এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • কোথায় তোমার দেশ গো বন্ধু?  পর্ব ১

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ১৮৮৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • কোথায় তোমার দেশ গো বন্ধু?
    [ এই আখ্যান আমার স্বপ্নে পাওয়া। এর সঙ্গে বাস্তব কোন চরিত্রের বা ঘটনার মিল চোখে পড়লে বুঝতে হবে তা নেহাৎ কাকতালীয়।]

    (১)

    তারিণী মাস্টারের কথা
    সোমবার ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০৩০

    ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা মদ্যিখানে চর,
    তার মাঝেতে বইস্যা দালাল তারিণী মাস্টর”। [1]

    আমার নাম তারিণী মাস্টার। বাবার নাম চারুচন্দ্র। মায়ের নাম শান্তিকণা। আমার জন্ম ১৯৫১ সালের কোলকাতায়। তাই ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৩(ক) অনুযায়ী আমি জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক। আমার নামে এই খানে কোন স্থাবর সম্পত্তি নাই। বাবার নামে ত্রাণ বিভাগ থেকে যে তিনকাঠা জমির পাট্টা সরকার দিয়েছিল সেটা কয়েক বছর আগে মায়ের চিকিৎসার জন্যে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আমরা খালের ওপারে রবীন্দ্রপল্লীতে ভাড়াবাড়িতে থাকি। আমি আর আমার স্ত্রী সবিতা। একটি মেয়ে আছে। বিয়ে হয়ে এখন হরিয়ানায়।

    একটানা এতগুলো কথা বলে হাঁফাতে থাকি। টেবিলের উলটো দিকে বসে থাকা ভদ্রলোক মুখে একটা আলগা হাসি নিয়ে আমার কথা শুনছিলেন। এখন ইশারা করে আমাকে বসতে বলেন।

    ওঁর সামনে একটা রেজিস্টার, গোটা দুই ফাইল, পেপার ট্রে ও তিন-চারটে ফর্ম। এবার উনি একটা পেনসিল নিয়ে একটা ফর্মের উপর টিক লাগাতে থাকেন। আবার আমার দিকে তাকান।

    -- আইডি প্রুফ? অ্যাড্রেস প্রুফ? এনেছেন?

    - হ্যাঁ, এই যে। আমার আধার কার্ড হাতের ঝোলা ব্যাগ থেকে বের করে ওনার দিকে এগিয়ে দিই।

    -- উম্ম, অ্যাড্রেস প্রুফ?

    - ওতেই আমার অ্যাড্রেস প্রুফ রয়েছে তো?

    - না; আইডি এবং অ্যাড্রেস প্রুফের জন্যে আলাদা আলাদা ডকুমেন্ট চাই। একটাই কাগজ দিয়ে সব কাজ চালাতে চান? এরকম চলবে না। অন্য কিছু নেই?

    আমি মাথা চুলকোই। আরে হ্যাঁ, আছে তো! ভোটার কার্ড।

    - হুম্ম। ঠিক আছে।

    আমার হৃৎপিন্ড আনন্দে ধক করে লাফিয়ে ওঠে। উনি ঠিক আছে বললেন তো? তাহলে আমি এখন যেতে পারি?

    - দাঁড়ান, দাঁড়ান। তাড়াহুড়ো করবেন না। এগুলো ভেরিফাই করতে হবে। আপনি আর একটু বসুন।

    - মানে?

    - দেখুন, আপনি লিখেছেন আপনি ১৯৫১ সালে কোলকাতায় জন্মেছেন। বার্থ সার্টিফিকেট? আছে তো? দিন তাহলে।

    - না, ওটা নেই।

    - নেই? সেকী, কেন নেই? হারিয়ে ফেলেছেন? তাহলে ডুপ্লিকেট বের করে আনুন। সাতদিন সময় দিচ্ছি।

    আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলেন — কোন হাসপাতালে জন্মেছিলেন?

    - মেডিক্যাল কলেজে।

    - তাহলে? ওদের ডেটা ব্যাংক থেকে হয়ে যাবে। সামান্য ফি দিতে হবে।

    আমি বলার চেষ্টা করি যে ১৯৫১ সালে ওরকম বার্থ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হত না। আর আমি গেছলাম, ওদের ডেটা ব্যাংকে ১৯৮০ সালের আগের ডেটা নেই।

    - বেশ, হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট? মার্কশীট? তাতেও ডেট অফ বার্থ দেয়া থাকে। ওটাই কাল নিয়ে আসুন। নাকি সে’সবও নেই?

    -- আমাদের সময়ে ডেট অফ বার্থ মার্কশীটে থাকত না, অ্যাডমিট কার্ডে থাকত। মার্কশীট আছে, অ্যাডমিট কার্ড নেই।

    ওনার মুখ এবার বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে যায়।

    আমি জানাই যে কে জানত হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডও সামলে রাখতে হবে? এতদিন কোন কাজে আসেনি, কেউ একবারও দেখাতে বলেনি আর আজ ৭৫ বছর বয়সে এই ঝামেলা!

    -- কিন্তু আপনার স্ত্রীর কাগজপত্র তো ঠিক আছে। উনি ১৯৫৬ সালে জন্মেছিলেন। বাড়িতে ধাইয়ের হাতে, তাই হাসপাতালের বার্থ সার্টিফিকেট নেই, অথচ ওনার মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিটে জন্মতারিখ স্পষ্ট দেয়া রয়েছে। আপনার নেই কেন?

    -- কী মুশকিল! ও বড় হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে, আমি কোলকাতায়। ওদের ওখানে গোড়া থেকেই মার্কশিটে ডেট অফ বার্থ থাকত, আমাদের অ্যাডমিট কার্ডে।

    -- এরকম হয় নাকি? বোর্ড আলাদা বা রাজ্য আলাদা হতে পারে, কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ম তো একটাই। দেশ বা রাষ্ট্র যখন এক।

    -- না না, এর সঙ্গে দেশ বা রাষ্ট্রের কোন সম্পর্ক নেই। সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা কেন্দ্রের নয়, রাজ্যের এক্তিয়ারে। কাজেই দুটো রাজ্যে আলাদা আলাদা নিয়ম হতে পারে।

    -- উফ, আপনাকে নিয়ে পারা গেল না মাস্টারমশাই। আপনি যান, একটু পাশের ঘরে গিয়ে বসুন। আপনার জন্য চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    -- আমি বাড়ি যেতে চাই। খিদে পেয়েছে। বাড়ি গিয়ে দুটি ভাত খেয়ে আসবো। আর দেখি, ঘরের থেকে আর কোন কাগজ পাওয়া যায় কিনা।

    -- সরি মাস্টারমশায়, গত জনগণনা থেকেই আপনার নাম ‘ডি’ অর্থাৎ ডাউটফুল লিস্টে রয়েছে। আপনি প্রায় দশ বছর সময় পেয়েছেন। কিন্তু গা’ করেননি। কাগজপত্তর ঠিকমত জোগাড় করেননি। কাজেই এখন আপনাকে বাড়ি যেতে দেওয়ার হুকুম নেই। আমার দাদা একসময় নাকতলা স্কুলে আপনার কাছে পড়েছিল। সেজন্যে আমরা ঢিল দিয়ে রেখেছি। আর সম্ভব নয়। এখন আপনার পালা, একটু সহযোগিতা করুন। আমার অফিসের টেলিফোন থেকে ঘরে আপনার স্ত্রীকে কল করুন। উনি যদি ঠিকঠাক কাগজ নিয়ে আসেন, তখন আপনি বাড়ি যাবেন। আর কেসটা এখন আমার সিনিয়রের আন্ডারে । উনি স্যাটিস্ফায়েড হলে আপনাকে যেতে দিতে পারেন। প্লীজ, একটু চেষ্টা করুন। ফোনটা করে পাশের

    কামরায় বসুন।

    পাশের কামরাটি বড়। তাতে একগাদা কাঠের বেঞ্চ আর পুরনো আধভাঙা চেয়ার একের পর এক ডাঁই করে রাখা।

    এটা একসময় নাকতলা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ক্লাস XI A , মানে ইলেভেন সায়েন্স ছিল। এখনও দরজার ওপর একটা টিনের পাত পেরেক দিয়ে ঠোকা রয়েছে। ব্ল্যাক বোর্ডের গায়ে চক দিয়ে একটা ট্রিগোণোমেট্রির অংক আদ্দেক কষা রয়েছে। কোণের দিকে দেয়াল ও বেঞ্চির গায়ে মাকড়সার জাল, আর ঘরের মেজে থেকে সর্বত্র একটা ধূলোর স্তর। বহুদিন ঝাঁটপাট পড়ে না। স্কুল বন্ধ সেই কোভিড -৩ এর সময় থেকে। তারপর মাঝে কিছুদিন খুলেছিল, সপ্তাহে তিনদিন করে। কিন্তু ধীরে ধীরে ছাত্রদের আসা বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ততদিনে মাস্টারমশায় ও ছাত্র সবাই অনলাইনে পড়াশুনো করতে এবং দরকারি গ্রেড পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

    গত এক দশকে দেশ জুড়ে এক দমকা ডিজিটাল হাওয়া বইছে। তাতে পয়সার লেনদেন, পড়াশুনো, চাকরিবাকরি সবই ডিজিটাল মাধ্যমে। গাঁয়ে গঞ্জে ডিজিটাল ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে। সম্পন্ন লোকজন কাজের মাসি বা কাজের দাদা সবাইকে ডিজিটালে মাইনে দিচ্ছে।

    আমি একসময় এই স্কুলে পড়েছি, ক্লাস ইলেভেন আর্টস, মানে বি কেলাস। তারপর কলেজের বেড়া ডিঙিয়ে কিছুদিন টিউশন করে পেট চালিয়েছি। বাম রাজনীতির ছায়ায় ছিলাম। তাই বাম রাজত্বে একসময় চাকরি পেলাম। ওই নাকতলা স্কুলে, উঁচু ক্লাসে ইকনমিক্স পড়িয়েছি আর নীচু ক্লাসে অংক। এভাবে দিন কেটে গেল। খুব একটা টিউশন করতাম না, মন চাইত না।

    বাড়ি হয় নি। আমি আর স্ত্রী ভাড়া বাড়িতে থাকি, কোন অসুবিধে নেই। একটিই মেয়ে, বিয়ে হয়ে জামাইয়ের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে। নামমাত্র পেনশন এবং সামান্য সঞ্চয় যা ব্যাংক ও পোস্টাপিসে রয়েছে তাতে দু’জনের চলে যায়। এদিকে ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় খালের ওপারে রবীন্দ্রপল্লীতে উঠে গেছি। মাঝে মধ্যে নাকতলার শক্তি সংঘের লাইব্রেরি থেকে দুটো বই পালটে নিয়ে যাই। আমি এই লাইব্রেরির লাইফ মেম্বার , সেই চাকরির প্রথম বছর থেকে।

    কিন্তু রিটায়ার করেছি ১৫ বছর হোল। তারপর প্রথম দু’তিনটে বছর মাসে একবার স্কুলে এসে স্টাফ রুমে আড্ডা দিয়ে গেছি। তবে বাড়ি পালটে খালের ওপারে রবীন্দ্রপল্লীতে চলে যাওয়ার পর সেটা বন্ধ করে দিয়েছি।

    তারপর গত দু’দিন ধরে এই স্কুলবাড়িতে ফের আসতে হোল। কারণ এই বাড়িটা এখন আর স্কুল নয়, এটা এখন ফরেন ট্রাইব্যুনাল ও ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্সের (এন আর সি ) অফিস।

    নীচের তলায় এন আর সি এবং উপরের তলায় ফরেন ট্রাইব্যুনাল।

    যেটা বলতে চাইছিলাম না তা হোল ফুটবল মাঠের ওপাশে যেখানে মেয়েদের বিদ্যাভারতী স্কুলটা ছিল সেখানে মাঝের দেয়ালগুলো ভেঙে তৈরি হয়েছে ডিটেনশন সেন্টার। মাত্র ছ’মাস আগে। আর গতমাসের এক রবিবারে আমার বাড়িতে কে বা কারা রাত্তিরে এসে দরজায় ্লাগিয়ে দিয়ে গেছে বড় করে একটা পোস্টার – তাতে ইংরেজিতে ক্যাপিটালে লেখা D। তার মানে ডাউটফুল, অর্থাৎ সন্দেহজনক। কী সন্দেহজনক? মানে আমার চরিত্র নয়, আমি এদেশের নাগরিক কিনা সেটাই সন্দেহজনক।

    আমি আগে এসব বুঝি নি, আসলে ভাবি নি। আমার মত ছাপোষা স্কুলটিচার, তায় অবসরপ্রাপ্ত, কারও সাতে নেই পাঁচে নেই—আমি কেন ডাউটফুল হব?

    আমি অনেকদিন পরে একটা কাজ করেছিলাম, ওই পোস্টারটা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। সাতদিন কেটে গেল, কিছুই হয় নি।

    তারপর একদিন।

    এটিএম থেকে টাকা তুলতে গিয়ে মুশকিলে পড়লাম। কার্ড ইন্সার্ট করে চার ডিজিটের পিনকোড টাইপ করলাম, কার্ড বেরিয়ে এল। স্ক্রীনে লেখা ‘ইনকরেক্ট পিন’। কী করে ইনকরেক্ট হবে? এত বছর ধরে ব্যবহার করে আসছি, কখনও এমন ফ্যাসাদে পড়ি নি।

    তিন বার ওইরকম হওয়ার পর আমার এটিএম কার্ড ‘ইনভ্যালিড’ হয়ে গেল। সিস্টেম লক করে দিয়েছে। বড় মুশকিলে পড়লাম। শেষে গিন্নির পরামর্শে ব্যাংকে গেলাম। অনুরোধ করলাম ‘লক’ খুলে দিতে। ম্যানেজার বলল – আপনি এন আর সি অফিসে যান, ওরা লিখে দেবে। তারপর লক খোলা যাবে।

    কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না।

    মানে? আমাকে এতদিনের পুরনো অ্যাকাউন্ট অপারেট করতে আবার কার থেকে এন ও সি আনতে হবে?

    -- ধেৎ, এন ও সি নয়, এন আর সি অফিস। মানে ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্সের অফিস।

    - সেটা কোথায়?

    -- আরে আপনি আগে যেখানে পড়াতেন না? সেই নাকতলা স্কুলে; ওখানেই।

    পরশুদিন ছিল শনিবার। সকাল এগারোটায় হাজির হয়ে গেলাম। প্রথম ঘরে দু’জন বসে দুটো টেবিলে কীসব ফর্ম ভরছে, ফাইলে লাগাচ্ছে। বারন্দায় লম্বা লাইন। করোনার আগে পোলিং বুথের সামনে যেমন হত। এখন ডিজিটাল ইণ্ডিয়া; অনলাইন ভোট দেওয়া হয়। করোনার সংক্রমণ রোখার জন্য সর্বাধিনায়কের দাওয়াই। সেই ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকেই।

    সেবার সাধারণ নির্বাচনের সময় মাত্র ৯টি রাজ্যে ভোট পড়েছে, বঙ্গের পালা তখনও আসেনি, এমন সময় হঠাৎ করোনার চতুর্থ ঢেউ দেশের বাকি রাজ্যগুলোতে আছড়ে পড়ল। তৎক্ষণাৎ সবাই স্ট্যাচু! ফের লক ডাউন! নির্বাচন স্থগিত। আগে প্রাণে বাঁচলে তবে তো ভোট!

    বিরোধীদের ক্যাও ম্যাওয়ের ফলে মহামান্য আদালত সবার কথা শুনলেন, এবং বিরোধীদের যুক্তি মেনে নিয়ে বললেন—বর্তমান সরকারের সংবিধান নির্ধারিত কার্যকাল ফুরিয়ে গেছে, ওদের আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিরা নতুন মন্ত্রীসভা গঠন করবে।

    কিন্তু সরকার পক্ষের মহাধিবক্তা বললেন যে ওসব সামান্য স্বাভাবিক সময়ের প্রথা। এখন মহামারীর করাল গ্রাসে পতিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ; দেশ চলবে ন্যাশনাল ডিজাস্টার আইন অনুযায়ী। ধর্মাবতার, আমরাও চাই সংবিধান সম্মত সময়ের চেয়ে এক মিনিটও সরকারে না থাকতে। তাই এমন সমাধান ভেবেছি যে সাপও মরবে, কিন্তু লাঠিও ভাঙবে না।

    -- কী সেই সমাধান?

    -- ধর্মাবতার, ভোট হবে সাতদিনের মধ্যে গোটা দেশে এক সাথে।

    -- সেটা কীভাবে সম্ভব? আইনশৃংখলার প্রশ্ন রয়েছে, এছাড়া এই সময়ে বিপুল ব্যয়!

    -- ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়, মহামহিম। আমরা সংবিধানের সম্মান ও গণতন্ত্রের মর্য্যাদা রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, তাই ভোট হবে ডিজিটাল। সবাই লকডাউনে ঘরে বসে অনলাইনে ভোট দিতে পারবে। পোস্টাল ব্যালটের দরকার হবে না। বিরোধীরা অনেকদিন ধরে মেশিনে ভোট দেওয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন। আশা করি তাঁরাও খুশি হবেন। বুথ, তার সিকিউরিটি, ব্যালট বক্স সীল করা, সরকারি কর্মচারিদের ট্রেনিং , তারপর দূরদরাজের গাঁয়ে পাঠানো সব অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে। কত খরচা বাঁচবে ভাবুন। এতে এ’বছরের বিনামূল্যে ভ্যাকসিনেশন সম্ভব হবে।

    এভাবেই শুরু হল ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ডিজিটাল ভোটিং। বিরোধীরা এর কোন লাগসই জবাব দিতে পারল না এবং প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আমেরিকায় এখনও চলে পেপার ব্যালট, আমরা এই ব্যাপারে সত্যিই বিশ্বগুরু হলাম। ভাইরাস প্রতিবছর নতুন নতুন মিউটেট করছে, ফ্লু’য়ের মতন। ফলে গত বছরও সাধারণ নির্বাচন অনলাইন পদ্ধতিতে হল। লোকজন খুশি। বিরোধীরা বায়ুভূত নিরঞ্জন।

    এরপর নাগরিক প্রতিনিধিত্ব আইনে এল দুটো পরিবর্তন। নোটা বলে শব্দটি উঠে গেল এবং ভোট না দিয়ে বাড়ি বসে থাকা বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ভোটের দিন আর ছুটি হবে না। ছুটির দরকার নেই। পোলিং বুথ, পোলিং এজেন্ট এবং কাউন্টিং সেন্টার কথাগুলো অর্থহীন হয়ে গেছে যে, ঠিক যেভাবে ইনল্যান্ড, পোস্টকার্ড, টেলিগ্রাম দেড় দশক আগেই হয়েছে।

    লোকে নির্ধারিত তারিখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যেকোন সময় ভোটিং অ্যাপে গিয়ে রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বার থেকে বাটন প্রেস করে ভোট দিতে পারে -- সেটা ঘুম থেকে উঠে আছোঁচা মুখে হোক, বা ঘুমুতে যাওয়ার আগে।

    সরকার তৈরির ছ’মাসের মধ্যে সংবিধানে এল আরো পরিবর্তন। না, সংবিধানের মুখবন্ধে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ যুক্ত করা হল না। কিন্তু সেকুলার ও সমাজতান্ত্রিক শব্দদুটো মুছে দেওয়া হল। সবাই সহমত — ও দুটো শব্দ ভারতে তার প্রাসংগিকতা হারিয়েছে।

    মহামারীর প্রকোপ দেখে আরও দুটি আইন পাশ হল। আমাদের ব্রিটিশ ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের মন্ত্রীসভা বা আমেরিকার প্রেসিডেনশিয়াল গভর্নমেন্ট দুটোকেই বাদ দেওয়া হল। ভারত পাশ্চাত্ত্য গণতন্ত্রের নকল করবে না। শুধু প্রধানমন্ত্রী পদের সংগে ‘এবং সর্বাধিনায়ক’ যুক্ত হল। বলা হল যেমন বড় বড় কর্পোরেট হাউসে ‘এম ডি ও সি ইও’ একইজন হতে পারে।

    এরপরে কোথাও কিছু অস্পষ্ট বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রইল না। তাই দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হল। তার প্রথম কদম হল গোটা দেশে নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন করে ডেটা বেস তৈরি করে বৈধ নাগরিকদের ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের মত সিটিজেন কার্ড দেয়া। কার্ডগুলো দেখতে বেশ সুন্দর এবং তাতে এমন ন্যানো চিপ্স লাগানো আছে যে সাধ্য কি কেউ জাল কার্ড তৈরি করে!

    সে যাক গে, আমি এসব নিয়ে মাথা ঘামাই নি। বেল পাকলে কাকের কী?

    জানতাম, আমার কিস্যু হবে না।

    আমি স্বাধীন ভারতের কোলকাতা মহানগরীতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকতা অধিনিয়ম পাশ হবার আগে জন্মেছি। আমি ধর্মে হিন্দু, পেশায় শিক্ষক। আমার জীবন সাদা কাগজের মত। কিছুদিন বাম দলের সক্রিয় সমর্থক হওয়া? ও তো বামেদের কয়েকদশকের সরকার পরিচালনার সময় সবাই ছিল; তখন ওটাই ছিল দস্তুর। আমার এক সহকর্মী ছিল ‘মিচকে’ রহমান। কেমিস্ট্রির টিচার, কিন্তু মহা ইয়ে। তাই ওর টাইটেল জুটল — মিচকে। ছাত্ররাও এটা জানত। ও বলত — দ্যাখ, প্রথম যৌবনে তুমি যদি কমিউনিস্ট না হলে তবে তোমার হৃদয় নেই, আর মধ্যবয়েস পেরিয়েও যদি কমিউনিস্ট রয়েছে, তবে তোমার মগজ নেই। এখন ভেবে দেখ তুমি কী?

    কিন্তু এটিম কার্ড আটকে গিয়ে সব কিছু পালটে গেল।

    তবে কপাল ভাল, আমাকে চিনে ফেলল নাকতলা স্কুলের ফোর্থ গ্রেড স্টাফ শংকর এবং ইশারায় ডেকে টাচলাইনের পাশ কাটিয়ে সোজা ভেতরে নিয়ে গিয়ে চশমা চোখের এক ভদ্রলোকের টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। শংকর হল স্কুলের সামনের ফুটবল মাঠের গায়ের বিদ্যাভারতী বালিকা বিদ্যালয়ের পুরনো চাপরাশি ভবানীদার ছেলে। ভবানীদা আমার চেয়ে দু’বছরের বড়। একসময় নাকতলার স্থানীয় ফুটবল লীগের সেকেন্ড ডিভিশনে ( হাসবেন না, আমাদের স্কুলের মাঠেও ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ডিভিশন ছিল) সবুজ সাথী বলে টিমের মালিক এবং কোচ। সেবার সিজনের গোড়ায় দলবদলের সময় উঠতি উইঙ্গার লালটু দু’দিন আগে চুপচাপ অগ্রণী সংঘে সাইন করায় ভবানীদা খেপে লাল। লীগ পরিচালক কমিটির অফিসের দরজায় সবার সামনে পাগলের মত দুমদাম লাথি মারছিল, আমরা অতিকষ্টে টেনেটুনে সামলাই। কিন্তু সবুজ সাথী দলকে এক সীজনের জন্য সাসপেন্ড করা হল। দু’মাস পরে ভবানীদা আমাদের কথা মেনে চাঁদ সদাগরের বাঁহাতে ফুল দেয়ার মত করে ডাক্তার ঘোষালকে ‘সরি’ বলায় ব্যান উঠে গেল। আর ভবানীদা পাগল মুঝে কর দিয়া গাইতে গাইতে খেলার মাঠে এল।

    সেই দুরন্ত বেয়াড়া ভবানীদা বেশি বয়সে গার্লস স্কুলের চাপরাশি হয়ে খাকি জামা আর প্যান্ট পরে পিরিয়ড শেষের ঘন্টা বাজাতে বাজাতে আর অ্যাটেন্ডেন্স রেজিস্টার ও নোটিস এ ক্লাস থেকে ও ক্লাসে নিয়ে যেতে যেতে কেমন মিয়োনো মুড়ি হয়ে গেল।

    -- আপনার দরজায় ‘ডি’ লেখা পোস্টার লাগানো হয়েছিল, সেটা ছিঁড়ে ফেললেন কেন?

    - ওই পোস্টার আমায় কোভিডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। সেবার যখন আমার আর আমার গিন্নির কোভিড হোল -মানে সেই দশ সাল আগে, তখনও ঘরের দরজায় অমন পোস্টার সেঁটে দিয়েছিল। লোকে আমাদের বাড়ি আসত না, কাজের মাসি আসা বন্ধ করে দিল। শাকসব্জিওলা আমাদের দরজা পেরিয়ে এগিয়ে যেত, ডাকলে সাড়া দিত না।

    -- ভুল করেছেন মাস্টারমশায়! আপনি ওটা ছিঁড়ে আরও বড় সন্দেহের তালিকায় এসে গেছেন। ফলে আমরা ব্যাংকে জানিয়ে দিই যে ‘ডাউটফুল’ তালিকায় নাম ওঠায় আপাততঃ আপনি সব রকম নাগরিক সুবিধে হারিয়েছেন, টেম্পোরারি মেজার। তাই আপনার এটিম কার্ড ব্লক করা হয়েছে। দু’মাসের মধ্যে যদি সব কাগজপত্র ঠিক ঠাক দেখিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনার নাম ‘ডি’ লিস্ট থেকে কাটা যাবে। তখন আপনার পেনশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ই এস আই কার্ড – সব চালু হয়ে যাবে।

    এসব গত পরশুর কথা মানে শনিবারের। সেদিন বাড়ি ফিরে আর সবিতা খুঁজে পেতে একটা ফাইলে সব কাগজ গুছিয়ে নিয়েছিলাম। পরের দিন রবিবার, তাই আজ সোমবার সকালে এসে কাগজপত্র সব জমা দিয়ে আমার নাম ঠিক করাতে এসেছিলাম যাতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আবার চালু হতে পারে। কিন্তু কী গেরো! আধার কার্ড, ভোটার কার্ড যথেষ্ট নয়! বার্থ সার্টিফিকেট চাই?

    বিকেল চারটে বেজে গেলে শংকর এসে আমাকে নীচের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল। দেখি সবিতা এসেছে, বসে আছে আর একজন ভারিক্কি চেহারার ভদ্রলোকের সামনে। এনার বয়েস কম, কিন্তু ইনিই বোধয় এই অফিসের হর্তাকর্তা। উনি খুব মন দিয়ে দুটো ফাইলের কাগজ পত্র বারবার করে উলটে যাচ্ছেন। একবার চোখ তুলে আমাকে একপলক দেখে আবার কাগজে ডুবে গেলেন। ঘরে আর চেয়ার নেই, উনি আমাকে বসতে বলেননি।

    সবিতা ওনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, পলকহীন।

    আমি মন দিয়ে সবিতাকে দেখতে থাকি। ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রোদ্দূর কড়া হতে শুরু করেছে। ওর ফাটা ঠোঁটে পাপড়ি জমেছে। কানের দুপাশে এবং মাথায় সাদা চুল। মুখের রেখায় কেমন হাল ছেড়ে দেওয়া ভাব। এখনও খায় নি বোধহয়। ও আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে, বাড়ি গেলে আমার সংগে ভাত খাবে।

    সবিতা আমার দিকে তাকিয়েছে; অস্বস্তি বোধ করছে। আমাকে ইশারায় বসতে বলে উঠে দাঁড়াতে গেল, আমি মাথা নাড়লাম, ওকে ইশারায় বসে থাকতে বললাম।

    ভদ্রলোকটি ফাইলের সমুদ্র থেকে জেগে উঠে সবিতাকে বললেন-শুনুন, এই মুহুর্তে আমার আর কিছু করার নেই। যা করার আপনাকেই করতে হবে। বাড়িতে ফের ভাল করে খুঁজুন। যদি মাস্টারমশায়ের বাবা-মার জন্মস্থান ও তারিখ, তারপর কবে ভারতে এসেছেন তার কোন প্রমাণ –ধরুন পুরনো চিঠিপত্র বা বাড়িভাড়ার রসিদ – যদি নিয়ে আসতে পারেন তাহলেও হবে।

    আমি ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলি একটা পুরনো তোরঙ্গে কিছু চিঠি রয়েছে। দাদু-ঠাকুমার লেখা। আমি জানি কোথায় আছে, কাল নিশ্চয়ই নিয়ে আসব।

    ভদ্রলোক আমার দিকে না তাকিয়ে সবিতাকে বললেন—সরি মাসিমা। ওনাকে ছাড়া যাবে না। আজ এখানেই রাত্রিবাস। এই কাজগুলো যদি আপনারা আরও আগে করতেন তবে হয়ে যেত। তখন নোটিস পেয়েও গা’ করেননি, আবার ছিঁড়ে ফেলেছেন। আপনি কাল কাগজ নিয়ে আসুন। তখন দেখব। এখন আসুন।

    চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে সবিতার মাথা ঘুরে যায়। পড়ে যাবার আগে আমি ধরে ফেলি। শংকর দ্রুত এক গেলাস জল নিয়ে আসে, ওর মুখে জলের ছিটে দেয়। খানিকটা জল খেয়ে সবিতা উঠে দাঁড়ায়। ওকে ফিরতে হবে, অনেক কাজ বাকি।

    (চলবে)

    [1] নাটক ‘ঘুর্ণি’, রচনা শ্রী শম্ভু মিত্র।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৩ নভেম্বর ২০২১ | ১৮৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • santosh banerjee | ১৩ নভেম্বর ২০২১ ২২:১০501124
  • একটাই বলার ...""শালা, এই দ্যাশের মুহে মুতি"""!!! 
  • শালা | 23.105.88.138 | ১৩ নভেম্বর ২০২১ ২২:১২501125
  • অসন্তোষ বাঁড়ুজ্জের কী দাপট!
  • kk | 68.184.245.97 | ১৩ নভেম্বর ২০২১ ২২:২৯501129
  • হরফ গুলো একটু ঠিক করা যায়না?
  • Ranjan Roy | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৫০501151
  • কেকে,
     সাইজ বড় করতে বলছেন? আমি নিজে কারেকশনে গিয়ে করে দিতে পারি?
     
     
    সন্তোষবাবু,
         ড্রাইভার পছন্দ নাহলে কি গাড়িকে গাল মন্দ করেন?
     
    দেশ আপনার আমার সবার। তাকে এভাবে গালমন্দ করার অধিকার কারও নেই। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে বর্তমান আইনে আপনি যা লিখেছেন সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ; এমনকি গুরু অ্যাডমিন, বা লেখক হিসেবে আমিও বাদ যাব না।
     এ'ধরনের আবেগ সর্বস্ব যুক্তিহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য খোলা পাতায় করার কী মানে? ইনো বা অম্লশূলের ওষুধ খান।
       
  • kk | 68.184.245.97 | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১০:০৮501153
  • রঞ্জনদা,
    আমি প্রথমে যখন পড়েছিলাম তখন হরফ গুলো অনেক বড় ছিলো। আর আইটালিক্সে। এখন তো একদমই ঠিক আছে দেখছি। ভালো লাগছে পড়তে। চলুক, পড়তে থাকি।
  • santosh banerjee | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১২:৩৪501158
  • অসন্তুষ্ট দাদাগণ,২০৩০ সনে এটা বুঝবেন !!না বুঝলে মাথায় গোবর!!!
  • | ১৪ নভেম্বর ২০২১ ১২:৫৮501159
  • গুরুতে এসে অকথ্য খেউড় ছাড়া এই সন্তোষ ব্যানার্জি নিকটি আর কী কী করেন জানতে ইচ্ছুক। এনারসির বিরুদ্ধে কী করেছেন জানতে মঞ্চায়।
  • প্লিজ | 2001:67c:89c:702:1ce:1ce:babe:5 | ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৯:২৯501220
  • সন্তোষবাবু অত রূঢ়ভাবে বলবেন না, ভক্তেরা ব্যথা পান।
  • Emanul Haque | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:০৮502234
  • বেশ ভালো লেখা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন