এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বই

  • লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ মাইকেল কে

    ইন্দ্র
    আলোচনা | বই | ২২ জুলাই ২০০৭ | ৫২৭ বার পঠিত
  • জানিনা এরকম ব্যক্তিগত অস্থিরতার সময়ে এই অস্থির বইখানা নিয়ে কিছু লিখে ওঠা সম্ভব হবে কি না। তবু, লিখতে ইচ্ছে হল। বামনের ছায়াও দীর্ঘ হয়, যখন সূর্যাস্ত আসে। সেকারণে। অর্থাৎ কিনা এখন সূর্যাস্ত। ঘড়িতে দেখাচ্ছে ৮টা ৫৭,এখন গ্রীষ্মকাল। আমার কি বোর্ডের পাশে নিরীহভাবে শুয়ে আছে কালো মলাটের রোগা বইটি, Life & Times of Michael K ক্রীম রংয়ে লেখা। তার কিছুটা ওপর দিয়ে, সূর্যাস্তের গাছ-গাছালিঘেরা নির্জন রাস্তার ওপর দিয়ে আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে যে, সে একজন একলা মানুষ। তার গভীর, নির্জন পথ।

    তাই, লিখতে ইচ্ছে হল।

    সভ্যতার ঈশ্বরবন্দনা করে লেখক, জন ম্যাক্সওয়েল কোটজি, এই কথকতা আরম্ভ করেছেন।

    যুদ্ধ, জেনো পিতা আমাদের। রাজেন্দ্রপ্রতিম।
    কাউকে সে ঈশ্বরস্বরূপ করে, কাউকে মানুষ;
    কেউ ক্রীতদাস আর কেউ বা স্বাধীন ...

    এটি একটি ন্যারেটিভ। আখ্যানের নিয়ম মেনে যা ধাবিত হয় সময়ের একমুখী পথ ধরে, কালানৌচিত্য না মেনে; কোনো জাম্পকাট নেই, সময়কোলাজ নেই, দেখনদারী উত্তরাধুনিক ফাজলামো নেই। যাঁরা কিছু আর্টের প্রত্যাশা নিয়ে এসেছেন, কিংবা যাদুবাস্তবতা ছাড়া যাঁদের রোচে না, অথবা-"কোনো অর্থ নেই? এসো, তবে অর্থহীনতা নিয়েই হাসিঠাট্টা করা যাক'-বলে যাঁদের তুমুল হৈ-হল্লা, তাঁরা হতাশ হতে পারেন, এতখানি নীচু গলায় সরল ভঙ্গীতে বলা এই গল্প। বস্তুত:, উপন্যাসের একটি ছোট অংশ ছাড়া বাকিটা একজনমাত্র কথকের জবানীতে ধরা-তিনি লেখক নিজে। লেখক এখানে "আমি ' নন, তৃতীয় এক ব্যক্তিমাত্র।

    তৃতীয় বললেই আরো দুজনের কথা এসে যায়। একজন তো মাইকেল কে, অন্যজন? অন্যজন, তার নিজের ভাষায় বলতে গেলে-এক pharmacist turned makeshift medical officer turned footfollower - গৃহযুদ্ধে ভাঙ্গাচোরা দক্ষিণ আফ্রিকায়। মেডিক্যাল ক্যাম্পে যে অনবরত দেখে যায় মাইকেল কে-কে, অনবরত লিখে যায় মাইকেল কে-কে, অনবরত বুঝতে চায় মাইকেল কে-কে। তারই লেখায় আমরা পাই মাইকেল কে-র জীবন ও সময়ের দ্বিতীয় ভাগ। এই উপন্যাসের দ্বিতীয় কথক সে-ই।

    প্রসঙ্গত:, এই উপন্যাসের কোনো চরিত্রের গাত্রবর্ণই আমরা সরাসরি জানতে পারিনা, লেখক উল্লেখ করেন না। যেন মানুষের চামড়ার নানারকম রং হয় না, যেন এই স্বপ্নই ধরতে চেয়ে আমরা নিহত ভায়ের পাশে একা শুয়ে থাকি না। হা লেখক, আপনি ছাড়া আর কে এত ভালভাবে জানেন, চতুর্দিকে টেরিকাটা কতগুলি মানুষের মাথা।

    সময়েরও কোন উল্লেখ নেই। ইতস্তত: ঈশারা আছে, কেপটাউনের দাঙ্গার কথা আছে, সিভিল ওয়ারের কথা আছে, pass law আর পারমিটের কথা । শার্পভিল হত্যা শেষ হয়ে সোয়েটো দাঙ্গা শুরু হওয়ার আগে, অথবা পরে, হেক্টর পিটারসন গুলিবিদ্ধ হলে কিংবা তার একটু আগে, যখন বছর বারোর কিশোরটি তার বন্ধুদের সাথে মুখ নীচু করে বসেছিল- কি আসে যায় সময়ে- আমরা অনন্ত যুদ্ধে রত, যুদ্ধই ঈশ্বর-মাইকেল কে-র গল্প শুরু হয়।

    জন্মানোর পরে ধাইমা বলেছিল-কপাল ভালো গো, ছেলে তোমার ভাগ্যি করে এসেছে। মাইকেল কে-র চেরা ঠোঁট ছিল, cleft lip, দুধ খেতে পারত না মায়ের বুক থেকে, ফিডিং বটল থেকে। চামচে করে খাওয়াতে গেলে কেশে, বিষম খেয়ে একশা। অ্যানা কে তাকাতে পারত না ঐ দগদগে গোলাপী মাংসপিন্ডের দিকে, ঐ বাঁকা নাকটার দিকে। বড় হলে জুড়ে যাবে-ধাইমা বলেছিল। চেরা ঠোঁট সংসারে সুখ আনে -বলেছিল। মাইকেলের ঠোঁট জুড়ল না। মাইকেলের বুদ্ধি কম ছিল, কথা বলত নিশ্চয়ই বিকৃত স্বরে, চেরা ঠোঁটের জন্য-ছেলেমেয়েরা হাসত, পেছনে লাগত। সাধারণ স্কুলে অল্প কিছুদিন কাটিয়ে মাইকেলের জায়গা হল প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুলে। সেখানে মাইকেল শিখল একটু একটু লেখাপড়া, অঙ্ক কষা, ঘর মোছা, বিছানা করা, ঝুড়ি বোনা, কাঠের কাজ, বাগানের কাজ। ১৫ বছর বয়সে মাইকেল স্কুল থেকে বেরিয়ে কেপ টাউন মিউনিসিপ্যাল সার্ভিসের মালীর কাজে বহাল হল। বছর তিনেক বাদে সে কাজ ছেড়ে কিছুকাল বেকার কাটিয়ে শেষমেশ বাজারের প্রস্রাবাগারের রাত-পাহারার কাজ। এক শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুজন অচেনা মানুষ সাবওয়েতে মাইকেলের কাছ থেকে ঘড়ি, মানিব্যাগ আর জুতো ছিনতাই করে নেবে-মাইকেল পড়ে থাকবে, বুড়ো আঙুল আর পাঁজরার হাড় ভাঙা, হাতে একটা চেরা রক্ত-চোঁয়ানো ক্ষত। তারপর সে আবার ফিরে যায় তার পুরোনো কাজে।

    কুচ্ছিত মুখের জন্য মাইকেল কে-র কোনো মেয়েবন্ধু জোটেনি। মাইকেল কে একা একা থাকতেই ভালোবাসতো। বাগানের কাজ আর রাতপাহারা-দুজায়গাতেই সে নির্জনতার স্বাদ পেয়েছিল। কোনো কোনো শনিবার দুপুরের তোপের আওয়াজ শুনতে না পেলে সে সারা দুপুর একা একা কাজ করত। রোববার সকালে মাইকেল কে অনেক বেলা অবধি ঘুমোত; রোববার বিকেলে সে মা-কে দেখতে যেত।

    জুনের এক সকালে -মাইকেলের তখন একত্রিশ বছর বয়স- যখন সে বাগানের ঝরা পাতা কুড়োচ্ছিল, তার কাছে একটি চিরকুট আসে। মা পাঠিয়েছে; হাসপাতাল থেকে অ্যানা কে-কে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাইকেল যেন এসে মা-কে নিয়ে যায়। হাতের কাজ ফেলে মাইকেল সমারসেট হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছয়, যেখানে অ্যানা কে মেন এ¾ট্রান্সের ঠিক বাইরে রোদ্দুরে বেঞ্চে বসে আছে। মাইকেলকে দেখে সে কেঁদে ফেলে, আবার হাত দিয়ে আড়ালও করে, অন্যরা যাতে দেখতে না পায়। অ্যানা কয়েকমাস ধরে ড্রপসিতে ভুগছিল; শ্বাসকষ্ট, ফোলা হাত-পা-পেট নিয়ে যখন সে আর হাঁটতেই পারেনা, তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে পাঁচ দিন থেকে সে আর পারেনি, কেঁদেকঁকিয়ে বাড়ি যাবার অনুমতি যোগাড় করেছে। চারিদিকে মুমূর্ষু, অর্ধমৃত রোগীদের ভিড়,গুলিতে-ছুরির ঘায়ে -পিটুনিতে ঘায়েল রোগী সব থিকথিক করছে, ওয়ার্ডের বেড, মেঝে ছাপিয়ে করিডোরে অবধি। নার্সদের সময় নেই, বেডপ্যান চাইলে দেওয়ার কেউ নেই; অ্যানা একটা ড্রেসিং গাউন পর্যন্ত পায়নি।

    এবার আমি এই গল্পরেখা থেকে, এই সারানুবাদ থেকে একটু দূরে সরে আসব। সরে যাব না পুরোপুরি, ছুঁয়ে থাকব, গল্পকাঠামোটিকে সাজিয়ে দেব- এইমাত্র। অনুবাদ তো আর করছি না।
    মা-কে নিয়ে মাইকেল বাড়ি ফেরে, যে শহরে কিছুই ঠিকঠাক চলে না, সেই কেপ টাউনের বুকের ওপর দিয়ে। অ্যানা কে-র আস্তানা একটি বাড়ির সিঁড়িঘরে, সেখানে বিদ্যুতসংযোগ নেই, হাওয়া খেলে না, গুমোট ভ্যাপসা ভাব। অ্যানা পারে না, হাঁপিয়ে ওঠে, এই ছোট্ট আস্তানাটুকুও হাতছাড়া হলে-তার সম্ভাবনা যথেষ্ট- কি হবে, সেই ভয়ে অস্থির হয়। তারপর একদিন মাইকেলকে বলে- তুই আমাকে আমাদের গাঁয়ের বাড়িতে নিয়ে চল।

    ছেলেবেলায় ছেড়ে আসা গ্রাম, অ্যানা পুরোপুরি মনেও করতে পারে না, কিন্তু কি সবুজ লাগে, আর কি মোলায়েম ! ঝোপঝাড়ের নীচে মুরগীর ডিম খুঁজে পাওয়া যায়, মুরগীর ছানারা দৌড়োদৌড়ি করে অ্যানার স্বপ্নে। এই ভিখিরী-ভবঘুরে-ছিনতাইবাজ ভরা শহর, ভীড় বাস আর খাবারের দোকানের লাইন, যখন-তখন কারফিউ আর রাতের সাইরেনে কাঁপা শহর, পাগল বাবর আলির চোখের মত আকাশ-এসব কিছু ফেলে একবার, মরার আগে শুধু একবার নীল আকাশের নীচে ফিরে যেতে চায় সালেমনের মা। অ্যানা কে।

    এবার মাইকেল মা-কে নিয়ে যাবে গ্রামের বাড়ি। কিন্তু যেতে চাইলেই যাওয়া যায় না, সত্তরের সাউথ আফ্রিকার এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। পারমিট লাগে কালো মানুষের, তার দেশের ভেতর ছোট ছোট আরো অনেক দেশ,অগণন সীমান্ত, সারি সারি কাঁটা তার, সার বাঁধা পুলিশ প্যাট্রোল। পারমিট কবে আসবে? অগাস্টের আগে না। ট্রেনের রিজার্ভেশান? পারমিট না পেলে হবে না। আর যদি পিওন না আসে, পোস্ট অফিস কাজ না করে? তোমার প্রবলেম, ম্যান !
    প্রতীক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে মাইকেল বোঝে-এভাবে না, এপথে নয়। আর, একদিন সকালবেলা স্ক্র্যাপ লোহার টুকরোটাকরা দিয়ে নিজের বানানো ঠেলাগাড়িতে মা-কে বসিয়ে, আর খাবারদাবার, বিছানাবালিশ ঠেলেঠুলে তুলে দিয়ে মাইকেল বেরিয়ে পড়ে। রাস্তায়।
    অন্য রাস্তায়। যে রাস্তা মাঠঘাট-ঝোপঝাড়-বনবাদাড় পেরিয়ে, ক্কচিৎ কখনো হাইওয়ে ছুঁয়ে, কিন্তু সবসময়ই বর্ডার পুলিশ আর আর্মির চোখ এড়িয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে প্রিন্স অ্যালবার্টের দিকে। অ্যানা কে-র গ্রামে।

    পথের মধ্যে অ্যানা অসুস্থ হবে আরো, মাইকেল মা-কে ভর্তি করে আসবে অনিচ্ছুক, উদাসীন, ভিড় উপচে পড়া হাসপাতালে। আর পরদিন হাসপাতালে গিয়ে সে মা-কে দেখতে পাবেনা, নার্স বলবে-তোমার মা কাল রাতে মারা গেছেন, তুমি তো কোনো ফোন নাম্বার রেখে যাওনি, তোমার মাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, এই নাও ওঁর ছাই, নেবে? মাইকেল হাত বাড়িয়ে নেয় এক কৌটো ছাই। হাসপাতালে আর কোনো কাজ নেই, তাও যেতে ইচ্ছে করে না। কেন যে, মাইকেল জানেনা। এক রাত্তিরে হাসপাতাল চত্বরে মারপিট শুরু হলে সে অবশ্য কেটে পড়ে। কোথায়? মাইকেল জানেনা। প্রিন্স অ্যালবার্টেই একবার গিয়ে দেখি-ভাবে। এই রাস্তা হাঁটা, পুলিশ ও রাষ্ট্রকে এড়িয়ে একলা, ভীষন একলা মানুষের পথচলা, আর বারেবারে পুলিশের খপ্পরে গিয়ে পড়া, রাষ্ট্রের খপ্পরে গিয়ে পড়া- এইসব নিয়েই মাইকেল কে-র জীবন ও সময়গাথা।

    এই সময়ের মধ্যে কে প্রিন্স অ্যালবার্টে পৌঁছয়-মানুষ তো কখনো কখনো যেখানে যাবে বলে বেরিয়েছিল, সেখানে পৌঁছয়- শুধু সেজন্যেই। সেখানে ওর মায়ের বলা ঠিকানা কেউ চিনতে পারে না, কিংবা হয়তো মাইকেল কে-ই ভুল ঠিকানা বলেছিল। কি আসে যায়, গ্রামের শেষে এক পড়ে থাকা ভাঙ্গা খামারবাড়িতে কেউ থাকেনা, মাইকেলের জায়গা হয়ে যাবে। মাইলের পর মাইল জমি খালি পড়ে আছে, আফ্রিকার বিস্তীর্ণ সাভানা, বুনো ছাগলেরা চড়তে আসে। মাইকেল কে অনভ্যস্ত হাতে বুনো ছাগল মেরে খায়, গিরগিটী মেরে খায়, বুনো কন্দ, ফুল চিবিয়ে খায়। কখনো কিছুই খায় না। মাইকেল কে ধরা পড়ে, লেবার ক্যাম্পে পাঠানো হয় তাকে, কাঁটাতারে মোড়া লেবার ক্যাম্প। বাচ্চারা ওষুধ না পেয়ে মারা যায়, ব্র্যান্ডি আর অ্যাসপিরিন দিয়ে মরতে বসা বাচ্চার কান্না থামানো হয়; মাইকেলের গা গুলোয়, কাজে যেতে চায় না। "তুমিও একটা বাচ্চা'-রবার্ট বলে-"সারা জীবন ধরে শুধু ঘুমিয়েই গেলে। এবার অন্তত: জাগো। তোমাকে ওরা দয়াদাক্ষিণ্য করে কেন, ভেবেছ কখনো, তোমাকে আর বাচ্চাগুলোকে? কেননা ওরা ভাবে তুমি নিরীহ, তুমি ওদের কোনো ক্ষতি করবে না।'

    মাইকেল কে পালায়। আবার সে ফিরে যায় আফ্রিকার বুশভেল্ডের প্রশান্ত আস্তানায়; সেখানে প্রান্তিকদের প্রান্তিক মানুষ মাইকেল কে, সাদা উপনিবেশের কালো মানুষ, কালোদের মধ্যে দরিদ্রতম, কুৎসিত, যার কোনো মেয়েবন্ধু নেই, পিতৃপরিচয় নেই, পারমিট নেই, বোধ ও লড়াই নেই, যুদ্ধময় পৃথিবীতে কোনো পতাকা নেই("আমার কোনো যুদ্ধ নেই'-মাইকেল কে বলেছিল),ক্ষিদে ও যৌনতা নেই, আস্ত একখানা ঠোঁটই নেই-সেই মানুষ, কুড়ানিয়া ছোঁয়া কোদালিয়া কাটা ফরেস্টারচন্দ্র বাঘারুবর্মণ, যার শুধু একটা "মানষির নাম' আছে-সেই মাইকেল কে মাটিতে কুমড়োর বীজ পোঁতে। সত্যি কথাটা এই যে, আমি একজন মালী-মাইকেল ভাবে। গুহার মধ্যে থাকে। খিদে নেই, তাই খায় না; যা খায়, ধূলোর মত লাগে। মাটির মত লাগে। এই মাটি থেকে যখন খাবার জন্মাবে, তখন হয়তো স্বাদ ফিরে পাবো, মাইকেল ভাবে। নিজের ফলানো কুমড়ো পুড়িয়ে খেতে খেতে মাইকেল কে ভাবে-এত স্বাদু খাবার কি আগে কখনো খেয়েছি ! একটা গোটা জীবন সে মাটি ঘেঁটে আর কুমড়ো ফলিয়েই বেঁচে থাকতে পারবে, মাইকেল কে ভাবে।

    "একজন নতুন রোগী এসেছে ওয়ার্ডে, ছোটখাটো বুড়োমত একটা লোক; লেবার ক্যাম্পে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের সময় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল, হার্ট বিট আর রেস্পিরেটরি রেট খুব কম ছিল। সারা শরীরে অপুষ্টির লক্ষণ, খড়ি ওঠা চামড়া, হাত-পা-য়ে ঘা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়ছে ... ওকে নাকি ক্যারুর মাঝখান থেকে তুলে আনা হয়েছে, সেখানে ও পাহাড়ের গেরিলাদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র আর রসদ জমাচ্ছিল, ক্ষেতখামারি করছিল, ফসল ফলাচ্ছিল। নিজে যে কিছু খাচ্ছিল না, সে তো বেশ স্পষ্ট ......
    .... "তোমার মা এখন কোথায়?' -আমি জিগ্গেস করি। "মা গাছপালাদের বাড়তে সাহায্য করে ... ওরা পুড়িয়ে দিল .... মা-র চুলগুলো মাথার চারপাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলছিল, যেন আলোর চাকতি'-আমার চোখ থেকে অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে ও বলে ......
    ... আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, ও এই পৃথিবীর মানুষ কি না।
    (মেডিক্যাল ক্যাম্পের ডাক্তারের ডায়েরী)

    "ও তো একটা পাথরের টুকরো, একটা নুড়ি, সময়ের শুরু থেকে চুপচাপ একা একা নিজের মনে পড়ে রয়েছে। আর এখন ওকে তুলে নেওয়া হয়েছে, ও ঘুরছে হাত থেকে হাতে, লোফালুফি খেলা হচ্ছে ওকে নিয়ে। একটা ছোট্ট, শক্ত পাথর, নিজের চারপাশে কি হচ্ছে জানেনা, নিজেই নিজের খোলায় মোড়া। এইসব ইনস্টিটিউশন, ক্যাম্প, হাসপাতাল-ঈশ্বর জানেন আরো কত কি-এসবের মধ্যে দিয়ে ও একটা পাথরের মত গড়িয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের বিরাট অন্ত্রের মধ্য দিয়ে। একটা প্রাণী, যে কখনো জন্মায় নি ...

    .... "কথা বলো, মাইকেল্‌স, কথা বলো। শোনো, এই যে আমি কথা বলছি। দেখো, কত সহজ, কথা বলা। এই দেখো, আমি শব্দ দিয়ে ঘরটাকে ভরিয়ে তুলছি ..... বেঁচে থাকার কিছু একটা মানে তো দাঁড় করাও, মাইকেল্‌স ! নইলে এই জীবন থেকে হারিয়ে যাবে, কেউ দেখবে না, জানবে না। যুদ্ধের শেষে যখন ওরা বিশাল যোগ-বিয়োগের খাতা খুলে বসবে, তুমি তাতে শুধু একটা সংখ্যা হয়ে থেকে যাবে, আর কিছু না। তুমি নষ্ট হতে চাও না, তাই না? তুমি বাঁচতে চাও, চাও না?'

    ....... "কি ধরণের খাবার খেতে তুমি পছন্দ করো? কি খেতে চাও?' আমি ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

    দুর্বল হাত বাড়িয়ে আস্তে আস্তে ও ফ্ল্যাশলাইটটা সরিয়ে দিল। তারপর পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল।'

    (মেডিক্যাল ক্যম্পের ডাক্তারের ডায়েরী)

    "সত্যি বলতে কি, একটা,মাত্র একখানাই সুযোগ ছিল আমার। সে সুযোগ চলে গেছে, আমি জানবার আগেই চলে গেছে। যে রাতে মাইকেল্‌স পালাল,আমার ওর পেছন পেছন পালানো উচিৎ ছিল। এখন আর নাকে কেঁদে কোনো লাভ নেই, তৈরী ছিলাম না-এই অজুহাত দিয়ে লাভ নেই। মাইকেল্‌সকে সিরিয়াসলি নিলে আমি সবসময়েই তৈরী থাকতাম। আমার হাতের কাছে একটা বান্ডিলে জামাকাপড় ভরা থাকতো, পার্সে টাকাপয়সা থাকতো, দেশলাই বাক্স, বিস্কুটের প্যাকেট, সার্ডিনের ক্যান-সব গোছানো থাকতো। আমি ওকে আমার চোখের নাগালের বাইরে যেতে দিতাম না। যখন ও ঘুমোত, আমি দরজার চৌকাঠের পাশে শুয়ে থাকতাম; যখন জাগত, আমি নজর রাখতাম। আর, যখন ও লুকিয়ে বের হত, আমি ওর পেছন পেছন বের হতাম। আমি ছায়ার থেকে ছায়ায় লুকিয়ে থেকে ওর পেছন পেছন হাঁটতাম, সবচেয়ে অন্ধকার কোণটাতে পাঁচিল বেয়ে উঠতাম, হাঁটতাম তারায় ভরা আকাশের নীচে ওক গাছের সারবাঁধা রাস্তায় । কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে, ও থামলে আমিও থামতাম। যেন কখনো না ও আবার বলে বসে-এই লোকটা কে? কি চায়, আমার কাছে? কিংবা যেন দৌড়োতে শুরু না করে আমাকে সাদা পোশাকের পুলিশ ভেবে,- টেনিস-শ্যু আর ওভার-অল পরা, হাতের বান্ডিলে বন্দুক।
    সারা রাত্তির ধরে আমি ওর পেছন পেছন কুকুরের মত চলতাম অলি-গলি দিয়ে; আর দিনের বেলায় আমরা এসে পৌঁছতাম কেপ প্রান্তরের সীমানার কাছে,আমাদের দুজনের মধ্যে পঞ্চাশ পা দূরত্ব, হাঁটতাম ঝোপঝাড় আর বালি মাড়িয়ে, খুচখাচ বস্তিটস্তি এড়িয়ে, যেখানে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ধোঁয়া উঠছে আকাশের দিকে। আর এখানে, এই দিনের আলোয়, অবশেষে তুমি, মাইকেল্‌স, হয়তো আমার দিকে ফিরে তাকাতে। একজন ফার্মাসিস্ট টার্ন্ড ডক্টর টার্ন্ড ফুটফলোয়ার, যে কিনা ঠিক করে দিত কখন তুমি খাবে,কখন জাগবে; যে তোমার নাকে জোর করে নল গুঁজে দিত,ওষুধ গিলিয়ে দিত, তোমায় নিয়ে খোরাক করত-সবচেয়ে বড় কথা, সারাক্ষণ ধরে খাওয়ানোর চেষ্টা করত,সেইসব খাবার, যা তুমি খেতে চাওনা, খেতে পারো না।'

    "আর আমি তোমার সামনে এসে দাঁড়াতাম। বলতাম, "মাইকেল্‌স, আমি ক্ষমা চাইছি। ঠিক কাজ করিনি তোমার সঙ্গে, তোমায় চিনতে পারিনি শেষ দিন পর্যন্ত। আর এই যে এখন তোমার পেছন পেছন এসেছি, তার জন্যেও ক্ষমা চাইছি। আমি কথা দিচ্ছি, তোমার বোঝা হবো না ... আমি,আমি তোমাকে আমার দেখভাল করতে বলবো না, আমাকে খাওয়াতে বলবো না। আমার চাহিদা খুব অল্প। আমি জানি এ দেশটা খুব বড়, এত বড় যে সবার জন্যেই অঢেল জায়গা; তবু জীবন আমাকে শিখিয়েছে যে ক্যাম্পের বাইরে থাকা খুব কঠিন। ক্যাম্পকে এড়িয়ে চলা খুব কঠিন। তা-ও, তা-ও আমি এখনো বিশ্বাস করি এমন জায়গাও আছে যেখানে কোনো ক্যাম্প নেই, যা কোনো ক্যাম্পের এলাকার মধ্যে পড়ে না-কোনো পাহাড়চূড়া হয়তো, কিংবা জলার মধ্যে কোনো টুকরো দ্বীপমত, কোনো ঊষর জমি, যা মানুষের বাসযোগ্য নয়। .....

    "...... যে মুহূর্তে তুমি এসে পৌঁছেছিলে, মাইকেল্‌স, আমি যদি জেগে থাকতাম, যদি আমার তোমায় দেখার চোখ থাকত, আমি দেখতে পেতাম- তুমি কোনো ক্যাম্পে বিলং করো না। স্বীকার করতে বাধা নেই, আমি প্রথমে তোমাকে হাসিতামাশার জিনিষ ভেবেছিলাম। ....... যত দিন গেল, আমি ধীরে ধীরে তোমার প্রতিরোধের মানে বুঝতে পারলাম। তুমি একজন নায়ক ছিলে না মাইকেল্‌স, তুমি নায়ক সাজার ভাণও করোনি। অনশন আন্দোলনের নায়কও না। তুমি তো আসলে প্রতিরোধই করোনি। যখন আমরা তোমাকে লাফাতে বলেছি, তুমি লাফিয়েছ। আমরা আবার লাফাতে বলেছি, তুমি আবার লাফিয়েছ। তিনবারের বার যখন বলেছি, তুমি আর পারোনি,মাটিতে পড়ে গেছো; আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি, এমনকি বুঝতে অনিচ্ছুক যে সে-ও- যে,তুমি পারোনি,তার কারণ আমাদের আদেশ মানতে মানতে তুমি শরীরের সমস্ত শক্তি খুইয়ে ফেলেছ। অগত্যা আমরা তোমায় ধরে দাঁড় করিয়েছি (একটা পালকের বস্তার সমান ওজন তোমার) আর খাবারের সামনে বসিয়ে দিয়ে বলেছি : খাও, যাতে আবার তুমি গায়েগতরে হও আমাদের আদেশ পালনের জন্য। তুমি বাধা দাও নি। আমি বিশ্বাস করি, তুমি সত্যি সত্যি চেষ্টা করতে আমাদের কথা মেনে চলতে। ..... তোমার মন মেনে নিত,কিন্তু তোমার শরীর আর বইতে পারত না। যেসব খাবার আমরা তোমায় খাওয়াতাম, সবকিছুই তোমার শরীর উগরে দিত। তুমি আরো অস্থিসার হতে। কেন? আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম : কেন এই উপোসী মানুষটা কিছু খেতে চায় না? তারপর আমি তোমাকে দিনের পর দিন দেখতে দেখতে বুঝলাম, কেন। যে, তুমি ভেতরে ভেতরে কাঁদছ, তোমার চেতন মনও(শব্দটার জন্য ক্ষমা চাইছি) জানে না সে কথা। কাঁদছে অন্যধরণের খাবারের জন্য,যে খাবার কোনো ক্যাম্পে কোনোদিন পাওয়া যায় না।'

    "তুমি কি খেয়াল করেছিলে, আমি যতবার তোমায় চেপেচুপে ধরবার চেষ্টা করতাম, তুমি কিভাবে পিছলে পিছলে বেরিয়ে যেতে? আমি খেয়াল করেছি। জানো, আমি কি ভেবেছিলাম, যখন দেখলাম তুমি কাঁটাতারের বেড়া না কেটেই বেরিয়ে গেছো? তুমি নিশ্চয়ই একজন পোলভল্টার-তাই ভেবেছিলাম। হতে পারে, তুমি পোলভল্টার নও, মাইকেল্‌স, কিন্তু তুমি একজন মহান পলায়নশিল্পী, এক সেরা পলায়নবিদ : আমি মাথার টুপি খুলছি।'

    (মেডিক্যাল ক্যাম্পের ডাক্তারের ডায়েরী)

    মাইকেল কে আবার পালায়। রিহ্যাবিলিটেশন ক্যাম্পের মেডিক্যাল ওয়ার্ড থেকে। যখন ডাক্তার-নার্স-সুপারভাইজাররা ভাবছিল, আর মাত্র ক'দিন, ওর হয়ে এসেছে। এবার আর সে ফিরে যেতে পারেনি ভেল্ডে, তার প্রিয় মাটির কাছে। বরং তাকে আসতে হয় সেই পুরনো কেপ টাউনে, সেই নোংরা ঘিঞ্জি শহরে, অঢেল বুক পেতে দিয়ে যে শহর আটলান্টিকের ঢেউ আর সস্তা মদ, বেয়নেট আর ভাঙা মদের বোতল, ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি আর অলি-গলি-রাস্তা বেয়ে বয়ে চলা পেচ্ছাপের স্রোত-সব ধরে দুহাত বাড়িয়ে। আবার সেই ছোট্ট আস্তানা, সিঁড়িঘরের নীচে। ভ্যাপসা। মাইকেল কে, দুনিয়ার সেরা পলায়ন শিল্পীদের একজন, সেও পারল না শহর এড়িয়ে, প্রখর দিন এড়িয়ে ফিরে যেতে তার খোঁদলের ছায়ায়, কুমড়োলতার ছায়ায়। বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। কিংবা হয়তো হল না। বৃত্তটির এগিয়ে আসা, মিলনাকাঙ্খী চক্রবৎ রেখাটি যেখানে এসে হাত ধরবে তার সূচনাবিন্দুর,- কেননা তেমনই নিয়ম, আইন তেমনই,- সেখানে,তার ঠিক একটু আগে, কে জানে কার প্ররোচনায় রেখাটি ঈষৎ বেঁকে যায়,একটুখানি,ছোট্ট একটু, সূচীমুখ একটি ছিদ্র তৈরী হয়, যেন কুমড়োলতার আকর্ষ, ধরবে বলে এগিয়েছে : একলা মানুষের হাত।

    মাইকেল কে ভাবে,এই কারফিউর রাতে একজন একলা বুড়োমানুষ, যে কারফিউ অমান্য করে বেরিয়েছে-কেননা সে ক্লান্ত, এই সমুদ্রতটের জীবনে ক্লান্ত,ছুটির প্রয়োজন যার বড় বেশী, অথচ কোনো গাইড নেই যার-আসতেই তো পারে, এমন কোনো মানুষ, এই দুর্গন্ধময় সিঁড়িঘরের নীচে ! তারা দুজনে এক বিছানায় শোবে, এমন তো আগেও কতবার হয়েছে, আর সকালের প্রথম আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে, ব্যাকস্ট্রীট দিয়ে হেঁটে যাবে; শুধু মাঝখানে একবার থেমে কিছু বীজ কিনে নেবে, বড় প্রয়োজন বীজের, ভুল হয়ে গিয়েছিল আগে, যথেষ্ট পরিমাণ বীজ ছিল না সঙ্গে, বীজ ছড়ানো হয় নি।

    বুড়ো মানুষটা হয়তো খামারে পৌঁছে বোমায় উড়ে যাওয়া পাম্পটার হাল দেখে বিড়বিড় করে অভিযোগের সুরে মাইকেলকে বলবে -জলের কি বন্দোবস্ত করবে হে ?
    মাইকেল কে তখন পকেট থেকে একটা চামচ বের করবে,আর বিশাল একখানা দড়ি। ভাঙা পাইপের মুখ থেকে ইঁট-বালি সরিয়ে সে বাঁকানো চা-চামচটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাইপের মধ্যে ঝুলিয়ে দেবে; আর মাটির অতল থেকে এক চামচ এক চামচ করে জল তুলে আনবে; মানুষ তো, সে হয়তো বলবে, এভাবেও বাঁচতে পারে!

    জুলাই ২২, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২২ জুলাই ২০০৭ | ৫২৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন