এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  গপ্পো

  • রাজরক্ত (রহস্য গল্প) : ১৩শ পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | গপ্পো | ২৭ আগস্ট ২০২১ | ১৮৮৩ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮
    ৮ই এপ্রিল, রবিবার, রাত ১০টা। সৌরভ

    ঝড় বয়ে গেল। এ’বছরের প্রথম কালবোশেখি। আঁধি মানে ধুলোর ঘূর্ণি, কিন্তু এটা ছিল অন্যরকম। এতে আমগাছের বৌর বা মুকুল ঝরে যায়, কাঁচা ঘরের চাল ওড়ে আর বৃষ্টির সঙ্গে ‘ওলে’ বা শিল পড়ে। তারপর কয়েকদিনের জন্য টেম্পারেচার নামে, লোকের মুখে হাসি ফোটে। ক’দিনের জন্য লু’ বা গরম হাওয়ার হলকার থেকে নিস্তার পাওয়া। সে সবই হোল।

    কিন্তু আমাদের ‘আঁধি’ চলে যায় নি, বরং চোখে ধূলো ঢুকে কচকচ করছে। চোখের দোষ কি? ঘটনা ঘটে চলেছে ঘুর্ণিঝড়ের বেগে। আজ রাত্তিরে আমার নোটস খুলে বসে একবার সব খতিয়ে দেখছি, হমলোগ অব কিতনী পানি মেঁ? হাঁটু পর্য্যন্ত, নাকি বিশ বাঁও?

    কীভাবে শুরুও করব? প্রথম থেকে? সিরিয়ালি? কিন্তু কোনটা আগে ঘটেছে আর কোনটা পরে সব যে ঘুলিয়ে গেছে। ঠিক আছে, যেমন যেমন মাথায় আসছে তেমন তেমন বলতে থাকি।

    আমি গতকাল অফিসে ইন্দ্রকুমারীর বয়ান আর তার সঙ্গে আমার নোটস বানিয়ে আশায় ছিলাম যে বস্‌ সেটা দেখবেন, আমার অবজার্ভেশনের প্রশংসা করবেন; তারপর আমি কায়দা করে আমার ইনক্রিমেন্টের কথাটা পাড়বো। কিন্তু কোথায় কী! বস অফিসে আসেনই নি। ফোন এলো, উনি বসে আছেন এসপি শ্রীবাস্তবের অফিসে, কিন্তু আমি যেন দেড়টা নাগাদ তৈরি থাকি। পরিহার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে দুটো নাগাদ অ্যাপো আছে না?

    আমিই তো বুক করিয়েছিলাম, ভুলে মেরে দিয়েছি! হ্যাঁ, ছোট্ট টেপ, ওই যেটা দেখতে ফাউন্টেন পেনের মত সেটা যেন সঙ্গে নিয়ে যাই।

    আমার ভয়, আবার না বুড়ার বা বোম্বাগড় রাজ্যে যেতে হয়! কালই তো শ্রাদ্ধ। আমি আর কুমারসাহেব বলে জাত তুলে গাল দেওয়া লোকটার মুখোমুখি হতে চাইনে।

    কিন্তু সওয়া একটা বাজে, বস্‌ এতক্ষণ কী করছেন? ও হ্যাঁ, নিঘঘাৎ নকল শান্তিরাম ওঁরাও ব্যাটাকে তুলে এনে সিভিল লাইন থানায় ধোলাই দেবার বন্দোবস্ত হয়েছে। মন বলছে, এবার রহস্যের প্যাঁচ খুলবে। এঁরা বোধহয় কোথাও একটা ব্রেক পেয়েছেন। আমি চাই দোষী ধরা পড়ুক, নির্দোষ দুই দিদি ছাড়া পাক, আর নিজেদের বাড়ি ফিরে যাক। সবকিছু মিটে গেলে ওদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি দুর হয়ে আবার ভাব হবে নিশ্চয়ই। এ’বছর ভাইফোঁটা দেবার আবদার করব? রায়পুরে বড়দি শৈবলিনীর কোয়ার্টারে যেতেই পারি।

    কখন নিঃশব্দে গলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে বসের গাড়ি। অফিসের সামনে পার্ক করতে একটু অসুবিধে হচ্ছে। আমাদের ল্যান্ডলাইনে সিমরনের কাছে নির্দেশ এল – সৌরভকে বল এক্ষুণি চলে আসতে, নোটবুক ও টেপ যেন না ভোলে। কিন্তু তুমি আর জগন্নাথ আজ একটু বেশিক্ষণ অফিসে থাকবে, বাড়িতে ফোন করে দাও। কোন ফোন এলে বলে দিও আমি জরুরি কাজে বেরিয়েছি, বাকি নাম-পতা, পারপাজ, ফোন নাম্বার নোট করে রাখবে।

    পরিহার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস

    বিলাসপুর শহরের মূল এলাকার বাইরে রিং রোড নম্বর ২ এর ধারে অনেকটা খালি জায়গা, সামান্য গাছপালা। একটা সাইনবোর্ডে তিরচিহ্ন দিয়ে লেখা চন্দেলা কলোনি। মাঠ কেটে জমি দুরমুশ করে বেশ কিছু আয়তাকার প্লট। গোটা পাঁচেক বাড়ি, বাকি প্লট খালি। টেলিফোন আর বিজলির খাম্বা। নতুন কলোনি, কোণায় প্রমোটারের সাইট অফিস। দ্বিতীয় বাড়িটির সামনে নেমে গেট খুলে এগিয়ে যাই। ছোট দোতলা বাড়ি, সামনের দিকে ফুলের কেয়ারি, একটা শেডের নীচে নীল রঙা সেডান। বাড়িটির বাইরে এখনও রঙ করা হয় নি, খালি একটা প্রাইমারি কোট লাগানো রয়েছে। দরজার পাশে একটি কাঠের প্লেটে রুচিসম্মত ভাবে লেখা ‘পরিহার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’। কলিং বেল টিপতেই একজন প্রায় আমারই বয়েসি ছেলে বেরিয়ে এল, চোখে জিজ্ঞাসার চিহ্ন। আমি বসের নামের নীচে আমাদের কোম্পানির নাম লেখা কার্ডটি বাড়িয়ে দিতেই একনজর দেখে ও বলল - আইয়ে!

    সামনের যে ছোট হলঘর তাতে জনা চারেক স্টাফ একটা টেবিলের সামনে বসে কাজ করছে। মানে কেউ ফাইল ঘাঁটছে, কেউ কম্পিউটারের পর্দায় শেয়ারের দর দেখছে। একজন ক্যালকুলেটরের দিকে না তাকিয়ে আঙুল চালাচ্ছে। আমাদের দিকে কেউ খুব একটা খেয়াল করল না। ছেলেটা আমাদের হলের বাঁদিকে নিয়ে গিয়ে আরেকটা দরজা খুলে দিয়ে আবার বলল - আইয়ে!

    ভেতরে গিয়ে দেখি অন্যরকম কেতা। সফট কার্পেট, দেয়াল জুড়ে বড় টিভি। সোফা বেশ নরম, গা এলিয়ে বসেছি। ছেলেটা ঠান্ডা জল দিয়ে গেল। একটু লেবুর শরবত বা লাল গাঢ় রঙের রুহ আফজা? এত নামকরা সিএ ফার্ম কিন্তু বেশ কিপটে মনে হচ্ছে!

    পাঁচ মিনিট কেটে গেল। আমি বসের দিকে তাকাই। উনি বেশ গা’ ছেড়ে হেলান দিয়ে বসে গুনগুন করছেন। আমি উঠে গিয়ে দেয়ালে টাঙানো ফ্রেমে বাঁধাই সার্টিফিকেট গুলো দেখতে থাকি। কিছু দেশের বিভিন্ন রাজ্যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসদের কনফারেন্স, রোটারি ক্লাবের সম্মানপত্র। একটা সার্টিফিকেটে চোখ আটকে যায়, চারবছর আগে ১৯৯৮–৯৯ থেকে বিলাসপুর রোটারি ডিস্ট্রিক্টের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন দিলীপরাজ সিং পরিহার। এ পাশের ছবিতে উনি আগের চেয়ারম্যানের হাত থেকে কোন একটা উপহার নিচ্ছেন। কিন্তু ওই বিদায়ী চেয়ারম্যানের চেহারাটা বেশ চেনা চেনা লাগছে। নীচে নামগুলো পড়ার চেষ্টা করি – রোটারিয়ান বীরেন্দ্রপাল সমরপ্রতাপ সিং!

    - সরি, আপনাদের অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি। আসলে একটা জরুরি ফোন এসেছিল ফাইনান্স মিনিস্ট্রি থেকে। একটা প্রেস্টিজিয়াস অডিটের ব্যাপার, আমাদের ফার্মকেই দায়িত্বটা দিচ্ছেন। আরে চা-কফি কিচ্ছু দেয়নি? নাঃ, এদের কিছুতেই শেখাতে পারছি না।

    একটা পাতলা মিহি আওয়াজে চমকে উঠেছিলাম। ঘরে যিনি তড়বড় করে ঢূকেছেন তাঁর হাইট মেরে কেটে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। বেশ গোলগাল লালটু চেহারা। সামনের চুল পাতলা। বয়েস পঞ্চাশের কাছে। বুশ শার্টের গলার নীচের দুটো বোতাম খোলা। গলায় ঘাড়ে পাউডারের ছোপ। কপালে ছোট্ট টিকা, মানে পুজো সেরে এসেছেন। হাতে অনেকগুলো আঙটি, কিন্তু আমি ওসব পাথর টাথর চিনি নে। উনি বসের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন ছত্তিশগড়ের প্রচলিত কায়দায় বললেন - মাইসেলফ দিলীপরাজ। আপনি তো মিঃ কোসলে?

    আমাকে উনি ঠিক গ্রাহ্যের মধ্যে আনলেন না। তাতে আমার কিছু এসে যায় না, এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

    চেয়ার টেনে বসতে বসতে উনি বললেন - আজ সকালেই এসপি সায়েবের ফোন পেয়েছি। বলেছেন আপনাকে যথাসম্ভব সাহায্য করতে। বলুন, আপনার জন্য কী করতে পারি?

    বস আমার দিকে ইশারা করে বললেন — সৌরভ বিশ্বাস, আমার অ্যাসিসট্যান্ট, এঁর সামনে সব কথা বলতে পারেন। ও আমাদের কথাবার্তার নোটস নেবে, যদি আপনার আপত্তি না থাকে! আমি সংকেত পেয়ে গেছি। একটা ছোট হ্যান্ডব্যাগ থেকে স্ক্র্যাপ বুক ও পেন বের করে টেবিলে রেখে বাগিয়ে বসি। কোলের উপর রাখা হ্যান্ডব্যাগের জিপ বন্ধ করিনি। ওতে রাখা ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী টেপ রেকর্ডার পুরো ইন্টারভিউটা ধরে রাখবে। কোসলে স্যার ভালই জানেন যে এই ধরনের টেপ কোর্টে প্রমাণ হিসেবে খুব একটা গ্রাহ্য হয়না। উনি সেটা চানও না। ওনার কথা হোল নোটস নিতে গিয়ে অনেক পয়েন্ট মিস হতে পারে, হয়ত তখন আমার দরকারি মনে হয়নি। কিন্তু পরে টেপ বাজিয়ে দেখলে অনেক জিনিস ঘটনা পরম্পরায় গুরুত্ব পায়, তাতে তদন্তে সুবিধে হয় ।

    পরিহার আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে সায় দিলেন।

    -- জানেন তো, বোম্বাগড় এস্টেটের যুবরাজ গত মাসের ২৭ তারিখে ---

    -- হ্যাঁ, মারা গেছেন। আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল। এমন সময় চলে গেল যে! নইলে আজ এস্টেটের গদিতে ওই বসত।

    কোসলে বাধা পেয়ে বিরক্ত হয়েছেন। হাত তুলে পরিহারকে থামিয়ে দিয়ে বললেন — না মারা যাননি। ওঁকে হত্যা করা হয়েছে। সেই কেসের সন্দর্ভেই আমরা এসেছি।

    পরিহার থতমত খেলেন।

    -- হ্যাঁ, পুলিশ তদন্ত করছে। কানুনের হাত অনেক লম্বা হয়। খুনী নিশ্চয় ধরা পড়বে, শাস্তি পাবে। ভগবানকে পাস দের হ্যায়, অন্ধের নহীঁ। ঈশ্বরের রাজত্বে দেরি হতে পারে, অন্যায় হয় না। ও আমার বন্ধু, বলুন আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

    -- কিছু খবর বা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে।

    -- পুছিয়ে।

    -- আপনাদের ফার্ম কত পুরনো? আর এই এস্টেটের সঙ্গে আপনাদের কত দিনের সম্বন্ধ?

    -- আমার বাবা বছর তিরিশ আগে জবলপুর থেকে এসে এই ফার্ম খোলেন। রাজাসাহেব আমার বাবার বন্ধু ছিলেন। বোম্বাগড় এস্টেট আমাদের প্রথম বছরের ক্লায়েন্ট, এখনও।

    -- বেশ, রাজাসাহেব গত হয়েছেন একবছর হোল। উনি নিশ্চয়ই উইল করে গিয়েছিলেন? আর আপনার ফার্ম তার একজিকিউটর?

    -- ঠিক বলেছেন। আপনি কী জানতে চান বুঝতে পারছি। উইল অনুযায়ী যুবরাজ বীরেন্দ্রপাল মহারাজের অবর্তমানে রাজা হবেন, তাই রাজবাড়ি ও জঙ্গল এলাকার উনিই মালিক। ফরেস্ট প্রোডিউসের থেকে আয়ের পুরোটা একা উনিই পাবেন। এগ্রিকালচারাল ল্যান্ডের খাজনার আধাআধি দুইভাইয়ের মধ্যে ভাগ হবে। একই ভাবে রয়্যাল টিম্বার মিল, শাহডোলের আয়েরও ফিফটি ফিফটি। ছোটভাই এছাড়া পাবেন বোম্বাগড় বা বিলাসপুরের মহলের পেছনের অংশে সপরিবারে থাকার অধিকার।

    -- ওদের অবর্তমানে?

    -- পরের জেনারেশন; তবে মনুস্মৃতি মেনে কেবল পুত্রসন্তান। অবিবাহিত কন্যাসন্তান মাসোহারা পাবে। বিবাহিত মেয়ে যৌতুক এবং স্ত্রীধন,ব্যস্‌। এদের কোন বোন নেই।

    -- এস্টেটের আর্থিক অবস্থা কেমন?

    -- ভালই।

    -- আমাকে উইলের আর ব্যালান্স শীটের কপি দিতে পারেন?

    -- না, এরজন্যে আমাকে বর্তমানে যিনি মালিক, মানে কুমারসায়েবের পারমিশন লাগবে।

    -- এসপি শ্রীবাস্তব আমাদের সব রকম সাহায্য করতে বলেছেন না?

    -- তাই আপাততঃ একনজর দেখে নোটস নিতে সুযোগ দিচ্ছি। অফিশিয়ালি কপি দিতে হলে আদালতের গার্নিশি অর্ডার লাগবে।

    -- বেশ, তাই দিন।

    পরিহার উঠে দেয়ালের কাছে গিয়ে চাবি ঘুরিয়ে আলমারি খুলে দুটো ফাইল এনে বসের সামনে এগিয়ে দিলেন। কোসলে স্যার ফাইল খুলে নিবিষ্ট মনে পড়ছেন। পনের মিনিট। পরিহার একটু উসখুস করছেন। আমি এদিক সেদিক দেখছি, দেয়ালের দিকে তাকাচ্ছি, তারপর মিঃ পরিহারের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম। উনি পালটা না হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।

    -- কফি দিতে বলি?

    আমি মাথা হেলাই, কিন্তু পরিহার তাকিয়ে আছেন বসের দিকে, সেখান থেকে নো রেসপন্স!

    যাহোক, উনি বেল টিপলেন, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঢুকল সেই ছেলেটা যে আমাদের প্রথম ভেতরে নিয়ে এসেছিল। কফি বোধহয় রেডি ছিল, দু’মিনিটের মধ্যে এসে গেল। চুমুক দিলাম, ধুস শালা! এটা নেসকাফে নয়, তেতো মত অন্য কিছু। আর ব্যাটাদের মুখে মিষ্টি, কফিতে চিনি কম। হ্যাঁ, কফি বানিয়েছিল বটে শিপ্রা সাইনি। আরে, মহারাণী ইন্দ্রকুমারীর জবানবন্দী নিয়ে স্যারের সঙ্গে কোন কথা বলার ফুরসত পাইনি যে! নাঃ, ফিরে গিয়ে আজ বিকেলে--!

    -- মিঃ পরিহার, এই যে লায়াবিলিটি হেডে আউটস্ট্যান্ডিং পেমেন্টে একটা বড় অংক দেখছি প্রায় ছ’লাখ টাকা, সেটা কী?

    - -ওটা? কিছু না। এস্টেট থেকে একটা মাসোহারা।

    -- কাকে দিতে হয়?

    -- অনেক আছে। রাজপরিবারের কিছু পোষ্য থাকেই। যেমন ধরুন, ছিন্নমস্তা মন্দিরের সেবায়েত, বা শান্তিরাম ওঁরাও ড্রাইভার।

    -- আচ্ছা, এঁরা মাইনে নয়, আজীবন মাসোহারা পাবেন? কত করে?

    -- পূজারীজি পাঁচহাজার, শান্তিরাম দশহাজার। তবে এই টাকাও পাঁচ বছর পরে রিভাইস হয়। আর এদের থাকাখাওয়ার খরচা এস্টেটের। হিন্দু সংযুক্ত পরিবারের খাতায়।

    কোসলে স্যার ‘হুঁ’ বলে আবার ফাইলের উপর ঝুঁকে পড়েন।

    -- কিন্তু ওদের পেমেন্ট তো হয়ে গেছে। এই তো, এই যে! ইনকাম এক্সপেন্ডিচারের শীটে। তাহলে এই ছয়লাখের ফিগারটা কিসের?

    -- ওটা আউটস্ট্যান্ডিং পেমেন্ট, যাদের বকায়া আছে।

    -- আরে, তাইতো বলছি, তারা কারা? তারা ক’জন? কত করে পায়? আর এখনও পায়নি কেন?

    -- এগুলোর সঙ্গে যুবরাজের খুনের কী সম্পর্ক?

    পাতলা মিহি আওয়াজে এবার যেন বালির করকরে দানার মিশেল।

    -- আছে কী নেই সেটা এক্সপ্লোর করতেই আসা। আর আপনি আমাদের কো-অপারেট করতে বাধ্য, এসপির নির্দেশ।

    -- দেখুন, আমাকে আইন শেখাবেন না। আমি আমার ক্লায়েন্টের কনফিডেনশিয়ালিটি ক্লজ মানতে বাধ্য, নইলে আমাকে কোর্টে স্যু করতে পারে। আর আপনাদের যে কোন লীগ্যাল ইন্সট্রাকশন মানতে আমি অফিশিয়ালি বাধ্য। বেআইনি নির্দেশ নয়। হয় কুমারসাহেব বা তাঁর কোন প্রতিনিধিকে নিয়ে আসুন বা আদালতের গার্নিশি অর্ডার। নইলে আমায় মাপ করবেন।

    কুড়ি সেকেন্ড; দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছেন। ধীরে ধীরে বসের ঠোঁটের ফাঁকে একটু মুচকি হাসি ফুটে উঠল।

    -- ঠিক কথা। আপনাকে কোন বে-আইনি কাজ করতে বলতে পারি না। কিন্তু আপনি যে ইতিমধ্যেই কিছু বে-আইনি কাজ করেছেন বা বহু বছর ধরে করে চলেছেন তার পরিণাম?

    বেঁটে ফর্সা মানুষটার চেহারা রাগে গরগর করে।

    -- এসব কী বেসলেস অ্যালিগেশন? আমি কোন বেআইনি কাজ করেছি?

    -- আচ্ছা! আপনারা শান্তিরাম ওঁরাও, বাবার নাম সহসরাম, সরগুজা জেলার হেড়সপুর গাঁয়ের বাসিন্দে, সেই তো আপনাদের ড্রাইভার? তাকে গত পাঁচ বছর ধরে খাইয়ে পরিয়ে মাসে দশহাজার করে দিচ্ছেন, সংযুক্ত হিন্দু পরিবারের খরচায়? ঠিক বলছি?

    হ্যাঁ, তাতে কী হল! দিলীপরাজ সিং পরিহার বিমুঢ়।

    -- হবে আর কি! পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই নামের লোকটি পাঁচবছর আগেই টিবিতে টেঁসে গেছে। আর আপনি অডিট করে সার্টিফাই করছেন যে একজন মৃত মানুষের নামে পাঁচবছর ধরে ছ’লাখ টাকা পেমেন্ট করা হয়েছে। এতে ইনকাম ট্যাক্স চুরির কোন কোন ধারা লাগানো হবে সেটা আপনি ভাল জানেন। আমি বলতে পারি পেনাল কোডের হিসেবে ফ্রড, ইম্পারসোনেশন, অ্যাবেটমেন্ট, জালি দস্তাবেজ এগুলো তো প্রাইমা ফেসি! আর খুনের সঙ্গে কোন সম্পর্ক যদি বেরোয় !

    টেবিলের ওপাশে বসা পরিহারকে দেখে মনে হোল হার্ট অ্যাটাক হবে। দু’বার কিছু বলতে গিয়ে ঢোঁক গিললেন। ঠোঁট চাটলেন। আমি লাফিয়ে গিয়ে জলের গেলাসটা সামনে ধরে দিলাম। ধীরে ধীরে সবটা জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হলেন। তারপর প্রায় শোনা যায় না এমন গলায় বললেন - আমি এতসব জানি না, বিশ্বাস করুন কিছুই জানি না। কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আপনারা ওই ড্রাইভার শান্তিরামকে ধরে আনুন, সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। আর কুমারসাহেবকেও দরকার।

    বস নরম গলায় বললেন - দেখুন, এটা খুনের মামলা। নইলে আপনাকে জোরাজুরি করতাম না। যা জিজ্ঞেস করব তার উত্তর দিন। মাসোহারার ৬ লাখ টাকা কার পাওয়ার কথা? কী তার নাম? কোথায় থাকেন?

    -- দেবেন্দ্রকুমারী। রাজস্থানের আলোয়ারে থাকেন। বাপের বাড়িতে।

    -- বেশ, ওনার পরিচয়?

    -- রাণীসাহিবা।

    -- মানে উনি মৃত যুবরাজ বীরেন্দ্রপাল সমরপ্রতাপ সিং এর বিধবা।

    আমার হাত থেকে নোটবই ও পেন পড়ে গেল। হড়বড়িয়ে নীচু হয়ে তুলতে যেতেই ব্যাগটা মাটিতে ঠক করে পড়ল। ফের নীচু হয়ে হাতড়ে টেবিলের তলা থেকে তুলে আনছি, সামলে নিলাম। ব্যাগ থেকে ছোট্ট রেকর্ডারটা বাইরে বেরিয়ে পড়েনি, ভাগ্যিস!

    আবার সব গুছিয়ে গাছিয়ে আগের মত কলম বাগিয়ে বসেছি, চোখে পড়ল পরিহারজীর ফ্যাকাশে মুখে রক্ত ফিরে এসেছে। নকল শান্তিরামের বিশহাজার ভোল্টের ধাক্কাটা একটু সামলে উঠেছেন। হয়ত মনে মনে স্ক্যান করে দেখে নিয়েছেন যে এতে ওঁর রিস্ক কতটুকু?

    আমার আন্দাজ ঠিকই ছিল। স্যার যখন জানতে চাইলেন যে রাণীসাহেবা রাজ্যাভিষেকের সময় বোম্বাগড়ে যুবরাজ সাহেবের সঙ্গে না থেকে আলোয়া্রে বসে মাসোহারা কেন নিচ্ছেন তখন পরিহার জানালেন যে ওঁরা সেপারেশনে আছেন।

    -- কত বছর? ডিভোর্সের পেপার কবে সাবমিট হয়েছে?

    -- তা প্রায় ছ’বছর। না, রাজপরিবারের ব্যাপার। ওঁরা অফিশিয়ালি ডিভোর্সে যাচ্ছেন না। কিন্তু স্থায়ী সেপারেশন, মাসোহারা পঞ্চাশ হাজার।

    -- বাকি পড়েছে কেন? মানে ছ’লাখ আউটস্ট্যান্ডিং লায়াবিলিটি মানে একবছরের মাসোহারা বাকি?

    -- এটা যুবরাজ সাহেবের ব্যাপার। উনি পেমেন্ট আটকে দিতে বলেছিলেন; কেন বলেছিলেন তা আমি জানিনা। দাম্পত্যের ব্যাপার।

    -- সেপারশনের কারণ কী?

    -- আমি বলতে পারব না।

    -- রাজাসাহেবের উইলে ওনার নাম ছিল?

    -- না, ছিল না।

    -- যুবরাজের অবর্তমানে কে রাজা হবেন?

    -- কুমারসাহেব।

    -- যুবরাজের কোন সন্তান ছিল?

    পরিহার কি বিষম খেলেন?

    -- না, ওঁরা নিঃসন্তান।

    -- সেটাই কি সেপারেশনের কারণ?

    - -বলতে পারব না।

    -- আচ্ছা, রাজাসাহেব এই উইল কবে করেন?

    -- এগার বছর আগে।

    -- আমার শেষ প্রশ্ন। ভেবে উত্তর দেবেন।

    -- রাজাসাহেব কি এই প্রথম উইল করলেন? নাকি আগেও?

    পরিহার এবার দাঁড়িয়ে উঠেছেন।

    -- আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। আপনারা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন! যান, গিয়ে ওই শান্তিরামকে ধরে আনুন। ওটা শুনিয়ে আমাকে দিয়ে যা খুশি তাই করাতে পারেন না। তদন্ত করছেন যুবরাজের খুনের আর জানতে চান ওঁর বাবা কবে কতবার উইল করেছেন, উইল পাল্টেছেন – যত্তসব!

    লাস্ট কোয়েশ্চেন হয়ে গেছে। রিপ্লাই পেয়ে গেছেন, এবার যান দিকি! আমার আরও কাজ আছে।

    কোসলে স্যার হাসছেন। কোসলে স্যার ওঠার নাম করছেন না।

    -- দাঁড়ান, দাঁড়ান! এত উত্তেজিত হবার কিছু হয়নি। ব্যালান্স শীটে আরও ভুল আছে যে! এমন ভুল যেটা শোধরাতে আপনাকে দিল্লি না যেতে হয়! এবার বসে পড়ুন।

    পরিহার বসেন নি, কিন্তু কনফিডেন্স লেভেল নেমে গেছে।

    স্যার ব্যালান্সশীটের ফাইলটা পরিহারের দিকে ঠেলে দিয়ে বলেন — ব্যাড ডেটের প্রভিশন এত কম কেন?

    -- মানে?

    -- আপনি বলছেন এস্টেটের অবস্থা ভাল। কিন্তু আপনার শাহডোলের রয়্যাল টিম্বার মিলের কাজকর্মতো প্রায় বন্ধ। নামেই চলছে। জঙ্গলের ইমারতী কাঠ চেরাই করে বিভিন্ন শহরে ফার্নিচার কোম্পানিদের সাপ্লাই দেওয়ার কাজ তো বন্ধ।

    দিল্লির ডায়রেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) ১৯৯৭ সালের ৩রা মার্চ প্যারামাউন্ট এক্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেডিং এর ২০ টন রক্তচন্দনের কাঠ বাজেয়াপ্ত করে। ওরা এর বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করে বলে যে ওদের কাছে ডায়রেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেডের বৈধ অনুমতি আছে। আর এই কাঠ মধ্যপ্রদেশের শাহডোলের রয়্যাল টিম্বার মিল বনবিভাগের থেকে নীলামের মাধ্যমে কিনে চেরাই করে ওদের সাপ্লাই দিয়েছে।

    কিন্তু ওদের পারমিট ছিল শুধু সি গ্রেড রক্তচন্দনের কাঠ রপ্তানি করার। রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স ওনার কনসাইনমেন্ট এই সন্দেহে জব্দ করে যে এতে গ্রেড এ এবং গ্রেড বি’র কাঠ রয়েছে। ঐ দুটো গ্রেড রপ্তানি করা নিষিদ্ধ। আর এ’ব্যাপারে রয়্যাল টিম্বার মিলের কাগজপত্তরে অনেক ঝোল আছে। তখন থেকে আপনাদের মিলের লাইসেন্স তদন্তের ফয়সালা না হওয়া অব্দি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মাঝখানে আরও গল্প আছে। কিন্তু মিলের অপারেশন বন্ধ, বাজারে কিছু পাওনা টাকা বাকি। তাহলে মেশিনের ডেপ্রিসিয়েশন ও ব্যাড ডেট প্রভিশন করেননি কেন? এ’ব্যাপারে মিলের ফিফটি ফিফটি মালিক দুইভাইয়ের কী ভূমিকা? আর কী যেন বলছিলেন? ফাইনান্স মিনিস্ট্রি থেকে প্রেস্টিজিয়াস অডিটের বরাত পেয়েছেন? বিলাসপুর এসপি অফিস থেকে রক্তচন্দনের চোরাকারবারী টিম্বার মিল ও তার লীগাল এবং ফিনানশিয়াল অ্যাডভাইসর হিসেবে আপনার ফার্মের সন্দেহজনক ভুমিকা নিয়ে রিপোর্ট গেলে ওই বরাত ফস্কে যাবে না তো? কী বলেন?

    রাত ন’টা, অফিসে

    স্যার এসে আধঘন্টা আগে সিমরন আর জগন্নাথকে ছুটি দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমার ছুটি হয় নি। আমরা বারবার টেপ বাজিয়ে শুনছি একজন বিশ্বস্ত সিএ এবং ল’ ফার্মের মালিকের প্রফেশসনাল এথিক্সের দোলাচল, তার দ্বিধাদ্বন্দ্ব, তার যন্ত্রণা, ক্লায়েন্টের স্বার্থ রক্ষায় কমিটমেন্ট, একটু একটু করে আপোষ এবং অবশেষে ভেঙে পড়া। আমাদের লেগেছিল মোট তিনটি ঘন্টা, কোসলে স্যার পরিহারকে নিয়ে ইঁদুর বেড়াল খেললেন। ভদ্রলোক বুঝতে পারেন নি যে কোসলে স্যার কতটা আগে থেকে জানতেন বা কতটা আটঘাট বেঁধে তৈরি হয়ে এসেছেন।

    আমরা যখন ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম তখন পেছনে রেখে এলাম এক ভাঙাচোরা মানুষকে, যে ফাইনান্স মিনিস্ট্রির আমলার সঙ্গে আজ সন্ধ্যের অ্যাপো ক্যানসেল করে দিয়েছে। তারপর তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেছে। সম্ভবতঃ কাল ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের চেম্বারে যাবে। বদলে আমরা পেয়েছি এক আশ্চর্য গল্প। তাই বারবার শোনা, নোটস নেওয়া এবং পরের স্টেপগুলো ভাবা এবং দেয়ালে টাঙানো বোর্ডে ছকগুলোয় বদল করা। আমরা দু’জনের কেউ আজ বাড়ি যাচ্ছি না। আজ রাত্তিরটা অফিসেই কাটাবো। এক চেনা ডেকরেটার্সের থেকে দুটো তোষক চাদর বালিশ আনিয়ে টেবিল সরিয়ে মাটিতে বিছানা পাতা হয়েছে। আমি একটু দূরে, দেয়াল ঘেঁষে। খাবার এসেছে সাদাসিধে, পেপার ধোসা ও বড়া। সঙ্গে অনেকখানি সাম্ভার। আর দুই ফ্লাস্ক ব্ল্যাক কফি। আমি এখনও অভ্যস্ত হই নি, তাই একটা দুধের টেট্রাপ্যাক আনিয়ে নিয়েছি।

    আমরা অপেক্ষা করছি এসপি অফিস থেকে একটা কল আসার জন্যে। এর পরে ইন্দ্রকুমারীর বয়ান নিয়ে কাটাছেঁড়া হবে। বসের মুখ থেকে আমার রিপোর্টের প্রশংসা যদি বেরোয় তো কাল অফিস আওয়ারে ইনক্রিমেন্টের কথাটা তুলব।

    একটু ঝিমঝিম ভাব এসেছে এমন সময় ঝনঝনিয়ে ল্যান্ডলাইনে ঘন্টি বাজল। এতক্ষণে? শিওর এসপি অফিস। কিন্তু রিসিভার উঠিয়ে আমি অবাক। ওপারে উকিল দামলে।

    -- সৌরভজী, কোসলে স্যার আছেন? তাহলে ওঁকে দিন। আপনারা এক্ষুণি চলে আসুন, আমি সামলাতে পারছি না।

    -- আরে কোথায় যাব? কী হয়েছে? সেটা বলবেন তো?

    -- আরে ওই দুই বহেনজি, আপনার জাতের। আচ্ছা, ফোনটা স্যারকে দিন।

    স্যার খানিকক্ষণ কথা বলেই চাঙ্গা। আমাকে বললেন লাইট-টাইট নিভিয়ে অফিসে তালা মারতে। যেতে হবে সেই দুই দিদির আপাতকালীন ডেরায়, সাদা দোতলা বাড়িটিতে।

    স্যার গাড়ি চালাতে চালাতে বললেন – টেপ রেকর্ডারটা হাতব্যাগে আছে তো? দুই বোনেদের বয়ান নিলে কাজে লাগবে। আর ফেরার পথে তেল ভরাতে হবে, বুঝলি?

    আমরা পৌঁছে দেখি বাড়িটার সামনে দামলে উকিলের গাড়ি দাঁড়িয়ে। রাত্তির ন’টা সাতচল্লিশ। নীচের দোকানগুলো এখনও ঝাঁপ ফেলে নি। কিন্তু রাতের হিসেবে লোকজনের ভীড় কি একটু বেশি? দোতলার বারান্দায় আলো জ্বলছে। গ্রিলের দরজাটা খুলতেই দামলেকে পেছনে ঠেলে প্রায় বাঘিনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়লেন ছোড়দি - কুন্দনন্দিনী।

    -- দিস ইজ ডান ফর আওয়ার সেফটি! ইজন’ট ইট? হাউ লং ইউ আর গোইং টু স্পিন অফ ইয়োর ম্যাজিক টেলস?

    বিপন্ন কোসলে স্যার একবার আমার দিকে তাকান। তারপর বলেন - শান্ত হো জাইয়ে, অন্দর চলিয়ে।

    তারপর ছোড়দিকে প্রায় ঠেলতে ঠেলতে ঘরের ভেতর নিয়ে গেলেন, পেছন পেছন আমরা।

    ঘরের ভেতর ঢুকে প্রায় বেরিয়ে আসার মত অবস্থা। লন্ডভন্ড বিছানার চাদর, তার উপর এক নারী — বড়দি শৈবলিনী। গোঙাচ্ছে আর শিউরে শিউরে উঠছে। মুখে কাপড় ঠুঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার মুখ থেকে কোন কথা বেরোচ্ছে না, শুধু কিছু শব্দ, অব্যক্ত গুটিকয় শব্দ।

    আমরা কেউ সোফায় বসি নি, সবাই বিব্রত, কী করা উচিত বুঝতে পারছি না। ভাবছি বড়দিকে কিছু বলে শান্ত করার চেষ্টা করি? কিন্তু কী বলব?

    ইতিমধ্যে কোসলে স্যার দামলেকে নিয়ে পড়েছেন।

    -- গুছিয়ে বলত কী হয়েছে?

    -- ও কী বলবে? ওর সঙ্গে কিছু হয়েছে নাকি? অল এ বাঞ্চ অফ বাফুন্স! আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন না?

    অগত্যা ছোড়দির উত্তেজিত কথা এবং তার মধ্যে দামলের উকিলি মন্তব্যের প্যাকেজের থেকে যা বেরোলঃ

    এদের চায়ের পাতার স্টক পরশু ফুরিয়ে গেছল। ছোড়দি নীচে নেমে বাইরের চায়ের দোকান থেকে চা পাতা কেনার সময় উলটো দিকের ফুটপাথের একটা খোমচার থেকে কাঁচের গেলাসে ফুটন্ত গরম দুধ চা খেয়ে বিশেষ তৃপ্তি লাভ করেন। তারপর নিজেদের কিচেনে চা বানানো বন্ধ করে দিনের মধ্যে চারবার ওই চা-ঠেলার থেকে একটা বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে ঘরে চা আনাতে থাকেন। আজকেও তাই হয়েছে। শেষবার চা আনিয়েছেন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ।

    রাত্তির সাড়ে আটটা নাগাদ ওই বাচ্চাটা খালি গেলাস ফেরত নিতে আসে। তখন ওদের সব গুছিয়ে ঘরে ফেরার সময়। বাচ্চাটা একটা ভাঁজ করা কাগজ দিয়ে বলে দিদি, আপনার চিঠি।

    -- চিঠি? কে দিয়েছে?

    -- একজন লোক, হাতে ধরিয়ে বলল দোতলার দিদিকে দিয়ে আয়, জরুরি চিঠি।

    তারপর কুন্দনন্দিনী কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

    -- কই সেই চিঠি?

    উনি আঙুল দিয়ে ইশারা করলেন। খাটের পায়ার কাছে ছুঁড়ে ফেলা একটা দোমড়ানো মোচড়ানো চিরকুট। আমি গিয়ে তুলে এনে ভাঁজ ঠিক করে স্যারের হাতে দিই, কোনার দাগ দেখে বোঝা যায় যে এটা ভাঁজ করে স্টেপল করে আটকানো ছিল। তারপর ঘাড়ের পেছন থেকে উঁকি মারি।

    একটা খাতার পাতা ছিঁড়ে পেন্সিলে বড় বড় করে হিন্দিতে লেখা — রেন্ডী!

    তারপর থেকেই বড়দির এই অবস্থা।

    ছোড়দি ফোন করে দামলে উকিলকে ডাকেন। সে এসে খোমচাওলার ছোকরার কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে রাস্তা পার হওয়ার সময় একজন ভাইয়া এসে ওকে কাগজটা দেয় আর হাতে গুঁজে দেয় দু’টাকার একটা কয়েন। তারপর লুনায় চেপে চলে যায়। না, লুনার নম্বর কেউ খেয়াল করে না। আর ভাইয়াটার চোখে চশমা ছিল।

    বিছানার উপর উঠে বসেছেন শৈবলিনী, এখন ওঁকে উন্মাদিনী বললে ঠিক বলা হয়। দুলে দুলে হাতজোড় করে বারবার বলতে থাকেন – আপনারা অপদার্থ। আপনাদের সিক্রেট শেল্টারের সামনে চায়ের ঠেলা লাগাচ্ছে ওদের লোক। ওরা আমাদের উপর নজর রাখছে। এই আপনাদের সিকিউরিটি? আপনারা ফেলিওর। দোহাই আপনাদের, আমাদের ছেড়ে দিন। আমরা বেঙ্গলে ফিরে যাব, আর কখনও এখানে আসব না। ছিন্নমস্তার মন্দির দেখার শখ মিটে গেছে। ঢের হয়েছে।

    -- শাট আপ! অনেকক্ষণ ধরে আপনাদের ফালতু বকোয়াস শুনছি। এবার আমার কথা শুনুন।

    গর্জে উঠেছেন কোসলে। এখন একেবারে ডিএসপি কোসলে।

    -- এত ঘাবড়াবার মত কিস্যু হয় নি।ওই খোমচাওলাটা পুলিশের খবরি। বাচ্চাটা কিছু জানেনা। আপনাদের দুশমন আদৌ বুঝতে পারেনি যে এটা পুলিশের শেল্টার। ওরা কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসার সময়েই আপনার উকিল দামলের গাড়ি ফলো করে আপনারা কোথায় ভাড়ায় আছেন সেটা দেখে নিয়েছে। এটা ওদের শহর। কাউকে দিয়ে চিট পাঠিয়েছে শুধু খার তুলতে। লুনাওলা ছেলেটাকেও কোন ভাইয়া দশটাকার নোট দিয়ে এটা চায়ের দোকানের বাচ্চাদের হাত দিয়ে বলবি — আর্জেন্ট, দোতলার দিদিকে দিয়ে আসতে। ছেলেটা ভেবে থাকবে যে এটা কোন লাভ লেটার। এনিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই।

    কিন্তু আপনারা সহযোগিতা করুন। কেন চায়ের তেষ্টা মেটাতে নীচে নেমেছিলেন? সৌরভ বা দামলেকে ফোন করে বলতে পারতেন না? কেন চায়ের দোকানের বাচ্চা বা কোন বাইরের লোক আপনাদের দোতলায় উঠবে?

    যাকগে, এখন শুয়ে পড়ুন। দিদিকে একটা ঘুমের বড়ি দিন। নিশ্চয়ই আপনাদের হ্যান্ডব্যাগে আছে। না থাকলে বলুন, দামলে গিয়ে এনে দেবে। এখন থেকে আমরা কেউ সঙ্গে না থাকলে নীচে নামবেন না। তবে নীচে বলে দিচ্ছি — কাউকেই যেন ওপরে যেতে না দেয়, অন্ততঃ আমাদের জিজ্ঞেস না করে। এবার আমরা চলি।

    স্যারের মেজাজ খিঁচড়ে গেছে।

    অফিসে এসে ভয়েস মেল চেক করেন। কোথাও কোন খবর নেই। আমাকে বল্লেন - গায়ের চাদর টেনে শুয়ে পড়। ফোন আসলে তোকে ডেকে দেব। লাইট জ্বালানো থাকলে তোর শুতে অসুবিধে হয় নাতো? হলেও কিছু করার নেই।

    আমি মাথা নাড়ি এবং লম্বা হই। পাশ ফেরা আগে আড় চোখে দেখি উনি দাবার ছক সাজিয়ে বসেছেন।

    ঘুমিয়ে পড়ি। ভীষণ ডিস্টার্বড ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম। ছিন্নমস্তার মন্দির। তিনজন নাচছে। তিনজন নারী। দুজনকে চিনতে পারি।

    একজন শৈবলিনী ও কুন্দনন্দিনী। কিন্তু তৃতীয়জন? কে সে? সেকি দেবেন্দ্রকুমারী? সেকি ইন্দ্রকুমারী? এদের দেখতে কেমন? খুব সুন্দর? রাণী পদ্মিনীর মত? এঁরাও কি দরকার পড়লে জৌহরব্রত করতে পারেন? কিছু একটা হাতের কাছে এসেও পিছলে যাচ্ছে। কেউ ডাকছে, অনেক দুর থেকে। কিন্তু আমি আর পারছিনা। আরও ঘুমোতে চাই।

    এবার ডাকটা অনেক কাছে, কাঁধ ধরে নাড়াচ্ছে কেউ।

    -- কীরে এমন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘোড়া বেচে ঘুমোলে গোয়েন্দা হবি কী করে?

    স্যারের গলা। ধড়মড়িয়ে উঠে বসি।

    -- চটপট তৈরি হয়ে নে। আমাদের বেরোতে হবে। এসপি অফিস থেকে ফোন এসে গেছে। আজ আমাদের বুড়ার যেতে হবে। যুবরাজ সাহেবের তেরহী আছে না? আজ ৯ই এপ্রিল ভুলে গেলি? যা, রাস্তার ওপারে চায়ের দোকান খুলে গেছে। গিয়ে বল তিনটে চা দিতে। আমার দুটো লাগবে। দেখিস, তোর দিদিদের মত তোকেও কোন ছোকরা চিরকুট না ধরিয়ে দেয়!

    আমি একটু হাসি। বস জোক মারনে সে কর্মচারীকো হাসনা পড়তা হ্যায়। কে যেন বলেছিল? তবে নট ভাইস ভার্সা। আমি হাই তুলি, তারপর দরজা খুলে চা আনার জন্যে তৈরি হই।

    ও হ্যাঁ, শ্রাদ্ধ আজকেই বটে! কিন্তু শালার সেই বুড়ার! স্বপ্নের ছিন্নমস্তার মন্দির আবার ফিরে এল।

    -- স্যার, আজকে আমরা বুড়ার যাব? কিন্তু ওরা তো শান্তিরাম ওঁরাওকে বিলাসপুর নিয়ে এসেছে। ইন্টারোগেশনের সময় আপনি থাকবেন না?

    -- না রে! শান্তিরামকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বুড়ার ও শাহডোল পুলিশ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, পায় নি। অথচ ওদের কড়া পাহার পেরিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।

    সেজন্যেই আমাদের আজ বুড়ার যেতে হবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮
  • ধারাবাহিক | ২৭ আগস্ট ২০২১ | ১৮৮৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.255.131.176 | ২৭ আগস্ট ২০২১ ১১:৩১497208
  • উঃ ক্ষি কমপ্লিকেটেড! (এবং সেই ​​​​​​​জন্যই ​​​​​​​ক্ষুব ভালো।)
    এটা তো গত হপ্তার; এই শনিবার আরও একটা কিস্তি আসবে, তাই না?
  • Ranjan Roy | ২৭ আগস্ট ২০২১ ১২:০৬497219
  • মাইরি! সত্যি কথা বলি?
    আমার না আগে থেকে কিস্যু লেখা নেই। শুধু একটা নোটবইয়ে কিছু পয়েন্ট লেখা আছে। যার অনেকগুলোর সমাধান আমি নিজেও জানিনা। প্রত্যেকটা এপিসোড বা আপনাদের প্রতিক্রিয়া দেখে একটু ভাবি, একটু পাল্টে দিই, একটু ইঁদুর বেড়াল খেলি--খুব ভাল্লাগে!!!
    তাতে অবশ্যই আগের ছক আংশিক পালটে যায়।
    আমি যেটা চেষ্টা করি --ঘরের দরজা বন্ধ করে ল্যাপির সামনে বসে ওই পরিবেশের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তার রূপ রঙ ও গন্ধ পেতে। ভাবি, চরিত্র গুলোর যে বৈশিষ্ট্য তাতে এই পরিস্থিতিতে ওরা কী বলবে বা কী করবে-ব্যস্‌।
    কিন্তু এবার আর দেরি করা যাবেনা।মোটামুটি তিন বা চার এপিসোডের মধ্যে শেষ করব, তার আগে অন্য কোন লেখায় হাত দেবনা। ইউএপিএ এবং সিডিশন অ্যাক্ট নিয়ে লেখার মালমশলা তৈরি।মায়াবাদের অধ্যাস ও বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব --সব পেন্ডিং রাখব। এমনকি বিদ্যাসাগরও, নইলে খেই হারিয়ে যাবে।
    ফলে কাল না হলেও প্রতি তিন-চার দিনে একটা করে পর্ব নামিয়ে শেষ করে দেব, মাক্কালী! নইলে আগামী জন্মে কালীঘাটের কুকুর হব।
  • গবু | 223.223.141.6 | ২৭ আগস্ট ২০২১ ১৯:৫৪497261
  • জিও রঞ্জনদা, পুরো বাঘের মতো লেখা হচ্ছে! হালুমটাতো লাস্ট এপিসোড, হোক হোক!
  • kk | 68.184.245.97 | ২৭ আগস্ট ২০২১ ২০:৫৪497268
  • না না রঞ্জনদা, তাড়াহুড়ো করবেন না। প্লীজ। খুব ভালো চলছে লেখাটা। এই উঁচুনীচু, আলো-ছায়া, খাঁজভাঁজ এত সুন্দর টেক্সচার দিচ্ছে লেখাটাকে। তাড়াতাড়ি করে শেষ করতে গেলে সেইটা কেটে যাবে।
  • বিপ্লব রহমান | ২৮ আগস্ট ২০২১ ০৭:১৭497283
  • রাণীসাহিবা বেরিয়ে গেছে! উফ্ কি থ্রিল!!
     
    অন্তত দুটি পর্ব এক সঙ্গে দিন না ভাই, এভাবে অপেক্ষা করা যায়? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন