এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অন্য যৌনতা  শরৎ ২০২১

  • শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত

    সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
    অন্য যৌনতা | ১৫ অক্টোবর ২০২১ | ৩৭২৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৫ জন)
  • স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১
    মূল ছবি: Anca Silvia Orosz


    **
    আজকাল B.Sc. Nursing পাস করে অনেক ভাল ছাত্রী চাকরিতে আসে।
    কয়েকবছর আগের কথা। প্রাত্যহিক rounds-এর সময় তেমন একজন নার্সিং-স্টাফের টেবিলে ফাইল-ইত্যাদির সঙ্গে দেখি, পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্তের কবিতার বই।
    কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম - শিবানী, তুমি লেখো? যশোধরা-র লেখা পড়েছ?
    উত্তর এল: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। যশোধরা বাগচি, যশোধরা রায়চৌধুরী – দু’জনের লেখাই।
    এত ভাল লেগেছিল সেদিন। জেন-এক্স না কি জেন-ওয়াইদের মননে বাঙলা সাহিত্য আর ভাষা এখনো তাহলে সবটাই ভেসে যায়নি।

    কিছুদিন বাদে সেই মেয়েটি, শিবানী, আরেকটি সমবয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছিল আমার কাছে।
    - স্যার, ও আমার রুমমেট কৃষ্ণা। আমরা একসঙ্গে পেয়িং-গেস্ট হয়ে থাকি ভবানীপুরে। ও রেলের চাকরির পরীক্ষার জন্য কোচিং নিচ্ছে। খুব গুণের মেয়ে, স্যার। ভাল ছাত্রী, কি দারুণ লেখে। ভাল গানও গায়। তবে বড় দুর্বল৷ পেটে ব্যথা লেগেই থাকে। আপনি ওর একটু ট্রিটমেন্ট করুন না স্যার।
    কৃষ্ণার সাথে কথা বলে, প্রাথমিক নিরীক্ষার পরে রক্ত-ইত্যাদি পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে কয়েকদিন পরে আসতে বললাম।

    সপ্তাহ খানেক পরে সে একাই এল কাগজপত্র নিয়ে। একটু রুক্ষ, তবে বড় মায়াময় মুখখানি ছাব্বিশ বছরের মেয়েটির। বেশ ভয় পেয়ে গেছে।
    এন্ডোস্কোপি রিপোর্ট বলছে Multiple Erosions in the Duodenum – পাকস্থলির কাছাকাছি বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ক্ষত হয়েছে... রক্তপাত হতে পারে, এমনকি বেড়ে গিয়ে ‘আলসার’-এ পর্যবসিত হতে পারে সেগুলি। শরীরে রক্তাল্পতা রয়েছে। রয়েছে অপুষ্টির পায়ের ছাপ।
    - এই মেয়েটা, এমন করলে চলবে? শোন্, তোকে ‘তুই’ না বললে ঠিক বকাঝকা যাবে না। সময় মত না খাওয়া দাওয়া করলে, একটু ভালমন্দ না খেলে, তো বড় অসুখে পড়বি এরপর! শুধু বই নিয়ে পড়ে থাকিস নাকি?
    - আমি পড়ি আর পার্ট টাইম কাজ করি স্যার। বিলেতেও তো ছেলেরা খাবার দোকান, ‘গ্যাস স্টেশনে’ কাজ করে – তাই না?

    পেট্রল যে সে দেশে গ্যাসোলিন... ‘গ্যাস’ খুব বেশি ছেলেমেয়ে এই মুল্লুকে এখনো তা বলে না। এই ছেমরি কয় কি?
    - তুই কোথায় পার্ট টাইম জব করিস রে?
    - সাধারণত পিজি হাসপাতাল – রেড রোড ক্রসিং-এ। তবে অন্য জায়গায়ও যেতে হয়, স্যার
    - বুঝলাম না
    - আমি ট্র‍্যান্স-সেক্স... হিজড়ে স্যার
    বেতের ফলের মত ম্লান চোখ তুলে তাকাল কৃষ্ণা।
    প্রায় অবচেতনের শব্দস্তর পার হয়ে আমার কন্ঠে উঠে এল – “হলদে গোলাপ।”

    মেয়েটির মায়াময় মুখ এক নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। কন্ঠস্বরও।
    - ওই নেকুপুষুমনু শব্দ অনেকবার শুনেছি স্যার। আমাদের গাড়ির কাছে আসতে দেখলেই কাঁচ উঠিয়ে দিয়ে মিথ্যে ফোনে ব্যস্ত হন সাহেব-মেম, নয়তো কপালে হাত ঠেকিয়ে মাফ করতে বলেন... ফাটা নোট চালিয়ে দিয়ে মনে মনে হাসে লোকে। হলদে, সাদা, লাল – কোন গোলাপই নই স্যার। আমরা হলাম শল্লকী... সারা গায়ে কাঁটা গাঁথা শজারু। নিজের মা সকালে উঠে আমার আর ভাইয়ের মুখ দেখত না। সোজা গোয়াল ঘরে গিয়ে এঁড়ে, বকনা – যা হয় দেখে আসত – এদের কি দোষ।

    এক নিঃশ্বাসে কথা বলে দম নিল সেই মেয়ে। তারপরই একেবারে আচমকা আমার পায়ে হাত দিয়ে বলল, “আমায় ক্ষমা করবেন স্যার। আমার একেবারে উচিত হয়নি আপনাকে এমন কথা বলা। বড় ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।”
    - ওঠ রে মেয়ে। অমন না হলেই আমি হয়তো আশ্চর্য হতাম। ওষুধগুলো খাস নিয়মিত। বেশি সময় খালি পেটে থাকিস না আর... আর একদিন এসে আমায় একটা গান শুনিয়ে যাস।
    একগাল হেসে বলল, “আমার গলা কিন্তু অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় আর উষা উত্থুপ দিদির কম্বো! তাও শুনবেন স্যার?”
    উত্তর দেওয়ার আগেই দু’চোখ বুজে দু’কলি গেয়েও দিল,
    ‘সুধাসাগরতীরে হে, এসেছে নরনারী সুধারস পিয়াসে॥
    শুভ বিভাবরী, শোভাময়ী ধরণী, নিখিল গাহে আজি আকুল আশ্বাসে॥’
    দু’চোখের ঘাটলায় বড় ফোঁটার জল নিয়েই দৌড় লাগাল শল্লকী।
    এমন জব্দ এই ডাক্তার বোধহয় আর হয়নি।

    **
    উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামের বামুনের ঘর কালো করে এলো যমজ ‘কিন্নর’ – ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে। কতদিন লুকিয়ে রাখা যায়? যায়ওনি। ওই সব গাঁয়ে-ঘরে শজারু বড় অলুক্ষুণে প্রাণী। তাই প্রতিবেশীরা আদর করে দু’জনের নাম দিল - শজারু আর সজারু। দু’টো কিন্তু আলাদা জন্তু স্যার। Porcupine আর Hedgehog - কাঁটাসর্বস্ব। কাঁটাচুয়া।
    ভাইটা ছিল খানিক গোঁয়ার। লোকেরা (পড়ুন আত্মীয়, বন্ধু, ইস্কুলের শিক্ষক, এমনকি তাদের একমাত্র বাবামশাই) তার সারবত্তাহীন পৌরুষ নিয়ে ঠাট্টা করত। দু’টো নাম বড় চালু ছিল – ম্যাড়ার (ভেড়া) ঢোঁশ আর মাইচা।

    একদিনের কথা বলি।
    বাড়ির সামনে প্রচুর ভিড় জমে গেছে। ভাই বাইরে মাঠে রোদের মধ্যেই উবু হয়ে বসে মাঠের ঘাস ছিঁড়ছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে কিছু বয়স্ক মানুষ কিছু বলছে। বোঝাচ্ছে কিছু মনে হল। সে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলছে না। মায়ের গলা থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে আর ভাইয়ের গলা। দু’জনেই দু’জনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। অনেকেই মুখ টিপে টিপে হাসছে। চোখাচোখি করছে। ভাই আবার সেই একটা নাইটি পরে, ওড়নার মত করে গামছাটা নিয়ে, ঠোঁটে লিপস্টিক মেখে, চুড়ি পরে, হাত ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে তুমুল ঝগড়া করছে।

    এর সূত্রপাত এবারের চড়কের মেলার পরেই। এবারেও ভাই মায়ের বেনারসি পরে পার্বতী সেজেছিল। প্রতি বছরই সাজে। বাবা ছিল চড়কের সেক্রেটারি। তাই তাদের পার্ট বাঁধাই থাকত ফি-বছর। বোন একবার ছোটবেলায় রাম সাজার পর, ভালো লাগেনি বলে আর করেনি। এখন সে কলেজে পড়ে, সেকেন্ড ইয়ার, ইতিহাসে অনার্স। ভাই উচ্চমাধ্যমিক ফেল। মেয়েলি স্বভাবের জন্য কম মার খায়নি মায়ের কাছে। তার মা অনেক বুঝিয়েছে, “কপাল করে পুরুষ হয়ে জন্মেছিস... মেয়েমানুষের যে কি জ্বালা রে... যে মানুষের নিজের ইচ্ছা বলে কিছু নেই, সে মানুষের জীবনের কি দাম বল? সে তো অন্যের ইচ্ছার কারাগারে জীবন কাটিয়ে দেয়...” কিন্তু কে শোনে কার কথা? নিজের নামটা পর্যন্ত বদলিয়ে মেনকা করতে চায় সে। হাইরোডের ধারে কয়েকটা বার আছে, সেখানে নাচতেও গেছে অনেকবার।

    ভাই মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে এখন। চিৎকার করছে আর বলছে, “হে ঠাকুর, এ কি জন্ম দিলে! আমার না একূল হল, না ওকূল।” তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছে, “তুই মাগী কি বুঝবি এ জ্বালা... নিজে তো পুড়িসনি... আমি যে পুড়ে ছারখার হলাম রে মা...”
    মা হঠাৎ থমকে গেল। যেন হঠাৎ কোথাও একটা ঠেক খেল কিছুতে। চারদিকে তাকিয়ে দেখল লোকে লোকারণ্য। বাচ্চা-বুড়ো-মাগী-মদ্দা সব ‘হাঁ’ করে তাকিয়ে... যেন যাত্রাপালা লেগেছে। বিষ নজরে চারদিকে তাকিয়ে একবার ঘরের ভিতরে গেল। তারপর কয়েকটা শাড়ি-সায়া-ব্লাউজ এনে উঠোনে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, “যা বেরিয়ে যা ঘর থেকে, দূর হয়ে যা।” ঘরে ঢুকে দরজাটা ধড়াম করে ভিতর থেকে বন্ধ করে দিল।

    উৎসাহী জনতার চোখেমুখে প্রথমে একটা বিহ্বলতা ফুটে উঠেছিল, কেউ কেউ ‘আহা-উহু’ও করছিল, কিন্তু হঠাৎ পালাটা এমন শেষ হয়ে যাবে, কেউ ভাবতে পারেনি। এই গ্রামে এমনিতেই পুকুরের জলের মত জীবনযাত্রা। স্রোত নিজের বলে কিছু নেই। খানিক ঝড়বাতাসে জলে যে দোলা লাগে, সেইটুকু আমোদের একরত্তিও হাতছাড়া করতে চায় না গ্রামের কেউ। যেন কুকুর-বেড়ালগুলোও সতেজ হয়ে ওঠে। এমনিতে গ্রামে কোন্দলের অভাব নেই। তবে সে সব হঠাৎ হাওয়া। লোকে আজকের ঝড়টাকে রীতিমতো একটা কালবৈশাখী আশা করেছিল। তাই তার এমন আচমকা সমাপ্তি কারোরই মনে ধরল না। কেউ বলল, যাই রান্না চাপাই, কেউ বলল, শহরে কাজ আছে, কারোর ধান মাড়াই আছে... ইত্যাদি ইত্যাদি।

    মোটামুটি একটু ফাঁকা হলে বোন উঠোনে এসে দাঁড়াল। ভাই তখনও উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে। ফোঁপাচ্ছে বোঝা গেল। শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। মায়ের একটা শাড়ি বুকের কাছে আঁকড়ে শুয়ে আছে।
    বোন ভাইয়ের কাছে হাঁটু পেতে বসল। বলল, “ভাই ওঠ... আর পাগলামি করিস না।” তার গলাটা একটু ধরা ধরা। সে তার মায়ের রাগের কারণটা বোঝে। তার মা বামুন পাড়ার মেয়ে। তার বাবার সাথে পালিয়ে বিয়ে করে। সেই থেকে তাদের মামাবাড়ির দশ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও একদিনও যায়নি। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল, তার ছেলে মানুষ করে দেখিয়ে দেবে যে চাষার ঘরেও ছেলেমেয়ে মানুষ হয়। কিন্তু হল কই? বোন আগে ভাবত চিকিৎসা করালে দাদা ঠিক হয়ে যাবে। এখন বোঝে, এ ঠিক হওয়ার নয়।

    মা বাবাকে প্রায়ই বলে, “কি যে করে হিজড়েটা, আমি আগেই বলেছিলাম, ওকে হিজড়েদের দলে দিয়ে দাও। তা না... লেখাপড়া শেখাবে... ন্যাকামি যত...”
    পাশের ঘরের কথাবার্তা চলত – সে বাবার কোনো উত্তর শুনতে পেত না। তবে পরেরবার চড়কে ভাইয়ের আর পার্বতী সাজা হল না। সে বিষ খেয়েছিল। লোকে বলে তার মা-ই নাকি খাইয়েছিল।
    বোন অবিশ্বাস করেনি।

    এর বছর খানেক বাদে, বিএ পরীক্ষায় পাশ করেই বোন বাড়ি থেকে পালাল। এসে উঠল চেতলার হিজড়া মোড়ের ‘লাভ ইন টোকিও’-র ঘুপচি কেল্লায়। পরিপূর্ণ হিজড়ের অন্তরবাসে আজ সে অনেক শান্ত।

    **
    কৃষ্ণা নিয়ে গিয়েছিল গুরু-মায়ের অসুস্থতার সময়।
    ইট-পাতা গলিটায় পাশাপাশি দু’জন লোক হাঁটতে পারবে না। সাপের মত এঁকেবেঁকে যাওয়া সেই গলি দিয়ে মিনিট সাতেক ঢোকার পর ডান দিকে একটা ভাঙা কাঠের দরজা। ঠেললেই ছোট উঠোন, একপাশে টিউবকল। উঠোন ঘিরে তিন দিকে তিনটে একতলা, টালির-ছাদওয়ালা মলিন ঘর, তাতে এক চিলতে করে দালান। একটা দালানের ধার ঘেঁষে বৃদ্ধ-অসুস্থ সোনা হিজড়ে শুয়ে আছেন, তাঁর কাঠের লাঠিটা একধারে রাখা। পাশে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে গুরুমা পুতুল হিজড়ে। সাদা চেক কাটা লুঙ্গি, সাদা গেঞ্জি। সাদা সুতির ওড়নায় মাথায় ঘোমটা দেওয়া। ওড়নার বাকিটা ঊর্ধ্বাঙ্গে জড়ানো। দু’হাতের পাতায় গাঢ় মেহেন্দি। নিজে বলেন, তাঁর বয়স পঞ্চাশ। মুখের চামড়া এখনও টানটান, উজ্জ্বল। চেহারায় লাবণ্য আর ব্যক্তিত্ব।
    এককালের বিরাট দাপুটে রিং লিডার – লাভ ইন টোকিও।

    দালানের উল্টো দিকে কোনাকুনি বিদ্যুৎহীন টালির চালের ঘরের দরজার বাইরে স্টোভ ধরিয়েছেন আজনুরা হিজড়া। খিচুড়ি হবে, সঙ্গে ডিমসেদ্ধ। পুতুল মাঝে মাঝে স্টিলের পিকদানিটায় পিক ফেলছেন।

    “নদীর নাম কানাইখালি। দুই পাড়ে ঘন করচ বন। প্রায় আধঘন্টা লাগল এমন দু’পাশের বনের মাঝ দিয়া পার হইতে।
    এই বন নদীর দুই তীরে। নদীর তীর ছাড়াও আশেপাশে এমন বন আছে সাত আটটা।
    এই বনগুলি পড়সে সুনামগঞ্জ জিলার জামালগঞ্জ থানার ফেনারবাঁক ইউনিয়নে।
    সুনামগঞ্জ থেইকা জামালগঞ্জ হইয়া কারেন্টের বাজারের নৌকাঘাটে নৌকা লইয়া পঁয়তাল্লিশ মিনিট – একঘণ্টায় এই দ্যাশে আসা যায়।
    হাওর মাঝে জলে ভাসা এই বনের মধ্যেই জলে নামসিলাম।
    প্রায় বুক-পানি। কয় দিন আগে হয়তো সাঁতার দিতে হইত। এই পানির নীচে গাছের ডাল, গর্ত সবই আসে। এই ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও পলাইসিলাম বাপের ঘর থিকা।
    বাপ ছিল উস্তাদ পটুয়া। মাইয়া হিজড়া জাইনাও কাজ শিখাইসিল প্রাণ ঢাইলা। - ‘মনা, রোজগার পাতির জইন্য তোমারে হাতে তালি দিতে অইব না। মাটির তালে তালি দিও। পুতুল, মূর্তি, ইস্টাচু বানাইবা।’
    বাপে মরলো টাঙ্গুয়ার হাওরে সাপের কামড়ে।
    চাচারা দস্তুরি লইলো মুন্না মিঁয়ার টমি পার্টিতে নাচাইবার। আমি পলাইলাম বাঁচোনের লাইগা।”

    “ডাক্তার স্যার আপনে দ্যাশের লোক, নিজের লোক – তাই অনেকদিন পরে নিজের বুলি কইলাম।” পরক্ষণেই হাতজোড় করে বললেন,
    “মাপ কইরেন। আমাগো কোন দ্যাশ নাই... নিজের লোক হয় না। বৃহন্নলাই কন, কি হিজড়া, মরণের পরে বাঁশের তিনকুনা মাচাই হইল তার দ্যাশ।”

    ষোলো বছর বয়সে দাসনগরের এক হিজড়ে গুরুমা চম্পাদেবীর কাছে চলে আসেন। শুরু হয় নতুন জীবনের। লাভ ইন টোকিও। ১৯৯৭ সালে চম্পাদেবী মারা যান। গুরুমা হন পুতুল। ঠেক বদল করে কলকাতার চেতলায় চলে আসেন। তত দিনে একে একে ন’জন শিষ্যা হয়েছেন তাঁর।
    “আসলে নিজের বাপ-মা-ই আমাদের ফেলাছড়া করেছে। আজ পর্যন্ত কারও চোখে একটু শ্রদ্ধা দেখলাম না। শুধু গালাগাল, মস্করা। যেন আমরা অদ্ভুত কোনও জন্তু। কেউ একটু ভাল করে কথা বলেনি কখনও।” গলা ভেঙে যাচ্ছিল পুতুল মায়ের।

    পিকদানিতে আরও এক বার পিক ফেলে বলতে থাকেন, “অনেকের ধারণা, হিজড়েরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চা চুরি করে আনে। ওরা জানে না যে, চুরি করার দরকার নেই। বাড়ির লোকেরাই লোকলজ্জা থেকে বাঁচতে আমাদের ডেকে বাচ্চা দিয়ে দেয়। কিংবা একটু বড় হওয়ার পর বাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাচ্চাগুলো একটু শান্তির জন্য নিজেরাই এর-ওর কাছ থেকে খবর নিয়ে হিজড়েদের কাছে পালিয়ে আসে। এই দু’রকম ভাবেই আমি আমার শিষ্যাদের পেয়েছি। এঁদের মধ্যে দু’-একজন তো উচ্চশিক্ষিত। আপনার রুগি কৃষ্ণার কথাই ধরুন।”
    তাঁর কথা থামিয়ে কৃষ্ণা বলে ওঠে, “শুধু হিজড়ে বাচ্চা হলে লোকে আমাদের দিয়ে দেয় তা নয়, সুস্থসবল ছেলে বা মেয়েকেও অভাবের তাড়নায় মানুষ করতে না পেরে আমাদের কত বার দিয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুরের এক বাড়ি থেকে তিন মাসের পায়েলকে আমাদের হাতে দিয়েছিল ওর মা আর দাদু। বাপটা ছিল নেশাখোর। চার-চারটে মেয়ে মানুষ করতে মা হিমশিম। ফুটফুটে মেয়ে এখন আমাদের মধ্যেই বেড়ে উঠছে। স্কুলে পড়ছে। ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে। ওর বয়স এখন চার। হাওড়া পিলখানার দুই পরিবার এভাবেই দিয়েছিল রুবিনা আর রাহুলকে। রুবিনা এ বার মাধ্যমিক দেবে, রাহুল ক্লাস এইটে পড়ে। আরও শুনবেন? মাস দুয়েক আগে বিডন স্ট্রিটের এক মুখার্জি পরিবারের শ্বশুর, শাশুড়ি আর বর তাঁদের বাড়ির নতুন বউকে নিয়ে এসে হাজির। বউ নাকি হিজড়ে! বাড়ি থেকে লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে। তাঁরা বউকে আমাদের কাছে দিয়ে দেবেনই! সেই মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে। বুঝুন! বকেঝকে, পুলিশের ভয় দেখিয়ে ফেরত পাঠানোর পরও তিনবার ঘুরে এসেছে। এই হল ভদ্দরলোকের সমাজ!”

    দশ বছর আগে নিজের বয়স কম ছিল। কাজও তেমন জমেনি। ন’জন শিষ্যাও তখন অনেক ছোট। তাদের খরচ চালাতে হত। এই রকম অবস্থায় মাটির ঘটপট, গেলাস দিয়ে শুরু করে মূর্তি বানানো শুরু করলেন। পোটোপাড়ায় কম দামে বেচে দিতেন সেই মূর্তি। আয় বাড়ল।
    মনের জোর কোথা থেকে পেলেন? মেঝেতে একগোছা চুড়ি নিয়ে খেলতে বসা বোবা এবং হিজড়ে নাগমাকে কোলে তুলে নিয়ে পুতুল অবলীলায় বলেন,
    “এক রকম লতা আছে জানেন, যা ছিঁড়ে দলা করে বড় গাছের উপর ছুড়ে ফেলে দিলে, সে ওই গাছ থেকে রস টেনে নিয়ে ডালপালা ছড়ায়, তাতে ফুল হয়, আর বড় গাছটা ধীরে ধীরে মরে যেতে থাকে। আমি ওই গাছটা হতে চেয়েছি।
    চেষ্টা করেছিলাম এলাকার মানুষের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলার, নিজের পেশার প্রতি সৎ থাকার। পেশার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়েছি, আমি বা আমার দলের কেউ টাকার জন্য কখনও কারও উপর জুলুম করেনি। তাই মানুষও শুভ কাজে আমাদের আশীর্বাদ দিয়েছেন। পাড়ার লোকে বাড়ির কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী পূজোর মূর্তি বানিয়েছে আমাদের দিয়ে। সেই ভরসা ও বিশ্বাসের জন্যই আজ কলকাতার বাইরে আমার বানানো পরতিমা যায়।
    দীর্ঘদিনের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুখদুঃখের সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে।”
    হয়তো দারিদ্র্য সখ্য তৈরিতে সাহায্য করে।
    বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন পুতুল-মা।
    “এই জীবন আঁকড়ে থাকা ছাড়া আমাদের তো গতি নেই। অন্য কোনও কাজ করতে গেলে প্রতি পদক্ষেপে যে বিদ্রুপ জুটবে, তা নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। কিন্তু আমার বাচ্চাগুলো লেখাপড়া শিখে একটু মানুষ হতে পারলে বুঝব, হিজড়েরও স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে।”
    তারপর চোখের জল মুছতে গিয়ে সুর্মা লেপটিয়ে সারা মুখ একাকার করে বললেন,
    “মুখে কালির দেবার লজ্জা তো আপনাদের স্যার। আমরা তো কিন্নর – চাঁদের টুকরো।
    এই যে পূজোর আগে পরতিমা বানাই আমরা, তখন একবার আসবেন। আমাদের গান শোনাবো। এই ছেমরি কৃষ্ণার মত দুর্গার মুখ পোটোপাড়াতেও কম শিল্পী বানাতে পারে”
    ছেমরি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “গুরু মায়ের মতো চোখ আর কেউ আঁকতে পারে না, স্যার। কেউ না।” পুতুল মা একগাল হেসে বলেছিলেন, “তুই চাকরি পেলে, আমরা একচালা ছেড়ে আলাদা আলাদা পরতিমা বানাবো।”

    **
    আমাকে এগিয়ে দিতে এসে কৃষ্ণা বলেছিল, “সেদিন আমার অপুষ্টির কথা বলেছিলেন স্যার। আসলে এই ঘরের বাইরে বেরোলেই আমার ‘প্যারোসমিয়া’ হয়। সমস্ত শহরটাই মনে হয় পূতিগন্ধময়। রাস্তায়, খাবারে এমনকি সেন্টে, ফুলেও। তাই খেতেও পারি না তেমন। আমাকে এর বাইরে আসতেই হবে স্যার। চাকরিটা পেতেই হবে। একটা বড় স্টুডিও বানাতে হবে। গুরুমা চলে যাবার আগে মাটির কাজ সবটা শিখে নিতে হবে তো।”

    **
    একবার গিয়েছিলাম প্রতিমা বানানো দেখতে। সে এক দারুণ ব্যাপার। সকালে দুপুরে রাতে যে মেয়েগুলো তালি মেরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে টাকা চেয়ে বেড়ায়, তারাই মনের আনন্দে মাটির তাল ছেনে মৃন্ময়ীর নাক, চিবুক, কপাল, ভুরু বানাচ্ছে। সুরহীন কন্ঠে কখনো গাইছে কর্তাভজা নজরুল হিজড়ের গান –
    “তোর পিরীতে পইরা কানু জীবন অন্ধকার
    কচুপাতার রসবড়া কুটকুটানিই সার।”
    আবার কখনও গাইছে নবজাতকের আগমনে বাঁধা ‘বধাই গান’ -
    “বলি, ও দিদি লো,
    পরির মতো তোর ঘরে খুকি হয়েছে
    মেয়ের মাসী কনের পিসি খবর পেয়েছে
    তাই, ঢাকঢোল নিয়ে তারা নাচতে এসেছে।
    আমরা নারীও না, পুরুষও না –
    করলাম কি যে পাপ !
    জনমদোষে আমরা হইলাম না মা-বাপ
    মরা গাছে তবু ফুল ফুটেছে
    আজ তারা নাচতে এসেছে।
    আমার মাথায় যতো চুল, আয়ু তত হবে
    সেজেগুজে সোনার মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাবে
    বিধি মোদের কোন দোষে হিজড়া করেছে!
    আজ তারা তোর ঘরে নাচতে এসেছে।”

    একহাতে মাটি, অন্যহাতে চোখ মুছে একবুক হালকা করা হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে নোনা-ধরা দেওয়ালে-মেঝেতে।
    নিজেকে বড্ড অকিঞ্চিৎকর মনে হয়েছিল সেই মুহূর্তে।

    **
    মেয়েটার রেলের চাকরি হয়েছিল নিজের যোগ্যতায়। ইন্টারভিউতে তাকে ‘কিছু একটা আবৃত্তি করতে’ বলেছিলেন এক মহিলা। সে শুনিয়েছিল রূপান্তরী কবি মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা –
    “বর্ধমানের ভাষায় মেয়েন্যাংড়া ছেলে
    বরিশালে মাইগ্যাপর
    ছেলে হয়েও ছেলে নয়, মেয়েও নয়
    কেমন একটা মাঝামাঝি।
    কোনও একটা দিক নে – হয় ছেলে নয় মেয়ে।
    এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকলে গাড়ি চাপা পড়বি যে।”

    **
    মুখজোড়া হাসি নিয়ে এসেছিল ‘ছেমরি’।

    - স্যার আপনি শজার আল দুর-এর নাম শুনেছেন?
    - কি বললি? শজারু?
    - সে তো আমি। এর মানে হল – মুক্তোর গাছ। ইনি, ওই ধরুন, তেরোশ’ খ্রিস্টাব্দে মিশরের একজন শাসক ছিলেন। কেউ বলে, উনি ছিলেন পুরুষ, কেউ বলে নারী।
    ওনার রাজকীয় নাম ছিল আল-মালিকা ‘আমাত আদ-দান-উম-খল্লাল শজার অ্যাড-দুর’। তার থেকে ডাক নাম উম্মু খালাল, অর্থাৎ হল কিনা, ‘খলিলের মা’।
    একটা ছানাভূত কে যেন ফেলে দিয়ে গ্যাছে গুরুমায়ের কাছে। আমি তেনাকে পুষ্যি নিয়েছি। নাম রেখেছি ‘খলিল’।
    মুখেভাতে আসবেন স্যার। প্লিজ।

    বুঝলাম, ছেমরি মায়াতরুর খোঁজ পেয়েছে।

    **
    আমার প্রতিদিনের যাত্রাপথে পড়ে কালিঘাটের পোটোপাড়া। বছরের এইসময় বড় মনখারাপ-করা দু’টি ছবি দেখি:
    মায়ের বিক্রি না হওয়া অসমাপ্ত মূর্তি
    আর
    বায়না না হওয়া ঢাকি ও তার সাথের বাজনদার।

    এই ঢাকির দল অপেক্ষা করে রাস্তার ওপারে... প্রতিমার ঠিক উল্টোদিকে। অপেক্ষায় থাকে ভাসানের দিন অবধি। তারপর... ?
    তারপর, নুনের পুতুল সাগরে যেমন,
    তেমনই মাটি থেকে মাটির ঠিকানায় পৌছে যায় তারা ।

    যেদিন সকল মায়ের বিসর্জনের ঢাকে কাঠি পড়ে, কেন যেন মনে হয় – হতে গিয়েও না-হতে-পারা অরক্ষণীয়া মায়ের বোধনের বাদ্যি বাজানোর সব অধিকার নিয়ে বুঝি অপেক্ষা করে আছে হেরে যাওয়া
    বাদ্যিকরের দল ।

    বল, দুগ্গা মাঈ কি... জয়!




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১
  • অন্য যৌনতা | ১৫ অক্টোবর ২০২১ | ৩৭২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১২:৪৯499605
  • ভারি ভালো লাগলো ....
  • Sobuj Chatterjee | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৪:২৪499609
  • এ স্বাদের ভাগ হবেনা! 
  • ডাঃ আলপনা চৌধুরী | 2409:4060:2e01:5635:8197:b7c6:8d3:de11 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৫৮499614
  • খুব ভালো লাগলো।হিজরেদের নিয়ে আরো লেখ।এদের খুব অভিশপ্ত জীবন। 
    বিনাদোষে কি যে শাস্তি এরা ভোগ করে এটা পাল্টানোর সময় এসেছে।
  • পঙ্কজ কুমার সাহা। | 103.252.167.79 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৩১499616
  • অসাধারণ শল্লকী। ওদেরকে মূলস্রোতে নিয়ে আসার  প্রচেষ্টার জন্য ডাক্তারবাবুর লেখনীকে ধন্যবাদ।
  • নন্দিনী সেন। | 2401:4900:1109:7859:0:22:ef05:f101 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৩২499617
  • করুণ সুরে বাঁধা, মন ভেজানো অনুভূতির ছবি । অতুলনীয় লেখা।
  • প্রতিভা | 2401:4900:3eec:61ee:0:45:fdc3:2b01 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৬499618
  • এতো দরদী এবং তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ! 
    লেখক ও গুরুচন্ডা৯কে অসংখ্য ধন্যবাদ। 
  • প্রদীপ কুমার সিনহা। | 202.8.112.18 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১০499619
  • অনেক দিন পর এত সুন্দর ভাবে লেখা একটা লেখা পড়লাম।
    আমি মুগ্ধ। তোর হাত থেকে আরও সুন্দর সুন্দর লেখার জন্ম হোক।
    প্রদীপ কুমার সিনহা।
  • Subhra Kumar Nandy | 2405:201:8011:304a:e9d6:acce:7433:c2b1 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:০০499621
  • হিজড়াদের নিয়ে  শুধূ  লেখা  নয়  নতুনকরে বাঁচার  অঙ্গীকার  নতুন  দিশা  আপনার   লেখায় 
  • Dipankar Chowdhury | 2402:3a80:196c:414a:b197:4f66:6c3f:dd22 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:০৪499622
  • কী লিখেছেন দাদা! চোখ ভরে এলো জলে পড়তে পড়তে
  • শিবাংশু | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৪২499625
  • ঠিক লেখা নয়। ফ্রেমের পর ফ্রেম, দুঃসময়ের প্রতিচ্ছবি। বিশ্বস্ত, বিদারক ....  
  • সমীরণ রায় | 103.251.80.40 | ১৫ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৪৯499628
  • বাঃ
    শেষ শব্দ পর্যন্ত অবাক বিস্ময়ে ঋদ্ধ হলাম।। তথ্যমূলক লেখা পড়াবার জন্য অকুন্ঠ ধন্যবাদ।।
  • kk | 68.184.245.97 | ১৬ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৫১499640
  • অসম্ভব ভালো লাগলো এই লেখা!
  • Kumarda. | 2409:4042:2d16:4954:fc1c:3701:273:d8b3 | ১৬ অক্টোবর ২০২১ ১০:৩৯499642
  • মনটা ছুঁয়ে গেলো , এদেরকে মনে করে লেখা , khub ভালো lagche. Amar ek bandhu আছে 'j'জানকি' সেন্ট্রাল এভিনিউ   Air Iইন্ডিয়া বিল্ডিং এরসামনে ।.রোড ক্রসিং এ। 
     
  • বাণীব্রত বসু | 110.225.31.147 | ১৬ অক্টোবর ২০২১ ১৩:২০499650
  • এক নিঃশ্বাসে শেষ করেছি। দারুণ দারুণ!! নতুন করে তোমার লেখা নিয়ে বলার কিছু নেই। তোমার লেখনী আরো সমৃদ্ধ হোক এই প্রার্থনা করি!!
  • Mithu O | 115.99.155.22 | ১৬ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৪499659
  • শল্লকী, পুতুলের কথা পড়ে নিজেদের অমানুষ স্বভাবটা বড় সামনে এসে পড়লো। এমনি করেই লজ্জা দিও,  যাতে মনের কলুষ কম হয়।
  • aranya | 2600:1001:b003:929d:4cbe:5ae2:4b7e:cdad | ১৭ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৫৪499680
  • অসাধারণ 
  • হীরক সেনগুপ্ত | 2409:4060:212:869c::543:20a4 | ১৭ অক্টোবর ২০২১ ১২:৩৮499692
  • ভারি চমৎকার! 
  • বিপ্লব রহমান | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৪৬499734
  • এ লেখায় মন্তব্য করা কঠিন। বার বার শুধু চোখ ভিজে যায়
  • RK | 203.18.35.200 | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৫৩499740
  • অসাধারন । মন ছুয়ে গেলো । 
  • | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৩৪499756
  • লোকাল ট্রেনে নিত্যযাত্রাকালীন এরকম দুজনের সাথে আলাপ ছিল। যাত্রাপথে টুকটাক গল্পগাছার সময় কিছু অংশ আমরা দুই পক্ষই সযত্নে এড়িয়ে যেতাম, যেন একটা দরজা যার ওপারে অতল অন্ধকার। এই লেখায় সেই অন্ধকারের খাবলাটুকু এসে প্রায় অন্ধ করে দিল। 
  • বহতা | 2409:4071:2392:9297:1c97:e3d:6ff7:352e | ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৩৭499948
  • যেমন অভিজ্ঞতা তেমন লেখা। এনাদের জীবন বদলাক
  • Rifon Sircar | ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩২499956
  • খুব ভালো লাগলো।
  • reeta bandyopadhyay | ২৪ অক্টোবর ২০২১ ২২:২১500169
  • কি মনে ছুঁয়ে  যাওয়া লেখা ।
  • পল্লব চ্যাটার্জী | 115.96.221.9 | ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০১:০৪500404
  • সত্যি অসাধারণ লিখেছ বেরাদর, মন ছুঁয়ে গেল বলব না, মন ফুঁড়ে গেছে। আমার পড়া তোমার সেরা লেখা এ যাবত- আরেকটা মনে হয় রোমের লক্ষ্মীমূর্তি নিয়ে।
  • ভাষা ভাষা | ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:১৬500410
  • ওঃ! অসাধারণ একটা লেখা। এ লেখা ক্ষতের উপশম নয় , বরং আরও রক্তাক্তই করে, তবু এরকম এক একটা অনন্য অভিজ্ঞতার দিকে বারবার মাধ্যাকর্ষণ-এগিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।  আমরা-ওরা, মাঝের অনন্ত দেওয়াল, সেই দেওয়ালে আদৌ কোনও দরজা আছে কিনা তার খোঁজই তো করি না -- আর কখনও সখনও তার সন্ধান পেয়ে গেলেও, দরজা খোলার কথা ভাবতে গেলে যে উঁচুমানের মন থাকা দরকার তা আর অর্জন করতে পারলাম কৈ! তবু মাঝে মাঝে এরকম কিছু ভাবনার মুখোমুখি হলে একটু হলেও নড়েচড়ে বসি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন