এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  শরৎ ২০২১

  • সই

    অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
    গপ্পো | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৭৯৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১


    এক
    এই যে তার বেঁচে থাকতে ভালো লাগছে, একটা নতুন উদ্যম জাগছে ভেতরে-ভেতরে; মনে হচ্ছে বেঁচে থাকার, জীবনের আলাদা একটা মানে আছে – সেটা এই ভদ্রমহিলার কাছে না এলে পাওয়া হত না শুভশ্রীর।
    খুব গভীর করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।
    দোতলার এই ঝুলবারান্দা থেকে বিস্তীর্ণ গঙ্গা দেখা যায়। শুভশ্রীর মনে হয়, তার জীবনটাও হয়তো এমনি এক নদী হয়ে বয়ে যাবারই কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। বদলে হয়েছে নদীর পাড়ে আটকে থাকা একখণ্ড কালো পাথর!
    কিন্তু এই কালো পাথরকে গলিয়ে দেবার প্রক্রিয়া শুভশ্রীর জানা নেই।
    তবু, ভালো লাগছে তার।
    ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে, এই বিকেলে, তার খানিক তফাতে দাঁড়িয়ে তিস্তা লাহিড়ি তাকিয়ে আছেন গঙ্গার প্রবাহ’র দিকে। নদীতে জোয়ারের প্রবেশ ও জলের হিল্লোল – সবই মন দিয়ে দেখছেন তিনি। গঙ্গানদীর উৎপত্তি, বিকাশ ও গলে যেতে থাকা হিমবাহ নিয়ে কত কথা বলেন তিনি। বলেন নিজের জীবনকথা।
    শুভশ্রী দেখে তাঁকে। চার মাস হয়ে গেল এই চাকরির, সেই থেকে ভদ্রমহিলাকে যত দেখে, তত অবাক হয় শুভশ্রী। জীবনের এমন এক কঠিন সময়ে এই ভদ্রমহিলা তার জীবনবৃত্তে এলেন, তার জীবনদর্শনটাই পালটে গেল। অথচ এই চাকরিটি প্রথমে নিতেই চাইছিল না শুভশ্রী!
    তিস্তা লাহিড়ি দোতলার একটি ঘরে থাকেন। নীচের ঘরে থাকে তাঁর দেখভাল করার জন্য একটি মেয়ে। তার নাম ঝুমা। সে রান্নাবান্না করে, তাঁর ফাইসরমাস খাটে। এছাড়া সারা বাড়ি পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখা ঝুমার কাজ। ঝুমার মাইনে বৃদ্ধাবাসের মালিক দেন।
    বৃদ্ধাবাসে এই ঘরটিই সবচেয়ে বড় ও খোলামেলা। নদীর দিকে বড়-বড় দু’টি জানালা, তা দিয়ে হু হু করে গঙ্গার বাতাস ঢোকে। ঘরে একটা সিঙ্গল খাট, একটি ড্রেসিং টেবিল ও একটি চেয়ার আছে। অনেকটা মেঝে। একেবারে নিজের ঘরের মতন বানিয়ে নিয়েছেন ভদ্রমহিলা। বারান্দায় ইজিচেয়ারে বা ঘরের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনি নদীকে দেখেন, গল্প-বই পড়েন।
    বৃদ্ধাবাসটা একেবারে নতুন। খুব বড় করে একটা সাইনবোর্ড-এ নাম লেখা আছে, ‘অকিঞ্চন বৃদ্ধাবাস’। কিন্তু মুশকিল হল, বৃদ্ধাবাসটা একদমই জমেনি। গঙ্গার একেবারে পাড়েই অবস্থিত, একটা সরু পিচ রাস্তা আছে বৃদ্ধাবাস ও নদীর মাঝে। নদীর পাড়েই পরপর বট-অশ্বত্থের গাছ রয়েছে। আছে খানিক ঝোপঝাড়, বন্য লতা। বৃদ্ধাবাস মালিক হয়তো ভেবেছিল, একেবারে ধু-ধু গঙ্গার ভেতর নির্জনে, গঙ্গার পশ্চিমকুল বারাণসী সমতুল – এই বৃদ্ধাবাস জমবে ভালো।
    কিন্তু না, এক বছর আগে চালু হলেও একেবারেই ‘বোর্ডার’ নেই। ধু-ধু নদীর মত, ধু-ধু জীবনের মত বৃদ্ধাবাসও ধু-ধু করছে। এখন সেখানে গিয়ে তাকে আট ঘন্টা কাটিয়ে আসতে হবে! কাজ কী? না, একটি বৃদ্ধার সঙ্গ দেওয়া, তাঁর সঙ্গে বসে বসে গল্প করা। কাজ বা পদের নাম, ‘সই’।
    অথচ এই কাজের কথা শুনে একদিন সে নাক কুঁচকেছিল।



    দুই

    হার্ট-আট্যাকে শুভশ্রী’র স্বামী সমীর মারা গেছে মাস সাত-আট আগে। বিয়ের আগেই সমীরের হার্টের সমস্যা ছিল, তখনই ডাক্তার বারণ করেছিল বিয়ে না-দিতে। কিন্তু সমীরের বাড়ির লোক সেকথা শোনেনি। তারা রোগের কথা লুকিয়ে বিয়ে দেয়। শুভশ্রীও বিয়ে আটকে ছিল। তিরিশ পেরিয়ে তার বিয়ে হয়েছে। সমীর একটা চাকরি করত বটে, তবে সেটা আহামরি কিছু নয়। তবে সমীরদের অগাধ সম্পত্তি থাকায় বিয়েটা হয়ে যায়। শুভশ্রী’র বাড়ির লোকও বেশি খোঁজ-খবর করেনি। বিয়ের পর সমীর যে আরও বারো বছর বেঁচেছিল, তার পুরো কৃতিত্ব শুভশ্রী’র। স্বামীকে সে হাতের তালুতে রেখে দিত যাতে আয়ু দীর্ঘতর হয়। কিন্তু সে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি সমীরকে।
    সমীর মারা যেতে একটা চাকরি খুব দরকার হয়ে পড়ল শুভশ্রী’র। পাড়ার অনেককে বলাও ছিল। তাদেরই একজন হল সুভাষ আদক। সুভাষ বিয়ে করেনি। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। সবার উপকার করতে, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে সবসময় এক পায়ে খাড়া। সুভাষই তাকে এই চাকরির অফার দেয়।
    সুভাষ বলেছিল, দ্যাখ, কথায় বলে, হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলতে নেই। ভালো না-লাগলে ছেড়ে দিবি। কিন্তু এখন যদি এই চাকরি তুই না-নিস, সংসার চালাবি কী করে? খাবি কী? কাজটা কর, পরে যদি ভালো মাইনের, অফিশিয়াল কিছু কাজ যোগাড় করে দিতে পারি, তখন না-হয় চলে যাবি সেখানে।
    শুভশ্রী বলেছে, করব সুভাষদা, তবে ফাইফরমাস খাটতে পারব না। বুড়ি বলবে বাজার থেকে পান আন, জর্দা আন – ও আমার দ্বারা হবে না, জানো।
    সুভাষ বলে, ভদ্রমহিলার সম্পর্কে তুই কিছু জানিস না বলে এমন কথা বলছিস। উনি একজন সরকারী আমলা ছিলেন। খুব ভালো মানুষ। নিজের বাড়ি, গাড়ি আছে। সব ছেড়ে এখানে থাকতে এসেছেন।
    শুভশ্রী বলে, কেন? উনি বিয়ে করেননি?
    কেন করবেন না? স্বামী নেই, বছর পাঁচেক হল। ওঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। একজন থাকে আমেরিকায়, অন্যজন কানাডায়। এখানে ভদ্রমহিলা একা। বাঁকুড়ার এক গ্রামে বাড়ি ছিল, এখনও সেখানে জায়গা-জমি আছে বটে, তবে সেখানে থাকার মত কেউ নেই তাঁর। তিনি নিজেও আর সেখানে বাস করতে পারেন না অনভ্যেসে। ছেলে-মেয়ের কাছেও গিয়ে থেকেছেন। কিন্তু কোথাও একটানা থেকে যেতে পারেননি। একদিন ঠিক করলেন, সুন্দর, ছিমছাম, মনোরম পরিবেশে একটি ঘরোয়া বৃদ্ধাবাসে থাকবেন। আমার সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল। এমনকী রাজনৈতিক কারণে কয়েকবার ঘেরাও করেছি – বলতে বলতে সুভাষ হাসে। তারপর বলে, বলতে পারিস আমিই ওঁকে এই বৃদ্ধাবাসের সন্ধান দিই।
    বুঝেছি। এ হল বড়লোকের খেয়াল! দু’দিনের জন্য এসেছেন গঙ্গার ধারে থাকতে, ঝোঁক কাটলে চলে যাবেন – এই তো?
    মানুষ মানুষের সঙ্গ চায়, যেমন নদী চায় নৌকার সঙ্গ। গাছেরা চায় পাখিদের উপস্থিতি। তিনিও একজন সঙ্গী চান। এই স্থান ও রুম তাঁর পছন্দের হলেও, এইভাবে একাকীবাস তাঁর ভালো লাগে না। সঙ্গীর মাহিনা তিনি দেবেন, বৃদ্ধাবাস কর্তৃপক্ষকে তা বহন করতে হবে না। কাজটির পদের নাম তিনি নিজেই দিলেন, ‘সই’।
    তাই তিনি সুভাষকে ডেকেছিলেন একদিন। সুভাষ কথা দিয়ে এসেছে, একজন গ্র্যাজুয়েট, মাঝামাঝি বয়সের মেয়েকে এনে দেবেন। যাকে-তাকে তো আর পাঠানো যায় না তাঁর কাছে। সুভাষের মাথায় খেলেছে শুভশ্রীর নাম। শুভশ্রীর পিছুটান নেই, বয়স পঁয়তাল্লিশ, ম্যাচিওর – এই কাজ সে পারবে।
    সুভাষ শান্ত স্বরে বলে, তোকে বাইরে কাজ দেখে দিতে পারি। হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে, কিন্তু কাজ পাবি। তবে সেখানে যাতায়াতের খরচ, ফিটফাট থাকার খরচ; টিফিন খরচ – সব বাদ দিয়ে হাতে থাকবে কত?
    শুভশ্রী চুপ করে রইল। কথাটা মিথ্যে নয়। বাইরে সাত-আট হাজার টাকার যা মূল্য, ঘরের পাশে পাঁচ হাজার – মেরেকেটে একই।
    সুভাষ বলেছিল, এখন এখানে যা পাবি, পুরোটাই লাভ। এখান থেকে এক কি.মি. রাস্তা, হেঁটেই যাতায়াত করবি। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাবি, দুপুরে খেয়ে নিবি। তবে ওরা বোধহয় বিকেলের চা-টা তোকে দেবে – লাল চা। বকবক করা ও বকবকানি শোনা ছাড়া আর কোন কাজ নেই তোর। গঙ্গার বাতাসে দেখবি মনের সব ক্ষত কেমন জুড়িয়ে গেছে।
    ক্ষতর কথায় সেদিন থমকেছিল শুভশ্রী। তার দশ বছরের বড় ছেলেটা খেলার মাঠে বল খেলতে গিয়ে মাথায় বল লেগে মারা যায়। তখন সে ও তার স্বামী দু’জনেই একজনের বিয়েতে গেছে, ছেলেকে নিয়ে যায়নি ঠান্ডা লাগবে বলে; ফিরেছে রাতে। ততক্ষণে সব শেষ! শ্বশুরবাড়ির লোক ছেলেটাকে হাসপাতালে অবধি নিয়ে যায়নি, মাথায় জল ঢেলে ঘরে ফেলে রেখেছে – এমন অমানুষ।
    সুভাষ বলে, সঙ্গে রোজ গঙ্গাদর্শনের পুণ্যও অর্জন হবে – এটা তো মানিস? আমরা নদীর এত কাছে বাস করেও ক’দিন নদীকে দেখি বল? দেখি না। তাই পুণ্য আমাদের পাশ দিয়ে বাতাসের মতন ভেসে যায়। আমি বলি কি, তুই রাজি হয়ে যা। কাল থেকেই তুই কাজে যাবি।
    সেই থেকে শুভশ্রী অকিঞ্চন বৃদ্ধাবাসে কাজ করছে ‘সই’ পদে।



    তিন

    প্রথমদিন তিস্তা লাহিড়ি’র দিকে একঝলক তাকিয়েই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল শুভশ্রী’র। ভদ্রমহিলাকে যখন দেখে সে, একেবারে অভিভূত হয়ে গিয়েছিল, এমনিই ব্যক্তিত্ব তাঁর। পরনে ছিমছাম একটি তাঁতশাড়ি, মুখে হালকা প্রসাধন, চোখে শৌখিন ফ্রেমের চশমা। গায়ের রঙ এই বয়সেও যেন ফেটে পড়ছে। চুল কালার করা, কালোর সঙ্গে মেরুন রঙ। বেশ লাগে তাঁকে দেখতে।
    তিনি ইজিচেয়ারে বসেছিলেন। তাঁর বসাটা এমন জায়গায় ছিল, যেখান থেকে বাইরে-ভেতর দেখা যায়। তিনি দু’হাত বাড়িয়ে তাকে গ্রহণ করলেন। শুভশ্রী দু’হাত তুলে ‘নমস্কার ম্যাডাম’ বলতেই তিনি এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, এসো এসো, আমার সই।
    তিস্তা লাহিড়ির এই একটি বাক্যে মনের ভেতর জমা থাকা বিরক্তিভাবটা যেন এক লহমায় কেটে গেল শুভশ্রীর। আহা, কী আপ্যায়ন – সই! আশ্চর্য! এই সই-পাতানো ছিল ছেলেবেলায়, কোনও একজনের সঙ্গে। সে আজ কোথায়, শুভশ্রী জানে না। আজকালকার মেয়েরা এসব পাতায় না, উঠে গেছে। সে বলে, আপনি এইসব জানেন?
    তিনি অবাক হয়ে বলেন, ওমা! আমি যে গ্রামেরই মেয়ে, জানব না কেন? জানি বলেই তো তোমার পদের ‘সই’ নাম দিয়েছি। আজ থেকে তোমাকে সই নামেই ডাকব। তুমিও আমাকে সই বলতে পারো।
    না, শুভশ্রী তাঁকে সই বলে কোনওদিন ডাকেনি। ডাকা যায় না। ম্যাডাম বলেই ডাকে। চিরকাল এই ডাক শুনতে অভ্যস্ত তিস্তা লাহিড়িও তা মেনে নিয়েছেন।
    বৃদ্ধাবাসের ঘর ও বারান্দার মেঝে মোজাইক করা। সিঁড়িও তাই। সাদার উপর অরেঞ্জ আর সবুজ ছিটে দেওয়া মোজাইক পাথর। দোতলায় দাঁড়িয়ে শুভশ্রী বরং দেখছিল গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে তিস্তা লাহিড়ি’র পিছনের পটভূমি দিয়ে। আর ভারি অদ্ভুত দেখাচ্ছিল নদীটাকে। নদীর গায়ে গাছ, তার বুকে নৌকার মন্থর গতি, ঢেউ – সব নিয়ে নদীটাকে কেন জানি মানুষেরই মত জীবন্ত বলে মনে হল। তিস্তা লাহিড়ি বারান্দার বসে নদীটার ওই বয়ে যাওয়া দেখছিলেন। আর সঙ্গে কেবল নদী থাকলেই হল না, একজন মানুষ চাই। তাই হয়তো এখানে চাকরি হল শুভশ্রীর। এখন থেকে তাকে এই দূর থেকেই জীবননদীর বয়ে চলা দেখে যেতে হবে।
    তিস্তা লাহিড়ি তাকে ঝুলবারান্দায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বললেন, তুমি এলে, তাই নদীর কাছে নৌকা এল। এখন যে কী ভালো লাগছে একা এই মাটির নদীটাকে! নদীর ‘সই’ কে বলত? নৌকা।
    শুভশ্রী অবাক হয়ে তিস্তা লাহিড়িকে দেখল। অদ্ভুত কথা বলেন তো ভদ্রমহিলা!
    নদীর বুকে মাটির গন্ধ মেলে, জানো?
    তার মনের ভাব বুঝে তিস্তা লাহিড়ি বললেন, অনেকক্ষণ ধরে এই ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, জানো। মাঝে মাঝে অবশ্যি বসছি – একটানা কী আর দাঁড়িয়ে থাকা যায় – একখানা চেয়ার রাখা আছে ওখানে। আমি এখান থেকেই নদীকে প্রত্যক্ষ করি, নীচে নামি কম। খাবার-দাবার সব ঝুমা উপরেই দিয়ে যায়। এদিকে নদীতে জল আসে, জল যায় – নদী তবু নদীই থাকে। এখন নদীতে জল ঢুকছে, সঙ্গে আসছে কচুরিপানার ঝাঁক। কিন্তু নদীতে যতই জল থাকুক, নৌকা না-থাকলে কিন্তু নদীকে মানায় না।
    ঘরে বসে ডায়েরি লেখেন তিস্তা লাহিড়ি। নামে যেমন তিনি আধুনিকা, সাজে-কাজে-কর্মে ও পোশাকেও তিনি তাই। এখন তিনি শুভশ্রীকে ‘তুই’ করে ডাকেন। বলেন, আমি এককালে কবিতা লিখতাম, জানিস? তারপর একদিন তারা নিজের মত করে হারিয়ে গেল।
    সব নষ্ট হয়ে গেছে?
    হ্যাঁ রে। আর কোনও চিহ্ন নেই। কবি তো আমি নই। তবে মিল দিয়ে লিখতে বেশ লাগত। নিজেকে কবি কবি মনে হত।
    এখন আর লেখেন না?
    এখানে এসে আবার লিখছি। শুনবি তুই?
    শুনব।
    তিস্তা লাহিড়ির খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণও কম। সবদিকে সফল মানুষরা বোধহয় এমন হন। আবার উল্টোভাবে একথাও বলা যায়, চূড়ান্ত সফল মানুষেরা যখন সবদিক দিয়ে একলা হয়ে ওঠেন তখন পৃথিবীর ভোগতৃষ্ণা তাঁদের মিটে যায়।
    ছেলেমেয়েরা কৃতি হলেও এটা এখন একটা সমস্যা। তারা দূরে দূরে চলে যায় জীবিকার জন্য। দেশে থাকলেও না-হয় একটা কথা ছিল, কিন্তু বেশিরভাগ কৃতিরা চলে যায় বিদেশ। ক্রমে টান কমে আসে। যোগাযোগ প্রায় থাকেই না। এইভাবে সেই মানুষটি প্রায় একা হয়ে যান। দেখার, কথা বলার, কথা শোনার কেউই থাকে না। অনেকে একলাই মারা যান, মরে পড়ে থাকেন ঘরের ভেতর। তিনদিন পর দেহে পচন ধরলে প্রতিবেশিদের ফোনে পুলিশ আসে। দরজা ভেঙে দেহ বার করা হয়।
    তাই তিনি ক্রমে একা হয়ে যাচ্ছিলেন। নিজেই চলে এলেন এখানে মানুষের সঙ্গ’র জন্য। কিন্তু প্রাণের মানুষ মেলে কই? অবশেষে তিনি শুভশ্রীকে পেলেন। মন শান্ত হল। শুভশ্রী তাঁর জীবনকেন্দ্রে ঢুকে পড়ল।



    চার

    কিন্তু জীবনকেন্দ্রে ঢুকে পড়া এক আর জীবনকে ছোঁয়া আর এক বিষয়। দূর থেকে তা হয় না। বাতাসে জীবনের যেটুকু রেশ ভেসে আসে, তার টান আলাদা। তাকে বাইরে গিয়ে ছোঁও, দেখবে সেখানে আলাদা সুর বাজে। সেই সুর ছুঁতে গেলেই সে যে তোমার অনুভূতিতে প্রবেশ করবে, তা কিন্তু নয়। হতে পারে সেই সুর তোমাকে ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল কিন্তু তুমি ধরতে পারলে না। তখন কী করবে তুমি? কিচ্ছু না, স্রেফ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকো দুই হাত জোড় করে। ঢেউ আসবে যাবে, নির্জন এই ঘাটে সেইসময় ক্বচিৎ দু’একজন মানুষের দেখা পেলেও পেতে পারো; কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সেইভাবে যেভাবে মানুষ ধ্যানস্থ হয়।
    শুভশ্রী সেইভাবেই থাকে। ভদ্রমহিলা বলেন, কী এত ভাবিস তুই? আয় আমরা গল্প করি।
    ম্লান হেসে শুভশ্রী বলে, আমার জীবনের গল্প তো শেষ হয়ে গেছে, ম্যাডাম! ছোট ছেলেকে মিশনারি হোমে দিয়ে দিয়েছি, ওরাই ওর সব দেখাশোনা করবে। দুঃখ কি জানেন দিদি, ছেলেটা পাঁচ বছরের হল, এখনও মা ডাকে না! ওরা স্পিচ থেরাপিস্ট রেখেছে। আমি গেলে ও হাসে, বোধহয় চিনতে পারে। জানি না, ওর কপালে কী আছে, ও আর কতদিন বাঁচবে! যখন হয়েছিল, সে এতটুকু, ছোট্ট! কাচের ঘরে রাখা ছিল তিনমাস। ডক্টর চ্যাটার্জি না থাকলে ছেলেটা আমার বাঁচতই না। অথচ দেখুন, সেই ছেলেকেই এক মিশনারি হোমে রেখে আসতে হল! এর চেয়ে আমার মরণ হতে পারত।
    তিস্তা লাহিড়ি মাথা নাড়লেন। বললেন, তুই ঝুমার কাহিনি জানিস?
    আমাদের ঝুমা?
    হ্যাঁ, যে আমাকে রেঁধেবেঁধে দেয় – সেই ঝুমা মাঝি। কী সুন্দর টসটসে মুখ, বয়স এখনও পঁয়ত্রিশ পেরোয়নি। দেহের বাঁধুনিও সুন্দর। আমি সেদিন ওকে বলছিলাম, ওরে, এই বয়স তোর – আর একবার বিয়ে কর, ও বলে, না। আর নয়। একটা মানুষ জীবনে কতবার আর বিধবা হবে বলতে পারো?
    কতবার মানে? ঘুরে তাকায় শুভশ্রী।
    তিস্তা লাহিড়ি বলেন, ওর দু’বার বিয়ে হয়েছিল। দু’বারই প্রেম করে বিয়ে। প্রথম বিয়ে করে আঠারো বছর বয়সে, স্বামী রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। দ্বিতীয় বিয়ে করে সেই ঘটনার দশবছর পর। সেটাও প্রেম করেই বিয়ে। তাও শ্বশুরবাড়ির পাড়ার ছেলে। পাড়ার লোকেরাই তাদের ধরেবেঁধে বিয়ে দেয়। ছেলেটা একটা চিটফান্ডের এজেন্ট ছিল। এই বিয়ের পাঁচ বছর পর সেই চিটফান্ড কোম্পানি পাততাড়ি গোটালে লগ্নিকারীদের চাপে পড়ে তার দ্বিতীয় স্বামী আত্মহত্যা করে।
    দারুণ আশ্চর্য হয়ে শুভশ্রী বলে, এতটা তো জানতাম না! ঝুমা বলেওনি কখনও। তাহলে ওর সঙ্গে যে চার বছরের ছেলেটা থাকে, ওটা দ্বিতীয় পক্ষের?
    তিস্তা লাহিড়ি বলেন, হ্যাঁ। ওর প্রথম পক্ষেরও একটি ছেলে আছে। সে এবারে মাধ্যমিক দিল। তবে সেই ছেলেটা ঝুমার কাছে থাকে না, থাকে ওর দাদু-ঠাকুমার কাছে। ঝুমা এই ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছে।
    শুভশ্রী হাঁ করে বসে রইল। জীবন কোথা থেকে, কখন, কার কাছে কেমনভাবে ধরা দেবে – একথা কেউ জানে না। প্রতিটি মানুষের মনের গভীরে কোনও-না-কোনও দুঃখ থাকে। কারও সেটা চাপা থাকে, কারও সেটা প্রবাহিত হয়। কারও তা মনে প্রবাহিত হয়, কারও বা নদী হয়ে। এতদিন সে ভাবত, তার মত দুঃখী আর কেউ নেই। মনের সকল গৃহ হারিয়ে যে এসেছে বাইরে। নইলে তার কি চাকরি করার জন্য বাইরে আসার কথা? স্বামীর নামে যা স্থাবর সম্পত্তি আছে, ভাসুরেরা তা গাব করে দেবার তালে আছে, সেটা শুভশ্রী হাড়ে-হাড়ে টের পায়। কে আছে তার? কী করবে সে ভুসম্পত্তির ভাগ নিয়ে? এক বিরাট পয়সাওয়ালা বাড়ি দেখে বাপ-মা কোনও খোঁজখবর না-করে বিয়ে দিয়েছিল, এখন সে জ্বলেপুড়ে মরছে। স্বামী নেই, সন্তান থেকেও নেই – ভাসুরেরা তাকে বলে, কী করবে সে ভাগ নিয়ে?



    পাঁচ

    এইভাবে চাকরি-জীবনের চারমাস পার হয়ে গেল শুভশ্রীর। সে এখানে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছে। ভাবেও না এই চাকরি তার যে-কোনওদিন চলে যেতে পারে বা সে কাজ ছেড়ে চলে যেতে পারে অন্য কাজে। সকালেই সে চলে আসে, ন’টা নাগাদ, তার পর সুয্যি পাটে বসার আগে অবধি চলে খালি গল্প আর গল্প। শোনার গল্প, শোনানোর গল্প। হাতের কাজ থেকে ফুরসৎ পেলে উপরে উঠে আসে ঝুমা ও তার ছোট্ট ছেলে তিতির। তিস্তা লাহিড়ি বাচ্চাটাকে বড্ড ভালোবাসেন। তাকে চকোলেট কিনে দেন, আদর করেন।
    আর তিনি যখন দুপুরে বিশ্রাম নেন, শুভশ্রী আর উপরে থাকে না। নীচে নেমে আসে। সেখানে ঝুমা আছে। তখন তার ছেলে ঘুমায়। সে ঝুমার চোখের জল মোছায়, তার ঘরে থাকে, একটু গড়িয়ে নেয়। ঝুমা বলে, মনের ভেতরটা ভার হয়ে আছে দিদি। মন, না পাথর জমে থাকে দিদি আমাদের বুকের ভেতর?
    শুভশ্রীর নিজ-জীবন নিয়ে যে খেদ মনের মধ্যে জমে ছিল – এখানে এসে, গঙ্গার প্রবাহের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, এ জীবনে কোথায় কী, কে কার? কার জন্য এই খেদ? দুঃখ কীসের, সুখই বা কী – সবই মায়া, অলীক কল্পনা, বেবাক ফাঁকা বই-তো-কিছু নয়।
    কেবল বুকের ভেতরটা যখন টনটন করে, কোথাও কান্না বয়ে চলেছে বলে মনে হয়; মনে হয় এতদিন ধরে যে জীবন পার করে এল সকল মানুষ, ‘আমার আমার’ করে হেদিয়ে মরল – তা সবই এই নদীর বুকে ফুটে ওঠা এক-একটি ঢেউ মাত্র।



    ছয়

    মাস কয়েক পর বিদেশ থেকে এক ফোন এল তিস্তা লাহিড়ির মুঠোফোনে। একটি দুঃসংবাদ। তাঁর ছেলে প্রতীক আমেরিকার এক গুরুদ্বার থেকে প্রার্থনা সেরে বেরোনোর পর এক অজ্ঞাতপরিচয় শ্বেত-আততায়ীর দ্বারা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে। পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তার প্রাণ।
    খবরটা শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিস্তা লাহিড়ি। কাঁদলেন না, চোখ বেয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে নামল না, তিনি ইজিচেয়ারে বসে ঠায় তাকিয়ে রইলেন গঙ্গার দিকে। সারাদিনে তাঁকে একবিন্দু জলও খাওয়ানো গেল না, খাবার তো দূরের কথা। ঝুমা এসে বহুবার সেধেছে, কিন্তু তিনি সেই স্থির দৃষ্টি, নদীতে আবদ্ধ। টিয়া পাখিরাও আজ কেন জানি ডাকতে ভুলে গেছে।
    ঠায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল শুভশ্রী। তাঁকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করেছে, পারেনি। খাওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু তিনি নীরব, নিস্তব্ধ। আর ভেবেছে, তাঁর ছেলে গুরুদ্বারে প্রার্থনা করে কেন?
    এতবড় একটা খবর পেয়ে সুভাষ এসে দেখা করে গেছে, কিন্তু তখনও তিনি চুপচাপ। সুভাষও বেশি কথা বলেনি, জোর করেনি কোনও বিষয় নিয়ে। সে যেমন নিঃশব্দে এসেছিল, দু’-একটি কথা বলে তেমনি নীরবে চলে গেছে।
    দুপুরে ঝুমা চুপিচুপি ডেকে নিয়ে গেছে শুভশ্রীকে, নীচে। বলেছে, এতদিন ধরে তো গল্প করলে ম্যাডামের সঙ্গে, তাঁর জীবন জানো?
    জানি। সবই বলেছেন উনি। তুমিও জানো।
    না। উনি সবটা বলেননি। আর সেটা আমি জানি। তবে কোথা থেকে জেনেছি, তা জানতে চেয়ো না।
    কৌতূহলী হয় শুভশ্রী। বলে, কীরকম?
    যৌবনের শুরুতে উনি ওঁর সম-মর্যাদার এক কলিগকে বিয়ে করেন। সেই ভদ্রলোক ছিলেন শিখ। কিন্তু বিয়ের বারো বছর পর তাঁদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। তবে নাবালক বলে ছেলেমেয়ে দু’টি রয়ে যায় মায়ের কাছেই। ম্যাডামই তাদের মানুষ করেন। তারা যখন বড় হয়ে ওঠে, পড়াশুনো’র জন্য বিদেশ চলে যায়, পরে সেখানে চাকরিও করতে থাকে, তখন এক ভদ্রলোকের সঙ্গে ম্যাডামের আলাপ হয়। তিনি ছিলেন একজন কবি। ম্যাডাম তাঁর সঙ্গেই থাকতেন। বিয়ে করেছিলেন কিনা জানি না, তবে তিনি মারা যেতেই ম্যাডাম একাকী হয়ে ওঠেন। কোথাও মন টিকতে না-পেরে এই গঙ্গাতীরে এসে ওঠেন।
    না, এখন আর অবাক হয় না শুভশ্রী। সে চুপ করে বসে থাকে নীচের এই ঘরে, সামান্য বিছনায় যেখানে মা-ছেলে জীবনপাত করে। শুভশ্রী জানে, ‘জীবন’ মানুষের এই অবস্থা দেখে মুচকি হাসে। হয়তো এই ‘জীবন’ই তাদের ভাগ্যদেবতা, তাদের ঈশ্বর। নদীর মত সুস্থিরভাবে বয়ে যাওয়া তার ধাতে নেই। সে কেবল মানুষকে নাজেহাল করে তোলে, ঢেউএর পর ঢেউ দিয়ে ছোট্ট নৌকাখানা ডুবিয়ে দিতে চায়—এতেই তার আনন্দ।
    সে বলে, ঝুমা, চল দিকি উপরে।
    ম্যাডামের কাছে? গিয়ে কী বলব দিদি? সেই কোন সকাল থেকে তো একই কথা বলে চলেছি – আর কত? এখানের মালিক এসে দেখা করে গেল, সুভাষদা এল – এবার যা করার উনি নিজেই করবেন।
    শুভশ্রী বলে, না, উনি নিজে কিছু করবেন না। করবে এই নদী, করব আমরা। সন্ধে এল। এই সময় তো নদীর কাছে যায় মানুষ। আমরা তাঁকে নদীর কাছে নিয়ে যাব।
    কিন্তু উনি যে বলেন, দূর থেকেই নদীকে দেখতে ভালো লাগে!
    সেটা আলাদা ব্যাপার, এটা আলাদা। আমরা দু’জনে দু’দিকে ধরে ওঁকে ঘাটে নামাব। উনি গঙ্গাজল পান করবেন। জীবন-মৃত্যু’র উপবাস ভঙ্গ করবেন। ওখানে গিয়ে উনি কাঁদবেন।
    ঝুমা ছিটকে উঠে বলে, ওরে বাবা, আমি ওসব পারি? ও আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
    উনি আমাদের ‘সই’ বলেন না? উনি বললেও আমরা তা ভাবতে পারতাম না। কিন্তু আজ নদীতে নেমে আমরা ওঁর সঙ্গে ‘গঙ্গাজল সই’ পাতাব। আজ থেকে উনি আর আমাদের ম্যাডাম নন, আমাদের গঙ্গাজল সই।
    মুখ তুলে ঝুমা বলে, কিন্তু উনি কি তা মানবেন?
    শুভশ্রী বলে, মানবেন। কারণ এতদিন আমরা ওঁর জীবনের বাইরে থেকে উঁকি দিচ্ছিলাম, আজ ভেতরে ঢুকলাম। এখন আমরা সত্যিকারের সই হলাম। এবার তিন সই মিলে জীবন-পাড়ে স্থির থাকা কালো পাথরটাকে ধাক্কা মেরে গহীন জলে ভাসিয়ে দিতে হবে।




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    স্কেচ ৬ | পানুর মেটামরফোসিস | চালচিত্রের চালচলন | কেমন আছে ওরা? | চাও করুণানয়নে | পুত্রার্থে | সই | আপনি যেখানেই থাকুন | কিসসা গুলবদনী | জনৈক আবহ ও অন্যান্যরা | গুচ্ছ কবিতা | অমল রোদ্দুর হয়ে গেছে | ইনি আর উনির গপ্পো | দুগ্গি এল | দুর্গারূপে সীতা, ভিন্নরূপে সীতা | প্রিয় অসুখ | শল্লকী আর খলিলের আম্মার বৃত্তান্ত | রানার ছুটেছে তাই | বিসর্জনের চিত্রকলা | কল্পপ্রেম | লম্বা হাত খাটো হাত | কেন চেয়ে আছো গো মা, মুখ পানে! | ছোট্ট পরীর জন্মদিন | জাপানি পুতুল | আধাঁরে আলোঃ শারদ সাহিত্য | ইন্দুলেখার ইতিকথা | মুর্শিদাবাদ | এই দিনগুলি | জ্বিন | জোনাকি এবং ডোরেমিরা | বাসায় চুরি | বিশ্বকর্মার গুপ্তঘট | দুর্গাপূজা - দুটি প্রবন্ধকথা | টিউশন | ফেরা | মায়া | বন্দী | মেয়েদের কিছু একটা হয়েছে | কেল্লা নিজামত | সীতারাম | দড়াবাজি | মায়াফুলগাছ | যখন শ্যামের দ্বারে | কুয়াশা মানুষের লেখা | সময় হয়েছে নতুন খবর আনার | মিষ্টি চেখে ওড়িশার ডোকরা শিল্পীদের গ্রামে | নিশি | পথ | প্রাকার পরিখা | নীল সাইদার গল্প | তুষারাচ্ছন্ন ইউরোপে শ্রীমতী ফ্রয়ডেনরাইখের আশ্চর্য বিষাদ | দীপাবলীর বারান্দায় | কলমি শুশনি | এক অনিকেত সন্ধ্যা | গৌরি বিলের বৃত্তান্ত | আনন্দগামী বাস থেকে | মুয়াজ্জিনকে চিরকুট | দেবীর সাজে সৌরভ গোস্বামী | শরৎ ২০২১
  • গপ্পো | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ১৭৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৭ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৫৩499708
  • এ গল্পটাও ভাল লেগেছে আমার। 
  • অনিরুদ্ধ | 2409:4060:2e84:3b9e:4c77:21ff:fe09:f236 | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৯:১৭499761
  •  ধন্যবাদ আপনাকে 
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ২১ অক্টোবর ২০২১ ১২:৪৭499931
  • সত্যিই ব্যথা ছাড়ড মানুষকে এমন সুতোয় বাঁধতে কে-ই বা পারে!মনখারাপ এল এ গল্পের হাত ধরে...বড় সুন্দর গল্প।
  • অনিরুদ্ধ | 2409:4060:e9c:7b83:58e8:3aff:fe02:1331 | ২২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৪৪500010
  • ধন্যবাদ আপনাদের। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন