অন্ধকার মুখ করে ভদ্রলোক বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে একটু একটু করে !অনেক বছর ধরেই ভোট দিচ্ছি কিন্তু আমার ভোটার জীবনের এইদুটো ঘটনা আমাকে সর্বশক্তিমান যা দেখিয়েছেন সারা জীবন মনে থাকবে | সত্যি ভোটের লাইন টাতে কত লোক যে থাকে জীবনের  কত বিচত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে ! 
    পুরোনো আর নতুন - পাগলা গণেশ | এই পথে আমি শত-সহস্রবার গেছি আগে,আমি এখানের প্রতিটি ইঁট,সিমেন্ট,এমনকি বালির কণাকেও চিনি,এই পথের পাশের গাছ আমাকে বেশি ছায়া দেয়,পথের লোকেরা আমার আত্মীয়।কখনো আত্মীয়তা দাবি করিনি,ওটা স্বতঃস্ফূর্ত।আমি নিশ্চিন্তে যেকোনো ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে পারি,আমার পরিচিত সবাই।কিন্তু মাঝে এক দশক কেটে গেছে হয়তো,আমি হিসেবে বড্ড কাঁচা কিনা?তবে বেশ অনেকদিন,একথা বলতে পারি।আজকে যখন হেঁটে এলাম,অনেক নতুন মুখ যোগ হয়েছে রাস্তায়,দরজায়,জানালায়,দোকানের কাউন্টারে।ওদের সাথে পুরোনো মুখের আদল মেলে,কিন্তু তাতে নতুন যুগের পালিশ।ওদের মুখের অবাক অপরিচিত ভাব বলে দেয়,আমি বাতিল হয়ে গেছি।তাই আমি ফিরে যাই কবরস্থানের দিকে,ওদিকে আমার পরিচিত বেশি।নতুন যারা,তারাও পুরোনো, চেনা।ওদের সাথে কথা বলা যাবে না,ঠিক।কিন্তু ওদের উপস্থিতিও আন্তরিক।আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারি,কোনো ক্লান্তি,দ্বিধা বা অপদস্থতা আসে না।জানি এরা ক্ষমা করে দেবে সব।এরা আমার নিজের।
  • ভাট...
    commentDebanjan Banerjee | @অরিত্র 
     
                     অনেক অনেক ধন্যবাদ | আপডেট করে দিয়েছি |
     
    commentঅরিত্র | ওপরের মেইন মেনু থেকে "খেরোর খাতা" তে গিয়ে "আপনার খাতা" বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার প্রকাশিত লেখাটার পাশে "সম্পাদনা করুন" বাটনে ক্লিক করে এডিট করুন।
    commentDebanjan Banerjee | https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=30193      
     
    এই খেরোর খাতার উপরের লেখাটিতে টাইটেল এর জায়গাতে ভুল করেছি | এটাকে আপডেট করতে চাইলে কি করবো কেউ একটু হেল্প করবেন ?
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত