এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ১ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • দোকানে  বাজারে 

    আশিসদা বললেন,  উইকএন্ডের হুল্লোড়ে বেরিয়ে পড়বার আগে দুধ রুটি মাখন ডিম কিনে রাখবেন । সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সাড়ে ছটা অবধি দোকান খোলা থাকে কিন্তু  শনিবার দুপুর দেড়টায় বন্ধ, খুলবে আবার সোমবার সকালে। পাড়ার দোকানে তালা ,  সেখানে  কোনটাই জুটবে না । এ দেশে অন্য অনেক সুবিধে আছে বটে কিন্তু বিশুদার দোকান নেই যে রাত্তির নটার সময় গিয়ে বলবেন একটা দেশলাই দাও না গো ।

    সাল ১৯৭৮ ।  

    সবে জার্মানি এসেছি । শ্রীধর ( পরে স্টেট ব্যাঙ্কের এম ডি ) আর আমি ফ্রাঙ্কফুর্টের উত্তর প্রান্তে গুন্টারসবুরগ পার্কের লাগোয়া একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দোতলায় থাকি । সবই অচেনা-  সুর রিয়ালস্টিক ছবির মতন, , গাড়ি চলে রাস্তার ডানদিকে,  প্রায় দুর্বোধ্য ভাষা ; এ দেশের হাল হকিকতের বিষয়ে অফিসে সর্বদা জ্ঞান আহরণের চেষ্টা চালাই। এমন সময়ে  ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেন স্টেশনে আশিসদা তথা  ইউরোপের প্রথম বাঙালি পরিবারের সঙ্গে পরিচয় ।  তিনি কাজ করতেন বিখ্যাত রাসায়নিক সংস্থা হোয়েকসট  কোম্পানিতে, থাকতেন নিকটবর্তী ঊনটার লিডারবাখে । সিমবার্নভেগের ৪১ নম্বর বাড়ির দোতলাটি ছিল  আমাদের অনেকের বহু দিন রাত্তিরের আড্ডাস্থল।  আশিসদার সান্নিধ্যে এসে মনে হয়েছে ইনি  বার্লিনের সেই হিন্দুস্তান হাউসের চাচা , আমার সুবিধার্থে নব কলেবরে দেখা দিয়েছেন এই ফ্রাঙ্কফুর্টে !

    রবিবার প্রভুর দিন । সেদিন ভোজন নয়, ভজনায় দিন যাপন করবেন  মানুষজন।  কিন্তু শনিবার দেড়টা থেকে কার পুজো আচ্চা ? সাবাথ? সে তো শুক্কুরবার সূর্যডোবার সময়ে শুরু হয়ে গেছে,  শনিবার আদ্ধেকদিন খোলা রাখার নিয়ম তো ইহুদি মতেও  নেই।  

    তাহলে কেন?

    আশিসদা বললেন, প্রশ্ন করবেন না ।  যদিও এই আইন যুদ্ধের পরে পাস হয়েছে (১৯৫৬) কিন্তু সেটা কেন কেউ জানে বলে মনে হয় না। যদি জিজ্ঞেস করেন তার উত্তর :  এ দেশে এই রকম নিয়ম - ভি আর হাবেন ইমার জো গেমাখট – আমরা বরাবর এমনি করে এসেছি।  বাদল সরকারের নাটক মনে নেই?  সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই!

    হ্যাঁ,  রবিবারে খোলা পাবেন  যাবতীয় ফুলের দোকান -  শহরের তাবৎ প্রেমিক সেদিনই তাদের প্রিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার জন্যে হন্যে হয়ে ওঠে বলে নয়, এই ফুলের সদ্গতি হয় আত্মীয় পরিজনের সমাধির ওপরে ।  সেখান থেকে ফেরার পথে
    জনতা যেথায় যাত্রাভঙ্গ করেন সেটি হলো কেক কফির দোকান ! কান টানলে মাথা আসে, ফুল টানলে কেক ।

    তবে হ্যাঁ,  একদিন খানিক রেহাই আছে।  মাসের প্রথম শনিবার সাড়ে ছটা অবধি দোকান  খোলা থাকে। আর যদি নিতান্ত  কোন শনিবারের সন্ধ্যেবেলা দেখেন হেঁসেল শূন্য , দুটো ঠিকানা বলে দিচ্ছি সেখানে গেলে সবই পাবেন ।  তার দাম দিতে গিয়ে আপনার পেনটুলুন খুলে যেতে পারে- ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেন স্টেশনের ভেতরে একটা মুদির  দোকান আছে সে বাজারের চারগুণ দরে সবজি বেচে । যদি হাতে সময় থাকে এস বান  (শ্নেল বান বা দ্রুত গতির যান যেটি মোটেও দ্রুত গতিতে চলে না ) ধরে রাইন মাইন এয়ারপোর্ট চলে যান , বিশাল শাক সবজির খাবারের দোকান,  তার দর একটু কম । তার পাশেই আবার অন্যান্য বস্তুর বিপণি যার নাম Airport Non-food Super Markt ! জার্মান এবং ইংরেজির কিম্ভুত সহাবস্থান লক্ষ্য করুন – চারটে ইংরেজি আর শেষ শব্দটা জার্মান -মার্কেট নয় মার্কট – মর্কট বলে না এই রক্ষে ।  একটি জার্মান রসিকতা জেনে রাখুন জুতসই জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন – এক দামি গাড়ির ড্রাইভার  জানলার কাচ নামিয়ে পথচারীকে জিজ্ঞেস করেছেন , বলতে পারেন কাউফহোফটা  কোনদিকে। তিনি বলেছেন,  ওই একটু এগিয়ে বাঁদিকের প্রথম রাস্তায় কিন্তু দোকান তো এই বন্ধ হলো ।  ড্রাইভার বললেন, ঈশ,  সাড়ে ছটা গেছে  ( শোন হালব জিবেন )?   

    সন্ধ্যে সাড়ে ছটা! ফর হুম দি বেল টোলস !  

    প্রায় এক দশকের জার্মান প্রবাসে বুঝতে অভ্যস্ত হয়েছি দোকান খোলা থাকে সরকারি নিয়ম মাফিক, আমার প্রয়োজন অনুযায়ী নয় । শুক্রবার সাড়ে ছটা বাজার আগে সর্বত্র বেজায় ভিড় । ফ্রাঙ্কফুর্টের উত্তরে টাউনুস পাহাড় অঞ্চলে ধনী ব্যাঙ্কার, শেয়ার ব্রোকারের বাস , যারা নবীনতম বি এম ডব্লিউ মার্সিডিজ ছাড়া কোন বাহনে আরোহণ করেন না – তাঁরাও শুক্রবারের সন্ধ্যেয় অফিস থেকে বেরিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের মাঝে হেরটি , কাউফহোফে ব্যস্ত সমস্ত হয়ে রুটি সবজির সন্ধানে লাইন লাগান।  কোটি মার্কের  ডিলের কথা সোমবারে হবে , বাজার না করলে  অদ্য ভক্ষ ধনুর্গুণ । শনিবার দেরি করে উঠলে হোফহাইম কোয়েনিগস্টাইনের পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে সুরম্য দৃশ্য অবলোকন করা যাবে দোকানে  কিছুই পাওয়া যাবে না । এই হলো  দি গ্রেট লেভেলার, সবাইকে পিটিয়ে সমান করার দুরমুশ ।

    শুক্রবার বেলা চারটেয় ব্যাঙ্ক বন্ধ,  খুলবে সোমবার সকালে।  সেখানেও সেই সব মানুষেরা টাকা তোলার লাইনে দাঁড়ান।

    আজকের কলকাতায় এ টি এম নামক অর্থউদ্গারকারি যে যন্ত্রের সঙ্গে আমরা বেশক পরিচিত ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে তার দেখা মিলেছে আটের দশকের মাঝে। যখন ফ্রাঙ্কফুর্ট ছাড়ি,  শহরের কেন্দ্রে হাউপটভাখেতে ( পুরনো দিনের কোতোয়ালি ) একটি মাত্র মেশিন ছিলো ,  দূর দূর গ্রাম থেকে লোক আসতো দেখতে – কি আশ্চর্য ব্যাপার গো , বোতাম টিপলে টাকা বেরিয়ে আসে !

    সাত আইনের বেড়াজাল কাটিয়েও যে  প্রতিষ্ঠানের শাখা প্রশাখা সারা জার্মানির সব শহরের সব পাড়ায় বেশ সন্ধ্যে রাত অবধি সুখের সঞ্চার করতো, তার নাম ত্রিঙ্কহালে , পানের পসরা  । ছোটো ঝাঁপ , সামনেটা বারের কাউনটার সেখানে বিভিন্ন পানীয় সাজানো , ভেতরে আরও অনেক বোতল-  দোকানী  সেই কাউনটারের ভেতর থেকে সরবরাহ করতে থাকেন। যে কোন অ্যালকোহল  কিনে বাড়ি নেওয়া যায় -তার দাম  সুপার মার্কেটের চেয়ে বেশি- আবার সামনে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পান ( অবশ্যই সরাসরি বোতল থেকে, গেলাস সাপ্লাই হয় না ) এবং নটা দশটা অবধি নিম্নগ্রামে গজল্লা করার কোন আইনি বাধা ছিল না।  সে ফুটপাথ কখনো বিরানা দেখিনি। ত্রিঙ্কহালেতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি বিয়ারের -যেমন হেনিঙ্গার অথবা রোয়েমার পিলস এবং শ্নাপস (  ২০/২৫ মিলি লিটারের ছোট্ট শিশিতে ভরা তরল পদার্থ যার অ্যালকোহলিক কনটেনট ৪০% এর বেশি- মস্তিষ্ক এবং চিত্ত প্রফুল্লিত করার শ্রেষ্ঠ উপাদান)।

     
    এই আইনকানুন শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের আরও অনেক দেশে চালু ছিল, বিশেষ করে মনে পড়ে সুইডেন , নরওয়ে , অস্ট্রিয়ার কথা। সুইডেনে আজও সাড়ে ছটার পরে দোকানে বিয়ার কেনা যায় না- আপনি যদি বিয়ারমত্ত হয়ে দেশের সান্ধ্য শান্তি ভগ্ন করেন! সুইডেন ইতিমধ্যে ইউরোপের গান ক্যাপিটাল হয়ে উঠেছে , কথায় কথায় গুলি চলে । সান্ধ্য বিয়ারের প্রভাবে বন্দুকের নল ভুল দিকে ঘুরে যেতে পারে, সেটা ঠেকানোর  প্রয়োজন আছে।

    ১৯৮৫ সালে ইংল্যান্ডে এসে দেখলাম বাজার  শনিবারেও  সারাদিন খোলা থাকে,  সাতটা নাগাদ ঝাঁপ  পড়ে। রবিবারে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার বা সেইন্সবেরি, হাই স্ট্রিট বন্ধ । কিন্তু ছোটো খাটো কিছু দোকান খোলা - ক্রমশ কর্নার শপ অথবা পথের কোনের দোকান সম্বন্ধে অবহিত হয়েছি ।এগুলোর মালিক প্রায়  সবাই আমাদের উপ মহাদেশের মানুষ । গোলডারস গ্রিনের  একটা দোকানে জিজ্ঞেস করেছিলাম রবিবারে খুলে রাখলে অর্থ দণ্ড  দিতে হয় শুনেছি ? তিনি হেসে বললেন এ দিন যা বিক্রি হয় তাতে ফাইন দিয়েও পুষিয়ে যায় । নর্থ সার্কুলার রোডের পাশেই এক দোকানে মাঝে সাঝে যেতাম,  একা থাকি, সারা  সপ্তাহ কাজে ব্যস্ত, রবিবার দিন যা সময় । কিছু কিনতে ঢুকেছি - আমার সামনে এক ইংরেজ খদ্দের দর দেখে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন  এতো দাম ? টেসকোতে এর অর্ধেকে পাওয়া যায় ! গুজরাতি  ব্যবসায়ী বললেন, টেসকো আজ বন্ধ,  তাই তো এসেছেন!  এই রবিবার দোকান খোলা রাখার খরচ আছে , সে জন্যে  দাম বেশি!  অনিচ্ছাসত্ত্বেও সেই খদ্দের কিছু কিনে চলে গেলে দোকানদার আমাকে বললেন,  দেখলেন তো ? ছুটির দিনে বাজার করবেন কিন্তু দাম দেবেন কাজের দিনের! এই দোকানীর স্পেশাল বিক্রি বাটা আবার দু দিনের – ইহুদি প্রধান গোলডারস গ্রিনের  বাজার শনিবারে কুলুপ দিয়ে আঁটা -সাবাথ ! সেদিন অইহুদি জনতা তাঁর দোকানে আসেন আর রবিবার সকল ধর্মের মানুষ।  

    ক্রিসমাসের দিন ইংল্যান্ডে সব দোকানের ঝাঁপ বন্ধ –ব্যতিক্রমী ইহুদি গোলডারস গ্রিনের হাই স্ট্রিট গমগম করে, যিশু তাঁদের উদ্ধার করতে জন্মান নি বা ক্রুশে চড়েন নি। ।  

    লন্ডনের দুটি পাড়া ততদিনে ভারতের দুটি জাতির পুরোপুরি দখলে চলে গেছে – ওয়েম্বলি গুজরাতিদের , সাউথহল পাঞ্জাবিদের । ওয়েম্বলির এম্পায়ারওয়েতে এক শনিবার  আমার স্ত্রী কিছু কেনার জন্যে একটি ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি শপে ঢুকেছেন, পারকিঙ্গের জায়গা নেই বলে আমি গাড়িতে বসে আছি।  পুলিশ এলে সরে যাব । আমার ঠিক ডান দিকের ফুটপাথে একটা তাঁবুর নিচে  টমাটোর ঢের লাগিয়ে মাচার ওপরে  একজন বসে আছেন - ক্রেতারা প্রায় সকলেই অভারতীয় , তাঁরা ইংরেজিতে প্রশ্ন করছেন । বিক্রেতা , নির্ঘাত গুজরাতি , তিনি কেবল মাত্র আঙ্গুলের ব্যবহার করে দাম নির্দেশ করে চলেছেন। তাঁর পায়ের কাছে বসা একটি ছেলে সেই মত কাগজে লিখে টাকা নিচ্ছে –ক্যাশ মেমো, ভি এ টি , জি এস টি? সব বরোবর  ছে ।

    ওয়েম্বলি , সাউথহলে প্রতিবাদী ধর্মনিষ্ঠ কিছু ব্রিটিশ জনতা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে মোসেসের দশ আদেশের তৃতীয়টি স্মরণ করাতেন – “ রিমেম্বার দি সাবাথ ডে টু  কিপ ইট হোলি!”  আজ দোকান বন্ধ রাখুন।


    রবিবারে ক্রিকেট খেলা বারণ ছিল ১৯৮১ সাল অবধি – ভিলেজ গ্রিনে , আপন গ্রামের মাঠে রবিবারে খেলেছিলেন বলে টম গ্রেভনি টেস্ট ম্যাচ থেকে বাদ পড়েন , সাময়িক ভাবে । ইংল্যান্ডের টেস্ট ম্যাচ  তখন বৃহস্পতিবার শুরু হতো, রবিবার আবশ্যিক বিরতির দিন । সেটা কি খেলোয়াড়দের ধর্ম আচরণের সুবিধার্থে ?  তা যদি হতো  তাহলে ছয়ের দশকে টেড ডেকস্টার, কেন ব্যারিংটন আমাদের দেশে এসে রবিবারে ভজনালয়ে যেতেন, টেস্ট ম্যাচ খেলতে আপত্তি করতেন !

    এখন রবিবারে ক্রিকেট খেলা হয় কিন্তু ফুটবলে একটা ব্যতিক্রম দেখা যায় – রবিবারে কোন টেলিভাইজড ম্যাচ অন্তত দুপুর দুটোর  আগে শুরু হয় না ।

    আজ কল্প কথা মনে হবে – ইস্টার পরবে সে আমলে ইংল্যান্ড জার্মানি ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় সব দোকানে বন্ধ হতো খুলত  সোমবারে , প্রভুর পুনরুত্থানের পরে ; অর্থাৎ যে কদিন প্রভু  দৃষ্টগোচর নন সে সময়ে দোকানও অদৃশ্যে নিহিত।  সিটি ব্যাঙ্কে আমাদের আমেরিকান সহকর্মীরা খুব  বিভ্রান্ত  হতেন – তিন দিন শপিং বন্ধ ! বলেন কি ? আমেরিকায় তো দোকান বন্ধই হয় না, বড়জোর ওই ইস্টার এবং ক্রিসমাসের দিন।

    বড়দিনের বাজারে বড়ো দাম কিন্তু ছাব্বিশে ডিসেম্বর দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ে ডিসকাউনটের খোঁজে । আমার ছেলে  ইন্দ্রনীল বলতো দু দিন বাদে কিনলেই হয়  , দাম কম হবে ।

    ইংল্যান্ডের আরেক প্রথা আমাদের সমান বিড়ম্বনার কারণ ছিল  – ড্রিংকিং  আপ টাইম – দিনের দুটি নির্দিষ্ট সময়ে  মদ্যপান করা মঞ্জুর । এগারোটা থেকে দুটো, সন্ধ্যে সাতটা থেকে এগারোটা।– সেটা আরামে সুরা পান নয়, যেন  রি - ফুয়েলিং মিশন!  মধ্যবর্তী কালে  আমার সবাই অ্যালকোহল অ্যানোনিমাস সমিতির নাম না লেখানো সদস্য ।   

    মনেও নেই কোনদিন এই আইন উঠে গেলো।

    দশ বছর বাদে (১৯৯৪) সানডে ট্রেডিং অ্যাক্ট পাশ হলো – রবিবারে কেন,  তিনশ চৌষট্টি  দিন দোকান খোলা রাখা যাবে , সুপার মার্কেট পাবলিকের ছুটির দিনে  ছ ঘণ্টার জন্যে , অন্যদিনে চব্বিশ ঘণ্টা  ! সেটা কি রকম? নব্য আইন চালু হবার পরে আমাদের বাড়ির কাছে ব্রেনট ক্রস টেসকোতে রাত্তির এগারোটার সময়ে কিছু কেনার বাহানায় গেছি।  দাম দেবার সময়ে চেক আউটের মেয়েটিকে বললাম, রাত এগারোটায় দোকান খোলা , অদ্ভুত লাগছে!  মেয়েটি বললে, আমারও!  সকালবেলা আটটায় বাড়ি থেকে কাজে বেরুতাম এখন রাত আটটায়! ফিরি  সকালবেলা !

    দুই জার্মানি এক হবার পরে জানা গেলো কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে দোকান সাড়ে ছটায় বন্ধ হতো না। কল কারখানা থেকে ফেরা শ্রমিকের কেনা কাটার সুবিধার্থে খোলা থাকতো একটু দেরি অবধি;  সেখানে জিনস বা  জ্যাকসনের সি ডি না মিললেও  পরিবারের যৎকিঞ্চিত ভোজন পূজনের কিছু নির্ধারিত সামগ্রী সুলভে প্রাপ্তব্য ছিল। মিলিত জার্মানিতে পূব পাড়ার জার্মানরা সাড়ে ছটায় দোকান বন্ধ হতে দেখে শঙ্কায় পড়েন । তার আরেক সঙ্গত কারণ ছিল -  আজ দুপুরে কমলা লেবু এসেছে ছিল কিন্তু আগামী কাল যদি না পাওয়া যায় ? যেমনটা কমিউনিস্ট জমানায় ছিল?  সংযুক্ত জার্মানিতে দোকান বন্ধের এই কঠোর আইন (লাদেনশ্লুসগেসেতস) ঢিলে হলো ১৯৯৬ সালে।  আর সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় ছুটির ঘণ্টা বাজে না , সাত বছরের ভেতরে কেন্দ্রীয় সরকার বললেন ষোলটি রাজ্য কে কবে কতক্ষণ খোলা রাখবে তারাই ঠিক করুক মানে এটা আর বার্লিনের  নয়, হয়ে গেলো  ষ্টেট সাবজেক্ট । কিন্তু রবিবারের বিধানটি আজও বলবৎ , কয়েকটি বিশেষ রবিবারে মাত্র খোলার অনুমতি মেলে-টুরিস্ট প্রধান এলাকায় অবশ্য সে নিয়মে  নাস্তি । অতএব রবিবারে ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেন স্টেশন আর হাওয়াই আড্ডা চুটিয়ে ব্যবসা করে আগের মতোই ।  ক্যাথলিক অস্ট্রিয়া থেকে প্রটেস্টাণ্ট সুইডেন নরওয়ে ফিনল্যান্ডে রবিবার ভজনালয়ে যাওয়ার দিন,  যদিও সেখানে খুব কম মানুষ হাজিরা দিয়ে থাকেন । রবিবার পবিত্র থেকে যায় !

    কোথাও ধর্মের বর্মে চিড় ধরছে । সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম নিরপেক্ষ,  তবু মুখ্যত ক্যাথলিক ফ্রান্সে কিছু সুপার মার্কেট রবিবার সকালে খোলা থাকে , এমনকি আমাদের গ্রামেও।

    আমার দীর্ঘদিনের সুইডিশ ব্যাঙ্কার বন্ধু স্টকহোলমবাসী পিটার লারসনকে পরশু দিন  জিজ্ঞেস করলাম রবিবারে এখন  বিয়ার কেনা যায় ? সে লিখেছে শনিবার বিকেল চারটের পর ড্রাই টাইম, অ্যান্ড নেভার অন এ সানডে । সময়মত বোতল কিনে ফ্রিজে রাখাটা বাঞ্ছনীয় ।

    নয়ের দশকে  সপ্তাহান্তে উত্তর পশ্চিম ফ্রান্সে বাড়ির সন্ধানে চক্কর লাগাচ্ছি,  সঙ্গে ছেলে।  সে তখন লন্ডনে চব্বিশ ঘণ্টা দোকান খোলা দেখতে অভ্যস্ত – খেলনার  দোকান টয়েজ  আর আসের দরোজা  দিবারাত্রি উন্মুক্ত। একদিন সে জিজ্ঞেস করলে ফ্রান্সে  দুপুর বেলা দু ঘণ্টা সব বন্ধ থাকে কেন ? তাকে বললাম, বাবা,  এখানে দোকানপাট খোলা থাকে , তোমার আমার নয়,  মালিকের ইচ্ছে মতো । দুপুরে বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে এক ঘণ্টা দিবানিদ্রা দেওয়ার সনাতন ফরাসি অধিকার সেই গিলোটিনের আমল থেকে মঞ্জুর হয়ে আছে । শুধু দোকান নয় ,  আমাদের বাগানের মালী জঁ মার্ক ঠিক ১১.৫৫ মিনিটে বাগানের কাজ থামিয়ে সাইকেলে উঠে পড়ে , দুটো পাঁচ নাগাদ তার দেখা মেলে আবার। স্পেন পর্তুগালে দুপুরের ঘুম বা সিয়েস্তা মৌলিক অধিকার । ২৪x৭ নামক আমেরিকান ব্যাধিটি আটলান্টিক পেরিয়ে ইউরোপীয় মূল ভূখণ্ডের জনজীবনকে বিধ্বস্ত  করতে পারে নি ।

    জার্মানি ছাড়ার আগে বন্ধুদের বলতাম  দোকান খোলার  সময়সীমা বাড়লে তোমাদের  জাতীয় চরিত্র বদলে যাবে- এই ঝাঁপ পড়ে গেলো বুঝি এমন  টেনশন  থেকে মুক্তি পাবে !

    নতুন জার্মান আইন মতে দিবারাত্র নয় তবে রাত দশটা অবধি অনেক সুপার মার্কেট খোলা রাখা যায়। তার সঙ্গে জার্মান চরিত্র কি খানিকটা বদলেছে ? খুব একটা নয় । বাজার দোকান খোলা বন্ধের নয়, কালের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য অনেক কিছুই বদলায় । যেমন এখন শুনি স্কুলের ছেলেমেয়েরা শিক্ষককে আপনি বা ‘ জি’   নয় , তুমি বা ‘দু’  বলছে !

    আমার  গুরুগৃহ  বরানগর নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরে সেটি যেন কখনো না ঘটে প্রভু!

    পুরনো প্রথা তবু  রয়ে  যায় কোন  শান্ত জনপদে। রাইনের ধারে ছোট্ট কাউব গ্রামের একটিমাত্র গলিতে এখনও সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় গিরজের ঘণ্টার সঙ্গে সঙ্গে মুদির  দোকানে তালা পড়ে । কিন্তু জানি,  নদীর উজানে ছ কিলো মিটার দূরে  সাঙ্কট গোয়ারসহাউসেনে রালফ লেওনহারডের বাড়ির উলটো দিকে রেভে মার্কেট খোলা আছে রাত দশটা অবধি।  আরেকটু পিছিয়ে নদীর ভাঁটায় লরশ গ্রামের ইদেকাও বন্ধ হবে দশটায় ।    


    এই গ্রীষ্মের বিকেলের অন্তহীন আলোয় না হয়  আরো  কিছুক্ষণ এইখানে বসি: দেখি রাইনে মালবাহী গাদা বোট ভেসে যায় , তেল ভর্তি  ট্যাংকার চলে সুইজারল্যান্ডের বাসেলের দিকে ,  টুরিস্টদের নিয়ে জাহাজ যায় রুডেশহাইম ছেড়ে মোজেলের পানে , তাঁরা হাত নাড়েন ।  মন্দ মধুর বাতাস বয়। আরেকটু পরে রাইনের মাঝের দ্বীপে,  গ্রাফেনস্টাইনের দুর্গে , নদীর ওপারে ভাঙ্গা প্রাসাদে আলো জ্বলে উঠবে।

    অনেক দূরে জয়পুরের অম্বা মন্দিরে তখন ঠিক সাতটা ঘণ্টা বাজবে । *

    তাড়া কীসের  ?
     


    পু :

              *একদিন
              সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২০528105
  • "ড্রাইভার বললেন, ঈশ,  সাড়ে ছটা গেছে  ( শোন হালব জেকস )?"
    সাড়ে পাঁচটা হবে।
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৫528106
  • সরি হিরেনবাবু, ভুল ধরাটা অভিপ্রায় ছিল না। পড়তে গিয়েই হোঁচট খেলাম ঐকানে, অবশ্য আমরা সুইসরা তো জার্মান ভাষাটা জানি না।
  • হীরেন সিংহরায় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৩৩528108
  • সুইজারল্যানডে বাণিজ্য করেছি কিছু বছর বিশেষ করে জেনিভা এবং গ্লারুসে। আমার নতুন বই এই ইউরোপে এখন ( কারিগরে প্রকাশিতব্য) এবং  বই মেলায় প্রকাশিত 
    Citi Life বইতে তার গল্প আছে। যতদূর মনে আছে গোনা গুনতি টা তাঁরা আমার চেনা জারমান পদ্ধতিতে করেন। অবশ্য আমার ভুল হতে পারে ।
     
    হালব জিবেন সঠিক হবে। সেটা সংশোধন করেছি ।
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৫528109
  • হাল্ব জিবেন = সাড়ে ছটা
    অর্থাৎ সাতটা বাজতে আধঘন্টা বাকি।
     
    আরে আপনিই তো কথায় কথায় সুইসদের জার্মান ডায়ালেক্টকে পরিহাস করেছেন। মনে করে দেখুন।
    কোনও ভাষা বা ডায়ালেক্টকে পরিহাস করা যায়, এটা আগে জানতাম না। তাই ভাবলাম, আমরা পুঁচকে দেশ, হয়ত ভুলই শিখেছি। যাগ্গে।
    জেনিভায় জার্মান ভাষা চলে না, ওখানে ফরাসী ভাষা। কিছু  গাণিতিক সংখ্যা (নম্বর) বাদ দিলে ফরাসী দেশের ফরাসী ভাষার সঙ্গে আমাদের দেশের ফরাসী ভাষার কোনও পার্থক্য নেই। সংখ্যা বলতে, সত্তর, আশি, নব্বই, ইত্যাদি। 
    শুভেচ্ছা।
  • যোষিতা | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১২528111
  • আমার দেশটা আমি ভালই জানি।
  • r2h | 192.139.20.199 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:২০528114
  • এই দোকানপাট খোলা বন্ধের সময়ের ব্যাপারটা, একেক দেশের, একেক জায়গার কায়দা কানুন একেক রকম, খুব মজার!
    আমাদের ওদিকে আশির শেষ পর্যন্ত যতদূর মনে পড়ে, সাপ্তাহিক দোকান বন্ধ ছিল বৃহস্পতিবার।
    টিভিতে রামায়ন মহাভারত শুরু হওয়ার পর সেটা রবিবার হলো। ওটা অন্যতম কারন ছিল, বাজার হাট ফাঁকা হয়ে যেত।

    আস্তে আস্তে সুপারমার্কেট চেন ইত্যাদির যুগে প্রতিদিনই সব খোলা।

    এখন আবার বস্টনের কাছে যে ছোট শহরে কাজের সূত্রে, সেখানে দেখি ইস্টারের দিন সব মোটামুটি বন্ধ - এটা অন্য কোথাও দেখিনি।
    আবার বড় মুদিখানা তথা হরেকমালের দোকানে রাত আটটার পর বিয়ার পাওয়া যাবে না এমন নিয়মকানুন কোথাও!

    আবার ঢাকুরিয়ার দাশগুপ্ততে দেখতাম বুধবার রাতে সুবিশাল লাইন - বৃহস্পতিবার ড্রাইডে কিনা!

    কিসের থেকে যে কোন সুর ভেসে আসে। রাইন নদীর উল্লেখ হলেই আমার মনে পড়ে অপরাজিত-
    "And the soft moon rose up slowly, and calmly she looked down
    On the red sand of the battle-field, with bloody corses strown;
    Yes, calmly on that dreadful scene her pale light seemed to shine,
    As it shone on distant Bingen,—fair Bingen on the Rhine.
    "
    - এই কবিতার সন্ধান বিভুতিবাবু দিয়েছিলেন। ইংরেজি কবিতা তো আর পড়িনি তেমন, তখনো তো আরোই না।
    পরে দেখা প্যলগ্রেভের গোল্ডেন ট্রেজারি দু ভল্যুম (আমরা অবশ্য অখণ্ড সংস্করণ) এর সন্ধান পেয়ে বেজায় আমোদ হয়েছিল!

    বৈঠকি আড্ডা(য়) চলুক।
  • হীরেন সিংহরায় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:২৯528115
  • রাইনের সঙ্গে আমার চার দশকের পরিচয় এবং প্রীতি ! তাই দু চারটে অনাবশ্যক তথ্য যোগ করি –
    ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে রাইন ভ্যালির  সবচেয়ে নামকরা টুরিস্ট ট্র্যাপ রুইডেসহাইম।  তার  ঠিক উলটো দিকে বিঙ্গেন শহর । সেখানকার রেড ওয়াইনের সুনাম আছে ! মাত্রা ছাড়িয়ে কিছু করাকে ইংরেজ বলে to go  on a binge or on the binge ( To indulge in something to an excessive degree like drinking alcohol)  । এ কথাটা নাকি এসেছে Bingen থেকে- ব্রিটিশ সৈন্য সেখানে  বেশি রকমের রেড ওয়াইন পান করে নানা প্রকারের গোলমাল বাধাতো – সেটা অবশ্যই Fair Bingen নামের অপমান !

    বব ফসের (এবং মিনেলির ) ক্যাবারে ছবির  বোধহয় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গান কাণ্ডার এবং এবের ‘  টুমরো বিলংস টু মি ‘।  আসন্ন নাৎসি জাগরনের অসামান্য ইঙ্গিত আছে এই গানে,  যার শেষে গায়ক ছেলেটির হাত  উঠে যায় হিটলার স্যালিউটে । তার কয়েকটি লাইন

    The branch of the Linden is leafy and green
    The Rhine gives its gold to the sea
    But somewhere a glory awaits unseen
    Tomorrow belongs to me

    এই glory আনবেন হিটলার !

    রুইডেসহাইমে পাহাড়ের গায়ে আছে গ্যারমানিয়া স্ট্যাচু । রাইনের অপর পাড়ে চিরশত্রু ফ্রান্সের দিকে তাকিয়েছেন রুষ্ট নয়নে – আর এগিও না,   রাইনের ওপরে লক্ষ্য রাখছেন  গ্যারমানিয়া । এর সঙ্গে প্রাশিয়ান  আমলে ‘ ভাখট আম রাইন ‘ (রাইনের পাহারা বা ওয়াচ অন রাইন)  জাতীয় সঙ্গীতের মতন সম্মানিত ছিল ।

    আড্ডা চলুক
     
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:২৮528116
  • বৈঠকখানায় বসতে পেয়ে ভালো লাগছে, দারুন দারুন আড্ডা শোনার সুযোগ হচ্ছে।

    কলকাতায় এখনো কিছু কিছু দোকান বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। আবার আমাদের লোকাল বাজারের দোকান (পাকা দোকান) সোমবার বন্ধ থাকে।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪১528124
  • আরেকটি অপ্রয়োজনীয় তথ্য - ফ্রান্সে বেড়াতে গেলে খেয়াল রাখবেন  গ্রামাঞ্চলে শনিবারে ব্যাঙ্ক খোলা  কিন্তু সোমবারে বন্ধ ( অবশ্যই লিওঁ প্যারিস মার্সেইতে শনি  রবিবার বন্ধ থাকে ) কেন সোমবারে ছুটি ? কারণ কর্মীরা পরপর দুটো দিন ছুটি পাবার অধিকারী !এটা অন্যত্র দেখি নি । জার্মানির  গ্রামে সে ল্যাঠা  চুকে গেছে  পাঁচ বছর আগে যখন শেষ ব্যাঙ্কটি তার দরোজা বন্ধ করে ।  
  • Amit | 115.64.218.173 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৬528125
  • হীরেন দা , ওপরের শেষ লাইনে কি বলতে চাইলেন জার্মানি তে গ্রামে এখন ব্যাঙ্কিং সার্ভিস হয়ই না ? নাকি দুদিন ছুটি হয়না? 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:২০528130
  • অমিত 
     
    ঠিক করে লিখি নি ।
     
    রাইনের ধারে আমাদের কাউব গ্রামে  যখন বাসা বাঁধি , একটি ব্যাঙ্ক খোলা থাকতো সোম বুধ শুক্রবার তিন ঘণ্টার জন্য । সেটা বন্ধ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। নিকটবর্তী ব্যাঙ্ক লরশ ( ৬ কিমি ভাঁটায় ) অথবা সাঙ্ট গোয়ারসহাউসেন ৮ কিমি উজানে ( লোরেলাই রকের জন্য খ্যাত )। কাউবে ব্যাঙ্ক বন্ধ হবার কারণ অনুমান করা যায় , জন সংখ্যা ৮৮০ , আমরা গেলে ৮৮৩ ! লরশে চার হাজার সাঙ্কট গোয়ারসহাউসেন ১৫০০ । কিন্তু সারেতে আমাদের গ্রামে জনসংখ্যা ১১,০০০ । গত ১৫ বছরে তিনটে ব্যাঙ্ক বন্ধ হতে দেখলাম এখন আমরা ব্যাঙ্ক বিবর্জিত ! নিকটস্থ ব্যাঙ্ক ৩ কিমি দূরে , তিনটে এ টি এম অবশ্য আছে! 
  • Kishore Ghosal | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫০528132
  • আশপাশ কলকাতা এবং মফস্বল বহু শহরেই বেষ্পতিবার দোকানপাট বন্ধ থাকে - আজও বেহালা মার্কেটের অনেকাংশ  বন্ধ থাকে।  তবে সব্জিবাজার এবং মাছের বাজার রোজ বসে। 
    এদেশের অন্যান্য বড়ো শহরেও দেখেছি  মার্কেটগুলোতে  রবিবারেই বন্ধ পালন করা হয় - ছোটখাটো ব্যতিক্রম ছাড়া। 
     
    এইসব ঘোরাঘুরি করতে করতে আমার গেঁড়ে মাথায় বহুদিন ধরেই একটা প্রশ্ন জেগেছিল। বৃটিশ কলোনির  লালমুখোরা বউ বগলে চার্চে গিয়ে  প্রার্থনা করার জন্যেই  রবিবার ছুটির দিন চালু করেছিল।  তার আগে মুসলিম শাসনের সময় নামাজ পাঠের জন্যে শুক্কুরবার ছুটির রেওয়াজ ছিল।  আমার প্রশ্নটা হল তার আগে হিন্দু রাজত্বের শহরগুলিতে সাপ্তাহিক ছুটি বলে কিছু থাকত কি? থাকলে সেটা কি বেষ্পতিবার?
     
    গুজরাটের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বছর আড়াই থাকার সুবাদে বুঝতে পেরেছিলাম, হিন্দু রাজত্বের কিছু কিছু ট্র্যাডিশন। ওই অঞ্চলেও বেষ্পতিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। তবে সিনসিয়ারলি  সবাই যে মানত তা নয়। কিন্তু পূর্ণিমা এবং অমাবস্যায় বাজারের সমস্ত দোকান  মায় - চা - বিড়ি সিগারেটের  দোকানও বন্ধ থাকত।  এই পাক্ষিক ছুটিগুলিই হিন্দু  সংস্কৃতির সনাতন নিয়ম ছিল মনে হয়। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:০৭528134
  • কিশোর 
     
    ছদিনে পৃথিবী তৈরিতে বিশ্বাস রাখে তিন আব্রাহামিক ধর্ম- তফাৎ কেবল কোনদিনে সেই কাজটা শুরু হয়েছিল ! তাই ছুটির দিনে শুক্র শনি রবি হিন্দু ধর্মে কোন স্টার্ট ডেট নেই তাহলে বেস্পতিবারে কর্ম বিরতি  এলো কোথা থেকে ? লুনার ক্যালেন্ডার যারা মানতেন তাঁরা পূর্ণিমা অমাবস্যায় হয়তো দোকান বন্ধ রাখতেন । 
  • Kishore Ghosal | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৪528136
  • ঠিক বলেছেন। বেষ্পতিবার দোকান বন্ধ - নিরামিষ খাওয়া হিন্দুদের মধ্যে বহুল পরিচিত। কারণ গুরুবার ( বৈদিক মতে ঋষি বৃহষ্পতি ছিলেন দেবতাদের গুরু) - আবার পঞ্জিকা মতে বৃহষ্পতির বারবেলা মারাত্মক। হয়তো এই  সব কারণেই ছুটি। 
     
    হিন্দুদের ক্যালেণ্ডার চন্দ্রপক্ষ নির্ভর। আমাদের সপ্তাহ এবং পক্ষ গণনা ছিল - তিথি ভিত্তিক - প্রতিপদ, দ্বিতীয়া ...ইত্যাদি। "আমাদের জন্ম - জন্মদিনে হয়, নাকি তিথিতে?" রবিঠাকুরও এ বিষয়ে দ্বিধা ব্যক্ত করেছিলেন। যদি দিনে হয় তাহলে ২৫শে বৈশাখ। কিন্তু তিথি ধরলে - ২৫শে বৈশাখ দিনটি ভ্যারিয়েব্‌ল্‌ হয়ে যাবে... এ নিয়ম আমাদের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সেই কারণেই দুর্গা, কালী, সরস্বতী কোন পূজাই  প্রতি বছর নির্দিষ্ট দিনে হয় না - পূজাগুলি তিথি অনুসারে হয়। সে হিসেব খুব গণ্ডগোলের - পণ্ডিতদের চুলচেরা হিসেবের ফসল।   
     
    যতদূর জানি আর্যভট্ট সৌর ক্যালেণ্ডাররের প্রস্তাবনা করেছিলেন, কিন্তু হিন্দু সমাজ সেটা গ্রহণ করেনি। কারণ - ব্রাহ্মণরা গ্রহণ করতে দেয়নি। সৌর ক্যালেণ্ডার সহজ সরল - জনগণের সহজবোধ্য - জনগণ সব বুঝে ফেললে ব্রাহ্মণপণ্ডিতরা কাদের মাথায় হাত বুলোবে?      
  • Arindam Basu | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৬528137
  • কিন্তু ইংরেজ বা মুসলমান শাসক যে কারণে রবিবার বা শুক্রবার ছুটির দিন বলে ধার্য করেছে (ঈশ্বরের বিশ্রামের দিন), হিন্দু ধর্মে সেই কনসেপ্টটি তো নেই, কাজেই বিশেষ দিনে কাজকর্ম ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখার কারণটা ঠিক কি? একেক জায়গায় একেক রকম বিধি। কলকাতায় থাকার সময় দেখতাম বৃহস্পতিবার মাংসের দোকান বন্ধ থাকত কিন্তু অন্যান্য দোকান, এমনকি মাছের বাজার খোলা। এখন জানিনা কি হয়। 
    যে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ, সেখানে ধর্মীয় কারণে সপ্তাহের একটি দিন বিরতির জন্য স্থির করা কতটা যৌক্তিক, নাকি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কথা বিবেচনা করে স্থির করা হয়?
  • যোষিতা | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৪528140
  • বেস্পতিবার হচ্ছে লক্ষ্মীপুজোর বার। সত্যনারায়ণের পুজোও।  বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজে সম্ভবত বেস্পতিবারে ছুটি অথবা দেরি করে আসা, এরকম কিছু চালু করেছিলেন। ভুলও হতে পারি।
     
  • শু  | 103.232.241.147 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৫528141
  • আরেকটা ডেটা পয়েন্ট রেখে যাই -- দক্ষিন ভারতে দেখি এই নিরামিষ বা উপোসের ব্যাপারটা জায়গা বিশেষে কোথাও মঙ্গলবার, কোথাও বা শনিবার। বাজার অবশ্য বন্ধ থাকে না।
  • যোষিতা | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৯528142
  • সোমবারে বাবার উপোস, শুক্রবারে সন্তোষী মা।
    বুধবারটা এখনও কেউ ছোঁয় নি।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:৫৩528160
  • শান্তিনিকেতনে বুধবার পঠন পাঠনে  বিরতি । 
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:০২528161
  • ব্যস, বৃত্ত সম্পূর্ণ হৈল।
    কিন্তু জারমানি ফার রাইট পার্টি AfD তো বলছে জার্মানি শুধু জার্মানদের! তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও চলছে বিপুল।
    মহান জার্মানি কি আবার স্বরূপ ধারণ করতে চলেছে?
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:০৫528162
  • যোষিতা | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৩:২০528163
  • আরও প্রতিবাদ আজ বের্লিনে
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন