এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • করোনাকালীন

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ০৮ আগস্ট ২০২০ | ৩০৪৪ বার পঠিত
  • # করোনাকালীন
    সাদাটে একটা আলো ঘুরছিল। গোল করে ঘুরতে ঘুরতে মিলিয়ে যাচ্ছে।কোথা থেকে শুরু কোথা থেকে শেষ, কিছুই বোঝা যায় না। তীব্রতা মাঝেমাঝেই বেড়ে যাচ্ছে ।আবার খুব কমে যাচ্ছে।একটা ঝিঁঝির ডাকের মত যেন।সামনে কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।মাঝেমাঝে বিদ্যুতের চমক যেন।চিড়িক দিচ্ছে মাথার ভিতর। সঙ্গে সঙ্গে চোখে যন্ত্রণা ।হাত পায়ে জোর নেই কোনো। পাশ ফেরার ক্ষমতাহীন।সামনে দরজাতে একটা গ্লাস পেইন্টিং।কার মুখ? ফ্রিডা কাহালো?ভানুমতী? প্রায় অবশ হাত পায়ে পিঁপড়ের চলাচল।ব্যালকনিতে গাছ আছে কিছু।একটা সবুজ আভা দেখা যায় ।
    কেউ মাথায় হাত দিল।কপালে।গালে।গলায় ।ঠিক এইভাবেই তো মা দেখতো।মা দেখতো বাবুর জ্বর আছে কিনা।বাবু কষ্ট হচ্ছে বাবা? মা গোলাপি সালোয়ার কুর্তা পরে ঘরের মধ্যে যেন।অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
    গলা শুকিয়ে আছে।জল।অল্প কাশি। মাথা তুলে ধরে কে জল খাইয়ে দিল। গন্ধটা চেনা।গলায় জল পড়েছে। মুখিয়ে দিচ্ছে।একটা ফোনের শব্দ। কেটে দিল ফোনটা কেউ।
    খাবি কিছু? স্যুপ ? একটু উঠে বোস।
    হাতের মধ্যে হাত।অদিতি। ঘোর এসেছে একটা।ও আবার ঘুমিয়ে পড়লো।পরম নির্ভরতায়। ।অদিতি আছে।
    আরো একদিন বাদে সে উঠে বসতে পারে।বিছানার মধ্যেই ।অদিতি পেছনে বেশ কয়েকটা বালিশ কুশন দিয়ে ওকে হেলান দিয়ে বসিয়েছে।চাদর দিয়ে দিয়েছে গায়ে। একটা সুজনি টাইপের চাদর।ভোপাল থেকে অদিতিই নিয়ে এসেছিল।পিচ রঙা। সাদা ফুটি কাটা।এটা গায়ে দিলে খুব নরম, কোজি একটা ফিলিং হয়।
    অদিতি খানিকক্ষণ আগে ওর মাথা ধুয়ে দিয়েছে।গা স্পঞ্জ করে ফ্রেশ শর্টস আর টি শার্ট পরিয়েছে।কারণ এখন ওর নড়াচড়ার তেমন হুঁশ নেই। বাথরুমে অদিতি ধরে ধরে নিয়ে যায় ।
    হাল্কা একটা রোদ উঠেছে ন 'টা সাড়ে ন' টার দিকে। ভোররাতে বৃষ্টি হয়েছিল।অদিতি টোস্টারে পাঁউরুটি দিয়েছে । ঘটঘট করে হরলিক্স গুলছে গ্লাসে। তিনদিন বাদে জ্বর নেমেছে।উঠে বসতে পারছে ।যদিও ভীষণ দুর্বল।
    হরলিক্স মানে শৈশবের গন্ধ ।
    - কেন ফালতু হরলিক্স গুলছিস? আমি খাবো না।
    - খেতে হবে বাবু।
    - হরলিক্সে কিছু নেই। ছাতু ইজ মাচ বেটার।
    - এই লকডাউনে হোয়ার শ্যাল আই গেট ছাতু ডার্লিং?
    - পাঁউরুটি খাবো না।
    - খাবি। দুপুরে ডিম। চুপচাপ যা দেব তাই খাবি।মারবো এক গাট্টা।
    পুনের এই অভিজাত বহুতলের প্ল্যাস্টিক পেইন্ট করা ফ্ল্যাটে বসে কোভিডের আঁচ টের পাওয়া যায় না।দুটো চড়াই বারান্দায় লাফালাফি করছে।
    - প্লিজ ঐ সিডি টা চালিয়ে দে। ঐ গানটা।একটা চড়াই আপনমনে এক্কা দোক্কা খেলছে ।
    - আগেইন! ইওর সুমন চ্যাটার্জি?
    - কবীর সুমন।
    - ওল দ্য সেইম। ইউটিউব দেব?
    - না।সিডি।
    ও স্টিরিওফোনিক সাউন্ড চাইছে এখন।গমগম করবে ঘর জুড়ে । কোভিড নাইন্টিন । সুইসাইড। মাইগ্রান্ট লেবার।আপাতত নয়। আপাতত শুশ্রূষা ।কমপ্লিট হিলিং অব দ্য বডি অ্যান্ড মাইন্ড।আটমোস্ট নেসেসিটি। এখন ও নিজের আবর্ত চায়।আর পাঁচজনের মত।
    ভারবোধ কম। ভালো লাগছে ওর।নির্মাল্য সামন্ত এখন অতীত। মাত্র তিনদিনে একটা মানুষ অতীত হয়ে যেতে পারে না।কিন্তু এই তুমুল জ্বর।প্রায় অচেতন হয়ে তিনদিন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকা। এইসবকিছু ওকে অনেকটাই।অনেকটাই ইনট্রোস্পেকটিভ করে তুলেছে।লেইড ব্যাক হয়ে দেখছে আজ। এবং অদিতির উপস্থিতি । ওর একটা ফুলফিলিং ব্যাপার আছে।সবকিছু ভরিয়ে রাখে।মায়ের মত।
    হরলিক্সে চুমুক দিয়ে দেবরূপ হেসে ফেললো।অদিতিকে এটা বলা যাবে না।সে নিজেও কী নাইন্টি পার্সেন্ট ভারতীয় পুরুষের মত প্রেমিকার মধ্যে মা' কে খুঁজছে? সিলি।ড্যাম সিলি। এবং অদিতি একটুও মালবিকার মতো ওকে ন্যাম্বি প্যাম্বি করে রাখে না।শী ইজ প্রেটি স্ট্রংগ। কখনো বেশ কঠিন।বাট নট কমপ্লেক্স। গোলাপি সাদা চেক শার্টে অদিতির বাদামি স্কিন মোলায়েম লাগছে। চিক বোন একটু উঁচু। কোঁকড়ানো চুলে কিছু একটা দিয়েছে। চকচক করছে। অদিতি লম্বা। স্ট্রংগ লিম্বড।পেটানো স্বাস্থ্য । শি হ্যাজ নো ন্যাকামি অ্যারাউন্ড হার। মালবিকা অন্যরকম। দেবরূপের সামান্য জ্বর মানে মায়ের সি এল।মা বাড়িতে।
    অদিতি কাজ থেকে ছুটি নেবে না। দেবরূপের জন্য যা যা করার করেছে সকাল থেকে। যখন জ্বরে অচেতন ছিল, ছুটি নিয়েছে। প্রয়োজনে বেরিয়েছে শুধু।এখন কাজে বেরিয়ে যাবে।ঠিক দুটোতে ঢুকে যাবে লাঞ্চ দিতে। ওকে এখন থাকতে বলে লাভ নেই।শুনবে না।
    - শোন।গাছগুলোতে জল দিয়েছিল?
    অদিতি ফ্লাস্কে গরম জল ভরতে ভরতে তাকাল।
    - ইয়েস। অ্যান্ড কোভিড টেস্ট ডান ফর ইউ।ফর মি ওলসো।
    দুর্বল শরীরে ছিলার মত টানটান হয়ে উঠে বসে।
    - অ্যান্ড?
    - অ্যান্ড হোয়াট?
    - কবে করালি টেস্ট?
    - অন দ্য ভেরি ফার্স্ট ডে। জ্বরে মেঝের ওপর পড়ে ছিলি। আমার ফোন রিং হয়ে যাচ্ছিল।আই গট গোভিন্দ অ্যালংগ উইদ মি টু গেট দ্য টেস্ট ডান।
    - পজিটিভ?
    - ইয়া।বাট নো নিড টু ওরি। তোর ব্রিদিং ট্রাবল নেই।তুই যখন ঘুমোতিস, আমি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।জ্বর ছিল।বাট ইউ স্লেপ্ট ওয়েল।
    আর শোন।তুই পজিটিভ এটা আমি কাউকে বলছি না। নিশান্ত তোকে দেখে যাচ্ছে দুবেলা।হি ইজ আ ট্রাস্টওয়ার্থি ডক। অসুবিধে বুঝলে তোকে হাসপাতালে শিফ্ট করে দেবে।আদারওয়াইজ ইউ আর ফাইন হিয়ার। জানাজানি হলে লোকে খামখা প্যানিক করবে।ঝামেলা হো যায়েগা। দ্যাট ইজ নট নিডেড।তোর হোম আইসোলেশন হয়ে যাচ্ছে।
    এক নিঃশ্বাসে কথা বলে গেল মেয়েটা।

    নিশান্ত ডাক্তার । সহ্যাদ্রি হসপিটালে রয়েছে। কাজেই নিশ্চিন্ত হওয়া যেতে পারে।

    শান্ত হয়ে গেল দেবরূপ।বারান্দায় মাথা নাড়ল এরিকা পাম। পাখিগুলো নেই।
    বুক ধক করে উঠল।
    - এই শোন।বাড়ি? মা তো রোজ দুবেলা ফোন করে তুই ফোন ধরেছিস নাকি?
    অদিতি শিবরামণ মিষ্টি হাসলো। ব্যাগ তুলছে পিঠে।
    - নো। রোজ রাত দশটা আর সকাল আটটা। আমি ফোন ধরলে ভালো হত?
    - দেন? মা ভীষণ চিন্তা করবে।
    - করবে না মায়ের খোকা। আই হ্যাভ টেক্সটেড ইওর মম।অন বিহাফ অব ইউ। বাবু হয়ে টেক্সট করেছি। " বিজি ইন সিরাম ল্যাব ফর আ ফিউ ডেজ। ফোন কল নট অ্যালাউড।ওনলি টেক্সট। লাভ।বাবু।
    পড়ে দ্যাখ।ঠিক আছে?
    - এত রিস্ক নিলি? যদি আমার কিছু হয়ে যেত? সব দোষ তোর ঘাড়ে ।
    অদিতি গভীর দৃষ্টিতে ওকে দেখল খানিকক্ষণ । এগিয়ে ঝপ করে চুমু খেল কপালে। কন্টামিনেশনের ভয় জানলা দিয়ে উড়ে গেছে।
    - ইন লাভ রিস্ক ইজ কম্পালশন। আদারওয়াইজ ইট ইজ নট লাভ।যাস্ট কম্প্রোমাইজ।
    এই মুহূর্তে ও প্রকৃত রিল্যাক্সড ।কোনো যন্ত্রণা নেই। চিন্তা নেই।অদিতির স্পর্শ আছে।তবু যৌনকাতরতা নেই। একেই কী অনাবিল বলে?
    অদিতি হাত নেড়ে দরজা টেনে বেরোচ্ছে।
    - আর তোর রিপোর্ট?
    - ফর নাউ নেগেটিভ। বাট হু নোজ। কাল পজিটিভ হতেই পারে।কোভিড নাইন্টিন ইজ আনপ্রেডক্টিবল লাইক মারিয়া।বাই।
    দরজা বন্ধ হল ক্লিক শব্দ করে।
    পাঁচ সেকেন্ডে খুলে গেল আবার।শুধু মাথাটা উঁকি দিল।
    - হেই! কল ইওর মম। শী সিমস টু বি ভেরি আপসেট। প্লিজ কল হার।

    সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন অনিল। পিস্তা কালারের রঙ দেওয়ালে।সাদা সিলিং।হাল্কা করে ফ্যান ঘুরছে। অনিলের প্রিয় রঙ সাদা। তাঁর বাড়িটিতে সাদা রঙের প্রাধান্য ।সাদার সঙ্গে মানানসই দু একটি রঙ । আউটহাউসে খুব শখ করে কাঠের কাজ করিয়েছেন। উডেন কালার। সাবাই ঘাসের ফ্লোর স্প্রেড।টিক উড ফার্ণিচার। একেবারে খাশ টিক।এক্সপোর্টেড ফ্রম ঘানা।কাঠের হাতিদুটি পলি খুব শখ করে তৈরি করিয়েছেন। একগাদা পুরোনো পত্রিকা।জার্নাল জমে আছে। অনিলের হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখতে ইচ্ছে করছে না। তাঁকে তাড়া করে বেড়ায় ভয়ঙ্কর এক দুশ্চিন্তা যা অতিমারীর চেয়েও ভয়াবহ। ক্যানসারের সম্ভাবনা অনিলকে তীব্র দুশ্চিন্তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে । গত রাত থেকে তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছে, বেঁচে থেকে কি লাভ হবে।যদি ক্যানসারই হয়, দীর্ঘদিন ভুগতে হবে।অনিল দেখতে পাচ্ছেন পলি এক ক্লিনিক থেকে অন্য ক্লিনিক, এক হসপিটাল থেকে অন্য হসপিটাল দৌড়ে বেড়াচ্ছে।রোদে ও দুশ্চিন্তায় পুড়ে গেছে ওর কোমলতা।বাচ্চাদের শুকনো মুখ।পড়াশোনা হচ্ছে না ঠিকমত।এই কোভিড সিচুয়েশনে কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।নাহলে অনিল মুম্বাইতে চলে যেতেন।অন্তত টেস্টগুলো করে নেওয়া যেত। নাউ ইট ইজ ইম্পসিবল।কোনোখানে এতটুকু জায়গা পাওয়া যাবে না।
    চেঙ্গালা এই সময়ে বেশ গরম।বৃষ্টি হলে আলাদা ।কিন্তু অনিল ঘামছেন। সাধারণত ট্যুর থেকে ফিরে ওঁরা কোথাও একটু ঘুরে আসেন কাছাকাছি।এবার পলির ইচ্ছে ছিল মুন্নার যাবেন। অনিল একটা শ্বাস ফেললেন। কত কী ভাবা ছিল।মাতুপেতি ড্যামের কাছে পিকনিক করবেন।ছেলেমেয়েদের ঘুরিয়ে দেখাবেন ইরাভিকুলম ন্যাশনাল পার্ক।সারাদিনের প্ল্যান।হৈচৈ।এইসময়টাতেই বিদেশ থেকে ফেরেন তিনি প্রতিবার।বাড়িতে খুশির ঢেউ।
    কিচ্ছু হল না।কিচ্ছু না।হয়তো কোনোদিন হবেও না আর। ভেঙে যাচ্ছেন ভেতরে ভেতরে।দেবরূপকে বলেছিলেন। যদি নর্মাল সময় হত , দেবরূপ পুনে থেকে মুম্বাইতে চলে যেত।টাটা ক্যান্সার হসপিটালে ।দেবরূপের মত কেউ সঙ্গে থাকলে অনিল অনেকটা জোর পেতেন মনে।এখন হাত পা বাঁধা।তাঁর কেবলি মনে হচ্ছে সামনে কেবল অন্ধকার।স্পর্শ নেই।রসাস্বাদন নেই। গন্ধ নেই।
    না।গন্ধ আছে।গন্ধ আছে তো।গন্ধ পাচ্ছেন অনিল।
    কিসের গন্ধ আসছে? চাঁপা ফুল? হ্যাঁ ।এইসময়গুলো চাঁপার।বিয়েতে চাঁপাফুলের ক্রাউন পরেছিলেন পলি। বাদামি গায়ের রঙে কী চমৎকার মানিয়েছিল তাঁকে। ওয়েনাডে মধুচন্দ্রিমা ।উত্তর কেরালার সেই বড় বড় স্ট্রাকচারগুলি।প্রাচীন।কালো পাথর ।যুগ যুগান্তরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।ইতিহাস গেঁথে রেখেছে একটা যুগকে।বিশাল।গম্ভীর । মীনামুত্তি জলপ্রপাতের সামনে তাঁদের যুগল ছবি।পলি হাসছেন।হাসলে পলির বাঁ গালে ঈষৎ টোল।টেনশন এবং হতাশা অনিলের যাবতীয় অনুভূতি কেড়ে নিয়েছে ।তবু।তবু হঠাৎ একধরনের উত্তেজনা বোধ করলেন অনিল ।অনেকদিন বাদে। জীবন থেকে বিচ্ছিন্নতা তাহলে তাঁকে একেবারে মেরে ফেলেনি!সামান্য কিছু সময়ের জন্য উল্লাস ফিরে এলো।ফিরো এলো আকাঙ্খা ।তারপর আবার তলিয়ে যাওয়া ।যেন খাবি খাচ্ছেন জলে।

    ক্রমশ উত্তেজনা থিতিয়ে গেলে আবার একটি অগাধ লিম্বো। ফোন বা এস এম এস বা হোয়াটস অ্যাপে যতটুকু জনসংযোগ হয় , বা মেইলের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা, তাতে আর আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনিল।একটি ঘড়ির অবোধ টিকটিক শব্দ তাঁকে অনন্ত বিবমিষার দিকে ঠেলে,ঠেলে, ঠেলে, ঠেলে...

    মরে যাওয়াই ভাল। এই টেনশন আর সহ্য করতে পারছেন না অনিল।অনেকগুলো লাইফ ইনস্যুরেনস করা আছে। পলি সেই সমস্ত দিয়ে আর কিছু কাজকম্ম করে বাচ্চাদের মানুষ করে ফেলতে পারবে ঠিক।এইটাই অনিলের প্রধানতম কনসার্ন ।যেভাবে হোক।বাচ্চারা যেন অসুবিধে বোধ না করে।কতজনের তো বাবা থাকে না।তারাও তো মানুষ হয়।মানি অ্যান্ড গাইডেন্স আর ইম্পরট্যান্ট।
    মাথা ব্যথা করছে অনিলের।গলা একেবারে শুকনো। নিউজ ফিড নিতে পারছেন না।ইতালিতে মৃত্যু মিছিল। ইংল্যান্ড ।ফ্রান্স।জার্মানী।সব মদমত্ত জাতি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে গোহারা হেরে যাচ্ছে।বিশপ কাঁদছেন গির্জার পালপিটে। ডাক্তার হাহাকার করে কাঁদছে হাসপাতালের করিডোরে। মন্ত্রী পদত্যাগ করছেন।সামলাতে পারছেন না কোভিডের তান্ডব।এত মৃত্যু ।এত মৃত মুখ।কোনো প্রার্থনা নেই।মৃত্যুর কোনো শিষ্টতা নেই। কেবল শ্বাসরোধকারী এক ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ।সারা পৃথিবী কাঁপছে ভয়ে। কোম্পানির কাজ গুটিয়ে এসেছে।মিডল ইস্ট পুরো ষাট ডাউন।
    অনিল তাঁর ফুসফুসের ঐ স্পটটি নিয়ে কোথায় যাবেন এখন? কোথাও কোনো ত্রাণের আশা নেই। এই মুহূর্তে মরে যাওয়া সবচেয়ে ভালো।ফ্যানের দিকে তাকিয়ে উর্ধমুখে। ওখানেই কি নিজেকে শেষ করে দেবেন অনিল? একটা শাড়ি বা শক্তপোক্ত ওড়না চাই শুধু। আর একবার ছেলেমেয়েদের কাছে পাওয়া ।যাস্ট একবার। তারপর আর কিছু বাকি নেই।ওদের কপালে, গালে চুমু। সব টেনশন শেষ। অনিল মনস্থির করে ফেলেছেন।আজ রাতেই।সব শেষ হোক।স্লিপিং পিলস এখন পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে খুব শান্ত মৃত্যু হত। শিরা কাটতে অনিল পারবেন না ।তাহলে একমাত্র উপায় টু হ্যাংগ হিমসেল্ফ।
    দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে টিকটিক শব্দে।
    একটা অচেনা পাখি ডাকছে কোথাও। রোদ পড়ে ক্রোটনগুলি অসম্ভব বর্ণময়। পুলের পাশে ব্যাঙটা চুপ করে বসে।ফড়িং টড়িং ধরার আশায়।অনিল কেমন ঘোরের মধ্যে ব্যাঙটার দিকে চেয়ে রইলেন।

    দূর থেকে একটা অস্পষ্ট চিৎকার।কে ডাকে।
    দোতলার প্রশস্ত ব্যালকনিতে দুটো কচি মুখ।পাপাআআআ। হাত নড়ছে চারখানা ।

    আর মাত্র কয়েকটা দিন।হোম আইসোলেশন শেষ।বাড়িতে ঢুকবেন অনিল। চকোলেট কেকের গন্ধে ভরে যাবে পলিজ নেস্ট। বাচ্চাদের আনন্দের শেষ নেই।পাপা উইল বি ব্যাক হোম অ্যাটলাস্ট।অনিল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। দুজোড়া চোখ চকচক করছে। কী মিষ্টি চাঁপা ফুলের গন্ধ!

    হাত নাড়ছে বাচ্চারা।দিন গুনছে।ট্রু হোমকামিং হয়নি তো।এবার হবে।কোয়ারেন্টাইন শেষ হলেই।
    মেয়ের মাথায় একটা গোলাপি হেয়ারব্যান্ড। হলুদ জামা।এখনো কত রঙ চারদিকে। কত আকাঙ্খা ।
    এইসব ছেড়ে কী এত সহজে যাওয়া যায়?
    যদি ক্যান্সার না হয়! বুকের মধ্যে দপ করে হাজার ওয়াটের বাতি জ্বলে উঠলো। কেন শুধু নেগেটিভ ভাবছেন তিনি। কত প্রশস্ত পথ তো অপেক্ষা করে থাকতে পারে! সামান্য চিকিৎসাতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন তো।পারেন! দেয়ারজ ওলওয়েজ আ চান্স।মেয়ের চুলের গন্ধ ভেসে এলো মনে।প্রথম সন্তান।

    একটি পরিপূর্ণ গৃহচিত্র। লম্বা হলটির একপাশে ডাইনিং টেবলে পলি রাওয়া ধোসা নামিয়ে রাখছেন। কফি পার্কোলেটরে কফি। গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।নতুন খবরের কাগজ এসে পড়েছে ব্যালকনিতে ।তার ওপর রোদের আঁকিবুকি।বাচ্চারা বাড়িময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এইরকম বিজ্ঞাপনের ছবি হয়।অথবা ছবির বিজ্ঞাপন ।সে যাই হোক না কেন....
    টমাস অনিল আত্মহত্যার চিন্তা মুলতুবি রাখলেন।
    আপাতত।

    প্রথমদিকে কোনো ওষুধের দোকানেই মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না।যা ছিল, সাপ্লাই আসছিল, সব চেঁছেপুঁছে মানুষ কিনে নিয়েছে।গ্লাভসও নেই হয়ে গেছিল।স্যানিটাইজারের আকাল। তারপর সব কোম্পানিগুলো স্যানিটাইজার বানাতে শুরু করল।ঘরে ঘরে ইউ টিউব দেখে স্যানিটাইজার । মাস্ক এসেছে দোকানে।এন নাইন্টিফাইভ। ঐ নাকি ঠিকঠাক মাস্ক। হেভি ডিমান্ড। তাই বলে হরপ্রীত কাউরের মাস্ক বানানো বন্ধ হয়নি।কাপড়ের।ডাবল লেয়ার। খুব খাটতে পারে ঐ মেয়ে ।যেমন বাইরে, তেমন ঘরে। এখন আর শ্যামার বাড়ি যাবার গল্প নেই।ছোটি মালকিনকে ধরে একটা সেলাই মেশিন জোগাড় করেছে। ঐ বিশাল বাড়িতেই পড়েছিল। খাটের নিচে। অব্যবহৃত বহুকাল।সিঙ্গার সেলাই মেশিন।বড় মালকিন চালাত শুনেছে।দেখেনি কখনো।মেশিনটি এখন হরপ্রীতের ।তেল টেল দিয়ে একেবারে চলনসই করে ।ঘরর ঘরর করে মেশিন চলে।মাস্ক তৈরি হচ্ছে সারারাত।হরপ্রীতের ব্যবসাবুদ্ধি তুখোড় ।ছোটি মালকিনের সঙ্গে থেকে থেকে অনেক কিছু শিখেছে।প্রথমে প্লেন কাপড়ের মাস্ক বানাচ্ছিল।বস্তিতে বস্তিতে সাপ্লাই।এখন ছিটের কাপড় ধরেছে। ম্যাচিং সব।ইক্কত। সম্বলপুরী।বাটিক। ছোটিমালকিনের অনেক ব্লাউজপিস পড়ে থাকে।শাড়ি আর পরে কোথায় । সেইসব অগণিত ব্লাউজপিসের অনেকটাই হরপ্রীত মাস্ক বানিয়েছে।ডিজাইনার মাস্ক।মেয়েরা পছন্দ করছে খুব।হরপ্রীত অর্ডার পাচ্ছে।শ্যামা থাকলে সুবিধা হত এখন খুব।
    দশটার মধ্যে বাড়ির কামকাজ সেরে , ছোটিমালকিনের হোমডেলিভারি নিয়ে বেরিয়ে যায় হরপ্রীত।সাইকেলে ঘোরে বাড়ি বাড়ি ।নিজের ডিজাইনার মাস্ক বিক্রি করে। ডেলিভারিতে বেশির ভাগ শ্যাম্পু, হেয়ার কালার, কন্ডিশনার, সাবান, সার্ফ, বিস্কুট, ম্যাগি এইসব যায় ।সিগারেটও যায় । শ্যামার ছেলেটা শান্ত। ঝামেলা নেই। ওকে ফ্যানাভাত করে খাইয়ে রেখে যায় ।ফিরতে ফিরতে বেলা তিনটে। খাওয়া দাওয়া সেরে মেশিন নিয়ে বসে হরপ্রীত ।ছেলেটাকেও ডেকে নেয়। আজা বেটা। এ বাবলুয়া। চল, আ যা কাম কর। বাবলু হরপ্রীতের হাতে হাতে কাজ করে। সারা সকাল সে এই বিশাল বাড়ির বাগানের আনাচে কানাচে ঘুরেছে। মায়ের জন্য তার কান্না পায় খুব। ঠাকুমার জন্যেও।বাবার ওপর রাগ হয়।বাবা এলেই মা সেন্টার থেকে চলে আসবে, এটাই ভাবে সে।
    ব্যবসায়ী মাড়োয়ারি পরিবারটি বাড়ির মধ্যেই থাকে। কচিৎ বেরোলে গাড়ি বা বাইক। অন্দরমহলের দিকে যাওয়া নিষেধ বাবলুর।সে যায়ও না। যতক্ষণ হরপ্রীতমাসি থাকে, সে খুব নিশ্চিন্তে থাকে। দুপুরবেলাটা সে একটু বই নাড়াচাড়া করে কিন্তু মন বসে না। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুবেলাই। মাসির ফোনে। তাও কান্না পায় ।নিজেদের বাড়িতে যেতে ইচ্ছে করে।কবে ছেড়ে দেবে মাকে?কী যে অসুখ তাও বোঝে না।তবে হরপ্রীতের সঙ্গে মাস্ক বানাতে খুব ভালো লাগে ওর। মাসি যখন কাঁচি দিয়ে কাপড় কাটে, বাবলু টেনে ধরে। ভাঁজ করে।ফিতে কাটে। এখন তো রঙ মেলাতেও শিখে গেছে।বলে, মাসি ,খয়েরির সঙ্গে হলুদ দাও।ভালো লাগবে।বিকেলে হরপ্রীত চালভাজা মাখে।লঙ্কা । চানাচুর।শসাকুচি । আদাকুচি।
    বাবার কি মনেও পড়ে না তাকে? বাবলু ভাবে।মা ঠিক কতদূরে আছে তাও জানে না।নিজেদের বস্তি, ছোট খুপরি দুটো ঘর, পাশের পেয়ারা গাছ, কলতলা, সবকিছুর জন্যে খুব মন ছটফট করে।বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদে।একদিন মাসি টের পেয়ে গেল।
    অন্ধকারে জেগে উঠে বসে থাকল দুজনে। বাগানের পাশে হরপ্রীতের ঘর। হরপ্রীত বলে
    - দেখ, তু ঘর ছোড়কে আয়া।ম্যায়ভি পঞ্জাবমে মেরি ঘর ছোড়কে আয়ি।ম্যায় ক্যা রো রহি হুঁ? বাচ্চা হ্যায় ক্যা আভিভি?রো মত। দেখ মুঝে।হিম্মতসে কাম লেনে কা হ্যায়।হ্যায় না বেটা?

    বাবলু কান্না থামায়। বাপ নেই।ঠাকুমা মরে গেল।মা নেই।ইস্কুল নেই।মাস্টার নেই। খেলা নেই।পাড়া নেই।বাড়ি নেই। সব লে লি করোনা।সব কুছ লে লিয়া।ফুঁপিয়ে কাঁদে আবার।
    সারাদিনের ক্লান্তি হরপ্রীতের ।আর পারে না।পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে।কী করা। কপালে রোনা আছে তো রো লে বেটা। কোই ক্যা করেগা!
    একচিলতে ঘর। বাবলু নেমে জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠাকুমা পুজো করত। মা পুজো করত। বাপ ফুল ছোঁয়াত কপালে।হরপ্রীতের ঘরে বাবাসাবের ছবি।হনুমানজির ছবি।
    বাবলু একমনে ডাকতে থাকে, মা চলে আসুক ভগবান।একবার শুধু মা চলে আসুক। আর কিছু লাগবে না পুজোর সময়ে । কেডস জুতো আর চাইবে না সে।
    হরপ্রীত কাউর বিছানার পড়ে আর ঘুমায় । আম্বালাতে শালের দোকান ছিল তাদের। কার্পেট ভাগেয়রা। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। লম্বা হিলহিলে চেহারা। টাইট করে একটা বেণী বাঁধলেও চুল কোমর ছাপানো। তীক্ষ্ম নাক। দোকান থেকে শাল সাপ্লাই নিতে আসতো কলকাতার ছেলে। মানব কুমার। শ্যামলা। গাঁট্টাগোট্টা । হরপ্রীত দেখতে যতটা তীক্ষ্ম, স্বভাবে তত নয়। মানব কুমারের সঙ্গে ঘর ছাড়তে ছ' মাস সময় মোটে। মানবের বাপ মা মোটে খুশি হয়নি হরপ্রীতকে সংসারে ঢোকানোতে। আবার দুর যা 'ও করেনি। একটা ঘরে সংসার করেছিল হরপ্রীত ।প্রায় দেড় বছর। মানবকুমার দুম করে অ্যাক্সিডেন্টে মরে গেল। হরপ্রীতের আর শ্বশুরঘর করা পোষায়নি। হরেকরকম কাজ জানা মেয়ে ।দু চার জায়গাতে ঠোক্কর খেয়ে এই বাড়িতে কাজ জুটিয়ে নিয়েছে।জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব পারে।এরা খাটায় খুব কিন্তু পয়সা ভালো দেয়।হরপ্রীতের কাছে দু চারটে ইশকের হাতছানি আসে না তাও নয়। হরপ্রীত ঐ দিক আর মাড়ায় না।মানব কুমার মরে যেতে সে ভেবেছিল, ভাগ্যিস ছেলেপুলে হয়নি। আন্ডাবাচ্চা নিয়ে কাজকাম পাওয়া খুব মুশকিল। সাবরেওয়াল পরিবারের বিশাল বাড়ির চত্বরে একটি খুপরি ঘর, দিনভর কাজ, কিছুটা নিজস্ব সময় এবং আত্মরতি - অতিরিক্ত চাহিদা হরপ্রীত রাখে না।তাই সে বিছানায় পড়ে আর ঘুমায় ।
    বাবলুর ওপর তার একটি টান আছে।তাই বলে সে কখনোই ঐ ছেলের বিকল্প মা হয়ে উঠতে চায় না। সে প্রখর বাস্তববাদী। আবেগকে পকেটে রাখে।
    আজকে তার দিল খুশ আছে। স্যানিটাইজার বানানো ট্রেনিং শুরু হবে কাল থেকে।তিন দিনের ট্রেনিং ।ছোটি মালকিন বলেছে, এখন স্যানিটাইজারের বহুত ডিমান্ড। সময়টাকে কাজে লাগানো চাই।টাইম ওয়েস্ট নহি করনা চাহিয়ে। টাইমকো আপনা বনাও। ফায়দা উঠাও। এটাই হরপ্রীতের পলিসি।
    খবর শুনেছে হরপ্রীত। এ বাড়ির বড় হলঘরে মার্বেলের মেঝেতে আলো পিছলে পড়ে।এককোণে বড় একটা টেলিভিশন হরওয়ক্ত চলতেই থাকে। বুড়ি আম্মি বসে বসে মালা জপে বড় একটা ঝুলাতে। কখনো কখনো সিরিয়াল দেখে।কখনো দেখে না।
    হরপ্রীত ফাঁক বুঝে খবরটা ঠিক শুনে নেয়।খবরে বলেছে শ্রমিক ট্রেন আসছে। তার মানে দলে দলে লেবার আসতে থাকবে এখন কলকাতাতে। শস্তার মাস্ক আর স্যানিটাইজার বানাতে পারলে আর কথা নেই।হরপ্রীতের বিজনেস চড়চড় করে উঠবে। টাকা কামানো দরকার এখন।বহোত সারি পয়সা।দু একজন হেল্পার চাই শুধু ।শ্যামা বেরোক সেন্টার থেকে।বাবলু ভি কাম আ সাকতা হ্যয়।স্কুল তো বন্ধ হ্যয় আভি।বাস। ওয়াক্তকা ফায়দা উঠানা চাহিয়ে।

    এবার বৃষ্টি খুব বেশি ।কথায় কথায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামছে। নাগপুরে এসে ট্রাক যখন দলটাকে নামিয়ে দিল, তখন সুখনলালের পেট ব্যথা কমেছে।কিন্তু শরীর আর চলে না।মনে হয়, ট্রাক যেখানে নামালো সেখানেই শুয়ে পড়ে।এখানেও আবার ক্যামেরার ভিড়। ক্লিক।ক্লিক।দিখাও।আপনা পায়ের দিখাও।কাঁহাসে আ রহে হো। কিতনে দিন সে চলতে হো।অগুনতি প্রশ্ন।
    এখানে স্বেচ্ছাসেবির দল খুব সক্রিয় । গুঁড়ো দুধ, চিঁড়ে, গুড় , জল নিয়ে আসছে তারা।
    সুখনলালের শরীরে যদি তাগত থাকতো , তাহলে পায়ের ছবির জন্য এখন সে পয়সা চাইতো। দলের মেয়েদের হাল আরো খারাপ ।বৃষ্টিতে পোশাক ভিজে গেলেও ছাড়াছাড়ির ব্যাপার নেই।সেই সালোয়ার কামিজ আর রাবারের স্যান্ডাল পায়ে।কোলে বাচ্চা। পিঠে বোঁচকা। সঙ্গে আরো দুটো তিনটে বাচ্চা হেঁটে চলেছে।দলের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি নারী।আটান্ন বছর বয়স। বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লা।সেলাইয়ের দক্ষ হাত। কাজ করতো বান্দ্রা ওয়েস্টে সুহানি মার্কেটে। শহরের
    সামান্য দূরে বসে আছে ওরা। এখন অভ্যেস হয়ে গেছে ।জানা হয়ে গেছে।কখন পালাতে হবে পুলিশের লাঠির গুঁতোর ভয়ে।কখনো পুলিশের গাড়িই এগিয়ে দেবে খানিকটা। পুলিশ হো ইয়া মালিক। দুনিয়ার সব লোক সমান হবে না।মেয়েরা তাই বেশি কিছু আশাও করে না।কোলের বাচ্চাগুলো বাঁচলেই হল। সিরাম্মা রাস্তার ওপরেই বসে পড়ে বাচ্চাদের জন্য ছাতু মাখে। সুখনলালকেও দেয় একদলা। গলা শুকিয়ে কাঠে একেবারে।
    ঘনিরাম এসে পাশে বসে।
    - আগর ভাসাইসে টেরেইন পকড় লেতে তো আচ্ছা হোতা।
    - কিঁউ ভাই।
    ঘনিরাম থুতু গিলে গলা ভেজায়।
    - হামলোগ খুদ নিকল আয়ে না। ইস্টিশনমে উওহি লোগ টেরেইনমে উঠনে বনায়েঙ্গে, যিনকো সরকারনে লায়া। সরকারি ছাপ্পা জরুরি হ্যায় টেরেইনমে চড়নেকে লিয়ে।
    - হামকো নেই দেঙ্গে? কাগজের?
    ওপাশ থেকে লক্ষণ বলে ছটফট করে।
    - মুম্বাইমে সোনু সুদ সব লেবারকো আপনে খরচেসে ঘর ভেজ রহে হ্যায় ।
    সুখনলাল সোনু সুদকে হাতজোড় করে নমস্কার করে মনে মনে ।দেওতা আদমি আছে।নাহলে সিনিমাস্টার আদমি নিজের পয়সা দিয়ে লেবারদের ঘরে ফেরত পাঠাবে কেউ? কোনো নেতা মন্ত্রী করেছে?
    শুধু ছাতু খেয়ে খেয়ে অম্বল হয়ে যাচ্ছে।ক্লান্তি ছাড়া শরীরে কোনো বোধ নেই।খুব আশা করে এসেছিল যে নাগপুরে টেরেইন পাবে। শান্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।শরীরে তাগৎ কম। হাঁপ ধরছে।
    ঘনিরামের কথাতে বেকুব হয়ে গেল দলটা।বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লা হাঁপাচ্ছে। ন্যুব্জ শরীর।বয়স অনুপাতে অনেকটাই বেশি বুড়িয়ে যাওয়া । ক্রমাগত চোখের কাজ করতে করতে চোখের আসে পাশে অজস্র বলিরেখা।সবচেয়ে কাহিল হয়েছে। হেঁটে এসেছে এতটা পথ।প্রায় না খেয়ে ।পাঁজরসর্বস্ব শরীর নেতানো।রাস্তার ওপর।হঠাৎ করে এক পশলা বৃষ্টি এসে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছিল সবাইকে।
    এই বৃষ্টিতে ভেজার আলাদা এক জমানা ছিল।শ্যামাকে নিয়ে কত যে ভিজেছে সুখন।একদম হিন্দি সিনিমার হিরো হিরোইন বনে যেত দুজনে।কী সাংঘাতিক জোশ তখন দিল আর দিমাগে।বাঁধনছেঁড়া উল্লাস। টিপটিপ বরসা পানি। সুখন অক্ষয়, শ্যামা রবিনা। হেড মিস্ত্রির সেদিন কাজে যেতে লেট।সেইসব গতজন্মের উথালপাথাল দিন সুখন আর মনে করে না।টেরেইন তাদের নেবে না।এই চিন্তা বজ্রাঘাতের মত নেমে এসে তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে রেখেছে যেন।
    এখন বৃষ্টির শব্দে ভয় লাগছে। পায়ের তলা ঠান্ডা। হিমশীতল হয়ে পড়ে আছে বীরোত্তমার শরীর। বেঁকে বেঁকে যাচ্ছে। মায়ের পেটে ভ্রূণের মত হাঁটু দুটো চিবুকের দিকে উঠে যাচ্ছে আবার নেমে আসছে। ল্যাম্প পোস্টের সামনে বাঁধানো রেলিং দেওয়া তিনকোণা পার্ক। ঠিক তার সামনে হেঁচকি তুলে মরে গেল বীরোত্তমা। সুবেদার হরিনাথ শুক্লার নাতনি। ভারত চীন যুদ্ধ থেকে ফিরে হরিনাথ বড় নাতনির নাম রেখেছিল বীরোত্তমা।বাড়ি বিহার।ছয় ভাই বহেন। মরল মরে গেছে দশ সাল পহলে। ক্যানসার থা। ছেলেমেয়ে নেই। কাঁচাপাকা চুল। পরনে নীল সালোয়ার কামিজ ।আর হাঁটার প্রয়োজন নেই তার।
    বীরোত্তমা কাৎ হয়ে পড়ে আছে নাগপুর শহরে ঢোকার মুখে হাইওয়েতে।মুখ একটু হাঁ হয়ে আছে। চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে জল। দীর্ঘদিন সেলাই করা ক্ষতবিক্ষত আঙুলগুলি শক্ত করে ধরে আছে একটা প্ল্যাস্টিক। যার মধ্যে আছে বীরোত্তমা সুরেন্দ্রনাথ শুক্লার আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড।

    ভালো লাগার মত কিছু আর অবশিষ্ট নেই। মাঝেমাঝেই ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি নামাতে কাপড়জামা কিছুই ছাতে দেওয়া যাচ্ছে না।বাড়ির বারান্দায় একরাশ ভিজে জামাকাপড় সবসময় ঝুলে থাকলে মালবিকার এমনিতেই মেজাজ খারাপ থাকে।খুঁতখুঁত করতে থাকেন। বাবুকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না তিনদিন ধরে।সে নাকি ল্যাবে ব্যস্ত। এমনকী রাজকাজ থাকতে পারে ল্যাবে ভেবে পান না মালবিকা যে ফোন ধরা যায় না।খেতেও তো যাস ক্যান্টিনে। তখন ফোন করতে পারিস।তা না।টেক্সট।এরা কথায় কথায় টেক্সট করে।মালবিকাদের সময় টেক্স্ট মানে ছিল পড়ার বই।পাঠ্যপুস্তক।এখন ফোনে টেক্সট।ফোনে ঘড়ি।ফোনে ছবি।ফোনে ক্লাস।ফোনে অফিস।ছেলেটার সঙ্গে দিনে দুবার কথা না হলে মালবিকা হাঁপিয়ে যান। আর সে ছেলে দ্যাখো।দিব্যি আছে ল্যাপটপ আর ল্যাব নিয়ে । মা' কে টেক্সট করে চলেছে।ভালো আছি।ডোন্ট ওরি। ভীষণ ব্যস্ত।টেক কেয়ার।
    মালবিকার মা যে হসপিটালাইজভ, সেটা পর্যন্ত জানানো হয়নি। টেক্সট করতে পারতেন।কিন্তু ইচ্ছে হয়নি।মুখে বলা আলাদা। এত দূরে ছেলেটা। একা।দিদুনের সঙ্গে ভীষণ অ্যাটাচ্ড।দুম করে কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না।
    এই যে মা'কে দেখতে যাওয়া যাচ্ছে না, এটা সবচেয়ে বড় অসুবিধে হয়ে গেছে মালবিকার।ফোনে খবর পাচ্ছেন।এ যে কী জ্বালা তা বলে বোঝানো যাবে না।তার সঙ্গে দুশ্চিন্তা । মায়ের বয়স পঁচাশি।সুগার আছে। অনেকদিন সুগার থাকার ফলে হার্ট, চোখ দুইই অ্যাফেক্টেড। বাড়িতে চুপচাপ নিজের ঘরেই থাকেন মা। একতলার বড় ঘরটিতে। সবাই ওখানে গিয়েই দেখা করে আসে।এখন মায়ের ঘরটা ফাঁকা। শেষ গেছিলেন তেসরা মার্চ। লাউ দিয়ে মুগ ডাল আর বড়ি দিয়ে মোচাঘন্ট করে নিয়ে গেছিলেন। ভাইবৌ এইসব রান্না করে না তেমন।সাদা মাটা কিছু করে দেয়। মালবিকা উইকএন্ডে যায় শৌখিন কিছু করে।মার্চের মাঝামাঝি থেকে তাও বন্ধ । কী অবস্থায় আছেন হসপিটালে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।মাথামুণ্ডু কিছু ঠিক থাকছে না। সকালে উঠেই একটা দমচাপা উৎকন্ঠা। ঘরটা মুছে ফেলছে ঝাঁট দিয়ে ।অনেকটা সময় লাগছে। হাঁটুতে ব্যথা।কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা।ঘুম থেকে উঠে শরীরে একটা বিশ্রী ভারবোধ থাকে।কাজ করতে করতে কমে। ঘরমোছার ফাঁকে সবজি কেনা।মাছ কেনা।সব বাড়ির ওপরেই।তাও সময় তো দিতে হয়।ত্রিদিব ও মেয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত ।কেউ ফিরেও দেখে না। তারপর একটা বিশ্রী ডিজিনেস থাকে। বারোটা একটার আগে কাটে না। সেটা নিয়েই সমস্ত কাজ মেকানিক্যালি করে যায় মালবিকা ।তার সঙ্গে হট ফ্লাশেজ সামলানো।হঠাত্ সারা শরীর অস্থির করে ঘেমে নেয়ে একসা। এমনিতে ত্রিদিব যথেষ্ট রেসপনসিবল। মোটামুটি কেয়ারিং। কিন্তু এই মেনোপজাল ট্যানট্রামস সামলানোর ব্যাপারে মালবিকা একেবারে একা পড়ে গেছে।ভীষণ দুর্বল লাগে একেকসময়। তাহলে কী বুড়িয়ে যাবার পালা শুরু হল? স্কিন যেন পাল্টাতে শুরু করেছে!স্কুল খোলা থাকলে অনেকটা ফ্রি থাকেন।স্কুলের কলিগদের অনেকেই এই ফেজটা দিয়ে যাচ্ছেন।আশ্চর্য এই যে কারোরই বাড়ির লোকের সঙ্গে এই মেজর ক্রাইসিসটা নিয়ে কোনো কথা হয়না।যা কিছু কথা স্কুলে এসে। এইসময়গুলো সন্জনাকে খুব মিস করছে। কিছুটা জুনিয়র।কিন্তু স্পিরিটটা সাংঘাতিক ।তরতরে মেয়ে ।ওকে সব বলা যায় ।তুড়ি মেরে প্রবলেম সল্ভড।রাখো তো মালবিকাদি। এখন মেনোপজ ইজ নট আ প্রবলেম। ইট ইজ নট ইভন দি এন্ড অব ইউথ। বিন্দাস থাকো। এনজয় ফুড। এনজয় টেনশন ফ্রি সেক্স। গো টু পার্লার ।কুক।রিড।খতম।
    এমন করে বলে যে মালবিকা চার্জড হয়ে যায়।ভালো লাগে। ফোন করবেন নাকি একবার সন্জনাকে?
    টানটান হয়ে স্ট্রেচ করল মালবিকা । সন্জনা বলে। স্ট্রেচ ইওর বডি।অ্যান্ড ইওর স্পিরিটস।ইউ ফিল কুল।
    কিন্তু ফিল কুল হচ্ছে না।অস্থির লাগছে।ঘামছে দরদর করে।
    মা।একমাত্র মা কুড হ্যাভ সলভড দ্য প্রবলেম।পঁচাশিবছরের অভিজ্ঞতা । হাত পা ছেড়ে বসে পড়া যায় যার সামনে। তুমি বলো।আমি আর পারছি না মা।
    কোন বেডে কিভাবে আছে মা? কাপড় ছাড়া খুব বাতিক ছিল।ধবধবে সেই সাদা থান। দিনে তিনবার মা শাড়ি পাল্টাতেন। এখন কী হচ্ছে?
    এইসব ভাবতেই ভয়ানক গা গুলিয়ে উঠছে মালবিকার। তাঁর একতলার , দোতলার প্রতিটি ঘরের জানালার এক্সটেনশনে ছোট ছোট টবে গাছের ম্লান হয়ে আছে।বার্ড ফিডারে দানা নেই।কোনো শৌখিন রান্নাতে মন বসছে না।কোনোমতে পাঁউরুটি মাখন দিয়ে ব্রেকফাস্ট ধরে দিচ্ছেন। ত্রিদিব নিজে ডিমের কিছু বানিয়ে নেন সবার জন্য।
    কোভিডের সময় বার বার ডাক্তাররা বলছেন প্রোটিন ইজ মাস্ট।ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে হবে ।
    লকডাউনের প্রথমদিকে কোমর বেঁধে বাড়িঘর পরিস্কার করছিল মালবিকা ।এখন সব বন্ধ ।কোনোমতে মাছের ঝোল ভাত নামিয়ে শুয়ে থাকছেন।অসুস্থ প্রিয়জনের কাছে থাকতে না পারার যন্ত্রণা বড় সাংঘাতিক ।মালবিকা ভেতরে ভেতরে ডুকরে উঠছে। বারবার মনে হচ্ছে কেন তিনি রোজ মা' কে ফোন করতেন না! কেন একদিন বাদে একদিন! ছেলেকে তো রোজ দু'বেলা ফোন করেন!মায়ের বেলা একদিন বাদ কেন! তাহলে কী সত্যি স্নেহ নিম্নগামী? অথচ বাবু তো দিব্যি সেল্ফ সাফিশিয়েন্ট! প্রয়োজন মায়ের বেশি। ব্রত ব্রত' র বউ অবশ্য খুবই যত্নে রাখে। কিন্তু তাও।মালবিকা তো মেয়ে । সে যদি আগের দিন ফোন করত! নিশ্চয়ই মা বলতেন শরীর ম্যাজম্যাজ করছে!
    - বললে তুমি কী করতে মা? কুড ইউ স্টপ দি ইনফেকশন?
    মালবিকা অদ্ভূত শৃন্য দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। কী বলে এরা!
    - একবার দেখে আসতাম।
    - অ্যান্ড পসিবলি গেট ইনফেক্টেড। মা।প্লিজ ট্রাই টু বি সেনসিবল। ইটস লকডাউন। এখন কেউ কারু বাড়িতে যাওয়া ঠিক নয়।নট অ্যালাউড ইভন। ভাইরাস ইনফেকশন। নট ফেটাল।বাট ইনফেকশাস।ডু ইউ গেট ইট?
    মালবিকার শরীর ছেড়ে দেয়।সে এদের চিনতে পারে না।এরা কারা? কী ভাষায় কথা বলে? মা কোথায়? মা? বাবু?
    মায়ের ঘরে খাট খালি কেন? চাদর পাল্টে দেয় নি কেউ?
    ত্রিদিব কফি বানাচ্ছিলেন। মেয়ে, বাবা চোখাচোখি হল।
    এখন কী মালবিকাকে বলা ঠিক হবে? ভেনটিলেশনে আছেন , আশির ওপরে বয়স।শী ইজ সিংকিং। ব্রতর বন্ধু জানিয়েছে , ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই।

    ও চুলে শ্যাম্পু করেছে আজ।অবাধ্য রেশমসদৃশ চুল মুখে উড়ে উড়ে আসে।তাই চুলগুলোকে উঁচু করে বেঁধে রেখেছে।একটা লালচে মেরুন আভা চুলে।বারগ্যান্ডি কালার করালে যেমন হয়।
    হাইলাইট ডান দিকে।সাদা সোনালী স্ট্রিক।প্রথম যেবার হাইলাইট করে খড়গপুর থেকে বাড়িতে এসেছিল, মা ওয়জ ডিপলি ওফেন্ডেড।
    - কী বিশ্রী চুলের দশা করেছো টুপুর। আই যাস্ট ক্যান্ট ইম্যাজিন। হরিবল!"
    ফিরনির ওপর কেশর আর বাদাম ছড়াতে ছড়াতে বলেছিল মা। শী ওয়জ ওয়েরিং আ সাউথ কটন।ম্যাজেন্টা বডিতে ব্লু পাড়। কিছু কিছু দৃশ্য ছবির মত মনের মধ্যে গেঁথে থাকে।মা ওয়জ টেরিফায়েড।
    শ্যামাদি ঘর মুছছিল। সে এসে দাঁড়িয়েছিল। পিঠে ব্যাকপ্যাক।বার্মুডা আর টি।সামনে সাদা সোনালি হাইলাইট করা চুল। মা রেগে গেলে টুপুর বলে। অন্য সময় টুম্পাই।টুম্পুশ। টুম্পানি। সে মাথা ঝাঁকিয়ে এই আদুরেপনাগুলো ফেলে দেয় ।এসব আদিখ্যেতার গায়ে আলকাতরা ঢেলে সে বলে "ফাক"।
    বলে।মানে বলতো।
    মা মুখ কালো করে সরে যেতো।

    মাছের ঝোলের রঙটা ফ্যাকাশে। কেমন গা গুলোচ্ছে দেখেই ।মা যখন করে একটা দারুণ রঙ আসে।সে কিছুতেই পারছে না।বাবা এসে দু' বার উঁকি মেরে গেল।হি টু ডাজন'ট নো দ্য ট্রিক টু মেক ইট রেড।
    আশ্চর্য ।
    রোজ খায় তারা।কিন্তু ট্রিকটা জানে না।
    ফোনটা কাঁধ আর মাথা দিয়ে চেপে ধরে মাছগুলো উল্টে দিল।
    - তুই রান্না করছিস?
    - কেন? তোর অসুবিধে হচ্ছে?
    - না।বাট ইট সিমস ইনক্রেডিবল।
    - কেন? ফালতু বকবি না।রান্না একটা বেসিক স্কিল। সবার জানা উচিত ।আমিও জানি।যাস্ট একটা প্রবলেম।
    - যেমন?
    - এই যে মাছের ঝোলটা লাল হচ্ছে না।কালার আসছে না। ফ্যাকাশে লাগছে।
    ওপাশে জাহির খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসলো। ইলিনা বেগমের ছেলে ছোটবেলা থেকে রন্ধনশিল্পী মায়ের সঙ্গে থেকে থেকে হ্যাজ বিকাম অ্যান এক্সপার্ট।
    - শোন ।চিনি দে। চিনি দিয়ে মশলা কষলে রঙ হয়। ও তুই তো মাছ দিয়ে দিয়েছিস। তাহলে এক কাজ কর।খুঁজেপেতে দ্যাখ কাশ্মিরী মির্চ আছে কিনা। গরম জলে একচামচ গুলে দিয়ে দে।চিনতে পারবি তো?
    - শাটাপ। গো টু হেল।
    জাহির আরো ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে হাসতে থাকে।
    ওর কাঁধে মাথায় চেপে ধরা ফোন।প্রাণপণে কাশ্মীরী মির্চ খুঁজছে ডানহাতে।গ্যাস কমিয়ে দিয়েছে।
    - হ্যাং উইদ ইওর মাছের ঝোল। শোন, অ্যাপ রেজিসেট্রশনের জন্য অনলাইন অ্যাপ্লাই করে দিয়েছি।নাও মেধা ইজ মেকিং দ্য আউটলাইন অব দ্য কোর্স।তুই ওকে হেল্প করছিস না কেন?
    - শিট। দিদুন ভেন্টিলেশনে ।খুব খারাপ অবস্থা ।মা একদম থম মেরে গেছে।অনেক কাজ করতে হচ্ছে।
    জাহির কয়েকদিন ফোন করতে পারেনি।রেজিস্ট্রেশন , ডাউনলোড নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
    - ফোন করিস নি কেন? কোথায় আছেন?
    - মনে ছিল না ফোন করার কথা। এভরিথিং হ্যাজ গন টপসিটার্ভি।
    - শী ইজ এইটি আপ?
    - ইয়াপ। এক চামচ কাশ্মিরী মির্চ পড়লো ঝোলে। জলে না গুলেই।ধৈর্য্য নেই।
    - শোন।তোদের এই বালের অ্যাপ আর অনলাইন এজুকেশনে আমার কোনো ইন্টেরেস্ট নেই।
    - কেন?আর শোন।ঐ থার্ড ক্লাস ওয়েবসিরিজের নেটিঘেটিদের মত খিস্তি দিবি না তো।জঘন্য অভ্যেস।
    - তুই জানলি কী করে? দেখিস?
    - চাল টিপলে ভাত বোঝা যায় । যাকগে। কাজটা শুরু কর। মন ঠিক থাকবে।
    - আমার মন ঠিক আছে। মা বিগড়ে গেছে।কাল মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।প্রেশার লো।অ্যানিমিক।
    - এই বয়সে ম্যাক্সিমাম মহিলার তাই হয়। ঠিক হয়ে যাবে।
    - শী ইজ ট্রমাটাইজড।
    মাছের ঝোল নামিয়ে ঢেকে রাখছে একহাতে।
    চিমনি বন্ধ করে নিজের ঘরে এল। ফ্যান ফুলস্পিড। ঘেমে জল হয়ে গেছে।
    - তোরা কতজনকে দিবি বলতো অনলাইন কোর্স? এদেশে লোক না খেয়ে মরছে। চাকরি চলে যাচ্ছে। তোমরা শালা অনলাইন কোর্স করছো।
    জাহির সিরিয়াস এবার। ফোনের ওপারেও বোঝা যায় ।চুপ
    - জানিস জে ইউ রিফিউজ করেছে। নো ডিজিটাল ডিসক্রিমিনিশন। কটা ছেলেমেয়েদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আছে?
    - আছে।তুই ঐ বোকা বোকা বুকনিগুলো থামা। এইমুহূর্তে অনলাইন এজুকেশন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিছু তো হবে।কিছু কেন।অনেকটাই হবে।অ্যাটলিস্ট ইন হায়ার এজুকেশন। মানছি প্রাইমারিতে বা মাধ্যমিকে চলে না।তাছাড়া আমরা তো কোর্স করাবো। সার্টিফিকেট পাবে অ্যাট দি এন্ড। ওয়েল নোন রিসোর্স পার্সনস থাকবেন। স্টুডেন্টস উইল বি বেনেফিটেড।
    কিছু তো কাজে লাগাতে পারে।
    - এই সিচুয়েশনে? কাজে লাগবে?
    - লাগবে। এম্টায়ার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ইজ চেন্জিং।দে ক্যান এনগেজ দেমসেল্ভস আফটার দ্য কোর্স।
    ও একটা শ্বাস ফেলে ঘরটা দেখে।টিকটিকি এককোণে।ঘুমাচ্ছে কী? সাড়াশব্দ নেই।জানালার বাইরে ক্রোটনটা ফনফন করে বেড়ে উঠেছে।
    - ঘুমালি নাকি?
    - নাহ্। ভাবছি।
    - ভাবিস না।কাজ কর। ধর যদি এই গোটা কোভিড এপিসোডটা একটা গ্লোবাল ক্রাইসিস, ফেক হয়?
    - মানে?
    - মানে ভারতবর্ষে প্রতিবছর এমনিতেই লোক মারা যায় । নিউমোনিয়ায় পাঁচ লাখ লোক মরে।প্রতি বছর। তো কোভিড নিয়ে এত লকডাউন হ্যানাতানার কী আছে? সুইডেন লকডাউন করেনি।একুশটা দেশ করেনি।তারা কী মরে গেছে সব?
    - কী ফালতু বলছিস?
    - ফালতু না ম্যাম। পিপিই কিট বেচে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করলো চিন।এমনিতে ওদের গুগল নেই।ফেসবুক নেই । করোনার সব ছবিফবি লিক হল কেমন করে? ইটস কন্সপিরেসি ।হতেই পারে।
    - কে তোর মাথায় ঢোকালো এই শিটগুলো?
    - আরে শালা। এমনি এমনি নীতা আম্বানি বলছে ঘরে ঘরে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেবে? ফায়দা ছাড়া?
    তো আমরাও ঘরে ঘরে অনলাইন কোর্স পৌঁছাবো।
    - পৌঁছাস। এখন ফুটে যা।
    - রাখছি। কোর্সটা তৈরি কর।মানে আউটলাইন।অ্যাপ্রুভ করাতে সময় লাগবে ।
    - তোর কোনো কাজ নেই ।না?
    ও খুব ভালো করে জানে জাহির কী পরিমানে ব্যস্ত । ওরা কয়েকজন মিলে একটা কম্যুনিটি কিচেন খুলেছে মাইগ্রান্ট লেবারদের জন্য।ভাত।ডাল।সবজি।প্যাকেটে জল। পনেরো টাকা। ভাত।ভাল।সবজি।ডিম। কুড়ি। বাজারহাট সব করতে হয়। ইব্রাহিম আঙ্কল মারা যাবার পর বাড়িতে ইলিনা আন্টি আর জাহির। একটা দশাসই অ্যালসেশিয়ান। নন্তু। তার পেছনে খাটনি আছে। বাড়ির বাজারহাট ।আন্টির শরীর খুব ভালো নয়।জাহির বেশ চাপে থাকে।
    বলল। সব জেনেশুনেই বলল।এবং জাহির ফোন কট করে কাটল।হয়তো আবার রাতে করবে।বা কাল।বা পরশু।

    -ইজ ইট ফেক ইরফান? দ্য হোল প্যান্ডেমিক এপিসোড। ইজ ইট ট্রু দ্যাট ইট ইজ গ্লোবাল কন্সপিরেসি?এটা সম্ভব?
    আজ আকাশে ঘন মেঘ।বৃষ্টি নামেনি এখনো।আসবে আসবে করছে।মেঘ ডাকছে ।দিদুন বলতো, যে মেঘ গর্জায় , সে মেঘ বর্ষায় না।

    ইরফান আজ একটা ঘন বেগুনি শার্ট পরেছেন।গলায় একটা স্কার্ফ ।করিব করিব সিঙ্গলে যেমন চুল এলোমেলো ছিল, তেমন চুল।ইজি চেয়ারে ক্যাজুয়াল বসে।
    - দেখো বিজনেস তো বনানা হ্যায়। লকডাউনের আগেই রিলায়েন্স, মিষ্টি কার্লোর হাতে এন নাইন্টিফাইভ মাস্ক বানানোর অটোম্যাটিক মেশিন এসে গেলো। ইয়ে তো শোচনে কা বাত হ্যায়। ক্যা?
    - ইউ আর সাউন্ডিং লাইক জাহির।
    - জাহির কওন?
    - মাই ফ্রেইন্ড।
    - বয়ফ্রেইন্ড?
    - নো।যাস্ট ফ্রেইন্ড। বেস্ট ফ্রেইন্ড।
    ইরফানের দীর্ঘ স্লিম শরীর চেয়ারে শয়ান।মাথা হাতের পেছনে।
    - ইয়ে ভাইরাস মিউটেট করতা হ্যায়। তো আদমি ক্যা করে? বোলো?
    ও হেসে ফেলেছে ।
    - মিউটেট করে?
    - এক্জাক্টলি ।আদমি কো ভি মিউটেট করনা পড়েগা। যো জিতা হ্যায় ওহি সিকান্দর। ভাইরাস কো বোলো, তুমভি চলো।হামভি চলো।
    এরপর আকাশে দুন্দুভি বেজে ওঠে। পুষ্পবৃষ্টি হয় না। কিন্তু অশ্রুত গান বাজে।
    নিষ্প্রাণ বাড়িতে একঘরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকা মালবিকা।আরেকঘরে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নিয়ে উপুর ত্রিদিব।
    কিন্তু ছাতে অনন্ত রঙ্গশালা। বিদ্যুত জমকালো ।চমকালে দেখা যায় আপনমনে নেচে যাচ্ছে উড়ো খুড়ো চুল বাঁধা মেয়ে । আর ইরফান।তুমভি চলো।হামভি চলে। আকাশ থেকে কী দু এক ফোঁটা বর্ষণ হল?
    মাধবীলতার ফাঁক দিয়ে দেখলো এক বিমর্ষ টিকটিকি। তার কী ঈর্ষা হল ?

    সুস্থ অবস্থায় ঘরবন্দি থাকা আর অসুস্থ শরীরে ঘরবন্দি থাকার মধ্যে আসমান জমিন ফারাক। দেবরূপ অসম্ভব দুর্বল। পেট ঠিক হয়নি পুরোপুরি। জ্বরটা গেছে।
    বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে একগাদা বালিশের ওপর। অদিতি ল্যাপটপ , বইপত্র, পেন, পেন্সিল, নোটবুক বিছানাতেই, ওর হাতের কাছে দিয়ে গেছে। মাথার কাছে ছোট টেবিলে একটা চেক টেবল ক্লথ। এটা অদিতির কাজ। সে কখনো কিছু পাতেনিতো টেবলে।মভ চেকস অন হোয়াইট। ফ্লাস্কে গরম জল।ক্যাসারোলে উপমা টাইপের কিছু একটা বানিয়ে রেখে গেছে। পেঁয়াজ, কারিপাতা, চীনে বাদাম কুচি দেখা যাচ্ছে। ও এক চামচ মুখে তুলে আবার ঢেকে রেখে দিল। কোনো স্বাদ নেই মুখে এখনো।কোভিড নাইন্টিনের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। স্বাদ ও গন্ধবোধ চলে যাবে।
    নিশান্ত ঠাকরে সকালে এসে আগাপাশতলা পরীক্ষা করে গেছে। ইট ওয়জ আ মাইল্ড অ্যাটাক অব কোভিড।জ্বরটা এসেছিল মেইনলি শক থেকে। টেরিবল শক।নাউ দ্যাট ইজ ওভার, নাথিং টু ওরি। লাংস আর ওকে। ভয়ের কিছু নেই। যাস্ট টাইম ইজ নিডেড টু হিল।
    ও নিঃশ্বাস ফেলে একটু বেশি হেলান দিল।গায়ে হাত পায়ে ব্যথা আছে।তবে সহনীয় ।
    বাড়িতে একটা ফোন করা খুব দরকার। অদিতি হ্যাজ ডান আ গ্রেট জব। মা' কে বেশ বুদ্ধি করে সামলে নিয়েছে। বাবুর নামে টেক্সট করেছে।বলেছে ল্যাবে খুব ব্যস্ত।তারপর ফোন ফ্লাইট মোডে রেখে দিয়েছে। নাথিং কুড বি ওয়াইজার দ্যান দিস।
    কিন্তু এখন যোগাযোগ করলে মা টের পেয়ে যাবে।মায়েরা টের পায়।মা ঠিক বুঝে যেত বাবুর কখন খিদে পাচ্ছে।কখন বাবুর কপাল ব্যথা করছে।
    অদিতি শুনে খুব হেসেছিল।
    গশ! ইওর মম ফিলস ওয়েন ইউ আর হাংগ্রি!
    এখন কথা বললে মা গলার স্বরে দুর্বলতা ধরে ফেলবেই।এ বেলা থাক। ও বেলা একটু ভালো লাগলে দেখা যাবে।
    ফোন ফ্লাইট মোডে যায় ।
    এই ঘরটির মধ্যে একটা মায়া আছে। পূবদিকে লম্বাটে ব্যালকনি ওর বিছানায় শুয়ে দেখা যায় । বিছানার পায়ের দিকে একটা লম্বা বেতের সোফা।অদিতি বেশকিছু লাল হলুদ কুশন টুশন ফেলে রেখে ওটাকে রঙচঙে বানিয়েছে।স্টাডি টেবলটা দেওয়াল ঘেসে। একটা হলদেটে টেবল ক্লথ ।বড় একটা ক্লক।
    ও মাথার পেছনে হাত রেখে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের ঘরটি দেখছিল অনাবাসীর মত।
    অদিতি গুছিয়ে রেখেছে স্টাডি টেবলটা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে।বইপত্র সাজিয়ে রাখা।ডেস্কটপটার ওপর ধুলো অদৃশ্য।
    জ্বরের ঘোরে ও কিচেন টেবলটা দেখতে পেত।মিক্সিতে কিছু শব্দ টের পেতো।প্রেশার কুকারের হুইসিল। লাল একটা কনটেইনার। ওপেন কিচেনে যেহেতু , সমস্ত নড়াচড়া ও নিস্তব্ধতা অচেতনে অধীত। শুধু কোনো গন্ধ বোধ নেই। খিদে নেই।অথচ খাওয়া দরকার। দুর্বলতা কাটবে না আদারওয়াইজ । কী একটা উপমা টাইপের বানিয়ে রেখে গেছে।বিরক্ত লাগছে। মুখে কোনো স্বাদ নেই।কিছু টক বা ঝাল চাই।কাটলেট খেতে ইচ্ছে করছে।
    দুপুর। এখন ফোনে ফ্লাইট মোড তুলে দেওয়া যায় ।মা এ সময় ব্যস্ত থাকে।ফোন করবে না।
    ফ্লাইট মোড তোলার এক মিনিটের মধ্যে ফোন।মকরন্দ যোশি।ভীষণ চিন্তিত গলা।
    - হাউ আর ইউ? এভরিথিং ওকে?
    - অ্যাবসলিউটলি।
    - কুডন'ট গেট ইউ ফর লাস্ট ফিউ ডেজ।
    - ইয়া। যাস্ট স্লেপ্ট।
    - টু হেল উইদ লকডাউন । ইটস কন্সপিরেসি।
    এটা মকরন্দের থিওরি।গোটা প্যান্ডেমিকটা নাকী একটা কন্সপিরেসি।
    এখন তর্ক করার মত জোর নেই শরীরে। ও শুনতে লাগল।ইভন তাতেও ক্লান্তি।মকরন্দ বকে চলেছে।
    -ইউ নো। ঐ যে লোকটা।হংকং এর ফিজিশিয়ান কওক ইওন উওভেন। ও তো গেছিল হুয়ানন ওয়াইল্ড লাইফ মার্কেটে।কোনো এভিডেন্স পায়নি।জানো? আর এক হোস্ট তো চাহিয়ে আইডেন্টিফাই করনেকে লিয়ে। কৌন সা হোস্ট ভাইরাস দে রহা হ্যায় হিউমান বডিমে। বাট নো।মার্কেট ওয়জ ফাউন্ড ক্লোজড।
    টেল মি।কন্সপিরেসি না হলে এটা কেন হবে?অ্যান্ড হোয়াটস দ্য ইউজ অব দিস ব্লাডি লকডাউন?
    - ডোন্নো।
    ওর ক্লান্ত লাগছে। কথা আসছে না। ভেতর থেকে টানছে কিছু। কাশি ।অদিতি বালিশের তলায় একটা ছোট কৌটোতে লবঙ্গ, এলাচ।আস
    রেখে গেছে। কী মেটিকুলাস এই মেয়ে।
    ও আদা কুচি মুখে দিল।রোদ পড়ে কিচেনটেবলটা দারুণ দেখাচ্ছে। কমলা রঙের পট। কালো গ্লাসআভেন। তার কোভিড নাইন্টিন পজিটিভ ?পিপল আর ডাইং নট বিকজ অব দ্য ভাইরাস, বাট বিকজ অব পভার্টি।
    কিছু মনে থাকছে না।
    মকরন্দ বকে যাচ্ছে।
    - ডি ওয়েনলিয়াঙগ হ্যাড সেইড। প্রেডিকটেড। ও চিইনিজ মেডিকোকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল তো।নাইন্টিনের ডিসেম্বরের এন্ডে ও সাবধান করেছিল।নোবডি লিসনড টু হিম।
    - সো?
    - ক্যান্ট ইউ সি দ্য এম্টায়ার পিকচার? ইট ওয়জ কনট্র্ইভড।
    প্রফেসর যোশী মারা যাবার পর মকরন্দ খুব টেন্সড হয়ে আছে।কথা বলছে বেশি।
    - ছেড়ে দে।আসল হচ্ছে ইন্ডিয়া শুভ হ্যাভ স্টপড ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটস ইন মার্চ।সেটা তো করল না। ঝাঁকে ঝাঁকে লোক শরীরে ভাইরাস নিয়ে চলে এলো। নাউ দ্য পুওর উইল ডাই।
    ঘুমে শরীর জড়িয়ে আসছে । ও ফোন রাখার আগে ফোনটা বিছানায় পড়ে গেল। স্লিপ করে নেমে ঘুমাচ্ছ।
    ফোন বাজছে আবার। চোখ খুলতে কষ্ট। কানে নিল। একটা তীব্র মিষ্টি গলা।কিন্তু প্রচন্ড টেন্সড। ভীত। টেরিফায়েড।

    মাঝেমাঝে ঝড় আসবে জানা থাকে।নেওয়া থাকে সমস্তরকম সতর্কতা। দরজা জানালা বন্ধ থাকে।ছাত থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয় আধশুকনো কাপড়।রাস্তায় লোকজন থাকে না।ছোট দোকানপাট ঝাঁপ ফেলে দেয়।
    তবু।ঝড় যখন আসে , তার নিজের মত করেই আসে।
    বন্ধ জানালা টেনে খুলে দেয়।

    - দাদা। দাদা।মা তোকে ফোনে পাচ্ছে না।শী ইজ ভেরি আপসেট।টেন্সড।
    - দাদা।কথা বলছিস না কেন? শোন।দাদা।দিদুন হ্যাজ এক্সপায়ার্ড। শুনতে পাচ্ছিস? দিদুন নেই।
    তোকে ফোনে কেউ পাচ্ছিল না।
    আজ ভোরে। তুই কথা বলছিস না কেন? দাদা?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৮ আগস্ট ২০২০ | ৩০৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • π | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৫:৩১96059
  • এটা খুব ভাল লাগছে!
  • | ০৮ আগস্ট ২০২০ ১৬:২১96060
  • এটার জন্য অপেক্ষায় থাকি। বড় দেরী করে করে আসে।
  • পাঠক | 213.165.184.92 | ০৯ আগস্ট ২০২০ ০৪:৫৮96074
  • ভাল হচ্ছে কিন্তু উপন্যাস হিসাবে খুব একটা ভাল হচ্ছে না। চরিত্রগুলোয় যথেষ্ট লেয়ার খুঁজে পাচ্ছি না।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন