এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • মিলেনিয়াম মলঃ পর্ব সাত 

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪১৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • (৫)

    দিনটা শুক্রবার। সেদিন সকাল থেকেই মিলেনিয়ম মলে আমি ব্যস্ত।
    চিন্তায় ফেলেছে থার্ড ফ্লোরের স্লো প্রগ্রেস। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকেই , মানে গণপতি উৎসবের সময় থেকেই ধীরে ধীরে কাজের প্রোগ্রেস ঢিমে চালে চলছে। প্রথমে ব্যাপারটা বোঝা যায় নি। এটা শুরু হয়েছিল আস্তে আস্তে। প্রথমে এক-দুজন ইলেক্ট্রিশিয়ন কমল, তারপর দু-একজন ওয়েল্ডার, তারপর দুজন সুপারভাইজার; শেষে একজন ইঞ্জিনিয়র।
    সবাই নাকি ছুটিতে যাচ্ছে। অনেকেরই বাড়িতে বিয়ে, কারো কারো বাড়িতে নবজাতকের আগমন। প্রথমে কেউ গা করে নি।
    কিন্তু লক্ষ্যণীয় - অধিকাংশই দু-চারদিনের নাম করে ছুটি নিয়ে টেলিগ্রাম করে বা ফোন করে ছুটি বাড়িয়েই চলেছে।
    রমেশ প্রথমে পাত্তা দেন নি। এমন নাকি শরতের শেষে প্রতিবছরই হয়। এরপর ঠিকেদারের মজুররা ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেল।
    রমেশ অবিচল।
    “এখন আমাদের উত্তরভারতের তেওহার বা পরবের দিন শুরু হয়ে যে! গণেশ চতুর্থী, দশেরা, দীপাবলী--ব্যস্‌। দেখবেন সব কাজে ফিরছে। আপনি চিন্তা করবেন না। সীমেক কোম্পানির কাছে প্রোজেক্টের পার্ট চার্ট দেখুন। এসব হিসেবের মধ্যে ধরা আছে।”
    তাই হল।
    দীপাবলী গেল, এবার কাজের লোকজন ফিরতে শুরু করেছে।রমেশের মুখে একগাল হাসি। আমি কি সিকিউরিটি নিয়ে একটু প্যারানইয়াক?
    কিন্তু আমার মনটা কু-ডাক ডাকছে কেন? গত এক পক্ষ ধরে?
    এই কেন'র উত্তর আজ পেয়েছি।
    আজ সারাদিন ধরে সমস্ত ঠিকাকর্মীদের জন্যে জারি গেট্পাস আর মাস্টার রোলের রেকর্ড চেক করেছি। না, ওদের সংখ্যাতে কোন ইতরবিশেষ হয় নি। কিন্তু অনেকগুলো স্টাফ বদলে গেছে যে! সবাই নয়। কিন্তু বেশ ক'জন। সাধারণ মজদূর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, ওয়েল্ডার ও আরও কয়জন সেমি-স্কিল্ড লেবার। কেন?
    এটাই নাকি দস্তুর। কিছু লোকের গাঁয়ে ক্ষেতিবাড়ি আছে। ওরা ধানকাটার পরে ফিরবে।
    এইসব নতুন লোকের ঢোকা কতদূর সেফ? এমন একটা হাই-রিস্ক প্রোজেক্টের জন্যে? এগুলো রমেশ এত সহজে নিচ্ছেন কেন?
    আর মাত্র দু'মাস বাকি। ক্রিসমাসের আগে সবটা কম্প্লিট করে সার্কিটগুলোর একটা রান করিয়ে দেখতে চাই।

    বিকেলের দিকে মনে হল সব প্রশ্নের উত্তর এখানে পাব না। নিজের কামরায় গিয়ে কিছু ফাইল আর নক্শা মিলিয়ে দেখতে হবে। রবিনকে বললাম গাড়ি বের করতে, তাড়াতাড়ি ফিরব। ঘরে পৌঁছে স্নান করে কিছু খেয়ে একটু পড়াশোনা করব।
    কিন্তু সেই সন্ধ্যেয় আর তাড়াতাড়ি ফেরা হল না। গাড়ি হাইওয়েতে ঢোকার আগে একটা সাদা গাড়ি হর্ন দিতে দিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে আর আমার মোবাইলও প্রায় একই সঙ্গে বেজে উঠেছে।
    -- “রাজকুমার বলছি। আপনাদের ছোটে! পাশের সাদা গাড়িটায় উঠে বসুন। আপনার ওই ছোকরা ড্রাইভার আমার পেছনে পেছনে চলুক। চিন্তার কিছু নেই। কোন ফাউল প্লে নয়, জরুরী কিছু কথাবার্তা আছে।”
    আমি রবিনকে আব্শ্যক নির্দেশ দিয়ে ওই রাজহাঁসের মত গাড়িটার কাছে যাই। পেছনের দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে দেখি রাজকুমারের হাসি হাসি মুখ। দুধসাদা সীটে এলিয়ে না পড়ে সোজা হয়ে বসি। না, কোমরের কাছের ব্যারেটা রিভলবারে হাত ছোঁয়ানোর দরকার বোধ করি নি।
    গাড়ি ৩৬গড় মলের কাছে এয়ারপোর্ট যাওয়ার ভিআইপি রোড দিয়ে ছুটে চলে। চোখে পড়ে একের পর এক বিভিন্ন বিজনেস হাউসের বোর্ড লাগানো কিছু রিসর্ট। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিশাল আশ্রমিক মঠ । ভারত সেবাশ্রমের প্রণবানন্দ অ্যাকাডেমি ও আশারাম বাপুর আশ্রম। স্বামীজি জেলে থাকায় কেমন হতশ্রী ভাব।
    এবার গাড়ি ঢুকছে রাজকুমার গুলাবচন্দানির নিজস্ব বাগানবাড়ি কাম অফিসে। সারা রাস্তা উনি গন্তব্যস্থল জানিয়ে দেওয়া ছাড়া একটাও কথা বলেন নি। কিছু ভাবছেন।কিন্তু মুখের বিদ্রূপাত্মক স্টেনসিল হাসিটি টোল খায় নি।
    পোর্টিকোতে গাড়ি দাঁড়াতেই জনা তিন কর্মচারী এগিয়ে এল। উনি তাদের ঠেট ছত্তিশগড়ি ভাষায় কিছু নির্দেশ দিয়ে মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নাড়লেন।
    আমরা ওঁর ইশারায় অফিসের পাশে একটি অ্যান্টি রুমে আরাম করে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলাম।
    জানিয়ে দিলাম শুধু এককাপ কড়া কফি ছাড়া কিছু খাব না।
    উনি মাথা নেড়ে হেসে সায় দিলেন। আর পাশের ড্রয়ার থেকে দুটো ফোল্ডার বের করে কফিটেবলের ওপর রাখলেন।

    -- “প্রফেশনাল লোকজনের সঙ্গে ডীল করতে আমার খুব ভাল লাগে, বিশেষ করে আপনাদের মত মানুষ হলে।”
    আমি তাকিয়ে রয়েছি দেখে বললেন,“কোন ন্যাকামি নেই। ডিসিশন নিতে দ্বিধা নেই। নিজের লক্ষ্যে স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যাওয়া। আরে আমরা আসলে একই নক্ষত্রে জন্মেছি, আমি আর আপনি। বড়ে ভাইয়ার কথা আলাদা। ওর বোধহয় কন্যারাশি, ভাবীজির কথায় চলে! বাবুজিও জেনে গেছেন যে গুলাবচন্দানি এম্পায়ার কেমন লোকের হাতে পড়লে ফেঁপে ফুলে উঠবে।“
    -- “আপনার সমস্যাটা কী? নিশ্চয় আপনি আমাকে নিজের বড়ভাইয়ের চরিত্রগাথা শোনাতে এখানে তুলে আনেন নি?”
    মুচকি হেসে রাজকুমার একটু গলা তুলে বললেন, “আই প্রটেস্ট! 'তুলে আনা' কথাটা এখানে বেমানান। আপনাকে কোন কিডন্যাপ করা হয় নি। সে সাহস আমার নেই। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে নিজেই গাড়ি থেকে নেমে আমার গাড়িতে উঠে বসেছিলেন।”
    -- “তাই?”
    -- “উঃ! কারণ আপনার অদম্য কৌতূহল। আপনি আমার ডেরায় এসে আমাকে জরিপ করে দেখার পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা সুযোগটি হাতছাড়া করতে চান নি।”
    --- “আমার লাভ?”
    -- “সব কথা আমার মুখ দিয়েই বলাবেন? বেশ। স্ট্র্যাটেজি মশাই স্ট্র্যাটেজি! আপনাকে বড়ে ভাইয়া এনেছে আমার সম্ভাব্য চোরাগোপ্তা আক্রমণের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তুলতে। আপনি অভিজ্ঞ। সেপহটি-সিকিউরিটির সমস্ত খুঁটিনাটি সব ব্যবস্থা আপনি তন্নতন্ন করে স্ক্যান করেছেন। তবু আপনার মনটা খুঁত খুঁত করছে। কারণ আমার চালটা আপনি জানেন না।“
    -- “আপনার সঙ্গে কফি খেয়েই সব জেনে যা্বো?”
    --“ আপনার মত বুদ্ধিমানও যদি ওইসব ঘিসিপিটি inane কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করে--! আরে, আপনি আমার ডেরা দেখলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বললে আমার কিছুটা আন্দাজ তো পাবেন।“
    -- “কফিটা ভাল।মনে হচ্ছে কেরালার কোন গার্ডেনের থেকে আনা সীড।”
    -- “থ্যাংকস্‌! এবার কাজের কথা। প্রথম, আমার সম্বন্ধে যা যা উল্টোপাল্টা কথাবার্তা শুনেছেন তা ভুলে যান।”
    সদাশিবন তাকিয়ে থাকেন।
    -- “এই যেমন আমি মিলেনিয়ম মলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার তালে আছি।”
    -- “আপনি নেই কি?”
    রাজকুমারের চোখ জ্বলে ওঠে।
    -- “ব্র্যাভো! আমার ঘরে বসে আমাকে প্রকারান্তরে মিথ্যেবাদী বললেন! আপনার সাহস আছে মানতে হবে।”
    -- “ না, আমি শুধু একটা পার্টিনেন্ট কোশ্চেন করেছি। অ্যান্সারটা এখনও পেলাম না।”
    -- “ শুনুন, ভাইয়া আপনাকে বলেছে যে আমি ওই প্রোগ্রাম বানচাল করে বাবুজির সামনে ভাইয়াকে অপদস্থ করে ওঁর গদিতে বসতে চাই। ভুল। একেবারে গোড়ায় গলদ। ভাইয়ার সঙ্গে আমার যাই থাক, আমি গুলাবচন্দানি সাম্রাজ্যের গায়ে দাগ লাগতে দেব না। আমিও তো গুলাবচন্দানি। নিজেদের ব্র্যান্ডনেমে দাগ লাগিয়ে গুড উইল লুজ করে ভাঙা সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়ে আমার লাভ? আমি স্বভাবে ঔরংজেব নই। এসব মাথায় ঢোকাচ্ছে ওই বড়ী ভাবী। এসেছে এক বানিয়া পরিবার থেকে। ইন্ডাস্ট্রির কিচ্ছু বোঝে না। ও কী বুঝবে আমাদের ফিলিং? sense of belonging? কিন্তু ভাইয়াকে ওই চালাচ্ছে।”
    -- “বেশ, এবার কী বলবেন? যেহেতু স্যাবোটাজের কোন আশংকা নেই, অতএব আমার উচিত ইস্তফা দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাওয়া? আর আমার যা ফিনানশিয়াল লস হবে সেটা আপনি পুষিয়ে দেবেন, এই তো? তা আমার দাম কত ধার্য করেছেন?”
    ঠহাকা মেরে হাসতে থাকেন রাজকুমার। হাসির শব্দে কেঁপে ওঠে দেওয়াল। হাতের ধাক্কায় কফি টেবলের ওপর জলের গ্লাস থেকে জল ছলকে পড়ে। তক্ষুণি প্রায়ান্ধকার এক কোণা থেকে একজন বেড়াল পায়ে এসে টেবিলটি মুছে দিয়ে গ্লাসটি সরিয়ে নেয়।

    -- “ দাঁড়ান, দাঁড়ান! নট সো ফাস্ট! সব বলছি, একটু সামলে নিই?”

    (৬)

    সেদিন একঘন্টার মধ্যেই ফিরে এসেছিলাম।

    রাজকুমার বললেন – “তাহলে আপনার দিল্লি সফর সফল হল না?”
    আমি নিরুত্তর।
    তখন উনি একটি ফোল্ডার খুললেন। তাতে অনেকগুলো ফোটো। আমার এবং জেসমিনের। দিল্লির হোটেলের পোর্টিকোতে গাড়ি থেকে আমি নামছি। দুজনে ড্রিংক্স নিয়ে কথাবার্তায় মশগুল রয়েছি। একটিতে জেসমিনের আঙুল উঁচিয়ে আমাকে শাসানোর ছবি। আরেকটিতে জেসমিন ওয়াশ রুম থেকে ফিরে আমার টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছে, এইসব।
    -- “দেখছেন তো! শুনুন। আপনি জেসমিনকে ভাইয়ার কথায় রাজি করাতে গেছলেন। পারেন নি। জেসমিন প্রফেশনাল। ফালতু গুলাবচন্দানিদের বাওয়ালে নাক গলিয়ে বকরী হবে কেন?”
    -- “তাহলে আপনার চিন্তা কিসের? কথাটা শেষ করুন, আমি ফিরে যাই।”
    -- “আরে তাড়া কিসের? আভি ভী রাত জওয়ান হ্যায়! আমি চাইছি আপনি এবার আমার কথাটা শুনে ভাইয়াকে রাজি করান।”
    -- “মাপ করবেন, আমি রমেশ গুলাবচন্দানির সিকিউরিটি কনসালট্যান্ট, কোন বিজনেস টাউট নই।”
    -- “এত তাড়াতাড়ি রেগে গেলে চলে? আমি তো একটা সন্ধি প্রস্তাব দিচ্ছি। সিজফায়ার। শর্তগুলো শুনে নিলে আপনারই লাভ।”
    উনি হাতের ইশারায় আরেক কাপ কফি দিতে বললেন।
    -- “আপনারটা?”
    ---“আমি এ'সময় অন্য কিছু খাই। আপ তো সাথ দেনে সে ইনকার কিয়ে। কোঈ বাত নহীঁ। যদি আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তো সেলিব্রেট করবো। সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি!”
    -- “লেট আস হিয়ার ইট”
    -- “দেখুন, রমেশভাইয়ার ভয় আমি মুখ্যমন্ত্রী এসে মল উদ্ঘাটনের সময় কিছু খুরাপাত, কিছু হরকৎ করব। ওঁর আশংকা খুব অমূলক নয়। কিন্তু ভাবীজি গিয়ে ভারি দরবার করেছেন পিতাজির কাছে। ওল্ডম্যান আমাকে ডেকে দাবড়ানি দিয়েছে। এখন যদি আপনার বা কোন মিস্ত্রীর দোষেও সেদিন কোন ঘটনা ঘটে তো আমি সাজা পাবো। একেবারে নির্বাসন!”
    বলার ভঙ্গিতে আমি হেসে উঠি। রাজকুমারও মুচকি হেসে কাঁধ ঝাঁকান।
    -- “শুনিয়ে, ইয়ে হঁসনে কী বাত নহীঁ হ্যায়। ভাবীজি মোক্ষম চাল দিয়েছেন। আসলে ক্ষমতার শতরঞ্জ খেলায় প্রতিপক্ষ হলেম আমরা দুজন। ভাইয়া তো ডামি।
    এবার আমার পালা। আমি বলছি কোন হরকৎ কোন শরারৎ করব না। তবে আমিই লুজার কেন হব? আমারও শর্ত আছে। জেসমিন।
    প্রথম দিন ভাইয়া-ভাবীর। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ফিতে কাটা , বেলুন ওড়ানো , লেজার শো -- যা যা ওঁরা চান, সব নির্বিঘ্নে হয়ে যাবে।
    দ্বিতীয় দিন কিন্তু আমার হওয়া চাই। ইয়ুথ নাইট না কি--সেটা আমার মুতাবিক হবে। কোন দিল্লি থেকে আসা পপ সিঙ্গার নয়, আমি করাবো ছত্তিশগড়ি ফোক সং অ্যান্ড ফোক ড্যান্স।
    আসবেন চন্দ্রাকর সিস্টার্স, চন্দেনী গোন্দা, আরও সব--বাঁশগীত, ভরথহরি, পান্ডবানি। আর নামকরা যুবদলের পংথী, সুয়া ইত্যাদি নাচ। একদম শেষে বস্তার ব্যান্ড।”
    -- “আমার থেকে কি চান?”
    -- “এই প্রোপোজাল আপনি ভাইয়াকে দিন। প্রথম নাইট ওঁর, দ্বিতীয় আমার। বদলে পাবেন আমার ফুল কোঅপারেশন।”
    -- “উনি রাজি না হলে?”
    -- “আপনার কোন দায়িত্ব নেই। আপনি চেষ্টা করুন মিস জেসমিনের প্রোগ্রাম ইউথ নাইটে করাতে। কিন্তু ঝামেলা বাড়বে। আপনি জেসমিনকে কন্ট্রাক্ট সাইন করালেও ও ঠিক সময়ে রায়পুরে পৌছুবে না-- সেটা আমার গ্যারান্টি। না, না; যা ভাবছেন তা নয়।মুখে অ্যাসিড ছোঁড়া জাতীয় কাঁচা কাজ নয়। ওঁর কোন ক্ষতি হবে না। শুধু উনি সময়মত রায়পুরে পৌঁছতে পারবেন না।”
    -- “আপনি এতটাই নিশ্চিত?”
    -- “ও হো! আপনার অহংকারে লেগেছে! অন এ সিরিয়াস নোট, আমি আপনাকে বুঝি। আপনি কী কী স্টেপ নিতে পারেন তার অংক কষে রেখে তবে খেলতে নেমেছি। বিশ্বাস হচ্ছে না?
    ধরুন, আপনি চিফ মিনিস্টারের প্রোগ্রামের দিনেই জেসমিনকে দিল্লি থেকে আনিয়ে কড়া সিকিউরিটি চেক এ রাখবেন। সেদিন আমার সীমিত শক্তি মূল প্রোগ্রামে মাংকি রেঞ্চ থ্রো করতে ব্যস্ত থাকবে। পরের দিন আপনি ওর জন্যে ভিআইপি সুরক্ষার বন্দোবস্ত করবেন। এটা প্ল্যান A।
    আর প্ল্যান B হল প্রোগ্রামের তিনঘন্টা আগে চার্টার্ড প্লেনে করে ওকে দিল্লি থেকে নিয়ে আসা। প্রোগ্রামের পরই সেই প্লেনে ওকে দিল্লি পৌঁছে দেওয়া।
    কিন্তু আমার কাউন্টার স্ট্র্যাটেজি আপনার অজানা।
    তার চেয়ে আমার ট্রুসের প্রোপাজাল নিয়ে ভাইয়ার কাছে যান। ওতে সবারই মঙ্গল।”
    আমি উঠে দাঁড়াই।
    -- “কেন ইতস্ততঃ করছেন ইয়ে হীলা-হবালা কা কোঈ জরুরত নহীঁ। আপনি কি ভাবছেন আপনার আমার সঙ্গে এই বৈঠকের ব্যাপারে ভাইয়া কিছু জানে না? আমার এই গেস্ট হাউসে পা রাখতেই আপনার ওই কিম্ভূত রবিন না কি যেন, ভাইয়াকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে। জেনে রাখুন, ও হল বড়ে ভাইয়ার জাসুস। মিনিটে মিনিটে খবর দেয়।এই ফোল্ডারটি রাখুন। আপনি জেন্টলম্যান , এটা খুলবেন না। সোজা ভাইয়ার হাতে দেবেন।”
    -- “এতে কী আছে?”
    -- “এতে আছে ফিউচার প্ল্যান। উনি আমার সন্ধিপ্রস্তাবে রাজি হলে দুপক্ষেরই কী কী লাভ হতে পারে সেগুলোর রোডম্যাপ ছকে দেওয়া।
    আর আপনি এবার নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে যান। শ্রীমান রমেশ গুলাবচন্দানী উর্ফ বড়ে ভাইয়া এতক্ষণে ছটফট করছেন আপনার মুখ থেকে সব শুনতে। আপনি যা যা কথা হল সবই বলবেন। কিচ্ছু লুকোনোর দরকার নেই। গুড নাইট।”
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:ea0c:cd31:7a6a:9d53:7567:cde4 | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩৮525248
  • জমে উঠেছে।
  • হীরেন সিংহরায় | 2a00:23c7:672e:2001:b9c1:89a5:e47f:9847 | ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩১525282
  • বা:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন