এক বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন বলে, কয়েকমাস পরে পেনশন তুলতে গেছেন সরকারি আপিসে। গিয়ে শোনেন আইন বদলে গেছে। এবার শুধু হাজিরা দিলেই হবেনা, কাগজ লাগবে। কী কাগজ? কর্তব্যরত কেরানি বললেন, জ্যান্ত সার্টিফিকেট।- সেটা আবার কী? কেরানি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে বললেন, ডেথ সার্টিফিকেট শোনেননি? শ্মশানে দরকার হয়? সেইরকম জ্যান্ত সার্টিফিকেট লাগবে। নইলে সরকার জানবে কীকরে আপনি জ্যান্ত আছেন? যান কাগজ নিয়ে আসুন। ... ...
বাইরের ঘরের এই সবুজ রঙের সোফাটা এমনিতে দেখলে মনে হয় একবারে কালচে শ্যাওলামাখা একটা পাথরের স্ল্যাব। হাত রাখলেও মনে হয়, ওপরে চাদর পাতা কঠিন কাঠের বেঞ্চ। কিন্তু জিনিসটার ওপর শুলেই কাঠিন্য আর বোঝা যায় না, আচ্ছাদনটা ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। তারপর একসময় নিলয় ডুবে যায় সোফার ভেতর। আর শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করলে এই পুরো ডুবে যাওয়াটা এত তাড়াতাড়ি হয় যে নিলয় ইদানীং আলাদা করে কিছু বুঝতেও পারে না। ... ...
সকালে উঠে মশারি সরিয়ে নামতেই চোখ গেল সামনে রাখা টেবিলের দিকে। আর যেতেই মাথাটা গরম হয়ে গেল অবিনাশবাবুর। কাল একটু রাতের দিকে মাসকাবারি মুদির জিনিসপত্র ডেলিভারি দিয়েছিল। তুলে রাখার ইচ্ছে হয় নি বলে টেবিলের ওপর সব রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সানলাইট সাবান ছিল, মশলা, তেল আর তার সঙ্গে পাঁচ কেজি চাল। বাকি সব ঠিক থাকলেও চালের প্যাকেটের প্লাস্টিক কুটিকুটি করে কাটা, চাল ছড়িয়ে আছে টেবিলের ওপর যার কিছুটা মেঝেতেও গড়িয়ে নেমেছে। ইঁদুর! ... ...
বাইরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে। জীবন্ত সম্প্রচারের সময় হয়ে এল। এই গুহাতে কোনো প্রাকৃতিক আলো , হাওয়া আসে না। গুহার নকল সিলিংকে পেঁচিয়ে শুয়ে আছে গোলাপি এলইডি আলোকলতা। তাদের ফুলের আভায় সারা ঘরে এক অদ্ভুত হালকা আলো আঁধারির খেলা। ... ...
ভাষাদিবসের দিনে এক পুরোনো গালগপ্পো ... ...
শোভার মুখে ‘বাঘাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ কাহিনী শুনে রীণা যতীনবাবুর কাছে আব্দার করে, বাঘাকে রেখে দাও না, বাবা। বাঘা তখন উঠোনের এপাশ ওপাশ, হাঁসের ঘর, সাদা ইঁদুরের ঘর শুঁকে বেড়াচ্ছে। যেন বিয়ের পর প্রবাসে চলে যাওয়া মেয়ে বহু বছর পর বাপের বাড়ি এসে এখানে ওখানে স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছে। দড়িতে ঝোলানো খাঁচার টিয়াটা উত্তেজিত হয়ে এপাশ ওপাশ করে ট্যাঁ ট্যাঁ করে চ্যাঁচাচ্ছে। তবে বাঘা ঢাকা বারান্দায় ওঠেনি। বসার ঘরেও যায়নি। কোনো অবোধ্য কারণে হয়তো ও বুঝেছে ওসব জায়গায় যাওয়ার অধিকার সে হারিয়েছে ... ...
গাঁজাখুরি গরুর গপ্পো ... ...
প্রথমে কিছু গগনবিদারি শ্লোগানে গা গরম করে নিয়ে মাইকটা এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল জনপ্রিয় সুরে দল ও নেতার বন্দনাগীতিতে। ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের ভীড়ে জায়গাটা ভরে গেছে। ওদিকে আরো কিছু মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ কোণাটিতে দাঁড়িয়ে গেছে; অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীদের হুংকারে তাদের মাঝেমধ্যে কষ্টকর দিকবদল করতে হচ্ছে! সভার প্রবেশদ্বারটা প্রশস্ত হওয়ায় কোণাগুলি একটু বেশিই বেঁকে গেছে, না হলে সামান্য লম্ফ-ঝম্ফ - এ আর কী এমন কঠিন কাজ! ... ...
জোলো বাতাসে কুয়াশার ঘেরাটোপকে আমার বাপের বাড়ির মশারির মতো লাগছিল, এই পথঘাট ফলত স্বপ্নের এবং অবাস্তব - মানুষজন যেন জোব্বা পরা মরুবাসী অথবা মেরুপ্রদেশের; কুয়াশার সর ক্রমশ এমন ঘন আর রহস্যময় হয়ে উঠছিল যে চেনা পাড়াকে অজানা দ্বীপ বোধ হচ্ছিল - কুয়াশা ফুঁড়ে যে কোনো মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রকাণ্ড কাছিম অথবা ক্ষুদে পেঙ্গুইনের দল, অ্যালবাট্রসের পাখার ঝাপট লাগতে পারে গায়ে। ... ...
‘’কিন্তু সেই দিনটিতে …সেই ভয়ংকর দিনটিতে … সেদিন …সেদিন তো আমাকে, তোকে … দুজনকেই চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল ওর উপর! কিন্তু ও তো সেদিন …সেদিন …পুরো নিথর….আহারে! আর নড়ার শক্তি ছিল না বাছার আমার! আর কোন শক্তিই অবশিষ্ট ছিল না দেহে ..সব শেষ হয়ে গিয়েছিল…সব …’’ কথা শেষ করতে পারে না পাতলা; হঠাৎ চতুর্দিকে ঘন ধুলোর পর্দা পড়ে যায়, বাতাসের দাপটে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়, তারের উপর বেঁধে রাখা অবয়ব দুটো আর কেউ কাউকে দেখতে পায় না! কিছুক্ষণের মধ্যেই অঝোর ধারায় পড়তে শুরু করবে ভারী অথচ হালকা সব মেঘের দল, যারা লম্বা সময় ধরে ধৈর্য ধারণ করে বসেছিলেন আ-কাশ বিস্তৃত নীলিমার গায়ে হেলান দিয়ে! ... ...
দুইদিন পর রোজিনা আচলের কাপড় ঘঁষতে ঘঁষতে যখন ছেলের জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করা শুরু করেছিল, রওশানারা তাকে থামিয়ে দিয়ে কণ্ঠটা চিকুন করে জানতে চেয়েছিলেন, “আগে ক, পোলার কুনো ব্যারাম আছেনি?” এক গাল হেসে দিয়ে রোজিনা মোটা কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিল, “ যেই হারে ব্যায়াম করে, ব্যারাম আইবো কোথ থনে? নিশ্চিন্ত থাহেন ফুবুয়াম্মা, পোলারে একটা কাশ দিতেও হুনে নাই কেউ কহনো। ‘’ ... ...
"কোনো মেসেজ এলে তোমরা যখন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে হাসিহাসি মুখে কিছু টাইপ করো , সেই মুহূর্তের ছবি কেউ তোমাকে তুলে দেখিয়েছে? " প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি নিঃসঙ্গতা বেসিনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখেচোখে রাগের ছাপ। রাগলে নিঃসঙ্গতার সুন্দর গোল মুখ চৌকো হয়ে যায়। নাম না করতেই এসে গেছে , অবশ্য এমনিতেও অনেকদিন বাঁচবে, নিঃসঙ্গতা তো অবিনশ্বর। ... ...