এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • কাদামাটির হাফলাইফ

    ইমানুল হক
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৯২৫ বার পঠিত
  • পর্ব ১-৩ | পর্ব ৪-৬ | পর্ব ৭-৯ | পর্ব ১০-১২ | পর্ব ১৩-১৫ | পর্ব ১৬-১৮ | পর্ব ১৯-২১ | পর্ব ২২-২৪ | পর্ব ২৫-২৭ | পর্ব ২৮-২৯ | পর্ব ৩০-৩১ | পর্ব ৩২-৩৩ | পর্ব ৩৪-৩৫ | পর্ব ৩৬-৩৭ | পর্ব ৩৮-৩৯ | পর্ব ৪০-৪১ | পর্ব ৪২-৪৩ | পর্ব ৪৪-৪৫ | পর্ব ৪৬-৪৭ | পর্ব ৪৮-৪৯ | পর্ব ৫০-৫১ | পর্ব ৫২-৫৩ | পর্ব ৫৪-৫৫ | পর্ব ৫৬-৫৭ | পর্ব ৫৮-৫৯ | পর্ব ৬০-৬১ | পর্ব ৬২-৬৩ | পর্ব ৬৪-৬৫ | পর্ব ৬৬-৬৭ | পর্ব ৬৮-৬৯ | পর্ব ৭০-৭১ | পর্ব ৭২-৭৩ | পর্ব ৭৪-৭৬ | পর্ব ৭৭-৭৮ | পর্ব ৭৯-৮০ | পর্ব ৮১-৮২-৮৩ | পর্ব ৮৪-৮৫ | পর্ব ৮৬-৮৭ | পর্ব ৮৮-৮৯ | পর্ব ৯০-৯২ | পর্ব ৯৩-৯৪ | পর্ব ৯৫-৯৬ | পর্ব ৯৭-৯৮ | পর্ব ৯৯-১০০ | পর্ব ১০১-১০২ | পর্ব ১০৩-১০৪ | পর্ব ১০৫-১০৬ | পর্ব ১০৭-১০৮ | পর্ব ১০৯-১১০ | পর্ব ১১১-১১২ | পর্ব ১১৩-১১৪
    আরে, কাদা না থাকলে মানুষ তো বেঁচেই থাকতে পারতো না। শস্য সব্জি কিছুই কি তেমন মিলত? ফুল ফল অনেক কিছুই? কাদা আর বালির মিশেলেই তো জীবনের যত মার প্যাঁচ।

    পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের গ্রামজীবনের স্মৃতিচিত্রণ।
    ১৬

    পলাশন হাট থেকে পদোন্নতি মিলে সেহারা বাজারে এসে পেলাম মোরব্বা ভরা কেক, মিষ্টি বান রুটি আর ক্রিম রোল‌। এবং বেলেতোড়ের ম্যাচা, অমর মিত্রের ভাষায় 'আগুনের গাড়ি' তথা বড় দুঃখের রেলওয়ের বা বিডিআরের মিটারগেজ কয়লার ইঞ্জিনওলা ভঁসভঁস আওয়াজ করে ধোঁয়া উদ্গীরন করা ছোট ট্রেন।

    পলাশন হাট। আর সেহারা বাজার । দু'দিকে দুটোর অবস্থান। পলাশন পূর্বে। সেহারা পশ্চিমে। পলাশনের তুলনায় সেহারা কুলীন। #সেহারাবাজার রেল জংশন। বাঁকুড়া পুরুলিয়া বর্ধমান ও হুগলির সংযোগক্ষেত্র। গোটা পাঁচেক রাইস মিল। একটা পেট্রোল পাম্প। একাধিক ব্যাঙ্কের শাখা। জমজমাট ব্যাপার। আরামবাগ থেকে বর্ধমান লাক্সারি বা এক্সপ্রেস বাস চলে। পলাশন দিয়ে যায় শুধু লোকাল বাস। #পহলানপুর থেকে বর্ধমান। বর্ধমান থেকে আরামবাগ যাওয়ার সমান্তরাল পথ দুটো। বর্ধমান জিটি রোড থেকে শেরশাহের আমলের বাদশাহি রোড #সগড়াই পর্যন্ত এক থেকে দুটি পথে গেছে বেঁকে। একটি শ্যামসুন্দর হয়ে পহলানপুর বা কারালাঘাট। অন্যটি সেহারাবাজার উচালন হয়ে আরামবাগ। সগড়াইয়ের পাঁচ কিমি আগে বাঁকুড়া মোড়। বাস বাঁকুড়া মোড় খণ্ডঘোষ হয়ে সেই পথে ছোটে ইন্দাস সোনামুখী বাঁকুড়া।
    সগড়াই বাংলার শ্রেষ্ঠ কুমড়ো আলু গাজর বিটের সিঙ্গারা মেলে। তাতে অল্প ভাজা বাদামের চিকন নবাবি উপস্থিতি।

    চতুর্থ শ্রেণির পর আমার হাট থেকে বাজারে প্রমোশন হল। ১৯৭৫-এ চতুর্থ শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে পঞ্চম শ্রেণি। কিছু ছেলে পলাশন চলে যতো এরপর। আমরা বেশিরভাগ গেলুম না। গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে রয়ে গেলাম। জুনিয়র মানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। কেন? এক বাবার ইচ্ছে। আর দুই পলাশন স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষার অঙ্কের দিন এক শিক্ষকের সঙ্গে পরীক্ষার হলে ঝগড়া। সেটি পরে বলছি। না এখানেই বলে নিই, নইলে ভুলে যাবো।
    আমাদের সময় বৃত্তি পরীক্ষা হতো। এবং সেটা বাধ্যতামূলক। নিজেদের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়া যেতো না। দূরের স্কুলে আসন পড়তো। বোর্ডের প্রশ্নপত্র। প্রশ্ন ভালোই কঠিন হতো। প্রথম বিভাগ দ্বিতীয় বিভাগ তৃতীয় বিভাগ ছিল।
    পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি আড়াই কিলোমিটার দূরে। একজন শিক্ষকের দায়িত্বে। স্নান করে ভালো জামা পরে, মসজিদে ও শিবমন্দিরের ধুলো কপালে ছুঁয়ে যাত্রা।
    আমরা ছিলাম চতুর্থ শ্রেণিতে ১৭ জন।
    প্রথম শ্রেণিতে ১৫৭ জন। দারিদ্র্য বাকিদের ছিটকে দেয়।
    আমার এক মাসতুতো ভাই ছিল, কাব। পাণ্ডুয়ায় বাড়ি। বাবা পীর। গ্র্যাজুয়েশন করে পীর হয়েছেন। বড়ো সরকারি চাকরিও জুটেছিল। পূর্ব বঙ্গে। আগে কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। ঘুষ নেওয়ায় বড়ো সাহেবকে মেরে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে আসেন বলে গল্প শুনেছি। তার পরে পীর হয়ে যান। প্রচুর মুরিদ ছিল। দুই স্ত্রী। মজার মানুষ। রবীন্দ্রনাথের মতো সাদা আলখাল্লা। পাঠানদের মতো চেহারা। ছয় ফুটের বেশি লম্বা। কন্ঠস্বর অসাধারণ। আগে নাটক ও বক্তৃতা করতেন। এখন পীরের বাণী ও ওয়াজ মাহফিল। মার্কস ও হজরত মহম্মদের মিল দেখাতেন বক্তৃতায়। ফলে শিষ্যের অভাব নাই। যিশু মহম্মদ মার্কস সবাই গরিবি হঠাতে এসেছিলেন-- এই সব বলতেন।

    আমার বাবার সঙ্গে তাঁর খুব উপভোগ্য তর্ক হতো। বাবা বলতেন, আপনাকে দেখে নাস্তিক হলাম, আল্লা ছাড়লাম। আর আপনি?
    বড় খালু ( বড় মেসো) উত্তর দিতেন, সেটা তখন যা বলেছি, ঠিক ছিল। এখন যেটা বলছি সেটাও ঠিক। রামায়ণের জাবালির গল্প ভুলে গেলি।
    জাবালি, রামকে বলেছিল না, তখন আমি নাস্তিক ছিলাম, এখন নাস্তিকতার কাল গত হয়েছে, এখন আমি আস্তিক। ( এই গল্প পরে লিখছি)।

    তা, এই বড় খালুর ছেলে কাব, বাড়িতে পড়াশোনা করে না, তাই বড়মামা তাঁকে নিয়ে এলেন। আমাদের গ্রামেই মামার বাড়ি। এ-পাড়া ও-পাড়া।
    বড়মামা গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। প্রচণ্ড দাপুটে। এবং রাগী। নিয়মনিষ্ঠ। পড়াশোনার দিকে খুব নজর। মামার বড়ো ছেলে আজম ও আমি প্রায় সমবয়সী। খুব বন্ধু। তিনজন জুটলাম। আজম আমি পড়াশোনা করি মোটের ওপর। আমি আর আজমের মধ্যে প্রথম দ্বিতীয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। কিন্তু বন্ধুত্ব আজো অমলিন। কাব মোটেও পড়াশোনা করে না। মামা বাড়ির বাইরে বের হলো তো কাবও হাওয়া। কাব কিন্তু ছোট বড়ো সবার কাছে খুব জনপ্রিয়।‌পাণ্ডুয়াতে থাকতো। পাণ্ডুয়া শহর। কাছেই কাকলি সিনেমা হল। সিনেমার পোকা। যত রাজ্যের হিন্দি গান তার মুখস্থ। আর তার সঙ্গে নাচ।
    দম মারো দম তখন খুব জনপ্রিয়।
    কঙ্গনা রানাওয়াতের আইটেমের চেয়েও কাব ফাটিয়ে দিতো।
    তা কাবের আসন পাশে পড়েছে। কড়া গার্ড। দেখে দেখে লিখবে না বলে সতর্কবাণী।
    কিন্তু আমি কাবকে দেখিয়ে যাচ্ছি কায়দা করে। কাবকে বলে রেখেছি, সব লিখবি না। একটু একটু বাদ দিবি। তা সেবার বুঝলাম, না পড়া থাকলে টোকাও কারো কঠিন।
    অঙ্ক পরীক্ষার দিন আট নম্বরের একটা অঙ্ক খুব কঠিন। ৯২ পেরেছি। আটে আটকে। কেউ পারছে না হলে। গার্ড দেওয়া স্যাররাও কেউ কেউ দেখলেন। কঠিন। পতিতবাবু বলে এক স্যার ছিলেন, অঙ্কটা আমার স্লেট নিয়ে কষলেন। কষে পলাশনের ছেলেদের দিলেন। আমি দেখলাম, ওঁরা করছে। আমাদের তো দেবে না। আর নিজে টুকতেও আপত্তি ছিল। স্যার একটু অন্যমুখো হতেই আমি উঠে স্লেটটা নিয়ে কেড়ে অঙ্ক মুছে দিলাম।
    লেগে গেল গণ্ডগোল।
    স্যার বললেন, দাঁড়া তোকে তো এখানেই আসতে হবে-- তখন দেখবো কতো বাহাদুরি পারিস।
    পলাশনের ছেলেরা হুমকি দিল, মারবে। বললাম, ঠিক আছে পরীক্ষা শেষ হোক। দেখবো তোদের কতো জোর।
    আমার পরের ভাই জইনুলের ( এখন বিমানবাহিনীতে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি দুর্গাপুরে প্রধানশিক্ষক) ছিল গায়ে খুব জোর। মারপিটে ওস্তাদ। ওর সঙ্গে আমার দৈনিক মারামারি দৈনিক ভাব। ও তো দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাইরে বসে আছে। আমকাটা ছুরি পকেটে নিয়ে।
    ও বলতো, মারামারি হলে তো তুই পারবি না। বুদ্ধি তোর বেশি আছে গায়ের জোরে পারবি না। সে প্রতিদিন এসে হলের বাইরে ঠায় বসে থাকতো। আর জানালা দিয়ে দেখতো দূর থেকে।
    সে-কালে বিয়ে আর পরীক্ষা এই দুটোতেই মারামারি ছিল বাঁধা।
    পরীক্ষার শেষদিনে মোটামুটি হতোই।
    তা আমরা অকুতোভয়। ওঁরা পারবেই না। আমাদের নজরুল, কাব, জামু -- সব ওস্তাদ লড়িয়ে। যাক, পরীক্ষা শেষে আমাকে ওই স্কুলের ছেলেরা আটকাতে যেতেই বললাম, এখানে কেন, রাস্তায় চ।
    দেখি কতো মুরোদ।
    তা ওরা আর মুরোদ দেখাল না।
    চার পাঁচ খানা গ্রামের ছেলে পরীক্ষা দিতে এসেছিল। একটি ছেলে দীনবন্ধু নাম। ধারানের ছেলে। সে ধারানের ফার্স্ট বয়।‌ আমি টেস্টে প্রথম হয়েছি। দীনবন্ধু বললে, তোমার সাহস আছে ভাই।
    বন্ধু হবে।
    হয়ে গেলাম বন্ধু।
    তো এই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় একটা ইচ্ছে আমার পূরণ হলো।
    বড়োমামাকে দেখতাম সাদা একটা বড়ো থালায় ভাত ডিমের পোচ ঘি আর ভর্তা আর ঘন মুসুর ডাল দিয়ে ভাত খেতে আর খবরের কাগজ পড়তে।
    আমারও খুব ইচ্ছে ছিল, ওইভাবে খেতে। মাংসের চেয়েও লোভনীয় রাজকীয় ছিল, ওটা আমার চোখে। আজও আমার প্রিয় খাবার।
    দাদাও হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিতে যেতো ৬ কিলোমিটার দূরে শ্যামসুন্দর ওইরকম খেয়ে।
    দাদার এক বন্ধু প্রশান্ত দে পরীক্ষার সময় আমাদের বাড়িতে ছিলেন। কারণ, তাঁর বাড়ি ছিল আরও অনেক দূরে। আমাদের বাড়ি থেকে অন্তত ১৫ কিলোমিটার। সেকালে কেউ মাথা তেমন ঘামাতো না।
    তো আমার শখ মিটল অর্ধেক। ভাত ঘি ঘন মুসুর ডাল আলু ভর্তা আর আর ডিমের পোচ খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার।
    সঙ্গী আমার ভাইসহ ১৮ জন।
    মাস্টারমশাইকে নিয়ে এক ব্যাটেলিয়ন আড়াই কিলোমিটার হাঁটতাম।
    পঞ্চম শ্রেণিতে আমার পড়ার সময় দাদা চলে গেলেন বর্ধমান শহরে। রাজ কলেজে পড়তে। ১৯৭৬-এ। বাবা চাইলেন, দাদা শ্যামসুন্দর কলেজে পড়ুক। বাড়ি থেকে যাতায়াত করে। ছয় কিলোমিটার দূরে।
    মা বললেন, ওখানে ছেলে মানুষ হবে না।
    সেরা কলেজেই পড়তে হবে। রাজ কলেজকে তখন বর্ধমানের প্রেসিডেন্সি কলেজ বলা হতো। আমিও পড়েছি পরে। অসাধারণ অধ্যাপকমণ্ডলী আর গ্রন্থাগার। আমার ছোটোমামাও ওই কলেজে পড়েছেন।
    দাদা চলে গেল আমার বাজারের জায়গা গেল বদলে। পলাশনের বদলে সেহারাবাজার।
    ১৯৭০ এর দশকে সবুজ বিপ্লবের আহ্বানে সরকারের অধিগৃহীত ব্যাঙ্কগুলো কৃষকদের সেচের সুবিধার জন্য শ্যালো বা অ-গভীর নলকূপ গড়তে ঋণ দেয়। আমাদের গ্রামের কয়েকজন সম্পন্ন চাষী সে ঋণ পান। আমার বাবাও‌। রাজনৈতিক কারণে বাবা গ্রাম ছাড়া হলেন। আমাদের বিঘে ত্রিশেক জমি তখন অবশিষ্ট। পার্টি ফুটবল ক্লাব মেয়ের বিয়ে ইত্যাদি করে বহু জমি বিক্রি। কিছু জমি খাস হয়েছে। জমি চাষ করতে বাধা দেওয়া হল। ওদিকে একজন ছাড়া বাকিদের মাটির নীচে জলের অপ্রতুলতার কারণে শ্যালো ফেল মেরে গেল।
    আমাদেরও।
    বাবা নেই। দাদা তখন নবম শ্রেণি। দাদার সাইকেল পুলিশ কেড়ে নিয়েছে ১৯৭৪-এ। এস এফ আই করতো। তিনদিনের ছাত্র ধর্মঘট গেছিল।
    স্কুলে ধর্মঘট করার অপরাধে সাইকেল কেড়ে নিয়েছে। সেই সাইকেল পরে উদ্ধার হয়।
    তাই হেঁটেই স্কুল যায়।
    এদিকে চাষ বন্ধ। কী করে? আর্থিক সংকট দেখা দিল। দুধ আলু সেদ্ধ ডাল ভাত চলল। দাদা ওই শ্যালো মেশিন তুলে ধান ভাঙ্গার রাইস মেশিন বানালো। এদিকে কংগ্রেস বলে দিয়েছে, ওদের ঘরে ধান ভাঙানো যাবে না।
    কংগ্রেসের এক নেতা সেও বড়ো হলারের ধান ভাঙা মেশিন করেছে।
    দাদা গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে ধান চালের ব্যবসা করে সংসার চালায় আর পড়ে। রাজনীতিও করে।
    এদিকে গ্রামের মানুষ আমাদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁরা রাতের অন্ধকারে সেদ্ধ ধানের বস্তা আর তাতে নিজের নাম লিখে মজুরি রেখে চলে যায়। রাতে সবাই ঘুমোলে ধানের কল চালায় দাদা আর গ্রামের এক মানুষ। ভোরে লোকে নিয়ে যায় সে-সব চাল।
    তো, এই ধানের কল চালানোর জন্য ডিজেল দরকার। দৈনিক তিন থেকে পাঁচ লিটার। দাদা আগে সেহারা স্কুলে পড়তো। ফেরার সময় নিয়ে আসতো।
    এখন তো দাদা বর্ধমানে থাকে। ওখানেই কলেজে পড়ে।
    আমার ওপর দায়িত্ব এল।
    আমি দু কিলোমিটার গিয়ে গোপীনাথপুর স্টেশনে বিডিআর বলে একটা ট্রেন ধরতাম ৯-২৫ মিনিটে। সেহারাবাজারে ট্রেনের ক্রসিং। জল ভরতে ১৫ মিনিট নিতো। আমি সামনের কামরায় উঠতাম। নেমেই ছুট। পেট্রোল পাম্পে। প্রায় এক কিমি রাস্তা। ডিজেল তেল নিয়েই ছুটে এসে ট্রেন ধরতাম। দাম যতদূর মনে পড়ে ১ টাকা ৩৩ পয়সা লিটার। কর্মীরা খুব ভালো ছিলেন। তাঁরা জানতেন, বিষয়টা। আমার বাবা ও দাদাকে ভালোবাসতেন। আসলে কমিউনিস্টদের প্রতি বহু মানুষের গোপন দুর্বলতা ছিল। তাই আমার তেল ওরা ভরে দিতেন। জানতেন, না হলে, আমাকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার হেঁটে ফিরতে হবে এবং আমার স্কুল কামাই হয়ে যাবে।
    আবার ছুটতে ছুটতে ফেরা।
    এবারে পিছনের কামরায় ওঠা।
    চলন্ত ট্রেন থেকে কায়দা করে ট্রেন থামার আগেই নেমে ছুট।
    আমাদের জুনিয়র হাইস্কুল ছিল গ্রামে।
    একটা পুকুরের পরেই।
    বাড়ি ফিরে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েই কোনোক্রমে স্কুলে পৌঁছানো।
    আমাদের প্রধান শিক্ষক সোমবার তাঁর বাড়ি শাসপুর থেকে ওই ট্রেনে আসতেন। তিনি দেখতেন, ব্যাপারটা।
    ট্রেন দেরি করলে বা দেরি হলে তাঁরও দেরি হতো।
    তবে তখন জরুরি অবস্থার কারণে ট্রেন চলতো কাঁটায় কাঁটায়। ট্রেনের যাত্রীরা এমারজেন্সির প্রশংসা করতেন।
    ওই সময় সেহারা স্টেশনে বেলেতোড়ের ম্যাচা সন্দেশ পাওয়া যেতো। যেমন সুন্দর গন্ধ তেমনি খেতে। সময় ছিল না কেনার, পয়সাও।
    একা একা খেতে ইচ্ছে হতো না আর।
    এই তো প্রথম অর্থনৈতিক সংকট দেখছি। এক বছর আগেও তো দেখিনি।

    জরুরি অবস্থা এক ধাক্কায় আমার মতো অনেককে বড়ো করে দিয়েছিল।

    আমার প্রিয় স্যার Sisir Datta র সংযোজন:

    এত সহজ সরল করে লিখিস কি করে। যে পড়ে তারই তো বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। এতে কিন্তু তোকে মোটেই পণ্ডিত পণ্ডিত মনে হয় না। মনে হয়না এই ছেলেটা এখন একটা নাম করা কলেজের অধ্যাপক। মনে হয় না কত্ত বড় বড় মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা। কাদায় মাখা আউসাড়া গাঁয়ের সেই ছেলেটা এখন লোক হয়ে গেছে। কবি শঙ্খ ঘোষের হাত থাকে তার মাথায়। হেথাহোথা বক্তব্য রাখে। আর আমাদের মত বৃদ্ধরাও গালে হাত দিয়ে শোনে। আমরা ভাবি আরে ওতো আমাদের ইমান না? বাংলাদেশের এক নাম করা টি ভি সেন্টারে হঠাৎ দেখি কত সহজ কত সরল ভাবে সঞ্চালকের প্রত্যেক টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। এত ভালো লাগলো কি বলবো।ছেলেটা এখানে ওখানে ঘুরতে ঘুরতে ইংরেজিটা কিন্তু এক্কেবারে ভুলে গেছে। কারণে অকারণে কথায় কথায় মোটেই ইংরেজি বলে না। না বাবু এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। দু একটা ইংলিশ না চালালে পণ্ডিত পণ্ডিত লাগবে কেন। ও এখনও গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের কথা, সেই স্কুলের মাস্টারমশাইদের কথা বলে। হাই স্কুলের মাস্টার মশাইদের এখনও কথায় কথায় স্মরণ করে। মাঝে মাঝে গ্রামে এলে মাতৃসমা যাঁরা, তাঁদের আন্টি বলে না। অদ্ভুত ব্যাপার। তার চেয়ে আরও অবাক লাগে যখন দেখি ওরা প্রত্যেকটি ভাই ওদের বাবার মত সরলতা, উদার মানসিকতা, অহঙ্কার মুক্ত, সবার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চলা, মানুষের বিপদেআপদে ঝাঁপিয়ে পড়া, যে কোন সংগঠন কে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা সহজেই আয়ত্ত করেছে। সম্ভবত ওরা পারেনি শুধু পিতার যাত্রাভিনয়ের ক্ষমতা আয়ত্ত করতে। আইনুলের বিবাহে নিমন্ত্রণ ছিল আমাদের স্কুলের সব্বার। কিন্তু স্কুল চলাকালীন সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই স্কুলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলাম আমি আর প্রিয়নাথ বাবু। সেই সময় ওদের পিতা আমাদের এমন ভাবে অভ্যর্থনার নামে সম্মানিত করে ছিলেন তা এখনও ভুলতে পারিনি। দেখো দিকিনি কি লিখতে কি সব লিখে ফেললাম, সেই জন্যই বোধহয় বলে

    আশিতে আসিও না।।

    ---

    ১৭

    জরুরি অবস্থার সময়ে অনেক নতুন কিছু দেখি। বহু লোক আজ যাই বলুন, সে-সময় বলতেন ইমার্জেন্সি ভালো হয়েছে। ভালো বলতে লোকে, সময়ে ট্রেন চলছে, স্কুল কলেজ হচ্ছে--এইসব বলতো । সে-সময় মিলিটারি শাসনের পক্ষেও খুব কথা শোনা যেতো। সেহারা স্কুলের দেওয়ালে ট্রেন থেকে লেখা কয়েকটি কথা চোখে পড়তো।
    এক।। বাবানাম কেবলম।। আনন্দমার্গ জিন্দাবাদ।
    দুই ।। দিয়েছি তো এক নদী রক্ত/
    হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত।
    বোধহয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে।
    তলায় লেখা --শিক্ষা বাঁচাও কমিটি। শিক্ষাকে কারা কেন বাঁচাবে বুঝতাম না।
    তবে শিক্ষা বাঁচাও কমিটির পর বন্ধনীতে ( মহাজাতি সদন) লেখা থাকতো।
    মহাজাতি সদন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত এ-টুকু জ্ঞান ছিল। তাই ভাবতাম, সুভাষচন্দ্র বসুর এঁরা কেউ হবেন।
    আর এর কারণও ছিল বর্ধমান যাওয়ার পথে দেখেছিলাম, কড়া চাবুক। কড়া চাবুক।
    নেতাজী আবার আসছেন।
    নেতাজী আসবেন--এটা সে-সময় বহু লোক বিশ্বাস করতো এবং গান্ধী ও নেহেরুকে গাল দিতো।
    তিন।। একটা সূর্য এঁকে তাঁর তলায় লেখা-- এশিয়ার মুক্তিসূর্য ইন্দিরা গান্ধী যুগ যুগ জিও।
    হাতের লেখা সুন্দর ছিল মনে আছে। ট্রেন থেকে দেখা যেতো।
    সেহারাবাজার স্কুলের শিক্ষকদের অনেককেই নামে চিনতাম। দাদার বন্ধুদের আলোচনায়। দাদার সহপাঠী ছিলেন বাসুদেব পণ্ডিত। তপশিলি জাতির মানুষ। দাদার সঙ্গে গলায় গলায় বন্ধুত্ব। একসঙ্গে যেতো স্কুলে। শান্ত ধীর স্থির। প্রধান শিক্ষক পদে কাজে করে অবসর নিয়েছেন। সেহারাবাজার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা খুব ছোটোবেলায় শুনেছি। ছোটোমামার সঙ্গে দাদা শিশু অবস্থায় একবার স্কুলে বেড়াতে গেলে তিনি নাকি দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। নিঃসন্তান কালীসাধক স্কুল অন্ত প্রাণ মানুষ। তিনি হাঁটতে বের হলে, স্কুলে পিন পড়ারও শব্দ পাওয়া যেতো না। শুধু জুতোর ঠকঠক আওয়াজ। তাঁর বিষয়ে আরো পরে লিখতে হবে। ভবানীবাবুর কথা আগেই বলেছি, যাঁর প্রভাবে সব সময় বাংলা বলা ও এক ধরনের পোশাক পরা আমার। প্রিয়নাথ নন্দীও এক আশ্চর্য মানুষ। তাঁর কথাও লিখেছি। শিশির দত্ত নামে জনপ্রিয় এক শিক্ষকের কথা শুনেছি বাড়িতে, তাঁকে ছুরি মেরেছিল গুন্ডারা। ছাত্রকে বাঁচাতে গিয়ে সম্ভবত ছুরি খেয়েছিলেন স্কুলেই। আমার ক্যুইজ বিতর্ক তাৎক্ষণিকে পরে পরিচিতি লাভের তাঁর হাতেই শুরু। পরে আলাদা করে লিখতেই হবে এই সদা সমাজব্রতী মানুষের কথা।
    #
    আজ লিখতে চাই ছোটোবেলার কথা। ট্রেনের কথা। ট্রেনে তখন টিকিট ছিল ন্যূনতম ৩০ পয়সা। সেহারা যাওয়ার সময় টিকিট কাটা হতো। ফেরার সময় নয়। স্টেশন মাস্টারকে ১০ পয়সা দিতে হতো। কোনোদিন চেকিং থাকলে বলে দিতেন, বাবারা আজ চেকিং। সবাই টিকিট কাটবি। বিনা টিকিটে ধরা পড়ে আমার স্টেশনের সম্মান নষ্ট করিস নি বাবু। উত্তমকুমারের মতো দেখতে। সদা ফিটফাট। তখন 'অমানুষ' খ্যাত শক্তি সামন্তের গ্রাম আমাদের থানার বোগড়া গ্রামের মানুষ। শক্তি সামন্তের নিজের ভাইপো। সবাই বলতো, মাস্টারমশাই, সিনেমা না করে, এখানে পড়ে আছেন? সিনেমায় নামলে নাম করতেন।
    বলতেন, গিয়েছিলুম। মন টিকলো না। এখানে থাকলে মনে হয় নিজের গাঁয়েই আছি। তাঁর জন্মভূমি বোগড়া গোপীনাথপুর স্টেশন থেকে খুব দূরে ছিল না। সাইকেলে যাওয়া আসা করা যেতো। ইমার্জেন্সির সময় খুব টিকিট বিক্রি হতো। পরে তেমন নয়। কিন্তু মাস্টারমশাই সারাদিন খাতায় কী সব লিখতেন। স্টেশন মাস্টারমশাইকে, কেউ পয়সা না দিলে, চেঁচাতেন, দাঁড়া পরের দিন আয়। দেখছি তোকে।
    আশপাশের সবাইকে নামে চিনতেন। পাঁচখানা গ্রামের লোক ব্যবহার করতেন এই স্টেশন। আউশাড়া,উদ্গড়া (রসপুকুর), নূরপুর, গোপীনাথপুর, আর বুড়ুল। গোপীনাথপুরের পরের স্টেশন সেহারাবাজার। জংশন। সেখানে একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। পাশেই ছিল বাস স্ট্যাণ্ড। ওখান থেকে দিনে একবার বাস ছাড়তো। ৯-৩৫ এ সম্ভবত। বর্ধমানে অফিস যাওয়ার বাস। লোকে নেমেই হুড়মুড় করে ছুটতো।
    সেহারাতে টিকিট পরীক্ষার ছিল কড়াকড়ি। পেছন এবং সামনেও লোক থাকতো। পালানোর পথ নেই। দিনে চারটি ট্রেন। দুটি আপ। দুটি ডাউন। গোপীনাথপুরের সময় ছিল সকাল ৯-২৫ আর বিকেল ৩-৩০। এই ট্রেন দেখে চারপাশের কৃষকরা জমি খেতে কাজ শেষ করতেন। দূর থেকে ধোঁয়া উড়িয়ে যাওয়া দেখতে দারুণ লাগতো। বিশেষ করে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে। মেঘমুক্ত আকাশ। কল্পনায় দেখতে পেতাম দার্জিলিং । আকাশের পেঁজা তুলো ছিল সাদা বরফ কল্পনার বিকল্প।
    কিন্তু যাওয়া দূরকল্পনা।
    সেই জন্য ভ্রমণকাহিনি গিলতাম।
    কল্পনায় ফায়ারপ্লেস, কাঠের ঘর, ঝুরো বরফ বাস করতো।
    #
    সেপ্টেম্বর -অক্টোবরে গ্রামে আকাল দেখা দিতো। আজ যা বড়োলোকদের খাবার--ওটস, সেই জাও, খেতো গরিব মানুষ। খুদের ভাত। পোশাকি নাম ছিল #ভুরভুরি। একটু হলুদ নুন তেজপাতা দিয়ে ভাঙা চাল বা কুলের ভুরভুরি মধ্যবিত্ত বাড়িতেও হতো।
    বেলা ১০ টার খাবার হিসেবে।
    গ্রামে কিন্তু পাঁচ বার ভরপেট খাওয়া।
    সকালে চা মুড়ি, বেলা ১০টায় ভুলভুরি বা পান্তাভাত বা জলভাত গরমের দিনে। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজন।
    বিকেলে মুড়ি ইত্যাদি। রাতে ভাত ।
    গরিবেরা ভাদ্র আশ্বিন কার্তিকে অনেকেই অনাহারে অর্ধাহারে থাকতেন। সম্পন্ন দয়ালু বাড়িগুলিতে বসে থাকতো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দল। আমাদের বাড়িতেও ১৫-২০ জন আসতেন। একদিন দুদিন অন্তর। কাজের সন্ধানে অথবা চাল গম আটার খোঁজে। ১৯৭৪-এ প্রথম লক আউট শব্দ শুনি। গ্রামের সুদর্শন পুরষের আকাল ছিল না। তবে উদ্গড়ার শেখপাড়ার জিয়াউর ভাইদের ভাইবোনের রূপ ছিল দেখার মতো। জিয়াউর ভাই শান্ত মানুষ, দুধে আলতার রং। শৌখিন মানুষ। মা বাবা দুজনেই পরম রূপবান। সম্ভ্রান্ত চেহারা।
    কলকাতায় বেঙ্গল পটারিতে মাস মাইনের চাকরি করতেন। গ্রামে এলে জুতো পরে গ্রামে ঘুরতেন। গ্রামে পুরুষ মানুষের খালি গায়ে ঘোরাই ছিল দস্তুর। জিয়াউরভাই জামা পরেন।
    শোনা গেল, জিয়াউর ভাই লক আউটের শিকার।
    জিয়াউর ভাই বসে থাকতেন। চাইতে পারতেন না। চুপচাপ ভাদ্রের রোদ উপেক্ষা করে বসে থাকতেন।
    সবাই কিছু নিয়ে চলে গেলে আমার মা তাঁকে আলাদা করে দিতেন।
    তা শীতকালে যে আলু ৫ পয়সাও দাম নয় ভাদ্র আশ্বিনে কার্তিকে তা ২০ -২৫ পয়সা হতো। বেগুন ৫০ পয়সা। টমেটো তখন সারা বছর মিলতো না। বাঁধাকপি ফুলকপিও।
    লালশাক পুনকো/ নটেশাক শাক মিলতো সারা বছর। বর্ষার পর শুষনি শাক। কিন্তু গ্রামের মানুষ শাক কিনতেন না। লাউ কুমড়ো এবং উচ্ছেও। বাড়ির উঠোন লাগোয়া শাকবাড়িতে হতো।
    তবে লোকে কচু কিনতো। জরুরি অবস্থার দুর্দিনে আমাদের চাষ বন্ধের সময় আমাদের খামারের গায়ে গোয়ালের পিছনে কচু গাছ লাগানো হয়। টগরভাই আর কাজ করতেন লালু কাকা। লালু কাকা জন্মসূত্রে আদিবাসী।
    কচু কিনে নিয়ে যেতো মানুষ। নিজেরাই তুলে নিতো কেউ কেউ। মনে পড়ছে, একজন খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। সদাশয় সৎ মানুষ। এসেই হাঁক পাড়তেন মায়ের উদ্দেশে, কই গো ভাবি কোদালটা দাও।

    ---

    ১৮

    'কচু' শব্দটি কেন জানি না, বাঙালি সমাজে খুব একটা শ্রদ্ধেয় ছিল না। কচু শাক পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষ সেভাবে খেতেন না। কচুর লতি বা মানকচু খাওয়ার চল ১৯৭৮ এর পর শুরু হয়।
    কচু খেগে যা।
    কচু হবে। ( মানে কিছু হবে না। ইতিবাচক অর্থে নেতিবাচক বোঝানোর আদর্শ উদাহরণ এটি)।
    দূর কচুপোড়া।
    এইসব শব্দবন্ধে কচু ঘিরে সামাজিক সাংস্কৃতিক মানসিক অবস্থান বোঝা যায়।
    কিন্তু কচু খেতে দিব্য। বুঝে কিনতে পারলে।‌ আমি এ-বিষয়ে একটু নিজের পিঠ চাপড়াতে পারি।
    যাবতীয় কচু চেনায়। শুয়োরের মাংসও চিনি। শুধু ইলিশ ভালো বুঝি না। মৃগেল মাছ চিনি জব্বর।
    কচুর গায়ে হাত দিয়ে ঘষলে ছাল উঠলে বুঝবেন, এ কচু গলা কুটকুটের নয়।
    কচুর মূলে কিন্তু গলা কুটকুটের সম্ভাবনা। সেটা টক হিসেবে ব্যবহার হতো। তেঁতুল গাছের অভাব ছিল না। তেঁতুলের টক।
    আর বর্ধমানের মানুষ সবেতেই টক খায়।
    মাছের টক তো রীতিমতো প্রসিদ্ধ।
    কচু দিয়ে মুসুর ডালে বেরেস্তা ফোড়ন অসাধারণ।
    কচু দিয়ে মাংসও জবাবহীন।
    একাদশ-দ্বাদশে পড়ার সময় আমি কমলসায়রের একটি বাড়িতে থাকতাম। সেখানে কচু দিয়ে ইলিশ রান্না করতো‌।
    আমি মিষ্টি জলের রুই কাতলা মৃগেল মাছের দেশের লোক, ইলিশের সঙ্গে কচু মানতে পারতাম না প্রথম প্রথম। মনে হতো, ইলিশের জাত গেল।
    কিন্তু পরে অসাধারণ লাগতে লাগলো। রান্নার গুণে।
    তা গ্রামের মানুষ কচু নিয়ে যেতেন। পনেরো পয়সা কেজি। কেউ পয়সা দিয়ে যেতেন, কেউ বাকিতে।
    আমি তাগাদায় যেতাম মায়ের ঠেলায়।
    ফলে গ্রামের বহু বাড়ি আমার ছোটোবয়সে চেনা হয়ে গেল।
    পরে যোগ হলো ধান ভানার পয়সাও। কত করে কেজি ছিল মনে নেই।
    ২৪.০৯.২০২০
    আজ বহুকাল পর শ্রদ্ধেয় শিশির দত্তের সঙ্গে কথা হল। তাঁর সম্পর্কে পরে বিস্তারিত বলবো। ছাত্রদের সমাজসেবা ও সংস্কৃতির কাজে যুক্ত করার ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষক খুব কম দেখা যায়। শিশির দত্তের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার না পাওয়া বেদনাদায়ক।
    শিশির বাবু এখন বর্ধমান শহরে থাকেন। স্যারের বাড়ি ছিল কৈয়ড় গ্রামে। সেহারা থেকে পশ্চিমে। সেহারার উত্তর দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলে সিপ্টা বলে একটা বর্ধিষ্ণু গ্রাম। বিশাল এক দিঘি আছে। স্যার বলছিলেন, সিপ্টার দিঘিতে প্রচুর মাছ হতো। মাছ ধরলে ৬/৭ কেজি ওজনের বড়ো বড়ো মাছ পাওয়া যেতো। মালিকরা বিক্রি করতে সংকোচ বোধ করতেন। আমিও গ্রামে থাকতে মধ্যবিত্ত কাউকে মাছ বিক্রি করতে দেখি নি। পরে জেলের কাছে নিজের ভাগের অতিরিক্ত মাছ জমা রাখার প্রথা চালু হয় ।
    লিখিত নয়। মুখে মুখেই জমা। আর চুনোমাছ বা ছোট মাছ কখনো কখনো মাঝারি মাছ, মাছ ধরা দেখতে জড়ো হওয়াদের দিয়ে দেওয়াই ছিল প্রথা। এ-ছাড়া প্রতিবেশী বা গ্রামীণ কুটুমের ঘরে পাঠানো ছিল স্বাভাবিক। না পাঠালে দুর্নাম রটতো কিপটে বলে।
    লাউ কুমড়ো পেয়ারা এ-সব তো পাঠানো নিত্য ঘটনা।
    তা, সিপ্টার বাবুরা কুইন্টাল কুইন্টাল মাছ কী করবেন-- বিলি করে দিতেন। লোকেরও ফ্রিজ নেই।‌ ভাবতেও পারতেন না মানুষ এ-সব। সত্তর দশকে। পাওয়া মাছ লোকে বড় বড় সিমেন্টের ডাব্বা করে প্রচুর তেঁতুলের টক মিশিয়ে মাটির তলায় পুঁতে রাখতো।
    আশপাশের এলাকার মানুষের বাড়িতে হঠাৎ কুটুম এলে লোকে কিনে আনতো। ধুয়ে রান্না করতো।
    #

    আমাদের গ্রামেও দুটি বড়ো পুকুর ছিল। লৈপুকুর বা নৈপুকুর ( নয়া পুকুর!) তাতে বছরে সম্ভবত একবার মাছ ধরা হতো।‌কারণ বড়ো পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরা কঠিন। কুইন্টাল দুই তিন মাছ হতো। আমাদের আগে চার আনা ভাগ ছিলো। বাবা বেচে দিয়েছেন। রাজনীতি দিদিদের বিয়ে ইত্যাদি কারণে। ওই পুকুরের মাছও খুব বড়ো বড়ো হতো। গোরুর গাড়ি করে ভাগ আনতে হতো। তা কয়েকজনের প্রায় নিজেদের বা দু ঘর মিলে একটা পুকুর থাকতো । সেই সব পুকুরে মাছ ধরার পর পাতি ( বাঁশে বোনা ছোট ঝুড়ি) করে মাছ ভাজা খাওয়া হতো। ওটাই টিফিন। মাছভাজা দিয়ে মুড়ি খাওয়ার চলও ছিল। এছাড়া লেবু ছোট পেঁয়াজ লেবু লঙ্কা দিয়ে মাছ মাখা বা মাছের ভর্তা অনবদ্য।

    বর্ধমানে যখন ১৯৮২ তে পড়তে গেলাম একা একটা ঘরে থাকতাম। নিজেই রান্না করতাম। আর সব ছেলেই যা করে আমিও তাই, ডিমের ঝোল বানাতাম প্রায়ই। ডালের ঝামেলা রইল না। দেশি টমেটো দিয়ে আলু পেঁয়াজ কুচি বিয়ের পাতলা একটু টকটক ঝোল রাতেও গরম করে খাওয়া যেতো। কড়াইয়েই থাকতো।
    ১৯৮৩ তে দাদা আর বৌদি বর্ধমান শহরে ঘরভাড়া নিলো। দাদা তখন এস এফ আইয়ের জেলা সম্পাদক। হোলটাইমার। তিনশো টাকা পায়। আমি ঘর থেকে চাল আলু নিয়ে যাই। পেঁয়াজও। তখন আমাদের গ্রামে আলু পেঁয়াজ ধনে ফুলকপি বাঁধাকপি কুমড়ো কুসুম বীজ চাষের চল ছিল। ছোট পেঁয়াজ। অনেক পাঁশ লাগতো জমিতে। বড়ো করণকস্যি আর যত্নের ব্যাপার। জমিতে জল থাকবে ভরা যুবতীর যৌবনের মতো। আধিক্যহীন। বোঝা যাবে সরসতা, দেখা যাবে না।
    তা, দাদা আমাকে বাজারে পাঠিয়েছে। পইপই করে বলে দিয়েছে, শাক নিবি না। আমি বাজারে গেলেই একাধিক শাকের আঁটি। তখন ৬ পয়সা বান্ডিল। চার আনায় চার আঁটি। আমার দায়িত্ব বাটা না পেলে চারা মাছ কেনা । ২৫০ বা ৩০০ গ্রাম। সর্ষে ঝাল হবে। বৌদি এটা দারুণ করতো। তিন পিস। সেই মাছ বোধহয় ছয় বা আট টাকা কিলো।‌ রাণীগঞ্জ বাজারে (,!) আমার সেটাই প্রথম হাতেখড়ি। আমি মাছের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েই আছি, দাঁড়িয়েই আছি। বলতেই পারছি না, ২৫০ গ্রাম মাছ দাও।
    তো দেখলাম, অনেকেই কিনছেন ২৫০ গ্রাম। তবু সংকোচ যায় না। মাছ শেষ হয় হয় তখন চোখ বন্ধ করে বললাম, ২৫০ মাছ দাও। দাদার খেয়ে বের হওয়ার কথা। আমি সকাল সাতটায় গিয়ে ফিরলাম সাড়ে ১০ টা পার করে। সাইকেলে ৫ মিনিটের পথ।
    ওখানেই দেখি পমফ্রেট মাছ। ১৫ টাকা কিলো। দাদার খুব প্রিয়। আমার আঁশটে গন্ধ লাগতো। দাদাকে দিয়ে দিতাম।
    এখন পমফ্রেট পছন্দ করি। কিন্তু যা দাম। ছোঁয়া মুশকিল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১-৩ | পর্ব ৪-৬ | পর্ব ৭-৯ | পর্ব ১০-১২ | পর্ব ১৩-১৫ | পর্ব ১৬-১৮ | পর্ব ১৯-২১ | পর্ব ২২-২৪ | পর্ব ২৫-২৭ | পর্ব ২৮-২৯ | পর্ব ৩০-৩১ | পর্ব ৩২-৩৩ | পর্ব ৩৪-৩৫ | পর্ব ৩৬-৩৭ | পর্ব ৩৮-৩৯ | পর্ব ৪০-৪১ | পর্ব ৪২-৪৩ | পর্ব ৪৪-৪৫ | পর্ব ৪৬-৪৭ | পর্ব ৪৮-৪৯ | পর্ব ৫০-৫১ | পর্ব ৫২-৫৩ | পর্ব ৫৪-৫৫ | পর্ব ৫৬-৫৭ | পর্ব ৫৮-৫৯ | পর্ব ৬০-৬১ | পর্ব ৬২-৬৩ | পর্ব ৬৪-৬৫ | পর্ব ৬৬-৬৭ | পর্ব ৬৮-৬৯ | পর্ব ৭০-৭১ | পর্ব ৭২-৭৩ | পর্ব ৭৪-৭৬ | পর্ব ৭৭-৭৮ | পর্ব ৭৯-৮০ | পর্ব ৮১-৮২-৮৩ | পর্ব ৮৪-৮৫ | পর্ব ৮৬-৮৭ | পর্ব ৮৮-৮৯ | পর্ব ৯০-৯২ | পর্ব ৯৩-৯৪ | পর্ব ৯৫-৯৬ | পর্ব ৯৭-৯৮ | পর্ব ৯৯-১০০ | পর্ব ১০১-১০২ | পর্ব ১০৩-১০৪ | পর্ব ১০৫-১০৬ | পর্ব ১০৭-১০৮ | পর্ব ১০৯-১১০ | পর্ব ১১১-১১২ | পর্ব ১১৩-১১৪
  • ধারাবাহিক | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৯২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:3104:b537:5329:4dd0 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:২৪498457
  • বেশ 
  • Kuntala Lahiri-Dutt | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৩:৫৯498458
  • চমৎকার লিখেছো এমানুল। খুব ভালো লাগলো পড়তে। 
  • | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:০১498486
  • এই সিরিজটা খুব ভাল লাগে। 
  • বিপ্লব রহমান | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৯498534
  • "ঘুষ নেওয়ায় বড়ো সাহেবকে মেরে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে আসেন বলে গল্প শুনেছি। তার পরে পীর হয়ে যান। প্রচুর মুরিদ ছিল।"
     
    এলেম আছে বলতে হয়। 
     
    ধারাবাহিকের পর্বগুলো একটু রয়েসয়ে দেবেন ভাই? পর পর তিনটি পর্ব দেখতে অস্বস্তি লাগে। 
     
    এছাড়া লেখায় হ্যাস ট্যাগ ও ইংরেজি হরফের ব্যবহার হোঁচট খাওয়ায়। 
     
    আরো লিখুন। শুভ 
  • Emanul Haque | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৪২498604
  • ধন্যবাদ। মতামত দেওয়ার জন্য
  • বিপ্লব রহমান | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪১498648
  • "সেই দিন আর নাই রে নাতি, 
    মুঠো মুঠো ছাতু খাতি!"
     
    লেখা ভাল হচ্ছে
  • Emanul Haque | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৮498651
  • ধন্যবাদ
  • Krishna Malik (Pal ) | ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:২৩503065
  • এ পর্বও সুন্দর
  • reeta bandyopadhyay | ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৫৭503165
  • আহা......বেলেতোড়ের মেচা....তার সোয়াদ ,যে না খেয়েছে সে বুঝবে কি করে । সহজ কথা সহজভাবে নয়কো বলা সোজা।
    লিখুন,  পড়ে মনে ভরে যাচ্ছে ।
  • Emanul Haque | ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৫৩503167
  • ঠিক বলেছেন। এক অন্যরকম মিষ্টি। এটা আর কোথাও দেখিনি। এক মিষ্টির তিন চার রকম পরতের স্বাদ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন