এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২৩

  • বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব

    সৌভিক ঘোষাল
    ইস্পেশাল | উৎসব | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ২৯৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৫ জন)
  • মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা
    ছবি - লেখক



    বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা। তার মধ্যে বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার অবদান যেমন আছে, তেমনি আছে খেরওয়াল বা সাঁওতালী সহ বেশ কিছু মুণ্ডা ভাষার অতি গুরূত্বপূর্ণ অবদান। বাংলা ভাষার ওপর বৈদিক, সংস্কৃত ও প্রাকৃতের মতো আর্য ভাষার প্রভাবের দিকটি নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু অস্ট্রো এশিয়াটিক, দ্রাবিড় ও সিনো টিবেটিয়ান ভাষারও যে কম বেশি প্রভাব আছে বাংলা ভাষার গঠনে – তাই নিয়ে আলোচনা তেমন দেখা যায় না। অথচ ভাষাপ্রকৃতির দিক থেকে বিচার করলে বাংলা ভাষার গঠনে মুণ্ডা সহ এসব ভাষার প্রভাবের দিকটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    বৈদিক বা প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ বিভিন্ন ধরনের মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার প্রথম স্তর অশোক প্রাকৃতে বদলে গেছিল। (অশোক প্রাকৃত এর নাম হলেও এর সময়কাল অশোকের কয়েক শতাব্দী আগের।) সেই সময়ে যখন লোকমুখে প্রাকৃত ব্যবহার হচ্ছে, তখন লিখিত সাহিত্যে বেদের ভাষাকে অবিকৃত ও বিশুদ্ধ রাখার ইচ্ছে থেকে যে সংস্কারমূলক ব্যাকরণগত প্রচেষ্টা করা হল, সেটাই জন্ম দিয়েছিল সংস্কৃত ভাষার। কাব্য ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ রচনাদি এই ভাষায় লেখা হয়েছে দীর্ঘকাল, কিন্তু মানুষ কথা বলেছে প্রাকৃতে। পরে অপভ্রংশ ও অবহটঠে। নাট্যসাহিত্যে বিভিন্ন চরিত্রের সংলাপে এর প্রমাণ আছে। রাজা বা উচ্চবংশীয় এলিটদের মুখে ছাড়া সংস্কৃত সংলাপ আমরা নাটকের অন্যান্য চরিত্রদের মুখে পাই না।

    প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার স্থানভেদে কয়েকটি আঞ্চলিক রূপ ছিল, যেমন প্রাচ্য, উদীচ্য, মধ্যদেশীয় ও দাক্ষিণাত্য। মধ্য ভারতীয় আর্যর প্রথম স্তর প্রাকৃতেরও স্থানভিত্তিক বিভিন্ন ভাগ ছিল। যেমন - মাগধী, অর্ধমাগধী, পৈশাচী, সৌরসেনী, মাহারাষ্ট্রী। প্রতিটি প্রাকৃত মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার দ্বিতীয় স্তর অপভ্রংশ এবং তৃতীয় স্তর অবহটঠে কালের নিয়মে পরিবর্তিত হয়ে যায়। ৬০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ৯০০ খ্রীষ্টাব্দ এই সুদীর্ঘ পনেরশো বছর ধরে ভাষার কোনও একটি নির্দিষ্ট পর্বে আটকে থাকার কথাও নয়। এই জিনিওলজির দিক থেকেও বাংলা ভাষার জন্মের সঙ্গে মাগধী অবহটঠের পূর্বী শাখাটির উল্লেখ করা দরকার। সংস্কৃতের মত একটি ব্যাকরণবিদ নির্মিত লিখিত সাহিত্যের ভাষাকে নয়।

    তবে জিনিওলজি ভিত্তিক জনপ্রিয় আলোচনাগুলিতে ভাষার অন্তরঙ্গ রূপের ছাপ পুরোটা পাওয়া যায় না। আমরা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুহৃদকুমার ভৌমিক, ক্ষুদিরাম দাস প্রমুখদের কাজ থেকে বুঝতে পারি বাংলা ভাষার অন্তর্লীন কিছু ধ্বনিতাত্ত্বিক, রূপতাত্ত্বিক, ছন্দোগত বৈশিষ্ট্যকে বুঝতে, তার শব্দভাণ্ডারের জরিপ করতে করতে বাংলা ভাষার কুলজী বিচারে আমাদের তাকাতে হবে সাঁওতালি প্রভৃতি মুণ্ডা/কোল ভাষার দিকে। তাকাতে হবে দ্রাবিড়, সিনো টিবেটিয়ান প্রভাবের দিকেও। একটি মিশ্র ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে বিবেচনা করাই যুক্তিসংগত, যার ভারতীয় আর্য ও খানিকটা দ্রাবিড়, সিনো টিবেটান এবুং মূলত মুণ্ডা/কোল ভাষা ঐতিহ্যের কাছে অনেক নির্মাণগত মৌলিক ঋণ আছে।


    বাংলা ভাষাকে যে মিশ্র ভাষা হিসেবে বিবেচনা করতে হচ্ছে তার আরো একটা কারণ বাঙালি জাতির বিশেষ নির্মাণ ইতিহাস। কয়েক দশক আগে অবধিও মূলত শারীরিক গঠনের ভিত্তিতে একটি জাতি কোন কোন জাতির মিশ্রণে গড়ে উঠেছে তা বুঝতে চেষ্টা করতেন নৃতত্ত্ববিদরা। কিন্তু জিনবিদ্যা বিষয়ক মানবমিতির নতুন গবেষণা গত কয়েক দশকে এতটাই এগিয়ে গেছে যে আজ জিনতত্ত্বই এইসব প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক উত্তর দেবার অধিকারী। এই নতুন জ্ঞানতত্ত্ব ভিত্তিক আলোচনা বাংলায় সদ্য শুরু হয়েছে। বাংলা ভাষাতত্ত্বের জগতে তার দৃপ্ত পদচারণা এখনো সেভাবে ঘটে নি। কয়েকজন বাঙালি জিনতত্ত্ববিদ – পার্থ মজুমদার, অনলাভ বসু, নীতা সরকার বাঙালি জাতিকেন্দ্রিক যেসব জীনতাত্ত্বিক গবেষণা করেছেন, তার ফলাফল মূলত কিছু গবেষণা প্রবন্ধের মধ্যেই এখনো আটকে আছে। এছাড়া অস্ট্রো এশিয়াটিক জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে ও তাঁর সহকর্মীরা। এইসমস্ত গবেষণার উপাদান ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় আধুনিক জিনতত্ত্বের আলোয় পরিযান বিষয়ক প্রথম বইটি লিখেছেন অধ্যাপিকা মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। অধ্যাপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বইতে বাংলায় মোট পাঁচটি পরিযানের কথা বলেছেন।

    প্রথম পরিযান – আন্দামানের জারোয়া ইত্যাদি আফ্রিকা আগত মানুষেরা – প্রায় পঁয়ষট্টি হাজার বছর আগে বাংলায় আসেন।
    দ্বিতীয় পরিযান – অস্ট্রো এশিয়াটিক মানুষেরা, কোল, ভিল, মুণ্ডা, সাঁওতাল ইত্যাদিরা – দক্ষিণ পূর্ব ও পূর্ব এশিয়াতে তারা প্রায় তিরিশ হাজার বছর আগে ছিলেন। (জ্ঞানেশ্বর চৌবের মত)। বাংলা ও পূর্ব ভারতে তারা আসেন প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে।
    তৃতীয় পরিযান – জলবায়ুগত বদলে হরপ্পা সভ্যতার পতনের পর সেখানকার মানুষেরা পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে যায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে তারা বাংলাতেও আসে। তারা প্রত্ন দ্রাবিড় কোনও ভাষাতে কথা বলত।
    চতুর্থ পরিযান – প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ইন্দো ইউরোপীয় ভাষীরা পশ্চিম দিক দিয়ে ভারতে ঢোকে। ক্রমশ তারা পূর্ব দিকে আসে। বাংলায় তারা প্রায় তিন হাজার বছর আগে চলে এসেছিল।
    পঞ্চম পরিযান – তিব্বতী বর্মী ভাষীরা বাংলায় আসে আড়াই থেকে দু হাজার বছর আগে থেকে। এক হাজার বছর আগে অবধিও তাদের কিছু দল এসেছে বাংলায়।

    প্রথম পরিযান যা বহু আগে হয়েছিল, তার ভাষাগত ছাপ কতটা কী আজকের বাংলা ভাষাতে রয়েছে তা নির্ণয় করা দুরূহ। তবে অস্ট্রো এশিয়াটিক বা মুণ্ডা, দ্রাবিড়, তিব্বতী বর্মী বা সিনো টিবেটান এবং ইন্দো ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রভাব বাংলা ভাষার ওপর কমবেশি রয়েছে এটা নানা গবেষণা থেকে বোঝা যায়।


    বাংলা ভাষার জননী হিসেবে কেবল সংস্কৃত আর্য ভাষার দাবি সম্বলিত যে মিথটি গড়ে উঠেছিল – সেই দাবিকে নস্যাৎ করার কাজটা আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে শুরু করেছিলেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং। ১৯১৮ সালে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার নদীয়া সাহিত্য পরিষদের সভায় একটি বক্তৃতা দেন। সেটি তারপর ছাপা হয় সবুজপত্র পত্রিকায়। “বাঙলা ভাষার কুলজী” নামক সেই অতি গুরূত্বপূর্ণ নিবন্ধে সুনীতিকুমার বলেন, “বাঙলা ভাষাটা যে অনার্য ভাষার ছাঁচে ঢালা আর্য ভাষা, সেটাও ক্রমে ক্রমে লোকে মানবে; আর্যামি যত দিন বাধা দিতে থাকবে, ততদিন বাঙলার ঠিক স্বরূপটি বের করা কঠিন হবে”।

    একটি ভাষার ভিত্তি আলোচনা করতে হলে শুধু তাতে ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যাগত আধিক্যের নিরিখটি বিবেচনা করতে গেলে ভুল হবে। বাংলা ভাষার বৈদিক ও সংস্কৃত এবং তা জাত শব্দের সংখ্যাধিক্য আছে ঠিকই, কিন্তু সেটাই বাংলা ভাষার ভিত্তি নির্ণয়ের যথার্য সূত্র নয়। ভাষা তার ইতিহাসে নানা কারণে নানা শব্দ গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু তার মূল ভিত্তি খুঁজতে গেলে অপরিহার্য ধ্বনি উচ্চারণের প্রকৃতি, ছন্দের বৈশিষ্ট্য, বাক্য গঠনের বৈশিষ্ট্য – ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা।


    ধ্বনিতত্ত্বের দিক থেকে বিচার -
    সুনীতিকুমার বাংলা ভাষার ধ্বনিবৈশিষ্ট্যের মধ্যে দ্রাবিড় এবং কোল ভাষাগুলির বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। “দ্রাবিড় আর কোল উচ্চারণের বিশেষত্ব – কথায় দুই ব্যঞ্জন একত্র থাকতে পারে না; হয় তাদের ভেঙে নেওয়া হয় বা একটিকে লোপ করা হয়। প্রাকৃতেও তাই, আমাদের ভাষাতেও তাই”। তাই তাঁর গুরূত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, “খালি সংস্কৃত আর প্রাকৃতের দিকে নজর রাখলে চলবে না, বাঙলা ভাষার ইতিহাস ঠিক করে জানতে গেলে অন-আর্য ভাষাগুলির দিকেও নজর রাখতে হবে”। তিনি এও বলেছেন, “বাঙলা ভাষা যখন জন্মগ্রহণ করে, তখনকার দিনের অনার্য ভাষার প্রভাবটাই বেশি পড়েছিল”। ... “কিন্তু ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের আর শ্রীরামপুরের পণ্ডিতদের হাতে পড়ে বাঙলা ভাষা ভোল ফিরিয়ে বসল, বাঙলা ব্যাকরণ বলে লোকে সংস্কৃত ব্যাকরণের সন্ধি আর কৃৎ তদ্ধিত শব্দসিদ্ধি পড়তে লাগল”।

    সুনীতিকুমারের দেওয়া সূত্রকে ব্যবহার করে এবং মৌলিকভাবে পরবর্তীকালে অনেকেই এই বিষয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। সুহৃদকুমার ভৌমিকের “বাংলা ভাষার গঠন” সংক্রান্ত আলোচনা এই বিষয়ে একটি মাইল ফলক। সুনীতিকুমারের কথার সূত্র ধরেই সুহৃদকুমার বলেছেন, “ধ্বনিবৈশিষ্ট্য জীবদেহে জিনের মতো কাজ করতে থাকে। সংস্কৃত নরঃ শব্দ বাঙলায় তৎসম শব্দ হলেও উচ্চারণ করি নর্‌ হিসাবে”। সুহৃদবাবুর মতে এই হলন্ত উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বাংলায় এসেছে সাঁওতালি প্রভৃতি কোল বা মুন্ডা ভাষার প্রভাবে।

    বাঙলা ও সাঁওতালির স্বরধ্বনির সাদৃশ্য দেখাতে গিয়ে সুহৃদবাবু দেখিয়েছেন বিশুদ্ধ অ এবং অ্যা এই দুটি ধ্বনি বাংলা ও সাঁওতালিতে লক্ষণীয়ভাবে বিদ্যমান, যা হিন্দিতে নেই। বাংলা ভাষায় এই বৈশিষ্ট্য সাঁওতালী থেকেই এসেছে বলে সুহৃদবাবু মনে করেছেন।

    বাকরীতির আরেক গুরূত্বপূর্ণ উপাদান ছন্দ। সুহৃদবাবু বিস্তারিত আলোচনায় দেখিয়েছেন বাংলা ভাষার নিজস্ব ছন্দ যাকে বলা হয়, সেই দলবৃত্ত ছন্দ বা ছড়ার ছন্দ সাঁওতালি কবিতার ছন্দ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বিশিষ্ট ছন্দবিদ প্রবোধচন্দ্র সেন মহাশয়ের পর্যবেক্ষণ মনে করিয়ে দিয়েছেন – বাঙালির স্বাভাবিক বাগ্‌রীতি, সংস্কৃত ছন্দ বহনের অনুপযুক্ত।

    নোটন নোটন পায়রাগুলি ঝোটন বেঁধেছে ইত্যাদি বাংলা ছড়ায় যে ছন্দ শুনি তার সঙ্গে সাঁওতালি লোকসঙ্গীতের ছন্দের গভীর মিল সুহৃদবাবু দেখিয়েছেন এই গান উদ্ধৃত করে –
    তেহেঞ্‌ পেড়া/ তাহেন মেসে/ তেহেঞ্‌ তোয়া/দাকা।

    সুহৃদবাবুর বইতে এই সংক্রান্ত অনেক উদাহরণ আছে। বাংলার ধ্বনিতত্ত্ব এবং সাঁওতালি ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব বিষয়ে ব্যাপকতর গবেষণা করেছেন ড. বোমকেশ চক্রবর্তী। তাঁর লেখা A Comparative Study of Santali and Bengali এই বিষয়ে আগ্রহীদের অবশ্য দ্রষ্টব্য।


    রূপতত্ত্বের দিক থেকে বিচার -
    বাংলা ভাষার কিছু রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য (ক্রিয়াপদের লিঙ্গহীনতা, শব্দদ্বৈত ইত্যাদি) মুণ্ডা ভাষাজাত বলে ভাষাবিজ্ঞানীগণ মনে করেন। রূপতাত্ত্বিক দিক থেকে ‘মুণ্ডা’ ভাষার কিছু বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছেন পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য- ‘আকৃতিগত দিক থেকে মুণ্ডা ভাষা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে থাকে, যেমন আ, ই, উ, টা, তে ইত্যাদি। করা, খাওয়া, যাওয়া, শোওয়া এবং চলতে, বলতে,খেলতে, ঘরেতে, নদীতে, ছেলেটা, মেয়েটা, গরুটা, ইত্যাদি প্রত্যয়যুক্ত শব্দগুলো সাঁওতালি রীতি প্রভাবিত। শব্দে গুরুত্ব আরোপের জন্য শব্দদ্বিত্বের প্রয়োগ বহুল প্রচলিত।


    বাক্যগঠন রীতির দিক থেকে বিচার -
    বাংলার বাক্যগঠন রীতির দিক থেকে বৈদিক আর্য ভাষা বা সংস্কৃত ভাষা নয়, সাঁওতালি ভাষারই প্রবল সাদৃশ্য দেখা যায়। সংস্কৃত বা প্রাকৃত ভাষায় শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে পরিণত হয় ও বাক্যে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় মূল শব্দের আলাদা কোনও বিভক্তি ব্যতিরেকে (অ বা শূন্য বিভক্তি প্রকৃত বিভক্তি নয়) প্রয়োগের দৃষ্টান্ত সুপ্রচুর। বাঙলায় ধাতুবিভক্তির গুরূত্ব থাকলেও শব্দ বিভক্তির তেমন গুরূত্ব নেই। ‘আমার পঠিত বই’ বাংলা বাক্যের স্বাভাবিক রীতি নয়, ‘আমার পড়া বই’ হল স্বাভাবিক রীতি। সাঁওতালি ভাষার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য মূল শব্দ কখনোই রূপান্তরিত হবে না। বাংলাতেও এই প্রবণতা ব্যাপক।


    শব্দভাণ্ডারের দিক থেকে বিচার -
    বিভিন্ন জটিল বিমিশ্রনের মধ্য দিয়ে আমরা যখন অষ্ট্রিক থেকে ক্রমে ক্রমে প্রোটো বাঙ্গালি বা আদি বাঙ্গালিতে রূপান্তরিত হলাম, ততদিনে আমাদের অষ্ট্রিক ভাষায় ভোট-বর্মী, দ্রাবিড় ও সংস্কৃত-প্রাকৃত বহু শব্দ যুক্ত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে যতই আমরা বাঙ্গালি হয়েছি, আমাদের বাংলা ভাষায় অষ্ট্রিক সাঁওতালি শব্দাবলী ততই সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। তার পরও বহু শব্দ এখনও আমরা বাংলায় ব্যবহার করি, যা মূলগত ভাবে সাঁওতালি শব্দ। পরিহাসের বিষয় হলো সাঁওতাল শব্দটি নিজেই সংস্কৃতজাত, সাঁওতালদের নিজেদের আখ্যা হলো খেরওয়াল বা খেরওয়ার। বৃহত্তর মুন্ডা জাতিগোষ্ঠীই আসলে খেরওয়ার বা খেরওয়াল জাতি, আর্যভাষীদের ভারতে আগমনের আগে তারা মধ্য, পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে বসবাস করতো। জেনেটিক নৃ-তত্বের বিচারে বর্তমান বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর ভিত্তিমূল হলো খেরওয়াল জাতিগোষ্ঠী।

    বাংলা ভাষায় অনেক সাঁওতালি শব্দ অবিকৃত ভাবে বিদ্যমান, বেশ কিছু শব্দ আংশিক পরিবর্তিত হয়েছে। আবার কিছু দ্বৈত শব্দ কিংবা ইডিয়ম সংস্কৃতজাত শব্দের সাথে মিশ্র আকারে ব্যবহৃত হয়। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাস "সাঁওতালি-বাংলা সমশব্দ অভিধান" নামে একটি গ্রন্থ লিখেছেন। এ বইটিতে কয়েক হাজার শব্দ ঠাঁই পেয়েছে, যা সাঁওতালি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই ব্যবহৃত হয়। এর অধিকাংশই মূলগত ভাবে সাঁওতালি, কিছু কিছু শব্দ বাংলা, হিন্দি, প্রাকৃত বা সংস্কৃত থেকে সাঁওতালি ভাষায় গৃহীত হয়েছে।

    অজ্ = নিরেট, পুরোপুরি, পূর্নমাত্রায়, সব দিক থেকে। সুতরাং "অজ্ পাড়াগাঁ" এর অর্থ হলো "নিরেট গ্রাম"। পাড়া শব্দটিও সাঁওতালি, এর অর্থ গ্রামের খন্ডিত অংশ। গাঁ শব্দটি অবশ্য সংস্কৃত জাত। মজার ব্যাপার হল অজ পাড়াগাঁ শব্দটির সাথে আগে সর্ব স্তরের বাঙ্গালীর পরিচয় ছিল না, ১৯৩০ সালে কাজী নজরুল ইসলাম সর্ব প্রথম তাঁর রচিত সাহিত্যে অজ পাড়াগাঁ শব্দটি ব্যবহার করেন, তারপরই এটি ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় ব্যপকতা লাভ করে। এর আগে এটি ছিল বর্ধমান, বাঁকুড়া অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ।

    স্থানের নামবাচক শব্দ - শব্দের শেষে "ইল" যুক্ত করে স্থানের নাম যেমন টাঙ্গাইল, ঘাটাইল, পূবাইল, নড়াইল, এসব মুন্ডা রীতির। নামের শেষে কোল এবং কোলা যেমন শিয়ালকোল, শ্রীকোলা, পাড়কোলা এবং বাড়ী বা বাড়ীয়া যেমন ফুলবাড়ী, উলুবাড়িয়া মুন্ডা রীতি। নামের শেষে তা যেমন জামিরতা, কামতা, রুপতা এসবও মুন্ডা রীতি। শব্দের শেষে টোলা যুক্ত করে (যেমন - নয়াটোলা, করাতিটোলা) নামকরণও মূলগত ভাবে সাঁওতালি রীতি।

    কৃষিজাত শব্দ - আটা, আমড়া, আম (শব্দটির মূলগত সাঁওতালি শব্দ আমড়া, যা সংস্কৃতে পরিবর্তিত হয়ে আম্রাতক>আম্র(টক), পরবর্তীতে প্রাকৃত হয়ে বাংলায় আম)।
    কচু, কদলী,কম্ব্লা (কমলা), কান্দাল (কলাগাছের কান্ড), কলা, কদম, কুঁচ, কাণঠার (কাঁঠাল), খই, খেসারি, গাব, গুড় (গুড়ের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল হেতু গৌড়), ঘাঁস, চাওলে (চাউল), চুন, জাম্বুরা, ঝিঙা,ডাল, ডিম, ডালিম, ঢ্যাপ, বেগুন, তাল, তিল, তিসি, তাম্বুল, নারিকেল, পুদিনা, বুট, মটর, লেবু, রসুন, রুটি, লঙ্কা (মরিচ)।

    প্রাণীবাচক শব্দ – আঁড়িয়া (এঁড়ে গরু), ইকুন (উকুন), ইচা (চিংড়ি), ইলসা (ইলিশ), কাতলা, কাছিম, কেন্না (কেন্নো), বাদুড়, ব্যাঙ, জঁক (জোঁক), ডাহুক, মশা, ইন্দুর, বক, ভেড়া,কটাস (খাটাশ), ট্যাংরা, খইলসা, গোচই, চিতল, জিওল (সিঙ মাছ), ডারকা (মাছ), পুঁটি, হলাহল (মূল অর্থ সাপ), ময়ুর, ঘুঘু, ময়না, মাছ, মকর, শুয়াপোকা।

    সম্পর্কবাচক শব্দ - খোকা, খুকি, বারুই (পানচাষী), মামা, মামি, মাসি, বেটা, বিটি (বড় লোকের বিটি লো)। কাকা-কাকি।

    উপকরণ বিষয়ক শব্দ – ইন্দারা (পাকা কুয়া), কল (যন্ত্র), কাঠা (পাত্রবিশেষ), কান্থা (কাঁথা, সাঁওতালি থেকে সংস্কৃত হয়ে বাংলায়), কানপাশা, কুঠরি (কক্ষ), খুন্তি, খালুই (মাছ রাখার পাত্র), গদি, গাড়ি, ঘুড়ি, ঘানি (তেলের ঘানি), চারা (ছোট গাছ), চাল (ঘড়ের ছাউনি), চাল (রীতি), চাস (চাষ), বাণ, লাঙ্গল, কম্বল, অঙ্গার, কাঠা (বেত বা বাঁশের পাত্র বিশেষ), করাত, দা, বটি, ডোল (বাঁশ নির্মিত শস্য রাখার বড় পাত্র), ডুলি (পাল্কি বিশেষ), মাকু, মাচা, মাদুলি, টিকলি, লোটা, বালি, শন, সাবল, হাল (নৌকার), হুড়কা।

    শারীরিক অঙ্গ বিষয়ক শব্দ – গোড়ালী (পায়ের), ঠ্যাঙ, ঠোঁট, মো চ(গোঁফ), ঘাড়, গলা, পেট, খোস (পাঁচরা)।
    সংখ্যা বাচক শব্দ – কাঠা (জমির মাপ), কুড়ি (বিশ), কাহন, গন্ডা, পোন, ছটাক (মাপের পরিমান), মন।

    বিবিধ শব্দ – আড়া (জঙ্গল), আড়াআড়ি, আনাড়ি, আপনি, আরকি (সে আমার ভাই আরকি), আহা (সুখ, আনন্দ জ্ঞাপক শব্দ), ইনি (এই ব্যক্তি), উনি (ঐ ব্যক্তি), উমুক (অমুক ব্যক্তি), ইয়া (ইয়ে মানে..), ইস (দুঃখবোধক শব্দ), উজাড় (গ্রাম উজাড়), উল্টা, উলট পালট, এ (এ গ্রামে আমার বাস, এ মা! এ কি?), এহ্, (এহ্ এটা কি করলে?), এ্যা (এ্যাই যে), ও (ওঃ, তুমি সেই লোক?), কচি, কনকন (কনকনে শীত), কাটাও (সময় কাটানো), কাঠি, কালি (দেবী বিশেষ), কাঁচা, কাঙ্গলা (কাঙ্গাল), কাবিল (দক্ষ), কামাই (উপার্জন), কালা (বধির), কাহিল (কাতর), কিত্ কিত্ (খেলা বিশেষ), কিরিয়া (কিরা- শপথ), কিল (কিলায়ে কাঁঠাল পাকানো), কিস্তি (নৌকা), কুলি (শ্রমিক), কোঠিন (কঠিন), কুণ্ড (সীতাকুণ্ড, মাধবকুণ্ড), খণ্ড, খাড়ি (খাল), খাচা (খাঁচা), খাট (বেঁটে), খাটা (পরিশ্রম করা), খাড়া (লম্বালম্বি), খাতির (নিমিত্তার্থে), খাল, খামচি, খালি, খিজুর (খেজুর), খিল (অনুর্বর জমি- খিলক্ষেত), খিলি (খিলিপান), খুঁটি, খুচরা, খুড়া (কাকা), খেদ (খেদিয়ে দেয়া), খেপ (খেপ মারা), খ্যাপা, খোঁজ, খোদাই, খন্দক, গঙ্গা (গঙ্গা নদী), গছাও (গছিয়ে দেয়া), গড় (দুর্গ), গড়গড়া (হুক্কা), গবর (গোবর), গলা (কন্ঠস্বর), গোলা (গলা/কন্ঠা), গহনা (নৌকা অর্থে), গাদা (খড়ের গাদা), গিরা (গিঠ), গুতা, গুল (গোলাকৃতি), গোজা (কাঠে পেরেক, খোপায় ফুল), গোটা (সমগ্র), চট(জলদি), চমক, চরকা, চাখা (আস্বাদ নেয়া), চাঙ্গা, চাটা,চাপা (এক বস্তুর উপর অন্য বস্তু), চাহি (চাই), চেঙড়া/চেঙড়ি (বালক/বালিকা), চিমটা, চুটকি (ছোট), চুড়ি, চেঁড়ে (চিড়িয়া), চেলা, চেহারা, চোঙগা, চোপা, ছলক, ছাতি (বুকের), ছাকা (চালুনি দ্বারা), ছাপ, ছাল, ছালা, ছুকরি, জট (চুলের), জড়িবুটি, জমা (জমে দই), জাঃ (এই যাঃ ভুলে গেছি), জিরান (বিশ্রাম), জুড়ি (জুটি), জোট, জোত (জমি), ঝড়না, ঝাঁক, ঝাঁকা, ঝাঁটা, ঝাড়, ঝাঁপ, ঝানু, ঝাপসা, ঝাল,ঝিল, ঝুটি, ঝুড়ি, ঝগড়া, টলা (নড়বড়), টিকলি, টিপ, টুকরা, টুকু (এইটুকু, এতটুকু), টুপি (মাথার আবরণ অর্থে), ঠ্যাটা, ঠক (ঠগ), ঠোঁট, ঠাহর, ঠাকুর, ঠাট্টা, ঠিক, ঠেকা, ঠেলা,ডাল(গাছের), ডাক(আহবান), ডাকু, ডাঙ্গা, ডোঙ্গা, ডালা, ঢল, ঢাক, ঢাকনা, ঢাল, ঢালু, ঢিমা, তাড়ি, তোড়া(টাকার, ফুলের), থলি, থুতনি, দৌড়, দাই, দাদা (বড় ভাই), দান (খেলার),দেদার (অজস্র), ধমক, নাড়ী, নিঝুম, নিরালা, পগার, পাগল, পাঁঠা, পাল্কি, পাল (গরুর পাল), পেট, পঁচা, ফালতু, ফুঁ, বাবু, বালি, বিঘা, ভাণ্ড, ভিটা,ভিড়, ভোটকা/ভুটকি (বেঁটে মোটা), ভুঁড়ি, ভুল, মুদি, মেটা (মিটে যাওয়া), মেলা (অনেক), ময়লা, মোচড়, মোট (সব), মোট (কুলি), মোটা, রগড়, নড়া, লাগা (পিছে লাগা, কলহ করা), লুচ্চা, সড়ক, সারা, সিধা, সিঁদ, সুবিধা, সে (সে তো বোঝাই যাচ্ছে, সে আমি বুঝেছি)।

    শব্দদ্বৈত - খুটখাট, খাটাখাটি, খোলাখুলি, গম্ গম্, গালগল্প (গাল শব্দটি সাঁওতালি, এর অর্থ গল্প), গিজগিজ, ঘ্যানঘ্যান, চকমক, চটপট, চমচম (সাঁওতালি অর্থ দ্রুতগতিতে, চাপচুপ (ঈষৎ পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় চুপচাপ), চিপাচিপি, চুরমার, ছপছপ, ছিছি, জবজব, জানে তানে (যেন তেন), ঝনঝন, ঝমঝম, ঝরঝর, ঝলমল, ঝিকিমিকি, ঝুমুর ঝুমুর, টলমল, টুকরা টাকরা, টানাটানি, টিপটিপ, ঠকঠক, ঠনঠন, ঠাস ঠাস, ঠিকঠাক, ডগমগ, ডলাই মলাই, ডামাডোল, তড়িঘুড়ি, তরি তরকারি, থরথর, ধকধক, ধরফর, ধমকাধমকি, মোটামুটি, রগড়া রগড়ি, রঙ বেরঙ, সুরসুর।

    (এই তালিকাটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি প্রকাশিত অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাশের সাঁওতালী বাংলা সমশব্দ অভিধান থেকে গৃহীত। এছাড়া বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধানের ঋণও রয়েছে। তালিকাটি আব্দুল্লাহ আল মামুনের লেখায় টাইপ করা থাকায় আমায় টাইপ করার পরিশ্রমটি করতে হয় নি।)

    উল্লিখিত সকল শব্দই প্রমিত বাংলায় ব্যবহৃত সাঁওতালি শব্দ। অধ্যাপক ক্ষুদিরাম দাশের অভিমত অনুযায়ী বাংলা ভাষায় এখনও যে সকল সাঁওতালি শব্দরাজি ব্যবহৃত হয়, তার সংখ্যা কম করে হলেও দশ-বার হাজার, তবে তার অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় আঞ্চলিক বাংলায়। আমাদের অগ্রজ শব্দসৈনিকেরা বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃতজাত শব্দসমূহকে অতি মাত্রায় অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে আঞ্চলিক বাংলার শব্দসমূহকে অকাতরে বিসর্জন দিয়েছেন, ফলে এ ভাষার মূলগত অনেক শব্দই হারিয়ে গেছে চিরতরে। এখনও যে গুলো টিকে আছে বৃহত্তর বাংলার বিভিন্ন প্রান্তরে, সে সবও ক্রমে ক্রমে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে।


    ভোটবর্মী তথা সিনো টিবেটিয়ান যে সমস্ত ভাষার প্রভাব বাংলা শব্দভাণ্ডারে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে বোড়ো, গারো, ককবরক, হাজং, চাকমা, কুকি চিন, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ইত্যাদি।

    বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং বঙ্গভাষী আসাম ও ত্রিপুরার নানা অংশে বিভিন্ন গ্রাম শহর, নদনদী, পাহাড় পর্বত, রাস্তা ঘাট ইত্যাদির নামকরণে বোড়ো ভাষার প্রভাব দেখা যায়। কোচচর, কুচেমোড়া, কোচগড়, কোচনধরা, মালাকোচা, শিমুলকুচিফুলকোচা, নাওকুঁচি, কুচনিপাড়া, উদলাকুচি, রাতকুচি, মিচকিপাড়া, মেচিডাঙা ইত্যাদি স্থাননাম বোড়ো ভাষার প্রভাবেই এসেছে। তিস্তা নদীর নামটি বোড়ো দিস্তাং থেকে এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। আবার ত্রিস্রোতা থেকে এই তিস্তা নাম এসেছে, এমন মতও কেউ কেউ প্রকাশ করেছেন।

    ময়মনসিংহের ভাষার ওপরে গারো ভাষার প্রভাব যথেষ্ট। গারো ভাষার প্রভাবে ময়মনসিংহের বাংলা ভাষার মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। ত্রিপুরার ভাষার ওপর প্রভাব পড়েছে ককবরক ভাষার। ভালো বোঝাতে গাম, নেওয়া বোঝাতে লা, গলা বোঝাতে গদানা, খাওয়া বোঝাতে চা, রাস্তা বোঝাতে লামা, মহিষ বোঝাতে মিশি, বাবা বোঝাতে আফা, মানুষ বোঝাতে বরক, নাম বোঝাতে মুং শব্দের ব্যবহার দেখা যায় ককবরক ভাষার প্রভাবে।

    শেষ করার আগে বাংলা ভাষায় দ্রাবিড়জাত কিছু শব্দের উল্লেখ করি কেবল। এই তালিকা থেকেই বোঝা যাবে আমাদের বাংলা ভাষা দ্রাবিড় উৎসের কাছে কতটা ঋণী। তবে শুধু শব্দের ঋণ নয়, গঠনের ঋণও অনেক, যা নিয়ে পরে কখনো আলোচনার ইচ্ছে রয়েছে।


    দ্রাবিড় ভাষা থেকে বাংলায় আগত শব্দাবলী –
    অক্কা (মা), অখজ্জে (আশ্চর্য), অগুরু (সুগন্ধী কাঠ), অত্তা (শাশুড়ি/ বড়বোন), অম্ব (বিস্ময়সূচক শব্দ), অম্বু, অম্বল, অলক, অলস, আকাল, আগার (বাড়ি), আজা (পিতামহ), আজী (পিতামহী), আঁট (দৃঢ়), আটকা, আঁটকুড়া, আঁটকুড়ি, আড়, আড়া, আপা, আরভট (তীব্র), আল (জমির সীমা), আলা (ক্লান্ত হওয়া), ইচড়, ইচলা, উই, উকুন, উগরা, উঞ্ছ, উড়া, উদল, উদুখল, উদুলা, উবু, উসার, উলপ, উলা, উলুপিন, এড়, এঁড়ে, এঁদো, এলা, এলানো, এলাচ, ওগরা, ওঁছা, ওর (সীমা, শেষ প্রান্ত), কুই, কইলা, কঙ্ক, কচ (কাটার শব্দ), কচকচি, কচড়া, কচি, কজ্জল, কঞ্চি, কঞ্জুস, কটু, কড়া, কড়ি, কদম, কন্দ, কন্দুক, কপকপ (দ্রুত খাওয়া), কপট, করখা (শক্ত), কলহ, কলুষ, কষা, কাক, কাঁক, কাঁখ, কাঁকর, কাচা, কাছা, কাঁচুলি, কাটা, কাঁড়া, কাঁড়ি, কাদা, কাশ, কিচির মিচির, কুকুর, কুচি, কুচানো, কুজ, কুটা, কোটা, কুটিল, কুড়সি, কোরা, কুড়াল, কুড়ালি, কুঁড়ে, কুণ্ড, কুণ্ডল, কোদাল, কোটর, কুরুল, কুদা (লাফিয়ে চলা), কুমড়া, কুল, কুলতি, কুলি, কুলকুচি, কূট, কূপ, কেতক (কেয়া ফুল), কেসো, কোঁড়া, কোণ, কোঁতকা, কোপা, কোরক, কোলা (সদ্যজাত পশু/পাখি), কুলা (বড় মাটির পাত্র)। খন্দ, খোঁদল, খপ্পর, খর, খল, খোলা, খাঁক, খাট, খাটাল, খাটো, খাদ, খাল, খঁটি, খোচা, খুপরি, খুর, খুরি (পাথরের ছোট বাটি), খোকা, খোঁড়া, খোঁপা, গড্ডা (আঁটি), গণ্ড (গাল), গাটরি, গাট্টি, গাঁট্টাগোট্টা, গাড্ডা, গাড়া, গুড্ড, গুড়ি, গুণ, গুণ্ডা, গুলতি, গেঁড়া, গেঁড়ি, গোধা (গোসাপ), গোল, গোলমাল, গ্যাঁজলা, ঘট, ঘটি, ঘড়া, ঘানি, ঘুণ, ঘুপচি, ঘোড়া, চঞ্চু, চট, চটক, চড়াই, চড়ক, চড়চড়, চড়াক, চতুর, চন্দন, চড়, চাপড়, চপ্পল, চাকলা (খণ্ড), চাঙ্গা, চাটালো, চেপটা, চাটু, চাঁপা, চাল, চালা, চিকি (ক্ষুদ্র), চিকুর (বাজ), চিখিল (কাদা), চিঙ্গা (শিশু), চিবান, চিরুনি, চুড় (হাতের অলঙ্কার), চুরি, চুল, চুলা, চূড়া, চূণ্ন, চেপটা, চেল (কাপড়), চোকলা, চোঁচ (ছুঁচালো বস্তু), চোট্টা, ছল, ছাঁট, ছানা, ছাল, ছিটা, ছিনা (ছোট/সরু), ছুঁচো, ছেঁড়া, ছেলে, ছোট, ছোঁড়া, ছোলা, জটা, জবুথবু, ঝিঁঝি, ঝুঁটি, ঝোলা, টইটম্বুর, টগর, টলটল, টলা, টাকইর, টাঙ্গানো, টাঙ্গি, টাটি, টিলা, টোল, ঠিকরা, ঠেকানো, ঠেলা, ঠোঁট, ডমরু, ডাঁটা, ঠিঁট (জব্দ), ঢিবি, তকলি (সুতো পাকানোর যন্ত্র), তট, ঠাণ্ডা, তণ্ডক, তড়পানি, তড়াগ, তড়িৎ, তরঙ্গ, তরল, তরস, তরুণ, তর্ক, ত্বক, তাক, তাড়া, তাড়ি, তাড়না, তাণ্ডব, তাঁত, তাঁতি, তাপ্পি, তাল, তালা, তালি, তালু, তিল, তুলা, তুষ, তেঁতুল, তোতলা, থমকা, খড়ি, থাপ্পড়, থুতু, থোক, থ্যাবড়া, দঙ্গল, দড়, দড়া, দড়ি, দল, দাঁড়, দাদা, দুঁদে, দুব্বো, দোনা, দোলা, ধাড়ি, ধীবর, ধোওয়া, নগর, নথ, ননদ, নল, নাড়ি, নালা, নিজ, নুড়ি, নেওটা, নেট (কাপড়), নেবু, নোলা, লালা, ন্যাংটা, পচা, পট, পটকা, পটল, পটহ, পট্টি, পটু, পড়া, পথ, পনস (কাঁঠাল), পরুষ (কর্কশ), পল্লী, পল, পলি, পাওয়া, পাখনা, পাঁচড়া, পাট, পাটক (গ্রাম), পাটি, পার, পাড়া, পাত, পাতলা, পাতি, পায়রা, পালন, পালা, পালানো, পাহাড়, পিচুটি, পিঠ, পিতল, পোলা, পুকুর, পট, পুত, পেলব, পোকা, পোড়ানো, ফণা, ফল, ফলক, ফাল, ফালা, ফালি, ফিঙা, ফিসফিস, ফুঁ, ফুটা, ফুল, ফোলা, ফোকলা, ফোঁটা, ফোড়ন, ফোসকা, বক, বকা, বঙ্গ, বড়, বড়া, বল, বলি, বাঁক, বাঁকা, বাখারি, বাঁচা, বাছা, বাজ, বাজা, বাঁজা, বাটা, বাটি, বাড়, বারণ, বাড়ি, বান, বাবলা, বাবুই, বালা (হাতের অলঙ্কার), বাঁশ, বিড়ি, বিড়াল, বিল, বিলাস, বীজ, বেগুন, বেল (ফুল), ভড়কা, ভবন, ভাগ, ভাত, ভিটা, ভেড়া, ভোল, মগ, মচকা, মটর, মটকি, মঠ, মড়ক, মধু, ময়লা, ময়ূর, মরা, মল্ল, মসী, মহিলা, মাকড়া, মাচা, মুখ, মুচি, মুড়কি, মুড়ি, মুড়ো, মূক, মেঘ, মেথি, মোচা, মোছা, মোট, মোড়ল, মোরাম, রব, রসুন, লহরী (ঢেউ), লাঙ্গল, লাটাই, লাঠি, লিকলিকে, শঠ, শব, শবর, শিকড়, শিকল, শির, শিরা, শুকতারা, সরু, সাপটা (সাধাসিধে), সুলভ, হ্যাঁ, হাঁচি, হাট, হাঁটু, হাঁড়ি, হানা, হাম্বা, হালুয়া, হুঁ,‌ হেঁচকি।

    (এই তালিকার শব্দগুলি নেওয়া হয়েছে বাংলা একাডেমি ঢাকা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার : অনার্যভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাব – তপতী রানী সরকার বইটি থেকে।)
    এই নিবন্ধে আমরা বাংলা ভাষার গঠনে কেবল মুণ্ডা বা সাঁওতালী প্রভাবের দিকটি নিয়ে সূত্রাকারে কিছু আলোচনা করলাম। মুণ্ডা ভাষার প্রভাবের বিস্তারিত আলোচনা এবং বাংলা ভাষার গঠনে দ্রাবিড়, সিনো টিবেটিয়ান নানা ভাষার প্রভাবের নানা দিক নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনার ইচ্ছেও রইলো।

    ১০
    আকর –
    ১) Origin and Development of the Bengali Language – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় – রূপা প্রকাশনী
    ২) The Munda Languages - D S Anderson (Edited) - Routledge
    ৩) A Comparative Study of Santali and Bengali – ব্যোমকেশ চক্রবর্তী – কে পি বাগচী
    ৪) বাঙ্গালা ভাষা প্রসঙ্গে – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় – জিজ্ঞাসা
    ৫) বাঙলা ভাষা পরিক্রমা – পরেশচন্দ্র মজুমদার - দেজ
    ৬) সাঁওতালি বাংলা সমশব্দ অভিধান – ক্ষুদিরাম দাশ – পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি
    ৭) বাঙলা ভাষার গঠন – সুহৃদকুমার ভৌমিক - মনফকিরা
    ৮) প্রাগিতিহাস – মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় - গাঙচিল
    ৯) বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার : অনার্যভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাব – তপতী রানী সরকার – বাংলা একাডেমি ঢাকা
    ১০) বাংলা ভাষায় ভোটভর্মী ভাষার প্রভাব – অশোক বিশ্বাস - বাংলা একাডেমি ঢাকা

    পুনশ্চ

    লেখাটি প্রকাশের পর বিশ্বভারতীর শিক্ষক শ্রীযুক্ত শ্রীনিবাস ঘোষ মহাশয় প্রস্তাবগুলিকে অন্যভাবে বিচার করার কথা জানিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্যগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি এখানে সংযোজিত রইলো।

    শ্রীযুক্ত শ্রীনিবাস ঘোষ মহাশয়ের লেখা -

    আপনার ‘বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব’ প্রবন্ধ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করি —
    ১। আপনি প্রবন্ধ শুরুই করেছেন এই বাক্য দিয়ে—‘বাংলা ভাষা একটি মিশ্র ভাষা’। কিন্তু বাংলা ভাষাকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-গোষ্ঠী থেকে বহির্ভূত করা কি সম্ভব? অথবা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষা-গোষ্ঠীর মধ্যে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করাও কি সম্ভব? বা এমনটা প্রমাণ করা কি সম্ভব, ইন্দো-ইউরোপীয় ও অস্ট্রিক-দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে সৃষ্ট বাংলা ভাষা পৃথিবীর একটি আশ্চর্য ভাষা; যাকে নির্দিষ্টভাবে কোনো একটি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করাই যায় না? যতদিন না এ-গুলো প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছে, ততদিন একবাক্যে কি বলে দেওয়া যায় বাংলা মিশ্র ভাষা? আপনি বাংলা ভাষায় যে-সমস্ত অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ভাষার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন সেগুলো কোনোভাবেই অস্বীকার করছি না, কিন্তু সেই-সমস্ত প্রভাব মেনে নিলেও বাংলাকে ‘মিশ্র ভাষা’ সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা কি যুক্তিযুক্ত?
    ২। সুহৃদকুমার ভৌমিকের অভিমত মেনে নিয়ে আপনি কী করে নিশ্চিত হলেন দলবৃত্ত ছন্দ, বাংলা থেকে সাঁওতালী ভাষায় না গিয়ে, সাঁওতালী ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে? ছন্দের জগতে দলবৃত্ত ছন্দ খুব আধুনিক না হলেও এ-ছন্দের উৎপত্তিকাল অন্ত্য-মধ্যযুগ। তাহলে অন্ত্য-মধ্যযুগেই বাংলা ভাষা সাঁওতালী ভাষা থেকে এই ঋণ গ্রহণ করেছে বলতে চান? অন্ত্য-মধ্যযুগে সাঁওতালী বা অস্ট্রিক ভাষা তথা সেই ভাষার কবিতা, ছন্দ, এতো প্রসার লাভ করল যে, তা বাংলা ভাষাকেও প্রভাবিত করে ফেলল? মধ্যযুগের বাংলা ভাষায় অস্ট্রিক প্রভাবের এমন অভিনব দৃষ্টান্ত কি আর দ্বিতীয় আছে?
    ৩। স্বরভক্তি বা যুক্তব্যঞ্জনকে ভেঙে (‘দুই ব্যঞ্জন একত্র’ না থাকতে পারা) উচ্চারণ করার রীতি কি বাংলা ভাষায় খুব প্রচলিত একটি রীতি? এর ব্যবহারিক পরিসর কতটুকু? সাধারণভাবে আমরা শক্তি, ভক্তি, মুক্তি, শত্রু, লক্ষ্মী শব্দ ব্যবহার করি না কি? তাহলে খুব স্বল্প ক্ষেত্রে প্রযুক্ত এই ধ্বনিপরিবর্তনের রীতিকে (সংযুক্ত ব্যঞ্জনকে ভেঙে ফেলা বা একটিকে লোপ করে দেওয়া) দিয়ে বৃহত্তর বাংলা ভাষার উৎপত্তি-বিচার কতটা যুক্তিসংগত একটু ভেবে দেখবেন। বাংলায় দুই ব্যঞ্জন এমনকি তিন ব্যঞ্জনও যুক্ত অবস্থায় থাকে এবং তার উচ্চারণও হয়, এমন উদাহরণও কিন্তু প্রচুর।
    ৪। সংস্কৃত ‘একটি ব্যাকরণবিদ নির্মিত লিখিত সাহিত্যের’ ভাষা? সংস্কৃত বৈয়াকরণেরা সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টিকর্তা? অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা আর বৌদ্ধদের ব্যবহার্য কৃত্রিম পালি ভাষার উৎপত্তির ইতিহাসটা একইরকম বলতে চান? মানুষের মুখের ভাষা থেকে এই সংস্কৃত ভাষার জন্ম হয় নি? তাহলে এ-ভাষাকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার অন্তর্ভুক্ত করা হলই-বা কেন আর এ-ভাষা থেকে অন্যান্য ভারতীয় ভাষার উৎপত্তির ক্রম দেখানো হলই-বা কেন? তাহলে কি সমস্ত বিষয়টা ভুলের উপর দাঁড়িয়ে আছে? বৈয়াকরণেরা ভাষাকে নির্মাণ করতে পারেন না, ভাষাকে সুশৃঙ্খল করতে পারেন মাত্র।
    ৫। কোনো জাতির উৎপত্তির ইতিহাসের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক কি সর্বদা ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে? কোন পরিস্থিতে, কোন প্রয়োজনে, কোনো গোষ্ঠীর মানুষ, কোন ভাষাকে গ্রহণ করে, সবসময় তা নিশ্চিত করে বলা না-গেলেও কোনো মানবগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে সেই মানবগোষ্ঠীর জাতিতত্ত্বের নিবিড় সম্পর্ক থাকবেই এমনটাও বলা যায় কি? একটু বিবেচনা করে দেখবেন।
    ৬। ‘বাঙলা ভাষাটা যে অনার্য ভাষার ছাঁচে ঢালা আর্য ভাষা’—এর অর্থ কি বাংলা মিশ্র ভাষা? ছাঁচ-এর সঙ্গে কোনো পদার্থ একসঙ্গে মিশে যেতে পারে নাকি? ছাঁচ একটা আকার দেয় মাত্র, কিন্তু মূল পদার্থের কোনো পরিবর্তন হয় কি? সন্দেশের মণ্ড বিভিন্ন ছাঁচে পড়ে বিভিন্ন আকারপ্রাপ্ত হয় কিন্তু সেটা কি ছাঁচের সঙ্গে মিশে একটি মিশ্র-পদার্থে পরিণত হয়ে যায়? ছাঁচে ঢালার পর তার স্বাদ কি বদলে যায়? আসলে সুনীতিকুমার বাংলা ভাষার উপর অনার্য ভাষার বাহ্যিক প্রভাবের কথাই বলতে চেয়েছেন। তা নাহলে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাসটাই অন্যভাবে লিখতেন না কি? ‘বাঙলা ভাষা যখন জন্মগ্রহণ করে, তখনকার দিনের অনার্য ভাষার প্রভাবটাই বেশি পড়েছিল’ –এ-কথার অর্থও এমন নয় যে বাংলা মিশ্র-ভাষা। তিনি তো কেবল প্রভাবের কথাই বলেছেন। আর বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল যদি চর্যাপদের সময়কালকে ধরি তাহলেও মধ্যযুগের এক বিস্তৃত সময় জুড়ে বাংলা সাহিত্য বিকশিত হয়েছিল; সেই বাংলা ভাষা যে খুব অনার্য প্রভাবিত ছিল এমন তো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না!
    ‘আমার পঠিত বই’ এবং ‘আমার পড়া বই’ –এই দুই বাক্যের গঠনের মধ্যে কী এমন পার্থক্য হল যে, প্রথম বাক্যটিতে আর্য প্রভাব বিদ্যমান, অথচ দ্বিতীয় বাক্যটি একেবারে অনার্য হয়ে পড়ল? ‘পঠ্‌’ ধাতু থেকে ‘পঠিত’ শব্দের উৎপত্তি আর ‘পড়্‌’ ধাতু থেকে ‘পড়া’ শব্দের উৎপত্তি। তা এখানে কোথায় মূল শব্দের রূপান্তর হচ্ছে, আর কোথায় মূল শব্দের রূপান্তর হচ্ছে না, কিছুই তো বোঝা গেল না।
    ৭। ‘হলন্ত উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য বাংলায় এসেছে সাঁওতালি প্রভৃতি কোল বা মুণ্ডা ভাষার প্রভাবে’? হলন্ত শব্দের উচ্চারণ বাংলার তুলনায় হিন্দী ভাষায় অনেক বেশি, তাহলে হিন্দী ভাষাও অস্ট্রিক প্রভাবে ওইরূপ পরিবর্তন লাভ করেছে বলতে চান? পারসী ভাষাতেও হলন্ত উচ্চারণ বিদ্যমান এবং এই-ভাষা এককালে আমাদের দেশের প্রশাসনিক ভাষা ছিল; তার প্রভাব বাংলা হিন্দী উভয় ভাষাতেই পড়া সম্ভব। সুহৃদবাবুই-বা কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন আর আপনিই-বা কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন, বাংলা ভাষায় এই হলন্ত উচ্চারণ শুধু সাঁওতালী ভাষার প্রভাব? কেননা, প্রথমত, বাংলা ভাষার উৎপত্তির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ চর্যাপদের ভাষায় হলন্ত উচ্চারণের প্রাবল্য লক্ষ করা যায় না (কাআ তরুবর পঞ্চবি ডাল/চঞ্চল চীএ পইঠো কাল)। দ্বিতীয়ত, চর্যা-পরবর্তীকালে অস্ট্রিক ভাষা, বাংলা ভাষাকে ব্যাপক প্রভাবিত করেছে এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায় না। হলন্ত উচ্চারণ কিন্তু সংস্কৃত ভাষাতেও লক্ষ করা যায়।
    ৮। ‘সংস্কৃত বা প্রাকৃত ভাষায় শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে পরিণত হয় ও বাক্যে ব্যবহৃত হয়’—ঠিকই কিন্তু বিভক্তির লোপও উভয় ভাষার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য। যেটাকে আপনি ‘অ বা শূন্য বিভক্তি’ বলছেন, সেটা আসলে বিভক্তি-লোপ। অর্থাৎ এমন অনেক পদ বাক্যে ব্যবহৃত হয়, যার সঙ্গে মূল শব্দ বা প্রাতিপদিকের রূপের কোনো পার্থক্য থাকে না। যেমন, ‘রাম’ একটি প্রাতিপদিক আবার এই ‘রাম’ শব্দটি যখন পদে পরিণত হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখনও ‘রাম’ শব্দের সঙ্গে কোনো বিভক্তি লক্ষ করা যায় না—যথা, ‘রাম বনে যাচ্ছে’। এরূপ দৃষ্টান্ত সংস্কৃতেও দেখা যায়—যেমন, স্ত্রীলিঙ্গের ‘লতা’, ‘নদী’, ‘স্ত্রী’ প্রভৃতি শব্দের প্রথমার একবচনের বিভক্তি লোপ পায়; ক্লীবলিঙ্গের শব্দ ‘বারি’, ‘অক্ষি’, ‘মধু’, ‘স্বাদু’, ‘ধাতৃ’ প্রভৃতি শব্দের প্রথমার একবচনের বিভক্তি লোপ পায়। পালি ভাষায় ‘মুনি’, ‘আদি’, ‘সুখী’ ‘পিতা’, ‘গো’, ‘মতি’ ইত্যাদি শব্দের প্রথমার একবচনের বিভক্তি লুপ্ত হয়। প্রাকৃতে ‘কাঅ’ (কাক), ‘লোঅ’ (লোক), ‘মঅন’ (মদন), ‘সাহু’ (সাধু), ‘মেহ’ (মেঘ) প্রভৃতি শব্দের প্রথমার একবচনের বিভক্তি লুপ্ত হয়। প্রথমার একবচনের বিভক্তি লোপের ব্যাপারটি পালি-প্রাকৃত ভাষাতেই ব্যাপক আকার ধারণ করে। ফলে এ-বিষয়টিকে সাঁওতালী প্রভাব বলে নির্বিচারে মেনে নেওয়া যায় কি?
    ৯। আপনি প্রথমেই বলেছেন, ‘একটি ভাষার ভিত্তি আলোচনা করতে হলে শুধু তাতে ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যাগত আধিক্যের নিরিখটি বিবেচনা করতে গেলে ভুল হবে।’ অর্থাৎ আপনি বলতে চেয়েছেন, বাংলা ভাষায় সংস্কৃতজ শব্দাধিক্যের অর্থ এই নয় যে, বাংলা সংস্কৃত থেকে জন্ম লাভ করেছে। কিন্তু আপনিই তো আবার বাংলাকে মিশ্র ভাষা প্রমাণ করতে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ভাষার কতো কতো শব্দ বাংলাভাষায় প্রবেশ করেছে তার তালিকা দিয়েছেন। এ-যে স্ববিরোধ হয়ে গেল! তাছাড়া ক্ষুদিরাম দাশের অভিধানকে আপনি প্রামাণ্য হিসেবে মানেন? ক্ষুদিরাম দাশের ‘সাঁওতালি সমশব্দ অভিধান’-কে মান্য করার আগে কোনো সাঁওতাল ব্যক্তিকে দিয়ে অভিধানখানি একটু যাচাই করে দেখছেন কি— অভিধানের সমস্ত শব্দ তাঁদের ভাষায় আছে কিন? এই অভিধানটি নিয়ে সঙ্গত কারণেই আমার সন্দেহ হয়। দ্রাবিড় ‘অক্কা’, ‘অখজ্জে’, ‘অত্তা’, ‘আজা’ ‘আজী’ ‘আরভট’ প্রভৃতি শব্দ কি বাংলা ভাষায় প্রচলিত?
    ১০। ‘ক্রিয়াপদের লিঙ্গহীনতা’ বলতে আপনি যা বুঝিয়েছেন, অর্থাৎ লিঙ্গের ভিত্তিতে বাংলায় ক্রিয়াপদের কোনোরূপ পরিবর্তন হয় না। তা সংস্কৃতেও লিঙ্গের ভিত্তিতে ক্রিয়াপদের পরিবর্তন হয় না। এই-রূপ পরিবর্তন দেখা যায় হিন্দীতে (ক্রিয়াপদের লিঙ্গত্ব হিন্দীতেই-বা কতটা আছে সেটাও অন্য দিক থেকে বিচার্য)। আর সংস্কৃত ভাষাতেও শব্দদ্বৈত লক্ষ করা যায়। ফলে বাংলা ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকে কেবল মুন্ডা প্রভাবিত বলে চিহ্নিত করা যুক্তিসঙ্গত কি?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    মেনকার মেয়ের মাগ্গদশ্শক  | যদি এই জীবনের বন্দরে নানাদেশী তরী এসে নোঙর করে | ঘোড়ামারা দ্বীপ | দ্বিষো জহি | কবি যখন পাহাড় হয়ে যায় | ট্রফি | ফকিরি | বাংলা ভাষার গঠন নিয়ে চর্চা ও কিছু প্রস্তাব | কাঠের মানুষ | তাজ ও মাহোল | কবিতাগুচ্ছ | কোন নাম নেই | টিফিনবেলার গান | সান্দ্র ধাতবসঙ্গীত | মশা-ই | গুনাহ! গুনাহ! | রেনেসাঁস থেকে রসগোল্লা সবই কলোনিয়াল | সু-পাত্রের সন্ধান দেবে অঙ্ক | যদি বল প্রেম | যশপতির একদিন | চোদ্দপিদিম | গভীর জল | লেখা-সাক্ষাৎ | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং - পর্ব ১ | কন্যাকুমারী | সিন্ধুতট | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-১ | ট্যাঙ্কশংকর, লোকটা ও এক সম্ভাব্য/অসমাপ্ত মহাজাগতিক কিস্যা-২ | আনন্দ মঠ – ইতিহাসের সন্তান, ইতিহাসের জননী | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ২ | অর্গ্যাজম | কবি-কাহিনি | ব্ল্যাকআউট ডাইনিং -- পর্ব ৩ | কমরেড গঙ্গাপদ | বিপজ্জনক খেলা | বেলার বেতার | গভীর অসুখে নিমজ্জিত মণিপুর | আবোল তাবোল | শিউলিরা | বিসর্জন | এক রাজা, দুই কবিরাজ | হাওয়া হাওয়া | ভোলবদল | ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথঃ মহাকাব্যের দুই পিতা ও তাদের রাজধর্ম | মারীকথা | দামামা | হাওয়া মোরগের জীবন | পলায়নবাদীর সঞ্জীবনী বটিকা | নিত্যগতি | তিনটি কবিতা | চিত্রকর | যাবার কথা
  • ইস্পেশাল | ২২ অক্টোবর ২০২৩ | ২৯৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • upal mukhopadhyay | ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:২৫525048
  • অসাধারণ ! শুধু একটা অনুরোধ যদি গবেষণা পত্রের লিংক দেন খুব ভালো হয় ।
  • আব্দুল্লাহ আল মামুন | 103.136.201.27 | ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩০525204
  • এই লেখার বেশ কিছুটা অংশ সচলায়তনে আব্দুল্লাহ এ এম এর দুটি লেখা থেকে কাট পেষ্ট করা হয়েছে।  তাতে অসুবিধা নেই, কিন্তু ঋণ স্বীকার করা উচিৎ ছিল। 
  • কাট পেষ্ট | 2607:fb91:deb:7042:8175:c235:6e2d:b328 | ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩৬525205
  • সচলের লিংক পাওয়া যাবে?
  • souvik ghoshal | ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৩৩525221
  • সাঁওতালি থেকে আসা বাংলা শব্দের তালিকাটির ঋণ প্রসঙ্গে জানাই যে, তালিকাটি যে মূল বই থেকে তৈরি, আমার ঋণ হিসেবে সেই বইটির নামটিই দিয়েছি৷ সাঁওতালি বাংলা সমশব্দ অভিভান - ক্ষুদিরাম দাশ - পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাদেমি। 
    দ্রাবিড় শব্দ তালিকার ঋণ এই বইটির কাছে - 
    বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার - অনার্যভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাব - তপতী রানী সরকার। বাংলা একাডেমি, ঢাকা। 
     
    মূল বইয়ের ঋণ লেখার মধ্যেই আছে। এখানেও আর একবার উল্লেখ করলাম। 
    আবদুল্লাহ এ এম এর লেখায় টাইপ করা থাকায় সাঁওতালি শব্দগুলো আমায় আর নতুন করে টাইপ করার পরিশ্রম করতে হয় নি। এই কথাটাও মূল লেখায় ঢুকিয়ে দিচ্ছি পত্রিকা সম্পাদককে বলে।
     
  • Souvik Bhattacharya | ০১ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৯525429
  • প্রাকৃত কী আদৌ জনসাধারণের ভাষা ছিল।পেগি মোহন তাঁর বইতে(Wanderers,Kings,Marchents..The story of India through Its languages) দেখিয়েছেন প্রাকৃত মৌখিক সংস্কৃত থেকেই উদ্ভুত হয়েছিল যা এলিট দের মুখের ভাষা ছিল।সাধারণ জনসমাজ তাদের প্রাক বৈদিক দ্রাবিড়/মুণ্ডাগোষ্ঠীর ভাষাতেই কথা বলত। কিন্ত বৈদিক সমাজ যখন কুরু রাজবংশের উদ্ভবের পর থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের দিকে মাইগ্রেট করতে থাকে তখন সংস্কৃত ও তার মৌখিক বিকৃত রূপ প্রাকৃত ভাষা প্রচলিত হতে থাকে এবং কালে প্রাক বৈদিক ভাষা গুলো বিলুপ্ত হয়ে প্রাকৃত ভাষার বিভিন্ন রূপ গুলো lingua franca রূপে প্রচলিত হয়ে ওঠে।কিন্ত প্রাক বৈদিক ভাষা গুলো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়না ও  তাদের ব্যাকরণ গত বৈশিষ্ট্য গুলো হিসেবে এই প্রাকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে বজায় থেকে যায় যা এগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন ডায়ালেক্ট এর চেহারা দান করে।এরপর আরও বেশ অনেক শতাব্দী পড়ে দশম শতক নাগাদ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন এর হাত ধরে এই ডায়ালেক্ট গুলো ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা হিসেবে উদ্ভুত হতে থাকে যা তার শব্দাবলির জন্য সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকলেও প্রাচীন প্রাক বৈদিক ভাষা গুলোর অন্তর্নিহিত ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য গুলো বহন করে নিয়ে যায় যা সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষাগুলোর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল।ওনার বইতে মূলত মারাঠি,হিন্দি,ভোজপুরীর উদাহরণ দিয়েছেন আর বাংলা সম্পর্কে এই লেখাতেই বিস্তারিত আলোচনা আছে যা বাংলার প্রাক বৈদিক দ্রাবিড় মুণ্ডা সম্পর্কের প্রতি গভীর ভাবে আলোকপাত করেছে।
  • রাজীব চক্রবর্তী | 2402:3a80:1cd5:bd7b:482a:f468:69f3:5a97 | ২২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০০526369
  • মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইটার নাম "প্রাগিতিহাস: ভারতবর্ষে পরিযান ও জাতিগোষ্ঠী গঠন"। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন