আব্বাস সিদ্দিকি কে নিয়ে ভাবনা চিন্তা । ... ...
ঢাকা এয়ারপোর্টে প্রতীক্ষা কক্ষের সোফায় আধো ঘুমে আচ্ছন্ন ছেলে মেয়ে জেগে উঠে যখন দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল মনে হল সমস্ত দিনের শেষে সেটাই আমার সেরা পাওনা ! প্রায় পাঁচ দশকের নিরন্তর ভ্রমণে আমার পাসপোর্টগুলি ভরে গেছে নানান দূতাবাসের অজস্র ভিসার ছাপে। আজ মনে হয় ৩৪ বছর আগে অন্য কোথা নয়, অন্য কোনো দেশে নয় , এই কলকাতায়, আলিপুরে শীতের স্তব্ধ দুপুরে সুপ্রাচীন হর্ম্য মণ্ডিত অট্টালিকায় নির্জন বিদেশি কনসুলেট অফিসে দয়াময়ী এক জার্মান মহিলার স্বাক্ষরিত বিনামূল্যের এই ট্রানজিট ভিসাটি আমার সবচেয়ে মহার্ঘ্য সঞ্চয়। ... ...
হঠাৎই সভাকক্ষে হাসির মৃদু ঢেউ বয়ে গেল! কিন্তু সেই হাসি থামতে না থামতেই এক কম বয়সী লোক, বোধ করি, সভার তরুণতম আলোচক, উঠে দাঁড়ালেন। মুহূর্তেই সব চোখ তার দিকে ঘুরে গেল। লোকটির চোখে-মুখে খেলে যাচ্ছিল অলৌকিক এক আভা, বিজ্ঞানীরা একে ভাল করেই চেনেন; তাদের ভাষায় এ হচ্ছে ইউরেকা লাইট। আস্তে আস্তে বোমাটা বের করতে শুরু করলেন সেই তরুণ তার শ্মশুমন্ডিত মুখের গোপন দুয়ার থেকে, "একটা চিন্তা এসেছে আমার মাথায়! জানি না আপনাদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, তবে আমার মনে হচ্ছে, কাজে দেবে। ওদেরকে আবার এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিতে হবে আমাদের। আবার আগের মত স্থবির, আনত করে দিতে হবে। “ ... ...
দেওয়ানি লাভ করার মাত্র ৭ বছরের মধ্যেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে একেবারে প্রান্তিক করা ও সমাজকে ক্রমশ পিতৃতান্ত্রিক করে তোলার জন্য বিভাজনমূলক আইন চালু করার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে হেস্টিংস ও পরে কর্নওয়ালিসের উদ্যোগে তৈরি হয় ঔপনিবেশিক হিন্দু আইন, যার নিদর্শন প্রাক্-পলাশি বাংলায় ছিল না। ১৯৫৫ সালে হিন্দু কোড বিল পাস না হওয়া পর্যন্ত এই ঔপনিবেশিক আইনটি এ দেশে পুরোদমে বিদ্যমান ছিল। কোন প্রেক্ষাপটে ও কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক শাসকরা এই আইন তৈরি করে, তার সুলুকসন্ধান করাই এই ধারাবাহিক প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য। ... ...
গায়ক ছেলেটা ইতিমধ্যে একটা ইংরেজি গান ধরেছে, আর অনেকেই হাততালি দিয়ে তাল দিচ্ছে। বিনীতা বুঝল নিশ্চয় জনপ্রিয় গান, তবে তার জানা নেই। “বিলিভার” আর “পেইন” এই দুটো শব্দ ঘুরে ঘুরে আসছিল গানটায়। ইংরেজি গানে অবশ্য তার আগ্রহ নেই। যাতে আগ্রহ আছে সেই রবীন্দ্র সঙ্গীত নিশ্চয় এই ছেলেটা গাইবে না। ... ...
এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কেন সফট টার্গেট হিসেবে বারবার এনকাউণ্টারের পর স্কোয়াডে থাকা মহিলাদের চরিত্র মূল্যায়নে এত সময় ব্যয় করেছে, তা নিয়ে কিন্তু মাথাব্যথা ছিল না মাওয়িস্ট শীর্ষ নেতৃত্বের। তাঁদের কাছে শশধর এবং কিষেণজি, দুই মৃত্যুই ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেন এনকাউণ্টার হল, কীভাবে হল, কে খবর দিল পুলিশকে, সবই পরে তদন্ত করে দেখে মাওয়িস্ট নেতৃত্ব এবং তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দু’বারই ক্লিনচিট পেয়েছেন সুচিত্রা মাহাতো। ... ...
দিলদারে স্বপ্নগুলি যায়নাতো ফাঁকি। ঘটে যাওয়া সত্যিগুলি ফিরে ফিরে বলে যায় --- জীবনের আছে আরো বাকি ! ... ...
কয়েক দিন ধরে মনে হচ্ছে যে বাড়ি গুলোতে জীবনের দিন সব কাটিয়ে এলাম শেষ বেলায় তাদের কথা একটু লিখে যাই। যাই বলছি বটে যাওয়ার নাম গন্ধ নেই। জাঁকিয়ে বসেছি মাটি মায়ের কোল আঁকড়ে। লিখতে অসুবিধা হয়। আস্তে আস্তে লিখবো খণ্ড খণ্ড। সেভ করতে গিয়ে লেখা হারিয়ে ফেলি। অনেকের জীবন এক বাড়িতে কেটে যায়। আমাদের তা হয়নি। ছোটবেলা থেকে কতো বাড়িতে থাকলাম। যেটুকু মনে আছে লিখতে থাকি। সুখে জড়ানো না হোক স্বস্তি শান্তি তো ছিল। মা বাবা ভাইবোন, দুএকজন সহায়ক, গৃহপালিত নিয়ে মধবিত্ত পরিবার। হাসি খুশি মোটামুটি খেয়ে মেখে মন্দ কাটেনি বলতে পারি। যাঁরা পড়বেন জেনে বুঝেই অপ্রয়োজনের আনন্দে পড়বেন। ... ...
নেট পুরোপুরি বন্ধ আর কারফিউ চালুর পরে দৈনিক রাতে যা জানতাম আর যা বুঝতাম তা লেখার চেষ্টা করে গেছি। সব সময় মাথা ঠিক ভাবে কাজ করেছে এমনও না। পুরোটা আবার বসে বসে পড়লে হয়ত অনেক কিছুই বাদ দিতাম আমি। কিন্তু নেট পেয়েছি, আবার কখন নেটের বাহিরে চলে যাই ঠিক নাই। তাই পুরো লেখাটাই একবারে দিয়ে দিলাম। ইচ্ছা ছিল ভাগ ভাগ করে দেওয়ার। সরকার ফেসবুককে ভয় পাচ্ছে। এইটাই হচ্ছে সত্য। নেট দিতে আমার মনে হয় না আর অন্য কোন সমস্যা আছে। ফেসবুকে মানুষ এতদিন যা হয়েছে তার ভিডিও চিত্র, স্থির চিত্র দেখবে, দেখে আবার যদি রাগের বিস্ফোরণ ঘটে? সরকার তা চাচ্ছে না। সহজ একটা বিষয়কে কতখানি জটিল করা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এই আন্দোলনটা। নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তা এখন প্রায় শূন্যের কাছে। অথচ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারত এখান থেকে। আজকের প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৭! আমার এই লেখায় এক জায়গায় লেখছি ধার্মিকেরা বলে ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন, সেই মহান মঙ্গলের অপেক্ষায় বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। এখনই ওইটাই বলছি! অদ্ভুত কালো অধ্যায় পার করল বাংলদেশ। ... ...
ভাস্কর লিখেছিলেন ‘শেষ নেই এমন এক পাহাড়ে অনবরত চড়তে থাকার সঙ্গে কবিতা লেখার তুলনা করা যায় কিছুটা’... সেই বোবাপাহাড়ের ঠিক তলায় দাঁড়িয়ে আমি, সিসিফাসের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি যেন, তবু বিশ্বাস করি এরপরের স্টপেই আলো-ভরা উপত্যকা আসছে একটা, আর অনেক চিঠি হাতে সেখানে আমার জন্য নিশ্চয়ই একটা আস্ত ডাকবাক্স বানিয়ে রেখেছেন একজন রুপোলি চুলের নিঃসঙ্গ মানুষ। ... ...
কেদার ভাদুড়ীর কাব্যগ্রন্হ পুনঃপ্রকাশিত হওয়া দরকার ... ...
এই সহিংসতার শুরু অবশ্য পুলিশ-ছাত্রলীগ সখ্যতায়। রঘু ডাকাতের দল হেলমেট লীগ ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর, রাজশাহীসহ আরো সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-পুরুষ শিক্ষার্থীদের নিষ্ঠুর লাঠিপেটায়, প্রকাশ্যে গুলিতে ও ইটপাথরের আঘাতে দমন করতে চায় আন্দোলন স্রোত। যা ক্রমেই সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার থেকে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক রূপ নিতে থাকে। শ্লোগান উঠে, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! স্বৈরাচার! স্বৈরাচার! . ... ...
সরকারের এ আক্রমণাত্মক আচরণে এটি স্পষ্ট যে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে শিক্ষার আন্দোলন থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিনত হওয়ায় শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছে। নানা রকম হামলা-মামলার মধ্যেই বছর দুয়েক ধরে চলমান কোটা আন্দোলনে এই প্রথম "স্বৈরাচার!" "স্বৈরাচার!" শ্লোগান উঠেছে। ... ...
বাংলাদেশের অবস্থা যে ভয়াবহ, সে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ছাত্ররা গুলি খাচ্ছেন। ট্যাঙ্কও নামছে শুনলাম। আমার তালিকায় থাকা ছেলেমেয়েরা দেখছি "আন্দোলনে যাচ্ছি" লিখে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। ইন্টারনেট নাকি জায়গায় জায়গায় বন্ধ। মেদিনিপুরের ভারত-ছাড়ো আন্দোলনের ইতিহাস মাথায় আসছে। যুবকরা পকেটে নাম-ঠিকানা লেখা কাগজ নিয়ে মিছিলে নামতেন সেই সময়। কেউ ফিরতেন, কেউ ফিরতেননা। আবু সাইদ ফেরেননি। ঢাকা তিয়েন-আন-মেন-স্কোয়ার হবে কিনা জানিনা, তবে আবুর ছবি তিয়েন-আন-মেন-স্কোয়ারের সেই যুবকের মতোই আইকনিক হয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই, হাসিনা সরকার বৈধতা হারিয়েছে। ভোটের ফলাফল যাই হোক, বিদায়ঘন্টা বাজছে। এইসব কান্ড ঘটানোর পর কোনো সরকার দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনা। এরশাদ পারেননি। সাম্প্রতিক কালে এর চেয়ে ঢের কম জনজাগরণে পশ্চিমবঙ্গেও উল্টে গিয়েছিল রাজ্যপাট। হাসিনার যাওয়াও সময়ের অপেক্ষা। ... ...
আধুনিক যুগের আধুনিক মনোভাবের মুসলমানদের কারুর বাড়িতেই চারটি স্ত্রী নেই, এবং অসংখ্য বাচ্চা নেই। আগেকার দিনে হয়তো ছিল, ঠিক যেমন অন্ধকার যুগে হিন্দুদের কুলীন বামুনরা পঞ্চাশটা বিয়ে করতো, আর হিসেব-না-থাকা সন্তানের জন্ম দিয়ে কিশোরী বৌদের বিধবা করে দিয়ে মরতো। সাধারণ ঘরে মুসলমানদের যদি আট দশটা ছেলেমেয়ে হতো, সে তো হিন্দুদের ঘরেও হতো। আমার বাবারা ছিল ন-জন ভাইবোন। আমার মায়েরাও তাই। বিজেপি আরএসএস বিশ্ব হিন্দুদের মতো উগ্রপন্থীরা তো এসব প্রচার করবেই। কিন্তু লিবারাল বাঙালি হিন্দুরা কি তাদের মনোভাব বদলেছে? ... ...
ধরুন শাহবাগ আন্দোলন হয়নি, গণজাগরণ মঞ্চ বলে কিছু এই দেশে হয়নি। সাকা, মুজাহিদ, নিজামি, কামরুজ্জামান সবাই এখনও এই ভূখণ্ডেই বাস করছে। জামাত আগের মতোই একটা ধরার মতো শক্তি। এমন একটা পরিস্থিতিতে কালকের ঘটনা ঘটল! অট্টহাসি চিনেন? আহ্লাদে আটখানা কাকে বলে জানেন? সব দেখতে পারতেন! পাকিস্তানের আগেরদিন নাই, থাকলে গতকাল যা হয়েছে পাকিস্তানের রাস্তায় মিষ্টি বিলানো হত। প্রকাশ্যে বিবৃতি দিত যে আমাদের কোন ভাইকে যেন অন্যায় ভাবে অত্যাচার করা না হয়! তারা আমাদের ভাই, তারা আমাদের বোন! এগুলা এক সময় নিয়ম করে দেখছি আমরা। খান...র পুলায় নায়েবে আমির মনের ভিতরের সুখানুভূতি চাপা দিয়ে গম্ভীর স্বরে টিভি ক্যামেরার সামনে বলত, খুব অন্যায় হচ্ছে! বৈষম্য দূর করে সঠিক ইশতেহার দেওয়া হোক! আমাদের কপাল ভালো যে সেই দিন দেখতে হচ্ছে না। এখন একবার চিন্তা করেন যারা রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন করল, এই দেশে রাজাকারদের শাস্তি নিশ্চিত করল তাদের কাছেই এই স্লোগান বুলেটের মতো বিঁধছে। আর যারা সংগ্রাম করছে, যারা রাজাকাদের অত্যাচারে স্বজন হারিয়েছে, সরাসরি অত্যাচারের শিকার হয়েছে, তাদের কাছে কেমন লাগতে পারে এই স্লোগান? ... ...
“সত্যিই তো… টেগোর কেন?” বলল বিনীতা। “ইয়েস। এই একটা প্রশ্ন লোককে হন্ট করবে। একজন জিজ্ঞেস করবে আর একজনকে - হোয়াই টেগোর? সে আবার জিজ্ঞেস করবে তিন নম্বর লোককে - হোয়াই টেগোর? এই চেন চলতে থাকবে আর দোকানের নাম ছড়িয়ে পড়বে ইন ওয়ার্ড অফ মাউথ। নতুন দোকান, তাও সেক্টর ফোরে। পাবলিসিটি তো লাগবেই,” ছদ্ম গাম্ভীর্যের সাথে বলল রঞ্জিত। “আইডিয়া আচ্ছা হ্যায়,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল অরুণাভ। “ওই নামের জন্যই লোকে দোকানে আসবে। আর বৃষ্টি যদি হয় তবে ছাট আসবেই,” বলল রঞ্জিত। “মানে দোকানে লোকজন এলে বিক্রিও হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আর ফ্যাশন…?” পুরোন কথায় ফিরে এল দাস সাহেব। ... ...
উগ্র সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী বিজেপি-আরএসএসের বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী এই মুসলমান শ্রেণীর সমান বিরোধিতা আমাদের করতে হবে। না হলে আমাদের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা সমাজে থাকবে না। ... ...