এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  শরৎ ২০২৩

  • কন্যাকুমারী

    রঞ্জন রায়
    গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৭৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা
    ছবিঃ সুনন্দ পাত্র




    গোপালপুর গ্রামটা ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর -কোরবা স্টেট হাইওয়ের উপর একটা মাঝারি জনপদ; কাঠগোড়া মহকুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সেখানে বছর পাঁচ হল একটা ব্যাংক খুলেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের একটা ছোট শাখা।
    মায়ের শরীর খারাপের খবর পেয়ে সাতদিনের ছুটি নিয়ে ভিলাইনগরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। মা দ্রুত সেরে ওঠায় পাঁচদিনের মাথায় ফিরে এসে আজ ব্যাংকে ডিউটি জয়েন করেছি। আজ মঙ্গলবার। আজকে আমি উপোস করেছি, এখন বিকেল নাগাদ বড্ড খিদে পাচ্ছে।
    আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস রাখি—মঙ্গলবার বজরংবলির উপোস, শনিবার শংকর ভগবানের। তবে এই সব উপোসে চা এবং ফল খাওয়া যায়; অন্ন, মানে ভাত-রুটি-তরকারি, না খেলেই হল। সাধারণতঃ আমি কাঠগোড়া বাসস্ট্যান্ডে সিন্ধি ভদ্রলোকের একটা বড় ফলের দোকান থেকেই কিছু কলা, আপেল, সফেদা ও মুসম্বি কিনে নেই। আজ সেটা হতে পারে নি।
    ওখানে বিলাসপুর কোরবার বাস অন্ততঃ দশ মিনিট দাঁড়ায়। ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, খালাসিরা চা-জলখাবার খায়। কিছু যাত্রীও বাদ যায় না। ফলের দোকানের পাশেই গুপ্তা হোটেল। সেখানে চা খেয়ে সবাই পাশের গলিতে যায় তলপেটের চাপ হালকা করতে।
    এসব নিত্যিকর্ম সেরে পাশের ফলের কিওস্কের দিকে এগোচ্ছি এমন সময় একটা চিৎকারে সবাই চমকে উঠল।
    --ভোঁসরিওয়ালে! মাদর--! আজ তেরি তো –
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ, তোর মুরোদ জানা আছে। ঢোঁড়া সাপ কোথাকার!
    ভিড় জমে গেছে ফলের দোকানটার পাশে।
    বুড়ো দোকানদারের জোয়ান ছেলেটা চেঁচিয়ে গাল পাড়ছে একটা হাফপ্যান্ট পরা বাচ্চা ছেলেকে, যে হয়ত ওদের দোকানে ফাই-ফরমাস খাটে।
    বাচ্চাটা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ওর মুখে মুখে জবাব দিচ্ছে, ছেলেটাকে তাতাচ্ছে। মোড়ের যত দোকানি আর বাসস্ট্যান্ডের নিকম্মা আমোদগেঁড়ের দল বিনিপয়সায় তামাশা দেখছে। আমার বাসের ড্রাইভার -কন্ডাকটারও এই দলে সামিল।
    --দেখলি? সাহস বটে বাচ্চাটার। ভয় পায় নি, কেমন মুখে মুখে জবাব দিচ্ছে।
    --এত মুখ চালানোও ভালো নয়। এরপর এখানকার কোন দোকান ওকে কাজে নেবে?
    চেনা দোকানদার। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করি কেসটা কী? ক্যা লফড়া হ্যায়?
    বুড়ো জবাব না দিয়ে নিজের মনে বিড়বিড় করতে থাকে।
    --আমার ছেলেটাকে কত বোঝাই যে দিনকাল পাল্টেছে। চাকরবাকরকেও আগের মত বকাঝকা করা যায় না। ওর রক্ত গরম, বুড়ো বাপের কথা শুনতে বয়ে গেছে।
    আমি পাতি ঝামেলায় মন না দিয়ে ফল বাছতে থাকি। এসব হঠাৎ শুরু হয়, আবার আচমকা থেমেও যায়--অসময়ে এক পশলা বৃষ্টির মত।
    ইতিমধ্যে বাচ্চাটা আবার কিছু বলেছে বোধহয়।
    গর্জে উঠেছে জোয়ান ছোকরা—অব তেরি মাঁ কো—দুঙ্গা সালে! তু দেখতে রহনা।
    বাচ্চাটা সামান্য নড়ে, যেন স্প্রিন্টার রেডি স্টেডি শুনে পিঠটা একটু বাঁকিয়েছে।
    এইবার। মায়ের সম্মান রক্ষার্থে এক সাহসী বাচ্চার ঝাঁপিয়ে পড়া।
    কিন্তু এইটুকু বাচ্চা কি পারবে ওই গুন্ডা-মত ছেলের সঙ্গে? প্রচণ্ড মার খাবে।
    ভিড় উৎকণ্ঠিত, এবার কি তামাশা দেখা ছেড়ে যুযুধান দুই পক্ষের মাঝখানে গিয়ে শান্তি কমিটি করতে হবে?
    কিন্তু বাচ্চাটা একগাল হাসে। তারপর বলে—আমার মাকে করবি তো? চল, আমার বাড়ি চল। দেখি, তোর খ্যামতা!
    এই উত্তরের জন্যে তৈরি ছিল না কেউ। এক সেকেন্ডের সন্নাটা! তারপর ভীড় হেসে ওঠে, এক সমবেত —হো-হো-হা-হা।
    কেউ কেউ বলে সাবাস বেটা! বচ্চে কা গাঁড় মেঁ দম হ্যায়, মান না পড়েগা।
    জোয়ান ছেলেটা টের পায় যে ভিড়ের সহানুভূতি বাচ্চাটার দিকে আর সবাই ওকে লুজার বা হেরো ভাবছে।
    বাচ্চাটা আবার হাত নেড়ে ডাকে-- আয় না, আয়! কী হল তোর?
    আর সয় না। ছেলেটা ‘আজ তু খল্লাশ’! বলে এক রণহুংকার দিয়ে চেনছেঁড়া কুকুরের মত দ্রুতবেগে তাড়া করে যায়।
    বাচ্চাটা বোধহয় তৈরিই ছিল। ও খরগোশের মত পড়িমরি করে দৌড়য়, পেছনে ডালকুত্তা। ও সারি সারি দোকানের পেছনের গলিঘুঁজি দিয়ে এঁকেবেঁকে পালায়। ওরা দু’জন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ভুলভুলাইয়ায় গায়েব হয়ে যায়। ভিড় হালকা হয়।
    ড্রাইভার গিয়ে স্টিয়ারিং-এ হাত রাখে। কন্ডাকটার চেঁচায় –সবাই উঠে পড়ুন, জলদি! গাড়ি ছাড়ল বলে।
    সন্ধ্যের মুখে ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছি এমন সময় স্থানীয় প্রাইমারি হেলথ সেন্টারের ড্রেসার ছেলেটি এসে হাসিমুখে বলে- ডাক্তার সাব আপনার অপেক্ষায় বসে আছেন, সঙ্গে করে নিয়ে যেতে বলেছেন।
    আমি একগাল হেসে বলি—তুমি যাও, আমি এই এলুম বলে।

    এটা একটা ছোট প্রাইমারি হেলথ সেন্টার, সরকারি ভাষায় মিনি হেলথ সেন্টার।
    আছে একজন সদ্য পাশ করা এম বি বি এস ডাক্তার যাকে তিন বছরের জন্য গাঁয়ে পাঠানো হয়েছে, ডাংগুলির খাটান নেওয়ার মত। আর আছে একজন মালয়ালি নার্স ও একজন ড্রেসার। লাগোয়া দু-কামরার কোয়ার্টার।
    এখানে ডাক্তার রোগী দেখেন সকাল দশটা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত। গাঁয়ের লোকে দূর থেকে আসে একজন দু-জন করে। কখনও কখনও চার-পাঁচজন। ইন্ডোর ওয়ার্ড নেই। এমার্জেন্সিতে কয়েক ঘন্টার জন্যে পাশের কামরায় একটা চৌকিতে শুইয়ে রাখা হয়। তারপর রোগীর আত্মীয়দের বলা হয় মহকুমা সদরে নিয়ে যেতে।
    আমি ব্যাংক ম্যানেজার চন্দ্রকান্ত খারে আর উনি ডাক্তার মহাকালেকর – আমরা হলাম ‘দো পঞ্ছি এক ডাল কে’ – দুজনেই রায়পুর ইউনিভার্সিটির স্নাতক, দু-জনের চোখেই গাঁয়ের জীবন একটা পানিশমেন্ট, ডাক্তারের ভাষায় ‘কালাপানি কা সাজা’।
    তবে ডাক্তারের কপাল ভাল। এই আদিবাসী বহুল ধ্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুরে আড়াই-তিন বছর কোন রকমে কাটানোর পর ও পোস্টিং পাবে কোন ব্লক হেড কোয়ার্টারে, আধা শহর। ভাল কোয়ার্টার, ওষুধের দোকান, প্যাথো ল্যাব। সিভিল লাইন্সের সরকারি অফিসারদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন ও রামি খেলা। আর রোগী দেখতে কারও ঘরে গেলে ভিজিট নেওয়া।
    আমরা দুজনেই ব্যাচেলর। ফলে আমাদের আড্ডায় নারীঘটিত প্রসঙ্গ একেবারে চেরি অন দ্য কেক। কিন্তু আমরা কেউ অল্পবয়সি মালয়ালি নার্স প্রমীলা মাধবনকে নিয়ে কোন ছ্যাবলামি করি না।
    মেয়েটি চাকরিতে এসে এক সপ্তাহ পরে মহাকালেকরকে বলল—পেটের দায়ে নিজের দেশ ছেড়ে এতদূরে চাকরি করতে এসেছি। এখন আমার মানসম্মান সেফটি সব আপনার হাতে। এখানে বাড়িভাড়া পেতে যা যা কথা শুনতে হয়েছে সেসব আপনাকে বলতে পারব না।
    ডাক্তার গম্ভীর হয়ে যায়, কিছু একটা ভাবে। তারপর নীচু গলায় বলে –কথা দিলাম, চিন্তা কোর না।

    ডাক্তার এখনও বিয়ের কথা ভাবছে না। ওর স্বপ্ন এম ডি করা। তবে চান্স পাওয়া কঠিন। একবার এম ডি হয়ে গেলে সরকারি চাকরি ছেড়ে কোন ছোট শহরে নিজের চেম্বার খুলবে। সংসারধর্ম তারপরে।
    তাই ও নিয়মিত রাত জেগে পড়াশুনো করে। ওর সকাল হয় বেলা আটটায়।
    আমার কপাল খারাপ। ইংরেজিতে এম এ পাশ করে ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকতে হল। তা’ও গ্রামীণ ব্যাংক। স্বপ্ন দেখতাম, কলেজে পড়াব, ভিলাই না হোক, ছত্তিশগড়ের কোন কলেজে। তবে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট কলেজে নয়। ওদের মাইনের ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। কিন্তু তার জন্য চাই পি এইচ ডি, নিদেনপক্ষে এম ফিল।
    বাবা নেই, বিধবা মায়ের শরীর ভাল না। মা ছিলেন ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের স্কুলের লাইব্রেরিয়ান। এক বছর আগে রিটায়ার করেছেন। সস্তা কোয়ার্টার ও সস্তা বিজলি ছেড়ে এখন ভাড়ার বাড়ি।
    এই চাকরিতে দশটি বছর কোন অজ পাড়াগাঁয়ে কাটানো আমাদের ভবিতব্য। অধিকাংশ ব্রাঞ্চই গাঁয়ে। আর শহর বা জেলা সদরে পোস্টিং তো হাতে গোনা। আর আমি নেহাতই এলেবেলে। মাথার উপরে কোন রাজনৈতিক কেষ্টবিষ্টু বা বড়োলোক আত্মীয়ের বরদ হস্ত নেই।
    মহাকালেকর গেয়ে ওঠে –উই আর ইন দ্য সেম বোট ব্রাদার। হ্যাঁ, ওর গানের গলা ভাল। মদ খেলে ইংরেজি গান বেশি গায়। আমার পছন্দ হিন্দি ফিল্মের গান।
    ওর ড্রেসার বয় ভালই রান্না করে। ডাক্তার নিজে কফি আর ওমলেট বানাতে পারে। মেডিক্যাল হোস্টেলে শিখেছে। আমি দুধে চা পাতা ফুটিয়ে ভাল কড়িমিঠি চা বানাতে পারি। ডাক্তার চুমুক দিতে দিতে সার্টিফিকেট দেয়—এক নম্বর! একেবারে রেলস্টেশনের ল্যাঙোট চা।
    আমরা হেসে উঠি।
    ওটা রেলস্টেশনের কালচে ন্যাকড়ায় পুঁটলি করে ছেঁকে বানানো চায়ের কোড নেম –ল্যাঙট ধোয়া চা। এসব ফ্রেজ ডাক্তারের কালেকশন, রায়পুর মেডিকেল কলেজের হোস্টেল জীবনের স্মৃতি।
    কেরোসিনের জনতা স্টোভে রান্না হয়। একটু সময় লাগে।
    ডাক্তার আবার দুজনের গেলাসে হুইস্কি ঢালে, ম্যাকডাওয়েল। আমরা ওল্ড ট্যাভার্ন, ক্যারু এসব খাই নে। একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে না ? তবে এই মাইনেয় ওর বেশি ওপরের ব্র্যান্ডের দিকে তাকানো যাবে না।
    আমরা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন। জীবন তো সবে শুরু হয়েছে। এখনও অনেক পথ চলা বাকি। তাই তিন পেগের বেশি খাই নে। আবার প্রথম পেগের পর থেকে জল মেশানোর মাত্রা বাড়ে। তিন নম্বরে পৌঁছে খানিক পরে গেলাসের দিকে তাকালে মদের সঙ্গে জল, নাকি জলের সঙ্গে মদ বোঝা মুশকিল হয়ে যায়।
    এই সময় ডাক্তারের দুঃখ উথলে ওঠে। ওর সঙ্গে ডাক্তারি পড়া তামিল মেয়েটি বিয়ের পর আমেরিকা চলে গেছে। ডাক্তার অবশ্য আমেরিকা না বলে স্টেটস বলে। জড়ানো গলায় বলে—অপর্চুনিস্ট! আরে যদি বিদেশে গিয়ে বরের পয়সায় বাড়িগাড়ি করবি তাহলে ডাক্তারি পড়তে কেন এলি? টেল মি! কাওয়ার্ড, দেশদ্রোহী!
    আমার গলায় হাসির আভাস, ও চটে যায়।
    --দিস ইজ নো জোক। ইন্ডিয়া হ্যাজ লস্ট এ ডক্টর। ওর জায়গায় কোন ছেলে চান্স পেলে দেশের লাভ হত। দিস ইজ বিট্রেয়াল! এ গ্রেট বিট্রেয়াল। মেয়েরা বিট্রে করে। দে আর বিট্রেয়ার্স বাই নেচার। বাট গড অলমাইটি তাই ওদের পানিশমেন্ট দিয়েছেন।
    তারপর ও একটা বহুবার বলা পিজে ফের শোনাতে চায়। আমি অন্যমনস্ক হবার ভান করি। হাতের গেলাসের দিকে তাকিয়ে থাকি। ও আবার চটে ওঠে।
    --দিস ইজ ব্লাডি ইনসাল্টিং ম্যান, ড্যাম ইনসাল্টিং । আমি যখন তোমাকে কিছু বলছি, তুমি শুনবে। আমার চোখের দিকে তাকাবে। তোমার হাতের গেলাসের দিকে নয়। শোন এবার।
    আমাকে শুনতে হয়, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
    ও সম্পন্ন ঘরের ছেলে, কোনও পারিবারিক দায়িত্ব সামলাতে হয় না। আমার মত প্রতিমাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয় না। ওর মাইনেও আমার চেয়ে বেশি। তাই বেশির ভাগ দিন মদের বোতল ওই আনিয়ে দেয়।
    ও বলতে শুরু করে।
    --একবার সমস্ত মেয়েরা মিলে দেবী পার্বতীর কাছে ডেলিগেশন নিয়ে গেল। বলল, এ তো মহা অন্যায়! ছেলেরা খালি মজা লুটবে, তারপর কিছু হয়ে গেলে ভালোমানুষের মত মুখ করে সটকে পড়বে। পাপ করে ধরা পড়বে না। আর আমরা গর্ভ হলে লুকোতে পারি না, পাপের ভাগী হই।
    এছাড়া এটাও দেখুন, সন্তানের জন্ম দিতে আমাদের জীবন সংশয় হয়। অনেকবার সার্জারি লাগে। আর স্বাভাবিক ডেলিভারিতেও কী কষ্ট!
    কিন্তু ছেলেরা কেন একতরফা মজা লুটবে? এটা আপনাদের একচোখোমি।
    --হুম্‌। এটা তো ঠিকই। তা তোমরা কী চাও?
    --আপনি দেবাদিদেব মহাদেবকে বলুন নিয়মটা পালটে দিতে।
    --মানে? ছেলেরা গর্ভধারণ করবে? সেটাই চাও? কিন্তু সেটা কী সম্ভব?
    --না না, আমরা এত অবুঝ নই। আমরা চাই জন্ম আমরা দেব, কিন্তু প্রসবযন্ত্রণা ছেলেরা ভোগ করবে, ব্যস্‌।
    দেবী কনভিন্সড্‌ হয়ে বাবা ভোলেনাথের সঙ্গে দেখা করলেন।
    ভোলেনাথ সব শুনে দু’দিকে মাথা নাড়লেন।
    --এ হয় না। ব্রহ্মা অনেক ভেবেচিন্তে নিয়ম করেছেন। এটা পালটে দিলে অনর্থ হবে।
    --আপনি চাইলে সব হয়, আপনার কথা ব্রহ্মা-বিষ্ণু কেউ ফেলতে পারেন না। একবার চান্স দিয়ে দেখুন, কোন অঘটন হবে না ।
    --ঠিক আছে। একটা ট্রায়াল হোক। তারপরে রেজাল্ট দেখে তোমরা ফাইনাল যা বলবে। তথাস্তু।

    সারা দেশে হৈচৈ। পেডিয়াট্রিক ক্রান্তি হতে চলেছে। প্রথম স্যাম্পল এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে। নির্দিষ্ট তারিখে শেঠ ও শেঠানিকে পাশাপাশি দুটো খাটে শুইয়ে দিয়ে বেশ কজন ডাক্তার ঘড়ি দেখছেন।
    সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, লেবার পেইন শুরু হবার কথা। কিন্তু শেঠজি নির্বিকার। কোন পরিবর্তন নেই। এদিকে শেঠানির শরীরে সমস্ত লক্ষণ ফুটে উঠছে।
    তবে কি দেবতার বর ব্যর্থ হবে।
    এমন সময় নীচের তলা থেকে এক বিকট জান্তব চিৎকার। দেখা গেল খাটিয়ায় শুয়ে পুরনো দারোয়ান পেট চেপে গোঙাচ্ছে।
    আমি উঠে পড়ি। মুখে টোকো স্বাদ।
    চলে আসার সময় ডাক্তার আচমকা বলে –আরে, কাল একটা বিয়ের নেমন্তন্ন আছে। আমাদের দুজনকেই ডেকেছে। পরশুদিন থেকে তোমার কার্ড আমার কাছেই রয়েছে, তুমি তো বাড়ি গেছলে। এখন ঘরে গিয়ে খুলে দেখ, কেমন।
    ইয়াদ রখনা, হম দোনোঁ চলেঙ্গে।




    ঘরে ফিরে আলুসেদ্ধ ভাত আর একটা ডিমের বড়া খেয়ে শুয়ে পড়ি।
    পরের দিন ঘুম ভাঙে একটু দেরি করে। ব্যাংকের চাপরাশি ঘর ঝাঁট দেয়, চা নিয়ে আসে।
    --সা’ব, এই বিয়ের চিঠিটা আপনার খাটের পাশে মাটিতে পড়ে ছিল।
    --কই দেখি।
    হাত বাড়িয়ে চিঠিটা নিয়ে খামটা খুলতেই দেখি ওপরে লেখাঃ
    “মঙ্গলম ভগবান বিষ্ণু, মঙ্গলম গরুড়ধ্বজ।
    মঙ্গলম পুণ্ডরীকাক্ষম মঙ্গলায় তনো হরি”।।

    ভেতরের পাতায় ‘পরম কারুণিক পরমপিতা পরমেশ্বরের অসীম কৃপায় আমার কনিষ্ঠা কন্যা সৌভাগ্যবতী ললিতার বিবাহ পেন্ড্রা গৌরেলা নিবাসী সদব্রাহ্মণ শ্রীকনকমণি পাঠকের জ্যেষ্ঠ পুত্র চিরায়ুষ্মান সম্রাটের সহিত স্থির হইয়াছে। আপনারা সবান্ধবে আসিয়া বরবধূকে আশীর্বাদ করিলে অনুগৃহীত হইব’।

    নিবেদক
    ললিতমোহন তিওয়ারি (অ্যাডভোকেট), সঞ্জনা তিওয়ারি
    এবং সমস্ত তিওয়ারি পরিবার
    ,
    গোপালপুর, কঠঘোরা, জিলা কোরবা।

    একটা হাজার ভোল্টের শক! তখনই মনে মনে ভেবে নেই এই বিয়েতে আমি যাব না।
    চাপরাশি বিজয় আমার মুখের ভাবে কিছু আন্দাজ করে।
    --হ্যাঁ স্যার। সেই মেয়েটা, বয়সের দোষে যবনের উচ্ছিষ্ট হয়েছিল। এখন সব—
    এক ধমকে ওকে থামিয়ে বলি—আমার সামনে থেকে সরে যা!

    বিকেলের দিকে আমার ক্লার্ক জিজ্ঞেস করে –আজকে তিওয়ারি উকিলের মেয়ের বিয়েতে আমাদের ব্যাংকের সবাইকে নেমন্তন্ন করেছে। আপনি কখন যাবেন? ও, ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে?
    হাতের ইশারায় বলি তোমরা যাও, আমি দেখব-খন।
    সন্ধের অন্ধকার। সবাই চলে গেছে। ব্যাংক খালি, আলো জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না।

    দু-বছর আগের কথা।
    আমি তখন সদ্য গোপালপুরে জয়েন করেছি। সরকারের নির্দেশ এল যে গরিবদের জন্য স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনায় করা ঋণের আবেদনগুলো একটা ঋণ-মেলার আয়োজন করে হাতে হাতে স্যাংশন করতে হবে। তাতে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, ব্লক অফিসের সরকারি অফিসার, এলাকার সব ম্যানেজার মিলে একত্রে বসে ‘এটা ঠিক/ ওটা ভুল’ করে ফয়সালা করতে হবে।
    গরিব মানুষের দু-শ আড়াইশ আবেদন ফেলে রাখলে চলবে না।
    মহকুমার জনপদ ভবনে কাজ শুরু হল। বারান্দায় উৎসুক লোকের ভিড়। হলের মধ্যে আমরা সবাই। একটা একটা করে নাম ডাকা হচ্ছে আর ঋণপ্রার্থী এসে হাতজোড় করে দাঁড়াচ্ছে। দু-একটা প্রশ্ন। একে কত দেওয়া যায়?
    পাঁচ হাজার? নাঃ দশ হাজার দিন। কিপটেমি করবেন না তো!
    নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টায় কাজ এগিয়ে চলে। চা-নাস্তা আসে। ফের শুরু। খুব কম আবেদন ক্যানসেল করা হয়। বিশাল বান্ডিল হালকা হয়ে যায়।
    আর বেশি বাকি নেই।
    হঠাৎ সন্নাটা। পিন পড়লে শব্দ শোনা যায়। আমি কিছুই বুঝতে পারি নি।
    ডাক শুনে হলের মধ্যে এসে একটি রঙচটা শাড়ি পরে আদ্দেক মাথা ঢেকে দাঁড়িয়েছেন এক মাঝবয়সি মহিলা। মুখে কথা নেই। চেহারায় অনন্ত বিষাদের ছাপ।
    ফিসফিসানি।
    কোন গ্রাম? ধনরাস। কোন ব্যাংক? ক্ষেত্রীয় গ্রামীণ।
    সবাই আমার দিকে তাকিয়ে। আমি অ্যাপ্লিকেশনটি হাতে নিয়ে দেখতে থাকি।
    ফরিদা বী। ফল দোকান। দশ হাজার টাকা চাই।
    জিজ্ঞেস করি –আপনিই ফরিদা বী?
    ওর মাথা আরও নুয়ে পড়ে। কোন শব্দ বেরোয় না।
    ব্যাংকের উকিল নীরজ ব্যাস বলেন— হ্যাঁ হ্যাঁ, ইনিই। আমি আইডেন্টফাই করছি। আপনি দশ হাজার টাকা নগদ মঞ্জুর করুন।
    -- সে কী?
    -- আরে আমরা বলছি তো। পুরো কমিটি সাইন করবে, আপনি একা নন। চিন্তা কিসের? পরে সব বলব।

    সন্ধ্যের পর ব্যাস উকিল আমাকে খুলে বলেন।
    -- শুনুন , ওই বিধবা ফরিদা বী-র ছেলে হামিদ ক্লাস টেনে পড়ত। সহপাঠী ছিল ললিতা তিওয়ারি, আমাদের বন্ধু উকিল তিওয়ারির ছোট মেয়ে। দুজনের মধ্যে কবে থেকে যে প্যার-মুহব্বত চলছে বড়রা টের পায় নি।
    মেয়েটির বিয়ে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে প্রায় ঠিক। পাকা দেখা হয়ে গেছল। এমন সময় ওরা দুজন একসঙ্গে পালিয়ে গেল। ছেলেটি মায়ের সঙ্গে ফলের দোকান চালাত। মায়ের টিনের সুটকেস থেকে যা পারল নিয়ে গেল। মেয়েটিও কম নয়, ঘর থেকে কিছু গয়না সঙ্গে নিয়ে গেছল।
    কিন্তু সাতদিনের মাথায় ধরা পড়ে গেল। কোথায় যাবে? মোল্লার দৌড় মসজিদ অব্দি, ব্যাস্‌।
    পুলিশ গিয়ে রায়পুরের এক সস্তা হোটেল থেকে মাঝরাতে মেয়েটাকে উদ্ধার করল। সেই রেইডের টিমে মেয়েটির বাবার সঙ্গে আমিও সাক্ষী হিসেবে সামিল ছিলাম।
    কী বলব মশাই! মেয়েটা যে ভাবে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল, আমাদের পায়ে ধরছিল –সে আর দেখা যায় না।
    -- তারপর?
    -- তারপর আর কী? ছেলেটার বিরুদ্ধে রেপ, অ্যাবডাকশন আর গয়না চুরির চার্জ লাগানো হল। কোন উকিল ওর জামিনের কেস করতে রাজি হল না। হবে কী করে? একে তো উকিলের মেয়েকে ফুঁসলেছে, তায় মুসলমান হয়ে হিন্দু ব্রাহ্মণের মেয়েকে এঁটো করেছে!
    তিনমাস ধরে ছেলেটা এখানকার জেলে রয়েছে। পুলিশের আড়ং ধোলাইয়ে ওর হাড়গোড় আস্ত নেই। হাসপাতালে দিতে হয়েছিল। তবে ওই জাতটার কিছু শিক্ষে দরকার ছিল। যা হয়েছে তা একরকম ভালই হয়েছে।
    -- তাহলে ওর মাকে দশহাজার টাকা লোন দিতে আপনারা অমন হামলে পড়লেন কেন?
    -- বুঝলেন না? ওর মায়ের কী দোষ? ফল দোকানের পুঁজিপাটা যা ছিল তা তো ওই হারামজাদা নিয়ে পালিয়ে গেল। এখন ফরিদা বী খাবে কী? আরে আমাদেরও বিবেক বলে কিছু আছে।

    সন্ধেবেলা ডাক্তার নিজে এল আমার আস্তানায় ।
    -- তুমি যে যাবে না সে তো ধরেই নিয়েছিলাম। তা মেয়ের বাবা আমাদের জন্যে দু-বোতল ম্যাকডাওয়েল পাঠিয়ে দিয়েছে। বিয়েতে নাই গেলাম, মদের বোতলের গায়ে তো আর নাম লেখা নেই। নাও, শুরু করো।
    ওই মেয়েকে পার করতে কী কম মেহনত হয়েছে? চারদিকে রটে গেছল –মুসলমানের এঁটো। তাই কয়েকশ কিলোমিটার দূরের গ্রামে সম্বন্ধ করতে হল। চিয়ার্স্‌ !
    প্রথম পেগের পর আমি জিজ্ঞেস করি—আচ্ছা ডাক্তার, সত্যি কি রেপ হয়েছিল?
    ডাক্তার ছাদের দিকে তাকায়, তারপর আমার দিকে।
    -- পেনিট্রেশন হয় নি। আমিই পরীক্ষা করে রিপোর্ট লিখেছিলাম।
    -- সে কী! তুমি তো রেপ লিখেছিলে। হ্যাঁ, লিখেছিলাম, কিন্তু কনফার্ম করি নি। আর পেনিট্রেশন লিখি নি। ইচ্ছে করে ফাঁক রেখেছিলাম যাতে ছেলেটা পরে জামিন পেয়ে যায়। আরে আমারও তো বিবেক বলে কিছু আছে।
    -- জামিন কী করে হল?
    -- তোমাদের ব্যাংকের ওই ব্যাস উকিল আমাকে জেরা করে ফাঁক দেখিয়ে দিল। আমিই ওকে চুপিচুপি বলে দিয়েছিলাম। ভারি সেয়ানা! ছেলের মায়ের থেকে পাঁচ হাজার নিয়েছিল।
    -- তাই আমার লোনের এক পয়সা আদায় হয় নি! ফলের দোকান বন্ধ। মা-ছেলে কোথায় গেছে কেউ জানে না?
    --উফ্‌ একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে হতে বেঁচে গেল-- কোথায় সেটা সেলিব্রেট করবে? না খালি লোন আদায়ের চিন্তা!


    .

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা
  • গপ্পো | ০২ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৪৫525456
  • এমন সহজ আঙ্গিকে লেখা মাটি ঘেঁষা জীবনের গল্প বেশ লাগে।

    নতুন টার্ম জানলুম - ল‍্যাঙোট চা।

    অবশেষে বোঝা গেল শিরোনামে‌র তাৎপর্য।

    ভোলানাথের ট্রায়াল কেসের মতো অন‍্য একটা ভার্সন‌ বলি -  বিবাহের অনেকদিন পর - যখন কিছু হবার আশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছে - রাণীর একটি পুত্র সন্তান জন্মালো। রাজ জ‍্যোতিষি বললেন এ ছেলে পরে অনেক বড় হবে কিন্তু প্রথম যার নাম ধরে ডাকবে সে তৎক্ষণাৎ মারা যাবা। এতদিন বাদে সন্তান হ‌ওয়ার আনন্দ মাথায় উঠলো রাণী‌র। ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন। যথাসময়ে ছেলেটি একদিন আধো গলায় বললো - "বাব্‌বা" - হঠাৎ বাইরে তুমুল হৈচৈ - ঘোড়া‌য় চড়ে আসছিলেন প্রধান সেনাপতি - হঠাৎ ঘোড়াটা বেমক্কা লাফিয়ে উঠতে বেকায়দায় পড়ে গিয়ে সেনাপতি ঘটনাস্থলে‌ই ঘাড় মটকে পটল উত্তোলন করেছেন।
  • :|: | 174.251.161.4 | ০২ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৫২525462
  • উপোসের দিন সন্ধ্যায় ম্যাকডাওয়েল খেলেন এমন কি "ঘরে ফিরে আলুসেদ্ধ ভাত আর একটা ডিমের বড়া"-ও খেলেন? এমন উপোসের কতা জম্মে শুনিনি বাপু! 
  • Ranjan Roy | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৪525467
  • চতুর্ভুজ,
    প্লীজ রাগ করবেন না। আপনার সেন্স অফ হিউমার এবং উইটের আমি ভক্ত। 
     
    দেখুন, আসলে একটা ভারতের  ভেতরে আরও অনেকগুলো ভারত আছে। তাদের মধ্যে  মিল এবং কিছু অমিল - দুটোই আছে। এটা সেরকম একটা গল্প।
    কোলকাতায় অল্পবয়েসি ছেলেদের মধ্যে নিয়ম করে শনি-মঙ্গলের উপোস রাখা খুব কম চোখে পড়ে। অথচ ছত্তিশগড়ে প্রায় ৫০% ছেলেমেয়ে এটা করে। এখানে কথায় কথায় উপোস করে। 
    ছেলেরা হয়ত মাকে কথা দিয়েছে যে এই দুটো উপোস করবে যাতে অজানা জায়গায় একা চাকরি করা ছেলেটিকে বজরঙ্গবলী ও ভোলেবাবা বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন। 
    তাই ছেলেটি যান্ত্রিক ভাবে এটা করে। একবেলা উপোস, স্কুলের হাফ ডে'র মত। অন্যবেলা ?
    আর অনেকেই মাছ মাংস খায় না, কিন্তু ডিম খায়। জাত-ধর্ম নির্বিশেষে। 
    আরও একটা কথা।
    এখানকার কলেজের ছেলেমেয়েরা  লাইব্রেরিতে খবরের কাগজ  নিয়ে প্রথমেই চোখ বোলায় -- খেলার পাতা বা রাজনীতির পাতায় নয় -- রাশিফলের পাতায়। এরা আপনার নামের প্রথম অক্ষর থেকে আপনার জন্মের রাশি নিয়ে আন্দাজ করতে ভালবাসে। কোলকাতায় অমন দেখি নি, আমি দু'জায়গাতেই কলেজে পড়েছি। 
    শেষ দুটো গল্পঃ
    ১) ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের এক ডেউপোসপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার, বাঙালী এবং ছত্তিশগড়ে জন্মেছেন। আমার খুব ঘনিষ্ঠ। কালীপুজোর দিন  উপোস করেছেন -- লুচি মিষ্টি সব খেয়ে। তাহলে কীসের উপোষ?
    বৌদি বললেন -- ভাত খান নি তো!
    ২) আমার মিশনের বন্ধু, থাকে আমেরিকায়, কোল্কাতায় দুটো বাড়ি। এখন বেদম অ্যালকোহলিক। ঘরে সারদা মায়ের বড় বাঁধানো ছবি। প্রতিবার বিশাল পেগ বানিয়ে মায়ের ছবির সামনে তুলে ধরে চুমুক দিয়ে বলে -- ভয় পাস না। মাকে নিবেদন করে খাচ্ছি, কিছু হবে না। মা দেখবেন। 
  • :|: | 174.251.161.4 | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩২525469
  • আহা রাগ করিনি। মজা করেই বললুম তো। 
    লুচি ছক্কা খেয়ে উপোসের কথা জানি তো। কথামৃতের মনোযোগী পাঠক মাত্রই জানেন। আর সুধা খাই জয় কালী বলে -- সেটাও জানি। 
    কিন্তু সত্যিই জান্তুম না যে ছত্তিশ গড়ের ছেলেপুলেদের ৫০%-এর কথায় কথায় হাফ ডে উপোসের অভ্যাস আছে। ইন্টারেস্টিং। 
  • Arindam Basu | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২২525470
  • রঞ্জনবাবু, আপনার গল্পের প্রোটাগনিস্ট দুদিন উপোস করে দেখে ভাবলাম বা রে, এ তো দিব্য ইনস্টিটিউশনলাইজড ইনটারমিটেন্ট ফাস্টিং হয়েছে, ৫:২, শুধু দুটো দিন আলাদা। 
    শেষে দেখলাম তা নয়। 
     
    আমার সঙ্গে এখানে এক মধ্যপ্রদেশের হিন্দিভাষী ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে একটা মিটিং এ। নানারকমের খাবার রাখা আছে, ভদ্রলোক বেছে বেছে কাটা ফল খাচ্ছেন। সে ভাল কথা, আমাকে দেখে বললেন, আমার ফাস্টিং চলছে কিনা, ঐজন্য আজ শুধু ফল খাচ্ছি। আমিও চতুর্ভূজ এর মত ভাবলাম, এ কিরকম অদ্ভুত উপোস। আমি বললাম আপনি কি নবরাত্রির উপোস রাখছেন? তিনি বললেন, উঁহু, আমি ফি মঙ্গলবার উপোস করি। 
     
    আপনার লেখাটা পড়ে এখন মনে হচ্ছে ইনিও বজরংবলী কেস। 
  • | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১০:৩২525471
  • পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পশ্চিম ও মধ্যভারতে এরকম উপোস খুবই প্রচলিত।  মহারাষ্ট্রে যেমন গোটা শাওন (শ্রাবণমাস তবে আমাদের ক্যালেন্ডর অনুযায়ী নয় একটু আলাদা)  জুড়ে  সপ্তাহে এক বা দুইদিন উপোস করে লোকজন।  সেই  সময় সহকর্মীরা  ক্যন্টিনে গিয়ে গম্ভীরমুখে বলেন 'আজ মেরা উপবাস হ্যায়,  এক ছাঁস লেকে আতে হ্যাঁয়।'  তারপর একগ্লাস ঘোল নিয়ে এসে নিজের টিফিনবাক্সো বের করেন তাতে সাবুর খিচুড়ি এবং/ অথবা  কিছু ফল। সে সাবুর খিচুড়িও আমাদের মত করে তৈরী নয়। তার রেসিপি আলাদা (খেতে ভাল বেশ)।  এছাড়া কেউ কেউ প্রায় সারা বছর ধরে সোমবারে শিবের জন্য এরকম উপবাস করেন।  এখন তো জোম্যাটো স্যুইগিতেও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের 'উপবাস মেনু' থাকে।  উপবাস মেনু laugh
     
    (গল্পটা পড়ি নি, পরে পড়ে নেবো। ) 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১২:০৮525473
  • গল্পটা বেশ ভালো লাগল। হ্যাঁ এই ধরণের উপোস এম পি রিজিয়নে খুব চলে। নবরাত্রিতে তো ভীষন ভাবে। ওই সবুদানার খিচুড়ি।
  • Kishore Ghosal | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১০525478
  • বেশ গল্প, আপনার ছত্তিশগড়ের সিগ্নেচার ব্লেণ্ডিং বেশ উপভোগ করলাম। 
     
     "ব্রৎ" বা ব্রত রেখে  উপোস করাটা উত্তরভারত এবং মধ্য ভারতে বহুল প্রচলিত। 
     
    এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল, জব্বলপুরে, আমরা "মচ্ছিখোর" বলে ঘর ভাড়া পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। যে বাড়িতে বাড়িওয়ালা স্বয়ং অধিষ্ঠিত, সেখানে আমাদের ঠাঁই হয়নি। অনেক খোঁজা খুঁজি করে, ছোট একটা বাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল, যার ধনী বাড়িওয়ালা থাকতেন অন্য বাড়িতে। তবে তিনি প্রতি রবিবার আমাদের মেসে আসতেন, দুপুর বারোটা, সাড়ে বারোটা নাগাদ - সেদিন আমাদের মাছের আয়োজন হত। ভদ্রলোক বড়ো তৃপ্তি করে পাঁচ-ছ পিস মাছভাজা দিব্যি সাঁটাতেন, আর বলতেন, "আপনাদের কম পড়বে না তো?" একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, " আপনার এরকম মৎস্যপ্রীতি  কী করে হল? বাড়িতে তো মাছ হয় না নিশ্চই"। বলেছিলেন, " 'আওরাত'-দের জন্যেই বাড়িতে মাছ খাওয়া হয় না। তবে অধিকাংশ ছেলেই হোটেল কিংবা পার্টি-সার্টি থেকে চুপিচুপি মাছ, চিকেন খেয়ে আসে"। 
    আরেকটা কথা বলেছিলেন, "আপনাদের দেখেছি, রোজ একপিস করে মাছ খান, আর  আমরা মাসে দু-চারদিন খাই - কিন্তু যেদিন খাই -  গোটা মাসের প্রাণীজ প্রোটিন একসাথে সংগ্রহ করে ফেলি"। 
  • লোকে | 117.194.73.110 | ০৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৮525479
  • গল্প ছেড়ে উপোস নিয়ে পড়লো। 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০১:০০525494
  • 'বচ্চে কা গাঁড় মেঁ দম হ্যায়, মান না পড়েগা।' 
    সবাই এভাবে দৃশ্য দেখে। এ পুরো গল্পটাও এমনি দৃশ্য দেখার হয়ত। 
     
    "এমার্জেন্সিতে কয়েক ঘন্টার জন্যে পাশের কামরায় একটা চৌকিতে শুইয়ে রাখা হয়। তারপর রোগীর আত্মীয়দের বলা হয় মহকুমা সদরে নিয়ে যেতে।" / "তবে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট কলেজে নয়। ওদের মাইনের ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। কিন্তু তার জন্য চাই পি এইচ ডি, নিদেনপক্ষে এম ফিল।" / "ওটা রেলস্টেশনের কালচে ন্যাকড়ায় পুঁটলি করে ছেঁকে বানানো চায়ের কোড নেম – ল্যাঙট ধোয়া চা।" / "আরে যদি বিদেশে গিয়ে বরের পয়সায় বাড়িগাড়ি করবি তাহলে ডাক্তারি পড়তে কেন এলি?" / "একে তো উকিলের মেয়েকে ফুঁসলেছে, তায় মুসলমান হয়ে হিন্দু ব্রাহ্মণের মেয়েকে এঁটো করেছে!"
    মিল পেয়েছি আমাদের এখানকার সাথে। চিত্রগুলো সব একই রকম। 
     
    "দেখা গেল খাটিয়ায় শুয়ে পুরনো দারোয়ান পেট চেপে গোঙাচ্ছে।"
    হা হা। 
     
    "আরে আমাদেরও বিবেক বলে কিছু আছে।"
    লেখাটি শেষ করার পর কেন জানি না এই কথাটা বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল আমার চারপাশে! বিবেক বিবেক বিবেক উচ্চ স্বরে নিনাদ তুলছিল। এই পৃথিবীতে বিবেকের বিজনেস সব থেকে বিস্তৃত আর তাই  ফিকে হয়ে যায়  "লোন আদায়ের চিন্তা!"
     
    খুব উপভোগ করলাম,রঞ্জনদা। আপনার ছত্তিশগড়ের বইটা কিন্তু পড়ছি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন