এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • নিউনর্মাল করোনাকালীন পর্ব পঁয়তাল্লিশ

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১২ জুলাই ২০২৩ | ৩৯১ বার পঠিত
  • ফ্ল্যাট খুঁজে পেতে অসুবিধে হয়নি ।রিণা খুব নিপুণ বর্ণনা দিয়েছিল।পথনির্দেশ। চৌমাথা থেকে লেফ্ট টার্ণ।
    " খাইখাই" মিষ্টির দোকান ধরে পাঁচ মিনিট হেঁটে বাঁদিকের গলি।
    ছ নম্বর বাড়ি।
    বাবু আসতে চায়নি। ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্ত মহিলা এত আর্নেস্টলি বললেন যে না করতে পারলো না। প্রথমে টুপুরকে ফোন করেছিলো রিণা। তারপর বাবুকে। ত্রিদিবের ফোনে।
    টুপুর কুমিরখালি যাবে।জিনিসপত্র যোগাড় করছে। মালবিকার দেখাশোনা অনেকটাই করছে মেয়েটা। নার্সিংহোম দৌড়োদৌড়ি তো আছেই।
    অস্থিরতা এবং অস্বস্তি ।দুটো মিলে পেটের মধ্যে একটা ট্রাবল দিচ্ছিল। শরীরে বেশি ঘাম। পোস্ট কোভিড সিম্পটমস ফিরে আসছে যেন। নার্ভ আর ডাইরেক্ট সিস্টেমের ওপর কোভিড জোরে আঘাত দেয়। বিরক্ত হলে, অতিরিক্ত স্ট্রেইন হলে নার্ভ দুর্বল বোধ করে।অসুস্থ বোধ করে।
    দিল্লিতে শীতকালে বেশ কমে গেছিল এই সমস্যাগুলো।বৃষ্টি আসছে । বাবু দেখলো হলুদ রঙের বাড়িটা।মাধবীলতার ঝাড় সমেত আশেপাশে বহুতলগুলির মধ্যে মরুদ্যানের মত জেগে আছে।

    রিণা যোশি বিয়ে করেছে কিন্ত নিজের ফ্ল্যাট এখনো ছাড়েনি। মাঝে মাঝে এসে থাকেও। যেমন আজ।
    কিন্ত বাড়িতে রিনা একা নেই। বাচ্চা এবং বর দুজনেই আছে।বাচ্চার স্কুল নেই। সে মা তাকে যেখানে রাখে সেখানেই থাকে লেপ্টে। তবে একবছরের বেশি স্কুল না যাওয়ার ফলে ববি একটু বেশিই চুপচাপ হয়ে গেছে। ভীষণ গেম খেলার নেশা হয়েছিল। সেটা দূর করার জন্য রিণা অনেক গল্পের বই কিনে দিয়েছে বটে কিন্ত মোবাইল গেমের নেশা একবার হলে তা থেকে বেরিয়ে আসা খুব শক্ত। ববি একটু মনমরা হয়েই আছে। স্কুল নেই।বাইরে খেলা নেই। মা ঠেসে প্রোটিন খাওয়ায়। ববির একটু ভুঁড়ি হয়েছে।
    বাবু  রিণার ড্রয়িং রুমে বসে দেখলো পর্দার ফাঁক দিয়ে একটা নাদুশ নুদুশ ছেলে , পায়ের ওপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। রিণার বর বোধহয় ফ্রেশ হচ্ছিল। বাথরুমে জলের শব্দ। বিছানার দিকে একনজর তাকিয়ে বাবু কেমন কুঁকড়ে গেল।ঐ বিছানায় কী বাবা রিল্যাক্স করতো?

    রিণা যোশি একটা মহার্ঘ্য কাফতান পরেছিল। অফফ হোয়াইটের ওপর জয়পুরি ব্লক। চুলগুলো স্ট্রেইট। চকচক করছে। দেখেই বোঝা যায় সেট করা। দরজা খুলে বাবুর দিকে  তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসল।
    কেউ প্রথম এলে রিণা তাকে আগে জল আর মিষ্টি দেয়। বাবুকে রট আয়রনের সোফাতে বসিয়ে সে কিচেনে গেল।বাবুর মুখ মাস্কে ঢাকা।খোলার কোনো প্রশ্ন নেই।এমনিতেই সে অপরিচিতদের সঙ্গে তেমন স্বচ্ছন্দ নয়।রিনা বুঝতে পারছিল বাবু ত্রিদিবের ছেলে কিন্তু বাপ ছেলে অপোজিট পোলস।ঘরে একটা মিষ্টি গন্ধ। রুম স্যানিটাইজার।  রিনার রুচি ভালো।বাবু জলের গ্লাস তুলে নিল।মিষ্টিটা নিল না।
    যা কথা বলার রিণাই বললো।
    দেওয়ালে একটা যামিনী রায় প্যাটার্ন আছে।যামিনী রায় নয়। নকলনবিশ কেউ এঁকেছেন। ছবিটার নিচে একটা মোড়া টেনে বসলো রিনা। অনেকটা দূরে মুখোমুখি। মোটামুটি একতরফা কথা বলে গেল রিণা।
    - কবে হল?
    - এতদিন?
    - আমার এর মধ্যে ফোন করাই হয়নি। অফিসের ভীষণ চাপ। শুধু ওয়র্ক ফ্রম হোম তো না।অফিস যেতেও হয়।
    - তিনুদা তো আসতো আগে মাঝে মাঝেই।  অনেকদিন আর যোগাযোগ নেই।ভীষণ খারাপ লাগছে।
    দেবরূপ সোজাসুজি রিণার চোখে তাকাল।খারাপ লাগাটা কত জেনুইন বোঝার জন্য।ঠাহর পেল না।
    এ মহিলা দেখা করতে চাইল কেন? ফোনে বলা যেত না!

    সে অনিচ্ছুক ভাবে মালবিকাকে রিণার পাশে বসালো। রিণার বয়স কত হবে? মালবিকার চেয়ে অনেক জুনিয়র।  কিন্ত একেবারে ছেলেমানুষ না। মালবিকা নিজেকে তেমন গুছিয়ে রাখেন নি। পার্লার স্পা যেতেন কিন্ত বাবু বুঝতে পারে, মা ভেতরে ভেতরে কেমন হয়ে যাচ্ছিল।
    রিণার বর স্নান সেরে বেরিয়ে একবার হাই বলে গেল ।হ্যান্ডসাম।বেশ লম্বা।লাল টি শার্ট  ।
    সুণিপুণভাবে রিণা সব তীর তৈরি রেখেছে। যদি কোনো অতর্কিত আঘাত আসে , তার অস্ত্র তৈরি।
    বাবা এখানে আসতো ভাবতে বাবুর একটু অস্বস্তি হচ্ছিল।একটু ঘেন্না। সম্পর্কটা কেমন ছিল? ভাবতে না চাইলেও এসে যায়।
    ভদ্রমহিলা লাটাই গুটিয়ে নিয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। ভীষণ সংসারী সংসারী ভাব ।
    বৃষ্টি নেমে গেল ঝমঝম করে।
    রিণা বলল, তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল দেবরূপ।
    রিণার হাতে হিরের আংটি ঝকঝক করছে।
    কে ?
    রিণা নিজেও কিনতে পারে।
    ত্রিদিবদার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কথাগুলো খুব মিথ্যে না। আমার একটা দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল। ত্রিদিবদারও।বাট দ্যাট ওয়জ টাইমপাস ফর হিম। ফানটাইম। আমি হয়তো একটু ডিপেন্ড করে ফেলেছিলাম।ইমোশনালি। তারপর দেখলাম সব ফাঁকি।
    খুব জ্বর এসেছিল। ছেলেকে নিয়ে একা থাকতাম। লকডাউনের সময় গতবছর। তিনুদা এসে দরজা থেকে ফিরে গেল। একবার বললো না কিছু লাগবে কীনা।রেগে গেল, জ্বরের মধ্যে কেন ডেকেছি! শিট ! যেন জ্বর হলেই কোভিড। ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম ।ছেলেটার কী হবে!
    প্লিজ কিছু মনে কোরো না। তিনুদা ইজ আ বিট কাওয়ার্ড। অন্তত ঐ অবস্থাতে চলে যাওয়ার পর আর কোনো মোহ ছিল না আমার।
    করোনা টট মি আ লেসন। গ্রিম লেসন। দূরে থেকেও তো ও ভরসা দিতে পারতো।দেয়নি। সিম্পলি ভয় পেয়েছিল। কিছু হলে ফেঁসে যাবে।
    ও জানে সব।
    রিণা পাশের ঘরে বরের দিকে ইঙ্গিত করলো।
    বাবু  মায়ের কথা ভাবছিল।
    রিনা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাতের হিরের আংটিটা নড়াচড়া করলো।
    বাবুর মহিলার ওপর মায়া হচ্ছিল।একধরণের শ্রদ্ধাও।বেশ সোজাসাপটা কথাগুলো বললো।ভণিতাহীন।স্ট্রেইট।মিথ্যে ন্যাকামি করলো না।
    ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে।
    বৃষ্টি মায়া তৈরি করে।বাড়িটার সামনে গাছপালা আছে।সবুজের একটা নিজস্ব গন্ধ থাকে।বিদ্বেষ ভুলিয়ে দেয়।
    রিণা বলল,
    আই ডোন্ট হ্যাভ এনি গ্রিভান্সেস। ইট হ্যাজ কাম টু অ্যান এন্ড। আই উইশ হি গেটস ওয়েল।
    বাবু বৃষ্টি দেখছিল। বললো, যাই?
    - এই বৃষ্টি মাথায় করে যেও না। কফি করি?

    রিণার বর কম কথা বলে।একটু বেশি ইংরিজি বলে।তবে শিষ্ট। কফিতে ক্রিম দিয়েছিল রিণা। কী করে জানলো বাবুর পছন্দ? ত্রিদিব বলেছিলেন?

    টিপ টিপ বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালো লাগে।
    রিণার বাড়ির বাইরে এসে ফোন খুলল বাবু।
    মালবিকার জন্য বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল । এত বছর সংসার করে মা কী পেল?
    এই প্রথম ওর মনে হল ও লাকি। ভাগ্যবান।
    পুণের ফ্ল্যাট।  বাবু আর অদিতির পাঁচ বছর লিভ ইনে কোনো ফাঁক ছিল না। হ্যাপিনেস ম্যাটারস।
    মালবিকার সংসার ছিদ্রময়।
    বাবু কোনভাবে মনে মনেও মালবিকাকে সান্তনা দিতে পারছিল না। পাশ দিয়ে একটা বেড়াল তুরতুর করে হেঁটে যাচ্ছে। মুখে ছানা।ঘেঁটি ধরে নিয়ে চলেছে।

    ফোন।
    টুপুর। ভয়ানক টেন্সড।

    - দাদা, নার্সিংহোম থেকে ফোন এসেছিল।তোর ফোন বন্ধ ছিল।বাবার অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেছে। সত্তর।
    বাবুর বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।
    তারপর আর তেমন কিছু হল না। চুপচাপ হেঁটে গেল সে, যেন কিছুই হয়নি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১২ জুলাই ২০২৩ | ৩৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন