ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্তভাবে বাংলায় কায়েম হওয়ার আগে পর্যন্ত সরকারি প্রশাসনিক ব্যবস্থার উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। মুঘল আমলে যোগ্যতার ভিত্তিতে হিন্দুদের উচ্চপদে নিয়োগ করার যে প্রথা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই আমলের রমরমা যখন প্রায় অস্তাচলের মুখে তখনও বাংলায় সেই প্রথার কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, নবাবি আমলেই রামমোহনের ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পুরুষ পরশুরাম বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজসরকারে উচ্চপদে আসীন হন এবং ‘রায়-রায়ান্’ উপাধি পান। রামমোহনের পিতামহ ব্রজবিনোদ আলিবর্দি খাঁর শাসনকালে বিশিষ্ট রাজকর্মচারী ছিলেন, পিতা রামকান্ত রায়ও মুর্শিদাবাদ সরকারে কাজ করতেন। এমনকি ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলা ও বিহারের দেওয়ানি লাভ করার পরে একদিকে বাংলায় রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় মহম্মদ রেজা খাঁ-র ওপর, অন্যদিকে সিতাব রায় বিহারের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান। এর অর্থ দাঁড়ায়, ১৭৯৩ সালের ২২ মার্চ ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু হওয়ার আগে এই ব্যবস্থাটা সারা বাংলা জুড়েই ব্যাপকভাবে চালু ছিল।
একই রকম চিত্র দেখা যায় সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিতেও। কৃষক-কারিগর-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা জমিদারের অধীনস্থ নিম্নপদের কর্মচারী নিয়োগের বিষয়েও এই পার্থক্য ছিল না। ফারসি রাজভাষা হিসেবে চালু থাকায় মুসলমান শিক্ষকদের কাছে হিন্দু ছাত্রদের ফারসি ভাষা শিক্ষাগ্রহণের চলও যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। রামকান্ত পুত্র রামমোহনকে আরবি ও ফারসি শেখার জন্য পাটনায় পাঠিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রচলিত পাঠশালা শিক্ষাব্যবস্থায় হিন্দু-মুসলমান ছাত্র কিংবা শিক্ষকদের মধ্যে তেমন ভেদাভেদের দৃষ্টান্তও পরিলক্ষিত হয় না।
কিন্তু চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবাদে যখন অত্যধিক ভূমিরাজস্বের দায়ে মুসলমান জমিদাররা তাঁদের জমি বিক্রি বা নিলাম করতে বাধ্য হলেন এবং সরকারি প্রশাসনিক পদে তাঁদের সংখ্যা যখন দ্রুত কমতে থাকল, তখনই এই বিভাজনের বিষয়টি ক্রমশ স্পষ্ট হল। একদিকে কোম্পানির আর্থিক শোষণের একনিষ্ঠ সহযোগী কিছু হিন্দু দেওয়ান, বেনিয়ান, সরকার, মুনশি, খাজাঞ্চির ভুঁইফোঁড় জমিদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ হল, অন্যদিকে ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার কারণে মুসলমান বণিকরা ধীরে ধীরে বাংলার অর্থনৈতিক মানচিত্র থেকে ক্রমশ সরে যেতে থাকলেন। অবশ্য তারও আগে বাংলার মুঘল প্রশাসনিক ব্যবস্থা অপসারিত হওয়ার ফলে মুঘল প্রশাসনের কর্মীরাও অন্তর্হিত হতে শুরু করলেন। আর এই সুযোগে তাঁদের শূন্যস্থান দখল করে নিল ঔপনিবেশিক ব্যবস্থায় সৃষ্ট বাঙালি দেওয়ান, বেনিয়ান, গোমস্তা, দালালরা। মূলত নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখার তাগিদ থেকেই এই হিন্দু ভুঁইফোঁড়েরা বিদেশি কোম্পানির সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রভাবশালী দেশি সমর্থকশ্রেণি হিসেবে আবির্ভূত হল।
বাণিজ্যিক-প্রশাসনিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলার অন্যতম প্রধানতম চালিকাশক্তি হিসেবে মুসলমানরা বিদায় নেওয়ার পরে, এই নবসৃষ্ট মুৎসুদ্দি সমর্থকশ্রেণিকে তুষ্ট করতে চতুর ও ধূর্ত কোম্পানির প্রত্যক্ষ মদতে চালু হল কৃত্রিম ‘আর্যতত্ত্ব’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের একদিকে থাকল বেদ-উপনিষদ-গীতার ঢালাও অনুবাদ ও নতুন নতুন ভাষ্য, অন্যদিকে চালু হল বাংলা ভাষা থেকে ‘অদরকারি’ আরবি-ফারসি-হিন্দুস্তানির ‘খাদ’ বিসর্জন দিয়ে বাংলার ‘নিখাদ’ সংস্কৃতায়ন প্রক্রিয়া। প্রথমোক্ত ক্ষেত্রটিতে জোন্স ও কোলব্রুকের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য হিসেবে উদিত হলেন ডিগবির দেওয়ান রামমোহন। আর হ্যালহেড ও কেরির প্রদর্শিত পথে বাংলা ভাষা থেকে ‘যাবনী মিশাল’ ছাঁটার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলেন ভবানীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়গোপাল তর্কালঙ্কার ও তাঁর সুযোগ্য ছাত্র বিদ্যাসাগর।
তাই যে রামমোহন ১৮০৩-০৪ সালে প্রকাশিত তুহ্ফাৎ-উল্- মুওহাহিদিন্-এ অবতারবাদ, গুরুবাদ, অভ্রান্তশাস্ত্রবাদ, প্রত্যাদেশবাদ প্রভৃতি প্রচলিত সাম্প্রদায়িক ধর্মবিশ্বাসের সবগুলি লক্ষণকেই সম্পূর্ণ বর্জন করেছিলেন, সেই একই রামমোহন ১৯১৫ সালে বেদকে হিন্দুধর্মের সর্বাধিক প্রামাণ্য শাস্ত্রগ্রন্থ হিসেবে হাজির করলেন। অন্যান্য অ্যাব্রাহামিক ধর্মের মতো ‘হিন্দুধর্ম’ বলে যে এককেন্দ্রিক ধর্মের অস্তিত্ব কোনও কালেই ভারতবর্ষে ছিল না, তা পুরোপুরি বিস্মৃত হয়ে ‘আর্যতত্ত্ব’ রূপায়নকল্পে তিনি একে একে হাজির করলেন কেনোপনিষৎ (১৮১৬), ঈশোপনিষৎ (১৮১৬), মাণ্ডূক্যোপনিষৎ (১৮১৭) ও মুণ্ডকোপনিষৎ (১৮১৯)। একদিকে তিনি জানালেন যে বেদই সর্বাধিক প্রামাণিক এবং যা বেদবিরোধী তা শাস্ত্ররূপে গণ্য হবার যোগ্য নয়, অন্যদিকে গোস্বামীর সহিত বিচার (১৮১৮) প্রবন্ধে স্পষ্ট ঘোষণা করলেন ‘মনু অর্থের বিপরীত যে ঋষিবাক্য তাহা মান্য নহে’।
প্রসঙ্গত লক্ষণীয়, একের পর এক উপনিষদের বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদের কারণ হিসেবে ১৮২৭ সালে ডিগবিকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বেদান্তকে ‘the most celebrated and revered work of Brahmanical theology’ বলে উল্লেখ করলেন। আর সম্পত্তিতে মহিলাদের অধিকার হরণের বিষয়ে আলোচনা করাকালীন হ্যালহেড ও জোন্সের ঔপনিবেশিক হিন্দু আইনের বিন্দুমাত্র উল্লেখ না করে (কিংবা তাঁদের আড়াল করতে চেয়ে) দায়ভাগের উল্লেখ প্রসঙ্গে কোলব্রুকের অনুবাদের শরণাপন্ন হলেন! ফলে তাঁর কল্পিত হিন্দুধর্মের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জাঁকিয়ে বসল তীব্র ব্রাহ্মণ্যবাদ।
এর আগেই ব্রিটিশরা প্রচার করে যে, দীর্ঘ সাতশো বছর ইসলামি শাসনের ফলে ঐতিহ্যময় হিন্দু স্বর্ণযুগের গরিমা কলুষিত ও প্রায় অবলুপ্তির পথে। ফলে এই ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’ মধ্যযুগের আঁধার কাটিয়ে হিন্দুদের ‘আলোকোজ্জ্বল’ আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে চাইলে ব্রিটিশদের বদান্যতায় এ দেশে সভ্যতার সূর্যোদয়ের আলো গ্রহণ করা ছাড়া তাদের গত্যন্তর নেই। এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রথমে জোন্সের প্রাচ্যচর্চার উদার দাক্ষিণ্যে হিন্দুদের মধ্যে সেই বিশ্বাস আরও দৃঢ়মূল ও সম্প্রসারিত হয়। পরবর্তীকালে হিন্দুদের ‘উদ্ধার’ করা এবং তাদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষের বীজ রোপণ করার কাজে পরিকল্পিতভাবে কোমর বেঁধে মাঠে নামে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। হ্যালহেড ও জোন্সের মতোই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান উইলিয়াম কেরি বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি-হিন্দুস্থানি শব্দের আধিক্য নিয়ে একই মনোভাব পোষণ করতেন। এই কথাকে সমর্থন করে সজনীকান্ত দাস লিখেছেন—
১৭৭৮ খ্রীষ্টাব্দে হালহেড এবং পরবর্তী কালে হেন্রি পিট্স ফরষ্টার ও উইলিয়ম কেরী বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতজননীর সন্তান ধরিয়া আরবী পারসীর অনধিকার প্রবেশের বিরুদ্ধে রীতিমত ওকালতি করিয়াছেন এবং প্রকৃতপক্ষে এই তিন ইংলণ্ডীয় পণ্ডিতের যত্ন ও চেষ্টায় অতি অল্প দিনের মধ্যে বাংলা ভাষা সংস্কৃত হইয়া উঠিয়াছে। ১৭৭৮ খ্রীষ্টাব্দে এই আরবী-পারসী-নিসূদন-যজ্ঞের সূত্রপাত এবং ১৮৩৮ খ্রীষ্টাব্দে আইনের সাহায্যে কোম্পানীর সদর মফস্বল আদালতসমূহে আরবী পারসীর পরিবর্তে বাংলা ও ইংরেজী প্রবর্তনে এই যজ্ঞের পূর্ণাহুতি। (বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস)
এর আগে বাংলা গদ্যের যেসব নিদর্শন– চিঠিপত্র, দলিল, ফরমান– পাওয়া যায়, সেখানেও সাধুভাষা প্রচলিত ছিল, কিন্তু সেই গদ্যে বাংলার পাশাপাশি আরবি-ফারসি-দেশি শব্দেরও বহুল প্রচলন ছিল। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন, তৎকালীন জনপ্রিয় বাংলা লোকগাথা ও কথ্য কাহিনিগুলিতে ছিল মাত্র এক-তৃতীয়াংশ তৎসম (অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে গৃহীত এবং আদিরূপে অক্ষুণ্ণ) শব্দ, বাকি শব্দভাণ্ডারে তদ্ভব (অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে বিকৃত ও প্রাকৃত ভাষায় রূপান্তরিত) এবং আরবি-ফারসি-তুর্কি ও পর্তুগিজ শব্দের আধিপত্য ছিল। কিন্তু ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার পরে কেরির নেতৃত্বে যে বাংলা গদ্যচর্চা শুরু হয়, সেখানে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রামরাম বসু প্রমুখ বাঙালি সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত বাংলাকে সংস্কৃতের দুহিতা জ্ঞান করে ব্যাকরণরীতি ও শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে সংস্কৃতের ওপর অত্যন্ত বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠেন। ফলে তাঁরা এমন এক ধরণের ‘সাধু’ বাংলা গদ্যভাষা উদ্ভাবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যেখানে কথ্য ও প্রচলিত বাংলা ভাষা থেকে আরবি, ফারসি ও অন্ত্যজ শব্দগুলি সুচিন্তিত উপায়ে বিতাড়িত করা হয় এবং তার বদলে সংস্কৃত ও তৎসম শব্দ প্রবর্তিত করা হয়।
এই সাহেবদের প্রভাবে রামমোহন যখন ব্রিটিশ-উদ্ভাবিত আর্যতত্ত্বকে বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করতে উঠে-পড়ে লাগেন, প্রায় সেই একই সময়ে বাংলা ভাষার ‘সংস্কৃতায়ন’ প্রকল্পের মুখ্য সহায়ক হিসেবে উঠে আসেন তাঁরই ‘বিরোধী’ বলে প্রচারিত ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮২৩ সালে কলিকাতা কমলালয় গ্রন্থে প্রায় দুশোটি আরবি-ফারসি শব্দের তালিকা রচনা করে তিনি মন্তব্য করেন:
...ভদ্র লোকের মধ্যে অনেক লোক স্বজাতীয় ভাষায় অন্য জাতীয় ভাষা মিশ্রিত করিয়া কহিয়া থাকেন... ইহাতে বোধহয় সংস্কৃত শাস্ত্র ইহারা পড়েন নাই এবং পণ্ডিতের সহিত আলাপও করেন নাই তাহা হইলে এতাদৃশ বাক্য ব্যবহার করিতেন না স্বজাতীয় এক অভিপ্রায়ের অধিকভাষা থাকিতে যাবনিক ভাষা ব্যবহার করেন না।
পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা থেকে এই সব ‘যাবনিক’ শব্দ অপসারণে সচেষ্ট হন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক জয়গোপাল তর্কালঙ্কার।
১২৪৫ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৮৩৮ সালে প্রকাশিত পারসীক অভিধান গ্রন্থে জয়গোপাল অতি সতর্কভাবে তৎকালীন কথ্য বাংলায় প্রচলিত আরবি-ফারসি শব্দগুলির পরিবর্তে সংস্কৃতাশ্রয়ী সাধুভাষা পুনঃস্থাপন করেন। গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি লেখেন—
এই ভারতবর্ষে প্রায় নয় শত বৎসর হইল যবন সঞ্চার হওয়াতে তৎসমভিব্যাহারে যাবনিক ভাষা অর্থাৎ পারসী ও আরবীভাষা এই পুণ্যভূমিতে অধিষ্ঠান করিয়াছে অনন্তর ক্রমে যেমন যবনদের ভারতবর্ষাধিপত্য বৃদ্ধি হইতে লাগিল তেমন রাজকীয় ভাষা বোধে সর্বত্র সমাদর হওয়াতে যাবনিক ভাষার উত্তরোত্তর এমত বৃদ্ধি হইল যে অন্য সকল ভাষাকে পরাস্ত করিয়া আপনি বর্ধিষ্ণু হইল এবং অনেক অনেক স্থানে বঙ্গভাষাকে দূর করিয়া স্বয়ং প্রভুত্ব করিতে লাগিল বিষয় কর্মে বিশেষত বিচারস্থানে অন্য ভাষার সম্পর্কও রাখিল না তবে যে কোন স্থলে অন্য ভাষা দেখা যায় সে কেবল নাম মাত্র। সুতরাং আমাদের বঙ্গভাষার তাদৃশ সমাদর না থাকাতে এইক্ষণে অনেক সাধুভাষা লুপ্তপ্রায়া হইয়াছে এবং চিরদিন অনালোচনাতে বিস্মৃতিকূপে মগ্না হইয়াছে যদ্যপি তাহার উদ্ধার করা অতি দুঃসাধ্য তথাপি আমি বহুপরিশ্রমে ক্রমে ক্রমে শব্দ সঙ্কলন করিয়া সেই বিদেশীয় ভাষাস্থলে স্বদেশীয় সাধু ভাষা পুনঃ সংস্থাপন করিবার কারণ এই পারসীক অভিধান সংগ্রহ করিলাম।
ইহাতে বিজ্ঞ মহাশয়েরা বিশেষরূপে জানিতে পারিবেন যে স্বকীয় ভাষার মধ্যে কত বিদেশীয় ভাষা লুক্কায়িত হইয়া চিরকাল বিহার করিতেছে এবং তাঁহারা আর বিদেশীয় ভাষার অপেক্ষা না করিয়াই কেবল স্বদেশীয় ভাষা দ্বারা লিখন পঠন ও কথোপকথনাদি ব্যবহার করিয়া আপ্যায়িত হইবেন এবং স্বকীয় বস্তু সত্ত্বে পরকীয় বস্তু ব্যবহার করাতে যে লজ্জা ও গ্লানি তাহা হইতে মুক্ত হইতে পারিবেন এবং প্রধান ও অপ্রধান বিচারস্থলে বিদেশীয় ভাষা ও অক্ষর ব্যবহার না করিয়া স্বস্ব দেশ ভাষা ও অক্ষরেতেই বিচারীয় লিপ্যাদি করিতে সম্প্রতি যে রাজাজ্ঞা প্রকাশ হইয়াছে তাহাতেও সম্পূর্ণ উপকার প্রাপ্ত হইতে পারিবেন।
এই গ্রন্থে প্রায় পঞ্চশতাধিক দ্বিসহস্র চলিত শব্দ আকারাদি প্রত্যেক বর্ণক্রমে সূচী করিয়া বিন্যস্ত করা গিয়াছে ইহার মধ্যে পারসীক শব্দই অধিক ক্কচিৎ আরবীয় শব্দও আছে...।
প্রায় আড়াই হাজার আরবি-ফারসি শব্দকে সংস্কৃত ভাষায় পুনঃস্থাপিত করেও শান্তি পাননি পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। বাংলা ভাষার এই ‘স্বদেশি’ ও ‘বিদেশি’ শব্দভাণ্ডার নিয়ে তিনি এতটাই চিন্তিত হন যে তিনি ‘পরবর্তী শ্রীরামপুর সংস্করণে কৃত্তিবাস ও কাশীদাসের উপর কলম চালাইয়া “অবিশুদ্ধ” মূলকে বিশুদ্ধ করিয়াছিলেন’। (সজনীকান্ত দাস, বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস)
পরবর্তী গ্রন্থ বঙ্গাভিধান-এও জয়গোপালের ভাষা নিয়ে এই ছুতমার্গ পরিলক্ষিত হয়।বঙ্গাভিধান-এর ভূমিকায় জয়গোপাল তর্কালঙ্কার লেখেন–
বঙ্গভূমি নিবাসি লোকের যে ভাষা সে হিন্দুস্থানীয় অন্য ২ [অন্য] ভাষা হইতে উত্তমা যে হেতুক অন্যভাষাতে সংস্কৃত ভাষার সম্পর্ক অত্যল্প কিন্তু বঙ্গভাষাতে সংস্কৃতভাষার প্রাচুর্য আছে বিবেচনা করিলে জানা যায় যে বঙ্গভাষাতে প্রায়ই সংস্কৃত শব্দের চলন যদ্যপি ইদানীং ঐ সাধুভাষাতে অনেক ইতর ভাষার প্রবেশ হইয়াছে তথাপি বিজ্ঞ লোকেরা বিবেচনা পূর্বক কেবল সংস্কৃতানুযায়ি ভাষা লিখিতে ও তদ্দ্বারা কথোপকথন করিতে চেষ্টা করিলে নির্বাহ করিতে পারেন এই প্রকার লিখন পঠন ধারা অনেক প্রধান ২ [প্রধান] স্থানে আছে। এবং ইহাও উচিত হয় যে সাধু লোক সাধুভাষাদ্বারাই সাধুতা প্রকাশ করেন অসাধুভাষা ব্যবহার করিয়া অসাধুর ন্যায় হাস্যাস্পদ না হয়েন।
বলা বাহুল্য, ‘সাধুভাষা’ ও ‘অসাধুভাষা’ নিয়ে জয়গোপালের মতোই তাঁর প্রিয় ছাত্র বিদ্যাসাগরও একই মত পোষণ করতেন।
মার্শালের প্রত্যক্ষ প্রণোদনা ও মার্শম্যানের বদান্যতার বদৌলত যে বেতালপঞ্চবিংশতি বাংলার স্কুলে স্কুলে অন্যতম পাঠ্যপুস্তক হিসেবে প্রচলিত হয়, সেখানে ছাত্রছাত্রীরা জীবনের প্রথমেই তাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত চলতি বুলির পরিবর্তে এই ধরণের সংস্কৃতাশ্রয়ী, সমাসবহুল, কৃত্রিম বাংলা গদ্যভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে বাধ্য হয়:
…যে স্থানে ত্রেতাবতার ভগবান রামচন্দ্র, দুর্বৃত্ত দশাননের বংশধ্বংসবিধানবাসনায়, মহাকায় মহাবল কপিবল সাহায্যে, শতযোজনবিস্তীর্ণ অর্ণবের উপর, লোকাতীত কীর্তিহেতু সেতুসঙ্ঘটন করিয়াছিলেন, তথায় উপস্থিত হইয়া দেখিলাম, কল্লোলিনীবল্লভের প্রবাহমধ্য হইতে, অকস্মাৎ এক স্বর্ণময় ভূরুহ বিনির্গত হইল; তদুপরি এক পরম সুন্দরী রমণী, বীণাবাদনপূর্বক, মধুর স্বরে সঙ্গীত করিতেছে। কিয়ৎ ক্ষণ পরে, সেই বৃক্ষ কন্যা সহিত জলে মগ্ন হইয়া গেল। এই অদ্ভুত ব্যাপার দর্শনে বিস্ময়সাগরে মগ্ন হইয়া, তীর্থপর্যটন পরিত্যাগপূর্বক, আমি আপনকার নিকট ঐ বিষয়ের সংবাদ দিতে আসিয়াছি।
মনে রাখা প্রয়োজন, উদ্ধৃত অংশটি গ্রন্থটির দশম সংস্করণ (১৯৩৩ সংবৎ) থেকে গৃহীত। তাহলে এই সংস্করণটির ৩০ বছর আগে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণে এই ভাষা আরও কত সংস্কৃতানুগ ছিল, আরও কত অপরিচিত শব্দে পরিপূর্ণ ছিল– তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়।
বাংলা ভাষাকে ‘মার্জিত’ করার উদ্দেশ্যে সুকুমারমতি ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তকে এই অকারণ অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করার রীতিকে তীব্র সমালোচনা করে শিবনাথ শাস্ত্রী জানান—
একদিকে পণ্ডিতবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অপরদিকে খ্যাতনাম অক্ষয়কুমার দত্ত, এই উভয় যুগপ্রবর্তক মহাপুরুষের প্রভাবে বঙ্গভাষা যখন নবজীবন লাভ করিল, তখন তাহা সংস্কৃত-বহুল হইয়া দাঁড়াইল। বিদ্যাসাগর মহাশয় ও অক্ষয়বাবু উভয়ে সংস্কৃত-ভাষাভিজ্ঞ ও সংস্কৃত-ভাষানুরাগী লোক ছিলেন; সুতরাং তাঁহারা বাঙ্গালাকে যে পরিচ্ছদ পরাইলেন তাহা সংস্কৃতের অলঙ্কারে পরিপূর্ণ হইল। অনেকে এরূপ ভাষাতে প্রীতিলাভ করিলেন বটে, কিন্তু অধিকাংশ লোকের নিকট, বিশেষতঃ সংস্কৃতানভিজ্ঞ শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের নিকট, ইহা অস্বাভাবিক, কঠিন ও দুর্বোধ্য বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। সে সময়ে পাঁচজন ইংরাজীশিক্ষিত লোক কলিকাতার কোনও বৈঠকখানাতে একত্র বসিলেই এই সংস্কৃতবহুল ভাষা লইয়া অনেক হাসাহাসি হইত। (রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ)
শুধু ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, হিন্দু ভদ্রলোক শ্রেণির তীব্র ব্রিটিশপ্রীতি ও চরম মুসলমান বিদ্বেষের প্রচুর নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে তদানীন্তন বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুর নির্বাচন ও তার উদ্দেশ্যমূলক বিন্যাসেও।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ১৮৫৮ সালে বাঙ্গালার ইতিহাস-এর কলেবর ছিল ১৪১ পৃষ্ঠা। তত দিনে বাংলার প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে এই ঢাউস বইটি পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই বইতে বিদ্যাসাগর সিরাজউদ্দৌল্লাকে ‘নৃশংস রাক্ষস’রূপে চিহ্নিত করেন এবং হলওয়েলের অন্ধকূপ হত্যার মনগড়া কাহিনিকে জনমানসে দৃঢ়প্রোথিত করেন। অন্যদিকে ক্লাইভকে ‘অকুতোভয় ও অত্যন্ত সাহসী’, ‘অন্যবিধ পদার্থে নির্মিত’, ‘অতিশয় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করেন। শাসক শ্রেণির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়, বাংলার এই বিকৃত ইতিহাসই হয়ে ওঠে বাংলার স্কুল-কলেজের অবশ্যপাঠ্য পাঠ্যপুস্তক। আর বিদ্যাসাগরের সৌজন্যে বাংলার কোমলমতি শিশুদের মনে সুচতুরভাবে রোপণ করা হয় ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি আনুগত্য ও মুসলমান শাসনের প্রতি বিদ্বেষের বীজ। পরবর্তীকালে শাসকের এই ঘৃণ্য রাজনৈতিক কৌশলকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করে রবীন্দ্রনাথ লিখবেন–
মুসলমান শাস্ত্র ও ইতিহাসের বিকৃত বিবরণ বাংলা বই কোথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছে? অস্ত্র হস্তে ধর্মপ্রচার মুসলমানশাস্ত্রের অনুশাসন, এ কথা যদি সত্য না হয় তবে সে অসত্য আমরা শিশুকাল হইতে শিখিলাম কাহার কাছে? হিন্দু ও মুসলমানের ধর্মনীতি ও ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে ইংরাজ লেখক যাহাই লিখিতেছে হিন্দু-মুসলমান ছাত্রগণ কি তাহাই নির্বিচারে কণ্ঠস্থ করিতেছে না? এবং বাংলা পাঠ্যপুস্তক কি তাহারই প্রতিধ্বনি মাত্র নহে? (মুসলমান ছাত্রের বাংলা শিক্ষা, ১৩০৭)
এমনকি বিদ্যাসাগরের যে বর্ণপরিচয় বাংলার সর্বাধিক বিক্রীত প্রাইমার হিসেবে পরিগণিত হয়, তার প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগে একটি মুসলমান চরিত্রও উপস্থাপিত হয় না।
এহেন বিভেদমূলক পাঠ্যপুস্তকের ঢালাও বিক্রিতে দুঃখিত হন মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। এই ধরণের পাঠ্যপুস্তক বালকদের মনে যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিস্তার করে তার উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান—
প্রথমে চাই মুসলমান বালক বালিকাদিগের পাঠ্যপুস্তক। কি পরিতাপের বিষয়, আমাদের শিশুগণকে প্রথমেই রাম শ্যাম গোপালের গল্প পড়িতে হয়। সে পড়ে গোপাল বড় ভাল ছেলে। কাসেম বা আবদুল্লা কেমন ছেলে, সে তাহা পড়িতে পায় না। এখান হইতেই তাহার সর্বনাশের বীজ বপিত হয়। তারপর সে পাঠ্যপুস্তকে রামলক্ষ্মণের কথা, কৃষ্ণার্জুনের কথা, সীতাসাবিত্রীর কথা, বিদ্যাসাগরের কথা, কৃষ্ণকান্তের কথা ইত্যাদি হিন্দু মহাজনদিগেরই আখ্যান পড়িতে থাকে। স্বভাবতঃ তাহার ধারণা জন্মিয়া যায়, আমরা মুসলমান ছোট জাতি, আমাদের মধ্যে বড় লোক নাই। এই সকল পুস্তক দ্বারা তাহাকে জাতীয়ত্ব বিহীন করা হয়। হিন্দু বালকগণ ঐ সকল পুস্তক পড়িয়া মনে করে, আমাদের অপেক্ষা বড় কেহ নয়। মোসলমানরা নিতান্ত ছোট জাত। তাহাদের মধ্যে ভাল লোক জন্মিতে পারে না। এই প্রকারে রাষ্ট্রীয় একতার মূলোচ্ছেদন করা হয়। (আল-এসলাম পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ)
একই সমস্যার কথা উপলব্ধি করেন রবীন্দ্রনাথও। ১৩০৭-এর ভারতী-র কার্তিক সংখ্যায় তিনি লেখেন:
বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান যখন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, পরস্পরের সুখ-দুঃখ নানা সূত্রে বিজড়িত, একের গৃহে অগ্নি লাগিলে অন্যকে যখন জল আনিতে ছুটাছুটি করিতে হয়, তখন শিশুকাল হইতে সকল বিষয়েই পরস্পরের সম্পূর্ণ পরিচয় থাকা চাই। বাঙালি হিন্দুর ছেলে যদি তাহার প্রতিবেশী মুসলমানের শাস্ত্র ও ইতিহাস এবং মুসলমানের ছেলে তাহার প্রতিবেশী হিন্দু শাস্ত্র ও ইতিহাস অবিকৃতভাবে না জানে তবে সেই অসম্পূর্ণ শিক্ষার দ্বারা তাহারা কেহই আপন জীবনের কর্তব্য ভালো করিয়া পালন করিতে পারিবে না।
... বাংলা বিদ্যালয়ে হিন্দু ছেলের পাঠ্যপুস্তকে তাহার স্বদেশীয় নিকটতম প্রতিবেশী মুসলমানদের কোনো কথা না থাকা অন্যায় এবং অসংগত।
ইংরাজি শিক্ষার যেরূপ প্রচলন হইয়াছে, তাহাতে ইংরাজের ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, আচার-বিচার আমাদের কাছে লেশমাত্র অগোচর থাকে না; অথচ তাহারা বহুদূরদেশী এবং মুসলমানরা আমাদের স্বদেশীয়, এবং মুসলমানদের সহিত বহুদিন হইতে আমাদের রীতিনীতি পরিচ্ছদ ভাষা ও শিল্পের আদান-প্রদান চলিয়া আসিয়াছে। অদ্য নূতন ইংরাজি শিক্ষার প্রভাবে আত্মীয়ের মধ্যে প্রতিবেশীর মধ্যে ব্যবধান দাঁড়াইয়া গেলে পরম দুঃখের কারণ হইবে। বাঙালি মুসলমানের সহিত বাঙালি হিন্দুর রক্তের সম্বন্ধ আছে, এ কথা আমরা যেন কখনো না ভুলি। (মুসলমান ছাত্রের বাংলা শিক্ষা)
কিন্তু ১৩০৭ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগে এই বাংলার গঙ্গা দিয়ে আরও অনেক জলই প্রবাহিত হয়ে যায়।
আমরা এখানে বাঙ্গালার ইতিহাস-এর যে সংস্করণের কথা উল্লেখ করেছি ঠিক তার পূর্ববর্তী বছরে দেশ জুড়ে সংঘটিত সিপাহি বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসকদের সন্ত্রস্ত করে তোলে। ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশের জনসাধারণ এই বিদ্রোহে সক্রিয় অংশগ্রহণ কিংবা সমর্থন করলেও বাংলার ভদ্রলোক ও ‘আলোকোজ্জ্বল’ হিন্দু শ্রেণি ছিল এক উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম। এমতাবস্থায় সিপাহি বিদ্রোহের পরে ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়ের মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটিশ শক্তি যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তার মূল প্রতিপাদ্য ছিল মুসলমানদের প্রতিযোগী হিসেবে হিন্দুদের প্রতিষ্ঠা করা এবং এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সর্বভারতীয় ঐক্য গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া। এই বক্তব্যকে সমর্থন করে রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন—
...১৮৬১ সাল থেকে আলেকজান্ডার ক্যানিংহামের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত নিয়মিত পুরাতাত্ত্বিক অভিযান ও খননকার্য এবং ম্যাক্সমুলার, উইলসন, ফার্গুসন, রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও অন্যান্যদের আরও জনপ্রিয় ধরনের রচনা শিক্ষিত ভারতবাসীর সামনে প্রাচীন ভারতবর্ষের অতীত গৌরব ও মহত্ত্ব, যা ভারতকে গ্রিস ও রোমের সঙ্গে এক আসনে স্থাপিত করেছিল, সে সম্পর্কে এক সুস্পষ্ট ও বৃহৎ চিত্র তুলে ধরে। এটি হিন্দুদের অতীত সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং পৃথিবীর ইতিহাসে তারা যে একদা এক মহান জাতিরূপে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল