এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • বিনয় মজুমদারের একটি কবিতা: শৈলীবিজ্ঞানের আঙ্গিকে নিবিড় পাঠ

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১২ মে ২০১৯ | ১২৮৭ বার পঠিত
  • ('আরেক রকম' পত্রিকার ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সংখ্যায় নিবন্ধটি প্রকাশিত)

    সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়। (১)
    দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু, (২)
    তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না। (৩)
    কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি না। (৪)
    নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর (৫)
    মনে নেই গোধূলিতে ; ভালবাসা অবশিষ্ট নেই। (৬)
    অথবা গৃহের থেকে ভুলে বহির্গত কোনো শিশু (৭)
    হারিয়ে গিয়েছে পথে; জানে না সে নিজের ঠিকানা। (৮)

    ‘ফিরে এসো চাকা’র অন্তর্গত বিনয় মজুমদারের এই কবিতাটি সেমান্টিক্স-আঙ্গিকে পড়বার ও দেখবার প্রয়াস থাকবে এই নিবন্ধে। আট লাইনে বিস্তৃত এই কবিতা, তার টেক্সটের গঠনগত ও শৈলীগত দিকটি দ্যাখার এই প্রয়াস। ভিন্ন পাঠকের মনে একটি কবিতা তার নিজস্ব কাব্যিকতায় ও স্বকীয় অস্তিত্বে ভিন্ন অভিঘাত সৃষ্টি করতে সক্ষম। এমনকি একই পাঠক একই কবিতার ভিন্ন সময়ের পাঠ থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন। কবিতার মত সূক্ষ্ম, জটিল, বহুস্তরীয় ও অ-সরলরৈখিক টেক্সটের উত্তরমালায় দেওয়া এক ও একমাত্র সমাধান খোঁজা নিরর্থক। সুতরাং, কবিতা, মগ্ন ও নিবিড় এবং পুনঃ পাঠের সতত মুখাপেক্ষী; এমনকি কবি-মনন, লিখন-স্বভাব, চেতনাপ্রবাহ ধরতে গেলে কবির জীবনচর্চার চেয়ে কবিতা পড়াই বেশী জরুরী বলে আমার ধারণা। প্রথমেই এই সাবধানবাণী দিই, প্রতিটি পাঠকের নিজস্ব পাঠ নিজস্ব রুচি ও মনন অনুযায়ী ঘটে, তাই আমার এই পাঠ আমি নিজস্ব পদ্ধতিতে করছি। শৈলীবিজ্ঞানের আঙ্গিকে কবিতা পাঠেরও নানা ধরণের পদ্ধতি রয়েছে, এটিও এক ও একমাত্র পদ্ধতি নয়। বিশ্লেষণ নয়, বরং পাঠ শব্দটিতে জোর দিচ্ছি এবং এই নিবন্ধ একান্ত এক পাঠ-প্রতিক্রিয়া ধরলেও বিশেষ কিছু এসে যায় না।

    অক্ষরবৃত্তে লেখা এই আট লাইনের কবিতায় প্রথমে পালাক্রমে লাইনগুলি একে একে দেখি। প্রয়োজনে পিছিয়ে ও এগিয়ে পড়ে বোঝার চেষ্টা করব নির্মিতি ও কাব্যকাঠামোটিকে। কবির চেতন ও অচেতন স্তরে নির্মিত এই আট লাইনে আমরা কোন কোন সঙ্কেত পেতে পারি? তা কি কবি বিনয়ের নির্মাণ কৌশল ও প্রবণতা/প্রকল্প ধরতে সমর্থ হবে?

    প্রাথমিক ভাবে এই আলোচনায় চেষ্টা করব শৈলীবিজ্ঞানের নিরিখে নিচের দিকগুলি ধরতে:

    এক) শব্দগত বা লেক্সিক্যাল স্তর: এই স্তরে মূলত শব্দ ব্যবহারের ঝোঁকটিকে সনাক্ত করার চেষ্টা করব। চেষ্টা করব দেখতে যে, কতটা বিচ্যূতি (deviation), শব্দপ্রয়োগে, রাখছেন বিনয়। শব্দগুলির প্রয়োগ ও তাদের অন্তর্লীন যোগাযোগ খোঁজার চেষ্টা করব। করপাস স্টাইলিস্টিক্সে ইদানিং সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয় শব্দের একাধিক ব্যবহার ও বিচ্যূত ব্যবহার বুঝে নিতে। যেহেতু আমার এই বাংলা সফটওয়্যারের বিশেষ কোনো সুবিধা নেই, অভিধানের শরণাপন্ন হবো প্রয়োজনে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য এই যে, একই পংক্তির একাধিক শব্দ, এমনকি একাধিক পংক্তির একাধিক শব্দ পারস্পরিক সম্পর্ক রেখে কবিতায় এক ঐক্য ও বিরোধের দ্বন্দ্বের সমন্বয় গড়ে তুলতে পারে। ফলত, শব্দগুলির পারস্পরিক মিতালি ও শত্রুতায় নির্মিত হয় কবিতার প্রাণপ্রতিমা। অনেক সময় এই কাব্য-প্রতিমার মুখ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই না, তবু কবিতা তার নিজস্ব গরিমায় আমাদের মুগ্ধ করে।

    দুই) ধ্বনিগত স্তর : ফোনেটিক সামঞ্জস্য কিভাবে কবিতাটিকে গতিশীল করে তুলল, এবং কিভাবে একটি ধ্বনিগত মিল আসার পর অন্যতর ধ্বনিসমন্বয় কবিতাটিতে যুক্ত করছে ব্যতিক্রমী বৈচিত্র্য, তা বোঝার চেষ্টা করব।

    তিন) সিনট্যাক্স থেকে পারস্পরিক বাক্য: সখ্যতা ও বিরোধের ঝোঁক থেকে কোনো কেন্দ্রীয় প্রবণতা আছে কিনা দেখার প্রয়াস থাকবে।

    চার) কবিতাটির মূল সুর, ভাবনা ও গহন উচ্চারণ সনাক্ত করা।

    আসুন, কবিতাটিকে পাঠ করা যাক।

    লাইন (১) :

    সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।

    একটি দৃশ্য। সন্তপ্ত কুসুম বা ফুল ফুটে আবার ঝরে যায়। কুসুমের আগে ‘সন্তপ্ত’ শব্দটি লক্ষ্য করুন। শব্দটি অপ্রচলিত। তাই হরিচরণের অভিধানের শরণাপন্ন হলাম। সন্তপ্ত শব্দের প্রচলিত অর্থ –ক) ব্যথিত; দ্বিতীয় অর্থ- খ) অগ্নিদগ্ধ/বিশুদ্ধ; তৃতীয় অর্থ- গ) উত্তপ্ত। ব্যথিত কুসুম অর্থে পড়লে যে-কুসুম অকালে ঝরে যাবে তার বেদনার অর্থে পড়া চলে শব্দটিকে। দ্বিতীয় অর্থে অগ্নিদগ্ধ বা বিশুদ্ধ অর্থে পড়লে এক ধরণের আগুনে পুড়ে শুদ্ধ হওয়ার নিহিত অর্থ বহন করে শব্দটি। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সদ্য ফোটা রোদে পোড়া ‘শুদ্ধ কুসুম’। তৃতীয় অর্থে উত্তপ্ত শব্দটি আসলে কুসুমের প্রাণের উষ্ণতা এনে দিল না কি? এর পরে ‘ফুটে’ শব্দটি প্রচলিত ফুলের ফোটা (প্রস্ফুটিত হওয়া) অর্থেই পড়া চলে। কিন্তু ‘ফুটে’ শব্দটির অর্থের অনেকগুলি মাত্রা। উদাহরণ=

    ক) শিশুর মূখে কথা ফুটে (উচ্চারণ করা )
    খ) কুশ-কাঁটা ফুটে ( বিঁধে যাওয়া অর্থে)
    গ) পাখির চোখ ফুটে (উন্মুক্ত হওয়া)
    ঘ) হাঁড়ির ভাত ফুটে (উত্তাপে সেদ্ধ হওয়া)

    এক্ষেত্রে শুধুমাত্র লেক্সিক্যাল স্তর থেকে বিচার করলে এখনো অবধি দেওয়া উদাহরণ অনুযায়ী প্রথম লাইনের দুটি মাত্র শব্দ থেকে (তিন গুনিত চার) বারো রকমের অর্থ নিরূপণের সম্ভাবনা থাকল। এমনকি এর বাইরেও সম্ভাবনা রয়ে যেতেই পারে। ‘সন্তপ্ত’ ও ‘ফুটে’ এক্ষেত্রে কবিকৃত সচেতন/অচেতন বিচ্যুতি (deviation), যা শৈলীবিজ্ঞানে অজস্র সম্ভাবনা এনে দিতে পারে পাঠপ্রক্রিয়ায়।

    তথাপি, এই আলোচনায় ‘সন্তপ্ত’ থেকে তপ্ত/তাপ এবং ‘ফুটে’ থেকে উত্তাপ: শব্দদ্বয় নির্বাচন করলে যেন এক ‘জ্বর/তাপ/ অসুখ’ এর যোগাযোগ ফুটে উঠতে পারে। এবং পরবর্তী অংশে ওই এগোলে দেখি কুসুমের ‘ক্ষোভে’ ঝরে যাওয়া। ওই (১) নম্বর পঙক্তি বলে দিচ্ছে :

    সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়।

    আবার হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় খুলে দেখতে পাচ্ছি ক্ষোভ শব্দটির অর্থ ক) বিকার,খ) তাপ,গ) ব্যথা, ঘ) আন্দোলন ইত্যাদি। সুতরাং, প্রথম তিনটি উল্লিখিত শব্দ (সন্তপ্ত, ফুটে, ক্ষোভে) যেন একটি বিকারগ্রস্ত ও মুমূর্ষু প্রাণের কথা বলতে আগ্রহী, যেখানে একটি তাপীয় অনুষঙ্গ ব্যবহৃত হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় প্রবণতা হিসেবে।

    ঝরে যাওয়াই পরিণতি যেখানে, সেজন্যই কি বারবার বিকার, তাপ ফিরে ফিরে আসছে, এ কি অসুখের বা তীব্র জ্বরের অনুষঙ্গ? তাহলে কি কুসুম এখানে শুধুমাত্র চিহ্ন বা সঙ্কেত? যে-কুসুম ফল দিতে পারত, বীজ থেকে এনে দিতে পারত নতুন সম্ভাবনার গাছ, সে অকালেই ঝরে গেল। কেন যেন মনে হচ্ছে নিছক কুসুম নয়, অকাল ভ্রূণের ঝরে যাওয়া আসছে ওই তাপীয় অনুষঙ্গ থেকে। যেন একটি জীবন্ত সম্ভাবনার অকালমৃত্যুজনিত ক্ষোভ। বারবার মনে হতে থাকছে ‘ফুটে’ শব্দটি যেন শিশুর মুখে কথা ফোটা, পাখিশিশুর চোখ ফোটা-এই দিকে ইঙ্গিত এনে দিচ্ছে। তাছাড়া ‘ফুটে’ শব্দটি যেন পাঠকের মর্মে বিঁধছে ছোরার মত। মনে হচ্ছে যে-তাপ বারবার ফিরে আসছে, এই তাপ যেন ডিমের ওপর বসে থাকা মা-মুরগীর তা দেওয়ার মতন প্রাণের তাপ, যা চাইছে ডিমের প্রাণবন্ত কুসুমগুলি, যার প্রভাবে প্রসূত হয় নবজাতক। ‘ফুটে’ বিনয়ের শব্দ প্রয়োগ যেন সুকুমারের আবোল তাবোল ধাঁধাঁ: তুমি ভাবো ফুল ফোটে, আমি ভাবি পটকা। আরও মনে হচ্ছে, এই কবিতা অকালে ঝরে যাওয়ার এক বিকল্প ন্যারেটিভ বলতে আগ্রহী।

    পরের দুটি লাইন এগিয়ে পড়ি এবার:

    (২) দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু,

    (৩) তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না

    কুসুমের ঝরে যাওয়ার দৃশ্য ‘দেখে’ বিনয় কবিতা লিখছেন, নিজেকে কবিকুলের একজন ধরে নিয়েই যেন লিখছেন: ‘দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়’। অথচ, যে তরুর নিজের অংশ কুসুম, সেই কুসুম বা ফুল ঝরে গেলেও সেই তরু, যেন নির্বিকার, ভ্রূক্ষেপহীন, তার এই বেদনা বোঝার ক্ষমতা নেই। লক্ষ্যণীয় এই, যে, বেদনা, বিনয়ের মতে, বুদ্ধিগ্রাহ্য বিষয়, স্পষ্ট এই উচ্চারণ: এই প্রিয় বেদনা বোঝো না। এরপর ‘কষ্ট পায়’ না লিখে শব্দগত বিচ্যুতি আবার বিনয় আনলেন, ‘ক্লেশ পায়’ লিখলেন। তৎসম ও অপ্রচলিত ‘ক্লেশ’ এর সঙ্গে চলতি ‘পায়’ মিলে মিশে বসলো স্বচ্ছন্দে। ক্লেশ শব্দের অর্থ ব্যথা, পরিতাপ, বেদনা ইত্যাদি। পরের লাইনেই ‘নির্বিকার’ শব্দটি প্রযুক্ত। এখানে নির্বিকার কে ভেঙে যদি বিকার-হীন এই অর্থে পড়া যায়, তাহলে আগের পঙক্তির ‘সন্তপ্ত’, ‘ফুটে’, ‘ক্ষোভে’র সঙ্গে এই শব্দের বিরোধ ধরা পড়ে। প্রথম পংক্তির উল্লিখিত তাপ, জ্বর ও বিকার আর তৃতীয় পংক্তির নির্বিকার(তাপ- উত্তাপ হীন ) এক বিরোধী প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে শব্দগুলির যোগসাজশে। তরু ও কবি এক্ষেত্রে যেন বিপ্রতীপ এক সম্পর্কে যুক্ত হতে পারল। কীভাবে? কুসুমের ঝরে যাওয়া সত্ত্বেও তরু, নির্বিকার, তাপহীন; আর বিকারগ্রস্ত, জ্বরগ্রস্ত কবি, ক্লেশ পায়। এক সমূহ বিরোধাভাস গড়ে উঠছে যেন।
    এর পরেই আসছে পরিচিত ‘বেদনা শব্দটি। বেদনার আগে ‘প্রিয়’ শব্দের যোগ: ‘এই প্রিয় বেদনা’, একথা একমাত্র বিনয়-কবির সংবেদন লিখতে সক্ষম। অব্যবহিত আগের লাইনে ‘হে তরু’ এই সম্বোধন, এবং পরের লাইনে- ‘প্রিয় বেদনা’, এ-ও যেন এক সম্বোধন। বিমূর্ত বেদনা যেন ‘প্রিয়’ লেখার পর মানবিক সম্বোধনযোগ্য এক অবয়ব নিতে পারছে।

    শব্দসমূহের এই নির্বাচন, নিহিত যোগাযোগ, ঐক্য ও বিরোধ এ-কবিতার ভারসাম্য ধরে রাখছে। ভাবনার বিরোধ গড়ে তূলতে গিয়ে শব্দের প্রায়োগিক বিচ্যুতি এসে ধাক্কা মারছে চিরায়ত পঠন-অভ্যাসে। তিনটি লাইনেই স্পষ্ট, এই কবিতায় একটি শব্দ প্রযুক্ত হয়ে পাশাপাশি সমধর্মী শব্দের সঙ্গে সম্পর্কে যুক্ত হয়ে কবিতার মূল ভাবনাটিকে ফুটিয়ে তুলছে। ফোটা ও ঝরার দ্বন্দ্ব ধরতে গিয়েই এই শব্দসমূহের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা। শৈলীবিজ্ঞানী জন সিনক্লেয়ার বলেছেন কবিতার টেক্সটে একটি বাক্যে কেন্দ্রীয় শব্দটি (নোড) প্রথম ও সপ্তম শব্দটির সঙ্গে সম-অর্থে যুক্ত হওয়াই নিয়ম। এই রকম কোনো চার-শব্দের ব্যবধান মানা লিখিত সূত্র মানতে আমাদের দ্বিধা হয়। তবুও শব্দ-সংক্রান্ত নিহিত যোগাযোগের কথাটি ফেলে দেওয়ার মত না। আধুনিক কর্পাস- লিঙ্গুইস্টদের বিচারে কবি-প্রযুক্ত শব্দসমূহ, এমনকি একই টেক্সটের দূরবর্তী ভিন্ন ভিন্ন বাক্যে, পারস্পরিক যোগাযোগ রাখতে সক্ষম এবং সেক্ষেত্রে মূল টেক্সটের শব্দগত পাঠ খুলে দিতে পারে অনন্ত অর্থময়তার সম্ভাবনা।

    কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি না। (৪)
    নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর (৫)
    মনে নেই গোধূলিতে ; ভালবাসা অবশিষ্ট নেই। (৬)

    (৪)-পঙক্তি শুরু হচ্ছে- ‘কে কোথায় নিভে গেছে’ । উল্লেখ্য, প্রথম পংক্তিতে কুসুম ‘ঝরে যায়’। আর, এখানে কে কোথায় ‘নিভে গেছে’। ঝরে যাওয়া আর নিভে যাওয়া- একই দীর্ঘনিঃশ্বাস এনে দিচ্ছে, যেন দুটি শব্দই সমার্থক, যতি টেনে দিচ্ছে জীবনের। অচিরেই যেন সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে যাচ্ছে, অকালেই ঝরে ও নিভে যাচ্ছে প্রাণ। কিন্তু ‘নিভে গেছে’ আবার প্রথম তিন পংক্তির আলোচিত তাপ, বিকার আর দহন প্রসঙ্গ আবার টেনে আনল যেন। বস্তুত, প্রাণ যেন এক দীপশিখা, জ্বলছিল তার ভেতরের জ্বালানি নিয়ে। প্রাণ তো জৈব-রাসায়নিক। তার ধর্মই যেন নিজস্ব জীবন-স্ফূলিঙ্গটিকে জ্বালিয়ে রাখা। সেই তাপ, সেই দহন শেষ। ঝরে গেছে, নিভে গেছে সব। যদি মনে হয় তাপ এই শব্দের প্রতি এই কবিতাতেই বিনয়ের ঝোঁক ছিল, ছিল দহনের দিকে আর নিভে যাওয়ার দিকে, তাহলে ওই ফিরে এসো চাকার থেকেই অন্য দুটি কবিতার দুটি মাত্র পঙক্তি তুলে আনি:

    ক) কেন যেন সরে যাও, রৌদ্র থেকে, তাপ থেকে দূরে?

    খ) কুক্কুপিন্ট ফুলের ভিতর জ্বরাক্রান্ত মানুষের তাপ, সেই ফুল খুঁজি।

    গ) আর যদি নাই আসো, ফুটন্ত জলের নভোচারী

    তাপ এই শব্দটি জ্বর বোঝাতে, প্রাণের স্পন্দন বোঝাতে, বিকার, ক্ষোভ, বেদনা, অসুখ-এই সব অনুষঙ্গ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে অন্য কবিতাতেও। এবং, বিনয় যেন সরে আসতে চাইছেন না জীবন থেকেই। দ্বিতীয় উদাহরণে আরো স্পষ্ট যে ফুলের মধ্যেই তাপ খুঁজছেন বিনয় সরাসরি। তরু, কুসুম এই অনুষঙ্গে তাপ আর রোদ যেন আরও জরুরী। প্রতিটি উদ্ভিদের তো সূর্যালোক, রৌদ্র ও তাপ- নির্ভরতা প্রানীদের চেয়ে আরো বেশী। সেই জন্য কি কুসুম ও তরুর জন্য এই তাপীয় প্রকল্প? তৃতীয় উদাহরণে তাপের সঙ্গে ফুটন্ত শব্দটি আবার আসছে।

    প্রসঙ্গত, মূল কবিতায় intratextual পদ্ধতিতেই পাঠ করছি, সামান্য ইন্টার-টেক্সচুয়াল পদ্ধতির আশ্রয় নিলাম মাত্র, সেটুকুও কেন্দ্রীয় ভাবনায় পৌঁছনোর জন্যই।

    (১) আর (৪) এ দুই মৌলিক ফারাক আছে। প্রথম পংক্তিতে আছে নিশ্চয়তার প্রত্যয়। কিন্তু, চতুর্থ লাইনে অনিশ্চয়তার এক মৃদু ফ্রাস্ট্রেশন; সনাক্ত করে দেখুন:

    (১) সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়

    (৪) কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি না।

    আসলে (১) আর (৪) এই দুই পংক্তিতে একই কথা বলতে চাইছেন বিনয়, কিন্তু এখানে পরবর্তী অংশে লিখছেন: ‘ কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানিনা’

    অন্য ন্যারেটিভ লিখতে বসেছেন কবি, ঝরে যাওয়া, নিভে যাওয়ার, এমনকি এই ন্যারেটিভ নিছক প্রাণের স্পন্দন থেমে যাওয়া নয়, তা স্বপ্নভঙ্গের বা বিপ্লবের ব্যর্থতাও হওয়া সম্ভব। তথাপি, এখানে কবি দেখছেন ইতিহাসের/ব্যক্তির ঝরে যাওয়ার/নিভে যাওয়ার আখ্যানে আসলে পাল্টা বয়ানের কোন চিহ্ন পড়ে নেই। এই নিভে যাওয়া, এই ঝরে যাওয়ার সব কাহিনীই আসলে গুপ্ত। এবং হয়ত, লুপ্তও। এই সব গুপ্ত কাহিনী, বিনয়ের অসহায় স্বীকারোক্তি, ‘জানি না’। যেন তরু যেমন বেদনা বোঝে না, বিনয়ও একই রকম অসহায়, লিখছেন- ‘তার গুপ্ত কাহিনী জানিনা’। প্রকৃত, যে কোনো অকাল স্বপ্নভঙ্গের কাহিনীর কিছুই কি আমরা আসলে জানি?

    পরের দুই লাইন:

    (৫) নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর

    (৬) মনে নেই গোধূলিতে ; ভালবাসা অবশিষ্ট নেই

    আপাত অর্থে (৫) ও (৬) নম্বর পংক্তি পড়ে নেওয়া যায় এইভাবে: কবি নিজের ভেতর খুঁজে দেখছেন কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই। এমনকি কোনো ভালবাসাও বেঁচে নেই। স্মৃতি নেই, কবিতা নেই। অথচ তিনি তো কবি, কবিতাই লিখছেন। হঠাৎ মনে হতে পারে, স্মৃতিভ্রষ্ট কবি কোন বিপন্নতার কথা বলছেন? হঠাৎ যেন নৈর্ব্যক্তিক কথা বলতে বলতে ব্যক্তিগত হয়ে পড়লেন। তাহলে কি লেখার সময়ে আগেই কোনো এক ক্রাইসিস চলছিল? সেই ক্রাইসিস দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর লিখতে লিখতে যেন হাহাকার এনে ফেললো এই কবিতায়। গোধূলি এলো কেন? দিন কি শেষ হয়ে গেছে? এবারে বাড়ি ফেরার কথা? গোধূলিতে একলা বসে বিনয় লিখতে উদ্যত ঝরে যাওয়ার, নিভে যাওয়ার, গুপ্ত কাহিনীর ন্যারেটিভ। লিখতে গিয়ে ব্যর্থতায় জড়িয়ে যাচ্ছে কলম? নিজের কথাও লিখতে পারছে না তার কলম, ভালবাসা অবশিষ্ট নেই।

    কিন্তু, ‘নিজের অন্তর দেখি’- পড়ার পর আবার হরিচরণের শরণাপন্ন হই। ‘অন্তর’ শব্দটিকে চিনতে চাইছি।
    ক) মধ্যবর্তী
    খ) আত্মীয়
    গ) আসন্ন, নিকট
    ঘ) বিনা- ব্যাতীত অর্থে
    ঙ) অন্য, ভিন্ন – গ্রামান্তর
    চ) সদৃশ

    নিজের অন্তর বলতে নিজের মধ্যবর্তী বা ভিতর অর্থে ব্যবহৃত হলে আগের অনুচ্ছেদে যে অর্থ করা হয়েছে তাই আবার বলতে হয়। কিন্তু ‘অন্তর’ শব্দটিতে, আমার ধারণা, বিনয় বিচ্যুতি ঘটাচ্ছেন। এখানেই থেকে যাচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। অর্থগুলি বসিয়ে আবার লাইনগুলি পড়া যাক।

    খ) নিজের আত্মীয় দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই

    গ) নিজের নিকট দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই

    ঘ) নিজের ব্যতীত দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই

    ঙ) নিজের অন্য(থা) দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই

    চ) নিজের সদৃশ দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই

    প্রিয় পাঠক, শব্দের নিজস্ব পদ্ধতিতে পড়ার ধরন থেকে ভিন্ন ভিন্ন পাঠ-অভিঘাত ও প্রতিক্রিয়া আসা সম্ভবপর। বদলে যাচ্ছে অর্থময়তার ধরন এবং ‘মিনিং মেকিং’ প্রকল্পগুলি। এবং সমগ্র টেক্সটে যেহেতু প্রতিটি বাক্য এবং শব্দ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু খুলে যেতে পারে কবিতার অজস্র সম্ভাবনার দরজাগুলি। সংক্ষেপে খ) গ) ও চ) এক ধরণের অভিঘাত আনতে পারে। অন্যদিকে, ঘ) ও ঙ) আরেকটু অন্য অর্থ তৈরী করতে পারে। ঘ) ও ঙ) এক ধরণের অ্যালিয়েনেশন আনছে (৬) লাইনটিতে। অন্যদিকে খ), গ) ও চ) যেন অনুভূতির তীব্রতাকে কিছুটা কমিয়ে দিলো।

    শেষ লাইনদুটি পড়া বাকি:

    (৭) অথবা গৃহের থেকে ভুলে বহির্গত কোনো শিশু

    (৮) হারিয়ে গিয়েছে পথে; জানে না সে নিজের ঠিকানা

    (৭) এবং (৮) এ এসে যেন বুদ্ধির অগম্য এক উল্লম্ফন। একটি শিশু বাড়ির থেকে বাইরে পথে হারিয়ে গেছে। তার নিজের ঠিকানা জানা নেই। আগের দুটি লাইনে ব্যক্তিগত ক্রাইসিসের একটা আভাস ছিল। কিন্তু, এখানে যেন সঙ্কট আরো তীব্র। ভুল করে বাড়ির বাইরে চলে গেছে যে শিশু, তার তো স্মৃতিতে এমনকি নিজের ঠিকানাও জানা নেই। শিশুটি কতটা অসহায়? শিশুর হারিয়ে যাওয়ার তুল্য অসহায়তা কিছু কি থাকতে পারে?

    কে এই শিশু? এ কি বিনয়ের নিজের অসহায়তা, নিজের ছদ্মবেশ? আগের লাইনে বলছিলেন কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই, এখন কি ঠিকানাও হারিয়ে ফেলেছেন, এমনই বিস্মৃতি? এমনও হতে পারে বিনয় এই কল্পিত শিশুটির পিতা, যেন তার জন্যই তিনি উদ্বিগ্ন। বলা মুশকিল। কিন্তু, মিলিয়ে যদি পড়ি, ‘নিজের অন্তর দেখি’- একে যদি ‘নিজের আত্মীয়’ এমনকি ‘নিজের ব্যতিরেকে’ও পড়ি, তবে আগের লাইন দুটি পরের লাইনদুটির সঙ্গে অনায়াস আত্মীয়তা গড়ে তোলে। কেননা পরের লাইনে শিশুটির মধ্যে দৃশ্য গড়েন বিনয়। আগের লাইনে বিনয় লিখছেন: কবিতার কোনো পংক্তি আর মনে নেই’। এই লাইনে শিশুটি ‘নিজের ঠিকানা জানে না’। অদ্ভুত এক বিস্মৃতির সাদৃশ্য গড়ে ওঠে, তীব্রতর হয় ক্রাইসিস। এছাড়া মনে পড়ে আগের লাইনে ‘গোধূলি’ শব্দটির প্রয়োগ। গোধূলি মানেই যেন সব কাজের শেষে বাড়ি ফেরার পালা, নিজের নির্দিষ্ট ঠিকানায়। সেখানে, শিশুটি বাড়ি ছেড়ে ভুলে পথে বেরিয়ে পড়েছে, নিজের ঠিকানা তার জানা নেই। এছাড়া প্রথম স্তবকে যে কুসুম, বা অকালে ঝরে যাওয়ার মূল দৃশ্যটি থেকে কবিতা শুরু হয়েছিল, সেই অপরিপক্ক কুসুম যেন এক অপরিণত শিশুর ছদ্মবেশে দেখা দিল। একটি অপরিণত শিশুর হারিয়ে যাওয়া মানে অকালেই ঝরে যাওয়ার সম্ভাবনা।

    এতদূর অবধি যে পাঠপদ্ধতি অনুসরণ করলাম সেই পদ্ধতি বহুল প্রচলিত এবং এই পদ্ধতির তিনটি স্তর: কবির প্রযুক্ত বিচ্যুত শব্দটির অর্থ উদ্ধার করা, তারপর সন্নিহিত অপর শব্দগুলির নিহিত অর্থ প্রণয়ন-Progressive delexicalisation, শেষে সমন্বয় সাধন অথবা relexicalisation, যেখানে শব্দ সমূহের সমন্বয়ে নতুন অর্থের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে। শব্দের প্রকৃত বা নিহিত অর্থ ফুটে ওঠে অন্য শব্দগুলির সঙ্গে যোগাযোগে। বিশদে দেখতে হলে (১১) নম্বর রেফারেন্স দেখুন।

    এবারে আসছি ধ্বনিসূচক অংশ বা ফোনেটিকসের জায়গাটিতে, যেটি শৈলীবিজ্ঞানে অপরিহার্য।
    প্রথম থেকে চতুর্থ লাইন অবধি কবিতার গতিময় চলন লক্ষ্য করুন, এবং দেখুন ‘আয়’ এই ধ্বনিঝোঁক, নিজের মত করে ভেঙ্গে লিখছি বোঝানোর সুবিধের জন্য:

    সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায়

    ক্ষোভে ঝরে যায়

    দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়

    কে কোথায়

    এই অর্ধস্বর (আয়) এই কবিতার চতুর্থ লাইন অবধি বিস্তৃত এবং তা কবিতাটিতে এক সুষম গতি সঞ্চার করতে সমর্থ হয়েছে। ‘অথচ হে তরু, তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না’- এই অংশটি এই ধ্বনিমিলের বাইরে, এবং অর্থের দিক দিয়েও এই চারটি লাইনের বাইরে একটি ভিন্ন অর্থ পোষন করে। এক্ষেত্রে কন্ট্রাস্ট হিসে্রেই যেন ধ্বনিমিল এড়িয়ে গেলেন বিনয়। পাল্টা যে স্পষ্ট মুক্তধ্বনির ধ্বনিগত মিল লক্ষ্য করছি তা হল ‘ওনা’, ‘ইনা’ ও ‘আনা’ ।

    এই প্রিয় বেদনা

    বোঝো না

    কাহিনী জানি না

    জানে না

    সে নিজের ঠিকানা

    আরেক রুদ্ধস্বরের ধ্বনি সাযুজ্য পাওয়া যাচ্ছে এই কবিতায়, তা হল ‘আর’ :

    তুমি নিজে নির্বিকার

    কে কোথায় নিভে গেছে তার

    নিজের অন্তর দেখি, কবিতার

    কোনো পংক্তি আর

    মূলত অর্ধস্বর, মুক্তস্বর ও রুদ্ধস্বর- এই তিন রকমের ফোনেটিক্সের আয়োজন করেছেন বিনয় এবং তা আট লাইনের কবিতাতেও স্বচ্ছন্দ গতি অব্যাহত রেখেছে এবং গড়ে তুলছে প্রয়োজনীয় ধ্বনিবৈচিত্র্য, যা পাঠে প্রকৃত তৃপ্তি এনে দিতে পারে।

    এই কাব্যকাঠামোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো ক্রিয়াপদের অস্বাভাবিক প্রাচুর্য, যা কবিতাতে স্বচ্ছন্দ এক পাঠগতি সঞ্চার করে। নিচের আন্ডারলাইন করা অংশ লক্ষ্য করুন:

    সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়। (১)

    দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু, (২)

    তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না। (৩)

    কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি না। (৪)

    নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর (৫)

    মনে নেই গোধূলিতে ; ভালবাসা অবশিষ্ট নেই। (৬)

    অথবা গৃহের থেকে ভুলে বহির্গত কোনো শিশু (৭)

    হারিয়ে গিয়েছে পথে; জানে না সে নিজের ঠিকানা। (৮)

    আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, ‘নিজের’ বা ‘নিজে’- এই অ্যানাফরের এক সচেতন প্রয়োগ।

    ক) তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না।

    খ) নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর

    মনে নেই গোধূলিতে ;

    গ) জানে না সে নিজের ঠিকানা।

    এই ‘নিজে’ বা ‘নিজের’ শব্দের অ্যানাফর, এই প্রয়োগ থেকে মনে হয় প্রত্যেকটি ক্রাইসিস ব্যক্তির নিজের। এখানে যেন তরু, বিনয় ও শিশুটি নিজেদের সঙ্কট নিয়ে এক কবিতার একটি সুরেই বাঁধা, অথচ কষ্টের ধরণ নিয়ে তারা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ। তীব্র সঙ্কটের ‘নিজ’ বা ‘নিজের’ বুদ্ধির অতীত, সমাজচ্যুত এক একাকীত্ব, যা এই বিনয়-কবিতায় ধরা পড়েছে।

    এই কবিতাটি এতক্ষণ পড়ার পরেও যেন বাকি থাকছে কথা। কিসের জন্য যে এমন সব শব্দের প্রস্তাবনা?

    নির্বিকার, বোঝো না, জানি না, মনে নেই, 'ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই', ভুলে গেছে, জানে না-ইত্যাদি।

    কিছু যেন নেই। নেই আর না এর হাহাকার। বিস্মৃতিতে ডুবে যেতে চায় এই কবিতা, শব্দ পেরিয়ে নৈঃশব্দের দিকে যেতে চায়, জ্ঞান থেকে নির্জ্ঞানের অভিমুখে এই কবিতার যাত্রা যেন, বিনয়ও যেন সেই বোধির পথে যেতে চেয়েছেন। যেখানে গোধূলির বিস্মৃতি। রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় ঠিকানাহীন ছদ্মবেশী শিশু।

    গোধূলিতে শেষ হয় এই কবিতা, কারণ এর পরেই ওই অন্ধকার নামবে। শুরু হয়েছিল রোদ আর তাপের প্রস্তাবনা নিয়ে, শেষে আসবে শীতল আঁধার হয়তো, ইঙ্গিত রয়ে যাচ্ছে।

    কেন জানি এই কবিতা পড়ে মনে হতে পারে- শিমুলপুর নয়, মহাস্থবির বিনয়ের প্রকৃত ঠিকানা কোথায় তা আমরা জানতাম না। শিশুটির মতো।

    নির্দেশিকা :

    (১) ফিরে এসো চাকা-বিনয় মজুমদার, অরুণা প্রকাশনী, ১৪১৪

    (২) বঙ্গীয় শব্দকোষ- হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়- প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড- সাহিত্য অকাদেমী

    (৩) শৈলীবিজ্ঞান এবং আধুনিক সাহিত্যতত্ত্ব, ডঃ অভিজিৎ মজুমদার, দে’জ পাবলিশার্স, ২০০৭

    (৪) ভাষাবিজ্ঞান, ডঃ উদয়কুমার চক্রবর্তী ও ডঃ নীলিমা চক্রবর্তী, দে’জ পাবলিশার্স, ২০১৬

    (৫) ভাষা প্রসঙ্গ ও ধ্বনিবিজ্ঞান, অভিজিৎ মজুমদার, দে’জ পাবলিশার্স, ২০১৪

    (৬) বাংলা ভাষা ও চমস্কির তত্ত্ব, ডঃ নীলিমা চক্রবর্তী, দে’জ পাবলিশার্স, ২০১৭

    (৭) গদ্যরূপ, বীতশোক ভট্টাচার্য, বাণীশিল্প, ২০১০

    (৮) কবিতার ভাষা, কবিতায় ভাষা, বীতশোক ভট্টাচার্য, বাণীশিল্প, ২০০৪

    (৯) কবিতার শৈলী: প্রাসঙ্গিক ভাবনা ও বিশ্লেষণ, অভিজিৎ মজুমদার, আলোচনা চক্র- সংকলন ৪৫ অগস্ট-২০১৮

    (১০) English Collocation studies: The OSTI report(Corpus and Discourse), Sinclair, Jones, Daley, Continuum, 2004.

    (১১) Corpus Stylistics as Contextual Prosodic Theory and Subtext-Lou and Milojkovic-John Benjamin Publishing Company, 2016

    (১২)Basic Semantics- M. G. Rambaud-Universidad Nacional De Educacion a distancia, 2012

    (১৩) Deviation (ash-Shaṭḥā or al-Ghulū aș-Șūfi) in the Contemporary Poetry of Arab and American Mystical Women Poets, W A Abdulaali, Harvard Divinity School, Harvard University (Source: web), Year-unknown

    (১৪) The semantics of poetry: a distributional reading, Aurelie Herbelot, University of Cambridge (Source: web), Year-unknown

    (১৫)Key Terms in Stylistics, Nina Nørgaard, Rocío Montoro and Beatrix Busse, Continuum International Publishing Group, 2010

    (১৬) Mapping Intertextuality: Towards a Cognitive Model, Maria-Eirini Panagiotidou, PALA, Genoa: The Language of Landscapes, 2010

    (১৭)Stylistic Analysis of the Poem ‘The Patriot’: A Semiolinguistic Approach, Bablu Ray, Interdisciplinary Journal of Linguistics,Volume (10), 199-206, 2017

    (১৮)Exploring the language of poems: A Stylistic Study, Novitas-ROYAL (Research on Youth and Language), 4 (2), 129-140, 2010

    (১৯)Stylistics, Paul Simpson, Routledge, 2004.

    (২০) Teaching poetry in the relationship of phonetics and semantics, Nilgün Açik Önkas, Procedia Social and Behavioral Sciences 2, 4955-4960, 2010
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১২ মে ২০১৯ | ১২৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন