জার্মানিতে বাড়ির গেটের পাশে, ফ্ল্যাটের দরোজায় কেবল গৃহীর নামের বোর্ড সাঁটা থাকে না , তিনি যে ডক্টর, ইনগেনিউর, আরখিটেখট, রেখটসআনভালট ( উকিল) নিদেন পক্ষে উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী কোনো হের বা ফ্রাউ সেটি জানিয়ে খ্যাত হতে চান। সকালবেলা ফ্রাঙ্কফুর্টের স্পর স্ত্রাসের বাড়ি থেকে অফিস যাবার সময়ে ফ্রিডবেরগার লানড স্ত্রাসের ট্রাম স্টপে অপেক্ষা করার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে ফেলেছি লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দারা কে কোন কর্ম করেন, কোন ডিগ্রি ধারণ করেন। লন্ডন এসে ইস্তক দেখলাম এখানে বাড়ির মালিক তাঁর সংক্ষিপ্ত সি ভি জানাতে অনিচ্ছুক, , ফ্ল্যাটের দুয়োরে বড়জোর মিস্টার বা মিসেস অমুক । গোলডারস গ্রিনে সেটাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সারের গ্রামে , আমাদের পাড়া পড়শির বাড়ি নম্বর বিহীন , গেটে নাম লেখা – রাসটন লজ, ইনউডস, পার্কভিউ। কারো দেয়ালে মালিকের পরিচিতি সাঁটা নেই। পাস বা পেশা তো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফর অ্যান ইংলিশম্যান , হিস হোম ইজ হিস কাসল । তাঁরা খুবই প্রাইভেট পারসন। থাকতে দে না আপন মনে আমায়, অথচ বাড়ি জমি বিক্রির কিসসা সকলকে জানাতে চান ! জার্মানির ঠিক উলটো ! ... ...
মনে হয় জার্মানি, সুইজারল্যান্ড , অস্ট্রিয়া, লিখটেনস্টাইন, লুকসেমবুরগ - এই দেশগুলি একই ভাষা দ্বারা বিভক্ত! এদের সকলের মূল ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা গোষ্ঠীর প্রাচীনতম শাখা জার্মান , যা সুযোগ সুবিধে মতন ল্যাটিন গ্রিক শব্দ ধার করেছে, কেউ বেশি কেউ কম । মূল ব্যাকরণ এক মনে হলেও সুইসদের শব্দ চয়ন, শব্দবন্ধ আলাদা , উচ্চারণে যথেষ্ট বৈষম্য আছে । চিনি চিনি করি চিনিতে না পারি ! মানে লিখিত সুইস অনেকটাই বোঝা যায় কথিত সুইস একেবারে অন্য জগতের খেলা।এই নিয়ে হাসি ঠাট্টার অন্ত নেই । দুবাই বিজনেস লাউঞ্জে সেদিন এক মহিলার ফোনালাপ শুনছিলাম অনেকক্ষণ ধরে। তিনি থামলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ কিছু মনে করবেন না , সুইস জার্মান বলেছিলেন, তাই না ?’ হেসে ফেললেন। আমার বোধগম্য জার্মানে বললেন, কতটা বুঝলেন ? বললাম, এই যখনই মনে হচ্ছিল মোটামুটি বিষয়টার খেই ধরতে পারছি, তখুনি গভীরে তলিয়ে গেলাম ! ... ...
ঝাণ্ডা ওড়ে অনেক- বামপন্থীদের লাল, রাজপন্থীদের সাদা কালো লাল, প্যারা মিলিটারি/ ভগ্ন সৈনিকদের স্বস্তিকা, প্রজাতন্ত্রের প্রতীক কালো সোনালি লাল । শহরে সমাগত সৈন্য বাহিনী, যে যেখানে খুশি লুঠপাট করে। দীর্ঘ পরিচিত সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে , এখন চেনা পথে অচেনা পথিক । এক ঘোলাটে চোখে বার্লিনের মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখবার চেষ্টা করে । গণতন্ত্র? প্রাশিয়ার পার্লামেন্ট তো ছিল , কিন্তু সেখানে ভোট দেওয়ার অধিকার কেবলমাত্র প্রাশিয়ান পুলিশের কাছে ক্লিন চিট পাওয়া চব্বিশ বছরের বেশি বয়স্ক পুরুষদের । এবার নাকি বিশ বছরের ওপরে পুরুষ নারী নির্বিশেষে এক মাথা এক ভোটের অধিকার পাবেন। বয়স্ক জার্মান পুরুষেরা এই নবীন ভাবনার কড়ি সে কড়ি নিন্দা করলেন – মেয়েদের স্থান রান্নাঘরে, ভোটের ঘরে নয়। জলে স্থলে অন্তরীক্ষে তখন উত্তাল আরেক বার্লিন। সকল অশান্তি, ক্ষুধা, রাষ্ট্র বিপ্লবকে উপেক্ষা করে সেই বার্লিনে উন্মুক্ত শিল্প সঙ্গীত বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত , সেখানে বিরাজ করেন আলবার্ট আইনস্টাইন থেকে বিলি ওয়াইলডার, মাক্স লিবারমান থেকে আনা পাভলোভা ! ... ...
মুখের কথা শুনেই তিনি বলে দিচ্ছিলেন কে কোথাকার বাসিন্দা : লিসন গ্রোভ , হক্সটন, হ্যাম্পটন কোর্ট! তা এঁরা তো সবাই নেহাত লন্ডনের বাসিন্দা ! তাঁকে একটি একটি কঠিন কেস দেওয়া হলো -এই যে কর্নেল পিকারিং, ইনি নানা জায়গায় ঘুরেছেন , বলুন দিকি কোথায় কোথায় ? তাঁর মুখের কথা শুনে হিগিনস অবলীলাক্রমে বললেন, চেলটেনহ্যাম, হ্যারো , কেমব্রিজ, ইন্ডিয়া ! চমৎকৃত পিকারিং জানতে চাইলেন কোন মায়াবলে হিগিনস এই অসাধ্য সাধন করেন , হাও ডু ইউ ডু ইট? উত্তরে হিগিনস বললেন,সিম্পল ফোনেটিকস , দি সায়েন্স অফ স্পিচ ! তিনি তো বলেই খালাস কিন্তু আমাকে যে নেশাটি ধরিয়ে দিলেন সেটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারি নি । ... ...
টাইম মেশিনে চড়ে এই পৃথিবীর কোন শহরে ফিরে যেতে পারি, যাবো বার্লিনে । ঝরিয়া, পাইকপাড়ার বাড়িতে বসে বাল্য, যুবা কাল থেকে গত শতাব্দীর ইতিহাসের যে পর্ব এবং স্থানটি আমাকে আকৃষ্ট করে রেখেছে সেটি তিন দশকের বার্লিন। এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে পতন ও অভ্যুদয়ের ঘনঘটা আর কোথাও চোখে পড়ে নি । ওয়ান্স আপন এ টাইম নয়, এই সময়কালকে যেন ধরা ছোঁয়া যায় , এই তো সেদিনকার কথা! নিতান্ত ভাগ্যক্রমে ইতিহাসের এই ঘুরন্ত রঙ্গমঞ্চের সেট, উইংস,তার পিছনের দৃশ্য পট শুধু চোখে দেখি নি , মঞ্চের মাঝখান দিয়ে হেঁটেছি –কথা বলে ইতিহাস , ভিলহেলমস্ত্রাসেতে বিসমার্কের অফিস যেখানে বসে তিনি আফ্রিকা খণ্ড খণ্ড করছেন, হিটলার ওই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে মশাল যাত্রা দেখছেন , তিরিশে জানুয়ারি ১৯৩৩, এক নম্বর ঊনটার ডেন লিনডেনে আডলন হোটেল , পারিসার প্লাতস, গ্রুনেভালডের পথ যেখানে রাথেনাউ প্রাণ হারালেন, ফ্রিডরিখস্ত্রাসে স্টেশন, আপোলো থিয়েটার, আলেক্সান্দার প্লাতস , কুডামে সুবেশ নরনারী : বার্লিন অলিম্পিক স্টেডিয়াম এখনও দাঁড়িয়ে , এই তো আজকের সন্ধ্যায় বিসমার্ক আলেতে জ্বলবে আলবার্ট স্পেয়ারের ডিজাইন করা পথবাতি। ... ...
মিটিং বহুবিধ । ব্যাঙ্কের ভেতরে নিজের টিম মিটিং আপনার কন্ট্রোলে থাকতে পারে। বিভিন্ন দলের সরদার সেটির প্রযোজক ও পরিচালক । সমান লেভেলের মানুষের মিটিং একটু অন্যরকম , সেখানে গল্প গুজব অবশ্যই চলতে পারে। আমি সেখানে প্রধান হলেও এক ডজন সহকর্মী নিয়ে আমার টিম মিটিঙ ছিল অনেকটা ইনফরমাল । খোস মেজাজে বসে , বাঁধাধরা গতের বাইরে গিয়ে অনেক কিছু জানা শোনা হয়ে যায়, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যায়, আইন বাঁচিয়ে। সবাই সেখানে চেয়ারে আসীন কিন্তু কেউ বিশেষ কিছু বলতে চাইলে ( খবর কাগজের ভাষায় বক্তব্য রাখতে গেলে) বলতাম, দাঁড়িয়ে বলো ! তার একটা আলাদা ইমপ্যাক্ট আছে। কলকাতায় বা ফ্রাঙ্কফুর্টের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে টিম মিটিং হতো না । আমাদের মতন পদাতিকদের সঙ্গে সেনাপতিরা ট্যাকটিকস আলোচনা করতেন না, নির্দেশ দিতেন। । কর্তার ইচ্ছায় কর্ম । কর্পোরেট জগতে আমরা প্রত্যহ মিটিং ডেকেছি বা সেখানে অংশ নিয়েছি দিনে একাধিকবার, কিন্তু জুলিয়ানের টেকনিক সব ধারার বাইরে। কেন তিনি কাউকে বসার অনুমতি দেন না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন চেয়ারে আরাম করে বসলে তারা ইতি উতি তাকাবে, এটা ওটা ভাববে , মূল বিষয়ের ওপরে ফোকাস থাকবে না। তার চেয়েও বিপদের কথা উঠতে চাইবে না এবং পায়ের ওপরে পা তুলে বসে বেশ খানিকক্ষণ ভেবে চিন্তে এক সময়ে এমন একটা উটকো প্রশ্ন করে বাহাদুরি দেখাবে যার জবাব আমার কাছে নেই ! ... ...
রালফ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স তো এদেশের ? তাহলে নির্ঘাত জানেন থিওরেটিকাল ট্রেনিঙের সময়ে পথের নিয়ম কানুন শেখানোর সঙ্গে শিক্ষকরা আরও একটি সতর্কতা বাণী দিয়ে থাকেন- মনে রাখবেন জার্মানিতে বহু নারী পুরুষ অনিদ্রায় ভোগেন এবং জানলার পাশে বসে দুনিয়ার খবরদারি করে থাকেন । তেমনি একজন সে রাতে পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছেন অমুক নম্বর প্লেট ওলা পরশে গাড়ি থেকে একজন টলোমলো পায়ে নেমে উলটো দিকের এত নম্বর বাড়িতে ঢুকেছেন। পথে ঘাটে নয় , নিজের বাড়িতে বসে ড্রিংক ড্রাইভিং টেস্টে ফেল করেছে মাথিয়াস! বিস্মিত হবেন না । শিব ঠাকুরের না হোক কান্ট হেগেল মার্কসের আপন দেশে পার্ক করা গাড়িতে বসেও ড্রাইভিং লাইসেন্স হারানো সম্ভব । পরবর্তী ভ্রমণের সময়ে মনে রাখবেন। ... ...
ভূমিকা ম্যাথু আর্নল্ড বলেছিলেন একাকিত্বের সঙ্গে সাহচর্যের যোগ সাধন করে পত্রলেখা। লিখি বটে একা কিন্তু সেটি স্বগতোক্তি নয় , এমনকি একাকি গায়কের গানও নয়, এ যেন কারো সঙ্গে কথা বলা। প্রত্যুত্তর শুনতে পাই না তৎক্ষণাৎ কিন্তু জানি পাবো ! ঠিক সেই অভিলাষে আড্ডার এই ধুনিতে ধোঁয়া দেওয়া । ফরাসি অনুই , ইংরেজি স্মার্ট অথবা জার্মান গেম্যুটলিখকাইটের বাংলা হয় না। অভিমানের প্রতিশব্দ অন্য কোন চেনা ভাষায় পাই নি । বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সময়ে দেশটার পরিচয় করাতে গিয়ে টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল বাঙালি ( তখনও বাংলাদেশি শব্দটা চালু হয় নি) আড্ডা নামক এক বস্তুর প্রেমে আবদ্ধ , তাঁদের মতে এ শব্দের অনুবাদ হয় না । * আড্ডা আমাদের একান্ত আপন- সেখানে কোন নির্দিষ্ট বিষয় নেই , স্থান কাল পাত্র নেই : কেউ গুরু সেজে টঙে চড়তে চাইলে তাকে তৎক্ষণাৎ মাটিতে আছাড় দেওয়া, লঘুকে লঘুতর করাই প্রত্যহের আনন্দ । আড্ডা নিয়ম বর্জিত । তার চার ইয়ারি বা বারো ইয়ারি হতে কোন বাধা নেই। আড্ডার নেই কোনো সিলেবাস , ইতিহাস, ভূগোল, অতীত , বর্তমান । এখানে কেউ কিছুই হয়ে ওঠেন না তাই এখানে বসে কি হনু কি হনু ভাবার সুযোগ নেই ! আড্ডার শুরু বা শেষ খোঁজা বাতুলের কর্ম । আড্ডায় আছে খোলা হাওয়ার স্বাধীনতা , তাই দিয়ে শুরু করি বৈঠকি আড্ডার আসর । * Bengalis are given to a passion known as Adda which they claim couldn’t be translated in to any other language! ... ...
খুব স্পষ্ট না হলেও কাঁটাকলের অর্থনীতি বিভাগে আমরা ছিলাম দুটো দলে বিভক্ত – একদিকে আমার মতন পাতি বাংলা স্কুল, অনামধন্য কলেজ থেকে আসা বৃহৎ ছাত্র সমষ্টি , অন্যদিকে ইন্দ্রজিৎ দেবের মতন কয়েকজন ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল, সেন্ট জেভিয়ারস , প্রেসিডেন্সি কলেজের, আলাদা পেডিগ্রির কিছু উজ্জ্বল তারকা; তারা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে, জুতো পরে ক্লাসে আসে । সিঁথি বরানগরের বিদ্যেয় ইংরেজি বাক্য আমার মুখ থেকে বেরোয় না। কুণ্ঠিত ভীত সন্ত্রস্ত মনে তাদের দূর থেকে দেখি। হাঁদুর জন্যে ঠনঠনের বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার আসতো প্রতিদিন সাড়ে বারোটা একটার মধ্যে । ব্রাঞ্চে যোগ দেওয়ার প্রথম দিনেই হাঁদু জিজ্ঞেস করেছিল ‘ হ্যাঁরে দুপুরে কি খাবি ? ‘ আমার মায়ের পক্ষে সে রকম কোন ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল । জানালাম রাস্তায় কিছু একটা খেয়ে নেবো। পরের দিন হাঁদু বললে ‘ আয় আমার সঙ্গে বসে খাবি । মা বলে দিয়েছে আজ থেকে তোর জন্যেও খাবার আসবে রোজ ‘। হাঁদুর কাছে এটা দুপুরের খাবার , ‘লাঞ্চ ‘ নয় ! হাঁদু আর তনুশ্রী পুরী যাবে দু সপ্তাহের ছুটিতে। শুক্রবার অফিসে এসেই বললে ‘ যাক বাবা, দু সপ্তাহ এস পি সেনের মুখ দেখতে হবে না ‘ । তার পরেই চিন্তায় পড়ে গেল “ আরে, তোর খাওয়ার কি হবে ?’ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম ‘হাঁদু, ওটা আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব ‘ । বিকেল বেলা হাঁদু বললে, ‘ শোন, মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে , সোমবার থেকে তোর জন্যে খাবার আসবে , বুঝলি ? ‘ যে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে আসে সে বসে থাকবে তোর খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ি নিয়ে যাবে এমন মানুষও হয় ? ... ...
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম উন্মুক্ত নির্বাচনে নেলসন ম্যানডেলার অধিনায়কত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় কিন্তু সংবিধান সংশোধনের জন্য জরুরি দুই তৃতীয়াংশ নয় । তাই গঠিত হয়েছিল গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল ইউনিটি , যার আফ্রিকানার নেতা দে ক্লেরক এবার সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধী দলে বসার সিদ্ধান্ত নিলেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাজপাট কালো মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছেন কিন্তু বাইরে থেকে কাঠি দেবার সুযোগ ছাড়বেন কেন ?এই মহা অনিশ্চয়তার ভেতরেই আমাদের কাজ - তবে সব সময় আশা করেছি খদ্দেরের কাছ থেকে তার আদেশপত্র পাওয়া আর সেই প্রতিশ্রুত টাকা তাঁকে পৌঁছে দেওয়া অবধি বাজারটা , দুনিয়াটা যেন ঠিকঠাক চলে প্রভু ! আচানক কোথাও যেন লঙ্কাকাণ্ড না হয় , লগ্নিকারক যেন সেই বাহানায় হাত গুটিয়ে না ফেলে ! আমাদের ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হলো ডিল চলাকালীন ওই বাজারি টালমাটাল ( মারকেট আপহিভাল )- যেটা ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রার কারবারিদের ( ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডার ) কাছে একান্ত কাম্য । তাঁদের দৈনন্দিন প্রার্থনা হলো -এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই । বাজারের স্থিতাবস্থায় নাফা কম, অনিশ্চয়তায় লোকসানের আশঙ্কা থাকে গণ্ডার মারার প্রলোভন বিশাল। আমাদের কি হবে ? পালাবার পথ আছে ? আমাকে একদা এক শুভানুধ্যায়ী বলেছিলেন যদি কখনো দেখো একজন গুলিভরা বন্দুক তার মাথায় ঠেকিয়ে বসে আছে, তাকে সাহায্য করার কোন প্রয়োজন নেই, ট্রিগারটা সে নিজেই টিপতে পারবে। ... ...