সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আমারো বেশ আগ্রহ আছে। তাঁর সিনেমা আমার ঠাকুরদা শেষবেলায় দেখেছেন। বলেছিলেন, বাহ, এই মাইয়াডা দেখি অভিনয় জানে! তাঁকে বাবাও পছন্দ করতেন। আমার ভাতিজা ভাগ্নেভাগ্নিনীরাও করে। সমগ্র বাঙালিরই প্রিয় প্রিয় নায়িকা সুচিত্রা সেন। আমি এই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছি। যা হয় আরকি। আমি যেহেতু কোনো পত্র পত্রিকায়, বলা যায়, লিখি না। এক বৈঠকে লিখি না। ইচ্ছে হলে লিখি। ইচ্ছে হলে লিখি না। একটু একটু করে লিখি। শব্দ সংখ্যার ধারধারিনা। তাই গল্প বড়ো হয়ে যায়। গোপনে বলি আপনাকে, আমার ঠাকুরদা সুচিত্রা সেনকে কিডন্যাপ করেছিলেন। এটা সত্যি মনে করে মজা পাই। আরেকটা কথা। আমার গল্পের অনেক চরিত্র বাস্তব। আবার আমার পরিচিতিদের নামধামও অবলীলায় বসিয়ে দেই গল্পে। অনেকে এজন্য গোস্যা করেন। অনেকে খুশি হন। সে যাই হোক না কেনো যারা পড়বেন এটাকে গল্প হিসেবেই পড়বেন। এই গল্পের রবি ঠাকুরও একবার চরিত্র হয়ে এসেছেন। সুচিত্রার জন্য না এসে পারেননি। সুচিত্রা সেন বলে কথা। ... ...
শিল্পী সুলতানের কথা আমার বলার অধিকার আছে? আমি জানি না। উনার কিংবদন্তী কাজ গুলো সম্পর্কে তো খুব অল্প জানি। এদিক সেদিকে কিছু কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা আমাকে করে ছিল। ক্ষেতে খামারে কাজ করছে কিন্তু একেকজনের কী পেশিবহুল শরীর একেকজনের। সুলতান লেখককে ব্যাখ্যা করেছে কেন তার চরিত্ররা এমন দারুণ স্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি বলছেন বাঙালিকে দুর্বল ভাবার কোন সুযোগ নাই। যারা প্রতি বছর ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে ক্ষেতে খামারে কাজ করে টিকে আছে তারা কীভাবে দুর্বল হয়? তিনি এই খেটে খাওয়া মানুষদের ভিতরের শক্তির ছবি এঁকেছেন! তখন প্রশ্ন আসছে উনার আগের ছবিতে কেন এমন চরিত্র আঁকেন নাই? তখন কি তিনি তেমন ভাবতেন না? সুলতান জবাব দিয়েছেন তখনো তিনি তেমনই ভাবতেন। কিন্তু আঁকেন নাই। কেন? কারণ হচ্ছে তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি! মুক্তিযুদ্ধের পরে উনি যা এঁকেছেন সব জায়গায়ই এমন পেশিবহুল মানুষের আনাগোনা। উনার কথা হচ্ছে পরাধীন একটা জাতিকে এমন শক্তসমর্থ করে আঁকলে তা বিশ্বাস যোগ্য হত না। কী দারুণ না! ... ...
এই গাঁয়ে ‘কানা’ বোলে তো পন্ডিত রাধেলাল। ওর একটা চোখ অন্যটির চেয়ে ছোট, তাই ‘গঁজহা’র দল ওকে কানা বলে ডাকে। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হল- এক হিসেবে আমাদের সবকিছুই প্রাচীন ঐতিহ্য — কেউ বাইরে, মানে অন্য রাজ্যে, যাবে তো কথায় কথায় বিয়ে করে নেবে। অর্জুনের সঙ্গে চিত্রাংগদা আদি উপাখ্যানে তাই হয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রবর্তক রাজা ভরতের পিতা দুষ্যন্তের সঙ্গেও তাই। যারা আজকাল ত্রিনিদাদ কি টোবাগো, বর্মা কি ব্যাংকক যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও ঠিক ওইসব হচ্ছিল। এমনকি আমেরিকা বা ইউরোপে গেলেও একই হাল। সেই হাল হল পন্ডিত রাধেলালের। ... ...
কমল নিজের ডান হাত দিয়ে লতিকা গুহর বাঁ গালে ভয়ংকর জোরে চড় মারতে শুরু করে। এতটাই নির্মমভাবে কমল চড় মারছিল যে অর্চনার মনে হয়েছিল লতিকার চোখ কোটর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবে। বেশ কিছুক্ষণ চড় মারার পর লতিকাকে চেয়ারে বসানো হয়। অর্চনা দেখেন, লতিকার গাল ভয়াবহ রকম ফুলে গিয়েছে এবং তাতে স্পষ্ট আঙুলের দাগ। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের মসনদ ধর্মান্ধ হিংস্র মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনায় আতঙ্কিত ছিলেন এ রাজ্যের গণতন্ত্র-প্রিয় মানুষ। ফলপ্রকাশের পর যখন দেখা গেল যে তা ঘটেনি, তখন তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, উঠে এসেছে এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন। এ রাজ্যের পূর্বতন ক্ষমতাসীন বাম শক্তি, বিশেষত তার বড় শরিক সিপিএম, কি মৌলবাদী শক্তিকে গোপনে সাহায্য করেছে? অর্থাৎ, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে যারা হঠিয়েছে, সেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ক্রোধ ও প্রতিহিংসা বশত তাদের কর্মী ও সমর্থকেরা কি বিজেপি-কে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চেষ্টা করেছিলেন? নির্বাচনের আগে থেকেই এ হেন সম্ভাবনার কথা হাওয়ায় ভাসছিল কোনও কোনও মহলে, এবং নির্বাচনের পর তার ‘প্রমাণ’ মিলেছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনী ফলাফল থেকে সত্যিই এমন ইঙ্গিত মেলে কি? সেটাই আজ আমরা এখানে পর্যালোচনা করে দেখব। ... ...
আমাদের সেই পঞ্চাশের দশকে অক্ষর পরিচয় হতেই ধারাপাত নামের একটা লম্বাটে পাতলা বই খুলে এইসব শুভংকরের আর্যা আর কড়া-গন্ডা-পণ জোরে জোরে দুলে দুলে মুখস্থ করতে হত। "কুড়োবা কুড়োবা কুড়োবা লিজ্জে, / কাঠায় কুড়োবা কাঠায় লিজ্জে। / কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ, / বিশগন্ডা হয় কাঠার সমান।" ... ...
তথাকথিত ক্যুইয়ার কমিউনিটিতে বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে আমার আছে। অদ্ভুত একটা মাতৃত্বের অনুভুতিতে সত্যিই তাদের জন্য অপত্যস্নেহের এতটুকু ঘাটতি নেই। Happy Mother's Day ... ...
নিচের স্টুডিওতে ঢুকে কবিগুরুর মূর্তিটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন বৃদ্ধ। ভাস্কর্যের গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে যেন অনেক দূর থেকে বললেন, "সুধীর কিন্তু কাজটা খুব ভালো করেছিল, বল। আমার যেখানে যত মূর্তি দেখেছি -- ," তারপর মজদুরমন্ডলীর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে কৌতুকের গলায় বললেন, "এটা কিন্তু তুমি বল নি -- কত লোক যে আমার ছবি এঁকে আর মূর্তি বানিয়ে সংসার করছে এত বছর!" এই প্রথম শব্দ করে হাসতে শোনা গেল বুড়ো মানুষটিকে। সবাই তখন বাইরে জনতা সামলাতে ব্যস্ত। ... ...
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের তাহলে কী হবে? অ্যাবানডানড? যারা এই দুঃসময়েও পার্টিকে ভোট দিল, পাশে দাঁড়াল, তারা অপাংক্তেয়? তা অবশ্যই নয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক অভিমুখ অবশ্যই গরীব, মেহনতি মানুষ - কৃষক, শ্রমশিল্পী - কিন্তু মধ্যবিত্ত মানুষ তার বাইরে পড়ে না। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার আসলে নামেই মধ্যবিত্ত, শ্রেণীগতভাবে তাদের অবস্থান নিম্নবিত্তের থেকে খুব একটা ভাল নয় - এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" না হলে এই মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নটাও, আবারও, প্রশ্নটা যত কঠিন, উত্তরটা তত নয়। বৃহৎ শিল্প মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ায় বলে যে মিথ প্রচলিত আছে, সেই মিথ বার্স্টিং করার সদিচ্ছের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর। ... ...
এবারের ভোট শুধুমাত্র পার্টি, দলীয় কর্মী, সমর্থক আর কিছু সুবিধেবাদীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এবারের ভোটে বিপুল ভাবে সামিল হয়ে পড়েছিল সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ।বিজেপির মত আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে রুখে দেওয়ার প্রয়োজনটা অনুভূত হয়েছে সেই সিভিল সোসাইটির অন্দর থেকেই। ... ...
যেটা চিন্তার সেটা হলো এই দর্শন, এই রাজনীতি। ইরাক যুদ্ধের সময় বুশ সিন্ড্রোম বলে কুখ্যাত হয়েছিলো যে উক্তিটি – “যদি তুমি আমার বন্ধু না হও, তবে তুমি আমার শত্রু”। এক সাম্যাজ্যবাদীর যে দর্শন মানায়, তাতে যদি বামপন্থী বলে দাবী করা কেউ আস্থা রাখে, তবে বুঝতে হবে সমস্যা গভীরে। এ দর্শন সাম্রাজ্যবাদ তথা ফ্যাসীবাদের দর্শন, যে তার মদমত্ত অহংকারে বন্ধু চিনতে ভুল করে, বা বলা ভালো বন্ধু চিনতে অস্বীকার করে। এ দর্শন বাম বলে কথিত পরিসরে জোরেশোরে মান্যতা পাচ্ছে মানে এ রাজ্যে বিজেপি ভোটে যতই হারুক, সে তার “কার্বন ফুটপ্রিন্ট” ছেড়ে গেছে। আজ না হলে তা বিষবৃক্ষ হয়ে ওঠার আগেই তাকে নির্মূল করে ফেলার কাজে সচেষ্ট হতে হবে। ... ...
আপনি নিজে একা বা ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে যখন কোন হোটেলে ওঠেন, তখন কোনদিন সেই হোটেলের ‘ফায়ার-এসকেপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? মানে ধরুণ আপনি সেই হোটেলের পাঁচতলায় আছেন, হঠাৎ রাতের বেলা আগুন লেগে গেল কোন কারণে! কি করবেন আপনি? এটা আমরা সবাই জানি যে আগুন লাগলে লিফট ব্যবহার করা উচিত নয় (আর এমনিতেই আগুন লাগলে লিফট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবার কথা) – তাহলে আপনি কিভাবে নামবেন নীচে? বেশী সময় নেই কিন্তু আপনার হাতে – আগে থেকে দেখে রেখেছেন কি সিঁড়িটা কোন দিকে যাতে বিপদের সময় আপনাকে খুঁজতে না হয়! ... ...
সৌমেন গুহ একটা বই লিখেছিলেন, লোয়ার কোর্টে রুণুর বিরুদ্ধে রায় বেরোনোর পর। পাবলিশিং ইয়ার- ১৯৯৭। Battle of Archana Guha Case - Against Torture in Police Custody: Arguments, Counter-arguments and Judgement at the Trial Court। ... ...
রণজয়ের বৌদি-ই প্রথম যে আমার আর রণর সম্পর্কটা আন্দাজ করেছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলেনি কোনও দিন। রণর তুতো বোনেরাও রণর সাথে সাথে আমাকে ভাইফোঁটা দিত।সবাই মিলে মাঝে মাঝে কখনওসখনও সকলের আড়ালে আমাকে রণর বৌ বলে মজা করতে ছাড়ত না, যা হয়তো আমাকে মনে মনে অন্যরকম সুখ দিত। মনে মনে আমিও যেহেতু রণর বৌ,তাই সংসারের মঙ্গলের দায় তো আমার ওপরেও কিছুটা বর্তায়।সম্পর্কটা শুধু আমরা দুজনের যাপনেই সীমাবদ্ধ থাকলেও অতগুলো বছর আগে তো ওটাই ছিল আসলে আমার সংসার। তথাকথিত ভাবে নিজেকে মেয়ে না ভাবলেও মনে মনে নিজেকে রণজয়ের বৌ ভাবতে কোথাও কোনো অসুবিধা ছিলোনা আমার। আসলে আজও তো অভিধানে অন্য কোনো শব্দ খুঁজে পাইনা। ৩৭৭ পরবর্তী সমযে আজও তো সমকামী বিবাহের নেই কোনো আইনি স্বীকৃতি। আর অতগুলো বছর আগে সেসব তো কষ্টকল্পনা। ... ...
কোপারেটিভ ইউনিয়নের তবিল-তছরূপের ঘটনাটি বড্ড সাদামাটা ঢঙের, বড্ড সরল। রোজ রোজ চারদিকে যে শত শত তছরূপ হচ্ছে তার থেকে এ একেবারে আলাদা। এর সৌন্দর্য্য এর সরলতায়। এ একেবারে বিশুদ্ধ তছরূপ; কোন প্যাঁচ নেই। এতে কোন জাল দস্তখতের গল্প নেই, না কোন জালি হিসেব, না কোন নকল বিল দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে।এমন তছরূপ করতে বা ধরে ফেলতে কোন টেকনিক্যাল যোগ্যতার দরকার নেই। যা দরকার তা’হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ... ...
আমার মায়ের দাদু ছিলেন গ্রামের মোড়ল। আমার মায়ের প্রপিতামহী গঙ্গাযাত্রা থেকে বেঁচে ফেরার পর সন্তান লাভ করেছিলেন । আজ থেকে অতগুলো বছর আগে ঠিক কোন শারীরিক ব্যাধির কারণে তাঁকে গঙ্গাযাত্রায় পাঠানো হয়েছিল তা আমি জানতে পারিনি। মাকেও জিজ্ঞাসা করিনি কখনো তাই সেটুকু আমার অজানাই রয়ে গেছে। তবে গ্রামের লোক অনেক পরেও গঙ্গাপুত্রের বংশ বলে মোড়লদের অভিহিত করতো সেটুকু আমি ছেলেবেলায়ও দেখেছি। মায়ের সেই বড়ঠাকুমার দান ধ্যানের গল্প আজও শোনা যায়। অত বছর আগে গ্রামীণ পাঠশালা তৈরির জন্য জমিও তিনি দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সে পাঠশালা আজ প্রাথমিক ইস্কুলে পরিণত হয়েছে। কালের নিয়মে আজ সে সব কথা হারিয়ে গেলেও আজও কান পাতলে শোনা যায়। ... ...
নেতি, একটি অবস্থান। যা দার্শনিকও বটে। কখনও কখনও তা অতি জরুরি অবস্থান, ও রাজনৈতিক ভাবে যথাযথ। কেবলমাত্র বিরোধিতার মধ্যে সুপ্ত থাকে অসংখ্য ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত। সেই সম্ভাবনাগুলিকে ছুঁয়ে থাকার জন্য রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। অতিক্রম করতে হয় ক্ষুদ্রতর প্রেক্ষিতের সীমানা। ... ...