নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের কথা বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা তো মাথায় আসেই, তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের কথাও। ক্লাস সেভেন বা এইটে কোনোভাবে হাতে এসেছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনবদ্য অনুবাদে ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী’। আমারই বয়সী একটি মেয়ে, যে বয়সে আমরা স্কুলে যাচ্ছি, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছি, কেউ আঁকছি, কেউ গান গাইছি, কেউ বা তবলায় হাত পাকাচ্ছি, সেই বয়সেই, অ্যানা নামের একটি মেয়ে লুকিয়ে পড়েছে অন্ধকার ঘরে, বাইরে বেরনো বন্ধ, স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে দেখা করা, খেলাধূলা, এমনকি গান-বাজনা পর্যন্ত বন্ধ, পাছে কেউ দেখে না ফেলে, পাছে কেউ শুনে না ফেলে। বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে ভেতরে কয়েকটা গুপ্ত ঘরে লুকিয়ে রয়েছে আটটা তাজা প্রাণ (ডুসেল, আরেক প্রতিবেশী অবশ্য পরে যোগ দেন)। পড়তে পড়তে আনা-র সঙ্গে যেন আমিও ঢুকে পড়েছিলাম সেই গুপ্ত কক্ষে, ভাগ করে নিচ্ছিলাম অজানা আশঙ্কার মুহূর্তগুলো! ... ...
প্রতিবছর দেশপ্রেমের নূতন নূতন পরীক্ষা এসে হাজির হচ্ছে। নামমাহাত্ম্য, দেশভক্তি, আবেগ, ইতিহাস আর প্রযুক্তির এক জোরদার ককটেল এখন তৈরি হচ্ছে। ... ...
এমনকি যা পরিস্থিতি আসছে তাতে ভবিষ্যতে প্রচণ্ড গরমে একেবারে হতদরিদ্র মানুষেরও সাময়িকভাবে আশ্রয় নেবার জন্য কিছু কিছু এয়ারকন্ডিশনড জায়গার ব্যবস্থা করতে হলেও আশ্চর্য হব না। তো, এই সময়ে লোকজনকে এসি ব্যবহারের এবং এসি ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে উস্কোনো একটি অত্যন্ত বড় অসভ্যতা ছাড়া আর কিছু নয়..... ... ...
গত শতাব্দীর প্রথম দশকে ১৯০৯ সালে আমেরিকা আসেন। এর ষোলো বছর আগে বিবেকানন্দ শিকাগো এসেছেন, এর তিন বছর পরে রবীন্দ্রনাথের ইলিনয়-তে আরবানা-শ্যাম্পেন এ প্রথমবার আমেরিকা আসবেন - তখনও তিনি নোবেল প্রাইজ পান নি, তেমন নামডাকও হয় নি। তারও দুবছর বাদে শুরু হবে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এমন এক সময়ে, আজ থেকে প্রায় ১০৮ বছর আগে মেদিনীপুরের তমলুকের উনিশ বছরের ছেলে কিভাবে আনডকুমেন্টেড লেবার হিসেবে আমেরিকা এলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনা করতে শুরু করলেন, ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করলেন, ইস্ট-কোস্টে বাসা বাঁধলেন, আমেরিকার শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্যের পুরস্কার পেলেন, আগাগোড়া লেখালেখিকে সম্বল করে জীবিকা চালিয়ে গেলেন এবং ১৯৩৬ সালে আত্মহত্যা করে মারা গেলেন - সেই কাহিনী ... ...
গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি সায়েন্স স্টেশনের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ওখানকার গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি হয়েছে ১১° সেলসিয়াস! লাইনটা পড়ে যদি চমকে না গিয়ে থাকেন তাহলে আরেকবার ভালো করে পড়ুন....... ... ...
আমাদের বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলারও সুগন্ধির প্রতি ছিল প্রগাঢ় ভালোবাসা। নিজে গায়ে মাখতেন হরেক রকমের দামি সুগন্ধি। বিভিন্ন পালা পার্বণে হীরা ঝিল প্রসাদের কোনো কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে পায়রা, কাকাতুয়া, টিয়া, ময়ূর বা অন্যান্য পাখি পারস্যের সুগন্ধির তরলে ভিজিয়ে উড়িয়ে দেয়া হতো হল ঘরে। আর এতে সুন্দর স্নিগ্ধ পারস্যের সৌরভে ছেয়ে যেত বাংলার যুবরাজ সিরাজউদ্দৌলার স্বপ্নরঙে রাঙানো হীরা ঝিল প্রাসাদ। সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী বেগম লুৎফুন্নিসা হেঁটে গেলে সবাই বলতেন পদ্মগন্ধা। ... ...
ছোটখাটো কিছু পার্থক্য আমার কাছে দারুণ লেগেছে। যেমন আমি দেশে দেখতাম আমার হিন্দু বন্ধুরা মন্দির যতদূরেরই থাকুক, আশপাশ দিয়ে গেলেই হাত কপালে তুলে সালাম করা শেষ। আমার বন্ধু স্বর্ণ, ও আরও একটু আগানো। ও কোন ঝুঁকি নিতে রাজি না। ও মন্দির, মসজিদ যাই সামনে পরুক, কপালে হাত নিয়ে চুমু খেয়ে ফেলবে ঝপ করে। এইটা আমি দেখছি সব সময়ই। এবার দেখলাম ভিন্ন চিত্র। বাসে যাচ্ছি, দূরে একটা চার্চের মাথা দেখা গেল। বাসের মধ্যে অনেক গুলো হাত এক সাথে উঠে ক্রুশ এঁকে ফেলল! এইটা আমি শুধু সিনেমায়ই দেখছি, বাস্তবে দেখে প্রথমে অবাক পরে হাসি পরে বুঝছি। ... ...
মজার গল্প শুনেন। তখন নিয়ম করে ইফতার খেতে যাই। ভলেন্টারি মসজিদে গেছি ইফতার খেতে। এইটা একটু দূরের একটা মসজিদ। একটু নিরিবিলি। বাস থেকে নেমে একটু হাঁটলেই মসজিদ। একটু বলতে এক দেড়শ মিটার হবে হয়ত। আমার সাথে আরও দুইজন। এই সময় বাঘের মত একটা কুকুর কই থেকে জানি এসে হাজির। আমি ঠিক কুকুরপ্রেমি টাইপ মানুষ না। দেশি কুকুরকে মাঝে মধ্যে ঘাড় গলা হাতায় দিছি, ওরা আরামে শুয়ে পড়ছে। কুকুর প্রেম বলতে আমার এই পর্যন্তই। আর যা আছে খিঁচে দৌড় দেওয়ার স্মৃতি। আমি আগে পিছনে একটা কিংবা এক পাল এমন গল্প বহু আছে। কিংবা এক পাল আমাকে ঘিরে ধরেছে আমি কানের হেডফোনের সাউন্ড পুরো বাড়িয়ে দিয়ে গুটি গুটি পায়ে ওদেরকে পার হচ্ছি, আমার যুক্তি হচ্ছে ওদের চিৎকার না শুনলে আমি ভয় পাব না আর ভয় না পেলে আমি দৌড় দিব না, আর আমি দৌড় না দিলে ওরাও চিৎকার করেই থেমে যাবে। রাত বাজে সাড়ে তিনটা না চারটা, আমার বুদ্ধি কাজে লাগছিল, আমি কোন বিপদ ছাড়াই পার হতে পেরেছিলাম। ... ...
তামাম বাংলা-বাঙালি তথা ভারতীয় উপমহাদেশের মনের জমিতে ক্রিকেট খেলাটিকে যিনি প্রথম রোপণ করেছিলেন সেই সারদারঞ্জন রায়ের আজ ১৬৫তম জন্মদিন। আজ সারাদিন কাজী নজরুলের জন্মতিথিতে তো সব্বাই তাঁকে স্মরণ করেছেন নানা ভাবে। আমি বরং "ভারতীয় ক্রিকেটের W. G GRACE". তথা ক্রিকেটার-অধ্যাপক-সংগঠক সারদারঞ্জন রায়কে আজ স্মরণ করি। 'ক্রিকেটপাগল' বাঙালিকে যিনি 'পাগল' হতে শিখিয়েছিলেন এই আই পি এলের ভরা মরশুমে বরং বিস্মৃতির ধুলোয় আবছা হয়ে যাওয়া সেই সারদারঞ্জনের কৃতি জীবন আর অনন্য উদ্যোগগুলিকে আরেকবার ফিরে দেখি আজ। ... ...
সেদিন আমেরিকান রেষ্টুরান্টে এই প্লেটের কোণে ঝিনুকের মাংস আর ভাত দেখে মনটা খুশী হয়ে গেল। দেশের কেটারিং রীতি ভুলে গেলেও এরা মনে রেখেছে! ভাবছি পুরো প্লেটটাই খালি, এবার এখানে আসল খাবার আসবে। ভাতের আকার দেখে আমি ধ্বন্দে পড়ে গেলাম - এ কি চাল? রত্না বা বাঁশকাঠিও তো এমন হয় না! তাহলে কি এগুলো ছোট কাঁকুড়ের বীচি? যে কাঁকুড় বড় হতে পারে না, তাদের বীজ এমনই হয়। টেনশন দূর করতে দাঁতে কেটে দেখলাম সেই চাল - আরে বীজ নয় তো! এ চালই বটে, কিন্তু অর্ধসিদ্ধ প্লেট নিয়ে বসে আছি, তখনো সন্দেহ হয় নি। খেয়াল হল প্লেটের বাকি খালি জায়গায় আঁকাবুকি কাটা কেন?? ... ...
যাঁরা নোম চমস্কির নাম জানেন, এবং বিশ্বশ্রেষ্ঠ এক ভাষাতাত্ত্বিক ছাড়াও তিনি যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এক মহাপণ্ডিত -- জানেন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ ও অগাধ বিচরণের কথা, তাঁরা আমার করা এই ইন্টারভিউগুলো থেকে হয়তো অনেক রসদ সংগ্রহ করতে পারবেন। ... ...
এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই। ... ...
ঝড়ে ভেঙে পড়া মহীরূহর মতই - নেমে আসে কোন কোন মৃত্যু... ... ...
আমার রোমানিয়া চলে আসায় জ্যোতি একটু ফাপরে পড়েছে। তবে জ্যোতি তো জ্যোতি, ও নিজেই একশ। আমি আসার আগে পেজের জন্য একটা এজেন্সি ঠিক করে দিয়েছে। আপাতত পেজ নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলছে। আমার আর জ্যোতির যাত্রা বিরতি মনে হলেও আসলে আমরা এক সাথেই চলছি। ... ...
হল্যান্ড ওরফে নেদারল্যান্ডস এমন একটা দেশ যেখানে আবহাওয়া কখন ভালো হবে বা কখন চনমনে রোদ উঠবে, সেকথা ভেবে বসে থাকলে কোথাও ঘোরাই যাবে না। মানে রোদ-ঝলমল সকাল দেখে বেরিয়েও দশ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি এসে আপনাকে ভিজিয়ে দিতে পারে। হাওয়া তো আছেই সে-কথা আর আলাদা করে বলার নয়, তাপমাত্রা সব সময়েই পাঁচ ডিগ্রী কমিয়ে ধরতে হবে। প্রথম শনিবারটা সকালে উঠে ভেবে রাখলাম শহরের বাইরে কোথাও হাওয়া কল বা ট্র্যাডিশনাল উইন্ডমিল দেখতে যাব। সেইমত, চটপট প্রাতঃরাশ সেরে বেরিয়ে পড়লাম। এয়ারপোর্ট থেকে স্প্রিন্টার ধরে যাব স্লটারডিক, তারপর সেখান থেকে আবার অন্য এক স্প্রিন্টারে যাব 'জানডাইক - জ্যানসে স্ক্যানস' - হ্যাঁ স্টেশনের নাম ঠিক সেটাই। পুরো যাত্রাটাই একটা রিটার্ন টিকিটে সারা হয়ে যায়। জ্যানসে স্ক্যানস আদতে একটি গ্রামের গন্ধ-মাখা মফঃস্বল (কান্ট্রি-সাইড বলা চলে)। ... ...
সেই ছায়া এই আমার মনে, সেই ছায়া ওই কাঁপে বনে, কাঁপে সুনীল দিগঞ্চলে রে। ... ...
আব্বাস সিদ্দিকি কে নিয়ে ভাবনা চিন্তা । ... ...
সত্যজিতের অপু ট্রিলজি যদি গ্রাম বাংলার ছবি এঁকে থাকে, মৃণাল ছবি এঁকেছেন শহর কলকাতার এবং তার মার খেয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মানুষগুলোর। তাঁর আকাশ কুসুম, তাঁর পুনশ্চ, তাঁর নীল আকাশের নীচে। যেখানে সর্বজয়া নেই, কিন্তু আছে বাসন্তী, মণিকা। বাসন্তী বোধহয় আধুনিক বাংলা সিনেমার প্রথম নায়িকা, যে ছবির প্রধানতম চরিত্র। অর্থাৎ, বাসন্তীই সে ছবির কেন্দ্রবিন্দু। নায়ক নয়, নায়িকাই এ ছবির আসল কথা। তার লড়াইয়ের গল্প। নায়ক পার্শ্বচরিত্র। হিন্দু ও মুসলমান রক্ষণশীলরা এ গল্প শুনতে চায়না। তারা চায়না আমরা লড়াই করি, মাথা উঁচু করে বাঁচি। তারা চায়না, মেয়েরা সমাজের কেন্দ্রবিন্দু হোক। তারা চায়, সমাজ যেন চরম রক্ষণশীল, পুরুষতান্ত্রিক থাকে। ... ...