এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • নিউনর্মাল করোনাকালীন পর্ব ষোলো

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৩ মে ২০২৩ | ৮৩ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২
    গাড়ি ছেড়ে দিয়েছিল ওরা। তারপর হাঁটছিল। একটু অলস গতি। এখানে কোনো তাড়া নেই। ঈশানের চেম্বার নেই। সকালে উঠে বাবা মায়ের প্রেশার চেক করা নেই। টুপুর বাড়ির কথা ভাবতে চায় না। মালবিকা স্কুলের হস্টেলে শিফ্ট করার পর থেকে আরো শান্ত। আরো নির্জন যেন। ঘুমিয়ে থাকে বাড়িটা। শ্যামা এলে যেটুকু জেগে ওঠে। সে আর কতটা। বরং টুপুর করুণা বা প্রতিমার কথা ভাবে।
    - ছেলেটার সঙ্গে বড্ড রুড ব্যবহার করলে টুপুর!
    টুপুর একটু আশ্চর্য হল। এরকম জাজমেন্টাল কথা সে ঈশানের কাছ থেকে আশা করে না। কেমন একটা ডমিনেটিং টোন। তবে কী সব পুরুষের মধ্যেই একটা ডমিনেশনের টেনডেন্সি থাকে? অধিকারবোধ? টুপুর জানে এই অধিকারবোধ প্রেম নয়। আগে হলে বা রক্তিমের সঙ্গে হলে গালিগালাজ হয়ে যেত একচোট। ইদানীং ও অনেক শান্ত। ঝট করে রিঅ্যাক্ট করে না। অন্ধকারের অনেক সুবিধে। ভ্রূ কুঁচকানো দেখা যায় না।
    - মানে? কী বলতে চাইছো?
    - ও কিছু বলতে চাইছিল তোমাকে। ওর ক্ষোভ। হতাশা। তুমি এড়িয়ে চলে এলে। এটা কী ঠিক হল?
    টুপুর দাঁড়াল। সিগারেট দরকার। সিগারেট। মাথাটা টগবগ করে ফুটছে।
    তারপর শ্বাস নিল। দীর্ঘ। গভীর।
    - আমি এখানে ওর দুঃখের কথা শুনতে আসিনি ঈশান। আই হ্যাভ কাম হিয়ার টু স্পেন্ড কোয়ালিটি টাইম উইদ ইউ। আর তুমি বলছো?
    - কোয়ালিটি টাইম কী টুপুর? শুধু নিজেদের নিয়ে মশগুল হয়ে থাকা? কতক্ষণ পারবে?
    ভীষণ রাগ হচ্ছে টুপুরের। মাই ফুট বোলপুর ট্যুওর।
    - শোনো ঈশান। দীপ্তেশের সঙ্গে আমার হঠাৎ দেখা হয়েছে। সাধারণ হাই হেলো ইজ ইনাফ। আমি বসে বসে ওর ইডিওলজিক্যাল গ্রিভান্সেস শুনতে যাব কেন? অনেক কষ্টে অনেক দিন পরে একটা আউটিং এ এসেছি। দ্যাট টু আফটার আ লট অব পার্সোনাল সাফারিং। আর ও যে বিষয়ে বকবক করছে তাতে তো আমার ইন্টেরেস্ট নাই থাকতে পারে।

    হোম স্টে এসে গেছে। কেয়ার টেকার একগাল হেসে গেট খুলে দিল।
    টুপুর দ্রুত হাঁটছে। অনেকটা মোরাম বিছানো পথ হেঁটে কটেজ।
    - আমি খুব অবাক হচ্ছি ঈশান। আই ওয়ান্টেড টু স্পেন্ড দ্য টাইম উইদ ইউ। হঠাৎ দেখা হওয়া ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারতে আসিনি আমি।
    হোমস্টে তে দুটো হৃষ্টপুষ্ট বেড়ালনি আছে। তাদের তিনটে ছানা। গুড়গুড় করছে রাস্তার আশেপাশে ফুলের টবের এদিক ওদিক। ঈশান উবু হয়ে একটা ছানাকে তুলে নিল।
    - দীপ্তেশের কথাগুলো কিন্ত ঠিক। আসলে কবিদের আদর্শ বা ফিলোসফি আমরা উদযাপন করি না। উই যাস্ট সেলিব্রেট দ্য রিচুয়ালস। দ্যাট টু গ্ল্যামারাইজড ইন আ সাটল ওয়ে।
    টুপুর বারান্দার সিঁড়িতে পা দিয়ে বলল, আমি কাল ফিরে যাচ্ছি। সময় নষ্ট করে লাভ নেই।
    তারপর বাথরুমে ঢুকে গেল গিজার চালিয়ে। যতই ঠান্ডা হোক। শি নিডস আ হট শাওয়ার।
    পেছন থেকে ঈশানের কথা ভেসে এল। বেড়ালটা কোলে গ্যাট হয়ে বসেছে। যেন কতদিনের চেনা।
    - ভদ্রলোক তেলেগু সাহিত্যকে তুলোধুনো করেছেন। ফর ইটস ডিসএনগেজমেন্ট উইদ পলিটিক্স। 
    - তুমি ফোনে বাড়িতে কথা বলছিলে না এদিকে কান খাড়া করে শুনছিলে?
    - দুটো কাজ একসঙ্গেই করা যায়। মাল্টিটাস্কিং কী শুধু মেয়েদের প্রায়োরিটি? দীপ্তেশ ছেলেটি বেশ ব্রাইট মনে হল। একা একা বসে মদ খাবে। বেচারা।
    - তোমার কষ্ট হচ্ছে ঈশান? তাহলে যাও। ওকে ধরে নিয়ে বসে বসে ওর ফ্রাস্ট্রেশনের গল্প শোনো। কাউনসেলিং করো।
    ঢুকে গেল ভেতরে।
    ঈশান ভেতরে গেল না।বেড়ালগুলোর সঙ্গে খেলতে শুরু করল। কেয়ারটেকার দু একবার কথা বলার চেষ্টা করল। ঈশান খেলায় মত্ত। ডিনার স্যর ?
    - ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করো।

    অনেকক্ষণ স্নান করলো টুপুর। ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকালো। হাতের ট্যাটুর বাদুড়গুলো জাগছে নাকী আবার? সাপ হিসহিস করছে?
    একটা মোটা পুলওভার গায়ে দিয়ে ভেতরের বারান্দার বেতের চেয়ারে বসলো। ঈশান এলো খানিক বাদে।
    টুপুর মুখ ফুলিয়ে আছে। বিরক্তি স্পষ্ট।
    - কাল চলো কেন্দুলি ঘুরে আসি। বেড়ালটা ঈশানের পায়ে ঘুরঘুর করছে।
    - তুমি যেও। আমি ফিরবো কলকাতা।
    ভয় পাচ্ছে টুপুর। ঈশানও কী তবে আদতে সেই পুরুষ যার জিনে অধিকারবোধ আর ডমিনেশন ঢুকে আছে? সে কী আবারো ভুল করলে? এবার কী হবে তাহলে!
    ঈশান ম্লান হাসলো।
    - আমি বোধহয় একটু বেশি বলে ফেলেছি। না টুপুর! আসলে ছেলেটাকে দেখে খারাপ লাগছিল। বাট ইউ আর রাইট।
    নিজেরা সুখী হতে হলে একটু স্বার্থপর হতে হয়। তাই না?
    টুপুরের কেমন বিরক্ত লাগছে।
    - এতে স্বার্থপর হবার কী হল! আমি একটা বিশেষ মন নিয়ে এসেছি। সেটার বারোটা বাজিয়ে উটকো তর্ক করতে আমার ভালো নাই লাগতে পারে তো। আই হ্যাভ টু হীল মাইসেল্ফ।
    ঈশান চেয়ারটা কাছে টেনে বসল।
    - ঠিক। আমি বাজে বকছিলাম।
    - ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু বি অ্যাপোলোজেটিক। বলে হাঁক দিয়ে কেয়ারটেকারকে ডাকল।
    - সিগারেট আছে?
    - এনে দিচ্ছি ম্যাডাম। কেয়ারটেকার রাস্তা পেয়েছে।
    টুপুর স্পষ্ট ঈশানের চোখের দিকে তাকালো।
    - শোনো ঈশান। আমি এখানে কোনো থার্ড পার্সনের সঙ্গে আড্ডা দিতে আসিনি। এসেছি নিজেদের ভালো করে জানতে। টু কাম ক্লোজার।
    ঈশান ক্লান্তভাবে হাসল।
    - থার্ড পার্সন বলে কিছু হয় না টুপুর। শুধু তুমি আমি দিয়ে পরস্পরের কাছে আসা যায় না। চেনাও যায় না। বেসিক্যালি যাদের থার্ড পার্সন ভাবছো বা বলছো, তাদের থ্রু দিয়ে যে ইন্টের্যাকশন হয়, তাতেই পরস্পরকে বেটার চেনা যায়। এনি ওয়ে। ফিরতে চাইলে ফেরো।
    টুপুর চুপ করে বসে থাকলো।
    ফিরতে চাইলে ফেরো। এই কথার অনেক মানে হয়। ঈশান কী কলকাতায় ফেরার কথা বলল? না অন্য কোনো রিট্রিটের কথা?
    কেয়ারটেকার সিগারেট এনে দিয়ে চলে গেছে।
    ঈশান কিছুই বলছে না। এত নিস্তব্ধ যে পাতা পড়ার শব্দ কানে আসে।
    - আমি খুব পিছিয়ে পড়া লোক টুপুর। তেমন কঠিন অ্যাম্বিশন নেই। থাকলে বন্ধুদের সঙ্গেই কোনো মেডিক্যাল সেন্টার জয়েন করতাম। চেইন থাকে ওখানে। প্রচুর রোগী। আমাশা হলেও সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠাবে। কোভিডের পরে তো আরো বেড়েছে। ট্রমা সেন্টার। বছরে চারটে ফরেন ট্রিপ। আমার ভালো লাগে না। আই লাভ প্রপার হিউম্যান ইন্টারেকশন। ওয়ার্মথ। উষ্ণতা।  ইট মে টেক টাইম। ধীরে ধীরে আসুক। বাট ইন দ্য প্রপার ওয়ে। আমি কোন পার্টি অ্যাটেন্ড করি না। হুল্লোড় করতে পারি না। হয়তো এগুলো খুব বোরিং লাগতে পারে। বাট আই অ্যাম ফেইথফুল। তোমার যদি আমাকে ভালো না লাগে, তাহলে বোলো।
    সিগারেটের প্যাকেট হাতে ধরা। টুপুর ঘুমিয়ে পড়েছে।

    ( চলছে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২
  • ধারাবাহিক | ২৩ মে ২০২৩ | ৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন