এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 59.205.217.188 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫২62261
  • "ঘটনাচক্রে ফেসবুকে খানিক আগেই জেনে অবাক লাগল না যে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, কাশ্মীরে প্রতি তিন পুরুষের এক জন ধর্ষিত। হ্যাঁ, ধর্ষিত। পুরুষ। কারণ, ওঁরা কাশ্মীরী পুরুষ। শত্রু সংখ্যালঘু।"

    বাপ রে বাপ ! কাশ্মীর ভ্যালীতে তো ৯৬% মুস্লিম। হিন্দু মেরে কেটে আড়াই পার্সেন্ট। তো সংখ্যালঘুটা কে? এক তৃতীয়াংশ "কাশ্মীরী পুরুষ। শত্রু সংখ্যালঘু"কে ধর্ষণ করে কারা ?

    এ তো ফারাবীকে কি চিনতামের থেকেও মারাত্মক টই।
  • dd | 59.205.217.188 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০৫62262
  • ইনসিডেন্টালি HRW 'র India report" টা ঝট করে চোখ বুলিয়ে নিলাম। নাঃ, এরকম কোনো প্রসংগই নেই।
  • Tim | 140.126.225.237 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:১৯62263
  • আমিও এরকম কিছু পাইনি। কোন বছরের HRWর রিপোর্ট?
  • সিকি | 132.173.82.156 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:২২62264
  • ফেসবুকে লেখাটা লিখেছে আর্কাদি গাইদার। কাশ্মীরে প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন ধর্ষিত। আমি নেটে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত এর সপক্ষে কোনো লিং পাই নি। আর্কাদিকে দুটো পোস্টে জিজ্ঞেসও করেছি, কিন্তু হয় তো সে দেখতে পায় নি। না, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে এই পরিসংখ্যান নেই।
  • pi | 167.40.226.249 (*) | ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৬:২৫62265
  • দম হ্যায় তো শেয়ার করো বলে একটা ভাইরাল অডিও মেসেজে পাচ্ছি। এটা শুনে যা বলার ছিল, এই পোস্টেই লেখা বলে শেয়ার করলাম।
    Panchali Kar লিখেছেন।
    কথা বলার সময় নেই, কিন্তু কাজ করতে গেলে কিছু বেসিক কম্যুনিকেশন দরকার, বুঝে নিতে কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, তাই কয়েকটা কথা বলে নেওয়া।

    কাল আমার এক বন্ধু-কলিগ একটা মিটিংয়ের মাঝে সুন্দর একটা কথা বলেছেন: এই সময় দাঁড়িয়ে যারা বলছেন আমি লিফ্ট বা রাইট নই, আমি সেন্টার, তারা আসলে রাইট। এই সময় দাঁড়িয়ে আপনার নিরপেক্ষতাকে ভ্যালিডিটি দেওয়ার মত বিলাসিতা করতে পারছিনা। আপনি আমার পক্ষে আছেন অথবা নেই।

    আমার পক্ষ কী বা কারা? যারা রেপের ঘটনাটার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ করেন। প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। আর বিপক্ষে অবশ্যই তারা যারা রেপ-কে একটা পলিটিক্যাল ট্যুল হিসেবে ব্যবহার করেন নিজেদের স্বার্থে: এই যেমন আসিফা বানোর রেপিস্টরা, এই যেমন সেই নিকৃষ্ট মানুষরা (!) যারা মনে করেন কোনো কোনো সময় রেপ করে বিপক্ষকে একটু 'টাইট' দেওয়া উচিত ... এই যেমন আপনি -- যে কিনা আসিফার রেপের মোটিভ নাল-এন্ড-ভয়েড করে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন এবং অন্যান্য রেপ সারভাইভারদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন নিজের বিভেদের রাজনীতি কায়েম করতে, যাতে ঠিক-ঠাক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে মানুষের ফোকাস সরে যায়।

    আসিফা বানোর ধর্ষণ হয়েছে আট দিন ধরে, তাকে মন্দিরের ভিতর বন্দী করে। তার ধর্ষকদের সমর্থনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন মিছিল করেছে, জাতীয় পতাকা হাতে, জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলে। এখনো বলবেন এই রেপে কোনো ধর্মের রাজনীতি নেই? এখনো বলবেন সব রেপের মোটিভ এক? বাকি যা হিন্দু নারীদের ওপর হওয়া রেপের উদাহরণ আপনি রাখছেন সেগুলো অবশ্যই ভয়াবহ, কিন্ত সেখানে কোথায় সারভাইভারকে বিধর্মীদের ধর্ম স্থানে ক্যাপ্টিভ রেখে রেপ করা হয়েছে? কোথায় ভিন্ন ধর্মের মানুষ জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে নিজেদের ঈশ্বরের নামে জয়ধ্বনি তুলে রেপিস্টের পাশে দাঁড়িয়েছে সর্ব সমক্ষে? যখন রেপের সাথে এই ঘটনাগুলো ঘটে, সেই রেপের কারণ ঘৃণ্য ধর্মীয় রাজনীতি, সেটা বুঝতে শুধু মাত্র সামান্য এমপ্যাথি লাগে, সামান্য। আর সেটা না বুঝতে লাগে শুধু মাত্র না বুঝতে চাওয়ার ইচ্ছা। ঠিক কতটা ধর্মান্ধ হলে মানুষ ধর্মের নামে রেপ হওয়া থেকে ধর্মীয় রাজনীতির অ্যাঙ্গলটা ভুলিয়ে দিয়ে জেনারেলাইজ করতে চাইতে পারে? আর যারা বলছেন রেপ মন্দিরে না হয়ে বাড়িতে হলে কি কম যন্ত্রণা দায়ক হতো? ... এই হোয়াটেবাউটেরি নিজের পকেটে রাখুন। কি হলে কি হত না ভেবে যেটা হয়েছে সেটা চোখ খুলে দেখার সৎ সাহস রাখুন অন্তত। অবশ্যই সব রেপ কনডেম করবেন, কিন্তু রেপ সারভাইভারদের মধ্যে কম্পিটিশন লাগিয়ে নয় প্লীজ। রেপ সারভাইভারস্ আর নট ইওর কমোডিটি টু সেভ ইওর ক্লসেটেড কম্যুনাল অ্যাস্ (পিরিয়ড)

    হ্যাঁ, সব রেপের ঘটনা এক ই রকম নিন্দনীয় ও ভয়াবহ, কিন্তু সেটা সব রেপের মোটিভ এক লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়না। কারেক্টিভ রেপের কথা শুনেছেন? একজন সমকামী মানুষকে রেপ করানো হয় যাতে তার বিষম-কাম জাগে। হ্যাঁ এরকম টাও হয়। বাস্তার বা মণিপুরে আর্মিরা রেপ করে শুনেছেন নিশ্চয়? ম্যারিটাল রেপ? শুনেছেন? সব রেপের মোটিভ এক মনে হচ্ছে এখনো?

    ধর্ষণ জিনিসটা অত্যন্ত পলিটিক্যাল, কারণ ধর্ষণ করা হয় পাওয়ার পসিশন থেকে। স্বামী হোক বা আর্মি হোক বা কোনো বিশেষ ধর্মের মানুষ। তাদের কমন টার্গেট আধিপত্য এস্ট্যাবলিশ করা, কখনও সংসারে, কখনো রাষ্ট্রে, কখনও ভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের মধ্যে। টার্গেট এক: ভয় দেখানো, যাতে প্রতিপক্ষ ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে, কিন্ত মোটিভ আলাদা। এর মধ্যে রাজনীতি ঢোকাবেন না মার্কা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতেই পারেন, আপনার চয়েস, কিন্তু তারপর দু লাইন দায়ে সাড়া মেকি কথা ফেসবুকে লিখে লাইক কুড়িয়ে বা ছবি বদলে সলিডারিটি দেখিয়ে সারভাইভারকে অপমান করবেন না প্লীজ; বিনীত অনুরোধ রইলো।
  • সেই যে | 69.92.145.53 (*) | ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ১০:১৬62267
  • এই ইতরের রাষ্ট্র আমার দেশ না -
    -- ধীমান দাশগুপ্ত

    দেশ এবং রাষ্ট্র এই দুই শব্দের ব্যবহার করা নিয়ে লিখতে বসে সচেতন থাকি— দেশ সেই মৃত্তিকা, যেখানে আমার শিকড় আছে। সেখানকার চারণ আমার গান গায়, মাটি আমাকে খাবার জোগায়, যেখানের মানুষ আমার সুখে–দুঃখে পাশে দাঁড়ায়। অথচ রাষ্ট্র সেই দেশের বিত্তবান এবং শক্তিশালীর স্বার্থ রক্ষা করে, আমাকে আইনের, নিয়মের বেড়াজালে বাঁধে, কর আদায় করে, জেলে পুরে দেয়! রাষ্ট্র শোষণ করে, দেশ যত্ন দেয়। এই সময় ভারত ভূখণ্ডের শাসক রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলে চালাতে চাইছে। এই ইতরের দেশ সেই কারণে আমার দেশ নয়।
    রাষ্ট্র যখন মানুষকে বশে আনতে পারে না, সে যুদ্ধ বা দাঙ্গা বাধায়। সব যুদ্ধ এই জগতে শ্রেণিযুদ্ধ। দরিদ্রের ওপর বিত্তশালীর আগ্রাসন। মানব ইতিহাসের চার হাজার বছর ধরে রাষ্ট্রনায়কদের হয়ে লড়াই করেছে গরিব মানুষ, প্রাণ দিয়েছে গরিব মানুষ, মূল্য দিয়েছে গরিব মানুষ। দুটো বিশ্বযুদ্ধে লড়াই হল, ব্রিটেন–আমেরিকা–ফ্রান্স মিত্রশক্তির সঙ্গে জার্মানি–জাপান–ইটালির ফ্যাসিস্টদের, লড়ে মরল ভারতীয়রা। শুধু জাপানকে আটকাতে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি যুদ্ধের লেভি দিল ৩৮০০ কোটি টাকা। এই শোষণের ফল ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ, ৪৫ লক্ষ মানুষের অনাহারে মৃত্যু। আর? আর প্রায় দু লক্ষ মহিলা এবং শিশুকে দেশভাগের দাঙ্গার অজুহাতে ধর্ষণ করে খুন, বাংলায় এবং পাঞ্জাবে। ব্রিটিশরা শুরু করল, পরম্পরা বয়ে নিয়ে চলল তথাকথিত স্বাধীন ভারতের সরকার। ৭০ বছর পরে, সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলেছে— উন্নাও, কাশ্মীর, সুরাটে। ভারতে প্রত্যেকটি নথিবদ্ধ ধর্ষণের পরিবর্তে ৩৭৬টি ধর্ষণ অকথিত রয়ে যায়। ফলে কতগুলি ৮ বছর, ১১ বছরের শিশুকে এখনও অবধি এই নৃশংসতার বলি হতে হয়েছে, কে জানে!‌ তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে কতজন পিতা, আত্মীয়–বন্ধুকে লক–আপে খুন করেছে এই রাষ্ট্রের পুলিস, তাই–‌বা কে জানে! যুদ্ধের সময়‌ বিজয়ী সেনাবাহিনী যেখানেই যায়, নারীদের ধর্ষণ করে, শিশুদের খুন। প্রাচীন গ্রিস থেকে জার্মানি অধিকৃত ফ্রান্স বা লাল ফৌজের দখল নেওয়া পূর্ব ইউরোপ— সর্বত্র এক ছবি। ভারতেও এখন যুদ্ধ চলছে। এক নিঃশব্দ গৃহযুদ্ধ! এই যুদ্ধের বলি আসিফাদের মতো শিশুপ্রাণ। দক্ষিণপন্থা বা মধ্যপন্থা অথবা সুবিধাবাদী বামপন্থায় এখানে ফারাক নেই— রাষ্ট্রের দালাল মাত্রই আগ্রাসী এবং ধর্ষকামী!
    আসিফার হত্যার প্রসঙ্গ এই রাষ্ট্রে প্রতিবাদের বান ডেকেছে, কারণ জায়গাটা কাশ্মীর এবং শিশুটি মুসলমান; সবচেয়ে জরুরি, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ‘সেকুলার’! চতুর ইংরেজ প্রশাসন একটা মিথ্যা শব্দ শিখিয়ে দেশটাকে লুঠ করে চলে গেছে সাত দশক আগে, নির্বোধ বুদ্ধিজীবীর দল এখনও জানলেন না, ‘সেকুলার’ মানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নয়। প্রথম এলিজাবেথের সময়কালে যে সব জমিদার ক্যাথলিক চার্চের অধীনে ছিল না, সেই সব ভূস্বামীকে সেকুলার বলা হত। কথাটার উল্লেখ এখানে জরুরি, কারণ আমাদের বুদ্ধিজীবীরা প্রায়শই বলেন, ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখতে! সেটা হয় না। কারণ, সেই আদিকাল থেকে ধর্মই রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। অষ্টম হেনরি যদি ক্যাথরিন অফ অ্যারাগনকে বিবাহবিচ্ছেদ করার জন্য প্রোটেস্ট্যান্ট না হতেন, ১৬৪০–৫১ ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধনতন্ত্রের জন্মই হত না। এই নিয়মের কোনও অন্যথা ঘটেনি সেই প্রাচীন পারস্য, গ্রিস বা রোম অবধি। ধর্মাচরণের ফলে সমাজের যে রাজনৈতিক বদল আসে, যার ফল আজকের এই আগ্রাসী রাষ্ট্রশক্তি। সেই রাষ্ট্রের দালালদের হাতেই আসিফারা ধর্ষিত হচ্ছে এবং খুন হচ্ছে। রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী এই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন দলের লুম্পেনগুলোকে, এ আমি বিশ্বাস করি না। শুধু একটা অনুশোচনা প্রকাশের বিলম্বিত লয় বুঝিয়ে দেয় যে, উনি আদৌ অনুতপ্ত নন। প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে বললে আদৌ অত্যুক্তি হবে না। কারণ, রাষ্ট্রসঙ্ঘ যখন ওঁকে বার্তা পাঠাচ্ছে, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা চিঠি পাঠাচ্ছে, উনি ট্যুইটারে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা, রূপো জয়ের জন্য খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আজ অবধি একটাও প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি, এখন শিশুহত্যা নিয়ে নীরব! এমন প্রধানমন্ত্রী যে রাষ্ট্রের, সেই ইতরের দেশ আমার দেশ নয়।
    এই নৃশংসতা আমরা ইতিহাসে ফ্যাসিস্টদের মধ্যে দেখেছি। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, বেনিতো মুসোলিনি বা আডলফ হিটলারের মৃত্যুর পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের সঙ্গে সঙ্গে কি ফ্যাসিজম শেষ হয়ে গেছে? না যায়নি, একটু বদলেছে মাত্র। ঐতিহাসিক এরিখ হবস্‌বম ১৯৯৩ সালের রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিসংখ্যান দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন, দুটি বিশ্বযুদ্ধে মারা গেছিলেন সাড়ে ৬ কোটি মানুষ। অথচ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পরে দেখা যাচ্ছে ১৮।৭ কোটি মানুষকে ‘মানবসম্মতিক্রমে হত্যা’ করা হয়েছে। মানে, দুটি যুদ্ধে নিহত মানুষের দ্বিগুণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে যুদ্ধাবকাশে। ফ্যাসিস্টরা বেঁচে আছে, লুকিয়ে আছে আমাদের মধ্যে। আজকের সমাজে ফ্যাসিজম লুকিয়ে রয়েছে এমন এক ক্ষমতার কোষে যা রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি— এই ভয়াবহতার নাম অথরিটারিয়ানিজম বা গোদা বাংলায় প্রশাসনবাদ। এদের আচরণ পরিবারের রক্ষনশীল পিতার মতো, এরা মনে করে পুরস্কার এবং শাস্তির সর্বময় কর্তা এরাই। সমাজতাত্ত্বিক আশিস নন্দীর মতে, এরা সনাতনী ধ্যান–‌ধারণায় বিশ্বাসী, শাসকশ্রেণির নির্দেশিত মূল্যবোধে বিশ্বাসী। এরা নিজেদের এবং নিজের পিতা–মাতার প্রতি মোহগ্রস্ত, পদমর্যাদার মোহে আচ্ছন্ন এবং মানুষের যৌন ভূমিকা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত। এঁদের সামাজিক নীতিবোধ প্রখর, গেঁাড়ামি প্রবল এবং বাস্তববাদকে সৃজনশীলতার ওপরে স্থান দেন। এঁরা জীবনের এমন এক অর্থ এবং স্বচ্ছতা খুঁজে বেড়ান, যা তাঁর নিজের নয়। এঁরা রক্ষণশীল পিতা, অথবা পুরোহিত অথবা কড়া মাস্টার অথবা সামাজিক নেতা হতে পারেন। এঁরা সাধারণত মনের গভীরে যৌন অপরাধ–‌প্রবণতা পুষে রাখেন। পাঠক, আপনার চারিদিকে চেয়ে দেখুন, নিজের দিকেও চেয়ে দেখুন, কতজন এমন লোলুপ মুখোশধারী দেখতে পান প্রাত্যহিক জীবনে? অনেক, অনেক মানুষ— মূলত শহুরে মধ্যবিত্তদের মধ্যে এঁরা বিরাজমান। এঁদের আপনি অর্থনীতি, সমাজনীতি, মূল্যবোধ নিয়ে কথা বলতে শুনবেন, সমালোচনায় মুখর এঁরা— অথচ ক্ষমতায় আসীন কোনও মানুষ ডেকে পাঠালে সুড়সুড় করে পদানুসরণ করেন। এঁদের মতো মেরুদণ্ডহীন মানুষ ফ্যাসিস্ট হন; হিটলার–মুসোলিনি সমর্থক; মোহন ভাগবতের গোপনে প্রশংসা করেন; নরেন মোদিকে দেখে বলেন, ‘‌আহা, কোথা থেকে কোথায়!’‌ নাহ, এঁরা পুরুষ হবেন এমন কোনও মানে নেই; এঁরাও স্বৈরাচারী, এঁরাও ফ্যাসিস্ট। এঁরাই আসিফাদের ধর্ষণ করে খুন করেন। যে রাষ্ট্রে এঁরা আছেন, সেই ইতরের দেশ আমার নয়!
    ছেড়ে চলে যেতে চাই, খোলাখুলি জানালাম ফেসবুকে। রাষ্ট্রবিহীন জীবন কাটাতে চাই বেদুইনের মতো। সম্ভব নয়, সংবিধানে অনুমতি নেই— জানালেন অগ্রজপ্রতিম ব্যবহারজীবী বন্ধু। ফ্রিডরিশ নিটশে এমনটা কাটিয়েছিলেন বহু বছর— শেষ জীবনটা এই দার্শনিককে রাষ্ট্র পাগলাগারদে ভরে দেয়। এমনই আগ্রাসী এই রাষ্ট্রব্যবস্থা। এরা শিশুদের খুনিদের জেলের আচ্ছাদন দেবে, পুলিসি নিরাপত্তা দেবে, অথচ মানুষকে মুক্ত জীবনের স্বাধীনতা দেবে না! ফলে আর মোমবাতি নয়, আগুন জ্বালতে হবে বিদ্রোহের। কারণ, এই বিকৃতকাম মানুষদের সঙ্ঘ, শিশুহত্যার এই বধ্যভূমি, এই ইতরের রাষ্ট্র আমাদের কারোর দেশ নয়।
    **********************************
    (ছবি -মুম্বইয়ের প্রতিবাদে আমির খানের স্ত্রী কিরণ রাও। :পিটিআই)
    সূত্র:-আজকাল - ১৭ই এপ্রিল, ২০১৮
    https://aajkaal.in/news/editorial/post-edit-wqb4
  • Simool Sen | 116.203.161.79 (*) | ১৭ মে ২০১৮ ১০:২৯62268
  • উন্নয়ন আর শহিদদের সমঝোতা

    আশা হয়, অনিতা দেবনাথরা বিরল বা ব্যতিক্রমী নন। কোচবিহার গ্রামপঞ্চায়েতের এই তৃণমূল প্রার্থী তাঁর দলের বেআব্রু ভোট-লুঠ আর অগণতন্ত্র দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই তামাশায় তাঁর তরফে কোনও উপস্থিতি থাকবে না। ভোট লড়লে অনিতা বখেরা পেতেন, সেলামি পেতেন, না-লড়ার জন্য তাঁর নিরাপত্তা আর খুব একটা সুনিশ্চিত রইল না এই রাজ্যে। তথাপি এক জন সুনাগরিকের যতটুকু কর্তব্য, উনি তা-ই করেছেন, কেবল আপশোস হয়, যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এতটুকু বিবেক থাকত, যদি উনি নিজেকে প্রশ্ন করতেন কোন সহিংস অন্ধকার নিয়ে উনি ছিনিমিনি খেলছেন প্রতিনিয়ত, তা হলে মন্দ হত না।

    সন্দেহ নেই, আমরা খুব খারাপ সময়ে বাস করছি। দ্বিধা নেই বলতে, এই পরিবর্তন, এই আপাদমস্তক ভাট আমরা চাই নি। এই সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এ রন্ধ্রে রন্ধ্রে অসৎ, শঠ, ফলে দুর্নীতিটা যে কেবল আর্থিক স্তরেই হয় এমনটি নয়, আরও দুশো গুণ সারদা হয় শাসকের মনস্তত্ত্বে। এই সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর বৈশিষ্ট্য হল ইনি কদাপি সত্য কথা বলতে পছন্দ করেন না, ভুলেও কখনও সত্যি বেরিয়ে পড়লে আরও মিথ্যের পসরা সাজিয়ে তাকে ম্যানেজ করতে হয়।

    গত কাল রায়গঞ্জে নিরাপত্তাহীন ভোটকর্মীরা তিতিবিরক্ত হয়ে এসডিওর গায়ে জল ঢেলে দিয়েছেন। খালি ভাবি, কতখানি ডেসপারেট হলে, স্যাচুরেশন পয়েন্ট কোন তলানিতে গেলে এই নৈরাজ্যের এক নেহাতই না-বাসিন্দা হয়ে বাধ্যত এমন করা যায়। ওঁরা কোন শিক্ষক সমিতি, এবিটিএ কি-না, তা জরুরি নয়, প্রয়োজন হল এই ভাষার, এই বিরক্তির, যা আজ সর্বত্র তৃণমূলবিরোধী স্লোগান তুলছে, এবং সিঁধ কেটে ঢুকবে বলে তৃণৃমূলের তরফে যাবতীয় খাতিরযত্ন করা হচ্ছে বিজেপিকে। তৃণমূল ও বিজেপি: দুটি দলই রাজনৈতিক ভাবে মৌলবাদী, অগণতান্ত্রিক, ক্ষমতার জন্য সিঁটিয়ে থাকা, বিরুদ্ধতার প্রতি ন্যূনতম সংবেদনশীল নয়, দুই দলই দাঙ্গা মেখে ভোট খেতে ভালবাসে। গোটা পশ্চিমবঙ্গেই প্রশাসন কার্যত উধাও, আর এমন জমিন সুচারু ভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যে, আজ বাদে কাল ভাই মারবে ভাইকে, রাষ্ট্র আসবে না বাঁচাতে। হয়তো, তৃণমূলই মারবে তৃণমূলকে। কিন্তু পুলিশ থাকবে স্ট্যান্ডবাই, আর পুলিশমন্ত্রী কী করবেন? কী আর, হয়তো দুটি টিভি সিরিয়াল দেখবেন, উৎসব করবেন বা প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন, আর রবীন্দ্রনাথের গান গাইবেন।

    গত কাল রাতে গোপনে পাচার করে দেওয়া হল কাকদ্বীপের মৃত দম্পতি, দেবু এবং ঊষা দাসের দগ্ধ, ময়লা শরীর। তাদের ছেলে, যে সেই রাতে ঘর ফিরে আবিষ্কার করল কারা যেন বলতে বলতে পালাচ্ছে, 'বিরোধিতা করবে শালা! তৃণমূলের বিরোধিতা! নে শালা, বিরোধী হওয়ার শখ তোদের, মিটিয়ে নে এ বার,' সম্ভবত তখন উন্নয়নের সাজানো আগুন ধেয়ে আসছিল ঘরবন্দি জ্যান্ত দুই সিপিএম শরীর লক্ষ করে, সেই বীভৎস রাতের পর সে মর্গে গত কাল গোটা সন্ধে জ্বরগায়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বাবা-মা'র দগ্ধ শরীরের জন্য কেন উচাটন দাঁড়িয়ে থাকে সন্তান? পুলিশ তাকে শোনে নি, রাতের অন্ধকারে শব লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। মনে পড়ে যায় ২০১৩-র মধ্যমগ্রাম ধর্ষণের পর, পুলিশ ঝুঁকি নিতে চায় নি, উন্নয়নের বিবিধ ঝামেলা আর রিস্ক থাকে, কারা যেন সব গোলমাল পাকাত, তাই মেয়েটির দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয় বাপ-মায়ের অজান্তে। মৃতদেহকে তবে এত ভয় পায় সরকার!

    বিকল্প কী, জানি না। কোনও একমাত্রিক বিকল্প নেইও সম্ভবত। তবে এই বিজেপি আমরা চাই না, এই তৃণমূলও আমরা চাই নি। এই পরিবর্তন কেউ চায় নি। সিপিএমের ক্ষমতাকে, অপশাসনকে যারা প্রশ্ন করেছিলেন, তাদের আবারও দাঁড়াতে হবে কাকদ্বীপের লাশ ঘেঁষে। এমন পরিবর্তন চাই নি মোটেই, যেখানে মনোনয়নকারী প্রার্থীর শাড়ি খুলে পেটানো হয় রোদ-ঝলমলে মাঝরাস্তায়, সুষ্ঠু ভোট করাতে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের তিন টুকরো মৃতদেহ পড়ে থাকে রেললাইনে, বিরোধী হওয়ার শাস্তিস্বরূপ দম্পতিকে ঘরে ঢুকিয়ে বেঁধে বাড়িসুদ্ধ আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, এমএ পাশ ছাত্রটিকে সামান্য চাকরির আশায় তৃণমূলের দাদার কথা মত ভোট লুঠ করতে যেতে হয়, মরতে হয়, আর এ সবই কেন? না, উনি তো অন ক্যামেরা বলেই দিয়েছেন: একশো শতাংশ আসন পেতে হবে তৃণমূলকে। টিভির পর্দাতেই আরও বলেছেন: 'কী, ভোটটা তো সোমবার, ভোট মিটে যাবে, টিকতে পারবেন তো তার পর?' এবং: 'আমরা কিন্তু সকলের ভাল'ই চাই।'

    দারুণ বলেছেন। তালিয়াঁ।

    অসামান্য সন্ত্রাস করছে আপনার দল। কিন্তু বিকল্প কে? কী ভাবে? জানি না স্পষ্ট করে। শুধু এটুকু জানি, একশো শঙ্খ ঘোষ, কবীর সুমন আর সুবোধ সরকার ইতিহাস গড়ে না। ইতিহাস লিখবে মানুষ, সেই অপ্রতিরোধ্য, দুরন্ত, ছটফটে মানুষ। ইতিহাস লিখবে দেবু দাস, ঊষা দাস, হাফিজুর মোল্লা, রাজকুমার রায়। এই উন্নয়নের তলায় তলায় তাঁদের সমঝোতা গড়ে উঠছে। শহিদদের সমঝোতা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন