এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • রাজরক্ত (রহস্য গল্প) : ১৭শ পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৫১ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮
    এই আচমকা বাম্পার যেন কুমারসাহেবের হেলমেট ছুঁয়ে গেল। উনি ডাক করার সময় পেলেন না। ক্রুদ্ধ চোখে কোসলে স্যারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে কেটে কেটে বললেন — তার মানে আপনি ওই ডাইনি দুটোর কথা বিশ্বাস করছেন?

    -- ভুল করছেন, ওঁদের স্টেটমেন্টের ভেরিফিকেশন করেছে আপনাদের বৃদ্ধ সেবক হরিরাম। তখন ও যুবরাজ সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আরেকটি কথা, ওরা তো জানত না যে কবে কোথায় ছিন্নমস্তা দেবীর পুজো হবে, কেন হবে। এটাও জানত না যে যুবরাজ সেখানে ট্রেনে করে যাবেন বা গেলে কোন ট্রেনে কোন কোচে? ওরা তো আপনাদের আমন্ত্রণে এসেছিল। ট্রেনের টিকিটও আপনারাই কেটেছেন, যুবরাজের সঙ্গে একই ট্রেনে, একই কোচে। কেন?

    -- এটা যুবরাজ ভাইয়াই বলতে পারতেন। কিন্তু এখন — এই সব কথার মানে কী?

    -- মানে আছে বইকি! দেখুন, শান্তিরামকে দিয়ে আপনি টিকিট রিজার্ভ করিয়েছিলেন, নিজেই বলেছিলেন। তাতে নাম দিয়েছিলেন — বীরেন্দ্রপ্রতাপ। ওদের টিকিটও তাহলে আপনিই করিয়েছিলেন? বীরেন্দ্রপাল তো জানতেনই না যে ওই দুইবোন আমন্ত্রিত। সেকথা উনি সৌরভের সামনে ট্রেনে বোনেদের মুখের উপর বলে দিয়েছিলেন। এবার একটা মজা দেখুন।

    ওনার ইশারায় আমি একটা ফাইলের মধ্যে ফ্ল্যাগ লাগিয়ে এগিয়ে দিই। উনি চোখ কুঁচকে সেটা দেখে বলতে শুরু করেন।

    -- এই যে, বড় বোন শৈবলিনী নেমন্তন্ন চিঠি পেয়েছিলেন ২৩শে মার্চ। পোস্ট অফিসের ছাপ দেখে স্পষ্ট হচ্ছে যে ওই চিঠি গত ২১শে মার্চ বিলাসপুরের গোলবাজার থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। চিঠির সঙ্গে ছিল ট্রেনের টিকিট, সেটা কাটা হয়েছিল ২১শে মার্চ, তারপর চিঠির সঙ্গে স্টেপল করে পোস্ট করা হয়েছিল। তার মানে একই ব্যক্তি চিঠি ও টিকিট পাঠানোর কাজটা করেছিল, সেই ব্যক্তি শান্তিরাম ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। কারণ আপনি বলেছিলেন যে শান্তিরামকে দিয়ে যুবরাজ সাহেবের জন্যে বীরেন্দ্রপ্রতাপ নামে টিকিট বুক করার নির্দেশ আপনারই ছিল। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি যে ‘যুবরাজ বীরেন্দ্রপ্রতাপ’ নাম দিয়ে দুই বোনেদের আমন্ত্রণ লিপি পাঠানোর ছকটাও আপনারই। কারণ আপনিই জানতেন যে ওঁরা বীরেন্দ্রপ্রতাপকে জানেন, বীরেন্দ্রপালকে নয়। ওঁর নামে চিঠি পাঠালে ওঁরা আসবেন না। আপনি ছাড়া দুইবোনের বর্তমান ঠিকানা কে জানতে পারে? সোজা কথা, আপনারা দুই ভাই ছাড়া বোম্বাগড় এস্টেটে ওদের নিয়ে কার কী মাথাব্যথা?

    -- আমার কী মাথাব্যথা?

    -- সেটাই তো জানতে চাইছি। বীরেন্দ্রপাল পড়েছেন রাজকুমার কলেজ, রায়পুরে। আপনি পড়েছেন শান্তিনিকেতনে। তাহলে শান্তিনিকেতনের কোন অধ্যাপকের দুই কন্যাকে নিয়ে মাথাব্যথা কার হবে? আচ্ছা, রাণীসাহেবা, আপনাকে একটা রিকোয়েস্ট বা আর্জি বলতে পারেন। কুমারসাহেবের ফেবারিট পারফিউম কী? মানে উনি সাধারণতঃ কোনটা ব্যবহার করেন?

    -- এটা কী অসভ্যতা? তুমি এর জবাব দেবে না। ম্যায় মনা কর রহা হুঁ। আমি মানা করছি। আর আপনারা এবার উঠুন, অনেক হয়েছে। আর নয়। দাদার খুনের কোন কিনারা হল না। যত আষাঢ়ে গল্প আর ফালতু কোশ্চেন। এসপি সাব, আপনার এই কনসালট্যান্টকে এখান থেকে নিয়ে যান। আমাদের কাজ করতে দিন।

    এসপি শ্রীবাস্তব কুমারসাহেবকে অগ্রাহ্য করে ইন্দ্রকুমারীকে বললেন — প্লীজ, এটা জরুরি। উনি জবাব দিতে মানা করেছেন। আপনি একটি কাগজের টুকরোয় শুধু এসেন্সের নামটা লিখে দিন।

    ইন্দ্রকুমারী কিছু ভাবলেন। তারপর সামনে রাখা প্যাড থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে তাতে কিছু লিখে এসপি সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন। উনি সেটা দেখে মাথা নেড়ে আমার দিকে ইশারা করায় স্যার আমি ফাইল থেকে একটা শীট বের করে এগিয়ে দিলাম। উনি একবার দেখে নিয়ে বললেন — রাণীসাহেবা, আপনি লিখেছেন ‘ক্যালভিন ক্লাইনের অবসেশন’।

    শুনে আশ্চর্য হবেন অভিযুক্ত ছোটবোন কুন্দনন্দিনী পরশু একটি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। তাতে বলছেন আজ থেকে তের বছর আগে শান্তিনিকেতনে কেমিস্ট্রির মেধাবী ছাত্র বীরেন্দ্রপ্রতাপের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কোন রাজঘরাণার শৌখিন হ্যান্ডসাম ছেলে। ও গায়ে মাখত একটি দামি বিদেশি এসেন্স। নাম বলেছিল ‘ক্যালভিন ক্লাইনের অবসেশন’। শান্তিনিকেতনে তখন বিদেশি পারফিউম, তায় অমন দামি, কেউ মাখত না। আমার গন্ধটা খুব ভাল লাগত। বহু বহু বছর পর সেই গন্ধ আবার নাকে ঝাপটার মত লাগল যখন ২৭ তারিখ রাতে যুবরাজ নিহত হওয়ার পর উনি আমাকে পাকড়ো পাকড়ো করে জাপ্টে ধরেছিলেন।

    -- এখনও কি অস্বীকার করবেন যে আপনি ষড়যন্ত্র করে দুইবোনকে চিঠি লিখে ট্রেনের টিকিট গছিয়ে ছিন্নমস্তা মন্দিরে পুজোর রাতে ডেকে আনেন নি?

    -- ষড়যন্ত্রটা কী?

    কুমারসাহেবের গলা হিমশীতল। ইন্দ্রকুমারী টেবিলের উপর একটি কাটগ্লাসের ফুলদানির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

    -- সেটাই তো বোঝার চেষ্টা করছি।

    -- যেদিন বুঝতে পারবেন সেদিন আবার আসবেন। এখন আপনারা যান, এসপি সাহেব আপনিও। আমাদের পারিবারিক কাজগুলো করতে দিন। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।

    উঠে দাঁড়িয়েছেন শ্রীবাস্তব। বুক টান করে দাঁড়ানোয় ওনার হাইট যেন বেড়ে গেছে। মুখের অমায়িক হাসিটি উধাও। চোয়ালের হাড় শক্ত।

    -- দ্যাটস এনাফ মিঃ বীরেন্দ্রপ্রতাপ পৃথ্বীপাল সিং। যু হ্যাভ কমপেল্ড আস টু প্লে টাফ। ওয়েল, মিঃ কোসলে, প্লীজ প্রসীড!

    -- কুমারসাহেব, আপনার ভাবীজি, মানে যুবরাজ সাহেবের বিধবা দেবেন্দ্রকুমারীজি কেন আসেন নি এখনও?

    -- বলেছি তো, রাজস্থানের আলোয়ারে আছেন। খবর গেছে, দু’একদিনের মধ্যে এসে পড়বেন।

    আমি এবার ফাইল থেকে আরেকটি শীট এগিয়ে দিই। সেটার দিকে একনজর তাকিয়ে স্যার বললেন — কিন্তু এসপি অফিস আলোয়ার ক’দিন আগেই জানিয়েছে যে উনি ওখানে নেই। এবং উনি অনেক আগে থেকেই বিলাসপুরে আছেন।

    আমি চমকে উঠলাম। শিপ্রা সাইনির সামনে রাখা জলের গেলাস উলটে গেছে। কিন্তু সেদিকে কারও নজর নেই।

    স্যার বিড়বিড় করছেন — তার মানে উনি এখানেই আছেন! কে তিনি?

    আমি উঠে যাই, প্যাসেজের এক কোণে পুলিস পাহারায় বেঞ্চিতে বসে থাকা হরিরামকে পিঠে হাত দিয়ে হালকা চাপ দিতে দিতে ভেতরের হলে নিয়ে আসি। ও এসে ঘাবড়ে গিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। কুমারসাহেবের ভ্রুকুটি দেখে ্চোখ নামায়। তারপর পেছন ফিরে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করে, কিন্তু দরজার বাইরে অপেক্ষায় থাকা সাদা পোশাকের পুলিশ ওকে আবার ঠেলে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়।

    হরিরাম এবার কোসলে স্যারকে চিনতে পারে। ওঁর দিকে সাহায্যের আশায় তাকায়। উনি একটু হেসে ওকে আশ্বস্ত করে বলেন — ভয় নেই। যা জিজ্ঞেস করব তার উত্তরে হ্যাঁ বা না বললেই হবে। তারপর তোমার কাজ শেষ, বাড়ি ফিরে যাবে। এবার বল, এখানে কি বড়ী ভাবী দেবেন্দ্রকুমারী হাজির রয়েছেন? হ্যাঁ কী না?

    হরিরাম উপরে নীচে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।

    -- তুমি কি ওনাকে চেন? তাহলে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দাও।

    গোটা হলঘর জুড়ে এক শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে।

    হরিরাম ধীর পায়ে কুমারসাহেবের দিকে একটু এগিয়ে আঙুল তুলে ইন্দ্রকুমারীকে দেখায়।

    শ্রীবাস্তব অধৈর্য হয়ে বলেন — ধ্যাৎ গাধা কোথাকার। আমরা বড়ীভাবীর কথা জিজ্ঞেস করছি।

    হরিরাম দৃঢ় ভাবে মাথা নাড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে — দোনো এক হী হ্যায়।

    গর্জে ওঠেন কুমারসাহেব — হরিরাম! শালে নমকহারাম! অপনা জাত কা নমুনা দিখা দিয়া না?

    বুড়ো হরিরাম দৌড়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু একজন মহিলা কন্সটেবল ও দু’জন ইউনিফর্ম পরা সেপাই এসে রাণী ইন্দ্রকুমারী ও কুমারসাহেবের পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ে।

    কোসলে বলেন — চুপ করে থেকে কোন লাভ নেই রাণীসাহিবা। দুই বোনকে ডেকে আনার পেছনের গল্পটা খুলে বলুন। নইলে ইম্পার্সোনেশনের চার্জে আপনাকে এখনই গ্রেফতার করতে বাধ্য হব। এদিকে ইন্দ্রকুমারী সেজে রাজোয়ারায় রয়েছেন, আবার আলোয়ারে বাপের বাড়ির ঠিকানায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে বছরে মাসোহারা বাবদ ছ’লক্ষ টাকা এস্টেট থেকে সাইফন করছেন!

    জেনে রাখুন, সিন্ধিয়া স্কুলের রেকর্ড থেকে দেখা গেছে আপনাদের পরিবার থেকে একটি মেয়েই শুধু ওখানে পড়েছে এবং তার নাম দেবেন্দ্রকুমারী যার সঙ্গে প্রায় আট বছর আগে বোম্বাগড়ের যুবরাজ বীরেন্দ্রপালের বিয়ে হয়। দু’বছর পরে সেপারেশন - কারণ অজ্ঞাত। কয়েকমাসের মধ্যে ইন্দ্রকুমারীর উদয়, যার প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, কিন্তু স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট নেই। অবশ্য কুমারসাহেব বীরেন্দ্রকুমারের সঙ্গে বিয়ের ফটো এবং সার্টিফিকেট আছে বটে।

    ইন্দ্রকুমারী নড়েচড়ে বসেন, কিন্তু মুখ খোলেন না।

    -- আচ্ছা, আপনার গলায় এখনও স্কার্ফ জড়ানো, কিন্তু কোন হার বা নেকলেস নেই। ক্ষত্রিয় ঘরাণার বিবাহিত নারী! তাহলে আপনি নিজেকে এখন কী মনে করেন? বীরেন্দ্রপালের বিধবা? নাকি ছোটভাই বীরেন্দ্রপ্রতাপের স্ত্রী?

    লাফিয়ে উঠেছেন বীরেন্দ্রপ্রতাপ। পেছনে দাঁড়ানো দুই পুলিশকে এক ঝটকা দিয়ে অগ্নিগর্ভ কালো মেঘের মত চেহারায় এগিয়ে যান টেবিলের অন্যদিকে নির্বিকার মুখে বসে থাকা কোসলে স্যারের দিকে। কিন্তু পৌঁছনোর আগেই ওনাকে ধরে ফেলে দুই সেপাই আর নিয়ে বসিয়ে দেয় তাঁর চেয়ারে। আমরাও উঠে দাঁড়িয়ে ছিলাম। স্যারের ইশারা সত্ত্বেও আর চেয়ারে বসি নি।

    এবার কথা শোনা গেল অন্য কোন থেকে। শহরের বয়োবৃদ্ধ ডাক্তার প্রাণলাল মেহতা মুখ খুললেন।

    -- এত চিন্তার কোন কারণ নেই কোসলে। তুমি যেমন আমার পুরনো ক্লায়েন্ট, তেমনই এই রাজপরিবার, এদের বাবার আমল থেকেই। কাল বিকেলে বহুরাণী আমার চেম্বারে এসেছিলেন। ওঁর গলায় খুব যন্ত্রণা। উইন্ডপাইপে চাপ পড়েছে। কোন পার্মানেন্ট ক্ষতি হয়নি বটে! কিন্তু কিছুদিন বেশি কথা বলানো উচিত হবে না। তাই গলায় হার রাখতে পারছে না। আরও সাতদিন যাক, রাজ্যাভিষেকের আগে সেরে যাবে মনে হয়।

    -- চোট লাগার কারণ ডাক্তার সাব?

    -- বলতে পারব না। ওটা ডাক্তারের এথিক্সে বারণ, ক্লায়েন্ট কনফিডেনশিয়ালিটির প্রশ্ন।

    কোসলে স্যার চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে শ্রীবাস্তবজীর দিকে তাকান। যেন এসপি সাব, এবার বল তোমার কোর্টে।

    -- ডক্টর সাব, আপনাকে পুরো বিলাসপুর শ্রদ্ধা করে। সেবার আপনি শহরের মেয়রের জন্য দাঁড়ালেন, অন্যেরা তাদের মনোনয়ন পত্র তুলে নিল। কাজেই আপনার এথিক্স নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলব না। শুধু একটা কথা, এখানে আপনার একজন পুরনো মরীজের মৃত্যু হয়েছে, ভুল বললাম – উনি নিহত হয়েছেন নিজের ঘরে। আপনি কি চাইবেন না ওঁর খুনি ধরা পড়ুক, শাস্তি পাক? আমি কাজটা সহজ করে দিচ্ছি। আপনাকে লীডিং কোয়েশ্চেন করব, আপনি শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবেন।

    ডক্টর সাব, রাণীসাহেবার গলায় অমন ব্যথা পাওয়ার কারণ কী? কেউ কি ওঁর গলা টিপে ধরেছিল?

    ডক্টর মেহতা ঘাড় কাত করলেন।

    -- সেই লোকটি যে কে সেটা আপনি আপনার পেশেন্ট রাণীসাহিবার মুখ থেকে শুনেছেন কি?

    উনি আবার সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন।

    -- লোকটি কি আপনার প্রাক্তন পেশেন্ট যুবরাজ বীরেন্দ্রপাল সিং?

    উত্তেজিত ডঃ মেহতা দু’বার ওপরে নীচে মাথা নাড়লেন।

    -- ঠিক আছে, আপনাকে আর কষ্ট দেব না।

    এবার দাঁড়িয়ে উঠেছেন কোসলে স্যার।

    -- আমার ডাক্তারসাবকে একটাই প্রশ্ন, যুবরাজ সাহেব কি আপনার কাছে ঘন ঘন পেটের সমস্যা বমি বমি ভাব এসব নিয়ে আসতেন? ইদানীং কি সমস্যাটা বেশি বেড়ে গিয়েছিল?

    -- হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কী করে জানলে? একবার তো ফুড পয়জনিং হয়ে গেছল।

    -- আচ্ছা, কুমারসাহেব কি দাদার জন্যে ওষুধ নিতে কখনও এসেছিলেন?

    -- নাতো; অনেক আগে এক আধবার হতেও পারে, ভাল মনে নেই। কিন্তু এর সঙ্গে খুনের কী সম্পর্ক?

    -- বলছি ডাক্তার সাব, একটু সময় দিন।

    কোসলে স্যার আমার দিকে তাকাতেই আমি একটা শীট এগিয়ে দিই। ভিসেরা রিপোর্ট।

    -- এই রিপোর্টটিতে বিলাসপুরের সরকারি হাসপাতালের চারজন রেপুটেড ডাক্তার সাইন করেছেন এবং সঙ্গে রয়েছে রায়পুরের সেন্ট্রাল ল্যাবের ফাইন্ডিংস।

    রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত বীরেন্দ্রপ্রতাপের পাকস্থলীতে থ্যালিয়াম সালফেট নামে পয়জনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু ২৭ তারিখ রাত্তিরে ওনার ব্যবহৃত থালা গেলাস বাটি সব শান্তিরাম ভাল করে ধুয়ে রেখেছিল। তাতে কোন পয়জনের চিহ্ন নেই। তাহলে পয়জন কীভাবে দেয়া হোল? তার আগে এই পয়জনের সম্বন্ধে একটু জেনে নিন।

    একটি চারপাতার রিপোর্ট হাতে উঠে দাঁড়ায় শিপ্রা সাইনি। পড়া করে আসা গুড গার্লের মত গড়গড়িয়ে ইংরেজি রিপোর্টের কোন কোন অংশ হিন্দি তর্জমা করে শোনাতে থাকেঃ

    -- থ্যালিয়াম সালফেট হল এমন একটি বিষ যার কোন রঙ, গন্ধ বা স্বাদ নেই। এটা জলে মেশে না, তাই সরবত বা পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে কাজে আসে না। কিন্তু খাবারের সঙ্গে চমৎকার মিশে যায়। প্রাচীন গ্রীস থেকে মধ্যযুগেও রাজরাজড়াদের মধ্যে গুপ্ত হত্যাকান্ডে সবচেয়ে নিরাপদে এই বিষ ব্যবহৃত হয়েছে। আর্সেনিকও স্বাদ-গন্ধহীন। কিন্তু ডোজ এদিক ওদিক হলে ভিক্টিম হঠাৎ মারা যেতে পারে, তাতে আততায়ীর ধরা পড়ার প্রবল সম্ভাবনা।

    -- কেউ যদি ধরা না পড়ে ধীরে ধীরে কাউকে মেরে ফেলতে চায়, তার জন্য শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে এই বিষ খুব অল্প পরিমাণে খাবারের সঙ্গে নিয়মিত মিশিয়ে দেওয়া।

    -- এর ফলে রোগীর পেট খারাপ হবে, ফুড পয়জনিং এর মত লক্ষণ দেখা দেবে। দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করলে চুল পড়ে যাবে, চামড়া কুঁচকে যাবে, অকাল বার্ধক্য গ্রাস করবে। রোগীর স্মৃতিভ্রংশ ও মানসিক ভারসাম্যের অভাব প্রকট হবে। ধীরে ধীরে ফুসফুস, কিডনি ও হার্ট দুর্বল হয়ে পড়বে। এভাবে চলতে থাকলে রোগীর অকাল মৃত্যু অবধারিত ।

    -- ভারতবর্ষে ইঁদুর মারার বিষ বা র‍্যাট পয়জনে থ্যালিয়াম সালফেট ব্যবহার করা হয়। ইঁদুর এতে আলাদা কোন গন্ধ পায় না। খাদ্যদ্রব্যের গন্ধ ও স্বাদে আকর্ষিত হয়ে গিলে ফেলে ও মারা পড়ে। বিংশ শতাব্দীর অনেক গুপ্ত হত্যাকান্ডে এই বিষ প্রযুক্ত হয়েছে।

    -- ব্যস্‌ ব্যস্‌ শিপ্রা, বসে পড়।

    মেহতা স্যার, আপনি তো খেয়াল করেছেন যুবরাজ সাহেবের মধ্যে থ্যালিয়াম পয়জনিং এর সবগুলি লক্ষণই প্রকট হয়েছিল। অর্থাৎ উনি অনেকদিন ধরেই মারা যাচ্ছেন। কিন্তু বিষ দিচ্ছে কে এবং কী ভাবে?

    বলে রাখা ভাল যে গত ৯ তারিখে শ্রাদ্ধের দিন বেলা বারোটা নাগাদ বোম্বাগড় প্যালেসে পুলিশের খানাতল্লাসি হয়। যুবরাজ সাহেবের কামরার পাশের ঘরে আমি একটা র‍্যাট পয়জনের প্যাকেট পাই, যার অনেকটাই ব্যবহৃত। হরিরাম জানায় যে ওটা যুবরাজ সাহেবের দেখাশোনায় নিযুক্ত শান্তিরাম ড্রাইভারের ঘর। আর ওই ওষুধটা শান্তিরাম যুবরাজ সাহেবের ঘর ও বাগানে উইপোকা ও ইঁদুর মারার জন্যে নিয়মিত ব্যবহার করে। তাই এখন দীমক বা উইপোকা এসব দেখা যাচ্ছে না।

    -- তাহলে দুই বাঙালী বোন নয়, শান্তিরামই আসল আততায়ী? এটাই বলতে চান? আচ্ছা, হবে নাই বা কেন? বলতে গেলে ওর সবচেয়ে বেশি সুযোগ ছিল।

    কুমারসাহেবের উত্তেজিত গলার স্বর।

    মাথা নাড়েন ছিন্নমস্তার পূজারী শ্যামানন্দ মহারাজ। ওনার বিশ্বাস হয় না যে শান্তিরাম এই কাজ করতে পারে। ও যে যুবরাজ সাহেবের স্নেহের পাত্র ছিল। আর ওনাকে স্লো পয়জন দিয়ে বা হত্যা করে ওর কী লাভ? আর ও হত্যা করলে ছোরাটা কীভাবে ছোটবোনের ব্যাগের মধ্যে ঢোকে? এটা আজগুবি কথা।

    মুচকি হাসেন কোসলে।

    -- যতটা আজগুবী ভাবছেন ততটা নাও হতে পারে পূজারী মহারাজ। দেখুন, বোনেদের পক্ষে খুন করে ছোরাটার আঙুলের ছাপ মুছে ব্যাগের মধ্যে পুরে ফেলে চেঁচাতে চেঁচাতে বাইরে বেরিয়ে আসা অসম্ভব।

    -- কেন অসম্ভব?

    -- আরে কাপড় বদলানোর সময় কোথায় পেল? আর কাপড় বদলায়নি তো? সৌরভ দশ মিনিট আগেও ওদের সঙ্গে মন্দিরে ছিল। সেই শাড়ি পরেই তো ওরা কুমারসাহেব ও শান্তিরামের হাতে ধরা পড়ল। সৌরভ বলেছে কোন বোন শাড়ি বদলায়নি।

    প্রাণলাল মেহতা বেশ বিরক্ত।

    -- এসব কী কথা হচ্ছে? শাড়ি বদলাবে কেন?

    -- ডাক্তার সাব! পিঠে ছোরা বসালে শিরা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত আততায়ীর গায়ে পড়বে না? এই একটা পয়েন্টই বয়লে দিচ্ছে আততায়ী যেই হোক, ওই দুই বোনের কেউ নয়। সম্ভবতঃ ওরা ঠিক বলছে। যুবরাজ সাহেব রাত ৯টায় নন, তার অনেক আগেই মারা গেছলেন। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে রাত আটটা থেকে সাড় ন’টার মধ্যে। ফলে দুইবোনকে মিথ্যে এসএমএস করে ডেকে আনা হয়েছে ওদের ফাঁদে ফেলতে। সম্ভবতঃ মাথায় পাগড়ি পরে অন্ধকারে ওদের ব্যাগ জমা নিয়ে তাতে ছোরাটা ঢুকিয়ে মাটিতে ব্যাগ ফেলে রাখা হয়। ওই লোকটি কে? রাজওয়াড়ার সিকিউরিট পুসওরাম বেঁটে, তখন গেটে ছিল না। রান্নাঘরে গাঁজায় দম দিচ্ছিল। ওই পাগড়ি পরা লোকটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মানে ওটা ছদ্মবেশ, সবচেয়ে সহজ ছদ্মবেশ। আর লোকটার রাজোয়ারার অন্দরে অবাধ গতিবিধি। খেয়াল করুন, তখন যুবরাজ জেগে আছেন, কুমারসাহেব ও ইন্দ্রকুমারী তাঁদের কামরায় পূজোয় যাবার জন্যে তৈরি হচ্ছেন। এই সময় কার সুযোগ হবে যুবরাজের কাছে যাবার? একজনই, শান্তিরাম। আবার তার প্রতি সন্দেহ হবার আরও কারণ – সে বাঁহাতি এবং সে শক্তসমর্থ পুরুষ।

    আপনার খারাপ লাগছে মহারাজ, কারণ সে আপনার শিষ্য হয়ে দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হবে এরকম ভেবেছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা হলনা। আশ্চর্য হবেন না, ওর তেলুগুতে লেখা ডায়েরি থেকে জানা গেছে ও হল বি রামপ্রসাদ রাও, আইনের চোখে পুরনো অপরাধী। মাওবাদী হয়ে জঙ্গলের জীবনে মানুষ মারায় দীক্ষিত। দুম করে কারও ঘাড়ে ছোরা বসিয়ে দেওয়া আপনার আমার কম্ম নয়।

    শ্যামানন্দ মহারাজ এখনও মাথা নাড়ছেন।

    -- আপনার কাহিনীতেও যে মস্ত বড় ফাঁক সাহেব! যদি অনেকদিন ধরে অল্প অল্প করে বিষ দিচ্ছে, তাহলে হঠাৎ যুবরাজকে ছোরা দিয়ে খুন করতে গেল কেন?

    -- মহারাজ, হয়ত যুবরাজ ওর নেমকহারামি ধরে ফেলেছিলেন, বা সন্দেহ করে ওকে খোলাখুলি চার্জ করেছিলেন?

    ফুট কাটলেন কুমারসাহেব।

    -- না না; তাহলে আঘাতটা সামনে থেকে হত, পেছন থেকে কেন? এর মানে ঘটনার সময় আরও কেউ যুক্ত ছিল।

    -- হতেই পারে। এই দ্বিতীয় থিওরিটা দেখার আগে আমরা অন্য একটি থিওরি বা অন্য একটি কাহিনী শুনব।

    -- আর কতক্ষণ আপনার এই কথাসরিৎসাগর চলবে? সব খালি আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া ।

    (আগামী পর্বে শেষ হবেই, মাক্কালী!)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮
  • ধারাবাহিক | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮৫১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 68.184.245.97 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:১৫497877
  • এই দ্যাখো! ঠিক জানতাম স্লো পয়জনিং!
  • | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৪২497882
  • হুঁ আম্মো ভেবেছিলাম। 
     
  • বিপ্লব রহমান | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:১২497885
  • আন্দাজে মোর চাঁদমারা, পারে কই হোল মোর মাছ ধরা? 
    এই রকম দু পর্ব একসাথে চাই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন