এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • কোথায় তোমার দেশ গো বন্ধু? পর্ব ৪

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৬ নভেম্বর ২০২১ | ১১৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)


  • “Where ignorant armies clash by night”[1]

    ২৮ মে, ২০৩০

    মঙ্গলবার

    বিদ্যাভারতী বালিকা বিদ্যালয় বা ডিটেনশন সেন্টার নং ১২৭৬/ ডব্লিউ বি এখন একটু সেজেগুজে উঠেছে। দোতলার হলঘরে মাঝে চাটাইয়ের বেড়ার পার্টিশন দিয়ে চারটে খুপরি ঘর। প্রত্যেক ঘরে তিনটে করে খাট। আমার ঘরে বাকি দুটো খাট ভরে গেছে। তবে শুধু আমার ঘরেই নয়, আরও তিনটে কামরায় লোক এসেছে। বাঁদিকের হলে কিচেন শুরু হয়েছে। এখন আর খাবার বাইরে থেকে আসে না। কিচেনের বাইরের দিকে একটা এক ইঁটের দেয়াল তুলে তার গায়ে জলের লাইন টেনে চারটে কল লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে খোলা আকাশের নীচে আমাদের স্নান করতে হয়, কাপড় কাচতে হয়, বাসন মাজতে হয়। এই দেয়ালের শেষ মাথায় দুটো পায়খানা, দেশি স্টাইলে সিট বসানো আর ছাদের দিকটা খোলা। ফলে দুর্গন্ধ কম। কিন্তু বর্ষাকালে কী হবে? আগে তো আসুক আষাঢ় শ্রাবণ, তখন দেখা যাবে। হয়ত টালি দিয়ে ছেয়ে দেবে। কিন্তু আলাদা করে কোন ইউরিনাল বানানো হয়নি। সবাই ওই পায়খানাতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ সারে।

    শুনছি ব্যারাকে ঘর বাড়ানো হবে। আমি ভাবি, লোক বেড়ে গেলে পায়খানার কী অবস্থা হবে? একবার সঙ্গের রুমমেটদের বললাম চল, ডায়রেক্টরের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি যাতে ঘরের সংগে অন্ততঃ আরও একটা দুটো পায়খানার সিট বসিয়ে দেয়। গুরুপদ শুনল, কিছু বলল না। কিন্তু মিচকে রহমান বলল-ভিক্ষের চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া। এসব বললে আমাদের বর্ডার পার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে পারে। গুরুপদ মুখ খোলে। বলে, আমরা হলাম যমের অরুচি, ওরা আমাদের নিলে তো!

    --নিতে হবে না। বনগাঁ বর্ডারে নিয়ে গরু ছাগলের মত হ্যাট হ্যাট করে তাড়া দিয়ে বাধ্য করবে দৌড়তে।

    বলতে ভুলে গেছি, আমার ঘরের দুটো খাটে যারা এসেছে তাদের একজনের নাম গুরুপদ দাস, যাদবপুর ইউনির বাইরে একটা গলিতে বইয়ের স্টল চালাত, তাতে নানান রকমের বই, মাসিক ও পাক্ষিক পত্রিকা এবং উঠতি লিটল ম্যাগ থাকত। বিশেষ অর্ডার দিলে অপ্রচলিত বইও আনিয়ে দিত। আমরা শুনতাম ও নাকি কোন একটা গাঁয়ে-মানে-না আপনি-মোড়ল গোছের একটা স্প্লিন্টার নকশাল গ্রুপের সংগে যুক্ত। কিন্তু ব্রণওঠা বিড়ি খাওয়া মুখে একগাল হাসি লোকটাকে দেখে এসব বিশ্বাস হত না। জানতে চাইলাম ওকে কেন এখানে এনেছে? নকশাল গুজব সত্যি হলে হয় জেলে থাকত, নয় এনকাউন্টারে মারা যেত। কিন্তু এই ডিটেনশন সেন্টারে?

    শুনলাম ও নাকি কোন ‘লাভ জিহাদ’ মানে ওদের পাড়ার কোন মুসলমান ছেলের সংগে হিন্দু মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে গাড়ি জোগাড় করে দিয়েছিল, এমনকি ওদের বর্ডার পেরোনোর ব্যাপারেও ওর হাত আছে। ওকে ধরে হিন্দু যুবা বাহিনী রাম ক্যালানি দেয়, পুলিশ হাসপাতাল থেকে অ্যারেস্ট করে। দু’বছর জেলে থেকে তারপর গতবছর বেকসুর খালাস পায়।

    ষাট পেরোনো মানুষটির নাকি এদেশে কেউ নেই। এরমধ্যে নাগরিকতার কাগজপত্তর আমার মতই বেসামাল। পুলিশ তক্কে তক্কে ছিল ।

    আর রইল মিচকে রহমান, আমার প্রাক্তন জুনিয়র সহকর্মী কেমিস্ট্রির টিচার সৈয়দ ইমানুল হক রহমান। ও তো মহা ধুরন্ধর; সব কাগজ আগেভাগে গুছিয়ে রাখা ছিল। তাই প্রথম দফায় বেঁচে গেছল। এন আর সি রেজিস্টারে নামও ছিল বৈধ নাগরিক কলামে। তাহলে?

    রহমান কিছু বলল না, এড়িয়ে গেল। খালি বিড়বিড় করল—নিজেদের ঘরের লোক যদি বেইমানি করে তো!

    আরেকবার বলল -এটা শুনেছেন? নাঙ্গোঁ সে খুদা হারে!

    --মানে, ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়?

    --হল না। এর মানে কেউ যদি উদোম হয়ে নির্লজ্জের মত পথে নামে তার কাছে ভগবানও হার মেনে যায়।

    গুরুপদ বলল –সেই ন্যাংটো লোকটা কি কায়স্থ?

    আমি হতবাক। এ আবার কী? এর মধ্যে কায়স্থ কোত্থেকে এল? ও কি আমাকে নিয়ে কিছু বলতে চাইছে? নাকি সেরেফ ইয়ার্কি মারছে!

    --“ পড়িয়াছ এইবার কায়েতের ঘায়, বোনাই বাবার বাবা হার মেনে যায়”। নীলদর্পণ নাটকে নীলকর সাহেবের কুঠির গোমস্তার উক্তি।

    এ ব্যাটার কি মাথা খারাপ হচ্ছে? এই অবস্থায় হতেও পারে। আমি সতর্ক হব, নিরাশ হব না। মানসিক ভারসাম্য হারালে চলবে না। আমি চন্দ্রাহত হইলে সবিতার কী হইবে? ইট’জ আ লাক্সারি ফর মি নাউ!

    পেছনে উদয়ন সংঘের দুর্গাপুজোর জায়গাটা এখন তারকাঁটা ঘেরা আঙিনা, সেখানে আমাদের সকালে একবার পায়চারি করতে দেয়। ডানদিকে অফিস ঘর, তাতে দুটো টেবিল তিনটে চেয়ার পাতা আর দেয়াল ঘেঁষে আড়াআড়ি একটা কাঠের বেঞ্চ।

    অফিসে বসেন মিঃ শিরপুরকর, আমাদের সেন্টারের ডিরেক্টর এবং সহকারী সুনীল সরকার। সকালে মাত্র দু’ঘন্টার জন্য আসেন ডাক্তার পদ্মজা শ্রীবাস্তব, এমবিবিএস। উনি বাংলা বলতে পারেন না। হিন্দি ও ইংরেজি মিশিয়ে কাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু ওঁর মিষ্টি হাসি আর ভদ্র ব্যবহার আমাদের দিনটা ভালো করে দেয়। ওই মিচকে রহমান! কোন না কোন বাহানায় সপ্তাহে অন্ততঃ দুটো দিন ডাক্তারের সামনে হাজির হয়ে যায়। মনে হয় এই খেলাটা ডাক্তার পদ্মজা বুঝতে পারেন এবং একটু আধটু উপভোগ করেন। উনি আমাকে আংকল বলেন, কিন্তু মিচকেটাকে ডাকেন মিস্টার রহমান বলে। ব্যাটা আমার প্রাক্তন সহকর্মী, কিন্তু দশ বছরের ছোট।

    আগে যে খেঁকুরে আধবুড়ো ডাক্তার দস্তিদার ছিলেন তিনি তেতো মুখে আমাদের সমস্যা ভাল করে না শুনেই প্রেসক্রিপশন লিখে দিতেনঃ জ্বর ও গায়ে ব্যথার জন্যে ক্রোসিন, আর পেটের সমস্যায় মেট্রোজিল। কখনও কখনও জেলুসিল ট্যাবলেট, ব্যস্‌।

    একবার শ্বাসকষ্ট হলে কোন ইনহেলার লিখে দিতে বলেছিলাম, উনি ভুরূ কুঁচকে বললেন আমাদের ট্যাক্সের টাকায় কত বাবুয়ানি করবেন? বাড়িতে লিখে আনিয়ে নিন।

    আর একবার বললেন যে দেশ থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যাচ্ছেন না কেন? সেই ময়মনসিং না কি যেন?

    সেদিন আমি ধৈর্য্য হারিয়ে চিৎকার করেছিলাম।

    --ফালতু কথা বলবেন না ডাক্তার! সীমা ছাড়িয়ে যাবেন না। আমি এ দেশের নাগরিক, আমার জন্ম কোলকাতায়।

    --হ্যাঃ নাগরিক! অমন নাগরিক এই ব্যারাকে ঢের রয়েছে। একটা কাগজ দেখাতে পারেনি আবার চেঁচাচ্ছে।

    এবার আমি গলা ফাটিয়ে চেঁচাই-- আমার বাবা কাশ্মীরে লড়াই করেছিলেন।

    ডাক্তার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন।

    আমার মুখ দিয়ে ফেনা ওঠে। বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায়। এই গরমে খালি অফিস ঘরেই একটা সিলিং ফ্যান ঘুরছিল। আমার কপাল ঘেমে ওঠে। এদিকে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সিকিউরিটি গার্ড দৌড়ে এসেছিল। তাদের সাহায্যে ডাক্তার বেঞ্চিটা একটু পাখার কাছে টেনে এনে তাতে আমায় শুইয়ে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে প্রেসার চেক করতে লাগলেন। তারপর প্যাড টেনে তাতে দু’দিন বেড রেস্ট লিখে কিছু ওষুধ ও গ্লুকোজ লিখে দিলেন। একজন গার্ডকে বললেন রান্নাঘর থেকে এক গেলাস গরম দুধ নিয়ে আসতে।

    সেদিন থেকে ডাক্তার দস্তিদারের ব্যবহার বদলে গেল। উনি সকালের দু’ঘন্টা ছাড়াও বিকেলে এক ঘন্টা আমাদের ব্যারাকে আসতে লাগলেন। মাঝে মাঝে আমাদের রুমে এসে আধঘন্টা খানেক গল্প করে যেতেন। সেই সময় ওনার আদেশে রান্নাঘর থেকে চার গেলাস লাল চা আসত, বাকি তিনটে আমাদের তিনজনের জন্যে।

    আমাকে উনি মাস্টারমশায় বলা শুরু করলেন। একবার এক বুধবারে চুপচাপ আমার থেকে সবিতার সিম্পটম শুনে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন। কয়েকটা আবার ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়নি, সেটা শোনার পর আমাকে ফ্রি স্যাম্পলের স্টক থেকে দিয়ে দিলেন। শুধু অনুরোধ করেছিলেন কেউ যেন জানতে না পারে।

    একদিন বললেন, আপনি এখানে কী করে ফাঁসলেন? আপনার ফাইল পুরো দেখেছি। আপনাকে ‘ডি” কীভাবে দেগে দিল? আপনি হিন্দু কায়স্থ।

    হঠাৎ আমার কান্না পেল।

    আমার গলায় কথা আটকে গেল। আমি –আমি চেষ্টা করছি নিজেকে সংযত করতে। কিন্তু কোথায় লুকিয়ে ছিল এত কষ্ট, এত অপমান! যেন দাঁত তোলার সময়ে যে লোক্যাল অ্যানাস্থেশিয়া দিয়ে রাখা হয়েছিল, তার ঘোর কেটে গিয়ে ব্যথা চাগিয়ে উঠেছে।

    হ্যাঁ, সত্যি কথা। কোনদিন ভাবিনি আমার কিছু হতে পারে। তাই রহমান যখন বলেছিল তখন গা’ করি নি। সত্যি কথা, আমি এই দেশে মেজরিটি কম্যুনিটির লোক, তায় পেশায় মাস্টারমশায়। সবাই অন্ততঃ মুখে আমাকে বেশ সম্মান দিয়ে কথা বলে। আমার বিরুদ্ধে কোন পুলিশ কেস নেই। সারাজীবনে কাউকে ঠকাইনি। আমার কেন কিছু হবে? ভয় পেতে হলে রহমান পাক, নিজের ম্যাও নিজে সামলাক।

    ভেবেছিলাম আমার আধার, ভোটার কার্ড আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অফিস রেকর্ডে আমার জন্মতারিখ ঠিকমত তোলা রয়েছে। হায়ার সেকেন্ডারির মার্কশিট আছে। আমি কোলকাতায় জন্মেছি, পঞ্চাশের দশকে –দেশভাগের পরে, কিন্তু ১৯৭১ সালের আগে। জীবনে ময়মনসিং যাইনি, বর্ডারের ত্রিসীমানায় আমাকে কেউ দেখেনি, আমার কীসের ভয়? খামোখা সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাব কেন?

    আমি ভুল বুঝেছিলাম। রহমানের কিছু হল না। ওর জন্ম প্রমাণপত্র, স্কুলের প্রমাণপত্র, আধার, ভোটার সব আগেভাগে তৈরি। ওর বাবা-মার ইলেক্টোর‍্যাল রোলের কাগজপত্র সব গুছিয়ে রাখা। তাহলে বিপদের গন্ধ কি ওরাই আগে পেয়েছিল? সে যাই হোক, রহমানের চেয়ে আমি বেশি নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম। রহমানের যখন কিছু হয়নি , তখন আমার কী হবে?

    কিন্তু কিছু একটা প্রশ্ন আমার মাথার ভেতরে কুরে কুরে খাচ্ছে। বেশি ভাবার সময় পেলাম না। ডাক্তার আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কই, কিছু বলুন। কেন তৈরি ছিলেন না? কী ভেবে নিশ্চিন্ত হয়ে দু’বেলা ডাল-ভাত খাচ্ছিলেন , নিজেকে হিন্দু ভেবে?

    -- হ্যাঁ, সেটা ভেবেই নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু বাবা-মা, কাকা -এসব নিয়ে আজ বিচ্ছিরি সব প্রশ্ন উঠছে কেন? কিছুই বুঝতে পারছি না ডাক্তারবাবু।

    --দাঁড়ান, আপনি কি স্থানীয় কোন নেতার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন? কোন ম্যাগাজিনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কমেন্ট করেছেন বা এমন কোন কমেন্ট বা ভিডিও অন্যদের ফরওয়ার্ড করেছেন যাতে সরকারের কাজকর্ম নিয়ে অম্লমধুর মন্তব্য করা হয়েছে?

    --আমি কোনদিন স্মার্ট ফোন ইউজ করি নি। ফেসবুক-টুকে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। আপশোসের কথা কী আর বলব! আমার নোকিয়ার শস্তা মডেলের পুরনো ফোনটাও ওরা আটকে রেখেছে। আমায় কোথায় বা কাউকে ফোন করতে হলে ওই অফিসের ফোনটাই এখন ভরসা।

    --আচ্ছা, দেখছি কিছু করা যায় কিনা।

    দু’দিন পরে উনি বললেন যে আমার কাছে আমার জন্মের বা বাবা-মা’র নাগরিকত্বের কোন অরিজিনাল ডকুমেন্ট কেন নেই এবং বাবা কোন সালে কাশ্মীরে লড়াই করেছিলেন এসব সংক্ষেপে কিন্তু গুছিয়ে লিখে একটা অ্যাপীল বানাতে। পাঠাতে হবে ফরেনার্স’ ট্রাইব্যুনালের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরে। একজন উকিল এসে আমার সংগে দেখা করবে আগামী শুক্রবার। আমি যেন দরখাস্তটি ওনার হাতে দেই। তারপর উনি যা জিজ্ঞেস করবেন তার ঠিক ঠিক উত্তর দিই। আর ওনাকে কোন ফীস দিতে হবে না। আপনি অফিসে বলবেন যে উকিলকে আপনার স্ত্রী ও মেয়ে এনগেজ করেছেন। আমার নাম ঘুণাক্ষরেও নেবেন না।

    সত্যি সত্যি একজন মাঝবয়েসী উকিল শুক্রবারে এলেন। আমার দরখাস্তটি দেখলেন। আমি প্রথম ড্রাফট রহমানকে দেখিয়ে শুধরে নিয়েছিলাম। আমার গ্রামারে কোন ভুল নেই। কিন্তু রহমান বলল, টোন যেন একটু অ্যাগ্রেসিভ। দত্ত স্যার, আপনি আপনার প্রিন্সিপাল বা ডিপিআই অফিসে চিঠি লিখছেন না। ফরেন ট্রাইব্যুনাল হল আমাদের সর্বাধিনায়কের প্রতিনিধি। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন -একজন প্রিজনার আর একজন সভারিন সমকক্ষ নয়।

    --আমি প্রিজনার?

    মিচকেটা মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। বলে- তারিণীদা, শুধু আপনি কেন, আমি গুরুপদ আমরা সবাই প্রিজনার। আমরা সন্দেহভাজন। আমাদের নাগরিক অধিকার নেই। এই রিয়েলিটি মেনে নিতে পারছেন না বলেই আপনার পিটিশনে ঠিক সুর ফোটেনি।

    --এটা রিপাবলিক, নতুন সংশোধনের ফলে সর্বাধিনায়ক সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী বটে, কিন্তু আইনের চোখে উনি ও আমি সবাই সমান।

    --ধেত্তেরি, প্রথম বয়সে বাম পার্টি করে মাথায় ওইসব কেতাবি পোকা ঢুকেছে। একবার ভেবে দেখুন, সাভারকর কেন আন্দামান থেকে ব্রিটিশের মার্জনা চেয়ে সাত সাতটা পিটিশন লিখেছিলেন? এবং লেখার সময় সেই চিঠির ভাষা কেন অমন ‘তব চরণতলে সদা রাখিও মোরে’ গোছের ছিল? উনি বিলেতে পড়া ব্যারিস্টার। আইন-টাইন আপনার আমার চেয়ে ভালই বুঝতেন।

    --আরে ওরা ব্রিটিশের চাটুকার ছিল তাই অমন লিখেছিল ।

    --না স্যার, তাহলে তো ওকে একটা আর্জি লিখলেই মাফ করে ছেড়ে দিত। যেমন অরবিন্দের ভাই বারীন ঘোষ এবং আরও অনেককে মন্টেগু -চেমসফোর্ড রিফর্মের পর ছেড়ে দিয়েছিল। সাভারকরকে গাল আমিও দিই, সেটা অন্য কারণে। কিন্তু এটা ভাবুন, এতবার অমন কাকুতি মিনতির পরও ইংরেজরা কেন ওকে মুক্তি দেয়নি? আসলে ওকে বিশ্বাস করত না। ভাবত- ছাড়া পেলে দুটো ভাই ফের কোন হাঙ্গামা বাঁধাবে। শুধু ওকেই তো পঁচিশ পঁচিশ বছর করে মোট পঞ্চাশ বছরের যাবজ্জীবন কারাবাস দিয়েছিল। মানে যা শালা! সারাজীবন আন্দামানে পচে মর। এমন শাস্তি আর কাউকে দেয়া হয়নি।

    --শোন, সাভারকর চর্চা পরে হবে। এখন আমার চিঠিটা তুই যেমন ভাল বুঝিস, ঠিক করে দে।

    উকিল ভদ্রলোক আমার কাগজ দেখে প্যাড বের করে জানতে চাইলেন—বাবার পুরো নাম, বাবা মিলিটারিতে কবে থেকে কবে ছিলেন, কী কাজ করতেন, কোন রেজিমেন্টে ছিলেন, পোস্ট কী ছিল, কোথায় শেষ পোস্টিং ছিল, আমার কাছে কোন ফটোগ্রাফ আছে কিনা, আর্মি কেন ছেড়ে দিলেন, কোন মেডাল পেয়েছিলেন কিনা, পেনশনের কোন কাগজ আছে কিনা, বাবার মিলিটারির কোন বন্ধু বা কম্যান্ডান্ট অফিসারের নাম জানি কিনা ইত্যাদি । বললেন যা মনে আছে, যতটুকু মনে আছে নির্দ্বিধায় বলতে; তাতে ট্রেস করতে সুবিধে হবে। বাবার কাছে শোনা মিলিটারি জীবনের কোন গল্প জানা থাকলে সেটাও বলতে বললেন। তারপর ওঁর ওকালতনামায় আমি সাইন করলাম। ফীসের কথা তবু জিজ্ঞেস করলাম। কারণ, বিনে পয়সায় কাজ করাতে আমার সংকোচ হয়।

    উনি হেসে বললেন যে নর্মাল লাইফে ফিরে এলে বাড়িতে নেমন্তন্ন করে মাছের ঝোল ভাত খাইয়ে দেবেন। যাবার সময় বললেন যে আমার কেসটা নাকি বেশ কমপ্লিকেটেড, সময় লাগবে। তবে নিরাশ না হতে।

    হ্যাঁ, সেই ক্লিশে –আশায় বাঁচে চাষা। ওনার সংগে বাকিজীবন আর দেখা হয়নি। তবে পরের সপ্তাহে ডাক্তার দস্তিদারের এখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে গেল। কোথায় ঠিক জানিনে, তবে বেশ দূরে, ঝাড়খণ্ড না বিহারের কোথায় যেন! এক সপ্তাহ আমাদের এই ব্যারাকে কোন ডাক্তার ছিল না। তারপর ডাক্তার পদ্মজার আবির্ভাব, সবাই খুশি। কিন্তু আমার হল মুশকিল। দিনে এক আধবার ওনার সৌজন্যে বরাদ্দের বাইরে ওই অতিরিক্ত এক আধ গেলাস লাল চা খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছল যে!

    ২১শে জুন, ২০৩০

    শুক্রবার

    আজ আমাদের প্রথম মাস এডুকেশনের ক্লাস। গত দুটো মাসে সবাই বুঝে গেছে আমার মত ডাউটফুল নাগরিকত্বের লোকেদের কোন দেশে পিংপং বলের মত ফেরত পাঠানো যাবে না, কোন রাষ্ট্রসংঘের শিবিরেও না। আমরা হলাম নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার চতুর্থ সন্তান! কেউ আমাদের চায় না। একদশক আগে রোহিঙ্গিয়াদেরও ময়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। তারও আগে এসে তামিলনাড়ুতে ঘাঁটি গেড়ে বসা তামিল রিফিউজিদেরও একই অবস্থা। আর ১৯৫৩ সাল থেকে দলাই লামার সংগে ভারতে চলে আসা তিব্বতি শরণার্থীদের তাদের বাসভূমিতে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকার নিজেও আগ্রহী নয়।

    শেষে সর্বাধিনায়ক ভাবলেন, এই সব রিজেক্টেড স্ক্র্যাপ মালকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর বদলে রাষ্ট্রের বিকাশের কাজে লাগিয়ে দেওয়া ঠিক হবে। কিন্তু স্ক্র্যাপ লোহা বা রদ্দি কাগজকে ব্যবহার করতে হলে আগে তাদের গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে নিতে হবে। আমাদের মাইন্ডসেট বদলাতে হবে। রাষ্ট্রভক্তি শিখতে হবে।

    এই চিন্তা থেকে তার বাস্তব প্রয়োগের রূপরেখা তৈরি করার জন্য কমিশন বসল। নতুন পেডাগগি তৈরি হল। দেশকে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘মানুষ আলু-বেগুন নয় যে পচে গেলে তো ফেলে দিলাম। ভারতের মানুষ হল ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’। এই মানব সম্পদকে আমরা অবহেলা করতে পারি না। এরা আমাদেরই অভিন্ন অঙ্গ। এরা সীমাপার থেকে আসেনি। এই দেশের আবহাওয়ায় শ্বাস নিয়েছে, বড় হয়েছে। বঙ্গের এতদিনের বাম রাজনীতির আবহাওয়া এদের ক্ষতি করেছে। এরা রাষ্ট্রভক্তি শেখেনি, কারণ বামেরা, বিশেষ করে কমিউনিস্টরা, রাষ্ট্রহীন সমাজের কথা বলে। দুই দেশের সীমানা বা সীমারেখাকে অস্বীকার করার কথা বলে। তাই দরকার এদের অসম্পূর্ণ শিক্ষাকে সম্পূর্ণ করা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সঠিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এঁরা দেশের উন্নয়নে বিশেষ যোগদান দেবেন।

    গুরুদেব গেয়েছেনঃ

    ‘মিলে সবে ভারতসন্তান,

    হয়ে এক মনপ্রাণ,

    গাও ভারতের যশগান’।

    রিনিউয়েবল হিউম্যান রিসোর্স

    আজ আমরা জলখাবার খেয়ে উদয়ন সংঘের তারকাঁটা ঘেরা খোলা আঙিনায় মাটিতে খবরের কাগজ বিছিয়ে বসেছি। আমার কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। প্রথম জীবনে কতবার মনুমেন্ট ময়দানের সমাবেশে এমন খবরের কাগজ বিছিয়ে হাওয়াই চটি খুলে মাটিতে বসেছি। একেই কি দেজ্যাঁ ভু বলে? মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

    চারটে কামরা থেকে আমরা মোট এগার জন।

    একটু পরে তিনজন এলেন—সবার পরণে সাদা ফুল প্যান্ট গোল গলা টি-শার্ট ও পায়ে সাদা কেডস, আমাদের ছেলেবেলার মত।

    আগে খেয়াল করিনি, ওঁরা একটা লোহার পাইপ নিয়ে এসেছেন, তার মাথায় কপিকল লাগানো। দু’জন যুবাবাহিনীর ছেলে এসে আঙিনায় শাবল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে ওই পাইপটা পুঁতে দিল। শুনলাম এটা হল রাষ্ট্রধ্বজ। তারপর আমরা ওই পাইপের সামনে দুটো সারি বেঁধে দাঁড়ালাম। কপিকলের দড়ি টেনে আগেই পাইপের গায়ে কায়দা করে একটি পতাকার পুঁটলি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সমবেত হাততালি ও ভারতমাতার জয়ঘোষের মধ্যে মুখ্য উপদেশক এগিয়ে এসে একটা দড়ি ধরে টানলেন। পতাকাটি শূন্যে উঠে কপিকলে আটকে সকালের হাওয়ায় পতপত কড়ে উড়তে লাগল, ঝরে পড়ল রাশি রাশি ফুল।

    এবার প্রধান উপদেশক সবাইকে নমস্কার করে নরম গলায় বললয়লায়--আমার নাম মাধব ঘোরপাড়ে। এই যে রাষ্ট্রধ্বজ দেখলেন এর রঙ তিরঙা না হয়ে কেন গেরুয়া সে নিয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন নেই?

    ভদ্রলোক তো বেশ ভাল বাংলা বলেন!

    কেউ কোন কথা বলল না। তখন উনি বললেন –আরে সংকোচ করবেন না। এটা কোন ঔরংজেবের বা স্তালিনের দেশ নয়। এখানে সবাই মন খুলে কথা বলতে পারে, তবে অ্যান্টি-ন্যাশনাল কথাবার্তা আমরা সহ্য করি না।

    তবু কেউ কিছু বলছেনা দেখে উনি বললেন—আচ্ছা, আমিই বুঝিয়ে দিচ্ছি। ট্রাইকলার হল রাষ্ট্রের রাজনৈতিক রঙ, আর গেরুয়া হল রাষ্ট্রের ভাবনাত্মক বা ইমোশনাল রঙ। এই কথাটা গুরুদেব অনেক আগেই বলেছিলেন। গেরুয়া হল ত্যাগের প্রতীক।

    তারপর ওনার ইশারায় ওঁর সঙ্গী অল্পবয়েসি ছেলেটি অ্যাটেনশন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করলঃ

    “বসিয়া প্রভাতকালে সেতারার দুর্গভালে,

    শিবাজী দেখিলা একদিন।

    রামদাস গুরু তার, ভিক্ষা মাগি দ্বারে দ্বার,

    ফিরিছেন যেন অন্নহীন”।

    আদ্দেকটা কবিতা বলা হলে উনি বললেন—আজ এই পর্য্যন্ত। পরের শনিবারে এক ঘন্টার ক্লাস হবে। এবার আমরা গান গেয়ে শেষ করব।

    উনি গান ধরলেন—সারে জহাঁ সে আচ্ছা, হিন্দুস্তাঁ হমারা;

    হম বুলবুলেঁ হ্যায় উসীকি,

    ইয়ে গুলিস্তাঁ হমারা।

    আমি গানটা জানতাম না। কিন্তু চারজন গলা মেলালো। এরপর এল সঞ্চারী।

    ওঁরা গাইলেন- ‘মজহব নহীঁ শিখাতা, আপস মেঁ বৈর রখনা;

    হিন্দু হ্যায় হম , বতন হ্যায় -হিন্দোস্তাঁ হমারা’।।

    এমনসময় পেছন থেকে কেউ চেঁচিয়ে উঠল-স্যার ভুল হচ্ছে, ভুল হচ্ছে।

    ব্যস, গান যেন আচমকা ব্রেক লাগায় থেমে গেল। সবার চোখ ঘুরল পেছনের সারির বক্তিয়ারের দিকে। সবার চোখে নীরব প্রশ্নঃ হলটা কী?

    --স্যার, দ্বিতীয় লাইনটা আপনারা ভুল গাইছেন, ‘হিন্দু’ নয়, লাইনটা হবে—হিন্দী হ্যায় হম আসলে হিন্দ্‌ -ই হ্যায় হম।

    -তাতে কী হয়েছে? আমরা একটা শব্দ সংশোধন করে নিয়েছি।

    --কিন্তু গানটা তো আপনারা লেখেননি, লিখেছেন স্যার মহম্মদ ইকবাল। আপনি চাইলেই কি গানের কথা বদলে দিতে পারেন? তাহলে তো ‘জন-গণ-মন’তে পাঞ্জাব-সিন্ধু থেকে সিন্ধু বাদ দিতে হয়,ওটা তো এখন পাকিস্তানে ।

    --কী নাম তোর?

    --স্যার, সৈয়দ ইমানুল হক রহমান।

    -- বাঃ সুন্দর নাম। বল তো তোর শায়র সৈয়দ ইকবাল দেশভাগের পর কোথায়?

    -- উনি পাকিস্তানে চলে যান।

    --তুই কবে যাবি? আস্তিনের সাপ!

    একজন ভলান্টিয়ার এসে রহমানের পেছনে একটা লাথি কষায়, ও ছিটকে পড়ে।

    উনি ডিসমিসালের ভঙ্গিতে হাত নেড়ে যেতে যেতে আমাদের দিকে ঘুরে কেটে কেটে বললেন—গোড়াতেই সতর্ক করেছিলাম, কোন অ্যান্টি ন্যাশনাল কথাবার্তা সহ্য করা হবে না।

    (চলবে)

    [1] Mathew Arnold, Dover Beach.
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৬ নভেম্বর ২০২১ | ১১৯৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 120.22.95.140 | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ০১:০৮501439
  • লাস্ট প্যারা টা পড়ে বেশ আতঙ্ক হলো। এই রাস্তা তেই এগোচ্ছে। 
  • :|: | 174.251.162.164 | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১১:১৪501448
  • কিন্তু ২০৩০-এর ২১ জুন শুক্কুরবার। ডাইরিতে শনিবার লেখা উচিৎ হয়নি। ডকুমেন্টেশনের সময় এই রকম গোলমাল করলে ছাড়া পাবেন কী করে? 
  • :|: | 174.251.162.164 | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১১:১৬501449
  • ২৮ মে ২০৩০ মঙ্গলবার। বুধ না। 
  • Ranjan Roy | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৬501456
  • অনেক ধন্যবাদ চতুর্ভুজ। আমি গোড়া থেকে শুধরে নিচ্ছি।
  • স্বাতী রায় | ২৭ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৪501480
  • ভয় টা আবার ঘপাৎ করেএসে জাপটে ধরল। জানি না সত্যি কার কপালে কি আছে! লেখাটা দারুণ হচ্ছে।  
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন