এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • বামেদের কফিনের শেষ পেরেক মমতাকে নিয়ে কাঁচা মস্করা

    gautam roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৬ জুন ২০২১ | ২০৭২ বার পঠিত
  • জ্যোতি বসু তখন ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, তাঁর ডিগ্রি নিয়ে। ক্ষিপ্ত মমতা ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁর গীতাদিকে (সিপিআই নেত্রী গীতা মুখোপাধ্যায়)। গীতা মুখোপাধ্যায় বললেন, "তুই ওসব আর লিখিস না।" তাঁর পরামর্শেই কি না কে জানে তারপর আর মমতা ' ডঃ' লিখতেন না। জ্যোতিবাবু আপাদমস্তক রাজনীতির মানুষ ছিলেন। একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল তাঁকে অবসরের পর দিন কাটে কি করে জানতে চেয়েছিল। বিরক্ত জ্যোতিবাবু বলেছিলেন, যতো নন পলিটিকাল কোয়েশ্চেন। এ হেন রাজনীতির মানুষটি সন্তানের বয়সি মমতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বামমনস্ক একটা অংশের মানুষদের ভিতরেই মমতা সম্পর্কে সহানুভূতি জাগিয়েছিলে, উদাহরণ তো গীতা মুখোপাধ্যায়ই। কারণ, গীতা অনুভব করেছিলেন ব্যক্তি মমতার আহত হওয়ার বিষয়টি। ফুলবাগানের নেহারবানু ঘটনাকে ঘিরে অপরাধীকে চাবকানোর কথা বলার আবেগ ঢাকতে পারেন নি তিনি। জ্যোতিবাবুও গীতার অভিব্যক্তির জবাবে দেশে শরিয়তি আইন নেই এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের কমরেডকে। জ্যোতিবাবুর এই বিপক্ষ মতের মানুষকে ব্যক্তি আক্রমণ, আজ এই সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় ট্রোল হিসেবে পরিচিত। আর সেই ট্রোলের ধারাবাহিকতাই দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিরোধী কন্ঠস্বর রুদ্ধ করা, বাইনারি, একটা সময়ে বিজেপি জোটে থাকা, আরএসএস কর্তৃক 'দেবী দুর্গা' বলে অভিহিত হওয়া -- সব কিছুকে ছাপিয়ে মমতার তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কারণের অনেকগুলির ভিতর একটি। আমি বলব প্রধানতম।

    মমতাকে ভোটে হারিয়ে যেনতেনপ্রকারে ক্ষমতায় ফিরতেই হবে -- সিপিএম এর একটা বড় অংশ এটা ২০১১ সালের ক্ষমতাচ্যুতির পরের দিন থেকেই জপমন্ত্রের মতো জপতে শুরু করে দেয়। যে সংগঠনের বড়াই তাঁরা করতেন, বালির বাঁধের মতো তা ভেঙে পড়েছে, কারণ কার্যত শেষ পনেরো বছরে বামফ্রন্টের কোনো দলেরই সংগঠন বলতে কিছু ছিল না। ফ্রন্ট ক্ষমতায়, তাই সংগঠনকে দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু সেটা যে কতো আলঙ্কারিক তা সুভাষ চক্রবর্তীর মৃত্যুর পরেই উপনির্বাচনে সুভাষজায়া রমলা চক্রবর্তীর গোহারা হেরে যাওয়ার ভিতর দিয়ে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল।

    তবুও জাঠার জ্যাঠামো থেকে নিবৃত্ত হননি মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উঠে এসে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের হত্তাকত্তা বিধাতা হয়ে কাঠি ঘোরানো লোকেরা। একটা সমবায়ে বামপ্রার্থী জিতলেও তাঁরা কাছের লোকেরা ফেসবুকে এতটাই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তেন যে মনে হত, শাসক হয়ে জন্মানো থেকে শুরু করে, জীবন যৌবন শাসক হয়েই কাটিয়ে ফার্নেসে যাওয়া পর্যন্ত শাসক থাকা ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় কাজ নেই। অবশ্য কাজ একটা ছিল। এই শ্যামল চক্রবর্তী , সুভাষ চক্রবর্তী, গৌতম দেবেরা ক্ষমতায় থাকার শেষ দশ বছরে গোষ্ঠী রাজনীতিতে বিপরীত শিবিরের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাত থেকে যাতে ক্ষমতার রাশ আলগা হয়, তার জন্যে আদাজল খেয়ে নেমেছিলেন। জ্যোতিবাবুও কি খুব সহজে বুদ্ধবাবুকে কাজ করতে দিয়েছিলেন? এক ভাষাতাত্ত্বিকের একটি স্কুল পাঠ্যবইয়ে ভুল থাকার জন্যে বাতিল করেছিলেন বুদ্ধবাবু। সেই বাতিলের নির্দেশটিকেই বাতিলের জন্যে যে ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি বুদ্ধবাবুর উপরে, তা থেকেই বোঝা যায়, প্রশাসনিক খুঁটিনাটিতে কার কী রকম চাপ বুদ্ধবাবুকে সহ্য করতে হয়েছিল। দলের ভিতরে বাইরে এই চাপই যে সেদিন মমতার জয়ের পথ মসৃণ করেছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই প্রেশার পলিটিক্সের ভূতই যেন আবার ফিরে এসেছে। ২০১৬-র মতোই ২০২১-এও কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালী করিয়ে মমতার তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পথটা অনেক পরিস্কার করে দিয়েছে।

    সিপিএম-এর শীর্ষ নেতৃত্বের সবাই কি কংগ্রেসের সঙ্গে এই মিতালীর পক্ষে ছিলেন ২০১৬ তে? এই মিতালীর তত্ত্বের যাঁদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বের হয়েছিল, সেই শ্যামল চক্রবর্তী, গৌতম দেবেরা নিজের দলের একটা বড় অংশের আপত্তি, ভূমিস্তরের কর্মীদের আপত্তিকে একদম উপেক্ষা করে দলের কেন্দ্রীয় স্তরের শিলমোহর আদায় করলেন। কিন্তু এই কংগ্রেসের প্রতি নরম হওয়ার কথা বলেই একদা ব্রাত্য হয়েছিলেন সইফুদ্দিন চৌধুরী, তাঁর প্রতি যে অন্যায় হয়েছিল, এটা দলের দলিলে লেখাবার হিম্মত দেখাতে পারলেন কি তাঁরা? না, সেটা তাঁরা পারবেন না। সেদিন ব্যক্তি স্বার্থে সৈফুদ্দিন কিছু করেননি। বরং সে সময়ে তাঁর দলে যাচ্ছেন বলে সুভাষ চক্রবর্তী সম্পর্কে রটিয়ে সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপর চাপের রাজনীতি জারি রেখেছিলেন শ্যামল চক্রবর্তীরা।

    ২০১৬-র ভোটে ফলাফলের দিন দুপুরেই যখন আলিমুদ্দিনের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ক্যামেরার সামনে বিমান বসু ' জোট না ঘোঁট ' বললেন, সেই কথার রেশ মেটার আগেই মাঠ বড় করবার নাম করে শ্যামল, গৌতম কী করে প্রকাশ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালির পক্ষে ওকালতি করলেন? বসিরহাটে মুসলমানেরা সারারাত দাঙ্গা করেছে, লুঠপাট করেছে - ক্যামেরার সামনে এই কথা বলার পরও সিপিএমের হিম্মত হয়নি কেন গৌতম দেবকে শাস্তি দেওয়ার? নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এতটুকু চেষ্টা না করে কংগ্রেসের উপর ভর করে ভোটে জেতার অসাড় তত্ত্ব আওড়ে যাওয়া ঘিরেও গৌতম দেব-দের কাঠগড়ায় তোলা হয়নি।

    এই সময়ে যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালির সবথেকে বিপক্ষে ছিলেন, সিপিএম-এর অতি বিপ্লবীরা, সেইসব নেতৃত্বকেই ঘিরে প্রশ্ন তুলে আড়াল করতে চেয়েছে গৌতম দেবের 'লবি'। গোটা বর্ধমান জেলার দুটি অংশ কংগ্রেসের সঙ্গে এই সুবিধাবাদী জোটের বিপক্ষে ছিল। সি পি এমের ই মহঃ সেলিম সহ অনেকেই জোরের সঙ্গে চেয়েছিলেন বাম পরিসরকে আরও প্রসারিত করতে। সেই প্রসারণ ঘটলে বিজেপিকে রোখার নাম করে অন্ধ মমতা বিরোধিতার বদলে রাজনীতিটাই ভিন্ন মাত্রা পেতে পারতো সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর মতো বাম শক্তির প্রত্যক্ষ সংযোগের ফলে। সেই অবস্থা তৈরি হলে নিশ্চয়ই বামশূন্য বিধানসভা হতো না। ২০১৬ তে বামেদের ভোটে কংগ্রেস কিছু আসনে জিতলেও , তাঁরা ভোট দেয়নি বামেদের। '২১ এ এর শোধ বামেরা নিয়েছে। তাঁরাও ভোট দেয় নি কংগ্রেসকে।

    মমতার সঙ্গে এনডিএ-এর সম্পর্ক ঘিরে এই রাজ্যে বিজেপির পা রাখার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ করে বামেরা। মমতার এন ডি এ সংযোগের মতোই সুভাষ চক্রবর্তী এন্ড কোং দ্বারা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সিপিএমের উত্তর চব্বিশ পরগণার তৎকালীন সম্পাদক অমিতাভ বসুর দলে রাশ আলগা করতে দমদম লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থী নির্মল চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে বিজেপিকে পা রাখার প্রথম সুযোগ করে দেয়নি? সেদিন মমতা বিজেপির সঙ্গে মিতালী করেও কি সুভাষ চক্রবর্তীদের প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়া বিজেপির তপন শিকদার কে জেতাতে পারতেন?

    আসলে দলের স্বার্থ নয়, অন্য কোনও স্বার্থই সুভাষ এবং তাঁর ঘনিষ্ট গৌতম, তড়িৎ তোপদার, লক্ষণ শেঠ, নেপালদেব ভট্টাচার্য, অনিল বসু,রঞ্জিৎ কুন্ডুদের কাছে ছিল একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।সেই ধারাই সদ্য সমাপ্ত বিধানসভার ভোটেও আত্মঘাতী আঘাত হেনেছে সিপিএম-কে।

    নিজের গোষ্ঠীর স্বার্থে দলকে লাটে তোলা সুভাষ এবং তাঁর অনুগামীদের একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।বিপক্ষ গোষ্ঠীর গোপাল বসুকে হেনস্থা করতে ১৯৮৭ র ভরা বাজারে নৈহাটিতে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন সুভাষ- রঞ্জিৎ জুটি। এই জুটির দৌলতেই ভরা বাম জামানায় দুই দুইবার নৈহাটি পৌরসভা তে ক্ষমতাসীন থেকেছে কংগ্রেস। এই সুভাষ চক্রবর্তীর বদান্যতাতেই অমিতাভ নন্দীর ঘনিষ্ঠ শুধুমাত্র এই কারণে হাবড়া থেকে দলের প্রার্থী শর্মিষ্ঠা দত্তকে হারিয়ে বিজেপির বাদল ভট্টাচার্য গোটা বামফ্রন্ট জামানার চৌত্রিশ বছরে একমাত্র বিধানসভাতে যেতে পেরেছিলেন।

    এবার ভোটের আগে হঠাৎই নতুন তৈরি হওয়া দল আইএসএফ-কে বড় আসন দিল সিপিএম। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আব্বাস সিদ্দিকির অতীতের অপরিণত মন্তব্য, বিশেষ করে মহিলাদের ঘিরে অমর্যাদাকর কথার বিষয়টি ঘিরে আইএসএফের সঙ্গে সিপিএমের জোটের বিষয়টি উঠে আসছে। আসলে আব্বাসের সঙ্গে যদি এই জোট না হতো তাহলে বোঝা যেত না খোদ সিপিএমের ভিতরেই কী ভয়ঙ্কর রকমের সঙ্ঘী মানসিকতার লোকেরা ঘাপটি মেরে বসে আছে।

    ২০২০ র লকডাউনের সময়েই '১৬ তে প্রার্থী হওয়া এক সিপিএম নেতা এই নিবন্ধকারকে বলেছিলেন; হিন্দুর মড়া পোড়াতে মমতা চার থেকে পাঁচ জনের বেশি লোকে যেতে দিচ্ছেন না।আর মুসলমানদের ক্ষেত্রে লরি লরি লোক আসছে। প্রবল সঙ্ঘী সংস্কৃতি যে সিপিএম সহ বামফ্রন্টভুক্ত দলগুলির ভূমিস্তরকে উঁই পোকার মতো খেয়ে ফেলেছে, এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারা যাচ্ছিল। তাই আব্বাসকে ঘিরে আপত্তি যখন একাংশের সিপিএমের ভিতর থেকে উঠছে, তখন কিন্তু একবারও উঠে আসেনি, এই আব্বাসের ই আত্মীয় এবং তাঁর ই তরিকার ত্বহা সিদ্দিকিকে রাজনীতির অঙ্গনে নাক গলানোর প্রথম সুযোগ করে দিয়েছিলেন গৌতম দেবই। তারপর ত্বহাকে তৃণমূলে থাকাকালীন হাইজ্যাক করেছিলেন মুকুল রায়।

    ২০১৭ সালে স্বামী আত্মস্থানন্দকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুরফুরাতে গিয়েছিলেন সেলিম। তারপর কি এই ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ধর্মের আবর্তে আটকে না রেখে মানুষের হকের দাবি জানাতে সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দিয়েছিল সেলিমকে তাঁর দল? তাহলে তো উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ের আদলে এই আইএসএফ-কে ভোটে লড়তে হতো না। যে আইএসএফ-এর সঙ্গে জোটে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব সম্মত হয়েছে, সেই আইএসএফ-এর সঙ্গে বামেদের দক্ষিণবঙ্গে আসন রফার পরেও যে ঝুলিয়ে রাখার মানসিকতা অধীর চৌধুরীরা দেখিয়েছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালীর পক্ষপাতী নেতারা তখন কোথায় ছিলেন?

    পরিশেষে বলব কফিনে শেষ পেরেকটির কথা। পেশাদার গণমাধ্যম দেখাচ্ছে না, তাই সোশাল মিডিয়াই ভরসা- সিপিএম এই নির্ভরতায় বাধ্য হয়েছে এই কারণে যে, তাদের কোনো সংগঠন নেই। আর এই ফেসবুক ভরসা অচিরেই পরিণত হয়েছে, 'আমাকে দেখো, আমার নেতাকে দেখো' প্রতিযোগিতায়। আমি একা একটা লাউডস্পিকার নিয়ে বক্তৃতা করছি, শ্রোতা থাকলেও তাঁরা নন, আমার পেটোয়া ক্যাডারকে দিয়ে ফটো তুলিয়ে ফেসবুকে পোস্টিয়ে আমি মনে করেছি, রাজভবনে শপথ নিতে যাওয়ার জামা কিনতে বেরোই - এটাই ছিল নয়া প্রজন্মের একটা বড় অংশের মানসিকতা। সেই কবে থেকেই চলে আসছিল তন্ময় ভট্টাচার্যের বিবাহবার্ষিকী ফেসবুকে পালন। আর ভোটের মরশুমে হল দলীয় অফিসের ভিতর সাড়ম্বরে শতরূপ ঘোষের জন্মদিনের কেককাটা, আর তার ছবি ফেসবুকে পোস্টানোর প্রতিযোগিতা। আসলে বুদ্ধ, সেলিমরা স্তাবক তৈরি করেননি সুভাষ, শ্যামল, অনিল বসু, লক্ষণ শেঠ, তড়িৎ থেকে শুরু করে আজকের শতরূপদের মতো।

    আর এই স্তাবকদের থেকে 'বার' খাওয়া শতরূপরাই চুটকি বলে ভক্তকুলের কাছে সমাদৃত হয়ে সর্বত্র হয় নিজেরা ,নয়তো কমরেড তথা স্তাবকদের দিয়ে ট্রোল করে গিয়েছেন মমতাকে। ডিগ্রি ঘিরে মমতাকে উপহাসের যে ধারার প্রবর্তন করেছিলেন জ্যোতি বাবু, তিনি না চাইলেও তাঁর দলের ইস্কুলের গন্ডি না পেরোনো নেতাও জ্যোতিবাবুর কথাকে নকল করে পাড়াতে চোঙা ফোকার সময়ে মমতাকে নিয়ে আজকের ভাষায় খিল্লি করেছে। কিন্তু গরিব মানুষ, মমতার ডিগ্রির অস্তিত্ব নিয়ে ওঠা প্রশ্নের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিল দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে, পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে সংঘাত করে মমতার রাজনৈতিক অস্তিত্বটিকে। বামঘরানার অগ্নিকন্যা বাংলাদেশের মোতিয়া চৌধুরীর কাছেও এই শূন্য থেকে মমতার উঠে আসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল, তেমনটাই ভেবেছিলেন বাংলার একটা বড় অংশের গরিবগুর্বো। শ্রেণি অবস্থানের নিরিখে এঁদের কিন্তু বাম শিবিরেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু জর্দা সুরভিত বাম দলের নেত্রী যেদিন তাঁদের বস্তিতে এলেন, তাঁরা নেত্রীকে সমাদর করলেও সেই নেত্রীকে কখনো নিজের ভাবতেই পারে নি।নিজের বলে ভেবেছে মমতাকে। তাই বামেদের মিটিং মিছিলে গেলেও ভোটটা মমতাকেই দিয়েছে। মমতাকে ঘিরে বামেদের সোশাল মিডিয়ায় ট্রোল আর প্রধানমন্ত্রী মোদির খিল্লি করা, দিলীপ ঘোষের বারমুডার পরামর্শ -- এইসব ই মমতার কাছে শাপে বর হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে নীচু তলার কর্মীদের কাছ থেকে অতীতের মতোই জলভরা রিপোর্টের দ্বারা। কারণ, সিপিএমের নীচু তলার সিংহভাগই লোকসভা ভোটের কিছু আগে থেকে কিছু পর পর্যন্ত বিজেপির বন্ধু হয়ে গেলেও বিধানসভা ভোটের আগে আবার তৃণমূলের বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। মমতা শুরু থেকে শেষ নিজের পায়ে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখেছন, রাজনীতি দিয়ে আবেগকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছন, ট্রোলের কাঁটা তুলেছেন ছলে-বলে-কৌশলে, একজন পেশাদার রাজনীতিবিদকে তো তাতেই মানায়, ফেকবুক খিল্লিতে মানায় কি?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৬ জুন ২০২১ | ২০৭২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন