জীবনের হাল না ভেঙ্গে যে নাবিক সঠিক দিশায় উপনীত হয়ে নৌকো বা জাহাজ থেকে নেমে কোন বন্দর অতিক্রম করেন, সেই অভিযানকে ইতালিয়ানে বলা হয়েছিল – পেরিয়ে বন্দর বা ‘ পাসে পোরত’ যা থেকে পাসপোর্ট কথাটা এসেছে। ফরাসিরাও অবশ্য এ শব্দের পিতৃত্ব দাবি করে থাকেন বলে শোনা যায় । জার্মান সহ বহু ইউরোপীয় ভাষায় তার নাম শুধু ‘পাস’- অতিক্রম । ... ...
সিটি ব্যাঙ্কে আমার বস জো ম্যাকেভিতসের বাড়ি গেছি হল্যান্ড পার্কে। । তাঁর স্ত্রী কিম, কোরিয়ান; তিনি বান্ধবী লিনের সঙ্গে হ্যারডসে শপিঙের গল্প বলছিলেন। সব কিছুর দাম যথারীতি উচ্চাঙ্গের । বস্তুটি যাই হোক না দোকানটার নাম যে হ্যারডস। তা তিনি অগ্নি মূল্যের একটি বিছানার চাদরের সেট নিয়ে সেলস কাউনটারের মহিলাকে বলেছেন , আপনি দামটা চার পার সেন্ট কম করুন। এমন প্রশ্ন সে মহিলা কখনো শোনেন নি - জ্ঞান হারানোর আগে বলেছেন , সেকি ? দাম যা লেখা আছে সেটাই তো দেবেন । কিম তাঁকে বলেছেন , ক্রেডিট কার্ডে কিনলে আপনাদের তিন চার পার সেন্ট কমিশন দিতে হয় । আমি ক্যাশ দেবো , ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে যা দিতেন তার চেয়ে নয় এক পার সেন্ট কম ডিসকাউনট দেবেন। বারগেনিং বা দর দস্তুরের মক্কা, জেরুসালেম, বারাণসী দেখেছি । তার নাম ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার ( কাপালচারসি – ঢাকা বাজার ), তিরিশ হাজার বর্গ মিটার ব্যাপী পাঁচশ বছরের পুরনো দুনিয়ার প্রথম শপিং মল। তার শাখা প্রশাখা দেখেছি সারায়েভো , তিউনিস - কোথায় নয়। দিনে তিন লক্ষ মানুষের ‘ফুট ফল’ হয়; এ হেন জিনিস নেই যা আপনি এখানে পাবেন না । তার চেয়েও বড়ো কথা আপনি যা কিনতে আসেন নি , যার অস্তিত্ব সম্বন্ধে আধ ঘণ্টা আগেও আপনার কোন জ্ঞান গম্মি ছিল না প্রচুর দরাদরি করে সেই রকম কিছু একটা কিনে দাঁও মেরেছেন ভেবে আপনি বীর দর্পে গ্র্যান্ড বাজার পরিত্যাগ করে গালাতা ব্রিজের দিকে যাবেন। ... ...
গাড়ির ড্যাশ বোর্ডের স্পিডোমিটার দেখলে জানা যায় তাঁর উচ্চতম গতি বেগ ঘণ্টায় দুশো কিলোমিটার । এই সব মূল্যবান তথ্য জানিয়ে বিক্রেতারা মহার্ঘ্য গাড়ি বিক্রি করেন । গাড়ির শো রুম থেকে বেরুলেই চোখে পড়ে নোটিস - শহরের ভেতরে গাড়ির গতির উচ্চসীমা ঘণ্টায় বিশ মাইল, একটু দূরে গেলে তিরিশ। মোটরওয়েতে ৭০ মাইল ( ১১২ কিমি ) গতি অনুমোদিত । সেখানে কদিন যাই ? যেখানে আমার নিত্যিদিনের ঘোরাঘুরি - হাটে বাজারে , বন্ধু সন্দর্শনে সেখানে আমার গাড়ির টিকিটি বাঁধা আছে তিরিশ বা বড়জোর পঞ্চাশ মাইল বেগে । প্রয়াত ভাস্করদার ( ভাস্কর দত্ত , সুনীলদার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু) পুত্র অর্ণবের বাড়ি থেকে কিছু সঞ্চিত বই সংগ্রহের জন্য উত্তর লন্ডনের স্টোক নিউইংটন গেলাম গত রবিবার - এককালের সেই বিখ্যাত ওয়েস্টওয়ে আকীর্ণ হয়ে আছে অজস্র ক্যামেরায়, ওয়েম্বলি, হ্যামারস্মিথ থেকে কিংস ক্রস ছাড়িয়ে গাড়ি চলে ধীরে মন্দ গতিতে, আইন বাঁচিয়ে । ... ...
সকাল থেকে অন্ধকার হয়ে আছে আকাশ। কে বলবে এটা মে মাস ? বুথের ভেতরে ছ জন কর্মী , হলে আমরা চারজন । শুধু ভোটার কম পড়িয়াছে ! অনেকদিন আগে দেশে দেখা একটা ছবি মনে পড়ে গেল – আই এস জোহরের একটা কলাম ছিল ফিল্ম ফেয়ারে , তাতে কার্টুন :ফার্স্ট ক্লাস কামরায় একজন যাত্রী বসে আছেন তাঁকে ঘিরে কন্ডাক্টর , চা ওলা সহ আরও কয়েকজন । নিচে মন্তব্য - উই অলওয়েজ হ্যাভ মোর পিপল সারভিং ওয়ান কাসটমার !সারা দেশের ভোট গণনা শেষ হতে সকাল। প্রিসাইডিঙ অফিসার একেক বার মাইক দখল করে ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড ফলাফল ঘোষণা করেন । দশটি আসনের ন’টিতে লিব ডেম বিজয়ী। সবচেয়ে বড়ো সাফল্য- বারো বছরের সিটিং কাউন্সিলর ন্যাপহিলের পোস্ট মাষ্টার সাজ হুসেনকে হারালেন স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন চেহারা জন পিয়ারস । তিনি ও আমি একত্রে জন গণেশের দুয়ার প্রদক্ষিণ করেছি কিন্তু ভাবতে পারি নি ষাট পেরুনো এক রিটায়ার্ড আই টি এঞ্জিনিয়ার সমাজে পরিচিত মুখ এক পোস্ট মাষ্টারকে দুশো ভোটের ব্যবধানে তাঁর আসন থেকে সরাতে পারবেন ! বোধহয় লেবার প্রধান মন্ত্রী হ্যারলড উইলসন বলেছিলেন, এ উইক ইজ এ লং টাইম ইন পলিটিক্স। ... ...
RISE TO VOTE SIR রাত্তির নটার সময়ে আমাদের পাশের গ্রাম ব্রুকউডের কনট এভিনিউর বাড়িতে বাড়িতে বেল বাজিয়ে যখন গৃহ কর্তা বা গৃহ কর্ত্রী ভোট দিয়েছেন কিনা সেটা যখন জানতে চাইলাম , বহু কাল আগে পড়া শরৎচন্দ্র পণ্ডিত বা দাদা ঠাকুরের সেই বিখ্যাত প্যালিনড্রমটি মনে পড়ল -রাইজ টু ভোট সার! উলটো দিক থেকে পড়লেও সেটা রাইজ টু ভোট সার থেকে যায় ! উওকিং কাউনসিলে দশটি ওয়ার্ড (বাইফ্লিট ও ওয়েস্ট বাইফ্লিট ,কানাল সাইড, গোল্ডসওয়ারথ পার্ক, হিথল্যান্ডস, হো ভ্যালি, হরসেল ,ন্যাপহিল, মাউনট হারমন, পিরফোরড ,সেন্ট জনস) মোট ভোটার সংখ্যা সব ওয়ার্ডে প্রায় সমান , টোটাল আশি হাজার ; তিরিশ জন পৌরপিতা ও মাতা , প্রতি বছর দশজন করে নির্বাচিত হন। চার বছরের কার্যকাল, চতুর্থ বছরে ভোট হয় না। যদিও কারো বাড়ি থেকে মতদান কেন্দ্র ৫০০ মিটারের বেশি দূরে নয় , শতকরা চল্লিশ জন কষ্ট করে পোলিং স্টেশনে আসেন কিনা সন্দেহ । ইউরোপের একমাত্র দেশ যেখানে ভোট হয় কাজের দিনে, বৃহস্পতিবারে। ... ...
এই চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে কে কোন পোশাক পরবে , বিশেষ করে মহিলারা, তা মিটিং ডেকে ঘোষণা করতে পারি না, বোর্ডে লিখে দেওয়া অকল্পনীয় । তুল কালাম ঘটতে কতক্ষণ । দৈনিক সান পত্রিকায় বেনামে লেখা হবে , “ লন্ডনের ব্যাঙ্কে স্বৈর শাসন , ভারতীয় মূলের অফিসার দ্বারা নারী মর্যাদার অপমান “। আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি । অতএব অত্যন্ত ট্যাকটফুলি আমার তৎকালীন সেক্রেটারি , বারমিংহামের মারিয়া লালিকে কে বললাম, তুমি এটা একটু হাওয়ায় ভাসিয়ে দাও দিকি। আমি বলেছি কেউ যেন জিনস অথবা ট্রেনার জুতো পরে না আসে । মেয়েদের পোশাক সংযত , আর ছেলেদের ক্ষেত্রে টাই বাদে সুট পরলেই সেটা ইনফরমাল হয়ে গেলো অথবা কম্বিনেশান – রঙ মিলিয়ে জ্যাকেট ও ট্রাউজার। টি শার্ট আউট অফ কোয়েসচেন , পুরো হাতা শার্ট কিন্তু টেকনিকলার জামা বাদ । কালো বাদামি যাই হোক না কেন, পরতে হবে বন্ধ জুতো । ... ...
যুদ্ধের পরে এই চোদ্দ বছরের অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট এবং বামপন্থী দলগুলি অরাজকতা সৃষ্টি করার ফলে দেশের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছে । গণতন্ত্রের যুগে ব্যক্তিগত ধন সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব নয় , এখন প্রয়োজন সবল নেতৃত্ব ও নতুন চিন্তা। সেটা আমি খুঁজে পেয়েছি জাতীয়তাবাদ এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শক্তির ভেতরে । সামনের লড়াইটা বাম বনাম দক্ষিণের সম্মুখ সংগ্রাম । আমরা চাই ক্ষমতা দখল করে প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করতে কিন্তু এই লড়াই ততদিন স্থগিত রাখতে হবে যতদিন না আমরা একচ্ছত্র ক্ষমতা আয়ত্ত না করছি। মনে রাখবেন বামপন্থীদের হাতে আপনাদের ধন সম্পদ জমি জিরেত কল কারখানা কিছুই সুরক্ষিত নয় , একবার সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে চেয়ে দেখুন! অর্থনীতি বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যা কিছু বরণীয় তা সম্ভব হয়েছে কোন দলীয় রাজনীতি নয় , একক ব্যক্তিত্বের ভাবনা ও চিন্তায় , নির্বাধ শক্তি ও ক্ষমতার বলে। সভাগৃহে তখনও আসীন গুম্ফ শোভিত ডক্টর হায়ালমার শাখট , যিনি পরে আবার রাইখসবাঙ্কের প্রেসিডেন্ট এবং ইকনমি মন্ত্রী হবেন । তিনি এতক্ষণ কোন কথা বলেন নি । হিটলার এবং গোয়েরিং বিদায় নিলে তিনি মুখ খুললেন “ এই ভোট যুদ্ধ জিততে গেলে , পার্টির হিসেব অনুযায়ী আমাদের অন্তত তিরিশ লক্ষ রাইখসমার্ক দরকার ( আজকের হিসেবে দু কোটি ইউরো অথবা একশ আশি কোটি টাকা) । এবার আসুন ক্যাশ কাউনটারে !” বাঘের পিঠে সওয়ার যখন হয়েছেন তখন নেমে পড়ার প্রশ্ন ওঠে না। ক্রেডিট কার্ড অনেক দূরে , চেক বই কেউ সঙ্গে আনেন নি । কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করার অধিকার তাঁদের ছিল – তাঁরা বিশাল প্রতিষ্ঠানের মালিক বা শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত । একের পর এক শিল্পপতি ডক্টর শাখটের চাঁদার খাতায় সই করলেন ... ...
জার্মানির ভাবী পরিত্রাতার দুর্বার জয়রথ ছুটে চলে সারা দেশে । মন্ত্রমুগ্ধ জনতা সভায় হাজির হয় তাঁর দুটো কথা শোনার জন্য – তিনি বারবার বলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি জার্মানিকে ফিরিয়ে দেবেন তার গর্ব, ষাট লক্ষ বেকার মানুষকে দেবেন কাজের সুযোগ , দেশ গড়বেন নতুন করে । যুদ্ধে পরাজিত অপমানিত জার্মান জাতিকে দেবেন সামরিক সক্ষমতা । তারা আবার মাথা তুলে জগতসভায় দাঁড়াবে। জনতা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দকে আঁকড়ে ধরে । তাদের নিজস্ব ভাবনা চিন্তা লুপ্ত হয়েছে । নেতা একবার থামেন । জনতা দাবি করে আরও কিছু বলুন, আগে কহ আর । লক্ষ কি ? এক বিপক্ষ এবং সকল প্রতিরোধকে নির্মূলে বিনাশ করা দুই ভাইমারে তৈরি সাংবিধানিক বেড়াজাল চূর্ণ করা তিন এমন এক দেশ গঠন করা যা হবে হাজার বছর স্থায়ী তৃতীয় সাম্রাজ্য ( থার্ড রাইখ ) ... ...
দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় । মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩ শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয় মাস বাদে । ২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার । লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন ... ...
নিহুস বললেন, ব্যালট পত্রে টিক দেবার জায়গা দুটো -প্রার্থীর নাম এবং তার পাশে দলের নাম। সে দল ঐ প্রার্থীরই হতে হবে এমন মানে নেই; ধরুন আপনি ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের প্রার্থীকে ভোট দিলেন । তাঁকে আপনার পছন্দ কিন্তু আপনি রাজনীতিতে রাস্তার বাঁ দিকে হাঁটতে ভালবাসেন , তাই সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল আপনার বেশি পেয়ারের । অর্থাৎ সরাসরি ভোটটা দিলেন ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির কাউকে কিন্তু বৃহত্তর অর্থে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলকে ভালবেসে স্বচ্ছন্দে সেখানে টিক মেরে দিলেন। সরাসরি প্রার্থীর বাইরে প্রত্যেক পার্টির একটা লিস্ট তৈরি করা থাকে, যে দল যত বেশি পারসেন্ট ভোট পাবে তাদের অধিকার তত বেশি বিধায়ক পাঠানোর। কিন্তু হিসেবটা এখানেই শেষ নয়; ঐ যে সরাসরি যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের ভোট সংখ্যার সঙ্গে জোড়া হবে পার্টি যে ভোট পেয়েছে ( ছবিতে দেখুন, দ্বিতীয় লিস্ট ) এই দুটো মিলিয়ে যে দল ৫০.১ % ভোট পেয়েছে সে দল সরকার গঠন করতে পারে । তাদের একার মুরোদে না কুললে কোয়ালিশনের গাঁটছড়া । ... ...