গতকাল সারা দিন ও রাত একটানা হেঁটেছে ভল্লা। একে তো তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। যন্ত্রণা এবং ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে তার শরীর। তবু সে হেঁটেছে অবিরাম। আজ রাত্রির আট প্রহরে সে এসে পৌঁছল বিশাল এক সরোবরের পাশে। বীজপুর চটির জনাই তাকে দিক নির্দেশ করে বলেছিল, এই পথ ধরে একদম নাক বরাবর গেলে ডানদিকে একটা সরোবর পাবি। ওই সরোবরটা ছোট্ট একটা পাহাড়ের কোলে। ওখান থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখতে পাবি – যতদূর চোখ যায় – ছোটছোট ঝাড়ি আর কাঁটাঝোপের জঙ্গলে ভরা ঢালু জমি। তার মানে তুই নোনাপুর গ্রামের চৌহদ্দিতে পৌঁছে গেলি। ভল্লার মনে হল এটাই সেই সরোবর। জনাই আরও বলেছিল, ওই সরোবরের পশ্চিম পাড়ে দাঁড়ালেই তোর ডানদিকে দেখতে পাবি একটা পায়েচলা সরুপথ নেমে গেছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে। ওই রাস্তা ধরে, খুব বেশি না, আধক্রোশেরও কম, হাঁটলেই পেয়ে যাবি, নোনাপুরের গ্রামপ্রধানের বাসা। নাম জুজাক। এমনিতে লোক খারাপ না, তবে বড্ডো বদরাগী। একবার রেগে গেলে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে ওর বউটা খুব ভালো। মনে খুব মায়া-মমতা।
আমার হপার পাতায় ভোটুৎসবে ভাট সিরিজে নামিয়ে যাচ্ছি নানা বিক্ষিপ্ত হ্যাজ। ডাইভার্সনের জন্য। এমতাবস্থায় গুরুর মূল ভাটে চোখে পড়লো এটা
RISE TO VOTE SIR রাত্তির নটার সময়ে আমাদের পাশের গ্রাম ব্রুকউডের কনট এভিনিউর বাড়িতে বাড়িতে বেল বাজিয়ে যখন গৃহ কর্তা বা গৃহ কর্ত্রী ভোট দিয়েছেন কিনা সেটা যখন জানতে চাইলাম , বহু কাল আগে পড়া শরৎচন্দ্র পণ্ডিত বা দাদা ঠাকুরের সেই বিখ্যাত প্যালিনড্রমটি মনে পড়ল -রাইজ টু ভোট সার! উলটো দিক থেকে পড়লেও সেটা রাইজ টু ভোট সার থেকে যায় ! উওকিং কাউনসিলে দশটি ওয়ার্ড (বাইফ্লিট ও ওয়েস্ট বাইফ্লিট ,কানাল সাইড, গোল্ডসওয়ারথ পার্ক, হিথল্যান্ডস, হো ভ্যালি, হরসেল ,ন্যাপহিল, মাউনট হারমন, পিরফোরড ,সেন্ট জনস) মোট ভোটার সংখ্যা সব ওয়ার্ডে প্রায় সমান , টোটাল আশি হাজার ; তিরিশ জন পৌরপিতা ও মাতা , প্রতি বছর দশজন করে নির্বাচিত হন। চার বছরের কার্যকাল, চতুর্থ বছরে ভোট হয় না। যদিও কারো বাড়ি থেকে মতদান কেন্দ্র ৫০০ মিটারের বেশি দূরে নয় , শতকরা চল্লিশ জন কষ্ট করে পোলিং স্টেশনে আসেন কিনা সন্দেহ । ইউরোপের একমাত্র দেশ যেখানে ভোট হয় কাজের দিনে, বৃহস্পতিবারে।
পুনশ্চর প্রাককথন! সেটা আবার কী মশায়? গেঞ্জির বুকপকেট? নাকি বাইকের সীটবেল্ট? আহা ব্যঙ্গ করেন কেন? মানছি সাধারণত তা হয় না। তবু করতে হচ্ছে। কারণ - পুনশ্চ সচরাচর মূল লেখার থেকে বড় হয় না। তবে যা সচরাচর হয় না তাও তো কখনো হতে পারে। তাই তো বারো হাত কাঁকুড়ের তেরোহাত … বা বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় গোছের প্রবাদ চালু বাজারে। ছয় ইঞ্জিন - তিনশো ওয়াগন - সাড়ে তিন কিমি লম্বা সুপার বাসুকি মালগাড়ির মতো আপনার দীর্ঘ পুনশ্চ পড়বোই বা কেন? কী লাভ? তা অবশ্য ঠিক, তবে বিগত ৭৭ বছর ধরে এতোবার লাইন দিয়ে তর্জনীতে কালি লাগিয়েই বা কী লাভ হয়েছে? যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ (অথবা পূতানা) মেগা সিরিয়াল তো হয়েই চলছে। তবু তো অনেকে যায় আঙ্গুলে কালি লাগাতে। উঠতি লেখককে উৎসাহ দিতে না হয় দেখলেন একটু পড়ে। ভালো লাগলে এগোবেন। না হলে ছেড়ে দেবেন
‘জামবনি থানা?’ ‘হ্যাঁ, কে বলছেন?’ ‘স্যার, গড়বেতা থেকে দুটো গাড়িতে ১০-১২ জন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জামবনি গেছে ভোট করাতে। গাড়ির নম্বর দুটো লিখে নিন।’ ‘আপনি কে বলছেন?’ ‘স্যার, নাম বলতে পারব না। এটুকু বলছি, আমিও সিপিআইএম করি। গড়বেতায় থাকি। গড়বেতার সিপিআইএম অফিস থেকে দু’গাড়ি সশস্ত্র লোক আজ ভোরবেলা জামবনিতে গেছে। গাড়ির নম্বর আপনাকে বললাম। আপনি দেখে নিন।’
শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে বু্রুডির ভেতর গড়ে যখন পৌঁছলাম তখন মেলা তুঙ্গে উঠেছে। ভীড় উপচে পড়ে গড়িয়ে পড়বে নীল হ্রদের ভেতরে। ঝুটা মতির গয়নার দোকান সার দিয়ে বসে। ওদিকেই ভীড়টা বেশী বটে কিন্তু পাথরের গয়না, ডোকরাও রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও মধুবনি আর ওড়লি ঘরানার ছাপা শাড়ি। এক সদ্য গোঁফ ওঠা তরুনের হাত ধরে বউ টানছে ওদিকে। বসেছে অসাধারণ বাঁশ আর বেতের ঝুড়ি, ঠাকা, কুলা, মান তো আছেই আর আছে পাথরের বাসন কোসন। কোনও এক পাশ থেকে সাঁওতালি যাত্রার ঘোষনা করা হচ্ছে। মেলা থেকে একটু দুরে হাঁড়িয়া বিক্রি করতে বসেছেন মধ্য বয়সী মহিলার দল। হাঁড়ির মুখে গামছা বেঁধে বাসি ভাত ঘষেই চলেছে তাঁরা। সন্ধ্যা গড়ালেই বাড়বে বিক্রি বাটা। জুয়ার চরকি ঘুরছে বনবন। হাব্বাডাব্বার কৌটায় নড়ছে ঝান্ডি, মুন্ডি, চিড়িয়া আর কাফান।
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে।
মেঠোবই – বাঙলার জীববৈচিত্র্য পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ
সন্তান নেওয়ার ব্যাপারেও অরুণাভর ইচ্ছে বা অনিচ্ছে কোনওটাই ছিল না। বিনীতার জেদেই তারা আজ বাবা-মা। কিছু বললেই অরুণাভ বলবে, “তুমি কর না যা মন চায়, আমি কিছু বারণ করেছি?” বারণ করা বা না করার ব্যাপার নয়, এই মানুষটার সব কিছুতে নির্লিপ্ত থাকাটা বিনীতা আর নিতে পারছে না। চোদ্দ বছর হয়ে গেছে। এইসব নানা কারণে ওর মন-মেজাজ প্রায়ই ভাল লাগে না। তবে ওর সাথে ঝগড়া করেও লাভ নেই। তবুও মাঝে মাঝে শুধু কথা বলার জন্যই বিনীতা ঝগড়া করে। সেটাও নয়, আসলে এক তরফা বকে যায় বিনীতা, অন্য দিক থেকে কিছু উড়ে আসে না।
এই তমসাচ্ছন্ন তামাশাকালে আমার মতো আত্মকেন্দ্রিকের (এখনো অবধি) কিছু এসে যায় না। ক্রনিক আমাশার মতো মাঝেমধ্যেই ঘুরেফিরে আসা তামাশা দেখে আমি তাই একান্তে বসে পাল্লা দিয়ে করে যাই এন্তার মস্করা, নইলে নিয়ত এসব দেখে শুনে রাতে ঘুমানো দায়
প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত। লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়। নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ।
ভোটের মরশুমে দেখে যাও শুধু জনতার দরবারে নেতা নেত্রীদের চাপানউতোর আর প্রতিশ্রুতির প্লাবন। এমন রঙিন তামাশা অতীতে বাবুদের নাচমহলে বাঈজীর ঘাঘড়া ঘুরিয়ে খ্যামটা নাচনকেও হার মানায়। জনতন্ত্রের এমন আন্ত্রিকে আক্রান্ত অবস্থা দেখে ভারাক্রান্ত হয় মন। বলে নাকি Politics is the last resort of scoundrels. এসব দেখেশুনে আমার তিক্ত মনের শুশ্রূষায় Humour is the panacea in despair.
১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল। পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক।
বিজেপির ইশতেহারে কেবল দাবি করা হয়েছে যে- ‘আমরা প্রধান ফসলগুলোর অভূতপূর্ব এমএসপি বৃদ্ধি করেছি এবং ঠিক সময়ে সময়ে তা বাড়িয়ে যাব’। আসলে মোদী সরকারের এমএসপি মূল্যের বৃদ্ধির দাবি মিথ্যা। সত্যিটা হল ২৩টির মধ্যে ২২টি ফসলেরই এমএসপি বৃদ্ধির হার মোদী সরকারের সময়ের তুলনায় মনমোহন সিং সরকারের সময়ে অনেক বেশি ছিল। বিজেপির ইশতেহারের ভাষা থেকে এটা স্পষ্ট যে না তারা স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র মেনে নিতে চায় না এমএসপিকে কৃষকের আইনি অধিকারে পরিণত করতে চায়। এই ইশতেহারে দেশকে ডাল ও ভোজ্য তেলে স্বাবলম্বী করার কথা বলা হয়েছে এবং বিশ্বের জন্য মোটা শস্য উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এখানেও কৃষকদের এই ফসলের ন্যূনতম এমএসপি’র কথা বলছে না। দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও নারাজ। এই ইস্যুতে 'ইন্ডিয়া' ব্লক কৃষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিজেপি তার বিরুদ্ধাচরণ করছে।
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … ঈশুর হাত ধরে টেনে বসায় সুমন। "আচ্ছা বাবা, ঘাট হয়েছে। এই হচ্ছে ফেমিনিস্টদের নিয়ে মুশকিল। এতো সিরিয়াস কেন তোরা? রসিকতাও বুঝিস না। তুম চলে যায়োগে তো ইয়ে পুনম ভি অমাওস মে বদল যায়েগী" - নাটকীয় ঢঙে চাঁদের দিকে হাত তুলে দেখায় সুমন। আগামীকাল পূর্ণিমা। তখন তার ঔজ্জ্বল্য চোখ ধাঁধানো। কটমট করে তাকায় ঈশু সুমনের দিকে। কিন্তু সেই দৃষ্টিতে আপাত উষ্মার আড়ালে কি প্রহেলিকাময় সূক্ষ্ম প্রশ্রয়ও লুকিয়ে আছে কুহেলিকার মতো? নাকি তা নিছকই সুমনের বিভ্রম! সুমনের নাটুকেপনা দেখে তুলি আর চুনি খিল খিল করে হাসছে। এবার হেসে ফেলে ঈশুও। সেই দূর্লভ ঐশ্বর্যময় হাসি! কালাহারিতে ইলশেগুঁড়ি! এমন কিছু মাধূর্যের চকিত ঝলক দেখার আশাতেই তো সুমন এসব চ্যাংড়ামি করে
দেওয়ালে প্লাস্টিক ইমালশন, তাতে ঝুলছে দূর্বোধ্য ছবি, নিয়মিত ডাস্টিং করা ঝাঁ চকচকে আসবাব, ওয়াল ক্যাবিনেটের মাঝে ৫৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি, দুপাশে দাঁড়িয়ে লম্বকর্ণ জিরাফকন্ঠী বাঁকুড়ার বিখ্যাত ঘোড়া .... এমন মিউজিয়াম সদৃশ বাড়িতে থাকতে আমার দমবন্ধ লাগে। এমন বাড়ির ফুলকাটা ফলস্ সিলিংয়ে মাকড়সাও পেটে ডিম নিয়ে চারদিকে আটপায়ে দৌড়ে মরে ভাগ্যকে গাল পেড়ে - কেন যে মরতে ঢুকেছিলাম এ বাড়িতে! এখন নেক্সট জালটা কোথায় পাতি রে বাবা! প্রতি হপ্তায় তো ভ্যাকুয়াম ক্লীনার দিয়ে আপদ চাকরটা শোঁক শোঁক করে টেনে নেয় সব জাল। এদিকে লালা তো শুকিয়ে কাঠ!
এত বছর ধরে ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রীদের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি ও ভোটের পরে ন্যূনতম অধিকারগুলি হারানোর গোলক ধাঁধায় চক্কর খেয়ে মানুষ আজ ক্লান্ত। বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক সাংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রচারের হিসেব-নিকেশ দেখে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের আশা ক্রমাগত হারিয়ে ফেলছে মানুষ। তবে এই নির্বাচনে কেবল ভোটের হার কমছে যে, এমনটা নয়। 'নতুন ভারত'-এর অষ্টাদশ লোকসভার সময়ে এসেও গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকা, রাস্তা তৈরি না হওয়া, জল না আসায় পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা জেলার কয়েকটি গ্রামের বহু শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষেরা একত্রিত হয়ে এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন না করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, 'ভোট বয়কটে'র ডাক দিয়েছেন।
সে প্রায় ১১২ বছর হতে চলল, ১৯১২ সালের ১২ এপ্রিল ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটন থেকে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল ‘রয়েল মেল শিপ (আর এম এস) টাইটানিক’। সেই সময়ের সবচেয়ে জমকালো জাহাজের যাতার স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দুই দিনের মত। ১৪ই এপ্রিল রাত ১১.৪০ নাগাদ টাইটানিক প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিবেগে গিয়ে ধাক্কা দিল এক বিরাট হিমশৈল-তে যার ওজন ছিল দেড় লক্ষ থেকে তিন লক্ষ টনের মত। তারপর মাত্র দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট – তার মধ্যেই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে গেল সেই সময়ের বিষ্ময়ের প্রতীক টাইটানিক। জলের তাপমাত্রা তখন খুবই কম, চার ডিগ্রীর মত। বিজ্ঞান বলে এই তাপমাত্রায় মানুষের ২০ থেকে ৩০ মিনিটের বেশী বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। টাইটানিকে যাত্রী ছিল ২০০০ এর কাছাকাছি, এর মধ্যে সেই দিন মারা গিয়েছিল প্রায় ১৫০০ এর মত – এবং বেশীর ভাগই প্রবল ঠান্ডা জলে থাকার ফলে। মানে মৃত্যু সেই অর্থে জলে ডুবে ঠিক নয়।
ঘৃণা, হিংসার এই বাতাবরণে একজন লেখক কী করবেন? রুশদি মিথিক্যাল গ্রিক পয়গম্বর, সংগীতকার অরফিউয়াসকে স্মরণ করছেন। তাঁর মাথা ছিন্ন করে যখন তাঁকে হেব্রাস নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখনও অরফিউয়াস গান থামাননি, তাঁর সংগীত দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ভয়াবহতার আবহে আমাদেরও আজ গান গেয়ে যেতে হবে, জোয়ারের দিক পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
‘আমার জার্মানি’ বইটা পড়ে শেষ করার পর খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, যদি কেউ বলেন যে আমি এই বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করেছি তাহলে তাঁকে বলতেই হবে যে ক্ষমা করবেন মহোদয়, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হচ্ছে’, কারণ ওটা সম্ভব নয়। এ বই পড়তে হবে থেমে থেমে , রসিয়ে রসিয়ে, অনুভব করে করে, প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদের মর্ম অনুধাবন করে।
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … মানবমনের জটিলতার তল পাওয়া অসম্ভব। যে দেশে ঢাকঢাক গুড়গুড় বেশি সেখানে অনেক কিছু প্রকাশ্যে আসে না। পাশ্চাত্ত্য পরিমন্ডল খোলা-মেলা। সংস্কার কম। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসুতায় অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা বেশি। মনোবৈজ্ঞানিক সার্ভেতে তাই অনেকে স্বেচ্ছায় অংশ নেয়। লিপিবদ্ধ হয় কেস স্টাডি। তৈরী হয় ডাটা বেস। ফলে জানা গেছে অজাচার সম্পর্ক বা incestuous relationship এর কিছু সম্ভাবনার কথা
প্রায় ষাট বছর আগের এই ফলকে বানান অন্য রকম হলেও জওহরলাল নেহরুকে চিনলাম। ইংরেজি বাদে প্রায় কোনো ইউরোপীয় ভাষায় ‘জ’ ধ্বনির সমার্থক কোন অক্ষর নেই। স্লোভাকে ডি জেড দিয়ে সেই ধ্বনি সৃষ্টি করা হয়েছে (জার্মান ভাষায় এই একই ধাঁচে লেখা হয়) কিন্তু নেহরুর পরে যিনি উল্লেখিত,তাঁকে আমরা চিনি অন্য নামে। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধির নাম পরিবর্তন করে তাঁকে গান্ধিওভা বানানো হয়েছে। তাঁরও ছাড় নেই, তাঁকেও পরিচিত হতে হবে স্লোভাক কায়দায়,স্বামীর নামের সাথে ‘ওভা’ যুক্ত হয়ে। বিশ বছর বাদে,১৯৫৮ সালের কার্লোভি ভারি (জার্মান কারলসবাদ,চার্লসের স্নানাগার!) ফিলম ফেস্টিভালে মাদার ইন্ডিয়া ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন নারগিসোভা! এখানে একটু শর্টকাট নেওয়া হয়েছিল,সঠিক আইন মানলে পুরস্কার ফলকে লেখা হতো নারগিস রাশিদোভা (তাঁর বাবার নাম আবদুল রাশিদ) সুনীল দত্তের সঙ্গে ততদিনে বিয়েটা হলে তিনি হতেন নারগিস দত্তভা (প্রসঙ্গত এক মেক্সিকান অভিনেত্রীকে বাদ দিলে কার্লোভি ভারি ফেস্টিভালে নন কমিউনিস্ট দেশের কেউ পাত্তা পেতেন না – নারগিস সেই ট্র্যাডিশন ভাঙ্গেন,এর পরে ১৯৭২ সালে রঞ্জিত মল্লিক ইন্টারভিউ ছবির জন্য বেষ্ট অ্যাকটর এ্যাওয়ার্ড পান)। স্লোভাকিয়াতে ফিল্মের পোষ্টারে,খবর কাগজে,টেলিভিশনে শ্যারন স্টোন হন শারনে স্টোনোভা, মেরিলিন মনরো হয়ে যান মেরিলিন মনরোভা।
এই ঘটনা হতবাক করে দিল গ্রামকে। ইটপূজা হল গাজন তলা তথা ওলাইচণ্ডী পূজার বারোয়ারি তলায়। বারোয়ারি তলায় বর্ষার পর একটা বাঁশের মাচা করা হতো আড্ডার জন্য। দুগোদার মুদি দোকান বড়দের দখলে থাকতো বেশিরভাগ সময়। ১৫-২৫ ভিড় করতো বাঁশের মাচায়। হিন্দু মুসলমান একসঙ্গেই আড্ডা। বন্ধুদের আবার হিন্দু মুসলমান কী? কিন্তু সেই বন্ধুদের কেউ কেউ ইটপূজার উদ্যোক্তা। কদিন আগেই একসঙ্গে কার্তিক ঠাকুর ফেলেছে নতুন বিয়েওলা বাড়িতে। তাঁদের কেউ কেউ পূজা না করে ঠাকুর ফেলে দেওয়ায় একসঙ্গে সেই ঠাকুর তুলে এনে খিচুড়ি খাওয়া হয়েছে। আর তাদের কেউ কেউ বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির গড়ার জন্য ইট পাঠাচ্ছে গ্রাম থেকে!
শান্তি শান্তি করে মরিস, শান্তি কী তোর গাছের ফল?
’৭৪-৭৫ সাল থেকে টানা প্রায় ৭-৮ বছর গ্রামে রাত পাহারা দিয়েছি পালা করে। অনেকবার লড়াই হয়েছে ডাকাত দলের সঙ্গে। কুকুরশোল বলে একটা গ্রাম ছিল। একবার সেখানে ডাকাত পড়ল। পুলিশে কাজ করত এক চৌকিদার, থাকত সেখানে। চৌকিদার, তার ছেলে আর গ্রামের লোক লড়াই করে অনেককটা ডাকাতকে ধরে ফেলে। সাত-আটটা ডাকাত মারা যায় ওই দিন। তারপর ডাকাতি প্রায় বন্ধই হয়ে গেল।’ ‘কিন্তু, বলছিলেন যে, গ্রামে বেশিরভাগ লোকই গরিব ছিল। তবে ডাকাতি হত কেন? কী নিতে আসত ডাকাত?’ ‘কী আর নেবে? কারও বাড়িতে হয়তো কিছু চাল ছিল, নিয়ে গেল। মুড়ি, গুড়, কাপড়, তেল সব নিয়ে যেত। লন্ঠন, কুপিও ব্যাগে ভরে নিয়ে গেছে। ডাকাতও তো গরিব।
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … সুমন একটা সিগারেট ধরায়। চিন্তার গোঁড়ায় একটু ধোঁয়া দিতে হবে। মনযোগী শ্রোতার উৎসাহের হাওয়ায় ঘুড়ির সুতো তো ছেড়ে যাচ্ছে, গোটাতে পারবে তো? না হলে জট পাকিয়ে একশা হবে। এরপর তো আরো স্পর্শকাতর দিকে যাবে আলোচনা। ওরা নিতে পারবে তো? তবে ভরসা এটাই, এখনো অবধি ওরা শুনেছে নির্দ্বিধায়, কোনোরকম অস্বস্তি প্রকাশ না করে। তাই এমন খোলামেলা আলোচনা সম্ভব হচ্ছে
আমাদের এই নারী উদ্যোক্তা যে শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছেই দেনাদার ছিল, তা নয়। ঋণের টাকা দিয়ে তো সে মেশিন কিনল। কিন্তু বড় বড় অর্ডারকে পূরণ করার জন্য যে সে গাদা গাদা কাপড় এনেছিল হোলসেল কাপড় সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে, তাদের দেনা পরিশোধেও ছিল উপুর্যুপুরি আর ধারালো চাপ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইন-সমর্থিত চাপ সামলাতে পারলেও ঐ নারী উদ্যোক্তা সরবারহকারীদের আইন-অসমর্থিত চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিল, যার অবশ্যম্ভাবী ফল নতুন ক্রয় করা সেলাই মেশিনগুলোর অধিকাংশ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়া কাপড়ের স্টকের সাথে সাথে। এভাবে করোনার করাল গ্রাস সেই সাপ্লাইয়ারদের অস্বাভাবিক মুনাফা এনে দিলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কোন টাকাই উদ্ধার করতে পারল না। ফলশ্রুতিতে তারা আইনি পদক্ষেপ শুরু করলে, আমাদের আলোচ্য নারী উদ্যোক্তা মান-সন্মান বাঁচাতে মহাজনদের দ্বারস্থ হল, যারা প্রচলিত সুদের প্রায় চার-পাঁচ গুণ হারে ঋণ দিয়ে থাকে, আর ঋণ আদায়ে তাদের থাকে আলাদা গুন্ডা বাহিনী। ফলে করোনা অস্বাভাবিক মুনাফা এনে দিল টাকার এই আদিম কারবারীদেরও!
১৩ ই মার্চ। লিভিংস্টোনের সাথে আমার থাকার শেষ দিন চলে এল আর পেরিয়েও গেল। শেষ রাতে আমরা একসঙ্গে থাকব, পরের দিনটাকে তো আর এড়ানো যাবে না! যদিও আমার মনে হচ্ছে, যে-ভাগ্য আমাকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সেই ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি। মিনিটগুলো দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে, জমে জমে ঘণ্টা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দরজা বন্ধ, আমরা দুজনেই নিজের নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। তিনি কি ভাবছেন জানি না। আমারগুলো দুঃখের। আমার দিনগুলো যেন স্বর্গসুখে কেটেছে; নাহলে কেনই বা আমি বিদায়ের ঘণ্টার এগিয়ে আসতে এত গভীর কষ্ট পাব? আমি কি পরের পর জ্বরে ভুগি নি, ইদানীংকালে দিনের পর দিন কাতর হয়ে শুয়ে থাকিনি?
আমরা এই তথাকথিত ভদ্রলোকেরা যেমন কেন্দাডি পাহাড়টার মাথায় একটা শিবের মন্দির গড়ে তার নাম সিদ্ধেশ্বর পাহাড় করে দিয়েছি তেমনি জাদুগুড়া কিংবা জাদুগড়াকে জাদুগোড়া করে দিয়েছি। এক সময় এই জাদুগুড়া ছিল বন্য হাতিদের আদি বাসস্থান। হাতিদের বাসস্থান অর্থেই জায়গাটার নাম জাদুগুড়া। এই জাদুগুড়া আসলে ঝাড়খণ্ডের যাকে বলে সোনার খনি। আমরা যখন কলকাতার দিক থেকে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করছি তখন বহড়াগুড়ার কাছাকাছি এলাকা থেকে প্রথমে বাঁহাতি তারপর ডানহাতি দুটি পাহাড়শ্রেণী দেখতে পাই। আসলে এই গোটাটাই দলমা পাহাড়শ্রেণী বা দলমা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত। ঝাড়খন্ড প্রবেশের মুখটায় এই দলমা যেন অনেকটা হাঁ করে আমাদের প্রবেশের জায়গা করে দিচ্ছে। ধলভূমগড় থেকে আমরা সেই হাঁ-এর ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। ঘাটশিলা থেকে গালুডি হয়ে জামসেদপুর আমরা সেই হাঁ-এর ভেতরেই থাকছি।
বর্তমান রাজনীতি
“আবার একা একা বাথরুমে গেছ?” জিজ্ঞাসা করে বিনীতা; কোন সাড়া পায় না ভেতর থেকে। ফের জিজ্ঞাসা করে, “দেরি হবে?” তাও কোনও উত্তর নেই। কী ব্যাপার? দরজায় হালকা চাপ দিয়ে বিনীতা বুঝল সেটা ভেতর থেকে বন্ধ নেই; যাক, এই কথাটা অন্তত শুনেছে। আর একটু চাপ দিতে দরজাটা পুরো খুলে গেল। ভেতরে কেউ নেই। বিস্মিত বিনীতা দ্রুত পায়ে ঘরের বাইরে গিয়ে গেস্টরুম, ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন সব ঘুরে দেখে। কোথাও নেই অরুণাভ। কী ভেবে ফের যায় মেয়ের ঘরে, সেখানে রঙিন ঘুমোচ্ছে, আর কেউ নেই।
আজ ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১ - কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস। এই উপলক্ষে ডিজিটাল গ্ৰুপে কিছু সুশীল জনগণের নানা ভাবগম্ভীর বার্তা আসছে। আমার স্বভাবে জনৈক শ্রীগুরু বর্ণিত “খেলো টাইপস” রম্যরসের আধিক্য। ফলে নিজেকে আমি ঐ সমাজে ব্রাত্য মনে করি। তাই এই উপলক্ষে একটা “লঘু টাইপস” উপাখ্যান পেশ করছি। এটা প্রায় ৮৮ হাজার শব্দের এক দীর্ঘ স্মৃতিচারণমূলক আখ্যানের অংশ। যদি কখনো সেটা এখানে পোষ্ট করি - এই অংশটির পূনরাবৃত্তি হবে
অথচ, সেভাবে পাওয়া হলো না আপনাকে! //যৌবন যখন /শৈশব থেকে কৈশোরে ছুটে গেল /প্রৌঢ়ত্বের আকাশে ঘনিয়ে এল /গোধূলি /এগোতে এগোতে /এক দীর্ঘ গভীর /আফসোসের রেখা টানতে টানতে /আপনার দিকে /ছুটে গেছি বারবার... /প্রেমে /প্রত্যাখানে /বিচ্ছেদে /আদরে /শিক্ষায় /অশিক্ষায় /কলঙ্কে /অপমানে /সম্মানে /অসম্মানে /রাতের কান্নায় /সকালের ঘাসফুলে /সুন্দর যখন সুন্দরের চেয়েও সুন্দর /এবং যাপন /যখন একাকী
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … সুমন বলে, পাঠ্যবিষয়ের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে আমার আগ্ৰহ আছে কিন্তু তা নিয়ে বিশদে যথেষ্ট পড়াশোনা করার সামর্থ্য, সময় আমার নেই। কিছু বই পড়ে, সিনেমা দেখে, ঋদ্ধজনের কথা শুনে, নানা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বা আত্মবিশ্লেষণ করে কিছু বিষয়ে নানা বিক্ষিপ্ত ভাবনা ক্রমশ একটা আকার পায়। যখন কোনো বিষয়ে কিছু বলতে যাই সেই দানা বাঁধা ভাবনাই কথায় প্রকাশ পায়। তখন কোথায় কী পড়েছি, দেখেছি, শুনেছি মনে থাকে না। আমি যা ভাবছি সেটাই যে সঠিক তেমন দাবিও আমার নেই। সেই প্রসঙ্গে অন্য দৃষ্টিকোন থেকে কেউ কিছু বললে, তা মুক্তমনে ভাবার চেষ্টা করি। যুক্তিগ্ৰাহ্য মনে হলে তাও মনে থেকে যায়। এভাবেই মানুষের ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হয় বলে মনে হয়
এই পুরো ব্যাপারটা যদি দেখেন, এর মধ্যে "শিক্ষা হল অধিকার" বা মানকল্যাণের কোনো জায়গা নেই। বোর্ড একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান, তারা অনুমোদনের বিনিময়ে পয়সা নেয়। দেয়না। স্কুলও একটি অর্থকরী প্রতিষ্ঠান। তারা সম্পূর্ণ বেসরকারি। তারা টাকা তোলে ছাত্রদের কাছ থেকে। তার থেকে শিক্ষকদের মাইনে দেয়। নিয়োগও করে তারা এবং মাইনেও তারাই ঠিক করে। মাইনে ঠিক কী হবে, তার আইন নেই, কিছু উপদেশ আছে। ফলে সেটা কোম্পানির ইচ্ছে। এক কথায় পুরোটাই ব্যবসা। কত ফি হবে, কত মাইনে হবে, সবশুদ্ধ। কোথাও কোনো নির্দিষ্টতা নেই। হ্যাঁ, কোম্পানির মালিক লাভের গুড় পকেটে নিয়ে বাড়ি যেতে পারবেননা। কিন্তু তাঁরা গুষ্টিসহ ডিরেক্টর হয়ে মোটা টাকা মাইনে নিলে সেটা সম্পূর্ণ বৈধ।
সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটা লরি। গাড়ির মালিক উকিল। সে পুলিশের দ্বারস্থ হয় কিন্তু পুলিশ তাকে শেষ অবধি বুঝিয়ে দেয় তার গাড়ি কে কোন লরি নয় একটা গরু ধাক্কা মেরেছে।
এতদিন পর্যন্ত বিধর্মীরা তেড়ে লাভ-জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছিল, এবার পাল্টা হিসেবে হুপচতুর্দশীতে তাদের ধর্মস্থানের সামনে লাফালাফি শুরু হল। এর নাম দেওয়া হল লাফ-জিহাদ। আর যারা লাফ দেয়, তাদের নাম হল ল্যাজোদ্ধা। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হল হুগলীতে। বলাগড়ের কাছে গুপ্তিপাড়া বলে এক জায়গায় পুরোনো ভাঙা মসজিদের নিচে পাওয়া গেল এক হনুমানের ল্যাজ। হনুমানকে মেরেই ওই মসজিদ তৈরি হয়, জানার পর তৎক্ষণাৎ মসজিদ ভেঙে ফেলা হল। স্বয়ং উনিজি হাজির হয়ে গুপ্তিপাড়ার নাম বদলে করে দিলেন হুপ্তিপাড়া। সেখানে তৈরি হল এক বিরাট হুপমন্দির। পুজোর নতুন নাম হল হুপাসনা।
আবার কি একটা প্যানডেমিক দরকার এই অলক্ষুণেদের মনে করাতে – যে রক্তের গ্রুপ হয়, ধর্ম না? অক্সিজেনের রঙ নেই, ঝান্ডার আছে? প্রিয়জনের মৃত্যুর সময়ে তার পাশে না থাকতে পারার চেয়ে বড় যন্ত্রণা কিছুতে নেই—সে তার রাজনৈতিক আদর্শ যা-ই হোক না কেন? যে সমস্ত ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অসূয়া, অসহিষ্ণুতা আমাদের 'পৃথক' করে, আসলে তা বিশ্বব্যাপী? সেসবই আমাদের 'মানুষ' বানায়?
দুঃসময়ে ছোট্ট স্ফূলিঙ্গও জোগায় অবান্তর রচনা লেখার প্রয়াসে আত্মমগ্নতায় ডুবে থাকার দাওয়াই। লেখার উপাদান সংগ্ৰহকালে জানা যায় নানা চমকপ্রদ বা আনন্দময় তথ্য। পলায়নবাদীরা এভাবে এড়িয়ে থাকতে চায় বিষাক্ত বর্তমানের অভিঘাত - পর্ব-২
বিখ্যাত ঐতিহাসিক রঙ্গনা রানাকৌতের মতে, মিডিয়া আবিষ্কার হয় ভারত স্বাধীন হবার কুড়ি বছর আগে। তার আগে ছিল প্রস্তরযুগ। লোকে শিকার করে আমিষ খেত। ইন্টারনেট এবং কেবল টিভি আবিষ্কার করার উদ্দেশ্য ছিল, এই অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোর দিকে নিয়ে আসা। কিন্তু তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতার ফলে, কাজটা করা যায়নি। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পরও দেখা যায় মানুষকে কষ্ট করে ভেবে-ভেবে গুগল সার্চ করতে হচ্ছে। এমনকি টিভি চালালেও উঠে উঠে চ্যানেল বদলাতে হচ্ছে। বনে বনে ঘুরে শিকার করার থেকে কাজটা কম কষ্টের নয়।
তথাকথিত নীচু জাতের নারীর সঙ্গে তথাকথিত উঁচু জাতের পুরুষের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের জাত কী হবে সুপ্রিম কোর্টে এইরকম একটি কেস উঠেছিল (civil appeal no 654 of 2012, decided on January 18, 2012)। সুপ্রিম কোর্টের অবজারভেশনের একটি অনুবাদ নীচে রইল। ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ যদি আদিবাসী এবং অ-আদিবাসীর মধ্যে হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয়, সন্তান পিতার কাস্টেই পরিচিত হবে। এই ধরে নেওয়াটা জোরদার হয়, যদি এইরকম বিয়েতে পুরুষটি উঁচু জাতের হয়। কিন্তু এই ধরে নেওয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে কখনই অপরিবর্তনীয় নয়। এইরকম বিয়ের সন্তানের প্রমাণ করার স্বাধীনতা থাকবে যে সে শিডিউল কাস্ট/ ট্রাইবের মায়ের দ্বারা আজন্ম পোষিত হয়েছে। উঁচু জাতের পিতার সন্তান হয়ে সে জীবনে কোনো সুযোগ সুবিধেই পায়নি, উপরন্তু বঞ্চনা, অমর্যাদা, অপমান এবং বাধার সম্মুখীন হয়েছে, যেমনটি তার মায়ের কাস্টের লোকেরা হয়ে থাকে।
বিগত চার দশকের রাজনৈতিক স্লোগান ও দেওয়াল-লিখন
বিখ্যাত গবেষক ডক্টর অনিরুদ্ধ বাসু উপলব্ধি করেন ভুলো মনের হয়ে গেলেও বাবার স্বাভাবিক বুদ্ধি এখনো বেশ প্রখর।
পুলিশ যখন তাঁকে রাস্তায় প্রথম দেখতে পায় তখন ভোর হয়ে আসছে। ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোড ধরে ব্যারাকপুরের দিক থেকে কলকাতার দিকে তিনি আসছিলেন হেঁটে হেঁটে। এখন যুদ্ধের সময়, বড় বড় মিলিটারি ট্রাক রাতের ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতিতে আসা-যাওয়া করছে। নজরুলের চলার ভঙ্গি খানিকটা মাতালের পদক্ষেপের মতো ছিল। যে-কনস্টেব্ল্ প্রথম তাঁকে দেখে, সে একজন মাতাল বলেই মনে করেছিল তাঁকে, এবং লোকটা যখন-তখন লরির ধাক্কায় পড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কাতেই তাঁকে থামিয়েছিল। কথাবার্তা এতই অসংলগ্ন যে, কিছুই না-বুঝতে পেরে, আরও দুয়েকজনের সাহায্যে সে তাঁকে থানায় নিয়ে আসে।
এমন একটা দিন যায় না যেদিন অন্তত একবার তাঁর গানের কোন কলি, কবিতার কোন পংক্তি, নাটকের কোন সংলাপ বা কোন চিত্রকর্মের কথা স্মরণ করা হয়নি। অথচ এমন ত নয়, তাঁর বিপুল সৃষ্টির এক কুচির বেশী কিছু পড়া হয়েছে আমার! আবার তাঁকে বাদ দিয়ে আর কিছুই পড়িনি, শুনিনি, দেখিনি এমনও ত নয়! তবু তাঁর কাছে না এসে উপায় থাকে না। তবে তাঁর যে সৃষ্টি সেই শৈশব-কৈশোর-প্রথম যৌবনে আদৌ সেভাবে বুঝিনি তা হচ্ছে তাঁর গান। যত দিন গেছে, জীবন যত পাক খেয়েছে, তলিয়ে গেছে, আর ভেসে উঠেছে, তত বেশী করে আমার আশ্রয় মিলেছে তাঁর গানে। ছোট বেলায় গানের চরণগুলি আসত-যেত, হাওয়া যেমন আসে, যায়, সহজ-সরল, সাবলীল, একান্তই পরিচিত। যত দিন গেল, গানগুলি বয়ে আনতে লাগল অনাঘ্রাত সুগন্ধ, অশ্রুত বাণী, অদেখা রূপ। একেক বিকেলে, সন্ধ্যায়, মোহন সিংয়ের কন্ঠে যখন অমৃত-বাণী ছড়িয়ে পড়ে, ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমার চেতনা, আমার শরীর বসে থাকে চুপটি করে, আর অঝোর ধারে কোথা হতে উপচে আসে শ্রাবণ, বন্ধ দু চোখ বেয়ে। নাই থাকল আমার কোন জীবনদেবতা। আমার নিজস্ব বেদনা আরও কোন বৃহত্তর বেদনায় মিলেমিশে আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
রাজধানী শহর থেকে প্রায় পঁচিশ যোজন দূরের অনন্তপুর চটিতে ভল্লা যখন পৌঁছল, রাত্রি তখন প্রথম প্রহর পেরিয়ে গেছে। রাজধানী থেকে সে রওনা হয়েছিল শেষ রাত্রে। তারপর একটানা ঘোড়া ছুটিয়ে এতদূরে আসা। অবশ্য মাঝে জঙ্গলের মধ্যে এক সরোবরের ধারে গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছিল। বিশ্রাম দিয়েছিল তার ঘোড়াটাকেও। সরোবরের তীরে প্রচুর সবুজ আর সতেজ ঘাসের সন্ধান পেয়ে, ঘোড়াটা তার সদ্ব্যবহার করতে বিলম্ব করেনি। ওই অবসরে সেও দুপুরের খাওয়া সেরে নিয়েছিল। পুঁটলিতে বাঁধা চিঁড়ে সরোবরের জলে ভিজিয়ে গুড় দিয়ে মেখে সপাসপ মেরে দিয়েছিল। তারপর গামছা পেতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম। ঘুম নয়, বিশ্রামই। প্রথম কথা ঘোড়াটাকে চোখে চোখে রাখতে হচ্ছিল। দ্বিতীয় কথা বিগত রাত্রিতে সে একবিন্দুও ঘুমোতে পারেনি, তার ওপর এই দীর্ঘ পথশ্রম। চোখের পাতা একবার বন্ধ করলেই, সে নির্ঘাৎ ঘুমিয়ে পড়বে – সেক্ষেত্রে তার যাত্রাভঙ্গ হবে। যে চটিতে আজই রাত্রে তার পৌঁছনোর কথা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। অতএব অর্ধ প্রহর বিশ্রামের পর সে ঘোড়ায় চড়ে ছুটতে শুরু করেছিল তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে।