এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    শ্রী শ্রী উনিজি কথামৃত - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কণিষ্ক | প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত।লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়।নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ।
    ডেভিড লিভিংস্টোনের খোঁজে-১৪০ - হেনরি মর্টন স্ট্যানলে | ১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল।পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক। তারা "স্যার থমাস ম্যাকলার, অবজারভেটরি, কেপ অফ গুড হোপ"-এর জন্য একটি চিঠি নিয়ে এসেছে। আর আমার জন্যও একটা চিঠি আছে। সেটা এইরকম : -কুইহারা, ১৫ই মার্চ, ১৮৭২।প্রিয় স্ট্যানলি,যদি লন্ডনে পৌঁছে আমাকে টেলিগ্রাফ করতে পারেন, তাহলে বিশেষত স্যার রডারিক কেমন আছেন তা জানাবেন দয়া করে?আপনি গতকাল বিষয়টি ঠিক ধরেছেন, ওই যখন আপনি বললেন না যে আমি এখনও নীল নদের উৎস সম্পর্কে নিঃসন্দেহ নই; তবে যত তাড়াতাড়ি আমি নিজে সন্তুষ্ট হব, ততই তাড়াতাড়ি আমি ফিরে যাব আর অন্য লোকেদের সামনে উপযুক্ত সন্তোষজনক কারণগুলি উপস্থিত করব। ব্যাপারটা একেবারে এইখানেই দাঁড়িয়ে।স্কচেরা যেমন বলে যে একটা খাড়া চড়াই ভাঙ্গতে হলে একজন শক্তপোক্ত মানুষকে লাগাও, কারণ সে এটা লেগে থেকে করতে পারবে, তার চেয়ে ভাল কথা যদি বলতে পারতাম! আমি কৃতজ্ঞ যে, যাওয়ার আগে, আপনার টানা জ্বরটা ছেড়েছিল - ভাল চেহারা ধরেছিল। লাগাতার জ্বরটা থাকলে আমি অসীম উদ্বেগ ছাড়া আপনাকে যেতে দিতে পারতাম না। আমাদের পরমপিতা, জগদীশ্বরের ভরসায় আপনাকে ছেড়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত। আপনার চিরকৃতজ্ঞ,ডেভিড লিভিংস্টোন।কাবুইরে থেকে আবার কাজেম্বে ও তারপর লেক ব্যাঙ্গয়েওলো ফিরে আসার একটানা দীর্ঘযাত্রাকালীন, পর্যবেক্ষণগুলি লিখে রাখতে যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করেছি, আর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমার বড় পরিসংখ্যানগুলো ফুলস্ক্যাপ কাগজের ছ'টা কাগজ জুড়ে, আর সেগুলো ফের অনুলিপি করতে অনেকদিন লাগবে। ১৮৬৯ সালে যখন উজিজিতে অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছিলাম আর আমাকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই, যদিও দেশে বসে লোকেরা অন্ধকারে হাতড়ে মরে। কিছু আরবদের চিঠি এসেছে, আমি সেগুলো আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ডি. এল. ১৬ই মার্চ, ১৮৭২।পুনশ্চ - আজ সকালে প্রকাশক মিঃ মুরেকে একটি চিঠি দিয়েছি। তিনি ৫০, আলবেমারেল স্ট্রিটে থাকেন। বুকপোস্ট বা অন্য কোন ভাবে জার্নালটি অ্যাগনেসকে পাঠানোর ব্যাপারে আপনাকে দরকারমত সাহায্য করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছি। আপনি যদি তাঁর সঙ্গে দেখা করেন তো একজন অকপট ভদ্রলোকের দেখা পাবেন। আপনার জন্য একটি আনন্দদায়ক যাত্রা কামনা করি।ডেভিড লিভিংস্টোন।হেনরি এম. স্ট্যানলি মহাশয়ের প্রতি, তাঁকে যেখানেই পাওয়া যাবে।বেশ কয়েকজন এনগোওয়ানা আমাদের ফিরতি অভিযানে যোগ দিতে তুরাতে এসেছিল, তারা নিজেদের ভরসায় উগোগোর মধ্য দিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে; আরও লোক আসছে বলে জানা গেছে; কিন্তু উন্যানয়েম্বেতে সকলকে যথেষ্ট জানান দেওয়া হয়েছিল যে আমাদের কাফেলা ১৪ তারিখে অবশ্যই রওনা দেবে, আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ২১ তারিখে তুরা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়, আমরা যখন এনঘওয়ালাহ নদীর দিকে এগোচ্ছি, তখন সোসি ও হামোদাহকে ডাক্তারের কাছে ফেরত পাঠানো হল। দু দিন পরে আমরা এনগারাইসো গ্রামের সামনে পৌঁছালাম। আমাদের কাফেলার সর্দার গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিম্বুরা গায়ের জোরে তাদের বের করে দেয়।২৪ তারিখে, আমরা জঙ্গলের একটা ফাঁকা জায়গায়, এখানে যাকে বলে "টঙ্গোনি", শিবির করেছিলাম। এটা একটা ভারি রোমান্টিক জায়গা। এই এলাকা এক সময় খুবই সমৃদ্ধ ছিল; অতি উর্বর মাটি; বড় বড় কাঠ, উপকূলের ধারেপাশে তার অনেক দাম। আর আফ্রিকায় যে ব্যাপারটা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন , এখানে অনেক জল আছে। আমরা একটা মসৃণ, প্রশস্ত গোলাকার সায়ানাইটের ঢিবির কাছে শিবির স্থাপন করেছি। পাথরটার একটা দিক, খাড়া একটা বিশাল চৌকো পাথর, আশেপাশের ছোট ছোট গাছপালাদের উপরে মাথা তুলেছে; অন্য প্রান্তে আরেকটি পাথর খাড়া হয়ে আছে, তার আবার গোড়াটা আলগা।অভিযানের সদস্যরা বড় বড় পাথরের পাতগুলো দিয়ে শস্য পেষার কাজ করছিল। আশেপাশে কোন গ্রাম না থাকলে বা গ্রামের লোকেরা শত্রুভাবাপন্ন হলে, এখানে এমনই দস্তুর।মার্চের ২৭ তারিখে কিওয়েতে ঢুকলাম। ভোরবেলা যখন এমদাবুরু নদী ছেড়ে চলে আসছি, তখনই আমাদের গম্ভীর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল যে আমরা এবার উগোগোতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি; আর কানিয়াগা গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার পরে, গাইডের ভেরীর শব্দের মতো শিঙাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে আমরা মর্মরিত ভারতীয় ভুট্টার বিশাল ক্ষেতের অন্দরে প্রবেশ করলাম। ভুট্টার শীষগুলি পোড়ানো-ঝলসানোর জন্য যথেষ্ট পাকা। আর সাধারণত, মার্চের শুরুতে, কাফেলাগুলো দুর্ভিক্ষের শিকার হয়, স্থানীয়- মুসাফির কারোরই সে দুর্ভিক্ষের আওতা থেকে রেহাই নেই। তাই ভুট্টাদের চেহারা দেখে অন্তত এই একটা উদ্বেগ দূর হয়েছিল।আমরা শীঘ্রই গঁদ-গাছের এলাকায় ঢুকলাম। জানতে পারলাম যে আমরা উগোগোতে আছি। এদেশের বনগুলো প্রধানত গঁদ ও কাঁটাওলা গাছ, যেমন মিমোসা ও তামারিস্ক মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি, সঙ্গে প্রায়শই বিভিন্ন ধরণের বুনোফলের গাছও রয়েছে। অঢেল আঙ্গুর, যদিও সেগুলো তেমন পাকেনি; আর ছিল সুলতানা আঙ্গুরের মতন মিষ্টি একটা গোলাকার, লালচে, বৈঁচি-পাতার মতন পাতাওলা ফল। এপ্রিকটের মতন আকারের একরকম ফলের গাছও ছিল, সে আবার হাক্কুচ তেতো।কাঁটা ঝোপের জড়ানো-মড়ানো জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে কিওয়েহের বিস্তৃত বসতি চোখে পড়ল; আর সর্দারের গ্রামের পূর্ব দিকে, একদল বিশাল বিশাল বাওবাবের ছায়ায় শিবির বানানোর জায়গা পেলাম।কিওয়েহের জনগণের মধ্যে কিম্বু ও গোগোরা প্রায় সমান অনুপাতে। স্পেক ও গ্রান্টের সমসময়ে যে বুড়ো কিওয়েহ ছিল, সে মারা গেছে, তার ছোট ছেলে এখন এই অঞ্চলের রাজা। এই যুবক আপাতদৃষ্টিতে ন্যায্য রাজা, আর তার অনুগত প্রজাদের গবাদি পশুর সংখ্যাও শত শত, তবুও তার পরিস্থিতি বেশ গোলমেলে। তার কাঁচা বয়স দেখে গোগো সর্দাররা খুবই লোভের চোখে তার রাজ্যের দিকে তাকাচ্ছে।সবেমাত্র ছাউনি ফেলেছি, আর তখনই গর্জন শোনা গেল, চারদিক থেকে রণভেরি বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়ল দিকে দিকে যুদ্ধের চেতাবনী সহ দূত ছুটে যাচ্ছে। প্রথম যখন শুনলাম যে শিঙ্গে ফুঁকে সব মানুষকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে ও যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে বলা হচ্ছে, তখন আমি আধা-সন্দেহ করেছিলাম যে হয়ত আমাদের দলের উপর একটা আক্রমণ হতে চলেছে; তবে "উরুগু, ওয়ারুগু" —(চোর! চোর!) — শব্দগুলো ছড়িয়ে পড়ছিল, তার থেকেই কারণটা বোঝা যাচ্ছিল। এখান থেকে উত্তর-পূর্বে দুদিনের পথ দূরে একটা জনবহুল জায়গার সর্দার হল মুকোনডোকু। পশ্চিম দিকে যাওয়ার সময় সেখানে কিঞ্চিৎ ঝামেলার মুখোমুখি হয়েছিলাম। সেই মুকনডোকু তরুণ রাজা কিওয়েহকে আক্রমণ করতে আসছে। আর কিওয়েহের সৈন্যদের তাই যুদ্ধে ডাকা হচ্ছিল। ছেলেরা সব নিজেদের গ্রামে ছুটে গেল, অল্পক্ষণের মধ্যেই তাদের পুরো লড়াইয়ের পোশাকে সেজে আসতে দেখা গেল। উটপাখি, ঈগলের পালক তাদের সামনে দুলছে, তাদের মাথা ঘিরে জেব্রার কেশর; তাদের হাঁটু ও গোড়ালি থেকে ছোট ছোট ঘন্টা ঝুলছে। তাদের গলার থেকে চাদর ঝুলছে; বর্শা, অ্যাসেগাইস, গেঁটেলাঠি, ও ধনুক তাদের মাথার উপরে দেখা যাচ্ছে, বা ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত অবস্থায় তাদের ডান হাতে ধরা। মূল গ্রামের থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটা বড় বড় দল দ্বিগুণ-দ্রুত তালে দুলতে দুলতে আসছিল, তাদের সকল গোড়ালি, হাঁটুর ঘণ্টা ভারি প্রশংসনীয় ভাবে ঐক্যতানে ধ্বনিত হচ্ছিল। তাদের ঘিরে ছিল লড়াইয়ের মেঘ। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্সাহী যারা, তাঁরা নকল যুদ্ধ করতে করতে ছুটে যাচ্ছিল। প্রতিটি গ্রাম থেকে আসা দলের পর দল সৈন্য আমাদের শিবিরের পাশ দিয়ে ছুটে গেল - সম্ভবত, প্রায় এক হাজার সৈন্য যুদ্ধে গিয়েছিল। জাঞ্জিবার ও উন্যানিয়েম্বের মধ্যে চলা সবচেয়ে বড় কাফেলারও দুর্বলতার দিকটা এই ঘটনার চেয়ে ভাল করে আর কিছু থেকে বুঝিনি।রাতের বেলা যোদ্ধারা সব জঙ্গল থেকে ফিরে এল; বোঝা গেল বিপদাশঙ্কার কোন ভিত্তি নেই। প্রথমে সাধারণভাবে বলা হয়েছিল যে আক্রমণকারীরা হেহে। চৌর্যবৃত্তির প্রবণতার জন্য তাদের অপমানসূচক ডিরিগো বলেও ডাকা হয়। হেহেরা প্রায়শই উগোগোর বিপুল গবাদি সম্পদের উপর আক্রমণ চালায়। নিজেদের দেশ থেকে দক্ষিণ-পূর্বে যায়, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে দিয়ে এগোয়, আর যখন পশুর পালের কাছে আসে, তখন তারা ষাঁড়ের চামড়ার ঢাল দিয়ে নিজেদের ভাল করে ঢেকে বসে পড়ে। গবাদি পশু ও তাদের পালকদের মাঝখানে এসে, তারা আচমকা উঠে দাঁড়ায় আর হৈ হৈ করে গবাদি পশুগুলোকে জঙ্গলের দিকে তাড়াতে শুরু করে, আর আগেই দায়িত্ব দিয়ে রাখা লোকদের হাতে পশুর পালকে তুলে দেয়। তারপর ক্ষিপ্ত রাখালদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য তারা ঢাল বাগিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ।(ক্রমশ…)
    মোদী গ্যারান্টিতে কৃষকদের জন্য কিছুই নেই - যোগেন্দ্র যাদব | ছবি - র২হ 'বিজেপির সংকল্প: মোদীর গ্যারান্টি ২০২৪' শীর্ষক শিরোনামের নথিটি কৃষকদের জন্য এক বিপদ ঘণ্টা। প্রথম দফার নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে প্রকাশিত বিজেপির ইশতেহার খোলাখুলি একথাই বলে যে বিজেপি তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলে কৃষি এবং কৃষক কারও জন্যই কোনও আশার আলো নেই। সাধারণত, ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো ভাল ভাল কথা বলে, শুধু তাই নয় অতিরঞ্জিত দাবি বা প্রতিশ্রুতিও দিয়ে থাকে। এবার, বিজেপির ইশতেহারের আগে, অন্যান্য বিরোধী দলের বেশিরভাগই তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা গেছে তারা কৃষকদের জন্য অনেকগুলি দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা বলেছে। বিজেপি চাইলে সেই প্রতিশ্রুতি থেকে কয়েকটি অন্তত গ্রহণ করতেই পারত, বরং তার থেকে নিজেদের দু’ধাপ এগিয়েও রাখতে পারত। এসব করার পরিবর্তে, কৃষকদের বিষয় এবং কৃষক আন্দোলনের সব দাবিগুলোর ব্যাপারে বিজেপির নীরবতাই প্রমাণ করে, হয় মোদী কৃষকদের আন্দোলন থেকে পাওয়া অপমান ভুলে যাননি অথবা বিজেপি বিশ্বাস করে কৃষকদের ভোট পেতে কৃষিকাজ নিয়ে কিছু বলার বা করার দরকার নেই। বিজেপি ‘দাবির জায়গায় মোদী’ এবং কৃষক-সৈনিকদের জায়গায়, হিন্দু ও মুসলমান বলে কাজ চালিয়ে নিতে চাইছে। এই ইশতেহারে একেবারে শুরুতে, 'সর্বস্পর্শী সমাবেশী' অর্থাৎ বিজেপি সরকারের ১০ বছরের তথাকথিত সুশাসন এবং উন্নয়ন সম্পর্কে কিছু দাবি করা হয়েছে এবং তারপরে বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এখানে তাদের দাবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিজেপির নীরবতা। ২০১৬ থেকে বিজেপি ক্রমাগত দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার ঢাক বাজিয়েছিল। গত নির্বাচনী ইস্তেহারেও এই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এই ৬ বছরের পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, বিজেপির তরফে কৃষকের আয় সম্পর্কে একটি শব্দও উল্লেখ করা হয়নি। একদিকে না তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল, অন্যদিকে না দেশবাসীকে হিসেব দিল, কেন তারা এই প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ।বদলে, বিজেপি কিষাণ সম্মান নিধির অধীনে বার্ষিক ১১ কোটি কৃষক পরিবারকে ৬০০০ টাকা দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এখানেও সত্যের অপলাপ করা হয়েছে। কেন ঘোষিত ১৪ কোটি কৃষক পরিবারের পরিবর্তে কখনও ৯, কখনও ১০ কখনও ১১ কোটি পরিবার সেই টাকা পেল তা ব্যাখ্যা করা হয়নি। এই বড় সত্যটি থেকেও মুখ ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে যে এই প্রকল্প ঘোষণার পর থেকে মুদ্রাস্ফীতি সূচক বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। তার মানে, ২০১৯ সালে ৬০০০ টাকার মান বজায় রাখতে, আজ ৯০০০ টাকার প্রয়োজন। মিডিয়ায় খবর ছিল যে মোদী সরকার তার শেষ বাজেটে বা ইশতেহারে কিষাণ সম্মান নিধির পরিমাণ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করবে, কিন্তু ইশতেহার এ সম্পর্কে নীরব।ফসলের দামের সঙ্গে কৃষকের আয় জড়িত। সারাদেশে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছে। এই প্রশ্নে বিরোধী দলগুলি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কংগ্রেসের ইশতেহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র অনুসারে সমস্ত কৃষককে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দেড়গুণ এমএসপির আইনি গ্যারান্টি দেওয়া হবে। এর সঙ্গে বলা হয় কৃষি মূল্য কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যাতে এমএসপির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সরকার কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সিপিআই (এম), সমাজবাদী পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মতো বিরোধী দলগুলোর ইশতেহারে ও একই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির ইশতেহার আরও এক ধাপ এগিয়ে দুধ এবং অন্যান্য সমস্ত কৃষি পণ্যকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের অধীনে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়। এবারই প্রথমবারের মতো দেশের প্রধান জাতীয় দলগুলোর মধ্যে কৃষক আন্দোলনের এই গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মোদীর গ্যারান্টিতে এর কোনও স্থান নেই।বিজেপির ইশতেহারে কেবল দাবি করা হয়েছে যে- ‘আমরা প্রধান ফসলগুলোর অভূতপূর্ব এমএসপি বৃদ্ধি করেছি এবং ঠিক সময়ে সময়ে তা বাড়িয়ে যাব’। আসলে মোদী সরকারের এমএসপি মূল্যের বৃদ্ধির দাবি মিথ্যা। সত্যিটা হল ২৩টির মধ্যে ২২টি ফসলেরই এমএসপি বৃদ্ধির হার মোদী সরকারের সময়ের তুলনায় মনমোহন সিং সরকারের সময়ে অনেক বেশি ছিল। বিজেপির ইশতেহারের ভাষা থেকে এটা স্পষ্ট যে না তারা স্বামীনাথন কমিশনের সূত্র মেনে নিতে চায় না এমএসপিকে কৃষকের আইনি অধিকারে পরিণত করতে চায়। এই ইশতেহারে দেশকে ডাল ও ভোজ্য তেলে স্বাবলম্বী করার কথা বলা হয়েছে এবং বিশ্বের জন্য মোটা শস্য উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এখানেও কৃষকদের এই ফসলের ন্যূনতম এমএসপি’র কথা বলছে না। দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও নারাজ। এই ইস্যুতে 'ইন্ডিয়া' ব্লক কৃষকদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিজেপি তার বিরুদ্ধাচরণ করছে।একইভাবে, বিজেপির ইশতেহারে কৃষকদের ঋণের বোঝার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব, যেখানে সরকারের নিজস্ব নথিই বলে দেয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক ঋণের বোঝায় জর্জরিত। সমাজবাদী পার্টির ইস্তেহারে ঋণ মকুবের কথা বলা হয়েছে আবার কংগ্রেসের ইশতেহারে ঋণে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যা সময়ে সময়ে ঋণের বোঝা মূল্যায়ন করবে এবং এটি হ্রাস বা নির্মূল করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।ফসলের ক্ষতির সমস্যা সম্পর্কে বিজেপির ইশতেহারে আশ্বস্ত করে দেওয়া হয়েছে যে শস্য বীমা প্রকল্পের মাধ্যমে এর সমাধান করা হয়েছে এবং বাকি থেকে যাওয়া কাজগুলি আরও ভাল ভাবে করে দেওয়া হবে। তবে বাস্তবে এই নতুন প্রকল্প চালু হওয়ার পর ফসল বীমায় সরকারি ব্যয় এবং বীমা কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়লেও তার থেকে লাভ ওঠানো কৃষকের সংখ্যা আগের থেকে কমেছে। এই তথ্য স্বীকার করে কংগ্রেসের ইশতেহারে সমস্ত কৃষককে শস্য বীমার আওতায় আনার এবং ক্ষতির ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়াবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।দেশের কৃষকদের এই প্রধান দাবিগুলিতে কিছু দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিবর্তে, তাদের চার পাতার ইশতেহারে মোদী সরকার এমন বহু মিথ্যের পুনরাবৃত্তি করেছে যা দিইয়ে বিগত বছরগুলোতে থেকে কৃষকদের বোকা বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে গেছে, যেমন শ্রী অন্ন সুপারফুড, ন্যানো ইউরিয়া, পরিকাঠামো, ফসলের বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক চাষের সম্প্রসারণ। কিন্তু এখানেও বিজেপি সুকৌশলে কোনও বিষয়েই কোনও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয়নি। শুধু সহজভাবে প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করে দাবি করে গেছে যে বিজেপি সরকার এই বিষয়ে অনেক কিছু করেছে এবং বলেছে যে ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করা হবে।স্পষ্টতই মোদীজি তাঁর অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। আগে কৃষককে এমএসপি এবং আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী ফেঁসেছেন। তাই এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া চলবে না, যার হিসাব পরবর্তীতে বিজেপিকে দিতে হবে। এখন প্রশ্ন হল গত ১০ বছর ধরে এই মিথ্যের ভার বহন করা কৃষক শিক্ষা নেবে কি না। গত কয়েকদিন ধরে বিজেপির কাছে হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের হিসাব দাবি করা এবং বিজেপি নেতাদের প্রবেশ বন্ধ করার খবর হয়তো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।যোগেন্দ্র যাদব জয় কিষাণ আন্দোলন এবং স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। মতামত ব্যক্তিগত।অনুবাদ: শুভম সেনগুপ্ত
  • হরিদাস পালেরা...
    বাঙলার বৈচিত্র্যপূর্ণ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল - দ | আমরা যারা কলকাতা থেকে একটু দূরে মফস্বলে বড় হয়েছি তারা  চারপাশের কীটপতঙ্গের মধ্যে বোধহয় সবচেয়ে বেশী দেখেছি মাছি, মশা, প্রজাপতি আর মাকড়শা। মশা মাছি মাকড়শা কলকাতায়ও কম কিছু নেই।  ঈশ্বরগুপ্তের কবিতাই আছে ‘রাতে মশা দিনে মাছি এই নিয়ে অলকাতায় আছি।‘ কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট প্রজাতির কীট বা পতঙ্গের মধ্যেও যে বিপুল বৈচিত্র্য আছে তার কতটুকুই বা আমরা জানি। জানেন কি পশ্চিমবঙ্গে ছাব্বিশ রকমের মাছি, পঞ্চাশ রকমের প্রজাপতি আর পঞ্চাশ রকমের মাকড়শা দেখা যায়? কথায় বলে মাছেভাতে বাঙালি। তা শুধু মিষ্টিজলের মাছই পঞ্চাশের বেশী প্রকারের পাওয়া যায়। বিষযুক্ত ও বিষছাড়া মিলিয়ে সাপ দেখা যায় তেত্রিশ রকম। বত্রিশ রকমের স্তন্যপায়ী জন্তু দেখা যায় গ্রাম বাঙলায়। পাওয়া যায় চৌত্রিশ রকমের ঘাস আর বারো রকমের বাঁশ।ছোটবড় ঝোপঝাড়, তারও কত বৈচিত্র্য। উনপঞ্চাশ ধরণের ঝোপ ডাঙায় আর সাতান্ন রকমের ঝোপঝাড় পাওয়া যায় বাঙলার জলায়। ছোট বড় শহরে মাশরুম খাওয়ার চল হয়েছে কিছুদিন হল। প্ল্যাস্টিকের পাত্রে পাতলা প্ল্যাস্টিকমোড়া বাটন মাশরুম শোভা পায় বিগবাস্কেট জাতীয় রিটেল দোকানগুলোতে,  লকডাউন পরবর্তীকালে অবশ্য রাস্তার ধারের সবজির ঠ্যালায়ও দেখা যাচ্ছে এদের। গ্রাম বাঙলায় এই মাশরুমকে বলে ছাতু। জেনে অবাক হয়ে গেলাম বিয়াল্লিশ রকমের ভোজ্য ছাতু (অর্থাৎ মাশরুম) পাওয়া যায় এই বাঙলায়। অধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ ভোজ্য ছাতু বিভিন্ন জনজাতির মানুষ দীর্ঘকাল ধরে খেয়ে আসছেন। তাদের নামের বৈচিত্র্যও কত। কাঠবাদাম ছাতু, কমলার খোসা ছাতু, বড় দুধিয়া ছাতু বা পরী ছাতু, এদের নাম শুনলেই তো খেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে। ঠিকঠাক চিনে না খেতে পারলে অবশ্য বিষাক্ত ছাতু খেয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।আমার আগের প্রজন্মের মানুষদের দেখেছি তাঁরা গাছপালা, পশুপাখি, পোকামাকড় ইত্যাদি চেনেন অনেক কিছুই। তাদের ধরন-ধারণ, কোথায় থাকে, কখন ফুল ফোটে ফল ধরে কিম্বা ডিম পাড়ে, বাচ্চা হয়, কোনটা কী কী কাজে লাগে ইত্যাদি অতি বিস্তৃত জ্ঞান। তাঁদের চোখে কোনটার কী বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধরা পড়েছে তার ভিত্তিতে নামও দেন। এমনকি শ্রেণীবিন্যাসও করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় কাঠবাদাম ছাতু, এটি খাওয়ার সময় কাঠবাদামের সুগন্ধ পাওয়া যায়। বা তাঁবু মাকড়সা, যারা শিকার ধরার জন্য জাল বোনে না বরং ছোট্ট সাদা তাঁবু আকৃতির বাসা বানিয়ে তার ভেতরে বসে শিকারের অপেক্ষা করে। মূল তাঁবু থেকে ৬-৮টা মোটা সুতোর টানা থাকে দেওয়ালের কোণাকাঞ্চিতে। ২০০২ সালের জীববৈচিত্র্য আইনে বলা হয়েছে সাধারণ মানুষের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়স্তরে জীববৈচিত্র্যের নথিকরণ করতে হবে।জীববৈচিত্র্যের মুখ্য অবদান বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা প্রদান। এই প্রাকৃতিক পরিষেবা ছাড়া জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুস্থিত ব্যবহার অতি প্রয়োজন। আর সেই সংরক্ষণ যাতে ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় সেই কারণে সকল গাছপালা জীবের প্রজাতিগত আকার আকৃতি আচার আচরণ ও জীবনশৈলী বিষয়ে সব মানুষের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যেই নথিকরণের কাজে নেমে পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ ‘মেঠোবই – বাঙলার জীববৈচিত্র্য’ এই শিরোণামে দশটা মেঠোবই (ফিল্ড গাইডবুক) প্রকাশ করেন। আকারে ছোট পকেটবুকের সাইজের শক্ত বাইন্ডিঙের বইগুলো লেখার সাথে রেখাচিত্র ও রঙিন আলোকচিত্র সম্বলিত হওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বুঝতে ও আশেপাশের পরিবেশে তাদের সনাক্ত করতে অত্যন্ত  সহায়ক। জীবজগতে প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্দিষ্ট ভূমিকা বুঝতে ও তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দশটা বইয়ের এই সেট গুরুত্বপূর্ণ এবং সংগ্রহযোগ্য।প্রকাশিত মেঠোবইয়ের তালিকা১) বাঙলার মাছ (স্রোতহীন মিঠে জলের মাছ) – শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য্য২) বাঙলার ঝোপঝাড় – অনির্বান রায়৩) বাঙলার ঘাস ও বাঁশ  - দুলাল চন্দ্র পাল৪) বাঙলার সাপ – অরিজিত চ্যাটার্জি, সৌম্য সরকার, মরুৎ দেব৫) বাঙলার প্রজাপতি – যুধাজিত দাশগুপ্ত৬) বাঙলার মাকড়শা – সুমিত চক্রবর্তী৭) বাঙলার মাছি ও মশা – শুভ্রকান্তি সিনহা৮) বাঙলার জলার গাছ – অনির্বান রায়৯) বাঙলার ভোজ্য ছাতু (মাশরুম) – কৃষ্ণেন্দু আচার্য্য১০) গ্রাম বাঙলার বন্য জন্তু (স্তন্যপায়ী) – শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য্য 
    তোমার বাস কোথা যে… - ২ - Nirmalya Nag | ।। দুই ।। [ বছরখানেক আগের কথা ]মাঝে মাঝেই গীতার একটা শ্লোক মনে পড়ে বিনীতার। “দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা সুখেষু বিগতস্পৃহ” - এর পরের অংশটা ওর এখন আর মনে নেই। এই শ্লোকটা বিনীতা দাদুর মুখে প্রায়ই শুনত। এর মানে হচ্ছে, দাদু বলতেন, দুঃখে যে ভেঙে পড়ে না, সুখের প্রতি যার কোনও লোভ নেই; ভালবাসা, ভয় আর ক্রোধ থেকে যে মুক্ত সেই সাধু ব্যক্তি। এই সব গুণের সবকটাই স্বামী অরুণাভর মধ্যে দেখতে পায় বিনীতা, আর তার রাগ হয়। স্ত্রী, মেয়ে, সংসার সবকিছুর প্রতি এত উদাসীন কাউকে দেখেনি সে। শুধু অফিস আর অফিসের কাজ। আর বাকি যে সময়টুকু পাওয়া যায়, বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা। আত্মীয়-স্বজন দুজনেরই তেমন কেউ নেই, যে কজন বলার মত আছে তারাও খুব একটা আসে না। বিনীতার দাদা আর অরুণাভর বোন এক-দু বছরে একবার ঘুরে যায়। বাবা-মা নেই কারোরই। স্কুলের সহকর্মী গায়ত্রী ছাড়া তেমন বন্ধুও নেই বিনিতার, ওর স্বামী বেশ রসিক, ওরা দুজনে মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। টিভি দেখা, বই পড়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর অভ্যাসও তেমন নেই বিনীতার। গানের শখ ছিল এক কালে, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখেছিল, গাইতও ভাল। এখন কালেভদ্রে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে। একটু আধটু বাগান করে, মাঝে মাঝে রান্নাও। আর মেয়ে রঙিনের দেখাশোনা করতে হয়, তার পড়াশোনাটা দেখতে হয়। এতে খানিক সময় যায়। রঙিন হয়েছে বিয়ের বেশ কয়েক বছর বাদে। সন্তান নেওয়ার ব্যাপারেও অরুণাভর ইচ্ছে বা অনিচ্ছে কোনওটাই ছিল না। বিনীতার জেদেই তারা আজ বাবা-মা। কিছু বললেই অরুণাভ বলবে, “তুমি কর না যা মন চায়, আমি কিছু বারণ করেছি?” বারণ করা বা না করার ব্যাপার নয়, এই মানুষটার সব কিছুতে নির্লিপ্ত থাকাটা বিনীতা আর নিতে পারছে না। চোদ্দ বছর হয়ে গেছে। এইসব নানা কারণে ওর মন-মেজাজ প্রায়ই ভাল লাগে না। তবে ওর সাথে ঝগড়া করেও লাভ নেই। তবুও মাঝে মাঝে শুধু কথা বলার জন্যই বিনীতা ঝগড়া করে। সেটাও নয়, আসলে এক তরফা বকে যায় বিনীতা, অন্য দিক থেকে কিছু উড়ে আসে না। তবে সেদিন একটা ব্যাপার ঘটল। অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে অরুণাভ। টোস্ট আর অমলেট খাওয়ার সাথে সাথে বই পড়াও চলছে। প্রথম প্রথম খাবার বেড়ে দিত বিনীতা, এখন আর দেয় না, একজনের উদাসীনতা অন্যজনের অনাগ্রহের কারণ হয়েছে। তবুও এই সময়টা ও টেবিলেই থাকে, খবরের কাগজের পাতা ওলটায়। কিছুক্ষণ পরে সেও স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হবে। অরুণাভর জন্য চায়ের কাপ নিয়ে বিসপাতিয়া এলে বিনীতা জিজ্ঞেস করল, “সাবজীর টিফিন রেডি করে দিয়েছ?” যদিও জিজ্ঞেস করার কোনও অর্থ নেই। এ কাজটা কয়েক বছর ধরে করছে বিসপাতিয়া।“হ্যাঁ ভাবি,” উত্তর দিল বিসপাতিয়া, তারপর ফিরে গেল।স্বামীর দিকে তাকাল বিনীতা, উল্টোদিকের চেয়ারের মানুষটা বই-ই পড়ে যাচ্ছে। “মিষ্টি এনেছিলাম কাল। খাবে?” প্রশ্ন করল সে। তাকাল না অরুণাভ, শুনতে পেয়েছে বলেও মনে হল না। বিনীতার চোখেমুখে বিরক্তি ফুটে উঠল।“শুনছো?” অরুণাভর সাড়া নেই, বিরক্তি বাড়ে বিনীতার, গলার আওয়াজও ওপরে ওঠে দু পর্দা। “আমি এখানে বসে আছি দেখতে পাচ্ছ কি?”অরুণাভ বই থেকে চোখ সরায় না, তবে উত্তর দেয় - “উঁ…?” বিনীতা এক ঝটকায় বইটা সরিয়ে নেয়। রেখে দেয় টেবিলের অন্য পাশে। “আরে কী হল কী?” বলে অরুণাভ; বিরক্তি নয়, তার গলায় হতাশা।বিনীতা বেশ রেগে গেছে। “সারাক্ষণ শুধু বই আর বই, আর নইলে কাজ আর অফিস। বই আর অফিসকে বিয়ে করলেই তো পারতে, আমায় শুধু শুধু নিয়ে এলে কেন? হয় সারাদিন অফিসে পড়ে থাকবে, আর বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ বই মুখে করে বসে থাকবে। সংসারটা কি আমার একার?” “কেন, সংসারে আমার মন নেই?”“আছে! এই বাড়ির কোন জিনিসটা তুমি দেখ? কোন জিনিসটা তুমি এনেছ? কিছু বললেই বলবে আমি ব্যাস্ত, তুমি কিনে নাও। আমার সঙ্গে দু দন্ড বসে কথা বলা তো ছেড়েই দিলাম। মেয়েকে পর্যন্ত সময় দাও না। বেড়াতে টেড়াতে যাওয়া তো ভুলেই গেছি,” বিনীতা বলে চলে।রান্নাঘর থেকে সব শোনে বিসপাতিয়া; বাংলা সে একটু আধটু বুঝতে পারে এখন। এমন রাগারাগিও নতুন নয়। আগে ভাবত খাওয়ার সময়ে ভাবি এমন চেঁচামেচি করছেন, সাবজী হয়তো টেবিল ছেড়ে উঠে যাবেন। এখন জানে এসব খুব একটা গায়ে মাখেন না উনি। তা ছাড়া সারা দিনে সময়টাই বা কোথায়? তাই ডাইনিং-এর দিকে উঁকি না দিয়েও বুঝতে পারে সাবজী নিশ্চয় চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। একবার ওনার কাশির আওয়াজও পাওয়া গেল।  ওদিকে বিনীতার রাগ পড়ছে না। “এই যে শার্টটা পরে আছ, সেটা তোমার গত বছরের জন্মদিনে কিনে এনেছিলাম। গত মাসে তোমার জন্মদিনে আমি কেক নিয়ে এনেছিলাম। আর আমার জন্মদিন… সেটা কবে বলতে পার?”অরুণাভ চুপচাপ চা শেষ করে। একবার কাশে। তারপর বলে, “শুধু তো আমার দোষ দেখ। সিমন দ্য বোভোয়া কী বলেছিলেন জান, ‘টু ক্যাচ আ হাজব্যান্ড ইজ অ্যান আর্ট; টু হোল্ড হিম ইজ আ জব।”“ওই আর এক, সারাদিন শুধু কোটেশন আউড়ে যাচ্ছে। এ কী বলেছিল, সে কী বলেনি। শোন, আমি কাউকে ধরতে যাইনি, তুমি আমায় নিয়ে এসেছিলে। তাই তোমায় ধরে রাখাটা আমার কাজ নয়। বরং আমায় ধরে রাখাটা তোমার কাজ হতে পারে।”অরুণাভ একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়, নটা প্রায় বাজে। নিজের মনেই বলে, “বিকাশ এল না এখনও?” উত্তর দেয় না বিনীতা। তবে ড্রাইভারের আসার সময় হয়ে গেছে। আবার কাশল অরুণাভ। এত কাশছে কেন, কালও কাশছিল না? নির্ঘাত ঠান্ডা লাগিয়েছে। কলিং বেল বেজে ওঠে, বিকাশ এসে গেছে। বিসপাতিয়া দরজা খুলে বিকাশকে সাবজীর টিফিনের বাক্স আর অফিসের ব্যাগ দেয়। ওদিকে বেসিনে মুখ ধুতে গিয়ে বার তিনেক কাশে অরুণাভ।বিনীতা চেয়ার ছেড়ে ওঠে, “কাশছ কেন এত? দাঁড়াও ওষুধ দিচ্ছি।” ওষুধের অপেক্ষা না করে, কোনও কথা না বলে বেরিয়ে যায় অরুণাভ। গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ পাওয়া যায়। বাইরের দরজা বন্ধ করে দেয় বিসপাতিয়া। বসে পড়ে বিনীতা। খবরের কাগজটা তুলে নিয়েও রেখে দেয়। কিছুই ভাল লাগছে না তার। স্কুল যেতেও আজ ইচ্ছে করছে না। যদিও অন্য কিছু করার নেই, কোথাও যাওয়ার নেই। আত্মীয়স্বজনকে আগে বলত আসতে, এখন আর বলে না। যে বইটা অরুণাভর হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল বিনীতা, সেটা চোখে পড়ে - গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’। বইটা যে নিয়ে যায়নি, তাতে অবাক হল না বিনীতা। অরুণাভর পড়ার অভ্যাসটা বেশ অন্যরকম। একসাথে তিন-চারটে বই পড়ে সে। গাড়িতে খান তিনেক বই থাকে। অফিসের চেম্বারেও কয়েকটা বই থাকে, যদিও সেখানে কাজের বই-এর সংখ্যা বেশি। বাড়িতে সব কটা ঘরেই বই-এর আলমারি। গেস্ট রুমটা প্রায় একটা লাইব্রেরি বলা যায়। বেশিরভাগ বই-ই ইংরেজি, বাংলা বই খুবই কম। ইংরেজি বই পড়ার অভ্যাস নেই বিনীতার, যদিও ওর বিষয় ইংরেজি আর সেটাই মূলতঃ পড়ায় সে স্কুলে। এক সময়ে বাংলা বই ভালবাসত, তবে এখন আর পড়তে ইচ্ছে করে না ওর। বোকারোতে বাংলা বই তেমন পাওয়া যায় না, অনলাইনে অর্ডার দেওয়া যায় অবশ্য। দু-এক বার দিয়েওছে বিনীতা। অরুণাভ তো কলকাতা বা দিল্লি থেকেও বই আনায়। বই-এর পিছনে ভালই খরচ করে সে। নিজের রোজগারের টাকা খরচের ব্যাপারে বিনীতা সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই একটা ব্যাপারে অবশ্য স্বামীকে মনে মনে ধন্যবাদ দেয় বিনীতা। আভাসে ইঙ্গিতে টের পেয়েছে ওর স্কুলের মহিলা সহকর্মীদের দু-এক জনের এই স্বাধীনতা নেই, তাদের জবাবদিহি করতে হয় স্বামীর কাছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ, রঙিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অরুণাভর কোনও মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না বিনীতার। এর-তার কাছে কিছু শুনে কিছু বললে কখনও গুরুত্ব দেয়, কখনও দেয় না। অবশ্য এই সব বিষয়ে কথা বলার মত সময় তো পায়ই না বিনীতা। একা থাকতেই পছন্দ করে অরুণাভ, আর তার সেই নিজের স্পেসে ঢোকে কার সাধ্য। একটা আলগা মৌখিক ভদ্রতা অবশ্য সবার সাথেই বজায় রাখে সে, অফিসের ব্যাপারটা হয়তো আলাদা। তবে অফিস বা সেই সম্পর্কিত পার্টিগুলোর বেশির ভাগ জায়গাতেই জায়গায় যায় না সে। দু-একটা কথায় বিনীতার মনে হয়েছে জি-এম খুরানা স্যারের সাথে অরুণাভর সম্পর্ক ভাল।‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ বইটা তুলে নিয়ে এমনিই পাতা উলটে যাচ্ছিল বিনীতা। একবার ঘড়ির দিকে তাকাল। এবার স্নানে যেতে হবে। স্কুলে আজ একটা মিটিং ডেকেছেন প্রিন্সিপাল। হঠাৎই বাইরে একটা গাড়ি এসে থামার শব্দ পাওয়া গেল। গাড়ির দরজা খোলা আর বন্ধ হওয়ার শব্দ পেয়ে অবাক হল বিনীতা। এখন আবার কে এল? কলিং বেল বেজে ওঠে। নিজেই উঠে দরজা খোলে বিনীতা।  ড্রাইভার বিকাশ দাঁড়িয়ে, একটু যেন হাঁপাচ্ছে। বাংলোর সামনে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির মধ্যে অরুণাভকে খানিকটা দেখা যাচ্ছে।“কী ব্যাপার? কিছু ফেলে গেছে?” জিজ্ঞেস করে বিনীতা। বেলের আওয়াজ পেয়ে বিসপাতিয়াও এসেছে।“জলদি আসুন ম্যাডাম। স্যার… স্যারের…,” কথা শেষ না করেই গাড়ির দিকে দ্রুত হাঁটা লাগায় বিকাশ।বিনীতা ছুটে বাইরে যায়, বিসপাতিয়াও আসে পিছন পিছন। গাড়ির ভেতর থেকে ওদের দিকে তাকায় অরুণাভ, তার শার্টের সামনে রক্ত লেগে আছে। কোলের ওপর রাখা বইয়ের পাতায়, আর হাতের রুমালেও রক্ত। অরুণাভর চোখেমুখে বিস্ময়, বিনীতার আতঙ্ক, আর বিসপাতিয়া ভীত। কাশি আসে অরুণাভর, মুখের সামনে রুমাল ধরে সে, আরও লাল হয়ে যায় সেটা। (ক্রমশঃ)
    ভোটুৎসবে ভাট - মুক্তি চাই - সমরেশ মুখার্জী | নির্বাচনী রথের মেলা চলত‍্যাছে চমচমি।উনি বলেন আমি দেব ইনি বলেন আমি। রঙ্গ শেষে কাঁদেন বসে ওদের অন্তর্যামী।     এই তমসাচ্ছন্ন তামাশাকালে আমার মতো আত্মকেন্দ্রিকের (এখনো অবধি) কিছু এসে যায় না। ক্রনিক আমাশার মতো মাঝেমধ্যে‌ই ঘুরেফিরে আসা তামাশা দেখে আমি তাই একান্তে বসে পাল্লা দিয়ে করে যাই এন্তার মস্করা। ন‌ইলে এসব দেখে শুনে রাতে ঘুমানো দায়।   ভাটে বহু গুণী‌জন সমাবেশে আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করিনা। তাই ওখানে বেশী খাপ খুলতে যাইনা - আঙ্গুলের। সেথায় সাতিশয় সদাশয় ক্ষমাসুন্দর মহাশয় (মহিয়সী) থাকলেও আছে কিছু নির্দয় নিক। পান থেকে চূণ খসলে বা পাতি Pun করে ফেললে‌ও তারা তীক্ষ্ম আখরের নখরে খুবলে নেয় বাঁচাবুচা বয়সের সম্মান।      তাই আমি গুরুকৃপায় পাওয়া মোর হপার পাতায় কাটি পিকুর মতো আঁকিবুঁকি। আমার আঙিনায় ইচ্ছা‌মতো ঘোরাফেরা আমি করতেই পারি। তবু এখানে‌ও কে‌উ কখনো আচমকা এসে পাঁচিল থেকে থুকে যায় উঠোনে পিক। অল্প হলে সময়ে শুকোয়। বেশী হলে ঝাঁটা বালতি হাতে নামতে হয়।তো হপা‌র পাতায় সাদা ঘুঁটে ছেড়ে শুনছি‌লাম বহুবার শোনা একটি গান। হঠাৎ মনে হোলো গানটি‌র কিছু কিছু কথা হুবহু এবং কোথাও তা একটু বদলে নিলে বর্তমান যাত্রাপালা‌র সাথে বেশ মিলে যায়। যেমন: We want to break freeWe want to break free from your liesYou're so self satisfied We don't need youWe want to break freeGod knows, God knows  We want to break free.And like to press NOTA.We fallen for CHANGEWe fallen for change so many times,But now we know it was never realGod knows, God knowsWe need THE real change.It's not strange but it's trueWe can't forget how YOU treated usSo we have to be sureWhen we walk out that doorOh how we want to be free,Oh how we want to break free.But life still goes onWe get used to live withoutLive without live without joyLive without you by our sideBut we don't want to live alone,Still we need to make it of our ownOh King can't you seeWe want to break free.We want to break freeWe want to break free, yeahWe want, We want, We  want, We want to break free 
  • জনতার খেরোর খাতা...
     কূটকচালি   সনাতন বিশ্বাস উবাচ - SAUMITRA BAISHYA |     রাজনীতির মিউটেশন       সম্প্রতি চাকুরী হইতে সেবা নিবৃত্ত হইয়াছি। বৃদ্ধ বলদের স্কন্ধ হইতে সরকার গুরু দায়িত্বের জোয়াল তুলিয়া লইয়াছে। প্রাতঃকাল হইতে উর্ধশ্বাসে দফতরে ছুটিবার তাগাদা নাই। চা-বিস্কুট সহযোগে ‘বার্তালিপি’ পত্রিকাখানা আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া, বাজারের থলি হস্তে, হেলিয়া দুলিয়া বাজারে গিয়া নয়ন ভরিয়া নতুন আলু, লঙ্গাই বেগুন, ফুল কপি, সীম ইত্যাকার শব্জি দেখিয়া পুলকিত হই। মাছ বাজারে গিয়া জলের সোনালী ফসল হইতে শুরু করিয়া যাবতীয় মীনরূপে মজিয়া, মুগ্ধ হইয়া সর্ব কনিষ্ঠ মূল্যের মৎস্য ক্রয় করিয়া মৎস্য শিকার পর্ব সমাপ্ত করি। অতঃপর, আলু,ফুল কপি, সীম ও পালং শাক কিনিবার সময় সদ্যাগত আগ্নিমুল্য লঙ্গাই বেগুনের প্রতি সতৃষ্ণ দৃষ্টিপাত করিয়া, বাজার হইতে নিষ্ক্রান্ত হই। শব্জি বাজারে যাহারা সদ্য পতিত হইতেছে, তাহারা অগ্নিমূল্য এবং স্পর্শ করিলেই হাতে ছ্যাঁকা লাগিতেছে। আমি বুদ্ধিমানের মত, নবাগত কোনও প্রকার শব্জি বা কুলীন মৎস্যকূলের প্রতি হস্ত প্রসারিত না করিয়া, বিক্রেতার কাছে মুল্যমান জানিয়াই, প্রসন্নচিত্তে সত্য যে কঠিন, তাহা উপলব্ধি করিয়া, সহজে গ্রহণ করিবার শিক্ষা দিবার জন্য কবিকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।    বাজার হইতে ফিরিয়া আরেক প্রস্থ বিশেষ প্রকার লপচু নামক চা সহযোগে দিনলিপি লিখিবার উদযোগ করিতেছিলাম এবং এই সময়ে শ্রীমান সনাতনের  সশব্দে প্রবেশ ঘটিল। তাহার এইরূপ প্রবেশের সবিশেষ কারণ রহিয়াছে। তাহার কন্ঠস্বরটি ঈশ্বর-প্রদত্ত।ইহাকে ব্যারিটোন বলিলে কম বলা হইবে। নীরব নিস্তব্ধ মধ্য নিশীথে, আকাশের দেবতা কোনোরূপ পূর্বাভাস ছাড়াই যেরূপ প্রবল হুঙ্কার ছাড়িয়া, দশদিক প্রকম্পিত করিয়া তোলেন, শ্রীমান সনাতনের ‘বৌদি’ বলিয়া হাঁক পাড়াটা, অনেকটা তদ্রূপ। যে কদাপি শ্রীমান সনাতনের এই হাঁক পাড়া শ্রবণ করে নাই, সে এই কণ্ঠনিনাদের মহিমা উপলব্ধি করিতে পারিবে না। সনাতন আমার সহিত গুফতাগু করিতে আসিলেও, প্রবেশ মুহূর্তে ‘বৌদি’ বলিয়া তাহার বজ্রনিনাদের মধ্যে একটি নিগূঢ় ইঙ্গিত রহিয়াছে। শ্রীমান অতীব চা-রসিক। বস্তুত তাহার সহিত আমার পরিচয় শঙ্করী হোটেলে চায়ের আড্ডায়। শিং ভাঙিয়া বাছুরের দলে ভিড়িতে আমার সহজাত দক্ষতা রহিয়াছে। সনাতনের সঙ্গীবৃন্দের বার্তালাপ শ্রবণ করিয়া বুঝিলাম, ইহারা শিলচরের সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে বিচরণ করিয়া থাকে। আমি আবার শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ঈষৎ অনুরক্ত। আর আমার সঙ্গীবৃন্দ ব্যাঙ্ক ও জীবনে, ডেবিট- ক্রেডিটে সদামগ্ন। অতঃপর, উহাদের টেবিল হইতে উঠিয়া , সনাতনের বন্ধুবৃন্দের টেবিলের পার্শ্ববর্তী টেবিলের একটি চেয়ার দখল করিয়া, উহাদের বিতর্কে নাসিকা প্রবেশ ক্রাইয়া,ক্রমে ভাব জমাইয়া লইলাম। সেই আলাপ হইতে সনাতনের সহিত সম্পর্কটা কীপ্রকারে অন্তরঙ্গতায় রূপান্তরিত হইয়া গেল, তাহা আর স্মরণে আসে না। সম্পর্কের বুনিয়াদ নির্মাণে না লাগে বাস্তুকার, না লাগের স্থপতির আঁকজোঁক;তাই কোনো সম্পর্কের জন্ম মুহূর্তের দিনক্ষণ লিপিবদ্ধ হয় না, শুধু বিচ্ছেদ-বেদনার লগ্নটি চিরস্থায়ী রূপে হৃদয়ে অঙ্কিত রহিয়া যায়। মধ্যাহ্নে শঙ্করী হোটেলে তাহার প্রিয় বয়স্যদের অনুপস্থিতি দেখিলে, সে নির্দ্বিধায় সন্নিকটস্থ আমার ব্যাঙ্কে চলিয়া আসিত। ক্যান্টিনের হারুকে নিজেই চা আনিতে বলিয়া দিত। ইহাতে যে তাহার বিন্দুমাত্র সংকোচ হইত না, তাহা সনাতনের আত্মপর-ভেদাভেদজ্ঞানহীন মনের পরিচয়।         সনাতন জানে, আমার গৃহে বিভিন্ন প্রকার চায়ের সংগ্রহ আছে। সুরাপ্রেমীগণ যে প্রকারে ভিন্ন ভিন্ন জাতগোত্রের সুরার সংগ্রহশালা গড়িয়া তুলিতে কার্পণ্য করেন না, আমারও সেই প্রকারের চা-সংগ্রহালয় আছে। সনাতনের বজ্রনিনাদকে তাহার বৌদি উপেক্ষা করিতে পারিলেন না। কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই তাহার বৌদি চা ও বিস্কুট সহযোগে বৈঠকখানায় প্রবেশ করিলেন। গৃহধর্ম পালনে পরাম্মুখ, বাউন্ডুলে প্রকৃতির পুরুষের প্রতি রমণীকূলের হৃদয় সর্বদাই সজল হইয়া থাকে। তাহা না হইলে, দেবদাস যুগাতিক্রমী চরিত্র হইতে পারিত না। তাহাদের চরিত্রের বেহিসাবী সংসারবিমুখতা, এই সকল হিসাবী ও সংসারী চিত্তকে,আপন চরিত্রের অপূর্ণতায়, হয়তো কোনো প্রকারে বিচলিত করিয়া থাকে। মনোবিজ্ঞানীগণই উহা প্রকৃতরূপে বিশ্লেষণ করিতে পারিবেন। আমাদের সনাতনকেও তাহার বৌদি সস্নেহে নানা প্রকার মুখরোচক আহার্য পরিবেশন করিয়া যৎপরোনাস্তি তৃপ্তি লাভ করেন। সনাতনও তাহা আপন অধিকারলব্ধ বিবেচনায় উদরস্ত করিয়া পরিতৃপ্তির উদ্গার তুলিয়া, আমার তাম্রকূটের প্যাকেটের দিকে হস্ত প্রসারিত করে। এই একটি বিষয়ে, আমাদিগের উভয়ের বয়সের তারতম্য কবেই ঘুচিয়া গিয়াছে। কেবল তাহার পূজনীয়া বৌদির আকস্মিক আগমনে, সে জ্বলন্ত, ধুমায়িত শ্বেত দণ্ডটি বিশেষ কৌশলে আড়াল করিতে তাহার দক্ষতায় বিস্মিত হইতে হয়।        অতিসম্প্রতি, করোনার অতিমারী চরিত্রে একটা ম্রিয়মান ভাব পরিলক্ষিত হইতেছিল। বহির্গমনে নৈশ-নিশেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হইয়াছে। আবালবৃদ্ধবনিতা মহোৎসাহে সড়কে নির্গত হইতেছে, বিপণীতে, ভোজনালয়ে যাইতেছে। যেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা দৈবদুর্বিপাকে ভাঙিয়া পড়া বন্দীশালা হইতে মুক্তি পাইয়াছে। কিন্তু অদ্যকার সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার একটি সংবাদ অশনি সংকেত বহিয়া আনিয়াছে। বিজ্ঞানীগণ আফ্রিকায় করোনার একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলিয়াছে। ইহার নামকরণও হইয়া গিয়াছে- ওমিক্রন। সংবাদটি সনাতনের নজর এড়ায় নাই। সনাতনের বিদ্যাশিক্ষা সম্পর্কে কাহারো কোনো প্রকার অবগতি নাই। সনাতন সংবাদ পত্রটি টানিয়া লইয়া কহিল, ভাইরাস যে প্রকারে মিউটেশন করিয়া নিত্য নতুন প্রজাতির জন্ম দিতেছে, লক্ষ করিবেন, রাজনীতিরও মিউটেশন হয়। আমি বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম , ইহা কী প্রকার? সনাতন সোফায় পদযুগল উত্তোলন করিয়া, আসন করিয়া উপবেশ করিল। এইবার গম্ভীর হইয়া কহিল, - দাদা, লক্ষ করিবেন, বিজেপিকে আমরা হিন্দুত্ববাদী কহিয়া থাকি। ইহা সত্য। কিন্তু, কংগ্রেসের স্বর্ণযুগেও হিন্দুত্ব ছিল। রামচন্দ্রকে রাজনীতির অঙ্গনে তো মহাত্মা গান্ধীই আনয়ন করিয়াছিলেন। আর যুদ্ধ জাহাজে নারিকেল ফাটাইয়া, প্রদীপ প্রজ্বলিত করিয়া ইহার যাত্রা শুরু করা তো হিন্দু রীতি। ইহাতে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রহিল কি ? উহাই রাজনীতির প্রথম করোনা ভাইরাস। ক্রমে তাহা মিউটেশন করিতে করিতে, বর্তমানের রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে। নির্বাচন আসিলেই, যে কোনো প্রকারে হিন্দুর আবেগ জাগরিত করিতে পারিলেই, সে ভারতীয়ত্বের খোলস ত্যাগ করিয়া, হিন্দুর নামাবলী পরিধান করিয়া, ভোটের বাক্সে প্রবিষ্ট হইয়া পড়ে। রাজনীতিতে মিউটেশনের পলিটিক্স প্রবিষ্ট হইয়া ভারতীয়ত্বের গরিমাকে কেবল দুইটি বিপরীতমুখী ধর্মের পরিচয়ে বিভক্ত করিয়া দিয়াছে।       সনাতন যাহা বলিল, গণেশের ন্যায় আমি তাহা লিপিবদ্ধ করিলাম মাত্র। অতঃপর, এই বিশ্রম্ভালাপের ন্যূনতম দায়, আপন স্কন্ধে না লইয়া, ঘোষণা করিতেছি ,যে রাজনীতির মিউটেশন সংক্রান্ত বক্তব্য সমূহের সহিত আমার কোনোরূপ সম্পর্ক নাই এবং ইহাকে সনাতন বিশ্বাস কর্তৃক বিরচিত বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে।স.ব.             
               সমাজবন্ধু কারা  !  - Debasis Sarkar | স্কুলের পাঠ্যক্রমগুলি অতিক্রম করার পর আপনার সন্তান  উচ্চতর শিক্ষা লাভ করবে কোথায় ? কোন বিষয় নিয়ে সে পড়াশোনা করবে  ?  যদি আপনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তাহলে সর্বাধিক প্রচারিত যে কোনো  সংবাদপত্রের  'পাত্র চাই' কলমগুলিতে একবার চোখ বোলান !  বিজ্ঞাপনগুলিতে কেবল ৬-৭ টি ডিগ্রি আর  আট --ন'টি   প্রেশার কর্মীদেরই চাহিদা। অথচ দেশের প্রায় ৪৫ কোটি কর্মচারীর মধ্যে ওই ৮--৯ টি পেশার কর্মীদের সংখ্যা মাত্র দুই কি তিন শতাংশ ! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও এই মাপকাঠি মাথায় রেখেই তাদের প্রতিটি শিক্ষাক্রমের অর্থমূল্য নির্ধারণ করে ।  কেয়ারটেকার  , ড্রাইভার , পাম্প অপারেটর , ফিজিওথেরাপিস্ট এইসব পেশাজীবি কর্মীদের পাত্র হিসাবে কদর  তেমন নেই বোঝাই যায় তাই বলে সমাজজীবনেও কি তাহলে কিছুই নেই  !   এদেশে মোট ৩৯ হাজারের মতন ডিগ্রী কলেজ আছে , প্রায় ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয় আছে । নার্সিং কলেজ আছে ৮৬০০ আইটিআই আছে, ১০ হাজারের মতো।  প্রতিবছর  ৩.২ লক্ষ   নার্স পাশ করে বেরোচ্ছেন । ৮ লক্ষের মতন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আইটিআই গুলি থেকে পাস করে বেরোচ্ছেন ।  ২. ৫ কোটি গ্রাজুয়েট ,  ২৭ লক্ষ পোস্ট গ্রাজুয়েট আর ১.৮ লক্ষ ডক্টরেট বেরোচ্ছেন  ।  এতক্ষণ ধরে যে সমস্ত পেশাভূক্ত মানুষগুলির কথা বলা হল করোনাকালে  এঁদের মধ্যে কারা  কারা মানুষের কাজে লেগেছেন  ? সমাজে কোন কাজগুলির বেশি কদর হওয়া উচিত আর কদর অনুযায়ী তাদের রোজগারই বা কতটা হওয়া উচিত ? এ প্রশ্নটি করোনাকালে নতুন করে উঠতে শুরু করেছে  ।  কাজ মূলত তিন প্রকার , কায়িক   মানসিক আর সংবেদনশীল ( emotional ) এই তিনটির মধ্যে দক্ষতার কিছুটা স্তরবিভেদ সম্ভব  , দায়িত্বকেও নানা ভাগে ভাগ করা যায় । কাজের সঙ্গে জ্ঞান , মেধা ও দক্ষতা সম্পর্কেও একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে  । যে কাজ সর্বজনীন ন্যায় ও কল্যাণকে ঊর্ধ্বগামী করে বা পরিবেশ সংরক্ষণ করে তাকে আমরা কম কদর  করি । যে কাজ কোম্পানি ও ব্যক্তির পকেট ভরায় তাকে আমরা বেশি কদর করি, সেই সমস্ত কর্মীদের মেধাবী ভাবি ।  শ্রমের বিভাজন যদি বাজারের নিয়ম আর জাতি --লিঙ্গ ব্যবস্থার নিয়মে আটকে থাকে তাহলে আমরা কখনোই কাজের যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারব না ।  পৃথিবী  তো যথেষ্ট বুড়ো হয়ে গেছে ! সমাজে কোন পেশার কর্মীদের কদর বেশি হওয়া উচিত  তা এখনো কি আমরা  স্থির করে উঠতে পারছি না  !,
    হেদুয়ার ধারে - ১৩২  - Anjan Banerjee | রয়্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট ... মানবেন্দ্রনাথ রায়।নিখিলবাবু এম এন রায়ের খুব ভক্ত।সময়ের গাড়ি গড়িয়ে যায় নিজের মতো নিয়ম মেনে। বুকে পিঠে সওয়ারি নিয়ে সময় গাড়ি পেরিয়ে গেল দু বছর। এসে গেল উনিশশো বাষট্টি।। সুমনার মেজদি বন্দনার বিয়ে হয়ে গেছে, সুমনা প্রতিবিম্বদের কলেজের পাট চুকে গেছে। প্রতিবিম্ব এম এস সি পড়ছে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে। কাবেরীও মোটামুটি মার্কস পেয়ে অনার্স নিয়ে পাশ করেছে। এখন আর নিখিল ব্যানার্জীর কোচিং ক্লাসে যাবার প্রশ্ন নেই। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। মাঝে সংগঠনের কথা শুনতে যায় সে অমিতাভ স্নেহাংশুদের সঙ্গে। অমিতাভ খুব জড়িয়ে পড়েছে নিখিলবাবুর সংগঠনের সঙ্গে। ওরা দুজনই এম এন রায়ের নীতির সমর্থক। নীতিটা বাস্তবে কতটা প্রযোজ্য ভারতের মতো দেশে, যেখানে কায়েমী স্বার্থান্বেষী মানুষের সংখ্যা অত্যধিক বেশি, সেটা অবশ্য বিবেচ্য ব্যাপার। এটা শুধুমাত্র একটা ইউটোপিয়া কিনা বিচার করার প্রয়োজন।রাত্রি এম এ-তে রীতিমতো ভাল রেজাল্ট করেছে। সাগরের আনন্দের সীমা নেই।এ সবের মধ্যে পুজোর পরে একদিন, বোধহয় বিশে অক্টোবর হবে, আচমকা চিন ভারতের যুদ্ধ লেগে গেল। বঞ্চিত নিপীড়িত লোকজনদের বাদ দিয়ে এদেশে যারা দুধে ভাতে থাকে এবং যারা যুদ্ধ টুদ্ধ বিশেষ দেখেনি, তারা বেশ উত্তেজক মজা পেতে লাগল। ব্ল্যাক আউট, মাঝে সাঝে সাইরেনের শব্দ, সন্ধে হলেই রেডিওর সামনে অল ইন্ডিয়া রেডিওর দিল্লী থেকে পড়া খবর শোনার জন্য পড়াশোনা, কাজকর্ম ফেলে বসে পড়া কলকাতাসীদের বৈচিত্রহীন জীবনযাত্রায় বেশ আমোদ বিতরণ করতে লাগল। শহরের থানাগুলো এবং বিশিষ্ট অফিস এবং অট্টালিকার সামনে ইঁটের ছোটখাট পাঁচিল এবং বালির বস্তার সুরক্ষা ঢাল দেখে শহরবাসী বেশ একটা গা ছমছমে শিহরণ বোধ করতে লাগল। তাদের আলুনি মার্কা জীবনচর্যায় এটুকু উত্তেজনা কম পাওয়া নয়। তাছাড়া লাইব্রেরিতে, চায়ের দোকানে, বাজারে, অফিসে, ট্রামে বাসে, রাস্তার মোড়ে তর্কপ্রিয়, বোদ্ধা বাঙালীদের কলরবে সকাল সন্ধে ধুনো জ্বলতে থাকল।বিভূতিবাবু হাঁটতে হাঁটতে বৈকুন্ঠ বুক হাউসের সামনে গিয়ে দেখতে পেলেন পাঁচ সাত জনের একটা জটলা। তার কানে এল, একজন বলছে 'এটা নেহেরুর গোয়ার্তুমির ফল। চায়নার স্ট্রেংঙ্গথ সম্বন্ধে কোন আইডিয়া ছিল না। এখন বোঝ ... কত ধানে কত চাল। চু এন লাই তো বার কয়েক শান্তি প্রস্তাব দিয়েছিল .... মেনে নিলেই হত .... 'আর একজন বলল, 'এখন বোঝ ঠ্যালা। চিনেদের খ্যামতা তো জান না ... ওরা সাঙ্ঘাতিক ডাঁটো ... 'অন্য কেউ একটা বলল, ' বর্ডারের কুড়ি মাইল এদিকে ওদিকে দু দল মিলেমিশে থাকলেই পারতিস .... সতের হাজার ফুট ওপরে আকসাই চিন না কি একটা বছরভর বরফে ঢেকে থাকা জনমানবশূন্য জায়গা ... সেটা নিয়ে দড়ি টানাটানি ...ওটা গেলেই বা কি, থাকলেই বা কি ... হ্যাঃ ... নেই কাজ তো খই ভাজ ... কৃষ্ণমেননটাও একটা অপদার্থ ... নেহেরুকে ঠিকমতো বোঝাতে পারল না ... 'একজন বলল, ' সতের হাজার ফুট না, বারো হাজার ফুট ... নেহেরু কারো কথা শোনে নাকি ? '----- ' বারো হাজার ... ওই একই হল ... ওরা তো অনেক সুযোগ দিয়েছিল ... চাচাজী সাপের পাঁচ পা দেখেছিল ... এখন বেধড়ক প্যাঁদানি খাও .... অতি দর্পে হতা লঙ্কা ... নিজের ক্ষমতা বুঝে কাজে নাম ... তা না ... '----- ' একহাজার তো ছাড়িয়ে গেছে ডেথ। দেখ আজকের সন্ধের খবরে কি বলে ... 'কে একজন বলল, ' এর মূলে তো ব্রিটিশরা। ওরকম উল্টোপাল্টা ম্যাকমোহন লাইন কেটে গিয়েই তো গন্ডগোল বাঁধিয়ে গেছে। '----- ' যত দোষ নন্দ ঘোষ ... লাও সামলাও ... 'কে একটা বলল। বিভূতিবাবু জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কূটনীতি, রাজনীতি, রণনীতির এইসব জটিল তত্ত্বের ব্যাপারে একেবারেই নাবালক। যুদ্ধ একটা বেঁধেছে এইটুকু খবর তিনি রাখেন। কিন্তু এইসব পরম জ্ঞানীরা যেভাবে নেহেরু, চু এন লাই, কৃষ্ণমেননকে নিয়ে পাড়ার গোবিন্দ বা গঙ্গাপদর কোন ঘরোয়া সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অভিবাবকসুলভ ভঙ্গীতে কাঁটাছেঁড়া করছে সেটা দেখে ও শুনে এদের বিজ্ঞতা এবং বিচক্ষনতার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠলেন তিনি। একপাশে দাঁড়িয়ে কান পেতে এদের আলাপ আলোচনা শুনতে লাগলেন।শুনতে বেশ লাগছিল তার। সন্ধেবেলায় রেডিওর সামনে গুছিয়ে বসবেন খবর শোনার জন্য।তার হঠাৎ সাগর মন্ডলের কথা মনে পড়ল। ভাবলেন, সাগর কি ভাবছে এ ব্যাপারে জানতে পারলে হত। বিভূতিবাবুর চোখে সাগরের চেয়ে বড় সোলজার দুনিয়ায় আর কেউ নেই।মাসখানেক বাদে একুশে নভেম্বর হঠাৎ যুদ্ধ থেমে গেল। এতে ভারতের কোন কৃতিত্ব নেই। চীন একতরফা যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে দিল। করে, ভারতকে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি গোত্রের অপমানের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। নিরামিষ জীবন কাটানোয় অভ্যস্ত লোকজনের সামনে যুদ্ধের রোমাঞ্চ মাখা অধ্যায় দুম করে বন্ধ হয়ে গেল। বেশ বীররসে ভেজা রোমাঞ্চের ঘুরন্ত চাকা ঝট করে থেমে গেল। এলাকার অনেকেই তাতে বেশ মুষড়ে পড়ল। মজাটা মাটি হয়ে গেল। তেতো কুইনাইন খাওয়া মুখ করে তারা আবার তাদের গতানুগতিক দৈনিক রুটিনে ফিরে গেল। সন্ধেবেলায় পড়ায় ফাঁকি দেওয়া বালক বালিকারা লুডো খেলার পাট চোকাতে বাধ্য হল। তারা বিরসবদনে আবার বই খাতা খুলে বসল। এর মধ্যে রাত্রির বাবা শিবপ্রসাদবাবুর রিটায়ারমেন্ট হয়ে গেল। রাত্রি বেহালার দিকে একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে।শিবপ্রসাদবাবু তার মেয়ের সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল।একদিন মেয়েকে বললেন, ' কি ঠিক করলি ? একটা সেটলমেন্টে তো আসার দরকার আমি আর কতদিন বাঁচব ? এই বাড়িটা তো রইলই। তোদের অসুবিধে হবে না। সাগরের সঙ্গে কিছু কথাবার্তা হয়েছে ? 'রাত্রি রুটি বেলতে বেলতে বলল, ' না ... তেমন কিছু না। আর ... তুমি মরার কথা বোল না তো ওরকম ... আমার মন খারাপ হয়ে যায় ... '----- ' আচ্ছা, সে না হয় হল ... কিন্তু তোরা কথাবার্তা বলে কিছু একটা ঠিক কর ... সমাজে কথা হয় এসব নিয়ে ... '------ ' সমাজ নিয়ে মাথা ঘামিও না বাবা। এই সমাজের খোলনলচে বদলানোই আমাদের মূলমন্ত্র। মানুষ না বদলালে কখনও রাষ্ট্র বদলায় না ... আর মানুষকে বদলানোর দায়িত্ব কাউকে নিতে হয় ... '----- ' এসব তোদের নিখিল স্যারের কথা নিশ্চয়ই...'----- ' তাছাড়া আর কে। কাল স্যার আমাদের কয়েকজনকে ডেকেছেন। চিন ভারতের যুদ্ধ নিয়ে পর্যালোচনা হবে ... অন্য ডিস্ট্রিক্ট থেকেও দু একজন আসবে। আমাকে আর সাগরকেও যেতে বলেছেন স্যার। কফি হাউসে কাবেরীর পরিচিত দু তিনজন আসবে। আর হ্যাঁ, সঞ্চারীর জ্যাঠতুতো দাদা অমলকেও আসতে বলেছেন স্যার ... এস খেতে এস ... ' কালীবাবুর মন মোটে ভাল নেই। তার আর ছ মাস চাকরি আছে। তারপরে অবসর গ্রহণের পালা। তিনি ঠিক করেছেন, এরপর নিখিল ব্যানার্জীর সংগঠনে কাজ করবেন। তাতে বিপদ আপদ যা আসে আসুক। বটতলা থানার এত বছরের বারোমাস্যা তার হৃদয়ে বিছিয়ে বসে আছে। কত শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা পেরিয়ে এলেন কত বিচিত্র সব লোকজন দেখতে দেখতে। থানার এই চেনা পরিবেশ, সময়ে অসময়ে সাগর মন্ডলের আগমন এবং কর্মকান্ড... এই কনস্টেবল, সাব ইন্সপেক্টররা ... শক্তিপদর দোকানের গরম চা ... এসব ছেড়ে চলে যেতে হবে তিনি এখনও ভাবতেই পারছেন না। বিষাদ তাকে জড়িয়ে ধরেছে আষ্টেপৃষ্টে। তিনি ভাবপ্রবণ মানুষ। তাই মাঝেমাঝেই আবেগের পাখি উড়ে এসে বসছে তার মনের উদাসী ডালে।ডালে ডালে শুকনো পাতারা ঝরে যায় ঝরার সময় হলেই, অনেক কান্নাহাসির শিশির মাখামাখি হয়ে। আবার নতুন পাতারা আসে ডাল জুড়ে বসবার জন্য।সময় কারো জন্য বসে থাকে না। সে নির্বিকার উদাসীনতায় ভেসে চলে যায়। তাকে ধরেও রাখা যায় না। ফেরানোও যায় না। সে শুধু চলে যায় পিছনে না তাকিয়ে। ( চলবে )********************************************
  • ভাট...
    commentaranya | দেখেছি, সুদীপ্ত। সত্যিই End of an era. 
    সুনীল-কে কুর্ণিশ 
    commentসুদীপ্ত | সুনীল ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিলেন। গত এক-দেড় বছরের ফর্ম মোটেই ভালো ছিল না, তা সত্ত্বেও বক্স স্ট্রাইকার ভারতের ওই একজনই ছিল ঠিকঠাক। বিদেশীদের ঠ্যালায় আই এস এল এ ভারতীয় কোনো বক্স স্ট্রাইকার আজও ওঠেনি। মনবীর, লিস্টন, ছাংতে, বিপিন, নন্দকুমার সবাই উইঙ্গার। মাঝে মধ্যে এসে গোল করে যায়। বাইচুং-বিজয়ন জমানার শেষদিকের উঠে আসা স্ট্রাইকার। দেড়শো আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ৯৪ টা গোল, আর ৩৯ বছর অবধি এক নম্বর স্ট্রাইকার হিসেবে দলে নেতৃত্ব দেওয়া,  মুখের কথা নয়, সে যেই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক, আর ভারতীয় ফুটবল সুখের জায়গা তো নয়। End of an era। ৬ই জুন কুয়েতের সঙ্গে শেষ ম্যাচ খেলবেন, যুবভারতীতে। 
     
    @অরণ্যদা দেখেছেন নিশ্চয়ই। 
    commentরমিত চট্টোপাধ্যায় | সকালেই এটা নিয়ে একজনকে বলছিলাম। কল্যাণ ব্যানার্জির আঠাশ কোটি টাকা রয়েছে অথচ তেরো লাখের লোন মেটায়নি। 
    বিজেপির প্রার্থীরও একই গল্প। ঘোষিত সম্পত্তি দেড় কোটির কাছাকাছি অথচ লোন মেটায়নি।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত