এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ৬

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ মার্চ ২০২৪ | ৫৩৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)
  • বৈঠকি আড্ডায় ৬

    বিষয় আশয়

    হিথফিল্ড গার্ডেনসে  আমাদের প্রতিবেশী রিচারড সাইমন ( পোলিশ ইহুদি ) জানালেন তাঁরা শিগগির  বাড়ি বিক্রি করে ইসরায়েলে ফিরবেন মনস্থ  করেছেন -উই আর গোয়িং ব্যাক টু  ইজরায়েল ।  এঁরা বহু পুরুষে পোল্যান্ডে ছিলেন, নাৎসি উৎপাত শুরু হবার  আগেই ইংল্যান্ড আসেন। কিন্তু ইসরায়েলে যাওয়াটাকে তাঁরা বলেন, ফেরা ( আলিয়া ),  আমাদের ভাষায়  ঘর ওয়াপসি ! আমি অন্য ইহুদির কাছেও শুনেছি – তাঁরা ‘ফিরে’ যান।

    বললেন  বিক্রি হতে সময় লাগবে,  তবে সেটা সম্পন্ন  হলে আমাদের একদিন বিদায়ি  চা পানে আমন্ত্রণ জানাবেন।

    সদর দরজা খুললেই রাস্তার ওপারে তাঁদের বাড়ি, আঠাশ নম্বর । শান্তিপ্রিয় বয়স্ক দম্পতি। ছেলেমেয়েরা দূরে দূরে থাকে, ক্বচিৎ আসে। তখন  সে বাড়িতে কিছু শিশুর কণ্ঠ শোনা যায়।  দু দিন বাদে  রিচারডের বাড়ির সামনে একটা এস্টেট এজেন্টের  ( উইঙ্কওয়ারথ)  বোর্ড দেখলাম – ফর সেল । সর্ব সাধারণ জানলেন এ বাড়ি বিক্কিরি হবে। দিন যায়। আরও নতুন নতুন সাইন বোর্ড  রিচারডের উঠোনে শোভা পায়  -  মোরল্যান্ড , এলিস অ্যান্ড কো,  ফক্সটন । ভাষ্য এক  – ফর সেল!  


    জার্মানি থেকে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ইহুদি পাড়া গোলডারস গ্রিন এসেছি ।

    ফ্রাঙ্কফুর্টে কোনো বাড়ির বা ফ্ল্যাটের  সামনে  বিক্রি বা ভাড়ার নোটিস  দেখি নি । বাড়ির মালিক  এজেন্ট নিয়োগ করেন,  সেই এজেন্ট বাড়ি কেনার খদ্দের বা ভাড়া নিতে আগ্রহী মানুষের  সন্ধান পেলে তাঁদের সে বাড়ি সন্দর্শনে পাঠায় , মালিকের সুবিধে মতন। বিশেষ করে শনিবারের সকালে আমাদের নরড এন্ড  পাড়ার এখানে ওখানে কোন ভিড় দেখা গেলে ধরে নিতে হবে সেখানে লোকে লাইন দিয়েছেন ( বেজিখটিগুং )।  আমাদের ফ্ল্যাট  ভাড়া দেবার সময়ে যেমন দেখেছি। এজেন্টের কাছ থেকে খবর যারা পেয়েছেন তারাই আসেন- বাই ইনভিটেশন ওনলি ! বাড়ির সামনে বোর্ড লাগিয়ে পথ চলতি উটকো মানুষকে বাড়ির মালিক  জানাতে চান না যে তাঁর  বাড়ি বিক্রি বা ভাড়া দেওয়া হবে ।

    জার্মানিতে বাড়ির গেটের পাশে,   ফ্ল্যাটের দরোজায় কেবল গৃহীর নামের বোর্ড সাঁটা থাকে না , তিনি  যে ডক্টর,  ইনগেনিউর,  আরখিটেখট,  রেখটসআনভালট ( উকিল) নিদেন পক্ষে উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী কোনো  হের বা ফ্রাউ সেটি জানিয়ে খ্যাত হতে চান। সকালবেলা ফ্রাঙ্কফুর্টের স্পর স্ত্রাসের বাড়ি  থেকে অফিস যাবার পথে ফ্রিডবেরগার লানড স্ত্রাসের ট্রাম স্টপে  অপেক্ষা করার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে ফেলেছি লাগোয়া  বাড়ির বাসিন্দারা কে কোন কর্ম করেন, কোন ডিগ্রি ধারণ করেন।

    লন্ডন  এসে ইস্তক দেখলাম এখানে  বাড়ির মালিক তাঁর সংক্ষিপ্ত সি ভি জানাতে অনিচ্ছুক, ,  ফ্ল্যাটের দুয়োরে বড়জোর  মিস্টার বা মিসেস অমুক ।  গোলডারস গ্রিনে সেটাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সারের গ্রামে , আমাদের পাড়া পড়শির বাড়ি নম্বর বিহীন , গেটে নাম লেখা – রাসটন লজ, ইনউডস, পার্কভিউ। কারো দেয়ালে মালিকের  পরিচিতি সাঁটা নেই।  পাস বা পেশা তো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।  ফর অ্যান ইংলিশম্যান , হিস হোম ইজ হিস কাসল । তাঁরা খুবই প্রাইভেট পারসন।  থাকতে দে না আপন মনে আমায়,  অথচ বাড়ি জমি  বিক্রির কিসসা সকলকে জানাতে চান ! জার্মানির ঠিক উলটো !

    খটকা লাগলো – চারটে  এজেন্টের সাইন বোর্ড কেন ? বাড়ি তো একটাই  তার দাম তো এক , তাহলে সেটা  বেচতে চার  জন বাজারে নেমে পড়েছে কেন? সেই বোর্ডের আবার রকমফের আছে, কোথাও ফর সেল, কোথাও লেখা আণ্ডার অফার, কোথাও সেল এগ্রিড, সোল্ড এইসব নোটিস কোন বার্তা বহন করে ?

    কোন বাড়ি আণ্ডার অফার যদি হয় সেটা ঘটা করে জানানোর প্রয়োজনটা কি ? মানে বিক্রেতা খদ্দের পেয়েছেন কিন্তু ভাবছেন  নিলামের মতন আরও যদি কেউ এসে বেশি দাম দেয় ! অফারটি যিনি দিয়েছেন এতে  তাঁর তো আপত্তি থাকার কথা !  তিনি বিক্রেতাকে তাঁর চাওয়া দর দেবেন বলে এজেন্টকে জানিয়েছেন । তাহলে আণ্ডার অফার বোর্ড কেন ? প্রার্থিত টাকা নিয়ে বিক্রির দলিলে সই করলেই তো হয় ?

    আমি ভুক্তভোগী। একবার বাড়ি কেনার সময়ে গজাম্পিং নামের একটি হাঁসজারু শব্দের সঙ্গে পরিচয় হলো ; বিক্রেতাকে তার মুহ মাঙ্গা দাম দেবো  কেবল সই করা বাকি , এমন সময়ে বিক্রেতার এজেন্ট জানালেন , সরি , আরেকজন একটু বেশি দাম দিয়ে কিনছে ! বাড়িটি পছন্দ , বউ  জুতসই ফার্নিচারের খোঁজে নেমে পড়েছেন এই  সময়ে এমন দাগা ? নিলামের মুডে সেই এজেন্টের কাছে জানতে চাইলাম ,  কতো দিচ্ছে অন্যজন ? আমি তার বেশি দিতে রাজি -ব্লাইনড পোকার । এবারে এজেন্ট রহস্যময় হাসি হেসে বললেন , সেটা বলতে পারি না , মানা  আছে।

    কপালে বাড়ি নয় হাতে হারিকেন।
     
     
    আরেক বিজ্ঞপ্তি – সেল এগ্রিড ।  আচ্ছা ,  সেল যদি এগ্রিড হবে তো ক্রেতা বিক্রেতা কোন উকিলের নিরালা ঘরে বসে সম্পত্তি হস্তান্তরের কাগজে সই করুন না গিয়ে, পাড়া পড়শিকে খবর দেওয়া কেন ? অথবা ভাবছেন আবার  যদি কেউ পথ ভুলে বেশি দাম দিয়ে এগ্রিড সেলটিকে বানচাল  করে দেয় ?

    সোল্ড লেখা বোর্ড টাঙ্গানো কেন?  বেচে ফেলেছেন তা সেটা জেনে আমার কি হাত পা গজাবে,  না আপনি বাড়ির দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে  মুখ মিষ্টি করাবেন? পরে জেনেছি ওই সোল্ড লেখাটা এস্টেট এজেন্টের এলেমের প্রমাণ ! বুক চাপড়ে জানাচ্ছেন আমরা বিক্রি করেছি !

    ফ্রান্সে সরাসরি বোর্ড লাগানো হয় – বিক্রি হবে ( আ ভন্দ্র ) , কাজ সম্পন্ন হলে ভঁদু (বিক্রীত ) । এই দুটি পর্যায়ের মাঝের  কোন প্রোগ্রেস রিপোর্ট কিস্তিতে কিস্তিতে বিজ্ঞাপিত হয় না।

    যদিও অলিখিত প্রথা অনুযায়ী  ইংল্যান্ডে চারটের বেশি এস্টেট এজেন্টের বোর্ড লাগানো যায় না, কিন্তু বিক্রেতা দশটা এজেন্টকে নিযুক্ত করতে পারেন ।  মনে প্রশ্ন জাগে একটা বাড়ি বেচতে এতো সাইন  বোর্ড কেন টাঙ্গানো হয়?

    আমাদের নিজেদের ব্যবসার  কথা মনে হলো।  

    আন্তর্জাতিক ঋণ আয়োজনের  নেতৃত্ব  ( লোন অ্যারেঞ্জার )  আমরা ভাগ করে নিতে চাই না, আমাদের ফি তে ঘাটা পড়ে। একাধিক ব্যাঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে যখন   ফিল্ডে নামি; তার কারণ হয়  সেই লোনে জটিলতা আছে, নয় একা বেচার মুরোদ নেই , ভয়, এই বিক্রি পর্বে যদি আটকে যাই! একাধিক ব্যাঙ্ক থাকলে সেই  সমস্যার দায় অন্য ব্যাঙ্কের ঘাড়ে  চাপানো যায় । গোলমেলে ডিলে প্রভূত বকরার বা নিবেশকের প্রয়োজন ।  আমাদের লোন বেচার বাউল গানের আসরে ধুয়ো হলো – নিবেশকের খোঁজে পথে বেরিয়েছি , কোথায় পাবো তারে !  সেই নিবেশক লন্ডন প্যারিস নিউ ইয়র্কের সীমানা ছাড়ায়ে  দুনিয়ার যে কোন জায়গার অধিবাসী হতে পারেন । আমরা,  সিটি বা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড লন্ডন  ব্রাঞ্চ , ইউরোপ আমেরিকা বা আরব সাগর অঞ্চল বেশি চিনি।  কিন্তু থাইল্যান্ডের কোন নিভৃত গুহায় বা হোক্কাইডোর কোন জলস্তম্ভে বসে এক লগ্নিকারক যে চেক বিদ্যুৎ কোম্পানি অথবা শ্রী লঙ্কা টেলিকমের মতন খদ্দেরের খাতে ঋণ দেবেন এমনি ইচ্ছে নিয়ে যোগাসনে বসে   নিত্যি দিন হাতের মালা ঘুরোচ্ছেন  তা আমাদের জানা সম্ভব নয়। অতএব আমরা শরণাপন্ন হই কোন সিঙ্গাপুর, টোকিওবাসী  ব্যাঙ্কের অথবা আমাদের নিজের দূর প্রাচ্যের  ব্রাঞ্চের- যে  ব্যাঙ্কাররা  ওই চত্বরে ঘোরাঘুরি করেন । একমাত্র তাঁরা উদার ন্যালা খ্যাপা নিবেশকের সঠিক খবরাখবর রাখেন , এটাই থিওরি ।

    গুণী জন বলেন , যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই – কিন্তু সে ছাই,  সে বিভূতি ওড়াতে লোক লাগে,খরচা আছে  । অতএব ময়দান ভাগাভাগি করে নেওয়া ভালো , তাতে আমাদের ফি’র পরিমাণে টান পড়ে কিন্তু খদ্দেরের  পুরো টাকাটার  সংস্থান হয়।  অন্যথায় অতি লোভে আমাদের ডিলটি ডোবে,  বরং বাঁটকে,  মিল জুলকে  কাম করো ।

    খাউঙ্গা,  খানে ভি দুঙ্গা ।  

    যখন কোন লোন বা বন্ড ম্যানডেট পাবার  জন্য মক্কেলের দুয়োরে হত্যে দিই,  তাঁরা জানতে চান আমরা কোন বাজার থেকে এই একশ মিলিয়ন ডলার তুলব বলে আশা করি ? আমরা কি সকল সম্ভাব্য লগ্নিকারককে চিনি ? আমাদের সেলস নেট ওয়ার্ক  কি রকম?  মার্কেট রিচ , বাজারের বিস্তার? দুনিয়া জোড়া নেটওয়ার্ক ও ব্রান্ডের পরিচিতির সৌজন্যে (সিটি /স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ) আমরা নিজেদের মাস্টার্স অফ দি ইউনিভার্স বলে দাবি করেছি।  ব্রিটেনের লয়েডস, হল্যান্ডের রাবোব্যাঙ্ক , ফ্রান্সের ক্রেদি লিওনে অথবা সুইডিশ এনশিলদা ব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি নগণ্য কিন্তু  আজকের মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে এবং এয়ার মাইল সংগ্রহে উদ্যমী ব্যাঙ্কারদের সাপ্তাহিক ট্রাভেল প্ল্যানের কল্যাণে সম্ভাব্য ঋণদাতাকে চেনা কোন কঠিন কাজ নয় ! সবাই বলে হম কিসিসে কম নহি !

    বাড়ি বেচা বা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন মডেলটা চালু ?

    এদের বিজনেস প্ল্যান  কি? বাড়ি একটা , চারটে এজেন্টের পোস্টার কেন? এরা  সকলেই তো এ পাড়ার -  ধরে নেওয়া যেতে পারে তাদের টার্গেট মার্কেট গোলডারস গ্রিন, হেনডন , মেরে কেটে নিকটবর্তী হ্যাম্পস্টেড , কলিনডেল বা হ্যাম্পষ্টেড গার্ডেন সাবারব- এই বিস্তৃত এলাকার মানুষকে বাসা বদল করাতে এঁরা বদ্ধ পরিকর। এটাও ধরে নেওয়া যেতে পারে এই এস্টেট এজেন্টদের শাখা অফিস লন্ডনের অন্যত্র আছে , এমনকি  নিউ কাসল বা ম্যানচেস্টারেও । তার মানে  সবাই মিলে একটা সীমিত  দুনিয়ার মানুষদের ধাওয়া করছেন (অল  চেজিং দি নোন ইউনিভার্স )। হাই স্ট্রিটে তাঁদের অফিসের জানলায়  একই বাড়ির ছবি, দামও এক  । এ যেন রথের মেলার মাঠে চার জন এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে মুখে চোঙ্গা  লাগিয়ে তারস্বরে একই খেলনা  বেচছেন, একই দামে। পরে ইন্টারনেট এলো,  চার এজেন্টের  ওয়েব সাইটে সেই একই চিত্রমালা । ভাড়ার ক্ষেত্রে  যে এজেন্ট খদ্দের পাকড়েছেন ,  বাৎসরিক ভাড়ার ওপরে আট বা নয় শতাংশ ফি তাঁর প্রাপ্য, আদায় করবেন বাড়ির মালিকের কাছ থেকে।  বিক্রির কমিশন আলোচনা সাপেক্ষ ।

    পাবলিক মিটিঙে আকছার বলেছি , আমার  কেতাবি বিদ্যে কম, ঝোপের পেছন থেকে এসেছি (এ ম্যান ফ্রম দি ব্যাক অফ দি বুশ) তাই আবোল তাবোল প্রশ্ন করি  ; চারজনের  একই বাজারে একই মাল বেচাটা পণ্ডশ্রম নয় কি?

    কেবলমাত্র ইট পাথরে বা বাহ্যিক সৌকর্যের  গুণে বাড়ি ঘর ভাড়া বা বিক্রি হয় না । একটা সাবজেকটিভ, অন্তর্নিহিত কারণ আছে-  বাড়ির অবস্থান বা লোকেশন ।  এ দেশে শোনা যায় বাড়ির  সেলিং পয়েন্ট তিনটে – লোকেশন, লোকেশন অ্যান্ড লোকেশন।  সেটি যেন  আণ্ডারগ্রাউনড বা মেট্রো স্টেশনের, সদর রাস্তার  কাছাকাছি হয় ( আবার খুব কাছে নয় তাতে শব্দ দূষণের সম্ভাবনা ), সেইনসবেরি / মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের সুপার মার্কেটের অনতিদূরে,  পাবের পাশে নয় এমনি সাত সতেরো যুক্তি আছে । সেটাও আমার অজানা নয় । আমাদের বাড়ি কেনার সময় এস্টেট এজেন্ট মারকো মারিনির ( ইতালিয়ান ইহুদি ) সঙ্গে বিশেষ আলাপ পরিচয় হয়েছিল । সে  আমাকে একদিন বললে , হীরেন  আরেকটা পয়েন্ট আছে , সচরাচর মুখে তার উল্লেখ করা হয় না
     
    • সেটা কি?
    • জাতিগত পরিচয় !

    সর্বনাশ ! বলে কি ? এথনিক ক্লিনসিং ?!! ঘেটো মনোবৃত্তি?  কথাটা শুনতে খারাপ লাগে কিন্তু  হাজার বছর যাবত ইহুদি বিভিন্ন ইউরোপীয় সরকারের বানানো ঘেটোতে বাস করেছে -  একা রাশিয়ার পেল অফ সেটলমেনটে বাস করতেন বিশ লক্ষ মানুষ  -   ট্রাম্পের স্টাইলে ইহুদিদের আলাদা করে রাখার জন্য দেওয়াল উঠেছে অনেক শহরে ( ১৭৯৭ সালে নেপোলিয়ন প্রথম মিলানের ঘেটোর দেওয়াল ভাঙ্গেন )।  আজ সরকারের হুকুমে নয়, আপন ইচ্ছেয় চেনা গোষ্ঠী চেনা মুখের  সঙ্গে মানুষ বাস করতে চান, তার জন্য অর্থদণ্ড দিয়েও।

    মারকো বললে , ‘ আপনাকে বোঝাই –  কোন বিশেষ অঞ্চলের বাড়ি ঘর ভাড়া বা বিক্রির নানা  ইউ এস পি থাকে , ক্রেতা বেশি দাম দিতেও রাজি । যেমন গোলডারস গ্রিনের বাড়ি ঘরের একটি  অতিরিক্ত মূল্য আছে , তার নাম জুইশ  প্রিমিয়াম । এই প্রিমিয়ামের তিনটি শর্ত –সাবাথের দিন ( শনিবার ) বাড়ি থেকে  হেঁটে যেন নিকটস্থ সিনাগগে , সমাধি ক্ষেত্রে এবং ইহুদি স্কুলে যাওয়া যাওয়া যায় – সেদিন যন্ত্রপাতির তথা গাড়ির ব্যবহার মানা।এর  সঙ্গে অকথিত একটি চতুর্থ শর্ত আছে- ইহুদি আপন জাতভাইয়ের সঙ্গ খোঁজে,  তাই গোলডারস গ্রিন তাদের প্রিয় লোকেশন‘।

    একেই কি বলে টিকিং দি বকসেস – তালিকার সব ঘরে টিক দেওয়া ? তবেই না অঙ্ক মেলে! এ স্কোয়ার প্লাস বি স্কোয়ার অধিকন্তু  এক্সট্রা  টু এ বি !
     
    • তাহলে  এই ঘোর ইহুদি তল্লাটে আমি ঢুকে পড়ছি কি করে ? কারো আপত্তি নেই?
    • আপনার  কপাল ভালো -  এই বাড়িটি লয়েডস ব্যাঙ্কের কর্পোরেট প্রপার্টি , অফিসারদের সাময়িক বাসস্থান ছিল;  এ পাড়া  থেকে তারা  ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছে , ভারমুক্ত হতে চায় । ক্রেতার ধর্মাচরণের অভ্যাস নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই – রেস্ট ইজ কনভারসেশন
    L
    বন্যেরা বনে সুন্দর, গুজরাতিরা ওয়েম্বলিতে,  লেসটারে  /পাঞ্জাবিরা সাউথহলে!  

    পরিচিত জনতার সরণিতে বসবাস করবার সুবিধে অনেক -  ডাক্তার,  উকিল,  কলের মিস্ত্রি , রাজ মিস্ত্রি কারো সঙ্গে ইংরেজিতে বাক্যালাপ করার বিড়ম্বনা নেই । সে ভাষা  না জেনে  সারা জীবন দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায়।  শনিবারের বিকেলে বা রবিবারের দুপুরে ওয়েম্বলি , সাউথহলে  শিশু পুত্র কন্যা সহ পদাতিক  ইংরেজ চোখে পড়ে – তাঁরা পরের প্রজন্মকে দেখান কোথায়,  কোন পাড়ায় তাঁরা জন্মেছিলেন, বড়ো হয়েছেন, কোন গলিতে ফুটবল খেলতেন!

    ওয়েম্বলির তুল্য লেসটার শহরে  ঘন সন্নিবদ্ধ এলাকায় বাস করেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার গুজরাতি ( জনসংখ্যার ১৩%) পথে ঘাটে দেখা যায় গুজরাতি সাইন বোর্ড !  
     

    কেবল ভারতীয় মূলের মানুষ  নয়, লন্ডনে এই গুষ্টি সুখের সন্ধান করতে দেখা যায়  নানান ইউরোপীয় জনতাকে- গ্রিক পাবেন টটেনহামে, উড গ্রিনে , দুই দেশের মধ্যে যতোই শত্রুতা থাকুক না কেন  সেই একই অঞ্চলে একটু আলাদা হয়ে বাস করেন তুর্কি,  দেড় লক্ষ জার্মান বাস করেন রিচমণ্ড এলাকায় ( অত্যুত্তম জার্মান স্কুল আছে) , তিন লক্ষ ফরাসির বেশির ভাগের বাস সাউথ কেনসিংটনে ( ‘ ফরাসি লন্ডন দেখুন’ বাস টুর আছে তবে তার ধারাভাষ্য কেবল মাত্র ফরাসি ভাষায়), ইজলিংটনে কিলবার্নে আইরিশ – যারা লন্ডনের জনসংখ্যার প্রায় দশ শতাংশ । হাইড পার্কের পাশেই এজওয়ের রোডে  আরবির ছড়াছড়ি , ইংরেজি সাইনবোর্ড চোখে পড়ে কম।  উইম্বলডনে পোলিশ নন এমন কলের মিস্ত্রি মেলে না।  ব্রিক্সটনে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের ঘন সন্নিবদ্ধ বসবাসের কারণটি ঐতিহাসিক। পাঁচের দশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত লন্ডনের পুনর্নির্মাণ ,  খোঁড়াখুঁড়ির কাজ তুঙ্গে – প্রয়োজন সস্তার শ্রমিক। জামাইকা বারবাডোজ গায়ানার কলোনি থেকে জাহাজ ভর্তি মানুষ আনা হলে , তাঁদের সাময়িক আস্তানা ব্রিক্সটন এলাকায় নির্দিষ্ট হয় । তাঁরা সেখানেই থেকে গেলেন, ত্রিনিদাদের গায়ানার ভাই বেরাদর পরে এসে তাঁদেরই পাশাপাশি বাসা বাঁধলেন ।  ফলত ব্রিক্সটন আজ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এলাকা !

    লন্ডন বন্দর এককালের এলিস আইল্যান্ড –সেই পথেই এ দেশে এসেছেন ইমিগ্রান্টরা । কিছু দেওয়ালে হিব্রু লেখা দেখতে পাওয়া যায় – দেড়শ বছর আগে ইহুদিরা জাহাজ থেকে নেমে সেখানেই ভাষা বেঁধেছেন  । আজ পূর্ব লন্ডন বাংলাদেশির পাড়া , রাস্তার নাম বাংলাতে লেখা,  যেমন লেসটার স্কোয়ারের চায়না টাউনে  চিনে হরফে । যুদ্ধের পরে ঠিক একই কারণে বাস ভর্তি তুরস্কের মানুষ আনা হয়েছিল জার্মানিতে ( তুর্কি মূলের মানুষ সে দেশে বিশ লক্ষ),   তুরস্কের বাইরে বার্লিন আজ বৃহত্তম তুর্কি শহর , দু লক্ষ মানুষের বাস,; একটি বিশেষ পাড়া ,  ক্রয়েতসবেরগ আজ প্রায় সম্পূর্ণ তুর্কি অধ্যুষিত । আপন দেশের সীমানার বাইরে বৃহত্তম ভারতীয় শহরের নাম ডারবান , আথেন্সের পরেই দ্বিতীয় গ্রিক শহরের নাম মেলবোর্ণ ।  হল্যান্ডে সাড়ে তিন লক্ষ সুরিনামি বাস করেন, বেশির ভাগ  আলমের , রটারডামে ।  লুকসেমবুরগের ১৬% নাগরিক পর্তুগিজ,  বাস করেন পাশাপাশি।  বেলজিয়ামে বাড়ির  সন্ধানে এজেন্টের দুয়োরে হাজির হলে তিনি প্রথমেই জানতে চাইবেন আপনার মাতৃভাষা কোনটি ? ফ্লেমিশ না ফরাসি ? দেশটা এমনকি স্কুল প্রথা দু ভাগে বিভক্ত , একমাত্র ব্রাসেলস এলাকায় দুই পক্ষ পাশাপাশি বাস করেন ।  ব্রুঘে বা ঘেনটে ফরাসি ভাষী মানুষের বাড়ি পাওয়া শক্ত।  অ্যান্টওয়ারপের  অদূরে কাপেলেনের ফাব্রিকস্ট্রাটে  লিডিয়া উইটস নামে এক ফ্লেমিশ মহিলাকে চিনতাম।  গাড়িতে হল্যান্ড  বেলজিয়াম আসা যাওয়ার সেখানে থেমেছি ,  অনেক গল্প শুনেছি ।  বেলজিয়ামের ভাষা বিবাদ একুশে ফেব্রুয়ারিকে মনে করিয়ে দেয়।


    বড়োলোকের বেলায় এ সব প্রশ্ন ওঠে না । লন্ডনের কেনসিংটন, উত্তরে  বিশপস এভেনিউ ( লক্ষ্মী মিত্তালের বাড়ির পাশেই সৌদি রাজবংশের আবাস)  মে ফেয়ারে , প্যারিসের আভেনু ফখে,  হামবুর্গের আউসেন আলস্তারে , মিলানের পোরতা রোমানায় জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কথা বলে টাকা – ইট ইজ  দি মানি দ্যাট ম্যাটারস, কিড  ! সে মানি কোথা হতে এলো তা নিয়ে বিক্রেতা বা তার ব্যাঙ্ক , দেশের অর্থ দপ্তর মাথা ঘামায় না । অ্যাঙ্গোলা , ভারত , আজারবাইজান , রাশিয়ার লুণ্ঠিত কোটি কোটি ডলার সুটকেসে ভরে যখন কোনো  মানুয়েল, মল্ল ,  দিমিত্রি বা রোমান লন্ডনের এস্টেট এজেন্টের ঘরে পায়ের ধুলো দেন,  সে এজেন্ট ‘ আপন খদ্দেরকে চেনো’  নামক বিধানটি  ভুলে গিয়ে তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়েন ; সুটকেসে নিহিত অঢেল অর্থ কোথা থেকে এলো সে প্রশ্ন করে এজেন্ট নিজের কমিশনের ক্ষতি করতে চান  না।  ‘ এসো শ্যামল সুন্দর ‘ বলে শুভ্র,  কৃষ্ণ সকল বর্ণের অর্থকে পকেটস্থ করেন ব্যাঙ্কাররা । এই গান তাঁদের থিম সং ।

    আমাদের মতো সাধারণ মনিষ্যির জন্যে অন্য আইন- মাইনে কতো , কর্মদাতার সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স , পাসপোর্ট , আগে কোথায় ছিলেন, কত দিন সেখানে ছিলেন,  কেন ছাড়ছেন ইত্যাদি হাজারটা  কাগজ লাগে ভাড়া নিতে গেলে।  কিনতে গেলেও প্রশ্নবাণের মুখোমুখি হতে হয়- টাকা পেলেন কোথা,  ধার কতো নিলেন ।  দ্বিতীয় বাড়িটি  কেনার জন্য আমার ঋণের আবেদন পত্র বারক্লেস ব্যাঙ্ক এক বাক্যে  খারিজ করে দেয় (সাল ১৯৯৫)  – বাড়ি তো একটা আছে আপনার,  আরেকটা কিনবেন কেন?   

    “ আমাকে ধার দিলে আপনাদেরই দু পয়সা আয়ের সুরাহা হয় “ এমন উপদেশ দেওয়ার দুঃসাহস সেদিন হয় নি , অন্য ব্যাঙ্কের কাছে গিয়েছি! শেষ অবধি তারা আমার পে স্লিপ, বাড়ির চেহারা দেখে  এবং সুদের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে ধার দিয়েছে।

    রিচারডের বাড়ি বিক্রি হলে একদিন সব বোর্ড নেমে গেলো । চাওয়া দাম পেয়েছিলেন কিনা জানি না তবে এক বৈকালিক চায়ের আসরে  প্রসন্ন মুখে আইসাক ও রেবেকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ; আমাদের নতুন প্রতিবেশী। তাঁদের ধর্ম পরিচয় নামের ভেতরেই নিহিত।

    জাতি বর্ণের সুলুক সন্ধানের পঠিত সিলেবাসকে পাশ কাটিয়ে অথবা সেই অগ্নি পরীক্ষায় কোন মতে উত্তীর্ণ হয়ে কয়েকবার আস্তানা বদলেছি –ফ্রাঙ্কফুর্টের কট্টর জার্মান পাড়া নরড এন্ড ( আমাদের হাউস মাইস্তার  হের হের্টকর্ণ  ফ্রান্সে যুদ্ধ বন্দি ছিলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে ভুল কিন্তু স্বচ্ছন্দ ফরাসি বলতেন ) লন্ডনের ইহুদি মহল্লা গোলডারস গ্রিন এবং শেষে সারের এই ইংরেজ পাড়ায় যেখানে বাড়ির দু পাশে পেয়েছি  রয়্যাল নেভির অবসর প্রাপ্ত ক্রিস গ্রিনিং এবং কেয়ার হোমের মালিক আলেক্স ফিনলেকে । গত  ক্রিসমাসে সাত ঘণ্টার টানা আড্ডা দিয়ে গেলেন ।

    ফ্রান্সের উবি -সাঁ -ল্য  ও জার্মানির কাউব  গ্রামে অনেক হংসের মাঝে  একমাত্র কৃষ্ণবর্ণ বক রূপে সাময়িক ভাবে বাস করি।

    ইংরেজের মতে  মানুষের জীবনে দুটো অভিজ্ঞতা  সবচেয়ে ঝকমারির (স্ট্রেসফুল) - বিয়ে এবং বাসা বদল।

    পুনরায়  স্থানান্তরের কোন প্রশ্ন ওঠে না।সে  ধকল আরেকবার সওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ মার্চ ২০২৪ | ৫৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 163.116.203.21 | ২২ মার্চ ২০২৪ ০১:৩০529664
  • আগেও লিখেছি বোধহয় -কিন্তু না লিখে পারলুম না- হিরেন দা র এই লেখা গুলো পড়তে পড়তে চোখের সামনে যেন ভিসুয়ালস গুলো অটোমেটিক এসে যায়। বেশির ভাগ বড়ো শহরেই বোধহয় একই ট্রেন্ড। বিশেষ করে যেখানে ইমিগ্রান্ট পপুলেশন বেশি। বেশির ভাগই নিজের দেশ বা ভাষার লোকজনের সার্কলে থাকতে চান। 
     
    মাল্টিপল এজেন্ট রুল টা কি ইউকে তে অনেক বছর এমন আছে ? যেখানে আছি সেখানকার রুলস গুলো জেনেরালি ইউকে র সাথে অলমোস্ট সিমিলার। কিন্তু একসাথে মাল্টিপল এজেন্ট বোধহয় হয় না। আর একবার কন্ট্রাক্ট কুলিং অফ পিরিয়ড পেরিয়ে গেলে তারপর অন্য কেও বেশি অফার দিলে যদি কন্ট্রাক্ট ভাঙতে চায় , একটা ছোট পেনাল্টি ক্লজ থাকে। তবে ওই পিরিয়ড এর মধ্যে যে কেও অফার উইথড্র করতে পারে  কোনো কারণ ছাড়াই। আমার সাথেই হয়েছিল- পরে এজেন্ট এর থেকে শুনেছি যে আর একজন আমার পরে এসে বেশি দাম অফার করেছিল ওই পিরিয়ড এর মধ্যেই। কিন্তু যার থেকে কিনছিলাম সে ভদ্রলোক খুবই সজ্জন। তিনি কন্ট্রাক্ট ভাংতে চাননি। 
  • Kishore Ghosal | ২২ মার্চ ২০২৪ ১১:০৭529670
  • দারুণ লাগল - কোন দেশের পাড়া-গত চরিত্র বুঝতে পারা যায় - বাড়ি ভাড়া বা বাড়ি কিনতে গেলে। 
         
  • :|: | 174.251.161.6 | ২২ মার্চ ২০২৪ ১২:২০529674
  • "অনেক হংসের মাঝে একমাত্র কৃষ্ণবর্ণ বক রূপে" থাকা জনতা নিতান্ত অসম্ভব নয়, উল্টোটা যতটা দুর্লভ। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৭529676
  • অমিত 
     
    অনেক ধন্যবাদ । সম্পত্তি বেচা কেনার আইন গোটা ইউ কে তে এক নয় ।  ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে একই আইন চলে - যেখানে প্রায় কারোর ওপরে বিশ্বাস রাখা শক্ত । কিন্তু স্কটল্যান্ডে এটা আলাদা -  সেখানে আপনি বাড়ি কেনার অফার এস্টেট এজেন্ট নয়, বিক্রেতার উকিলকে পাঠান , বন্ধ খামে । বিক্রেতা যা চেয়েছে সেই দাম বা তার আশে পাশে । তারপর চিঠি চালাচালি হয় আপনার উকিল আর উকিলের ভেতরে ( মিসিভ )। এখানে ওই গজামপিং করারকোন সুযোগ নেই! ইংল্যান্ডে বাড়ি কেনার পর সার্ভে কোরান, স্কটল্যান্ডে বিক্রেতা সেটি করে। ইউজার ফ্রেন্ডলি ! 
    হ্যাঁ ওই মিলে মিশে থাকার ব্যাপারটা সর্বত্র এক। প্রমাণ পাই দক্ষিণ আফ্রিকাতে -বর্ণ বৈষম্য মূলক আইন কানুন উঠে গেছে তবু ডারবানে তেলুগু অরিজিনের মানুষ তেলুগু পাড়ায় থাকে - আমার সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা ! 
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৮529677
  • চতুস্কোন 
    আমি আপনার মন্তব্য ঠিক বুঝলাম না। 
  • Arindam Basu | ২২ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৯529680
  • "পুনরায় স্থানান্তরের কোন প্রশ্ন ওঠে না।সে ধকল আরেকবার সওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ।"
     
    Gazumping যেমন নিউজিল্যান্ডে প্রায় কখনো শোনা যায় না (বেআইনি নয় যদিও) । এখানে লোকজন প্রায়ই বাড়ি বদল করে। আমরা অনেককে জানি যারা চাকরি বদল, ছেলেপিলের প্রাইমারী থেকে হাইস্কুলে গেলে কাছাকাছি বাড়ি কিনে থাকে। 
     
    আমাদের নিজেদের যেমন স্থানান্তরের প্রশ্ন নেই, কারণ একবার নিজের মতন করে অফগ্রিড জীবন কাটাতে শুরু করলে শহর বা সাবার্ব অসহ্য লাগে। 
     
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩৭529682
  • অরিন্দম 
    নিউ জিলানড আইন হয়তো মোটামুটি ইংলিশ ল ভিত্তিক - তবে প্রসেস আলাদা হতে পারে। স্কটল্যান্ড খুবই আলাদা - আপনার অফার দেবেন সোজাসুজি উকিলকে । হেরাফেরি করাটা শক্ত । স্কটল্যান্ডে পাশ করা উকিলকে লন্ডনে প্র্যাকটিস করতে হলে ইংলিশ ল এর পরীক্ষা দিতে হয় ( সাধে কি আর স্কটরা এদের শাপ শাপান্ত করে?) 
     
    যথার্থ বলেছেন  যখন লন্ডনের ইহুদি পাড়া থেকে সারে এলাম, আমার এক ইংরেজ সহকর্মী গ্যাভিন বলেছিল , কাজের কথা আলাদা কিন্তু যখন রোজ সকালে লন্ডন আসবে, মনে হবে এখানে এতদিন বাস করেছি কি করে ( ওই অফগ্রিড জীবন ) !
  • নিখিল বরণ বিশ্বাস | 171.60.205.214 | ২৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:২৩529729
  • হীরেন দাদার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো। অসাধারণ। আমি কাল আর আজ দুই বার পড়লাম।
    আরো লেখা চাই।
  • সমরেশ মুখার্জী | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৫529767
  • আমি মাতৃভাষা‌টাই ভালো করে জানি না, হিন্দি জানি নেহাতই কামচালাও আর রাণীর ভাষায় তো বেজায় ব‍্যাথা তাই এযাবৎ এই আড্ডায় হীরেনবাবু‌র ভাষা নিয়ে নানা সুক্ষ্ম আলোচনা দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে বেশী এগোই নি। তবে এটা খাসা লাগলো। 
     
    প্রথমে অবশ‍্য আবার সেই ভাষার ঝকমারিতে একটু কাবু হয়ে পড়েছি‌লাম। ইনগেনিউর দেখে ঢেঁকুর উঠলো - তবে ডক্টরের পরে‌ই আছে দেখে বুঝলুম হয়তো ওটা ইঞ্জিনিয়ার। আবার তার পরেই আছে বলে খটখটে আরখিটেখট‌ও বোঝা গেল। 
     
    তবে কেবল বাড়ি‌র দরজা‌য় নয়, সাউথের লোকেদের বিয়ের কার্ডেও বর, বৌ এবং কখনো বর এবং  কনের পিতামাতার শিক্ষাগত ডিগ্ৰি‌র উল্লেখ দেখেছি। বলাই বাহুল‍্য যদি তা জানা‌লে শ্লাঘার উদ্রেকের সম্ভাবনা থাকে - তবেই তা থাকে। বর খেপখাটা এ্যাপক‍্যাব চালক হলে হয়তো উল্লেখ থাকে না। 

    তার‌পর থেকে লেখা‌টায় মজাই মজা।

    সত‍্যি -  ‘ফর সেল’ গোছের ‘সূচনা‌ পটল’ মানে ইনফো / নোটিশ বোর্ড তো ঠিক আছে কিন্তু আন্ডার অফার, সেল এগ্ৰিড, সোল্ড এসব বার্তাবাহী পটলের উদ্দেশ্য বোধগম্য হোলো না।

    এথনিক ক্লিনসিং! কি জানি। তবে জোরপূর্বক পূর্বের বাসিন্দাদের খেদিয়ে, তাড়িয়ে অন‍্য জাতের লোক এসে গেঁড়ে না বসলে, এভাবে খুঁজে পেতে ভাড়া নিয়ে বা কিনে যদি লোকজন নিজেদের গোষ্ঠীর মানুষের মধ‍্যে থাকতে চায় তাকে হয়তো এথনিক এগ্ৰিগেশন বা কনগ্লোমারেশন‌ও বলা যেতে পারে। বার্ডস অফ সেম ফেদার ফ্লক টুগেদার। তবে ক্রমশ কোনো এলাকায় কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ বেশী হয়ে গেলে এবং তার জন‍্য অস্বস্তি বোধ করে অন‍্য গোষ্ঠীর পুরোনো বাসিন্দা‌ও স্বেচ্ছায় অন‍্য কোথাও চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেটাকে হয়তো প‍্যাসিভ এথনিক ক্লিনসিং বলা যেতে পারে।

    ম‍্যায় (জোর লাগাকে) খায়ুঙ্গা - দুসরেকো‌ ভি খানে দুঙ্গা (মগর আসানি সে নেহি)। এইতো জগতের নিয়ম।

    বিটিং এ্যারাউন্ড দ‍্য বুশ জানতাম - এবার জানলাম ফ্রম দি ব‍্যাক অফ দ‍্য বুশ।

    “হোয়াইট চ‍্যাপেল স্টেশনে স্বাগতম” - বিদেশে‌র মাটিতে বাংলায় অনুবাদটি নির্ভুল হয়েছে। বরং কখনো বাংলাতেই ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদে গড়বড় হয়ে যায়। যেমন অনেকদিন আগে এটা পেয়েছি‌লাম হোয়াতে - জানিনা কেউ মজা করেছি‌ল কিনা। তবে যে প্রদেশের কান্ডারী প্রায়শই ভুলভাল ভাষণ দিয়ে থাকে‌‌ন, হতেও পারে এটা ঘটনা।



     
  • অরিন | 119.224.61.73 | ২৪ মার্চ ২০২৪ ২৩:৫৯529772
  • বিদেশেই বরং শুদ্ধ বাংলায় অনুবাদের চল, কলকাতাতে আমি যাচ্ছেতাই রকমের ভুলভাল বাংলা অনুবাদ দেখেছি ("অগ্নিশমন যন্ত্র উপলব্ধ আছে")। 
    তা সে ঠিকই আছে।
    বাংলা ভাষার গ্রামার বাঙালী তো লেখেনি। 
    মূর্খদের যা গতি। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০২:১৮529776
  • সমরেশ 
     
    ইউরোপে এথনিক ক্লিনসিং কথাটা প্রথম শুনলাম বলকান গৃহযুদ্ধের কালে (  কলকাতায় হয়তো এটি ঘটেছে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার পরে , ( উদাহরণ রাজাবাজার )। তার হাজার বছর আগে থেকে ইহুদি ঘেটোতে বাস করেছে সরকারি আদেশে । ইহুদিরা যখন ইংল্যান্ডে আসতে শুরু করেন, এ দেশে কেউ তাদের বাড়ি বিক্রি করত না, দাম যাই হোক না কেন।  আজকের উত্তর পশ্চিম লন্ডন ( যেমন গোলডারস  গ্রিন হেনডন ) মেঠো জমি ছিল,  যেখানে তাঁরা একদিন বাড়ি বানালেন ।  কিন্তু ওয়েম্বলি / সাউথহল কিভাবে গুজরাতি/পাঞ্জাবি  উপনিবেশে পরিণত হলো ? কোন সরকারি ফরমান ছিল না ;  তাহলে এই অঞ্চলগুলি ইংরেজশূন্য হলো কেন? তারা কি নিজেরাই চলে গেল ?  স্বেচ্ছায় ? বেশি দামে ঘর বেচে ? লেসটার হাই স্ট্রিটে নন গুজরাতি দোকান দেখা যায় না দেড়  বার্লিনের ক্রয়েতসবেরগ ঐতিহাসিকভাবে  জার্মান  ফোক ইতিহাসের অঙ্গ ( ক্রয়েতসবেরগার নেখটে জিনড লাঙ্গ – একটি গানের প্রথম লাইন) আজ সেটি তুর্কি উপনিবেশ ।  আজকের  জার্মান  রাজনীতিতে তুর্কি মূলের মানুষদের অবদান অনস্বীকার্য - জেম অজদেমির জার্মানির কৃষি মন্ত্রী।  

    আই কাম ফ্রম ব্যাক অফ দি বুশ (আমি গেঁয়ো মানুষ) একটি প্রচলিত ইংরেজি প্রবচন , যেমন ব্যাক অফ দি বিয়নড ( অনেক দূরের মানুষ )।  
     
  • হীরেন সিংহরায় | ২৫ মার্চ ২০২৪ ০২:২৫529777
  • অরিন 
     
    যথার্থ বলেছেন ! এই মাত্তর ১৭৭৮ সালে হ্যালহেড সায়েব বাংলা ভাষার গ্রামার ছাপলেন! তার আগে কি এই ভাষা প্রচলিত ছিল না ?! আমার এককালের ফ্ল্যাটমেট ( পরে স্টেট ব্যাঙ্কের এম ডি ) তামিলিয়ান শ্রীধর বলতো তামিল ভাষায় প্রথম যে বই পাওয়া গেছে সেটি ব্যাকরণের বই ! সে ভাষা সংস্কৃতের চেয়েও পুরনো এবং জীবন্ত ! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন