এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ১৪ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • বৈঠকি আড্ডায় ১৪  

    ভোটাভুটি খরচাপাতি

    পর্ব ৬

    শেষ নির্বাচন

    প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে নতুন চ্যান্সেলর আডলফ হিটলার তাঁর প্রথম ভাষণ দিলেন রাইখসটাগে নয়, আপন মনের কথা সরাসরি জার্মান জনতাকে জানালেন এক বেতার বার্তায়।  যুদ্ধে পরাজয়ের পরে দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যা, সামরিক অক্ষমতার জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলিকে দায়ী করে সবশেষে আবেদন জানালেন :

    “কমিউনিস্ট ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি বিগত চোদ্দ বছরে দেশকে  লুট করে জার্মানিকে সার্বিক বিনষ্টির দিকে ঠেলে দিয়েছে।  চার বছর , আমাদের মাত্র চার বছর সময় দিন , তারপরে আমাদের বিচার করবেন।“

    যদিও নাৎসি পার্টি পেয়েছিল জনমতের ৩৩.১% ভোট কিন্তু জার্মান জাতীয় দল এবং সেন্টার পার্টির সমর্থনে চ্যান্সেলর অর্জন করলেন কার্যকরী গরিষ্ঠতা।  তিনি অবশ্য চান কার্যকরী নয়,  নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা ; আর  দুটো দলের সঙ্গে দশটা বৈঠক করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতন ধৈর্য তাঁর নেই ।  আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব আইনের ঠেলায় পূর্ণ বহুমত পাওয়া শক্ত।  সেই কারণে দেশের  উন্নয়নের কাজ আটকে যায়- ভাইমার সংবিধানের সে আইন বদলানোর ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিরও নেই।   অগত্যা চ্যান্সেলর হিটলার আরেকবার জনতার সামনে যেতে চাইলেন, এবার ক্ষমতা সন্ধানী নাৎসি পার্টির নেতা নয়, দেশের চ্যান্সেলর হিসেবে ময়দানে নামবেন।  তিনি চান দুই তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সকল সিদ্ধান্ত নেবার পূর্ণ স্বাধীনতা। প্রেসিডেন্ট পাউল ফন হিনডেনবুরগের সঙ্গে প্রথম মিটিঙে চ্যান্সেলর তাঁকে পরামর্শ দিলেন ভাইমার সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী নভেম্বর ১৯৩২ সালে নির্বাচিত পার্লামেন্টকে ডিসমিস করে নতুন ভোটের দিন ঘোষণা করা  হোক ।

    বছর বছর ভোট হয় -  এক এই ১৯৩২ সালেই  জুলাই , নভেম্বর দু বার - কোন সরকার টেকে না।  এই রণে ক্লান্ত হয়ে বৃদ্ধ সেনানায়ক বললেন তথাস্তু । নতুন নির্বাচনের ডাক দেওয়া হলো – ৫ই মার্চ , ১৯৩৩

    পয়লা লড়াইয়ে জিতে চ্যান্সেলরি ভবনে মিটিং ডাকলেন হিটলার । কেউ কিছু বলার আগেই ইওসেফ গোয়েবলস মুখ খুললেন  , মাইন ফুয়েরার , গত বছরে দুটো সাধারণ নির্বাচনে ট্রেনে বাসে গাড়িতে ঘোরাঘুরি করে, মিটিঙের মঞ্চ সাজাতেই আমাদের ট্যাঁক যে খালি হয়ে গেছে ( ডি কাসে ইস্ট লেয়ার )! পার্টির সদস্যদের চাঁদা আর  ধার দেনা করেই  পার্টির কাজ চলে । যদিও আমরা ক্ষমতায় এসেছি,  ভোট হবে  বলে সরকারি তহবিলে আমরা হাত দিতে পারি না !

    ফুয়েরার বললেন দু বছর আগে ডুসেলডরফের মিটিঙে হের থুসেন আমাকে , সাড়ম্বরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন , গত সপ্তাহে  প্রেসিডেন্টের কাছেও আমার পার্টির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।   আজ আমাদের প্রয়োজনে তাঁরা শুধু পাশেই দাঁড়াবেন না , টাকাও দেবেন ।

    পাঁচ সপ্তাহ বাদে ভোট , শিগগির  ডাকুন তাঁদের।  

    লাগে টাকা

    বৃহস্পতিবার, ১৬ই ফেব্রুয়ারি  ,১৯৩৩ প্রায় একই সময়ে চ্যান্সেলরের ব্যক্তিগত বার্তা বহন করে একটি টেলিগ্রাম পৌঁছুলো বার্লিন,  কলোন , ডুসেলডরফ,  এসেন, মিউনিক,  হামবুর্গের চব্বিশজন ধনী শিল্পপতির অফিসেঃ  

    চ্যান্সেলর আডলফ হিটলারের সঙ্গে একটি মুখোমুখি আলোচনা বৈঠক-
    বিষয় : বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আলোচনা
     
    স্থান            প্রাশিয়ান পার্লামেন্টের প্রধান , হ্যারমান গোয়েরিঙের বাসভবন
    কাল            সোমবার ২০শে ফেব্রুয়ারী , সন্ধ্যা ছটা

    আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য

    ভবদীয়
    আডলফ হিটলার , চ্যান্সেলর , জার্মানি
    ১৬.২.১৯৩৩

    বার্লিনের কুয়াশা মোড়া শীতল ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় একটি বেলে পাথরের তৈরি প্রাসাদের গাড়ি বারান্দায় মহার্ঘ্য সেডান গাড়ি থেকে একে একে নামলেন  চব্বিশ জন সুসজ্জিত পুরুষ। তাঁদের কালো অথবা ব্রাউন ওভারকোট , ফেল্ট অথবা উলের টুপি সযত্নে সংগৃহীত রক্ষিত হলো একটি বিশেষ কক্ষে । প্রাসাদের বিশাল সোপান বেয়ে তাঁরা উঠলেন দোতলায় ।  প্রাশিয়ান পার্লামেন্টের অধ্যক্ষ ( স্পিকার)  হ্যারমান গোয়েরিং তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা সহ নিয়ে গেলেন একটি সুসজ্জিত বিশ্রামগৃহে ।

    তাঁরা আসন গ্রহণ করার পরে এত অল্প সময়ের নোটিসে তাঁরা যে এসেছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানালেন গোয়েরিং , তাঁর ডান পাশে রাইখসবাঙ্কের পূর্ব প্রধান হায়ালমার শাখট (পরে অর্থনীতি মন্ত্রী )  । চ্যান্সেলরের দেখা নেই ।

    প্রায় সাড়ে ছটার সময়ে হিটলার এলেন , সঙ্গে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অটো ভাগেনার ( অর্থনীতির স্নাতক, ঝটিকা বাহিনীর কর্মকর্তা , রুর অঞ্চলের এক বাণিজ্যিক মোগলের সন্তান , ঝটিকা বাহিনীকে একটি বিশেষ ব্রান্ডের সিগারেট বিক্রি করে বিশাল অর্থ উপার্জন করেন ) ।

    সকলের সঙ্গে করমর্দন শেষে হিটলার  একবার না থেমে কোন নোটের সাহায্য ছাড়াই প্রায় দেড় ঘণ্টার একটি বক্তিমে ছাড়লেন ( যদিও তার মূল টেক্সট পাওয়া যায় না , উদ্ধৃতি মেলে অনেক ) –

    যুদ্ধের পরে এই চোদ্দ বছরের অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট এবং বামপন্থী দলগুলি  অরাজকতা সৃষ্টি করার ফলে দেশের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছে । গণতন্ত্রের যুগে ব্যক্তিগত ধন সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব নয় , এখন প্রয়োজন সবল নেতৃত্ব ও নতুন চিন্তা।  সেটা  আমি খুঁজে পেয়েছি জাতীয়তাবাদ এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শক্তির ভেতরে । সামনের লড়াইটা বাম বনাম দক্ষিণের সম্মুখ সংগ্রাম । আমরা চাই ক্ষমতা দখল করে প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করতে কিন্তু এই লড়াই ততদিন স্থগিত রাখতে হবে যতদিন না আমরা একচ্ছত্র ক্ষমতা আয়ত্ত না করছি।  মনে রাখবেন বামপন্থীদের হাতে আপনাদের ধন সম্পদ জমি জিরেত কল কারখানা কিছুই সুরক্ষিত নয় , একবার সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে চেয়ে দেখুন!  অর্থনীতি বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে  যা কিছু বরণীয়  তা সম্ভব হয়েছে কোন দলীয় রাজনীতি নয় ,  একক ব্যক্তিত্বের  ভাবনা ও চিন্তায় , নির্বাধ শক্তি ও ক্ষমতার বলে।

    তেরো দিন বাদে, পাঁচই মার্চ সাধারণ নির্বাচন – ফলাফল যাই হোক না কেন, এটাই হবে জার্মানির শেষ নির্বাচন।  হয় ভাইমার সংবিধান মোতাবেক বহু দল মিলে সম্পূর্ণ অকর্মণ্য সরকার গড়বার চেষ্টা করতে গিয়ে দেশকে  ধ্বংস করবে অথবা পথে পথে সশ্ত্র লড়াই হবে ।

    ভদ্রমহোদয়গণ, আমার কথা  মনে রাখুন ,  এই  নির্বাচন জার্মানির শেষ নির্বাচন ।

    বিজনেস ম্যাগনেটরা আশা করেছিলেন হিটলার তাঁদের বিশেষ সমস্যা যেমন ট্রেড ইউনিয়ন,  শ্রমিক অশান্তি,  স্ট্রাইক  ইত্যাদির বিষয়ে নাৎসি পার্টির লাইন জানাবেন।  হিটলার সেদিকেই গেলেন না ।

    চ্যান্সেলর হিটলার জার্মান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৃত্যু ঘণ্টা বাজালেন।

    সমবেত ক্যাপটেনস অফ ইন্ডাস্ট্রি বিচলিত হন নি  । তাঁদের মনোনীত প্রতিনিধি  
    ইস্পাত ও অস্ত্র ব্যবসায়ী গুস্তাভ ক্রুপ ।  মিটিঙের অ্যাজেনডার কথা বিবেচনা না করেই হিটলারের সঙ্গে এই প্রথম সাক্ষাৎকারের মউকায় হের ক্রুপ একটি দীর্ঘ পলিসি নোট লিখে এনেছিলেন । কিন্তু হিটলারের ভাষণ শোনার পরে সেটি পুরো উপস্থিত করবার প্রয়োজন দেখলেন না ।

    জার্মানির বর্তমান পরিস্থিতির প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা পেশ করার জন্য ক্রুপ হিটলারকে ধন্যবাদ জানিয়ে  বললেন , “ জার্মানির বর্তমান অরাজক অবস্থার একমাত্র সমাধান একটি সবল রাষ্ট্র এবং তার প্রধান যার ছত্রছায়ায় বাণিজ্য ও অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতি করবে । “

    গুস্তাভ ক্রুপ এবং সমাগত বাণিজ্যিক প্রধানদের উপস্থিতির জন্য  ধন্যবাদ জানিয়ে  অন্য কাউকে  প্রশ্নোত্তরের সুযোগ না দিয়েই হিটলার বিদায় নিলেন।

    চব্বিশ জন এখনও ধন্দে – এই মিটিঙের আসল অ্যাজেনডা কি ?

    হিটলারকে প্রাসাদের দোরগোড়া অবধি পৌঁছে গাড়িতে তুলে দিয়ে বৃহৎ বপু গোয়েরিং সভাগৃহে  ফিরলেন।  এই হাঁটাহাঁটিতে হাঁপিয়ে পড়েছেন ; অন্যদিকে চব্বিশ জন শিল্পপতি বসে আছেন নিশ্চুপ । একটু দম নিয়ে গোয়েরিং বললেন , আমরা কোন অর্থনৈতিক এক্সপেরিমেন্ট করতে আসি নি । আমরা মনে করি এই অরাজকতা প্রশমিত হলেই আমাদের সুদক্ষ শাসনে বর্তমান অর্থনীতি সঠিক মোড় নেবে । কিন্তু আমাদের হাতকে  শক্ত করতে হলে নাৎসি পার্টি ও তার সহযোগী জার্মান পিপলস পার্টিকে সামনের ইলেকশানে বিজয়ী হতে হবে।  এই দুই দল একত্রে এই ভোটে লড়বে ( জার্মান রাজনীতিতে প্রথম জোট  বন্ধন ) ।

    ভদ্রমহোদয়গণ,  এই নির্বাচনে জিততে গেলে খরচা আছে, অনেক খরচা।  গত বছরে পর পর দুটো নির্বাচনে লড়ে আমাদের তহবিল এখন প্রায় শূন্য । সদস্যদের চাঁদা আর কিছু ধার দেনা করে এ লড়াই চালানো যায় না – সরকারি তহবিলের টাকায় আমরা রাজনৈতিক প্রচার করতে পারি না , সংবিধানের নিষেধ।  আজ আপনারা নিজের স্বার্থ ভুলে আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য করুন,  পরবর্তী পথ আমরা একসঙ্গে হাঁটব- ভবিষ্যতে আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি আজি দিলাম।  

    তবে এটাও মনে রাখবেন , এই  নির্বাচনী জয় হবে জার্মানির ইতিহাসে একটি নির্ণায়ক মোড়- আগামী একশো বছরে আর কোন নির্বাচন হবে না।

    অনেক ভণিতার পরে  হ্যারমান গোয়েরিং  ঝেড়ে কাশলেন এবং তৎক্ষণাৎ বিদায় নিলেন।

    সমবেত বাণিজ্যিক প্রধানগণ বাক্যিহারা । তাহলে এই জন্যেই ডাক পড়েছিল ?

    সভাগৃহে তখনও আসীন গুম্ফ শোভিত ডক্টর হায়ালমার শাখট , যিনি পরে আবার রাইখসবাঙ্কের প্রেসিডেন্ট এবং ইকনমি মন্ত্রী হবেন ।  তিনি এতক্ষণ কোন কথা বলেন নি । হিটলার এবং গোয়েরিং বিদায় নিলে তিনি মুখ খুললেন

    “ এই ভোট যুদ্ধ জিততে গেলে , পার্টির হিসেব অনুযায়ী আমাদের অন্তত তিরিশ লক্ষ রাইখসমার্ক দরকার ( আজকের হিসেবে দু কোটি ইউরো অথবা একশ আশি কোটি টাকা) । এবার আসুন ক্যাশ কাউনটারে !”

    বাঘের পিঠে সওয়ার যখন হয়েছেন তখন নেমে পড়ার প্রশ্ন ওঠে না। ক্রেডিট কার্ড অনেক দূরে , চেক বই কেউ সঙ্গে আনেন নি । কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করার অধিকার তাঁদের ছিল – তাঁরা বিশাল প্রতিষ্ঠানের মালিক বা শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত । একের পর এক শিল্পপতি  ডক্টর শাখটের চাঁদার খাতায় সই করলেন

    আপনার আমার চেনা কয়েকটি নাম ও চাঁদার পরিমাণ উল্লেখের দাবি রাখে

    দাতা                রাইখসমার্ক

    টেলিফুঙ্কেন         ৩৫,০০০

    অসরাম             ৪০,০০০

    ই গে ফারবেন       ৪,০০,০০০ ( এঁদের  আজ আমরা চিনি বায়ার এ জি , বি এ      এস এফ ইত্যাদি কেমিকাল কোম্পানির নামে  )
    ক্রুপ খনিজ গ্রুপ    ২,০০,০০০    

    এ ই জি               ৬০,০০০    ( ইলেট্রিকাল আজ এ ই জি টেলিফুঙ্কেন নামে পরিচিত )  

    ডয়েচেবাঙ্ক            ২,০০,০০০          

    সংযুক্ত ইস্পাত      ২,০০,০০০  ( লোহা ইস্পাত কয়লা মনোপলি )

    ওপেল               ১,০০,০০০    (গাড়ি )

    সাত দিনের মধ্যেই এঁরা সকলেই প্রতিশ্রুত চাঁদা জমা দিলেন ডেলব্রুইক শিকলার ব্যাঙ্কে , অ্যাকাউনটের নাম হায়ালমার শাখট ট্রাস্ট।

    গোয়েবলসের ডায়েরি
    একুশে ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার

    গোয়েরিং আনলেন খুশির খবর ! বিরাট ব্যাপার ! আমি এখুনি প্রচার দপ্তরকে খবরটা দিচ্ছি মহোৎসাহে আমরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ব আজ কাজ করে আনন্দ আছে – টাকা এসে গেছে “।

    দু দিন আগে সেই ডায়েরিতে লিখেছিলেন , বড়ো খারাপ  অবস্থা পার্টির ফাণ্ডে টাকা নেই ।

    পরবর্তী ঘটনাক্রম নিম্নরূপ –

    ঠিক সাত দিন বাদে , ২৭শে ফেব্রুয়ারি  রাইখসটাগে আগুন লাগল – ফান ডের লুবে নামের এক ডাচ কমিউনিস্ট যুবক হাতে নাতে ধরা পড়ে – তৎক্ষণাৎ কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ও নেতারা জেলে নিক্ষিপ্ত হলেন । হিটলার প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগের কাছে আবেদন জানালেন পার্লামেন্টের ওপরে এই আক্রমণ দ্বারা জার্মান জন জীবন এবং দেশের সুরক্ষা বিপন্ন হয়েছে অতএব নাগরিক স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখা হোক ।  হিটলারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ রাইখসটাগ আগুন ডিক্রি পাস করে নাগরিক অধিকার মুলতুবী ঘোষণা করলেন।

    পরের বহু বছর ক্রোল অপেরা হাউসে পার্লামেন্টের অধিবেশন হবে।

    বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির সৌজন্যে হিটলার প্লেনে ও হেলিকপ্টারে ঝটিকা ক্যাম্পেন করলেন (ইউরোপীয় রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম) । অর্থের বন্যা বয়ে গেলো ।

    এত সত্ত্বেও পাঁচই মার্চের সাধারণ নির্বাচনে নাৎসি পার্টি পেলো ৪৩.৯% ভোট , সেন্টার পার্টি ( ১১.৭% ) ও পিপলস পার্টির (৮%) সমর্থনে হিটলার সরকার গড়লেন (নিষেধাজ্ঞা ও কারাদণ্ড সত্ত্বেও জার্মান কমিউনিস্ট পার্টি পায় ১১.৭% ভোট)।

    ২৩শে মার্চ পার্লামেন্টে পাস হলো অনুমোদন বিল ( এরমেখটিগুংসগেজেতস ) যার বলে “সাময়িক “ ভাবে সংবিধান , আইন পার্লামেন্টের সম্মতির প্রয়োজন  স্থগিত রেখে একচ্ছত্র  শাসনের অধিকার দেওয়া হলো হিটলারকে।  একমাত্র সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল এর বিরুদ্ধে ভোট দিলেন।  এই জরুরি অবস্থা কাগজে কলমে চার বছরের জন্য মঞ্জুর হলো

    ভাইমার সংবিধানের পালা সমাপ্ত।এবার একনায়ক যা বলবেন যা করবেন সেটাই নতুন সংবিধান। 

    ২ মে ১৯৩৩          ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ । নেতারা জেলে গেলেন ।

    ১৪ জুলাই  ১৯৩৩ নাৎসি পার্টি ব্যতীত  অন্য সকল দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো

    ২ আগস্ট, ১৯৩৪  প্রেসিডেন্ট পাউল ফন হিনডেনবুরগ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে সেই পদের জন্য নতুন নির্বাচন না করে চ্যান্সেলর হিটলার নিজেকেই   চ্যান্সেলর , রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈন্য বাহিনীর শীর্ষ নেতা বলে ঘোষণা করলেন- তিনি এবার সর্ব শক্তিমান ফুয়েরার কয়েক বছর বাদে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান।

    ১৯৩৩ সালের বিশে ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যেয়  হিটলার যেমন বলেছিলেন-  

    পাঁচই মার্চের সাধারণ ভোট জার্মানির শেষ নির্বাচন প্রতিপন্ন হলো।

    পরের ভোট হবে ১৯৪৯ সালে।

    ঋণ স্বীকার

    অর্ডার অফ দি ডে           এরিক ভুইলার ( ল্য  অরদ্র দে  জুর )

    নাৎসি বিলিওনেয়ারস      দাভিদ দে  ইয়াং

    ডায়েরি                          ইওসেফ গোয়েবলস

    সাক্ষ্য                   গিওরগ ফন শ্নিতসলার, ই গে ফারবেন -  নুরেমবেরগ
                                   যুদ্ধ অপরাধের  বিচারশালা  ১৯৪৬
     

    পরিশিষ্ট

    হাজিরা তালিকা
    ২০.২.১৯৩৩

    এরনসট ব্রান্ডি                ( রুর এলাকার মাইনিং কিং )

    কার্ল বুইরেন         (  বাদামী  কয়লা , ব্রিকেট )

    আউগুস্ত দিন                 ( পটাশ কিং )

    লুডভিগ গ্রাউয়ারট          ( বোর্ড মেম্বার রুর এলাকার নিয়োগকর্তা সমিতি)

    গুইন্থার হয়বেল               ( মাইনিং , বাদামী  কয়লার মনোপলি )

    গুস্তাভ ক্রুপ                    (লোহা ইস্পাত কামান অস্ত্রের কারবারি )

    হান্স লুইস ফারদিনান্দ
    ফন লোয়েনস্টাইন            (মাইনিং ম্যাগনেট )

    ফ্রিতস ফন ওপেল         (বাই সাইকেল দিয়ে শুরু করে মোটরগাড়ি-আজও
                                    সমান খ্যাত  )   

    গুইন্থার কোয়ানড            ( কেমিকাল কারখানা এবং বি এম ডব্লিউ গাড়ির
    পিতামহ ,  তাঁর  স্ত্রী মাগদা বিবাহ বিচ্ছেদের পরে
    গোয়েবলসকে বিয়ে করেন )

    ভলফগাং রয়টার            (স্টিল, হেভি ইন্ডাস্ট্রি – রাউরকেলা স্টিল প্লান্ট প্রতিষ্ঠার     অন্যতম  কাণ্ডারি  )

    আউগুস্ত রোসটারগ         ( ভিনটারশাল – সোডা পটাশ গ্যাস )

    হায়ালমার শাখট             রাইখসবাঙ্ক ( জার্মান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক )

    গিওরগ ফন শ্নিতস্লার       (বোর্ড মেম্বার ই গে ফারবেন- জার্মানির বৃহত্তম
                                        কোম্পানি যাকে ভেঙ্গে বায়ার , বি এ এস এফ ইত্যাদি   
                                    নানান কোম্পানি গঠিত হয় – কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে       
                                    জিক্লন বি গ্যাসের সাপ্লায়ার )

    এডুয়ারড শুলটে              (দস্তা পটাশ খনির মালিক )

    ফ্রিতস স্প্রিনগোরুম         (স্টিল- হোয়েশ আ গে , অনেক হাত ঘুরে বর্তমানে টাটা
    স্টিল )

    হুগো স্টিনেস                   (মাইনিং , শিপিং , পেট্রলিয়াম )

    এরনসট টেঙেলমান        ( মাইনিং ম্যাগনেট , রুর ভ্যালি )

    আলবার্ট ফোয়েগল         (সি ই ও,  ভেরআইনিগটে স্টালভেরকে  -ইস্পাত কয়লা
    লোহা  )

    লুডভিগ ফন
     ভিনটারফেলড             (বোর্ড মেম্বার , জিমেন্স )

    ভলফ দিয়েতরিখ
    ফন ভিতসলেবেন          ( প্রতিনিধি – কার্ল ফ্রিডরিখ ফন জিমেন্স)   

    নাৎসি পার্টির সঙ্গে জার্মান শিল্প বাণিজ্যের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কয়েক বছর আগেই  তাঁরা খুঁজছিলেন এক স্থিতিশীল সরকার যার সঙ্গে সমঝোতা করা যায় – আপনি আমার কেসটা দেখুন আমি আপনারটা দেখব।  বিশে ফেব্রুয়ারির  দান মেলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নাৎসি পার্টির সঙ্গে বাণিজ্য মহলের যোগসূত্রকে দৃঢ় করার বাসনায় কিছু ধন কুবের কেপলার সার্কেল নামে একটি ক্লাবের স্থাপনা করেছিলেন।‘ ‘অস্ট্রিয়ান করপোরেল’কে দেশের কাণ্ডারির পদে  বসাবেন কিনা এই চিন্তায় যখন প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ দ্বিধান্বিত , সেই সময়ে (২৮/২৯ জানুয়ারি ১৯৩৩)   নাৎসি পার্টি ও আডলফ হিটলারের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়ে কেপলার সার্কেলের সদস্য সহ হিনডেনবুরগের কাছে যে ষোলোজন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী  চিঠি লিখেছিলেন তাঁদের কয়েকজনের নাম হয়তো উল্লেখযোগ্য –

    ফ্রিতস থুসেন                  বৃহত্তম ইস্পাত কোম্পানি ফেরআইনিগটে স্টালভেরকের
    চেয়ারম্যান

    ফ্রিডরিখ রাইনহার্ট           এ ই জি , বৃহত্তম ইলেকট্রিকাল কোম্পানির বোর্ড মেম্বার
                                        কমেরতসবাঙ্কের সহ প্রধান, বার্লিন চেম্বার অফ কমার্সের
                                        প্রেসিডেন্ট , কেপলার সার্কেল সদস্য

    কার্ল ক্রোগমান               হামবুর্গের ব্যাঙ্কের ও ভাক্সমুথ শিপিং লাইনের মালিক
                                        ১৯৩৩-১৯৪৫ হামবুর্গের মেয়র হামবুর্গ চেম্বার অফ
                                        কমার্সের প্রেসিডেন্ট ; কেপলার সার্কেল সদস্য

    এরিখ লুইবারট               সি ই ও দিভিদাগ ( Dywidag) , বৃহৎ পরিকাঠামো
    বানানোর  কোম্পানি ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান  এখনও স্বমহিমায় বিরাজিত

    এরভিন মার্ক                  হামবুর্গ কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের প্রধান

    ফ্রিতস বাইনডরফ           পেলিকান এ জির মালিক , ডয়েচে ব্যাঙ্কের বোর্ড মেম্বার

    কুর্ট বারন
    ফন শ্রোয়েডার                 প্রাইভেট ব্যাংকার , কলোন, কেপলার সার্কেল সদস্য

    কুর্ট ফন আইখবর্ণ সাইলেসিয়ার বৃহত্তম ব্যাঙ্কের মালিক

    ইওয়াখিম ফন অপেন       প্রেসিডেন্ট ব্রানডেনবুরগ চেম্বার অফ কমার্স

    এভালড হেকার               প্রেসিডেন্ট হানোভার চেম্বার অফ কমার্স , কেপলার
    সার্কেল সদস্য

    ফ্রান্তস ভিটয়ফট             চেয়ারম্যান কমারতসব্যাঙ্ক , কেপলার  সার্কেল সদস্য

    পু : সরকারি চাঁদা তোলার এই নাৎসি মহোৎসবটি অত্যন্ত গোপনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।  নুরেমবেরগের যুদ্ধ অপরাধের বিচার সভায় ই গে ফারবেনের গিওরগ ফন শ্নিতস্লারের জবানবন্দী থেকে এটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে । এখন আমরা যা জানি তার সবটাই সেখানে উপস্থিত কিছু মানুষের স্মৃতিচারণা থেকে আহরিত।  

    ১৯১৮-১৯৪৫ , ইতিহাসের এই পর্বটি নিয়ে আমার নানান বিচ্ছিন্ন লেখাকে সঙ্কলিত করে একটি গ্রন্থ রচনার বাসনা আছে।

    একদিন !

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 220.235.209.213 | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:০০531064
  • অসাধারণ হীরেন দা। বই এর অপেক্ষায় থাকবো। 
     
    যেকটা কোম্পানি র নাম আছে, তাদের প্রায় সবকটা আজকেও জাঁকিয়ে ব্যবসা করছে দুনিয়া জুড়ে। অর্থাৎ সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার এ জার্মানির কয়েক মিলিয়ন লোক মরলেও এদের কারোর কিচ্ছু হয়নি। 
     
     
  • Kishore Ghosal | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪২531073
  • রাষ্ট্র ক্ষমতা এবং বণিক সম্প্রদায়ের নিবিড় যোগাযোগ - যাকে বাংলা প্রবাদে "গোঁফ শোঁকাশুঁকি" বলে -মনে হয় চিরন্তন। 
     
    পলাশীর যুদ্ধে সিরাজকে উলটে দেওয়ার জন্যে "জগৎ শেঠ" মহতাব ভাইরা - যে টাকা পুরষ্কার  দিয়েছিলেন, তাতে ইস্ট ইণ্ডিয়া কো, ক্লাইভ নিজে,  মিরজাফর, কৃষ্ণনগরের রাজা, রাধাকান্ত দেব প্রভূত অর্থবান হয়েছিল।
     
    প্রকৃতপক্ষে বণিকদের চোখধাঁধানো  আর্থিক  আনুকূল্যে রাজধানীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহজেই বিশ্বাসঘাতক বানিয়ে তোলা যায়।  
       
    কোন ঐতিহাসিক সূত্র বা প্রমাণ খুঁজে পাইনি - হয়তো পাওয়া সম্ভবও নয় - তবু আমার মনে হয় -  আমাদের ইতিহাসের প্রবল পরাক্রান্ত কিন্তু অনাচারী নন্দবংশকে উচ্ছেদ করায় চন্দ্রগুপ্ত  মৌর্য এবং চাণক্যের  যে আশ্চর্য সাফল্য তার পিছনে অবশ্যই ছিল - বৌদ্ধ বণিক সম্প্রদায়ের  (গিল্ড) বিপুল নিষ্ক বিনিয়োগ  । 
     
    আজ  বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে - সংসদে  ৪০০ আসন পার করে একচ্ছত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে হলে, ওষুধ কোম্পানিদের অর্থলগ্নী লাগবে বৈকি...!
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৫২531074
  • অমিত

    এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিচিত্র তথ্য আছে । হেনরি ফোরডের  ( কট্টর ইহুদি বিদ্বেষী , তাঁর বই The Eternal Jew হিটলারের বেড সাইড টেবিলে শোভা পেতো) কোম্পানি প্রথমে বার্লিনে  কার অ্যাসেম্বলি প্লান্ট খোলে ১৯২৫ সালে, পুরো দস্তুর গাড়ি বানানোর কারখানা কলোনে ১৯৩১ সালে।  অচিরে মার্সিডিজ এবং ওপেলের পরে তৃতীয় নম্বরে চলে আসে ফোরড । ১৯৩৯ সালে যুদ্ধ বাধলে ফোরড সামরিক যান বাহন তৈরিতে লেগে পড়ে , Maultier নামের  একটি হাফ ট্রাক জার্মান বাহিনীর অত্যন্ত কাজে লাগে।  ইংল্যান্ডের নিশানায় নিক্ষিপ্ত V2 রকেটের টারবাইন ফোরড কারখানায় প্রস্তুত হতো ( আমাদের ফ্রান্সের গ্রামের বাড়ির কাছে লঞ্চ প্যাড দেখেছি)। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান বোমায় কলোনের  ফোরড ফ্যাক্টরি ঠিক চুরমার হয় নি তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

    ১৯৫০ সালে ডেট্রয়েটের ফোরড কোম্পানি তাদের কলোনের কারখানায়  বোমার হানার জন্য আমেরিকান সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে – বিনা বাক্যব্যয়ে আমেরিকান সরকার প্রার্থিত পরিমাণ ১২ লক্ষ ডলার দিয়ে দাবি মিটিয়ে নেন।
     
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২১531075
  • কিশোর

    একেবারে ঠিক জায়গায় ঘা দিলেন !এবার  আরেকটি ইতিহাস মনে রাখা ভালো

    সুইডেনের সমাজতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় চরিত্রের বাহবা শুনে এসেছি আমাদের অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে – সুইডিশ মডেল ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সুইডেন ছিল নিরপেক্ষ , এ গল্পটা শোনা – পরে জানলাম ১৯৪০ সালে নরওয়ে অভিযানের সময়ে  জার্মান বাহিনী সুইডেনের ভেতরে মার্চ করে যায় । এরা যে বেড়াতে আসে নি , এরা যাচ্ছে সুইডেনের প্রতিবেশীকে আক্রমণ করতে এ বিষয়ে সুইডেনের ভ্রূক্ষেপ ছিল না – তারা যে নিরপেক্ষ দেশ !

    জার্মানিতে কাজের সময়ে Svenska Kugellagar Fabriken (SKF) নামের একটি বল বেয়ারিং কোম্পানির প্রচুর ভারতীয় এক্সপোর্ট আমাদের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্ট অফিসে প্রসেসিং হতে দেখেছি । এটি সুইডিশ কোম্পানি , ১৯০৭ সাল থেকে জার্মানির শোয়াইনফুরটে কারখানা ও ব্যবসা । নাৎসি আমলে সে ব্যবসা রীতিমত ফুলে ফেঁপে ওঠে । যুদ্ধ প্রয়াসে যন্ত্র আর যন্ত্রের চালনায় বল বেয়ারিঙের ভূমিকা বিশাল – হালে এরিক গোলসনের একটি রিসার্চ পেপারে দেখলাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান প্রয়োজনে ব্যবহৃত বল বেয়ারিঙের ৫৯% সুইডিশ উৎপাদন ।

    আমার ব্যবসায়িক সুইডিশ অভিজ্ঞতায় দেখেছি  জার্মানদের মতো সুইডিশরা যুদ্ধের প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলেন । অনেক তথ্য পেয়েছি ফিনিশদের কাছে !

    স্টকহলম অফিসে  ইন্ডিয়া নিয়ে গালগল্প চলছে এমন সময়ে সহকর্মী পের বললে ও দেশটাতো কয়েকটি বাণিজ্যিক হাউসের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হয় । তিরিশ বছর আগে আমি তাকে বলেছিলাম, “ পের,  এটি সারা দুনিয়ার সার সত্য । সুইডেনকে চালায় তিনটি পরিবার – ওয়ালেনবেরগ , গিলেনহামার  ।“
     
    আমি থামতে সে বললে “ আর তৃতীয় ?”  
    "তোমার পছন্দ হবে না – সুইডিশ রাজ পরিবার !" 
     
    গল্পের ঝুলি আজ বন্ধ করি
     
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৪৪531114
  • ইচ্ছে হয়, এ ঝুলি চলতেই থাকুক। তবে সেই সাথে একটা দমবন্ধ অবস্থাও জারি থাকে কারণ লাইনের পর লাইন ধরে এগোতে এগোতে মনে হয় আমরা এক চক্রাকার পথে হাঁটছি আর সেই চক্রের বর্তমান সময়টায় দাঁড়িয়ে আগামীর ভয়ংকর দিনগুলোর এগিয়ে আসার শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
  • Amit | 163.116.215.29 | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৪৯531116
  • সত্যি ফোর্ড দুপক্ষকেই পুরোদমে সাপ্লাই দিয়েছে দুদিক থেকেই লাভ করেছে , আবার ক্ষতিপূরণ ও পেয়েছে। গাছের খাওয়া &  তলার কুড়োনোর একেবারে ক্লাসিক উদাহরণ। যুদ্ধ অনেকের জন্য দারুন লাভজনক​​​​​। কোন পক্ষ ​​​​​​​টক্ষ ​​​​​​​কিচ্ছু ম্যাটার ​​​​​​​করেনা। 
     
    একটা শোনা ঘটনা মনে পড়ে গেল। 
     
    কয়েক বছর আগে আমার বয়স্ক প্রতিবেশী ছিলেন পর্তুগিজ অরিজিন এর। খুব হেল্পফুল। আমরা যাওয়ার পরে অনেক হেল্প পেয়েছি ওনাদের থেকে। একদিন সেই প্রতিবেশী গল্প করছিলেন কেন ওনার বাবা এতো দূর দেশে মাইগ্রেট করলেন। 
     
    ওনার দাদুর পর্তুগালে একটা ছোট কোস্টাল শহরে মাছ প্রসেসিং এর কারখানা ছিল। ফ্যাক্টরি র মেন্ প্রোডাক্ট ছিল ক্যানড সার্ডিন। যুদ্ধের সময় প্রচন্ড ডিমান্ড - এক্সিস / এলিয়েড  দু পক্ষ থেকেই। মিলিটারি রেডি টু ইট মিল্ কিট এ একটা করে সার্ডিন ক্যান ভরে দেওয়া হত। অলরেডি তেল মশলা মাখানো। রান্নার দরকার নেই। ক্যান খোলো আর খাও। তিনি বলছিলেন যুদ্ধের পাঁচ বছরে ফ্যাক্টরিতে প্রায় পাঁচশো লোক রাখতে হয়েছিল ডিমান্ড সামলানোর জন্যে। প্রচৰ মেশিন কেনা হয়েছিল প্রসেসিং আর প্যাকেজিং এর জন্যে। পুরো লাল হয়ে যাওয়া যাকে বলে। 
     
    তাপ্পর যুদ্ধ শেষ হলো। মিলিটারি ডিমান্ড জিরো। লোক্যাল সুপারমার্কেট এ আর কত বিক্রি হয়। যুদ্ধের পরে সবার ই লাইফ ডিফিকাল্ট। সেই বাজারে শেষকালে তিন চার বছরের মধ্যে ফ্যাক্টরি বন্ধ। লোনের দায়ে শেষে মেশিন সব বেচেবুচে নিজেদের ব্যাংকরাপ্ট ডিক্লেয়ার করে তেনারা দূরদেশে পাড়ি জমালেন নতুন দেশে আবার লাইফ শুরু করার জন্যে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০৪531129
  • অমিত

    একটা দারুণ প্রসঙ্গে এনে ফেললেন আমাকে ! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপের  পাঁচটি  স্বঘোষিত নিরপেক্ষ দেশের  ( আয়ারল্যান্ড , স্পেন, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ড , সুইডেন  ) ঠিক কি ভূমিকা ছিল এ নিয়ে  আগে ভেবেছি-  লিখি economic benefits of a global war for non-belligerent nations ! আপনার সারডিনের ক্যান থেকে মাথার ভেতরে বিজলি বাতি জ্বলে উঠলো!

    লড়াইয়ে যখন হার শুরু হয়েছে , নানান সীমান্ত রুদ্ধ সে সময়ে ( ১৯৪৪-১৯৪৫ ) জার্মানির খাদ্যশস্য আসতো দক্ষিণ আমেরিকা থেকে - আর্জেন্টিনার গম যব জাহাজে উঠতো বুয়েনস আইরেসে , ব্রাজিলের কফি উঠত সাঁও পাওলোতে সেখান লিসবন , ট্রেনে যেতো স্পেন , ভিশি ফ্রান্স হয়ে সুইজারল্যান্ড , জার্মানি ! আজ যে দক্ষিণ আমেরিকায় এতো জার্মান তাদের বেশির ভাগ নাৎসি পূর্ব পুরুষ।  বাণিজ্যিক কারণে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তারই ফলে যুদ্ধের পরে আর্জেন্টিনা ব্রাজিল চিলিতে পালানোর পথ খুলে যায় (মহামান্য পোপ অবশ্য প্রচুর সহায়তা করেন)

    সবচেয়ে বেশি ফায়দা করেছে সুইসরা । ১৯৩৯ সালে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইজারল্যান্ড ইউরোপের প্রথম পঞ্চাশটিতে পড়ত কিনা সন্দেহ। যুদ্ধের সময় প্রচুর পয়সা করে এবং মৃৎ নাৎসিদের টাকা হাপিশ করে তাঁরা দশ নম্বরে উঠে আসে

    মাই ফেয়ার লেডিতে  হিগিন্স এলিজা ডুলিটলের বাবাকে বলেছিলেন, “Where are your morals ?”
    এলিজার বাবা বললেন, “ Cant afford them Sir “
     
  • হীরেন সিংহরায় | ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৮531203
  • অমিতাভ

    অবশ্যই পারে বা পারতো কিন্তু তা হয় নি. 
     
    সুরক্ষার খাতিরে নাৎসি স্টেট ও রাঘব বোয়াল অনেক  সম্পদ জমা রাখেন  সুইস ব্যাঙ্কে । যারা ঘরে ফেরে নাই তাদের পক্ষ থেকে সে টাকা দাবি করার মতন কেউ আসেন নি - নাৎসি বা তাদের আত্মীয় পরিচয় দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার । কাজেই চোট খেয়ে চোট হজম করেছেন পরিবার। সে টাকা আত্মসাৎ করেছে সুইস ব্যাঙ্ক । ১৯৯৭ সালে ক্রিস্তফ মাইলি  নামের একজন সুইস ব্যাঙ্ক গার্ড ঘটনাচক্রে বহু জমা সম্পত্তির খোঁজ পান ভল্টে ( ব্যাঙ্ক সেগুলো পোড়ানোর চেষ্টা করছিল  )।  প্রায় সতেরো বছর বাদে ব্যাঙ্ক তার খানিকটা কবুল করে ।  সুইস  ব্যাঙ্কিঙ্গের নৈতিকতার মাপ বেশ আলাদা – মাইলিকে ট্রেটর বলে  অভিযুক্ত করা হয় - সুইসদের দানাপানি ছিনিয়ে নিচ্ছিল ।

    অপর  পক্ষের মৃতের আত্মীয় স্বজনের সেই সমস্যা ছিল না – যুদ্ধে নিহত পিতার অর্থ উদ্ধার করতে পুত্রকে নুরেমবেরগ বিচারশালায় যেতে হয় নি । সেটা হাপিশ করা শক্ত ছিল তাই ।

    যদি পারেন Paul Erdman এর বই দেখবেন The Swiss Accunt, Silver Bears, The set up

    ভালো আইডিয়া দিলেন – ধরা যাক দু চারটে ইঁদুর এবার ! সুইস ব্যাংকিং !
     
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:f4ca:e934:108e:f321 | ০৪ মে ২০২৪ ১৯:১৩531395
  • এই পর্বটা পড়ে মনে হলো, সত্যি, কোট প্যান্ট টাই পরার রেওয়াজ যে এখনো কতো জায়গায় চালু আছে! আর ফর্মাল ড্রেস, ইনফর্মাল ড্রেস, এসব নিয়েও মাথামুন্ডুহীন নিয়মকানুন যে কতো রকম ভাবে এনফোর্স করা হয়! সত্যি অদ্ভুত। 
     
    তবে একটা ছোট্ট অবসার্ভেশান হলো, চেন্নাইয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ব্রান্ঞ্চে কাউকে জ্যাকেট বা টাই পরতে দেখিনি,  ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদেরও না। সার্ভিস অবশ্য অসাধারন। এই লেখাটা পড়ে মনে হলো, এইটা একটা ভালো ব্যাপার। 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:f4ca:e934:108e:f321 | ০৪ মে ২০২৪ ১৯:১৪531396
  • এই যাঃ ভুল টইতে পোস্ট করে ফেলেছি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন