এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  খ্যাঁটন  খানাবন্দনা

  • চাষার ভোজন দর্শন – ৩৪ পর্ব  

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    খ্যাঁটন | খানাবন্দনা | ১৩ মে ২০২৩ | ৭৩০ বার পঠিত

  • এত দামী রেষ্টুরান্টে খেতে এসে যে খাবারের প্যাকেট যে নিজেকে খুলে খেতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবি নি। তাই ওয়েটার-কে অবাক হয়ে বললাম,

    - ভাই, অ্যালুমিনিয়ামের র‍্যাপটা অন্তত খুলে দাও! ফয়েল-এর ভিতরে রেখে প্লেটে খাবার সার্ভ করা কি ঠিক হচ্ছে?
     
    আমার প্রশ্ন শুনে ওয়েটার ঘাবড়ে গেল।  বলল –

    - স্যার, এটা তো জ্যাকেট পট্যাটো। এমন ভাবেই তো সার্ভ করা হয়।
    - কি পট্যাটো?
    - জ্যাকেট পট্যাটো
     
    নাম শুনে নড়ে চড়ে বসলাম। বর্ধমানের চাষার ছেলে – আলুময় জীবন যাকে বলে।  জ্যোতি, চন্দ্রমুখী আলু নিয়ে লোফালুফি খেলে জীবন কেটেছে – কিন্তু তাদের কেউই কোন জ্যাকেট পরা অবস্থায় আমাদের কাছে ধরা দেয় নি। আর এই এতদিন পরে সাত সমুদ্দুরু পেরিয়ে অ্যালুমিনিয়ামের খোলস পরিয়ে আমার পাতে আলু পরিবেশন করতে এসেছে! ভাঙবো কিন্তু মচকাবো না – এই পণ করে পরে প্রশ্ন নিক্ষেপ করলাম

    - তা খামোকা আলুকে জ্যাকেট পরিয়েছো কেন?
    - স্যার, এই ভাবেই তো আলুকে রোষ্ট করা হয়েছে
     
    যা বোঝার বুঝে গেলাম – পুরো ঢপ দিয়ে পকেট কাটবে, পাতি কথায় আলু পোড়া খাওয়াচ্ছে চীনামটির সাদা প্লেটে। কিন্তু পাশের সাদা রঙের ওটা কি দিয়েছে? দই নাকি? দই দিয়ে আলুপোড়া খাচ্ছি মা যদি ফোনে কথা বলার সময় শোনা, তাহলে মনের দুঃখে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেবে, “গোপাল আমার বিদেশ গিয়ে না খেয়ে আছে গো!” – এই মর্মে। কিন্তু দৈ কি আদৌ? তিন মিনিটের মধ্যে দুইবার অপ্রস্তুত হতে ভালো লাগবে না। তাই ওয়েটার চলে গেলে চামচ করে এই সাদা জিনিস তুলে চেখে দেখলাম – ক্রীমের মতই, তবে টকটক – যাকে নাকি এরা ‘সাওয়ার ক্রীম’ বলে!

    পয়সা দিয়ে খাবার কেনা – মানে আট ইউরো (৭০০ টাকা প্রায়) দিয়ে আলু পোড়া কিনেছি, তো সেই জিনিস ফেলে দেবার বান্দা আমি নয়। সোনামুখ করে ৭০০ টাকার আলুপোড়া খেলাম অ্যালুমিনিয়াম খোলস থেকে বের করে। চোখ দিয়ে জল প্রায় গড়িয়ে পড়ল। মাঠে আলু তোলার পর যা কিছু টুকটাক মাটির নীচে লুকিয়ে থাকত সেগুলো আমরা খুঁজে তুলে এনে ধান সিদ্ধর উনুনে ঢুকিয়ে পুড়িয়ে খেতাম! সে কি টেষ্ট সে আলু পোড়ার – আনন্দে চোখে জল চলে আসত। তখন কি আর স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছিলাম গ্যাঁটের পয়সা খরচা করে আলু পোড়া খেয়ে দুঃখে চোখের জল গড়াবে একদিন!

    প্রশ্ন উঠতেই পারে কে বলেছিল জ্যাকেট পট্যাটো অর্ডার করতে? ওই যে চাষা আঁতেল হতে চাইলে যা হয় আর কি! সেদিন রেষ্টুরাণ্টে মেনু না দেখে পাকামো করে ওয়েটার-কে বলেছিলাম কেত নিয়ে – “তোমাদের স্পেশাল অ্যাপেটাইজার টাইপের যা আছে এনে দাও”। আমারই ন্যাজটা তুলে দেখা উচিত ছিল জিনিসটা এঁড়ে নাকি বকনা!  

    তো সেদিন তো এই ভাবে গেল ‘আর্জেন্টিনিয়ান স্টেক’ হাউসে ঢুকে।  জ্যাকেট পট্যাটো খাবার দিন ভ্যাগিস একা ছিলাম – কিম্বা একা থাকাটাই হয়ত ভালো হয় নি, সাথে অন্য কেউ থাকলে বিপর্যয় এড়ানো যেত! আচ্ছা, এই স্টেক হাউসের ব্যাপারে একটা ছোট্ট গল্প বলে নিই, না হলে আবার ভুলে যাব।  অনেকদিন আগে ইউরোপের কোন এক শহরে অফিসের কাজে গিয়েছিলাম  - সন্ধ্যেবেলা ডিনারে গেছি এক কলিগের সাথে এক বিখ্যাত স্টেক হাউসে। সাথের কলিগটি খুব রসিক ব্যক্তি – তবে অন্য ধরণের হিউমার, সবার ভালো লাগতো না, কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগতো ওর সঙ্গ।  সেদিন গিয়ে প্রিমিয়াম স্টেক অর্ডার করেছি – ওয়েটার জানতে চাইলো, ‘স্টেক কেমন কুক করা হবে’? আমি কি ভেবে সেদিন বললাম, ‘মিডিয়াম – ওয়েল’ দিতে।  ওয়েটার চলে যাবার পর, কলিগ আমাকে বলল, “আচ্ছা তুমি এই প্রিমিয়াম স্টেক ওয়েল ডান করে খাবার থেকে আমার জুতোর সুকতলাটা চিবিয়ে খেতে পারো!”

    যাই হোক আমার মূল গল্পে ফিরে আসা যাক।  জ্যাকেট প্যাটেটোর কেলেঙ্কারির পরে দিন ঠিক করলাম ট্রায়েড অ্যান্ড টেষ্টেড রুটে ফিরে যাব – মানে ইতালিয়ান।  আমায় দেশের বাইরে গিয়ে রেষ্টুরান্ট পছন্দ করতে বললে দশবারের মধ্যে অন্তত চারবার অবচেতন মনে ইতালিয়ান রেষ্টুরান্টে ঢুকে পরব!  তেমনি সেদিন সন্ধ্যেবেলা হোটেলের কাছেই এক ভালো রেটিং যুক্ত ইতালিয়ান রেষ্টুরান্টে ঢুকে জাঁকিয়ে বসে খাবার অর্ডার করলাম। 

    এরপর খাবারের জন্য বসে আছি, মোবাইল ঘাঁটছি আর মাঝে মাঝে যে মেয়েটিকে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলাম তার দিকে নজর রাখছিলাম।  এক সময় দরজার ওদিকে থেকে মেয়েটি খাবারের প্লেট নিয়ে উদয় হল।  আমি নড়ে চড়ে বসে মেয়েটির বাঁহাতের দিকে নজর দিলাম তীব্র, ভাবলাম ডানহাত থেকে নামানো এটাই কি শুধু রাতের খাবার হতে যাচ্ছে!
     
     

    ভগবান কি এতই নিঠুর!
     
    উত্তরও পেয়ে গেলাম খুব তাড়াতাড়ি। মিষ্টি মেয়েটির বাঁহাত খালি পুরোপুরি! বুকের এদিক থেকে ওদিকে একটা শিরশিরানি ঢেউ খেলে গেল তীব্র ভয়ের!
     
    খিদের চোটে এমনিতেই গলার আওয়াজ কমে গিয়েছিল, তারপরেও আরো খাদে গলা নামিয়ে ফিসফাস করলাম -

    - বোন আমার, বলছি আর কিছু নেই সাথে?
    - না তো! আর তো কিছু অর্ডার করেন নি
    - পাস্তা অর্ডার করেছিলাম বলেই তো মনে হচ্ছে!
    - পাস্তাই দিয়েছি তো
    - কোথায়?
    - ওই তো চিঙড়ির নীচে
     
    চিঙড়ির নীচে পাস্তা? এ কি রূপের পাস্তা?  এতো পাড়ার ফিষ্টিতে শেষের দিকে মাংসের ঝোলের বালতিতে মাংস খোঁজার থেকেও খারাপ অবস্থা!
     
    আর চিঙড়ি? এদের রেষ্টুরান্টের রেটিং এর সংখ্যাটি চিঙড়ির সংখ্যার থেকে বেশী! আর সাথে ঝিনুক যারা, তারা মনে হয় ডায়াটিং-এ ছিল! মাংস একরত্তি শুধু
    একবার তবু শেষ চেষ্টা করলাম -

    - তাহলে বলছো বোন আর কিছুই আসবে না?
    - কি করে আসবে? অর্ডার তো করেন নি!
    - আচ্ছা যদি এখন অর্ডার করি?
    - চট করে তো আসবে না। আমাদের কিচেনে প্রচুর অর্ডার এখন
    - কিসের অর্ডার?
    - কেন এই ঝিনুকের! এ কি যে সে ঝিনুক ভেবেছেন নাকি? ইংল্যান্ডের সমুদ্র উপকূল থেকে তোলা
     
    আর কথাবার্তা বাড়ালাম না। বুঝতেই পারলাম এখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যেতে হবে - হোটেল ফেরার আগে সামনের ম্যাকডোনাল্ডস ভায়া

    আর হ্যাঁ, ফেরার আগে একটা ঝিনুকের খোল ন্যাপকিনের মুড়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম। স্মৃতিচিহ্নও হল আবার দরকার হলে সেই খোল দিয়ে গা হাত পা চুলকানোও যাবে!

    আলোর গতিবেগ ছাড়া এই ব্রহ্মান্ডে বাকি সবকিছুই যে আপেক্ষিক তা আবার কিছুদিন পরে টের পেলাম!
     
    জার্মানির বার্লিন শহরে যতদূর মনে পড়ছে - কোন এক ফ্রেঞ্চ ফিউশন রেষ্টুরান্টে

    ওয়েটারকে ডেকে "ভাই আমার, তোমাদের সব চেয়ে বেশী চলা ডিসটা এনে দাও" - এই বক্তব্য পেশ করে বহু জায়গায় সাফল্য লাভ করেছি।
     
     
     
     
    খাবার যখন নামিয়ে দিয়ে গেল, ভাবতে শুরু করলাম আরো নিশ্চয়ই কিছু আসছে - নয়তো আমি বোঝাতে ভুল করেছি! "সব চেয়ে বেশী চলা ডিস" বলেছিলাম, তার মানে শুধু ডিস বোঝাতে চাই নি, ডিসের উপর খাবার রাখা থাকবে সেটা ধরে নিয়েছিলাম। প্লেটের দিকে বিহ্বল তাকিয়ে ফ্ল্যাশব্যাকে ভাবতে বসলাম ওয়েটারের সাথে কথোপকথন

    - স্যার, স্টার্টার কিছু নেবেন না?
    - প্রচুর খিদে পেয়েছে ভাই, একেবারে মেন ডিস এনে দাও
    - কি খাবেন মেনু দেখে ঠিক করলেন?
     
    চক্ষুলজ্জার খাতিরে তাকে আর বলতে পারলাম না যে মেনু দেখে কিছুই বুঝতে পারি নি! তাই সেই বলতেই হল

    - মেনু আর কি দেখব! তোমাদের সবচেয়ে বেশী চলা ডিসটা এনে দাও
    - ওটা স্যার হবে গিয়ে 'স্ক্যালপ উইথ এটা সেটা..."
    - কি লপ?
    - স্ক্যালপ
    - তাই এনে দাও
     
    হাওড়া থেকে মিনিবাসে কেবল একশো টাকার নোট নিয়ে ওঠার মত ভুল করে বসলাম। তখনো এত ফ্রী ওয়াই ফাই, তাই মোবাইল ঘেঁটে স্ক্যালপ কি জিনিস জানা হল না!

    ফাষ্ট ফরোয়ার্ড - প্লেট সামনে নিয়ে আমি বসে আছি। বেশ খানিক বসে আছি দেখে এই ছেলে এসে বলল

    - স্যার, আপনি খাবেন না? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!
    - হ্যাঁ খাবো তো, মেন ডিসটা আসুক। একসাথে খাব
    - মানে?
     
    ওয়েটারের 'মানে' শুনেই আমি বুঝে গেলাম। এমন আমার প্রায়ই হয়। মানে মানে খেতে শুরু দিলাম -"এই খাচ্ছি তো" বলে।
    প্লেটের তলার সাদা ঘ্যাঁটটা চামচ দিয়ে মুখে দিলাম। নুন বিহীন আলু চটকানো। তবে বলতেই হবে চটকেছে ভালো, কোন ঢ্যালা ঢ্যালা ভাব নেই। আলু ভাতের নেকস্ট স্টেপ আর কি
    কিন্তু তার উপরে স্ক্যালপ নামক বস্তুটি কি খেয়েও বুঝতে পারলাম না। খেয়ে নিলাম খিদের চোটে।
    ছেলে বিল দিল - বিলের পরিমাণ দেখে নিজেকে প্রবোধ দিলাম দারুণ জিনিস খেয়েছি বলে

    হোটেলে ফিরে কি মনে হতে স্ক্যালপ সার্চ করলাম - খুবই ভুল কাজ হল সেটা কারণ তারপর রাতে মাঝে মাঝেই ঘুম ভেঙে যেতে লাগলো এই হতাশায় যে এত টাকা দিয়ে শেষে বড় ঝিনুকের মাংস খেয়ে এলাম!


    এভাবেই দিন কাটে – আমিও এদেশ সেদেশ ঘুরে বেড়াই আর খেয়ে।  আপনারা যারা আমষ্টারডাম গ্যাছেন তাঁরা জানবেন যে আমষ্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বেরিয়ে এসেই যে সোজা রাস্তাটা চলে গেছে তা পাশে দিন রাত বছরের বারো মাস টুরিষ্টে ভরপুর। এখানেই দাঁড়িয়ে আয়েশ করে আলুভাজা খেয়ে জনতা বোট ট্যুর আরম্ভ করে – ‘ডামরাক’ নামক খালটি থেকে। তাই এই ডামরাক খালের উল্টো পারে বেশ কিছু নামকরা রেষ্টুরান্ট আছে। তার মধ্যেই একটাতে খেতে গিয়েছিলাম সেদিন – এটার শেফের আবার কেতের চূড়ান্ত। যদি রেষ্টুরান্টের গেটের সামনে গিয়ে ঢুকতে যান গুগুল রিভিউ দেখে, তাহলে দেখবেন বড় বড় করে লেখা আছে ‘বাই ইনভিটেশন অনলি’। এর মানে হল আগে থেকে বুক করে আসতে হবে – এবং শেফ তবেই রেষ্টুরান্ট খুলবেন যখন তাঁর মনে হবে আজ বেশ কিছু লোকজন এসেছে, তাহলে আজ রাঁধা যাক!

    সেদিন অফিস থেকে একজন বলল আজ এখানে খাওয়া যাক – রেষ্টুরান্টের নামের মধ্যে ফ্রেঞ্চ ঢুকে আছে বলে, অনেকে হাঁই হাঁই করে উঠল কাটিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু লোকেশন দেখে আর কেউ পিছপা হল না।



    এমন জিনিস একদমই দেখি নি বললে অধর্ম হবে। বাড়িতে দুর্গা পুজোর সময়ে ঘাটে কলাবউ স্নান করাতে নিয়ে যাবার সময় এক বড় পিতলের রেকাবীতে সাত সমুদ্রের জল, অগরু, সিঁদুর, কালো তিল, কাদার ঢ্যালা, দুব্বো ঘাস সহ আরো হরেক অজানা জিনিসপত্র ছড়ানো থাকে যেগুলো কি সেটা শুধু পুরুত ঠাকুর ছাড়া আমাদের গোটা নিমো গ্রামে কেবল তিন জন জানে।  এবং বুঝতেই পারছেন সেই তিনজনের মধ্যে আমি আসি না!

    কিন্তু তাবলে সাত সমুদ্র পেরিয়ে কলাবউ স্নানের মত প্লেট খাবার টেবিলে? তবে কিনা এমন শেফ যদি আপনার সামনে এই খাবার রেখে দিয়ে যায়, কেবল এইটুকু কথাই আপনার বেরুবে যা আমার মুখ থেকে সেদিন বেরুলো,
     
    - এটা কি?

    উত্তর এল, “আপনার পাঁচ কোর্স মিলের এটা প্রথম ডিস”।

    বাঙলায় একটা কথা আছে আছে না, ‘উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়’! ভাবতে বসলাম বাঙলা ভাষা যতই ভালোবাসি না কেন, আজ যদি এই বাগধারা আমার প্লেটে নিজের অস্তিত্ত্ব জানান দিতে চায়, তাহলে খুব একটা ভালো হবে না। শেফের ভাব দেখে “অঃ” ছাড়া অন্য কোন তদ্ভব, তৎসম বা অব্যয় শব্দ আমার নিজের মুখ থেকে বেরুলো না।  তবে শেফ সিরিয়াস মুখে নিজের ডিসের গুণগান বর্ণনা করলেন – বলাই বাহুল্য একটি শব্দও চেনা লাগলো না।

    আমার মুখ দেখে শেফের খটকা লাগলো মনে হয় কিছুটা – আমি তাকিয়ে ছিলাম ক্যানালের দিকে। শেফ যখন জিজ্ঞেস করল, “কি দেখছেন”? উত্তর দিলাম, “কি সুন্দর বিকেল, আর ক্যানাল”। আসলে আমি তাকিয়ে ছিলাম ক্যানালের অপর পাড়ের ম্যাকডোনাল্ডসের দিকে। পাঁচ কোর্স মিল যদি এই রেষ্টুরান্টে এমন হয় তাহলে আমার ষষ্ঠ কোর্সটা ম্যাকডোনাল্ডসেই করতে হবে তা নিশ্চিত!

    এ কি এমন শেফ যে একে সমঝে চলতে হল সেদিন – তাহলে খুলেই লিখি। ফেসবুকে যতই বড় বড় কথা লিখে ফেলি না কেন, মাঝে মাঝে কিছু বলতেও প্রবল ইতস্তত হয়। যদিও খাবারের ব্যাপারে অফুরন্ত প্রশ্নেও আমার সাধারণত অসুবিধা হয় না। কিন্তু সেদিন দেখলাম, ওপাশের ব্যক্তি যদি প্রবল কেতদুরস্ত হয়, তাহলে আমার এই চাষার ফটফটে মুখও খুলতে চায় না সহজে! না হলে সেদিন প্রবল খিদের মুখে  এই খাবার টেবিলে সার্ভ করে অত সহজে কি আমার প্রশ্নবান থেকে মুক্তি পেতেন সেই শেফ? এবং তাঁর সহকারিণী?



    যেমন তেমন শেফ হলে আমি জিজ্ঞেস করতাম – “এই জিনিস-কে কি ভাবে খাবার নামে ডাকা যায়?” এই শেফ-কে সেই প্রশ্ন করলাম না, কারণ তার উত্তর আমার জানা। বহুদিন আগে, ১৯১৭ সাল নাগাদ মার্সেল দ্যুসোঁ নামক এই বিখ্যাত ফরাসী চিত্রকর এবং ভাষ্কর, নিউ ইয়র্কের এক মর্ডান আর্ট চিত্র প্রদর্শনী-তে পোর্সেলিনের একখানি সাদা ইউরিন্যাল লাগিয়ে দিলেন দেওয়ালের গায়ে।  ঠিক যেমন সাদা ইউরিন্যাল আমরা শপিং মল বা রেল স্টেশনে ব্যবহার করি। চারিদিকে হই হই পরে গেল। বোদ্ধারা ছেঁকে ধরলেন মার্সেল-কে, তাঁদের প্রশ্ন এই, “এই জিনিস কি করে আর্ট হয়”? মার্সেল দ্যুসোঁ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি বলছি তাই এটা আর্ট”।

    আমি শিওর ছিলাম সেদিন শেফ-কে জিজ্ঞেস করলে ঠিক উত্তর-টাই আমি পেতাম!
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • খ্যাঁটন | ১৩ মে ২০২৩ | ৭৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.251.160.108 | ১৩ মে ২০২৩ ১০:১৮519737
  • ইউরোপে বড্ড কম খাবার দেয় মনে হচ্ছে। আটলান্টিকটা সাঁতরে আরেকটু পশ্চিমে চলে এলেই খেয়েদেয়ে লেফ্ট ওভারের বাস্কো নিয়ে ঘরকে ফেরা যাবে। 
    বাদ্যও, সঠিক কথাটি হলো অগুরু। গরুর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই।
    ভালো লেখা। যেমন আপনার লেখা হয় আর্কি! 
  • Amit | 121.200.237.26 | ১৩ মে ২০২৩ ১০:৫৭519738
  • এত্ত বড়ো সাদা প্লেটে এই টুকু মাত্তর খাবার ? আর্ট মাই ফুট। এতো দেখেই খিদেয় মরে যাবো রে ভাই। 
     
    তবে স্টেক হাউসে আমার ও প্রচুর  ছড়ানো আছে । বাঙাল এর পোলা জীবনে প্রথমবার তখন বিদেশে গেছি মাত্তর কদিন এর জন্যে - মানে মিডল ইস্ট কি আর বিদেশ হলো ?ওগুলো আসলে ইন্ডিয়ার ই পার্ট যাকে বলে- হিন্দি জানলেই দিব্যি কাজ চলে jay। তো ইউকে তে প্রথমবার গিয়ে পড়ে এক্কেরে বুঝ ভোম্বল অবস্থা মাইরি - কোত্থাও কিছু জানিনা-যাচ্ছেতাই ছড়াচ্ছি সবখানে। কিন্তু শখ হয়েছে স্টেক খাওয়ার - মানে জিনিসটা যে কি একবার নিজচক্ষে দেখতেই হবে। কিন্তু সাথে আছে তিনটে তামিল - শালা রা কট্টর ভেজ। ইন্ডিয়ান ইটারি ছাড়া আর কিছু তে ঢুকবে না-এদিকে ফেরার দিন চলে এলো বলে। তো খচে গিয়ে একদিন বিকেলে একাই বেরিয়ে পড়েছি। একটা স্টেক হাউস দেখে ঢুকে পড়লাম। 
     
    বসার পরে একটা ওয়েটার জিগালো কিরকম স্টেক খাবো- তো আমি গম্ভীর গলায় একটু পার্সোনালিটি আনার আপ্রাণ চেষ্টা করে (বুঝতেই পারছো কতটা ডিফিকাল্ট কাজ আমার জন্যে ) জিগালাম কি কি অপসন। তো সে বলে রেয়ার - মিডিয়াম বা ওয়েল ডান। আমি আমার বিলো জিরো লেভেলের আই-কিউ নিয়ে ভেবেছি রেয়ার নিশ্চয় খুব দুষ্প্রাপ্য মাংস - সহজে পাওয়া যায়না (হেসো না মাইরি - প্রথমবার গেছি কিছু মাত্তর না জেনে)। 
     
    ওয়েটার ব্যাটা কিন্তু চেহারা দেখেই বুজেছিলো আমার দৌড়। সে বোজাচ্ছে হয়তো ওটা আমি খেতে পারবোনা- টেক্সচার টা নতুনদের পক্ষে একটু ডিফারেন্ট । মিডিয়াম আর একটু স্পাইসি সস হলে আমার প্যালেটে হয়তো বেটার লাগবে। কিন্তু ওই যে বলে বাঙালের গোঁ। আর সত্যি বলতে কি ব্যাটার অ্যাকসেন্ট টাও আদৌ কিস্যু বুঝচিলাম না- বাঙালি মিডিয়াম এর দৌড় যদ্দুর আর কি। সূতরাং আমি ততক্ষনে ভেবে নিয়েছি এ শালা আদ্যন্ত রেসিস্ট আর হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট - ভালো ভালো জিনিস গুলো নিজের ভাই বেরাদর দের খাওয়ায় - আর আজে বাজে গুলো আমার মতো দেশি দের  আর এসব কঠিন কঠিন ইংলিশ বলে কনফিউস করে দ্যায়। ওসব চলবে না।তো তাকে আমি প্রায় টেনিদার লেভেলের কনফিডেন্স এনে উল্টে ধমকে বললাম রেয়ার ই আনো - ওটাই খাবো। তাপ্পর দেখি সে প্রায় কাঁচা মাংস  রে ভাই- খেতে গিয়ে যে কি অবস্থা সে আর লেখা যাবেনা- প্রথমবার ওরকম একটা আখাম্বা সাইজের কাঁচা মাংস খাচ্ছি - প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড়।  কোনোমতে দু এক পিস্ খেয়ে বাকিটা ফেলে চম্পট - বেরোতে গিয়ে দেখি কোণে সেই বজ্জাত টা ফিকফিক করে হাসছে। জ্বলে গেলো পুরো। 
  • পলিটিশিয়ান | 12.151.47.154 | ১৩ মে ২০২৩ ১৪:৫৮519755
  • একটি পাঁচতারা রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে এক পাড়াতুতো দাদা ওয়েটারকে বলেছিল পাঁচ কিলো মাংসের দাম নিলে ভাই, প্লেটে পঞ্চাশ গ্রামও দিলে না!
  • kk | 2601:14a:502:e060:f89c:f86d:19e5:d58c | ১৩ মে ২০২৩ ১৯:৩৪519767
  • সুকির কলিগের রসবোধ খুব পছন্দ হলো :-)
  • সুকি | 49.206.129.86 | ১৩ মে ২০২৩ ২১:৪৭519769
  • সকলকে ধন্যবাদ।
     
    :|: - টাইপো হয়ে গ্যাছে বাজে, অবশ্যই অগুরু হবে। ধন্যবাদ, ধরিয়ে দেবার জন্য। পুজোর দশকর্মা  বিক্রী করে আর এই টাইপোটাও ঠিক হয় নি! আর আমেরিকা তো মাঝে মাঝেই যাই :) আগের মাসেই তো গিয়েছিলাম - আচ্ছা, পরের পর্বে সেটা নিয়ে লিখব না হয়। তবে কিনা আজকাল যে কেতের রেষ্টুরান্টগুলো বেশীর ভাগ সময় যাই, সেখানে বেশী খাবার দেয় না, তা আটল্যান্টিক এর এপারে বা ওপারে যেখানেই হোক না কেন।  
     
    অমিতাভদা র কেসটা কিন্তু হেবি :) রেয়ার এর এই মানে যে হতে পারে, সেটা কিছু ভেবে দেখি নি :)
     
    আর পলিটিশিয়ানের পাড়াতুতু দাদা দারুন বলেছে, এট আমিও ব্যবহার করব :) 
     
    কেকে - হ্যাঁ, ওর সাথে নানা জায়গায় খেতে গেছে, ভালো ফান্ডা আছে খাবারের, আর অ্যালকোহলের 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন