হঠাৎই সভাকক্ষে হাসির মৃদু ঢেউ বয়ে গেল! কিন্তু সেই হাসি থামতে না থামতেই এক কম বয়সী লোক, বোধ করি, সভার তরুণতম আলোচক, উঠে দাঁড়ালেন। মুহূর্তেই সব চোখ তার দিকে ঘুরে গেল। লোকটির চোখে-মুখে খেলে যাচ্ছিল অলৌকিক এক আভা, বিজ্ঞানীরা একে ভাল করেই চেনেন; তাদের ভাষায় এ হচ্ছে ইউরেকা লাইট। আস্তে আস্তে বোমাটা বের করতে শুরু করলেন সেই তরুণ তার শ্মশুমন্ডিত মুখের গোপন দুয়ার থেকে, "একটা চিন্তা এসেছে আমার মাথায়! জানি না আপনাদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, তবে আমার মনে হচ্ছে, কাজে দেবে। ওদেরকে আবার এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিতে হবে আমাদের। আবার আগের মত স্থবির, আনত করে দিতে হবে। “ ... ...
প্রথম দোকানটিই গাট্রাগোট্রা ছিল, কিন্ত নতুন মামিকে কেন যেন আকৃষ্ট করতে পারে না, ‘বেশী ভীড়, কিছুই দেখা যায় না ঠিকমতন।‘ কিছুক্ষণ পর মোরসালিন একটি শুকনো দোকানের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নতুন মামি প্রথমে দ্বিধায় ভুগলেও কি মনে করে ঢুকে পড়েন। কাতান, বেনারসি, জামদানি - সব জাতেরই ছিল। কয়েকটি তো বেশ লাগলো মোরসালিনের। কিন্তু মামি ওগুলো ধরেন, টিপেন, সুতো মাপেন, ফুল-পাতা-নক্ষত্র-নকশার লাইন ঘাট পরীক্ষা করেন মন দিয়ে, জ্যামিতিক সূত্র অনূসরিত হয়েছে কিনা খালি চোখের স্কেলে মেপে নিতে চান, এভাবে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলে মোরসালিনের দিকে ফিরে বলেন, “চল অন্য কোথাও।“ ... ...
তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হাতটা সরিয়ে রেখে বললাম, ‘কই যাবেন ঘুরতে? আছে তো ঐ এক নদীর পাড়!’ সত্যি বলতে কি, আমাদের গাঁয়ের নদীটা অসুন্দর নয়; স্নিগ্ধ, ছোট্র নদী। কিন্তু স্বয়ং বিধাতাও এক জায়গায় দিনরাত পড়ে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেন নিশ্চিত, না হলে বিশ্বজুড়ে এত রং,রূপ ও রসের বৈচিত্র্য কেন গড়তে গিয়েছেন তিনি! ... ...
ওদিকে শামুক বারবার দৌড়ে বাবার কাঁধে উঠে পড়তে চাইছে, কিন্তু নাগাল পাচ্ছে না। আজ দুপুর থেকেই তার মাথায় একটা ঝোঁক চেপেছে, ফলের খালি সাজিটা বাবার মাথায় পরিয়ে দেবে। এক সময় হতাশা জেগে উঠে তার অন্তরে, “কবে যে ছোট হবে নানাটা!” ... ...
স্মৃতির সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে চলে গেলাম সেই শৈশবের কোন এক ঈদে, আব্বা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, মামারা ইতোমধ্যে ঈদের শার্ট, প্যান্ট কিনে দিয়েছেন, খালা কিনে দিয়েছেন জুতো, কিন্তু এরপরও আমি কাঁদো কাঁদো, আমার যে অন্য সবার মত দুই সেট জামা চাই, সকাল ও বিকালে বদলে পরার জন্য। ... ...
পুলসিরাত পার হয়ে যখন শেষমেষ তারা ঢুকলো অফিসটাতে, তখন দেখা গেল সেলিম ভিজলেও তার বসের মত কাকভেজা হয়নি, ফ্যানের বাতাসে একটুখানি বসলেই চলছে। ওদিকে বসের সামনে মেলে ধরা হয়েছে দীপুর টি-শার্টটা। ... ...
খবরে প্রকাশ, রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্য পরিবর্ধনে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশান। এর মধ্যে একটি প্রজেক্ট ১৯১৯ কোটি টাকার। যার আওতায় রয়েছে খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর আধুনিকায়নের পরিকল্পনা, যার বাস্তবায়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কালুনগর, জিরানি, মান্দা ও শ্যামপুরে খাল নির্মাণেও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ; সীমানপ্রাচীর, যানবাহন ও পথচারী চলার জন্য সেতু, পায়ে চলার পথ, পাবলিক টয়লেট, প্লাজা, সাইকেল লেন, আর বৈদ্যুতিক বাতির থাম – সব কিছু দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ছায়াছবির মত। একই সাথে অনেক কিছু উধাও হচ্ছেও ছায়াছবির মত; যেমনঃ পুকুর বা খালের উন্নয়নে টনকে টন কংক্রিট গেলে দেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী সব সবুজকে উচ্ছেদ করে! ... ...
আবারো তন্ন তন্ন করে খুঁজতে আরম্ভ করে দীপ! কিন্তু কোথাও নেই সেই পূর্ণিমা! এক সময় হাল ছেড়ে দিয়ে বিষাদ চিত্তে বিছানায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ে দীপ জগটার মত করেই। কিন্তু আর ঘুম আসে না। মাঝে মাঝে ঘড়ির কাটাটার দিকে তাকায় সে, আর ক্রমাগত এপাশ ওপাশ করতে থাকে ঘড়ির কাঁটাটার মত করে, একই তাল ও লয়ে! কিন্তু সূর্যের চোখ খোলার সময় যতই এগিয়ে আসতে থাকে, ঘুমের গাড়ি যেন আরো দূরে সরতে থাকে, আর কপালের ভাঁজগুলি বড় হতে থাকে দীপের! আগামীকালই এমন কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অপেক্ষা করছে তার জন্য, স্বাভাবিক শরীরেই যার ধকল সহ্য করা কঠিন! ... ...
আমাদের এই নারী উদ্যোক্তা যে শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছেই দেনাদার ছিল, তা নয়। ঋণের টাকা দিয়ে তো সে মেশিন কিনল। কিন্তু বড় বড় অর্ডারকে পূরণ করার জন্য যে সে গাদা গাদা কাপড় এনেছিল হোলসেল কাপড় সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে, তাদের দেনা পরিশোধেও ছিল উপুর্যুপুরি আর ধারালো চাপ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইন-সমর্থিত চাপ সামলাতে পারলেও ঐ নারী উদ্যোক্তা সরবারহকারীদের আইন-অসমর্থিত চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিল, যার অবশ্যম্ভাবী ফল নতুন ক্রয় করা সেলাই মেশিনগুলোর অধিকাংশ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেয়া কাপড়ের স্টকের সাথে সাথে। এভাবে করোনার করাল গ্রাস সেই সাপ্লাইয়ারদের অস্বাভাবিক মুনাফা এনে দিলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কোন টাকাই উদ্ধার করতে পারল না। ফলশ্রুতিতে তারা আইনি পদক্ষেপ শুরু করলে, আমাদের আলোচ্য নারী উদ্যোক্তা মান-সন্মান বাঁচাতে মহাজনদের দ্বারস্থ হল, যারা প্রচলিত সুদের প্রায় চার-পাঁচ গুণ হারে ঋণ দিয়ে থাকে, আর ঋণ আদায়ে তাদের থাকে আলাদা গুন্ডা বাহিনী। ফলে করোনা অস্বাভাবিক মুনাফা এনে দিল টাকার এই আদিম কারবারীদেরও! ... ...
প্রথমে কিছু গগনবিদারি শ্লোগানে গা গরম করে নিয়ে মাইকটা এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল জনপ্রিয় সুরে দল ও নেতার বন্দনাগীতিতে। ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের ভীড়ে জায়গাটা ভরে গেছে। ওদিকে আরো কিছু মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ কোণাটিতে দাঁড়িয়ে গেছে; অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীদের হুংকারে তাদের মাঝেমধ্যে কষ্টকর দিকবদল করতে হচ্ছে! সভার প্রবেশদ্বারটা প্রশস্ত হওয়ায় কোণাগুলি একটু বেশিই বেঁকে গেছে, না হলে সামান্য লম্ফ-ঝম্ফ - এ আর কী এমন কঠিন কাজ! ... ...