এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • রাগ দরবারী (১০ম পর্ব)

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৬ মে ২০২১ | ১৯৯৮ বার পঠিত


  • কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি।

    ব্যাপারটা হচ্ছে এ’রকমঃ

    কোপারেটিভ ইউনিয়নের একটা বীজগুদাম ছিল, তাতে গম ভরা। একদিন ইউনিয়নের সুপারভাইজার রামস্বরূপ দুটো ট্রাক নিয়ে ওই গুদামে এল। ট্রাকে গমের বস্তা ভরা হচ্ছিল। যারা দূর থেকে দেখছিল তারা ভাবল এ তো কোপারেটিভের নিত্যকর্ম।ট্রাক যাবে কাছের অন্য একটি বীজগুদামে মাল পৌঁছাতে। রামস্বরূপ ড্রাইভারের পাশে গিয়ে বসল এবং ট্রাক রওনা হল। একটু পরে বড় রাস্তা ছেড়ে একটা কাঁচা রাস্তা ধরে নিলে পাঁচ মাইল দূরে ওই বীজগোদাম। কিন্তু ট্রাক সেদিকে না ঘুরে সোজা এগিয়ে চলল। এখান থেকেই ফ্রড, ধোঁকা, বা তছরূপ আরম্ভ হল। ট্রাক সোজা শহরের গায়ে ওখানকার সব্জীমন্ডি বা ফসলের থোক বাজারে গিয়ে থামল। সেখানে ট্রাক দুটো গমের বস্তাগুলো নামিয়ে দিয়ে তবিল-তছরূপ বা ধোঁকার কথা একদম ভুলে মেরে দিল এবং পরের দিন থেকে আগের মত কয়লা-কাঠ এসব বইতে শুরু করল। এরপর রামস্বরূপের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। লোকে ধরে নিল ব্যাটা গমটম বেচে কয়েকহাজার টাকা ট্যাঁকে গুঁজে বোম্বাই-টোম্বাইয়ের দিকে কেটে পড়েছে। পুরো ঘটনাটা একটা রিপোর্টের রূপ ধরে লোক্যাল থানায় জমা হল এবং বৈদ্যজীর ভাষায় — কাঁটা ফুটেছিল, বেরিয়ে গেল।

    কিন্তু ইউনিয়নের এক ডায়রেক্টর কাল শহরে গিয়ে যা দেখতে পেলেন তার সারমর্মঃ রামস্বরূপ ওই মেরে দেয়া টাকা খরচ করতে বোম্বাই নয়, স্থানীয় শহরকেই পছন্দ করেছে। ডায়রেক্টর সাহেব ওখানে কেন গেছলেন? মনে করুন, সেরেফ শহর দেখার জন্যে শহর দেখতে।ওখানে গেলে ওনার অন্যসব কাজকর্মের মধ্যে একটা কাজ বাঁধা ছিল। তা’হল কোন পার্কে যাওয়া, সেখানে গাছের ছায়ায় বসে ছোলাসেদ্ধ খাওয়া, মন দিয়ে রঙীন ফুল ও মেয়ে দেখা, এবং কোন অল্পবয়েসি ছোকরাকে দিয়ে মাথায় তেল মালিশ করানো। যখন ওনার এইসব কাজকম্ম শেষ হওয়ার মুখে তখনই ঘটনাটি ঘটে। উনি বসেছিলেন গাছের ছায়ায় একটা বেঞ্চে। আরামে চোখ বুঁজে গেছল, আর ছোঁড়াটার নরম ও পাতলা আঙুল ওনার মাথায় তিড়-তিড়-তিড় বোল বাজাচ্ছিল। ছেলেটা বেশ মজা করে ওনার চুলে তবলার কোন ত্যাড়াম্যাড়া বোল তুলছিল আর উনি চোখ বুজে আফসোস করছিলেন- হায়, তেলমালিশ যে শেষ হতে চলেছে! একবার উনি চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এতক্ষণ মালিশ পেয়ে ঘাড়টাও দুঁদে অফিসার হয়ে গেছে। পেছনে ঘুরলোই না। অগত্যা উনি সামনে যা দেখা যাচ্ছে তাই মন দিয়ে দেখতে লাগলেন।

    উনি দেখলেনঃ সামনে আরেকটি গাছ এবং তার নীচে আরেকটি বেঞ্চ। সেখানে বসে রামস্বরূপ সুপারভাইজার একটা ছোঁড়াকে দিয়ে তেল মালিশ করাচ্ছে। ওর মাথা থেকেও তিড়-তিড়-তিড় বোল উঠছে এবং দেখা করার ওর চোখ বুঁজে রয়েছে। ডায়রেক্টর এবং টাকা-মেরে-দেয়া সুপারভাইজার দুজনেই তখন পরমহংস ভাব ধারণ করে যে যার নিজস্ব দুনিয়ায় লীন। শান্তিপূর্ণ-সহাবস্থানের একেবারে আদর্শ স্থিতি।

    কেউ কারও কাজে হস্তক্ষেপ করলেন না। পনের মিনিট ধরে একে অপরকে না দেখার ভান করে উত্তম প্রতিবেশির মত যে যার বেঞ্চে বসে রইলেন। তারপর আড়মোড়া ভেঙে উঠে মালিশের ছোকরাদের যথোচিত পারিশ্রমিক দিয়ে পরেরবার এখানেই দেখা করার প্রতিশ্রুতি আদায় করে যে যার রাস্তায় চলে গেলেন।

    শিবপালগঞ্জে ফিরে আসার সময় ডায়রেক্টর সাহেবের চৈতন্য হল যে তেলমালিশের সুখ পেতে গিয়ে উনি কোপারেটিভ মুভমেন্টের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। মনে পড়ল - রামস্বরূপ ফেরার এবং পুলিশ ওকে খুঁজছে। রামস্বরূপকে ধরিয়ে দিলে ধোঁকাধড়ি ও তছরূপের মামলাটা আদালতে দাঁড়াত। হয়ত ওঁর নাম খবরের কাগজেও ছাপা হত।এসব ভেবে ভেবে ওঁর কষ্ট বেড়ে গেল। বিবেক জাগ্রত হয়ে ওঁকে খোঁচাতে লাগল।কাজেই গাঁয়ে ফিরে বিবেককে শান্ত করতে উনি বৈদ্যজীর দরবারে হাজির হয়ে এক পুরিয়া হিংগ্বাষ্টক চূর্ণ মুখে ঢেলে বললেন - “আজ পার্কে একজনকে দেখলাম, একদম রামস্বরূপের মত”।

    বৈদ্যজী বললেন, “হবে হয়ত; অনেক লোকের চেহারায় অমন মিল-মিশ থাকে”। ডায়রেক্টরের বোধ হল এটুকুতে বিবেক শান্ত হবেনা। উনি এদিক ওদিক দেখে বললেন, “তখনই মনে হল, যদি রামস্বরূপই হয়?”

    বৈদ্যজী ওঁর দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন। উনি আবার বললেন, “রাআমস্বরূপই ছিল। ভাবলাম শালা এখানে কী করছে? ব্যাটা মালিশ করাচ্ছিল”।

    “তুমি ওখানে কী করছিলে শ্রীমান”?

    “আমি ক্লান্ত হয়ে একটা গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছিলাম”।

    বৈদ্যজী বললেন, “তক্ষুণি পুলিশে খবর দেয়ার ছিল”।

    ডায়রেক্টর চিন্তায় ডুবে গেলেন; তারপর বললেন, “ভেবেছিলাম রামস্বরূপ যেন বুঝতে না পারে যে ওকে দেখে ফেলেছি, তাই আর পুলিশে খবর দিইনি”।

    তবিল-তছরূপের অপরাধী বোম্বাই নয়, পনের মাইল দূরের শহরে রয়েছে এবং তেলমালিশ করানোর জন্যে ওর ধড়ের উপর মুন্ডুটা এখনও টিকে আছে — এই খবরটি বৈদ্যজীকে রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিল। ডায়রেক্টরদের মীটিং ডাকা জরুরি। তবে খবরটা উনি খালি পেটে শুনেছেন, ভাঙ সেবনের পর শোনা দরকার — তাই মীটিংযের সময় ধার্য হল সন্ধ্যেবেলা।

    শনিচরের চোখে পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ হলেন বৈদ্যজী এবং অন্তরীক্ষে একমাত্র দেবতা হলেন হনুমানজী। হনুমানজি শুধু ল্যাঙোট পরে থাকেন, তাই শনিচর শুধু আন্ডারওয়ারেই কাজ চালিয়ে নেয়। গেঞ্জি তখনই পরত যখন কোথাও সেজেগুজে যাওয়ার দরকার হত। এত গেল হনুমানজির প্রভাব। বৈদ্যজীর প্রভাবও কম নয়। তার জেরে শনিচর পথচলতি যেকোন লোককে কুকুরের মত খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠত। কিন্তু বৈদ্যজীর ঘরের কেউ, এমনকি একটা কুকুরও যদি হয়, শনিচর তার সামনে ল্যাজ নাড়াতে থাকবে। কথা হল, বৈদ্যজীর ঘরে কোন কুকুর নেই আর শনিচরেরও পেছনে ল্যাজ নেই।

    যা কিছু শহরের তাতেই ওর কৌতূহল। তাই রঙ্গনাথকে নিয়েও ওর খুব উৎসাহ; রঙ্গনাথ এলেই শনিচর তার আশপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। আজকেও তার ব্যতিক্রম হল না। বৈদ্যজী গেছেন ডায়রেক্টর্সের বৈঠকে, দোরগোড়ায় শুধু দু’জন — রঙ্গনাথ এবং শনিচর। সূর্য ডুবছে, শীতের সন্ধ্যায় সবার ঘর থেকে যে ঝাঁঝালো ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ওঠে ছাতের উপরের আকাশকে ভারি করে তারও ব্যতিক্রম হয়নি।

    রাস্তা দিয়ে কেউ খট খট করে যাচ্ছে। বিকলাঙ্গদের নিয়ে আমাদের মনে যে সাত্ত্বিক ঘৃণা জমে থাকে সেটা পিচ করে বাইরে ফেলে শনিচর বলল - ‘শালা লঙরবা (ল্যাংড়া) চলল’। কথাটা বলে ও ব্যাঙের মত লাফ মেরে বাইরের রোয়াকে এসে থ্যাবড়া মেরে বসে পড়ল।

    রঙ্গনাথ আওয়াজ দিল — লঙ্গড় হো ক্যা?

    ওকিছুটা এগিয়ে গেছল। ডাক শুনে থেমে পেছনে মুড়ে জবাব দিল — হাঁ বাপু; লঙ্গড়ই বটি।

    - দলিলের ‘নকল’ পেলে?

    রঙ্গনাথের প্রশ্নের উত্তর এল শনিচরের কাছ থেকে।

    - আর নকল? ওর ভাগ্যে এবার শিকে ছিঁড়বে। সেটা কড়িকাঠ থেকে টাঙিয়ে তাতে খোঁড়া পা’ ঝুলিয়ে উনি দোল দোল দুলুনি করবেন।

    এসব কথায় লঙ্গরের কোন হেলদোল নেই। ওখান থেকে চেঁচিয়ে বলল - নকল পাইনি বাপু, আজ নোটিস বোর্ডে ‘আপত্তি’ লটকেছে।

    -- হলটা কী? ফের ফীস কম পড়েছিল?

    -- ফীসটিস নয়, এবার আমার মামলার মূল কাগজে অনেক ভুল বেরিয়েছে। ঠিকানায় ভুল, আবেদনকারীর দস্তখত ভুল জায়গায়, তারিখের দুটো সংখ্যা মিশে গেছে, একটা জায়গায় কাটাকুটি, তাতে দস্তখত নেই - এইরকম অনেকগুলো ভুল।

    রঙ্গনাথ বলল, ‘এই দফতরের কর্মচারিগুলো হাড় বজ্জাত, খুঁজে খুঁজে যত্ত ফালতু আপত্তি’!

    লঙ্গড় এবার এমন বক্তিমে ঝাড়ল যেন গান্ধীজি প্রার্থনাসভায় বোঝাচ্ছেন — ইংরেজকে ঘৃণা করা ঠিক নয়।

    - না বাপু! দফতরের লোগগুলোর কোন দোষ নেই, ওরা তো ওদের কাজ করেছে। যত গণ্ডগোল আর্জিনবিসের আর্জি লেখায়। আসলে আজকাল বিদ্যাচর্চা লোপ পাচ্ছে। নতুন নতুন ছোকরাগুলো এসে ভুলে ভরা আর্জি বানাচ্ছে।

    রঙ্গনাথের মন সায় দিল যে বিদ্যার লোপ হচ্ছে, কিন্তু লঙ্গড়ের বলা কারণটা ওর হজম হলনা। ও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু লঙ্গড় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে জোরগলায় চেঁচিয়ে বলল - কোই বাত নহী বাপু, কাল দরখাস্তটা ঠিক করিয়ে নেব।

    তারপর ও একপায়ে খটখটিয়ে এগিয়ে গেল। এসে শনিচর মাথা নেড়ে বলল, ‘কোত্থেকে যে যত বাঙ্গড়ু এসে এই শিবপালগঞ্জে জোটে’!

    রঙ্গনাথ ওকে বোঝাল যে সব জায়গার এক হাল। এই দিল্লির কথাই ধর।

    এবার ও শনিচরকে দিল্লির কিসসা শোনাতে লাগল। ভারতীয়দের বুদ্ধি যেমন ইংরেজদের জানলা দিয়ে দুনিয়ার খোঁজ পায়, তেমনই শনিচর রঙ্গনাথের জানলা দিয়ে দিল্লির খোঁজখবর নিতে লাগল। ওরা দু’জন খানিকক্ষণ এতেই মজে রইল।

    আঁধার নামছে, কিন্তু এতটা ঘন হয়নি যে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ ও পশুর তফাৎ বোঝা যাবেনা। বৈদ্যজীর বৈঠকখানায় একটা লণ্ঠন টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। সামনের রাস্তা দিয়ে তিন নবযুবক হা-হা করে হাসতে হাসতে চলে গেল।ও দের কথাবার্তায় কিছু শব্দ - যেমন ‘দুকুরবেলা’,’ফান্টুস’, ‘চকাচক’, ‘তাস’ ও ‘পয়সাকড়ি’ - এমনভাবে ঘুরে ফিরে আসছিল যেন প্ল্যানিং কমিশনের মিটিংযে ‘ইভ্যালুয়েশন’,‘কোঅর্ডিনেশন’,‘ডাভটেলিং’ অথবা সাহিত্যিকদের বৈঠকে ‘পরিপ্রেক্ষিত’,’জনগণ’, ‘যুগচেতনা’ বা ‘সন্দর্ভ’ ইত্যাদি শোনা যায়। ওই তিন যুবক কিছু একটা বলতে বলতে বৈঠকখানার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। শনিচর বলল - বদ্রীভাইয়া এই জানোয়ারগুলোকে কুস্তি শেখায়। বুঝুন, এসব হল বাঘের হাতে বন্দুক তুলে দেয়া। এই শালাদের ঠেলায় এখনই ভদ্দরলোকদের রাস্তায় বেরনো দায়; এরপরে কুস্তির দাঁওপ্যাঁচ শিখলে তো অন্যদের গাঁ ছেড়ে চলে যেতে হবে’।

    আচমকা একটা বিচ্ছিরি রকমের অট্টহাসি -- ওই তিনজনের গলা থেকে।

    সবশ্রেণীর মানুষেরই হাসি ও অট্টহাসির আলাদা আলাদা স্টাইল আছে। কফিহাউসে সমাসীন সাহিত্যিকদের হাহা শরীরের নানান জায়গা থেকে বেরোয়। কারও পেটের গভীর থেকে, তো কারও গলা বা মুখগহ্বর থেকে। ওদের মধ্যে এক-আধজন এমনও থাকে যে বসে বসে খালি ভাবে — সবাই হাসছে কেন? আবার অফিসারকুল যখন ডিনারের পরে কফিতে চুমুক দিয়ে যে হাসি হাসেন, তার জাতই আলাদা। ওই হাসির উৎসস্থল পেটের গহনে একদম নাভিমূলে। ওই হাসির ওজনের সঙ্গে সাধারণ হাসির তুলনা করা মানে ওনাদের মাইনের সঙ্গে আসল আমদানিকে দাঁড়িপাল্লার দুদিকে তোলা। রাজনীতির কারবারিদের হাসি বেরোয় মুখের থেকে মেপেজুকে। এই হাসি কেমন ফাঁপা এবং দ্বিমাত্রিক। মানে হাসির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ রয়েছে কিন্তু গভীরতা নদারদ।ব্যবসাদারেরা প্রায়শঃ হাসে না। যদি হাসে তাও এমন সূক্ষ্ম ও সাংকেতিক ভাষায় যে মনে হয় ব্যাটা ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে হাসির আসল স্টক লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এই নবযুবকদের অট্টহাসি আলাদা জাতের, এ হাসি ক্ষমতার দম্ভের। এ হাসির আওয়াজ মানুষের গলা থেকে বেরোয়, কিন্তু মনে হয় মোরগ, ভাম বা ঘোড়ার গলা থেকে আসছে।

    ওই হাহা-হাহা শুনতেই শনিচর ধমকে উঠল - এখানে দাঁড়িয়ে কী ছিঁড়ছ? যাও, কেটে পড়।

    ছেলেগুলো ওদের হাসির পকেট-বুক এডিশন বের করল, তারপর কেটে পড়ল। এমন সময় অন্ধকারে এক নারী লালটিনেরচজ মলিন আলোয় এলোমেলো ছায়া ফেলে ছমছম করে চলে গেল। যেতে যেতে ও বিড়বিড় করছিল যে সেদিনের ছোকরাগুলো, যাদের ও ন্যাংটোপুঁটো দেখেছে, আজ ওর সঙ্গে প্রেম করতে চায়! এইভাবে মহিলাটি গোটা পাড়ায় খবরটা চাউর করে দিল যে আজকালকার ছোকরাগুলো ওকে লাইন মারে এবং ওর এখনও লাইন মারার বয়েস রয়েছে। তারপর ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে গায়েব হয়ে গেল। শনিচর টিপ্পনি কাটল, ‘ব্যাটা কানা না জানে কোত্থেকে এই কুত্তিটাকে জুটিয়েছে, যখন রাস্তা দিয়ে যায় কেউ না কেউ ঠিক ওকে আওয়াজ দেয়’।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৬ মে ২০২১ | ১৯৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেন্দ্র‌ বিশ্বাস | 182.70.221.191 | ০৬ মে ২০২১ ২২:২২105634
  • রাগদরবারী ১০


    রামস্বরূপ আর এই কাহিনীর শেষে আসা মহিলা - এই দু্টো চরিত্রই বেশ জম্পেশ হয়েছে!

  • Swati Ray | 117.194.34.176 | ০৭ মে ২০২১ ০১:৩৪105636
  • শেষের দিকটা খুবই  ভাল লাগল .

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন