এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  শনিবারবেলা

  • বৃত্তরৈখিক (৫)

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৫৮৫ বার পঠিত
  • ~৫~

    কলেজের ক্যান্টিনেই আলাপ হলো পবিত্রর সঙ্গে। পাঁউরুটি আর ঘুগনি খাচ্ছিলো সোমেশ্বর, পবিত্র ওকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো ওর দিকে, কফি হাউজে দেখছিলাম তোমাকে কাল, আরো দু-তিনজনের সঙ্গে বসেছিলে, একটা মেয়েও ছিলো, আমি ভাবলাম প্রেসিডেন্সীর বুঝি, কবিতা আবৃত্তি করছিলে তুমি শুনছিলাম পাশের টেবিল থেকে, একটু একটু মনে আছে, বেশ কয়েকবার পড়লে তো: যে সব বান্ধবীরা একদিন ভালোবেসেছিলো/ যে সব বান্ধবীরা এককালে ভালোবাসা পেয়েছিলো আমাদের কাছে/ তাদের সবার ওষ্ঠে আজ দেখি কার্জনের টুকরো ফুটে আছে/ কারো কারো সীমন্তেও সিঁদুরের ছদ্মবেশে কার্জনের রং/ রাতের অন্ধকারে কার্জনের রক্তময় ঘাসে/ আমি আর চুম্বন করি না, রাইট?

    হেসে ফেললো সোমেশ্বর, বললো চা খাবে?

    তুমি খাওয়ালে।

    সোমেশ্বর উঠে দাঁড়ালো। পবিত্র বললো পয়সাটা আমাকে দাও, আমিই নিয়ে আসছি, তোমাকে খেতে খেতে উঠতে হবে না।

    দশ পয়সার কয়েনটা সোমেশ্বরের হাত থেকে নিয়ে বিল্টুদার কাউন্টার থেকে কুপন সংগ্রহ কোরে দু হাতে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে সোমেশ্বরের উল্টোদিকে বসতে বসতে বললো পবিত্র, আমার নাম পবিত্র সাধু, পারিবারিক নামটা এ রকম বিশ্রী হওয়া সত্ত্বেও, সাধুগন্ধ পাবে না এ গায়ে।

    তোমাকে চিনি, তুমি তো বিখ্যাত লোক, নেতা মানুষ, কে না চেনে তোমাকে কলেজে, চা টা কি আর এমনি এমনি খাওয়াচ্ছি ! তবে তুমি যে কবি, এ খবর জানা ছিলো না, সাধুগন্ধের লাইনটা তোমার বিজ্ঞাপন হিসেবে খারাপ নয়। আমার নাম সোমেশ্বর, আমিও তোমারই ক্লাশের, আমার চেয়েও কম ক্লাশ অ্যাটেণ্ড করো, তাই চেনো না আমাকে।

    এতো ভালো কবিতা লেখো – তোমার কবিতাই পড়ছিলে ধরে নিচ্ছি – কার কবিতা ভালো লাগে তোমার?

    ভালো লাগে, সে তো অনেকেরই! রবীন্দ্রনাথ বাদ দিলে জীবনানন্দ, সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, আর নীরেন চক্রবর্তী। তা ছাড়া আরও কতো।

    সমর সেন?

    সমর সেনও ভালোই, তবে খুবই কম পড়েছি। দু-একটা অ্যান্থলজিতে ছাড়া আর পড়িনি কোথাও।

    তোমাকে দেব সমর সেনের বই। এখন কোথায় যাবে, ক্লাসে?

    হ্যাঁ, অনার্সের ক্লাস আছে একটা।

    ঠিক আছে, দেখা হবে।

    সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজে কিছু একটা অনুষ্ঠান ছিলো, ওখানে কোন কিছু থাকলেই ভালো ভালো গান হয়, বিকেলে সোমেশ্বর আর ওর স্কুলের বন্ধু স্বরাজ কলেজ থেকে বেরিয়েছে যাওয়ার জন্যে, শঙ্কর ঘোষ লেনের মোড়ে দেখা হয়ে গেলো পবিত্রর সঙ্গে।

    কোথায় চললি, কফি হাউজ?

    ব্রাহ্ম সমাজ যাব। ভালো ভালো গান হয় ওখানে।

    তুই কি গাস নাকি?

    নাঃ, শুনি।

    আজ না হয় না-ই শুনলি, আমার সাথে চল এক জায়গায়।

    হাঁটতে হাঁটতে বৌবাজার। মোড়টা থেকে বাঁ দিকে একটু এগিয়ে, গোয়েঙ্কা কলেজ পেরিয়ে রাস্তার উল্টো দিকে একটা সোনার দোকানের পাশের সরু গলিতে ঢুকে একটা ঘর। চাটাই পাতা মেঝে, দু-একটা বেঞ্চি। চাটাইয়ের ওপর বসে একটা রোগা মতন মেয়ে আর তার চেয়েও রোগা একটা ছেলে খবরের কাগজের ঊপর লাল রং দিয়ে একটা পোস্টার গোছের কিছু লিখছে। ছেলেটাকে দেখে সোমেশ্বরের মনে হলো ওদের চেয়ে বয়েসে কিছুটা বড়, পরনে ধুতি-শার্ট, মেয়েটার একটা সাদামাটা শাড়ি। পবিত্র পরিচয় করিয়ে দিলো, এই আমিনুলদা, বিপ্লবের ভার বহন করতে করতে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড়; আর উজ্জয়িনী, উজ্জয়িনী ভৌমিক, এত বড় নামটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে, সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ কণ্ডিশন মিলে গেলেই ওজনদার নামটা ত্যাগ করে বিপ্লবকে নিয়ে নেবে মাথায়। আমিনুলদা, আমাদের নতুন কমরেড সোমেশ্বর, সোম বলে ডাকতে পারো, ফাটাফাটি কবিতা লেখে। লাল-টালের ছিটে আছে, রক্তপাতও ঘটাচ্ছে একটু একটু, আর এই ওর বন্ধু স্বরাজ। একে একে বিভিন্ন কলেজের কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো, আড্ডা শুরু হলো, একটু-আধটু কবিতা, গান, আর তার পরেই জোর তর্ক। এ তর্কে যোগ দিতে পারলো না সোমেশ্বর, বিষয়টা প্রায় অজানাই ওর। তেনালী নামের কোন একটা জায়গায় কম্যুনিস্ট পার্টির লোকজনরা কিছু একটা মীটিং করেছে, সেই মীটিং নিয়েই তর্ক। বেশ কয়েকবার চিন, সোহ্বিয়েত, খ্রুশ্চেফ, স্তালিন, ডাঙ্গে, নাম্বুদিরিপাদ, এ সব পরিচিত-অর্ধ পরিচিত নাম ঘুরে ঘুরে আসছিলো তর্কে, মাঝে মাঝেই জোর উত্তেজনা। সোমেশ্বর শুনছিলো, এ তর্কের উত্তাপও যে একটু একটু লাগছিলো না ওর গায়ে এমনটা নয়, কিন্তু মূল তর্কের বিষয় তো ওর কাছে প্রায় অজানাই !

    শুধু অজানা তাই নয়, অনভিপ্রেতও নয় কি? এই তো মাত্র দুয়েক বছর আগেই চিন-ভারত যুদ্ধ হয়ে গেছে। দেশপ্রেমের বন্যা বয়ে গেছে গোটা দেশ জুড়ে। দেশনেতারা জনসভা করেছেন, গ্রাম থেকে শহরে যেখানেই গেছেন তাঁরা, মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে, মেয়েরা তাদের নিজেদের গা থেকে গয়না খুলে দিয়েছে। সোমেশ্বর তখন স্কুলের সবচেয়ে উঁচু ক্লাশে। ওদের মাষ্টারমশাইরা এক দিনের বেতন দান করেছেন প্রতিরক্ষা তহবিলে, ওরাও একদিন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তিনদিনের টিফিনের পয়সা দান করবে ঠিক করলো। ওদের স্কুলে ছেলেদের কাছ থেকে মাসে মাসে টিফিনের টাকা নিয়ে রান্না করে টিফিন খাওয়ানো হতো। হেড স্যারের সঙ্গে দেখা করে ওরা বলে এলো তিন দিন ওরা টিফিন খাবে না, তার জন্যে যে টাকা বাঁচবে তা যেন প্রতিরক্ষা তহবিলে দিয়ে দেওয়া হয়। খুব খুশি হয়েই রাজি হলেন হেড স্যার। কম্যুনিস্ট নেতাদের অনেককে তখন বন্দী করা হয়েছিলো ডিফেন্স অব ইণ্ডিয়া অ্যাক্টে। খবরের কাগজে পড়েছে চিনের ব্যাপারে কম্যুনিস্টদের মধ্যে অনেক মতবিরোধ, তেনালীর মীটিং নিয়ে যে আলোচনা করছিলো পবিত্রর বন্ধুবান্ধবীরা তার থেকে মনে হলো ওরা সব চিনপন্থী, ওদের সঙ্গে মেশা দেশদ্রোহিতা নয় কি?

    কলেজে তখন ইউনিয়নের ইলেকশন আসন্ন, দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার, দেয়াল-লিখন, নানা দলের ব্যানার এখানে ওখানে। এতদিন বিশেষ গা করেনি সোমেশ্বর; ক্লাশ করা, কফি হাউজের আড্ডা, কবিতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, এ সব নিয়ে দিব্যি চলছিলো। হাওড়ায় বাড়ি ওর, হাওড়া স্টেশন থেকে বাসে উঠে কলেজ স্ট্রীটের মোড়ে নামে, তারপর হেঁটে কলেজ পর্যন্ত। পরের দিন কলেজে ঢোকবার আগে শঙ্কর ঘোষ লেনের মোড়ে আবার দেখা পবিত্রর সঙ্গে। পবিত্র আর অন্য একটা ছেলে, সে-ও মুখ চেনা, দুজনে মিলে একটা ব্যানার ঝোলাবার চেষ্টা করছিলো, সোমেশ্বরকে দেখতে পেয়েই বললো, এই সোম, ব্যানারটা ধর্‌ তো। ধরাধরি কোরে তিনজনে মিলে লাগিয়ে দেওয়া হলো সেটা, তারপর ব্যানারটা পড়লো সোম: যখনই প্রশ্ন ওঠে যুদ্ধ না শান্তি/ আমাদের বেছে নিতে হয় নাকো ভ্রান্তি/ আমরা জবাব দিই শান্তি শান্তি। ব্যানারের তলায় বিজ্ঞাপকের নাম, বি-পি-এস-এফ। পড়া হয়ে গেলে পবিত্রকে বললো সোম, তোমার সঙ্গে কথা আছে আমার।

    থাকবেই তো, বল্‌ কী কথা।

    এই যে যুদ্ধ শান্তি এ সব লিখেছো, তোমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করি, তোমরা কি চিনপন্থী?

    জোরে হেসে উঠলো পবিত্র, খুব যেন মজা পেয়েছে, তারপর বললো, কাল রাত্তিরে ঘুমোতে পারিসনি তো, শেষ পর্যন্ত চিনপন্থীদের খপ্পরে গিয়ে পড়লাম!

    ঘুমিয়েছি ঠিকই, কিন্তু একটা অস্বস্তি আছে, তাই খোলাখুলিই প্রশ্ন করলাম তোমাকে।

    শোন্‌, এই সব চিনপন্থী-রুশপন্থী হলো খবরের কাগজের ভাষা, ও সবে পাত্তা দিস না। পন্থা আসলে একটাই, সেটা হলো বিজ্ঞানভিত্তিক একটা জীবনাদর্শ। এই যে যুদ্ধ আর শান্তির মধ্যে বেছে নেওয়ার প্রশ্ন, এখানে তুই কি যুদ্ধের পক্ষে হতে পারিস?

    না, এটা ঠিকই যে মাথা খারাপ না হলে অযথা কেউ যুদ্ধের পক্ষে কথা বলবে না, কিন্তু তবুও যুদ্ধ তো অবশ্যম্ভাবী হয়েই পড়ে কোন কোন সময়।

    ঠিকই তো, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সবাই যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিলো, যুদ্ধ ছাড়া আর উপায় ছিলো না, কিন্তু সে লড়াই শান্তির পক্ষে, আ ফাইট ফর পিস। আর আমরা কাদের পক্ষে, কী পন্থী, এ প্রশ্ন যদি করিস তা হলে তার উত্তর হচ্ছে আমরা শ্রমিক-কৃষক-নিম্ন মধ্যবিত্তের পক্ষে, এরাই জনসাধারণ। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় অনেক মৃত্যুর কোল ঘেঁসে যখন বাবা ফেরে, কিন্তু ছেলে ফেরে না, তখন কোন্‌ যুদ্ধের বলি ছেলেটা? কার শত্রু সে? অনেক কথা আছে তোর সঙ্গে এসব নিয়ে, এখন ক্লাশে যা, বিকেলে তোর সঙ্গে কফি হাউজে দেখা হবে।

    দেখা হলো কফি হাউজে, সোম তখন ওর বন্ধুদের সঙ্গে। বন্ধুরা বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী, সবাই অল্পবিস্তর কবিতা লেখে, সবাই মিলে চাঁদা তুলে একটা কবিতার পত্রিকা প্রকাশের সীরিয়স আলোচনায় রত। পেছন থেকে ঘাড়ে একটা মৃদু টোকা, ফিরে দেখলো, পবিত্র। বললো, তিনটে লিটারেচার দিয়ে যাচ্ছি তোকে, পড়ে ফেলিস। ব্যস্ত আছি এখন, কাল সকালে কলেজে দেখা হবে। বলেই, অতি দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে যখন, সোম লক্ষ্য করলো দূরে দাঁড়িয়ে আছে আমিনুলদা। চোখাচোখি হতে হাত নেড়ে পবিত্রর সঙ্গে বেরিয়ে গেলো।

    পড়লি তো লিটারেচারগুলো, কী, একমত? – সকালে কলেজে দেখা হতে জিজ্ঞেস করে পবিত্র।

    বাই অ্যাণ্ড লার্জ, ইয়েস – বললো সোম।

    শোন্‌, তোকে একটা জরুরি কথা বলি। কলেজে ইলেকশন আর দিন পনের পর। নমিনেশন-টমিনেশনের পালা শেষ। এখন শুধু প্রচার। এরকম অবস্থায় আমাকে কলকাতার বাইরে চলে যেতে হচ্ছে দিন সাতেকের জন্যে। এখন প্রচারের দায়িত্ব তোর। ক্যান্টিনে চল্‌, তোকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

    পবিত্র ছাড়াও আরো চার-পাঁচ জনের সঙ্গে বসে কাজটা বুঝে নিলো সোম। ক্যাণ্ডিডেট লিস্ট পেয়ে গেছে। যে চার-পাঁচ জন ওদের সঙ্গে ক্যান্টিনে ছিলো তারা সবাই ক্যাণ্ডিডেট, এ ছাড়াও আরও যারা আছে, তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাবে সময় মতো। সব ছাত্রের চারটে করে ভোট, নিজের নিজের ক্লাশ রিপ্রেজেন্টেটিভ ছাড়াও সবাই ভোট দেবে জেনারাল সেক্রেটারী, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারাল সেক্রেটারী আর প্রেসিডেন্ট পদের জন্যে। সোমেশ্বর এখন থেকে ক্যাম্পেন-ইন-চার্জ, তার মানে তাকে ক্লাশে ক্লাশে গিয়ে বক্তৃতা দিতে হবে নিজেদের ক্যাণ্ডিডেটদের সমর্থনে। এ ছাড়াও ইনটেনসিভ পোস্টারিং এবং ওয়ল রাইটিং। ওদের আদর্শগত অবস্থান সংক্রান্ত পোস্টার বেশ কিছু পাওয়া যাবে বি-পি-এস-এফ অফিসে গেলে, সেগুলোয় বি-পি-এস-এফেরই নাম থাকবে। এ ছাড়া ক্যাণ্ডিডেটদের নামে নামে তাদের প্রত্যেকের প্রচারের জন্যে পোস্টার হাতে লিখে নিতে হবে, দরকার হলে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেও।

    প্রথম নিজের ক্লাশেই ঢুকলো সোম, সঙ্গে আরো দু-তিন জন। একজন টীচার চলে যাওয়া আর পরের জন আসার মাঝখানে যে ফাঁকটা, সেই ফাঁকে ক্যাণ্ডিডেটদের জন্যে প্রচার করা হয়, এটাই রেওয়াজ। গত বছর পর্যন্ত এ সব ব্যাপারে কোন উৎসাহ ছিলো না সোমের, প্রচার যখন হতো অলস মনে কী শুনেছে মনেও থাকতো না ওর। আর, গত বছর তো ইলেকশনের দিন আসেইনি কলেজে, ভোট-ফোট দেওয়ার প্রশ্নই ছিলো না। অথচ এ বছর ও আসছে এস-এফের ক্যাম্পেন-ইন-চার্জ হিসেবে প্রচার করতে। যেটুকু আরষ্টতা তা কাটাতে বেশি সময় লাগলো না সোমের। বিভিন্ন রকমের এলোক্যুশন করেছে তো ও স্কুলে; আবৃত্তি, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা আর নাটক। এস-এফের ক্যাণ্ডিডেটদের হয়ে বক্তৃতা দিয়ে যখন বেরোচ্ছে, হাততালি পড়লো জোর, এমনকি শ্লোগানও।

    সোমেশ্বর পরে ভেবে দেখেছে তিন দিন সময় লেগেছিলো ওর কলেজে এস-এফের মুখ হয়ে উঠতে। অন্য সাধারণ ছাত্ররা রীতিমত সমীহ করতে শুরু করলো, কলেজের কর্মচারীরা দেখে হাত নাড়ে এখন, এমনকি মুখোমুখি পড়ে গেলে প্রফেসররাও কেউ কেউ ঈষৎ হেসে পরিচিতির স্বীকৃতি দেন।

    এই নির্বাচনী প্রচারের উন্মাদনা সোমের রুটিনটা বদলিয়ে দিলো অনেকটাই। কলেজে পৌঁছিয়ে এখন আর ক্লাসে যাওয়ার তাড়া নেই, সোজা ইউনিয়নের ঘরে, অথবা ক্যান্টিনে। নানা রকমের আড্ডা-আলোচনা, যা এখন আর শুধুমাত্র ছাত্র ইউনিয়ন দখল বা টিকিয়ে রাখার রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অনেক বিস্তৃত তার পরিধি এখন; কম্যুনিস্ট পার্টির ক্রিয়াকর্ম, নেতাদের নানা মন্তব্যের টিপ্পনী, পার্টির বিপ্লবী অভিমুখের আলোচনা-সমালোচনা, এবং মার্কসবাদের তত্ত্ব আর তার নানা প্রয়োগ নিয়ে পড়াশোনা। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চললো তার পরিচিতের সংখ্যা। নতুন বন্ধুরা বেশির ভাগই যদিও নানা কলেজের বাম চিন্তার ছাত্রছাত্রী, মূল পার্টির পরিণত বয়েসের অনেকের সঙ্গেও পরিচয় হলো তার। নিজের কলেজের বাইরেও প্রসারিত হলো তার কাজকর্ম। স্কুলের সহপাঠী এক বন্ধুর সূত্রে প্রেসিডেন্সী কলেজে অনেক বন্ধু ছিলোই, এখন বিপ্লবী রাজনীতিতে আগ্রহী অন্য অনেকের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হলো তার।

    পুজোর পর পাকাপাকি ভাবেই ভাগ হয়ে গেলো পার্টি, যে অংশের সঙ্গে সোমেশ্বরের যোগাযোগ, সেটার নাম হলো সি-পি-আই (মার্কসবাদী)। ভাগ হলো যদিও, এবং পার্টির দলিলপত্রে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের রাস্তাকেই প্রকৃত পথ বলা হলো, সোম এবং তার বন্ধুদের মধ্যে পার্টির নেতৃত্ব সম্বন্ধে, বিশেষ কোরে বিপ্লব সংগঠিত করায় নেতৃত্বের সদিচ্ছা এবং ক্ষমতা সম্বন্ধে, অস্পষ্ট একটা প্রশ্ন থেকেই গেলো।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ২৫৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:০৬97377
  • শেখরনাথ,


      দারুণ শুরু করেছেন।


    একটা খটকা। আমার স্মৃতি বলছে যে ১৯৬৭র ইলেকশন ঘোষণা পর্য্যন্ত  লেখা হত (দেয়ালেও) সিপিআই (R) অর্থাৎ রাইট বা দক্ষিণপন্থী এবং  সিপিআই (L)অর্থাৎ লেফ রাইটট বা দক্ষিণপন্থী। ইলেকশন কমিশন যখন কাস্তে-ধানের শীষ সিম্বল ( যা ১৯৫২ থেকে অবিভক্ত পার্টির ছিলো) ডাঙ্গেপন্থীদের দিলো এবং কাস্তে-হাতুড়ি-তারা অন্যদল রণদিভের দলকে, তখন থেকে একদল সিপি আই ও অন্যদল সিপি আই (এম) লেখা শুরু করল।


    আমার ভুল হতে পারে, প্লীজ বলে দেবেন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন