সেদিন দেখলাম অফিসে আমার ল্যাবে কাজ করা ছেলেটি মন খারাপ খারাপ টাইপের মুখ করে ডেস্কে বসে রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম কেস কি। যা শুনলাম তাতে চক্ষু ছানাবড়া – কাগজ পড়া তেমন হয় না বলে টের পাইনি যে বিশাল ট্রেন্ডিং খবর চলছে। এক প্রেমিক নাকি তার প্রেমিকাকে নৃশংস ভাবে খুন করছে। যা বর্ণনা করল তাতে আমি বলতে বাধ্য হলাম – ঘটনা শুনে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু চেনাশুনা না হলে তার এতটা মুষড়ে পড়াও তো ঠিক ব্যাখা করতে পারছি না। ... ...
ক্রমে মাসুরি প্রেমে পড়ে যায় লাঙ্কাভির এক যোদ্ধার – এবং ভালোবেসে তাদের বিবাহও সম্পন্ন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভালোবাসার সেই সংসার বেশী দিন করার আগেই যুদ্ধ লেগে যায় লাঙ্কাভির লোকেদের সাথে সিয়ামীজ-দের (থাইল্যান্ডের দক্ষিণ প্রদেশের লোক)। মাসুরির স্বামীকে যুদ্ধে যেতে হয় মাসুরিকে গ্রামে একা রেখে – অনেক দিন ধরে যুদ্ধ চলতে থাকে – আর সেই সমস্ত সময়টাতেই মাসুরিকে একা একাই কাটাতে হয়। এমন সময় একদিন গ্রামে এক কথক আসে – আমাদের দেশের মতই এই কথকরাও যাযাবরের মত এই গ্রাম সেই গ্রাম ঘুরে বেড়াতো। খুব ভালো কথা বলতে পারত বলে কথকের গল্প শুনে গ্রামের সবাই মন্ত্রমুদ্ধ হয়ে গেল। তাকে রিকোয়েষ্ট করা হল আর কিছু দিন এই গ্রামে থেকে যাও। কিন্তু সে থাকবে কোথায়? মাসুরি নিজেও তার গল্প শুনে মুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আর তার বেশী জটিল কিছু না ভেবে বলল, তাহলে তুমি আমার বাড়িতে থেকে যাও। ... ...
ফিল নাইট আর বিল বাওয়ারম্যান ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্টা করেন “ব্লু রিবন স্পোর্টস”। একবার ভেবে দেখেছেন এত কিছু থাকতে ‘রিবন’ কথাটা তাঁদের কোম্পানীর নামে ঢুকল কেন? মনে পড়ছে উনাদের কাছে করা ধীরুভাইয়ের সেই লাল-ফিতের চক্করে বিজনেসের লাইসেন্স পড়ে থাকার কথা? প্রায় সাত বছর “ব্লু রিবন স্পোর্টস” নাম নিয়ে কোম্পানী চলার পর, বিল আর ফিল ঠিক করলেন মার্কেটিং এর জন্য নাম চেঞ্জ করে এমন এক নাম রাখবেন যে তা সবাই সহজে উচ্চারণ করতে পারে। ভাবতে বসলেন তাঁরা – মনে এসে গেল সেই ধনেখালির দিন গুলির কথা যেখান থেকে তাঁদের সত্যিকারের টেক্সটাইল প্রীতির শুরু। মনে এল সেই অমিমাংসিত রহস্যের শব্দবন্ধের কথা ‘নাকি’! ততদিনে ‘নাকি’ টা ঠিক উচ্চারণ করতে পারলেন না – সেই ‘নাকি’ থেকেই এল নাম ‘নাইকি’-র! বাকিটা ইতিহাসটা আপনারা সকলেই জানেন – ... ...
মেঘনাদ সাহা চমৎকৃত বাঘা যতীনের কথা শুনে। এই ফলসার রঙ এবং বাঘের গড়াগড়ি খাওয়া তাঁর পরবর্তী গবেষণা জীবনে অনেক প্রভাব ফেলবে। রঙ এবং তাদের স্পেকট্রাম নিয়ে তাঁর ভলোবাসার শুরু সেই বাঘাদার গল্পের হাত ধরেই বলতে গেলে। এর অনেক পরে নক্ষত্র থেকে বিচ্ছুৎ রশ্মি নিয়ে যে যুগান্তকারী গবেষণা করবেন – কি স্পেকট্রা থেকে কি রঙ জুড়ে আছে সেই সব তিনি ডিকোড করবেন ধীরে ধীরে। এই নিয়ে পরে লিখছি, তবে এটা বলে নিই, সেদিন ফলসার রঙ, ওই যে বেগুনী, বাদামী, হালকা নীল – এই সব মিশে থাকা – এটা তাঁকে এর আকৃষ্ট করেছিল যে রশ্মির মুগ্ধতা থেকে আর বেরুতে পারেন নি। ... ...
সোফায় পা গুটিয়ে বসে গুছিয়ে ভাট শুনবেন যাঁদের এমন বাঙালী আইকনিক আঁতেল এখন বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু আঁতেল আইকন সামনে না থাকলে কি নিয়ে দিন কাটবে সেই চিন্তা থেকে ঋতুদা চলে যাবার পর চন্দ্রিলের আশ্রয়ে ছিলাম। তবে সেবারে ‘ক্যালকাটা লিটারেরী ফেষ্টিভ্যাল’ না কিসে যেন একটা চন্দ্রিলের বক্তৃতায় গোদার, বার্তোলুচি, বেলা লুচি, ফালুদা, ভারমিচিলি কি সব ঢুকে যাবার পর বুঝতে পারলাম চন্দ্রিল-দা আমার নাগাল ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল – মধ্যবিত্ত আঁতেল থেকে উচ্চবিত্ত আঁতেল পর্যায়ে উন্নিত হয়েছেন দাদা। ফলে আমি আবার মধ্যবিত্ত আইকন খুঁজতে বসলাম – মার্কেটের অবস্থা খুব খারাপ। শেষে স্মরণাপন্ন হতে হলে শান্তনু মৈত্র মানে আমাদের সবার প্রিয় জি বাংলা সা রে গা মা পা-র শান্তনু-দা। তো শান্তনু-দাকে ফলো করেই আমার সেই কনফারেন্স কাঁপানো - ... ...
দৃশ্যের সাথে পিরিতি হয় এমন দৃশ্য দেখবো বলেই তো উল্টেছি অনেক পাতা আঙুলের নখ ঢেকেছি গুঁড়ো সীসায় এমন দৃশ্য ছোঁব বলেই তো জ্বালিয়েছি মোমবাতি গলা মোম ধরেছে হাতের তালু ... ...
আন্দালীব কত বড় কবি সেই হিসেব কোনদিন করতে বসি নি – কারণ তার থেকেও বড় অজুহাত আমার কাছে ছিল তার কবিতার নিয়মিত পাঠক হবার। ভাবতাম মাঝে মাঝেই – আহা, এমন যদি লিখতে পারতাম! সেই ছিল আমার কাছে আমাদের সেই সময়ের কবিতার ‘কমলকুমার’ যেন। তুলনাটা হয়ত ক্লীশে হয়ে গেল, কিন্তু এমন সাযুজ্যের তুলনা আর মাথায় আসছে না এই মুহুর্তে। বলতে দ্বিধা নেই যে এমন সময়ও গেছে যে আন্দালীবের কোন কবিতা প্রথমবার পড়ছি, কেবল কবিতা পড়ার ঘোরেই – সে এক প্রবল আকর্ষণ, কত অজানা শব্দের ঝঙকার, কত চেনা শব্দের অচেনা প্রয়োগ – বিমুগ্ধ করে রাখত আমাকে। ... ...
সেবারে ইংল্যান্ড এসে প্রশান্ত মহলানবীশ গেলেন রামানুজনের সাথে দেখা করতে কেমব্রীজে, তখন ১৯১৯ সালের শেষদিক। রামানুজনের স্বাস্থ্য তখন ভেঙে পড়েছে – শরীর খুব একটা সুবিধার নয়। পরের বছরেই মারা যাবেন তিনি। কিন্তু অঙ্ক নিয়ে মেতে থাকলেই তিনি ভালো থাকেন বলে ডাক্তারে সেই নিয়ে আর নিষেধ করেন নি। প্রশান্ত মহালনবিশও ভাবলেন হাওড়া ব্রীজের সমস্যাটা শুনিয়ে যদি রামানুজন-কে চিয়ার আপ করা যায় একটু। খুব মন দিয়ে শুনলেন ব্যাপারটা রামানুজন – বললেন, “আমাকে দুদিন সময় দাও প্রশান্ত। খুবই ইন্টারেষ্টিং এটা”। ... ...
আমাকে একটু রাত্রি দাও, আমাকে একটা রাত্রি দাও ... ...
১৯০১ সালের ২৪ শে অক্টোবর – নায়াগ্রা জলপ্রপাতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরা এক জিনিস অবাক হয়ে দেখতে লাগলেন যে আগে কোনদিন দেখেন নি! মানে কেউ ভাবেনও নি! এক ভদ্রমহিলা নৌকার একপাশে রাখা এক কাঠের ব্যারেলের ভিতর ঢুকছেন – সেই ব্যারেলটা নাকি নৌকা করে মাঝে নদীতে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে। স্রোতের টানে ব্যারেল জলে ভেসে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পুরো উচ্চতা থেকে ধপাস করে পড়বে! কিন্তু যারা দেখছিলেন তাঁরা কেউই বুঝতে পারছিলেন না, আত্মহত্যার ইচ্ছে না থাকলে ঘটা করে এই ভাবে ব্যারেলের ভিতর ঢুকে নায়াগ্রায় ঝাঁপ মারার দরকারটা কি! ... ...