এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মেয়েদের লেখালেখি

    তির্যক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২১ জানুয়ারি ২০১৮ | ১৯৩৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ‘পুরুষ দিবস’ বা ‘জেন্টস্‌ সিট’ এইসব কথার মত ‘ছেলেদের লেখালেখি’ বলেও যেহেতু আলাদা কিছু শোনা যায় না তাই গোড়াতেই মেনে নেওয়া ভালো যে ছেলেদের লেখা বা ছেলেদের মত লেখাই হল লেখালেখির মূলস্রোত। সেই বিচারে মেয়েদের লেখা দুই প্রকার; যে লেখাকে মেয়েদের লেখা বলে চেনা যায় এবং যাকে চেনা যায় না। অভিজ্ঞতা বলে গল্প-উপন্যাস-কবিতা (প্রবন্ধ নয়) ইত্যাদি সৃজনশীল লেখালেখির ক্ষেত্রে মুলস্রোতে মিশে যেতে পারাতেই লেখকের সার্থকতা, তবেই তিনি বিস্তৃত (ও মননশীল) পাঠককুলের দাক্ষিণ্য পান, না হলে তিনি স্রেফ ‘মেয়েদের লেখক’ হয়ে থাকেন।
    ব্যাপারটা কিঞ্চিত গোলমেলে। কারণ প্রশ্নটা এসেই যায় যে লেখকের নামের দিকে না তাকিয়েও মেয়েদের লেখা বলে আলাদা করে চেনা যাবে না কোন লেখাকে, আর চেনা গেলেই বা আপত্তি কোথায় ? ছেলেদের লেখা পড়ে তো কেউ তাকে ‘ছেলেদের লেখা’ বলে বিচার করেন না, স্রেফ ‘ভালো’ কিম্বা ‘ভালো নয়’ বলেই মনে রাখেন আর সেসব লেখা শুধু ছেলেরাই পড়েন তাও নয়। উল্টোদিকে মেয়েরা যে সবসময় শুধু মেয়েদের কথাই লেখেন এটাও ঠিক নয় বরং সেই রবিবাবুর কাল থেকে মেয়েদের কথা ছেলেরাই লিখে এসেছেন অনেক বেশি করে। তাহলে বিষয়বস্তুর দিক থেকে তফাতটা কিসের যা একজন লেখিকাকে প্রান্তিক করে রাখে ?
    কিন্তু তফাতটা যে আছেই, সেটা অস্বীকার করে লাভ নেই। একেবারে সমকালীন কবি ও লেখিকা যশোধরা রায়চৌধুরীর কথা শুনি। এই ক’দিন আগে এক জায়গায় উনি লিখেছেন,
    “আজও গভীর আগ্রহ নিয়ে উত্তেজনা নিয়ে কি আমাদের চেষ্টা করে যেতে হয়না মেয়েদের লেখালেখির সঙ্গে তার লিঙ্গচিহ্নের অদ্ভুত যোগাযোগ, আর পুরুষ কবিত্র প্রসাদ-করমর্দন-ডাক-উপেক্ষা-নীরবতা, সব পুরুষ কবির নাম মনে করে করে বলে, ও মেয়েদের নাম অবধারিত ভুলে গিয়ে, পরে, “আর, মেয়েরাও লিখছে, মেয়েদের মধ্যে এই যেমন আছে অমুক, তমুকেরা...” বলার স্বতঃসিদ্ধ অভ্যাস...এইসব বিষয়ে আলোচনা করার... যথাসম্ভব যুক্তিনিষ্ঠ ভাবে?
    কেমন অবাক হয়ে দেখি, আবার নিজের নির্লিঙ্গ (নাকি ওই নির্লিঙ্গতা আমার অস্বীকার প্রবণ বোকা কল্পনা শুধু, আসলে আমার কবিতাও কেবলই মেয়েলি তকমার যোগ্য, চাপাহাসির সঙ্গে যে তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছে এযাবতকার অনেক কন্যার ওপর) কবিসত্তা ছাপিয়ে কেবলই দেখতে পারছি নিজের নারীসত্তাকে। উত্তর দিতে হচ্ছে নারীদের হয়ে, নারী কবিদের হয়ে, এই সব প্রশ্নের। এই সব বিতর্কে অবধারিতভাবে থাকতে হচ্ছে মেয়ে কবিদের পক্ষে। যেরকম কালো মানুষদের থাকতে হয় অ্যাপারথিডের একদিকে। দলিতদের থাকতে হয় জাতপাতের প্রশ্নে দলিতদের পক্ষেই। সেরকমই নিজের লিঙ্গচিহ্ন কীরকম অনিবার্যভাবে তাড়িত করছে আমাকে। নির্ধারিত করছে আমাকে। ঠেলে দিচ্ছে প্রতিবাদের দিকে।
    আর, আমিও আবার অপমানের জন্য ফিরে আসছি”। (সংরক্ষণের তেত্রিশ শতাংশ, না সুস্থিতির বাহিকা। কৃত্তিবাস, মে, ২০১৭)।

    ওই লেখাতেই তিনি কবিতা সিংহকে উদ্ধৃত করেছেন,
    “অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
    ফিরে আসি
    আমার অপমানের প্রয়োজন আছে!
    ডাকেন মুঠোয় মরীচিকা রেখে
    মুখে বলেন বন্ধুতার … বিভূতি …
    আমার মরীচিকার প্রয়োজন আছে।
    অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
    ফিরে আসি
    উচ্চৈঃশ্রবা বিদূষক-সভায়
    শাড়ি স্বভাবতই ফুরিয়ে আসে
    আমার যে
    কার্পাসের সাপ্লাই মেলে না।
    অপমানের জন্য বার বার ডাকেন
    ফিরে আসি...
    (অপমানের জন্য ফিরে আসি, কবিতা সিংহ, ১৯৩১-১৯৯৯)

    এই কবিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন নিজের অনুবাদ করা এলিজাবেথ বার্টলেটের (১৯১১-১৯৯৪)কবিতা “স্ট্রেচ মার্ক”

    “ছোট শহরে জেগে শুয়ে শুয়ে
    কবিদের কথা ভাবি। বেশিরভাগ কবিই
    পুরুষ। অথবা আইরিশ। হলুদ ফোটো
    হয়ে থাকেন, চার অক্ষরের গালি দেন
    শিকে গেঁথে শুয়োর খান, অথবা দুবার বিয়ে করেন
    বেশিরভাগ বই ও পত্রিকা
    সম্পাদনা করেন।
    অধিকাংশ কবি, যাঁরা পুরুষ, তাঁরা
    কবিতা পাঠের সময়ে আগে ডাক পান
    আমাদের মধ্যে যারা হুরিপরি তাদের পছন্দ করেন না,
    নারীবাদীদেরও না। হয় বেশি বয়স্ক নয় বেশি কাঁচা
    নয় বেশি আবেগসর্বস্ব। মাসিক পত্রিকার সময়ে
    একমাত্র আমাদের দরকার পড়ে,
    তাও ওঁদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনেরই...”

    অর্থাৎ দুটো আলাদা দেশের বিভিন্ন সময়ের তিনজন কবির লেখালেখির অভিজ্ঞতা কোথাও গিয়ে একই জায়গায় দাঁড়াচ্ছে। তাঁরা শুধু মহিলা হওয়ার জন্য মননশীল পাঠকের কাছে পেছনের সারিতে চলে যাচ্ছেন। দুঃখটা এইখানেই। এই দুঃখ অনেকবার বেরিয়ে এসেছে নবনীতা দেবসেনের লেখায়। সেইসব জায়গায় নিজের লেখার পাশাপাশি উনি আশাপূর্ণা দেবী, বাণী বসু, কণা বসুমিশ্র, সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কথাও বলেছেন। লেখক হিসেবে জনপ্রিয় হলেও যাঁদের মূল্যায়ন মূলতঃ মেয়েদের লেখক হিসেবে। কিন্তু কেন, এঁদের লেখা নিয়ে সমস্যাটা কোথায় ? সেটা নিয়েই আজ একটু ভাবতে বসেছি।

    প্রাথমিকভাবে সমস্যাটা হয়ত এখানেই যে সেই আদ্যিকাল থেকে আমরা ঘর ও বাহিরকে যথাক্রমে মেয়েদের ও ছেলেদের সমার্থক করে তাদের মধ্যে একটা মাত্রাগত তফাত রেখে চলেছি। আমাদের কাছে কাজ মানে বাইরের কাজ, সমস্যা মানে বাইরের জগতের সমস্যা। তাই সেইসব কাজ, সেইসব সমস্যা নিয়ে বা সেইসব বিষয়ের মধ্যে যারা আছে তাদের নিয়ে মাথা ঘামানোটা আমাদের কাছে গ্রহণীয়। কিন্তু সংসারের হাতা-খুন্তি-নুন ও পান্তার (সেসব ব্যতীত যদিও আমাদের দিন চলে না) গল্প আমাদের কাছে একান্তই মেয়েলি এবং অকিঞ্চিৎকর। তাই লেখক মহিলা হলে প্রথমেই ধরে নেওয়া হয় (মানে মাথার মধ্যে ভাবনাটা চলে আসে) যে তিনি হয় ঘরের কথাই লিখবেন নাহলে নারীমুক্তি বা মেয়েদের সমস্যা নিয়ে লিখবেন। আর তাতেই তাঁর লেখার ওপর আগ্রহ আদ্ধেক হয়ে যায়। তার ওপর যদি তিনি সত্যিই মেয়েদের অন্তরমহলের কথাই বেশি লেখেন তাহলে তাঁর লেখাকে মেয়েদের লেখা বলে দাগিয়ে দিয়ে আমরা মানে মননশীল পাঠকেরা পাঠযোগ্যতার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিই অক্লেশে। কারণ আমরা মনে করি ওসব আমাদের না জানলেও চলবে। তাই যে পাঠক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে গুলিয়ে ফেলেন না, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের লেখাকে তারাপদ রায়ের বলে উল্লেখ করেন না তাঁরা কিন্তু বাণী বসুর সঙ্গে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখাকে হামেশাই গুলিয়ে ফেলেন। তার একটা কারণ তাঁরা কাছাকাছি সময়ের দুজন লেখিকা (লেখক নন), আর একটা কারণ তাঁরা দুজনেই সংসারের খুঁটিনাটি, সম্পর্কের ওঠাপড়া নিয়ে লেখেন যার অনেকটা জুড়ে থাকে মেয়েদের কথা। ওইসব ‘প্যানাপ্যানানি’ কি মন দিয়ে শোনার মত কিছু !

    আবার উল্টোটাও সত্যি, যেটা ঘটেছিল রাধারাণী দেবীর সঙ্গে; যেকালে রবীন্দ্র অনুসারী কবি লেখক নেহাৎ কম ছিলেন না বরং মহিলা কবি ছিলেন সংখ্যালঘু, সেইকালে লিখতে শুরু করে রাধারাণী দেবীকে রবীন্দ্রনাথকে অনুকরণ করার (মানে ‘ছেলেদের মত’ করে লেখার) বদনাম সইতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল ‘মেয়েদের কথা’ নাকি কবিতার উপযুক্ত নয়, তাই মেয়েরা ছেলেদের মত করে কবিতা লেখেন (সঠিক কী বলা হয়েছিল সরাসরি খুঁজে পাই নি, তবে এই ধরণের কথাই যে বলা হয়েছিল তা নবনীতা দেবসেন সম্পাদিত ‘অপরাজিতা দেবী রচনাসমগ্রে’র ভূমিকায় আছে)। অর্থাৎ মেয়েদের কথা মানে তা স্রেফ হেঁসেলের কথাই হতে হবে। প্রতিবাদে তিনি অপরাজিতা দেবী ছদ্মনামে এক্কেবারে মেয়েদের হেঁসেলের কথা, সংসারের কথা, শাড়ি-গয়না-সন্তানপালনের খুঁটিনাটি কথা নিখুঁত ছন্দে গেঁথে কবিতা লিখে চলেন বছরের পর বছর। তখন আবার কে সেই অপরাজিতা দেবী, ইনি ছদ্মনামে কোনও পুরুষ কিনা তাই নিয়ে জল্পনার শেষ ছিল না। কিন্তু এটা নিশ্চিত বোঝা গেল যে মেয়েদের লেখাকে পাঠকসমাজ (নারী-পুরুষ উভয়পক্ষই)কখনই যথাযথ গুরুত্ব দিতে চায় না। বা নিরপেক্ষভাবে বললে মননশীল পাঠকসমাজের কাছে তা যথাযথ গুরুত্ব আদায় করে নিতে পারে না। হয় তা ‘প্যানপ্যানানি’ হয়ে থাকে, নয় তা ‘ছেলেদের মত’। কিন্তু তাতে শ্লীলতার মাত্রা যথাযথ হল কিনা তা নিয়ে সমাজের মাথাব্যথা কিছু কম নয়।

    কিন্তু আসলে তো মেয়েদের মত লেখা ছেলেদের মত লেখা বলে কিছু হয় না, হয় ভালো লেখা আর খারাপ লেখা আর সেই বিচারও আপেক্ষিক। পুরুষের রচনাতেও অজস্র নারীচরিত্র আসে যায়, সংসারের কথাও থাকে, মেয়েদের হয়েও কলম ধরেন অনেক পুরুষ। মননশীল পাঠক সেসব লেখা পড়েন, মূল্যায়ন করেন নিরপেক্ষভাবে। আমাদের দুই দিকপাল সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তো চিরদিন মধ্যবিত্ত সংসারী মানুষের কথাই লিখে গেলেন। তাহলে আবারও আমড়াতলার মোড়ে ঃ মেয়েদের লেখা নিয়ে সমস্যা কিসের ?

    আসলে সমস্যাটা ঠিক ঘোষিত সমস্যা নয়, সরাসরি প্রশ্ন করলে উত্তর কেউ দিতে পারবেন না, স্বীকারও করবেন না কারণ সীমারেখাটা স্পষ্ট নয়, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের মতামত পড়ে যেটা মনে হয় সেটা এইরকম ঃ মেয়েদের কথা পুরুষ লেখেন আউটসাইডার বা দর্শক হিসেবে। সেই দেখায় অনেকটা কল্পনা, অনেকটা বাইরের কথাও মিশে থাকে। তাই যখনই মেয়েদের কথা / ঘরের কথা ছেলেরা লেখেন তখন তা আর মেয়েলি থাকে না। কিন্তু চরিত্রের ভেতর থেকে তার সূক্ষ্ণ টানাপোড়েন যা একজন নারীর ভালোমন্দে মেশানো মানবী চেহারাটা ফুটিয়ে তোলে, নারীর সত্যিকারের অপ্রাপ্তিগুলোকে কিম্বা নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষের ছবিটা তুলে ধরে সেটা স্বভাবতঃই একজন নারী অনেক বেশি ভালো পারেন। আর এই ‘ডিটেইলিংটা’ই অনেকের কাছে হয় ‘ঘ্যানঘ্যানানি’ নয়তো ‘পুরুষবিদ্বেষ’ হয়ে দাঁড়ায়। পুরুষতন্ত্রের চেহারাটা পুরুষের কলমে উঠে এলে সেটা হয় সহমর্মিতা আর নারীর চোখ দিয়ে দেখালে সেটা হয়ে দাঁড়ায় ‘নারীবাদী লেখা’ যেন সেটা শুধু মেয়েদের জন্য। মেয়েদের চোখে পুরুষের ভালোমন্দ যেভাবে ধরা দেয়, সেটা মেয়েদের কলমে উঠে এলেও সেটা অনেক সময় পুরুষের কাছে হয়ে দাঁড়ায় পুরুষবিদ্বেষ।

    একটা উদাহরণ দিই। চাকুরে মেয়েদের সমস্যা বলতেই এখনও যে ছবিটা ভেসে ওঠে তা এইরকম যে উচ্চশিক্ষিতা মেয়েটিকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সে চাকরি করতে গেলে বা লিখতে বসলে বা গান গাইলে সংসারের দায়িত্ব নিচ্ছে না বলে বা সন্তানের দেখ্‌ভাল ঠিক মত করতে পারছে না এই অভিযোগে তাকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। এই ছবি সত্যি হলেও একমাত্রিক। কিন্তু দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে এর বাইরে আরও সূক্ষ্ণ বহুমাত্রিক টানাপোড়েনের ছবিও তৈরি হয়। একটা সুখী পরিবারের বউ, নিজেও মা-বাবার একমাত্র মেয়ে, কলেজে পড়ায়, স্বামী উচ্চ মাইনের সফল কর্পো-চাকুরে, শ্বশুর-শাশুড়ীর সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক, মা-বাবার দেখাশোনাও করে, একটি বাচ্চা আনন্দে বড় হয় যৌথ পরিবারে। এহেন পরিবারের চাকুরে ছেলেটি যদি দূর শহরে উচ্চতর পদে বদলি হয়ে যায়, তাহলে সেই আনন্দের খবরটি আস্তে আস্তে এই পরিবারে, তার ভেতরে ওই স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের ছোট্ট পরিবারের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলতে পারে তার হিসেবটা কিন্তু অনেক মাত্রিক। মেয়েটা কি নিজের কাজটা ছেড়ে দেবে ? তাহলে আর আদ্যিকালের মেয়েদের সঙ্গে তফাৎ কী রইল ! কিন্তু মেয়েটা চাকরিটা ধরে রাখতে গিয়ে আস্তে আস্তে স্বামী-সন্তান-পরিবার সকলের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে, আর ভেতরে ভেতরে কিভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে এই ছবি কিন্তু খুব সহজলভ্য নয়। আর এই ছবির (লেখক সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য) সেই অর্থে মেয়েলি মনে হওয়াও উচিৎ নয়, কারণ এতে বিদ্বেষ নেই, অসহায়তাই আছে। পরিবারের সকলের অসহায়তা। তবু এই ছবি সকলের হয়ে ওঠে না।

    তেমনি মাসের প্রথমে মাইনে পেয়ে সকলের জন্য নানারকম উপহারের সঙ্গে মায়ের জন্য একটি মেয়ে কিনছে শাড়ি নয়, গহনা তো নয়ই, স্রেফ সুন্দর দেখতে কয়েকটা বাটি কারণ পরের দিন বাড়িতে অতিথি আসবে আর মা নতুন বাসন ব্যবহার করতে ভালোবাসেন। এই ছবি এঁকেছেন তিলোত্তমা মজুমদার, একজন মহিলার মনের এই ছোট্ট কথাটুকু বোধহয় শুধু একজন মহিলাই জানতে পারেন। তরুণী বয়সে বিধবা মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে ছেলের মাষ্টারমশাইয়ের; পাঠকও চাইছেন তাঁদের বিয়ে হোক কিন্তু সবাই চাইলেও ছেলের আপত্তিতে কেন সেই মা পিছিয়ে গেলেন, তা হয়তো শুধু একজন মহিলাই (মা) বুঝতে পারেন। এই সাংসারিক সমস্যাগুলোর বা বিষয়গুলোর আঁচ যে পুরুষের গায়েও লাগে না তাও নয়। কিন্তু একজন পুরুষ সেটা যেভাবে দেখান একজন মহিলা হয়তো কিছু আলাদাভাবে দেখান। এই অন্যভাবে দেখানোটার সঙ্গে হয়ত পুরুষ(পড়ুন পিতৃতান্ত্রিক পাঠকমন) রিলেট করতে চান না। তাই এই লেখা সকলের হয়ে ওঠে না। সব লেখিকাই এই রকম সমস্যার কথা যে সমান দক্ষতার বা নিরপেক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তা নয়। সেখানেই লেখকে লেখকে তফাত। কিন্তু সেই তফাত করতে গেলে যতটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয়, পাঠকের সেই মনোযোগটা লেখিকারা পান না। প্রত্যেক লেখকও অনেক কিছুই লেখেন যার সবটাই ছেলেদের নিয়ে লেখা কিন্তু মেয়েদের কাছেও তা কখনও ‘ছেলেদের (জন্য) লেখা’ বলে আলাদা হয়ে ওঠে না। অথচ মেয়েদের ক্ষেত্রে এইটা হয়ে থাকে।

    তবে মেয়েদের লেখাও পাঠকের মনোযোগ পায় যখন তা অন্য একটা জগতের কথা বলে। লেখিকা যদি আদিবাসীদের কথা বা অনাবাসীদের কথা লিখতে পারেন, যে কথায় আমাদের চেনা জীবনটা নেই, সেই লেখার একটা আলাদা মাত্রা আছে। কারণ মানুষ অজানা জগতের কথা জানতে চায়, কিন্তু তার নিজের ঘরেই যে একটা আস্ত অজানা জগত লুকিয়ে আছে তার খবর তো সে জানেই না ! তাই ডাকসাইটে অধ্যাপিকা নবনীতা দেবসেন কি করে নিজের দুই মেয়ে-মা আর সংসার নিয়েই নিত্যনতুন রসে টইটম্বুর লেখা লিখে যেতে পারেন, তাই ভেবে অনেকেই কূলকনারা পান না। তাই যে পাঠক মন দিয়ে ঝুম্পা লাহিড়ি পড়েন, গোয়েন্দা গল্পের জন্য আগাথা ক্রিস্টি বা শিশুসাহিত্যের জন্য লীলা মজুমদার পড়েন, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাওয়া দুই বাঙালী লেখিকার মধ্যে একজন (মহাশ্বেতা দেবী) তাঁর কাছে বহুলপঠিত ও চর্চিত হলেও আর একজন (আশাপূর্ণা দেবী) তাঁর কাছে মূলতঃ ‘মেয়েদের লেখক’ হয়েই থেকে যান। সে লেখিকারা যতই পুরস্কার পান না কেন !
    -----------------------------------------------------------------
    এই লেখার পরিসর খুব বিস্তৃত নয়। মূলতঃ বাঙলা সাহিত্যে মহিলা লেখক ও কবিদের কথা আর তাঁদের লেখা বিষয়ে পাঠককুলের মনোভাব যেটুকু চোখে পড়েছে, সেইটুকুর ওপরেই নির্ভর করে লেখা। এর বাইরে লেখালেখির যে জগত, সেখানে মহিলাদের মূল্যায়ন কেমন হয় তা এই লেখকের জ্ঞানের বাইরে তবে অনুমান করা যায় যে তাঁদের অভিজ্ঞতাও বিশেষ আলাদা নয়। তবে এই লেখা ঠিক মতামত প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, মেয়েদের লেখা বিষয়ে পাঠকের অবস্থানটা কিছুটা বিশ্লেষণের জায়গা থেকে দেখা।
    যে দুটি ঘটনা থেকে এই লেখার সুচনা সেই দুটি এবার উল্লেখ করি। নবারুণ ভট্টাচার্য্য যেদিন প্রয়াত হলেন সেদিন ফেসবুকে একজন লিখেছিলেন, আজ অন্ততঃ সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকে তুলে রেখে নবারুণ ভট্টাচার্য্য পড়ুন। ধাক্কা লেগেছিল, জানতে চেয়েছিলাম কেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকে তুলে রাখতে হবে আর কেন সুনীল-শীর্ষেন্দু-তারাপদ সব ছেড়ে সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকেই তুলে রাখতে হবে ? উত্তর পাইনি। সুচিত্রা ভট্টাচার্য্য যেদিন প্রয়াত হলেন, সেদিন ফেসবুকে একজন নামকরা তরুণ লেখকের সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটিই হয়েছিল কারণ উনি সুচিত্রা ভট্টাচার্য্যকে পুরুষবিদ্বেষী বলেছিলেন, ছেলেদের ‘খারাপ’ দেখানোর অভিযোগ করেছিলেন। আট-দশটা পুরুষ চরিত্রের নাম তুল জানতে চেয়েছিলাম এরা খারাপ কোথায়, এদের কেন দোষে-গুণে মেশা বাস্তব চরিত্র বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না ! এবারও উত্তর পাইনি। তাই বলে শুধু ফেসবুকের পাঠকূলই নন নয়, এরই কাছাকাছি মতামত পাওয়া গেছে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার পাঠকদের থেকে যারা সবাই কিন্তু পুরুষ নন।
    এই লেখা পড়েই যাবতীয় পাঠক মেয়েদের লেখালেখিতে উপযুক্ত মনোযোগ দিতে শুরু করবেন এমনটা মোটেই আশা করা যায় না। কারণ সাহিত্যপাঠ তো সমাজ সেবা নয়, যার যা ভালো লাগবে সে তাই পড়বে। কিন্তু এই বৈষম্য যে আছে সেটা মেনে নিলে এবার নিজেকেই প্রশ্ন করতে হয় যে বৈষম্য কি একেবারেই অমূলক নাকি মেয়েদের লেখা সত্যিই যথেষ্ট প্রসারিত নয় !

    প্রতিটি লেখকই আসলে একজন সামাজিক মানুষ। সত্যি কথা বলতে কি সামাজিকভাবে আমাদের মহিলাদের ছোট থেকেই যেরকম বাধা-নিষেধের মধ্যে বড় হতে হয় লেখার মধ্যেও সেই অদৃশ্য বেড়াজাল জেগে থাকে যা লেখায় প্রাণসঞ্চার করতে বাধা দেয়। সেই প্রাণের অভাব কিম্বা সেই জাল কেটে বেরোনোর মরিয়া চেষ্টাটুকু হয়তো পাঠকের অনুভূতিতে ধরা পড়ে, যা তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখে। অর্থাৎ কী লেখা যাবে না, এই হিসেব অবচেতনে জেগে থাকে বলে মহিলাদের লেখা কোথাও এক অদৃশ্য লক্ষণরেখা পেরোতে পারে না কিম্বা সেটা পেরোবার চেষ্টায় এমন কিছু দেখিয়ে ফেলে যা আরোপিত মনে হয়। সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে জীবনকে অবাধে উপভোগ করার স্বাদ মেয়েদের লেখায় পাওয়া যায় না। মেয়েরা একজন প্রীতম বা একজন নীলু বা একদল ফ্যাতাড়ু দিতে পারেন না। স্বল্পপঠিত হওয়ার চাপ নিতে পারেন না বলেও হয়তো মেয়েরা নিজের দেখা জীবনের ছবি আঁকতে বেশি স্বচ্ছন্দ, ভাষা বা গদ্যরীতির দিক থেকে পরীক্ষানিরীক্ষার রাস্তায় হাঁটেন না বড় একটা। সেটাও দিনের শেষে তাঁদের পিছিয়ে থাকার কারণ হয়ে ওঠে।
    এখানে একটা স্বীকারোক্তি করে রাখি। শুধু পাঠকই তো নয় পড়তে বসে এমনকি লিখতে বসেও একসময় নিজেও ভেবেছি গল্প-উপন্যাসই হোক বা কবিতা, যেকোন লেখা নিরপেক্ষ এবং নৈর্ব্যক্তিক হওয়া চাই; পড়েই যেন বোঝা না যায় কোনও মেয়ের লেখা। যশোধরা রায়চৌধুরীও বলেছেন তাঁর লেখা নির্লিঙ্গ; অর্থাৎ লেখাকে নির্লিঙ্গ করে গড়ে তোলার চাপ তিনিও সয়েছেন / সইছেন। যে চাপ থেকেই হয়তো সুচিত্রা ভট্টাচার্য নিজেকে লেখিকা নয়, লেখক বলতেন। মেয়েদের ঘরের কথা নিয়েও কবিতা হয়, এই সত্য যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর কন্যা নবনীতা দেবসেন অবশ্য নিজেকে লেখিকা হিসেবেই উল্লেখ করতে পছন্দ করেন। কিন্তু মোটের ওপর লেখায় লিঙ্গপরিচয় নিয়ে লেখিকাদের ভাবতে হয়েছে, হয়। কিন্তু লেখকদের ভাবতে হয় না / হয়নি।

    সেদিক থেকে দেখলে ব্যতিক্রমী বলতে হবে সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নিজেকে লেখক বা লেখিকা কী বলেন সেটা বড় কথা নয়। ইনি এই নির্লিঙ্গ হওয়ার চাপ নেন না। ইনি সব লেখাতেই মেয়েদেরই এক্সপ্লোর করেন বিভিন্ন দিক থেকে, মেয়েদের মনস্তত্ত্ব তো বটেই, ব্লাউজ-এর মত এক্কেবারে মেয়েলি একটি বস্তুও (না না প্যান্টি নয়, উহা রূপক মাত্র) বিষয় হিসেবে উঠে আসে এঁর লেখায়। এতে কার মনোযোগ পাওয়া গেল না গেল তা নিয়ে ইনি চিন্তিত নন। এবং স্বীকার করতেই হয়, এঁর লেখায় যদিও সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মহিলাদেরই তুলে ধরা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোনও কিছুর তোয়াক্কা নেই বলে সেই তুলে ধরাটুকু একেবারে আবাধ। নিজে যখন খেয়াল করে দেখি পুরুষের লেখায় তো পুরুষচিহ্ন স্পষ্ট বোঝাই যায়, তখন সাহিত্যমূল্য যাই হোক, সঙ্গীতার অবস্থানটাকেই পছন্দ হয়। মনে হয় মেয়েদের লেখাকে মেয়েদের লেখা বলেই বোঝা গেলে ক্ষতি কিসের ? বরং সমস্ত নারীচিহ্ন বজায় রেখেই মেয়েদের লেখালেখি এগিয়ে চলুক। বুদ্ধদেব গুহ বা নবারুণ ভট্টাচার্য্য তো ছেলেদের লেখক হয়ে থাকেন না তবে বাণী বসু কেন মেয়েদের লেখক হয়ে থাকবেন, এই প্রশ্ন হাওয়ায় আপাততঃ ভাসিয়ে মেয়েদেরই বলতে হবে ‘আমি আমার মত লিখব, তা যদি শুধু মেয়েরাই পড়ে তাই পড়ুক !’। এই আত্মবিশ্বাস না থাকলে মেয়েদের লেখা গল্পগুলো কিছুতেই সকলের হবে না, আর রান্নাঘরের তাকে শাড়ির আলমারির কোণে লুকিয়ে থাকা কান্নাহাসির গল্পগুলোও আমাদের অজানাই থেকে যাবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২১ জানুয়ারি ২০১৮ | ১৯৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৌটুসি | 113.238.192.152 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৩২85251
  • তির্যকের লেখাটি পড়তে পড়তে মনে পড়ে গেল, তা বছর পাঁচেক আগে, কমপক্ষে।
    "মেয়েরা বাজে লেখে, তাদের লেখা মানেই সেন্টিমেন্টের আড়ত" কথাটি বলেছিলেন স্যর বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নয়পল। মস্ত মানুষ সুতরাং সাহিত্যের কোন বিচার পদ্ধতি তিনি গ্রহণ করেছেন তা জানা সম্ভব নয়। তবে সেইসব কথা সরিয়ে রেখে একথা অনায়াসে বলা যায়, এমন ভাবনা মনের কোণে কখনও কারুর মনে উঁকি পড়েনি কখনও...? যাকগে যাক।

    তা , সেন্টিমেন্ট মানে কী? সেন্টিমেন্টাল কাদের বলব?
    connected with your emotions, not reason. সোজা বাংলায় যুক্তিহীন আবেগ। না বুঝে হাঁউমাউ করা।
    তাহলে সেন্টিমেন্ট কী তার'চে 'বড়' সে কী নয়। অতয়েব মেয়েদের লেখা ভাল না মন্দ তার'চে 'বড়' 'মেয়েদের লেখা'(পড়ুন মেয়েলি)
    হ্যাঁ দু একটি ব্যতিক্রম থাকে, থাকবেই, যেরকম পার্লামেন্টে 'একমাত্র পুরুষ' ইন্দিরা...
    কিন্তু এটা'ত ঠিক 'মেয়েরা একটু সেন্টিমেন্টাল হয়' (বুক ঠুকে। নিজের। বলুন একথা কি শুধু পুরুষের? উঁহু)

    অথচ দেখুন, রোবাবর পত্রিকায় "পুচ্ছ উচ্চে তুলে'তে কমল চক্রবর্তি লেখেন, '১৯৬৯ সুনীল শক্তি এলেন জামশেদপুরে। আমাদের মধ্যে সাহিত্য পাগলামির শুরু। যা যা ওঁরা করেছেন, করছেন, নকল। ওঁরা যখন তখন মদ, আমরাও, দিনে দুপুরে, প্রকাশ্যে।'

    এরমধ্যে আবেগ বা সেন্টিমেন্ট খুঁজে পাচ্ছেন? পেলে, ENTর কাছে যান। কারণ একে বলে প্যাশান।

    মেয়েদের লেখালিখি মেয়েলি কীনা জানিনা তবে মেয়েদের 'মেয়ে' হওয়া যে সুখের নয় সেতো আজকেও তির্যকের লেখায় যশোধরার উদ্ধৃতি প্রমাণ দিচ্ছে।

    তবে ওসব ভেবেটেবে লাভ নেই তার চেয়ে চোখ বুঁজে ঘাড়ে নাক গুজে- আহ্‌ মরূদ্যান...
  • শঙ্খ | 52.110.144.60 (*) | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৪85253
  • সুচিত্রা ভটচাজ পড়িনা, পোষায় না বলে, কিন্তু তার সঙ্গে আলাদা করে 'মেয়েদের লেখা' ব্যাপারটা সচেতন ভাবে ভাবি নি। বাণী বসু যেমন সবদিনই খুব ভালো লাগে। লীলা মজুমদার ছোটবেলায় একরকম ভালো লাগত, কয়েক বছর আগে রচনা সমগ্র কিনে আবার পড়ে আবার ভালো লাগল। অনিতা অগ্নিহোত্রীর লেখা পেলেই পড়ে ফেলি। সঙ্গীতা বন্দো বিশেষ বিশেষ জায়গামত পড়ে রেখে দিই। এই রকম আর কি। গুরুতেও এত প্রিয় সব লেখক আছেন, অবচেতনে কি হয় জানি না, সচেতনভাবে কোন জলবিভাজিকা (আমি বিভাজিকাটা ইচড়ে পাকার বয়েস থেকে জানতুম, ইচড় পচে যাবার পরে শিবাংশুদার বদৌলতে এই জোড় কলম শব্দটি শিখলুম) ছিল না। এবার থেকে কি ব্যাপারটা ব্যাক অব দা মাইন্ডে ঘুরঘুর করবে?
  • দেবব্রত চক্রবর্তী | 160.107.213.62 (*) | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫৭85254
  • দুটো বিষয় বলব৷ এক, লেখায় এখনকার ছেলে কি, মেয়ে কি, ইংরেজী শব্দের ব্যবহার অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে ৷ এখনকার প্রজন্মের কথা বলছি৷
    দুই, লক্ষ করি, এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে গেলে এটাও ভাবতে হচ্ছে যে মেয়েদের রচনা মেয়েদেরই অনুবাদ করা বিধেয়, এবং ছেলেদের রচনা ছেলেদের৷
    আপনারা কি বলেন?
  • হিমাদ্রি | 57.15.33.181 (*) | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:৪৯85255
  • আমরা যখন বইপড়ুয়া হই, তখন লেখক অথবা লেখিকা নিয়ে সমস‍্যা থাকে না। কিন্তু যখন আমরা পাঠক বা পাঠিকা হয়ে যাই তখন আমরা একটা সামাজিক গঠনের মধ‍্যে নিজেকে আবদ্ধ করে দি। সমস‍্যা বাধে তখনই। আমার সমাজ আমাকে যে চোখে দেখতে শেখায়, সেই চোখে দেখি। এটা শুধু লেখালেখির ক্ষেত্রে দেখলে হবেনা। এর শিকড় অনেক গভীর। আমরা কি অত গভীরে ভাববার মত ক্ষমতা রাখি?
  • নায়লা নাজনীন | 53.224.108.98 (*) | ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:১৬85252
  • প্রতিটি লাইন, প্রতিটি কথা এবং প্রতিটি অনুভবের সাথে একমত। কারণ, এগুলো যে আমার ও কথা।
    সবসময় সবসময় একটা বিষণ্ণ মন নিয়ে এই ধরনের লেখাগুলো পড়া শুরু এবং শেষ করি। এরপর এই বিষণ্ণ মনটা নিয়েই আমি অন্য কিছু পড়ায়, বা অন্য কাজে মনোনিবেশ করি। কিছুক্ষণ পর ভুলে যাই। এমনটাই হয়ে আসছে বছরের পর বছর জুড়ে আমি এবং অন্য আমরা যারা মেয়েরা আছি তাদের সবার জীবনে।
    কিছু কি প্রতিকার আছে! যাদের উদ্দেশ্যে লেখা তাদের কি কর্ণগোচর হবে এই কথা গুলো! হবে না, কারণ তারা বোঝেন না তা তো না!

    সুতরাং "আমি আমার মত লিখব, তা যদি শুধু মেয়েরা পড়ে, তাই পড়ুক!"
  • শতদ্রু রায় | 57.11.135.91 (*) | ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:৫৯85256
  • এটা অবশ্যই সঠিক মেয়েরা মেয়েদের কথাই লেখেন ৷ কিন্তু একটা জিনিষ তুলনা করলে দেখা যাবে যথাযথ সাম্য কিন্তু এখনও আসেনি..অনেক অবস্থান গত সুবিধা ছেলেদেরই এখনও বেশী ...সুতরাং মেয়েরা চাই লেই এখান থেকে তাদের লেখা বার করে আনা কঠিন ...এবং সম্ভব ও নয়...আর সম্ভবটা করাটাও উচিত নয়...কারন লড়াই টা এখনও অনেক বাকি...
  • liliannikky | 340112.228.565612.166 (*) | ০৭ মে ২০১৯ ০৪:৪৬85257
  • আমার নাম লিলিয়ান এন। এটি আমার জীবনের একটি খুব আনন্দদায়ক দিন, কারণ আমার প্রাক্তন স্বামীকে তার জাদু এবং প্রেম বানান নিয়ে আমাকে সাহায্য করার মাধ্যমে ড। আমি ৬ বছর ধরে বিয়ে করেছি এবং এটা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল কারণ আমার স্বামী আসলে আমার উপর প্রতারণা করছিল এবং বিবাহবিচ্ছেদের জন্য চেষ্টা করছিল, কিন্তু যখন আমি ইন্টারনেটে ড। সাগুরু ই-মেইল জুড়ে এলাম তখন তিনি কতজনকে তাদের পূর্বের ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলেন? এবং সম্পর্ক ঠিক করতে সাহায্য। এবং মানুষ তাদের সম্পর্ক খুশি করা। আমি তাকে আমার অবস্থা ব্যাখ্যা করেছিলাম এবং তারপরে তার সাহায্য চাইতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার সর্বশ্রেষ্ঠ অবাক হওয়ার জন্য তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তিনি আমার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করবেন এবং এখন আমি এখন উদযাপন করছি কারণ আমার স্বামী ভালভাবেই পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি সর্বদা আমার দ্বারা হতে চান এবং আমার বর্তমান ছাড়া কিছু করতে পারে না। আমি সত্যিই আমার বিয়ে, কি একটি মহান উদযাপন উপভোগ করছি। আমি ইন্টারনেটে সাক্ষ্য দিই কারণ ডাঃগুরু সত্যি সত্যি একটি বানান বানান। আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হলে ডাক্তারের সাথে এখনই যোগাযোগ করুন সাগরুর মাধ্যমেঃ দ্র্সগুরুসোলুতিওন্স@ গ্মইল।োম বা হোয়াটসঅ্যাপ ২৩৪৯০৩৭৫৪৫১৮৩ তিনি আপনার সমস্যার একমাত্র উত্তর এবং আপনার সম্পর্কের জন্য আপনাকে সুখী করে তোলে।
    ১ প্রেম স্পেল
    ২ জয় পূর্ব ফিরে
    ৩ ফল
    ৪ প্রচার
    ৫ সুরক্ষা স্পেল
    ৬ ব্যবসা স্পেল
    ৭ ভাল কাজ স্পেল
    ৮ ট্টR এবং কোর্ট মামলা ।
  • dc | 127812.49.341223.239 (*) | ০৭ মে ২০১৯ ০৫:২৯85258
  • বাঃ বাঃ এতোদিনে গুরুতে একটা কাজের জিনিষ পাওয়া গেল। ডঃ গুরু (নাকি ডঃ সাগুরু?) কে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে? ওনার থেকে গোটা চারেক প্রেম স্পেল আর গোটা পাঁচেক ব্যবসা স্পেল কিনতে চাই। ভালো কাজ স্পেল অবশ্য একটাও চাইনা, ওসবে আমার ইন্টারেস্ট নেইকো।
  • অর্জুন অভিষেক | 561212.96.235612.54 (*) | ১৩ মে ২০১৯ ০৪:২২85261
  • ধন্যবাদ @Ruchira

    ইয়েস 'মণিমালা'। ওটা ন্যাশনল লাইব্রেরীর চিলড্রেনস সেকশনে সেই কোন ক্লাস এইটে থাকতে পড়েছিলাম। মনের মত বই না পেয়ে লীলা মজুমদার দেখেই বইটা নিয়েছিলাম। ভাল লাগেনি বিশেষ মনে আছে।
  • অর্জুন অভিষেক | 561212.96.122312.217 (*) | ১৩ মে ২০১৯ ০৬:২৪85259
  • লীলা মজুমদার কি স্বীকৃতি পেলেন বাংলার সবচেয়ে সফলতম মহিলা শিশু সাহিত্যিক হিসেবে? নাকি শিশু সাহিত্যে ওই সময়ে লেখক, লেখিকার সংখ্যা বিশেষ কম থাকায় তার জেন্ডার নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামাননি? লীলা মজুমদারের লেখা কতটা জেন্ডার নিউট্রাল। তার গল্পে কি মেয়ে শিশু, কিশোরীরা বেশী প্রাধান্য পেয়েছে? মনে তো হয়না। ‘শ্রীমতী’ নামে তার একটি ধারাবাহিক লেখা ছিল একটি মেয়ের শৈশব থেকে বড় হয়ে ওঠার কাহিনী। এক ঠাকুমা তার নাতনীর পত্রবিনিময়। সেখানে একজন বালিকার ‘নারী’ হয়ে ওঠার গল্প থাকলেও তা সে অর্থে ‘নারীবাদী’ লেখা কিনা আমি জানিনা। বাঙালী মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে একটি বালিকার নানা সমস্যা ইত্যাদি। লেখাটি কোনো অর্থেই জটিল নয়।
    লীলা মজুমদার ও আশাপূর্ণা দেবী একই সঙ্গে সাহিত্যজগতে সুদীর্ঘকাল ছিলেন। কিন্তু তাদের লেখালেখির ট্রেন্ড এবং কোনো মিল ছিল ?

    প্রথমেই বলতে হয় তাদের লেখালেখির বিষয় ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম তাই একদম সমসাময়িক হয়েও তাদের লেখালেখিতে মিলের চেয়ে তফাৎ বেশী! লীলা মজুমদার ছিলেন এক উচ্চশিক্ষিত মহিলা যিনি তার লেখার গুণে জায়গা করে নিয়েছেন পাঠকমন। তার লেখায় 'নারীবাদ' বা 'মেয়েলী গদ্যে'র ব্যাপার ছিল না। তিনি সচেতন বা অসচেত্ন ভাবেও সেদিক মাড়াননি। তাই উপেন্দ্রকিশোর, যোগীন্দ্রনাথ সরকার, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, সুকুমার রায় এমনকি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শিশু সাহিত্যে লীলার উজ্জ্বল স্থান।

    অন্যদিকে আশাপূর্ণার বিষয় মধ্যবিত্ত সমাজের নারী। এখানে লেখক যেটা উল্লেখ করলেন "কিন্তু সংসারের হাতা-খুন্তি-নুন ও পান্তার গল্প আমাদের কাছে একান্তই মেয়েলি এবং অকিঞ্চিৎকর।" আশাপূর্ণার 'নারীবাদ' তাই পুরুষ পাঠকের কাছে পাক্তেয় হয়না 'সেসব ব্যতীত যদিও আমাদের দিন চলে না' সেটা উপলব্ধি করেও বা হয়ত না করেও।

    সেখানে বাণী বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা বসু, কনা বসু মিশ্র, চিত্রা লাহিড়ীর লেখালেখির বিষয় অনেকটাই একরকম এবং বিষয় এক হয়েও তারা স্বকীয় সাহিত্যিক গুনে স্বতন্ত্র। এই বিষয়ে প্রচুর উৎসাহ থাকলেও আমি ট্রেন্ডড গবেষক নই বিষয়ে তাই আমার মনে হয় এই New age of women writing র সূচনা হয়েছিল কবি রাজলক্ষ্মী দেবী, কবিতা সিংহ, নবনীতা দেবসেনদের হাত ধরে বাণী বসু, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা বসুদের লেখা দিয়ে। অপরাজিতা রাধারাণী দেবী ছিলেন তীক্ষ্ণমেধার Women’s voice যারা প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারেন এবং উত্তর চান বা মেয়েদের লেখার একটা স্বতন্ত্র স্টাইলের জন্ম দিতে চাইছেন তারা কিন্তু রাধারাণী অপরাজিতা যতটা পুরুষ বিদ্যোৎসাহী সমাজে আলোচনার বিষয় হয়েছিলেন, ততটা কি পাঠিকাকূলে হতে পেরেছিলেন ? তাই হয়ত তার লেখায় অত অনুপ্রেরণা ছিলনা, ছিল ইন্টেলেকচ্যুয়াল লিটারেরি ডিসকোর্সে চর্চার বিষয়।

    ওর কন্যা ও তার সমসাময়িকাদের হাত ধরে এই New Age শুরু হয়েছিল বলেই মনে হয় আমার।
  • Ruchira | 900900.67.3423.127 (*) | ১৩ মে ২০১৯ ০৬:৩০85260
  • শ্রীমতী না, মণিমালা, মানে ঐ ঠাকুমা ও নাতনীর পত্রবিনিময়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন